Wednesday, August 21, 2024

ভয়ংকরী শাশুড়ী -- শিবপ্রসাদ মন্ডল

  ভয়ংকরী শাশুড়ি 
   শিবপ্রসাদ মণ্ডল 
(এটি একটি হাসির নাটক।এই নাটকটি শ্রুতিনাটক হিসেবে কিংবা মঞ্চে অভিনয় করেও উপস্থাপন করা যায়। যৎসামান্য পরিবর্তন করলেও সমস্যা হবে না)

**** চরিত্রলিপি ****
পুরুষ চরিত্রে ---
সমর রায়-- অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
অর্ক--  ওঁর অধ্যাপক নাতি 
অর্ঘ্য -- ওঁর অধ্যাপক নাতি 

স্ত্রী চরিত্রে ----
বকুল সেন --- অবসরপ্রাপ্তা অধ্যক্ষা 
কমলা --- বকুলের জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ
রমলা --- বকুলের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ 
মালা --- কমলার কন্যা 
দোলা --- রমলার কন্যা 
**************************************
মঞ্চসজ্জা ---
শ্রুতিনাটক করলে পুরুষ চরিত্রাভিনেতারা একদিকে 
বসবেন এবং মহিলা চরিত্রাভিনেত্রীরা অন্যদিকে পরপর বসবেন।
অভিনয় করে মঞ্চস্থ করতে গেলে মঞ্চের মাঝখানে একটি টেবিল থাকবে। তিনদিকে তিনটি চেয়ার সাজানো থাকবে। টেবিলের উপর ফুলদানি থাকবে।
বাকি সজ্জা নির্দেশক নিজের মতো করবেন।
***************************************
                 ✍️ প্রথম দৃশ্য ✍️
স্থান--- সমর রায়ের বৈঠকখানা 
সময়-- সকাল আটটা 
( সমরের প্রবেশ।পরে পরে অর্ক ও অর্ঘ্যের প্রবেশ)

সমর-- অর্ক , অর্ঘ্য তোরা কোথায় গেলি?

অর্ক-- এই তো দাদু, তোমার পেছনেই রয়েছি।

সমর-- আজ তোরা কখন কলেজ থেকে ফিরবি?

অর্ঘ্য -- ঠিক বিকেল পৌনে  চারটায় ফিরব।

সমর-- বেশি দেরি করিস না। আমরা ঠিক চারটায় বকুল সেনের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ব।

অর্ক-- কোনো চিন্তা করো না দাদু।

অর্ঘ্য -- আমরা ঠিক সময়েই চলে আসব।

অর্ক-- আমি রাজু ড্রাইভারকে বলে রেখেছি।ও বিকেল চারটায় গাড়ি নিয়ে আমাদের বাড়ি পৌছে যাবে।

সমর-- একদম ঠিক সময়ে যাব। সময়কে  নিয়ে ছেলেখেলা আমি কখনোই বরদাস্ত করি না। যাদের সময়ের জ্ঞান নেই,তারা আমার কাছে চক্ষুশূল। 

অর্ক-- দাদু, তুমি তিরিশ বছর ধরে আমাদের দেখে এখনও চিনতে পারলে না!

সমর-- জানিস তো, বকুল সেন ভদ্রমহোদয়া অবসরপ্রাপ্তা অধ্যক্ষা। ভীষণ কড়া ধাতের মহিলা।

অর্ঘ-- আমরা কোনভাবেই তোমার সম্মানহানি হতে দেবো না।

সমর--ঠিক আছে। তোরা কলেজ যা। আমি এখন বাজার যাব।যত হোক, প্রায় পাকা কথা বলতে যাচ্ছি,একটু দই-মিষ্টি না নিয়ে গেলে সম্মান থাকবে না। আমি যাচ্ছি।        (প্রস্থান)

অর্ক -- আমি আজ ছুটি নিয়েছি। কলেজ যাব না।

অর্ঘ্য-- সে কী রে!!

অর্ক -- হ্যাঁ, মালার মা বড্ড সিরিয়াস মহিলা। সবসময়ই মুখ গম্ভীর করে রাখে। দেখলে ভীষণ ভয় লাগে। দূর থেকে দেখেই তো একবার আমার হার্টফেল হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। কোনরকমে পালিয়ে বাঁচি।

অর্ঘ্য-- কী বলছিস রে !

অর্ক -- সামনাসামনি দেখা করার সাহস কোনদিন হয়নি।মুখ দেখলেই রক্তচাপ বেড়ে যায়। বিশ্বাস কর,
কলেজের অনুষ্ঠানে সেদিন মেয়ের সাথে এসেছিল। ওকে দেখেই রক্তচাপ ২০০/১৬০ হয়ে গিয়েছিল।

অর্ঘ্য-- বলিস কী রে দাদা!

অর্ক -- সে কথাই তো বলছি।তাই বিয়ের আগে ঐ ভদ্রমহিলাকে আচ্ছা করে জ্বালাতে চাই। বিয়ে হয়ে গেলে তো শাশুড়ি - জামাই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। তারপর আর কোনোভাবেই হ্যারাস করা যাবে না।

অর্ঘ্য-- ঐসব করতে গিয়ে যদি কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়িস তবে বিয়েটাই তো ভণ্ডুল হয়ে যাবে।

অর্ক-- দেখিনা একবার চেষ্টা করে। ভদ্রমহিলার স্বামী মিলিটারি ব্রিগেডিয়ার। স্বামী নিশ্চয়ই রগচটা,বধূটিও সেই রকম।যেমন শিবের তেমন দুর্গা। বিয়ের আগে যদি একবার মুখে হাসি ফোটাতে পারি তবে আমার এ জীবন সার্থক হবে।

অর্ঘ্য-- কী জানি বাবা, ফেঁসে যেন না যাস। খুব সাবধানে অপারেশন করবি। হ্যাঁ রে , তবে কবে কোথায় কোন সময়ে অপারেশন করবি?

অর্ক -- আজই, হ্যাঁ রে, আজকেই ওদের বাড়িতে, ঠিক দুপুর তিনটায়---। বিকাল চারটার এক ঘন্টা আগে।

অর্ঘ্য-- সে কী রে দাদা। আমিও তো ঐ একই প্ল্যান করে বসে আছি।আমি তো ঠিক সাড়ে তিনটায় যাব বলে দোলাকে বলে রেখেছি।

অর্ক--কোনো অসুবিধা নেই। তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে-- আমার অপারেশন আশা করি শেষ হয়ে যাবে।

অর্ঘ্য --দোলাও বলে-- ওর মা ভীষণ বদমেজাজি। হ্যাঁ তে হ্যাঁ,তো না তে না। ভালো কথাও খেঁকিয়ে খেঁকিয়ে বলে। শুনলে মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। একবার বাজারে দেখেছিলাম দোলার মাকে।কী যেন একটা কথা নিয়ে এক যুবতী মেয়েকে কী ঝাড় ঝাড়লো। আমি তো দেখেই কাঁপতে শুরু করে দেই। এই ভদ্রমহিলার জামাই হতে হবে!! হায় ভগবান ভাগ্যে কী লেখা আছে অদূর ভবিষ্যতে!!

অর্ক -- তুইও জ্বালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিস?আজকেই, এই একই দিনে? 

অর্ঘ্য--আর সময় কবে পাবো বল। বিয়ে হয়ে গেলেই তো কমেডির রোল শেষ।তোর সাহস আছে তো!! অপারেশন করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবি না তো?

অর্ক--সাহস না রাখলে উপায় নেই।

অর্ঘ্য-- আমারও একটা ব্যাপারে বড্ড ভয় হয়। ভদ্রমহিলার স্বামী  এয়ারফোর্সের উইং কমান্ডার । সবসময়ই আত্মরক্ষার জন্য কাছে পিস্তল রাখে। যদি সামান্য কিছু ভুল হয়, তবে তো চালিয়েই দেবে।

অর্ক -- মালা আমাকেও বলেছে,ওর রক্ষাকালী জননীও আত্মরক্ষার জন্য সর্বদাই পিস্তল কাছে রাখে।গড়বড় হলেই যাত্রাপালা শেষ।

অর্ঘ্য ---দোলা অবশ্য আমাকে বারবার বলেছিল,এ ধরনের এডভেঞ্চার না করতে।ও যত না বলে, তত আমি জেদ ধরে বসি। আমি বলেছি, তোমার মাকে একটু অন্তত বোকা না বানালে, এ জীবনে আর শান্তি পাব না।

অর্ক-- মালা তো আবার উল্টো কথা বলে।সে আমাকে বলেছে যদি তুমি আমার মাকে একটু বোকা বানাতে পারো, তবে তোমাকে বীরপুরুষ বলে ভেবে নেবো।

অর্ঘ্য -- তোকে মালা জবরদস্তি করে রণাঙ্গনে ডেকেছে ।আর আমি স্বেচ্ছায় রণাঙ্গনে রণ করতে যাব। দাদা,তোর থেকে আমি অনেক অনেক বেশি সাহসী।

অর্ক-- হবু বৌকে যদি বিয়ের আগে একটু খুশি করতে না পারি, তবে পরে আর এ জীবনে খুশি করতে পারব বলে মনে হয় না।

অর্ঘ্য --- হ্যাঁ, তবে দাদু যেন এসবের কিছুই জানতে না পারে।

অর্ক-- বকুল ম্যাডাম জানতে পারলে তো আর রক্ষা নেই। সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।

অর্ক-- চল তবে। দুগ্গা দুগ্গা করে মাঠে নেমে পড়ি।

অর্ঘ্য-- ওখানে যদি কোনো সমস্যায় জড়িয়ে পড়ি তবে দাদু আসবে কীভাবে।

অর্ক -- রাজু ড্রাইভারকে আগে থেকেই বলে দিয়েছি ও আমাদের বাড়িতে গিয়ে দাদুকে একা নিয়ে আসবে।
           🎺🎸🪕 মিউজিক 🪕🎸🎺
*******************************************

            ✍️ দ্বিতীয় দৃশ্য ✍️
স্থান-- বকুল সেনের বাড়ির বৈঠকখানা 
সময়-- দুপুর তিনটা
(মঞ্চসজ্জা একই রকম থাকবে।নির্দেশক মনে করলে নিজের মতো সাজিয়ে নিতে পারেন।)
(ফোন করতে করতে অর্কের প্রবেশ।মাথায় টুপি এবং চোখে কালো চশমা থাকবে।)

অর্ক-- হ্যালো, মালা, আমি পৌঁছে গেছি।
(ফোন হাতে নিয়ে মালার প্রবেশ)

মালা -- এখনই এলে?

অর্ক -- হ্যাঁ।এবার বল--তোমার আরাধ্যা জননী-- মানে কালী তারা চামুণ্ডা ষোড়শী ভৈরবীরূপী মাতৃদেবী কোথায়?

মালা -- ওভাবে বলবে না। কেউ শুনতে পেয়ে যাবে।আর মা যদি জানতে পেরে যায়, তবে আর রক্ষা থাকবে না।

অর্ক -- কোন বুদ্ধিমান  লোককে তার মেয়ে স্বামীরূপে নির্বাচন করেছে, এটা আচ্ছা করে টের পাবে।

মালা -- দেখো,এমন কিছু কাণ্ড ঘটাবে না যাতে সব এলোমেলো হয়ে যায়।

অর্ক-- সে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছি। আমার সেন্স অব হিউমারটা কী ধরনের তা' তুমি ভালো করেই জানো।
আমাকে এতটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে লাভ নেই। তাছাড়া তুমি তো আমাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছ--যদি আমি তোমার মায়ের গোমড়া মুখে হাসি ফোটাতে পারি তবে তুমি আমাকে বীরপুরুষ বলে মেনে নেবে।কি বলনি?

মালা -- তবুও ভীষণ ভয় করছে। মায়ের বাবা মানে আমার মামাদাদু মিলিটারি বেস কমাণ্ডার ছিলেন। তাঁর কন্যা। আবার এদিকেও মা মিলিটারি ব্রিগেডিয়ারের স্ত্রী। মেজাজ তো একটু থাকবেই।সবসময়ই কাছে পিস্তল রাখে। রেগে গিয়ে পিস্তল তাক করলেই ঘোর বিপদ।প্রাণে বেঁচে গেলেও, তোমার সঙ্গে বিয়ে কোনমতেই দেবে না ।

অর্ক-- সে তুমি চিন্তা করো না। পাশে থেকে লুকিয়েই দেখো না কী করছি।

(ভেতর থেকে কমলা -- মালা, মালা, কোথায় তুই?
(অর্ক এক ধারে সরে যাবে)

মালা -- ঐ মা আসছে। আমি ভেতরে যাচ্ছি। খুব সাবধান ।
(মালার প্রস্থান। কমলার প্রবেশ)

কমলা -- মালাকে তো এখানে দেখছি না। কোথায় যে যায়।
(অর্ক পেছন থেকে এসে কমলাকে প্রণাম করতে যাবে। কমলা প্রণাম না নিয়ে দূরে সরে যাবে।)

কমলা -- কে তুমি?কোথা থেকে এসেছ?

অর্ক-- না, মানে আমি।

কমলা -- কার অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছে?

অর্ক-- আমি ম্যাডাম মালার পারমিশন নিয়ে এখানে এসেছি।

কমলা -- মালা অনুমতি দিয়েছে!!  তা' তুমি কেনো এসেছ? কী চাও এখানে?

অর্ক-- না মানে, আমি আপনার মেয়ে মালাকে বিয়ে করতে চাই।

কমলা -- কী বললে, তোমার সাহস তো কম নয়। আমার মেয়ে মালাকে বিয়ে করবে!!

অর্ক-- ম্যাডাম আমার পুরো বায়োডাটা এবং সমস্ত সম্পত্তির হিসেব জেনে তবে রাজি হয়েছেন।তাই তো তিনিই আমাকে আপনার সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন।

কমলা -- আজই তাকে দেখতে রাজ কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ডঃ অর্ক রায় আসবেন তার দাদুকে সঙ্গে নিয়ে।আর মাত্র এক ঘন্টা পরে তাঁরা আসবেন।আর এ সময়ে কিনা তোমাকে মালা আমার সাথে দেখা করতে পাঠালো। আমাকে তো ও কিছুই জানায়নি।

অর্ক-- না জানাক।ওরা আসছেন আসুন। যদি এই সময়ের মধ্যে আমার সম্বন্ধে কিছু জানতে চান তবে জেনে নিন। তারপর যাকে আপনার যোগ্য মনে হবে তাকেই কন্যাদান করবেন। এতে অসুবিধার কিছুই নেই।

কমলা -- তুমি কী কর?

অর্ক--আমার বাঁশের ব্যবসা আছে।বেশ বড় ধরনের ব্যবসা।

কমলা -- বাঁশের ব্যবসা!!

অর্ক-- হ্যাঁ, আমি বহু লোককে বাঁশ সাপ্লাই করি।যেমন ধরুন, যেখানে রাজনৈতিক মঞ্চ তেরি হবে, সেখানে প্রায় এক হাজার বাঁশ দেই। এছাড়া  মারামারির জন্য ছয় ফুটের বাঁশ প্রায় হাজার দুই সাপ্লাই করি।

কমলা -- কী বলছো তুমি!!

অর্ক-- এছাড়া যাত্রামঞ্চের জন্য বছরে এক হাজার বাঁশ, সাংস্কৃতিক মঞ্চের জন্য পাঁচশোর বেশি বাঁশ,বাড়ির ছাদ তৈরির জন্য প্রায় সাতশো বাঁশ  পাঠাই।আয়--- মেরে কেটে মাসে এক লাখ।কম কী বলুন।

কমলা -- কী এলোমেলো কথা বলেছো আমার সামনে।

অর্ক-- না, মানে আন্টি, ঘাবড়াবেন না, আরো আছে।
আমি কচুর হোল সেলার।মান কচু,মুড়ো কচু, শাখা কচু,বোনা কচু আরও কত রকমের কচুর সাপ্লায়ার।
কচু ব্যবসা করে মাসে পঞ্চাশ হাজার তো বাঁধা আয়।

কমলা -- তুমি কচু ব্যবসা কর!! তোমার লজ্জা করছে না বলতে!!

অর্ক-- ম্যাডাম, আমি নিপাট ভদ্রলোক। জীবনে মিথ্যা কথা বলিনি, আর আজও আপনাকে মিথ্যা কথা বলে বিভ্রান্ত করতে চাই না। যেটা সত্যি সেটাই বলছি।

কমলা -- এটা কোথা থেকে এসময়ে এলো!!

অর্ক-- ম্যাডাম, আরও আছে। আমার মাছ ধরার জালের ব্যবসা আছে। পুকুর-ডোবায় ফেলার জাল, নদীতে ফেলার জাল, সমুদ্রে ফেলার জাল --এছাড়া সব রকমের জাল আমার কারখানায় তৈরি হয়। আপনি চাইলেও সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাবেন।

কমলা -- চুপ,আর মাথা খারাপ করবে না।এখনি বেরিয়ে যাও আমার ঘর থেকে, নইলে একটা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবো। জেনে রাখো, আত্মরক্ষার জন্য আমি সবসময় কাছে পিস্তল রাখি।     (পিস্তল বের করে তাকে করলো)
ওয়ান-- টু --

অর্ক-- সরি সরি,থ্রী আর বলবেন না ম্যাডাম, আমি এখুনি চলে যাচ্ছি। প্লিজ গুলি চালাবেন না।

কমলা -- বেরিয়ে যাও ,এই মুহূর্তে। যদি আর একটা শব্দ কর তবে পরপর তিনটে বুলেট তোমার মাথা ফুটো করে বেরিয়ে যাবে।জাস্ট গেট আউট।

অর্ক-- না মানে।

কমলা --আর কিছুই শুনতে চাই না।
(কমলা পিস্তল তুলতে অর্ক পালিয়ে গেলো)
মালা আজকের দিনে এই কাণ্ড করে বসেছে। দেখাচ্ছি মজা। মালা মালা, কোথায় তুই!!

