ভয়ংকরী শাশুড়ি
শিবপ্রসাদ মণ্ডল
(এটি একটি হাসির নাটক।এই নাটকটি শ্রুতিনাটক হিসেবে কিংবা মঞ্চে অভিনয় করেও উপস্থাপন করা যায়। যৎসামান্য পরিবর্তন করলেও সমস্যা হবে না)
**** চরিত্রলিপি ****
পুরুষ চরিত্রে ---
সমর রায়-- অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
অর্ক-- ওঁর অধ্যাপক নাতি
অর্ঘ্য -- ওঁর অধ্যাপক নাতি
স্ত্রী চরিত্রে ----
বকুল সেন --- অবসরপ্রাপ্তা অধ্যক্ষা
কমলা --- বকুলের জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ
রমলা --- বকুলের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ
মালা --- কমলার কন্যা
দোলা --- রমলার কন্যা
**************************************
মঞ্চসজ্জা ---
শ্রুতিনাটক করলে পুরুষ চরিত্রাভিনেতারা একদিকে
বসবেন এবং মহিলা চরিত্রাভিনেত্রীরা অন্যদিকে পরপর বসবেন।
অভিনয় করে মঞ্চস্থ করতে গেলে মঞ্চের মাঝখানে একটি টেবিল থাকবে। তিনদিকে তিনটি চেয়ার সাজানো থাকবে। টেবিলের উপর ফুলদানি থাকবে।
বাকি সজ্জা নির্দেশক নিজের মতো করবেন।
***************************************
✍️ প্রথম দৃশ্য ✍️
স্থান--- সমর রায়ের বৈঠকখানা
সময়-- সকাল আটটা
( সমরের প্রবেশ।পরে পরে অর্ক ও অর্ঘ্যের প্রবেশ)
সমর-- অর্ক , অর্ঘ্য তোরা কোথায় গেলি?
অর্ক-- এই তো দাদু, তোমার পেছনেই রয়েছি।
সমর-- আজ তোরা কখন কলেজ থেকে ফিরবি?
অর্ঘ্য -- ঠিক বিকেল পৌনে চারটায় ফিরব।
সমর-- বেশি দেরি করিস না। আমরা ঠিক চারটায় বকুল সেনের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ব।
অর্ক-- কোনো চিন্তা করো না দাদু।
অর্ঘ্য -- আমরা ঠিক সময়েই চলে আসব।
অর্ক-- আমি রাজু ড্রাইভারকে বলে রেখেছি।ও বিকেল চারটায় গাড়ি নিয়ে আমাদের বাড়ি পৌছে যাবে।
সমর-- একদম ঠিক সময়ে যাব। সময়কে নিয়ে ছেলেখেলা আমি কখনোই বরদাস্ত করি না। যাদের সময়ের জ্ঞান নেই,তারা আমার কাছে চক্ষুশূল।
অর্ক-- দাদু, তুমি তিরিশ বছর ধরে আমাদের দেখে এখনও চিনতে পারলে না!
সমর-- জানিস তো, বকুল সেন ভদ্রমহোদয়া অবসরপ্রাপ্তা অধ্যক্ষা। ভীষণ কড়া ধাতের মহিলা।
অর্ঘ-- আমরা কোনভাবেই তোমার সম্মানহানি হতে দেবো না।
সমর--ঠিক আছে। তোরা কলেজ যা। আমি এখন বাজার যাব।যত হোক, প্রায় পাকা কথা বলতে যাচ্ছি,একটু দই-মিষ্টি না নিয়ে গেলে সম্মান থাকবে না। আমি যাচ্ছি। (প্রস্থান)
অর্ক -- আমি আজ ছুটি নিয়েছি। কলেজ যাব না।
অর্ঘ্য-- সে কী রে!!
অর্ক -- হ্যাঁ, মালার মা বড্ড সিরিয়াস মহিলা। সবসময়ই মুখ গম্ভীর করে রাখে। দেখলে ভীষণ ভয় লাগে। দূর থেকে দেখেই তো একবার আমার হার্টফেল হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। কোনরকমে পালিয়ে বাঁচি।
অর্ঘ্য-- কী বলছিস রে !
অর্ক -- সামনাসামনি দেখা করার সাহস কোনদিন হয়নি।মুখ দেখলেই রক্তচাপ বেড়ে যায়। বিশ্বাস কর,
কলেজের অনুষ্ঠানে সেদিন মেয়ের সাথে এসেছিল। ওকে দেখেই রক্তচাপ ২০০/১৬০ হয়ে গিয়েছিল।
অর্ঘ্য-- বলিস কী রে দাদা!
অর্ক -- সে কথাই তো বলছি।তাই বিয়ের আগে ঐ ভদ্রমহিলাকে আচ্ছা করে জ্বালাতে চাই। বিয়ে হয়ে গেলে তো শাশুড়ি - জামাই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। তারপর আর কোনোভাবেই হ্যারাস করা যাবে না।
অর্ঘ্য-- ঐসব করতে গিয়ে যদি কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়িস তবে বিয়েটাই তো ভণ্ডুল হয়ে যাবে।
অর্ক-- দেখিনা একবার চেষ্টা করে। ভদ্রমহিলার স্বামী মিলিটারি ব্রিগেডিয়ার। স্বামী নিশ্চয়ই রগচটা,বধূটিও সেই রকম।যেমন শিবের তেমন দুর্গা। বিয়ের আগে যদি একবার মুখে হাসি ফোটাতে পারি তবে আমার এ জীবন সার্থক হবে।
অর্ঘ্য-- কী জানি বাবা, ফেঁসে যেন না যাস। খুব সাবধানে অপারেশন করবি। হ্যাঁ রে , তবে কবে কোথায় কোন সময়ে অপারেশন করবি?
