Wednesday, October 11, 2023

জীবনানুভূতি -- এম এ হালিম শিশির


জীবনানুভূতি
এম এ হালিম শিশির 
তারিখ : ১১/১০/২০২৩ ইং
খুব বেশী লোভ নেই আমার,
টিনের ছালের সাথে বৃষ্টির শব্দ,  রাতের নির্জনতার সাথে একাকী ভাবনা, এতটুকুই যে আমার পছন্দের তালিকা। 
খুব উচ্চবিলাসী জীবনের স্বপ্ন নেই আমার, 
কুঁড়িঘর বাসস্থান, সামাজিক যোগাযোগ 
আর আপনত্বের সম্পর্কের সিকিউরিটি, 
এতটুকুই আশ্বাসের ইচ্ছানুভূতি আচ্ছন্ন মনাকাশ,
খুব চাওয়া-পাওয়ার বিষণ্নতা নেই আমার,
দিনের পরিশ্রম শেষে তার উপযুক্ত পাওনার হিসাব,
তাতে অন্নের উপার্জনের পেটের কান্না নিঃশেষ, 
অতিরিক্ত লোভের ঘৃণা, আর হিসাবকষে সংসারের হালচাল, 
এতটুকুই জীবনের চাওয়া নিয়ে অসীমতা ছোঁয়া। 
অফুরন্ত কোনো অহংকার নেই আমার, 
হাসিখুশি নিয়ে রোদ-বৃষ্টির সাথে প্রেম, আর দিনের শেষে জীবনসঙ্গী কে আগলে ধরে প্রশান্তির এক ঘুম, এতটুকুই আমার পার্থিব ভাবনার সমষ্টিকরণ একান্ত নিজস্ব চেতনা।
দীর্ঘকাল বাঁচার স্বপ্ন নেই আমার,  
যদি পাপ পুঞ্জিভূত জীবন হয় আমার!
পরকালের আসামী,
বাঁচতে চাই শতাব্দীর পর শতাব্দী, 
যদি দেখি আমার দ্বারা মানবের মুখেমুখে রক্তিম হাসি,
আর পরকালের  শান্তির ফয়সালা স্বরূপ পূণ্যের মজুদদারী।


Tuesday, October 10, 2023

আগ্রাসন -- বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য

 আগ্রাসন
 বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য
  ১০/১০/২০২৩
জগৎ জুড়ে চলছে দখলদারির লড়াই,
বুদ্ধি আর বাহুবলের অদম্য প্রতিযোগিতা;
কখনও একটুকরো জমি, 
কখনও বা আস্ত নারী শরীর, 
কখনও ক্ষমতা ও আসন টিকিয়ে রাখার !

বাস্তুতন্ত্রে খাদ্য-খাদক সম্পর্কে অদ্ভুত মাৎস্যন্যায়!
ব্যক্তিগত লাভের অঙ্কে যথেচ্ছ গোঁজামিল,
সামগ্রিকতার ধার ধারার দায় ঠেকে না কারও।
গরীবের রক্ত চুষে পরিপূর্ণ কুবেরের ভাণ্ডার,
গরীবের অশ্রু নদীতে নিত্য অবগাহন,
দুদিনের জীবনে লুটেপুটে খাওয়ার জরুরি তাগিদ;
সামরিক বরাদ্দ শিক্ষা-স্বাস্থ্য-উন্নয়নে
মিলিত বরাদ্দের  চেয়ে দশ গুণেরও বেশি।

প্রকৃতিকে ভোগ উপভোগ.... সব শেষ করে--
নিঃশেষ করার তাগিদে নেমেছে যুযুধান ,
এবার এক মহাসঙ্কট সৃষ্টি না করলেই নয়;
কত প্রাণ, কত সৃষ্টি, স্থাপত্য, ইতিহাস --
ভেসে যায় স্মৃতির অতল গহ্বরে , 
যান্ত্রিক জীবনের ঘেরাটোপে আটকে আছে
অস্ফুট শৈশব, প্রতিভাময় যৌবন -- স্রষ্টা বার্ধক্য!

ছাড়পত্র পেয়েছে আগ্রাসনের একচেটিয়া বাজার,
অজস্র নিরীহ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সভ্যতা!
কী জানি, এবার হয়তো দেখতে হবে ----
লাঠির মাথায় স্থাপিত টুপিকে স্যালুট না করার অপরাধে প্রাণদণ্ড হবে অসহায় জনতার !
যারা ক্ষুধায় দিতে পারে না একগ্রাস খাদ্য, 
পিপাসায় দিতেই পারে না বিশুদ্ধ জল, 
বিশ্বাসের বিনিময়ে প্রতিদান দেয় বিশ্বাসঘাতকতা,
মেকি সভ্য পোশাকের আড়ালে বর্বর লোলুপতা;

আর একটা মন্বন্তর চাই , চাই নবযুগের সূচনা,
আবার নতুন করে পাঠ শেখোনো হোক ---
অপরের প্রাণ কেড়ে নেওয়াতে বাহাদুরি নেই,
বাহাদুরি আছে - 
নিজেকে বিপন্ন করেও অপরের প্রাণ বাঁচানোতে ,
শারীরিক নিগ্রহে নয়, প্রেম বিনিময়ে,
ধ্বংসের বিভীষিকায় নয়, সৃষ্টির মহোৎসবে।

Monday, October 9, 2023

নৈবেদ্য -- ডঃ অশোক খাড়া

 নৈবেদ্য 
 ডাঃ অশোক খাঁড়া 
 9.10.2023 
বস্তির দেবশিশু ছুটে এসে থামালো আমার কলমের দৌড়। 
কবিতার শব্দগুলো যেন শূন্যে ঝুলে পড়ল ।
আগমনীর সুরে যেন ভেসে এল বিষাদের ঝড় ।
ক্ষুধার পাত্রটা হাতে নিয়ে 
সে বলে, " আমি পেট ভরে শুধু খেতে চাই। আমায় খেতে দে।"
বোবা কলমটা এখন নিশ্চল প্রস্তর  মূর্তি। 
শিশুটা আবার বলে, " আমি চাই না পুজোর পোশাক , আমায় দুমুঠো খেতে দে।"
আমার অবচেতন হৃদয়ে জেগে ওঠে আমার শৈশব। 
ছিন্নবস্ত্রে , অভুক্ত দেহ নিয়ে 
আমি দেখেছি, পণ্যের দোকানে 
সারি সারি পুজোর পোশাক। 
আমি দেখেছি ক্ষুধার রাজ্যে
দেবশিশুর দীর্ঘ সারি। 
যেন এক অসাম্যের সমান্তরাল রেখা, দেবী দর্শনার্থীর পাশে ।
চেতনার সাম্রাজ্যে ফিরে আসি আমি। 
আমি অর্ঘ্য করি নৈবেদ্য দেবশিশুর চরণে,
ঈশ্বর যেখানে বিরাজমান হৃষ্ট মনে।

জীবনের ধারাপাত -- মালিয়া দে

 জীবনের ধারাপাত
 মালিয়া দে
 ৯/১০/২৩
জীবন এক রঙ্গমঞ্চ,
এখানে তোমায় রাজা - ফকির, সাধু - ভন্ড
শিশু - বৃদ্ধ কত চরিত্রেই অভিনয় করতে হয়।

জীবন হলো রেসের মাঠ,
শুধু দৌড়,দৌড় আর দৌড়েই যাওয়া,
থামা মানেই পিছিয়ে পড়া, হেরে যাওয়া।

জীবন মানে হাজার স্বপ্ন,
স্বপ্ন গুলোই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়,
সব স্বপ্ন পূরণ হয়না, তবু স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন।

জীবন এক গোলকধাঁধা,
বয়স যত বাড়বে, ততই দায়িত্ব কর্তব্য ,সমস্যা
চক্রের মত ঘিরে ধরবে, বেরোনো বড়ো কঠিন।

জীবন যেন যুদ্ধক্ষেত্র,
সমাজ - সংসার, পরিবার - পরিজন, রোগ - ব্যাধি,
এমনকি মনের সাথেও প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলতে হয়।

জীবন পাটিগণিতের সরলঅংক,
যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, বন্ধনী সবকিছুই থাকে,
যত দিন যাবে, ততই তার সমাধানের দিকে এগোনো।

জীবন হলো ক্ষণিকের পান্থশালা,
জন্ম থেকে মৃত্যু, এই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর মাঝে
কত সম্পর্কের জাল বোনা, কত বিচ্ছেদ ,আসলে একা ।

তবুও জীবন বড়ো সুন্দর ,
স্নেহ - ভালোবাসা , প্রেম - প্রীতি, দয়া - মায়া, 
আবেগের বন্ধনে জড়ানো এক অনুভূতির আকর।

Saturday, October 7, 2023

প্রকৃতির প্রতিশোধ -- বিক্রমজিৎ মান্না


প্রকৃতির পরিশোধ 
বিক্রমজিৎ মান্না 
০৬/১০/২০২৩
ঝাঁঝাঁ রৌদ্রের চাতক ডাকা নয় এ গ্রীষ্ম ক্ষণ ।
আকাশ জুড়ে মেঘের পর মেঘের আস্তরন 
নিয়ে এলো সজল বেলা  বঙ্গলোকের পরে
রিমঝিম যতো বৃষ্টির গান তড়িৎ শিখায় ভরে  
ঋতুরানী বর্ষা । তবুও কেন খামখেয়ালি খাসা
সারা দিনমান রক্ত চক্ষু     লয়ে ও অগ্নি শিখা 
ঐ আকাশে মাখা ! ?

ঘোর কলিতে ধ্বংসের ডাক দিচ্ছে ধরণী
সবুজায়ন এর সমাধান বলছে বিজ্ঞানী ।

দেশ নেতার সময় নেই  বিজ্ঞানীর  ব্যথা 
ধৈর্য্য ধরে শোনার মতো ছেঁদো বাক্‌ অযথা ।
ঢালতে ব্যস্ত টাকার বস্তা ভোটের মুখ চেয়ে
দিন রাত্তির প্রতিশ্রুতির যাচ্ছে মিথ্যে গেয়ে ।
তাই ---
গাছ রোপণে অর্থ বাজেট বিমুখ যতনে
এই বর্ষার ক্ষণে ।

বায়ুমণ্ডলে ওজন স্তর দূষণে হয়েছে ফুটো ।
বানের জলে যেমনি ভাষে অবাধ খড়কুটো
তেমনি ভাষবে দেশ,দুনিয়া প্রকৃতির রোষানলে 
ঘোর বর্ষায়  তাই এ আকাশ রৌদ্রের কবলে ।

অজ্ঞ রাজা, রাণীর তরে দূষণে প্রকৃতি ভরে
উঠবে যত দেখবে প্রজা আপন বিনাশেরে  ।

তাই ----
ঘোর বর্ষায় কাঠ ফাটা রোদ আনবে ডেকে খরা
সুনামির মতো জলোচ্ছ্বাসে পৃথিবী আর্তস্বরা
হয়ে ভাষাবে সকল জীবন এমনি অকালে 
ধ্বংস  নিদান উঠবে কল্লোলে ।

এসে আয়লা,আমফান আর টর্নেডো, টাইফুন
রক্ত চোখে করবে মানুষ খুন  ।
ফিরবেনা হায় সম্বিত তবু ধিক্ ও দুর্মতির 
যতই দেখুক  চন্দ্রদেশে সায়েন্স অগ্রগতির  ।

ভাবছে দেশের পিতা কেবল সামরিক শক্তি
কোটি টাকা ব্যয়ে মারণাস্ত্রে বাড়ালেই মুক্তি ।

মারণাস্ত্রে শত্রু রুধিবে প্রকৃতি যে রুষিবে ,
তারে ----
না দিয়ে যতন  করলে লালন প্রতিশোধ হায় নেবে
আজ বা কাল দুদিন পরে কে এ কথা বোঝাবে
কুলাঙ্গার , নরশ্বাপদ রাজনীতি বাদশায় ?

