Thursday, June 1, 2023

দাগ -- দেলোয়ার হোসেন বাবন

 দাগ
 দেলোয়ার হোসেন বাবন 
২৯-০৫-২০২৩ ইং
চর্যাপদের রক্তাক্ত পদচ্ছাপে পা রেখে 
এঁকে যাওয়া রক্তবীজ পোঁতা জমিনের
বিভীষিকাময় মরিচীকায় হেঁটে-হেঁটে দেখেছি 
বিকটতার বিষাদী ক্রন্দনের আর্তনাদ
ছাপচিত্রে আঁকা অসমাপ্ত কবিতার কাব্যনামায়। 

সামন্তিক জমিদার শাসকেরা করেছে শাসন 
অত্যাচারের পেষণে চালিয়েছে শোষণ  
পাঁজর ভাঙা শোষিত মানুষের উপর 
মজদুর, কৃষক,অনাহারীদের অধিকার 
কেড়ে নিয়েছে বৈষম্যবাদী শাসকেরা। 

তীর ধনুক শাণিত বর্শার ডগায় 
ধারালো ফলকের চোখানো মাথায় 
গেঁথেছে প্রতিবাদী সংগ্রামী মানুষের শরীর।
শরীরের হাড় করোটিতে লেপ্টে থাকা 
তৈলাক্ত চামড়ায় চালিয়েছে নির্যাতনের চাবুক। 

চাবুকের আঘাতে কশাঘাতে পিষে-পিষে
বের করেছে দ্রোহের বিপ্লবী রক্ত। 
জুলুমের শিকারে শোষিত মানুষেরা 
কারারুদ্ধ অন্ধকারে গুমরে কেঁদে-কেঁদে 
অকাতরে জীবন দিয়েছে বিসর্জন। 

বুকের পাঁজর ছিড়ে ফেড়ে 
রক্তের টগবগানো কলিজায় দিয়েছে আঁচড় 
জঠর যন্ত্রণায় কাতর হয়েছে মানুষ
ক্ষুধার তাড়নায় মরেছে অনাহারী।

মজলুম শোষিতেরা চিরদিন শোষিত হতে হতে
কষ্টের ঘানি টানতে-টানতে 
পার করেছে জীবনের দাগ পরা অনুবাদী অধ্যায়।

Thursday, May 25, 2023

গিন্নিপনা --মোফতাহিদা খানম রাখী

 গিন্নিপনা
মোফতাহিদা খানম রাখী 
২৩/০৫/২৩
এই গরমে দুপুর বেলায়
      সবাই বিভোর ভাত ঘুমে
আমি একাই জেগে থাকি 
     ঘুম থাকেনা দুই নয়নে। 

সবাই যখন ঢেঁকুর তুলে 
     আম চটকে খেয়ে দুধে ভাতে
আমি তখন ব্যাস্ত থাকি
     এটো কাটা তুলে ফেলতে। 

সবাই যখন সকাল বেলায় 
     মিষ্টি আলোর শোভা কুড়ায় 
আমি তখন তেতে নেয়ে 
     হেঁসেল ঠেলি রান্না করায়। 

সন্ধ্যা বেলায় সবার যখন 
     জল খাবারের জলসা বসে 
আমি তখন দৌড়ে বেড়াই 
     সবার ঘরে আলো জ্বেলে।

রাতে সবার সময় কাটে 
      লেখাপড়া ও আলাপনে 
আমি তখন কুটনা কুটি
      রাতের খাবার আয়োজনে। 

রান্না শেষে সবার যখন 
      খাওয়া দাওয়া সাঙ্গ হয় 
আমার তখন কল তলাতে 
      এঁটো বাসন মাজতে হয়। 

এমন করেই দিন কেটে যায় 
      ভাবনা গুলো হারিয়ে গেছে 
গিন্নিপনায় হাত পাকিয়েছি 
      দায়বদ্ধতার হাড়িকাঠে।

Tuesday, May 23, 2023

সাম্যের গান -- আফরোজা জেসমিন

 সাম্যের কবি
 আফরোজা জেসমিন
 ২২-০৫-২০২৩ ইং ।
দুঃখ তোমার গিটে গিটে ছিল বাঁধা।
দুঃখকে জয় করতে তোমার কতো না সাধন সাধা।
যে চাষির ক্ষেতে সোনার ফসল ছবির মতো লাগে ;
আজো চাষি জীবন কাটায় নুন লংকা মেগে।
আজো নারীরা কাটায়রে দিন অবহেলা অনাদরে,
সাম্যের গান গেয়ে ছিলে যে পুরুষ-নারীর তরে।
যে শিকল পড়ে করেছিলে ছল ইংরেজ কারাগারে, 
আজো সে শিকল বাঁধা অবস্থায় কতো জাতি কেঁদে মরে।
হিন্দু মুসলিম তখনো ছিলো ভাই ভাই ;
এখনো সে শ্লোগান চলে ,
কতটুকু ভালোবাসা কতটুকু ঘৃণা  ;
বুঝা যায় তলে তলে ।
কবর ফুঁড়ে বেরিয়ে দেখ সে যুগ এখনোতো হয়নি বাসি ;
অবহেলা অপমানে নারী দাসীরা এখনো নিচ্ছে ফাঁসি ।
তোমার সাম্যের পথ ধরে আজো কবিরা গেয়ে যায় গান ;
কোন এক যুগে নিশ্চয়ই হবে সমস্যার সমাধান ।
আজো রয়েছ সাম্যের কবি বিশ্বের অন্তরে ,
হৃদয়ের নোবেল তোমারেই জানাই ;
লহ সাম্যের কবি ; লও দু'টি হাত ভরে ।

Monday, May 22, 2023

মনচোরা -- মেঘ

মনচোরা
মেঘ
২১/০৫/২০২৩
বেহুলার ত্রিবেণী ঘাটে এখনো দুলছে পারাপারের তরী --
দক্ষিণা বাতাস কচি নিমপাতাদের শরীর ছুঁয়ে গা দুলিয়ে চলে যাচ্ছে বারোয়ারি পথে নাম না-জানা ঠিকানায় --
তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে উষর বালির উষ্ণতা বাড়ছে আনমনে --
পরিযায়ী দিনমজুরের মতো দিনের হিসাব চুকিয়ে সাঁঝের আলো মেখে ফিরে যাচ্ছে একদল বুনোহাঁস ।।

দুই পাড়ের আজানের সুর আর সন্ধ্যারতির শঙ্খধ্বনি মাখামাখি করছে মাঝনদীর চরাচরে --
মেঘেদের বাম গাল চুম্বন করে উঁকি মারছে বৈশাখী চাঁদের নয়নাভিরাম আলোলিকা --
খেয়াপারের শেষ নৌকাটাও যাত্রীদের সাথে খেয়াঘাটে ছেড়ে দিচ্ছে অন্তিম দীর্ঘশ্বাস --
তোমার ফিরে আসার আশায় কাকতাড়ুয়ার সাথে সারারাত নিদ্রাহীন চোখে বৃন্দাবনী অপেক্ষায় বসে থাকলাম নদীর বারান্দায়।।

ঘুমহীন নিশীথের শিশিরের নীরব পতনে মঞ্জুঘাসের ডগায় বসেছে হীরকের শুভ্র মজলিশ --
খেয়াপারের মাঝি ঘুম ঘুম চোখে যাত্রীদের সাথে নতুন প্রভাতে পাড়ি দেয় দূরের নতুনহাট --
একটি দাঁড়কাক কাকতাড়ুয়ার কালো মাথাতে শক্ত ঠোঁট ঠুকে ঠুকে বলে গেলো অব্যক্ত ব্যথা --
আরো একটা অপেক্ষার বিবর অপেক্ষা --
আরো একটা বিবর্ণ জীবনের গোপন দীক্ষা --
যদি ফিরে এসো --
তাহলে কাকতাড়ুয়ার কাছে জমা রেখে যেও তোমার নতুন ঠিকানা ।।

গনৎকার -- রেজাউল করিম বিশ্বাস

 গণৎকার 
 রেজাউল করিম বিশ্বাস 
         ২০  ০৫  ২০২৩
ও মাসি  পিসি  বৌদি !!!
আসুন আসুন আমি গণৎকার--
রোজ সকালে ঘুরি আপনাদের দোরে ।
আপনাদের সমস্যা দেব সমাধান করে নিমিষেই।
ঘুরিয়ে দেবো  ভাগ্যের চাকা।
সংসারের সমস্ত কোলাহল দিই মিটিয়ে এক কথায়!
অর্থ যশ খ্যাতি দেবো হাতে ধরিয়ে !
আমি যে গণৎকার ---
আমি দেখি না শুধু আমার ভাগ্যের রেখা !
আমি ক্লাসের পিছনের বেঞ্চের অবহেলিত ছাত্র !
ধরাই কারো হাতে খুশির নোটিশ যদি সে করে আমায় খুশি।
আমি আপনাদের লোক আপনাদের ভাগ্যের কথা লিখি আমার খাতায়।
বড় ভাগ্যবান কে খুঁজে বের করি, করি রাজা মন্ত্রী আরো কত কী! 
নত মস্তকে যদি সে দেয় কড়ি।
ওই বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিও ছুঁয়ে যায় পা।
আমি লজ্জাই মরি  হাসি নিরালায়।
আমি যে গণৎকার...!


আক্ষেপ আঁকে বারবার -- পরেশ চন্দ্র সরকার

আক্ষেপ_আঁকে_বারংবার
পরেশ_চন্দ্র_সরকার
১৯_০৫_২০২৩
আপাতত শিলনোড়ায় পেষণ হ'চ্ছে মেরুদণ্ড
প্রকাশ্যে গুরুগম্ভীর আঁকতে ব্যস্ত দণ্ডমুণ্ড,
মুচকি হাসিরও আজ আর দেখা নেই মুখে
পরের জন্যে নয়, নিজেরই ফেঁসে যাওয়া দুখে।

এদের বিশ্বাস ক'রার অর্থ 'মূর্খের স্বর্গে বাস'
কখন যে কেড়ে নেবে এরা মুখের গ্রাস!
বুঝতে দেবে না মুখোশের আড়ালে অভিনয়ে
ক'রেছ কি টুঁ শব্দ! বুঝিয়ে দেবে নয়ছয়ে।

বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো পেটে গামছা বেঁধে
কি হ'বে অভাবের দু'মুঠো রান্না রেঁধে?
তারচেয়ে বরং পদলেহন ক'রে পেটটি ভরাও
আশায় বেঁচে থাকো, সুরে সুরে সুর চড়াও।

তারপর আর 'পর' আসবে কিনা কে জানে
'বাতাস', অনায়াস খেলবে কিনা খাঁচাপানে!
যদি খেলে হয়তো মেরুদণ্ড খেলবে না আর
'সাধারণ', এভাবেই আক্ষেপ আঁকে বারংবার।

Friday, May 19, 2023

পাস্ট ইস পাস্ট -- হাসান ফরিদ

পাস্ট ইজ পাস্ট
হাসান ফরিদ
১৮/০৫/২৩
এইতো এখানেই সেই স্মৃতিপট।
ঝাঁপি খুললেই জেগে ওঠে মঠ।
এই ঝাউ শাখাতেই--ভুরভুরে গন্ধটা তার চুলের। আর ছন্দটা নূপুরের। 
ঘুলঘুলি জানালায়। অবেলায় জলরং ছড়ায়।
ঝাপসা ভুড়ভুড়ি ভাঙে। যমজ জলজ অঙ্গে।

সেদিনের আটসাট পোশাক ঢিলেঢালা। দৃষ্টি আকাশের জানালা গালা।
প্রতীক্ষিত লাঞ্চের পরের কথাবার্তা বেশ ছোটখাটো। কৃত্রিম  আড়ষ্ট ঠোঁট বেশ সংযত।
বেশ ফিটফাট। রোবটিক্স শর্টকাট। পেশাধারী মনোভাব ততটা। সিগারেট ছাই আর এসট্রে নিকটে যতটা।

জীবনের মানেটা। মনের রংটা। পাংশুটে আজ। সম্পকে'র সুতি কাপড়ে পড়ে গেছে টানাপড়েন ভাঁজ। 

টুংটাং চিয়ার্স। লাল নীল কালারফুল গ্লাস।
নাউ এন্ড জাস্ট। পাস্ট ইজ পাস্ট।

Thursday, May 18, 2023

ক্ষতস্থানে প্রলেপ --দিলীপ ঘোষ

ক্ষতস্থানে প্রলেপ
দিলীপ ঘোষ
১৭/০৫/২৩
ক্যানভাসে আঁকা পুরানো ছুরির ধারে
খুন হয় সব আকর্ষণ।
জিজ্ঞাসার সুতীক্ষ্ণ বর্শাফলফ
চোখের সামনে শিরদাঁড়া সোজা করে
দাঁড়ায় তখন,
ভবঘুরে আশ্রমের দরজা ঠেলে বার্ধক্যের হাহাকার
হয়ে ওঠে মহাজন।
নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের ফুটো থালা হাতে
ফুটপাতে, শ্রবণে ভাসে মন।