(কমলার প্রস্থান ।মালার প্রবেশ। )

মালা -- আমি ভালো করেই জানি মায়ের গোমড়া মুখে কোনভাবেই হাসি ফোটাতে কেউ কখনো পারেনি। অর্ককে তো বলেছিলাম তোমার দ্বারা এসব হবেই না।ও শুনলো না। চ্যালেঞ্জটা নিয়ে নিল। আমার বাবা একবার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে গুলি খেতে খেতে বেঁচে গেছে।অর্ক তো বাচ্চা ছেলে।এবার কী হবে!!
মা,আমি এইখানে। তুমি কাউকে গুলি করো না।খুনখারাবি হয়ে গেলে আজকের কথাবার্তা সব ভণ্ডুল হয়ে যাবে। তুমি চেপে যাও মা। আমি তোমাকেই তখন থেকে খুঁজছি।
( মালার প্রস্থান)

           🎺🎸🪕 মিউজিক 🪕🎸🎺
*******************************************

                ✍️ তৃতীয় দৃশ্য ✍️
    স্থান-- বকুল সেনের বাড়ির বৈঠকখানা 
    সময়-- দুপুর সাড়ে তিনটা
(মঞ্চসজ্জা একই রকম থাকবে)
(ফোন করতে করতে অর্ঘ্যের প্রবেশ। মাথায় টুপি ও চোখে কালো চশমা থাকবে)

অর্ঘ্য -- হ্যালো দোলা , আমি চলে এসেছি।কাঁটায় কাঁটায় এখন দুপুর সাড়ে তিনটা। তুমি কোথায়?
(ফোন হাতে দোলার প্রবেশ)

দোলা -- ঠিক সময়েই তো এসেছো। কিন্তু কী যে হবে আমি জানি না।

অর্ঘ্য -- দাদার অপারেশনটা কীরকম হলো? 

দোলা --লুকিয়ে লুকিয়ে সব দেখেছি।

অর্ঘ্য -- দাদা জিতেছে?

দোলা -- জিতবে-- জেঠিমার কাছে!! এখন দশ জন্ম ধরে জেঠিমাকে চিনুক ,তারপর জিততে পারে।

অর্ঘ্য-- কী বলছো!!

দোলা -- তোমার দাদা হাত তুলে দে দৌড়, জেঠিমা পিস্তল উঁচিয়ে পেছনে ছুটছে আর মালাদি তার পেছনে ছুটছে। আমি বলছি, তুমি আর ঝামেলায় জড়িয়ো না। শেষ পর্যন্ত খুনখারাবি না হলে বাঁচি।

অর্ঘ্য-- দাদা ভয় পেয়ে পালাতে পারে। আমি কিন্তু পালানোর বান্দা নই।হবু স্ত্রীকে কথা দিয়েছি, তার মায়ের ভয়ংকরী ভৈরবীর মুখমন্ডলের পরিবর্তন করে দেবী কমলার হাস্যময়ী লাস্যময়ী মুখটি প্রতিস্থাপন করবো।এটা আমার চ্যালেঞ্জ।

দোলা -- তোমার দাদার অবস্থার কথা শুনেও তুমি এগিয়ে যাবে।

অর্ঘ্য -- আমি ভয় করবো না ভয় করবো না।
       দুবেলা মরার আগে মরবো না ভাই মরবো না।

দোলা -- এত সাহস তুমি কোথা থেকে পেয়েছ?

অর্ঘ্য -- পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আমি। একবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দেখি না কীরকম লাগে।

দোলা -- দেখো, তোমাকে আমি অনেকবার মানা করলাম মায়ের সাথে লাগতে যেও না, ঠকে যাবে। তুমি আমার কথা শুনলেই না। ভয় হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত যেন না বিরাট ঝামেলায় জড়িয়ে যাও।মায়ের কাছে পিস্তল থাকে, বহুবার বলেছি। যদি কোন কারণে ট্রিগার চেপে দেয় আর কিছু করার থাকবে না।

অর্ঘ্য -- সত্যি কথা বলতে কী জানো, তোমার মা বিয়ের দিন আমাকে আংটি দিয়ে আশীর্বাদ করবেন।তাই সেই দিন তার দিকে সরাসরি তাকাতে গিয়ে যদি ভয়ে কাঁপতে থাকি, তবে আমার পারকিনসন রোগ হয়েছে বলে বিয়ের আসরেই বিয়ে ভণ্ডুল করে দেবেন।তাই ঐ দিন যাতে না কাঁপি,  আগে থেকেই একটু মজা করে ভয়টা কাটিয়ে নেব।

দোলা -- জানিনা,কী বলতে কী হয়ে যাবে।

অর্ঘ্য -- তুমি পাশে পাশে থেকো।বিপদ দেখলে তুমি দৌড়ে এসে উদ্ধার করে নিও।
(ভেতর থেকে রমলা-- দোলা দোলা  বলে ডাকতে থাকবে।রমলার আসার শব্দ শুনতে পেয়ে অর্ঘ্য এক কোণে লুকিয়ে যাবে।)
(রমলার প্রবেশ)

রমলা --- দোলা , দোলা।

দোলা -- মা , এইতো আমি এখানে।

রমলা -- আর কিছুক্ষণ পরে ওরা চলে আসবেন। তোরা প্রস্তুতি নিয়ে নে।

দোলা -- ঠিক আছে মা, আমি ভেতরে যাচ্ছি।
(দোলার প্রস্থান)

রমলা -- এই ফাঁকে আমি মিঃ সমর রায়ের সঙ্গে একটু কথা বলে নেবো।
(রমলা ফোন উঠাতে গেলো।ঐ সময়েই অর্ঘ্য এগিয়ে এসে রমলার পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো)

রমলা -- কে তুমি? আমাকে প্রণাম করছো কেন?

অর্ঘ্য -- না মানে ,আন্টি আমি।

রমলা -- কে আমি? কেনো এখানে এসেছ? 

অর্ঘ্য -- আপনার মেয়ে প্রতিদিন আমার বাড়ির সামনে দিয়ে কলেজ যায়। ওকে দেখে আমি খুব পছন্দ করেছি। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।

রমলা -- কী বললে, আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও! তোমার সাহস তো কম নয়।আর কিছুক্ষণ পরে সায়েন্স কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ অর্ঘ্য রায় ওকে দেখতে আসবেন।আর তুমি কোথা থেকে এসে ঝঞ্ঝাট শুরু করে দিয়েছো।

অর্ঘ্য -- আপনার মেয়েকে আমি আমার ফুল বায়োডাটা দেখিয়ে দিয়েছি। এছাড়া আমার মাসিক আয় কত-- সব জেনেশুনে উনি আমাকে আপনার সঙ্গে আজকেই দেখা করতে বলেছেন-- ওদের এখানে আসার আগেই। তাইতো আপনার কাছে এসে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব জানাচ্ছি।

রমলা -- দোলা তোমাকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলেছে? কিন্তু ও যে নিজেই অধ্যাপক ডঃ অর্ঘ্য রায়ের সঙ্গে বিয়ের কথা জানিয়েছে। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

অর্ঘ্য -- ঠিক আছে, ওদের আসতে দিন না। যদি এই ফাঁকে আমার বায়োডাটা জেনে নেন, তবে আমার খুব সুবিধে হয়। ওগুলো জানিয়েই চলো যাব।

রমলা -- কী বলতে চাও বলো।

অর্ঘ্য -- আপনি আমাকে নিশ্চয়ই টিভির পর্দায় কয়েকশো বার দেখেছেন। আমি একজন টিভি আর্টিস্ট। নায়কের রোলই বেশি করি।

রমলা -- তোমাকে কখনো দেখেছি বলে তো মনে করতে পারছি না।

অর্ঘ্য -- সেকি আন্টি।"বর্বর"  সিরিয়ালে আমি সুমনের রোল করছি, "নরপশু"  সিরিয়ালে শঙ্করের রোল করছি,"জানোয়ার" সিরিয়ালে রাজুর অভিনয় করছি, আরো অনেক সিরিয়ালে নায়কের রোল করছি--আপনি চিনতে পারছেন না!!

রমলা -- তোমাকে তো কখনো দেখিনি।

অর্ঘ্য -- না, মানে মেক আপ করে রোল করতে হয় তো,তাই চিনতে পারছেন না। পরিচালকেরা আমার নাম রেখেছেন,মহানায়ক তরুণ তপন। এবার নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন।

রমলা -- না, আমি তোমাকে চিনতে পারছি না।

অর্ঘ্য -- দুর্ভাগ্য আমার। আসলে আপনি তো সবসময় গৃহকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন,তাই আমার চাঁদমুখ দেখার সুযোগ আপনার হয়ে উঠেনি।

রমলা -- সব শুনলাম। এবার তুমি যাও।

অর্ঘ্য -- এখনও অনেক কিছু বলার  বাকি আছে। প্লিজ আন্টি , আমাকে আর পাঁচটা মিনিট সময় দেন। এতেই আমি আমার সবকিছুর  সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করে দিচ্ছি।

রমলা -- বেশি সময় নেবে না কিন্তু।

অর্ঘ্য -- আমার একটা কীর্তন গানের দল আছে। আমি তার প্রধান গায়ক। আমি যখন গান করি বায়নার টাকা বাদ দিয়ে শুধু উপহার হিসেবে প্রতি আসর থেকে পঁচিশ হাজারের বেশি আয় করি। আমার গলা শুনলেই বুঝতে পেরে যাবেন আমি কোন লেভেলের গায়ক।(গান শুরু করলো)
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।

রমলা -- আর শোনাতে হবে না। অনেক শুনলাম। এবার যাও।

অর্ঘ্য -- হায় আন্টি,আসল প্রতিভার কথা তো আপনাকে জানানোই হলো না। আমি একজন বিখ্যাত প্লে-ব্যাক সিঙ্গার , অসংখ্য সিনেমায় গান করেছি।

রমলা -- তাই নাকি। 

অর্ঘ--তবে আর বলছি কী। আমার অজস্র গান রেকর্ডিং হয়েছে।মেলাঘাটে, পূজাপার্বণে এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমার গান মাইকে বাজতে থাকে।
আমি কুমার শানুর মতো গাইতে পারি বলে সবাই আমাকে দ্বিতীয় কুমার শানু বলে ডাকে। বিশ্বাস না হয় এখনি গেয়ে শোনাচ্ছি।
আরে অঙ্গনে মে বাবা, দুয়ারে পে মা---
তু আজা মেরা ঘরমে ---

রমলা -- চুপ চুপ,আর গাইতে হবে না। অনেক হয়েছে। এবার বেরোও, এখুনি বেরোও।

অর্ঘ্য -- আমার আর একটা পরিচয় আছে, প্লিজ,আর মাত্র তিরিশ সেকেন্ড সময় নেবো। আমি গ্ৰীন স্টার থিয়েটারের নায়ক গায়ক।এই মুহূর্তে ওখানে "বিষাক্ত পৃথিবী"  নাটক চলছে। আমিই নায়ক গায়ক সুমন। সাতশো রজনী পার হয়ে গেছে।

রমলা -- সব শুনলাম। এবার তুমি যাও।

অর্ঘ্য-- আর দশ সেকেন্ড সময় নেবো। একটি ডায়ালগ বলবো। আপনার বিশ্বাস আনার জন্য---
এই বিষাক্ত পৃথিবীতে সৎ মানুষের আর বাঁচার অধিকার নেই।বাঁচার অধিকার রয়েছে শুধুমাত্র চোর ডাকাত বদমাইশ গুণ্ডা আর যত ঠগবাজদের।ওরা দুর্বলদের ঠকিয়ে সব কিছু কেড়ে নেয়--। তাইতো আমি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছি। এই বিষাক্ত সমাজকে আমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেবো।

রমলা -- জ্বালিয়ে দাও , পুড়িয়ে দাও, তবে বাইরে গিয়ে। এবার বেরিয়ে যাও। আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। এবার পিস্তল বের করবো।

অর্ঘ্য --আন্টি প্লিজ।

রমলা -- কোন সাহসে তুমি আমার ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেছ?

অর্ঘ্য -- না মানে , দোলা ম্যাডাম তো আমাকে আসতে বলেছেন।

রমলা -- সব মিথ্যা বলছো। তোমার এত সাহস উইং কমান্ডার রমেশ সেনের স্ত্রীর মজা করতে এসেছ।
(পিস্তল বের করলো)
এখনি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে যা জালিয়াত। এক দুই -- (রমলা পিস্তল তাক করলো। অর্ঘ্য দৌড়ে পালালো)

অর্ঘ্য -- ওরে বাবারে, সামনে যম।
(অর্ঘ্য পালিয়ে গেলো, রমলাও চলে গেল। দোলা দৌড়ে প্রবেশ করলো।)

দোলা -- এত করে অর্ঘ্যকে মানা করলাম, মায়ের সাথে মজা না করতে।শুনলো না আমার কথা।দেখি উদ্ধার করা সম্ভব হয় কিনা।মা মা তুমি ওকে মেরো না।মা  তুমি গুলি চালিয়ে দিও না।  (প্রস্থান)

         🪕🎸🎺 মিউজিক 🎺🎸🪕

*******************************************
               ✍️ চতুর্থ দৃশ্য ✍️
      স্থান -- বকুল সেনের বাড়ির বাইরের বারান্দা
       সময়--- বিকাল চারটা
(মঞ্চসজ্জা -- একটি টেবিল, দুটো চেয়ার, মঞ্চের দুপাশে দুটো ছোট বেঞ্চ রাখা যেতে পারে।)

(অর্ক দুহাত উপরে তুলে পেছন হেঁটে প্রবেশ করবে আর কমলা পিস্তল তুলে প্রবেশ করবে ।তার পেছনে মালা প্রবেশ করবে)

কমলা -- একটা ডাকাত দিন দুপুরে ধরেছি। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে যা শয়তান।

মালা -- ওকে মেরো না মা ও ডাকাত নয়।ও--

কমলা -- চুপ ,তুই আমার কাজে মাথা গলাবি না।

অর্ক-- আমাকে ক্ষমা করে দিন আন্টি। আমি একশো বার কান ধরে উঠবস করছি।দয়া করে আমাকে প্রাণে মারবেন না।

কমলা-- বেশ শুরু কর।ওয়ান,টু, থ্রি --

(উঠবস শুরু করতেই অর্ঘ্যও দুহাত তুলে পেছন হেঁটে হেঁটে প্রবেশ করলো।পিস্তল তাক করে রমলাও প্রবেশ করলো।তাঁর পেছনে পেছনে দোলাও প্রবেশ করলো।)
(অর্ঘ্য প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে অর্ক উঠবস করা বন্ধ করলো)

রমলা -- আমিও একটা ডাকাত ধরেছি দিদি।প্রকাশ্য দিবালোকে দুপুর সাড়ে তিনটায় আমার ঘরে ঢুকে আমার মেয়েকে ঠকিয়ে তার পতিদেবতা হতে চেয়েছিল। এবার মরণকে বরণ করে নে।
এক দুই ---

অর্ঘ্য -- আমাকে মারবেন না আন্টি।এই আমি কানমলা খাচ্ছি।আর এ জীবনে এ বাড়ির সীমানায় পা রাখবো না।

রমলা --- কোনো কথা শুনবো না। মৃত্যুই তোর একমাত্র শাস্তি।

দোলা -- মা ওকে মেরো না।ও ডাকাত নয়।

রমলা -- তুই চুপ কর। ডাকাত চিনতে আমার ভুল হয় না।

অর্ঘ্য -- আমি কানধরে একশো বার উঠবস করবো। তারপর চলে যাব।

রমলা -- তাই কর। দুটো শয়তান। টুপি আর চশমা খুলে টেবিলে রাখ। তোদের চাঁদবদন ভালো করে দেখি!!

(অর্ক এবং অর্ঘ্য নিজেদের চশমা এবং টুপি খুলে টেবিলে রাখবে। তারপর সামনের দিকে এগিয়ে কান ধরে উঠবস করতে শুরু করবে)

রমলা -- বড়দি, এখন তো ঠিক বিকেল চারটা। এখনি ওরা এসে পড়বেন।এসব দেখলে ওরা খারাপ কিছু ভেবে নিতেও পারেন।তাঁর চেয়ে তাড়িয়ে দেওয়াই মঙ্গল।

কমলা -- ঠিক বলেছিস। ওদের আসার সময় হয়ে গেছে।

কমলা -- যা, দূর হয়ে যা, এখান থেকে।আর যদি কোনদিন সামনে দেখতে পাই , তবে এক বলার আগেই ট্রিগার টেনে দেবো।

অর্ক -- এই কানমলা খেয়ে বলছি আর এ জীবনে এখানে আসব না।

অর্ঘ্য -- আমিও কানমলা খেয়ে মা দুর্গাকে শপথ করে বলছি,আর এ বাড়ির চৌকাঠ পেরোবো না।

অর্ক-- চল ভাই ,পালিয়ে চল।

অর্ঘ-- চল দাদা,প্রাণ নিয়ে পালিয়ে চল।

কমলা -- এদুটো আবার দুই ভাই নাকি !!

