বই হোক পরম বন্ধু
গৌতম পাল
২৮/০৪/২০২৩
*****************************************
ধুলোর প্রলেপ জমেছে লাইব্রেরীর বইগুলিতে,
ধুলোর স্তূপ জমেছে বইয়ের আলমারিতে,
বই গুলো কেঁদে কেঁদে ডাকে বারে বারে,
একটু ভালোবাসা দাও, আদরে হাতে তুলে নাও।
কর্মব্যস্ত দিন, ঘুম থেকে উঠেই ছুটি কাজে,
ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে ফিরি পড়ন্ত বিকেলে,
নেই কোনো অবসর, কখন তুলে নেব বই হাতে?
আজ বিশ্ব পুস্তক দিবসে, বসে পড়ার টেবিলে,
খুব মনে পড়ছে শৈশবের সেইসব রঙিন দিন,
বাবার হাতে পেয়েছিলাম প্রথম বই, বর্ণপরিচয়,
অনাবিল আনন্দে সেদিন হয়েছিলাম লীন!
বইকে ভালোবাসার সেই হয়েছিল শুভ সূচনা,
আজও নতুন বইয়ের গন্ধে মাতাল হয় মন,
শিহরণ জাগে মনের গভীরে অনুক্ষণ।
বইকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন বাবা,
পন্ডিত বিদ্যাসাগর মানুষ গড়ার নিয়ে শপথ,
তৈরি করে দিয়েছিলেন সাফল্যের পথ।
রবি ঠাকুর তুলে দিয়েছিলেন সাহিত্যের ডালি
আমাদের পূর্ণ হয়েছে সকল মনোরথ।
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম মন্ত্রে
আজও শিহরণ জাগে শিরা উপশিরায়,
বন্দে মাতরম ধ্বনিতে জাগে আসমুদ্র হিমাচল,
তাঁর দীক্ষা আজও হয়নি অচল।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস গুলি
কতবার পড়েছি নেই তার কোনো হিসেব,
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পড়ে নানা উপন্যাস
অমলিন আনন্দ পেয়েছি, আজও আছে তার রেশ!
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, কবি জসীমউদ্দীন থেকে
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বাংলা ভাষার কারিগর,
তাঁদের সৌজন্যেই বাংলার বেড়েছে সৌরভ,
বাঙালি আজ তাই করতে পারে গৌরব!
পন্ডিত বিদ্যাসাগর আপামর বাঙালির শিক্ষাগুরু,
তাঁর হাতেই বাংলা ভাষার হয় হাতে খড়ি,
শৈশবের আমাদের সকলের শিক্ষার হয় শুরু।
সহজ পাঠের মাধ্যমে কবিগুরু প্রাঞ্জল ভাষায়
দিয়েছেন আমাদের জীবনের অমূল্য সকল শিক্ষা,
তাঁর হাত ধরেই পেয়েছি সাফল্য, জীবনের দীক্ষা!
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম
আজীবন গেয়েছেন সাম্য আর মৈত্রীর গান,
বাঙালি রক্ত দিয়ে বুঝেছে বাংলা ভাষার নাড়ির টান।
সুখে দুখে বিপদে বই আমাদের বাঁচার প্রেরণা,
বই অমূল্য সম্পদ, বই জাগায় আমাদের চেতনা!
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে আমরা হয়ে গেছি দিশেহারা,
ভুলেছি বইয়ের কথা, আজ তাই হয়েছি সৃষ্টি ছাড়া!
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বইয়ের প্রতি অবহেলা
মন থেকে কিছুতেই পারি না মানতে,
বিজ্ঞানের অগ্রগতি দিয়েছে অনেক কিছুই
দিয়েছে সুযোগ আজ সবকিছুই জানতে।
আধুনিক সভ্যতায় এসে ভ্রাম্যমান দূরভাষ যন্ত্র,
রকমারি মুঠোফোন এসেছে হাতে,
বই থেকে ক্রমেই মোরা যাচ্ছি দূরে সড়ে,
মুঠো ফোনকে নিয়েছি হাতের অলংকার করে।
মুঠোফোনের দৌলতে কমেছে বই পড়ার অভ্যাস,
কমে গেছে আমাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ,
আজ বিশ্ব পুস্তক দিবেসে করি আবেদন অবিরত
বইয়ের প্রতি প্রেম যেন হয় ফের জাগ্রত!
কাজের চাপে বই পড়ার অভ্যেস কমলেও
জানি একটুও কমেনি বইয়ের প্রতি ভালোবাসা,
বই যে আমাদের চিরদিনের সাথী,
আজও তৃপ্ত করে আমাদের মনের সকল আশা।
আজও বই না পড়লে অপরিসীম দুঃখ পাই,
ঘরে ফিরে তোমাকে না পেলে পড়ার টেবিলে
মনে হয় আজ কি যেন করা হয় নাই।
ঘটা করে বইমেলার হয় আয়োজন গ্রাম শহর নগরে,
বইয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চলেছে প্রয়াস,
তবুও বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ার নেই যে আভাস!
তোমার সাথে কাটানো পুরোনো মধুর দিনগুলি
আজও স্মৃতিতে ভেসে আসে প্রতিটি ক্ষণে,
জীবনে যতটুকু পেয়েছি সাফল্য আর সম্মান,
আজও ডুবে আছি তোমার সেই ঋণে!
বইয়ের বিকল্প নেই বিশ্ব সংসারে, বই যে অনন্য,
গুণীজন ভবে বই পড়েই করেছেন জীবন ধন্য।
আজ বিশ্ব বই দিবসে শুধু এইটুকু প্রার্থনা মনে,
বই হোক পরম বন্ধু জীবনের প্রতিটি ক্ষণে!
*********************************************
No comments:
Post a Comment