অর্ক -- আজই, হ্যাঁ রে, আজকেই ওদের বাড়িতে, ঠিক দুপুর তিনটায়---। বিকাল চারটার এক ঘন্টা আগে।
অর্ঘ্য-- সে কী রে দাদা। আমিও তো ঐ একই প্ল্যান করে বসে আছি।আমি তো ঠিক সাড়ে তিনটায় যাব বলে দোলাকে বলে রেখেছি।
অর্ক--কোনো অসুবিধা নেই। তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে-- আমার অপারেশন আশা করি শেষ হয়ে যাবে।
অর্ঘ্য --দোলাও বলে-- ওর মা ভীষণ বদমেজাজি। হ্যাঁ তে হ্যাঁ,তো না তে না। ভালো কথাও খেঁকিয়ে খেঁকিয়ে বলে। শুনলে মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। একবার বাজারে দেখেছিলাম দোলার মাকে।কী যেন একটা কথা নিয়ে এক যুবতী মেয়েকে কী ঝাড় ঝাড়লো। আমি তো দেখেই কাঁপতে শুরু করে দেই। এই ভদ্রমহিলার জামাই হতে হবে!! হায় ভগবান ভাগ্যে কী লেখা আছে অদূর ভবিষ্যতে!!
অর্ক -- তুইও জ্বালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিস?আজকেই, এই একই দিনে?
অর্ঘ্য--আর সময় কবে পাবো বল। বিয়ে হয়ে গেলেই তো কমেডির রোল শেষ।তোর সাহস আছে তো!! অপারেশন করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবি না তো?
অর্ক--সাহস না রাখলে উপায় নেই।
অর্ঘ্য-- আমারও একটা ব্যাপারে বড্ড ভয় হয়। ভদ্রমহিলার স্বামী এয়ারফোর্সের উইং কমান্ডার । সবসময়ই আত্মরক্ষার জন্য কাছে পিস্তল রাখে। যদি সামান্য কিছু ভুল হয়, তবে তো চালিয়েই দেবে।
অর্ক -- মালা আমাকেও বলেছে,ওর রক্ষাকালী জননীও আত্মরক্ষার জন্য সর্বদাই পিস্তল কাছে রাখে।গড়বড় হলেই যাত্রাপালা শেষ।
অর্ঘ্য ---দোলা অবশ্য আমাকে বারবার বলেছিল,এ ধরনের এডভেঞ্চার না করতে।ও যত না বলে, তত আমি জেদ ধরে বসি। আমি বলেছি, তোমার মাকে একটু অন্তত বোকা না বানালে, এ জীবনে আর শান্তি পাব না।
অর্ক-- মালা তো আবার উল্টো কথা বলে।সে আমাকে বলেছে যদি তুমি আমার মাকে একটু বোকা বানাতে পারো, তবে তোমাকে বীরপুরুষ বলে ভেবে নেবো।
অর্ঘ্য -- তোকে মালা জবরদস্তি করে রণাঙ্গনে ডেকেছে ।আর আমি স্বেচ্ছায় রণাঙ্গনে রণ করতে যাব। দাদা,তোর থেকে আমি অনেক অনেক বেশি সাহসী।
অর্ক-- হবু বৌকে যদি বিয়ের আগে একটু খুশি করতে না পারি, তবে পরে আর এ জীবনে খুশি করতে পারব বলে মনে হয় না।
অর্ঘ্য --- হ্যাঁ, তবে দাদু যেন এসবের কিছুই জানতে না পারে।
অর্ক-- বকুল ম্যাডাম জানতে পারলে তো আর রক্ষা নেই। সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।
অর্ক-- চল তবে। দুগ্গা দুগ্গা করে মাঠে নেমে পড়ি।
অর্ঘ্য-- ওখানে যদি কোনো সমস্যায় জড়িয়ে পড়ি তবে দাদু আসবে কীভাবে।
অর্ক -- রাজু ড্রাইভারকে আগে থেকেই বলে দিয়েছি ও আমাদের বাড়িতে গিয়ে দাদুকে একা নিয়ে আসবে।
🎺🎸🪕 মিউজিক 🪕🎸🎺
*******************************************
✍️ দ্বিতীয় দৃশ্য ✍️
স্থান-- বকুল সেনের বাড়ির বৈঠকখানা
সময়-- দুপুর তিনটা
(মঞ্চসজ্জা একই রকম থাকবে।নির্দেশক মনে করলে নিজের মতো সাজিয়ে নিতে পারেন।)
(ফোন করতে করতে অর্কের প্রবেশ।মাথায় টুপি এবং চোখে কালো চশমা থাকবে।)
অর্ক-- হ্যালো, মালা, আমি পৌঁছে গেছি।
(ফোন হাতে নিয়ে মালার প্রবেশ)
মালা -- এখনই এলে?
অর্ক -- হ্যাঁ।এবার বল--তোমার আরাধ্যা জননী-- মানে কালী তারা চামুণ্ডা ষোড়শী ভৈরবীরূপী মাতৃদেবী কোথায়?
মালা -- ওভাবে বলবে না। কেউ শুনতে পেয়ে যাবে।আর মা যদি জানতে পেরে যায়, তবে আর রক্ষা থাকবে না।
অর্ক -- কোন বুদ্ধিমান লোককে তার মেয়ে স্বামীরূপে নির্বাচন করেছে, এটা আচ্ছা করে টের পাবে।
মালা -- দেখো,এমন কিছু কাণ্ড ঘটাবে না যাতে সব এলোমেলো হয়ে যায়।
অর্ক-- সে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছি। আমার সেন্স অব হিউমারটা কী ধরনের তা' তুমি ভালো করেই জানো।
আমাকে এতটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে লাভ নেই। তাছাড়া তুমি তো আমাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছ--যদি আমি তোমার মায়ের গোমড়া মুখে হাসি ফোটাতে পারি তবে তুমি আমাকে বীরপুরুষ বলে মেনে নেবে।কি বলনি?
মালা -- তবুও ভীষণ ভয় করছে। মায়ের বাবা মানে আমার মামাদাদু মিলিটারি বেস কমাণ্ডার ছিলেন। তাঁর কন্যা। আবার এদিকেও মা মিলিটারি ব্রিগেডিয়ারের স্ত্রী। মেজাজ তো একটু থাকবেই।সবসময়ই কাছে পিস্তল রাখে। রেগে গিয়ে পিস্তল তাক করলেই ঘোর বিপদ।প্রাণে বেঁচে গেলেও, তোমার সঙ্গে বিয়ে কোনমতেই দেবে না ।
অর্ক-- সে তুমি চিন্তা করো না। পাশে থেকে লুকিয়েই দেখো না কী করছি।
(ভেতর থেকে কমলা -- মালা, মালা, কোথায় তুই?