ছায়া সুনিবিড় বনবিথী নীড়  প্রকৃতির হৃৎ ম্পন্দন,
সে হৃদয় ফেলি খুঁজছে মানুষ অমৃতময় জীবন
দেদার অর্থ ঢেলে শত্রু নাশের ছলে 
সামরিক সজ্জায় নবীন ভরসায় 
রচিছে আপন দিবা, রাত্তির শ্মশান শয্যায়  ;
স্নিগ্ধ , শ্যামল, শোভন প্রকৃতি ধ্বংস যজ্ঞ নেশায়‌ ।

ঘোর বর্ষায় তাই যে আকাশ গ্রীষ্ম অট্ট হাঁসি
হাঁসিয়া চলিছে সারা দিনমান  রোষ খানা প্রকাশি ।

পাতাল সিক্ত , সজল ধারায় তুলে এনে অপচয়
করায় আপন আঁকিছে ললাটে ভূমিকম্পের ভয় ।

কালোধোঁয়ায় আকাশ ভরে আনছে ঝড়ের মাতন
কুঞ্জ ছায়ে ধুলার গায়ে কভু না সাজায়ে ভুবন
আনছে অজ্ঞ রাজা, প্রজা সুধুই আপন মরন ;
বর্ষার দিনে রিমঝিম গানে নেই তাই বরিষণ ।

Thursday, October 5, 2023

ঘাসের সুঘ্রান -- পবিত্র প্রসাদ গুহ

 পবিত্র প্রসাদ গুহ
 ঘাসের সুঘ্রাণ
 ০৫/১০/২০২৩
হলদে সবুজ মেশানো কচি বাসন্তী রঙের প্রভাতী সূর্য ঘষাঘষি করে লেমন ঘাসের পাতা ভেজা ফড়িঙের পাখায়,
আমি সে রঙে নিজেকে আরো একবার নিতে চাই স্নান করিয়ে ।

দূর্বা ঘাসের নরম পালকের গা বেয়ে চুঁইয়ে পরছে রসালো সবুজের সুঘ্রাণ,
সেই ঘ্রাণে বুঁদ হয়ে মাতাল হয়ে চাই থাকতে সারা জীবন।

ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ উড়ন্ত চড়ুইয়ের ঠোঁটে আধা শুকনো বাদামী ছন ঘাসের খড়কুটো,
পরিবারের জন্য কত ভাবনা, আরো সুরক্ষিত করতে শাবকের আস্তানা।

আমড়ার কচি হরিৎ পাতার মত সুঘ্রাণ তখনো মেখে আছে দীঘির পাড়ের নরম দুবলা ঘাসে,
কুচ কুচ করে ধারালো সাদা দাঁতের আগা দিয়ে পিষে পিষে খেতে থাকে লাল গোল গোল চোখের তুলোট সাদা রেশমি পশমের খরগোশ গুলো।

আমার মনের শরীরে মেখে থাক পল্লী পথের দুধারের জংলী ঘাসের জংলী সুঘ্রাণ,
যেন কত একাত্ম, পবিবারের সদস্যের ন্যায় বছরের পর বছর বসবাস করছে একসাথে ।

Wednesday, October 4, 2023

কুমারী জননী -- মঞ্জুরুল হক তারা

 
কুমারী জননী
মঞ্জুরুল হক তারা 
খোলা দরজার পর্দা ঠেলে
      ঘরে ঢুকেই চমকে গেলাম 
                      তুন্নির চোখে জল, 
     ঘরময় তপ্ত কোলাহল
              গুপ্ত চোখে দেখলাম
                  হারিয়েছে ঠোঁট থেকে
                               বুকের সাহস বল।
        ঘরের যত সব আসবাবপত্র যত্রতত্র এলোমেলো
           কাপড়-চোপড়  বিছানা চাদর  সব অগোছালো।
  তন্বীর  লাল গাল  আরো লাল
       হাসি খুশী   মুখের আড়াল
     বুকের ব্যথা    নরম আঙ্গুলে ছড়ায়, 
       তন্বী আমার দিকে চায়
     কী বলতে গিয়ে থেমে যায়
           লাল গালে উষ্ণ হাওয়ায়
       বুকের ব্যথায় চোখের জল গড়ায়। 
-
  আমি তাকে প্রচ্ছন্ন আদর করে
                           বুকের কাছে নেই টেনে
সে তার আঙ্গুল ওষ্ঠাধরে চেপে ধরে
     " চুপ -কোন কথা নাই
       পুরুষের কোন গ্লানি নাই  ভ্রূণের রক্ত পানে। "
অতপর সে -
যন্ত্রণার আঁধারে হেলান দিয়ে দেয়ালে
  তার গুপ্ত বুকের সব কথা  বলে  খুলে।
ব্রহ্মপুত্রের পারে তোলপাড় করা
                        আগুন প্লাবনের ছন্দ, 
স্বপ্ন গুলি তার ইচ্ছাহীন ঝরে পড়া
          বিভ্রম করা দূরন্ত সাগরের গন্ধ।
সে দিন সন্ধ্যায় কাশবনের আড়ালে
             নির্জন বালু চরে কেমন করে
বুকের আঁচল থেকে সহসা ঝরে পড়ে
                  স্বপ্ন, সাধ, সব গিয়েছে উড়ে।
   
-অস্পষ্ট স্বরে ব্যথা কাতরে বললে -
"পশুটা এসেছিল শিশুটির দায়িত্ব নেয়নি
      স্পষ্ট বলে দিয়েছি -সম্পর্কের ইতি টানি,
আমার খোকা মায়ের পরিচয়েই বাঁচবে
পৃথিবীর আলো দেখবে হাসবে খেলবে
           কবি,   ওকে আমি নষ্ট করতে দেইনি।"
আমি তাকায়ে দেখি অদ্ভুত অপরূপ
    শাড়ির আঁচলে হাসি খুশী
     খেলা করে নিষ্পাপ শিশুর মুখ, 
জল ভরা চোখ   আশা ভরা বুক
        দাঁড়ায়ে রয়েছে কুমারী মা জননী, 
            অমন মোহিনী হাস্য মুখ
         স্নেহময় নারীর মাতৃত্ব রূপ
                আকাশময় সুগন্ধ ছড়ায়
                      প্রেমময় স্নিগ্ধ ছায়ায়
               সমাজ নিন্দার ভয় সে করেনি।
   সাহসি মেয়ে  প্রেম দিয়ে  নতুন সমাজ গড়ে
   স্বর্গের আলো নিয়ে গায়ে,
   আমার গোপন অন্তর শ্রদ্ধা ভরে  নূয়ে পড়ে
   প্রেম প্রতারিত কুমারী মায়ের পায়ে।
               

Tuesday, October 3, 2023

অবিনাশ -- উমা মুখার্জী

  অবিনাশ
  উমা মুখার্জী
  ০৩/১০/২০২৩
অবিনাশ তোমায় বড়ো দেখতে ইচ্ছা করে
সেই ভুবন ডাঙ্গার মাঠের শেষে ভঙ্গ মন্দিরের গায়
বৃক্ষ জড়িয়ে লতাগুলো একই ভাবে দাঁড়িয়ে
কতবার করি সেই পথে আসা, যাওয়া তুমি ছাড়া।

দখিনা বাতাস এসে চুপিচুপি ওড়ায় আঁচল
ঝিনুকের মতো নয়ন জলে ভেসে জমাই স্মৃতির মুক্তো
আসবে বলে অঙ্গুরীয় দিয়ে সেই গেলে চলে
অবিনাশ তুমি কি পেয়েছো নতুন সাথী আমায় ভুলে।

বেলাশেষে ম্লান সূর্যের আলো ছুঁয়ে যায় বারান্দা
চায়ের কাপে তুলে ঝড় আসতো সুন্দর সন্ধ্যা
সন্ধ্যাতারা আজও চেয়ে হাসে মিটিমিটি
এক গোছা রজনীগন্ধা টেবিলে আজ সাজেনা।

পূর্ণিমা জোছনা আজও আমায় একই ভাবে মাতায়
কত কথা কত গল্প সেই মধুরাত মনে দোলা দেয়
এতো সহজে তুমি সব ভুললে কি করে তাই ভাবি
অবিনাশ দেবে সেই রাবার আমি যদি মুছতে পারি।

অবিনাশ তোমার কথা ছিলাম, আছি, থাকবো
নিশুতি রাতে আসেনা ঘুম জোনাক দেয় আলো
যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে তুমি ভুলে গেলে কেন?
তুমি কি তবে বিস্মৃতির নদী সামনে এগিয়ে চলো।

নতুন যুগের উত্থান -- মৃণাল কান্তি রায়


নতুন যুগের উত্থান
মৃণাল কান্তি রায় 
০২/১০/২০২৩
যুগ যেন বদলে গেছে   নতুনভাবে প্রাণ পেয়েছে
              হরদম চলছে রদ-বদল,
নতুন শিক্ষা নতুনভাবে  কার গিন্নি কে পাবে
            যেন অভিসারে এমন সকল।

কত্ত প্রক্সি কত্তভাবে কে জিতবে কে হারবে
               এই নিয়ে যত্ত কেচাল,
যেন এ নব অভিসার    সর্বত্র যেন লোকাচার
             পরিবেশ বড় বেসামাল। 

অভিসারের যেন সিনেমা  কত্ত কি দেখ উপমা
               রূপক যুগের কবিতা,
ডানে যেমন বেতাল   বামেতে তেমন কেচাল
              যেন আধুনিক ছবিতা। 

ছবি যেথায় মুখ্য    যোগ-বিয়োগে দক্ষ 
             সামন পেছনে  হাতছানি,
কোথাও নাই স্বস্তি  রাত-দিন কেবল কুস্তি
             শশব্যস্ত যেন ভাব খানি। 

সম-অসমের বুদ্ধিমাত্রা  অভিসারে যেন যাত্রা
               কারোর লক্ষ্য না সুস্থির,
যুগের দাওয়াই তেমন  ব্লাকমেলের রূপ যেমন
               পল্টিতে পল্টিতে অস্থির! 

মানের দিয়ে দোহাই  সম-অসমের লড়াই
               অভিসারে ব্যস্ততায় সবাই,
জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিজীবি  ভেবে-চিন্তে পরজীবি 
               এ যে কুল রক্ষার লড়াই! 

নর-নারীর বসুমতী     শিশু-যুবার কত্ত মতি
               লুকোচুরির ভাগ বাটোয়ারা,
কেউবা শূন্যে গড়ায়   কেউবা ভুঁড়ি বাড়ায়
              কেউবা সুযোগে মাতোয়ারা। 

অভিসারের কাজ-কৌশল  নকল আর আসল
               মিশ্রণে পুরো একাকার,
নিং বং আর টিপ ছাপ  কত্ত কি বাপরে বাপ
               বুদ্ধিতে চলছে লোকাচার। 

কেউবা নগন্য কেউবা ধন্য অভিসার সৃষ্টির জন্য
               সেয়ানারা বুদ্ধিতে অগ্রগণ্য,
অপরকে বানায় দোষী পল্টিতে পল্টিতে মহাখুশি
               দেশময় তাবেদারী সৌজন্য!