ক্ষত থেকে রক্ত ঝরে সময়ের নদীতে
জীবন জড়িয়ে ধরে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুম্বন করে
ফিরে পেতে চায় নিজের স্থান।

এলোমেলো কালবৈশাখী ঝড়ের মধ্যেও
বৃষ্টির আদুরে জল লাগায় চোখে মুখে
ঠিক করে নেয় আশ্রয়, অবস্থান
জীবন ফিরে পেতে চায় জীবন।

ক্ষতস্থানে যে দেয় প্রশয়ী প্রলেপ
সেই তো আপনজন
স্বাভাবিক সম্পর্কের বাইরে
অলিখিত আদুরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তখন।

সংস্কার চাই -- বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য

 সংস্কার চাই
 বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য
 ১৬/০৫/২০২৩
প্রবল একটা ঝড় উঠুক,
তছনছ করে দিক চারপাশ ; 
আপন কর্মে লিপ্ত হবে সব ,
রাজনীতির হোক সর্বনাশ।

থামুক মিথ্যা হিংসা ও দ্বেষ ,
দেখা দিক ফের মানবতা;
প্রতিহিংসার জ্বালিয়ে আগুন 
নিত্য ধ্বংস হচ্ছে সভ্যতা।

ভাইয়ের হাতে ভাইয়ের মৃত্যু ,
ভগিনীর লজ্জা হরণ;
নেশার ঘোরে বাদশা সেজে
ঠগ জোচ্চোরে করছে বরণ ।

প্রবল একটা জোয়ার আসুক 
অশান্ত এক প্রবল জোয়ার,
বিধৌত হোক সব কলুষতা,
উগ্র উদ্ধত মাথা নোয়াবার।

জানি, ঝড়ে- জলে- জোয়ারে
অনেকের ক্ষয়ক্ষতি হবে প্রচুর ;
জীর্ণ পুরাতনকে করতে সংস্কার-
গড়তে হলে,- ভাঙতে হবে ভরপুর।

সব শেষে আসুক  শীতল সতেজ 
জীবনদায়ী এক অনাবিল বাতাস;
সমস্ত আঁধার ঘুচে আসুক নতুন প্রভাত
জীবনের আনন্দে খুশি হোক আকাশ।

Tuesday, May 16, 2023

নারী হতে সাবধান -- মৃনাল কান্তি রায়


নারী হতে সাবধান
মৃণাল কান্তি রায় 
অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে ঘূর্ণি। পাড়াময় ঘুরে বেড়ালোই যার কাজ।এ গাছে সে গাছে চড়া আর ফলগাছের ফল পাড়া যার নিত্য দিনের কাজ। এ ছাড়াও বর্শী নিয়ে এ পুকুর ও দীঘি আর এ খাল সে খালে মাছ ধরা- যাও তার সখ তালিকায়। কখন যে সে তরুনী থেকে যুবতী হয়েছে তা সে নিজেও বুঝতে পারেনি। মায়ের শত বকা- ঝকাকে উপেক্ষা করে সে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায়। এজন্য গ্রামের সবাই তাকে নাম দিয়েছে ঘূর্ণি। উঠতি বয়সি ছেলে ছোকরারা তার ঐশরিয়ার মত রূপ দেখে প্রেমে পাগলপারা হয়ে ভাব জমানোর জন্য কাছে ঘেঁষতে চায় কিন্তু ঘূর্ণি কাউকেই পাত্তা দেয় না একদম। কেবল সে ছেলে ছোকরাদের মধ্যে স্বর্ণকে মন থেকে পছন্দ করে।পছন্দ করার কারণ হোলো স্বর্ণ দেখতে ঠিক সোনার রঙের গৌড় বর্ণীয়। পছন্দ করার অপর কারণ হোলো স্বর্ণের একটি মাত্র স্লোগান 'নারী হইতে সাবধান' নয়তো কেড়ে নেবে জান'। 
একদিন স্বর্ণ গ্রামের এক পুকুরে সাঁতার কাটছে। বেশি গরম পড়েছে ঠিক তাই। সেই পথ ধরে ধেই ধেই করে যাচ্ছিল ঘূর্ণি। সে দেখতে পেল পুকুরে সাঁতার কাটছে স্বর্ণ যাকে সে মন থেকে পছন্দ করে কিন্তু স্বর্ণ পাত্তা দেয়না তাকে। সে এও জানে নারী বিশেষ করে যুবতী নারী তার চোখের শুল।কারণ তার এই ধারণা যে সব স্লিম ছেলেরা কোন যুবতী নারীকে বিয়ে করে পরবর্তীতে তারাই স্লিমত্ব হারায়। আর সে কারণেই ঘূর্ণির বদ্ধমূল ধারণা স্বর্ণ ছাড়া সাত গ্রামে আর ভাল ছেলে নেই। তার মানে স্বর্ণ নিখাদ ছেলে এবং সে শুধু তার সাথেই ভাব করবে এবং জীবনসঙ্গী করে চিরকাল নিখাদ জনকে পাশে রাখবে। পুকুরে সে স্বর্ণকে একের পর এক আড়াল থেকে ঢিল ছুঁড়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছে-ই! স্বর্ণের চারপাশে বৃষ্টির মত ঢিল পড়ছে আর এতে করে স্বর্ণ প্রথমে ভাবছে বৃষ্টি হচ্ছে- যার জল পুকুর থেকে ছিটকে তার গায়ে পড়ছে। তার এ ভাবা যে ভুল তা সে নিমিষেই বুঝতে পারল।কারণ সে দেখতে পেয়েছে ঘূর্ণির ঢিল ছোঁড়ার দৃশ্য। এ জন্য সে পুকুর থেকেই বলে উঠল," নারী থেকে সাবধান। নারী জ্বালাময়ী ভীষণ যন্ত্রণা আর পীড়াদায়ক। ভাইসব কেউ কোন নারীর ধারে কাছেও ঘেঁষবেন না।ঘেষলেই স্লিমত্ব আর ধরে রাখতে পারবেন না ইত্যাদি ইত্যাদি! " সে যতই এমন সব কথা বলছে আর যে জন্য বলছে ফল দাঁড়াচ্ছে ঠিক উল্টোটা। একক প্রেমের প্রেম নদী কানায় কানায় যেন পূর্ণ হচ্ছে।কারণ ভাল মেয়েরা কখনো তাদের মনের জনের বাইরে আর কাউকেই সহ্য করতে পারেনা। এদিক থেকে স্বর্ণই যে পারফেক্ট হবে এ ঘূর্ণি বুঝে নিয়েছে। তাই বলছে," সজনেটায় একবার ফিরেও তাকাচ্ছে না! " গাছপালাকে উদ্দেশ্য করে বলছে," তোমরাই বল,আমি কি দেখতে কম সুন্দর নাকি। তোমরা যদি প্রকৃতি হও তবে আমিওতো প্রকৃতি,তাইনা? " গাছপালা যেন সায় দিয়ে বলে চলছে," ঘূর্ণি!  তুমি পিছু ছেড়োনা। একদিন না একদিন তুমি মনের মানুষকে পাশে পাবে।নিরাশ হয়োনা কেমন?" এরপর ঘূর্ণি বলছে," আমার নামও ঘূর্ণি!  ঘূর্ণির মত ঘুরাব যদ্দিন আমার কথায় সায় না পাব। দেখি কে তাতে বাগড়া দিতে আসে। তাকে ঠিকই আমি দেখে নেব। " এই শুনে স্বর্ণ বলছে," যা যা যেদিকে যাবি সেদিকে যা! আমার পিছু লাগা কেন হ্যা!" এবারে ঘূর্ণি বলছে," কেন যে ঘুরঘুর করছি তা বুঝতে হোলে আলাদা একটা মন থাকা চাই-যা তোর নেই! আর মেয়েদের কথা বলছিস? আরে আমি কি আর পাঁচটা মেয়ের মত এই ভাবিস।না রে না আমি তেমন মেয়ে নইরে!  আরে কার কাছে কি বলছি! তোরতো আবার স্লোগান নারী হইতে সাবধান! তা তুই নারীর মর্ম কি বুঝবি রে বুদ্দু!  একবার মেনেই নে দেখবি অনেক মজা অনেক আনন্দ!" এই শুনে স্বর্ণ বলছে," ওওও এই কথা!  আমার স্লিমত্ব নষ্ট হোক এই তুই চাস। আরে তুই কি করে বন্ধু হবি,তুইতো দেখছি পাক্কা শত্রু! " এবারে ঘূর্ণি তার ওড়নার একধার দুলিয়ে দুলিয়ে চলে যাচ্ছে আর বলছে," টাটকা আছিরে বুদ্দু! তুই ছাড়া এ মনে আর কারোর স্থান নাই! তোকে আমার চাই-ই চাই! আজ চলে যাচ্ছি তবে পিছু ছাড়ছি না। "ঘূর্ণি স্বর্ণের চোখের অদৃশ্য হোলে স্বর্ণ পুকুর থেকে উঠে তার বাড়ি চলে গেল। 
এর কিছুদিন পরে একটি মাটির কলসি কাঁখে নিয়ে কোমড় দুলিয়ে দুলিয়ে ঘূর্ণি যাচ্ছে ওই দূরে পদ্ম পাতার দীঘিতে জল নিয়ে আসতে। সে ঘাট থেকে জল ভরে বাড়ির দিকে ফিরছিল।হঠাৎ সে দেখতে পেল বিপরীত দিক থেকে আসছে তার পছন্দের স্বর্ণ। এবারে সে ভান ধরল। মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে আর কলসির জল মাটি ভিজিয়ে দিয়েছে। তার মাঝে বেহুশ অবস্থায় ঘূর্ণি!  এবারে প্রথমত অতস্তত করে বলছে," মানুষের উপকার করা মানুষের ধর্ম কিন্তু আমার স্লোগান নারী হইতে সাবধান তার কি হবে। এত করে ডাকছি,সারা দিচ্ছেনা। কেউ যদি দেখে ফেলে তখন কি হবে। পাছে যদি মরে গিয়ে থাকে তবে তো জ্যান্ত না মৃত ঘূর্ণি আমায় জেলের ভাত খাওয়াবে।আর জেলখানায় শুনেছি পঁচা আর বাশি খাবার খেতে হয়! বিবেক! আমি এখন কী করতে পারি?" বিবেক ধমকিয়ে উঠে বলল," তুই এখনো কোলে তুলে নিসনি! আরে তুই কী পুরুষ?  এত্তসব আজেবাজে চিন্তা করে চলেছিস। নে শিগ্গির কোলে তুলে নে! ঘূর্ণিকে ওর বাড়িতে সসম্মানে পৌঁছে দিয়ে আয়!" এবারে স্বর্ণ বলছে," আরে যাচ্ছি যাচ্ছি মারী হইতে সাবধান আর বিপদে পড়লে উপকারী হয়ে সমাধান!" এই বলে স্বর্ণ ঘূর্ণিকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে ঘূর্ণিদের বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে হঠাৎ ঘূর্ণি একলাফে নিচে নেমে বলছে," কি! কিছু মজা পেলে? আমিতো বেশ পেলুম!" এবারে স্বর্ণ রাগে কটমট করে বলল," হতচ্ছাড়ি পাজি কোথা কার!  ফের তুই মরে গেলেও তোর কাছে ঘেষব না! আমার স্লিমত্ব নষ্ট করে দিতে চাস! তুই মানুষ না।আস্ত একটা জন্তু জানোয়ার! আমার এখন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আর উনি দাঁত বের করে হাহা হিহি করছে! " এবারে ঘূর্ণি নিজের দু'কান নিজেই মলে মলে বলছে," রাগ করিসনা।আর এমনটি কখখনো হবেনা রে! তুই মন খারাপ করিসনা!" এই বলে ঘূর্ণি তাদের বাড়িতে আর স্বর্ণ তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। 

