Friday, July 21, 2023

আর্তনাদ -- অনিল চন্দ্র সিকদার

আর্তনাদ
অনিল চন্দ্র সিকদার
১৭-৭-২৩.
নিষ্পলক দৃষ্টিতে দেখেছি সেদিন,শুনেছি কত আর্তনাদ
বুকের ভেতরটা যেন আগুনের মতো জ্বলছিলো, 
তপ্তদাহ আগুনের মতো মনটা পুড়ে যাচ্ছিলো
পারিনি কিছুই করতে ওদের, ঐ অস্ত্রের সামনে। 

দেখলাম শুধু, ছল- ছল অশ্রু ভরা চোখে-
যম-দূতের মতো খুবলে খাচ্ছিলো, 
অসহায় আমার দুটি হাত- পা বাঁধা,যীশুর মতো
বুকের ভেতরটা আগুনের মত দাউ দাউ করে জ্বলছিলো

অনুশোচনায় আর্তনাদ করেছি ,কেঁদেছি কত-
ছেড়ে দাও ওদের,ওরা নিষ্পাপ ,নারী-শিশু, 
শোনেনি ওরা, আমার কথা,আমার যে হাত-পা বাঁধা
নিষ্পলক দেখেছি , করেছি আর্তনাদ,যেন আমি  সেই, যীশু। 

হৃদয়টা কেঁপে উঠেছিল, ওরা ছিল  সবাই নির্দয়
বলতে পারিনি কিছুই, ট্রিগার দাবালেই শেষ, 
কি অকর্ণ এই পৃথিবী, মেরুদণ্ডহীন বিচার
দেখিয়েছে ওরা আপোষহীন ক্ষমতা, এইটাই  বেশ।

হায়রে -বিধাতা-সইবে কি  তুমি?এই অত্যাচার
করে যাচ্ছে নির্বিচারে এই নিষ্ঠুরতা, 
পাষণ্ড মনের হিংস্র মানবদের মতো নির্দয় আচরণ
কবে হবে মানবদের হৃদয়ে, মানবতার জাগরণ।

বর্ষা এলো ওই -- শহীদুল ইসলাম আখন

 বর্ষা এলো ওই
 শহিদুল ইসলাম আখন
 ১৮/০৭/২৩
শ্রাবণ মাসে ঢল নেমেছে,মাঠ জলে থই থই।
বর্ষা এলো ওই, বর্ষা এলো ওই।।

কলের লাঙল ভটর ভটর হচ্ছে জমিন চাষ,
চাষীর মনে খুশির জোয়ার প্রাণের উচ্ছ্বাস;
আলের পথে চাষার মেয়ে আনছে টেনে মই।
মাঠ জলে থই থই, বর্ষা এলো ওই।।

মাঠের পরে বীজতলা সব জলে ডুবুডুবু,
ঝম-ঝমা-ঝম ঝরছে বাদল থামছেনা যে তবু;
রুই কাতলা লাফায় ঝিলে,ডাঙায় চলে কই।
চারদিকে থই থই, বর্ষা এলো ওই।।

ভরা নদী কুলু কুলু উঠছে ফুলে ফেঁপে,
কড় কড় কড় মেঘের ডাকে হৃদয় ওঠে কেঁপে;
মাঝ নদীতে ঝাপসা দেখায় জেলের ডিঙির ছই।
নদী,জলেতে থই থই। বর্ষা এলো ওই।।

বাউরি পাড়ার "ময়না বুড়ির" ফুটো ঘরের চাল,
ঘরের মেঝে ভিজে কাদা, পড়ছে টপে জল;
পঞ্চায়েতে দেয়নি ত্রিপল,নেপোয় মারে দই।
দুখের কথা কারে কই, বর্ষা এলো ওই।।

দেখেছো কি? -- সুমনা মন্ডল

 দেখেছ কি?
 সুমনা মণ্ডল 
 20.07.23
দেখেছ কি এই আঁখিতে
          কৃষ্ণ চূড়ার যৌবন ?
কিংবা উষ্ণ স্পর্শ মাখা
          গোলাপের শিহরণ!
দেখেছ কি এই আঁখিতে 
           মরসুমী ওই ভিড়?
তোমার প্রহর স্তব্ধ হেতু 
            এ হৃদয় অস্থির..।
দেখেছ কি এই আঁখিতে
           মেঘের মুষলধারা ?
বৃষ্টিফোঁটার বাড়াবাড়ি,
            ভ্রষ্ট-ছন্নছাড়া। 
দেখেছ কি এই আঁখিতে 
             কথার লুকোচুরি?
বেহিসাবী অভিমানের 
           অহেতুক ভাব-আড়ি!
দেখেছ কি এই আঁখিকে
            না দেখার অছিলায়?
মন আঁখি স্রেফ তোমায় দেখার
             বাহানা খুঁজে যায়..।

Thursday, July 20, 2023

আজও তুমি বেঁচে আছো ! -- মাজহারুল ইসলাম

আজও তুমি বেঁচে আছো ! 
মাজহারুল ইসলাম 
১৪/০৭/২০২৩
কখনও কখনও ভোরের আলোয়
তোমার মুখাবয়ব দেখলে মনে হয়
অপ্রত্যাশিত সকাল তোমার চোখে জ্বালা ধরিয়েছে । 
বেঁচে  থাকতে থাকতে বড্ড পেরেশান তুমি ! 

নিজের অজান্তে রাতে কখন 
নিজেকে সঁপেছ নিদ্রাদেবীর হাতে , 
সকাল -দুপুর- রাত এ কেমন 
একঘেয়েমী যন্ত্রণা তাড়া করে ফেরে সারাক্ষণ । 

অঘুমের রাতে শব্দেরা আর
হয়তো খেলাই করে না তোমার সিথানে, 
প্রশস্থ বিছানায় হাত বাড়ালে নতুন কোনো শিহরণ আচমকা ছুঁয়ে যায় না আগের মতো । 

তুমি হয়তো বেঁচেই  আছো শুধু ! 
না শুনতে পাও নদীর কূল কূল ধ্বনি 
না তোমাকে গান শোনায় বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টি । 
শীতের পাতা ঝরা সকাল
শুধুই কানে বাজে তোমার কারণে অকারণে । 

রহস্য উপন্যাসের পাতায় পাতায় 
উড়ে বেড়ায় অসংখ্য অসমাপ্ত গল্প, 
বাস্তবতার স্তম্ভে বাঁধা শক্ত দড়ি বড্ড নড়বড়ে   ;
সময়ে সমীকরণে কালক্ষেপণ হয়েছে অনেকটা 
আজও তুমি বেঁচে আছো  ! 

বৃষ্টি ঝরে -- সুভাষচন্দ্র ঘোষ

            বৃষ্টি ঝরে
            সুভাষচন্দ্র ঘোষ
            তাং - 13/07/2023
            
          বৃষ্টি  ঝরে  ঝির্  ঝির্  ঝির্
          ঘোলাটে মেঘ আকাশে স্থির
                    ঝিলিক হানে
                    গগন  পানে
           আকাশ জুড়ে মেঘের ভিড়।

          মাঝে  মাঝেই  দম্ কা হাওয়া
          ছাতা  মাথায়  বাইরে  যাওয়া
                      তীরের মত
                      বিঁধছে যত
          বৃষ্টির ছাঁটে  ভিজে  নাওয়া ।

          চাষীর ঘরে  লেগেছে  ধুম
          তাদের চোখে নাইকো ঘুম
                     করবে চাষ
                     কি উচ্ছ্বাস!
           বাজ পড়ছে গুরুম্ গুম্।

          কচু  পাতায়  টাপুর্  টুপুর
          ঝম্ ঝমা ঝম্ বাজে নূপুর 
                    টিনের চালে
                   গাছের ডালে
           বৃষ্টি  ঝরে  সকাল- দুপুর।

           সাঁঝের  বেলায়  অন্ধকারে 
           ডাকছে ব্যাঙ জলার ধারে
                    ঝিঁঝিঁ পোকা
                     যায়না দেখা
            শোল- মাগুর লাফায় পাড়ে। 
           
           বৃষ্টি  পড়ে  দীঘির  জলে
           গাছ ভরেছে কদম ফুলে
                       থরে থরে
                       গন্ধ ভরে
          আঁধার ঘনায় ফলসা তলে।

             ছোটরা সব  ঘুমে     কাদা
             ভিজে গেছে খড়ের গাদা
                       মহিষ গরু
                      জাবর শুরু
              গল্প শোনায় বুড়ো দাদা ।

বর্ষা অমঙ্গল -- মধুসূদন লাটু

 বর্ষা অমঙ্গল
 মধুসূদন লাটু
 ১০/০৭/২০২৩
আষাঢ়ের হাত ধরে নিয়মেই নামে বৃষ্টি
আকাশ জুড়ে মেঘেরও আনাগোনা ক্রূরদৃষ্টি
বজ্রের তাণ্ডব দশ বিশটা তরতাজা প্রাণ দেয় ঝলসে
ভাগ্যের দোষ কর্মের ফল বিধাতার রোষে
ঝড়ের ভ্রকুটি, চালাঘর লুটোপুটি, 
কবরীতে কদম যুথিকা গুঁজে মহারানীর কলকলানি।
রুগ্ন কলেবরে চাষী তবুও ধান বোনে 
অন্যের অন্ন জোগাতে নিজেই অভুক্ত থেকে।

জল থই থই খাল বিল নদী নালা, ব্যাঙের মকমক, সাপের কামড়, ঝিঁঝিঁর ডাক, নিশুতি রাত, 
ক্ষুধার্ত শিয়ালের হাঁক, রাত জাগা চোখ,
 বাংলা মায়াময় মোহময় ।

অট্টালিকায় রোদ উঁকি মারে জানালায়
কুঁড়ে ঘরে  জলবন্দি আঙিনায়।

গফুরের ফুটো চাল বেয়ে জল ঝরে বিছানায়
আমিনার আমানি বাড়ে উৎকণ্ঠায়।
অবোধ বালকের কাগজের নৌকা চলে নালায়।
ভুখা মানুষের মিছিল জগন্নাথের রথের রশিতে  মারে টান রসদের আশায়।

তবুও শ্রাবনী পূর্ণিমায় ঝুলনে মাতে বাঙালি।
 ইলিশের টানে পাথারে পাড়ি দেয় মাঝি 
 জীবন মুঠোয় ধরি। 
 

 রাখীর সম্প্রীতি স্বাধীনতা দিবস ভাদু মনসার গান
 বাদ যায় না উৎসব মেলা খেলা কিছু।
 তালের বড়া নন্দের নাচন বাজন গাজন ও চলে পিছু পিছু।
 
অজয় রূপনারায়ণ দামোদর অপরূপ ভয়ংকর
আঁকে চিত্রকর, কবিতা লেখে কবি।
গঙ্গা পদ্মা তিস্তা তোর্সা কংসাবতী ভয়ঙ্করী
মুছে নিয়ে যায় খেলা ছলে ফকিরের ঘরবাড়ি।
কারও পোষমাস, কারও পোয়াবারো পকেট ভারী।

নবীনের ইনফ্লুয়েঞ্জা কাজ সারা সাতদিন
চাল নেই জ্বলে না চুলা গালে হাত রাতদিন।

তবু ও রানী ঝতুরানী মহারানী
এত ভীষণা ভয়ঙ্করী
জানি 
তবুও জীবনদায়িনী
জয় জয় বরষা দিগম্বরী
গাই গান গাই গান
বর্ষামঙ্গল, বর্ষামঙ্গল বর্ষামঙ্গল।

বৃষ্টির দিনের কাব্য -- হাসান ফরিদ

বৃষ্টির দিনের কাব্য
হাসান ফরিদ
০৯/০৭/২৩
শ্রাবণ সেতার। রিমিকিঝিমিকি বাজে। মন বসে না বসে না কোনো কাজে।
জানালার ধারে। কার এলোচুল ওরে। বিরহী বাতাস উদাসী করে তারে!