কেউ বঞ্চিত কেউ অবাঞ্ছিত  কেউবা অতিরঞ্জিত 
                   বলছে কালের ঘড়ি,
সময় চলছে বয়ে  হিংসা কুৎসার পথ ছুঁয়ে
                 কেউবা মারছে তুড়ি! 

ইন্ধন-ঈশারায় ছাওয়া  নতুন যুগে যাওয়া
              নারীকুলে ইশারায় অবয়ব,
কারবা কে আছে     কোথায় কে গেছে
              আকারে-ঈঙ্গিতে জনরব।

ছিল না আগে এমন  নতুন যুগের ভাবন
         আঁখিতে-আঁখিতে সংলাপ,
এক আঁখি কি দু আঁখি  ধোকাতে ধোকাতে ফাঁকি
         নতুন যুগের এ আলাপ। 

সবাই নাকি মঙ্গল চায়  বোঝাটা বড্ড দায়
            তেলেজমাতি ধর্মীয় লোকাচার,
কত্ত যে বুদ্ধির ঘট      দেখ যত আছে পট
           ইন্টারনেটে ব্লাকমেল আবার! 

সুযোগ সন্ধানী দল  ফায়দাতে রদ-বদল
             শেষমেষে ওরা ওরা তারা,
এহেন দুর্গতির কাল  পরিবেশ টালমাটাল 
             জনবিচ্ছিন্ন করাবে যারা। 

নতুন যুগের উত্থান  গাও সবে জয়গান
           যারা থাকি যারা চলে যাই,
কিছুই করার নাই  নতুন যুগের ধারাই
           নতুনত্বের ভাবমূর্তি তাই। 

বুঝেই আসলো এবার  নতুন যুগ সবার
             অভ্যস্ততা অতীব জরুরী,
যুগেই চলতে হবে    নয়তো পিছু থাকবে
            বোঝ যত সুন্দর-সুন্দরী!

মনকে করবে সুন্দর  বৃহৎ রাখবে অন্তর
               নতুন যুগের লাচারি,
সুখের আশা নাই  কষ্টগুলো ঘোচাও তাই
             নতুন যুগ বড় বাহারি! 
         

Sunday, September 17, 2023

মেঘ বালিকা -- নাসিরা বেগম

মেঘ বালিকা
নাসিরা বেগম
১০-০৯-২৩
আকাশ জুড়ে কালো মেয়ে মেঘ বালিকা সেজেছে সঙ,
মেঘলা-চোখো অচিন মেয়ে বৃষ্টিলেখার দারুন ঢঙ্।
নীল নিলীমা তুই কি মোদের দূর আকাশের নীলপরি,
পেঁজা তুলোর মাঝখানেতে পরে থাকিস্ নীলাম্বরী। 
তুইই  কি সেই রুখুশুখু যক্ষপ্রিয়া হালফ্যাসানি
একটা নয়ন অগ্নিবলয় অন্য চোখে বেত্রবতী,
মেঘপিয়নের কাঁধে ঝোলা মায়াহলুদ পত্রখানি
বাতায়নে অপেক্ষা চোখ মেয়ের বুকে তৃষ্ণারতি। 
ঈশানি মেঘ ভাসিয়ে দিলো বিরহপোড়া ওই দুপুর,
মহাকালের ঘন্টা দোলায় ত্রিকালজ্ঞ খেয়ামাঝি
ভিজবে মেয়ে আগুনরূপা ছিঁড়ে যাবে শিঞ্জিনূপুর।
রংধনুতে গা এলিয়ে ছাই রঙা ওই মেঘ বাবাজি 
শরত সাদা মেঘের গাঁজায় দিন ঘুমটা বেজায় রাজি। 
পত্র পাঠে বুকে শিহর ঝিমিয়ে থাকা উর্জা মেয়ে
ভুর্জপত্রে দু-একখানা বিষম-খাওয়া বৃষ্টিফোঁটা,
দলাপাকানো লজ্জাবস্ত্র ছুঁড়ল মেঘে ঘেমেনেয়ে
তারাখসা গন্ধ রাতে অভিসারিকার পথে কাঁটা। 
ভাসলো মেয়ের হলুদ খামের গোপন চিঠি নক্ষত্রজলে,
প্রেমধোঁয়াশা আপত্তিকাল হা-ক্লান্ত জিরিয়ে নেওয়া ছায়াসজল হিজলতলে।

Thursday, September 14, 2023

প্রেম -- কাকলী


প্রেম
কাকলী
১৪/০৯/২৩
একটুকরো প্রেমকে খোঁজা, আর মেঘলা আকাশে রোদ্দুর খোঁজা,
হয়তো আছে, হয়তো নেই, অনুভবে শুধুই,
প্রেম মানে কি শুধু চোখের দেখায়, হাতের ছোঁয়ায়,
নাকি শারীরিক অবয়ব ছাড়িয়ে শুধু অন্তরে অনুভব,
প্রেম মানে কি শুধুই পাওয়া, নিজের জোরে চাপিয়ে দেওয়া অধিকারে,
নাকি অলীক কল্পনায় না পাওয়াতেও প্রাপ্তি,
সারাজীবন ধরে পাশাপাশি থেকে যাওয়া দুটি মন,
সত্যিই নিজেদের চেনে কতক্ষন, নাকি সবটাই অভ্যেস,
ভালো থাকায় চেষ্টা, নিজেদের অনুভূতি গুলো অগ্রাহ্য করে,
প্রেম মানে তাহলে ভালো থাকায় ছলে মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার খেলা,
নাকি এক অপার্থিব সুখের মধ্যে ডুবে গিয়ে অস্তিত্বের অন্বেষণ করা,
গভীর ভাবে ভালোবাসার মানে কি শুধু শরীর ছুঁয়ে থাকা,
নাকি বহুদূরে থেকেও অন্তরে তার উপস্থিতি অনুভব করা,
সবকিছুই ভীষন আপেক্ষিক, কি ভাবে ভাববে, কি ভাবে দেখবে,
সেই মতো ছবি আঁকা হবে,
আকাশে গোধূলি আলোর বুকে নাম লেখা হবে,
ভীষন আবেগ জড়ানো কিছু মুহূর্ত থেকে যাবে জীবনের সঞ্চয়,
অথবা কোথাও কিছুই নেই, তবু মনে করতে তো বাঁধা নেই,
অনেক স্বপ্ন আঁকা রঙিন দিন, সময়ের সাথে তারাও বার্ধক্যে পৌঁছায়,
কিন্তু সেই অনুভূতি গুলো চিরদিন চিররঙিন,
পূর্ণিমার চাঁদ যেমন প্রতি পূর্ণিমাতেই একরকম,
তবুও রকমফের হয় তার ভিন্ন চোখে ভিন্ন রকম,
প্রেমেরও তেমনি হাজার রূপ, হাজার অনুভূতি,
কেউ পেয়েও বুঝতে পারে না, কেউ না পেয়েও স্বপ্ন বুনে যায়,
প্রেম বুঝি অধরাই হয়, নাগালের বাইরে, স্বপ্নের ভিতরে,
এই মনে হয় পেয়েছি, এই মনে হয় হারিয়ে ফেলেছি,
সমস্ত উষ্ণতা মেখে শুধু অন্তরে অনুভব তাকে, এ এক প্রাপ্তির সাধনা।

Wednesday, September 13, 2023

ভুল সংকেত -- সেলিম আলতাফ

  ভুল সংকেত 
 সেলিম আলতাফ 
 ১৩-০৯-২০২৩
সেদিন হঠাৎ চমকে উঠি ভীষণ! 
জোড়াগেটের মোড়ে চলন্ত রিকশায়
মেয়েটি - ঠিক তোমার মতই।

মুহূর্তে কেঁপে ওঠে শরীর - 
সাথে ঝাকুনিতে মোটরবাইক থামে।

একরাশ অবাক বিস্ময় এসে হাজির-
মন আর চোখের বিস্ফোরিত বিচ্ছুরণ।

দুটো প্রশ্ন ঘোরপাক খায় লাটিম ঘোরায়- 
কবে এলে তুমি আমার শহরে? 
তুমি এলে আর আমি একটুও জানলাম না? 

কেটে যায় কিছু উষ্ণ সময় বোঝার নিমিত্তে-
তারপর--
পর্দা সরে ধীরে ধীরে দৃষ্টি মঞ্চের অবমুক্ততায়,
বিভাবরী আলোয় ধরা পড়ে ভুল সংকেত বিন্দু। 

আরে এ তো তুমি নও! 
সে অনেকটা তোমার মত!

হাঁফ ছেড়ে বাঁচি আমি রক্তচাপ নামতে থাকায় 
হেসে উঠি মন সরোবরে অনাবিল আনন্দ স্নানে,
সে তুমি নও- এটা ভেবেই আমার এত তৃপ্তিময়তা।

আবার তারপর--
একটা নিদারুণ কষ্ট আবেগ এসে জায়গা করে,
দীর্ঘশ্বাসে ভীড় জমায় হতাশা অনুভব সমাবেশ।

ফের প্রশ্ন উঁকি দেয় খোলা জানালার কার্ণিশে-
আচ্ছা সত্যি সত্যিই এখন রিকশায় তুমি হতে?
কি করতাম আমি তখন ভাবনার কাটাকুটিতে?
কি করে সামলাতাম নিজের অস্থির তোলপাড়?  

আরও কত কিছু ভাবি আমি-
কারুকাজ রেখাপথে সুঁই সুতোর বুনন চলে,
স্বপ্ন ডানায় ঝাপটাতে থাকে হাপিত্যেশ ছবি। 

ততক্ষণে মেয়েটিকে নিয়ে রিকশা এগোয়-
চলে যায় অজান্তে অনেকটা দূরত্ব বাড়িয়ে, 
ঝাপসা দৃষ্টি সীমানার চৌকাঠ পিছনে ফেলে।

Sunday, September 10, 2023

বুনে গেল আগামীর স্বপ্নীল বীজ -- বিক্রমজিৎ মান্না


বুনে গেলো আগামীর স্বপ্নীল বীজ 
বিক্রমজিৎ মান্না 
৬/৯/২৩
হোস্টেলের ঘরে ছেলেটা পড়ছিল চেয়ারে বসে
তখন গভীর রাত ।
দরজায় টোকার শব্দে খিল খুলেই স্তম্ভিত ।
মদের ঘ্রানেতে ভরা  , রক্ত জবার চোখ
টলমল পায়ে ,জড়ানো কন্ঠ স্বরে 
সম্মুখে দাঁড়িয়ে সিনিয়ার দাদা । 

সপাটে থাপ্পড় , 
এত রাতে আলো জ্বলছে কেন ?
ছেলেটা হতচকিয়ে যায় অসঙ্গত প্রশ্ণে ,
আর কষানো থাপ্পড়ে ।

কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে 
সিগারেট ধোঁয়া ভরা মাদক কক্ষে ।
প্রশ্ণোত্তর পর্বে ফেলড হলে
চড়,ঘুষি,লাথি,সিগারেট ছ্যাঁকা 
কিছুই থাকেনা বাকি।

কে বা বাঁচাবে তারে এ নরক থেকে !
যন্ত্রণায়  ভেষে ওঠে মার মুখ খানা 
যে মা তাঁর মুছায়েছে হাজারো কান্না।

