Showing posts with label গগল্প. Show all posts
Showing posts with label গগল্প. Show all posts

Sunday, August 8, 2021

পাদক

গলুর পরীক্ষা
পাদক

মাষ্টারমশাই সন্ধ্যে বেলায় পড়াতে এসে দেখেন গলু ঘরের দরজা জানালা  বন্ধ করে চিৎকার করে বই পড়ছে।বছর ষাটের বিমল মাষ্টারমশাই  গলুর পড়ার ঘরে ঢুকে চেয়ারে বসতেই.... গলু বিনয়ী হয়ে বলে..মাষ্টারমশাই.. মাষ্টারমশাই..,আজ আমার পড়া একদম রেডি।আপনি ধরুন,সব প্রশ্নের উত্তর জলের মতো দিয়ে দেব। একথা কানে যেতেই গলুর মা অতসী দেবী তড়িঘড়ি  পড়ার ঘরে ডুকে বলেন...

না না মাষ্টারমশাই,ওর কথা শুনবেন না, ওকে লিখতে দিন...আজ পড়া না পারলে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেবেন।সারা দিনটাই দুষ্টুমি আর দুষ্টুমি... বই নিয়ে বসাতেই পারিনি।বলে বলে আপনি আসার আগে এই বই নিয়ে বসেছে।এমন করে পড়লে কি ক্লাস এইটের পড়া তৈরি হয় মাষ্টারমশাই?আর পড়া না হলে যে করে হোক পড়া করিয়ে ছাড়বেন...এই বলে অতসী দেবী ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই গলু মাষ্টারমশাই এর দিকে মুখটা ঝুঁকে বলে...জানেন মাষ্টারমশাই?দিদিমা সেদিন বলছিলেন,আমার ক্লাসে যখন মা পড়তো তখন দিদিমা মাকে খুব বকাবকি করতো।মা একটুও বই পড়তো না।তাই মা পড়া না পারলে মায়ের মাষ্টারমশাইও মাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দিতেন..তাই মা আমার উপর হিংসে করে এ সব বলে‌ গেল.. 

মাষ্টারমশাই একটু রেগে চেঁচিয়ে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে। খাতা পেন বার কর।গলু ভয়ে ভয়ে ব্যাগ থেকে খাতা পেন বার করতে করতে বলে.. মাষ্টারমশাই পড়া ধরুন না...সব পড়া জলের মতো বলে দেব...গলুর কথা শেষ হতে না হতেই মাষ্টারমশাই ধমক দিয়ে বলেন,যা বলছি তাই শোন,তোমার ভূগোল পড়া কি তৈরি হয়েছে?লিখতে দিলে পারবে তো?গলু মাথা নাড়িয়ে বলে হ্যাঁ হয়েছে,লিখতে দিলে পারবো।ঠিক আছে তাহলে ভূগোল পরীক্ষা দাও তো দেখি কেমন তৈরি? পরীক্ষার কথায় গলু চমকে ওঠে।কারণ বিগত দিনে মাষ্টারমশাই যে পরীক্ষা গুলো নিয়েছিলেন তাতে গলুর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়ে মাষ্টারমশাইয়ের কাছে অনেক কঠিন কঠিন শাস্তি তাকে পেতে হয়েছে।তার উপর মায়ের হাতের চড়।তাই গলু প্রথম থেকে চেষ্টা করছিল মাষ্টারমশাই যাতে পরীক্ষা না নেন।সব চেষ্টা ব্যার্থ হলে গলু মাথাটা নীচু করে বলে, মাষ্টারমশাই, হাতের আঙ্গুলটা খুব ব্যথা,লিখতে পারছিনা,পড়াটা একটু ধরুন না?গলুর মতলব বুঝতে পেরে মাষ্টারমশাই জোরে ধমক দিয়ে বলেন... পুরুষ মানুষ হয়ে এতো ভয় কিসের?রাবণ সীতাকে হরণ করলে সীতাকে তাঁর সতীত্ব প্রমান করতে অগ্নি পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।আর তুমি? পুরুষ হয়েও পারবে না কেমন পড়া করেছ তার প্রমান করতে পরীক্ষা দিতে?নাও  কথা না বাড়িয়ে প্রশ্ন লেখ..

অগত্যা গলুকে পরীক্ষা দিতে হল। পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লিখতে লিখতে গলু ভাবছে সীতার অগ্নি পরীক্ষা আর আমার ভূগোল পরীক্ষার মধ্যে মিল কোথায়? মাষ্টারমশাই এমন বললেন কেন? এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতে পরীক্ষা শেষ করে মাষ্টারমশাইয়ের কাছে গলু খাতা জমা দেওয়ার সময় বলে..আচ্ছা মাষ্টারমশাই সেই পরীক্ষায় সীতা কতো নম্বর পেয়ে পাশ করেছিলেন? মাষ্টারমশাই একথার উত্তর না দিয়ে খাতা দেখতে শুরু করেন...