বনময়ূরী নেচে যায়। পাহাড়ি ছড়া ঝিরি ঝিরি ঝিরিক গায়।
ধূপছায়া আকাশ--ভেঙে ভেঙে আসে। 
বৃষ্টির নূপুর একটানা কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ে সবুজ ঘাসে।

নদীরা ভেজা শরীরে--ফিনফিনে জলের শাড়ি খুলে;  উপত্যকা বুক উঁচিয়ে--সমুদ্রে ছুটে যায়।
ভেজানো কপাট। মেলে হঠাৎ--স্বপ্নমৎস্যরা উথলে উথলে তড়পায়!

আয় না ফিরে -- মৃত্যুঞ্জয় সরকার

আয় না ফিরে
মৃত্যুঞ্জয় সরকার
১১/০৭/২০২৩
তুই আসবি বলেও আসলিনাতো
আমার সজল ঘন ছায়া বনে,
আমার হৃদয় জোড়া উপল রেণুর
দরাজ আলিঙ্গনে।

তবু তুই কী আমার কষ্ট হবি
শিউরে উঠে আসবি পাশে
হারিয়ে যাবার মুহূর্ততে?

চৈত্র মেঘে তীব্র দহন
ছন্নছাড়া আমার আকাশ,
বৃষ্টি হয়ে আয়নারে তুই
চাতক মনে তপ্ত বুকে।

ওলি তো চায়,পরাগ খুশি
বন বনানী মত্ত,
হাওয়ায় দোলে উষ্ণ আবেগ
হৃদ যমুনায় ঢেউ।

আমার নয়ন তারা উদাস বাউল
বুকের ভিতর মরু ঝড়,
পারবি বৃষ্টি মেঘে স্বস্তি দিতে
হৃদ জোয়ারের অন্ধকূপে।

বসন্ত রঙ রাঙায়না মন
দেয়না মনে বাউল সুর,
হৃদয় পুড়ে,হৃদয় জ্বলে
পলাশ ফাগুন ব্যাভিচারে!

হারিয়ে যাবার মুহূর্ততে
আসবি বৃষ্টি হয়ে আমার কাছে,
কষ্ট বুকে হৃদয় দিয়ে হৃদয় পেতে.....

শুধুই টাকাকে ধর -- দুর্গা শংকর দাশ

 শুধুই টাকাকে ধর।
দুর্গা শংকর দাশ।
12,07,2023
টাকার মোড়কে মোড়া আছে দেখি,
     আজকের ভালোবাসা।
ভালোবাসা আজ অন্তরে নেই,
     পকেটে নিয়েছে বাসা।।

ভালোবাসা আজ কেনাবেচা চলে,
     এই সমাজের হাটে।
প্রাচুর্য আর প্রাসাদ থাকলে,
     তবে ভালোবাসা জোটে।।

টাকা দিয়ে হয় মানুষ যাচাই,
    টাকায় বাড়ে তো মান।
জ্ঞানীর কদর এ সমাজে নেই,
        তাদের বুদ্ধি ম্লান।।

টাকা যদি আছে তুমিই অতিথি,
      খাতির অনেক পাবে।
খালি পকেটে তুমিও অতিথি,
    খাতির তো কমেই যাবে।।

দুনিয়াটা মোড়া টাকার মোড়কে,
       মুঠো ভরে নাও টাকা।
নইলে দেখবে,একা পড়ে আছো,
      চারপাশে শুধু ফাঁকা।।

এখন দেখছি টাকাই আপন,
       মানুষ হয়েছে পর।
মানুষ কে ফেলে,মানুষকে মেরে,
      শুধুই টাকাকে ধর।।

Wednesday, July 19, 2023

অপেক্ষা -- প্রোজ্জ্বল রায় চৌধুরী

অপেক্ষা
 প্রোজ্জ্বল রায় চৌধুরী
১৯/০৭/২৩
রাতেই আসো তুমি, 
তাই দরজা খুলে রেখেছিলাম রাতে।
ঘরের ভাঙা জানলা দিয়ে,
এক গোছা তাজা রজনীগন্ধার মতো,
স্বপ্রাণ জ্যোৎস্না,
এসে পড়ল আমার ঘরে।।
ঘর আমার ভরে গেল, 
মায়াবী আলোয়।
সেই আলোতেই দেখেছিলাম তোমায় - 
আমার ঘরে, বুকের খুব কাছে।।

সেই আবছায়া 
মৃদু আলোর কণার বুকে, 
যখন তুমি দাঁড়ালে এসে,
সেই মৃদু আলোতেও স্পষ্ট  দেখেছিলাম -
তুমি পরেছিলে  ঝকঝকে লাল শাড়ি, গরবিনীর আভরণ,
কপালে ছিল - কুমকুম।
আমার  খিড়কি থেকে সিংহ দ্বার পর্যন্ত,
আনমনা পায়ে ছুটে চলে ছিলে তুমি, নূপুরে সুর তুলে,
হাত দিয়ে ছুঁয়ে খুলে দিচ্ছিলে,
আমার যা কিছু  ধুলো মাখা-
বন্ধ কপাট,
আপন খেয়ালে ।।
আমার গাছের ঝরা পাতা নিয়েই
এঁকেছিলে কোজাগরী আলপনা।
আমার না বলা কথা, না শোনা বাণী ,
আপন ঠোঁটে তুলে নিয়ে
সুরে প্রাণ দিয়ে বাঁধছিলে -
আবাহনী পদাবলী।।
সে সুরে ঢেউ উঠেছিল -আমার দিগন্তে ।

তোমায় ডাকিনি আমি,
শুধু  দু চোখ ভরে  দেখেছিলাম তোমায়,
পাছে হারিয়ে যাও,
তাই তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাইনি আমি।

কিন্তু ক্ষণস্থায়ী তুমি,
তোমাকে ধরে রাখব,
এমন সাধ্য কোথায় আমার ?

হারিয়ে গেলে তুমি,
হারিয়ে গেল আমার
সেই জ্যোৎস্না ভেজা রাত।
পরে,
প্রখর  রোদে, নিঝুম রাতে,
বকুল ঝরা সাঁঝে - একলা অবকাশে।
খুঁজেছি তোমায় আপ্রাণ, 
জীবনের সব প্রান্তে।
চোখ  ধাঁধিয়ে গেছে,
তবু, তোমার দেখা পাইনি।।
তাই আজ,
সব আগল খুলে বসে আছি,
সেই মায়াবী আলোর জন্য।।
বসে আছি -- তোমার জন্য।

Monday, July 10, 2023

আষাঢ় - কাজী সেলিনা মমতাজ শেলী

  আষাঢ়
  কাজী সেলিনা মমতাজ শেলী
 ০৬/০৭/২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
আষাঢ় লিখেছে শ্রাবণের শিয়রে দীপ ছিল না সেদিন,
যদিও প্রভাত এলো, তবু প্রকৃতি হয়নি তখনো রঙিন।

নির্ঝর নীর থাকে নিজের মতো,শোনে না আষাঢ়ের গল্প,
ওই নীলিমার নীল অনুপম আকাশ যেন শুধু মহাশিল্প।

কুসুম কামিনী যেন ভালোবাসে, ওই মিষ্টি ভোরের ঊষা ,
ওই মানব সুন্দর যার আচরণ সুন্দর,সুন্দর মুখের ভাষা।

আঁধার বুঝিয়ে দেয়, আলোর প্রয়োজন কত পৃথিবীতে,
মৃত্তিকার রসে অরণ্য হাসে চাঁদ হাসে সেই গভীর রাতে।

বাতাসের শব্দ ধ্বনি চঞ্চল মন, স্নিগ্ধ আকাশ সুগম্ভীর,
দিবসের সূর্য বিদায় নিলো, আসলো আকাশে আবির।

নামলো রাতে আঁধারের পর আঁধার যেন আঁধার পাথার,
চাঁদ যদি না আসে, ধরণী হতে পারে আঁধার কারাগার।

তৃপ্তির বাসনায় সন্ধ্যা তারা ওই আকাশে খেলায় মাতে,
স্বর্গের দিবস পার করে ধরণী স্বর্গ আসে আঁধার রাতে।

দেশ মাতা যে মাটি - মোঃ নূরুল ইসলাম রাকিব

দেশ মাতা যে মাটি 
মোঃ নূরুল ইসলাম রাকিব 
০৫/০৭/২০২৩
স্বাধীন দেশে বীরের বেশে
চলতে গিয়ে হেলায় মেশে
করছে কারা ক্ষতি?
শত্রু মুখে দেও গো রুখে
কেউ রবে না করুণ দুখে
বিবেক পাবে গতি!

করবে যে বা দেশের সেবা
ভালোর কাজে শত্রু কে বা
তাকেই চিনে নেবে?
ধীরস্থিরে সোনার বীরে
আনবে টেনে মানব তীরে
খাস বুঝিয়ে দেবে!

বুঝবে তবে শত্রু যবে
বন্ধু হয়ে আপন রবে 
সত্যিকারের প্রেমে,
মানবতায় স্বাধীনতায়
শত্রু রবে নীরবতায়
দেখবে ছবি ফ্রেমে!