(অর্ক এক ধারে সরে যাবে)
মালা -- ঐ মা আসছে। আমি ভেতরে যাচ্ছি। খুব সাবধান ।
(মালার প্রস্থান। কমলার প্রবেশ)
কমলা -- মালাকে তো এখানে দেখছি না। কোথায় যে যায়।
(অর্ক পেছন থেকে এসে কমলাকে প্রণাম করতে যাবে। কমলা প্রণাম না নিয়ে দূরে সরে যাবে।)
কমলা -- কে তুমি?কোথা থেকে এসেছ?
অর্ক-- না, মানে আমি।
কমলা -- কার অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছে?
অর্ক-- আমি ম্যাডাম মালার পারমিশন নিয়ে এখানে এসেছি।
কমলা -- মালা অনুমতি দিয়েছে!! তা' তুমি কেনো এসেছ? কী চাও এখানে?
অর্ক-- না মানে, আমি আপনার মেয়ে মালাকে বিয়ে করতে চাই।
কমলা -- কী বললে, তোমার সাহস তো কম নয়। আমার মেয়ে মালাকে বিয়ে করবে!!
অর্ক-- ম্যাডাম আমার পুরো বায়োডাটা এবং সমস্ত সম্পত্তির হিসেব জেনে তবে রাজি হয়েছেন।তাই তো তিনিই আমাকে আপনার সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন।
কমলা -- আজই তাকে দেখতে রাজ কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ডঃ অর্ক রায় আসবেন তার দাদুকে সঙ্গে নিয়ে।আর মাত্র এক ঘন্টা পরে তাঁরা আসবেন।আর এ সময়ে কিনা তোমাকে মালা আমার সাথে দেখা করতে পাঠালো। আমাকে তো ও কিছুই জানায়নি।
অর্ক-- না জানাক।ওরা আসছেন আসুন। যদি এই সময়ের মধ্যে আমার সম্বন্ধে কিছু জানতে চান তবে জেনে নিন। তারপর যাকে আপনার যোগ্য মনে হবে তাকেই কন্যাদান করবেন। এতে অসুবিধার কিছুই নেই।
কমলা -- তুমি কী কর?
অর্ক--আমার বাঁশের ব্যবসা আছে।বেশ বড় ধরনের ব্যবসা।
কমলা -- বাঁশের ব্যবসা!!
অর্ক-- হ্যাঁ, আমি বহু লোককে বাঁশ সাপ্লাই করি।যেমন ধরুন, যেখানে রাজনৈতিক মঞ্চ তেরি হবে, সেখানে প্রায় এক হাজার বাঁশ দেই। এছাড়া মারামারির জন্য ছয় ফুটের বাঁশ প্রায় হাজার দুই সাপ্লাই করি।
কমলা -- কী বলছো তুমি!!
অর্ক-- এছাড়া যাত্রামঞ্চের জন্য বছরে এক হাজার বাঁশ, সাংস্কৃতিক মঞ্চের জন্য পাঁচশোর বেশি বাঁশ,বাড়ির ছাদ তৈরির জন্য প্রায় সাতশো বাঁশ পাঠাই।আয়--- মেরে কেটে মাসে এক লাখ।কম কী বলুন।
কমলা -- কী এলোমেলো কথা বলেছো আমার সামনে।
অর্ক-- না, মানে আন্টি, ঘাবড়াবেন না, আরো আছে।
আমি কচুর হোল সেলার।মান কচু,মুড়ো কচু, শাখা কচু,বোনা কচু আরও কত রকমের কচুর সাপ্লায়ার।
কচু ব্যবসা করে মাসে পঞ্চাশ হাজার তো বাঁধা আয়।
কমলা -- তুমি কচু ব্যবসা কর!! তোমার লজ্জা করছে না বলতে!!
অর্ক-- ম্যাডাম, আমি নিপাট ভদ্রলোক। জীবনে মিথ্যা কথা বলিনি, আর আজও আপনাকে মিথ্যা কথা বলে বিভ্রান্ত করতে চাই না। যেটা সত্যি সেটাই বলছি।
কমলা -- এটা কোথা থেকে এসময়ে এলো!!
অর্ক-- ম্যাডাম, আরও আছে। আমার মাছ ধরার জালের ব্যবসা আছে। পুকুর-ডোবায় ফেলার জাল, নদীতে ফেলার জাল, সমুদ্রে ফেলার জাল --এছাড়া সব রকমের জাল আমার কারখানায় তৈরি হয়। আপনি চাইলেও সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাবেন।
কমলা -- চুপ,আর মাথা খারাপ করবে না।এখনি বেরিয়ে যাও আমার ঘর থেকে, নইলে একটা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবো। জেনে রাখো, আত্মরক্ষার জন্য আমি সবসময় কাছে পিস্তল রাখি। (পিস্তল বের করে তাকে করলো)
ওয়ান-- টু --
অর্ক-- সরি সরি,থ্রী আর বলবেন না ম্যাডাম, আমি এখুনি চলে যাচ্ছি। প্লিজ গুলি চালাবেন না।
কমলা -- বেরিয়ে যাও ,এই মুহূর্তে। যদি আর একটা শব্দ কর তবে পরপর তিনটে বুলেট তোমার মাথা ফুটো করে বেরিয়ে যাবে।জাস্ট গেট আউট।
অর্ক-- না মানে।
কমলা --আর কিছুই শুনতে চাই না।
(কমলা পিস্তল তুলতে অর্ক পালিয়ে গেলো)
মালা আজকের দিনে এই কাণ্ড করে বসেছে। দেখাচ্ছি মজা। মালা মালা, কোথায় তুই!!
