কান্নার শেষে
বিক্রমজিৎ মান্না
তখন গভীর রাত ।
মুমূর্ষু রোগীদের বেদনায় স্বস্তির প্রলেপ দিতে
গলায় স্টেথো আর সাদা জামার সাজে
পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী মৌমিতা ।
ইলেকট্রিক আলোয় ভাসা নগরী কলকাতা
যখন নিবীড় ঘুমাচ্ছন্ন ।
কয়েকটা প্রেস্ক্রিপসান লিখে
কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্ট কক্ষে
নিত্য নাইট ডিউটি মতোই
শান্ত, সৌম্য হয়ে
ফেলেছিলো পা ।
কিন্তু সে জানতোনা
কি বিষম বিভীষিকা তার তরে অপেক্ষিছে ।
ক্ষণিকেই জ্বলে ওঠে নেকড়ের চোখ ।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই
সাতটি নর পশু রুমালে মুখ চেপে ধরে ।
কন্ঠের তীক্ষ্ণ চিৎকার কন্ঠেই রুদ্ধ হয় ।
একে - একে বন্য পাশবতার
খুবলে খাওয়ার উন্মত্ত উল্লাস মাঝে
মায়ের মুখটা স্মরি কতোবার না
চিৎকার করেছে মা বলে ।
হয়তো পরম ত্রাতা বাবাকেও ডেকেছে বা ।
তাঁর সে চিৎকার
মুখ বাঁধা রুমাল ভেদ করি
ঘুমাচ্ছন্ন ঘরের দেয়ালও টের পায়নি ।
দুটো হাতে নিজেকে বাঁচানোর ব্যর্থ প্রয়াসে
বাধা পেয়ে উন্মত জন্তুর নির্মম পেষন
শরীরের হাড়গুলোও আস্ত রাখেনি তাঁর
একে - একে দিয়েছে ভেঙ্গে ।
নগ্ন , বিভৎস রক্তাক্ত , মৃত শরীর ফেলে
কাক ভোর ফোটার আগেই
সাতটি বন্য ভিড়ে গ্যাছে নগরীর কোলাহলে ।
কিংবা নগরী ছেড়ে কোনো দূর গোপন গুহায়
এ ভাবশিষ্যরা রানিমার আঁচল ছায়ায়
আছে ওরা যত্নে ভারি ।
চায়ের পেয়ালা হাতে
টিভিতে এ নিউজ শুনে
চমকে ওঠে আসমুদ্র হিমাচল ।
তৎক্ষনাৎ সে কাকভোরেই
রক্তে ভেজা মৃত শরীরের ঘ্রাণে
লোলুপ শ্যেণ চোখ , তীক্ষ্ণ থাবা লয়ে
ঝাঁপায় পুলিশ ।
মেয়েটার বাড়িতে খবর পাঠায়
--- "আত্মহত্যা " বলে ।
ভেঙ্গে দেয় সি সি টিভি ফুটেজ গুলো ।
মিথ্যের ক্লেদ দেখি হয়তো আড়ালে থাকি
লজ্জায় ঢেকেছিল মুখ তার অন্তর্যামী ।
জনতার ক্রোধানল আর
জেলের শিকল খুলে বাঁচাতে রানিকে ,
ফাঁসির দড়ির থেকে
বাঁচাতে ও অরণ্য সাত নেকড়েরে
চিতার আগুনে দেয়
মৌমিতারে চির ভষ্ম করি ।
লোপাট করে ও হায়না পুলিশ প্রমান ।
ভেঙ্গে দেয় সি সি টিভি সব ফুটেজে ।
গর্জে ওঠে নাগরিক যত
দেশে - দেশে ঝরে পড়ে ঘৃণা আর ঘৃণা ।
মৌমিতা ! অর্থ যাঁর -- মিষ্টি বন্ধু !
হ্যাঁ ---
মিষ্টি বন্ধু হয়েই রয়ে গ্যালো
সহপাঠী মাঝে , কলেজের হৃদ কন্দরে ,
আপামর জনতার অশ্রু কণায় ।
হয়তো স্মৃতির ব্যথায় ,
কন্যা শোকে পাগলিনী মাতা তাঁর
সুখের নিদ্রা হারা
হয়ে গ্যালো এ জনম পথে ।
হয়তো ----
গান , আবৃত্তি , কিংবা স্কুলে পাওয়া
ভালো রেজাল্টের পুরষ্কার গুলো
যা আজও শোকেশ , বুক সেল্ফে সাজানো ।
তা দেখে পিতা তাঁর চিরদিন
গুমরে মরিবে হায় নীরব মনে ।
তবুও মৌমিতা
রিক্ত মাটির বুকে রেখে গ্যালো নব মিতালী
আগামীর সজ্জন মানুষের মাঝে
সোচ্চার প্রতিবাদী প্রাচীর গড়ি ।
সে প্রাচীর একদিন
নগ্ন রানির পোষা
তল্লাটে , পাড়ায় , ক্লাবে
মদ আর মাংশের
অনুদানে বেড়ে ওঠা নর পশুদের
গলায় পরায়ে শিকল এ ধূলায় আঁকিবেই
প্রগতির ও নবীন পথ ।
ধিকৃত , ক্লীব , নগ্ন এমন
বন্য রানিরে দিতে বন্য গুহায় স্হান
হাতে - হাতে রাখি বাঁধি
উচ্চারিবে ভাবীকালে নবীন শপথ ।
No comments:
Post a Comment