সোনার ছেলে সুযোগ পেলে
দেয় বুঝিয়ে পাখনা মেলে
বিজয় আনে খাঁটি,
আপন করে রাখবে ধরে
ফসল সোনা তুলবে ঘরে 
দেশ মাতা যে মাটি ।

জোছনায় মগ্নস্নান - মোঃ হুমায়ুন কবির


জোছনায় মগ্নস্নান 
মো: হুমায়ুন কবির 
০৪.০৭.২০২৩
সেই রাতেও আকাশে চাঁদ ছিলো
পূর্ণিমার গোল চাঁদ,
আকাশ থেকে ঝরে পড়ছিলো তরল জোছনা।
আমরা দু'জন পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটলাম দীর্ঘ সময়  যেন কতো জনমের চেনা কপোত-কপোতী 
মায়াবি জোছনার জলকেলিতে মগ্ন।
তোমার কোমল আঙুলের ছোঁয়ায়
আমার দেহ-মনে আকণ্ঠ শিহরণ।
পায়চারি করতে করতে কখন যে আমরা 
একে অপরের হয়ে গেলাম পারিনি বুঝতে।
জোছনার রূপালি জলে ডুব দিয়ে 
সেই রাতে তোমার ওষ্ঠাধরে এঁকে দিলাম 
মোলায়েম প্রথম চুম্বন।
কী ভীষণ আপ্লুত হলে তুমি
নীমিলিত দু'চোখের পাতায় তোমার 
ভালবাসার প্রথম আচ্ছাদন।
নরোম জোছনার চাদরে ঢেকে ঢেকে 
তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিলাম।
পরের ডেটিং এ বলেছিলে
সেই রাতে তুমি আর ঘুমোতে পারোনি,
আমিও পারিনি ঘুমাতে। 
ঝুলে থাকা নিরীহ চাঁদ সাক্ষী হয়ে 
আজও জোছনা ঝরায়
পৃথিবীর নিথর কোমল মৃত্তিকায়।

একসাথে থাকবো - জয়সেন চাকমা

একসাথে থাকবো
জয়সেন চাকমা 
০৮/০৭/২০২৩
কদমের ফুল হয়ে বষর্ণে নিরব চোখ জোড়ায় ধরা দিব,
বৃষ্টিতে ভিজব, তবে ভিজে যাক, রোদ আসলে আবার শুকিয়ে যাব।
কবিদের কবিতা হয়ে বাঁচব সাহিত্যর কাননে,
নতুবা গল্প, কবিতা  কিংবা উপন্যাসের মনে।
নাহয় প্রিয় পাঠকের বইয়ে প্রিয় লাইনে থাকব,
দুজনে মিলে একটি রঙিন ছবি আঁকব।
আপনি আর আমি হব বসন্তের হলুদের চিঠি,
নতুবা বাউলার গাওয়া সোনার নবান্নের গীতি।
থাকবো শীতে শিশির হয়ে ছোটো ঘাস ফুলে,
আমি হব আপনার বেলি ফুলের মালা, থাকব আপনার চুলে।
আমি সবসময় চাই আপনি থাকেন আমার হয়ে,
একান্তই আমার ভালোবাসার বলয়ে।
আমি পত্র হলে  আপনি  ফুল, আপনি পত্র হলে আমি বৃক্ষ,
কাছাকাছি থাকব, ভালোবাসায় আমাদের অক্ষ।
আপনি চাঁদ হলে আমি হব জোছনার আলো,
আপনি আমার নেত্রে বন্দি আপনাতেই আমার ভালো।
দুজনে একসাথে ভালোবেসে জীবন গুছিয়ে নিব,
এভাবেই সারাজীবন একসাথে পাশে থাকব।

স্বপ্ন ভাঙার গল্প - শান্তি দাস

স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্প
শান্তি দাস
০৭_০৭_২০২৩
ওদের স্বপ্ন নিয়ে গড়া জীবন স্বপ্ন নিয়েই বাঁচার আশায়,
স্বপ্নময় জীবন যখন স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনা ওরা পায়।
বারবার আহত হয় বিধ্বস্ত হয় তখন জীবনকে আকড়ে ধরায়, 
সেই তো কোন উপায় খুঁজে মন অজান্তেই জীবন গড়ায়। 

কত স্বপ্ন ঘুরে বেড়ায় জীবন তৈরির দীণ দরিদ্রের তরে, 
অধরা স্বপ্ন ভেসে বেড়ায় ক্লান্ত বিষন্ন মনের চারধারে ।
মনে জাগে ব্যথা স্বপ্ন শুধু দেখার মাঝেই স্বপ্ন রয়ে যায়, 
স্বপ্ন দেখে ওরা বারবার মৃত্যু নদীর পাড়ের ঠিকানায়। 

অবুজ মন অকারণ ছুটে চলে আরাধ্য সুখের পিছে তাড়া করে, 
জীবনের অমূল্য সময় রাস্তার স্বপ্ন একটু করে ক্ষয়ে 
আকঁড়ে ধরে।
জীবনের স্বপ্নগুলো হয় না পূরণ দেখে ওরা বারবার, 
অধরা স্বপ্নের মোহমায়া অসীম শূন্যতায় করে দেয় জীবন ছাড়খার। 

তাইতো জীবনের দৌড়ে বুঝে যায় স্বপ্ন গুলো অধরায়,
ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন অন্তরে বাহিরে জড়িয়ে থাকা কঠিন বাস্তবতায়। 
কত স্বপ্ন দেখে জীবন তৈরির কাজে খুঁজে পথের ঠিকানা, 
স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে শুধু ভাবনা হয়না সফল এক জীবনের নেই  সীমানা ।

সীমার বহুদূরে ওদের অধরা স্বপ্নেরা ঘুরে ঘুরে ফিরে, 
শূন্য পৃথিবী হৃদয়ের গহনে রাস্তায় শুয়ে স্বপ্নহীণ নীড়ে।
স্বপ্ন দেখে মনের তাগিদে ক্ষুধা তৃষ্ণায় এগিয়ে চলার পথে,
স্বপ্ন বিলাসী রাস্তার স্বপ্ন অতৃপ্ত চেতনা গুলো চলে কল্পনার রথে।

Wednesday, July 5, 2023

ভালোবাসার স্মৃতি--হোস্নেয়ারা বকুল

ভালোবাসার স্মৃতি 
হোস্নেয়ারা বকুল 
(০৪/০৭/২৩)
তোমার দেওয়া ভালোবাসার  স্মৃতি নিয়ে বেঁচে  আছি 
যতটা ভেবেছিলাম তোমাকে  ভুলতে পারবো, পারিনি । 
আমার রাএি, সকাল, বিকেল দুপুর সব তুমি কেড়ে  নিয়েছো। 

আমার আনন্দের মাঝে  তুমি মিশে  আছো,
বিষাদের মাঝেও তুমি  মিশে  আছো 
তুমি, তুমি শুধু  তুমিই  আছো। 

সেদিন  যখন  টানাপোড়েন শুরু হল আমার জীবনে, 
তোমার আর বাবার ভালোবাসা
তুমি শুধু  প্রেমিকই থেকে  গেলে। 

জীবনে  খুব বেশি চাওয়া ছিলনা,
কিন্তু ভাগ্য তোমাকে দুরে ঠেলে  দিল। 

তবে কি আমাকে অভিশাপ  দিলে?  

তাই  আমার আর মুক্তি  হলোনা। 
আমি তোমার থেকে  দুরে গেলাম ঠিকই
কিন্তু 
তোমার দেওয়া স্মৃতি  ? 

ভালো থাকার অর্থ,প্রার্চয্য,নতুন ভাবে থাকা, নতুন  ভালোবাসা হল ঠিকই। 
শুধু থাকলোনা তোমাকে  ভুলে  থাকার ক্ষমতা। 
তোমার দেওয়া স্মৃতি কিছুতেই  তোমাকে  ভুলতে  দিলনা। 
কিছুতেই না।

Monday, July 3, 2023

টাইটান নাবিক -- মোস্তাক আহম্মেদ

 টাইটান নাবিক
মোস্তাক আহম্মেদ
তারিখ-২৮/০৬/২০২৩ ইং ।
আমি সিংহল দ্বীপ হতে বঙ্গোপসাগরকে দেখেছি
দেখেছি, নিকোবর আন্দামান ও আরবসাগর ।
যার জলরাশিসুধা তারই বুকচিরে যায় চলে—
যায় তারা,তার অবারিত ধারার অগণনে;
জীবন যেন বহমান সেথা নানারূপ সংগ্রামে
ও জলসীমায় থাকা ডলফিনসহ নানা শ্বাপদে ।।

স্রষ্টার রূপতার ভাঁজে আছে কোথাও জলপ্রাচীর
সে জলরাশি মিশে না—কার প্রাচীরে
সবার আঁখিকে করে দেয় সে অপলক !
সৃষ্টি যেন দোর্দন্ড প্রতাপে সেথা বড় প্রতাপশাহী
কৃঞ্চসাগর,মৃতসাগর তারা বিভাজনে প্রতাপী
বড় শিক্ষা বড় তার দর্শন তাকি আমরা জানি ? ।।

যার বুকে বিশাল অট্টালিকাসম তরঙ্গ পড়ে আঁছড়ে
জীবনতরী ও তার সাজানো বাহন চলে দুর্দান্তে
তার বুকে আরো কত কী চলে ?
দক্ষ নাবিকই তার যেন ভরসা যে সৃষ্টির সেরা ?
যার সৃষ্টিশীল ভাবনাতে রয় তাঁর ইঙ্গিত ইশারা
নাবিক যেন তাঁরই হয়ে মম প্রেরিত এক বন্ধুপ্রতীম ।।

দ্যাখ তার বিশাল গর্ভ মাঝে থরেথরে সাজানো
শোভিতয় কত না বাহারী রঙের কারুকাজ
জলডুবুরী যায় তুলতে তার সে অমূল্য রত্নরাজী ।
জেলে যায় উদরকে ভরাতে দুটো কড়ির জন্যে
যায় কেহ ডুবোযান নিয়ে আপনা শখ মেটাতে,
টাইটান নাম দিয়ে যায় চলে সে স্বপ্নবিলাসে ।।

সবকিছু স্বপ্নসাধ,স্বপ্নসম্ভার স্বপ্নবিলাস রয় মনে
চড়তে হবে সেই হিমালয়ের শীর্ষ শিখরে
উড়াতে হবে জযঝান্ডা কপালে পড়তে জয়টিকা
অভিলাষী মন দুর্জয় দুর্দমনীয় সবকিছুর ভারে !
তবুও মন অবিচল রয় সে উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে
জীবন সাগরের মতো হলেও,
সেও একদা থেমে যায়----
ঠিক যেন মরণের প্রতিরূপ ছবির নির্মম চিত্রে ।।

নয়া সুতার টানে -- সুনীল বিশ্বাস

মায়া সুতার টানে
সুনীল বিশ্বাস
২৯/০৬/২০২৩
আমার ছুঁতে ইচ্ছে করে
আমার গ্ৰামের মাটি,
সেই যে সোনার বাটি;
যেথায় আমি ঘুমের ঘোরে
আলতোপায়ে হাঁটি।

মায়াসুতার শক্ত বাঁধন
প্রান্ত ধরে টানে,
ডাক শুনে তার কানে;
স্মৃতির পাতা উল্টে উল্টে
তাকাই পিছন পানে।

ময়না আমার ডানা ঝাপটায়
খাঁচাবন্দি ঘরে,
দেশের মাটির তরে;
মায়াবী টান উথলে উঠে
চোখেতে জল ঝরে।

মরণ বরণ করবে সে যে
বদ্ধ খাঁচার মাঝে,
জীবনবেলার সাঁঝে;
দগ্ধ ক্ষতে বিয়োগ ব্যথা
চিনচিনিয়ে বাজে।

তুমি কি জিতেছ -- দিলীপ ঘোষ

তুমি কি জিতেছ
দিলীপ ঘোষ
৩০/০৬/২৩
আজ গুঁড়ো সন্ধ্যাবেলায় কথা দেওয়া কথাগুলো শেষ আলিস্যি ভেঙেছিল
তখন বিশ্বাস করতে পারিনি আজ রাতটা অমাবস্যা হবে
মহুয়ার নেশায় মাতাল স্বাস্থ্যবান স্বপ্নের অভ্যাসগুলো
ভাবেনি, অনাদরের শ্মাশানে অচিরেই পুড়ে মরবে।

হাত পা শিরদাঁড়াহীন কিংবদন্তি ভাবনাগুলো এখন
মুখের উপর মুখ রেখে ভেংচি কাটে
রাতের শেয়ালগুলো হুঁকাহুয়া ডাকে দিনদুপুরে
এটা কি কালের নিয়মে না জটিলতা, কে জানে।

মেহগনি খাট, শিমুল তুলোর পাশবালিশ আজ শুধুই স্মৃতি
তারহীন টেলিফোনে বুঝতেই পারি না কথার মতিগতি,
হরপ্পা সভ্যতার লিপি উদ্ধারে নেমেছিলাম আমি
পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে বেঁচে আছি, জিতেছ কি তুমি?