(কমলার প্রস্থান ।মালার প্রবেশ। )
মালা -- আমি ভালো করেই জানি মায়ের গোমড়া মুখে কোনভাবেই হাসি ফোটাতে কেউ কখনো পারেনি। অর্ককে তো বলেছিলাম তোমার দ্বারা এসব হবেই না।ও শুনলো না। চ্যালেঞ্জটা নিয়ে নিল। আমার বাবা একবার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে গুলি খেতে খেতে বেঁচে গেছে।অর্ক তো বাচ্চা ছেলে।এবার কী হবে!!
মা,আমি এইখানে। তুমি কাউকে গুলি করো না।খুনখারাবি হয়ে গেলে আজকের কথাবার্তা সব ভণ্ডুল হয়ে যাবে। তুমি চেপে যাও মা। আমি তোমাকেই তখন থেকে খুঁজছি।
( মালার প্রস্থান)
🎺🎸🪕 মিউজিক 🪕🎸🎺
*******************************************
✍️ তৃতীয় দৃশ্য ✍️
স্থান-- বকুল সেনের বাড়ির বৈঠকখানা
সময়-- দুপুর সাড়ে তিনটা
(মঞ্চসজ্জা একই রকম থাকবে)
(ফোন করতে করতে অর্ঘ্যের প্রবেশ। মাথায় টুপি ও চোখে কালো চশমা থাকবে)
অর্ঘ্য -- হ্যালো দোলা , আমি চলে এসেছি।কাঁটায় কাঁটায় এখন দুপুর সাড়ে তিনটা। তুমি কোথায়?
(ফোন হাতে দোলার প্রবেশ)
দোলা -- ঠিক সময়েই তো এসেছো। কিন্তু কী যে হবে আমি জানি না।
অর্ঘ্য -- দাদার অপারেশনটা কীরকম হলো?
দোলা --লুকিয়ে লুকিয়ে সব দেখেছি।
অর্ঘ্য -- দাদা জিতেছে?
দোলা -- জিতবে-- জেঠিমার কাছে!! এখন দশ জন্ম ধরে জেঠিমাকে চিনুক ,তারপর জিততে পারে।
অর্ঘ্য-- কী বলছো!!
দোলা -- তোমার দাদা হাত তুলে দে দৌড়, জেঠিমা পিস্তল উঁচিয়ে পেছনে ছুটছে আর মালাদি তার পেছনে ছুটছে। আমি বলছি, তুমি আর ঝামেলায় জড়িয়ো না। শেষ পর্যন্ত খুনখারাবি না হলে বাঁচি।
অর্ঘ্য-- দাদা ভয় পেয়ে পালাতে পারে। আমি কিন্তু পালানোর বান্দা নই।হবু স্ত্রীকে কথা দিয়েছি, তার মায়ের ভয়ংকরী ভৈরবীর মুখমন্ডলের পরিবর্তন করে দেবী কমলার হাস্যময়ী লাস্যময়ী মুখটি প্রতিস্থাপন করবো।এটা আমার চ্যালেঞ্জ।
দোলা -- তোমার দাদার অবস্থার কথা শুনেও তুমি এগিয়ে যাবে।
অর্ঘ্য -- আমি ভয় করবো না ভয় করবো না।
দুবেলা মরার আগে মরবো না ভাই মরবো না।
দোলা -- এত সাহস তুমি কোথা থেকে পেয়েছ?
অর্ঘ্য -- পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আমি। একবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দেখি না কীরকম লাগে।
দোলা -- দেখো, তোমাকে আমি অনেকবার মানা করলাম মায়ের সাথে লাগতে যেও না, ঠকে যাবে। তুমি আমার কথা শুনলেই না। ভয় হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত যেন না বিরাট ঝামেলায় জড়িয়ে যাও।মায়ের কাছে পিস্তল থাকে, বহুবার বলেছি। যদি কোন কারণে ট্রিগার চেপে দেয় আর কিছু করার থাকবে না।
অর্ঘ্য -- সত্যি কথা বলতে কী জানো, তোমার মা বিয়ের দিন আমাকে আংটি দিয়ে আশীর্বাদ করবেন।তাই সেই দিন তার দিকে সরাসরি তাকাতে গিয়ে যদি ভয়ে কাঁপতে থাকি, তবে আমার পারকিনসন রোগ হয়েছে বলে বিয়ের আসরেই বিয়ে ভণ্ডুল করে দেবেন।তাই ঐ দিন যাতে না কাঁপি, আগে থেকেই একটু মজা করে ভয়টা কাটিয়ে নেব।
দোলা -- জানিনা,কী বলতে কী হয়ে যাবে।
অর্ঘ্য -- তুমি পাশে পাশে থেকো।বিপদ দেখলে তুমি দৌড়ে এসে উদ্ধার করে নিও।
(ভেতর থেকে রমলা-- দোলা দোলা বলে ডাকতে থাকবে।রমলার আসার শব্দ শুনতে পেয়ে অর্ঘ্য এক কোণে লুকিয়ে যাবে।)
(রমলার প্রবেশ)
রমলা --- দোলা , দোলা।
দোলা -- মা , এইতো আমি এখানে।
রমলা -- আর কিছুক্ষণ পরে ওরা চলে আসবেন। তোরা প্রস্তুতি নিয়ে নে।
দোলা -- ঠিক আছে মা, আমি ভেতরে যাচ্ছি।
(দোলার প্রস্থান)
রমলা -- এই ফাঁকে আমি মিঃ সমর রায়ের সঙ্গে একটু কথা বলে নেবো।
(রমলা ফোন উঠাতে গেলো।ঐ সময়েই অর্ঘ্য এগিয়ে এসে রমলার পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো)
রমলা -- কে তুমি? আমাকে প্রণাম করছো কেন?
অর্ঘ্য -- না মানে ,আন্টি আমি।
রমলা -- কে আমি? কেনো এখানে এসেছ?
