কুমারী জননী
মঞ্জুরুল হক তারা
খোলা দরজার পর্দা ঠেলে
ঘরে ঢুকেই চমকে গেলাম
তুন্নির চোখে জল,
ঘরময় তপ্ত কোলাহল
গুপ্ত চোখে দেখলাম
হারিয়েছে ঠোঁট থেকে
বুকের সাহস বল।
ঘরের যত সব আসবাবপত্র যত্রতত্র এলোমেলো
কাপড়-চোপড় বিছানা চাদর সব অগোছালো।
তন্বীর লাল গাল আরো লাল
হাসি খুশী মুখের আড়াল
বুকের ব্যথা নরম আঙ্গুলে ছড়ায়,
তন্বী আমার দিকে চায়
কী বলতে গিয়ে থেমে যায়
লাল গালে উষ্ণ হাওয়ায়
বুকের ব্যথায় চোখের জল গড়ায়।
-
আমি তাকে প্রচ্ছন্ন আদর করে
বুকের কাছে নেই টেনে
সে তার আঙ্গুল ওষ্ঠাধরে চেপে ধরে
" চুপ -কোন কথা নাই
পুরুষের কোন গ্লানি নাই ভ্রূণের রক্ত পানে। "
অতপর সে -
যন্ত্রণার আঁধারে হেলান দিয়ে দেয়ালে
তার গুপ্ত বুকের সব কথা বলে খুলে।
ব্রহ্মপুত্রের পারে তোলপাড় করা
আগুন প্লাবনের ছন্দ,
স্বপ্ন গুলি তার ইচ্ছাহীন ঝরে পড়া
বিভ্রম করা দূরন্ত সাগরের গন্ধ।
সে দিন সন্ধ্যায় কাশবনের আড়ালে
নির্জন বালু চরে কেমন করে
বুকের আঁচল থেকে সহসা ঝরে পড়ে
স্বপ্ন, সাধ, সব গিয়েছে উড়ে।
-অস্পষ্ট স্বরে ব্যথা কাতরে বললে -
"পশুটা এসেছিল শিশুটির দায়িত্ব নেয়নি
স্পষ্ট বলে দিয়েছি -সম্পর্কের ইতি টানি,
আমার খোকা মায়ের পরিচয়েই বাঁচবে
পৃথিবীর আলো দেখবে হাসবে খেলবে
কবি, ওকে আমি নষ্ট করতে দেইনি।"
আমি তাকায়ে দেখি অদ্ভুত অপরূপ
শাড়ির আঁচলে হাসি খুশী
খেলা করে নিষ্পাপ শিশুর মুখ,
জল ভরা চোখ আশা ভরা বুক
দাঁড়ায়ে রয়েছে কুমারী মা জননী,
অমন মোহিনী হাস্য মুখ
স্নেহময় নারীর মাতৃত্ব রূপ
আকাশময় সুগন্ধ ছড়ায়
প্রেমময় স্নিগ্ধ ছায়ায়
সমাজ নিন্দার ভয় সে করেনি।
সাহসি মেয়ে প্রেম দিয়ে নতুন সমাজ গড়ে
স্বর্গের আলো নিয়ে গায়ে,
আমার গোপন অন্তর শ্রদ্ধা ভরে নূয়ে পড়ে
প্রেম প্রতারিত কুমারী মায়ের পায়ে।
No comments:
Post a Comment