বৃষ্টিস্নাত রাত -- মৃণাল কান্তি রায়


বৃষ্টিস্নাত রাত
মৃণাল কান্তি রায় 
৩রা জুলাই,২০২৩ ইং
সে অনেকদিন আগেকার কথা 
পুরোটা এখন আর ঠিক মনে করতে পারছিনা। 
সারাদিন টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল
পাখিরা সব ভেজা চোখে যার যার আখড়ায়
চলে যাচ্ছিল তাদের প্রিয়জন নিয়ে
একত্রে হয়ত থাকবে বলে। 
চেয়ে চেয়ে দেখছিলুম দূর ওই আকাশে
কালো মেঘের আনাগোনা আর বিজলির ঝিলিক।
বিকেল গড়িয়ে আসতেই প্রবল থেকে মাঝারি 
ধরণের বৃষ্টি পড়ছিল।
প্রকৃতিকে যেন সুশীতল করে দিচ্ছে
তার স্বভাবসুলভ তীর্যক নাচের মধ্য দিয়ে। 
চোখ পাকিয়ে পাকিয়ে কিছু কিছু কাজ
দেখতে পাচ্ছিলাম নিজের ভগ্নপ্রায় আচ্ছাদনের
নিচে উন্মুখ হয়ে নিজকে সংযত রেখে। 
না না এ কোন কাহিনী কাব্য নয় 
চোখে ভাসা এ এক বৈচিত্র্যময় রূপ
অন্যভাবে অন্যকোন স্থানে অন্য কোনখানে
হয়তবা কোন প্রয়োজন আয়োজনের 
এক বিরল চোখে দেখা ইতিহাস। 
কিছু লোকের গম্লনাগমন বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে
বুঝিনি কিছুই বুঝে আসেনি আজও যা। 
শীতকালীন শীতের তীব্রতা বার বার অনুভব
করেছি নিজ ভগ্নপ্রায় আচ্ছাদনের ভেতরে-বাইরে থেকে।
বুঝে উঠতে কিংবা ঠাহর করতে পারিনি
সবকিছু অবোধ অসার ধীশক্তির কারণে। 
যাহোক যেমনটা ভাবছিলাম বৃষ্টিস্নাত পড়ন্ত বিকেলে
সন্ধিগ্ধ ও অনুসন্ধিৎসু হয়ে নানা দিকে দৃষ্টিপাত
করেও কোন কূল-কিনারা বুঝে উঠতে পারিনি। 
আর পারিনি বলেই নিজকে অশিক্ষিত জনদের
কাতারে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিলনা! 
একসময়ে এসে প্রভাকর পাটে বসতে যাবে
রংধনুর রঙের আভায় যেন সপ্তবর্ণা 
হয়ে উঠেছে বেশ লাগছিল দেখছিল দেখতে।
আগন্তুকরা ক্রমশ চোখের আড়াল হয়ে গেল
যার যার তাগিদে নিজস্ব প্রয়োজনে। 
ভগ্নপ্রায় ঘরের কাছাকাছি আছে আবাসন
যার যার সংসার আগলে। 
এলো গোধূলির তীর্যক বর্ষণ প্রবল বেগে। 
বাইরে নাক গলানো আর সম্ভব হয়ে উঠলোনা। 
চোখে দেখা স্মৃতিগুলো হাতরিয়ে ফেরা 
আর আকাশের তর্জন গর্জন দুকানেই
যেন শুধিয়ে যাচ্ছিলো বৃষ্টি স্নাত রাতের
এক নিদারুণ দৃশ্যপট। 
খানিক পরে মালুম করলাম পুড়ো
বাড়িটা যেন ভুতুরে বাড়ি লাগছে
কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা!
কানে শুনতে পেলুম দূরে কোথাও
বাদক দলের ব্যাণ্ড বাজছে। 
একটু খেয়াল করে বুঝলাম৷ এবং কিছু লোকের
শোরগোল শুনতে পেলাম। 
এতে করে যা বুঝলাম কোথাও কোন 
অনুষ্ঠান চলছে। 
লক্ষ্য করলাম আশ-পাশে যারা তখন ছিল
তাদের আবাসনগুলোও যেন 
ফাঁকা ফাঁকা বলে মনে হতে লাগল। 
ভাবলুম হয়ত এসব যা ভাবছি তার কিছুই না! 
আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। 
অন্য বিছানায় শুয়ে থাকা অপলকে চেয়ে থাকা
এক কল্পিত মহিলার স্মৃতি আজ অনেক
বছর পরে হৃদয় মাঝে খানিকটা নাড়া দিল।
নাড়া দেয়ার সংগত কারণও ছিল
সময়ের ব্যবধানে এসে আজ যে শুধুই স্মৃতি!
সারারাত ধরে বৃষ্টির নৃত্য। বেশ লাগছিলো। 
এবার ভগ্ন আচ্ছাদনে যা কিছু জুটেছিল
তা খেয়ে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে
কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম 
নিজে কিছুই আর বুঝে উঠতে পারলুম না। 
এক স্মরণীয় বৃষ্টি স্নাত রাত এভাবেই কেটে গেল!
বছর তের পেরিয়ে হয়ত পেরিয়ে গেছে
আর কিছুই ভেবে উঠতে পারছিনা! 

নীল চুড়ি কিনে দেবো তোমায় -- জয়সেন চাকমা

নীল চুড়ি কিনে দেবো তোমায়
জয়সেন চাকমা
০১/০৭/২০২৩
প্রিয়,
তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাই, বসন্তের মেলাই 
তোমাকে কিনে দেবো নীল চুড়ি 
নীল চুড়িতে ভীষণ মানাবে তোমায়,
জানি, নীল রঙের চুড়ি তোমার বেশ পছন্দের।
চুড়ি গুলো পেয়ে একটু লজ্জায় হাসবে তুমি 
যে হাসির মাঝে থাকবে ভালোবাসার ছন্দ,
তোমার হাসিতে লুকিয়ে যাবো গভীর প্রণয়ে।
তোমার সুমিষ্ট হাসি পেয়ে আমার হৃদয় আকাশে সূর্য কিরণ দেবে,
হাজার হাজার পুষ্প সেজে উঠবে 
রাত্রিতে পাবো আলোক ঝকঝকের চন্দ্রা
আর অক্সিজেন দেবে আমার ভালোবাসার বৃক্ষটি।
তোমার হাসিতে মুগ্ধতা ছড়াবে পাহাড়ের জুমের ধানও
প্রকৃতিরা সেজে উঠবে।
আর আমি  খুঁজে পাবো হাজার কবিতার ছন্দ 
রোমান্টিক প্রেমের পত্র লেখার বাক্য
আর টিউলিপ ফুলের মুগ্ধময়ের শোভা।
তোমার নীল চুড়ি পড়া হাত ধরে হাটবো দুজন একসাথে 
গোধূলি এক বিকেল বেলায়।

হয়তো কিংবা হয়তো বা -- পরেশ চন্দ্র সরকার

হয়তো কিংবা হয়তোবা 
পরেশ চন্দ্র সরকার
০২/০৬/২০২৩
রাত দশটা দশ,
এম জি রোডের গিরিরাজ হোটেল থেকে
রাতের নিরামিষ খাবার শেষ ক'রে
একটু পায়চারি ক'রতে, প্লাস এককাপ চা
পান ক'রবো ব'লেই
শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশনের
ভেতরের স্টল থেকে এক কাপ গরম চা নিয়ে
সবেমাত্র চুমুক দিয়েছি, ওমনি পাশে
এলোমেলো পরিধানে এক মহিলা এসে
হাত পেতে পয়সা চাইছে, না, খাবার চাইছে
বুঝতে পাচ্ছি না, মুখটি করুণ তার, পড়নে
একমাত্র মলিন শাড়ি, গায়ের রঙ ফর্সা,
উন্নত সুডোল ভরাট বুক, মহিলার শাড়ির
অবস্থান উন্নত খোলা বুকের যথাস্থানে নেই,
মুখোশের আড়ালে এ মুখ ব'লে মনে হ'লো না,
আমার এক চাহনিতেও।
ওদিকে প্লাটফর্মের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে,
আবার অন্যপ্রান্ত থেকে এইপ্রান্তের দিকে
মানুষের ঢল ছুটে চলেছে হড়পা বানের মতো
খরস্রোতে, কিন্তু সেই ঢেউয়ের মধ্যে থেকেও
শত সহস্র যুগল ক্ষুধার্ত চোখ যেন সংগোপনে
অথচ
প্রকাশ্যে গিলে খেয়ে যাচ্ছে
এককালীন মনের বাসনা পুষে
পুরোপুরি যেন এলোকেশীর অর্ধ-নগ্ন বুক
কামনা মেটাচ্ছে দেখে
উন্নত সুডোল ভরাট যুগলে প্রাণবন্ত সুখ।

চা চুমুক দিতে দিতেই পকেটে হাতটি দিয়ে
তুলে নিলাম দশ টাকার একটি কয়েন,
সেটাই তুলে দিচ্ছিলাম মহিলার হাতে,
মাথা নেড়ে অস্বীকার ক'রে সেটি নিতে,
ইশারায় আরও একটি চায়,
পকেট থেকে পুনরায় আরও একটি দশ টাকার
কয়েন বের ক'রে দিতেই মহিলা যেন বিগলিত
করজোড়ে আশীর্বাদস্বরূপ একটি নমস্কার দিয়ে
চলে যায়। আমার মনে পড়ে গেল, আজই
শনিবার সন্ধ্যায়
এম জি রোডের ফুটপাত দিয়ে যখন
বাইরের কাজ শেষ ক'রে শান্তিনিকেতন
হোটেলে ফিরছিলাম, ফুটপাতের ধারেই
দেখেছিলাম শ্রীশ্রীশনি ঠাকুরের পুজো ক'রছেন
একজন পুরোহিত, থমকে দাঁড়ালাম,
পকেট থেকে দশ টাকার নোট বের ক'রে
রেকাবে রেখে পায়ের জুতো খুলে
দু'হাত জোড়ে মুখে বিড়বিড় ক'রতে ক'রতে
দীর্ঘ নমস্কার ক'রেছিলাম। এইবার
আমার প্রশ্ন আমারই কাছে, আমি যে প্রণাম
ক'রছিলাম সেটা ছিল মাটির মূর্তি শ্রীশ্রীশনি
ঠাকুরের কাছে আর এখন যে আমাকে
কুড়িটি টাকার বিনিময়ে দীর্ঘ প্রণাম ঠুকে
আশীর্বাদ ক'রে গেল...
এটা কি ব্যাখ্যায় আঁকি আমি?
কি ভাবছেন পাঠক প্রিয় কবি?
তাহ'লে এই কি জীবন্ত দেবী! যে হয়তোবা
নিজের, প্লাস তার বাচ্চাদের খাবার জোগাড়
হেতু হাত পেতেই চেয়ে নিচ্ছে কিছু, আর
মাটির মূর্তি না চাইতেই
দিব্যি পেয়ে যাচ্ছে বারবার,
সত্যিকার
অবাক আঁকছে
আমারও মনে, এ কোন্ ক্ষণে
বাস ক'রছি অন্ধ মানুষ আমরা?
কি ব'লবে তোমরা? 
অথচ কত জীবন্ত দেবদেবী ঘুরে বেড়াচ্ছে
রাতবিরাতে রাস্তা দিয়ে
তাদের পেটে দু'তিন দিনের খিদে নিয়ে!
ওদের হাতে হয়তো
কোনো কাজ নেই কিংবা এটাই কাজ হয়তোবা!