মাষ্টারমশাই খাতা দেখতে গিয়ে দেখেন..ভারতে বৃহত্তম রাজ্য চীন,ভারতের বৃহত্তম প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাজস্থান এমন সব প্রশ্নের উত্তর গলু  উল্টোপাল্টা লিখেছে।গলু অতি কষ্টে কুড়ির মধ্যে সাত পেয়েছে। সেই পুরানো শাস্তি, কান ধরে হাফ চেয়ার। কিছু বকাঝকা করে মাষ্টারমশাই অন্যত্র পড়াতে চলে গেলেন। মাষ্টারমশাই চলে যেতেই  পিঠে মায়ের হাতের প্রকান্ড চড়।মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। সেদিন রাতে গলু শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে সীতার অগ্নি পরীক্ষা আর ভূগোল পরীক্ষার মধ্যে মিল কোথায়...?

পরের দিন বিকাল থেকে আকাশে মেঘ। সন্ধ্যে বেলায় ঝড় বৃষ্টি আসলে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে ভেবে অতসী দেবী পড়ার ঘরে হ্যারিকেনটা ধরিয়ে জোর কম করে পড়ার টেবিলের পাশে রেখে দিয়েছে...

শীতের রাত বাইরে খুব ঠান্ডা।গলু খাটে বসে গায়ে চাদর জড়িয়ে শব্দ করে পড়ছে।এমন সময় মাষ্টারমশাই ঘরের  চেয়ারে বসে বললেন..কি গলু পড়ায় যে আজ খুব মন দিয়েছ?মা কি কাল একটু পিটিয়েছেন?গলু একটু মুচকি হেসে বললো..হ্যাঁ মাষ্টারমশাই, পরীক্ষা ভালো হয়নি বলে মেরেছে।এবার ভাবছি আর দুষ্টুমি না করে পড়ায় মন দেব...।তা বেশ বেশ, মন দিয়ে পড়..এই বলে মাষ্টারমশাই গলুকে পড়াগুলোয় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে বললেন।গুলো পড়ছে কিন্তু কোথায় যেন একটু অস্থির হচ্ছে।এমন সময় বিদ্যুত চলে যেতেই... ওরে বাবারে..আমাকে বাঁচাও.. বাঁচাও,বলে চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে মাষ্টারমশাই মেঝোতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলেন।চিৎকার শুনে  পাশের ঘরের সব ছুটে এসে দেখলেন মাষ্টারমশাই গলা চেপে ধরে গোঙাছেন,গলু খাটে বসে সেই দিকে তাকিয়ে বসে।বাড়ির সবাই এক স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে মাষ্টারমশাই?কি হয়েছে? উত্তর না পেয়ে গলুর বাবা নিমাই বাবু মাষ্টারমশাইকে তুলে ধরে বসিয়ে দেন।  ঘাড়ে মাথায় চোখে মুখে একটু জল দেন। হ্যারিকেনের আবছা আলোয় দেখলেন মাষ্টারমশাইয়ের গলায় একটা কালো মতো কি যেন পেঁচিয়ে!।অতসী দেবী হ্যারিকেনের আলোটা কাছে এনে দেখেন মাষ্টারমশাইয়ের গলায় পাকানো কালো দড়ি ঝুলছে,যেটা নিয়ে গলু সকালের‌ দিকে একবার ঘুরছিল।ছেলের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নীচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। এদিকে চোখে মুখের জল গায়ে পড়ে জামা কাপড় ভিজে যাওয়ায় ঠান্ডায় মাষ্টারমশাইকে কাঁপতে দেখে নিমাই বাবু একটা চাদর দিয়ে মাষ্টারমশাইকে গায়ে দিতে বলে ঘরের বাইরে চলে গেলেন...

গলু বিলক্ষণ জানে মাষ্টারমশাই বাড়ি থেকে যাওয়ার পর কপালে কি আছে। তবু সাহস মাষ্টারমশাইয়ের কানের কাছে মুখ রেখে গলু বলে,আপনার এতো ভয় কেন?দেখেন না, মা মনসার মাথায় কতো সাপ?তার তো কোন ভয় নেই।আর আপনি পুরুষ মানুষ হয়েও একটা দড়ির এতো ভয় পান?ভয়কে জয় করতে হবে মাষ্টারমশাই তাই আমি আজ পড়ায় মন দিয়েছি...

