এসো হে বৈশাখ
----------------------
পহেলা বৈশাখ।
ধীরেন গোস্বামী।
-------------------------------
পুরনো যা পুরনো সে,
ইতিহাসের পাতায় থাক,
আজ বাঙলার নতুন বছর,
শুভ দিন পহেলা বৈশাখ।
আজ আমাদের নতুন বছর,
শুভ দিন পহেলা বৈশাখ।
পুরানো কে বিদায় করে,
নতুন বছর এলো ঘরে,
নতুন খাতা নতুন পাতা,
নতুন দিনের দিলো ডাক।
আজ বাঙলার নতুন বছর,
শুভ দিন পহেলা বৈশাখ।
নতুন দিনের এই প্রভাতে,
সবারে করি গো আহ্বান,
পুরানোদের কন্ঠে বেজে উঠুক,
শুভ নব বর্ষ বরণ গান।
পুরনোরাই সাজবো নতুন,
পোরবো নতুন সাজ পোশাক।
আজ বাঙালির নতুন বছর,
শুভ দিন পহেলা বৈশাখ।
আমরা যে সব এগিয়ে চলি,
গতিময় চলারই ছন্দে,
পুরানো কে যাই ভুলে যাই,
নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দে ।
নববর্ষে সবার এইটুকু প্রার্থনা
দুর হটে যাক--
-- সবার মনের জ্বালা যন্ত্রণা,
এই আনন্দ সারা বছর
সবার ঘরে থাক,
এসো এসো নতুন বছর--
-- পহেলা বৈশাখ।
আজ বাঙালির নতুন বছর,
শুভ দিন পহেলা বৈশাখ।
---------------
নববর্ষ
তন্ময় আঢ্য
----------------------------------------
একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় নববর্ষের মধ্যে দিয়ে,
বিগত বছরের সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা সব ভুলে গিয়ে ।
নতুন কে আমরা বরণ করি নানা মুহূর্ত কে সামনে রেখে,
নতুন নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি নববর্ষ কে দেখে ।
আমরা বাঙালিরা মনে করি নববর্ষ উদযাপন একটা উৎসব,
প্রতিটি ঘরেই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নববর্ষের আনন্দে মাতে সব।
বাংলা নববর্ষের সূচনা হয় পহেলা বৈশাখ দিয়ে,
আনন্দ করি নতুন বছরে নানা নতুন স্বপ্ন নিয়ে ।
বাংলা ক্যালেন্ডারে মাস বৈশাখ দিয়ে যায় চেনা,
বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের শুভ মুহূর্তের সূচনা।
প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ শুভ বলে আমরা জানি,
যত শুভ কাজ ঐ দিনের জন্য ভালো বলেই মানি।
বাঙালি মানেই পয়লা বৈশাখে উৎসবে মজে থাকা,
নতুন পোশাকে ধুতি-পাঞ্জাবিতে বাঙালিয়ানা ধরে রাখা।
পহেলা বৈশাখে ছোটরা আনন্দ করে সারাদিন,
নানান ধরনের খাবার আয়োজন হয় যে সেদিন।
দোকানিরা ব্যস্ত থাকে প্রতিষ্ঠানে পূজা অর্চনাতে,
ক্রেতাদের আমন্ত্রণে বকেয়া ওঠে সাহিত নামেতে।
-------------
নববর্ষ
স্বপন গায়েন
---------------------------
বিদায়ের ক্ষণে গুনছে প্রহর
বছর হবে শেষ
সুখ দুঃখের স্মৃতিতে ভরা
রইবে তারই রেশ।
সুখের ঘরে কান্না এসেছে
দুঃখ করেছি জয়
নতুন বছর খুশিতে ভরা
দুঃখ কান্না নয়।
তীব্র দহন হয়নি শুরু
তবুও বোশেখী ঝড়
ঘর ভেঙেছে কান্না কেড়েছে
উড়িয়ে চালের খড়।
তবুও বাঁচে আশায় মানুষ
আগামী স্বপ্ন নিয়ে
মরা নদীতে আসছে জোয়ার
