অমর একুশে
~~~~~~~
রক্তের দাগ
~~~~~~~~~
শ্যামল কুমার মিশ্র
~~~~~~~~~~~~
রোজ রাতে স্বপ্ন দেখে খোকন। খোকনের স্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে এক মা। শতচ্ছিন্ন বেশবাস। আলুলায়িত কেশে স্খলিত পদে হেঁটে চলেছে ঢাকার রাজপথে। কোন দিকে দৃষ্টি নেই। শান্ত স্নিগ্ধ চোখ দুটোতে শীতল বহ্নি প্রজ্জ্বলিত। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে ভাষা শহীদ মিনারের দিকে। অচঞ্চল দৃঢ় প্রত্যয়ী সে চলা। মিনারের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ধীরে ধীরে হাতে ধরা পুঁটলি থেকে বের করে কয়েকটি ফুল। ছড়িয়ে দেয় মিনারের পাদদেশে। তারপর আস্তে আস্তে মিনারের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলে ওঠে---ঘুমো রফিক....ঘুমো... আমি তো আছি খোকা....। তারপর কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়। উদভ্রান্তের মতো পরনের ছেঁড়া টেনা দিয়ে দেওয়ালের গায়ে ঘষতে থাকে যেন কিছু মোছার এক দুর্মর চেষ্টা। হাতের আঙ্গুল বেয়ে টপটপ রক্ত ঝরে পড়ে।খোকন চিৎকার করে ওঠে---এ তুমি কি করছ মা? উত্তর নেই। খোকন আবার ও প্রশ্ন করে। ধীরে ধীরে মাথা তোলে মা। বলে ওঠে--- মুছছি, রক্তের দাগ। রফিকদের রক্তের দাগ। দেখছ না, দেওয়াল জুড়ে কত রক্ত.... মায়ের দুচোখে জলের ধারা।
খোকনের ঘুম ভেঙে যায়। অপসৃয়মান মায়ের মুখটা ধীরে ধীরে আবছা হয়ে আসে।
~~~~~~~~~
কল্যাণ ভট্টাচার্য্য
~~~~~~~~~~~~
একুশ আমার অহঙ্কার
~~~~~~~~~~~~~
একুশ মানে তো ছাত্রের রক্তাক্ত লাশ
আর বুলেটে ভেজা লাল ঘাস।
একুশ মানে তো প্রতিবাদ আর ধিক্কার
রক্তে ভিজে যায় বাংলার অক্ষর।
একুশ মানে তো দরদী বুকে চোখের জল
বুটের শব্দে শূণ্য হয় মায়ের কোল।
একুশ মানে তো শহীদের বদলে মাতৃভাষা
বুলেটের চোখে নামে কালো ধোঁয়াসা।
বন্দুকের নিশানায় রক্ত নদী বহতায়
বসন্তে বাঁধা সবুজ প্রাণ হারিয়ে যায়
চোখের জল তৃষ্ণা মেটায় হাহুতাশে
স্তম্ভিত পৃথিবী বিবেকহীন অত্যাচারে।
লাশের পাহাড়ে মাতৃভাষার অহঙ্কার
বুটের নীচে লেগে থাকা রক্তে ধিক্কার
নির্ভীক মশাল বসন্তের শানিত চোখে
কালো পৃথিবীর কম্পন ঈগলের ঠোঁটে।
একুশ মানে তীব্র প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ
বাংলা আমার অহঙ্কার বোঝে নি নির্বোধ।
~~~~~~~
মাতৃভাষা
------------------
কৃত্তিবাস ওঝা
=================
ভাষা শিক্ষার সমবাহু ত্রিভুজ, --
পড়া বলা আর লেখা
অন্তঃ সম্পর্ক দূর্বল হলে
তিনজন হয়ে যায় একা ।
জোনাকির মত শব্দমালার আলো নিয়ে
মাতৃভাষা জ্বলতে জ্বলতে
নিজেই তৈরি করে নিজের ভূবণ ।
সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রেম ভালোবাসা, দিনগুজরান
মাতৃভাষা সবার মাধ্যম ।
বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা
ভাষা মায়ের মর্যাদা রক্ষা করতে
আবুল, জব্বার, বরকত, সালাম, রকিককে
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে করতে হয়েছে মৃত্যুবরণ ।
পৃথিবীর ভাষা তালিকায়
বাংলা আজ না কি পঞ্চম মহাজন