উন্মত্ত শ্বাপদের নির্মম বাহু
ছাদ হতে ছুঁড়ে দেয় তাঁরে 
কঠিন প্রস্তরে নির্বিকারে
খল - খল হাস্যের লহরীতে ভরে ।

কাকভোরে পুলিশ আসে ।
দখিনা হাওয়ায় খোলা বইয়ের পাতা গুলো
তখনও যে  পত- পত উড়ে‌ই চলে ।
টেবিলের প্লেটের জলে 
ভাষা যত বেলি আর গোলাপের পাপড়ি সুবাস 
ঘরে ঢালে আমোদিত প্রাণ ।

বইয়ের পাশেই রয়ে যত্নে সাজানো
কোন ছেলেবেলায় তোলা
মায়ের হাতটি ধরে  ছবিটার ল্যামিনেট কপি ।
এবং ---
বিবেকানন্দ - নিবেদিতার হিমালয় পথে
সে চিরায়ত স্মিত হাস্যের 
বাঁধানো ছোট্ট ফ্রেম দেখে 
পুলিশ ইন্সপেক্টরও ক্ষনিক থমকে দাঁড়ায় ।

ক্ষণিক থমকে দাঁড়ায় আসমুদ্র হিমাচল বিষ্ময় ভরে 
চকিতে সংবাদ শিরোনাম শুনি ।

রাজনীতি বাদশারা লুফে নেয় নতুন ইস্যু ।
যদিওবা রানী আর সুশীল সমাজ 
বেদনার সুরে ভাষি যায়না ছুটি 
স্বপ্নদিপের মার বেদনার প্রলেপ হয়ে
ওদের গাঁয়ের পর ।

যে মায়ের চিরদিন অশ্রু ঝরাবে
হয়তোবা 
স্কুল টুর্নাম্যান্টে
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের ট্রফি খানা ;
যা সোকেশে এখনো জ্বলজ্বল  ।

হয়তো সিঁড়ির তলে আজও আছে পড়ে
ছেলেটার ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট, লাটাই
আর মাছ ধরার বড়শিটাও ।
যেখানে ছড়ানো তাঁর নির্মল,উচ্ছ্বল হাঁসি ।

যে টিফিন বক্সটা নিয়ে 
বোনের সাথে নিত্য কলহ
তাও বোনের বুকে বেঁধা হুল হবে ।

আর , বাবার যে হাত ঘড়িটা
ছেলেবেলায় মেঝেতে ফেলে ভেঙেছিল 
সে স্মৃতিও হয়তোবা
জ্বলিবে পিতার বুকে
রাবনের চিতা হয়ে এ জীবনভোর ।

তবুও যে আপনার জীবন দানে
প্রগতির পৃথিবীর চোক্ষু খুলি
হয়তোবা মুছে গেলো আগামীর শত মার
বুক চাপা জমাট পাষাণ ;
শিক্ষার মন্দিরে  নগ্ন পশুত্বের তান্ডবে স্তব্ধ করি ।

বুনে গেল আগামীর স্বপ্নীল বীজ
শাণিত চেতনার শিক্ষাঙ্গনে
আসমুদ্র হিমাচল মনে
করুন নয়নে ।

Friday, September 8, 2023

অভিমানী সময় -- চন্দনা কুন্ডু

অভিমানী সময়
চন্দনা কুন্ডু
8.9.23
মুঠো খুলে পড়ে যায় সময়, অভিমানে টুপ করে 
এই আছো তুমি, এই নেই মন ভুলানো ইশারায় ।
আমি কোথাও প্রবল, কোথাও শীর্ণ নদীর মতো
আবার কখন শূন্যতায় রিক্ত আবেগ ভরা মনে তোমাকে খুঁজি ।

দরিয়ার মতো বয়ে চলছি ওই সময়ের ইশারায়,
এই আছি আমি বর্তমানে, এই অতীতে ঘুরে মরি ।
শুধুমাত্র ভবিষ্যতের দিকে অন্ধ দৃষ্টিতে
তাকিয়ে থাকে আমার মন।

কবে, কখন, কোন সময় এইসব প্রশ্ন !
আমার চার পাশে আমাকে ঘিরে থাকে ।
ঈশ্বর সত্যি বোবা, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে, 
উওর দেয় না কখনও  ।

চোখের জল যায় শুকিয়ে, মন বলে, জীবনে কি তার দাম !
তাই  মনের ভিতরে আমি ডুব দিয়ে,  ভালবাসার মুহূর্তগুলি মুঠো ভর্তি করে , ক্ষনিকের সুখগুলোর সাথে তুলে আনি ।

এই খেলায় কিছুক্ষণ ভুলে থাকি, আবার
ওই সময়, আবার আমার হাত থেকে পালিয়ে যায় ।
আমার মুঠোর ফাঁক দিয়ে চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে,শূন্য করে তোলে 
তাইতো এত অভিমানী সময় যায় চলে,
মহাকালের কোলে ।

Wednesday, September 6, 2023

মহান শিক্ষক -- শুভঙ্কর ত্রিপাঠি

 মহান শিক্ষক
 শুভঙ্কর ত্রিপাঠী
 ০৬ _ ০৯_২০২৩
তুমি জ্ঞানী;
অনন্ত অপার রহস্যের  --
সত্য সন্ধানী  ।
জ্ঞানের অমৃত সুধা 
যুগে যুগে কর সঞ্চয় , 
সেই সুধা দান করে
তুমি মহা দানী
কালোত্তীর্ণ অমর অক্ষয়।

তুমিই  দধীচি ;
হও জ্ঞান তপস্যায়।
তোমার প্রদত্ত অস্থি ;
অসুর নিধনে , দেবরাজ বাসবের
কঠোর বজ্র গড়ে,
দেবতার অস্তিত্ব রক্ষায় ।
সৃষ্টির সংকটে আনে স্বস্তি।

তুমি স্বাভিমানী 
চানক্য ,দরিদ্র জ্ঞান যোগী।
তোমার  শিখার অপমানে 
অহংকারী ধননন্দ হয় ভুক্তভোগী।
নতুন যুগের
পুরোহিত তুমি,
কুটিল কৌটিল্য  হও যুগ প্রয়োজনে।

তুমিই ঈশ্বর
বিদ্যার সাগর তুমি, সাগর দয়ার
মাতৃ জাতি ,শিক্ষা পায় , খুলে যায় দ্বার
মধ্যযুগ পিছে পড়ে থাকে
নতুন যুগেতে পথ চলা,
তোমারি শিক্ষার আলোকে। 

তুমিই বিবেকানন্দ
তুমিই বিবেক , ভারত আত্মার।
মহান কর্মযোগ , বেদান্ত দর্শনে
মুখরিত বিশ্ববাসী, তোমার বন্দনে
শিকাগোর ধর্মসভা , জয় জয়কার।
সকলে গর্বিত মুগ্ধ
ছাত্র যত প্রকৃত শিক্ষার।

গুরু রবি, কবি শ্রেষ্ঠ
শিক্ষা গুরু তুমিই মহান।
বাঙালির সত্তা তুমি, বাংলার মান ।
শিক্ষা আনন্দময় প্রকৃতির মাঝে
মুক্ত  চিন্তা , উচ্চ শির সকাল কি সাঁঝে
তোমার শিক্ষার আলো শান্তিনিকেতনে
তোমার শিক্ষার আলো, আমাদের প্রাণে।

শিক্ষকতা পেশা নয়, 
আলোক দিশারী জয়গান।
কঠিন মহান ব্রত,
পবিত্র মঙ্গল যত,
মানবতা, মনুষ্যত্ব-
আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখান।
মহান শিক্ষক শুধু তাঁরা ,
যাঁরা নিজগুণে ভাস্কর সমান।

Tuesday, September 5, 2023

বর্ণপরিচয় -- বিজয়া মিশ্র

 বর্ণপরিচয়
 বিজয়া মিশ্র
 ০৫.০৯.২০২৩
একটু একটু করে যেন আলো ফুটছে
আঁধারের গহ্বর থেকে
যেখানে প্রথম শোনা পাখিদের মতো কলরব
যেখানে অবুঝ চোখের ভাষা অবাক বিস্ময়ে ইতস্ততঃ
যেখানে অসংখ্য অচেনা শব্দের গিঁট খোলার প্রস্তুতি ...।
যাঁর হাতের স্পর্শে অজানা অচেনা ভয় ভাঙার গান
স্লেট খড়ির বুকে প্রথম আঁকিবুঁকি
হয়ে উঠলো প্রাণের কথা আঁকবার মুক্তক্ষেত্র।
তিনি বড় চেনা অথচ তখন তিনি একেবারে নতুন অন্য এক অভিভাবক।
তিনি গল্প শোনানোর ছলে বলেছিলেন 
আমার ভেতর আরো এক একটা সূর্য উঠবে একদিন
সবুজ আলো ঝলমলে একটা অন্য জগতে যেখানে
বাগানে ওড়া প্রজাপতিদের মতো 
একটা সুন্দর ডানাওয়ালা মন মুমোচ্ছে অকাতরে।
নিঝুম আঁধার গুহায় আলোর কিরণ ফুটে উঠবে
যেন সে এক অন্য দেশ
সেখান পৌঁছোতে শিখতে হবে বর্ণের আঁকিবুঁকি
গড়তে হবে শব্দের সাজসজ্জায় তৈরি কথামালা।
প্রথম সেই স্পর্শ যেন জিয়নকাঠি
রাস্তায় হাঁক দিয়ে যাওয়া ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে
উঁকি দেওয়া মুগ্ধ চোখদুটো তখন খুঁজতে লাগলো 
একপয়সায় কেনা ছোট্ট বর্ণপরিচয়ের পাতা জুড়ে
সজ্জিত "জল পড়ে পাতা নড়ে..."
শব্দগুলো সেই জাদুকর মিলিয়ে দিতেন পূর্বাপর সত্যি সত্যি জল পড়ে দরজার বাইরে মাঠের পাশে
দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য গাছে নড়তে থাকা পাতার শিহরণে
আজও তিনি জাদুকর
মন্ত্রবলে দাঁড়ান এসে হাতে একখানা বেত নিয়ে
শুনতে থাকেন সঠিক উচ্চারণ সঙ্গে মানেটা ও...।
মনের চৌকাঠ পেরিয়ে নিত্য আসা যাওয়া 
সেই মানুষটি আমার মা।

Monday, September 4, 2023

মাতা পিতাসম গুরুশিরোমণি তুমি -- সুজন দাস

 মাতাপিতাসম গুরুশিরোমনি তুমি 
 সুজন দাস 
 ০৪/০৯/২০২৩
প্রিয় শিক্ষক তুমি মাতাপিতাসম গুরুশিরোমনি চিরশ্রদ্ধেয়বাঙ্ময়,
সরস্বতীর বরপুত্র তুমি দেশ বা জাতির গঠনে,পরিবর্তনে চিরঅন্বয়  |

অশিক্ষার আকাশে ছড়াও জ্ঞানের আলো তুমি আলোকবর্তীকাময়,
প্রতিভা বিকাশে জ্বালাও মনের প্রদীপ তুমি দৃপ্তময় |

তুমি মোদের প্রাণের গুরু আদর্শের প্রতীক সদা প্রেরণাময়,
তোমার প্রদর্শিত পথেই আগুয়ান মোরা ছাত্রদল চিরঅকুতোভয় |

হাতেখড়িতে তুমিই মহাগুরু শৈশবে শিক্ষার সূচনা চিরস্মরণীয়ময়,
অআকখ,ABCD,সহজ পাঠ-এর শৈশবীশিক্ষার সৃজনীপ্রসারণে তুমি চিরঅব্যয় |

'অগ্নিবীণা'র স্বপ্নদিশারী স্বপ্নের রামধনুবিচ্ছুরণে তুমি চিরপ্রত্যয়,
"দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু"অতিক্রমের সুশিক্ষাদানে তুমি সদাজাগ্রতময় |

শিক্ষক দিবসে প্রণমি তোমায় প্রিয় শিক্ষক হে গুরু তুমি চিরঅক্ষয়,
দ্রোণাচার্য তুমি,রাধাকৃষ্ণণ তুমি ছাত্রদলের সুচরিত্রগঠনে মহাপ্রলয়..|


Saturday, September 2, 2023

সেই শব্দ লাগে -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 সেই শব্দ লাগি
 শ্যামল কুমার মিশ্র 
  ২৭-০৮-২০২৩
রোজ রাতে আমি শব্দ খুঁজে মরি 
ভালোলাগা ভালোবাসার শব্দ 
উৎকর্ণ থাকি---ঐ শব্দ হলো! 
মৃদু বাতাসে মর্মর পাতার শব্দ 
কিংবা মার্জার চলেছে নরম পা ফেলে
শুকনো পাতায় জেগে উঠছে শব্দ 
'আমি কান পেতে রই'...