অভিমানী -- কাকলী


অভিমানী
কাকলী
০৩/০৭/২৩
কিছু গল্প লেখা থাকে চোখের পাতায়,
ঝাপসা বড়োই, কষ্ট করে পড়ে নিতে হয়,
আদুরে মনটার নরম অভিমান,
এক আকাশ বৃষ্টি সমান,
ভিজে যায় রোজ নিজে, চোখের কাজল ঘেঁটে,
কেন সে বলবে মনের কথা তোমাকে,
কথাগুলো যে বড্ডো ভারী, পারবেনা তা সহ্য করতে,
অনেক দিনের অনেক সময় ধরে জমানো কথা, পাহাড় সমান,
নেই কোনো উত্তর তোমার কাছে, পারবে না রাখতে তার মান,
দিনের আলোয় রাতের তারা খোঁজা যে,
চোখের সামনে থেকেও জানতে পারলে না যাকে,
তাকে কি করে বোঝানো যাবে এতো সহজে,
এই অভিমানের পাহাড়, আমার অহংকার, থাকনা এ শুধুই আমার,
কাউকে এর ভাগ দিতে চাই না, ভার সহ্য করতে পারবে না তার,
তুমি চলে যাও তোমার পথে, পথ তো সোজা খোলা আছে,
আমার জন্য রইলো নাহয় একটা খোলা আকাশ,
আর পৃথিবী জোড়া স্বপ্ন, আর সেই শিশির ভেজা ঘাসফুল,
আমি নাহয় এদের নিয়েই গল্প লিখবো,
একটা ভিজে যাওয়া সন্ধ্যার গল্প, একটা অপেক্ষার গল্প,
ঠান্ডা হয়ে জুড়িয়ে যাওয়া কিছু অনুভবের গল্প,
লিখে যাবো জীবনভোর আমার আমিকে নিয়ে,
না, তোমার কোনো জায়গা নেই আমার স্বপ্নে,
থাকবে এই লেখাগুলো হাওয়ায় ভেসে ভেসে,
ধুপ পুড়ে যাওয়ার পরেও যেমন গন্ধ হাওয়ায় ভাসে,
সেইভাবেই একদিন বাতাসে ভেসে ভেসে হারিয়ে যাবো,
আর এক আকাশ প্রেম রেখে যাবো।

Friday, June 30, 2023

বর্ষামঙ্গল -- শিপ্রা বসাক

বর্ষামঙ্গল
শিপ্রা বসাক 
৩০/০৬/২০২৩
আমার যত কান্না আছে , তোমার কাছে ,
বৃষ্টি হয়ে ঝরুক এবার ভূমির পড়ে
বৃষ্টি ভেজা মনের উপর রং যদি দেয় রামধনু , দিক না ।
বৃষ্টি যখন টাপুর টুপুর , মেঘের পরে মেঘ জমছে
তুমি তখন এক চিলতে সৌর আলো
রামধনুতে ছড়িয়ে দিলে তোমার হাসি
মন তো ছুঁয়ে যাবেই ।

জুঁই ফুলের পাপড়ি ছুঁয়ে জল ঝরছে
সে তো আমার মনের কথা কথা ,
বৃষ্টি ভেজা মাটি ছুঁয়ে গান বেঁধেছি ,
সেতারে তার সুর দিয়েছি ,
তোমাকে তো পাগল করবেই ।

যতই আমি আঁচল বাঁধি কোমর জুড়ে ,
ভেজা বাতাস এলোমেলো , উথাল পাথাল
রঙ্গনের রং লেগেছে মনের কোণে 
শরীর জুড়ে হাসনুহানার পবিত্র ঘ্রান
তুমি তখন একলা পথে
পারবে কি আর সচল ঘড়ি এগিয়ে যেতে
নিয়ম তখন নিয়ম শুধু ওদের জন্য
আতর ঢালা বাতাসে যাদের মন ভেজে না
তুমি আমার দেব কাঞ্চন শরীর জুড়ে
ভুল যদি হয় আরেকটিবার !
অপরাজিতা পাপড়ি মেলে কাজল ছোঁয়ায়
ঠোটের পরশ মিলিয়ে নিও ঠোঁটের পরে ,
তখন যদি কান্না আসে মুছিয়ে দিও ,
ইচ্ছে হলে আঁকতে পারো তোমার আদর ,
খুঁজতে পারো জল নুপুরের শব্দ ধ্বনি ,
মেঘ যদি চায় গর্জে উঠুক , ছলনাময়ী ,
আমি তখন এক দৌড়ে তোমার বুকে 
লাজুক হাসির ঝলকানিতে আকাশ আলো ,
কামিনী আজ আবার বুঝি মন ভোলালো

বর্ষা আমার মিষ্টি সুরের মোহন বাঁশি ।



Thursday, June 29, 2023

প্রকৃত ভালোবাসা -- মোফতাহিদা খানম রাখী

 প্রকৃত ভালোবাসা 
মোফতাহিদা খানম রাখী 
২৬/০৬/২৩
চোখের দেখায় ভালো লাগা
            ভালোবাসায় নেয় যে রূপ
আগে পিছে যায়না ভাবা
            ভাবনা যে হয় নিশ্চুপ। 

ভালোবাসার রঙিন চাদর
           গায়ে জড়ানো অনুভুতি
ভালো মন্দ বিচার ক্ষমতা
           মন থেকে নেয় যে ছুটি।

আবেগ তখন টগবগিয়ে
            বাস্তবতাকে চুপসে দেয় 
ভালোলাগার রঙিন ফানুস
             মহাশূন্যে উড়তে চায়।  

সঠিক বেঠিক দেয় গুলিয়ে 
             ভালোবাসার প্রজাপতি 
ভেদাভেদ জ্ঞান যায় মিলিয়ে 
             সম্ভব অসম্ভব  সব মতি গতি। 

বাস্তবতা সদাই নিরেট অতি
            মোছা যায়না জীবন থেকে 
সময় হলে ই বুঝিয়ে দেয়
           ভুল ঠিকের অস্থিত্বকে।

সঠিক ভালোবাসা হয়না বিলিন
           বাস্তবতার চাবুকের আঘাতে
আজীবন তা লালিত হয়
           অন্তরের গহিন অনুভুতিতে।

তাইতো বলি ভালোবাস 
           সঠিক বেঠিক বিচার করে
ভুল করে পাকে পড়লে
           পস্তাতে হবে জীবন ভরে।

তোমায় দেখেছি -- রেজাউল করিম বিশ্বাস

 তোমায় দেখেছি
 রেজাউল করিম বিশ্বাস 
 ২৭...০৬...২০২৩
তোমাকে দেখেছি  কালো মেঘের আড়ালে
দেখেছি কুচকানো চুল হাওয়ায় দোলানো
দেখেছি উদাস নয়নে রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টির মাঝে।

শ্রাবনের ইলশে গুড়ির পর রামধনু রঙের 
আকাশে ছুটন্ত সফেদ মেঘ স্বপ্ন মাখা ক্ষণে
জলঙ্গীর জলে পানকৌড়ির সাথে ডুব সাঁতারে ।

দেখেছি গ্রামে ধুলো মাখা রাস্তায় আলুথালু বেশে
দূরে আরো দূরে আকাশে দৃষ্টি নিক্ষেপে
 চিল শকুনের ডানায় আবদ্ধ থেকেছো তুমি।

দেখেছি শারদ প্রাতে হিমেলে বাতাসে নির্জনে 
চা-রঙের শাড়িতে সাজি হাতে শিউলি তলে
চলেছ মন্থর গতিতে দূর্বা ঘাস মাড়িয়ে অজানায়।

দেখেছি তোমার চোখে অনন্ত ভালোবাসা
দেখেছি  আনমনে সাত সাগরের উত্তাল ঢেউ
দেখেছি বৃক্ষ ছায়ার  সবুজ মাঠে হারিয়ে যেতে।

Monday, June 26, 2023

হারানো সকাল -- সঞ্জিত মন্ডল

 
হারানো সকাল
সঞ্জিত মণ্ডল
২৪/০৬/২০২৩
সঞ্জিতের কবিতা !! "হারানো সকাল"!!
ছাতিম গাছের ছাতার তলায় বসে
দেখি, বৃষ্টি ভেজা মানুষ যাচ্ছে ওই
ভেজা কাকের গল্পটা চোখে ভাসে
হারিয়ে যাওয়া সকাল বেলাটা কই?

নিশির ডাকে ঘুমটা ভাঙলো যেই
ফুস্কুড়ি গুলো চকমকি হয়ে জ্বলে
ঝড়ের মাতন কৃষ্ণচূড়ার ডালে
হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামলো  কই? 