এর কিছুদিন বাদে ঘূর্ণি আবার পদ্মপাতার দীঘিতে জল আনতে গেল। মায়ের বকুনি খেয়ে তার জল আনতে যাওয়া কিন্তু তার শরীরটা এদিন একদম ভালো যাচ্ছিল না। তাই জল নিয়ে ফেরার পথে কাঁখের কলসি কাঁখ থেকে রাস্তার মাঝে পড়ে গিয়ে ভেঙে গেল এবং কলসি ভাঙার ওপরে ঘূর্ণি ঘুল্লা খেয়ে পড়ে গেল।আর তাতে করে মাথাটা কিঞ্চিৎ কেটে গেল! রক্ত কপালে টিপের ন্যায় জমাট বেঁধে আছে। পুরোপুরি অচৈতন্য সে। এদিনও স্বর্ণ একই পথে আসছিল এবং ঘূর্ণিকে ওইভাবে পড়ে থাকতে দেখে বলল," ফের ভেলকি! আবার লাল টিপ দিয়েছে কপালে! কি সখ রে বাপু! আজ কি আর ভুল করি! পড়ে থাক আজন্মকাল তাও আমি তোকে স্পর্শ করছি না। নারী হইতে সাবধান!" এই বলে স্বর্ণ হন হন করে সেখান থেকে চলে গেল।এবারে ওই পথেই এক বুড়ো ভদ্রলোক আর তার ছেলে- যে কিনা ঘূর্ণিকে পছন্দ করে কিন্তু ঘূর্ণি যাকে পাত্তা দেয় না তারা ঘূর্ণিকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে তড়িৎ তাকে তুলে নিয়ে নিকটস্থ একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেল। ক্লিনিক কর্মকর্তা ঘূর্ণির মাথায় ব্যাণ্ডেজ করে দিয়ে বললেন," চিন্তার কোন কারণ নেই।এক সপ্তাহের মধ্যেই ঘূর্ণি ভালো হয়ে উঠবে।" ভদ্রলোক ঘূর্ণিকে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিলেন। 
এর ক'দিন পরে স্বর্ণি পাশের একটি টিস্টলে বসে দুধ ছাড়া রঙ চা পান করছিল।এমন সময় দোকানীর কাছে জানতে পেল ঘূর্ণির মাথা কেটে গেছে।কেউ একজন তাকে চিকিৎসা করিয়ে তার বাড়ি তাকে পৌঁছে দিয়ে এসেছে।এই শুনে স্বর্ণের মনে ভাবনার উদ্রেক হোলো। সে ভাবলো মস্ত বড় অন্যায় সে করেছে।পীড়িতকে সেবাদান মানবধর্মে পড়ে- যা সে না করে পুরোপুরি পীড়িতকে ইগনোর করে গেছে- যাতে করে তার পাপ হয়েছে। তাই সে দ্রুত ঘূর্ণির বাড়ির দিকে ছুটতে ছুটতে একসময় পৌঁছে গেল গন্তব্যে। গিয়ে দেখল চঞ্চলা ঘূর্ণি আনমনা হয়ে বসে আছে।এবারে স্বর্ণ ঘূর্ণির হাতদুটো আপন ক্রোড়ে নিয়ে বলল," ঘূর্ণি!  তুই আমাকে মাফ করে দে।আমি মস্ত একটা অপরাধ করেছি।ভেবেছিলাম তুইতো ভেলকি ধরিস আমাকে দেখলেই। তাই ভাবছিলাম তুই ভেলকি ধরেছিস। আমাকে মাফ করে দে। " এই শুনে ঘূর্ণি বলছে," তার আগে বল, হাত কি আমি তোর ধরেছি না তুও যেচে আমার হাত ধরেছিস। তোকে আমি মাফ করতে পারি যদি তুই আমার মন ধরতে পারিস নয়তো এ কসুরের কোন মাফ আমার অভিধানে জানা নাই।" এই শুনে স্বর্ণ বলছে," হাত যখন ধরতে পেরেছি তখন তোর মনও ঠিক ধরতে পারব। তবুও অর্জিত পাপ খণ্ডাতে চাই। " এই শুনে ঘূর্ণি বলল," তবেতো কথাই নাই তুই পাপ মুক্ত হলি। এবারে তোর স্লোগান পাল্টাবি এক পুরুষ এক নারী মিলেমিশে সংসার গড়ি!" এরুপর? ----------! থাকনা কিছুটা আকাঙ্ক্ষা। 

Monday, May 15, 2023

উত্তর দাও -- দিলীপ ঘোষ

উত্তর দাও
দিলীপ ঘোষ
১৪/০৫/২৩
নিখিলেশ, কবিতাকে পাওয়া সহজ নয়
মিছিমিছি করো ছোটাছুটি
ভোঁতা মনের কলম নিয়ে
অহেতুক করো হুড়োহুড়ি।

খাতার পাতায় কবিতা আনতে
শব্দের সাথে ছন্দ লাগে
বিশেষ্য বিশেষণ সঠিকভাবে লাগলে
কবিতার মন প্রাণ মেলে,
এ সব ছাড়া ঝোলা ব্যাগ নিয়ে ঘোর
অহেতুক কড়া নাড়ো, ভিক্ষা করো।

কবিতাকে একতরফা ভালোবাসো তুমি
কবিতা কি ভালোবাসে তোমাকে
এ জিজ্ঞাসা কুরেকুরে খাবে , পদে পদে
উত্তর পাবে, পদ্ম পাতায় রাখা জলে।

Sunday, May 14, 2023

শ্রমিক বিহীন , কর্মহীন জগৎ -- মহিদুর জামান


শ্রমিক বিহীন, কর্মহীন জগৎ 
 মহিদুর জামান 
 ১২/০৫/২৩ ইং

তোমাদের শ্রমে, মরুর বুকে শহর 
পাহাড় সমান ভবন। 
তোমরাই গড়ছো - ঝলমলে  অট্টালিকা 
বাসযোগ্য এ ভুবন । 

মেহনত করো দেশ ও দশের 
সকাল-  সন্ধ্যা বেলা। 
 শ্রমিক বিহীন, কর্মহীন  জগৎ 
যেন চাবি ছাড়া, এক তালা।

টপটপ করে, ঝরছে ঘাম 
চলছে কাজ অবিরত। 
সুযোগ পেয়ে,  ফাঁকি না দিয়ে
কাজ থেকে তুমি হওনি  বিরত। 

সামান্য মজুরি, বাসি পচা খাবার 
তোমার জন্য করে অপেক্ষা। 
দূরে সরে যাও, দুর্গন্ধ শরীর 
সকলে করে  উপেক্ষা।

ন্যায্য  মজুরি, যোগ্য সম্মান 
সময়ের এখন দাবী। 
ভেদাভেদ নয়, সকলে সমান 
শ্রমিক-  মালিক সবি। 

তোমাদের নিয়েই,  আমরা বাঁচি 
রবে না বৈষম্য - ভেদাভেদ। 
শ্রমিক - মালিক  ভাই ভাই 
ঘুচে যাক,  সব মতভেদ।।


Friday, May 12, 2023

ভালোবাসি অরণ্যরে -- বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য

ভালোবাসি অরণ্যরে
বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য
১১/০৫/২০২৩..
চোখ মেলে বিস্ফারিত নেত্রে সতত আমি
করি অবলোকন, করি উপভোগ, অরণ্য শোভা
অপরূপ, অনির্বচনীয়, দৃষ্টিনন্দন, দারুণ নান্দনিক
এমন দৃশ্যকাব্য যে সত্যি সত্যিই বড়ই মনোলোভা !
সবুজের আস্তরণে শ্যামলিমার আস্তরণে মোড়া
বনবিথী, বন বনানী, বিস্তৃত অরণ্যানী যে সদাই
সতত আমার দৃষ্টিরে করে আচ্ছন্ন,  আপ্লুত
যেন আমি ভীষণভাবে অরণ্যের ভরে পড়ে যাই !
এক লহমায় কেড়ে লয় সমুদয় মন প্রাণ
হয়ে পড়ি দারুণ ভাবে আমি যে আবিষ্ট
তরুকুলেরে জানাই ধন্যবাদ আমি বারে বারে
তাদের অবদানে, গুণপনায় হই কৃতজ্ঞ, তন্নিষ্ট।
স্মরণে, মননে, সদা থাকে জাগরুক
বৃক্ষের দারুণ অবদান অপরিশোধ্য ঋণ
বৃক্ষ বিহীন অন্তঃসারশুন্য এ নাগরিক জীবন
হয়ে পড়বে এক নিমেষে একেবারেই শ্রীহীন দীন।
অরণ্যের সংরক্ষণের তরে করতে হবে বৃক্ষ রোপণ
যত পারি লাগাতে হবে গাছ, বাঁচাবো প্রাণ
বন্ধ করা দরকার বৃক্ষের কর্তন, ছেদন, বিলক্ষণ 
দরকার যথোপযুক্ত সার্বিক বনায়ন সবুজায়ন।
নইলে করবো আমরা অজান্তে ধ্বংসের বীজ বপন
প্রাণ ধরে রাখা প্রাণীদের পক্ষে হবে সংশয়
বায়ুতে ভরবে দূষণ, কমে যাবে ভীষণভাবে অক্সিজেন
কথাগুলো রাখতে হবে ধ্যানে, করতে হবে যথার্থ প্রনিধান।

Thursday, May 11, 2023

মেঘের বাড়ি -- প্রদীপ কুমার বর

মেঘের বাড়ি
প্রদীপ কুমার বর
১০/০৫/২০২৩
রবির চরণে জানিয়ে প্রণতি
উত্তপ্ত মন-মেঘ ডানা মেলে উড়ে যায়,
যেথায় রাশি রাশি শুভ্র পাখা
উন্মুক্ত ছন্দে প্রেমের রসায়নে মত্ত।
পূর্বাশায় দেখা স্বপ্নের সন্দেশ আজ দিয়েছে
ঘর বাঁধার হাতছানি। হৃদয়ের বাণী--
না শোনে কারণ,ধর্মের বারণ,স্মরণীয় অণুক্ষণ
 ব্যথিত বেদন ভোলাতে ভীষণ সচেষ্ট।

কমল-আঁখির শাখা পল্লব মৃদু মলয়ে
ঈশারা হানে দখিন দুয়ার পানে 
আনে অবিরাম সচকিত অভিরাম
পুলকে পুলকে পুলকিত শিহরণ।
মধু মক্ষিকা প্রতীক্ষার প্রহর শেষে হেসে
হেসে বলে যায় কথা- অযথা বিলম্ব সহে না।
সাক্ষী সাবুদ কোটি অর্বুদ তালে তালে
ওঠে জ্বলে,দূর নীলিমার প্রান্ত রেখায় দেখায় 
রঙের ঝিলিক।চিত্ত মাধুরী অধরা মুর্তি 
প্রত্যাখ্যান করে গড়ে তোলে ভুবন মোহিনী 
মায়া-বাতায়ন। পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে মনোনিকেতন।

একান্তে কিছু কথা,কিছু অব্যক্ত অনুভূতির
আর্ত পিপাসা মেটায় দু'তরফে মিলনের অভীপ্সা।
জন্ম নেয় শীতল বরফের ছোট্ট ছোট্ট টুকরো,
ছল চাতুরী ,ভেঙেছে আড়ি, গড়লো বাড়ি 
রূপ মহলের ফুলবনে। পাঁচ জনে পাঁচ কথা
যে বলেনি তা হবার নয়।ভয়ের আবহে
তবু নক্ষত্রের তেজোদীপ্ত বাক্যবাণ--
সম্মুখ সমরে প্রতিভাত নয়।

রাগ-অনুরাগ আনন্দ বেদনার মাঝে
আশার জোনাকি নবরূপে সজ্জিত হয় 
শরতের শুভ সন্ধ্যায়।নব যৌবন যেন--
অপত্যের কামনায় বৃষ্টি ঝরায় প্রকৃতির
সবুজ পটে।রটনায় আপত্তি রয় না কদাচ,
ভূমিজ বার্তা সংস্থা রসিয়ে কষিয়ে 
রূপ দেন অন্য এক জিলিপির প্যাঁচ।
তবু মেঘ জমে,তবু বৃষ্টি ভেজায়,তবু
আশার প্রদীপ জ্বালায় প্রদীপের প্রদীপে।

Wednesday, May 10, 2023

এই জনমেই চাই -- কনক লতা মন্ডল

 এই জনমেই চাই 
 কনক লতা মন্ডল 
 ০৯/০৫/২০২৩ খ্রিঃ
তোমার বয়স যখন আশি ছুঁই ছুঁই এসো আবার আমার কাছে,
প্রেমের পানসী সাজিয়ে তোমায় নিয়ে ভেসে যাবো প্রেমের জোয়ারে। 
তোমার আর কোন পিছুটান থাকবে না,
থাকবে না কোন জাত পাতের বালাই ------ 
কেউ বাধা দেওয়ার মতো দুনিয়ায় থাকবে না তোমার, 
কেউ বলবে তোমাকে যাস নে তার কাছে, তাহার কাছে! 
বয়সের ভারে ন্যুব্জ দেহ মাটির ঘ্রাণ নিতে চায়, 
অনুভূতির আবডালে ভালোবাসার শতরঞ্জি পেতে আলো জ্বেলে পথ দেখায়।
চামড়ার ভাজে ভাজে অভিনবত্ব প্রেমের পশমি
রেখে হাত বাড়াও তোমার, 
মৃত্যু আগ পর্যন্ত তোমার আমার বসবাস। 
হয়তো সহবাস নাইবা হলো, 
কুচকানো বুকের মাঝে মাথা গুজে কাটিয়ে দেব বাকি জীবনটা।
মরিবার আগে পাবো তোমায় আপন করে, 
পর জনমে নয় এই জনমেই এসো তুমি আমার কাছে। 
বাকীর খাতায় শূন্য পড়ে রয়,
প্রেমটা হবে মাখো-মাখো। 
গভীরতা পরিমাপের জুয়াচুরি মিথ্যা মায়ায় জড়িয়ে নয়,
প্রেম হবে সত্যি আশি বছরের গিরিখাত প্রথম যৌবনের বানের জলের মতো। 
শুধু সীমাহীন অভিপ্রায়, 
জীবনের শুরুতে নাই বা তোমায় পেলাম 
ভরা বর্ষায় যৌবন টলমলে স্বপ্ন পিয়াস। 
হবো মোরা হংস-মিথুন হাজার বছর পাড়ি দেবো প্রেম সাগর, 
উথাল পাথাল ঢেউ তোলে পাড় ভেঙে চলে যায় ------ 
আমিও, আমিও পেরেছি অজস্র মনের বারান্দায় সোনা রোদ্দুর ধরতে।
মনে মনে শুধু ভেবেছি তোমার অবয়ব, চলন-বলন 
রঙিলা বাও লাগুক প্রাণে ঢেউ খেলে যায় হৃদয় দ্বারে।
মন- মন্দিরে আলোর নাচন নিত্য পুরাণ চলে, 
জাতি ধর্ম বাদ সেধেছে বারংবার। 
এখন শুধু প্রেম আর প্রেম, 
প্রেমের মাতম সর্বঅঙ্গে কাছে পাবার আকাঙ্খা 
হরষিত হৃদয়। 
তোমার হাতে রেখে হাত দুজনের বৃদ্ধ বয়সে ঋদ্ধ হবো,
বেধে দেবো চিরুনী আল দিয়ে তোমার মাথার সাদা পাকা চুল। 
খুনসুটিতে কেটে যাবে রোমান্টিক সময় পার,
ভাজ পড়া কপালে চুম্বন একে ঘুম পড়াবো। 
তবুও তুমি হাতটা বাড়াও ধরে রাখি বুকের গভীরে।
জমবে প্রেম আমৃত্যু বসবাস,
আমার হবে বাঁচার ইচ্ছে, হবে সর্বনাশ