রমলা -- তাইতো মনে হচ্ছে কথা শুনে।

কমলা -- দুটোই ডাকাত!! না এদের ছাড়া চলবে না।

রমলা -- আমি গুলি করব বড়দি।এ দুটোকে এখনই
যমালয়ে পাঠাবো।

(রমলা পিস্তল তুলতেই দোলা তার হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিল)

কমলা -- তোর মায়েরটা ছাড়িয়ে নিলে কী হবে।
আমার কাছে তো পিস্তল আছে ।

(কমলা পিস্তল তাক করতেই মালা তার হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিল)

মালা -- মা, তুমি কি ওদের চিনত পারছো না ?

দোলা -- মা , তুমিও কি ওদের চিনতে পারলে না ?

মালা -- কোথাও দেখেছো-- মনে করার চেষ্টা কর। চিনতে পেরে যাবে।

দোলা -- তুমিও ওদের দূর থেকে দেখেছো।একটু ভাবো মা, চিনতে পেরে যাবে।

(কমলা অর্কের দিকে এগিয়ে এল। রমলা অর্ঘ্যের কাছে এসে ভালো করে দেখতে লাগল।)

কমলা -- আচ্ছা, তোমাকে মনে হয় কলেজের স্টাফ রুমে মালার পাশে বসতে দেখেছি। তাছাড়া তুমি কলেজ ফাংশনে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলে না?

অর্ক-- না মানে হ্যাঁ।

কমলা -- তুমি অধ্যাপক ডঃ অর্ক রায়?

অর্ক-- হ্যাঁ ,আন্টি।

কমলা-- এ কী সর্বনাশ ---!!
(কমলা লজ্জা পেয়ে সরে গেলো)

রমলা -- তোমাকে-- তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি। মনে এসেছে। তোমাকে দোলার কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের ক্লাস নিতে দেখেছি। তুমি দোলার সঙ্গে "কর্ণ কুন্তি সংবাদ" মঞ্চস্থ করেছিলে না?

অর্ঘ-- না,মানে হ্যাঁ।

কমলা -- একি বাবা, তোমাদের বিকেল চারটায় আসায় কথা। তোমরা আগে থেকে এসে এসব কি করলে বাবা!! আমাদের খুব লজ্জা পাচ্ছে!

রমলা -- তোমরা দুজনেই অধ্যাপক। আমাদের জামাই হবে।এসব কেন করলে বুঝতে পারছি না।

অর্ঘ্য -- আন্টি, আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

কমলা -- আর একটু হলেই তো ট্রিগার টানতে যাচ্ছিলাম।কী সর্বনাশ হয়ে যেতো।

রমলা -- তোমরা তো তোমাদের দাদুকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল চারটায় আসবে, এই কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এসব কেন করলে বুঝতে পারছি না।

কমলা -- মালা, দোলা--তোরা দুজনে মিলে কিছু ফন্দি করেছিস।বল--ওদের দিয়ে এসব কেন করালি?

মালা -- মা, তোমরা সবসময় উগ্ৰ মেজাজ নিয়ে থাকো। কেউ তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ে কথা বলতে পারে না। মজা করা তো দূরের কথা।

দোলা -- তোমাদের অধ্যাপক হবু জামাইবাবুরা আমাদের চ্যালেঞ্জ করেছিল যে দুই হবু শাশুড়ির মুখ-- মিষ্টি মজার হাসিতে ভরিয়ে দেবে।

মালা -- বিয়ের পর তো এমন নাটক করা আর সম্ভব হবে না।তাই আগেই এই পালাগানটি সেরে ফেলেছে।

কমলা -- এদের কাণ্ডকারখানা দেখে তো না হেসে আর পারছি না।

রমলা -- কী অধ্যাপক জামাইরে বাবা, শাশুড়িকে দেখলেই ভয় পায়। আচ্ছা বাবা, আমরা জোরে জোরে হাসছি।তোমরাও হাস।

অর্ক-- মালা, দোলা,তোমরা পিস্তলগুলো ফেলে দাও। পিস্তল হাতে থাকলে হাসি আসবে না। হবু শাশুড়ি মায়েরা যদি আবার তাক করে বসেন।

(ওরা পিস্তল ফেলে দিল। সবাই হাসতে লাগলো)
কমলা -- এবার তোমরা খুশি তো বাবাজীবনরা!!

রমলা --- এতো রিস্ক না নিয়ে এমনি বললে হতো, আমরা হাসতাম। ভাগ্যিস পিস্তল চালাইনি।

অর্ক-- মালা, এবার আমাকে বীরপুরুষের শিরোপা দেবে তো?

অর্ঘ্য -- দোলা, এবার তুমি নিশ্চয়ই আমার মাথায় বিজয়ীর মুকুট পরিয়ে দেবে?

কমলা  -- হ্যাঁ বাবাজীবনরা, ওরা বলুক না বলুক, আমরা ঘোষণা করছি, তোমরা আমাদের গোমড়া মুখে হাসি ফুটিয়েছো।

রমলা -- বড়দি, বিকেল চারটা পেরিয়ে গেছে। ওরা বোধহয় এখনিই পৌঁছে যাবেন।

অর্ঘ্য -- সরি,হবু শাশুড়ি মা। ওরা নয়। উনি একা মানে আমার শ্রদ্ধেয় দাদু, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডঃ সমর রায় এখনই পদার্পণ করবেন।

অর্ক--- ঐতো দাদু এসে গেছে।

(ধোপদুরস্ত পোশাকে সমরের প্রবেশ।এক হাতে দই মিষ্টি অন্য হাতে ওয়াকিং স্টিক ।দই-মিষ্টি টেবিলে রাখলো)

সমর-- দুটো কী শয়তান হয়েছে! একসাথে আসবে বলেও দুই মূর্তি আগে থেকেই হাজির। ড্রাইভারকে বলে দিয়েছে, আমরা সরাসরি পৌঁছে যাব, তুমি দাদুকে নিয়ে চলে আসবে।

কমলা --আসুন আসুন।

(কমলা রমলা, মালা ও দোলা সবাই সমরকে প্রণাম করবে।)

সমর-- মিসেস সেন কোথায়?
(বকুলের প্রবেশ)

বকুল -- নমস্কার মিঃ রায়। আপনার গলার শব্দ পেয়ে আমি চলে এলাম।

সমর-- আমার প্রথম কাজ হচ্ছে এই দুটো গরুকে আগে লাঠিপেটা করা।নইলে মনে শান্তি পাবো না।

বকুল -- কী করেছে ওরা?

সমর-- আগে পেটাই,তারপর বলছি।

(সমর, অর্ক এবং অর্ঘ্যকে লাঠি দিয়ে আলতো করে আঘাত করতে গেলো।অর্ক লাঠি ধরে নিল।)

অর্ক-- আমরা বড় হয়ে গেছি। আমাদের এভাবে মারতে নেই।

সমর-- রিটায়ার্ড প্রিন্সিপাল ডঃ সমর রায়কে জ্ঞান দিচ্ছিস।

অর্ঘ্য-- না দাদু, এটা আমাদের হবু শ্বশুরবাড়ি বলে কথা।

অর্ক--সামনে দাঁড়িয়ে অবসরপ্রাপ্তা অধ্যক্ষা ডঃ বকুল সেন,তাঁর দুই পুত্রবধূ মিসেস কমলা সেন এবং মিসেস রমলা সেন।

অর্ঘ্য -- তাছাড়া তোমার সামনে রয়েছে দুই জন উচ্চশিক্ষিতা মহিলা । ওদের সামনে মার খেলে সম্মানটা একেবারেই চলে যাবে!

অর্ক--দাদু আমরা অনেক বড় হয়ে গেছি। এখন লাঠির আঘাত করতে নেই।
(অর্ক এবং অর্ঘ্য দুজনে দাদুর গালে চুমু খেলো)

সমর-- তোরা যে সত্যিই বড় হয়েছিস, সেটা যারা বলে বলুক, আমি কিন্তু মানতে পারি না। তোরা যেন সেই ছোট্ট ছেলে হয়ে আমার পিঠে চড়ে খেলা করছিস।

বকুল -- ডঃ রায়।

সমর-- হ্যাঁ ডঃ সেন, ওরা দুজন আমার কাছে এখনও সেই ছোট্ট দাদু সোনা। আমার প্রাণের প্রাণ।ওরা আমার ছেলের যমজ সন্তান। অর্ক অর্ঘ্যের চেয়ে পাঁচ মিনিটের বড়। খুব কষ্ট করে ওদের বড় করেছি।ছয় মাস বয়সে ওদের অন্নপ্রাশন হওয়ার পর থেকেই ওরা দুজন আমার দুপাশে শুয়েই এত বড় হয়েছে।এখনও দুজন আমার সাথেই শুয়ে।

মালা -- আপনার সাথে শুয়ে?

সমর-- হ্যাঁ গো দিদিভাই। শুধু তাই নয়, এখনও বাবুরা রাত্রে না খেয়ে শুয়ে পড়লে এই বুড়োটাকেই বিছানায় বসে খাইয়ে দিতে হয়।

দোলা -- ওরা এত অলস!!

সমর -- শুধু দাদু-ঠাকুমাকে দেখলেই অলস হয়ে পড়ে।মা-বাবার সামনে ওরা কনকর্ড জেট বিমান!!

সমর-- আমার পালঙ্কের মাপ শুনলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। এটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের মধ্যে একটি, লম্বায় বারো ফুট আর চওড়ায় দশ ফুট।

বকুল -- এতো বড় পালঙ্ক!!

সমর-- জানি, বিশ্বাস করবেন না। তবে এটাই সত্যি।
( সবাই হাসবে)
 হ্যাঁ,অন্য কথায় আসি। আমার নাতিদের মতো মানুষ আজকাল খুব একটা দেখা যায় না।ওদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা বাদই দিলাম। কিন্তু মানুষ হিসেবে ওদের জুড়ি মেলা ভার। ওরা আমার অহংকার।

রমলা -- তবে মেসোমশাই, একটা কথা বলতে পারি, ওরা খুব বড় অভিনেতা।

সময়-- কিন্তু, আমি তো কখনো ওদের অভিনয় করতে দেখিনি।

কমলা -- ছোটখাটো অভিনেতা নয়।বিশাল বড় মাপের অভিনেতা। এই দেখুন না, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ডাউনলোড করে দেখাচ্ছি।

অর্ক-- ওরে বাবারে, ফুটেজ ডাউনলোড করছেন।

কমলা -- এটা মিলিটারি ব্রিগেডিয়ারের বাড়ি। সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকবে না!!

রমলা -- দোলার বাবা ফ্লাইং কমাণ্ডার।তাঁর বাড়িতে সিসি ক্যামেরা থাকবে না, এটা ভাবলে কীকরে বাবাজীবন!

অর্ক-- আমি জল খাবো !

অর্ঘ্য -- আমারও খুব তৃষ্ণা পাচ্ছে!

বকুল -- শুধু জল নয়, সঙ্গে লুচি, আলুর দম, মটর পনির, খাসির মাংস, রসগোল্লা, রসমালাই আরো অনেককিছু আছে।

অর্ক -- না মানে ওসব খাবো না। শুধু জল খাবো!!

সমর-- কী কান্ড করেছিস যে ভয়ে কাঁপছিস দুজনে?

অর্ঘ্য -- শুধু জল খাবো দাদু, কোথায় কাঁপছি!!

সমর-- ঠিক আছে,এখন ফুটেজ দেখাতে হবে না।
ডঃ সেন, মেয়ে দেখানোর বন্দোবস্ত করুন। যদিও ওরা নিজেরাই দেখেশুনে সব ঠিক করে রেখেছে, তবুও  একবার সোনা দিদিভাইদের দেখে নিই। তবে  হ্যাঁ, আমার অন্য কোনো চয়েস নেই। ওদের মতই আমার মত। শুধু প্রাণ ভরে ওদের আশীর্বাদ করব বলে-- আমার এখানে আসা।

বকুল -- ওরা আপনার সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।

কমলা -- এ আমার মেয়ে মালা, রাজ কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপিকা।

রমলা --আর এ হলো আমার মেয়ে দোলা, সায়েন্স কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা।

সমর--এরা দুজন আমার নাতবৌ হবে ‌!! এদের তো আমি কলেজ ফাংশনে নৃত্য করতে দেখেছিলাম।

কমলা -- ওরা দুজনেই খুব ভালো গান গাইতেও পারে।

সমর-- আয় দিদিভাই, তোরা আমার কাছে আয়। তোরাই আমার লক্ষ্মী,তোরাই আমার সরস্বতী, তোরাই আমার দশভূজা মহামায়া দেবী দুর্গা।

বকুল -- আপনার পছন্দ হয়েছে তো-- আমার এই দুই নাতনিকে?

সমর -- ডঃ সেন,এই দুটো গাধা যাদের পছন্দ করেছে-- তাতে ওদের কিছুটা বুদ্ধি আছে বলে মনে হয়।এমন দুটি হীরার টুকরো আমার বাড়ির নাতবৌ হয়ে যাবে, ভাবলেই মনে হয়-- আমি ভীষণ ভাগ্যবান।

অনার্যপুত্র বলছে কথা -- সঞ্জীব চক্রবর্তী

অনার্য পুত্র বলছে  কথা        
সঞ্জীব চক্রবর্তী
২০/৮/২৪
এক অনার্য পুত্র বলছে কথা শুনি তবে 
একদিন প্রতিটি কথা মনে রবে।
ছিলনা দেহে মনে রঙের বাহার
হাত পেতে করেনি ভিক্ষা আহার।

আমি অপরাজেয় মায়ের সন্তান করি জয়
আমার নামটি শুনে রাখো তোমারা বিজয়।
আমি অগ্নি সম বুকে আছে বল আমি নির্ভয়
যাহা পাই দলে দিয়ে করি ধ্বংস আমি দুর্জয়।

আমি পূবের রবি তোমাদের জন্য জন্ম উদয়
ভাঙি ছলনা জাত পাতের বাঁধন গড়ি বোধোদয়।
আমি এসে দাঁড়াই দোরে অশান্ত যখন সময়
আমার জীবন চলে আপন পথে সর্বদা কর্মময়।

একদিন ঝড় থামবে এখন চলছে খেলা প্রলয়
ধর হাত শক্ত করে দূর্বলে দাও তোমরা অভয়।
পিছনে ফিরে দেখ পালায় যারা কতিপয়
এখনো বেঁচে আছে মৃতের মত মোহময়। 

আমি ক্রন্দন রত মায়ের অশ্রু মুছে দেই 
আমি অপরাজেয় অনার্য পুত্র দেখ সেই।
আমার বক্ষে শত ক্ষতের চিহ্ন এখনো আছে 
সামনে করি লড়াই রক্তক্ষরণে পালাইনি পাছে।

আমি দাবানল সম আবর্জনা পুড়ে করি ছাই
আমি  করি লন্ডভন্ড যাহা সম্মুখে পাই।
আমি আপন মনে করি উদ্দাম নৃত্য
আমি অপরাজেয় অনার্য পুত্র হবনা কাহারো ভৃত্য।

গন্তব্যে পৌঁছাতেই হবে -- দিলীপ ঘোষ

গন্তব্যে পৌঁছাতেই হবে
দিলীপ ঘোষ
১৮/০৮/২৪
গন্তব্য অনেক দূর
হাঁটতে হবে অনেকটা পথ
একটু হেঁটে হাঁপিয়ে পড়লে চলবে না
লক্ষ্যে পৌঁছাবেই, - নিতে হবে শপথ।

দীর্ষ পথে
পার হতে হবে সমস্যার খানাখন্দ
অভিষ্ট লক্ষ্যে স্থির থেকে
লড়তে হবে জেদি লড়াই।

শত্রুরা চেষ্টা করবে মরন কামড় দিতে
শয়তানের নানান হাতছানি মিলবে পথে
ভাড়াটে সুবিধাভোগীরা নামবে শয়তানদের পক্ষে
সব বাঁধ ভেঙে পৌঁছাতে হবে অভিষ্ট লক্ষ্যে
ধীর স্থির শান্তভাবে ভাঙতে হবে বেড়া
আদর্শের হাতিয়ার শানিত রেখে।

বন্ধুর বেশে আসবে শত্রু
এক্স-রে রিপোর্ট দেখে নিতে হবে পদক্ষেপ
হৈ হট্টগোলের জোয়ারে ভেসে গেলে
নিজেকেই একদিন করতে হবে আক্ষেপ।

বিন্দুমাত্র মাথা নত নয়
শিরদাঁড়া সম্পূর্ণ সোজা রেখে 
মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়লে লড়াই
গন্তব্যে পৌঁছানো যাবেই যাবে
যত উঁচু হোক তার খাড়াই।

