বুনে গেলো আগামীর স্বপ্নীল বীজ
বিক্রমজিৎ মান্না
৬/৯/২৩
হোস্টেলের ঘরে ছেলেটা পড়ছিল চেয়ারে বসে
তখন গভীর রাত ।
দরজায় টোকার শব্দে খিল খুলেই স্তম্ভিত ।
মদের ঘ্রানেতে ভরা , রক্ত জবার চোখ
টলমল পায়ে ,জড়ানো কন্ঠ স্বরে
সম্মুখে দাঁড়িয়ে সিনিয়ার দাদা ।
সপাটে থাপ্পড় ,
এত রাতে আলো জ্বলছে কেন ?
ছেলেটা হতচকিয়ে যায় অসঙ্গত প্রশ্ণে ,
আর কষানো থাপ্পড়ে ।
কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে
সিগারেট ধোঁয়া ভরা মাদক কক্ষে ।
প্রশ্ণোত্তর পর্বে ফেলড হলে
চড়,ঘুষি,লাথি,সিগারেট ছ্যাঁকা
কিছুই থাকেনা বাকি।
কে বা বাঁচাবে তারে এ নরক থেকে !
যন্ত্রণায় ভেষে ওঠে মার মুখ খানা
যে মা তাঁর মুছায়েছে হাজারো কান্না।
উন্মত্ত শ্বাপদের নির্মম বাহু
ছাদ হতে ছুঁড়ে দেয় তাঁরে
কঠিন প্রস্তরে নির্বিকারে
খল - খল হাস্যের লহরীতে ভরে ।
কাকভোরে পুলিশ আসে ।
দখিনা হাওয়ায় খোলা বইয়ের পাতা গুলো
তখনও যে পত- পত উড়েই চলে ।
টেবিলের প্লেটের জলে
ভাষা যত বেলি আর গোলাপের পাপড়ি সুবাস
ঘরে ঢালে আমোদিত প্রাণ ।
বইয়ের পাশেই রয়ে যত্নে সাজানো
কোন ছেলেবেলায় তোলা
মায়ের হাতটি ধরে ছবিটার ল্যামিনেট কপি ।
এবং ---
বিবেকানন্দ - নিবেদিতার হিমালয় পথে
সে চিরায়ত স্মিত হাস্যের
বাঁধানো ছোট্ট ফ্রেম দেখে
পুলিশ ইন্সপেক্টরও ক্ষনিক থমকে দাঁড়ায় ।
ক্ষণিক থমকে দাঁড়ায় আসমুদ্র হিমাচল বিষ্ময় ভরে
চকিতে সংবাদ শিরোনাম শুনি ।
রাজনীতি বাদশারা লুফে নেয় নতুন ইস্যু ।
যদিওবা রানী আর সুশীল সমাজ
বেদনার সুরে ভাষি যায়না ছুটি
স্বপ্নদিপের মার বেদনার প্রলেপ হয়ে
ওদের গাঁয়ের পর ।
যে মায়ের চিরদিন অশ্রু ঝরাবে
হয়তোবা
স্কুল টুর্নাম্যান্টে
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের ট্রফি খানা ;
যা সোকেশে এখনো জ্বলজ্বল ।
হয়তো সিঁড়ির তলে আজও আছে পড়ে
ছেলেটার ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট, লাটাই
আর মাছ ধরার বড়শিটাও ।
যেখানে ছড়ানো তাঁর নির্মল,উচ্ছ্বল হাঁসি ।
যে টিফিন বক্সটা নিয়ে
বোনের সাথে নিত্য কলহ
তাও বোনের বুকে বেঁধা হুল হবে ।
আর , বাবার যে হাত ঘড়িটা
ছেলেবেলায় মেঝেতে ফেলে ভেঙেছিল
সে স্মৃতিও হয়তোবা
জ্বলিবে পিতার বুকে
রাবনের চিতা হয়ে এ জীবনভোর ।
তবুও যে আপনার জীবন দানে
প্রগতির পৃথিবীর চোক্ষু খুলি
হয়তোবা মুছে গেলো আগামীর শত মার
বুক চাপা জমাট পাষাণ ;
শিক্ষার মন্দিরে নগ্ন পশুত্বের তান্ডবে স্তব্ধ করি ।
বুনে গেল আগামীর স্বপ্নীল বীজ
শাণিত চেতনার শিক্ষাঙ্গনে
আসমুদ্র হিমাচল মনে
করুন নয়নে ।
No comments:
Post a Comment