Monday, May 8, 2023

জরা গ্রস্ত পৃথিবী -- শ্রী স্বপন কুমার দাস

 জরাগ্রস্থ পৃথিবী
 শ্রী স্বপন কুমার দাস 
 ০৭/০৫/২০২৩
নিঃশ্বাস প্রশ্বাস স্তব্ধ আজকে 
দূষিত বায়ু আকাশে বাতাসে,
জরাগ্রস্থ পৃথিবী ধ্বংসের পথে 
আর দেরি নেই ঐ ধেয়ে আসে।
বারুদের গন্ধ ঘ্রাণের ইন্দ্রিয়ে 
আকাশে বাতাসে স্থলেতে ভাসে,
অম্লজান কমে ধরণী ভূতলে
অবচেতন মন পরিহাসে।
সবুজ অবুঝের কান্ডটা দেখে 
নীরব দর্শক ধরণী কক্ষে,
নদী নালা সকল শুকনো মুখে 
ভূগর্ভস্থ জলে মিলতে থাকে।
বৃক্ষ ছেদন নিয়মিত ই চলে 
মানব মনে বিকার নাই রে,
জরাগ্রস্থ পৃথিবী নির্বাক চোখে 
দেখে স্তম্ভিত শমন শিখরে।
অবচেতন মনে চেতনা ফিরে
আসবে কবে মানুষ মননে,
তারই চিন্তায় বিধাতা বিধিরে 
জিজ্ঞ্যাসে উপায় প্রতিটি ক্ষণে।
=======================

Sunday, May 7, 2023

বর্ণহীন গন্ধহীন-- রামকৃষ্ণ বিশ্বাস

 বর্ণহীন গন্ধহীন
 রামকৃষ্ণ বিশ্বাস
 ০৬/০৫/২৩
**************************
 মেঘলা মনের আকাশে
সমুদ্রের আলফার মত, সাজানো তরঙ্গ সব,
যেন বিষাক্ত কালোমেঘ আছড়ে পড়ছে
তীর ভাঙা তটিকায়  আমার!
শেষ হয়না,একটি যায়, একটি আসে।
কেন আসে এমন মেঘ!কেন ভাঙে অবশিষ্ট
হৃদপিঞ্জিরার অন্তিম অস্থিটুকু?

শুরু করি শেষ করব বলে,
আমার শেষের তর সয়না... ..!
বিধ্বংশী বাণ ছুটে আসে বক্ষে।
মরণ খেলার মাঝে সাদা মেঘের ঢেউ 
নেচে উঠেই হারিয়ে যায় ধূময়িত আশার মত...।

কমলিনী  গো....তোমার 
সৃষ্টি কখন, আর মৃত্যুই বা কখন...
কে জানে..!
পাখির খসেপড়া পালকের খোঁজে
কোনো পাখি কি ফিরে আসে...?
নবারুন আলোকে নতুন পালকের আশে
খুশির মহড়া প্রকাশ....যুগান্তরে।
আমার শুধু ব্যাতিক্রমী অতীত , 
ভঙ্গিলশৃঙ্গন্যায় বেদনা নিত্য ভীর করে আছে,
সঙ্গে অট্টহাসি.. ঈশানী প্রান্তের কালোমেঘের মত।
তোমায় মনে করার সময় কোথা ইন্দুনিভা...!
উতপ্ত লু..হৃদয়-লহুর স্রোত শুকিয়ে দিয়েছে,
তোমায় মনে করব কিভাবে প্রেয়সী!

তবে তৈরী থেকো  জীবনের অন্তীম কালে,
শেষটুকু যদি শেষ হয় ফুটপাতের ধারে।
সেদিন না হয় প্রকাশিও, হৃদয় খুলে মনের কথা
কতুটুকুন জায়গাছিল, হৃদয়ের ঘরে আমার, তোমার জন্য..!
কতটা বাসতে ভালো, জানিয়ে দিও হিসেব করে।

বাদলের মাদল বাজে সুখীমনের কোনে,
মনময়ূরী নেচে উঠেছে ছন্দ লহরীতে ..।
আমি হুতাশি পৃথিবীর কোণে
যে অংশটি তার দহনে পোড়া...!

যে বনে আর কুশুমিত হবে না মনোকুশুম
যে নদীতে আর বইবে না স্রোতধারা,
সেথা গোলাপের বাগিচা সৃজন কি হয়! 
শুকনো ফুলের সুবাসের গল্পে,
মরা নদীর পানির মিষ্টতা, শীতলতার গল্পে
কজনেই বা অবসর ক্ষোয়ায়?

আমি তেমনি এক অপরিনত সৃজন..
যে তার লুপ্ত বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে জীবনে।
আমি এমনি এক মৃতপ্রায়  নদী, 
যে তার ফেনিত পানির দাগ 
বুকে চেপে বসে আছে, অধীর প্রতীক্ষায়..!
আমি এমনি এক বসন্ত..
যেথা শুধু পাতাঝরার খসখসানিতে
বিনিদ্র জাগায় হাজার হাজার নিশি।
হেথা ফুলকুড়ি সংকোচ করে
কিশলয়ের অবগুণ্ঠিত প্রস্ফুটনে!

ধূলোর নাগর আমি, 
পথ-সবুজের অবশেষের সাথে 
কঠিন প্রেমে মত্ত হয়ে,ধূলোর সাথে মিশেছি।
তোমার চোখের কিচকিচে বালি আমি,তাই..
ধুলোয় খাই গড়াগড়ি।
লজ্জ্বা করে না আমার কক্ষনো;
করলেও তাতে,
কার কি  আসে... আর যায়..!
*******************************************

Saturday, May 6, 2023

বৃত্তায়িত জীবনের বাইরে --প্রিয রহমান আতাউর

 বৃত্তায়িত জীবনের বাইরে
 প্রিয রহমান আতাউর
 ৩০/০৪/২০২৩
আমি যখন কোন শ্মশান কিংবা জঙ্গলের
মধ্য দিয়ে হাঁটি, অন্নদা দিদিকে মনে পড়ে
এই খররৌদ্র বৈশাখেও মনে রাখি শেষ প্রশ্নের কমল আর ঐ আশুবাবুকে, যে শকটে চড়েও বার বার তাড়া দেয়- ' বাসদেও চালাও!'
পুতুল নাচের ইতিকথার কুসুম, যোগাযোগের কুমু
আর বঙ্কিমের রোহিণী - কখনো ভুলতে পারিনা।
ছেলেবলার ফেলে আসা মেঘামোহন ঋষির সেই-
কলকেফুল গাছটি আমাকে আহত করে!
স্কুলে পড়ার সময়কার  হার্টথ্রোব দীপালি দি, কোথায় আছে জানিনা ; তাকেও মনে পড়ে। 
আমি এখনো ভালোবাসি দেবদাসের সেই গরুর গাড়িটা- যেটায় চড়ে সে অন্তিমযাত্রায় গিয়েছিলো
হাতিপোতায়, পার্বতীর খোঁজে। 
আমি ভুলিনি হাসান আজিজুল হক;
আত্মজা ও একটি করবি গাছের কেশো বুড়ো, সমাজের ক্ষয়ে যাওয়া বিষবৃক্ষের প্রতিচ্ছবি আমি কি ভুলতে পারি?
ভুলতে পারিনা ম্যাক্সিম গোর্কি, ইভান তুর্গেনিভ- প্রগতি প্রকাশনের বইগুলো। 
'The Old Man and The Sea' র সান্টিয়াগো'র 
সংগ্রামী জীবন আমাকে উজ্জীবিত করে
ঠিক সেভাবেই মনে রাখি টলস্টয়ের দুই বুড়োকেও।
কথোপকথনের শুভঙ্কর ও নন্দিনী চিরকাল আইডল
আমার কাছে -
এখনো যখন দূর গাঁয়ের ছবি দেখি -
আচমকা শিহরিত হই- ওই বুঝি নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম
যেখানে হরিহর ও সর্বজয়ার বাস!
রেললাইন আর কাশবন পেরিয়ে অপু দুর্গারা হেঁটে যায়- 
বড় অগোছালো আমার রিডিং টেবিল - যেখানে স্টেইস, ফলকেনবার্গ কিংবা ইমানুয়েল কান্টের 'অ্যা ক্রিটিক অব পিওর রিজন' আমাকে ডুবিয়ে রাখে: কখনো বা তাকিয়ে দেখি নিজের লেখা সর্বশেষ প্রকাশিত বই - বড্ড ভালো লাগে আমার! 
আমি ভুলতে পারিনে সাঁওতাল গ্রামের 
ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়ে অনিতা হেমব্রমকেও।
কখনো রাতে দু:স্বপ্নে ভেসে আসে আরব্য রজনীর
বাগদাদ নগরী - বাদশা হারুনর রশীদ, মশরুর :
কখনো বা বেগম জোবায়দার মায়াবি মুখখানি-
ক্রিতদাস তাতারী আর মেহেরজানের হাসি।
ফিলিস্তিন শিশুদের ঝাঁঝরা বুক 
আমাকে দগ্ধ করে তিলে তিলে 
অথচ মাসজিদুল আকসা তাদের আজন্ম অধিকার! 
আমি এখনো দেখিনি সেই সুন্দর সুপুরুষ - আব্দুর রহমান সুদাইস - যার কণ্ঠে শুনি মহাগ্রন্থের অমিয় বাণী-
ডক্টর ফস্টাস আমি নই - নেই কোন অলৌকিক জ্ঞান,
কিংবা লজিকো ফিলোসোফিকাস:
ভালো জ্ঞান নেই - হেকায়েতে সাহাবায়!
একাকিত্বে নির্বাসিত একজন আমি, বাবা আর মায়ের  কবরের মত -
আফসোস, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল পবিত্র খানায়ে ক্বাবা, মদিনা মনোয়ারা- জান্নাতুল বাকী-এখনো বাকিই রয়ে গেলো আমার কাছে। 
আমার আর যাওয়া হলোনা কোথাও 
এই বৃত্তায়িত জীবনের বাইরে। 
-----------------------------------
সঞ্চয়ন

পরিবর্তন...? মৃণাল কান্তি রায়


পরিবর্তন -----?
মৃণাল কান্তি রায় 

আশা? সেত মরীচিকা যা কভু হবার নয়,
সুযোগবাদ কায়েম করা যা হিংসার পরিচয়। 

পাপ পথে ক্রমে টানে পুণ্যের দরজায় তালা,
মানুষের মাঝে দেখ হিংসা- জিঘাংসার ভেলা। 

একই রক্ত একই মাংস একই মজ্জায় তৈরি, 
নর- নারী কুলে দেখ কেবল বেদনাতে বৈরি।

ভুঁড়ি যত গেছে বেড়ে ভুঁড়ি যে আরো বাড়ে,
বেদনার যে  অশ্রু ভাগ  গায়ে গায়েই  নাড়ে। 

তাইরে নাইরে না পদ্ধতি কি সুজন কি দুর্জন,
কলির প্রতাপ ঘোরে কে কারে করছে বর্জন। 

সবাই বলে, " পরিবর্তন আসবে নাকি ধরায়,
সাম্যবাদের হবে লোক সম্প্রীতি থাকবে কথায়!"

এ ভাবা যে ভুল ভাবা ভুলে ভুলেই যে সন্ধ্যা,
প্রসূতিরা যে ভুলের চাকায় বলে তাই গন্ধা! 

