Friday, June 2, 2023

মেয়ে... ষষ্ঠী -- অর্বাচীন

মেয়ে ...ষষ্ঠী
অর্বাচীন
২৬/০৫/২৩
অবশেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, বাজারের ব্যাগ হাতে,
মন্থর পায়ে চললাম বাজারে।
মাঝে-মাঝেই, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল! এ যেন সর্বনাশী পদ্মার গ্রাস,
কোন ভাবেই বাঁধ মানে-না। 
শরীরটা ভাল না আমি বুঝতে না পাড়লে ও ,
পাখির মা এর চোখ ধরে ফেলেছে।
আজ জামাই ষষ্ঠী ,আমার নিজের শ্বশুর বাড়ি কোনদিন যায়নি এই দিনে! 
পাখির মা এর সে আক্ষেপ এখনো আছে।
এই জন্য যাওয়া হয়নি, আমি ছিলাম প্রথাগত 
ধর্ম ভিত্তিক সামাজিক নিয়মের বাইরে!
অদ্ভুত কিছু যুক্তি ছিল আমার !
সামাজিক অনুষ্ঠান গুলো কে, 
আমার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতাম!
বাঙালি হিন্দু পরিবারে জন্ম সূত্রে ,
আমি উৎসবের দিন গুলো,উপভোগ করতাম আমার মত করে!
পাখির মা প্রথম প্রথম না মেনে নিলে ও,
বিকল্প বিহীনা মেনে নিয়েছে, এ খেয়ালি লোকের বশ্যতা! শুধু যে তার কপাল, তা নয় হয়তো ভালো ও-বেসে ফেলে ছিল এ অভাগা কে।
পাখির বয়স যখন মাত্র দের বছর, 
তখন আমার খেয়ালি পনার জন্য ,
আমাকে আলাদা করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে!
এ অপরিচিত গঞ্জে, অপরিচিত এই জন্য বলছি, আমরা জাতি ধর্মের টানে ছেড়েছি দেশ, 
তখন আমি এগারো ক্লাস,স্বপ্ন ভঙ্গে ছিলাম দিশেহারা, খেয়ালি পনা রক্তে!
আমারি গন্তব্যে যেন নতুন আমি!
থাকতে শুরু করলাম ভাড়া বাড়িতে ,
ছোট্ট পাখি ওর মা অপরিচিত পরিবেশ, নাকমুখ-কান গুঁজে পড়ে থাকা।
মা,বাবা,ভাই ,বোন ও বাড়ি ছেড়ে,
তিন জনের সংসারে পাখি টা পায়নি,
নিজের বাড়ির স্বাদ, পায়নি যখন দরকার,
নিজের কাছে ঠাকুমা,ঠাকুর দা,পিসি, কাকা! 
মন পোড়া পাখির ডানা হয়েছে ভার,
তারপর আমার নিজের বাড়ি হলো পুরোনো 
বাড়ির পাশে,অনেক আপন জন অনেক 
হই হুল্লোড় মন পোড়া পাখি শৈশব হীন থাকলো পড়ে একা, নিজের বাড়ির ভাড়াটে হয়ে!
পাখি এখন অনেক দূরে, ডানা জোড়া ভার,
দেশ জাতি ধর্ম ছেড়ে সাত সমুদ্দুর পার!
আসা যাওয়া ওখান থেকে নয়তো অতি সোজা, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে আসা বড় সাজা।
চোখের জলে ঝাপসা চোখ রুমাল খুঁজে মুছি,
মানুষ কেনো হয়নি আকাশ মানুষ হয়েই খুশি।
পাশের বাড়ির এসছে মেয়ে !জামাই বাবাজী সাইনবোর্ড, মা বাবার চাই মেয়ে।
আমার পাখি অনেক দূরে! 
দেখে যেন কেউ বুঝতে না পাই আছি আমি কষ্টে, 
দু চার ফোটা উষ্ণ জল  আবার পড়লো গালে,
রুমাল দিয়ে মুছে নিলাম, কেউ যেন না জানে! জামাই ষষ্ঠী বুকের মধ্যে ব্যাথা রাখি পুষে!
তাইতো আজ ব্যাগ হাতে মনের তিক্ত স্বরণ,
বাজার ঘুরে মাছ কিনেছি তিন রকমের মিঠাই, টলায়মান মৃদু পায়ে যাচ্ছি বসে যেথা কসাই!
পাখি আমার খাসি ভালো খায়!
কেউ না খাক আমিই খাবো গান্ডে পিন্ডে সব!
কোল ড্রিংকস ও নিতে হবে যাবে না কিছু বাদ ! সামনে দেখি বন্ধু বিষ্ণু, সঙ্গে ছোট্ট নাতি,
হাসি মুখে এগিয়ে চলি চোখ মুছে রুমালে,
হঠাৎ কেনো বুকের মধ্যে চিনচিনে এই ব্যাথা, লেখার পাতা শেষ নাকি? পাখির মা অভাগী 
আমার থাকবে শুধু একা ..........................!

(এসব শুধু কল্পনা তে, ঘুম টুটে যায় পাখির ডাকে, বসে পাখি মায়ের কাছে মুখ করে ভার 
..............নামতা শেখে।)

No comments: