Friday, June 30, 2023

বর্ষামঙ্গল -- শিপ্রা বসাক

বর্ষামঙ্গল
শিপ্রা বসাক 
৩০/০৬/২০২৩
আমার যত কান্না আছে , তোমার কাছে ,
বৃষ্টি হয়ে ঝরুক এবার ভূমির পড়ে
বৃষ্টি ভেজা মনের উপর রং যদি দেয় রামধনু , দিক না ।
বৃষ্টি যখন টাপুর টুপুর , মেঘের পরে মেঘ জমছে
তুমি তখন এক চিলতে সৌর আলো
রামধনুতে ছড়িয়ে দিলে তোমার হাসি
মন তো ছুঁয়ে যাবেই ।

জুঁই ফুলের পাপড়ি ছুঁয়ে জল ঝরছে
সে তো আমার মনের কথা কথা ,
বৃষ্টি ভেজা মাটি ছুঁয়ে গান বেঁধেছি ,
সেতারে তার সুর দিয়েছি ,
তোমাকে তো পাগল করবেই ।

যতই আমি আঁচল বাঁধি কোমর জুড়ে ,
ভেজা বাতাস এলোমেলো , উথাল পাথাল
রঙ্গনের রং লেগেছে মনের কোণে 
শরীর জুড়ে হাসনুহানার পবিত্র ঘ্রান
তুমি তখন একলা পথে
পারবে কি আর সচল ঘড়ি এগিয়ে যেতে
নিয়ম তখন নিয়ম শুধু ওদের জন্য
আতর ঢালা বাতাসে যাদের মন ভেজে না
তুমি আমার দেব কাঞ্চন শরীর জুড়ে
ভুল যদি হয় আরেকটিবার !
অপরাজিতা পাপড়ি মেলে কাজল ছোঁয়ায়
ঠোটের পরশ মিলিয়ে নিও ঠোঁটের পরে ,
তখন যদি কান্না আসে মুছিয়ে দিও ,
ইচ্ছে হলে আঁকতে পারো তোমার আদর ,
খুঁজতে পারো জল নুপুরের শব্দ ধ্বনি ,
মেঘ যদি চায় গর্জে উঠুক , ছলনাময়ী ,
আমি তখন এক দৌড়ে তোমার বুকে 
লাজুক হাসির ঝলকানিতে আকাশ আলো ,
কামিনী আজ আবার বুঝি মন ভোলালো

বর্ষা আমার মিষ্টি সুরের মোহন বাঁশি ।



Thursday, June 29, 2023

প্রকৃত ভালোবাসা -- মোফতাহিদা খানম রাখী

 প্রকৃত ভালোবাসা 
মোফতাহিদা খানম রাখী 
২৬/০৬/২৩
চোখের দেখায় ভালো লাগা
            ভালোবাসায় নেয় যে রূপ
আগে পিছে যায়না ভাবা
            ভাবনা যে হয় নিশ্চুপ। 

ভালোবাসার রঙিন চাদর
           গায়ে জড়ানো অনুভুতি
ভালো মন্দ বিচার ক্ষমতা
           মন থেকে নেয় যে ছুটি।

আবেগ তখন টগবগিয়ে
            বাস্তবতাকে চুপসে দেয় 
ভালোলাগার রঙিন ফানুস
             মহাশূন্যে উড়তে চায়।  

সঠিক বেঠিক দেয় গুলিয়ে 
             ভালোবাসার প্রজাপতি 
ভেদাভেদ জ্ঞান যায় মিলিয়ে 
             সম্ভব অসম্ভব  সব মতি গতি। 

বাস্তবতা সদাই নিরেট অতি
            মোছা যায়না জীবন থেকে 
সময় হলে ই বুঝিয়ে দেয়
           ভুল ঠিকের অস্থিত্বকে।

সঠিক ভালোবাসা হয়না বিলিন
           বাস্তবতার চাবুকের আঘাতে
আজীবন তা লালিত হয়
           অন্তরের গহিন অনুভুতিতে।

তাইতো বলি ভালোবাস 
           সঠিক বেঠিক বিচার করে
ভুল করে পাকে পড়লে
           পস্তাতে হবে জীবন ভরে।

তোমায় দেখেছি -- রেজাউল করিম বিশ্বাস

 তোমায় দেখেছি
 রেজাউল করিম বিশ্বাস 
 ২৭...০৬...২০২৩
তোমাকে দেখেছি  কালো মেঘের আড়ালে
দেখেছি কুচকানো চুল হাওয়ায় দোলানো
দেখেছি উদাস নয়নে রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টির মাঝে।

শ্রাবনের ইলশে গুড়ির পর রামধনু রঙের 
আকাশে ছুটন্ত সফেদ মেঘ স্বপ্ন মাখা ক্ষণে
জলঙ্গীর জলে পানকৌড়ির সাথে ডুব সাঁতারে ।

দেখেছি গ্রামে ধুলো মাখা রাস্তায় আলুথালু বেশে
দূরে আরো দূরে আকাশে দৃষ্টি নিক্ষেপে
 চিল শকুনের ডানায় আবদ্ধ থেকেছো তুমি।

দেখেছি শারদ প্রাতে হিমেলে বাতাসে নির্জনে 
চা-রঙের শাড়িতে সাজি হাতে শিউলি তলে
চলেছ মন্থর গতিতে দূর্বা ঘাস মাড়িয়ে অজানায়।

দেখেছি তোমার চোখে অনন্ত ভালোবাসা
দেখেছি  আনমনে সাত সাগরের উত্তাল ঢেউ
দেখেছি বৃক্ষ ছায়ার  সবুজ মাঠে হারিয়ে যেতে।

Monday, June 26, 2023

হারানো সকাল -- সঞ্জিত মন্ডল

 
হারানো সকাল
সঞ্জিত মণ্ডল
২৪/০৬/২০২৩
সঞ্জিতের কবিতা !! "হারানো সকাল"!!
ছাতিম গাছের ছাতার তলায় বসে
দেখি, বৃষ্টি ভেজা মানুষ যাচ্ছে ওই
ভেজা কাকের গল্পটা চোখে ভাসে
হারিয়ে যাওয়া সকাল বেলাটা কই?

নিশির ডাকে ঘুমটা ভাঙলো যেই
ফুস্কুড়ি গুলো চকমকি হয়ে জ্বলে
ঝড়ের মাতন কৃষ্ণচূড়ার ডালে
হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামলো  কই? 

খেঁজুর গাছের মাথায় বন্ধু ভাই
রস চুরিতে ছিল না কেউ জুড়ি
রসের হাঁড়ি নামিয়ে নিতে তাই
বন্ধুরা সব লাঙ্গল তুলে ধরি।

সে সব কথা ভাবলে এখন মনে
লুকোচুরি সেদিনের সেই বনে
লজ্জা পাবে না জানি কয় জনে
মনের কথা হারিয়ে দিলাম মনে।

পুকুর পাড়ে কয়েৎ বেলের গাছে
হুটোপাটি খেলতে গিয়ে নীচে
আছাড় খেয়েও ছুটে পালাই নেচে
ডাব পাড়তে হবে সে কোন গাছে।

অনেক কথা বলার ছিল কত
ভাবনা গুলো হোঁচট খেল যত
এখন সেদিন ভাবলে কেমন লাগে
ছোট্ট বেলার স্বপ্ন ছিল কত।

এখন তো আর সেসব স্বপ্ন নাই
অবাক হয়ে ভাবি এখন তাই
ভোরটা কখন বিকেল হয়ে গেল
হাত বাড়িয়ে খুঁজে বেড়াই তাই।

বিকেলও কখন গড়িয়ে গেল রাতে
রাতচরা পাখি ডানা ঝাপ্টিয়ে ডাকে
কিসের ঘোরে দিকবিদিকে চাই
সকালটা আর সকাল বেলায় নাই।।

বর্ষার নূপুরধ্বনি -- অমর দাস

বর্ষার নূপুরধ্বনী 
অমর দাস।
২৫/০৬/২৩.
বর্ষারাণী তুমি ঝরে পড় পৃথ্বী মাঝে বন্ধু,
তব শ্রাবণধারা আজ করে স্নিগ্ধ এ সিন্ধু।
ঝিরিঝিরি শব্দে শুনি যে তব বারি ঝরা, 
ওগো বর্ষা তুমি এসো হয়ে মম প্রেমধারা, 
তব বারিধারায় পৃথ্বী উঠুক সবুজ হয়ে,
বর্ষারাণী তব ধারা ঝরুক প্রকৃতি হৃদয়ে।
স্নিগ্ধ হবে তপ্ততা যদি ঝরে পড়ো তুমি।
নব ধারায় এসোগো তুমি মোর বর্ষারাণী। 
বর্ষারাণী এসো তুমি নব বঙ্গ বধূর সাজে,
তব মধু ঝর্ণাধারা মম কর্ণ কুহরে বাজে। 
রূপসী বর্ষা তুমি ঝরে পড় প্রকৃতির দ্বারে,
মেঘ অশ্রু বর্ষা হয়ে শুষ্ক বৃক্ষে পড় ঝরে। 
তাইতো পৃথিবী দেখো নব সাজে আজি, 
নব সবুজ পত্রে সাজে এ পৃথ্বী বৃক্ষ রাজি। 
আনন্দ অশ্রু বর্ষা ঝরে শ্রাবণের ধারায়।
কুলু কুলু নদী নব রূপে সিন্ধু পাণে ধায়। 
বর্ষারাণী তোমার ঐ যে ঝর্ণা রঙের টানে,
পৃথ্বী কে করেছো সবুজ ভাসাও  প্লাবনে।
ঝরঝর বর্ষা যেনো ললনার নূপুর ধ্বনি।
বরিষে বর্ষণধারা শুনি কর্ণে রিনিঝিনি।
মুষল বর্ষণে দিক দিগন্ত হলো জলময়,
চাষীর মুখে ফুটেছে হাসি সে আনন্দময়।
বাদল মেঘে ভরা আকাশ যে বর্ষণধারা,
পুলকিত প্রথম বর্ষণে সিক্ত হলাম মোরা। 
গ্রীষ্মের দাবানলে আজ জ্বলে বঙ্গজননী,
তব বর্ষণধারায় স্নিগ্ধ করেছে এই ধরনী। 
বর্ষায় ভরুক প্রকৃতি বক্ষ হে বর্ষা রাণী।
ধুয়ে মুছে যাক জীবনের যত আছে গ্লানি।

Sunday, June 25, 2023

সময়ের ইতিহাস -- ধীরেন গোস্বামী

সময়ের ইতিহাস 
ধীরেন গোস্বামী 
24/06/23


সময়ের ঘড়ি সতত সচল 
চলে সে আপন ছন্দে,
রাতের শেষে সকাল দুপুর
বিকাল গড়ালে সন্ধ্যে।

শৈশব কৈশোর যৌবন যায় 
এসে বার্ধক্য করে গ্রাস,
সময়ের তালে ব্রহ্মাণ্ড চলছে
লেখা থাকে ইতিহাস।

মানুষ আমরা নিমিত্ত মাত্র 
এই জীবনের খেলাঘরে,
যতনে সাজাই সেই খেলাঘর 
সবই হেথা থাকে পড়ে।

আমার আমার দুই চারিদিন
কতো না হিংসা দ্বন্দ্ব,
মনুষ্যত্বের চেতনা জাগে না 
চোখ থাকিতেও অন্ধ।

কিছুই যখন যাবে না সঙ্গে 
তবু নাও লুটেপুটে,
গোরে নাহয় চিতার আগুনে
শেষ হয় শ্মশান ঘাটে।

পেয়েছ অমূল্য মানব জীবন 
সময় যে বড়ো অল্প,
তাই মানবিকতার কর্মটা হোক
জীবনের শ্রেষ্ঠ গল্প।