শেষ ট্রেনটা হুইসেল দিয়ে চলে যায়
রাতের নিশীথে চাঁদ ডুবে যাওয়ার আগে 
ও এসেছিল ধীরে একান্ত সন্তর্পণে
কী গভীর নম্রতা সে পদবিক্ষেপে 
'আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায় আমার আঙিনা দিয়া'... 
'আমি শুধু কান পেতে রই'...

নাম না জানা পাখিটা শিস্ দিয়ে 
হারিয়ে যায় ছাতিমের আড়ালে 
রেখে যায় ডানা ঝাপটানোর শব্দ 
আমি শুনতে পাই বইয়ের পাতার খসখস শব্দ 
ওখানে কি জেগে থাকে কোন শব্দশ্রমিক?
শব্দ তরে প্রেম জাগে নিশীথে, নীরবে... 

আমার দু'চোখে ঘুম নেমে আসে 
শব্দগুলো গানের মালা হয়ে 
আমার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে 
আমি শুনতে থাকি 'ঘুমপাড়ানি' গান 
গান যে শব্দের সুরেলা প্রকাশ 
ওই সুর আমায় নিয়ে যায় অনেক দূরে 
আমি হারিয়ে যেতে থাকি
চেতন অবচেতনের সন্ধিক্ষণে 
আমি কান পেতে শুনতে থাকি লাবডুব 

আমার চেতনার গভীরে 
এক গভীর শব্দস্রোত খেলা করে 
আমি খুঁজে ফিরি সেই শব্দ 
গভীর শব্দস্রোত মাঝে...

Friday, September 1, 2023

আজো আমি তোমার অপেক্ষায় -- গৌতম তরফদার

 আজও আমি তোমার অপেক্ষায় 
 গৌতম তরফদার
 ০১.০৯.২০২৩
মনে পড়ে কুসুমকলি! 
বিকেলের ঝিমো রোদ্দুরে গলাগলি, 
ফুরফুরে বাতাসে দু'জনে গা-ঘেঁষাঘেষি করে
আবেগের নরম পাহাড়ে তরতরিয়ে উঠে
প্রতিশ্রুতির প্রতিধ্বনি শুনিয়েছিলাম,

" ভালোবাসার বাঁধন খুলব না, 
 তোমায় কোনোদিন ভুলব না।
 সম্পর্ক হোক জীবনের চেয়ে দামি, 
 তোমায় আজীবন আগলে রাখব আমি। "

ভালোবাসার পরশ মনে মাখিনি, কথা রাখিনি
মুখ লুকিয়েছি আমি সময়ের আড়ালে।
দু'চোখে তোমার অসহায়ত্বের জলছবি, 
প্রতিশ্রুতি ভাঙার অপরাধী আমি।

সেদিনও বলেছিলে তুমি....
" কথা দিও না, রাখতে পারবে না,
  অনুতাপ তখন পিছু ছাড়বে না।"

তোমার হাত ছেড়েছি, বিদায়ের হাত নেড়েছি
আপন সম্পর্কের সৌভাগ্য নিজেই কেড়েছি।
তোমার নীরবতাই আমার কাছে অভিশাপ,
নিয়তি কেড়ে নিয়েছে আমার তাপ-উত্তাপ। 

মনে পড়ে কুসুমকলি! 
তুমিই বলেছিলে একদিন....
" অনুশোচনার আগুনে পুড়বে যেদিন,
  পুনর্মিলনের পটভূমি রচিবে সেদিন। "

আজও আমি তোমার অপেক্ষায়।


Wednesday, August 30, 2023

এক ভিখারীর কথা -- বলরাম সরকার

 এক ভিখারীর কথা
 বলরাম সরকার
 ৩০/০৮/২০২৩
দেখেছিলাম সেদিন রেল স্টেশনে
প্লাটফর্মে মেঝের এক কোণে ।
  বুভুক্ষু এক ভিখারীর আগমন,
ঘটিল জনবহুল সেই স্টেশনে।

জীর্ণ পোশাকে শীর্ণ তার চেহারা
রুক্ষ শুষ্ক চুল আঙুলে বড় বড় নখ ,
কঙ্কালসার চেহারা বসে গেছে গাল
হাড়গুলো যায় গোনা গেছে বসে চোখ।

উসকো খুসকো কোঁকড়ানো চুল 
সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে আছে ময়লা,
পরনে পরিহিত ছেঁড়া পায়জামা
 যেন মেখেছে সে গায়ে কয়লা।

শীর্ণ শরীরে ভিখারী অতি দুর্বল
ফোলা পায়ে লাঠি সম্বল করে  হাঁটে,
মায়াবী চোখ দুটি যেন কিছু চাইছে 
ঋজু শরীরে আহারের জন্য খাটে।

চোখে মুখে সর্বদা চিন্তার ছাপ
হাতে রেখেছে এক নোংরা ঝোলা,
কখনো চেয়ে থাকে আকাশ পানে
অসার শরীর তার মুখটা ফোলা।

গুটি পায়ে আমার কাছে এলো ভিখারী
জলে ভরা করুন সেই  দুটি আঁখি
বাড়িয়ে হাত চাইলো সে  দুটি টাকা,
পেলাম কষ্ট এ লজ্জা কোথায় রাখি।

কেহ কেহ পাশ কেটে যায় চলে
কেহ ঘৃণার দৃষ্টি করে নিক্ষেপ,
তাচ্ছিল্য ভঙ্গিতে নাকে দিয়ে রুমাল
যা খুশি ঘটে যাক কারো নেই ভ্রক্ষেপ।

ঝড় বাদল মাথায় নিয়ে এভাবেই চলে
অভাবে ভিখারী সেও তো একজন মানুষ,
ভাগ্য  পরিস্থিতি করেছে তাঁকে ভিখারী
অবহেলা করে যারা তাঁরা ঘৃণিত অমানুষ

Tuesday, August 29, 2023

বাংলাদেশ --কালাচাঁদ মন্ডল

 
 বাংলাদেশ
কালাচাঁদ মন্ডল
 ২৯/০৮/২০২৩
বলেছিলে কবি বিরহের সুরে সাজিয়ে আপন মতে,
হারানো প্রিয়কে ‘তুমি যে গিয়েছো বকুল বিছানো পথে’।

আগস্ট মাসে সে ঊনোত্রিশ যেদিন ধরাতে আসে,
তব বিদায়েয় করুণ রাগিনী আকাশে বাতাসে ভাসে।

গানের সুরেতে বলেছিলে তুমি রেখো মসজিদের পাশে,
ভুলেনি বাঙালি রেখেছে প্রমাণ তোমাকেই ভালোবাসে।

ঊনিশ শতক ছিয়াত্তরের সেই বিদায়ের ক্ষণ,
তব বিদায়ের বেদনার সুর কাঁদায় সবার মন। 

দুখু মিয়া বলে ডাকিত তোমায় তোমার ছোট্ট বেলা,
সারাটা জীবন দুখের সাথেই করিলে কেবল খেলা।

সাতাত্তরটি বছর ধরাতে বিরাজিত ছিলে তুমি,
চৌত্রিশ সন নীরব রহিল তোমার মানস ভূমি।

সক্রিয় ছিলে কাব্য জগতে মাত্র কয়েক সাল,
তার মধ্যেই সাহিত্যে সব শাখাকে করিলে লাল।

পরাধীন দেশের স্বাধীনতা চেয়ে গর্জে তোমার লেখা,
বিদ্রোহী কবি খেতাব আঁকিল তোমার নামেতে রেখা। 

মানবতাবাদী দৃষ্টি ভঙ্গি তোমার লেখনী বলে,
প্রেমের রাজ্যে বাজাও বাঁশরী হৃদয় নাচিয়া চলে।

সাম্য স্বাধীন মানবতা প্রেম লেখায় প্রকাশ করো,
মানুষের মন বিজয়ে হে কবি অমরত্বকে ধরো।

ধুমকেতু নামেতে পত্রিকা তুমি প্রকাশ করিয়াছিলে,
উহারই মত উজ্জ্বলতায় হৃদয় হরিয়া নিলে।

বাঙালি তোমার রাখিয়াছে মান বানিয়ে জাতীয় কবি,
প্রতি বাঙালির হৃদয়ে রয়েছে তোমার প্রেমের ছবি।

এখনো বঙ্গে বকুল বনেতে ফুটে বকুলের ফুল,
হারিয়ে যাও নি কবি হে নজরুল আছো আমাদের কূল।

অশ্রু সিক্ত নয়নে অর্পি বকুল ফুলের মালা,
তব সনে বাঁধা সেতু বন্ধনে প্রেম বারি হোক ঢালা।

Monday, August 28, 2023

সম্পর্কের পটচিত্র -- বিজয়া মিশ্র

 সম্পর্কের পটচিত্র
 বিজয়া মিশ্র
 ২৮.০৮.২০২৩
যে মাটিতে তুমি আদর করে রেখে গিয়েছিলে
লোক দেখানো সম্পর্কের বীজ
সেখানে আমি রাখলাম বর্ণমালার সজীব অঙ্গীকার।
কী আশ্চর্য 
কয়েকটা দিন বাদেই সম্পর্কের নির্জীব বীজেরা
হতোদ্যম তাকিয়ে আছে
বর্ণমালার লাবণ্যের জৌলুসে বুঁদ হয়ে।
মনে হলো নেশাতুর চোখগুলো এত প্রশান্তি পায়নি কখনো আগে
বর্ণমালায় হারিয়ে গেছে ওদের সমস্ত দিনলিপি
বর্ণমালায় ওঠা বসা ওই নিন্দুক ,নির্জীব,
একচেটিয়া তোমার একমুঠো বন্ধন
একদা দাপুটে পটচিত্র ,জাতে উঠতে চায় সবংশে
সেখানে অবলীয়ায় ফিরে আসে দোয়েলের সংসার,
বাবুই,চড়ুই,ময়না টিয়াদের খুনসুটি
সবুজের অমলিন ঘরানায়
রোজ রোদের ডাকে বর্ণবিতানে অপরূপ সাজ।
সমস্ত মাঠ জুড়ে জলচুড়ি পাড়ের মতো 
নিপুন আলেখ্য লিখে রাখে বন্ধনহীন ইচ্ছেগড়ন।
সব বর্তমান পেরিয়ে পারো যদি নিও খুঁজে
তোমার সম্পর্কের অহংকারে পুষ্ট বীজগুলোর ইতিকথা ।