কাগজে কাগজে ছয়লাব যত কুল নারী,
বাড়ছে শুধুই বাড়ছে যত কুলের বাড়ি। 

কত যে কৌশল চালু এ জন্ম কাজ ধরে,
কি শহর কি গ্রাম নগর দেখ গেছে ভরে। 

মানুষ নামের মানুষ পাওয়া খুবই যে দুষ্কর,
সুকর্ম কুকর্মের মাঝে জরাজীর্ণ অন্তর! 

স্বার্থ ভাব লাগাম ছাড়া কত্ত কি টানাটানি,
দেশজুড়ে একই ভাব চলছে কি হিংসে খানি।

অর্থের কু- প্রভাবে কেনা মানুষের যে মাথা,
মুখে বলে," সবাই ভাল গায়ে গায়ে কাঁদা! "

ওই ওরা যারা তারা না জানি আমরা,
বংশগতির টানাহেঁচড়া জেনে নাও তোমরা! 

যারা না কিছুই জানে তারাই নাকি জানে,
কি কাল এল রে ভাব নিজ নিজ জ্ঞানে। 

এই কী হে পরিবর্তন?  এই কী হে সুখ? 
প্রশ্ন ভাসে মনের মাঝে কেন তবে দুখ? 

জেলায় জেলায় বাসে বাসে কত্ত চালে ঘেরা,
জন্ম কম্ম পেশা ভিত্তিক কুলে কুলেই বেড়া! 

টাকার হিসেব- নিকেশ আয়ন আর বায়ন,
কত্ত ভাবে কত্ত কাজে কত্ত কৌশল যাপন। 

কৌশলের কি বলি হারি গণহারে রচা,
একে অন্যের দোষাদোষি ওরাই যে পঁচা। 

আসলে যে পঁচা কারা বলার উপায় নাই,
কানে তালা মুখে তালা শুধুই দেখে যাই। 

তপোবনে বিভক্তির চাপ কত্ত কত্ত ভাবে,
মীমাংসার জাদুমন্ত্র সীল- স্বাক্ষর প্রভাবে। 

অধুনার যত্ত বসতগুলো দেখ আজ ভোগে,
নাম পাতানো কাজ দাপানো বংশগতি রোগে। 

একবিংশে শুরু হওয়া যেই নীতির মহরা,
শিষ্টের দমন দুষ্টের পালন সনাক্তের কি তাড়া! 

পরিবর্তন আনতে হোলে মনের পরিবর্তন চাই,
নয়তো অরণ্যে রোদন বসুমতী! দেখে যাও তাই! 

কপিরাইটঃসংরক্ষিত 
নাম ও প্রকৃত আইডি থেকে প্রচারিত

Friday, May 5, 2023

বন্ধন মুক্তি -- রানু বর্মন

-বন্ধন মুক্তি 
-রাণু বর্মণ
-৪/০৫/২৩
 তুমি কি কেবল হারিয়ে যাওয়া ছবি? 
      হঠাৎ করে কেন আসো
        প্রভাত আলোয় রবি।
 মনের নীড়ে কেন করো ভীড়
          গ্ৰহ তারার মাঝে ,
        নওতো তুমি চিরসত্য
           হৃদয় বিনা বাজে।

 চঞ্চলতায় অস্থির তুমি 
     পথিকের  নাও সঙ্গ—
কেন তুমি আসো দ্বিধা দ্বন্দ্বে
      করো মৌনতা ভঙ্গ।

 বৈশাখের ওই আভরণ খুলে
     ধুলোমাখা পথে ধাও,
 জ্যৈষ্ঠের জলে মিলেমিশে কত
         সঙ্গিনীকে পাও।
  
 আমার চলার পথে তুমি
     বাড়াও কেন হাত ,
জীবনের মূলে বাঁসা বেঁধে 
     কাটাও  নগ্ন রাত!
 মুদিত চোক্ষে নিখিল বক্ষে 
   তপস্বী গৈরিকে বেশে,
সহস্র ধারায় ছুটে চলো 
   জীবনের বেলা শেষে।

  তৃণমাখা ঐ ধুলি পথে 
আমি সবার আড়ালে থাকি 
  অন্তর গুহায় অন্তঃপুরে
    যন্ত্রণার শেল ঢাকি ।

চলে যাও তুমি পথ হতে সরে 
    অজানা দেশের তীরে ,
শূন্যতা ভরা নৌকাখানি
     এগিয়ে যাবে ধীরে ।
কিছুটা পথ থামবে চলবে 
   আবার এগিয়ে যাবে 
স্মৃতি অলক্ষ্যে হারিয়ে যাবে 
    বন্ধন মুক্তি পাবে।।

সেই বটগাছ -- নিবারণ চন্দ্র দাস

  সেই বটগাছ
 নিবারণ চন্দ্র দাস

শহর জুড়ে কান্না হাহাকার আর মৃত্যু।শবদেহ পথে পড়ে ,শেয়াল শকুনের ও দেখা নেই।শংকর আর সিক্তা,একজন ডাক্তার আর একজন নার্স।আজ একমাস হতে চলল,হাসপাতালেই ওদের বাড়িঘর।ছেলে মেয়ে দুজনেরই মোটামুটি ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
      মেয়ে সম্ভাবনা এখনও কোন কাজ জোটাতে পারে নি।জামাই শিক্ষকতা করে।তারও আবার কাজ নিয়ে টানাটানি চলছে।নিয়োগ দূর্নীতির জালে অন্য কয়েক লক্ষ কর্মচারীর মতো তারও ভবিষ্যৎ ঝুলছে অদৃশ্য সুতোয়।বছর চারেকের ছেলেকে নিয়ে বড়ো দুশ্চিন্তায় কাটছে প্রহর।
   ছেলে সপ্তক ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে দেশের নামকরা এক কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজম্যান্টে।চেষ্টা করছে সরকারি কাজের।
       সারা পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে এই শহরেও চলছে শ্বাস সংকট।একটু প্রাণবায়ুর খোঁজে হাসপাতাল থেকে মুদিখানা সর্বত্র একটু প্রাণবায়ুর জন্য সব লাইন।সবার মুখে বিশেষ মুখোস,পিঠে বাঁধা অক্সিজেন সিলিন্ডার।কে কতক্ষণ বাঁচবে সে ভাবনা ছাড়িয়ে অক্সিজেন নিয়েও চলছে ফাটকা, কালোবাজারি,নীরব সরকার,জনগণ কে কাকে টপকে নিজের ও পরিবারের প্রাণ বাঁচাবে সেই আশায় মত্ত।
     শংকরের হাসপাতাল যে এলাকায়, পাশাপাশি ওরা থাকে দশতলার এক ফ্ল্যাটে।বছর পঁচিশ আগে যখন তারা এখানে আসে, কত গাছগাছালি ছিল এখানে।এখন সব ধূধূ মরুপ্রায়। সবুজের চিহ্ন নেই।শংকর সিক্তা একসময় সবুজায়নের জন্য নিজেদের উপার্জিত অর্থে চারাগাছ বিলি করেছে এলাকায়।গাছ কাটার বিরোধিতা করে সরকারি দপ্তরে দপ্তরে ধর্ণা দিয়েছে, পরিণামে সাধারণ মানুষের সাথে সাথে সরকারি কর্তা ও রাজনৈতিক দাদা-দিদিদের বিরাগভাজন হয়েছে।
    শহরটা যেন কেমন হয়ে গেছে,কেউ কারও মুখ দেখতে পায় না,খাবারও খেতে হচ্ছে নলের মধ্যে দিয়ে। হঠাৎ সেদিন হাসপাতাল থেকে নির্দেশ এল,কিছুটা দূরেই এক রাজনৈতিক কেউ কেটার বাড়িতে সকলের জীবন সংকট, হাসপাতালের মূল অক্সিজেন লাইন এক্সেটেনশন করে তার বাড়িতে কানেকশন দিতে হবে। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই কাজ করতে গিয়ে অবাক হয়ে শংকর দেখল একটি বাড়ির মানুষজন মাস্ক ছাড়াই বাড়ির বারান্দায় বসে চা জলখাবারে ব্যস্ত। জরাজীর্ণ বাড়িটার দেওয়াল ফাটিয়ে এক বিশাল বটবৃক্ষ স্ব-মহিমায় বিরাজমান।শংকরের মনে পড়ে গেল বছর দশেক আগের এক মামলার কথা।পৌরসভা ঐ বাড়িতে গজিয়ে ওঠা বটগাছটি কেটে ফেলতে চাইলে ঘটনা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত।উচ্চতর আদালত যুগান্তকারী রায় দিয়েছিলেন ঐ গাছটা রাখার জন্য,যা আজ শুধু মণ্ডল পরিবার নয় পাশাপাশি দু'তিনটে বাড়ির মানুষদের যোগান দিচ্ছে প্রাণবায়ু।পাখ পাখালিতে ভরে আছে গাছটা,আর বাড়ির সামনে ফুটপাতে কয়েকশো মানুষ মাস্ক খুলে ক্ষণিক জিরিয়ে নিচ্ছে।
                           :::-:::

মহান মে দিবস -- গৌতম পাল

 মহান মে দিবস
 গৌতম পাল
 ০৩/০৫/২০২৩
আঠারশো ছিয়াশি ,আমেরিকার শিকাগো শহর,
হে মার্কেটের শ্রমিকদের অবস্থান-বিক্ষোভ,
পুলিশ আর শ্রমিকের খণ্ডযুদ্ধে রক্তাক্ত হে মার্কেট,
মুহূর্তে ঝরে যায় অনেক তাজা প্রাণ!
আট ঘন্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকদের অবস্থানে
সশস্ত্র পুলিশ মালিক শ্রেণীর প্ররোচনায়
নিরস্ত্র শ্রমিকদের উপর চালায় নির্বিচারে গুলি,
শহীদের রক্তে লাল শিকাগোর হে মার্কেট,
অকাতরে হয় কত নিরীহ প্রাণের বলি!
দুনিয়ার জনগণ নৃশংস ঘটনার করে তীব্র প্রতিবাদ,
বিশ্বজুড়ে এই ঘটনার শুরু হয় ধিক্কার!
দুনিয়া জুড়ে আন্দোলন হয় তীব্র থেকে তীব্রতর,
আট ঘণ্টা কাজের চায় নিশ্চিত অধিকার। 

আন্তর্জাতিক কংগ্রেসের প্রথম সম্মেলনে
শিকাগো গণহত্যার প্রতিবাদে
দুনিয়া জুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলনের ওঠে প্রস্তাব, 
আন্তর্জাতিক কংগ্রেসের দ্বিতীয় সম্মেলন
বিক্ষোভ আন্দোলন পালনের করে সম্মতি দান।
এরমধ্যেই আঠারশো চুরানব্বইয়ে ঘটে
দুর্ভাগ্যজনক মে দিবসের দাঙ্গা,
সারা পৃথিবী একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়!
উনিশশো চার সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টার্ডামে
গৃহীত হয় এক ঐতিহাসিক বার্তা,
প্রতিটি বছর ১লা মে তারিখ সারা দুনিয়া ব্যাপী
পালন করা হবে আটঘন্টা কাজের দাবিতে
বিক্ষোভ সমাবেশ এবং শোভাযাত্রা।

শুরু হয় ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস পালন,
দেশে দেশে ঐতিহাসিক মে দিবস উদযাপন,
বিশ্বে শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার হয় সুপ্রতিষ্ঠিত,
আট ঘণ্টা কাজের দাবি বিশ্ব হয়ে স্বীকৃত!
আজ গোটা বিশ্ব গর্বের সাথে পালিত হয় মে দিবস,
গর্বের সাথে দেই স্লোগান, মে দিবস জিন্দাবাদ!
বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে দিনটিকে উদযাপন করে,
শ্রমিকদের জানাই কুর্নিশ, জানাই সেলাম!
বিশ্বের আশিটি দেশেই ১লা মে এক জাতীয় দিবস,
ঐতিহাসিক মহান মে দিবস আমাদের গর্ব,
এই সুন্দর পৃথিবীটা শ্রমজীবী মানুষের নিঃস্বার্থ দান,
কখনো ভুলন্ঠিত হয় না যেন তাদের সম্মান,
তাদের অধিকার যেন কোনোদিন না হয় খর্ব।
তারাই যে আমাদের সকলের অহংকার এবং গর্ব!
**********************************************

Wednesday, May 3, 2023

জ্ঞান পিপাসা -- রঞ্জন ঘোষ

 জ্ঞান পিপাসা
 রঞ্জন ঘোষ
 ০২/০৫/২৩
তোমার কাছে ছোট হতে নেই তো কোন লাজ
শিখতে আসা তোমার কাছে এটাই আমার কাজ,
ছোট-বড় যাই হোক না কেন লজ্জা কিসের বলো,
জ্ঞানের পিপাসা থাকলে মনে সামনে এগিয়ে চলো।

যতদিন বাঁচবো আমি শিক্ষা নিয়ে যাবো
আমাকে যে শিক্ষা দেবে তার কাছেই যাবো,
জ্ঞানের সাগর তীরে বসে গুনছি শুধু নুড়ি,
যেটুকু জ্ঞান নিতে পারি সেটাই ঝোলায় পুরি।

জ্ঞানের কোন সীমা নেই, শেষ কোন নেই তার,
জ্ঞান পিপাসা মেটাতে এসে পিপাসা মেটে না আর,
যত জানছি খুশিমনে আমি তাকে নিচ্ছি বরণ করে,
প্রার্থনা মোর জীবনে যেন তাকে রাখতে পারি ধরে।

আমার এই কান্ড দেখে যদি জ্বলে যায় কারো গাত্র,
বলবো তাদের বন্ধু রাগ করোনা সবার আমি ছাত্র,
জানতে চাওয়া তো অন্যায় নয় এই কথা কি মানো,
জ্ঞানের ঘাটতি আছে আমার সেই কথাটি জানো?