Saturday, June 24, 2023

প্রয়োজনে খাতির শুধু -- পরেশ চন্দ্র সরকার

প্রয়োজনে খাতির শুধু 
পরেশ চন্দ্র সরকার
২১ .০৬ . ২০২৩
যেই দিন, দিনটা খারাপ আঁকে
সবকিছুতেই মাত্রাতিরিক্ত,
ঝামেলা দেখি সবকিছুর ফাঁকে
অসহ্য হাঁটে, মন তিক্তবিরক্ত।

কেউ-ই যেন চিনে না আমাকে
দেখে ক'রে না দেখার ভান,
সম্বোধনে ডাকলামও তোমাকে
সেই ডাকেও দিলে না কান।

শুধু তুমি কেন আজকে এহেন
ব্যবহারই পাচ্ছি সবার থেকে,
কত অন্যায় ক'রেছি আমি যেন
নজর ঘোরায় আমায় দেখে।

বুঝেছে প্রয়োজনে পাবে না আর
ভাবছে লাভ নেই ক'রে জবাই!
একদা প্রয়োজনে ছিলাম 'সবার'
সেজন্য খাতির ক'রতো সবাই।


ছাতারেও এক নারীর গল্প -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 ছাতারেও এক নারীর গল্প 
 শ্যামল কুমার মিশ্র
 ২৩-০৬-২০২৩
গল্প লিখতে গিয়ে এলোমেলো ভাবনাগুলো যেন আর পিছু  ছাড়ছে না অনিমেষের। সকালবেলার নরম রোদ্দুর এসে পড়েছে পড়ার টেবিলে। পেয়ারের ডালে বসে সাত ভাই ছাতারেরা খুনসুটি করে চলেছে। কেউ লাফিয়ে উপরের ডালে উঠে দোল খাচ্ছে। কেউ বা নিচে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত। সে  সব দেখতে দেখতে কখন যেন অনিমেষ হারিয়ে যায়। 
সেদিনটা ছিল এমনি এক বৈশাখের সকাল। নরম রোদ্দুর এসে পড়েছিল যুবক অনিমেষের টেবিলে। সদ্য স্কুলের চাকরিতে যোগদান করেছে। কলকাতা থেকে অনেক দূরে উত্তর ২৪ পরগণার এক প্রান্তিক অঞ্চলে। স্কুল থেকে একটু দূরে ইছামতি বইছে। সকাল বিকেল কত মানুষের আনাগোনা। ভাষা আর সংস্কৃতির ভিন্নতা অনিমেষকে আকৃষ্ট করে। দিনের শেষে সূর্য যখন অস্ত যায় তখন ইছামতির বুকে এক অপরূপ রঙের খেলা। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন আঁধার নেমে আসে।টেরই পায়না অনিমেষ। ঐ ইছামতির তীরে শৈবাল ভট্টাচার্যের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট থাকে অনিমেষ। শৈবালবাবু খুব সজ্জন ব্যক্তি। । পেশায় উকিল। পরিচ্ছন্ন রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ। সামনে সুন্দর বাগান। বাড়ির পেছন দিয়ে বয়ে চলেছে ইছামতি। অনিমেষের ঘরের জানালা দিয়ে ইছামতিকে দেখা যায়। ভাটিয়ালী গাইতে গাইতে পালতোলা নৌকা ভেসে চলেছে। দেখতে দেখতে কখন যেন সময় পেরিয়ে যায়। প্রথম প্রথম কলকাতার জন্য মন কেমন করলেও এখন ইছামতি যেন সব দুঃখ ঘুচিয়ে দিয়েছে। সময় পেলেই কাগজ কলম নিয়ে বসে যায়। আজ সকাল থেকে লিখতে বসেই সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। একটু লিখছে, তারপর সামনে রাখা ওয়েস্ট পেপার বক্সে দলা পাকিয়ে কাগজগুলো ছুঁড়ে ফেলছে। কিছুতেই যেন গল্পটা দাঁড়াচ্ছে না। এমন সময়ে রোশনী এসে দাঁড়ায় চৌকাঠে। 'কি করেছেন ঘরটার'?  কিছু কাগজ ডাস্টবিনে কিছু কাগজ মাটিতে তখন গড়াগড়ি খাচ্ছে। অনুমতির পরোয়া না করেই ঘরে ঢুকে পড়ল রোশনী। রোশনী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। শৈবালবাবুর একমাত্র মেয়ে। বসিরহাট কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ে। খুব বেশি সাক্ষাৎ না হলেও পরস্পরকে খুব ভালোভাবেই চেনে ওরা। ফর্সা সুন্দর গড়ন। চোখে মুখে এক প্রাণোচ্ছলতা সবসময় অটুট। খুব মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে। 'এই যে মশাই, বাবা মা যে শ্রীমান অনিমেষের জন্য চায়ের টেবিলে অপেক্ষমান'। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে দুজনেই হেসে ফেলে। বুঝতে বাকি রইল না চায়ের বার্তাটি দিতে এসেছিল রোশনী।  এসেই ঘরের এই অবস্থা দেখে ওড়নাটা কোমরে বেঁধে মেঝেতেই বসে পড়ে। তারপর এক একটা টুকরো তুলে নেয়। অনিমেষ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। আপন মনে পড়তে থাকে রোশনী। 

টুকরো ১: গঙ্গার তীর ধরে এগিয়ে চলেছে ওরা-- সন্দীপন আর সুপর্ণা। অপরাহ্ণের লাল আলোয় আকাশ ভরে উঠেছে। সেই আলো এসে পড়েছে নদীর জলে। অপরূপ এক রঙের খেলা। গঙ্গা তীরে সবুজ ঘাসে ওরা বসে। হাতে হাত রেখে নীল জলের অতলান্ত গভীরে যেন ওরা ডুব দেয়... 

টুকরো ২:  সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আঁধার নেমে আসছে। গঙ্গার দুই তীরে আলো ঝলমল করছে। দূরে জুট মিলের ভেপু বেজে উঠলো। গঙ্গার দুপাড়ে তখন মিলে ছিল প্রাণের জোয়ার। মিলকে ঘিরে প্রেম, বিরহ, হিংসা...। ক্রিং, ক্রিং শব্দ করে সার সার সাইকেল এগিয়ে চলেছে। 

টুকরো ৩: আঁধারের আলোতে ওরা বসে থাকে। মেয়েটি ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে। ছেলেটির চোখে মুখে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন। প্রথানুগ বিয়েতে ও রাজি নয়। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রই মানুষের বেঁচে থাকার দায়িত্ব নেবে। মানুষ তার সাধ্যমত শ্রম দেবে। শ্রম এবং পুঁজির অসম বন্টনে একদল গরীব থেকে আরো গরিব হয়ে যাচ্ছে। বলতে বলতে সন্দীপনের চোখ দুটো যেন জ্বল জ্বল করে ওঠে। ভয় পেয়ে যায় সুপর্ণা। অজানা আশঙ্কায় সন্দীপনকে জড়িয়ে ধরে। 

টুকরো ৪: রাতের অন্ধকারে পুলিশ এলো। পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলল। বৃদ্ধা মা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তুলে নিয়ে গেল সন্দীপনকে। হাজার একটা অভিযোগ দিল। কারান্তরালে হারিয়ে গেল সন্দীপন। সুপর্ণা অপেক্ষায়...

টুকরো ৫: মাটির দাওয়ায় বসে থাকে এক নারী। শব্দ যেন হারিয়ে গেছে ওর জগতে। জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে থাকে। অদ্ভুত এক শূন্যতা। চমকে ওঠে মেয়েটি। একটা দল ছাড়া ছাতারে রক্তাক্ত অবস্থায় এসে পড়ে সাদা গোলাপের উপর। গোলাপের সাদা পাপড়ি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। চিলটা তখন দূর আকাশে। অস্থির হয়েও ওঠে সুপর্ণা। 

আর টুকরোগুলো তুলতে পারে না রোশনী। দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। রোশনী যেন দেখতে পাচ্ছে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তখনও রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ছাতারে দুবার যেন কাকে ডাকল। তারপর চিরস্তব্ধ হয়ে গেল। অনিমেষ ধীরে ধীরে উঠে এসে রোশনীর মাথায় হাত রাখে। রোশনী হারিয়ে যায় অনিমেষের বুকে। জানালার  ওপারে বাগানে ছাতারে দম্পতি তখন খুনসুটি করে চলেছে।

গোধূলি লগনে -- নিতাই শর্মা

 গোধূলি লগণ।
নিতাই শর্মা
২৩/০৬/২০২৩
সূর্য অস্ত যায়নি রয়েছে পশ্চিম  দিগন্তে,
রাখাল বালক ঘরে ফেরে গরু নিয়ে দিনান্তে।
ধূলো উড়ে গরুর পায়ের খুরের আঘাতে,
ক্লান্ত রাখাল বালক পিছনে চলে লাঠি হাতে।

ডুবেনি সূর্য রয়েছে রক্তিম বরণে,
মৃদু আলোক রশ্মি পড়ে বৃক্ষ পত্র পানে।
ক্লান্ত বকের দল উড়ে চলে পূর্বাকাশে ,
এখনই ফিরবে তারা আপন আবাসে।

শিশু গন মাঠে রয়েছে খেলা সাঙ্গ করে,
কিয়ৎক্ষণ পড়েই তারা ফিরবে নিজ ঘরে।
বনের পশুপাখিগন ফেরে গহণ বনে,
ভোরের আলোয় ঘুরে আহারের সন্ধানে।

অস্তগামী সূর্যরশ্মি পড়ে ধূলোর পরে,
এক অপরূপ বর্নচ্ছটায় ধূলো উড়ে।
লেখক কবি সাহিত্যিক কাব্যিকগনে,
নামাঙ্কিত করেন সমকালে গোধূলি লগনে।

হিন্দু পঞ্জিকা মতে তিথিহীন শুভ ক্ষণ,
লগ্নহীন সমকালে হয়  বিবাহ লগন।
বিকালের পরে সন্ধ্যার হয় আগমন,
সন্ধ্যার ক্ষিয়ৎকাল পূর্বেই হয় বিবাহ বন্ধন।

মিলিয়ে নিও -- নিবারণ চন্দ্র দাস

মিলিয়ে নিও   
নিবারণ চন্দ্র দাস
২২/০৬/২০২৩
মানুষ আবার মানুষ হবেই মিলিয়ে নিও,
বাঁচবে আবার ধরিত্রী মা,মিঠে হাতের পরশ দিও।
রমনীয় পরিবেশটা ফিরবে আবার আপন রূপে,
জ্বলবেনা আর ভীষন আগুন জরাজীর্ণ ধ্বংসস্তুপে।

দূষণমুক্ত এই পৃথিবী হাসবে আবার নবরূপে,
হাসবে সবাই খিলখিলিয়ে নতুন ভাবে নব সুখে।
বন জঙ্গল উঠবে ভরে নতুন ভোরে লতায় পাতায়,
লিখবে আবার সৃষ্টি খাতা এই ধরণীর শূন্য পাতায়।

জল জঙ্গল পাহাড় নদী সবুজ ভরা চাষের মাঠে,
আসবে সুদিন কাটবেগো দিন নষ্টবৃত্তি উঠবে লাটে।
সুখ শান্তি আনন্দ গান উঠবে বেজে নবীন রূপে,
নষ্ট মনন,আবর্জনা বিসর্জিত হবেই হবে অন্ধকূপে।

আশায় চাষার ভরসা মনে,আসবে ফিরে নব জোয়ার,
খুলে যাবেই মানব মনের শুভ মুক্তির বন্ধ এ দ্বার।
উত্তরণের গান গেয়ে আজ ফিরে দাঁড়া মানব জীবন,
নষ্ট মনের মরা গাঙে আবার হবেই সুরের সঞ্জীবন।

এই ধরণী শীতল হবেই,উঠবে হেসে সপ্তমে চাঁদ,
জীবন আবার উজ্জীবিত,আর কখনো নয় বরবাদ।
তোমার আমার স্বচ্ছ মনন গড়তে হবে নবোদ্যমে,
ধরিত্রী মা শান্ত হবেই মিলিয়ে নিও,ক্রমে ক্রমে।
                              

