এর নাম স্বাধীনতা ?
শক্তিপদ ঘোষ
১৫ , ০৮ , ২০২৪
তোমার কথা হে মৃত্যুঞ্জয় রাখিনি মনেতে কিছু ,
দু'হাতে কুড়তে ব্যস্ত ভীষণ মাথাটাকে রেখে নিচু ;
মেরেছি আমরা নিঃসঙ্কোচে বিবেকের টুটি টিপে ,
বোধের প্রদীপ অন্তরে সে তো কবেই গিয়েছে নিবে ।
মায়ের জন্যে মাটির জন্যে রক্ত তেমন ঝরানো ,
ফাঁসির মঞ্চে সদর্পে শির সোজা রেখে সেই দাঁড়ানো
সে সব কাহিনী অনেক ধুলোয় গিয়েছে সকলই ঢাকি' ;
মিথ্যের সাথে মিথ্যের দেখি অদ্ভুত মাখামাখি ।
কটাশে এ দুই চোখের তারায় জ্বলছে অগ্নি লালসার
মিথ্যের দেখি উদ্বাহু নাচ ভান করি দেখে না দেখার ;
কথার ঝড়েতে মঞ্চ কাঁপাই কৌশলে কাটি গাঁট ,
ভিটেছাড়া করে তার 'পরে গড়ি বহুতল রাজপ্রাসাদ ।
মা'র কোল থেকে শিশু চুরি করে পণের পাল্লে তুলি ,
শয়তান সাথে হাত রেখে হাতে মমতাকে যাই ভুলি' ;
মনের খাঁচায় হিংস্রতা পুষি হীন স্বার্থের জন্যে ,
শান দিই কষে ছুরিতে যে যার আছি যত সেই বন্যে ।
তেল দিতে পায়ে দু'হাতে আমরা হয়ে গেছি বেশ রপ্ত ,
সে আগুন নিভে জল হয়ে গেছে আমাদের সেই রক্ত ;
দানের এ বোঝা বইতে বইতে হয়েছি ন্যুব্জ-পিঠ ,
কৃপার চাবুক সইতে সইতে পিঠ হয়ে গেছে কংক্রিট ।
ক্রীতদাস হতে ভালবাসি তাই ক্রীতদাস হয়ে থাকি ,
কুম্ভীরে ডেকে আঁধারেতে সব মরণের খাল কাটি ;
মান-সম্মান নিয়ে ভাবি না কো ভাবি তা' নেহাতই তুচ্ছ ,
আকাশ না চেয়ে খাঁচার আঁধারে নাচিয়ে চলেছি পুচ্ছ ।
রাজনীতি আজ হারিয়ে গিয়েছে এ না-নীতির আঁধারে,
দেশপ্রেম সেই গোল্লায় গেছে লক্ষ্যটা স্থির ভাঁড়ারে ;
এই আমরাই ব্রিটিশের হাত ধরেছিনু করে শক্ত ,
যার জন্যেই সে দিন বুকের অনেক গিয়েছে রক্ত ।
সোনার ছেলেরা আজ আর নাই আমরা তুলেছি শির ,
রক্ত দিই না রক্ত চুষতে আছি নিদারুণ অস্থির ;
সবুজ পাতারা বোধিবৃক্ষের সকলই গিয়েছে ঝরে ,
বুকের ভিতরে মরুঝড়ে প্রেম কবেই গিয়েছে মরে ।
নিজের চলা যা চলব না যদি বলব না যদি কথা ,
স্বাধীন হয়েছি বলছি তবুও , এর নাম স্বাধীনতা ?
হায়না চরছে আগে পিছে পাশে হাসছে চামুণ্ডারা ,
বুকের সে পাটা পাচ্ছি না খুঁজে, কোথায় সে শিরদাঁড়া ।
চলত চলছে পীড়ন তেমনই , কী লাভ স্বাধীনতায় ?
লুট যা চলত আজও চলছে ব্রিটিশরা সেই কোথায় ?
দেশটাকে কারা ঠেলছে এমন গভীর অন্ধকারে ?
দুঃশাসনের এ দেশে বলছি ভাল নাই একেবারে ।
সময় গিয়েছে ঢের সহ্যের , সময় আর তো নয় ,
ঘুচাও আঁধার , এসো আরবার , পুন হে মৃত্যুঞ্জয় ;
এ আঁধার খুনে পুবের আকাশ রাঙাও তেমনই পুন ,
শোষকেরা আর শির তুলে যেন দাঁড়ায় না কক্ষনও ।
তোমার সে গান তেমন করেই প্রভাত-বীণায় বাজাও ,
তোমার হাতের সে ত্রিশূলখানা ঊর্ধ্ব আকাশে নাচাও ;
নাচাও তোমার সেই তরবারি কঠিন চিত্তে শানানো ,
বন্দিবোধের লৌহ তোরণে হানো সে কুঠার হানো ।
No comments:
Post a Comment