আজ কাল -- তরুণ চ্যাটার্জ্জী

 আজ কাল 
 তরুণ চ্যাটার্জ্জী 
 18/08/24
আজকে দুঃখ আঁধার যত,
ঘিরেছে চারিধারে।
কালকে জীবন উঠবে ভরে,
সুখের দরবারে।

আজকে তুমি নাগাল ছাড়া,
বিরাট ক্ষমতাশালী।
রাজ রাজত্ব মোহের ধাঁধা,
আদতে চোরাবালি।

আসা যাওয়া কালের নিয়ম,
এমন‌ই চলে খেলা।
আজকে যারা মাথায় চড়ো,
কাল বিচারের পালা।

কালের চোখে কাপড় বাঁধা,
দন্ড সবার সমান।
আজকের এই শক্তি দম্ভ,
কালকে হবেই ম্লান।

আজটা তোমার হবে জমা,
কালের অমোঘ হাতে।
কড়ায় গণ্ডায় হিসেব হবে,
কালের আদালতে।

নতুন বিকাশের অগ্রগতি -- বিকাশ সাহা

  নতুন বিকাশের অগ্ৰগতি
  বিকাশ সাহা
  ১৭-০৮-২৪
আজ প্রদীপ নিভে গেছে সমাজ তৈরির কারিগর অজানা? বিকাশের যোগ্যতা আজ প্রশ্নচিহ্নে রূপান্তর। 
নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে সবাই, শিক্ষার দাম নেই- যাদের আছে টাকা- বিকাশ তাদের, শিক্ষিত হয়েও ভবিষ্যতের পথে খুঁজছি একটু আলো, টাকার দুনিয়ায় হারিয়ে গেছে কি❓আমার শিক্ষার বিকাশ ও আত্মবিশ্বাসের প্রভা। 
আমি যে আজকাল  অগ্ৰগতির মুখ, শিক্ষা নিয়ে আছি বেকার- বুনেছি স্বপ্নের জাল, 
বাবার কষ্টের টাকায় শিখেছি শিক্ষা, শিখেছি কি ভাবে লিখতে হয় কবিতা। 
আজ কিভাবে ভেঙে যাবে এই সব মায়াজাল? 
কি করে মানি-- শিক্ষার দাম নেই- আছে টাকার দাম, টাকা মনে হয় ভীষণ বড়ো- এটাই আজ কঠিন পরীক্ষা। 
তবুও আমি জানি এই হারিয়ে যাওয়া নয় চিরস্থায়ী, আমার অন্তরে আছে আজ ও লড়াইয়ের অগ্নি, একদিন ঠিক সময়ই বলবে, আমি ও আমরা কিভাবে  আবার ফিরে আসতে পারি, 
সমাজের নতুন ভোরে, না রাতের অন্ধকারে, জ্বলবে আমি এবং আমাদের  কর্মপ্রভা। 
হয়তো আজকের এই বিপর্যয় আমার ও তোমার বা সবার, জাগরণের নতুন দিশা, অন্ধকার শেষ একদিন আসবেই, আসবে এক নতুন সূর্যোদয়, বিকাশের পথেই খুঁজে নেবো নতুন মুক্তির আশা। 
তাই হার মানবো না, লড়বো অবিরত, আমার ও আমাদের দক্ষতা আমাদের সৃজনশীলতা আমাদের এটাই হাতিয়ার, ঠিক এই পথে আবার গড়ে নেবো আমার কর্মক্ষেত্র, 
বারে বারে ফিরে আসবে এই সমাজে-- সমাজ তৈরির কারিগর মহান মানুষ, আবার ফিরবে কি এ সমাজ উন্নতির পথে- হবে কি আবার নতুন বিকাশের অগ্ৰগতি, 
এটাই প্রশ্নচিহ্ ।।

অবাক পৃথিবী -- দীপ্তি চৌধুরী ঘোষ

অবাক পৃথিবী 
দীপ্তি চৌধুরী ঘোষ 
20/08/24
 অবাক পৃথিবী যতই দেখছি
 বিস্মিত হয়ে যাই,
 মানুষে মানুষে বিভেদ যে কত
 চিন্তা করছি তাই |

 অর্থের সাথে ধর্ম বিরোধ
 মানুষ সদাই করে,
 হিংসা-বিদ্বেষ খুন-খারাপিতে
 কতনা রক্ত ঝরে |

 ধনী-দরিদ্র সবাই সমান
 মানুষে জগৎ সারা,
 কারোর ভেতর হিংসায় ভরা
 রক্তের একি ধারা!

 ভুবন মাঝারে গরিবের তরে
 কাঁদে না কারোর মন,
 স্বার্থের টানে ক্ষমতার জোরে
 লুটছে পরের ধন |

 অবাক করল বিধাতা আমায়
 মানব জন্ম দিয়ে,
 মানুষে মানুষে ঝগড়া বিবাদ
 অর্থ ধর্ম নিয়ে |

রাখী বাঁধা -- বনানী সাহা

 রাখী বন্ধন 
 বনানী সাহা 
 ২০ -০৮- ২০২৪
শুধুই সুতো নয় তো ; এ যে ভালোবাসা ---- 
এ যে বিশ্বাস আর প্রতিজ্ঞা!
যা রাখী হয়ে ভাইয়ের হাতে শোভা পায় ।
 কতো আনন্দে বোন পরিয়ে দেয় !
ভাইয়ের প্রতিজ্ঞা বোনকে  সুরক্ষা দেবার আর- ----
বোনের বিশ্বাস, ভাই পাশে আছে ভয় কী আবার? 
ভাইবোনের পবিত্র সম্পর্ক আরো মজবুত করে রাখী।
রাখী বন্ধন আজ আর শুধু ভাইবোনের উৎসব নয়।
কবিগুরু বঙ্গ ভঙ্গের প্রতিবাদে ---
রাখী বন্ধন শুরু করেছিলেন বাংলাতে ।
সেই ১৯০৫ সালে হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই বোঝাতে ।
উঁচু নিচু জাতি ভেদাভেদ ভুলে ----
জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রাখী পরিয়েছিলেন---
সেদিন সকলের হাতে ; আবার শুরু হলো রাখী বন্ধন ।
তখন থেকে রাখীবন্ধন শুধু ভাই বোনের উৎসব নয় ।
এ যে সকল জাতি ধর্ম বর্ণের, ধনী গরিবের সবার মিলন উৎসব !

রাখী বাঁধা -- কালাচাঁদ মন্ডল

 রাখী বাঁধা 
 কালাচাঁদ মন্ডল 
 ১৯/০৮/২০২৪
শ্রাবণ পূর্ণিমা তিথি, বলে চন্দ্র ডাকি,
ভ্রাতার মঙ্গল আর দীর্ঘায়ুর তরে,
চিত্তের  পবিত্রতায়  মনে পণ ধরে,
বেনেরা ভ্রাতার হস্তে বাঁধো হেসে রাখী।

দ্রৌপদী পঞ্চপাণ্ডব পত্নী শুদ্ধ থাকি,
কৃষ্ণকে পরায় রাখি ভক্তি শ্রদ্ধা ভরে,
কর্ণাবতী বাঁধে রাজা  হুমায়ুন করে;
‘আত্মার সন্ধি’ বন্ধনে  রাখি নহে ফাঁকি।

রীতি মেনে বোন বাঁধে রাখী ভাতৃ হাতে,
মঙ্গল হয় ভ্রাতার সর্ব কাজে তাতে।

সম্পর্ক অটুট হয় রাখী বাঁধা দিয়ে,
রক্তের সম্পর্ক বিনে আপনত্ব জন্মে;
ভ্রাতৃত্বের মাঝে বাঁধা পড়ে দুটি হিয়ে,
আত্মার আত্মীয় বলে দায় সৃজে মর্মে।

একটি অসম্পূর্ণ চিঠির প্রেক্ষিতে -- আইনুল হোসেন শানু

একটি অসম্পূর্ণ চিঠি' র প্রেক্ষিতে 
আইনুল হোসেন সানু' 
২০/০৮/২০২৪
আজ থেকে 
তেত্রিশ বছর আগে এবং  
একটাই চিঠি, সেও আধ ভেজা !
অজস্র ভুল বানানের সমারোহে তাতে
সম্বোধন হীন আর অসম্পূর্ণ
ছিলো চিঠি -টা !

তবে, 
ছিলোনা তাতেও কোনো দুঃখ! 
লিখেছিলো পেয়েছিলাম একান্ত মনে
সেটাই সব চেয়ে বড়!  

অনেক দিন
পড়েছি অনেক বার ভেবেছিও
অনেক কষ্টেও পারিনি কোনো মানেই 
দাঁড় করাতে,!

প্রতি বার'ই 
চিঠিতে লজ্জাবনত একটা
মুখের প্রতিচ্ছবি উঠেছে হেসে!  
আর প্রতি বারই
খুঁজে পেয়েছি প্রতি-টি লাইনের
আলাদা মানে এবং প্রতি-টি চিঠির 
ভিন্ন উত্তরও রেখেছি লিখে ! 

কিন্তু 
হয়নি পোষ্ট করা
অবসরে চিঠি গুলো পড়ি 
সাথে উত্তর, আক্ষেপে ঝরে দীর্ঘশ্বাস
এবং অপেক্ষা' ঐ অনন্তেরর! 
আজ
কাল নয় পরশু, ভাবি' 
ঠিকই একদিন কিংবা হয়ত
না কোনো দিনও
তবুও 
প্রতীক্ষমান 
প্রতীক্ষা' র প্রহর
প্রতীক্ষণ অপেক্ষা' র ! 

মনকে বলি,
দেখিস ঠিক একদিন
হতে পারে আজই নয় কাল 
কিবা হয়ত হবে পরশু 
দিনান্তে
বিস্তর অবসর অবসন্ন মনে
অবগাহন লোক চক্ষুর অন্তরালে,
শ্রান্ত ভ্রান্ত পদক্ষেপে নেই ক্ষতি তাতে ! 
হোক নিরসন 
অপেক্ষা-প্রতীক্ষিত দীর্ঘ-ময় 
যে' যাই বলুক সে' তো' তোমার'ই 
শুধু তোমার-ই জন্য.... 

রাজা সাজা -- বনানী সাহা

 রাজা সাজা 
 বনানী সাহা 
 ১৭- ০৮- ২০২৪
ছোট্ট ছোট্ট চড়ুইগুলো ---
এসে বকের কাছে,
মাছ খাবে বলে ---
তারা বায়না ধরেছে ।

তাই না শুনে মিছিমিছি --
শালিক লাগায় চেঁচামেচি ।
ব্যাপারটা কি  হচ্ছে দেখতে --
ময়না, ঘুঘু ,কাকাতুয়াও এসেছে ।

বনের মাঝে এমন শোরে ---
শেয়াল ভায়া  এলো দৌড়ে।
চশমা চোখে এঁটে পন্ডিত --
ভাবছে ,কি বলা ঠিক ?

এমন সময় বনের রাজা ---
হুঙ্কারে এলেন, দেবেন সাজা।
পাখিগুলো উড়ে গেল।
বাকিরা ভয়ে পালালো !

কাঠবেড়ালি ছিল পাশে--
কান্ড দেখে ,মিটিমিটি হাসে।
সিংহ গেল রেগে বেজায় !
সবাই কে শাস্তি দিতে চায় !

ভয়ে কাছে কেউ এলো না।
রাজার কথা কেউ শুনলো না!
ভয় দেখিয়ে রাজা সাজা!
ভালোবাসায় রাজা ,সুখী প্রজা।

Saturday, August 17, 2024

যাবার পালা -- তরুণ চ্যাটার্জ্জী

 যাবার পালা
 তরুণ চ্যাটার্জ্জী 
 16/08/24
দিকে দিকে শুধু হাহাকার ওঠে, 
শুনি মানুষের কান্না।
লজ্জা কলঙ্ক পদে পদে ফোটে,
নাগরিক ক্ষোভ ঘেন্না।

ছোট্ট অথবা বিচ্ছিন্ন নয়,
অপরাধ ধর্ষণ কেলেঙ্কারি।
বিচারের নামে প্রহসন হয়,
সুরক্ষিত নয় নারী।

শিরদাঁড়া কারো সোজা নেই আর,
সুশীল মানুষজনের‌।
ভিক্ষা অথবা ভর্তুকি তার,
শীতঘুমে রাখে মনের।

দুষ্কৃতীদের অবাধ তান্ডব আর,
ঘুষ প্রতারণা চুরির খেলা।
রাজপথ জুড়ে প্রতিবাদী ঝড়,
এবার যাবার পালা।

এখনও সময় -- নিবারণ চন্দ্র দাস

এখনও সময় 
নিবারণ চন্দ্র দাস 
১৬/০৮/২০২৪
বুদ্ধিজীবী নষ্ট এখন হালেডালে, 
সবাই এখন ভিক্ষা করে সাতসকালে।
শিরদাঁড়া সব বন্ধকী যে টাকার কাছে ,
খাওয়া মাখা হয়ে গেলেই ওরা বাঁচে।

মানুষ এখন ধান্দাবাজির বিষম পাঁকে,
যৎসামান্য জুটে গেলেই বিভোর থাকে।
ঘটে চলুক যেথায় যতেক অনাসৃষ্টি,
নামে নামুক ধরণীতে অগ্নি বৃষ্টি।

তাও তো আমি চুপ করে রই ভীষণ ভয়ে,
শিরদাঁড়া আর বুদ্ধিবৃত্তি যাচ্ছে ক্ষয়ে।
এমন একটা দিন কোনদিন আসুক চুপে,
প্রাণের সাড়া উঠবে জেগে ধ্বংসস্তূপে।

ধ্বংস করে সব সম্পদ যেন পিতৃদত্ত,
ভুলে যে যায় যখন তারা মদ-মত্ত।
সময় এখন রুখে দেওয়ার ধান্দাবাজি,
প্রয়োজনে প্রাণ দিতে হয় তাও রাজি।

ফিরে দাঁড়াও দেশে দেশে ঘরে ঘরে,
আফশোসটা করতে না হয় পরস্পরে।
পাশের ঘরে লাগলে আগুন পুড়বে এ ঘর,
তাই এখনও সময় আছে সংশোধন কর।
                    

স্বাগত হে স্বাধীনতা -- নেপাল বিশ্বাস

 স্বাগত হে স্বাধীনতা 
 নেপাল বিশ্বাস 
  ১৫.৮.২৪
শক্ত পোক্ত ব্রিটিশ রাজ্য ধ্বংস করেছি ভুজবলে, 
মসনদ তার পিষ্ট হয়েছে ভারতবাসীর পদতলে ।
নেতাজি সুভাষ আশ্বাস দেন রক্ত দাও হে ভারতীয়, 
নিশ্চয় পাবে স্বাধীন ভারত সম্মান পাবে রাজকীয় ।

ত্যাগের মন্ত্রে দীক্ষিত হলো সকল ভারত বর্ষীয়, 
শিরায় শিরায় বহিতে লাগিলো আনন্দধারা স্বর্গীয় ।
বিদ্রোহিকবি কাজীনজরুল, তারসঙ্গীতে সবে মাতে, 
চারিদিকে শুধু অগ্নি তুল্য বিদ্রোহ চলে দিনেরাতে ।

সূর্য সেন ও ক্ষুদিরাম বসু দলেদলে তোলে আলোড়ন, 
অখণ্ড দেশে সেসময় ছিলো সব ভারতীয়'র ভালো মন ।
তাই উনিশ'শ সাতচল্লিশ সাল আমাদের স্মরণীয়,
প্রতীক্ষান্তে আগস্টে হলো বিশ্বে ভারত বরণীয় ।

এস্থানে নাই কোন রেষারেষি ভারতবর্ষে আছি বেশ,
বিশ্ব মধ্যে ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক এক দেশ ।
বিভিন্ন ভাষা তবুও আমরা বন্দি মাতাকে এক সুরে,
দূরে আছি সব তবু মনে হয় কেউ তো কারোর নয় দূরে ।

ভারতের মাটি ভারতের বায়ু ভারতের জল মনোরম,
ভারতেই গড়া অমর কীর্তি ভারত কীর্তি অনুপম ।
ভারতবর্ষ বিশ্ব মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসন করে লয়,
তাইতো আমরা গর্বিত সদা ভারতীয় মোর পরিচয় ।

এর নাম স্বাধীনতা ? -- শক্তিপদ ঘোষ

   এর নাম স্বাধীনতা ?
   শক্তিপদ ঘোষ 
    ১৫ , ০৮ , ২০২৪
তোমার কথা হে মৃত্যুঞ্জয় রাখিনি মনেতে কিছু ,
দু'হাতে কুড়তে ব্যস্ত ভীষণ মাথাটাকে রেখে নিচু ;
মেরেছি আমরা নিঃসঙ্কোচে বিবেকের টুটি টিপে ,
বোধের প্রদীপ অন্তরে সে তো কবেই গিয়েছে নিবে ।
মায়ের জন্যে মাটির জন্যে রক্ত তেমন ঝরানো ,
ফাঁসির মঞ্চে সদর্পে শির সোজা রেখে সেই দাঁড়ানো 
সে সব কাহিনী অনেক ধুলোয় গিয়েছে সকলই ঢাকি' ;
মিথ্যের সাথে মিথ্যের দেখি অদ্ভুত মাখামাখি ।