আষাঢ়ে ক্ষেত-খামার -- হরষিত মজুমদার

 আষাঢ়ে ক্ষেত-খামার
 হরষিত মজুমদার।
 ২২.০৬.২০২৩
এখনো আসেনি বর্ষা    শুখা মাঠ ঘাট,
সবুজ ঘাসের পর         গরু,ছাগ চরে,  
রাখালের দেখা নাই     মাছ নাহি ধরে,
আমন বীজতলায়        ভরে নাই মাঠ।
মাঝে মাঝে উঁচু ক্ষেত কাটে ওরা পাট,
সাদা সাদা বকপাখি খায় পোকা লড়ে, 
শ্রাবণ বারিধারায়         ধান চাষ করে,
ভুট্টার চয়ন কাজ       নিয়ে যাবে হাট।

বর্ষার প্রাক্কালে ট্রেনে   করি যাতায়াত,
হাওড়া কর্ডলাইনে          বর্ধমানে যাই,
দুদিকে ধানের জমি      একটু বিশ্রামে,
বর্ধমান ধান্য গোলা     ধানে বাজিমাত,  
আঃ কী উষ্ণ গরম!     ঘাম ঝরে তাই!
খরিফে উৎপন্ন ধান  খায় যে আরামে।

 

Thursday, June 22, 2023

নদীর কথা -- এঞ্জ্যেল অঙ্কনা সিংহ

 নদীর কথা
 এঞ্জ্যেল অঙ্কনা সিংহ
 ১৬/০৬/২০২৩
আমি বহমান ক্ষীণস্রোতা,

নিঝুম পাহাড়ী নদী,

অপাংক্তেয় ক্ষুদ্রাতি কায়া,

বর্ষা না হয় যদি।

মৃদু বর্ষণে পাখনা মেলি,

জলতরঙ্গ খেলি,

কত শত প্রাণ বিকশিত হয়,

সাজায়ে নিজের ডালি।

ঘোর ঝঞ্ঝাতে আমি রুদ্রাণী,

ত্রাহি ত্রাহি ওঠে রব,

নব পল্লবী সূচনাতে হয়,

সুললিত বৈভব।

শহর গজায় মোর দুই তীরে,

মাঝিদের আনাগোনা,

জল সম্পদ মৎস ভরা,

ভরে নাও দু'টি ডানা।

নির্মল করি চঞ্চল ভরি,

কুসুমিত সব প্রাণে,

দুখের আবহ ঘুচিয়ে ধরাতে,

খুশি আনি জন মনে।

শিলাই পিয়ালী চূর্ণী ডায়ানা,

তোর্সা কুহকী মালিনী,

যে নামেই মোরে ডাকো না কেন?

আমি ভবে প্রাণদায়িনী।

বর্ষাকালের সংজ্ঞা -- মোঃ নূরুল আলম

বর্ষাকালের সংজ্ঞা
মোঃ নূরুল আলম 
১৮/০৬/২০২৩ 
 
গুমোট আবহাওয়া --
অসীম শূন্যতায় জটাধারী মেঘের সন্তরণ 
অশুভ কোন ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত ! 
হালকা কর্পুর শীতল হাওয়ার আলিঙ্গন, 
পাস্তরিত মেঘের ঘোমটা খুলে সহসা  
খেমটা নাচের অশালীন কোরিওগ্রাফী, 
অতঃপর  জল স্থলে বৃষ্টি সুঁইয়ের নকশী আঁকা  
ক্রমাগত প্রকৃতির কাঁথায় ডুব সাঁতার । 
টিনের চালায় ঝমঝম অশ্রু বর্ষণ, 
সুনসান জনপথ, ভিজছে তপোবন, 
ছাদে, মাঠে, ঘাটে কুকুর বেড়ালের জঙ্গ 
পরক্ষণেই সব নিরব ক্ষনে ক্ষনে মেঘ গর্জন,
পর্দার অন্তরালে ভাণু বাবুর আসন গ্রহণ  ;
দমবন্ধ ভ্যাপসা গরমে মানুষ নাকাল 
একেই বলে বুঝি বর্ষাকাল! 

বয়সী বিটপী কলম -- হাসান ফরিদ

বয়সী বিটপী কলম
হাসান ফরিদ
১৯/০৬/২৩
বহতা বেদনার হিমাচল নদী...
হৃদয় সরোদ থেকে লোহিত  সরোবর অবধি...
নীল পদ্ম হয়ে ফোটে অবিরাম রক্তক্ষরণে...
বরণের সপ্তবর্ণ অমৃত গরলে ডুবসাঁতার দেয় জরুল জারনে... 
হেমলক পেয়ালা উলটে থাকে ধূপছায়া আকাশে... 
যোজন দূরত্ব খেয়ে ফেলে কালবেলা টিকটিকি নীলাদ্রি নিমিষে...

ধূসর গল্পরা প্লবগ  লম্ফে ধাবমান মূর্তি...
সুগন্ধি বৃক্ষেরা আত্মহননের ব্যর্থতায় দুর্গন্ধের ক্লিনিকে ভর্তি...
সভ্যতা দাঁড়িয়ে থাকে কাকতাড়ুয়ার আবডালে কাকজ্যোৎস্নায়...
কাব্যগ্রন্থ শব্দের মমিদের মিছিলে বেধড়ক পেটায়...। 

বেআব্রু বাক্যরা রুপান্তরিত লিঙ্গবৈষম্য দোষে দোষীসাবস্ত..
জীবন থেকে চালচিত্র পালায়নরত; উপন্যাস বেঢপ বিকলাঙ্গ সাত আঙুলের হস্ত...
কবিতারা চায় অনির্দিষ্টকালের ছুটি বয়েসী বিটপী কলম স্তব্ধ আজ...
গোধূলির জলরং মোহনা ছাপিয়ে সমুদ্রবিহীন মৈথুনে নিঃশব্দে খুলে কবি খোয়াবনামার ভাঁজ...

Wednesday, June 21, 2023

ঘুমের মাঝে -- রঞ্জন ঘোষ

 ঘুমের মাঝে
 রঞ্জন ঘোষ
  ২০/৬/২৩
ঘন জমাট বাঁধা অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে আমি চলছিলাম পথ,
দু'পাশের কিছুই যাচ্ছে না দেখা  অস্পষ্ট ছায়া যাচ্ছে সরে সরে,
আকাশে নেই চাঁদ লুকিয়ে আছে হয়তো সে মেঘের আড়ালে,
দু'চারটে তারা ঐ অন্ধকারে মিটমিট করছে রহস্যের জাল সৃষ্টি করে।

মনের মধ্যে কেমন ভয় ভয় করছে রাস্তায় দেখছি না আমি কাউকে,
অদ্ভুত এই পরিবেশে আমি একা একা হেঁটে চলেছি সামনের দিকে,
জোনাকির আলো আমায় কিছুটা পথ চলতে সাহায্য করছে,
মনে হচ্ছে এক অজানা শক্তি টেনে নিয়ে চলেছে আমার শরীরটাকে।

বড় বড় বাদুর গুলো অদ্ভুত ভাবে যাচ্ছে উড়ে খুব নিচে দিয়ে,
মনে হচ্ছে যে কোন সময় ওরা এসে আমার রক্ত চুষে খাবে!
ভয়ে তাকাই এদিক ওদিক, এটা কি ভ্যাম্পায়ারের আস্তানা?
সেই প্রশ্নের উত্তর নেই জানা, চিন্তা কেমন প্রাণ বাঁচবে,

দূরে একটা ঘোড়ার গাড়ি আসার আওয়াজ কানে এলো,
থরথর করে কেঁপে উঠি এটা কাউন্ট ড্রাকুলার গাড়ি নয়তো?
দূরে শিয়ালের চিৎকার অনেকটা নেকড়ের চিৎকার মতো লাগলো,
মনে হলো আজ আমার জীবনের শেষ দিন হয়তো।

শব্দটা ক্রমশ বাড়তে লাগলো ঘর ঘর ঘর শব্দ করে,
হৃদপিণ্ড আমার দ্রুত বাজতে থাকে ঠিক দামামার মতো,
চিৎকার করি আমি মরতে চাই না, আর যাবো না কখনো এই পথে,
চোখ খুলতে দেখি সবাই বসে মাথার কাছে, আমি খেলাম থতমত।

পথ -- সুভাষচন্দ্র ঘোষ

পথ
সুভাষচন্দ্র ঘোষ 
 তাং 17/06/2023
     কোথা থেকে শুরু         লঘু কিম্বা গুরু 
               জানিনা -- তবুও পথ চলা,
     নির্ভেজাল বনচারী       সভ্যতার দিশারী
             সেই  বিপদসঙ্কুল পা ফেলা।
      পেটের খিদের টানে  গুহার বাহির পানে
               মানুষ প্রথম ফেলেছিল পা,
      সবুজ ঘাসের পরে  আঁকা হয়েছিল যারে
                পায়ের চিহ্ন অস্পষ্ট রেখা।
       বারংবার চলাচলে    দাগ হয়েছিল বলে
                     প্রথম সৃজন নূতন পথ,
       যুগের পর যুগ বয়ে      বহু বিবর্তন সয়ে
                 চলেছে মানব সভ্যতার রথ।
       সুউচ্চ পাহাড়চূড়া       অকূল সাগর ঘেরা
                    নাম না জানা অচিন দ্বীপ,
       নির্মল আকাশ ভেদি   পৃথিবীর টান ছেদি
                   চলেছে  চন্দ্র মঙ্গল সমীপ।
       পথ শেষ কোথা হবে   সভ্যতা কতদিন রবে
                   কোন  কিছুই তো জানিনা,
       অগ্রগতির ছেলেখেলা  প্রকৃতির ধ্বংসলীলা
                 আর কিছুতেই মানতে পারিনা।
        বাঁচুক জীবের প্রাণ          সব ঈশ্বরের দান
                    পথ হোক দুঃখ ক্লান্তি হরা,
        পরিবেশ হোক নির্মল       মন প্রাণ সুবিমল
                     সব পথ  ফুলে ফুলে ভরা।

ডানা -- তাপস দাস

 ডানা
 তাপস দাস
 ১৫/০৬/২০২৩
বনের আঁকেবা‍ঁকে,
ছানাপোনা সহ যত পাখি ডাকে।
চায়,থাক বজায়  তাদের নিজের ডানা।
যাতে করে উড়তে রবে না মানা।
বনের রাজা বলে, 
কি দুঃসাহস! 
সমস্ত পাখিদের ডানাগুলি কেটে নাও।
সোনার ডানা লাগিয়ে দাও।
বাড়ে যদি বাড়ুক বনের দেনা।
তবুও রাশি রাশি হচ্ছে কেনা।
পাখিদের জন্য সোনার ডানা ।
ও পাখি,তোদের হচ্ছে বুঝি যন্ত্রনা! 
হবেই তো,কাঁটা হয়েছে যে ডানা!
আর কয়টা দিন কর তোরা ব্রত,কর তোরা উপোস।
সোনার ডানায় উড়তে পারবি না সেটা কি রাজার দোষ!
আসলে সবটাই বনের পূর্ব রাজাদের ব্যর্থতা,চক্রান্ত, আর দোষ।
অপেক্ষায় কেটেছে তোদের দিন,মাস,কত কত বছর!
আরে বাবা,আর কয়েকটা জীবন আপেক্ষা কর।
কথায় বলে,যে সহ সে রয়,
একদিন এই বনটা হয়ে উঠবে স্বর্ণময়।
তাই তোদের কথায় রাজার কান দিলে হয় !
না না,বন এগিয়েছে বনান্তরে,
নতুন রাজার হাতটি ধরে,
এটা আনতেই হবে প্রকাশে, দেখাতেই হবে প্রচারে।
বনটা চলে চলুন না হয় ধারে।
সত্যি করে বলতো,পূর্ব রাজা দিয়েছিল কি একটাও তামার ডানা!
এই রাজা তো দিচ্ছে  সরাসরি সোনার ডানা।
ডানা হিনা তোরা, 
তাই পারছিস না উড়তে, 
খাদ্য সংগ্রহ আর করতে
 আর জীবনটাকে গড়তে!
কারো কারো অভিযোগ ।
কেন রে !
বনের রাজা যে তোদের মুখে  তুলে দিচ্ছে খাদ্য,
তার আছে যতটা সাধ্য।
আসলে সোনা কিনতে খুব হয়ে যাচ্ছে খরচ।
তাই রাজার দেওয়া খাদ্যে কম থাকে খাদ্য রস।
বদনাম করিস! 
তবুও লাইন দিয়ে সুবিধা নিতে করে না তোদের লজ্জা! 
তোদের জন্য সোনার ডানায় চলছে সাজসজ্জা।
অনেকের অভিযোগ,দিনে দিনে বনে বাড়ছে হিংস্রতা।
বনের রাজা হেসে বলে, এটা আবার কি নতুন কথা!
বন্যের মধ্যে থাকতেই হবে হিংস্রতা।
শুনে ডানা কাঁটা পাখি সব,
হয়ে আছে নিরব,
কারণ,বনের কোনে কোনে,
পথ-ঘাট -দূরত্ব গুণে গুণে।
বনের সৈন্যরা দিচ্ছে হানা।
উড়তে চাওয়া পাখিদের 
দিচ্ছে কেটে ডানা।
ইচ্ছে  মতো উড়তে তাদের মানা।
তাদের জন্য রাজা 
তাই গড়ছে সোনার ডান।