এ সম্মান পেতে অসংখ্য শহীদের হয়েছে রক্তক্ষরণ ।
অনেক আন্দোলন সংগ্রামে পাওয়া
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে
করছি তাদের স্মরণ ।
ভাষা শিক্ষার সঞ্চয়ে অসংখ্য গুপ্তধন
গ্লোবাল এক প্রজন্ম তৈরির নেশায়
মাতৃভাষাকে গামছা পরিয়ে
ভাষার সম্মান করছি হরণ ।
ভাষার সম্মান, ভাষা শহীদদের মর্যাদা রক্ষা
আজ বড় প্রয়োজন ।
মাতৃভাষাকে খুন করে
কোন ভাষা চাপিয়ে দেবার চেষ্টার বিরুদ্ধে
চালিয়ে যেতে হবে আন্দোলন ।
~~~~~~~~~~~
রক্তে রঞ্জিত দেশ
~~~~~~~~~~~~
সুবর্ণা চক্রবর্তী
~~~~~~~~~~~~~
এ দেশ আমার মাতৃসমা
এ দেশ রেখেছি অন্তরে,
এ প্রাণ করিব বলিদান
এ আমি যুদ্ধে চিরতরে।
এ ভূমি আমার ভালোবাসা
এ ভূমে জন্মে গর্বিত,
এ ভূমি দেখিতে অপরূপা
এ ভূমি হবেনা খর্বিত।
এ দেশ মুক্তি সেনাদের
ও তাঁরা এনেছে স্বাধীনতা,
এ দেশ রক্তে রঞ্জিত
ও তাঁরা মানেনি অধীনতা।
ও তাঁরা জীবিত পতাকায়
ও যাঁরা এনেছে পরিচয়
এ দেশ তাঁদের অবদান
এ দেশ রহিবে অক্ষয়।
~~~~~~~~~~
একুশে ফেব্রুয়ারি
~~~~~~~~~~
সুমিত রায়।
~~~~~~~~~~
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ উনিশশো বাহান্ন সাল,
আমার ভাইয়ের রক্তে বাংলার মাটি হয়েছিল লাল।
উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা শুনে সকলেই উঠলেন ক্ষেপে,
প্রতিবাদের মিছিল নিয়ে ভাইরা পড়লো ঝেঁপে।
মায়ের ভাষায় কথা বলে আমরা কত সুখ পাই,
বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা দাবী ছিল তাই।
আমার ভাইয়ের রক্তের বদলে ভাষা পেলাম তাই,
মায়ের ভাষা রক্ষা করতে শহীদ হলো আমার ভাই।
একুশ এলে মায়ের কোলটা ফাঁকা মনে হয়,
ভাষা আন্দোলনের শহীদ ভাইরা মোর হৃদয়ে রয়।
একুশ হলো শ্লোগান মুখর বিজয় পাওয়ার স্বাদ,
বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া ভাইয়ের আর্তনাদ।
বাংলা আমার মায়ের ভাষা বাংলা আমার প্রাণ,
আমার ভাইয়া জীবন দিলো রাখতে ভাষার মান।
ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে ভুলে মায়ের স্নেহ,
অত্যাচারীর বুলেটের আঘাতে খোকার নিথর দেহ।
বাংলা আমার মায়ের ভাষা গাই একুশের গান,
মায়ের ভাষায় কথা বলে আমাদের জুড়ায় মন প্রান।
একুশে ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার হলো জয়,
রফিক, সালাম, শফিক,বরকত কে জীবন দিতে হয়।
শহীদ হলো দামাল ছেলেরা বাংলা ভাষার জন্য,
ফেব্রুয়ারির অমর একুশ আজ বিজয় মাল্যে ধন্য।
বাঙালী হলো বীরের জাতি আজ বলছে বিশ্ববাসী,
সন্তান হারা মায়ের মুখেও আজ গর্বে ভরা হাসি।
বাংলা ভাষার জন্য ভাইরা দিলো জীবন বলিদান,
দেশ বিদেশে বাংলাভাষা এখন পাচ্ছে কতো সম্মান।
একুশ মানে শহীদ ভাইদের স্মৃতির পাতায় দেখা,
একুশ মানে তাদের জন্য নিজের ভাষায় লেখা।
একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটা স্মৃতিতে ফিরে আসে,
রাজধানীর পথ ভরে গিয়েছিল আমার ভাইদের লাসে।
প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাইদের স্মরণ করে,
শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবকে দিই ভরে।