খেঁজুর গাছের মাথায় বন্ধু ভাই
রস চুরিতে ছিল না কেউ জুড়ি
রসের হাঁড়ি নামিয়ে নিতে তাই
বন্ধুরা সব লাঙ্গল তুলে ধরি।

সে সব কথা ভাবলে এখন মনে
লুকোচুরি সেদিনের সেই বনে
লজ্জা পাবে না জানি কয় জনে
মনের কথা হারিয়ে দিলাম মনে।

পুকুর পাড়ে কয়েৎ বেলের গাছে
হুটোপাটি খেলতে গিয়ে নীচে
আছাড় খেয়েও ছুটে পালাই নেচে
ডাব পাড়তে হবে সে কোন গাছে।

অনেক কথা বলার ছিল কত
ভাবনা গুলো হোঁচট খেল যত
এখন সেদিন ভাবলে কেমন লাগে
ছোট্ট বেলার স্বপ্ন ছিল কত।

এখন তো আর সেসব স্বপ্ন নাই
অবাক হয়ে ভাবি এখন তাই
ভোরটা কখন বিকেল হয়ে গেল
হাত বাড়িয়ে খুঁজে বেড়াই তাই।

বিকেলও কখন গড়িয়ে গেল রাতে
রাতচরা পাখি ডানা ঝাপ্টিয়ে ডাকে
কিসের ঘোরে দিকবিদিকে চাই
সকালটা আর সকাল বেলায় নাই।।

বর্ষার নূপুরধ্বনি -- অমর দাস

বর্ষার নূপুরধ্বনী 
অমর দাস।
২৫/০৬/২৩.
বর্ষারাণী তুমি ঝরে পড় পৃথ্বী মাঝে বন্ধু,
তব শ্রাবণধারা আজ করে স্নিগ্ধ এ সিন্ধু।
ঝিরিঝিরি শব্দে শুনি যে তব বারি ঝরা, 
ওগো বর্ষা তুমি এসো হয়ে মম প্রেমধারা, 
তব বারিধারায় পৃথ্বী উঠুক সবুজ হয়ে,
বর্ষারাণী তব ধারা ঝরুক প্রকৃতি হৃদয়ে।
স্নিগ্ধ হবে তপ্ততা যদি ঝরে পড়ো তুমি।
নব ধারায় এসোগো তুমি মোর বর্ষারাণী। 
বর্ষারাণী এসো তুমি নব বঙ্গ বধূর সাজে,
তব মধু ঝর্ণাধারা মম কর্ণ কুহরে বাজে। 
রূপসী বর্ষা তুমি ঝরে পড় প্রকৃতির দ্বারে,
মেঘ অশ্রু বর্ষা হয়ে শুষ্ক বৃক্ষে পড় ঝরে। 
তাইতো পৃথিবী দেখো নব সাজে আজি, 
নব সবুজ পত্রে সাজে এ পৃথ্বী বৃক্ষ রাজি। 
আনন্দ অশ্রু বর্ষা ঝরে শ্রাবণের ধারায়।
কুলু কুলু নদী নব রূপে সিন্ধু পাণে ধায়। 
বর্ষারাণী তোমার ঐ যে ঝর্ণা রঙের টানে,
পৃথ্বী কে করেছো সবুজ ভাসাও  প্লাবনে।
ঝরঝর বর্ষা যেনো ললনার নূপুর ধ্বনি।
বরিষে বর্ষণধারা শুনি কর্ণে রিনিঝিনি।
মুষল বর্ষণে দিক দিগন্ত হলো জলময়,
চাষীর মুখে ফুটেছে হাসি সে আনন্দময়।
বাদল মেঘে ভরা আকাশ যে বর্ষণধারা,
পুলকিত প্রথম বর্ষণে সিক্ত হলাম মোরা। 
গ্রীষ্মের দাবানলে আজ জ্বলে বঙ্গজননী,
তব বর্ষণধারায় স্নিগ্ধ করেছে এই ধরনী। 
বর্ষায় ভরুক প্রকৃতি বক্ষ হে বর্ষা রাণী।
ধুয়ে মুছে যাক জীবনের যত আছে গ্লানি।

Sunday, June 25, 2023

সময়ের ইতিহাস -- ধীরেন গোস্বামী

সময়ের ইতিহাস 
ধীরেন গোস্বামী 
24/06/23


সময়ের ঘড়ি সতত সচল 
চলে সে আপন ছন্দে,
রাতের শেষে সকাল দুপুর
বিকাল গড়ালে সন্ধ্যে।

শৈশব কৈশোর যৌবন যায় 
এসে বার্ধক্য করে গ্রাস,
সময়ের তালে ব্রহ্মাণ্ড চলছে
লেখা থাকে ইতিহাস।

মানুষ আমরা নিমিত্ত মাত্র 
এই জীবনের খেলাঘরে,
যতনে সাজাই সেই খেলাঘর 
সবই হেথা থাকে পড়ে।

আমার আমার দুই চারিদিন
কতো না হিংসা দ্বন্দ্ব,
মনুষ্যত্বের চেতনা জাগে না 
চোখ থাকিতেও অন্ধ।

কিছুই যখন যাবে না সঙ্গে 
তবু নাও লুটেপুটে,
গোরে নাহয় চিতার আগুনে
শেষ হয় শ্মশান ঘাটে।

পেয়েছ অমূল্য মানব জীবন 
সময় যে বড়ো অল্প,
তাই মানবিকতার কর্মটা হোক
জীবনের শ্রেষ্ঠ গল্প।

Saturday, June 24, 2023

প্রয়োজনে খাতির শুধু -- পরেশ চন্দ্র সরকার

প্রয়োজনে খাতির শুধু 
পরেশ চন্দ্র সরকার
২১ .০৬ . ২০২৩
যেই দিন, দিনটা খারাপ আঁকে
সবকিছুতেই মাত্রাতিরিক্ত,
ঝামেলা দেখি সবকিছুর ফাঁকে
অসহ্য হাঁটে, মন তিক্তবিরক্ত।

কেউ-ই যেন চিনে না আমাকে
দেখে ক'রে না দেখার ভান,
সম্বোধনে ডাকলামও তোমাকে
সেই ডাকেও দিলে না কান।

শুধু তুমি কেন আজকে এহেন
ব্যবহারই পাচ্ছি সবার থেকে,
কত অন্যায় ক'রেছি আমি যেন
নজর ঘোরায় আমায় দেখে।

বুঝেছে প্রয়োজনে পাবে না আর
ভাবছে লাভ নেই ক'রে জবাই!
একদা প্রয়োজনে ছিলাম 'সবার'
সেজন্য খাতির ক'রতো সবাই।


ছাতারেও এক নারীর গল্প -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 ছাতারেও এক নারীর গল্প 
 শ্যামল কুমার মিশ্র
 ২৩-০৬-২০২৩
গল্প লিখতে গিয়ে এলোমেলো ভাবনাগুলো যেন আর পিছু  ছাড়ছে না অনিমেষের। সকালবেলার নরম রোদ্দুর এসে পড়েছে পড়ার টেবিলে। পেয়ারের ডালে বসে সাত ভাই ছাতারেরা খুনসুটি করে চলেছে। কেউ লাফিয়ে উপরের ডালে উঠে দোল খাচ্ছে। কেউ বা নিচে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত। সে  সব দেখতে দেখতে কখন যেন অনিমেষ হারিয়ে যায়। 
সেদিনটা ছিল এমনি এক বৈশাখের সকাল। নরম রোদ্দুর এসে পড়েছিল যুবক অনিমেষের টেবিলে। সদ্য স্কুলের চাকরিতে যোগদান করেছে। কলকাতা থেকে অনেক দূরে উত্তর ২৪ পরগণার এক প্রান্তিক অঞ্চলে। স্কুল থেকে একটু দূরে ইছামতি বইছে। সকাল বিকেল কত মানুষের আনাগোনা। ভাষা আর সংস্কৃতির ভিন্নতা অনিমেষকে আকৃষ্ট করে। দিনের শেষে সূর্য যখন অস্ত যায় তখন ইছামতির বুকে এক অপরূপ রঙের খেলা। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন আঁধার নেমে আসে।টেরই পায়না অনিমেষ। ঐ ইছামতির তীরে শৈবাল ভট্টাচার্যের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট থাকে অনিমেষ। শৈবালবাবু খুব সজ্জন ব্যক্তি। । পেশায় উকিল। পরিচ্ছন্ন রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ। সামনে সুন্দর বাগান। বাড়ির পেছন দিয়ে বয়ে চলেছে ইছামতি। অনিমেষের ঘরের জানালা দিয়ে ইছামতিকে দেখা যায়। ভাটিয়ালী গাইতে গাইতে পালতোলা নৌকা ভেসে চলেছে। দেখতে দেখতে কখন যেন সময় পেরিয়ে যায়। প্রথম প্রথম কলকাতার জন্য মন কেমন করলেও এখন ইছামতি যেন সব দুঃখ ঘুচিয়ে দিয়েছে। সময় পেলেই কাগজ কলম নিয়ে বসে যায়। আজ সকাল থেকে লিখতে বসেই সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। একটু লিখছে, তারপর সামনে রাখা ওয়েস্ট পেপার বক্সে দলা পাকিয়ে কাগজগুলো ছুঁড়ে ফেলছে। কিছুতেই যেন গল্পটা দাঁড়াচ্ছে না। এমন সময়ে রোশনী এসে দাঁড়ায় চৌকাঠে। 'কি করেছেন ঘরটার'?  কিছু কাগজ ডাস্টবিনে কিছু কাগজ মাটিতে তখন গড়াগড়ি খাচ্ছে। অনুমতির পরোয়া না করেই ঘরে ঢুকে পড়ল রোশনী। রোশনী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। শৈবালবাবুর একমাত্র মেয়ে। বসিরহাট কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ে। খুব বেশি সাক্ষাৎ না হলেও পরস্পরকে খুব ভালোভাবেই চেনে ওরা। ফর্সা সুন্দর গড়ন। চোখে মুখে এক প্রাণোচ্ছলতা সবসময় অটুট। খুব মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে। 'এই যে মশাই, বাবা মা যে শ্রীমান অনিমেষের জন্য চায়ের টেবিলে অপেক্ষমান'। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে দুজনেই হেসে ফেলে। বুঝতে বাকি রইল না চায়ের বার্তাটি দিতে এসেছিল রোশনী।  এসেই ঘরের এই অবস্থা দেখে ওড়নাটা কোমরে বেঁধে মেঝেতেই বসে পড়ে। তারপর এক একটা টুকরো তুলে নেয়। অনিমেষ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। আপন মনে পড়তে থাকে রোশনী। 

টুকরো ১: গঙ্গার তীর ধরে এগিয়ে চলেছে ওরা-- সন্দীপন আর সুপর্ণা। অপরাহ্ণের লাল আলোয় আকাশ ভরে উঠেছে। সেই আলো এসে পড়েছে নদীর জলে। অপরূপ এক রঙের খেলা। গঙ্গা তীরে সবুজ ঘাসে ওরা বসে। হাতে হাত রেখে নীল জলের অতলান্ত গভীরে যেন ওরা ডুব দেয়... 

টুকরো ২:  সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আঁধার নেমে আসছে। গঙ্গার দুই তীরে আলো ঝলমল করছে। দূরে জুট মিলের ভেপু বেজে উঠলো। গঙ্গার দুপাড়ে তখন মিলে ছিল প্রাণের জোয়ার। মিলকে ঘিরে প্রেম, বিরহ, হিংসা...। ক্রিং, ক্রিং শব্দ করে সার সার সাইকেল এগিয়ে চলেছে। 

টুকরো ৩: আঁধারের আলোতে ওরা বসে থাকে। মেয়েটি ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে। ছেলেটির চোখে মুখে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন। প্রথানুগ বিয়েতে ও রাজি নয়। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রই মানুষের বেঁচে থাকার দায়িত্ব নেবে। মানুষ তার সাধ্যমত শ্রম দেবে। শ্রম এবং পুঁজির অসম বন্টনে একদল গরীব থেকে আরো গরিব হয়ে যাচ্ছে। বলতে বলতে সন্দীপনের চোখ দুটো যেন জ্বল জ্বল করে ওঠে। ভয় পেয়ে যায় সুপর্ণা। অজানা আশঙ্কায় সন্দীপনকে জড়িয়ে ধরে। 

টুকরো ৪: রাতের অন্ধকারে পুলিশ এলো। পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলল। বৃদ্ধা মা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তুলে নিয়ে গেল সন্দীপনকে। হাজার একটা অভিযোগ দিল। কারান্তরালে হারিয়ে গেল সন্দীপন। সুপর্ণা অপেক্ষায়...

