হয়তো কিংবা হয়তোবা
পরেশ চন্দ্র সরকার
০২/০৬/২০২৩
রাত দশটা দশ,
এম জি রোডের গিরিরাজ হোটেল থেকে
রাতের নিরামিষ খাবার শেষ ক'রে
একটু পায়চারি ক'রতে, প্লাস এককাপ চা
পান ক'রবো ব'লেই
শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশনের
ভেতরের স্টল থেকে এক কাপ গরম চা নিয়ে
সবেমাত্র চুমুক দিয়েছি, ওমনি পাশে
এলোমেলো পরিধানে এক মহিলা এসে
হাত পেতে পয়সা চাইছে, না, খাবার চাইছে
বুঝতে পাচ্ছি না, মুখটি করুণ তার, পড়নে
একমাত্র মলিন শাড়ি, গায়ের রঙ ফর্সা,
উন্নত সুডোল ভরাট বুক, মহিলার শাড়ির
অবস্থান উন্নত খোলা বুকের যথাস্থানে নেই,
মুখোশের আড়ালে এ মুখ ব'লে মনে হ'লো না,
আমার এক চাহনিতেও।
ওদিকে প্লাটফর্মের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে,
আবার অন্যপ্রান্ত থেকে এইপ্রান্তের দিকে
মানুষের ঢল ছুটে চলেছে হড়পা বানের মতো
খরস্রোতে, কিন্তু সেই ঢেউয়ের মধ্যে থেকেও
শত সহস্র যুগল ক্ষুধার্ত চোখ যেন সংগোপনে
অথচ
প্রকাশ্যে গিলে খেয়ে যাচ্ছে
এককালীন মনের বাসনা পুষে
পুরোপুরি যেন এলোকেশীর অর্ধ-নগ্ন বুক
কামনা মেটাচ্ছে দেখে
উন্নত সুডোল ভরাট যুগলে প্রাণবন্ত সুখ।
চা চুমুক দিতে দিতেই পকেটে হাতটি দিয়ে
তুলে নিলাম দশ টাকার একটি কয়েন,
সেটাই তুলে দিচ্ছিলাম মহিলার হাতে,
মাথা নেড়ে অস্বীকার ক'রে সেটি নিতে,
ইশারায় আরও একটি চায়,
পকেট থেকে পুনরায় আরও একটি দশ টাকার
কয়েন বের ক'রে দিতেই মহিলা যেন বিগলিত
করজোড়ে আশীর্বাদস্বরূপ একটি নমস্কার দিয়ে
চলে যায়। আমার মনে পড়ে গেল, আজই
শনিবার সন্ধ্যায়
এম জি রোডের ফুটপাত দিয়ে যখন
বাইরের কাজ শেষ ক'রে শান্তিনিকেতন
হোটেলে ফিরছিলাম, ফুটপাতের ধারেই
দেখেছিলাম শ্রীশ্রীশনি ঠাকুরের পুজো ক'রছেন
একজন পুরোহিত, থমকে দাঁড়ালাম,
পকেট থেকে দশ টাকার নোট বের ক'রে
রেকাবে রেখে পায়ের জুতো খুলে
দু'হাত জোড়ে মুখে বিড়বিড় ক'রতে ক'রতে
দীর্ঘ নমস্কার ক'রেছিলাম। এইবার
আমার প্রশ্ন আমারই কাছে, আমি যে প্রণাম
ক'রছিলাম সেটা ছিল মাটির মূর্তি শ্রীশ্রীশনি
ঠাকুরের কাছে আর এখন যে আমাকে
কুড়িটি টাকার বিনিময়ে দীর্ঘ প্রণাম ঠুকে
আশীর্বাদ ক'রে গেল...
এটা কি ব্যাখ্যায় আঁকি আমি?
কি ভাবছেন পাঠক প্রিয় কবি?
তাহ'লে এই কি জীবন্ত দেবী! যে হয়তোবা
নিজের, প্লাস তার বাচ্চাদের খাবার জোগাড়
হেতু হাত পেতেই চেয়ে নিচ্ছে কিছু, আর
মাটির মূর্তি না চাইতেই
দিব্যি পেয়ে যাচ্ছে বারবার,
সত্যিকার
অবাক আঁকছে
আমারও মনে, এ কোন্ ক্ষণে
বাস ক'রছি অন্ধ মানুষ আমরা?
কি ব'লবে তোমরা?
অথচ কত জীবন্ত দেবদেবী ঘুরে বেড়াচ্ছে
রাতবিরাতে রাস্তা দিয়ে
তাদের পেটে দু'তিন দিনের খিদে নিয়ে!
ওদের হাতে হয়তো
কোনো কাজ নেই কিংবা এটাই কাজ হয়তোবা!
No comments:
Post a Comment