Thursday, June 15, 2023

হে বীর সন্ন্যাসী -- গৌতম পাল

 হে বীর সন্ন্যাসী
 গৌতম পাল
 ১২/০৬/২০২৩
হে বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ,
সেই ডানপিটে বিলে তুমি,
ভারতকে করেছ জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ
তোমার চরণ দু'টি চুমি!

শিশু নরেন হয়ে স্বামী বিবেকানন্দ
বিশ্বে ছড়ালে তোমার যশ,
ধর্ম মহাসম্মেলনে সুমধুর ভাষণে
বিশ্বকে করলে তুমি বশ!

হে দিব্য জ্ঞানের আলোকবর্তিকা
মেটালে জ্ঞানের তেষ্টা,
মনুষ্যত্ব জাগরণে ছিলে নিয়োজিত
ব্যর্থ হয়নি তোমার চেষ্টা।

আজ তোমার বলিষ্ঠ পদক্ষেপেই
বিশ্ব জুড়ে মোদের সুনাম,
তব শিব জ্ঞানে জীব সেবা মন্ত্রেই 
ধন্য হয়েছে ভারত ধাম।

তোমার মন্ত্রে শিহরণ জাগে প্রাণে
তুমি মোদের চেতনার আধার,
তুমি ধ্যান ঋষি দিব্য যোগী সন্ন্যাসী
তুমি করেছ মোদের উদ্ধার।

তুমিই শিখিয়েছ মাথাটা উঁচু করতে
গাইতে মহা মিলনের গান,
তুমি শিখিয়েছ ভালবাসতে মানুষকে
সবার মাঝে আছে ভগবান!

তোমার বাণী বিভেদের মাঝে ঐক্য
ভারতের ঐতিহ্য ও মহত্ম,
মুচি মেথর চন্ডাল সকল ভারতবাসী
মিলেমিশে হয়েছে একাত্ম।

তোমার নির্দেশিত পথ ধরে আমরা
চলেছি যুগ থেকে যুগান্তরে,
তোমার বাণী ভারতের অন্তরাত্মায় 
অম্লান হয়ে আছে চিরতরে!
********************************

আহত কবিতা -- অজয় চক্রবর্তী

 আহত কবিতা
 অজয় চক্রবর্তী
১৩  ০৬  ২০২৩
হায় কবিতা স্মৃতি হয়ে তুমি রইলে খাতার পাতায়,
নাম জানা নেই কোন সে কবি লিখলেন ভালবাসায়।
দুর্ঘটনায় ট্রেনের কামরা ছিটকে বেরিয়ে গেল,
রেলের লাইনে কবিতার খাতা কুড়িয়ে কেউবা পেল।

রয়ে গেল শুধু কবির মনের মাধুরী মেশানো নিয়ে,
স্মৃতিগুলো সবই থাকলো মধুর ভালবাসা টুকু দিয়ে।
কবির কখনো হয় না মৃত্যু প্রমাণ সে দিয়ে গেল,
নাইবা থাকলো দেহে তে কবি তাতেই কি বা হল?

সারি সারি সব মৃতদেহগুলি সাদা কাপড়েতে ঢাকা,
হয়তোবা কবি আছেন ঘুমিয়ে হাতে কলমটা রাখা।
প্রিয়জনরা দিশেহারা হয় আপন জনের খোঁজে,
খাতার পাতা উড়ছে লাইনে, হাওয়ায় ভাঁজে ভাঁজে।

কবি তুমি থাকো চিরনিদ্রায় আমরা থাকবো জেগে,
ভালোবাসার কবিতার খাতা আদরে ও সোহাগে।
করমন্ডল নিল কেরে কবির সাধের জীবনখানি,
সৃষ্টি তোমার অটুট আছে কোথাও সে হারায়নি।

ছিলে যেমন থাকবে তুমি সবার জীবন মাঝে,
তোমার লেখা পড়বে মনে অস্ত রবির সাঁঝে।
হায় গো কবিতা রয়ে গেলে তুমি স্মৃতির মালিকা হয়ে,
হারিয়ে যায় না কখনোই কবি সৃষ্টি রাখে বাঁচিয়ে।

এবং রূপকথা -- সিরাজুল ইসলাম ঢালী

এবং রূপকথা 
           --- সিরাজুল ইসলাম ঢালী
তারিখ : ১১.০৬.২৩
           হীরের টুকরো ছেলে ! ডাক নাম হীরে । ভালো নাম পলাশ পাল চৌধুরী ।  মিষ্টার এবং মিসেস্ পাল চৌধুরীর একমাত্র ছেলে । এ বছরে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠল । পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র । পড়াশুনা আর হাজার রঙিন স্বপ্নের মাঝে হীরের এক বিশাল ঘটনা ঘটে গেল । পূজার ছুটিতে হীরে বাড়িতেই ছিল । বাড়ি বসিরহাট । তখন গোধূলি বেলা, রবিবার । বাড়ি থেকে তিরিশ চল্লিশ মিটার দূরে একটা সবেদা গাছ । গাছটায় উঠে খেলাচ্ছলে গান করতে করতেই ডালপালার উপরে হীরে শুয়ে পড়েছে । কখন চোখে নিদ্রা এসে পড়েছিল, তাও তার অজানা । তারপরে ? হঠাৎ এক শ্বেতশুভ্র ছোট্ট পাখি হীরের কাছে উড়ে এসে বসল । ডানায় লেখা, এসো আমার ডানার উপরে বসো । ঘুম চোখে হীরে বসেই পড়ল । তৎক্ষণাৎ পাখি উড়ে চলতে শুরু করল । সন্ধ্যা হয়ে গেল । কোথাও হীরেকে পাওয়া যাচ্ছে না । বাবা মা আত্মীয় স্বজন সবাই কান্নাকাটি শুরু করল । এক দিকে খোঁজাখুঁজি চলছে, অন্য দিকে একদল মানুষ থানার দিকে ছুটল...। 
            হীরে আর পাখি হাজার কোটি মাইল উড়ে চলল । তার পরে মনোরম ভূস্বর্গে হীরে এসে নামতেই দেবদেবীরা ছুটে এলেন । সবাই মিলে হীরেকে রাজমুকুট পরিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা রূপে স্বীকার করে নিলেন । রাজাধিরাজ হীরে বিয়ে করে রাজরানী এবং পরে রাজপুত্র সহ রাজকন্যা লাভ করলেন । রাজপ্রাসাদে কোনো  অভাব নেই, শুধুই আনন্দ আর আনন্দ । রাজভোগ থেকে নাচ গান অঢেল ! ভালোবাসার শেষ নেই ! রাজাধিরাজ হীরে ভালোবেসেই হাজার হাজার দেশ জয় করলেন । ভালোবেসেই কোটি কোটি হৃদয় ও প্রকৃতি জয় করে ধনধান‍্যেপুষ্পে আর অর্থের প্রাচুর্যে তিনি রাজত্ব করতে লাগলেন । স্বর্গ মর্ত‍্য পাতাল ধন‍্য, ধন‍্য সমস্ত প্রজাবর্গ ।           
             অবশেষে রাত্রি বেলা পুলিশ সহ সবাই আলো নিয়ে জোরদার অনুসন্ধান শুরু করলেন । মায়ের চোখের জলে সব ভিজে গেল । মা যখন কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে ডেকে উঠলেন,
... কোথায় ? কোথায় আমার হীরের টুকরো, হীরে...? মায়ের গলার শব্দে হীরের ঘুম ভেঙ্গে গেল, তখন গাছ থেকে নেমে হীরে সোজা ছুটে গিয়ে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল । শেষ হল স্বপ্ন, শুরু হল বাস্তব... ।

Sunday, June 11, 2023

আমিই হলো ম্যান -- ড. বলরাম ঘোষ

 আমিই হলো ম্যান ...
 ড. বলরাম ঘোষ
  ০৯.০৬.২০২৩ 
ঘন কুয়াশায় পথ হাঁটতে আমার বরাবর
খুব ভালো লাগে ।
ওই যে একটা রহস্য - সামনে পিছনে কেউ নেই 
নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছি , 
কেউ আমাকে দেখতে পাচ্ছে না , আমিও কাউকে ... 
নির্জলা উপোসের পর লবণযুক্ত খাবার 
আমার খুব প্রিয় , 
কিন্তু যারা প্রতিদিন নির্জলা থাকে 
আধুনিক বিশ্বে - তাদের কোন খাবার প্রিয় 
আমি ঠিক জানি না । 
আসলে আমি তো কুয়াশা ভালোবাসি ,
নিজেকে হারিয়ে ফেলি - সামনে পিছনে 
কাউকে দেখতে পাই না , চাই না ।
বরাবর আমার ফাঁকা সূর্যাস্তের মাঠ 
দেখতে খুব ভালো লাগে , 
আসলে আমি তো সুন্দর একটা বাড়িতে থাকি,
আকাশের নীচে খেতে না পাওয়া মানুষগুলো
একটা ছোট্ট বাসা চায় - ওরা তো জানে ফাঁকা মাঠে সূর্য ডুবে গেলে শিয়াল কুকুর 
বেরিয়ে পড়বে ।
কিন্তু আমি তো জানি রাতের শুরু হলেই 
আমি প্রবেশ করবো নিজের সুন্দর বাড়িতে 
তারপর দিনাবসান , লাল গোল থালার ডুবে 
যাওয়া ,ফাঁকা মাঠ অনন্ত প্রান্তর , জ্যোস্না রাত,
মৃদু মন্দ বাতাস , LOVE AT FIRST SIGHT এ পাশে থাকা নায়িকার সাথে  'দিল তো পাগল হ্যায়  ' গানের কলিতে শিষ - হাতে হাত - এইসব মারাত্মক ফিলিংস নিয়ে লিখে ফেলবো একটা 
রোমান্টিক কবিতা ।
প্রেম প্রকৃতি প্রিয়া নিয়ে আমি লিখি হাজার 
কবিতা ।  
কিন্তু ফাঁকা আকাশের নীচে ফুট পাতের ধারে
খেতে না পাওয়া রুগ্ন মানুষের জন্য আমার প্রাণ 
কাঁদে না , আমি নির্দ্ধিধায়  ওদেরকে অতিক্রম 
করেছি বহুবার ...                                                 দিল তো আমার কাঁদে নি কোনোদিন ,           তাই বোধহয় পাগল হয় ...