টুকরো ৫: মাটির দাওয়ায় বসে থাকে এক নারী। শব্দ যেন হারিয়ে গেছে ওর জগতে। জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে থাকে। অদ্ভুত এক শূন্যতা। চমকে ওঠে মেয়েটি। একটা দল ছাড়া ছাতারে রক্তাক্ত অবস্থায় এসে পড়ে সাদা গোলাপের উপর। গোলাপের সাদা পাপড়ি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। চিলটা তখন দূর আকাশে। অস্থির হয়েও ওঠে সুপর্ণা। 

আর টুকরোগুলো তুলতে পারে না রোশনী। দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। রোশনী যেন দেখতে পাচ্ছে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তখনও রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ছাতারে দুবার যেন কাকে ডাকল। তারপর চিরস্তব্ধ হয়ে গেল। অনিমেষ ধীরে ধীরে উঠে এসে রোশনীর মাথায় হাত রাখে। রোশনী হারিয়ে যায় অনিমেষের বুকে। জানালার  ওপারে বাগানে ছাতারে দম্পতি তখন খুনসুটি করে চলেছে।

গোধূলি লগনে -- নিতাই শর্মা

 গোধূলি লগণ।
নিতাই শর্মা
২৩/০৬/২০২৩
সূর্য অস্ত যায়নি রয়েছে পশ্চিম  দিগন্তে,
রাখাল বালক ঘরে ফেরে গরু নিয়ে দিনান্তে।
ধূলো উড়ে গরুর পায়ের খুরের আঘাতে,
ক্লান্ত রাখাল বালক পিছনে চলে লাঠি হাতে।

ডুবেনি সূর্য রয়েছে রক্তিম বরণে,
মৃদু আলোক রশ্মি পড়ে বৃক্ষ পত্র পানে।
ক্লান্ত বকের দল উড়ে চলে পূর্বাকাশে ,
এখনই ফিরবে তারা আপন আবাসে।

শিশু গন মাঠে রয়েছে খেলা সাঙ্গ করে,
কিয়ৎক্ষণ পড়েই তারা ফিরবে নিজ ঘরে।
বনের পশুপাখিগন ফেরে গহণ বনে,
ভোরের আলোয় ঘুরে আহারের সন্ধানে।

অস্তগামী সূর্যরশ্মি পড়ে ধূলোর পরে,
এক অপরূপ বর্নচ্ছটায় ধূলো উড়ে।
লেখক কবি সাহিত্যিক কাব্যিকগনে,
নামাঙ্কিত করেন সমকালে গোধূলি লগনে।

হিন্দু পঞ্জিকা মতে তিথিহীন শুভ ক্ষণ,
লগ্নহীন সমকালে হয়  বিবাহ লগন।
বিকালের পরে সন্ধ্যার হয় আগমন,
সন্ধ্যার ক্ষিয়ৎকাল পূর্বেই হয় বিবাহ বন্ধন।

মিলিয়ে নিও -- নিবারণ চন্দ্র দাস

মিলিয়ে নিও   
নিবারণ চন্দ্র দাস
২২/০৬/২০২৩
মানুষ আবার মানুষ হবেই মিলিয়ে নিও,
বাঁচবে আবার ধরিত্রী মা,মিঠে হাতের পরশ দিও।
রমনীয় পরিবেশটা ফিরবে আবার আপন রূপে,
জ্বলবেনা আর ভীষন আগুন জরাজীর্ণ ধ্বংসস্তুপে।

দূষণমুক্ত এই পৃথিবী হাসবে আবার নবরূপে,
হাসবে সবাই খিলখিলিয়ে নতুন ভাবে নব সুখে।
বন জঙ্গল উঠবে ভরে নতুন ভোরে লতায় পাতায়,
লিখবে আবার সৃষ্টি খাতা এই ধরণীর শূন্য পাতায়।

জল জঙ্গল পাহাড় নদী সবুজ ভরা চাষের মাঠে,
আসবে সুদিন কাটবেগো দিন নষ্টবৃত্তি উঠবে লাটে।
সুখ শান্তি আনন্দ গান উঠবে বেজে নবীন রূপে,
নষ্ট মনন,আবর্জনা বিসর্জিত হবেই হবে অন্ধকূপে।

আশায় চাষার ভরসা মনে,আসবে ফিরে নব জোয়ার,
খুলে যাবেই মানব মনের শুভ মুক্তির বন্ধ এ দ্বার।
উত্তরণের গান গেয়ে আজ ফিরে দাঁড়া মানব জীবন,
নষ্ট মনের মরা গাঙে আবার হবেই সুরের সঞ্জীবন।

এই ধরণী শীতল হবেই,উঠবে হেসে সপ্তমে চাঁদ,
জীবন আবার উজ্জীবিত,আর কখনো নয় বরবাদ।
তোমার আমার স্বচ্ছ মনন গড়তে হবে নবোদ্যমে,
ধরিত্রী মা শান্ত হবেই মিলিয়ে নিও,ক্রমে ক্রমে।
                              

আষাঢ়ে ক্ষেত-খামার -- হরষিত মজুমদার

 আষাঢ়ে ক্ষেত-খামার
 হরষিত মজুমদার।
 ২২.০৬.২০২৩
এখনো আসেনি বর্ষা    শুখা মাঠ ঘাট,
সবুজ ঘাসের পর         গরু,ছাগ চরে,  
রাখালের দেখা নাই     মাছ নাহি ধরে,
আমন বীজতলায়        ভরে নাই মাঠ।
মাঝে মাঝে উঁচু ক্ষেত কাটে ওরা পাট,
সাদা সাদা বকপাখি খায় পোকা লড়ে, 
শ্রাবণ বারিধারায়         ধান চাষ করে,
ভুট্টার চয়ন কাজ       নিয়ে যাবে হাট।

বর্ষার প্রাক্কালে ট্রেনে   করি যাতায়াত,
হাওড়া কর্ডলাইনে          বর্ধমানে যাই,
দুদিকে ধানের জমি      একটু বিশ্রামে,
বর্ধমান ধান্য গোলা     ধানে বাজিমাত,  
আঃ কী উষ্ণ গরম!     ঘাম ঝরে তাই!
খরিফে উৎপন্ন ধান  খায় যে আরামে।

 

Thursday, June 22, 2023

নদীর কথা -- এঞ্জ্যেল অঙ্কনা সিংহ

 নদীর কথা
 এঞ্জ্যেল অঙ্কনা সিংহ
 ১৬/০৬/২০২৩
আমি বহমান ক্ষীণস্রোতা,

নিঝুম পাহাড়ী নদী,

অপাংক্তেয় ক্ষুদ্রাতি কায়া,

বর্ষা না হয় যদি।

মৃদু বর্ষণে পাখনা মেলি,

জলতরঙ্গ খেলি,

কত শত প্রাণ বিকশিত হয়,

সাজায়ে নিজের ডালি।

ঘোর ঝঞ্ঝাতে আমি রুদ্রাণী,

ত্রাহি ত্রাহি ওঠে রব,

নব পল্লবী সূচনাতে হয়,

সুললিত বৈভব।

শহর গজায় মোর দুই তীরে,

মাঝিদের আনাগোনা,

জল সম্পদ মৎস ভরা,

ভরে নাও দু'টি ডানা।

নির্মল করি চঞ্চল ভরি,

কুসুমিত সব প্রাণে,

দুখের আবহ ঘুচিয়ে ধরাতে,

খুশি আনি জন মনে।

শিলাই পিয়ালী চূর্ণী ডায়ানা,

তোর্সা কুহকী মালিনী,

যে নামেই মোরে ডাকো না কেন?

আমি ভবে প্রাণদায়িনী।

বর্ষাকালের সংজ্ঞা -- মোঃ নূরুল আলম

বর্ষাকালের সংজ্ঞা
মোঃ নূরুল আলম 
১৮/০৬/২০২৩ 
 
গুমোট আবহাওয়া --
অসীম শূন্যতায় জটাধারী মেঘের সন্তরণ 
অশুভ কোন ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত ! 
হালকা কর্পুর শীতল হাওয়ার আলিঙ্গন, 
পাস্তরিত মেঘের ঘোমটা খুলে সহসা  
খেমটা নাচের অশালীন কোরিওগ্রাফী, 
অতঃপর  জল স্থলে বৃষ্টি সুঁইয়ের নকশী আঁকা  
ক্রমাগত প্রকৃতির কাঁথায় ডুব সাঁতার । 
টিনের চালায় ঝমঝম অশ্রু বর্ষণ, 
সুনসান জনপথ, ভিজছে তপোবন, 
ছাদে, মাঠে, ঘাটে কুকুর বেড়ালের জঙ্গ 
পরক্ষণেই সব নিরব ক্ষনে ক্ষনে মেঘ গর্জন,
পর্দার অন্তরালে ভাণু বাবুর আসন গ্রহণ  ;
দমবন্ধ ভ্যাপসা গরমে মানুষ নাকাল 
একেই বলে বুঝি বর্ষাকাল! 

বয়সী বিটপী কলম -- হাসান ফরিদ

বয়সী বিটপী কলম
হাসান ফরিদ
১৯/০৬/২৩
বহতা বেদনার হিমাচল নদী...
হৃদয় সরোদ থেকে লোহিত  সরোবর অবধি...
নীল পদ্ম হয়ে ফোটে অবিরাম রক্তক্ষরণে...
বরণের সপ্তবর্ণ অমৃত গরলে ডুবসাঁতার দেয় জরুল জারনে... 
হেমলক পেয়ালা উলটে থাকে ধূপছায়া আকাশে... 
যোজন দূরত্ব খেয়ে ফেলে কালবেলা টিকটিকি নীলাদ্রি নিমিষে...

ধূসর গল্পরা প্লবগ  লম্ফে ধাবমান মূর্তি...
সুগন্ধি বৃক্ষেরা আত্মহননের ব্যর্থতায় দুর্গন্ধের ক্লিনিকে ভর্তি...
সভ্যতা দাঁড়িয়ে থাকে কাকতাড়ুয়ার আবডালে কাকজ্যোৎস্নায়...
কাব্যগ্রন্থ শব্দের মমিদের মিছিলে বেধড়ক পেটায়...। 

বেআব্রু বাক্যরা রুপান্তরিত লিঙ্গবৈষম্য দোষে দোষীসাবস্ত..
জীবন থেকে চালচিত্র পালায়নরত; উপন্যাস বেঢপ বিকলাঙ্গ সাত আঙুলের হস্ত...
কবিতারা চায় অনির্দিষ্টকালের ছুটি বয়েসী বিটপী কলম স্তব্ধ আজ...
গোধূলির জলরং মোহনা ছাপিয়ে সমুদ্রবিহীন মৈথুনে নিঃশব্দে খুলে কবি খোয়াবনামার ভাঁজ...