কটাশে এ দুই চোখের তারায় জ্বলছে অগ্নি লালসার 
মিথ্যের দেখি উদ্বাহু নাচ ভান করি দেখে না দেখার ;
কথার ঝড়েতে মঞ্চ কাঁপাই কৌশলে কাটি গাঁট ,
ভিটেছাড়া করে তার 'পরে গড়ি বহুতল রাজপ্রাসাদ ।
মা'র কোল থেকে শিশু চুরি করে পণের পাল্লে তুলি ,
শয়তান সাথে হাত রেখে হাতে মমতাকে যাই ভুলি' ;
মনের খাঁচায় হিংস্রতা পুষি হীন স্বার্থের জন্যে  ,
শান দিই কষে ছুরিতে যে যার আছি যত সেই বন্যে ।

তেল দিতে পায়ে দু'হাতে আমরা হয়ে গেছি বেশ রপ্ত ,
সে আগুন নিভে জল হয়ে গেছে আমাদের সেই রক্ত ;
দানের এ বোঝা বইতে বইতে হয়েছি ন্যুব্জ-পিঠ ,
কৃপার চাবুক সইতে সইতে পিঠ হয়ে গেছে কংক্রিট ।
ক্রীতদাস হতে ভালবাসি তাই ক্রীতদাস হয়ে থাকি ,
কুম্ভীরে ডেকে আঁধারেতে সব মরণের খাল কাটি ;
মান-সম্মান নিয়ে ভাবি না কো ভাবি তা' নেহাতই তুচ্ছ ,
আকাশ না চেয়ে খাঁচার আঁধারে নাচিয়ে চলেছি পুচ্ছ ।

রাজনীতি আজ হারিয়ে গিয়েছে এ না-নীতির আঁধারে,
দেশপ্রেম সেই গোল্লায় গেছে লক্ষ্যটা স্থির ভাঁড়ারে  ;
এই আমরাই ব্রিটিশের হাত ধরেছিনু করে শক্ত ,
যার জন্যেই  সে দিন বুকের  অনেক গিয়েছে  রক্ত ।
সোনার ছেলেরা আজ আর নাই  আমরা  তুলেছি শির ,
রক্ত দিই না রক্ত চুষতে আছি নিদারুণ অস্থির ;
সবুজ পাতারা বোধিবৃক্ষের সকলই গিয়েছে ঝরে ,
বুকের ভিতরে মরুঝড়ে প্রেম কবেই গিয়েছে মরে ।

নিজের চলা যা চলব না যদি বলব না যদি কথা , 
স্বাধীন হয়েছি বলছি তবুও , এর নাম স্বাধীনতা  ?
হায়না চরছে আগে পিছে পাশে হাসছে চামুণ্ডারা ,
বুকের সে পাটা পাচ্ছি না খুঁজে, কোথায় সে শিরদাঁড়া ।
চলত চলছে পীড়ন তেমনই , কী লাভ স্বাধীনতায় ?
লুট যা চলত আজও চলছে  ব্রিটিশরা সেই কোথায় ?
দেশটাকে কারা ঠেলছে এমন গভীর  অন্ধকারে ?
দুঃশাসনের এ দেশে বলছি  ভাল নাই একেবারে  ।

সময় গিয়েছে ঢের সহ্যের  , সময় আর তো নয় ,
ঘুচাও আঁধার , এসো আরবার , পুন হে মৃত্যুঞ্জয় ;
এ আঁধার খুনে  পুবের আকাশ  রাঙাও তেমনই পুন ,
শোষকেরা আর শির তুলে যেন দাঁড়ায় না কক্ষনও ।
তোমার সে গান তেমন  করেই প্রভাত-বীণায় বাজাও ,
তোমার হাতের সে ত্রিশূলখানা ঊর্ধ্ব আকাশে নাচাও ;
নাচাও তোমার সেই তরবারি কঠিন চিত্তে শানানো ,
বন্দিবোধের লৌহ তোরণে হানো সে কুঠার হানো ।

কান্নার শেষে -- বিক্রমজিৎ মান্না

কান্নার শেষে
বিক্রমজিৎ মান্না 
তখন গভীর রাত ।
মুমূর্ষু রোগীদের বেদনায় স্বস্তির প্রলেপ দিতে 
গলায় স্টেথো আর সাদা জামার সাজে 
পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী মৌমিতা ।
ইলেকট্রিক আলোয় ভাসা নগরী কলকাতা
যখন নিবীড় ঘুমাচ্ছন্ন ।

কয়েকটা প্রেস্ক্রিপসান লিখে 
কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্ট কক্ষে 
নিত্য নাইট ডিউটি মতোই 
শান্ত, সৌম্য হয়ে
ফেলেছিলো পা ।

কিন্তু সে জানতোনা
কি বিষম বিভীষিকা তার তরে অপেক্ষিছে ।
ক্ষণিকেই জ্বলে ওঠে নেকড়ের চোখ ।

 কিছু বুঝে ওঠার আগেই
সাতটি নর পশু রুমালে মুখ চেপে ধরে ।
কন্ঠের তীক্ষ্ণ চিৎকার কন্ঠেই রুদ্ধ হয় ।

একে - একে বন্য পাশবতার 
খুবলে খাওয়ার উন্মত্ত উল্লাস মাঝে
মায়ের মুখটা স্মরি কতোবার না
চিৎকার করেছে মা বলে ।
হয়তো পরম ত্রাতা বাবাকেও ডেকেছে বা ।

তাঁর সে চিৎকার 
মুখ বাঁধা রুমাল ভেদ করি
ঘুমাচ্ছন্ন ঘরের দেয়ালও টের পায়নি ।
দুটো হাতে নিজেকে বাঁচানোর ব্যর্থ প্রয়াসে
বাধা পেয়ে উন্মত জন্তুর নির্মম পেষন
শরীরের হাড়গুলোও আস্ত রাখেনি তাঁর
একে - একে দিয়েছে ভেঙ্গে ।

নগ্ন , বিভৎস রক্তাক্ত , মৃত শরীর ফেলে
কাক ভোর ফোটার আগেই
সাতটি বন্য ভিড়ে গ্যাছে নগরীর কোলাহলে ।
কিংবা নগরী ছেড়ে কোনো দূর গোপন গুহায়
এ ভাবশিষ্যরা রানিমার আঁচল ছায়ায় 
আছে ওরা যত্নে ভারি ।

চায়ের পেয়ালা হাতে
টিভিতে এ নিউজ শুনে
চমকে ওঠে আসমুদ্র হিমাচল ।

তৎক্ষনাৎ সে কাকভোরেই
রক্তে ভেজা মৃত শরীরের ঘ্রাণে
লোলুপ শ্যেণ চোখ , তীক্ষ্ণ থাবা লয়ে 
ঝাঁপায় পুলিশ ।
মেয়েটার বাড়িতে খবর পাঠায়
--- "আত্মহত্যা " বলে ।
ভেঙ্গে দেয় সি সি টিভি ফুটেজ গুলো ।
মিথ্যের ক্লেদ দেখি হয়তো আড়ালে থাকি
লজ্জায় ঢেকেছিল মুখ তার অন্তর্যামী ।

জনতার ক্রোধানল আর 
জেলের শিকল খুলে বাঁচাতে রানিকে ,
ফাঁসির দড়ির থেকে
বাঁচাতে ও অরণ্য সাত নেকড়েরে
চিতার আগুনে দেয় 
মৌমিতারে চির ভষ্ম করি ।
লোপাট করে ও হায়না পুলিশ  প্রমান ।
ভেঙ্গে দেয় সি সি টিভি সব ফুটেজে ।

গর্জে ওঠে নাগরিক যত 
দেশে - দেশে ঝরে পড়ে ঘৃণা আর ঘৃণা ।

মৌমিতা  !   অর্থ যাঁর -- মিষ্টি বন্ধু  !
হ্যাঁ ---
মিষ্টি বন্ধু হয়েই রয়ে গ্যালো
সহপাঠী মাঝে , কলেজের হৃদ কন্দরে ,
আপামর জনতার অশ্রু কণায় ।

হয়তো স্মৃতির ব্যথায় ,
কন্যা শোকে পাগলিনী মাতা তাঁর 
সুখের নিদ্রা হারা 
হয়ে গ্যালো এ জনম পথে । 
হয়তো ----
গান , আবৃত্তি , কিংবা স্কুলে পাওয়া
ভালো রেজাল্টের পুরষ্কার গুলো
যা আজও শোকেশ , বুক সেল্ফে সাজানো  ।
তা দেখে পিতা তাঁর চিরদিন
গুমরে মরিবে হায় নীরব মনে ।

তবুও মৌমিতা
রিক্ত মাটির বুকে রেখে গ্যালো নব মিতালী
আগামীর সজ্জন মানুষের মাঝে
সোচ্চার প্রতিবাদী প্রাচীর গড়ি ।

সে প্রাচীর একদিন
নগ্ন রানির পোষা 
তল্লাটে , পাড়ায় ,  ক্লাবে
মদ আর মাংশের
অনুদানে বেড়ে ওঠা নর পশুদের
গলায় পরায়ে শিকল এ ধূলায় আঁকিবেই
প্রগতির ও নবীন পথ ।

ধিকৃত , ক্লীব , নগ্ন এমন
বন্য রানিরে  দিতে বন্য গুহায় স্হান
হাতে - হাতে রাখি বাঁধি
উচ্চারিবে ভাবীকালে নবীন শপথ ।
        

Thursday, August 15, 2024

কত কথাই না বলে ফেললাম -- অরুণ কুমার মহাপাত্র

কত কথাই না বলে ফেললাম 
অরুণ কুমার মহাপাত্র 
১৩/০৮/২০২৪
লোক ক'টাকে পাষন্ড ছাড়া আর 
কিছুই মনে হয় না...
এরা আসে , আবার বুদ্বুদের মতো 
একদিন মিলিয়েও যায়... ।
যতদিন বাঁচে ওদের তরঙ্গাঘাতে 
ভেসে যায় নিরক্ষরেখা...
লোনা জলে মুছে যায় সৌভাগ্যলেখা ।
ওদেরই উৎপাতে ভালো মানুষের
ভালোমন্দ ঘেঁটে যায় রোজ...
ঘাট থেকে আঘাটায় ফণা থেকে
চুরি করে বিষ...
কাঁচা পয়সায় ঐ পাষন্ডদের হাত 
করে নিশপিশ...
রোমশ থাবার নীচে রাষ্ট্রযন্ত্রের আনুকূল্যে
ঝুটো পয়সা খেলা করে অহর্নিশ... ।
একদিন ফুরোয় জীবন ফুরোয়ে না পথ...
নিয়তির ডাকে আসে অস্তগামী রথ ।
ধ্বংসস্তূপের ডেরায় জীবন হয় শেষ...  ।

এত সবের পরেও ঐ একই পথে হেঁটে আসে কালপুরুষেরা সন্ধ্যা তারাদের 
নিয়ে...
না-না , এটা কোন রাজনীতির বিষয় নয়...
তবে সাধ্যমতো পার্টি ফান্ডে আর পূজোতে 
চাঁদা দেয় ওরা...
বাতিঘরের আলোয় পুরোনো দিনের ছবি 
ভাসলে ভীষণ ঘেন্না হয় আর অস্থিরতা 
বেড়ে যায়...
একটা কথা বলতে গিয়ে কত কথাই না 
বলে ফেললাম আজ...  !

বিরহ -- সুজন রাজবংশী

 বিরহ
 সুজন রাজবংশী
 ১৪/০৮/২৪
কাতর নয়নে চেয়ে দেখেছি তোমার চলে যাওয়া।
স্বপ্ন ভাঙার প্রহরে বসে অভিমানী হাওয়া।

তুমি বিহীন দিন চলেনা নিথর কলেবর।
নিত্য দগ্ধে আত্মচিত্ত হৃদয় কাঁপানো ঝড়!

বিরহানল প্রাণের গহিনে  দাবানলের ন্যায়।
কন্ঠ ভারী মৃদু কান্নায় তব অভাবে হায়!

বিরহিত রজনী কাটাই যেন তব শূণ্যতা লয়ে।
রিক্ত আজ বিকশিত পরান, চলি তব স্মৃতি বয়ে।

বর্জিত প্রেমে কেন এসেছিলে, টুকরো করলে পরান!
রুদ্ধশ্বাসে বুক ধরফর, তবু ভাঙ্গলেনা যে মান।

বিরহপীড়িত মনে, দীর্ঘশ্বাস প্রতিক্ষণে, চেয়ে থাকি সরণি!
মোর আলয়ের আলোক হয়ে  সাজলে বুঝি ঘরনি।

অন্তর্দাহে সন্তপ্ত হয়ে হলাম অঙ্গার, তবু রইলে আড়ালে!
ভগ্ন হৃদয়ের যন্ত্রণা ভারী, মম ভুল তুমিই ছিলে।

মনঃকষ্ট মাত্রাতিরিক্ত দিলে হাসি মুখে।
বঞ্চনায় ভরা তোমার প্রেমে আছি বড় সুখে!

বিরহবেদনা খেলা করে আর হেসে হেসে কয়!
তুমি বন্য তুমি নগণ্য মায়া কেন রে হয়?

বিরহঅনলে নিঃশেষ হয়েছি, কপাল সাজলো মন্দে!
অনুভূতিগুলো বির্সজন দিয়েছি, বিরহ এখন কান্দে!

Wednesday, August 14, 2024

নিমন্ত্রণ -- আইনুল হোসেন সানু

 নিমন্ত্রণ
 আমার শহরে 
আইনুল হোসেন সানু
চিঠি-তে 
দিয়েছি নিমন্ত্রণ 
বহুবার, ফিরতি' লিখেছো 
প্রতিবার দেরী-তে, পারবে না 
আসতে নেই যে' সময় ব্যস্ত ভীষণ 
কাজে-তে 

জেনে
পেয়েছি কষ্ট এবং 
অভিমান প্রচন্ড রকম, হীনমনে
তোমার উপর 

পরের বার  
চিঠি-তে একটা ই শব্দ 
লিখেছিলাম পর পর তিন বার, 
'আড়ি আড়ি এবং আড়ি, না সম্বোধন-এ'
না ইতি' তে কিছু'

চিঠি' টা ছেড়ে 
কেঁদেছিলাম অনেক-
এই ভেবে 
জানি' কাঁদবে তুমিও 
চিঠি পড়ে, লিখলে উত্তরে দ্রুত
এবার আসছি অতি শীঘ্র-ই 
এবং জলদি ----

ভাঙলো 
অভিমান কিন্তু 
ততোক্ষণে' আষাঢ়ের ঢল 
বিরাম হীন বর্ষণ' অবিরাম জলে 
থৈ থৈ রাস্তা ঘাট, ডুবলো শহর সাথে 
বাড়ি ঘর ! 

বাড়লো চিন্তা
কি' করি কি' করি, ভেবে মরি 
দিন রাত, দু'দিন বাদেই পেলাম চিঠি
ফের হাতে' র লিখা তোমার

লিখেছো, 
ভীষণ জ্বর আরও লিখেছো, 
আসি' না হয় ক'দিন পর ? প্লীজ....

চিঠি পড়ে,  
ঘাম দিয়ে ছাড়লো যেন' 
আমারও জ্বর, বাঁচলাম অন্তত 
এ' যাত্রা' হাঁফ ছেড়ে ---

ভেবে মরি 
কি করে লিখি সত্য' টা 
তোমায় আজ,! চাই না, কোনো দিন 
আসো শহরে' আমার এসে যদি 
দেখো বিকৃত রূপ হেথা' 
জীবনে' র ---- 
 
জল 
নামতে না নামতেই 
ঘটলো বিপত্তি জন জীবনে
মিছিলের ঢল থৈ থৈ রাজপথ বিরামহীন গুলি বর্ষণ অবিরাম 
হেথা-সেথা লাশ
কচি প্রাণের ঝরা তাজা রক্তে 
ভিজে পিচ্ছিল পথ ঘাট
থোকা থোকা 
জমাট রক্ত এখনও লেপ্টে 
শহুরে রাস্তার কালো পিচে ফুটপাত কংক্রিটে কালচে রক্তের দাগ  
না এখনও মুছে...
নেই নাওয়া খাওয়া না ঘুম
কারো চোখে, বিচ্ছিন্ন সংযোগ যোগাযোগের উৎকন্ঠায় কাটে এখন দিনরাত প্রতি জীবনের ----
শোকের মাতন
প্রতি ঘরে, না চড়ে উনানে হাড়ি
কারো বাড়ি আজ  

আমার 
শহর এখন 
লংকা ঐ রাবণে' র, খুন্তা 
হাতে দখলে বানরের, লেলিহান 
শিখা জ্বালে উত্তপ্ত মরুর বালু, স্পর্শে পায়ের তলাতে ফোস্কা পড়ে !

অস্পৃশ্য'
কালো ধোঁয়া আর
পঁচা গন্ধ' ইথারে, আগ্নেয়গিরি' র 
লাভা চোখেমুখে, হিংস্রতা' য় হায়নাও 
হার মানে, দুমড়ে মুচড়ে কচি প্রাণ গুলো কুঁকড়ে ভয়ে ঐ আয়না ঘরে ---

তবু 
রুখে দাঁড়ায় প্রাণপণ 
যাচ্ছে লড়ে খালি হাতে ! 
দোহায়, 
তুমি এ'সো-না এই 
ক্ষণে আজ, তুমি 'অতিথী' 
চাই না দেখে মুখ লুকাও এবং
নিজে ই লজ্জা পাও ......