ঘর পালালো চৈতী -- মঞ্জুরুল হক তারা

 
ঘর পালালো চৈতী 
মঞ্জুরুল হক তারা
২১ --৮--৭৩ 
চৈতীর বাপটা  মরে গেছে অনেক দিন আগে
উঠতি নবীণা  পথ-ঘাট  চিনে না,
বারন্ত মেয়ে  ঘর ছেড়ে কোথায় যায়  কোথায় থাকে
অসুস্থ মা টা   খবর টা রাখে না।
,
নদীর বুকে  ঢেউ জাগে  অস্থিরতায়  কুল ভাঙ্গে  ক্রুব্ধে
উত্তাল স্রোতে  গভীর রাতে  ভেসে যায়, 
পিপাসায় তাড়নায়  কুয়াশায় পথ হারায়  জীবন যুদ্ধে
ভুল করে  গভীর অন্ধকারে  ছুটে যায়।
,
পাড়ার ছেলের হাতটি ধরে  পালালো সে ঘরটি ছেড়ে
গরীব ঘরের  কালো মেয়ে   চৈতীরাণী, 
চঞ্চল রেণু  রৌদ্রের ঢলে  ফুটন্ত বুকে আগুন  জ্বলে বেড়ে
ডুব দেয় অন্ধকারে  পারি দিতে   বৈতরণী।
,
কিশোরী রং বদলায়   ঢং বদলায়  ঢেউ খেলে হাওয়ায়
দুরন্ত মন  ঘুরে বন  উড়ে বেড়ায়  দূর নীলিমায়,
স্বপ্ন দেখে নিবিড়ে  ঘর ছেড়ে দূরে  ছুটে যায় অজানায়
হয়তো কিছু সুখ পায়    নয়তো  কিছু  হারায়।
,
জামিন নেবে না সে  না করছে  আদালতের কাছে
মা কে দেখে  না করছে  চিনে না যে  তার মা কে সে
ভালোবাসার গভীর নেশায়  পথের মাঝে  পথ হারায়
প্রেমের সাথে  দিনরাতে  থাকতে চায়  জেলখানায়।
,
পথ হারালো মন্টি  বাজায়ে প্রেমের ঘন্টি  এ সময়
বদনাম তার রটে যায়  দূর অজানায়  ছুটে যায়, 
বিয়ে করার  তার বয়স নয়  পাড়াময়  কথা কয়
সকাল সন্ধ্যায়  রক্ত চোক্ষে শ্বাসায়  ঝড় উঠে নিন্দায়।
,
রক্ষিত ধন  কাঁটা বন ছেড়ে   ছুটে গেলো উড়ে
বিধবা মায়ের কান্নায়  রাতের পর  দিন যায়,
রান্না-বান্না  বন্দ করে  বসে থাকে বদ্ধ ঘরে
বাইর আর হয় না সে  বসে থাকে লজ্জায়।

এমন কেন হয় -- রেজাউল করিম বিশ্বাস

 এমন কেন হয়
 রেজাউল করিম বিশ্বাস 
  ২০ ০৮ ২০২৩
সেই কিশোরী মেয়েটি কি আজও খোঁপা বাঁধে ?
নদীর ঘাটে নাইতে যায় নাচতে নাচতে ঝুমুর পায়ে?
সন্ধ্যা বেলায় ছাদে নিজের চুলে বিনুনে দেয়  ?
কারো কথা ভেবে আকাশের  তারা গোনে ?

গভীর রাতে গবাক্ষ  খুলে বাইরে চেয়ে রয় ?
স্বপ্নে কি সে  রাজকুমারকে আজ ও খুঁজে ?
রাতের প্যাঁচার কর্কশ স্বরে তার মনোযোগ হারায় ? 
ঘুম ঘুম চোখে স্ট্রিট লাইটের হলদে আলো দেখে ?

আজও কি তার সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে ?
শিশির সিক্ত দূর্বা ঘাস মাড়িয়ে যায় কার হাত ধরে?
খেয়ালী বাতাস  চুলগুলো এলোমেলো করে দেয় ?
নিজেই বুঝি আঙুল দিয়ে সব ঠিক করে ন্যায় ?

তার পছন্দের শাড়িটা ব্যালকনিতেই ঝুলে ?
বাবুই পাখিগুলো কি তারপরেই উড়ে এসে বসে ?
বই হাতে হেঁটে হেঁটে ধুলো রাস্তায় কলেজে যাই ?
অংকন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় নাম লেখায় ?

তার শখের বাগানে ফুলের পরিচর্যা নিজেই করে ?
 বেগুন গাছের টুনটুনির বাসা আজও আছে ?
লম্বা দৌড় হাসির ফোয়ারায় সবাই মেতে ওঠে ?
হঠাৎ এমন ভাবনা হলো কেন আমার কে জানে ?

তবে কি আমি সত্যি সত্যি আজও তার কথা ভাবি ?


Sunday, August 27, 2023

হারিয়ে যাচ্ছে অঞ্জনা -- দুলাল চন্দ্র দাস

হারিয়ে যাচ্ছে অঞ্জনা
দুলাল চন্দ্র দাস
২৮/৮/২৩
অঞ্জানায় জল নেই ,নেই আর স্রোত আর,
নেই কোন জেলে মাঝি শুধুই হাহাকার।
লোকজন হেঁটে হেঁটে পার হয় নদী,
দেখিতে পারবে সবাই আসে কেহ যদি।

নদীর ভেতর ঢালেত কত বাড়ি ঘর,
জল শুকিয়ে গেছে ছোট কত চর।
দুই পাড়ে কাশবন মাঝে মাঝে আছে,
লতা পাতা জংগলে নদী ভরে গেছে।

আম বাগান বাঁশ ঝাড় পাড়েতে কত,
চেয়ে আছে নদী পানে অনাথের মত।
গাছেতে পাখি ডাকে নেই আর বিল,
ওড়ে নাতো নদীর উপর পানকৌরা চিল।

বর্ষা এলে নদীতে কিছু জল হয় ,
সারা বছর শুকনো কচুরি পানা রয়।
রবী ঠাকুর লিখে ছিলো অঞ্জনা নিয়ে,
জলংগী থেকে বেড়িয়ে পরেছে চূর্ণীতে গিয়ে।

ভাঙ্গা সেই মন্দির আর তীরে নাই,
ভক্ত এক কুকুর ছিলো নিয়েছে বিদায়।
অঞ্জনা নদীর তীরে চন্দদাহ গায়ে,
 গঞ্জটা আছে সেথা শুধু দেখিতে পাই।

স্মৃতি বুঝি গেলো মুছে অঞ্জনা নদী,
এখনো বাঁচে এগিয়ে আসে সবাই যদি।
অঞ্জনা নদীর কথা সারা ভারত জানে,
পড়াতো বইতে এখন আর নাহি মনে।

Friday, August 25, 2023

আমি পেরেছি মা -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 আমি পেরেছি মা 
শ্যামল কুমার মিশ্র
২৫-৮-২০২৩
ইটিন্ডাঘাটের পাশ দিয়ে প্রবহমান ইছামতি 
ইছামতির তীরে ঘাসের উপর বসে আকাশের দিকে নিবিষ্ট চিত্তে চেয়ে রয়েছে একটি বালক 
একটু একটু করে সূর্য ডুবে যাচ্ছে
আকাশ জুড়ে লাল রং ছড়িয়ে পড়ছে
ধীরে ধীরে রঙের গভীরে হারিয়ে যাচ্ছে ছেলেটি

নদীর বুক জুড়ে আঁধার নেমে আসছে 
দূর আকাশে তারার মেলা 
কখনও কখনও ছোট্ট ভাইটাকে ও তারা চেনাত 
বলতো--ঐ দেখ সন্ধ্যাতারা, ঐ দূরে সপ্তর্ষিমণ্ডল 
আকাশের গ্যালাক্সি চেনাতে চেনাতে হারিয়ে যেত ছেলেটি
মানসলোকে সে দেখতে পেত চাঁদ মঙ্গল আর বৃহস্পতিকে
মাকে বলতো-- সকল বাধা পেরিয়ে আমি একদিন আকাশ ছোঁব মা
মায়ের স্নেহের স্পর্শ ছুঁয়ে যেত মানসের চিবুক
চাঁদ,পৃথিবীর গল্প করতে করতে মানস যেন পৌঁছে যেত চাঁদের দেশে... 

স্বপ্ন বোধ হয় এমনি করেই সত্যি হয় 
উচ্চশিক্ষা শেষ করে ইটিন্ডাঘাটের সেই ছেলেটি একদিন চলে গেল ইসরো
ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপনের অন্যতম কারিগর 
ধীরে ধীরে চন্দ্রযান-৩ পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে যাচ্ছে... 

ইসরোর চেম্বারে বসে ছেলেটি আজও খুঁজে চলে খানিকটা আঁধার 
ছোটবেলার সেই ইচ্ছামতির বুকে নেমে আসা আঁধার 
কুল কুল স্বরে ইছামতি আজও বয়ে যায় 
রাতের আঁধারের বুকে এক টুকরো আলো হয়ে নেমে আসে  মানস
আর ফিসফিসিয়ে মাকে বলে--
আমি পেরেছি মা, সকল বাধা পেরিয়ে আমি চলেছি চাঁদের দেশে 
মানসের কথাগুলো বুকে নিয়ে ইছামতি বয়ে যায় অনন্তের পথে...
--------------------------------------------------------------------

হবে কবে স্বপ্নপূরণ ? -- বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য

 হবে কবে স্বপ্ন পূরণ ?
 বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য
 ২৫/০৮/২০২৩..
শত সহস্র বীরের রক্তস্রোতধারার মধ্য দিয়ে
লক্ষ লক্ষ ক্রন্দসী মায়ের বুক, কোল, খালি করে
অশ্রুধারার অপ্রশমন অবিশ্রান্ত প্লাবন বইয়ে
অবশেষে এসেছ তুমি কাঙ্ক্ষিত বাঞ্ছিত স্বাধীনতা !
পরাধীনতার নাগপাশের, দুঃসহ, ঘোর অমানিশার হল অবসান              
স্বাধীনতার রক্ত লাল সূর্য্য হল উদিত মহানন্দে।
ব্রিটিশের কূটচালে দেশবাসী পেলো অনাকাঙ্ক্ষিত ত্রিখণ্ডিত স্বাধীনতা 
আছড়ে পড়ল অগণন ছিন্নমূল উদ্ভাস্তু মানুষের অবিরাম ঢেউ
লাখো লাখো বীর মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে।
অজস্র শহীদের জীবন বলিদানের ফলে অর্জিত হল যে স্বাধীনতা 
তার সুফল হল করায়ত্ত উচ্চাশী, লোভী, উচ্চাভিলাষী কতিপয় রাজনীতিবিদদের 
যারা ছিল রত নিয়ত ব্রিটিশ ভজনায়,তাবেদারিতে হায়রে পরিহাস !
বিকৃত, একপেশে, ফরমায়েশী ইতিহাস লিখনে 
স্থান পেলনা প্রকৃত ত্যাগী বীর যোদ্ধা, সংগ্রামীদের কথা !
" সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ !" 
দেশপ্রেমিকেরা পচে মরে জেলে, ফাঁসিকাঠে ঝোলে
অপ্রশমন নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয় বিপ্লবীরা 
দেশদ্রোহী গদ্দার, দালাল, ফিতে কাটে উদ্বোধনের !
মাঠে ময়দানে কত জ্বালাময়ী ভাষণ দেয় ! দেয় কত বাণী!
এতে করে আজও ঘুচলো না দেশের দারিদ্রতা, অন্ধকার, বৈষম্য 
কবে হবে প্রকৃত স্বাধীনতার অনুকূল পরিবেশ তৈরী, কে জানে !
কবে পূরণ হবে প্রিয় নেতাজীর দেখা স্বপ্নের ? আজও জানিনা
কবে পাবে সবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা 
কবে করবে ভোগ, পাবে যথার্থ স্বাদ প্রকৃত গণতন্ত্রের ?
দেশের অগণিত আপামর, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, জনসাধারণ ?