অর্ঘ্য -- আপনার মেয়ে প্রতিদিন আমার বাড়ির সামনে দিয়ে কলেজ যায়। ওকে দেখে আমি খুব পছন্দ করেছি। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
রমলা -- কী বললে, আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও! তোমার সাহস তো কম নয়।আর কিছুক্ষণ পরে সায়েন্স কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ অর্ঘ্য রায় ওকে দেখতে আসবেন।আর তুমি কোথা থেকে এসে ঝঞ্ঝাট শুরু করে দিয়েছো।
অর্ঘ্য -- আপনার মেয়েকে আমি আমার ফুল বায়োডাটা দেখিয়ে দিয়েছি। এছাড়া আমার মাসিক আয় কত-- সব জেনেশুনে উনি আমাকে আপনার সঙ্গে আজকেই দেখা করতে বলেছেন-- ওদের এখানে আসার আগেই। তাইতো আপনার কাছে এসে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব জানাচ্ছি।
রমলা -- দোলা তোমাকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলেছে? কিন্তু ও যে নিজেই অধ্যাপক ডঃ অর্ঘ্য রায়ের সঙ্গে বিয়ের কথা জানিয়েছে। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
অর্ঘ্য -- ঠিক আছে, ওদের আসতে দিন না। যদি এই ফাঁকে আমার বায়োডাটা জেনে নেন, তবে আমার খুব সুবিধে হয়। ওগুলো জানিয়েই চলো যাব।
রমলা -- কী বলতে চাও বলো।
অর্ঘ্য -- আপনি আমাকে নিশ্চয়ই টিভির পর্দায় কয়েকশো বার দেখেছেন। আমি একজন টিভি আর্টিস্ট। নায়কের রোলই বেশি করি।
রমলা -- তোমাকে কখনো দেখেছি বলে তো মনে করতে পারছি না।
অর্ঘ্য -- সেকি আন্টি।"বর্বর" সিরিয়ালে আমি সুমনের রোল করছি, "নরপশু" সিরিয়ালে শঙ্করের রোল করছি,"জানোয়ার" সিরিয়ালে রাজুর অভিনয় করছি, আরো অনেক সিরিয়ালে নায়কের রোল করছি--আপনি চিনতে পারছেন না!!
রমলা -- তোমাকে তো কখনো দেখিনি।
অর্ঘ্য -- না, মানে মেক আপ করে রোল করতে হয় তো,তাই চিনতে পারছেন না। পরিচালকেরা আমার নাম রেখেছেন,মহানায়ক তরুণ তপন। এবার নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন।
রমলা -- না, আমি তোমাকে চিনতে পারছি না।
অর্ঘ্য -- দুর্ভাগ্য আমার। আসলে আপনি তো সবসময় গৃহকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন,তাই আমার চাঁদমুখ দেখার সুযোগ আপনার হয়ে উঠেনি।
রমলা -- সব শুনলাম। এবার তুমি যাও।
অর্ঘ্য -- এখনও অনেক কিছু বলার বাকি আছে। প্লিজ আন্টি , আমাকে আর পাঁচটা মিনিট সময় দেন। এতেই আমি আমার সবকিছুর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করে দিচ্ছি।
রমলা -- বেশি সময় নেবে না কিন্তু।
অর্ঘ্য -- আমার একটা কীর্তন গানের দল আছে। আমি তার প্রধান গায়ক। আমি যখন গান করি বায়নার টাকা বাদ দিয়ে শুধু উপহার হিসেবে প্রতি আসর থেকে পঁচিশ হাজারের বেশি আয় করি। আমার গলা শুনলেই বুঝতে পেরে যাবেন আমি কোন লেভেলের গায়ক।(গান শুরু করলো)
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
রমলা -- আর শোনাতে হবে না। অনেক শুনলাম। এবার যাও।
অর্ঘ্য -- হায় আন্টি,আসল প্রতিভার কথা তো আপনাকে জানানোই হলো না। আমি একজন বিখ্যাত প্লে-ব্যাক সিঙ্গার , অসংখ্য সিনেমায় গান করেছি।
রমলা -- তাই নাকি।
অর্ঘ--তবে আর বলছি কী। আমার অজস্র গান রেকর্ডিং হয়েছে।মেলাঘাটে, পূজাপার্বণে এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমার গান মাইকে বাজতে থাকে।
আমি কুমার শানুর মতো গাইতে পারি বলে সবাই আমাকে দ্বিতীয় কুমার শানু বলে ডাকে। বিশ্বাস না হয় এখনি গেয়ে শোনাচ্ছি।
আরে অঙ্গনে মে বাবা, দুয়ারে পে মা---
তু আজা মেরা ঘরমে ---
রমলা -- চুপ চুপ,আর গাইতে হবে না। অনেক হয়েছে। এবার বেরোও, এখুনি বেরোও।
অর্ঘ্য -- আমার আর একটা পরিচয় আছে, প্লিজ,আর মাত্র তিরিশ সেকেন্ড সময় নেবো। আমি গ্ৰীন স্টার থিয়েটারের নায়ক গায়ক।এই মুহূর্তে ওখানে "বিষাক্ত পৃথিবী" নাটক চলছে। আমিই নায়ক গায়ক সুমন। সাতশো রজনী পার হয়ে গেছে।
রমলা -- সব শুনলাম। এবার তুমি যাও।
অর্ঘ্য-- আর দশ সেকেন্ড সময় নেবো। একটি ডায়ালগ বলবো। আপনার বিশ্বাস আনার জন্য---
এই বিষাক্ত পৃথিবীতে সৎ মানুষের আর বাঁচার অধিকার নেই।বাঁচার অধিকার রয়েছে শুধুমাত্র চোর ডাকাত বদমাইশ গুণ্ডা আর যত ঠগবাজদের।ওরা দুর্বলদের ঠকিয়ে সব কিছু কেড়ে নেয়--। তাইতো আমি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছি। এই বিষাক্ত সমাজকে আমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেবো।
রমলা -- জ্বালিয়ে দাও , পুড়িয়ে দাও, তবে বাইরে গিয়ে। এবার বেরিয়ে যাও। আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। এবার পিস্তল বের করবো।
অর্ঘ্য --আন্টি প্লিজ।
রমলা -- কোন সাহসে তুমি আমার ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেছ?