আমরা যদি ভাগ করে নেই অনেক এমন কথা,
দোষ কি বলো হবে তাতে পাবেনা কেউ ব্যথা,
শিক্ষা তোমায় করবে ধনী মনকে করবে উদার,
সেই শিক্ষার সংকীর্ণতা ভুলে জ্ঞান করবে প্রসার

Tuesday, May 2, 2023

শ্রম দিবস -- মোঃ শিবলী নোমান



                   "শ্রম দিবস"
                মোঃ শিবলী নোমান 
                    ০১/০৫/২০২৩
                  
সেদিন শিকাগোর রাজপথে 
    শ্রমিকদের তাজা রক্তের বিনিময়ে। 
তারা এনেছিল বিজয় 
     তাদের অধিকার ছিনিয়ে।  

যুগ যুগ ধরে সেই 
   শোষিত মানুষের কথা। 
তাদের আর্তনাদ ও চিৎকার 
   কেউ বোঝে না তাদের ব্যথা।

এখনো শোষিত শ্রেণী দিচ্ছে না 
      শ্রমিকের অধিকার। 
যারা বঞ্চিত করে শ্রমিকদের 
       তাদেরকে জানাই ধিক্কার। 

অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে 
      সভ্য সাম্য সমাজ গড়ো।
দেশ গড়ার হাতিয়ার 
      শ্রমিকদের অবদান তুলে ধরো।

শ্রমিকদের পাওনা ও ন্যায্য 
      অধিকার ফিরিয়ে দেই। 
সুন্দর একটি দেশ গড়ায় 
      শ্রমিকদের কোন তুলনা নেই।

Monday, May 1, 2023

দৃষ্টিকোন -- অনন্ত মণ্ডল

 দৃষ্টিকোন 

অনন্ত মণ্ডল

৩০/০৪/২০২৩



কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে দেখা হয়েছিল --

সূর্যের রক্তিম আভা নদীর জলে ব্যস্ত আলিঙ্গনে।

দিকভ্রান্ত পথিকের মতো অজানা গন্তব্যে পাড়ি,

শূন্যপানে চেয়ে থাকা মোহনীয় অপলক দৃষ্টি,

এক রঙিন আবেশে ভরে তুলেছিল তনু-মন ।

শুষ্ক মরুতটে যেন সহস্র বারিধারার চুম্বন!

প্রতিক্ষণে শিহরণে কেঁপে উঠেছিল পিঞ্জর,

প্রকৃতি ও স্তব্ধ হয়েছিল তোমার আলিঙ্গনে।

শূন্য থেকে দৃষ্টিবাণ ফিরে এসে বিঁধেছিল হিয়া,

তুমি নির্বিকার!সে অদ্ভুত দৃশ্যে প্রকৃতির উচ্ছ্বাস

বিমোহিত করেছিল আমার জীবনের সকল পূর্ণতা।

সবুজাভ প্রজ্জ্বলিত জ্যোতি তব আলিঙ্গনে বিদ্ধ

ভাদ্রের রোদে পোড়া বুকে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়!

তুমি হারিয়ে গেলে! সকল আনন্দের হল অবসান।

চলমান শব্দেরা একদিন ভাষা হারায় বহমান স্রোতে--

কান্না হয়ে অবিরাম মনের মধ্যে করে খুনসুটি ।

তোমার উচ্চারিত সুমধুর বানী নদীর চরে ঘুমায় !

অমানিশায় উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়ানো জোনাকিরা

ঢাকতে পারে কী কভু চাঁদের মিষ্টি জোছনা ?

সত্য মরে না , মারা হয় -- দিলীপ ঘোষ

 সত্য মরে না, মারা হয়

দিলীপ ঘোষ

২৯/০৩/২৩



শব্দহীন শব্দের সরব ধ্বনি লিখে

কলম দিয়ে ছুরির আঘাত

ফিনিক দিয়ে বের হচ্ছে রক্ত

সবুজ পাতা ঝরে পড়ছে

কত আশা ভরসা বিপন্ন বিষন্ন উপত্যকা।


অন্ধকার গলিপথে ন্যাড়া মাথায়

ন্যায়, বুক দিয়ে হেঁটে যায়

নিঃস্ব হয় কলমের খোঁচায়

কারা যেন নর্দমায় ফেলে দেয়

সভ্যতার বিভৎস রূপ স্পষ্ট হয়।


পরিস্কার পোষাক প'রে

খুন করে

খুনি পর্দার আড়ালে, থেকে যায়

খুন হয়, - সত্য, ন্যায়।

সত্যসন্ধানীরা মাশুল দেয়।

Saturday, April 29, 2023

বই হোক পরম বন্ধু -- গৌতম পাল

 বই হোক পরম বন্ধু
 গৌতম পাল
 ২৮/০৪/২০২৩
*****************************************
ধুলোর প্রলেপ জমেছে লাইব্রেরীর বইগুলিতে,
ধুলোর স্তূপ জমেছে বইয়ের আলমারিতে,
বই গুলো কেঁদে কেঁদে ডাকে বারে বারে,
একটু ভালোবাসা দাও, আদরে হাতে তুলে নাও।
কর্মব্যস্ত দিন, ঘুম থেকে উঠেই ছুটি কাজে,
ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে ফিরি পড়ন্ত বিকেলে,
নেই কোনো অবসর, কখন তুলে নেব বই হাতে?
আজ বিশ্ব পুস্তক দিবসে, বসে পড়ার টেবিলে,
খুব মনে পড়ছে শৈশবের সেইসব রঙিন দিন,
বাবার হাতে পেয়েছিলাম প্রথম বই, বর্ণপরিচয়,
অনাবিল আনন্দে সেদিন হয়েছিলাম লীন!
বইকে ভালোবাসার সেই হয়েছিল শুভ সূচনা,
আজও নতুন বইয়ের গন্ধে মাতাল হয় মন,
শিহরণ জাগে মনের গভীরে অনুক্ষণ।
বইকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন বাবা,
পন্ডিত বিদ্যাসাগর মানুষ গড়ার নিয়ে শপথ,
তৈরি করে দিয়েছিলেন সাফল্যের পথ।
রবি ঠাকুর তুলে দিয়েছিলেন সাহিত্যের ডালি
আমাদের পূর্ণ হয়েছে সকল মনোরথ।
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম মন্ত্রে
আজও শিহরণ জাগে শিরা উপশিরায়, 
বন্দে মাতরম ধ্বনিতে জাগে আসমুদ্র হিমাচল,
তাঁর দীক্ষা আজও হয়নি অচল।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস গুলি
কতবার পড়েছি নেই তার কোনো হিসেব,
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পড়ে নানা উপন্যাস
অমলিন আনন্দ পেয়েছি, আজও আছে তার রেশ!
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, কবি জসীমউদ্দীন থেকে
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বাংলা ভাষার কারিগর,
তাঁদের সৌজন্যেই বাংলার বেড়েছে সৌরভ,
বাঙালি আজ তাই করতে পারে গৌরব!
পন্ডিত বিদ্যাসাগর আপামর বাঙালির শিক্ষাগুরু,
তাঁর হাতেই বাংলা ভাষার হয় হাতে খড়ি,
শৈশবের আমাদের সকলের শিক্ষার হয় শুরু।
সহজ পাঠের মাধ্যমে কবিগুরু প্রাঞ্জল ভাষায়
দিয়েছেন আমাদের জীবনের অমূল্য সকল শিক্ষা,
তাঁর হাত ধরেই পেয়েছি সাফল্য, জীবনের দীক্ষা!
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম 
আজীবন গেয়েছেন সাম্য আর মৈত্রীর গান,
বাঙালি রক্ত দিয়ে বুঝেছে বাংলা ভাষার নাড়ির টান।
সুখে দুখে বিপদে বই আমাদের বাঁচার প্রেরণা,
বই অমূল্য সম্পদ, বই জাগায় আমাদের চেতনা!
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে আমরা হয়ে গেছি দিশেহারা,
ভুলেছি বইয়ের কথা, আজ তাই হয়েছি সৃষ্টি ছাড়া!
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বইয়ের প্রতি অবহেলা
মন থেকে কিছুতেই পারি না মানতে,
বিজ্ঞানের অগ্রগতি দিয়েছে অনেক কিছুই
দিয়েছে সুযোগ আজ সবকিছুই জানতে।
আধুনিক সভ্যতায় এসে ভ্রাম্যমান দূরভাষ যন্ত্র,
রকমারি মুঠোফোন এসেছে হাতে,
বই থেকে ক্রমেই মোরা যাচ্ছি দূরে সড়ে,
মুঠো ফোনকে নিয়েছি হাতের অলংকার করে।
মুঠোফোনের দৌলতে কমেছে বই পড়ার অভ্যাস,
কমে গেছে আমাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ,
আজ বিশ্ব পুস্তক দিবেসে করি আবেদন অবিরত
বইয়ের প্রতি প্রেম যেন হয় ফের জাগ্রত!
কাজের চাপে বই পড়ার অভ্যেস কমলেও
জানি একটুও কমেনি বইয়ের প্রতি ভালোবাসা,
বই যে আমাদের চিরদিনের সাথী,
আজও তৃপ্ত করে আমাদের মনের সকল আশা।
আজও বই না পড়লে অপরিসীম দুঃখ পাই, 
ঘরে ফিরে তোমাকে না পেলে পড়ার টেবিলে
মনে হয় আজ কি যেন করা হয় নাই।
ঘটা করে বইমেলার হয় আয়োজন গ্রাম শহর নগরে,
বইয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চলেছে প্রয়াস,
তবুও বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ার নেই যে আভাস!
তোমার সাথে কাটানো পুরোনো মধুর দিনগুলি
আজও স্মৃতিতে ভেসে আসে প্রতিটি ক্ষণে,
জীবনে যতটুকু পেয়েছি সাফল্য আর সম্মান,
আজও ডুবে আছি তোমার সেই ঋণে!
বইয়ের বিকল্প নেই বিশ্ব সংসারে, বই যে অনন্য,
গুণীজন ভবে বই পড়েই করেছেন জীবন ধন্য।
আজ বিশ্ব বই দিবসে শুধু এইটুকু প্রার্থনা মনে,
বই হোক পরম বন্ধু জীবনের প্রতিটি ক্ষণে!
*********************************************

Friday, April 28, 2023

স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন -- বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য

 স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন
 বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য
 ২৭/০৪/২০২৩
নীরব রাতে অবচেতনে
নিষ্ফলা স্বপ্ন দেখেছি অনেক,
সারবত্তাহীন সেই স্বপ্নগুলো 
দেখেছি কেবলমাত্র আমি একা একা;
সবগুলো মনেও নেই, থাকার কথাও নয়,
এতদিন এই স্বপ্নগুলো ছিল--
 আমার অগ্রগতির একমাত্র বাধা।

এবার থেকে আর বেঘোরে স্বপ্ন দেখব না আমি,
মনের বাগানে নিয়ন্ত্রণ করব স্বপ্নের চাষ;
বাস্তবের চেনা গন্ডিতে-ই আঁকব স্বপ্নের নীলছবি...
দুঃস্বপ্নেও হতে চাই না কোনও নেতা, মন্ত্রী,
হতে চাই না স্বপ্নের ফেরিওয়ালা -যারা নিষ্ঠুর ভাবে
 চুরি করে শৈশব, কৈশোরের স্বপ্ন-রঙিন দিনগুলো;
লটারিতে জিতে রাতারাতি হতে চাই না কোটিপতি,
টাকা দিয়েও কিনতে চাই না জীবন জীবিকা।

শুষ্ক বিবৃতি বক্তৃতা শুনতে বইবো না দলীয় পতাকা,
জাতীয় পতাকার উপর আনুগত্য রবে অটুট,
সত্য,ন্যায়,শ্রম,কলম,ও নীরব প্রতিবাদ হবে অস্ত্র,
সততার স্বচ্ছ তুলিতে রাঙাবো ভাগ্যের ক্যানভাস;
প্রাপ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য
প্রাপ্তি কে কখনোই করব না অস্বীকার ;
অতীতের কাছে শিক্ষা নিয়ে
বর্তমানের রুক্ষ জমিতে করব ভবিষ্যৎ রচনা।

বাস্তবের আতস কাঁচে চিনতে চেষ্টা করব
অসুস্থ পৃথিবী, অশান্ত পরিবেশ, দুস্থ আপনজন,
মায়া, প্রহেলিকা জড়িত মোহিনীর মোহে
হব না বিভ্রান্ত, সমালোচনার তীর্যক বৃশ্চিক দংশন
 আসবে জেনেও পান করব না হতাশার বিষ;

ইতিবাচক বিচারবোধের অঙ্ক কষেই আবিষ্কার করব আধুনিক স্বপ্নের রোজনামচা,
স্বপ্ন দেখতে শেখাব আগামী প্রজন্মের শিশুকে,
স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করব আজকের কিশোর কে,

ডেকে ডেকে দিতে চাই নতুন মন্ত্রণা,
উত্তিষ্ঠ! জাগ্রত!
 বলতে বলতে সগর্বে করব ঘোষণা 
বোধনের মন্ত্র,
আর ডেকে ডেকে বলব সবার কানে কানে ---
নিজেরা জেগে ওঠ,
মনের মধ্যে লালিত স্বপ্ন গুলো সাজিয়ে রাখো ,
অবচেতন মনে স্বপ্ন দেখে সময় নষ্ট না করে --
স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন তৈরি কর,  
সময় থাকতে সচেতন হও-!-- সামাজিক হও!