Monday, August 21, 2023

বৃষ্টির ফোঁটা -- বিবেকানন্দ রায় বর্ধন

 বৃষ্টির ফোঁটা
 বিবেকানন্দ রায় বর্ধন
 ১২-০৮-২০২৩
বৃষ্টির ফোঁটা,পড়ন্ত বিকেলে
নিভৃতে নির্জনে প্রেমিক যুগলের বুকে
নেচে উঠে বন ময়ূরীর দল

বৃষ্টির ফোঁটা,ঘরের চাল ভেদ করে
যখন গায়ে এসে লাগে 
শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের মিছিল
দৃঢ় পদক্ষেপে হেঁটে যায় হৃদয়ের পাশ দিয়ে।

বৃষ্টির ফোঁটা,কালো মেঘের বুক চিরে
নেমে এসে চাষীর মনে
জাগিয়ে তুলে রাধিকার প্রেম

বৃষ্টির ফোঁটা,পাহাড়ি জনপদে
মেঘভাঙ্গা বৃষ্টিতে ফিরিয়ে দেয় হড়কা বানের স্মৃতি।

বৃষ্টির ফোঁটা,ধানের শিষে
সবুজ ঘাসে পদ্ম পাতার বুকে
রোদের কিরণে ছড়ায় হিরণ্ময় দ্যুতি 

বৃষ্টির ফোঁটা,ভাসিয়ে দিয়ে যায়
ইট ভাঙ্গা শ্রমিকের মাথার উপরের পলিথিন।

বৃষ্টির ফোঁটা, অতীত ফিরে আসে
মনের দর্পনে কতো ছবি ভাসে
উদাস চোখে বৃদ্ধা বসে খোলা জানালার পাশে।

বৃষ্টির ফোঁটা,ধূয়ে পরিস্কার করে দিয়ে যায়
মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গান্ধীজী,স্বামীজী
মাদার টেরেসার বিবর্ণ মুখ!

জাগ্রত হও বিবেক -- শিবপ্রসাদ মন্ডল

জাগ্ৰত হও বিবেক
শিবপ্রসাদ মণ্ডল 
১১/৮/২৩



জাগ্ৰত হও সবার বিবেক,ঘুমিয়ে থেকোনা আর,
জ্বলছে আগুন সমাজের বুকে,পুড়ে হবে ছারখার।

বিবেক লাগিয়ে কর সবে কাজ, তবেই মিলবে ফল,
নাহলে জয়ের স্পর্শ পাবে না, ফেলবে নয়নজল।

বিবেক জাগাতে চাই উদ্যম,প্রতিজ্ঞা থাকা চাই,
তবেই জাগবে বিবেক সবার,এতে কোনো ভুল নাই।

বিবেক যখন জাগ্ৰত হবে,দূর হবে সব ভয়,
মহান কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়লে জয় হবে নিশ্চয়।

বিবেক যে হলো সব মানুষের হৃদয়ের সেরা দিক,
বিবেকবানই এই সমাজের বড় এক সৈনিক।

বিবেক জানায় সকল কাজেই যেতে অভাগার পাশে,
বিবেক শেখায় যোগাতে অন্ন,যাতে দুঃখীজন হাসে।

ছল ও চাতুরি নানা নোংরামি,বিবেক করে যে দূর,
জাগ্ৰত  হলে  বিবেক সবার, শুনি  সুমধুর  সুর।

বিবেক যখন বাসা বাঁধে হৃদে,কেউ করেনা যে পাপ,
পাপের ফলটা লাঘব করতে ,করে সবে অনুতাপ।

বিবেক শেখায় বাঁচতে বাঁচাতে,বিবেক হিয়ার আলো,
অন্ধকারকে আলোকিত করে দূর করে দেয় কালো।

হে বিবেক তুমি জাগ্ৰত হও--সবার হৃদয়মাঝে,
সকলেই যেন একজোট হই, সমাজের ভালো কাজে।

দৃপ্ত বুকে স্যালুট ঠুকে -- শান্তি পদ মাহান্তি

দৃপ্ত বুকে স‍্যালুট ঠুকে
শান্তি পদ মাহান্তী
১৬/০৮/২০২৩
স্বাধীনতা প্রাণের কথা
গর্বে ভরে বুক,
মনের পটে ভেসে ওঠে
মাগো তোমার মুখ।

দৃপ্ত বুকে স‍্যালুট ঠুকে
বন্দি তোমায় মা,
জন্মভূমি মাগো তুমি
কভু কেঁদো না।

তোমার সুখে গর্ব বুকে
তোমার দুখে দুখ,
অপমানে বাজে প্রাণে
দেখলে মলিন মুখ।

নাই তুলনা ভারতী মা
নাই করুণার শেষ,
বক্ষে ধরে আপন করে
তুমি সবার দেশ।

ওই পতাকা বুকে আঁকা
দেড়শো কোটির মা,
শত্রু এলে চোখ দেখালে
রেহাই পাবে না।

আগলে ঘাঁটি মায়ের মাটি
কবুল করে জান,
বুক চিতিয়ে জীবন দিয়ে
রাখবে মায়ের মান।

শ্রাবণ সন্ধ্যা -- প্রভাত দাস

 শ্রাবণ সন্ধ্যা 
  প্রভাত দাস
 ১৬/০৮/২০২৩
শাঁখের বাঁশি বাজছে দুয়ারে দুয়ারে
ফুলরেনু ভাবে বসে মনের গভীরে।
আশা জাগে আশা রাখে বাসনায় হেথা
মন চলে যায় বিহঙ্গের তীরে কোথা!

স্বপ্ন জড়ানো স্বপ্ন মায়ায় স্বপ্নের কবিরাজ
হেথা হোথা স্বপ্ন ছড়ায় স্বপ্নের মহারাজ।
স্বপ্ন জাগানো ভীড়ে স্বপ্ন খোচিত কালপুরুষ
 কুঞ্জ সাজায়ে আশা জাগায় মনের সুপুরুষ।

বিরহের জ্বালা বক্ষ মাঝে স্বপ্নের মায়াজালে
একা বসে একাকিনী স্বপ্ন মনে প্রদীপ জ্বালে।
ভাবনার নেই অবসান সন্ধ্যা বহিয়া যায়
ভাবনার পাহাড় ভাঙ্গিয়া মন কাঁদিয়া যায়।

স্বপ্নের কারাগারে স্বপ্নের ইতিহাস গড়া
জীবনের পদে পদে আছে শুধু তাড়া।
ব্যস্ত মনের চৌকাঠ ডিঙিয়ে পাগলপারা
জীবনের পথে পথ খুঁজে একি দিশাহারা।

শ্রাবণের কান্নায় মনে জাগে বিরহ
পাছে রয় ভাবনা গান গাহে অহরহ।
চকিত মনে দিন যায় বাসনা তিমিরে
জীবনের কান্না বহিয়া যায় অতল সমীরে।

বারি ধারায় সন্ধ্যা ভিজিয়া যায় মন কাঁদায়
শ্রাবণ হারা সন্ধ্যা মনের গভীরে ছবি আঁকায়।
স্বপ্নের শপথে আশাহীন রোদনে মন জাগায়
স্বপ্ন নাহি ফেরে স্বপ্নের দুয়ারে শ্রাবণ সন্ধ্যায়।

ধন্যবাদ চশমা -- গৌতম পাল

 ধন্যবাদ চশমা
 গৌতম পাল
 ১৩/০৮/২০২৩
সেদিন যখন আমার আবছা দৃষ্টি
খুব কেঁদেছি মনের দুখে,
আদর করে তুলে নিয়েছি চোখে
তোমায় আমি হাসি মুখে।

আজ অলংকারে ঢাকা মুখমণ্ডল
চোখে আঁটা সোনালী ফ্রেম,
অপূর্ব লাগছে আবার এই পৃথিবী
নতুন করে জেগেছে প্রেম।

সোনালী ফ্রেমে কাঁচের দেওয়াল 
ফিরিয়ে দিলে মুখের হাসি,
আনন্দ উল্লাসে বেশ কাটে সময়
ধন্যবাদ চশমা রাশি রাশি!

স্পষ্ট চোখে এখন দেখছি আমি
জগতে রূপের বাহার,
তোমায় পেয়ে আমি ধন্য হলাম
তুমিই সেরা অলংকার!

শুধু দুঃখ মনে আজও দেখতে হয়
দেশের নির্লজ্জতার ছবি,
কলম ধরি তোমায় দিয়ে চোখে
হয়ে যাই স্বভাব কবি!

থেকো তুমি সাথে চিরদিন প্রিয়
তুমি যে আমার দৃষ্টি ,
তোমার কৃপায় দেখব এই জগত
করবো সাহিত্য সৃষ্টি ।

আজব স্টেশন -- স্বাধীন কুমার আচার্য্য

আজব  ইস্টিশান 
স্বাধীন কুমার আচার্য্য 
 ১৭/০৮/২০২৩ 
কু– ঝিকঝিক রেলগাড়ি চলছে 
খটাখট শব্দে ঝালাপালা করছে 
গুঁতোগুঁটি ঠেলাঠেলি এই বুঝি যায় প্রাণ 
ধন্যি তোদের বাপ আজব ইস্টিশান ।

এটা যায় সে আসে কেউবা দাঁড়িয়ে আছে 
বিকট আওয়াজ করে হর্ন টা বাজায় কাছে 
যেদিকে তাকাই দেখি শুধুই পঙ্গপাল 
কালো মাথা কাঁধে ব্যাগ আর কিছু জঞ্জাল ।।

চানা বোলে কলা চাই অমলেট লাগবে 
গরম কচুরি আছে জিভে জল আসবে 
পানি পানি রব ছাড়ে চিৎকার চেঁচামেচি 
মনে হয় এটা যেন পাগলা গারদ রাঁচি ।।

সাদা জামা কালো প্যান্ট হাতে নিয়ে পেনটা 
টিকিট টিকিট বলে কেড়ে নিল প্রাণটা 
মাইকের চোঙ গুলো করে শুধু জ্বালাতন 
হাজারে হাজার দেখি ঘুম ঘোরে অচেতন  ।।

আলোর রোশনাই দেখে বলি বাপরে 
যেদিকে তাকাই দেখি অজগর সাপরে 
আঁকা বাঁকা ঘুমিয়ে একটুও নড়েনা 
আজব ইস্টিশানে আর আসা যাবেনা ।।