অর্ঘ্য -- না মানে , দোলা ম্যাডাম তো আমাকে আসতে বলেছেন।
রমলা -- সব মিথ্যা বলছো। তোমার এত সাহস উইং কমান্ডার রমেশ সেনের স্ত্রীর মজা করতে এসেছ।
(পিস্তল বের করলো)
এখনি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে যা জালিয়াত। এক দুই -- (রমলা পিস্তল তাক করলো। অর্ঘ্য দৌড়ে পালালো)
অর্ঘ্য -- ওরে বাবারে, সামনে যম।
(অর্ঘ্য পালিয়ে গেলো, রমলাও চলে গেল। দোলা দৌড়ে প্রবেশ করলো।)
দোলা -- এত করে অর্ঘ্যকে মানা করলাম, মায়ের সাথে মজা না করতে।শুনলো না আমার কথা।দেখি উদ্ধার করা সম্ভব হয় কিনা।মা মা তুমি ওকে মেরো না।মা তুমি গুলি চালিয়ে দিও না। (প্রস্থান)
🪕🎸🎺 মিউজিক 🎺🎸🪕
*******************************************
✍️ চতুর্থ দৃশ্য ✍️
স্থান -- বকুল সেনের বাড়ির বাইরের বারান্দা
সময়--- বিকাল চারটা
(মঞ্চসজ্জা -- একটি টেবিল, দুটো চেয়ার, মঞ্চের দুপাশে দুটো ছোট বেঞ্চ রাখা যেতে পারে।)
(অর্ক দুহাত উপরে তুলে পেছন হেঁটে প্রবেশ করবে আর কমলা পিস্তল তুলে প্রবেশ করবে ।তার পেছনে মালা প্রবেশ করবে)
কমলা -- একটা ডাকাত দিন দুপুরে ধরেছি। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে যা শয়তান।
মালা -- ওকে মেরো না মা ও ডাকাত নয়।ও--
কমলা -- চুপ ,তুই আমার কাজে মাথা গলাবি না।
অর্ক-- আমাকে ক্ষমা করে দিন আন্টি। আমি একশো বার কান ধরে উঠবস করছি।দয়া করে আমাকে প্রাণে মারবেন না।
কমলা-- বেশ শুরু কর।ওয়ান,টু, থ্রি --
(উঠবস শুরু করতেই অর্ঘ্যও দুহাত তুলে পেছন হেঁটে হেঁটে প্রবেশ করলো।পিস্তল তাক করে রমলাও প্রবেশ করলো।তাঁর পেছনে পেছনে দোলাও প্রবেশ করলো।)
(অর্ঘ্য প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে অর্ক উঠবস করা বন্ধ করলো)
রমলা -- আমিও একটা ডাকাত ধরেছি দিদি।প্রকাশ্য দিবালোকে দুপুর সাড়ে তিনটায় আমার ঘরে ঢুকে আমার মেয়েকে ঠকিয়ে তার পতিদেবতা হতে চেয়েছিল। এবার মরণকে বরণ করে নে।
এক দুই ---
অর্ঘ্য -- আমাকে মারবেন না আন্টি।এই আমি কানমলা খাচ্ছি।আর এ জীবনে এ বাড়ির সীমানায় পা রাখবো না।
রমলা --- কোনো কথা শুনবো না। মৃত্যুই তোর একমাত্র শাস্তি।
দোলা -- মা ওকে মেরো না।ও ডাকাত নয়।
রমলা -- তুই চুপ কর। ডাকাত চিনতে আমার ভুল হয় না।
অর্ঘ্য -- আমি কানধরে একশো বার উঠবস করবো। তারপর চলে যাব।
রমলা -- তাই কর। দুটো শয়তান। টুপি আর চশমা খুলে টেবিলে রাখ। তোদের চাঁদবদন ভালো করে দেখি!!
(অর্ক এবং অর্ঘ্য নিজেদের চশমা এবং টুপি খুলে টেবিলে রাখবে। তারপর সামনের দিকে এগিয়ে কান ধরে উঠবস করতে শুরু করবে)
রমলা -- বড়দি, এখন তো ঠিক বিকেল চারটা। এখনি ওরা এসে পড়বেন।এসব দেখলে ওরা খারাপ কিছু ভেবে নিতেও পারেন।তাঁর চেয়ে তাড়িয়ে দেওয়াই মঙ্গল।
কমলা -- ঠিক বলেছিস। ওদের আসার সময় হয়ে গেছে।
কমলা -- যা, দূর হয়ে যা, এখান থেকে।আর যদি কোনদিন সামনে দেখতে পাই , তবে এক বলার আগেই ট্রিগার টেনে দেবো।
অর্ক -- এই কানমলা খেয়ে বলছি আর এ জীবনে এখানে আসব না।
অর্ঘ্য -- আমিও কানমলা খেয়ে মা দুর্গাকে শপথ করে বলছি,আর এ বাড়ির চৌকাঠ পেরোবো না।
অর্ক-- চল ভাই ,পালিয়ে চল।
অর্ঘ-- চল দাদা,প্রাণ নিয়ে পালিয়ে চল।
কমলা -- এদুটো আবার দুই ভাই নাকি !!
রমলা -- তাইতো মনে হচ্ছে কথা শুনে।
কমলা -- দুটোই ডাকাত!! না এদের ছাড়া চলবে না।
রমলা -- আমি গুলি করব বড়দি।এ দুটোকে এখনই
যমালয়ে পাঠাবো।
(রমলা পিস্তল তুলতেই দোলা তার হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিল)
কমলা -- তোর মায়েরটা ছাড়িয়ে নিলে কী হবে।
আমার কাছে তো পিস্তল আছে ।
(কমলা পিস্তল তাক করতেই মালা তার হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিল)
মালা -- মা, তুমি কি ওদের চিনত পারছো না ?
দোলা -- মা , তুমিও কি ওদের চিনতে পারলে না ?
মালা -- কোথাও দেখেছো-- মনে করার চেষ্টা কর। চিনতে পেরে যাবে।
দোলা -- তুমিও ওদের দূর থেকে দেখেছো।একটু ভাবো মা, চিনতে পেরে যাবে।
(কমলা অর্কের দিকে এগিয়ে এল। রমলা অর্ঘ্যের কাছে এসে ভালো করে দেখতে লাগল।)
কমলা -- আচ্ছা, তোমাকে মনে হয় কলেজের স্টাফ রুমে মালার পাশে বসতে দেখেছি। তাছাড়া তুমি কলেজ ফাংশনে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলে না?