ভাগার -- আফরোজা জেসমিন

 ভাগার।
 আফরোজা জেসমিন।
 ১০।০৬।২০২৩ ইং ।
আমার কি দোষ ! পাশে চলতে নাকে রুমাল দাও তোমরা ;
চার পাশে ভন্ ভন্ করছে মশা-মাছি ,
কখনো তো আসে না প্রাণের ভোমরা ।
 
পথে পড়ে রই তাই ভালোবাসে পথ শিশু ;
তোমাদের ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট খাবার খায় ;
খেতে খেতে কাঠি দিয়ে নাড়ে চাড়ে ময়লা ,
কখনো শূন্য হাতে ফিরে ; 
কখনোবা পেয়ে যায় দামী কিছু ।

আমি তোমাদের বড়ো প্রিয় শিশুর মতো ;
তোমাদেরই ঘরে প্রতিদিন জন্ম নেয়া আবর্জনা আশ্রয় দেই।
তোমার ফুল বাগানের ঝরা পাতা মরা ফুল কলি ;
মরা কুকুর বিড়াল হাস মুরগী পাখি ;
যা-ই তোমরা হারাও আমি সব কিছু বুকে রাখি।

পরম সুখে থাকার জন্য কতো যত্নে তুমি ঘর সাজাও ;
তোমার ড্রয়িংরূমের ফ্যান এসি ওয়ালমেট ;
দেশি বিদেশি সো-পিস কি যে অপরূপ ! 
জানালায় খেলছে ভেলভেটের পর্দার লুকোচুরি  ;
কোথায়ও এক ফোটা ধূলি নেই ;
আরামে ডুবে যাওয়া দামী সোফার নিচে হাসছে কার্পেট। 

সারা ঘরময় ছড়িয়ে আছে ফরাসি সৌরভ আর মাতোয়ারা এয়ার ফ্রেসনারে ।
তোমার ঘরে এলে সর্বত্রই আনন্দের মৌবনে মৌমাছিরা চাক গড়ে ।
আর আমার পাশে এলেই যতো আদিখ্যেতা ! ভারি রুমালে নাক ধরে।

আমার কি দোষ বলো ?
তোমরা একটু সামলে চলো !
যত্রতত্র গড়ো না ভাগার ;
ভালো লাগবে কি ?
যদি পুরো পৃথিবীটা-ই দুর্গন্ধে করে ফেলি সাবার !

তোমার চরিত্র সামলে রাখ ;
যদি বলি লজ্জা পাবে নাতো ?
যে শিশুর স্থান মায়ের পবিত্র কোলে ও দোলনায় হওয়ার কথা ;
নাড়ি ভুঁড়ি পেঁচানো পলিথিনে সে শিশুর কান্না ও অসাড়তা !
কখনো সন্তান হীন মায় বুকে টেনে নেয় ;
কখনো বা কুকুর বিড়াল ছিঁড়ে খায় !
দুর্গন্ধে ভরে যায় তোমার বাতাস ;

এসবে আমার কি দোষ বলো !
ওহে পৃথিবীর মানুষ সামলে চলো।
তোমার আবর্জনা বুকে দিয়ে ঠাঁই ;
আমি কোন দোষ করি নাই ।

নতুন দূরদর্শী পরিকল্পনা করো ;
আমাকে নির্দিষ্ট স্থানে গড়ো ;
শহর থেকে দূরে উন্মুক্ত আকাশের নিচে যেথায় হবেনা জলাবদ্ধতা ;
অনেক বড়ো স্থানে চারদিকে দেয়াল তুলে গড়ো আমার কাঠামোটা । 
সকল আবর্জনা ভরো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করো ,
আকাশে মুখ করে বসলে চিমনি ;
গুমোট হবেনা পরিবেশ বেরিয়ে যাবে ময়লার গ্যাস আপনা আপনি ।
 
তোমার আবর্জনা রিসাইকেল করে গড়তে পারো তোমারই প্রয়োজনীয় উপকরণ  ;
একদিন তুমিই পাবে সুজলা সুফলা দুর্গন্ধহীন আনন্দময়  ভূবন ।

বাঁচার লড়াই -- শহিদুল ইসলাম আখন

 বাঁচার লড়াই
 শহিদুল ইসলাম আখন
১০/০৬/২৩
ওঠে ঢেউ উত্তাল      বায়ু বহে বেসামাল
       টলোমলো তরণী যে ভাই রে।
মাঝি কষে ধরো হাল    রশি টেনে বাঁধো পাল
         ঐ দেখো কালো মেঘ ঐ রে।।

শন্ শন্ ওঠে ঝড়     মেঘ ডাকে কড় কড়
        কেঁপে ওঠে অন্তর তাই রে।
তরুণেরা ভোল ভয়      বসে থাকা আর নয়
      টানি দাঁড় আয় আয় আয় রে।।

যাত্রীর চেঁচামেচি     সবাইকে নিয়ে বাঁচি
       জাতপাত ভুলে যাই যাই রে।
চোরাস্রোত ঘোলা টানে    তাকাবিনা পিছু পানে
       মানুষের ভালো চাই চাই রে।।

ঐ ডাঙা দেখা যায়    দাঁড়ি মাঝি বসে নয়
          সফলতা আর দেরি নাই রে।
হা-হুতাশ ক্রন্দন     আর নয় জনগণ
       এ লড়াই বাঁচার লড়াই রে।।
       এ লড়াই বাঁচার লড়াই রে ।।

Thursday, June 8, 2023

বেকায়দায় জীবনখানি -- পরেশ চন্দ্র সরকার

বেকায়দায় জীবনীখানি
পরেশ চন্দ্র সরকার
০৫/০৬/২০২৩
সুবিধেগুলো সব বেগতিক আঁকলে
ব'লো-তো কার ভালো লাগে!
ঝুলে থাকা উদ্যমগুলো না পাকলে
ফল কি ক'রে রসালো, আগে?

আবছায়ার মাঝেই 'মোহটান' যেন
গা ঢাকা দিয়েছে অদৃশ্যে,
সৌন্দর্যের হাটে গ্রহণ লেগেছে কেন
কুৎসিত দেখছি আজ দৃশ্যে?

কালো ঘোড়ার 'নালে' ভাগ্য ফেরে
শুনেছি সেই কোন্ কালে!
অথচ কপালে আসে দুর্ভাগ্য তেড়ে
জখম ক'রে রোজ-ই হালে।

দিনান্তের 'হাল' সুদূর দিগন্ত জুড়ে
ভাবনাগুলো আঁকছে বলাকা,
সুখের লাগি দুরূহ অবচেতন মুড়ে
দুঃখে ভাসায় সক্রিয় এলাকা।

বেকায়দায় প'ড়েছে 'জীবনীখানি'
সবজান্তার নড়বড়ে মাচায়,
একটু হ'লেও বাইরে আসবে জানি
পরক্ষণেই ঢুকে যাবে খাঁচায়।

চড়াই উতরাই নিয়েও বিচলিত ন'ই
মোহাবিষ্ট হ'য়েই কাটে দিনরাত,
শেষবেলায় চাঁদ ধ'রতে বাঁধি না মই
চেনা নন্দনে অচেনা পারিজাত ।

শোধন -- নিবারণ চন্দ্র দাস

শোধন   
নিবারণ চন্দ্র দাস
০৪/০৬/২০২৩
ধর্ম নিয়ে ছলাকলা বন্ধ করো এবার,
জম্মু কাশ্মীর পাতিয়ালা বাংলা কিংবা মেবার।
দেশের মানুষ মরছে ধুঁকে নিত্য অনাহারে,
তোমার বেলায় আঁটিসাটি শতেক উপচারে।

মূর্তি গড়ো,ভাঙো আবার মানুষ পথের মাঝে,
জানি না ওই মূর্তি তাদের লাগে বা কি কাজে।
তোমরা মাতো ধর্ম নিয়ে মন্দিরে মসজিদে,
মরছে দেশের আমজনতা পেটে তাদের খিদে।

রেলের ধারে পথের পরে নর্দমার ওই পাশে,
বাঁচে ওরা লড়াই ক'রে পথেই ভালোবাসে।
ঝড় বাদলে আঁধার রাতে পথেই ওদের ঘর,
ওদের কথা নেইকো মনে,তোমরা স্বার্থপর।

সবার নাই তো পরিচয়ের পত্র আর ঠিকানা,
ভোটের বেলায় ওরাই তোমার জয়ধ্বনির বীণা।
মরছে সেনা শতশত তোমার জিদের তরে,
ওদেরও ও তো মা বাপ আছে,স্ত্রী সন্তান ঘরে।

পড়াশোনা চিকিৎসাতে নেই তেমন বরাদ্দ,
করছ তোমরা রমরমিয়ে ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ।
অ-বাস্তবিক বাসস্থানের করছ পরিকল্পনা,
কার মঙ্গলে?পথে ঘাটে চলছে তো জল্পনা।

দাওনি শিক্ষা-খাদ্য-বস্ত্র-চিকিৎসা ঠিকমতো,
ঘুরছে মানুষ কর্ম বিহীন, ধুঁকছে অবিরত।
উল্টে পাল্টে যাবেই দেখো, তোমার তরী খানি,
ভুলিয়ে দিয়ে, ঘুচিয়ে দিয়ে, তোমার সকল গ্লানি।
                             

হারিয়ে যাচ্ছে অঞ্জনা -- দুলাল চন্দ্র দাস

হারিয়ে যাচ্ছে অঞ্জনা
দুলাল চন্দ্র দাস
৮/৬/২৩
অঞ্জানায় জল নেই ,নেই আর স্রোত আর,
নেই কোন জেলে মাঝি শুধুই হাহাকার।
লোকজন হেঁটে হেঁটে পার হয় নদী,
দেখিতে পারবে সবাই আসে কেহ যদি।

নদীর ভেতর ঢালেত কত বাড়ি ঘর,
জল শুকিয়ে গেছে ছোট কত চর।
দুই পাড়ে কাশবন মাঝে মাঝে আছে,
লতা পাতা জংগলে নদী ভরে গেছে।

আম বাগান বাঁশ ঝাড় পাড়েতে কত,
চেয়ে আছে নদী পানে অনাথের মত।
গাছেতে পাখি ডাকে নেই আর বিল,
ওড়ে নাতো নদীর উপর পানকৌরা চিল।

বর্ষা এলে নদীতে কিছু জল হয় ,
সারা বছর শুকনো কচুরি পানা রয়।
রবী ঠাকুর লিখে ছিলো অঞ্জনা নিয়ে,
জলংগী থেকে বেড়িয়ে পরেছে চূর্ণীতে গিয়ে।

ভাঙ্গা সেই মন্দির আর তীরে নাই,
ভক্ত এক কুকুর ছিলো নিয়েছে বিদায়।
অঞ্জনা নদীর তীরে চন্দদাহ গায়ে,
 গঞ্জটা আছে সেথা শুধু দেখিতে পাই।

স্মৃতি বুঝি গেলো মুছে অঞ্জনা নদী,
এখনো বাঁচে এগিয়ে আসে সবাই যদি।
অঞ্জনা নদীর কথা সারা ভারত জানে,
পড়াতো বইতে এখন আর নাহি মনে।

Wednesday, June 7, 2023

মেরুদন্ড ধনুক আঁকতে শিখেছে -- পরেশ চন্দ্র সরকার

মেরুদণ্ড ধনুক আঁকতে শিখেছে 
পরেশ চন্দ্র সরকার
৩১/০৫/২০২৩

মাকড়সার জালেতে আটকে র'য়ে দেখি সর্বক্ষণ
কি ক'রে লম্বা জিভ ছুঁঁড়ে দিয়ে গিরগিটি-রা
শিকার ধ'রছে খপাখপ বিচক্ষণ!
মন্দ হাওয়ায় গা ভাসিয়ে শুয়ে থাকাটা মন্দ নয়
কণ্টকময় সমাজের কাঁটা তোলার দায়-দ্বায়িত্বের
প্রতিশ্রুতির আড়ালে শুধুই অভিনয়।

ছিঁড়ে ফেলে দিতে দু'হাত কাঁপে মাকড়সার জাল
তথাপি ঘুরেফিরে সেই আনাড়ি, কাকে ছেড়ে
কাকে ধ'রি, একই ফলাফল চিরকাল,
মুখে ফোটে খই, কাজের চেয়ে বেশি হ'চ্ছে হইচই
সবারই কেমন যেন ভয়, ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত যত্রতত্র
আসলে মুখ পুড়েছে চুন খেয়ে, ভয় যে তাই দই।

সুন্দর ছুঁয়ে নেই কোনোকিছু, বস্তাপচা দিগ্বিদিকে
কেমন যেন গা সহা ভাব, অন্যায় জেনেও সবাই
ক'রছে মাপ, রক্তের রঙ ফিকে,
মেরুদণ্ড ধনুক আঁকতে শিখেছে আজকাল বেশ
অথচ কোনো একটা সময় ছিল, উন্নতশিরে
গম্ভীর গলে প্রতিবাদ আঁকত জন-পরিবেশ।

হারিয়ে যাচ্ছে জাগরণ ও তেজ, কত যে আরও
হ্যাঁ! দু'মুঠো পাওয়া যাচ্ছে, তবে খাওয়া যাচ্ছে
কিনা ঠিকঠাক জানা নেই কারো!
নমস্য ভূমে র'ইব চুমে জুটঝামেলায় নেই আমরা
কে যাবে এলেবেলে, ও তো একমাত্র ছেলে, থাক
কোলে, কে কখন ছাড়িয়ে নেবে গায়ের চামড়া!