বুঝেছি হৃদয় দিয়ে।
নতুন প্রভাত সোনালী স্বপ্ন
শুরু হোক নববর্ষ
বঞ্চনা নয় অভিযোগ নয়
আমরা করবো হর্ষ।
ধনী গরীব একসাথে বসে
খাবে কখন অন্ন
এমন শপথ করবো সবাই
এতেই জীবন ধন্য।
-------------
-----------------------
এসো হে বৈশাখ'
হিরণ্ময় দত্ত
----------------------------------
বসন্তে দখিনা হাওয়ার দোলায়
প্রাণ জুড়ায় ফাগুন।
পলাশ শিমুলের রঙের খেলায়
মনে প্রেমের আগুন।
বসন্তের বিদায়ে মানুষ অতিষ্ঠ
গ্রীষ্মের খরতাপ প্রবল।
গাছগাছালি রোদে যায় ঝলসে
জল তেষ্টা পায় কেবল।
বসন্তের বিদায়ে বাংলা নববর্ষের
হয় শুভ পদার্পণ।
'এসো হে বৈশাখ'- বলে সকলে
করি মোরা বরণ।
নববর্ষে বণিকেরা নতুন খাতার
করেন উদ্বোধন।
পয়লা বৈশাখ 'হালখাতা' নামে
বাংলায় প্রচলন।
বৈশাখে মাঠঘাট সব জলবিহীন
ফুটিফাটা চৌচির।
একফোঁটা বরিষণের লাগি মানুষ
চাতকের মতো অধীর।
বজ্রনিনাদ সহ রুদ্র রূপে আসে
প্রবল কালবৈশাখী ঝড়।
চারিদিক ধূলিধূসর লন্ডভন্ড করে
ওড়ায় মানুষের ঘর।
টেলিফোন, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে
তার যায় ছিঁড়ে।
কত মানুষ গৃহহীন, নিরাশ্রয় হয়
গাছপালা ভেঙে পড়ে।
আম,জাম, কাঁঠাল,তরমুজ, ফুটি
রসালো ফলের সমাহার।
জবা, বেলী, জুঁই, চামেলি,গন্ধরাজ
নানান ফুলের বাহার।
পুকুর,নদী,খাল, বিল সবেতেই
জল শুকায়ে যায়।
ঘর্মাক্ত কলেবর শীতল হাওয়ায়
একটু জুড়াতে চায়।
******
-------------------------
বৈশাখী অবগাহন
সুতপা ব্যানার্জী(রায়)
---------------------------------
শীতের জার লাগা সন্ধ্যায় ঝরা পাতা বলেছিল,
আসছে বসন্ত..সাজো নতুন করে,
অবিশ্বাসী মন নিয়ে বিবর্ণ কাঁকন সাজালাম,
ফুলের সাজই হল গ্রীবার কথামালা,
নব বাসন্তিকা ঢেলে দিল বাসন্তী রঙ,
আচ্ছন্ন বসন্তকেও ক্রমে বিদায় জানালাম,
সবাই বলল-"সৃষ্টিছাড়া, ছন্নছাড়া, বিদ্ঘুটে,"
তারুণ্য ছেড়ে চিরযোগিনীর বেশ,
"গাছ বাঁচাও, পলাশ বাঁচাও"- স্লোগানে আত্মস্থ,
কে যেন বলল- এ নিজেকে ঠকানো,
নিজের থেকে নিজের পালিয়ে বেড়ানো,
অন্তর্লোক তো যুক্তির জালে বন্দী,
যুক্তি সেখানে খেয়ালী আবেগের পাহারাদার,
হঠাৎ কার বুক পকেট থেকে এল একটা উড়োচিঠি,
সাদা কাগজে আতরের গন্ধ, হার না মানা ভাব,
চিঠিটা যতবারই ফেলে দিই, উড়ে আসে,
কখনও মঁহুয়ায় বিভোল, বা রক্তগোলাপ সাঁটা,
আপত্তিকর রকমের গায়ে পড়া কিন্তু অবশ্যম্ভাবী,
চিঠির মালিকের সালিশি করার লোকের অভাব নেই,
আমার প্রিয় মানুষেরাই দল বদলের সারিতে,
আপাত ষড়যন্ত্রটা হঠাৎ কেমন প্রিয় হয়ে উঠছে,
বৈশাখী পূর্ণিমায় গানে গানে হারালাম,
তপ্ত দিনেও বইল সুরেলা বায়ুপ্রবাহ,
কাব্যমাস দেখি বড় সর্বনেশে গ্রাস করছে সবকিছু,
মনের এই বিচিত্র ধ্বনি,অনাস্বাদিত আনন্দই কী প্রেম,
প্রশ্নটা অনুচ্চে হলেও উত্তরটা হাতে রেখে গেল,
চিরসখা হয়ে বৈশাখী অবগাহনে, শীতল স্নানে।