Thursday, April 27, 2023

মৌন অভিমান -- স্বপন গায়েন

  মৌন অভিমান
  স্বপন গায়েন
  ২৬/০৪/২০২৩
*********************
মরা জ্যোৎস্নায় শুয়ে আছে অতীত
পাথরের বুক থেকে বেরিয়ে আসছে অনাগত বটের চারা
যত্নহীন শৈশবের আকুতি -
ঋতু পরিবর্তন হয়, জীবনের রঙ পাল্টায় না।

তপ্ত রোদ্দুরে পুড়ে যায় সম্পর্কের রঙ
ভালোবাসার উপকূলে নৌকা দাঁড়িয়ে -
ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ঘুম ভাঙছে ভগ্ন সমাজের।

ধনী গরীব যেন দুই পৃথিবী -
ভালোবেসেও ঘর বাঁধা হয় না
হৃদয়ের উপকূলে নৌকা ডুবি হয় বারবার
কেন সম্পর্কের মৌন অভিমানে দাঁড়িয়ে থাকে গরীব।

ধনীর মেয়েরা কেন ভালোবাসে গরীবের এক চিলতে কুঁড়ে ঘর  
আকাশের চাঁদ ধরার স্পর্ধায় জবাই হয় গরীব সন্তান
ধনীরা কখনও দেখতে পায় না তাদের নিজেদের মেয়ের দোষ।

তবুও ভালোবাসা হয় -
হৃদয়ের অন্দরে উঁকি মারে সোহাগের বর্ণমালা
তবুও ভালোবাসার দুয়ারে জ্যোৎস্নার সৌরভ সুগন্ধ ছড়ায়।

              *****

আকাশ অমন রাঙা কেন ? -- শক্তিপদ ঘোষ

    আকাশ অমন রাঙা কেন ?
   শক্তিপদ ঘোষ
   ২৫ , ০৪ , ২০২৩
কালিয়াগঞ্জের সেই স্কুল-যাওয়া মেয়েটা  
আমাদের এই মেকি নগ্ন সভ্যতার
অতিরিক্ত একটা জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকল ।
নিরুপায়ভাবে মরে গিয়ে মেরে গেল 
একটা জাতিকে  ; সে' জাতি বাঙালি জাতি , 
সে' দেশ বাংলা দেশ , রবীন্দ্র নজরুলের দেশ , কবি জীবনানন্দের বড় আবেগের , বড় সোহাগের দেশ ।

আমরা কি সেই দেশে আছি ? তবে 
সেই শিশিরভেজা ঘাস এত অশ্রুতে , এত
রক্তে ভেজে কেন  ? এত স্বপ্ন-খুনের রক্তে
আকাশ অমন রাঙা কেন ? আমরা কি মৃত ,
না জীবিত ? গায়ে চিমটি কেটে বারবার
নিঃসংশয় হয়ে বুঝেছি শেষাবধি , আমরা
মরেও নেই , বেঁচেও নেই ; মরে মরে বেঁচে আছি ।

নিহত সেই কিশোরীর মত রক্তাক্ত যারা মুকুলেই ,
আমি সেই ওদের পায়ে হেঁটে, মাঠের 
আলপথ ভেঙে , অথবা সাইকেলে চড়ে নিত্য
স্কুলে আসা-যাওয়া দেখতে অভ্যস্ত  ।
স্কুলে প্রার্ধনা-সভার লাইনে দাঁড়িয়ে
একসাথে ওদের জাতীয়সঙ্গীত গাইতে দেখেছি ,
ক্লাসরুমের ভিতরে দেখেছি ওদের উপস্থিতির
আলোকসজ্জা , গলায় গলায় ভাব ,
পদে পদে খুনসুটি , ক্লাসরুমের বাইরে 
বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস , ছুটির পর উল্লাসের হল্লা ;
আমি এমনই সেই কিশোরীদের পায়ে পায়ে 
বাবা-মায়ের গড়িয়ে দেওয়া আহ্লাদী নূপুরের
ধ্বনি শুনেছি , পাড়ার সমবয়সীদের সঙ্গে
বৈকালে একজোটে খেলতে দেখেছি এবং
সেই ওদের দুষ্টু মুখের মিষ্টি হাসিটুকু দেখতেই 
আমি অভ্যস্ত ।

সেই তেমন একটা কিশোরীর নিষ্প্রাণ দেহকে
বাংলার পুলিশ যে আসুরিক ভঙ্গিতে
পিচঢালা রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে যেভাবে
টেনে নিয়ে গেছে , দূরদর্শনের পর্দায় তার বীভৎস নারকীয় দৃশ্য দেখে লজ্জায় , ঘৃণায় এবং
আত্মধিক্কারে অনেকবার মরেছি , প্রতিক্ষণ 
এমনই মরতে মরতে বেঁচে আছি ।
দ্রৌপদীর শেষটুকু বাঁচাতে , শুনেছি
আড়ালে থেকে অনিঃশেষ বস্ত্র জুগিয়েছিলেন
স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ  ; এ ক্ষেত্রে
তেমন একটা উদ্যোগের কিচ্ছুটি দেখিনি  ,
বাস্তবে তা'দেখি না কোত্থাও কখনও ।

অগ্নিযুগের ইতিহাসে দেখেছি , সেদিন
এই আমাদের মুখে মুখে ছিল শুকনো বারুদ ,
অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ
খসখসিয়ে দপ করে জ্বলে উঠত ।
আজ স্বার্থের হীন মেঘে ভিজে সেই আমরা
ভিজে দেশলাই কাঠি ।
মেঘমন্দ্রকে তুচ্ছ করে সেই তেমন
গর্জে উঠছে না আমাদের কণ্ঠ  ;
প্রতিবাদে সঙ্ঘবদ্ধভাবে পথে নামছি না , পরিবর্তে 
দ্বিধাগ্রস্ত থেকে জলের গভীরতা মাপছি ,
আড়ালে হিসাব কষছি অনেক ।

অন্যদিকে , হাত পেতে ভিক্ষা নিয়ে আমরা 
আত্মজাদের এমন নির্মম পরিণতি নির্বাক সইছি ,
নিশ্চুপ দেখছি  আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ
ডুবে যাচ্ছে গভীর অন্ধকারে , ঘর ছেড়ে সব
আশ্রয় নিয়েছে পথে , শহরের পোড়া রাজপথে
হামাগুড়ি দিচ্ছে , অন্যের পাপের বোঝা বইছে
নিজেরা দণ্ড নিয়ে ; তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও দেখছি , এমনই সব ভিজে দেশলাই কাঠি ।
------------------------------------------------------------------

Tuesday, April 25, 2023

প্রেম  বিহনে পরম নহে
শান্তি পদ মাহান্তী
২৪/০৪/২০২৩
সৃষ্টি মাঝে স্রষ্টা আছেন
দ্রষ্টা ঠিকই বোঝে,
ভ্রষ্ট লোকে নষ্ট চোখে
কষ্ট করে খোঁজে।

ভন্ড তুমি চন্ড বড়ো
পন্ড করো পূজো,
অহংমত্ত দেখাও সত্ত্ব
সত্তারে না খুঁজো।

চিত্ত মজে বিত্ত নেশায়
নিত্য মরো লোভে,
যামিনী চায় কামিনী রে
কাম জাগে সম্ভোগে।

গুপ্ত আছে সুপ্ত চেতন
মুক্ত করো তারে,
শুদ্ধ মনে যুদ্ধ করো
রুদ্ধ চেতন দ্বারে।

প্রেম জমিলে পরম মিলে
না মজিলে শূন্য,
প্রেমে ধরম প্রেমই পরম
প্রেম ছাড়া নাই পূণ্য।

গোপীগনে যে গোপনে
শ্রী গোবিন্দ ভজে,
বিশ্ব জগত বিস্মরণে
ব‍্যাকুল হয়ে ব্রজে।

হৃদমাঝারে হৃষিকেশে
হন‍্যে হয়ে খোঁজো,
প্রেম বিহনে পরম নহে
মরমে তা বোঝো।

Monday, April 24, 2023

নষ্টালজিয়া -- প্রহ্লাদ ভৌমিক

 নষ্টালজিয়া
 প্রহ্লাদ ভৌমিক 
 ২৩-০৪-২০২৩
কি করো তুমি একা একা একলা বাড়ি
নিজেকে নিজের কাছে রেখে ?
কিছু তো করো ?
খোঁড়াখুঁড়ি তো করতে পারো পাথর
কিংবা মাটি !

নিবিড় সংযমে স্বপ্ন নিয়েও তো থাকতে পারো,
বুকের মধ্যে নিপুণ আঁকতে পারো 
কেঁপে কেঁপে ওঠা না পাওয়া স্পর্শ,
অথবা কোনও শুশ্রূষা না পাওয়ার ক্ষত!

কী আশ্চর্য ভাবো তো,
আমাদের স্বপ্নের দুই প্রান্তে দু'জনের
দু'দুটি  মুখ নিরুদ্বেগ,রুক্ষ ও বিমর্ষ ,

তবুও দু'চোখ যেন কত স্বপ্ন প্রত্যাশী,
তবুও হু হু শব্দে ভরা বুক কি ভীষণ 
ভালোবাসার আহ্বান প্রত্যাশী !

জানোই তো ভালোবাসার যে কী 
ভয়ংকর অস্থিরতা,
সারা শরীরময়  সে যে কী এক অবিশ্বাস্য শিহরন,
আর তার কী এক অদ্ভুত স্পর্শ অনুভব!

অথচ একবার অন্তত ভাবো,
জীবনের নাম যদি হয় ভালোবাসা,
ভালোবাসার নাম নিশ্চিত সে কবিতা ।
এই কথারও কী ভীষণ মুগ্ধতা দেখো,
কী ভীষণ উত্তেজনা ও আশ্চর্য শিহরন, আজও !

Sunday, April 23, 2023

ধোঁকা -- অরবিন্দ মাজী

 ধোঁকা
 অরবিন্দ মাজী
২০/০৪/২০২৩
রিয়া ও অনুপ একপাড়াতেই থাকতো, অনুপ যখন ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র, রিয়া তখন ক্লাস নাইনে পড়তো, এবং তখন থেকেই ওদের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে উঠে। 
ওদের মধ্যে প্রতিদিন একবার অন্তত দেখা হতোই, বিশেষ করে রিয়া বিকেলে অপেক্ষা করে থাকতো কখন অনুপের সাথে সাক্ষাৎ হবে, দুজনেই প্রতিদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি পুকুরের পাড়ে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বসে গল্পগুজব করতো। অনুপের সাথে রিয়ার একদিন দেখা না হলেই যেনো  রিয়ার পেটের ভাত হজম হতো না ,অনুপ ক্লাস দুয়েলভের পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ার পর শহরের একটি কলেজে বি, কম অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়, এবং তারপরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, কম পাশ করে চাকরির চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু কিছুতেই ওর চাকরি হচ্ছিলো না। এম, কম পাশ করার পর সুদীর্ঘ পাঁচ পাঁচটি বছর সে বেকার ছিলো, তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই সে টিউশনি করে হাতখরচের টাকাটা জোগাড় করতো, এদিকে রিয়া বিয়ে পাশ করার পর বাড়িতে বসেই ছিলো, সে কিন্তু চাকরির চেষ্টা চরিত্র করেনি, কেননা ওদের বাড়ির অবস্থা তুলনামূলকভাবে অনুপদের থেকে অনেক ভালো ছিলো, ইতিমধ্যে ঐ গ্ৰমেরই অনুপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অনিমেষ এম, এস, সি পাশ করে একটি ব্যাঙ্কের কেরানির চাকরি পেয়ে যায়, রিয়া ধীরে ধীরে অনিমেষের দিকে ঝুঁকতে থাকে, এবং একসময় সে অনিমেষকেই বিয়ে করে ফেলে। 
   অনুপ বেকার বলেই রিয়া ওর জন্য অপেক্ষা না করে অনিমেষকেই বিয়ে করে। 
অনুপের মধ্যে প্রচন্ড হতাশা তৈরি হয়, খানিকটা অবসাদেও গ্রাস করে ওকে, অবসাদে ভূগতে ভূগতে একসময় সে বৃন্দাবনে চলে গিয়ে একটা আশ্রমের একজন গুরুর কাছে দীক্ষা নেয় এবং বর্তমানে সে আশ্রমের বিভিন্ন কাজ করার পরও হরেকৃষ্ণ, হরেকৃষ্ণ নাম জপ করে কাল অতিবাহিত করে।

Saturday, April 22, 2023

ছেলেবেলা -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 ছেলেবেলা
 শ্যামল কুমার মিশ্র
২১-০৪-২০২৩
সকালের নরম রোদ্দুর এসে পড়েছে খোকনের পড়ার টেবিলে
খবরের কাগজে মুখ গুঁজে খোকন যেন হারিয়ে যায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা মুখ
দড়ি দেওয়া প্যান্টটা টানতে টানতে ও খোকনের মুখোমুখি হয় 
--তুমি এমন করে কী দেখছ?
--তোমায় 
--আমায় তুমি চিনতে পারলে না? 
--না 
--আমি যে তুমি, তোমার শৈশব, তোমার ছেলেবেলা 
ওই তাকিয়ে দেখো ডাইনে সামন্তদের ঠাকুরবাড়ি 
বামে পায়ে চলে রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে 
ওই পথে হেঁটে চলেছে একটা ছোট্ট ছেলে
চিনলে না ওরে? 
খোকনের দুচোখ হাসি ফুটে ওঠে 
ছেলেটি ও হাসছে 
দিনান্তে খিড়কির পুকুরের শাণ বাঁধানো ঘাটে বসে ছেলেটি
কত ছবি, কত প্রশ্ন,কত স্বপ্ন ওর চোখে 
কালো জলের গভীরে কী যক্ষ বাস করে? 
হাজারো প্রশ্ন উঁকি দেয়...