অর্ক-- না মানে হ্যাঁ।
কমলা -- তুমি অধ্যাপক ডঃ অর্ক রায়?
অর্ক-- হ্যাঁ ,আন্টি।
কমলা-- এ কী সর্বনাশ ---!!
(কমলা লজ্জা পেয়ে সরে গেলো)
রমলা -- তোমাকে-- তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি। মনে এসেছে। তোমাকে দোলার কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের ক্লাস নিতে দেখেছি। তুমি দোলার সঙ্গে "কর্ণ কুন্তি সংবাদ" মঞ্চস্থ করেছিলে না?
অর্ঘ-- না,মানে হ্যাঁ।
কমলা -- একি বাবা, তোমাদের বিকেল চারটায় আসায় কথা। তোমরা আগে থেকে এসে এসব কি করলে বাবা!! আমাদের খুব লজ্জা পাচ্ছে!
রমলা -- তোমরা দুজনেই অধ্যাপক। আমাদের জামাই হবে।এসব কেন করলে বুঝতে পারছি না।
অর্ঘ্য -- আন্টি, আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।
কমলা -- আর একটু হলেই তো ট্রিগার টানতে যাচ্ছিলাম।কী সর্বনাশ হয়ে যেতো।
রমলা -- তোমরা তো তোমাদের দাদুকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল চারটায় আসবে, এই কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এসব কেন করলে বুঝতে পারছি না।
কমলা -- মালা, দোলা--তোরা দুজনে মিলে কিছু ফন্দি করেছিস।বল--ওদের দিয়ে এসব কেন করালি?
মালা -- মা, তোমরা সবসময় উগ্ৰ মেজাজ নিয়ে থাকো। কেউ তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ে কথা বলতে পারে না। মজা করা তো দূরের কথা।
দোলা -- তোমাদের অধ্যাপক হবু জামাইবাবুরা আমাদের চ্যালেঞ্জ করেছিল যে দুই হবু শাশুড়ির মুখ-- মিষ্টি মজার হাসিতে ভরিয়ে দেবে।
মালা -- বিয়ের পর তো এমন নাটক করা আর সম্ভব হবে না।তাই আগেই এই পালাগানটি সেরে ফেলেছে।
কমলা -- এদের কাণ্ডকারখানা দেখে তো না হেসে আর পারছি না।
রমলা -- কী অধ্যাপক জামাইরে বাবা, শাশুড়িকে দেখলেই ভয় পায়। আচ্ছা বাবা, আমরা জোরে জোরে হাসছি।তোমরাও হাস।
অর্ক-- মালা, দোলা,তোমরা পিস্তলগুলো ফেলে দাও। পিস্তল হাতে থাকলে হাসি আসবে না। হবু শাশুড়ি মায়েরা যদি আবার তাক করে বসেন।
(ওরা পিস্তল ফেলে দিল। সবাই হাসতে লাগলো)
কমলা -- এবার তোমরা খুশি তো বাবাজীবনরা!!
রমলা --- এতো রিস্ক না নিয়ে এমনি বললে হতো, আমরা হাসতাম। ভাগ্যিস পিস্তল চালাইনি।
অর্ক-- মালা, এবার আমাকে বীরপুরুষের শিরোপা দেবে তো?
অর্ঘ্য -- দোলা, এবার তুমি নিশ্চয়ই আমার মাথায় বিজয়ীর মুকুট পরিয়ে দেবে?
কমলা -- হ্যাঁ বাবাজীবনরা, ওরা বলুক না বলুক, আমরা ঘোষণা করছি, তোমরা আমাদের গোমড়া মুখে হাসি ফুটিয়েছো।
রমলা -- বড়দি, বিকেল চারটা পেরিয়ে গেছে। ওরা বোধহয় এখনিই পৌঁছে যাবেন।
অর্ঘ্য -- সরি,হবু শাশুড়ি মা। ওরা নয়। উনি একা মানে আমার শ্রদ্ধেয় দাদু, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডঃ সমর রায় এখনই পদার্পণ করবেন।
অর্ক--- ঐতো দাদু এসে গেছে।
(ধোপদুরস্ত পোশাকে সমরের প্রবেশ।এক হাতে দই মিষ্টি অন্য হাতে ওয়াকিং স্টিক ।দই-মিষ্টি টেবিলে রাখলো)
সমর-- দুটো কী শয়তান হয়েছে! একসাথে আসবে বলেও দুই মূর্তি আগে থেকেই হাজির। ড্রাইভারকে বলে দিয়েছে, আমরা সরাসরি পৌঁছে যাব, তুমি দাদুকে নিয়ে চলে আসবে।
কমলা --আসুন আসুন।
(কমলা রমলা, মালা ও দোলা সবাই সমরকে প্রণাম করবে।)
সমর-- মিসেস সেন কোথায়?
(বকুলের প্রবেশ)
বকুল -- নমস্কার মিঃ রায়। আপনার গলার শব্দ পেয়ে আমি চলে এলাম।
সমর-- আমার প্রথম কাজ হচ্ছে এই দুটো গরুকে আগে লাঠিপেটা করা।নইলে মনে শান্তি পাবো না।
বকুল -- কী করেছে ওরা?
সমর-- আগে পেটাই,তারপর বলছি।
(সমর, অর্ক এবং অর্ঘ্যকে লাঠি দিয়ে আলতো করে আঘাত করতে গেলো।অর্ক লাঠি ধরে নিল।)
অর্ক-- আমরা বড় হয়ে গেছি। আমাদের এভাবে মারতে নেই।
সমর-- রিটায়ার্ড প্রিন্সিপাল ডঃ সমর রায়কে জ্ঞান দিচ্ছিস।
অর্ঘ্য-- না দাদু, এটা আমাদের হবু শ্বশুরবাড়ি বলে কথা।
অর্ক--সামনে দাঁড়িয়ে অবসরপ্রাপ্তা অধ্যক্ষা ডঃ বকুল সেন,তাঁর দুই পুত্রবধূ মিসেস কমলা সেন এবং মিসেস রমলা সেন।
অর্ঘ্য -- তাছাড়া তোমার সামনে রয়েছে দুই জন উচ্চশিক্ষিতা মহিলা । ওদের সামনে মার খেলে সম্মানটা একেবারেই চলে যাবে!