হায়রে বঙ্গে নারী -- বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য

 হায়রে বঙ্গে নারী!
 বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য
 ১৩/০৮/২০২৪...
' অভয়া ' প্রচুর স্বপ্ন বুকে বয়ে, আশা নিয়ে জন্মেছিল সাধের এই বাংলায়
তার যে এমন করুণ পরিণতি হবে কেউ কি জানতো হায়!
ইচ্ছে ছিল তার ডাক্তার হয়ে নিয়োজিত হবে মানব সেবায়
তার এমন অসময়ে মর্মান্তিক পরিণতির নেবে কে দায়!
অপরাধ তার নারী হয়ে জন্মেছে এই বাংলায় এটাই বুঝি দোষ
ছিলনা ধারণা চতুর্দিকে মুখোশধারী মানুষরূপী শকুনের মনে এত আক্রোশ!
যথেচ্ছ ভোগ করে নারকীয় অত্যাচারে দানব তারে করেছে খুন
মধ্যযুগীয় পৈশাচিক দানবীয় অত্যাচারে কেড়ে নিয়েছে পরাণ।
বোঝেনি সে নেইকো কোথাও বিন্দুমাত্র সুরক্ষা, ঠুনকো, সুপ্ত প্রশাসন
তাইতো দিকে দিকে রয়েছে জারি প্রতিদিন অপ্রশমন, অকথন নারী ধর্ষণ!
কামান্ধ কুকুরেরাও লজ্জা পাবে দেখে এদের নৃশংস কর্ম কাণ্ড
এই বীরপুঙ্গব (!) নপুংসক পশুরা বিবেক চেতনাবিহীন যত অকাল কুশমাণ্ড!
প্রতিদিন খবরে থাকে ক্ষেতে খামারে হাটে বাজারে যত্র তত্র এমন ঘটনা
এখন দেখছি হাসপাতালও নয় সুরক্ষিত একদম নিরাপদ না
পার্ক স্ট্রীট কামদুনি বারাসাত মেদিনীপুর থেকে আর জি কর হাসপাতাল 
সর্বত্র দোষীরা অবাধে বুক ফুলিয়ে করছে বিচরণ, ঠুকছে নিয়ত তাল
অদক্ষ অকর্মন্য প্রশাসন পারেনা করতে রক্ষা, দিতে উপযুক্ত বিধান
এটাই বুঝি আজকের দিনের বঙ্গ নারীর ভবিষ্যত, দস্তুর মত নিদান!
অন্যের দোষ ত্রুটি খুঁজতে কেউ কেউ হাত্রাস দৌড়ে যায়                             অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র সেজে গুণীজনে
নিজেদের দোষ ত্রুটি 
কেবলই ধামা চাপা দেয়।
ভূলুণ্ঠিত ধূলি ধূসরিত  আজ বঙ্গের নারী জাতির সম্মান
যে নারী কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে জন্ম দেয় সন্তানে, তাদের এই প্রতিদান?
নারীদের এমন লাঞ্ছনার, অসম্মানের নিদারুণ দশা দেখে হায় 
সমগ্র বাংলা বাঙালির মাথা কাটা যায় একরাশ বেদনা,দুঃখে লজ্জায়!

চাওয়া পাওয়া -- দেবাশীষ চ্যাটার্জী

 চাওয়া-পাওয়া  
 দেবাশিষ চ্যাটার্জী 
13/08/2024
কিছু চাওয়া পাওয়া মনেই রয়
হয়না কভু যা পাওয়া  
তবুও মানুষ অবুঝের  মতো  
পিছু পিছু করে ধাওয়া  |

কিছু শূন্যতা  প্রাপ্তির ঘরে 
মায়ার মোহো তে ভাসে  
কিছু হতভাগী দিন গুনে  যায়
যদি পূর্ণতা আসে  |

যা কিছু চাওয়া সব হবে পাওয়া
বৃথাই এ  অহংকার 
অল্পেতে খুশি  অধিক শান্তি  
বেশির  কি দরকার ?

সব চাওয়ার আর হয় কি পূরণ 
কিছু থেকে যায় বাকি 
প্রাণ পাখিটা উড়াল দেবে  
সত্যি কে দিয়ে ফাঁকি  |

সব চাওয়া পাওয়া পূর্ণতা পাবে  
যেদিন পুড়বি  চিতায়   
ধরণীর বুকে আমার আমার করে 
জনম  কাটালি বৃথাই  |

এ জীবন এক কবিতা -- বিকাশ সাহা

এ জীবন এক কবিতা, 
 বিকাশ সাহা, 
১২_০৮_২৪
আমার দিন গুলো কবিতা- 
আর বিকেল হলেই হয় গল্প- 
রাত হলেই সব সমাপ্তি।
তবে পরের দিন সকাল হোলেই
ভীষণ শান্তি, শুদ্ধতা।
প্রতিটি দিন নতুন এক অধ্যায়, 
কখনো হাসি,কখনো কান্না, 
কখনো আনন্দ,কখনো বিষাদ।
জীবনের প্রতিটি দিন এক একটি কবিতা।এক একটি অধ্যায়।
বিকেলের রংধনু ছোঁয়ার গল্প, 
অন্তরে ভাসে স্মৃতির সুর, অতীতের কথা, ভবিষ্যতের আশা, 
বিকেল মানে গল্পের মেলা,
সারা দিনের গল্প। জীবনের গল্প।
রাতের নীরবতা জীবনের সমাপ্তি,
দিনের ক্লান্তি মিশে যায় রাতের বিছানায়, রাত শেষে- আসে নতুন প্রভাত
নতুন দিনের প্রতিশ্রুতি। 
সকাল মানেই নতুন আশার আলো, প্রকৃতির অবদান,মৃদৃ সুর- পাখির গান
কাকেদের কা কা শব্দ, ভোরের নির্মল বাতাস, জীবনের শুরু।
নতুন এক যাত্রা, সকাল হলেই মনে হয় ভীষণ শান্তি,পবিত্রতা।
সব মিলিয়ে এক সুন্দর একটি দিনের অধ্যায়,একটি পর্ব।
জীবনের,এই উপন্যাস আমার প্রতিদিনের কবিতা,
বিকেলের গল্প,রাতের সমাপ্তি,
সকাল হলেই ভীষণ শান্তি।

Tuesday, August 13, 2024

হে মৃত্যুঞ্জয়ী বীর লহ প্রণাম -- বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য

 হে মৃত্যুঞ্জয়ী বীর লহ প্রণাম !
 বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য 
 ১১/০৮/২০২৪..
স্মরণে মননে রয়েছো অগ্নিবীর শহীদ হে ক্ষুদিরাম 
তোমার চরণে জানাই সভক্তি সহস্র কোটি প্রণাম!
ভারত মাতার অকুতোভয় আদর্শ বীর সুসন্তান
করেছিলে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের দর্প চূর্ণ, খান খান!
স্বাধীনতার সংগ্রামে ছিলে আপোষহীন, জান কুরবান
দেশের তরে, স্বাধীনতার বেদীমূলে দিলে জীবন বলিদান।
ছিলে তুমি জাতি, দেশের, তরে সমর্পিত এক অতি মহা প্রাণ!
নির্ভিক চিত্তে, হাসিমুখে গেয়েছিলে জীবনের জয়গান!
তোমার আহূতিতে ধন্য, কৃতার্থ, মোরা হে প্রিয় অগ্নিবীর
স্বাধীনতা সংগ্রামের রণে স্থির লক্ষ্যে তুমি যুধিষ্ঠির!
তবুও তোমার আত্মত্যাগে হইনি উদ্দীপ্ত, শেখেনি উত্তরপুরুষ, নির্বিকার!
অজ্ঞ মূর্খ অকৃতজ্ঞ মূঢ় মানুষ রাখেনি যথার্থ মান তোমার!
হাসতে হাসতে ফাঁসির রজ্জু পরেছো হে অকুতোভয় প্রাণ
তোমার আত্মত্যাগ আজও তোলে হৃদয়তন্ত্রীতে অনির্বচনীয় শিহরণ!
হে বিপ্লবী বীর, হে দেশপ্রেমী, মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ, হে সুমহান
আজিকে তব মহা প্রয়াণ দিবসে পুনর্বার জানাই তোমায় সশ্রদ্ধ ভক্তি প্রণাম।
অজ্ঞ জনে, অন্ধ জনে, জ্ঞান দাও, দাও আলো, শক্তি দাও
দেহে মনে প্রাণে অন্তরে চেতনা চৈতন্য দেশপ্রেম জাগাও 
লক্ষ কোটি প্রাণের বিনিময়ে, রক্ত ঝরিয়ে  অর্জিত হয়েছে যে স্বাধীনতা 
করতে হবে রক্ষা, উড়ুক শূন্যে, পত পত করে প্রিয় গর্বের ত্রিরঙ্গা পতাকা।

অগ্নি শিশু ক্ষুদিরাম -- গৌতম পাল

অগ্নি শিশু ক্ষুদিরাম
গৌতম পাল
১১/০৮/২০২৪
অগ্নি শিশু তুমি বীর ক্ষুদিরাম
মরতে পাওনি ভয়,
ফাঁসির মঞ্চে মুখের হাসিতে
করলে হৃদয় জয়!

অশ্রুজলে ভাসি ভারতবাসী
তুমি দিলে বলিদান,
আজ প্রয়াণ দিবসে লহ শ্রদ্ধার্ঘ্য
ভুলিনি তোমার অবদান।

তুমি হাসিমুখে নিয়েছিলে তুলে 
ফাঁসির দড়িটা গলে,
অন্তরের অর্ঘ্য করি নিবেদন
তোমার চরণ তলে!

দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ
আঠারো বছর বয়স,
গোটা ভারত দেখে স্তম্ভিত 
তোমার অদম্য সাহস।

দেশ মাতৃকার শৃঙ্খল মোচনে
নিয়েছিলে দৃঢ় শপথ,
তোমার সেই মহান আত্মত্যাগ
আজও দেখায় পথ!

ফাঁসির মঞ্চে তোমার গাওয়া
সেই মাতৃ মুক্তির গান,
আজও প্রাণে জাগায় শিহরণ
করি অমৃত সুধা পান!

শহীদের কখনো হয় না মরণ
হৃদয়ে আছ চিরদিন,
আজও দেশ পারে নি ভুলতে 
তোমার রক্তের ঋণ!

এবার আমি বিচার চাই -- মনিরা মাসিদ

 মনিরা মাসিদ  
 এবার আমি বিচার চাই 
দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়া যাওয়ার পর জেনে কি হবে যে আমি কতটা আতঙ্কের প্রহর কাটিয়ে ছিলাম ?
আথচ আমার সঙ্গে বারবার এটাই হয় --
আমার সঙ্গে দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরই দেশ
 উত্তাল হয়, পৃথিবী বিচলিত হয়, আমার উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে জ্বলে ওঠে মোমবাতি,
গর্জে ওঠে দেশবাসী , রাষ্ট্রশক্তির কাছে জরালো আবেদন করে অপরাধীর শাস্তির দাবিতে রাস্তায় 
বসে পড়ে নাগরিক সমাজ ।
কখনো কখনো অপরাধীকে ধরাও হয়।

* তারপর ?

তারপর চলতে থাকে বিচার - কথা পিঠে কথা,কথার পিঠে কথা বলতেই থাকে চলতেই থাকে ,দেশ জুড়ে ,
পৃথিবী জুড়ে। 
 একদিন মোমবাতি ও শেষ হয়ে যায়। 
আবারো একটা মোমবাতি জ্বলে ওঠে অন্য 
কোনোখানে অন্য কোনো নামের আমারই উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে..

গণতন্ত্র মরছে হরদম -- অরুণ কুমার মহাপাত্র

গণতন্ত্র মরছে হরদম 
অরুণ কুমার মহাপাত্র 
১১/০৮/২০২৪
কপালে মানবিকতার তিলক এঁকে 
সেদিন পাশে ছিলাম আমরা...
তবুও পৃথিবীর গভীরতম অসুখে
সেদিন নির্বিঘ্নে হেঁটে গেছি আমরা...
আমাদের গায়ে কেউ কেউ জোর
করে লিখে গেছে শত্রুর তকমা...
পাল্টে যায় আবহাওয়া... খান খান
হই আমরা...
মৃত্যু আগুন আর ধ্বংসলীলা ব্যথিত 
করে মন... ধ্বংস সে তো এক লহমায় ,
গড়তে অনেক বছর...
বিপদ সীমার ওপারে রাজার গুমঘরে
ওরা আটকে রেখেছে ভবিষ্যৎ...
তুচ্ছ আজ জীবনের দাম... ।
ঘৃণার অন্তিমে বিশ্বাসের কাটাছেঁড়া 
দাগ নিয়ে আমরা ছুটবো কত আর...  !!
গণতন্ত্রের লাশকাটা ঘরে লাইফ সাপোর্টে 
ধুকপুকিয়ে বাঁচা গণতন্ত্র মরছে হরদম...

বিশ্ব ত্রাস ঋণের গ্রাস -- তরুণ কুমার ভট্টাচার্য

বিশ্ব ত্রাস ঋণের গ্রাস
তরুণ কুমার ভট্টাচার্য
গরিব ধনী     সবাই ঋণী
ঋণ ছাড়া নাই
ঋণী যারা      অধম তারা
বড়ই জ্বালা পাই  ।

কত কথা          কত ব্যথা
ঋণীর প্রতি থাকে
মিটিয়ে দিলে   টাকা পেলে
আর কি বলার তাকে  ?

টাকা এল           টাকা গেল
রয় অকথ্য ভাষা
মানুষে মানুষে ব্যবহার শেষে
বিনষ্ট হয় আশা  ।

বললে রাগে        বড্ড লাগে
ভাবলো বুঝি পাবেনা
করতে আদায় ঋণীরে কাঁদায়
কোন কিছুই ভাবেনা  ।

পথে-ঘাটে      ভয়ে কাটে
এখন যদি চায়
কিস্তি দিলে     রাখে তুলে
আবার ভুলে যায়  ।

সম্পর্ক             হয় বিতর্ক
নিকট হবে পর
সম্বোধনে         লাগে কানে
শ্রবণ চেপে ধর  ।

নিত্য সঙ্গী          বদল ভঙ্গী
মুখ দেখলে রাগ
রাখো শুনি'      হয়োনা ঋণী
মনেতে লাগবে দাগ  ।

ঋণের তাড়া          গৃহ ছাড়া
চোর পুলিশের খেলা
বাড়া ভাতে         অপেক্ষাতে
বৃথাই কাটবে বেলা  ।

ওহে ঋণ           তোমার বীন
বিশ্বে আন্দোলিত
তোমার ছোবল বোঝে কেবল
যার বুকেতে ক্ষত  ।

Monday, August 12, 2024

পিয়াসার প্রত্যাশা -- উত্তম গোস্বামী

পিয়াসার প্রত্যাশা
 উত্তম গোস্বামী 
 ১০/০৮/২০২৪
যে মেয়েটির সদাই মুখে 
লেগেই থাকে হাসি 
মায়ের গলা জড়িয়ে মেয়ে 
বলছে ভালোবাসি।

ক্লাস থ্রির সেই মেয়েটির 
বন্ধু সুনিতা 
আরো আছে বন্ধু যে তার 
সোনম রনিতা। 

অনুষ্কা স্নেহা রিমি সানা
তাদের খেলার সাথী
খুশির খেলায় আজকে তারা 
করছে মাতামাতি। 

টিফিনের পর আজ তো হবে 
কাবাডি ম্যাচের খেলা 
মাঠে নেমেই হুইসেল বাজায় 
ক্লাস ফোরের ফ্যালা।

ক্লাস থ্রির ছেলেরা সব 
দিচ্ছে হাততালি 
আনন্দেতে নাচছে কেমন 
ছোট্ট মেয়ে ডালি। 

ফোরের সাথে থ্রি'র খেলায় 
থ্রি'র হলো জয় 
ক্লাস ফোরের মেয়েরা সব 
গোমরা মুখো হয়।

কাবাডিতে জয় আসতেই 
পূর্ণ হলো আশা 
পূর্ণ হলো ক্লাস থ্রি'র
পিয়াসার প্রত্যাশা।

নীল অপরাজিতা -- দেব মন্ডল

নীল অপরাজিতা
দেব মন্ডল 
১০/০৮/২০২৪
ওগো নীল অপরাজিতা, তুমি কি ভালোবাসো আমায়। 
তুমি কি মুছাতে পারবে আমার হৃদয় ভাঙা চোখের জল। 
আলো - আঁধারের সঙ্গী হবে কি আমার। 
এসো সখী আমার ছোট ঘর খানায়, অনেক ভালোবাসি তোমায়।
দুজনের চোখের মায়ায় প্রেম বিলাবো, কাঁধে রেখে হাত।
তুমি ভালোবেসে বুকে রাখবে তো আমায়। 
তোমার ভালোবাসায় জুড়িয়ে দেও আমার ভাঙ্গা হৃদয়খানা। 
তোমার নীল শাড়িতে দারুণ লাগে, আমি পড়েছি তোমার চোখের মায়ায়। 
অনেক ভালোবাসি ওগো নীল অপরাজিতা,তুমি হবে কি রানী আমার । 
আমার জন্য দেখেছি তোমার চোখের কোনায় জল। 
যে গেছে যাক, তুমি এসো গো সখী ভালোবাসতে আমায়। 
আমি হারিয়ে যাবো তোমার মনের ঠিকানায়। 
তুমি নারী শক্তির রুপ হয়ে গড়তে এসো আমায়। 
আমি হারিয়ে যাবো তোমার চোখের মায়ায়। 
তুমি নীল অপরাজিতা হয়ে থাকবে আমার ছোট ঘর খানায়।

পণ --- তুষার মন্ডল

পণ
তুষার মণ্ডল 
১০//০৮//২০২৪
ভাঙব ফেলে বিধির বিধান 
কোনো বাধা মানব না,
মৌল মনে হানব আঘাত 
ঘরের কোনে রইব না।
স্বচ্ছ মনের বিকাশ লভি 
নাশব যত মৌলতা,
সন্ত্রাসীদের আঘাত হেনে 
মুছব সব নগ্নতা।

আঘাত হেনে রাশটি টেনে 
মুঠোয় চেপে ধরব,
মসীর আঘাত হেনে তারে
নগ্নতা সব মুছব।
মানুষ কেন মারবে ওরা 
ধ্বংস কেন করবে,
মারন খেলায় মত্ত হয়ে 
জীবন কেন হরবে?