সন্ধ্যা নামে 
ছেলেটি হেঁটে চলেছে..মাঠ পেরিয়ে দূরে, বহুদূরে 
হঠাৎ যেন পথ হারিয়ে ফেলে ছেলেটি 
অভিমুন্যর চক্রব্যূহ যেন.. বেরোনোর পথ নেই
ডাইনে বাঁয়ে পাশে
চেনা জগৎ অচেনা মনে হয় 
ঘুম ভেঙ্গে যায় খোকনের  
খিড়কির পুকুর, জোনাক জ্বলা রাস্তা 
সবই যেন দেখতে পায় খোকন
কিন্তু সেই ছেলেটি? 
অনেক খুঁজেও পায় না খোকন
অন্তহীন যেন সেই খোঁজ...

Friday, April 21, 2023

দাবদাহে জ্বলছে আগুন -- প্রদীপ কুমার মাইতি

 দাবদাহে জ্বলছে আগুন
 প্রদীপ কুমার মাইতি 
 ২০/০৪/২০২৩
তাপ দহে পুড়ছে মানুষ 
পশু-পাখি যত,
মায়ের কোলে ঘামছে শিশু 
কাঁদছে অবিরত।

দাবদাহে জ্বলছে আগুন 
ঘুম আসেনা রাতে, 
সবাই থাকে শীতল ভোরের 
আলোর অপেক্ষাতে।

তীব্র গরমে সবুজ শস্য 
করছে হাহাকার, 
ঘরের মধ্যে থেকেও মানুষ 
নেই কোন নিস্তার। 

আকাশ পানে ডাকছে চাতকী 
পায়না সাড়া তার 
একফোঁটা জল ঠোঁটের মাঝে 
চাইছে বারেবার, 

মাঠঘাট সব পুড়ছে রোদে 
শুকছে পুকুর ডোবা,
পরিবেশ দূষণে প্রকৃতি তাই 
হয়েছে আজ বোবা।

আকাশ ভরা আগুনে আজ
সব যেন বেসুর, 
তীব্র গরম বলো না তুমি 
বর্ষা কতদূর।

Thursday, April 20, 2023

ব্যথার অতীত --সেখ লিয়াকত

.ব্যথার অতীত
.সেখ লিয়াকত
১৯,০৪,২৩
অতীত ব্যাথা স্মরণ হলে
অশ্রু আসে চোখে,
ঝরা পাতা ধূলায় পড়ে 
যেমন কাঁদে শোকে !

নতুন পাতা গাছের ডালে 
আনে নতুন আশা,
ভাঙা বাসা ছেড়ে পাখি
গড়ে  নতুন বাসা । 

কালের স্রোতে দিন চলে যায় 
স্মৃতিটুকু রেখে,
সামনে যেতে নতুন আশা 
নেয় যে সদা ডেকে । 

ভবের মাঠে আসা-যাওয়ার
নিত্য চলে খেলা,
কান্না-হাসি লুকোচুরির
মাঝে কাটে বেলা । 

অতীত ব্যথা পীড়া দিয়ে 
মনকে করে কালো,
সোনা রবি সেটা  মুছে 
আনে নতুন আলো ।

Wednesday, April 19, 2023

চৈতি ফাগুন বৈশাখে -- নিবারণ চন্দ্র দাস

 চৈতি ফাগুন বৈশাখে   
নিবারণ চন্দ্র দাস
 ১৮/০৪/২০২৩
আসে ওই বৈশাখ মহা উল্লাসে,
সাথে কালবৈশাখী  পল্লবে ঘাসে।
পত্র পুষ্প শাখা দোদুল দোলায়,
সকল দহন জ্বালা নিমেষে ভোলায়।

তপ্ত দাহন শেষ চৈত্র বিদায়,
পুরাতন লাগি মন করে হায় হায়।
ছেড়ে যেতে হবে জানি পুরাতন যত,
সাথে নিতে হবে তবু স্বচ্ছ সমুন্নত।

পুরাতন স্মৃতি যত পুরাতন প্রেম,
রবে অন্তরে যেন নিকষিত হেম।
পুরাতন বেদনার অশ্রু বারিধারা,
সাথে লয়ে রয়ে যাব আমি দিশেহারা।

অগ্র গমণ সাথে থাক পিছুটান,
অতীতের লাগি সদা পেতে রব কান।
অতীতের সাথে মিলে ভবিষ্যৎ ভাব,
সমৃদ্ধ এ বর্তমান অনন্য স্বভাব।

বেদনার শতদল,আনন্দধারা,
করে দিক প্রাণ মন পূর্ণ ছন্নছাড়া।
আনন্দ অবগাহন,বিষাদ তিমির,
এই নিয়ে গড়া মোর পর্ণ কুটির।

ফাগুন চৈত্র কিবা হোক বৈশাখ,
থাক মাঙ্গলিক সুর,মঙ্গল শাঁখ।
চিরন্তন প্রবাহের অশ্রুত সঙ্গীত,
কারও হাসি কারও গান,কারও হার জিত?
                       :::-:::

Tuesday, April 18, 2023

ভুলো -- প্রোজ্জল

 ভুলো
 প্রোজ্জ্বল 
১৭/০৪/২৩
 আমরা খুব ভুলো।
করে  জমকালো 
পয়লা জানুয়ারি 
নিউ ইয়ার পালন করি।
আর, নিজেদের নতুন বছর,
কবে যে হয় তার খবর
ভুলে গেছি পরিপাটি।
স্মৃতিতে মা গঙ্গার পলিমাটি
জমেছে পাহাড় সমান।
 জিজ্ঞেস করলেই -
এসো হে বৈশাখ ধরে গান।
ঠোঁটে দিয়ে টান -

 দেঁতো হাসি হেসে বলি--
ভুললে কী বিলকুলই -
বাঙালির  বঙ্গাব্দ - পয়লা বৈশাখ?
 স্মৃতির পাতা গুলো আজ পুড়ে খাক।
 পয়লা বৈশাখ বুঝি বঙ্গীয় রীতি?
না গো না ! এটি হলো বাদশাহি নীতি।

নউরোজ প্রথার ই বঙ্গীয় রূপ,
বৈশাখ পয়লায় হতো ধুম খুব,
কর নেওয়ার  ছিল 
দিন সেই যুগে।
অভাবেতে ভুগে,
এই দিনে বঙ্গীয় প্রজা দিত,
বাদশাহি কর,
গুনে গুনে কর,
বুকের পাঁজরসম,
ট্যাঁকের  কড়িটি,
 পেয়াদার হাতে দিয়ে,
বাঁচাত ভিটেটি।

করের কড়ির এই 
হিসেবেটি রাখতে 
নউরোজি রীতিতে,
পয়লা বোশেখ হল
বছর  শুরুর দিন
নউরোজি রীতি  থেকে নিয়ে ঋণ,
বাংলায় শুরু  হলো বৈশাখী রেওয়াজ,
পপুলার করলেন রবি কবি রাজ।

বাংলার নিজের বছরের শুরু,
হয় তো ছিল অঘ্রানে,
কিন্তু সে কথা ভুলে গেছি কোনখানে।
নিজেরাই না জানি।
অগ্রহায়ন মানে- বছরের শুরু,
যদি এই কথাটুকু মানি,
তাহলেই পরিষ্কার,
নয় বৈশাখ আর,
অঘ্রানই ছিল বাঙালির নিউ ইয়ার।
তখন নতুন  ধান 
উঠত ঘরে,
বাঙালির বুক যেতো আশায় ভরে।
পরিবেশও  থাকত বড়ো মনোরম
উৎসবের জন্য যেরম,
দরকার 
একেবারে তাই
তাই মনে হয় ভাই,
নয় বৈশাখের একে
কিন্তু অঘ্রান থেকে
ছিল বাঙালির বছরের  শুরু,
কিন্তু  ভুলেছি সব,
ইতিহাস যেন শব,
নিশ্চল আছে পড়ে, কুঁচকে ভুরু।

Monday, April 17, 2023

স্বপ্ন দেখি -- সত্যব্রত মন্ডল

 স্বপ্ন দেখি
 সত্যব্রত মন্ডল
 16-04-23
আমি স্বপ্ন দেখি --
 স্বপ্ন দেখি আমি ।
 দিনের আলোয় ও স্বপ্ন যে মিলিয়ে যায় 
   দেখতে দেয় না । 
দিনে যারা স্বপ্ন দেখে 
ওরা যে রাতে দেখতে পায় না । 
রাতের স্বপ্নই দিনের আলোয় ভ'রে
 কর্মে মর্মে ধর্মে প্রেমের পথে ।
  সব স্বপ্ন স্বপ্ন নয়  । যে স্বপ্ন আসে -
অগ্নিহোত্রীর জোত্যির্ময় আলো নির্মল হৃদয়ে ।

 ও স্বপ্নের দেশে নিশিরাত জেগে
  নিতে হয় চোখের জলে ।
 স্বপ্ন লোকের স্বপ্ন গুলো বাসা বাঁধতে চায়
    মর্ত জীবনের নন্দনলোকে
   মানবের  সুখ দুঃখের জীবন
পথের পার্থিব জীবন পাঁচালিতে ।

ও পাঁচালিতে আখর লিপির দিন রজনী
 লিখে গো স্বপ্নের লিপির কারিগর ।
   অলিখন লিপি মানস ব্রহ্ম চেতনার নিরাকারে
    লিপির পাঠোদ্ধার করে স্বপ্ন প্রেমিক।
  ওরাই স্বপ্ন প্রেমিক ওরাই মানব প্রেমিক
  স্বপ্ন ময় স্বর্গের  আনন্দধামের আনন্দ 
 ধরায় নিয়ে আসে ঘরে ঘরে --
    
     
   

 ,

ঘুরেফিরে সেই প্রত্যাবর্তন -- পরেশ চন্দ্র সরকার

 ঘুরেফিরে  সেই প্রত্যাবর্তন
পরেশ চন্দ্র সরকার
১৫_০৪_২০২৩
দেওয়ালেতে 'পিঠ' ঠেকে গেলে-ই
সাময়িকের স্থবিরতায় 'কিংকর্তব্যবিমূঢ়' আঁকে,
সাধারণই নির্ধারণ ক'রে সুযোগ পেলেই
আগামী পাঁচ-টি বছর 'সত্তা' যাবে 'কার' বাঁকে?

মানুষ শিখছে অনেক, পাচ্ছে না দাম
দেখেছে প্রতিশ্রুতির আড়ালেতে মুখোশের রঙ,
দেখেছে ডান দেখেছে বাম কিংবা রাম
দেখছে অতি বামেরও অনুপ্রেরণার সহস্র সঙ।

সাধারণের মনে স্পিন ধ'রেছে আজ
অফ অথবা লেগ, কিংবা গুগলি দুসরা ক্যারাম,
ঠেকে ঠেকে আঁকছে দায়ে ঠেকা সাজ
মস্তিষ্কে আবার কারোর 'নোটা' রোগের ব্যারাম।

মানুষ আর বিশ্বাস ক'রে না কাউকেই
পদ্ধতিতে এবার আনতে চায় আমূল পরিবর্তন,
কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হ'বে জানা নেই
তাই তো সাধারণের মস্তিষ্কেও হাঁটে প্রত্যাবর্তন।

******************************************