Friday, May 5, 2023

সেই বটগাছ -- নিবারণ চন্দ্র দাস

  সেই বটগাছ
 নিবারণ চন্দ্র দাস

শহর জুড়ে কান্না হাহাকার আর মৃত্যু।শবদেহ পথে পড়ে ,শেয়াল শকুনের ও দেখা নেই।শংকর আর সিক্তা,একজন ডাক্তার আর একজন নার্স।আজ একমাস হতে চলল,হাসপাতালেই ওদের বাড়িঘর।ছেলে মেয়ে দুজনেরই মোটামুটি ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
      মেয়ে সম্ভাবনা এখনও কোন কাজ জোটাতে পারে নি।জামাই শিক্ষকতা করে।তারও আবার কাজ নিয়ে টানাটানি চলছে।নিয়োগ দূর্নীতির জালে অন্য কয়েক লক্ষ কর্মচারীর মতো তারও ভবিষ্যৎ ঝুলছে অদৃশ্য সুতোয়।বছর চারেকের ছেলেকে নিয়ে বড়ো দুশ্চিন্তায় কাটছে প্রহর।
   ছেলে সপ্তক ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে দেশের নামকরা এক কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজম্যান্টে।চেষ্টা করছে সরকারি কাজের।
       সারা পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে এই শহরেও চলছে শ্বাস সংকট।একটু প্রাণবায়ুর খোঁজে হাসপাতাল থেকে মুদিখানা সর্বত্র একটু প্রাণবায়ুর জন্য সব লাইন।সবার মুখে বিশেষ মুখোস,পিঠে বাঁধা অক্সিজেন সিলিন্ডার।কে কতক্ষণ বাঁচবে সে ভাবনা ছাড়িয়ে অক্সিজেন নিয়েও চলছে ফাটকা, কালোবাজারি,নীরব সরকার,জনগণ কে কাকে টপকে নিজের ও পরিবারের প্রাণ বাঁচাবে সেই আশায় মত্ত।
     শংকরের হাসপাতাল যে এলাকায়, পাশাপাশি ওরা থাকে দশতলার এক ফ্ল্যাটে।বছর পঁচিশ আগে যখন তারা এখানে আসে, কত গাছগাছালি ছিল এখানে।এখন সব ধূধূ মরুপ্রায়। সবুজের চিহ্ন নেই।শংকর সিক্তা একসময় সবুজায়নের জন্য নিজেদের উপার্জিত অর্থে চারাগাছ বিলি করেছে এলাকায়।গাছ কাটার বিরোধিতা করে সরকারি দপ্তরে দপ্তরে ধর্ণা দিয়েছে, পরিণামে সাধারণ মানুষের সাথে সাথে সরকারি কর্তা ও রাজনৈতিক দাদা-দিদিদের বিরাগভাজন হয়েছে।
    শহরটা যেন কেমন হয়ে গেছে,কেউ কারও মুখ দেখতে পায় না,খাবারও খেতে হচ্ছে নলের মধ্যে দিয়ে। হঠাৎ সেদিন হাসপাতাল থেকে নির্দেশ এল,কিছুটা দূরেই এক রাজনৈতিক কেউ কেটার বাড়িতে সকলের জীবন সংকট, হাসপাতালের মূল অক্সিজেন লাইন এক্সেটেনশন করে তার বাড়িতে কানেকশন দিতে হবে। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই কাজ করতে গিয়ে অবাক হয়ে শংকর দেখল একটি বাড়ির মানুষজন মাস্ক ছাড়াই বাড়ির বারান্দায় বসে চা জলখাবারে ব্যস্ত। জরাজীর্ণ বাড়িটার দেওয়াল ফাটিয়ে এক বিশাল বটবৃক্ষ স্ব-মহিমায় বিরাজমান।শংকরের মনে পড়ে গেল বছর দশেক আগের এক মামলার কথা।পৌরসভা ঐ বাড়িতে গজিয়ে ওঠা বটগাছটি কেটে ফেলতে চাইলে ঘটনা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত।উচ্চতর আদালত যুগান্তকারী রায় দিয়েছিলেন ঐ গাছটা রাখার জন্য,যা আজ শুধু মণ্ডল পরিবার নয় পাশাপাশি দু'তিনটে বাড়ির মানুষদের যোগান দিচ্ছে প্রাণবায়ু।পাখ পাখালিতে ভরে আছে গাছটা,আর বাড়ির সামনে ফুটপাতে কয়েকশো মানুষ মাস্ক খুলে ক্ষণিক জিরিয়ে নিচ্ছে।
                           :::-:::

No comments: