এবং রূপকথা
--- সিরাজুল ইসলাম ঢালী
তারিখ : ১১.০৬.২৩
হীরের টুকরো ছেলে ! ডাক নাম হীরে । ভালো নাম পলাশ পাল চৌধুরী । মিষ্টার এবং মিসেস্ পাল চৌধুরীর একমাত্র ছেলে । এ বছরে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠল । পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র । পড়াশুনা আর হাজার রঙিন স্বপ্নের মাঝে হীরের এক বিশাল ঘটনা ঘটে গেল । পূজার ছুটিতে হীরে বাড়িতেই ছিল । বাড়ি বসিরহাট । তখন গোধূলি বেলা, রবিবার । বাড়ি থেকে তিরিশ চল্লিশ মিটার দূরে একটা সবেদা গাছ । গাছটায় উঠে খেলাচ্ছলে গান করতে করতেই ডালপালার উপরে হীরে শুয়ে পড়েছে । কখন চোখে নিদ্রা এসে পড়েছিল, তাও তার অজানা । তারপরে ? হঠাৎ এক শ্বেতশুভ্র ছোট্ট পাখি হীরের কাছে উড়ে এসে বসল । ডানায় লেখা, এসো আমার ডানার উপরে বসো । ঘুম চোখে হীরে বসেই পড়ল । তৎক্ষণাৎ পাখি উড়ে চলতে শুরু করল । সন্ধ্যা হয়ে গেল । কোথাও হীরেকে পাওয়া যাচ্ছে না । বাবা মা আত্মীয় স্বজন সবাই কান্নাকাটি শুরু করল । এক দিকে খোঁজাখুঁজি চলছে, অন্য দিকে একদল মানুষ থানার দিকে ছুটল...।
হীরে আর পাখি হাজার কোটি মাইল উড়ে চলল । তার পরে মনোরম ভূস্বর্গে হীরে এসে নামতেই দেবদেবীরা ছুটে এলেন । সবাই মিলে হীরেকে রাজমুকুট পরিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা রূপে স্বীকার করে নিলেন । রাজাধিরাজ হীরে বিয়ে করে রাজরানী এবং পরে রাজপুত্র সহ রাজকন্যা লাভ করলেন । রাজপ্রাসাদে কোনো অভাব নেই, শুধুই আনন্দ আর আনন্দ । রাজভোগ থেকে নাচ গান অঢেল ! ভালোবাসার শেষ নেই ! রাজাধিরাজ হীরে ভালোবেসেই হাজার হাজার দেশ জয় করলেন । ভালোবেসেই কোটি কোটি হৃদয় ও প্রকৃতি জয় করে ধনধান্যেপুষ্পে আর অর্থের প্রাচুর্যে তিনি রাজত্ব করতে লাগলেন । স্বর্গ মর্ত্য পাতাল ধন্য, ধন্য সমস্ত প্রজাবর্গ ।
অবশেষে রাত্রি বেলা পুলিশ সহ সবাই আলো নিয়ে জোরদার অনুসন্ধান শুরু করলেন । মায়ের চোখের জলে সব ভিজে গেল । মা যখন কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে ডেকে উঠলেন,
... কোথায় ? কোথায় আমার হীরের টুকরো, হীরে...? মায়ের গলার শব্দে হীরের ঘুম ভেঙ্গে গেল, তখন গাছ থেকে নেমে হীরে সোজা ছুটে গিয়ে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল । শেষ হল স্বপ্ন, শুরু হল বাস্তব... ।
No comments:
Post a Comment