কেন তারা কোন সাধনায় 
করছে মরন পণ,
ভায়ের মায়ের রক্তে ওরা 
কি যে করবে সাধন?
রক্তে ওদের ভক্তি কমিশনের
সে সব কথা জানব,
মসীর ঘাড়ে আঘাত হেনে 
সঠিক পথে আনব।

Saturday, August 10, 2024

কেল্লাফতে ঠাকুর -- স্বপন কুমার দাস

কেল্লাফতে ঠাকুর
স্বপন কুমার দাস 
০৯/০৮/২০২৪
সামনের দিকে যত এগোচ্ছি তত কানে আসে তমসাছন্ন আঁধার দ্বীপের রোদন! ঘোর সন্ধে বেলা সকলের বাড়ির সামনে তুলসীমঞ্চে রাখা প্রদীপ গুলো দিপদিপ করে জ্বলছে, কেউ আবার দেখি পুরো নিভে বসে আছে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি নভ মন্ডলের গ্রহ তারা নক্ষত্র সবার আঁধারে অবস্থান।প্রথমে ভাবলাম  আজ বুঝি অমাবস্যা। কিন্তু না,হঠাত মনে পড়ে গেল আজ তো উষা লগ্নে বেরোবার আগে পঞ্জিকা দর্শন করে বেরিয়েছি, তখন পঞ্জিকা পাঠে দেখলাম আজ  রাখী পূর্ণিমা।
সেই জন্যই তো কয়েক গাছা পৈতে আর রাখী নিয়ে বেরিয়েছি আমার দুরের কিছু জজমান বাড়ির উদ্দেশ্যে।কোনোরকম পৌঁছে গেলে, যে দশ বারোটি জজমান বাড়ি আছে তাতে ভালো রকম দাউ মারা যাবে।
তা আর হচ্ছে না বাদ সাজলো আবার রিমঝিম টিপটিপ ঝরঝর বর্ষণ।আঁধার পথ জোর কদমে বামুন চালে চলাও মুশকিল। যেতে যেতে আবার কিছুটা মেঠোপথ দুইধার ধানজমি জেগে। আদ্বিকালের ঠাকুদা আমলের পুরাতন ছাতা,ছাতার কাপড়ের মধ্যে যত্রতত্র ছোট্ট ছোট্ট ছিদ্র তার ভিতর দিয়ে পড়ছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির জল আমার তেল চকচকে সুন্দর মাথার টাক টিকে ভিজাচ্ছে।
কনোমতে ঝিঁঝি পোকার ডাক ব্যঙের গ্যঙর গ্যঙর মকমক শব্দ সাপের ফোঁস ফাঁস আওয়াজ উপেক্ষা করে বুকে সাহস নিয়ে রাম নাম জপতে জপতে এগিয়ে চলেছি।
অবশেষে অনেক ধকল সয়ে গাঁয়ের প্রারম্ভে একটি ঝুপড়ি বাড়িটিতে উপস্থিত হলাম। ঐ বাড়িতে পৌঁছে দেখি বাড়িময় অন্ধকার, ঘরের ভিতর দিকে একটি লন্ঠন দিপদিপ করে জ্বলছে।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কোন মানুষের সাড়া নেই।তারপর ডাকতে ডাকতে বাড়ির বারান্দা পর্যন্ত এলাম, বলি কেউ আছেন?
দুই চারবার ডাকার পর একজন ঘরের ভিতর জ্বলতে থাকা শিশপড়া লন্ঠন হাতে কাশতে কাশতে বেরোলেন। আমার মুখের ওপর লন্ঠন টি ধরে জিজ্ঞেস করলেন কাকে চাই?
আমি বললাম রমেন বাবুর বাড়ি যাব উনার বাড়িটা ঠিক ঠাওর করতে পারছিনা ঘন অন্ধকারে গোটা গ্রাম ভরে আছে?উনার বাড়িটি কোন দিকে একটু পথটা দেখিয়ে দিন তো? আমার নাম ভজহরি ভট্টাচার্য আমি পৈতে ও রাখি নিয়ে এসেছি উনার বাড়িতে যাব।মুখের  কথা শেষ হতে নাহতেই উত্তর এলো!
রমেন বাবু বলে তো এখানে কেউ থাকেন না আমার নাম তো রফিক মিঁয়া।আমি এই বাড়িতে একাই থাকি আমার মরলে জল দেওয়ার মতো সাত পুরুষের কেউ নেই!সবাই ওলাওঠা রোগে একে একে এই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে আল্লাহর দরবারে, আমি পড়ে একা পুরো গ্রাম ফাঁকা। কোনোরকম পাশের গ্রাম থেকে চাল আলু চেয়ে ভাতে ভাত করে খেয়ে বেঁচে বর্ত্তে আছি বাবু!আল্লাহ আকবর আমার মতো পাপীপেট কে কেন যে বাঁচিয়ে রেখেছেন তার উত্তর আমি পাইনা।
আপনি মনে হয় বাবু ভুলকরে অন্য গাঁয়ে ঢুকে পড়েছেন। 
এটা কোন গ্রাম বাবু?
এটা সিরাজগঞ্জ বস্তি, আগে এখানে অনেক লোকের বাসছিল এখন সব বাড়ি ভুতড়ে বাড়ি হয়ে গেছে।বললাম না ওলাওঠা রোগে পাঁচ ছয় মাস আগে সবাই আল্লাহর দরবারে শিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে..!!
আমি কেবল একা রাজরোগের সাথে বন্ধুত্ব করে বেঁচে আছি।খুঁক! খুঁক! খুঁক! আমার সাতকুলের কেউ নেই। 
আপনি কোন গ্রামের খোঁজে এখানে এসেছেন বাবু?লোক টি কাশতে কাশতে জিজ্ঞেস করল। 
সুন্দরপুর। 
এটা সুন্দরপুর গ্রাম তো?
না বাবু সুন্দরপুর এখান থেকে চারক্রোশ রাস্তা। আপনার গ্রাম কোথায় বাবু?খুঁক! খুঁক! খুঁক! 
আমার গ্রাম কল্পতরু গ্রাম। 
সেওতো চারক্রোশ ধারাধারি!প্রতিটি কথার ফাঁকে কাশির আওয়াজ খুঁক! খুঁক! খুঁক!
আচ্ছা এসেই যখন পড়েছেন, তাহলে রাতটুকু আমার এই গরীবের দুয়ারে কাটিয়ে আগামীকাল ভোরে আবার আপনার গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন।খাওয়ার কিছু ব্যবস্থা করতে পারবনা বাবু তবে, আমাকে একজন ঈদের সময় নতুন বিছানা বালিশ দান করে ছিল সেইটা আমি ব্যবহার করার সুযোগ পাইনি আপনি ঐটা পেতে ঘুমিয়ে পড়ুন। 
না ও সম্ভব না আমাকে আজই ফিরতে হবে আমার বাড়িতে আমার স্ত্রী একা ও আবার আমার পথ চেয়ে বসে থাকবে।না ফিরে ওর আবার চিন্তা বাড়িয়ে লাভ নেই। বরঞ্চ ভুল করে এসেই যখন পড়েছি তখন তোমার ডান হাতটি বাড়াও তো বাপু। 
এই বলে বামুন তার হাতে একটি রাখী বেঁধে দিল আর বললো তিনদিন তোমার হাতে এই রাখী বাঁধা থাকবে চতুর্থ দিন ভোরে কোন নদী বা খালের জলে একে ভাসিয়ে একটি মাত্র ডুব মারবে তারপর বাড়ি ফিরে তোমার নামাজ পড়বে।
এই বলে বামুন ফিরলো বাড়ি।
 তিনদিন পর বামুনের কথামতো সমস্ত কর্ম পালন করলো। 
সব নিয়ম করে সবকিছু করার পর হঠাৎই বুঝতে পারে তার শরীর সুস্থ সে আর খুক খুক কাশেও না।
তখন সে ভাবলো আল্লাহ আকবর মনে হয় কল্পতরু গ্রামের মহান সেই বামুন ঠাকুরকে আমার রাজরোগ ভালো করার জন্য উনাকে ভুলে পথে পরিচালিত করে আমার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। 
তৎক্ষণাত সে কল্পতরু গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।পৌঁছে  বামুন ঠাকুরের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো ঠাকুর আমি আজ সুস্থ আল্লাহ আকবর আপনার দোয়া করুন। এইবলে বামুনের পাদুটি জড়িয়ে ধরে লুটোপুটি করতে লাগলো।
এদিকে বামুন ভাভছে...
আমি এতটাই টাকা রোজগারের ভাবনায় মশগুল ছিলাম পথ চিনতে ভুল করলাম...!!
নাকি! ঈশ্বর আমাকে এই রাজরোগ গ্রস্থ লোকটিকে সুস্থ করার জন্য, ঈশ্বরের কোনো অদৃশ্য শক্তি আমাকে পরিচালনা করে সেই পথে নিয়ে গেলেন।
বামুন ঠাকুরের বাড়িতে উপস্থিত গ্রামবাসীরা স্তম্ভিত হয়ে সেই দৃশ্য দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল। 
সেই দিন থেকে গ্রামের সকল লোক ভজহরি ঠাকুর কে কেল্লাফতে ঠাকুর নামে ডাকতে লাগল এবং উচ্চস্বরে দুবাহু তুলে জয় কেল্লাফতে ঠাকুরের জয় বলে উন্মাদনায় নাচতে লাগল।।
                     

Friday, August 9, 2024

আমি নই -- নিবারণ চন্দ্র দাস

আমি নই 
নিবারণ চন্দ্র দাস 
০৮/০৮/২০২৪
চাই না আমি কবি হতে 
  নইকো আমি কবি,
সোহাগ ভরে লিখে রাখি 
  চলমান জলছবি।

সাহিত্য থাক সজাগ সচল 
  থাক প্রতিবাদ বেঁচে,
নাই বা হল মুক্তো পাওয়া 
   সপ্তসিন্ধু সেঁচে।

লিখে রাখি মানব বেদন 
  সমাজ সচেতনা,
লিপিবদ্ধ করে রাখি 
  মানবিক বেদনা।

তিতিবিরক্ত গৃহবাসী 
  লিখি কেমন করে,
তাও লিখে যাই যেমন তেমন 
   এই কালো অক্ষরে।

লিখে রাখি মানবতার
   নীতিগত ক্ষয়,
আমার সময় ফুরিয়ে এলো 
   পাইনা তো আর ভয়।

লিখে রাখি দেশ বিদেশে 
   চলছে যা সব আজ,
মন কামনায় ডাক দিয়ে যাই 
   পড়ুক ভেঙে বাজ।

রেখে গেলাম আপন মনন 
   বদলে যাবেই সব,
জগত জুড়ে ভরবে আবার 
   খুশির কলরব।

মানুষ আবার মানবতায় 
  আসবে ফিরে ঠিক,
গাইবে আবার আনন্দ গান 
   ভরবে দিগ্বিদিক।

বলছি আবার নই তো আমি 
   কবি সাহিত্যিক,
ভুল যদি কই তোমরা সবাই 
   দিও আমায় ধিক্।
          

বাইশে শ্রাবণের অর্ঘ্য -- দুলাল চন্দ্র দাস

বাইশে শ্রাবণের অর্ঘ্য
দুলাল চন্দ্র দাস
৮/৮/২৪
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে
জন্ম হয়েছিল তোমার কবি,
তোমার কলমে এঁকেছিলে সারা বিশ্বের ছবি
তোমার হৃদয় মাঝে।

বাইশে শ্রাবণ দুপর বেলায়
নিভলো রবীর জীবন প্রদীপ
নামলো ধরায় অন্ধকার, হরিয়েছি রবী তোমার
হৃদয় মাঝে থাকো হৃদয় জুড়ে।

তুমি ছিলে গানের জগতের আলো
তুমি ছিলে বিশ্ব ভূবনে ভাষার যাদুকর,
তোমার রচনা গানের সুরে,
সবাইকে নিলে আপন করে
সোনারতরী, খেয়া,গীতিমাল্য,গীতালি, গীতবিতান
রচিলে তুমি গীতাঞ্জলি, বিশ্ব দিয়েছে সন্মান।

হে বিশ্ব কবি ,জ্বালাতে জ্ঞানের প্রদীপ
ফিরে এসো আবার ধরণীর মাঝে,
কোন এক নবীন কবির সাজে
তোমার কলমের গল্প নাটক নিয়ে।

আমরা সকল দেশবাসী বাইশে শ্রাবণ এলে
প্রয়াণ দিবস করছি পালন,তোমাকে হারিয়ে
আজ যেখানে থাকো তুমি, লহ পুষ্পাঞ্জলি
জানাই প্রণাম তোমার চরণে
গেয়ে তোমার লেখা গানে।

রাহু দশা -- উন্মেষন খীসা

রাহু দশা
উন্মেষন খীসা
০৮।০৮।২০২৪
দেখবো কতো ভুবন মাঝে
ভাল কিংবা মন্দ,
দেখতে চাইনা মোরা যে আর
এই ধ্বংসাত্মককাণ্ড।

ধ্বংস করতে লাগেনা সময়
গড়তে লাগে সময়,
ধ্বংসাত্মক থেকে বাঁচতে কে
দিতে পারে অভয়?

চলছে এখন রাহু দশা
কখন আসে বিপদ,
একবিন্দুও বিশ্বাস নাই
কখন আছে হঠাৎ।

আপদ-বিপদ কখন আসে
জানেনা কেউ ভাই,
সবাই থেকো সাবধান করে
জীবনের গ্যারান্টি নাই।

অসুর এখন বড্ড রাগী
কখন যে কি করে,
সাবধানের মার নাই প্রবাদে কয়
মানো তা মনভরে।

একদিন যাবে বিপদ কেটে
হবে সব স্বাভাবিক,
তখন সবাই শান্তি পাবে
মানসিক ও শারীরিক।

Wednesday, August 7, 2024

সত্যি না হয় তাই -- নিবারণ চন্দ্র দাস

সত্যি না হয় তাই 
নিবারণ চন্দ্র দাস
০৫/০৮/২০২৪
চাই না আমার আর কিছু,
          তোমাদের ফেলে দেওয়া গুলো
               রেখে দিও একপাশে ঠেলে।
ঘুরবো না আর পিছু পিছু,
          খুঁজব না আর চালচুলো
                থাকব এবার এলেবেলে।

পাওয়ার ভাঁড়ার পূর্ণ হয়েছে,
          চাই না আমার কিছু,
                অন্তর থেকে বলছি তা মেনে নিও।
এই মন জেনো শান্ত যে হয়ে গেছে,
          হয়তো এ মাথা আছে নীচু,
                চাইলে আঘাত আবার সজোরে দিও।

বন্ধনহীন চাই না যে হতে আমি,
      অযুত বাঁধনে বাঁধতে পারো আমায়,
      করবনা কোন ওজর আপত্তি।
হতে চাই না তো কভু আমি নামী দামী,
      আমার আমিতে থাকতে যদিও থামায়, 
      তাতেও আমার নয়কো বিপত্তি।

রঙচঙে কোন জীবনের পথে নয়,
   রয়ে যেতে চাই পিছে,
      সবহারাদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে।
        চাইনা আমার আর কোন বরাভয়,
          ডেকো না আমায় মিছে,
             এ জীবন খানি কেটে যাক হেসে কেঁদে।

শুনে শুনে পচে গেল কান,
                আমি এক অযোগ্য অধম,
              কোনরূপ নাই যোগ্যতা।
           গোপনে নিভৃতে মনে মোর,
         ঘা দিয়ে যায় কথাগুলো,
সত্যি কি এই কথকতা?
          