গলু সত্যি পড়াশুনায় মন দিয়েছিল কিনা সেটা গলুই জানে। কিন্তু এটা জানা গিয়েছিল যে,সে দিনের পর থেকে মাষ্টারমশাই আর গলুর বাড়ির ত্রিসীমানায় আসেননি।

Friday, July 2, 2021

উমা মুখার্জি


ডাক্তার বাবু
 উমা মুখার্জী

       অনেকদিন আগের ঘটনা। আমার ঠাকুরদাদা ছিলেন ডাক্তার। খুবই সৎ ও দয়ালু ছিলেন। যত দুর্যোগ আর যত রাত - ই হোক, রুগীর বাড়ি থেকে ফোন এলে তিঁনি তৎক্ষণাৎ বেড়িয়ে পড়তেন, রুগী দেখার উদ্দেশ্যে।

      সেদিন ছিলো শ্রাবন মাসের সন্ধ্যা। অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঠাকুরদাদা ভাবলেন, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বেন। শুয়েও পড়েছিলেন। হঠাৎ, দরজার কড়া নাড়ার শব্দ। রাত্রি তখন বারোটা। বৃষ্টি হয়েই চলেছে। একটি লোক সঙ্গে ছাতা, আঁধারে মুখ দেখা যাচ্ছেনা, বলে ডাক্তার বাবু আপনি আসুন, নাহলে বাবু বাঁচবেনা।

      কথায় জানতে পারলেন, শহর থেকে একটু দূরে যেতে হবে। দেরী না করে, লোকটিকে নিয়ে গাড়ি করে চললেন রুগী দেখতে। এতো জল গাড়ি অনেকটা এসে আর স্টার্ট নিচ্ছেনা। লোকটি বলে, চিন্তা করবেন না, ছাতা এনেছি, চলুন, অল্প হাঁটা পথ। অগত্যা, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, লোক টি ছাতা ধরে নিয়ে যাচ্ছে, টর্চ জ্বেলে কিছু বোঝাও যাচ্ছেনা। বিদ্যুতের আলোয় শুধু একবার লোকটির মুখ দেখা গেলো, চোখ দুটি কোটরাগত, গালে মাংস বলে কিছু নেই।

      অল্প হাঁটার পর এলো রুগীর বাড়ি, আগেকার দিনের দোতালা বাড়ি। লোকটি গেট ঠেলে বললো আপনি সোজা চলে যান, প্রদীপ জ্বলছে ঐ ঘরে রুগী, বলেই অদৃশ্য।

     ঠাকুরদাদা এগিয়ে গিয়ে দেখেন খাটে মুখ চাপা দিয়ে একজন শুয়ে, শুধু একটা কোথা থেকে চেয়ার এগিয়ে এলো। রুগীর গলা খনখনে, বলে বসুন আপনি, আগে আমার কথা সব শুনুন, তারপর আমায় দেখবেন।

     কোণের দিকে দেখুন লাল বাক্স, ওতে আমার উইল আছে। আমার আর বাঁচা হবেনা। সময় হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলের ঠিকানা ওতে আছে, ত্যাজ্য পুত্র করেছিলাম। ওটা তাকে পৌঁছে দেবেন শুধু এই অনুরোধ টুকু রাখুন।

     এর পর মুখের চাপা গেল খুলে, আর অন্ধকারে ঠাকুরদার হাত তার হাতে ধরা বরফ শীতল এক কঙ্কাল শুয়ে বিছানায়।

    এক লাফে দৌড়ে ঠাকুরদা গাড়ির কাছে আসেন যখন, গাড়ি নিজেই ঠিক হয়ে গেছে, ঝড়, জল থেমে গেছে। বাড়ি পৌঁছে ভাবছেন কি করে হয়।

     সকাল হতেই আবার যান। দেখেন লাল রঙের বাড়ি, তালা দেওয়া। স্থানীয় লোকেরা আসে ভিড় করে, জানায় ছয় মাস হলো উনি মারা গেছেন।
তালা ভেঙে দেখা গেলো খাট নেই, চেয়ার নেই, তবে ঘরে একটা লাল বাক্স আছে কোণের দিকে, আর তার ভেতরে দলিল ও ছেলের ঠিকানা আর চিঠি।

   ঠাকুরদা সেটি নেন ও লোক মারফত নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন।

   শেষ দিন অবধি এই রহস্যের কিনারা তিঁনি করে উঠতে পারেননি। ভুত কি তবে সত্যি আছে?

সমাপ্ত।।