বৃষ্টি ভেজা চাপে -- মোঃ নুরুল ইসলাম রাকিব

বৃষ্টি ভেজা চাপে 
মোঃ নূরুল ইসলাম রাকিব 
০৩/০৬/২০২৩
আকাশ নীলে মেঘের মিলে
শান্তি খুঁজি বাতাস দিলে
সূর্য ক্ষ্যাপা তাপে,
ক্লান্তি লাগে আরাম ভাগে
বাড়তি আশে হৃদয় জাগে
বৃষ্টি ভেজা চাপে!

বুকটা চিঁড়ে মেঘের ভীড়ে
বাবই পাখি আপন নীড়ে
দোলে বাতাস পেয়ে,
হঠাৎ করে দমকা ধরে
বাতাস নাচে মনের ঘরে
ঝড় যে আসে ধেয়ে!

মেঘের মেলা করছে খেলা
বজ্র সেনা আলোর ভেলা
ধমক মেরে জ্বলে,
শান্ত মনে মানুষ জনে
পাখপাখালি গভীর বনে
সব চেঁচিয়ে বলে!

বৃষ্টি আসে ভুবন হাসে
সব'চে খুশি সবুজ ঘাসে
রোদে চমক মারে,
গরম তবে নরম হবে
বৃষ্টি ভেজা শীতল হবে
গরম যেনো হারে!

Tuesday, June 6, 2023

বিদায় কবিতা -- মানব মিশ্র

বিদায় কবিতা
মানব মিশ্র
০৬/০৬/২০২৩
কবিতা তুমি শুনছো,----
তোমার প্রেমের খরস্রোতে 
গিয়েছি আমি ভেসে,
আমি আজ স্বার্থপর
সংসার বলছে অবশেষে।
এ কোন নিগূঢ় প্রেমের
কঠিন বাঁধনে বেঁধেছ আমায়!
শত চেষ্টা বিফলে গেছে
তবু ছিন্ন করতে পারিনি তোমায়।
আচ্ছা কবিতা ভালোবেসে কি পেয়েছ
বলনা আমার কাছে ?
তুমি তো জানো আমি সংসারি
আমার সংসার আছে।
রুগ্ন জীর্ণ সংসার আমার
মা যে শয্যাশায়ী,
সংসার নিজেই বলছে আমায়
আমার দায়িত্বহীনতা দায়ী।
তুমি তো জানো নুন আনতে পান্তা ফুরায়
আমার অভাবের সংসারে,
তবু কেন জ্বালাও আমায়
তুমি এসে বারে বারে ?
অভাব আমার পরমাত্মীয়
দুঃখ জীবন সাথী,
তুমি কি পারবে হতে
আমার সমব্যথী?
আমার ভাঙা ঘরের ফোকর দিয়ে
চাঁদ যে হেসে বলে,
কেমন আছো ওহে কবি
কবিতাকে ভালোবেসে ?
শয়নে স্বপনে নিশি জাগরণে
তুমি বিরাজিত অন্তরে,
এই অন্তর হতে তোমার ভাবনা
মুছবো কেমন করে ?
কবিতা,---
আমার মন প্রাণ সব উজাড় করে
তোমায় দিলাম আমি,
আমার জীবন সঙ্গিনী যে বিরহিণী
আমি কর্তব্য পরায়ণ স্বামী।
কবিতা,---
তোমার মনেপড়ে সেই
ভরা বরষার সাঁঝে,
আমি ভিজে তোমায় আগলে ছিলাম
তুমি ছিলে পাণ্ডুলিপির মাঝে।
আমি যে রিক্ত নিঃস্ব
তোমায় দেবার কিছুই নাই,
এই ভাঙাচোরা কুঁড়েঘরটাই
মাথা গোঁজাবার ঠাঁই।
তোমার প্রেমের নেশায় আমি
পাগল হতে পারবো না,
সংসার নিয়ে ভাববো আমি
তোমায় নিয়ে ভাববো না।
কবিতা,----
তোমায় ভালোবেসে ভুল করেছি
ক্ষমা করেদিও মোরে,
নিঠুর বিদায় জানাই তোমায়
হৃদয় পাষাণ করে।

Friday, June 2, 2023

খবর পাতার হেডিং -- সঞ্জিত কুমার মন্ডল

 খবর পাতার হেডিং 
সঞ্জিত কুমার মন্ডল 
  ০২/০৬/২৩
বনকর্মী নিয়োগ হবে খবর গেল রটে, 
কাজটা যাহোক সবাই বলে "সরকারি তো বটে।"
সাপ ধরা আর ঘাস কাটা হাজার পদে নিয়োগ,
বেকার ছেলে ভাবল এবার "এলো মহা সুযোগ।"
বেকার ছেলে লাফিয়ে পড়ে করল আবেদন, 
এম.এ.,বি.এ. ডিগ্রীওয়ালা ছিল সর্বজন।
অষ্টম পাশ যোগ্যতায় নিয়ম ছিল বাঁধা,
উচ্চমানের যোগ্যতাতেও ছিল নাকো বাধা।
আবেদনের সংখ্যা দেখে বিস্ময়টা জাগে, 
দশ লক্ষা প্রার্থী শুনে ধিক্কারটা লাগে।
"ঘাস কাটাতেও রাজি হয়ে পাবো কি আর কাজ? 
এম.এ.,বি.এ.পাশটা করেও বেহাল দশা আজ।"
বলল কেহ,"চাকরি পেতে ধরতে হবে বাজি, 
প্রথম শ্রেণীর ছাত্র হয়েও সাপ ধরতে রাজি।
বয়স নেইকো আজকে আর চাকরি বাছাবাছি,
নামেই শুধু চাকরি করে যাহোক করে বাঁচি।"
লোক দেখানো নিয়ম শুধু চাকরি পাওয়ার নামে, 
শ্রমিক,চাষীর ভাত জোটে না রক্ত ঝরা ঘামে। 
কোটি কোটির হিসাব শুধু খবর পাতা জুড়ে,
বেকার ছেলের জীবন কাটে ব্যর্থ ঘুরে ঘুরে।
ইতিহাসটা ঝলসে ওঠে সমাজখানার বুকে,
খবর পাতার হেডিং খানা সব মানুষের মুখে।

নতুন চারা গাছ -- কাকলী


নতুন চারাগাছ
কাকলী
০২/০৬/২৩
একটা ঝড় উঠবে এক্ষুনি,
তার অপেক্ষায় যে দিন গুনি,
নিস্তব্ধ প্রহর থমকে আছে, পিছনে অতীতের হাতছানি,
লক্ষ্য স্থির রেখে আর তাকাবে না কোনো দিকে,
ঝড়ো হাওয়ার সাথে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত যে সে,
থমথমে নিরুত্তর বাতাস, হৃদয়ের শব্দ শোনা যায়,
মুক্তির আবেদন জানিয়েছিল যারা,
আজ তারা নিরুদ্দশের পথে,
যুগ যুগ ধরে ঘাড়ের কাছে কালো দাগ বয়ে বেড়াচ্ছে,
বোঝা বয়ে নিয়ে যাবার চিন্হ, অপদস্ত, পদানত,
আজ তাই তারা প্রত্যুত্তর চায় সমাজের কাছে,
আয়নার প্রতিরূপ ভিন্ন কথা বলে,
নির্লজ্জ সমাজ ভয় পায় নিজের নগ্ন রূপ দেখে, আড়াল করে,
এতো কুৎসিত, মানতে পারে না নিজেকে, রন্ধে রন্ধে যে ঘুন ধরে আছে,
তাই ঝড় উঠুক, ধুয়ে যাক ব্যাভিচার, কদর্য কালিমা,
হাজার বছর ধরে  খাঁজে খাঁজে জমে থাকা যন্ত্রণা,
রাত গভীর হলে যারা জেগে ওঠে নিশাচর পাখির মতো,
জোৎস্নার আলোতে মুখ লুকায় লজ্জাতে,
বঞ্চনার স্বীকার যারা গৃহ হীন তারা,
উচ্চকোটি ঝাড়বাতির আলোর নীচে সোনালী ফোয়ারাতে,
একদিন সমাধি থেকে ঘুম ভেঙে উঠবে জেগে নীল রক্তস্রোত,
ততদিনে মনুষ্যত্ব হয়তো বিক্রি হয়ে যাবে,
তবুও একটা ঝড় উঠবেই , তার অপেক্ষায় সবাই,
মুহুর্তের প্রলয়, অগ্নিবর্ষা ভাসিয়ে দেবে সব অনাচার,
রুষ্ঠ প্রকৃতি থাকবে তার প্রমাণ,
তাই ভালোবাসার থাক হৃদয়ে সঞ্চয়,
প্রলয়ের শেষে নতুন চারাগাছ যে চাই।

বিষ -- মেঘ

বিষ
 মেঘ
২৪/০৫/২০২৩
ঐতিহাসিক মীরজাফরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে সভ্যতার অববাহিকায় --
শুধু বদলে গেছে তার নাম --
শুধু বদলে গেছে তার ধাম --
বহুরূপীর মতো মিশে আছে মানুষের ভিড়ে শয়তানের বহুরূপতার বিষছায়ায়।।

আগ্নেয়গিরির মতো বিভীষণের বিভীষিকার বেওয়ারিশ দাপটে চূর্ণ বিচূর্ণ মানুষের জীবন --
শুধু বদলে গেছে প্রতিহিংসার ছক --
শুধু বদলে গেছে দাবার ঘোড়ার মুখ --
মরীচিকার বিলিয়মান রং মেখে গিরগিটির পাল আকাশে বাতাসে ছড়ায় হায়নার আস্ফালন ।।

এখনো নির্মম অ্যাটিলার মতো মহান মহারাজাধিরাজ ঋনাত্মক গণতন্ত্রের সমীকরণে চালায় শাসন --
শুধু বদলে গেছে সেনাপতির হাতে রক্তমাখা তলোয়ার --
শুধু বদলে গেছে তরল গরল মাখানো মারণ হাতিয়ার --
দাবানলের লেলিহান শিখার মতো হিংস্র অসহিষ্ণুতার জ্যামিতি পোড়ায় মহামানবতার হৃদয়বন্ধন।।

এখনো ডাইনোসরের দল বসুন্ধরার কুমেরু থেকে সুমেরু পর্যন্ত ওড়ায় বর্বরতার পতাকা --
ওরা কেড়ে নিয়েছে অভয়ারণ্যের সাম্যতার মৌলিক অধিকার --
ওরা পাহাড়ের পাষাণ বুকে হেনেছে  বিচুর্ণিভবন আর আবহবিকার --
ওরা অমাবস্যার গভীর অন্ধকারে প্রাচীনসভ্যতার পর্বতে গোপন মন্ত্রনায় নেভায় জীবনের অবন্তিকা ।।


সুখের ফেরার অপেক্ষায় -- পান্না কাউসার

 সুখের ফেরার অপেক্ষায় 
পান্না কাউসার 
28/5/2023
সুখের সংলাপ লেখার খাতাটা
কলমের কালি ছিল অল্প--!!
তাই ভাষা তার আজও অসমাপ্ত,
অতীতে  লেখা সুখের দিনগুলোর
স্মৃতিতে হয়ে আছে অন্যান্য
সুন্দরের অস্তিত্ব হচ্ছে বিপন্ন
সুখের ফেরার অপেক্ষায়--!!
কাটছে দিন প্রতিনিয়ত
জীবনার শেষভাগে হবে কি
তা সম্পূর্ণ--!!
 সুখ তুমি আসবে কি,
 ফিরে কখনো--!!
স্বপ্নহীন ঘরে--!!
জীবনের প্রদীপকে,
 ভালোবাসার তেল দিয়ে 
জ্বালিয়ে রাখা কারণ ,
সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয় 
পশ্চিমের অস্ত যায় কিন্ত,
 ভালোবাসার উদিত হৃদয়ে হয় 
মৃত্যুতে সে অস্ত যায়---!!