নিশিযাপন -- নাসিরা বেগম

নিশিযাপন 
নাসিরা বেগম 
১৮-০৮-২০
সময়ে অসময়ে দিবসে জাগরণে
হৃদয়ের সবটুকু শহর জুড়ে ,
স্মৃতি নামক ঘুণ পোকারা
একজোটে খায় কুরে  কুরে। 

অক্ষরের মিছিলে হামলা চালায়
কলমেরাও শুধু  করে হরতাল,
স্মৃতিরা এসে ট্রাফিক জ্যাম করে
মন দিয়ে যায় লাল সিগনাল। 

তবু শব্দেরা ছুটে ছুটে আসে 
হৃদয়ের ক্ষতে রক্ত ক্ষরণ ,
শব্দের স্রোতে বিবাগী পাল
 যেন উড়িয়ে চলে সারাক্ষণ। 

অক্ষরেরা দলে দলে ভেসে
যায় রূপকথার পরীদের দেশে,
লহরে লহরে নদী বয়ে যায় 
মোহনার দিকে ভেসে ভেসে। 

দিনের শেষে সন্ধ্যার কোলাহলে
ক্লান্ত নদীটার অশ্রুত স্বর,
রাতের গভীরে অচেনা আওয়াজে
যন্ত্রণায় যাপন দগ্ধ নিশিভোর। 

বোবা মন কতো কথা বলে 
নীরবে নিভৃতে একান্তে গোপনে,
জাগ্রত দেবতার জন্য আসন 
পেতে রাখে হৃদয় সিংহাসনে। 

স্মৃতিরা একজোট হয়ে ধেয়ে 
আসে নীল দিগন্তের বুকে,
নির্ঘুম দুটি আঁখি জেগে রয়
শশধর দেখার সুখে অসুখে। 

খাঁ খাঁ বুকে রাতচরা ডেকে যায়
বুকে তে ধরায় অসহ কাঁপন, 
ছেঁড়া ফাটা হৃদয়ে জোড়াতালি
দিয়ে চলে নীরবে নিশিযাপন।

Wednesday, August 16, 2023

ভুল থেকে নাও শিক্ষা -- মোঃ বদরুল হুদা

ভুল থেকে নাও শিক্ষা
মোঃ বদরুল হুদা
১০-৮-২৩


ভুল থেকে নাও শিক্ষা সবে
শুদ্ধ করো জীবন মন,
ধৈর্য নিয়ে কর্ম করো
আসবে দেখো শুভক্ষণ।

ভুলের কর্মে এই জীবনে
ফুটে না তো সুখের ফুল,
ধৈর্য নিষ্ঠা একাগ্রতা
সফলতার আসল মূল।

শুদ্ধ মনে চলতে শেখো
জীবন গড়ার পাবে পথ,
কর্ম করো দৃঢ় মনে
জীবন পথে থেকো সৎ।

ভুলের পথে চললে সদা
পাবে না তো কভু সুখ,
বিফল হবে জীবন তোমার
রাখবে ঘিরে কষ্ট দুখ।

ভুলের মধ্যে ডুবে থেকে
মনে সুখের রাখলে আশ,
কষ্ট জ্বালা রাখবে ঘিরে
হবে তোমার জীবন নাশ।

দূর থেকে দূরে -- প্রিয় রহমান আতাউর

 দূর থেকে দূরে 
 প্রিয় রহমান আতাউর 
 ০৯/০৮/২০২৩


কোনো এক পাতাঝরার দিনে
আমার যাওয়া হলোনা আমখই নামের
আদিবাসী গ্রামে- বীরভূমে! 
কাঁকুড় মাটির ঘর - ছনের ছাউনির
কী লীলাময় মোহময়তা-
শাল তমাল আর আর জঙ্গলের বুনোলতা
আমাকে নিয়ে যায় দূর থেকে দূরে-
আবার কখনো সখোনো
ক্রমাগত পেছনে ফিরতে থাকি আমি
ছাত্রজীবনে -
শুধু যাওয়া আসা - আঁখিজলে ভাসা ;
আমরা যখন প্রমত্তা যমুনা পেরিয়ে গেছি রাজশাহী 
নৌযানে - এখন সেখানে প্রযুক্তির 
নির্মল হাসি - নয়নাভিরাম যমুনা সেতু!
আহা মুলাডুলি, দিলপাশার 
কী চমৎকার স্টেশনের নাম!
উত্তাল নব্বইয়ের দশকে ভার্সিটির পড়ার
সমাপ্তি ঘটে -
তারপর এক দীর্ঘ পথ পরিক্রমা - যেখানেই যাই
অন্তরে দীপ্তমান - রাবির দর্শন বিভাগ-
যেখানে এসেছিলেন রাঢ়বঙ্গের এক জ্যোতির্ময় পুরুষ
হাসান আজিজুল হক- প্রিয় শিক্ষক
তিনিও হারিয়ে গেলেন - অনন্ত নক্ষত্রবীথিতে -
কত স্মৃতি, কত মায়া! 
গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে বাবা চুপি চুপি বলে-
কবরে একা একা ভালো লাগেনা বাপ - আসিস না তো এদিকে আর! 
আমার চোখ ভিজে যায়- হাও মাও করে কাঁদতে থাকি। বলি- মা, কেমন আছে বাবা? তাকে কি দেখতে পাও? উত্তর আসে - নারে বাপ, এখানে কেউ কাউকে দেখতে পায়না। 
তাৎক্ষণিক মহাগ্রন্থ হাতে নিই- জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠে - সুরা বনি ইস্রাইলের আয়াত- রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা! 
বার বার পড়তে থাকি- ঘামতে থাকি অবিরাম :
হাস্নাহেনা আর রাতকামিনী অজস্র গন্ধ ঢেলে দেয়
সঞ্চয়নে - ঘুম আসেনা আমার! 

Monday, August 14, 2023

বিপন্ন স্বাধীনতা -- শিবপ্রসাদ মন্ডল


 বিপন্ন স্বাধীনতা 
শিবপ্রসাদ মণ্ডল
১৪/৮/২৩


ক্ষুদিরাম তুমি করে গেছ ভুল,কেন দিলে তব প্রাণ !
তোমার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার, আমরা রাখিনি মান।

প্রফুল্ল-ভগৎ তোমরাও বোকা,করেছিলে মহাভুল!
তোমাদের আশা ব্যর্থ করেছি,ফোটাতে পারিনি ফুল।

বিনয়-বাদল-দীনেশ তোমরা, ভুল করে গেছ বীর !
নিজেদের হাতে নিচে নামিয়েছি,তোমাদের উঁচু শির।

কানাই,সূর্য,চারু,বীরেন্দ্র--তোমাদের ত্যাগ যত,
ত্যাগের ভিতেই স্বার্থ গড়েছি,আমরা নিজের মতো।

মাতঙ্গিনী মাতা,করেছ যে ভুল,কার জন্য খেলে গুলি
তোমার ইচ্ছা পূর্ণ করিনি, তোমাকেই গেছি ভুলি।

নেতাজি সুভাষ,তোমার স্বপ্ন,ধ্বংস করেছি মোরা,
তব সব আশা--হত্যা করেই হয়েছি আত্মহারা।

তোমরা দিয়েছ স্বাধীনতারূপী,মহানন্দের দান,
মোরা যে পিশাচ নরপশুসম--রাখিনি যে কারো মান।

স্বাধীন ভারতে মোরা প্রায় সব, ডাকাত-লুটেরা-চোর,
ঠগবাজ আর চরিত্রহীন, আনতে পারিনি ভোর।

হিংসা,ঘৃণা ও অসৎ কর্মে--মোদের তুলনা নাই,
সম্পর্কটাই ভুলে গেছি মোরা,যত হই ভাই-ভাই।

বারেবারে তাই শুধু মনে হয়, ভুল করে গেছ সবে!
তবু আশা জাগে--এত বলিদান--সকলি ব্যর্থ হবে!!

একটাই পথ আছে শুধু খোলা, আবার জন্ম নাও,
সত্যিকারের স্বাধীনতা যেটি, সেটাই তোমরা দাও।

স্বদেশী পশুর রক্তে রাঙাও,মোদের ভারতভূমি,
এই আশা রেখে শতকোটি বার তোমাদের পদে নমি।

হে তেরঙ্গা মোর -- শান্তি পদ মাহান্তি


হে তেরঙ্গা মোর
শান্তি পদ মাহান্তী
০৬/০৮/২০২৩


লাখো শহীদ রক্তে রাঙা
হে তেরঙ্গা মোর,
উড়ছো দেখে উচ্ছ্বসিত
বক্ষে আবেশ ঘোর।

গর্ব জাতির সব অহংকার
এই ভারতের বল,
বীর সেনানীর শোনিত তুমি
মায়ের চোখের জল।

তোমার রঙে রাঙে ভারত
জেগে ওঠে দেশ,
ধর্ম জাতির ভেদ ছাড়িয়ে
ছড়িয়ে যায় রেশ।

ভারত মায়ের বার্তা বহো
শান্তি প্রেমের সুর,
মা যে আমার মিলন তীর্থ
কেউ থেকোনা দূর।

এসো হিন্দু শিখ মুসলিম
নাই বিভেদের লেশ,
ওই তেরঙ্গা ডাক দিয়েছে
ডাকছে তোমার দেশ।

ওই নিশানে ছিটায় কালি
কোন নরাধম আজ,
ভেদ অনলে ভারত জ্বেলে
কাড়ে মায়ের লাজ।

গর্জে ওঠো ভারত সন্তান
কন্ঠে পাড়ো হাঁক,
ভারত ভূমে ভেদ আনে যে
শত্রু নিপাত যাক

Saturday, August 12, 2023

ফিরে এসো কবি -- সাধনা ঘোষ

ফিরে এসো কবি
সাধনা ঘোষ
০৮—০৮—২৩


বাইশে শ্রাবণ
আকাশের মুখ ভার
তবু বৃষ্টি হয় নি সেদিন।
অসংখ্য কবি প্রেমীর অশ্রুধারায়
ভরদুপুরে ভিজেছিল শ্রাবণ।
বর্ষা ছিল কবির বড় প্রিয়।
কবির কবিতারা বাউল মনের ওড়না উড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতো।
আহ্লাদে আটখানা হয়ে কবিকে
জড়িয়ে থাকতো সারাদিন সারারাত।
২২ শ্রাবণ একেবারে অন্যরকম 
চির শান্তির ঘুমে ধ্যানমগ্ন কবি
স্তব্ধ কবির কলম
আর একটাও শব্দ কোনদিন উপহার পাবে না শ্রাবণ।
সেই অভিমানে মনের দুঃখ বুকে চেপে থমকে গিয়েছে মেঘ।
বৃষ্টি হয়েছিল সেদিন
অনেক ঘরের কোণে
অনেক বালিশ ভিজেছিল অশ্রুধারায়।
যে মেয়েটা ব্যর্থ প্রেমের ব্যথা ভুলতো বুকে চেপে কবির লেখা কবিতা-
তার দুচোখে নেমেছিল শ্রাবণ ধারা।
আবেগের বৃষ্টিতে ভিজে লিখেছিল একটার পর একটা চিঠি,
সেই চিঠিতে আঁকা ছিল ফিরে পাওয়ার আকুলতা,
ফিরে এসো কবি
ফিরে এসো 
ভুলিয়ে দাও সব ব্যথা।