অর্ক--দাদু আমরা অনেক বড় হয়ে গেছি। এখন লাঠির আঘাত করতে নেই।
(অর্ক এবং অর্ঘ্য দুজনে দাদুর গালে চুমু খেলো)
সমর-- তোরা যে সত্যিই বড় হয়েছিস, সেটা যারা বলে বলুক, আমি কিন্তু মানতে পারি না। তোরা যেন সেই ছোট্ট ছেলে হয়ে আমার পিঠে চড়ে খেলা করছিস।
বকুল -- ডঃ রায়।
সমর-- হ্যাঁ ডঃ সেন, ওরা দুজন আমার কাছে এখনও সেই ছোট্ট দাদু সোনা। আমার প্রাণের প্রাণ।ওরা আমার ছেলের যমজ সন্তান। অর্ক অর্ঘ্যের চেয়ে পাঁচ মিনিটের বড়। খুব কষ্ট করে ওদের বড় করেছি।ছয় মাস বয়সে ওদের অন্নপ্রাশন হওয়ার পর থেকেই ওরা দুজন আমার দুপাশে শুয়েই এত বড় হয়েছে।এখনও দুজন আমার সাথেই শুয়ে।
মালা -- আপনার সাথে শুয়ে?
সমর-- হ্যাঁ গো দিদিভাই। শুধু তাই নয়, এখনও বাবুরা রাত্রে না খেয়ে শুয়ে পড়লে এই বুড়োটাকেই বিছানায় বসে খাইয়ে দিতে হয়।
দোলা -- ওরা এত অলস!!
সমর -- শুধু দাদু-ঠাকুমাকে দেখলেই অলস হয়ে পড়ে।মা-বাবার সামনে ওরা কনকর্ড জেট বিমান!!
সমর-- আমার পালঙ্কের মাপ শুনলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। এটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের মধ্যে একটি, লম্বায় বারো ফুট আর চওড়ায় দশ ফুট।
বকুল -- এতো বড় পালঙ্ক!!
সমর-- জানি, বিশ্বাস করবেন না। তবে এটাই সত্যি।
( সবাই হাসবে)
হ্যাঁ,অন্য কথায় আসি। আমার নাতিদের মতো মানুষ আজকাল খুব একটা দেখা যায় না।ওদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা বাদই দিলাম। কিন্তু মানুষ হিসেবে ওদের জুড়ি মেলা ভার। ওরা আমার অহংকার।
রমলা -- তবে মেসোমশাই, একটা কথা বলতে পারি, ওরা খুব বড় অভিনেতা।
সময়-- কিন্তু, আমি তো কখনো ওদের অভিনয় করতে দেখিনি।
কমলা -- ছোটখাটো অভিনেতা নয়।বিশাল বড় মাপের অভিনেতা। এই দেখুন না, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ডাউনলোড করে দেখাচ্ছি।
অর্ক-- ওরে বাবারে, ফুটেজ ডাউনলোড করছেন।
কমলা -- এটা মিলিটারি ব্রিগেডিয়ারের বাড়ি। সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকবে না!!
রমলা -- দোলার বাবা ফ্লাইং কমাণ্ডার।তাঁর বাড়িতে সিসি ক্যামেরা থাকবে না, এটা ভাবলে কীকরে বাবাজীবন!
অর্ক-- আমি জল খাবো !
অর্ঘ্য -- আমারও খুব তৃষ্ণা পাচ্ছে!
বকুল -- শুধু জল নয়, সঙ্গে লুচি, আলুর দম, মটর পনির, খাসির মাংস, রসগোল্লা, রসমালাই আরো অনেককিছু আছে।
অর্ক -- না মানে ওসব খাবো না। শুধু জল খাবো!!
সমর-- কী কান্ড করেছিস যে ভয়ে কাঁপছিস দুজনে?
অর্ঘ্য -- শুধু জল খাবো দাদু, কোথায় কাঁপছি!!
সমর-- ঠিক আছে,এখন ফুটেজ দেখাতে হবে না।
ডঃ সেন, মেয়ে দেখানোর বন্দোবস্ত করুন। যদিও ওরা নিজেরাই দেখেশুনে সব ঠিক করে রেখেছে, তবুও একবার সোনা দিদিভাইদের দেখে নিই। তবে হ্যাঁ, আমার অন্য কোনো চয়েস নেই। ওদের মতই আমার মত। শুধু প্রাণ ভরে ওদের আশীর্বাদ করব বলে-- আমার এখানে আসা।
বকুল -- ওরা আপনার সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।
কমলা -- এ আমার মেয়ে মালা, রাজ কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপিকা।
রমলা --আর এ হলো আমার মেয়ে দোলা, সায়েন্স কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা।
সমর--এরা দুজন আমার নাতবৌ হবে !! এদের তো আমি কলেজ ফাংশনে নৃত্য করতে দেখেছিলাম।
কমলা -- ওরা দুজনেই খুব ভালো গান গাইতেও পারে।
সমর-- আয় দিদিভাই, তোরা আমার কাছে আয়। তোরাই আমার লক্ষ্মী,তোরাই আমার সরস্বতী, তোরাই আমার দশভূজা মহামায়া দেবী দুর্গা।
বকুল -- আপনার পছন্দ হয়েছে তো-- আমার এই দুই নাতনিকে?
সমর -- ডঃ সেন,এই দুটো গাধা যাদের পছন্দ করেছে-- তাতে ওদের কিছুটা বুদ্ধি আছে বলে মনে হয়।এমন দুটি হীরার টুকরো আমার বাড়ির নাতবৌ হয়ে যাবে, ভাবলেই মনে হয়-- আমি ভীষণ ভাগ্যবান।