সময়ের ছায়া -- প্রহ্লাদ ভৌমিক

 সময়ের ছায়া
 প্রহ্লাদ ভৌমিক 
 ২৯-০৫-২০২৩
পুরনো অ্যালবাম থেকে স্মৃতিকথা ওঠে এলে
মুখোমুখি ভেসে ওঠে প্রিয় চোখ ও মুখ,
ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে চাপা নিঃশ্বাস
আর অন্তরঙ্গ কথকতা 
ও যাপনের নিহিত শব্দ-কোলাজ।

এভাবেই আমাদের ক্রমশ ফিরে আসতে হয়
আমাদের পুরনো ও মজে যাওয়া গল্পের ভিতর ।
আসলে হারিয়ে যায় না কোনও কিছুই,
নির্বিবাদী ধরণ ও ধারণার বদল হতে হতে
অবশেষে জেগে ওঠে শুধুই শূন্যতা ।

অথচ আমাদের চারপাশের অদৃশ্য দেয়ালে
আমরা আড়ি পেতে থাকি ক্রমাগত
আর তীব্র সন্দেহ বাতিক হয়ে উঠি ।

তবুও কেউ আয়নার সামনে দাঁড়াইনা কখনও ।

মুখর মৌনতা ঘিরে ভারী হয়ে ওঠে
আমাদের নিবিড় কৌতুহল-মুহূর্ত,
ভারী হয়ে ওঠে উদাস জুড়ে অনন্ত ঝাউ মর্মর
আর প্লাবিত সময়ের দীর্ঘ ছায়া ।

তুমি কোথায় হে প্রিয় কবি -- বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য

 তুমি কোথায় হে প্রিয় কবি!
 বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য
২৫/০৫/২০২৩...
ওই বুঝি কাণ্ডারী দ্রুত বেগে ধেয়ে আসে
দেখি আসছে তরাসে বুঝি ধূমকেতুর বেশে !
তোমার অগ্নীবীণার তান দুরন্ত বাতাসে ভাসে
বিষের বাঁশী অনুরণিত প্রতিধ্বনিত আকাশে বাতাসে।
তারুণ্যের অগ্রদূত হয়ে ফুটিয়েছ পাষাণের বুকে ফুল
তবুও তোমার মূল্যায়নে, তোমারে বুঝতে রয়েছে ফাঁক, হয়েছে ভুল।
স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত তুমি এক মহা বীর 
অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত দুর্বার সদা উন্নত তব শির  
আপোষহীন লড়াইয়ে ছিলে যে তুমি জান কুরবান
শাসক শোষকের দর্প দম্ভরে করেছ অনায়াসে খান খান।
অকুতোভয়ে করেছ একের পর এক অপূর্ব সৃজন
ধন্য বঙ্গভূমি, ধন্য বঙ্গমাতা পেয়ে এমন সন্তান
সাম্যের, ন্যায়ের বাণী বিধৃত লেখনীতে তোমার
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণে ছিল সম্পৃক্ত ভরপুর
ফুটিয়েছ দ্রোহের ফুল অচেতন অবচেতন অর্ধচেতন মনে
বিপ্লবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, সমিধ ছড়িয়েছ কবিতায়, গানে
তোমার মধ্যে ঘটেছিল এক বহুমুখী প্রতিভার সমাবেশ
উন্মুক্ত প্রকাশিত হয়েছিল চেতনা চৈতন্য স্বাধীনতার উন্মেষ !
উদাত্ত কণ্ঠে গাওয়া, লিখিত তোমার শ্যামা মায়ের গান
আজও সতত আকর্ষণ করে, শুনলে পরে জুড়িয়ে যায় মন প্রাণ।
আজকের দিনে পরিব্যপ্ত এ কেমন জীবনধারা, কেমন অনুজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি
তাই ওগো প্রিয় কবি, তোমার অভাব অনুভবি, শুধু তোমার কথাই ভাবি
বিস্ময়ে ভরে মন, এ কেমন বঙ্গ! এ কোন বধ্যভূমিতে আছি ?
তোমারই কথাতে কই,, " দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি "
হেথা নিত্যদিন অগণন মানুষের অবাঞ্ছিত মৃত্যুমিছিল
শাসন, অনুশাসন, বিসর্জিত, লোপাট, নির্বাসিত, বুঝিবা শিথিল !
লাগামহীন দুর্নীতির অপ্রশমন অনাচারের বন্যায়
হে কবি তোমার প্রিয় বঙ্গভূমি যে কেবলই ভেসে যায় 
দুঃসহ দুর্বিষহ এই ক্রান্তিকালের আবহে হে কবি আজ তুমি কোথায় !
তোমারই অভাব ক্ষুরধার লেখনীর প্রাদুর্ভাব আজ বেশ বোঝা যায়।

মেয়ে... ষষ্ঠী -- অর্বাচীন

মেয়ে ...ষষ্ঠী
অর্বাচীন
২৬/০৫/২৩
অবশেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, বাজারের ব্যাগ হাতে,
মন্থর পায়ে চললাম বাজারে।
মাঝে-মাঝেই, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল! এ যেন সর্বনাশী পদ্মার গ্রাস,
কোন ভাবেই বাঁধ মানে-না। 
শরীরটা ভাল না আমি বুঝতে না পাড়লে ও ,
পাখির মা এর চোখ ধরে ফেলেছে।
আজ জামাই ষষ্ঠী ,আমার নিজের শ্বশুর বাড়ি কোনদিন যায়নি এই দিনে! 
পাখির মা এর সে আক্ষেপ এখনো আছে।
এই জন্য যাওয়া হয়নি, আমি ছিলাম প্রথাগত 
ধর্ম ভিত্তিক সামাজিক নিয়মের বাইরে!
অদ্ভুত কিছু যুক্তি ছিল আমার !
সামাজিক অনুষ্ঠান গুলো কে, 
আমার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতাম!
বাঙালি হিন্দু পরিবারে জন্ম সূত্রে ,
আমি উৎসবের দিন গুলো,উপভোগ করতাম আমার মত করে!
পাখির মা প্রথম প্রথম না মেনে নিলে ও,
বিকল্প বিহীনা মেনে নিয়েছে, এ খেয়ালি লোকের বশ্যতা! শুধু যে তার কপাল, তা নয় হয়তো ভালো ও-বেসে ফেলে ছিল এ অভাগা কে।
পাখির বয়স যখন মাত্র দের বছর, 
তখন আমার খেয়ালি পনার জন্য ,
আমাকে আলাদা করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে!
এ অপরিচিত গঞ্জে, অপরিচিত এই জন্য বলছি, আমরা জাতি ধর্মের টানে ছেড়েছি দেশ, 
তখন আমি এগারো ক্লাস,স্বপ্ন ভঙ্গে ছিলাম দিশেহারা, খেয়ালি পনা রক্তে!
আমারি গন্তব্যে যেন নতুন আমি!
থাকতে শুরু করলাম ভাড়া বাড়িতে ,
ছোট্ট পাখি ওর মা অপরিচিত পরিবেশ, নাকমুখ-কান গুঁজে পড়ে থাকা।
মা,বাবা,ভাই ,বোন ও বাড়ি ছেড়ে,
তিন জনের সংসারে পাখি টা পায়নি,
নিজের বাড়ির স্বাদ, পায়নি যখন দরকার,
নিজের কাছে ঠাকুমা,ঠাকুর দা,পিসি, কাকা! 
মন পোড়া পাখির ডানা হয়েছে ভার,
তারপর আমার নিজের বাড়ি হলো পুরোনো 
বাড়ির পাশে,অনেক আপন জন অনেক 
হই হুল্লোড় মন পোড়া পাখি শৈশব হীন থাকলো পড়ে একা, নিজের বাড়ির ভাড়াটে হয়ে!
পাখি এখন অনেক দূরে, ডানা জোড়া ভার,
দেশ জাতি ধর্ম ছেড়ে সাত সমুদ্দুর পার!
আসা যাওয়া ওখান থেকে নয়তো অতি সোজা, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে আসা বড় সাজা।
চোখের জলে ঝাপসা চোখ রুমাল খুঁজে মুছি,
মানুষ কেনো হয়নি আকাশ মানুষ হয়েই খুশি।
পাশের বাড়ির এসছে মেয়ে !জামাই বাবাজী সাইনবোর্ড, মা বাবার চাই মেয়ে।
আমার পাখি অনেক দূরে! 
দেখে যেন কেউ বুঝতে না পাই আছি আমি কষ্টে, 
দু চার ফোটা উষ্ণ জল  আবার পড়লো গালে,
রুমাল দিয়ে মুছে নিলাম, কেউ যেন না জানে! জামাই ষষ্ঠী বুকের মধ্যে ব্যাথা রাখি পুষে!
তাইতো আজ ব্যাগ হাতে মনের তিক্ত স্বরণ,
বাজার ঘুরে মাছ কিনেছি তিন রকমের মিঠাই, টলায়মান মৃদু পায়ে যাচ্ছি বসে যেথা কসাই!
পাখি আমার খাসি ভালো খায়!
কেউ না খাক আমিই খাবো গান্ডে পিন্ডে সব!
কোল ড্রিংকস ও নিতে হবে যাবে না কিছু বাদ ! সামনে দেখি বন্ধু বিষ্ণু, সঙ্গে ছোট্ট নাতি,
হাসি মুখে এগিয়ে চলি চোখ মুছে রুমালে,
হঠাৎ কেনো বুকের মধ্যে চিনচিনে এই ব্যাথা, লেখার পাতা শেষ নাকি? পাখির মা অভাগী 
আমার থাকবে শুধু একা ..........................!