Wednesday, June 21, 2023

ঘুমের মাঝে -- রঞ্জন ঘোষ

 ঘুমের মাঝে
 রঞ্জন ঘোষ
  ২০/৬/২৩
ঘন জমাট বাঁধা অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে আমি চলছিলাম পথ,
দু'পাশের কিছুই যাচ্ছে না দেখা  অস্পষ্ট ছায়া যাচ্ছে সরে সরে,
আকাশে নেই চাঁদ লুকিয়ে আছে হয়তো সে মেঘের আড়ালে,
দু'চারটে তারা ঐ অন্ধকারে মিটমিট করছে রহস্যের জাল সৃষ্টি করে।

মনের মধ্যে কেমন ভয় ভয় করছে রাস্তায় দেখছি না আমি কাউকে,
অদ্ভুত এই পরিবেশে আমি একা একা হেঁটে চলেছি সামনের দিকে,
জোনাকির আলো আমায় কিছুটা পথ চলতে সাহায্য করছে,
মনে হচ্ছে এক অজানা শক্তি টেনে নিয়ে চলেছে আমার শরীরটাকে।

বড় বড় বাদুর গুলো অদ্ভুত ভাবে যাচ্ছে উড়ে খুব নিচে দিয়ে,
মনে হচ্ছে যে কোন সময় ওরা এসে আমার রক্ত চুষে খাবে!
ভয়ে তাকাই এদিক ওদিক, এটা কি ভ্যাম্পায়ারের আস্তানা?
সেই প্রশ্নের উত্তর নেই জানা, চিন্তা কেমন প্রাণ বাঁচবে,

দূরে একটা ঘোড়ার গাড়ি আসার আওয়াজ কানে এলো,
থরথর করে কেঁপে উঠি এটা কাউন্ট ড্রাকুলার গাড়ি নয়তো?
দূরে শিয়ালের চিৎকার অনেকটা নেকড়ের চিৎকার মতো লাগলো,
মনে হলো আজ আমার জীবনের শেষ দিন হয়তো।

শব্দটা ক্রমশ বাড়তে লাগলো ঘর ঘর ঘর শব্দ করে,
হৃদপিণ্ড আমার দ্রুত বাজতে থাকে ঠিক দামামার মতো,
চিৎকার করি আমি মরতে চাই না, আর যাবো না কখনো এই পথে,
চোখ খুলতে দেখি সবাই বসে মাথার কাছে, আমি খেলাম থতমত।

পথ -- সুভাষচন্দ্র ঘোষ

পথ
সুভাষচন্দ্র ঘোষ 
 তাং 17/06/2023
     কোথা থেকে শুরু         লঘু কিম্বা গুরু 
               জানিনা -- তবুও পথ চলা,
     নির্ভেজাল বনচারী       সভ্যতার দিশারী
             সেই  বিপদসঙ্কুল পা ফেলা।
      পেটের খিদের টানে  গুহার বাহির পানে
               মানুষ প্রথম ফেলেছিল পা,
      সবুজ ঘাসের পরে  আঁকা হয়েছিল যারে
                পায়ের চিহ্ন অস্পষ্ট রেখা।
       বারংবার চলাচলে    দাগ হয়েছিল বলে
                     প্রথম সৃজন নূতন পথ,
       যুগের পর যুগ বয়ে      বহু বিবর্তন সয়ে
                 চলেছে মানব সভ্যতার রথ।
       সুউচ্চ পাহাড়চূড়া       অকূল সাগর ঘেরা
                    নাম না জানা অচিন দ্বীপ,
       নির্মল আকাশ ভেদি   পৃথিবীর টান ছেদি
                   চলেছে  চন্দ্র মঙ্গল সমীপ।
       পথ শেষ কোথা হবে   সভ্যতা কতদিন রবে
                   কোন  কিছুই তো জানিনা,
       অগ্রগতির ছেলেখেলা  প্রকৃতির ধ্বংসলীলা
                 আর কিছুতেই মানতে পারিনা।
        বাঁচুক জীবের প্রাণ          সব ঈশ্বরের দান
                    পথ হোক দুঃখ ক্লান্তি হরা,
        পরিবেশ হোক নির্মল       মন প্রাণ সুবিমল
                     সব পথ  ফুলে ফুলে ভরা।

ডানা -- তাপস দাস

 ডানা
 তাপস দাস
 ১৫/০৬/২০২৩
বনের আঁকেবা‍ঁকে,
ছানাপোনা সহ যত পাখি ডাকে।
চায়,থাক বজায়  তাদের নিজের ডানা।
যাতে করে উড়তে রবে না মানা।
বনের রাজা বলে, 
কি দুঃসাহস! 
সমস্ত পাখিদের ডানাগুলি কেটে নাও।
সোনার ডানা লাগিয়ে দাও।
বাড়ে যদি বাড়ুক বনের দেনা।
তবুও রাশি রাশি হচ্ছে কেনা।
পাখিদের জন্য সোনার ডানা ।
ও পাখি,তোদের হচ্ছে বুঝি যন্ত্রনা! 
হবেই তো,কাঁটা হয়েছে যে ডানা!
আর কয়টা দিন কর তোরা ব্রত,কর তোরা উপোস।
সোনার ডানায় উড়তে পারবি না সেটা কি রাজার দোষ!
আসলে সবটাই বনের পূর্ব রাজাদের ব্যর্থতা,চক্রান্ত, আর দোষ।
অপেক্ষায় কেটেছে তোদের দিন,মাস,কত কত বছর!
আরে বাবা,আর কয়েকটা জীবন আপেক্ষা কর।
কথায় বলে,যে সহ সে রয়,
একদিন এই বনটা হয়ে উঠবে স্বর্ণময়।
তাই তোদের কথায় রাজার কান দিলে হয় !
না না,বন এগিয়েছে বনান্তরে,
নতুন রাজার হাতটি ধরে,
এটা আনতেই হবে প্রকাশে, দেখাতেই হবে প্রচারে।
বনটা চলে চলুন না হয় ধারে।
সত্যি করে বলতো,পূর্ব রাজা দিয়েছিল কি একটাও তামার ডানা!
এই রাজা তো দিচ্ছে  সরাসরি সোনার ডানা।
ডানা হিনা তোরা, 
তাই পারছিস না উড়তে, 
খাদ্য সংগ্রহ আর করতে
 আর জীবনটাকে গড়তে!
কারো কারো অভিযোগ ।
কেন রে !
বনের রাজা যে তোদের মুখে  তুলে দিচ্ছে খাদ্য,
তার আছে যতটা সাধ্য।
আসলে সোনা কিনতে খুব হয়ে যাচ্ছে খরচ।
তাই রাজার দেওয়া খাদ্যে কম থাকে খাদ্য রস।
বদনাম করিস! 
তবুও লাইন দিয়ে সুবিধা নিতে করে না তোদের লজ্জা! 
তোদের জন্য সোনার ডানায় চলছে সাজসজ্জা।
অনেকের অভিযোগ,দিনে দিনে বনে বাড়ছে হিংস্রতা।
বনের রাজা হেসে বলে, এটা আবার কি নতুন কথা!
বন্যের মধ্যে থাকতেই হবে হিংস্রতা।
শুনে ডানা কাঁটা পাখি সব,
হয়ে আছে নিরব,
কারণ,বনের কোনে কোনে,
পথ-ঘাট -দূরত্ব গুণে গুণে।
বনের সৈন্যরা দিচ্ছে হানা।
উড়তে চাওয়া পাখিদের 
দিচ্ছে কেটে ডানা।
ইচ্ছে  মতো উড়তে তাদের মানা।
তাদের জন্য রাজা 
তাই গড়ছে সোনার ডান।

Thursday, June 15, 2023

হে বীর সন্ন্যাসী -- গৌতম পাল

 হে বীর সন্ন্যাসী
 গৌতম পাল
 ১২/০৬/২০২৩
হে বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ,
সেই ডানপিটে বিলে তুমি,
ভারতকে করেছ জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ
তোমার চরণ দু'টি চুমি!

শিশু নরেন হয়ে স্বামী বিবেকানন্দ
বিশ্বে ছড়ালে তোমার যশ,
ধর্ম মহাসম্মেলনে সুমধুর ভাষণে
বিশ্বকে করলে তুমি বশ!

হে দিব্য জ্ঞানের আলোকবর্তিকা
মেটালে জ্ঞানের তেষ্টা,
মনুষ্যত্ব জাগরণে ছিলে নিয়োজিত
ব্যর্থ হয়নি তোমার চেষ্টা।

আজ তোমার বলিষ্ঠ পদক্ষেপেই
বিশ্ব জুড়ে মোদের সুনাম,
তব শিব জ্ঞানে জীব সেবা মন্ত্রেই 
ধন্য হয়েছে ভারত ধাম।

তোমার মন্ত্রে শিহরণ জাগে প্রাণে
তুমি মোদের চেতনার আধার,
তুমি ধ্যান ঋষি দিব্য যোগী সন্ন্যাসী
তুমি করেছ মোদের উদ্ধার।

তুমিই শিখিয়েছ মাথাটা উঁচু করতে
গাইতে মহা মিলনের গান,
তুমি শিখিয়েছ ভালবাসতে মানুষকে
সবার মাঝে আছে ভগবান!

তোমার বাণী বিভেদের মাঝে ঐক্য
ভারতের ঐতিহ্য ও মহত্ম,
মুচি মেথর চন্ডাল সকল ভারতবাসী
মিলেমিশে হয়েছে একাত্ম।

তোমার নির্দেশিত পথ ধরে আমরা
চলেছি যুগ থেকে যুগান্তরে,
তোমার বাণী ভারতের অন্তরাত্মায় 
অম্লান হয়ে আছে চিরতরে!
********************************

আহত কবিতা -- অজয় চক্রবর্তী

 আহত কবিতা
 অজয় চক্রবর্তী
১৩  ০৬  ২০২৩
হায় কবিতা স্মৃতি হয়ে তুমি রইলে খাতার পাতায়,
নাম জানা নেই কোন সে কবি লিখলেন ভালবাসায়।
দুর্ঘটনায় ট্রেনের কামরা ছিটকে বেরিয়ে গেল,
রেলের লাইনে কবিতার খাতা কুড়িয়ে কেউবা পেল।

রয়ে গেল শুধু কবির মনের মাধুরী মেশানো নিয়ে,
স্মৃতিগুলো সবই থাকলো মধুর ভালবাসা টুকু দিয়ে।
কবির কখনো হয় না মৃত্যু প্রমাণ সে দিয়ে গেল,
নাইবা থাকলো দেহে তে কবি তাতেই কি বা হল?

সারি সারি সব মৃতদেহগুলি সাদা কাপড়েতে ঢাকা,
হয়তোবা কবি আছেন ঘুমিয়ে হাতে কলমটা রাখা।
প্রিয়জনরা দিশেহারা হয় আপন জনের খোঁজে,
খাতার পাতা উড়ছে লাইনে, হাওয়ায় ভাঁজে ভাঁজে।

কবি তুমি থাকো চিরনিদ্রায় আমরা থাকবো জেগে,
ভালোবাসার কবিতার খাতা আদরে ও সোহাগে।
করমন্ডল নিল কেরে কবির সাধের জীবনখানি,
সৃষ্টি তোমার অটুট আছে কোথাও সে হারায়নি।

ছিলে যেমন থাকবে তুমি সবার জীবন মাঝে,
তোমার লেখা পড়বে মনে অস্ত রবির সাঁঝে।
হায় গো কবিতা রয়ে গেলে তুমি স্মৃতির মালিকা হয়ে,
হারিয়ে যায় না কখনোই কবি সৃষ্টি রাখে বাঁচিয়ে।