উলট পুরাণ -- নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস

 উলট পুরাণ 
 নেপাল চন্দ্ৰ বিশ্বাস 
  ৬.৮.২৪
গাছের ডালে হনুমানে বেড়ায় ঘুরে ঘুরে, 
ক্ষুৎপিপাসায় খাদ্য থাকে নাগাল থেকে দূরে ।
পাথর দিয়ে হনুমানের মূর্তি গ'ড়ে গ'ড়ে,
মন্দিরেতে পুজো দি' তায় অতি ভক্তি ক'রে ।

পাথর-তৈরি হনুমানের খাবার নাই যে শক্তি, 
খাবার তবু দিই তাহাকে দেখিয়ে খুব ভক্তি ।
গাছের ডালে মিষ্টি মধুর গান গাহিছে পাখি,
সেখান থেকে ধ'রে এনে খাঁচায় বেঁধে রাখি ।

আবার কভু মাংস খাচ্ছি শিকার ক'রে তাকে,
ভারসাম্য তো পরিবেশের এরাই ধ'রে রাখে ।
পাথর-তৈরি পক্ষীরাজ পুজো পাচ্ছে ঘরে, 
অদ্ভুত শাস্ত্র কী বিচিত্র মানুষ তৈরি করে ।

অনাথ শিশু পথের ধারে অভুক্ত রয় পড়ে, 
মাটির মূর্তির সামনে খাবার রাখি থরে থরে ।
শ্বেত পাথুরে বাবার জন্য জল বয়ে নিই বাকে,
জন্মদাতার স্নানের খবর কেউ কভু না রাখে ।

এই রকমের উলট পুরাণ গোড়াতে যার গলদ,
দেখছি এখন মনুষ্যকুল আগাগোড়াই বলদ ।
রাজনীতিতে দোষটা দেখে কী হবে আর বলো,
রাজনীতি তো নীতির চালে চিরকাল-ই ম'লো ।

গলদ দেখছি ঘোড়াঘাটে, নেতারা তাই করে, 
সব অকারণ নীতির খেলা, নীতি কাঁদে ঘরে ।
বন্ধ ঘরে অন্ধ হলো ন্যায়-নীতিহীন দেশটা, 
অন্ধকারে নীতিগুলো আবদ্ধ রয় শেষটা ।

Tuesday, August 6, 2024

আলোর দিশা দাও -- সুরজিৎ পাল

 আলোর দিশা দাও
 সুরজিৎ পাল 
 ৫.৮.২০২৪
স্বপ্ন গুলো চোখের মণি কণায় ভাসতে.. ভাসতে.. কখন হারিয়ে গেল বুঝতে পারলাম না।
স্বপ্ন ভঙ্গের চারদেয়ালের অন্ধকারময়-ঘর ঘিরে ধরে গিলতে আসে - কেনো এমন হয় জানি না?
এটা কি ভয় না আশংকা?
জীবনের দর্শন পাল্টে যেতে যেতে কানে কানে বলে চলে- 
মৃত্যু ভয় কাহারে কয় সম্রাজ্ঞী - সে কি বোঝ তুমি?
চোখ থেকে নিখোঁজ হয়ে, মনের গলি ঘুরে,ঘিলু তে বিলুপ্তি, 
সব অন্ধকার, একি  সূর্য রশ্মির হারিয়ে যাওয়া ভূমি?
নাকি পাগলা গারদে বন্দী 
অর্ধ উন্মাদ সেই ছেলেটি- যে
শিকল ভাঙ্গার গান গাইতে গাইতে ফাঁসির মঞ্চে দিয়ে গেল প্রাণ।
রাতের অন্ধকারের শেষ নেই,
সকালের সূর্যের দেখা নেই,
স্বপ্ন গুলো বুঁদবুদের মতো ওঠে- ফেটে ছড়িয়ে যায় অসংখ্য ছোট ছোট স্বপ্নে।
কানে ভাসে - "ভাঙলো রে, ভাঙলো রে, ভাঙলো রে, 
ভাঙলো আঁধারের ঘুম....."
শৈশবের স্মৃতি ঘেঁটে দু একটা,
কৈশোরের ভালো লাগা, 
যৌবনের নির্ভয় উদ্দাম।
হারিয়ে গেছে চিলেকোঠার চিল চিৎকার যন্ত্রণায়,
আমি পথ ভ্রষ্ট নাবিক - মাস্তুল হীন নৌকায় বসে সামলে চলি
উথালপাথাল ঝঞ্ঝা বিদ্ধস্ত রাতের কায়া হীন মায়া।
আমি অন্ধকারের যাত্রী... ধরিত্রী মা আমায় আলোর দিশা দাও।

নিত্য বাঁধি যে ঘর বুকের কোনে -- আইনুল হোসেন সানু

' নিত্য বাঁধি যে' ঘর                
                         বুকের কোণে', ~
---//-------আইনুল হোসেন সানু' ~
চেয়েছিলে
শব্দহীন কন্ঠে বলি, 
ফিরে এসো বুকে', সেই থেকে' ই
বসি একা,
প্রতীক্ষা' র প্রহর 
কি' যে' কষ্টে' র আর সে' যদি হয় 
প্রিয়' অতি প্রিয়' জনের,
বোঝো তবে,...
.... 

অভূত,.....
সময় করি পার, 
পরন্তে এই পাড় ভাঙা জীবনের ! 
সাথে জুড়ে থাকা এলোমেলো আত্মিক 
স্বপ্ন খুঁজে ফিরি দিনভর, বিবর্ণময় যত বর্ণ
 দু' হাতে কুড়িয়ে ফিরি সযতনে,
কুরুক্ষেত্র হবে ভেবে 
বর্ণের সাথে মিলিয়ে বর্ণ গড়ি 
পংক্তি আর 
পংক্তি' তে পংক্তি যোগে 
করতে গঠন অযাচিত ভিন্ন গল্পের 
ধারা এক, অনাহূত 
এই জীবনের .....

গভীর 
হতে গভীরে 
কখনও বা' প্রয়োজন ছেড়ে
অপ্রয়োজনে নেমে আরও নীচে কিংবা
 তারও অতি গভীরে গিয়ে খুঁজি
করতে যাচাই 
ভিন্নতর শব্দের মানে কেবলই
জীবনের প্রয়োজনে ......

তবুও সে' 
অপ্রয়োজনেই ঘুরেফিরে
প্রশ্নে প্রশ্নে কেবলই বিদ্ধ আমায়, 
না দেয় স্বস্তি বিন্দু, একটুও ঘুমোতে ? 
এক মূহুর্ত না' মিলতে' একত্রে
পাতা দু' চোখে' র, 
হোক' না' রাত্রি গভীর হোক' 
সে' যতই গম্ভীর   ....... 

কোথা' 
হতে শুরু  
কোথা' গিয়ে শেষ
না বোধি অযাচিত ব্যাথার
খচখচানি মনে-তে, আকুলি বিকুলি 
সারাক্ষণ এ' পাশ ওপাশ, 
বুকের ভিতর তড়িৎ প্রবাহ নিরব
ছুটোছুটি প্রাণ বাধ্য করে 
মানতে..... 

তীক্ষ্ণ তায়
রই পেতে কান ক্ষীণ' শুনি
তান্ডব খেলা ভাঙনের,  
 
সশব্দে
প্রতিনিয়ত ভাঙছে কূল  
হুঙ্কারে হচ্ছে সাবার, এ' পাড়
ওপারে মানছে না' নিয়ম না বিধি
নিষেধ কেউ-ই, চলছে যে' যার ইচ্ছে মত
 অতি গোপনে,
গড়তে জীবন 
নিবিড় মমতায় রোধিতে ভাঙন
সামনে পিছন অহেতুক ঝুট ঝামেলায় 
কাটে বেলা', 
 
অন্তর্নিহিতে 
ভুলে সৃষ্ট অদৃশ্য ক্ষত
ক্রমশ সংক্রমিত, ছড়ায়' সংক্রমণ 
সমস্ত দেহময় পৌঁছে গভীরে আরও 
গভীরতার আরও একটু গভীরের ঐ 
অতি গহীনে .... 

প্রতিরোধ
প্রতিহতের ঠিক নাগালের 
যেন' বাহিরে 
চঞ্চল যদি হয় মন, তবে
তারে শাসিবে কি' করে তখন,? কেন 
সে' আর কিসের লাগি এমন করিয়া খুঁজে
মরে ঐ অস্পৃশ্য সুখ,
বোধি 
সে' কি' অনাহূত, নাকি' সে'
শুধুই মিলনের তরে .? 

দিনভর 
ঠিকানা হীন কাঁদিয়া 
ফেরে, মনের অসুখে জাগে
নিশি একা, ধুঁকে ধুঁকে না' মরিবার 
তরে কখনও সে' ঘুমের ঘোরে, সে' কি' 
শুধু তৃপ্তিহীন অতৃপ্ত 
অপ্রাপ্তির কারণ ?  

নাকি' 
নিরুপায় 
অহিংস সজ্ঞানে,  
পরিত্যাক্ত জেনেও পেয়ালা ঐ 
বিষের 
অনিচ্ছা ভরে 
ইচ্ছে করেই দিচ্ছে চুমুক চুকচুক 
প্রতি প্রত্যুষে' হতে বিমুখ.? 

তবে কি' 
এই ভেবে.? 
কি' হবে বেঁচে আর
এমনি করে, পাওয়া না' 
পাওয়ার ছিলো যত আশ মিটেছে 
সে-তো' কবে'ই এবং সকল' ই,....
জীবন নামক
দুঃসহ 
কোনো গল্পের যেন'
শেষ দৃশ্যপট  .... 
পৌঁছে এখন এই অন্তে 
জানি' বাকী' আরও যত অগনিত 
গুনাঙ্ক ঐ গুনিতের .....

নয়' 
সে' তো গুনে শেষিবার 
প্রাণ নাশের ধ্বংসাবশেষ যত 
সে' শুধুই নিরবে দেখে সয়ে যাবার, 
নয় সে' 
শুধরে নেবার না বোধ 
না বিবেচনা অবশিষ্ট বুঝি আজ, না
সময় এখন আকুতির.? 
 
নেই ক্ষতি 
দিস নে পাতে ভাত ! তবে, 
চাই নে দিস ঐ হাতে মিশিয়ে বিষ 
তাতে একটু একটু করে তুলে এই মুখে 
হতে নিঃশেষ, 
দোহায়
দিস নে বেঁচে থাকবার 
এমন উপকরণ, যা' গিলতে 
অতিশয় কষ্টের, পরিপাক উপক্ষয় 

জীবিত 
অথচ কঙ্কাল স্বরূপে
ঠিকরে রবে চেয়ে বিস্ফরিত 
দুই চোখ', চলবে নিঃশ্বাস নামেতে,
নয় 
ধুঁকেধুঁকে বেঁচে
এখন সময় কাটাবার, না 
অপেক্ষা' আক্ষেপ না কালক্ষেপণ 
আগত ঐ প্রতীক্ষিত 
নির্মম মৃত্যু' র  ...... 

চলন্ত 
অনন্ত চলবে 
গ্রীস্মের প্রখর খরতাপে, হিম 
বরফ শীতার্ত শীতে দূর্বার দূর্যোগে 
ঝড় ঝঞ্ঝাট ময় তীব্র বর্ষণ' মুখর দিনে 
ও রাতে কোহাল ঐ রাজপথে 
প্রতিনিয়ত
প্রতিমুহূর্ত ফিরবে মুখে মুখে নিপীড়ন নিপীড়িতের কথা' এই গল্পের 
একটু হলেও খানিক, হোক' 
ভয়ার্ত নীচু স্বরে 
উদয়িত ঐ
শেষ সূর্য অস্তমিত 
শেষার্ধের শেষ সময়েরও 
শেষ পর্যন্ত জানি' রবে এর রেশ,...
............যা'
শেষ হতে চেয়েও 
না হবে কখনওই শেষ
ক্ষণে' ক্ষণে' কেবলই মনে হবে, 
এই তো' বেশ 
ঝুলে ঝুলে তবু চলবে, 
হবে না' কখনই ত্যাগী'-দের জীবন 
গল্পের কথা' কভু শেষ .....

কালোমনি -- প্রহ্লাদ

  কালোমনি
  প্র হ্লা দ 
   ০৫/০৮/২৪
আমার গায়ের রং কালঅ বল্যে
সবাই আমাকে কালোমনি বল্যে ডাকে। 
তাও তুই আমাকে.... 

এই ত, সেদিনের কুথা!
আমার বয়েস তখন পনরঅ
আর তুর কত? কুড়িও হয় নাই!
তুর কুনু লজ্জ্যা শরম ছিল নাই, 
রুজ রুজ লদীর ধারে
অর্জুন গাছের ডালে বস্যে
বাঁশিটো বাজাতিস আর আমি
তুর বাঁশি শুন্যে
ঘরে থাইকত্যে লাইরথ্যম।
আহা! কত ঢং!
আবার ওই গানটোই বাজাতিস  - 
"ও ললিতা উকে আজ চল্যে যেত্যে....." 

আচ্ছা বল ত, তুই কী কইরে জেন্যে ছিলিস
য্যা উ গানটঅ আমার খুব ভালঅ লাগে? 
উ গানটঅ যখন তুই বাজাতিস
তখন আমার বুকের ভিতরটঅ 
হাঁজড় পাঁজড় কইরে উইঠতঅ
আর তখন আমি 
ছাগল চরাবার নাম কইরে
লদীর ধারে চল্যে আইসথম, 
এমনি কইরে তুই আমার 
মনটঅ মজাইঁছিলিস। 
তুর লেইগ্যে আমি ঘর ছাইড়ল্যম,
বাপ-মা ছাইড়ল্যম, সব ছেইড়্যে
আমি তুর ঘরে উইঠল্যম... 

তারবাদে
কতঅ দিন গেলঅ, মাস গেলঅ, 
বছরের পর বছর পার হঁইগেল
কিন্তুক আমাদের ঘরে আখুনো.... 
মা ডাক শুনার লেগ্যে
মনটঅ আমার ছটফট কইরথ্য
ভগমান একবার আমার দিকে 
মুখ তুল্যে ভেল্যেও দেইখল্যেক নাই। 
গাঁয়ের লুকে আমাকে
বাঁজা মিয়া বল্যে ডাইকত্যে লাইগল্য, 
তখন আমার বুকের ভিতরটঅ
কঁকাইঁ উইঠত্য। 
আমার আর বাঁইচতে মন হইত্য নাই। 
সত্যি বলছি, আমার দিকে একবার
ভালঅ কইরে ভেল্যে দেখ
দিনকে দিন আমার শরীলটঅ
কেমন যেন শুকাঁই যেছ্যে! 
সত্যি বইলছি, আমি আর বাঁইচবঅ নাই রে, 

কী বললি? আমাকে আগুল্যে রাখবি? 
মইরত্যে দিবি নাই? 
আচ্ছা শুন, আমি কালঅ
আর তুর গায়ের রং 
পাকা আমের পারা টকটক্যা-
তাও তুই আমাকে 
ভালঅবেস্যে বিয়া কইরে ছিলিস
ইবার কিন্তুক আমি মইরল্যে
একটঅ সুন্দরী মিয়া দেখ্যে 
তুই একটঅ বিয়া করিস! 
কী বললি? আমাকে মইরত্যে দিবি নাই? 
না রে না, সত্যি বলছি-
আমি আর বাঁইচবঅ নাই রে, 
এই দ্যাখ, বইলত্যে বইলত্যে
আমার যেন কেমন লাইগছ্যে --
..... আমি চইলল্যম রে.... 
তুই ভালঅ থাকি... স
আমি... চ ই..... ল.... ম্........! 
               

Saturday, August 3, 2024

বিলুপ্তির পথে -- সঞ্জীব চক্রবর্তী

বিলুপ্তির পথে 
সঞ্জীব চক্রবর্তী
১/৮/২০২৪
 বিলুপ্তির পথে চলছে একান্নবর্তী পরিবার
ভয় পেয়েছে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার ঘর ।  
অকারণে ঘর ভেঙে যায় কখন 
বেশ ছিল মিলেমিশে একত্রে তখন।

টাকা চাই,বাড়ি চাই বাজারে যান চাই
জীবন টা চাই চাই করে শেষ হলো তাই
কত উঁচুতে এখন থাকা হয়
ঝড় উঠেছে মনেতে কেনো ভয়।

একান্নবর্তী পরিবার বেশ ছিল ভালো
সকলের চোখে ছিল স্বচ্ছ আলো
মোবাইল হাতে শুভেচ্ছা চলছে এখন
পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম প্রথা ছিল তখন।

 প্রতিক্ষণে ভেঙে যায় একান্নবর্তী পরিবার
হচ্ছে হবে আরো কত কি আছে করার
ধার করা সভ্যতা যদি আসে ঘরে
একান্নবর্তী পরিবার গুলো এই ভাবে মরে।

ছোট ছোট পরিবার এক একটা কবুতরের বাসা
স্বজন নেই কেবল নিত্য নূতন মুখের যাওয়া আসা।
বাতানুকুল ঘরের মাঝে মনের সঙ্গে সংহার চলে 
কাঁদে কেবল কথার কথা বিরামহীন জীবন বলে।

আকাশটা করে ছোট,প্রবেশ বন্ধ মনের আলো
নজরে কেবল সন্দেহের ছবি ,সাদা দেখে কালো।
চলে রোজ নিজের সঙ্গে কানামাছি খেলা 
এমনি করেই জন্ম নেয় হরেক রকম মিথ্যার মেলা।