(এসব শুধু কল্পনা তে, ঘুম টুটে যায় পাখির ডাকে, বসে পাখি মায়ের কাছে মুখ করে ভার 
..............নামতা শেখে।)

এ পাড়ের নীলাঞ্জনা -- রামকৃষ্ণ বিশ্বাস

 এ পাড়ের নীলাঞ্জনা
রামকৃষ্ণ বিশ্বাস 
 ২৬//০৫//২ ৩
ওপাড়েতে রামধনু দেখ,সপ্তরঙে মেলে
এপাড়েতে নীলাঞ্জনা নির্বাকে স্বপন আঁকে।
ওপাড়েতে সাদা কাশে মেঘ মল্লার মেলা
 নীলাঞ্জনার ললাট জু্ড়ে কৃষ্ণকেশের খেলা।
ওপাড়ের নীতিকথা এপাড়ের ভাবনায়
এপাড়ের দখিনা বাতাস ওপাড়েতে ধায়।
      নীল গগনের নীলঞ্জনা গোধূলির পানে চেয়ে.…
কোথা হতে অশ্রু আসে, পড়ে কপোল বেয়ে।
অমোঘ শত কল্পনা গো স্বপন জালে বোনা
কোথা দিয়ে অবসর ক্ষয় যায় না আজো গোনা।

নীলাঞ্জনা নীলাঞ্জনা এত কেন ভাবো
প্রকৃতির নেওয়া দেওয়ায় সিন্ধু স্বপন আঁকো!
কোথায় যেন ছিঁড়েছে তার, কে ই বা জানে তা
উদাসিনী নীলাঞ্জনা, তার হিসেব পাবে না।
সবই আছে নিয়ম মত, সব ই রবে পড়ে
জীবন বজরায় পাল খাটিয়ে যাও না অচিনে উড়ে।
হৃদয় তোমার বড় ধনী, তবুও যেন ফাঁকা
রঙ মেখেছে দিগন্ত আজ, সাঁজের চাঁদ বাঁকা।

কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, চেনা কোন সূত্র
ভুলতে চাইলেও যায় না ভোলা,উদাস করা মন্ত্র। 
আসেনা ফিরে যাবার পরে, ঝাঁপসা হয়ে যায়
 নীলিমণির হৃদয় আঁখি, আকাশগঙ্গায় ধায়।
ধীরে ধীরে অস্পষ্ট কি, কোথায় মিলিয়ে গেল
সম্পর্কটা হৃদয় থেকে, উপরে  কে যে নিল।
সেই গোধূলির স্মৃতি চিহ্ন সাঁজের বেলা হারায়
দিগন্তরানীর হৃদয় শূণ্য  অপলকে ছায়..!

অশনি সংকেত -- অমি রেজা

অশনি সংকেত
অমি রেজা
২৭-০৫-২০২৩
তোমার  যুগল চোখে নায়াগ্রা কেন ?
ফলবতী পৃথিবীর বুকে জেগেছে প্রচন্ড খরা
উর্বরতা,উৎকর্ষতা হারিয়ে সবুজ  আজ বর্ণহীন
ধুলি ধূসরিত মরুপ্রান্তর আর বিষাক্ত কার্বনে
পৃথিবী আজ জবুথবু,জরাগ্রস্ত 
বাতাসে চলেছে শোকের মাতম।।
 
তোমার  যুগল চোখে নায়াগ্রা কেন ?
যদি জানতে চাও
ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির হঠাৎ ফুঁসে উঠা দেখ
আফ্রিকার ক্ষুধার্ত মানুষের হাড্ডিসার কংকাল দেখ
ঘুরে এসো সিরিয়া,ইউক্রেন,ফিলিস্তিন,আরাকান পরাশক্তিদের বিভৎসতা কিভাবে তাদেরকে
ছিঁড়ে ফুরে আস্তাকুর বানিয়েছে,
মানুষের সভ্যতা হয়েছে আজ লুণ্ঠিত,লাঞ্ছিত।

তোমার  যুগল চোখে নায়াগ্রা কেন ?
পৃথিবীর নগ্ন শরীর দেখ
মেরু অঞ্চলের হিম শীতল বরফ কেমন গলে গলে পড়ছে
সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা মুহুর্মুহু বেড়েই চলেছে
সমুদ্র উপকুলবর্তী  দেশগুলি আজ হুমকির সম্মুখীন
হঠাৎ তীব্র জলোচ্ছাসে হারিয়ে যাবে
জানা,অজানা কত মানচিত্র।। 

পৃথিবীকে ধ্বংস করছি তুমি,আমি,আমরা
শিল্পোন্নত,উন্নত,উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার ঘোড় দৌড়ে
গাছ কেটে উজাড় করছি বনাঞ্চল,
বানাচ্ছি উঁচু উঁচু আকাশ ছোঁয়া ইমারত
কলকারখানার বর্জ্য দিয়ে কলুষিত করছি নদ-নদী,
সুপেয় পানি তুমি কোথায় পাবে?
জমির লাবণ্য তুমি কি করে ফেরাবে? 
জাগো মানুষ জাগো,কাঁদো তুমি।
আগামী প্রজন্মের জন্য তুমি কি রেখে যাবে?
তাই যুগল চোখে নায়াগ্রা বহে-
জবুথবু এক পৃথিবীর অশনি সংকেত বহে।।

বড় রিক্ত আমি -- শক্তিপদ ঘোষ

 বড় রিক্ত আমি
  শক্তিপদ ঘোষ
  ২৬ . ০৫ . ২০২৩
যে পথের প্রতি ধূলিকণাকে আমি চিনতাম  ,
যে পথও খুব চিনত সেই তোমাকে আমাকে ,
একযুগ পরে আজ হঠাৎ সে'পথে আমি ।
তফাত এই , আজ নিজেকে মনে হচ্ছে
নবাগত কেউ , পথও আমাকে চিনছে না ,
যে পথই একমাত্র জানত  , আমাদের
মনের বীণায় নিত্য কী কথা বাজত কত সুরে ।
আজ সে'পথের ঘাস ঢেকেছে কংক্রিটের পথ  ,
দু'পাশের  ঝোপঝাড় দখল করেছে
সারি সারি বিজ্ঞাপনের বড় বড় হোর্ডিং ।

এই পথই ছিল নিত্যদিনের আসা যাওয়ার পথ ,
তবে আজ আর তেমন শরীরী কেউ পাশে নাই ।
একা একা চুপকথার অরণ্য ভাঙতে ভাঙতে 
মনে পড়ল , এই পথেই মনে মনে বলেছিলাম , 
হাত পেতে তোমাকে ভিক্ষা চাইব না , একদিন 
বিজয়মাল্যেই তোমাকে গ্রহণ করব  ;
নিজের হাতেই তোমার ললাটে এঁকে দেব
আমার যুদ্ধ জয়ের রক্ত-তিলক  , 
তোমার কবরীতে দেব নীলকণ্ঠের পালক ,
এই রক্ত হাতেই সগর্বে তোমার হাতে দেব 
সেই সত্য-শপথের শ্বেতকরবীর গুচ্ছ ।
তুমি আমার জয়ের গৌরবে যখন হাসবে 
তখন আমার সেই নীরব বীণার
তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে বাজবে মরুবিজয়ের গান ,
আমি এক-আকাশ অহঙ্কার নিয়ে
হিমালয়ের মত গগন স্পর্শ করে বাঁচব ।

তারপর কোথা থেকে হঠাৎ দমকা একটা
ঝড় এসে সম্পূর্ণ বদলে দিল আমার পৃথিবী ।
আমার পথ আটকাল ক্যাকটাসের অরণ্য ,
যে দিকেই যাই , বৃহৎ অজগরের মত
বিপুল হাঁ করে থাকে আগুনে মরুভূমি ।
কোথাও শতেক শার্দূল একসাথে
থাবা উঁচিয়ে পথ আটকায় ; এমনই পথে পথে বিন্ধ্য , হিমালয়  , শ্বাপদ-সংকুল সূগভীর অরণ্য  ,
কোথাও খরস্রোতা দুর্লঙ্ঘ্য নদী , কোথাও বা
উদ্দাম সাগর-মহাসাগর ।
আমি মনে মনে তোমার নাম ধরে
ব্যর্থ হাঁক দিয়েছি কত ; যতবার হাঁক দিয়েছি ,
ততবারই পাহাড়ে পাহাড়ে প্রত্যাহত হয়ে 
ফিরে এসেছে তার ব্যর্থ প্রতিধ্বনি ।

সেদিন অজস্র 'না'-এর আগুনে ঝাপটায় 
নিশ্চুপ একা আমি ঝলসে গেছি ,
একা অসম যুদ্ধে নিরস্ত্র লড়তে গিয়ে 
অভিমন্যুবধ হয়েছি ।
নিভৃতে নিঃশব্দ কত রক্ত ঝরেছে
কেউ জানল না ; শুধু একা আমি জানলাম
পথের থেকে হারিয়ে গেছে পথ ,
হারিয়ে গেছে নীলকণ্ঠের পালক , 
শুকিয়ে গেছে শ্বেতকরবীর গুচ্ছ , 
আর , রাবণের খড়্গের ভীম আঘাতে 
তেমনই ঝরে গেছে পক্ষীরাজের ডানা ।
আমার হাতের রক্ত হাতেই শুকিয়ে গেল ,
তোমার ললাটে এঁকে দিতে পারিনি
আমার স্বপ্নের , আমার সাধনার 
সেই তেমন রক্ত-রাঙা  বিজয়-তিলক ।

আজ বড় রিক্ত আমি , তবু মিথ্যে বেঁচে আছি
মাথায় নিয়ে এক আকাশ মিথ্যে অহঙ্কার  ;
তবু তোমাকে আমি মরতে দিইনি  ,
রাতের নিশ্চুপ তারারা এ কথা জানে ,
রাতের নিদহারা পাখিরা এ কথা জানে ।
আমার না-গাওয়া গানের প্রতিটা কলি জানে ,
লেখা বা না-লেখা কবিতার প্রতিটা বর্ণ জানে ;
শুধু তুমি জানো না , জানবেও না কোনদিন ,
কবে বা কেমন করে হারিয়ে গেছি আমি ।
------------------------------------------------------------

ফলাহারের মহোৎসব -- গৌতম তরফদার

ফলাহারের মহোৎসব
গৌতম তরফদার
৩০/০৫/২০২৩
গরমে হাঁসফাঁস               কাদায় পাতিহাঁস 
             নদীনালা শুকিয়ে কাঠ।
আমের আস্ফালন        ঝড়ঝাপটার দলন
         জমজমাট পাকাফলের হাট।

কালবৈশাখীর উঁকি              জ্যৈষ্ঠের ঝুঁকি
              বাঁচার লড়াই জারি।
জীবনধারণের লড়াই          গরীবের বড়াই
            সৌভাগ্যের সাথে আড়ি।

জামাইয়ের আগমন    দ্বিধাদ্বন্দ্বের  নির্গমন 
         ষষ্ঠীপূজা আনন্দোৎসবে ভরা।
ভুঁড়িভোজের আয়োজন    মনের প্রয়োজন 
          আনন্দফূর্তিতে ঠাসা ঘরা।

জ্যৈষ্ঠমাসের শেষ       বর্ষামুখরে একশেষ 
          ঝড়বৃষ্টির দাদাগিরি শুরু।
গরমাগরম হাওয়া      পান্তাবাতাস খাওয়া 
          গলদঘর্মে কোঁচকানো ভুরু। 

লিচুর লুকোচুরি           কাঁঠালের বাহাদুরি 
          অল্পদিনের জারিজুরি বেশ।
বর্ষাবাদলের দেশ        কয়েকমাসের রেশ
          ফলাহারের মহোৎসব শেষ।


প্রকৃতি ও তুমি -- দিলীপ ঘোষ

প্রকৃতি ও তুমি
দিলীপ ঘোষ
০১/০৬/২৩
কত গান কত কবিতা
তোমার দেহ জুড়ে
অধরা অজানা শিল্প সাহিত্য
অঙ্গের স্তরে স্তরে
বিন্দু বিসর্গ জানা হলো না
এসেও জীবনের পশ্চিমে
দূর হতে দেখি তোমার মাধুরী
উপভোগ করি অন্তরে।

সীমার মাঝেও অসীম তুমি
সাধারণ রূপে অপরূপ থাকে লুকিয়ে
তোমার রূপ ও গুনের স্পর্শ মেলে
যখন আসো ওড়না উড়িয়ে,
ধরা পড়ে তার কিছুটা
জীবনানন্দের দৃষ্টি পেলে।

তোমার রূপ ও গুনের ব্যাপ্তি
ঘোমটা খোলে শিল্পে, সাহিত্যে
প্রতি মূহুর্তে নব নব রূপে রসে তুমি
সা রে গা মা বাজাও জীবনে।