Wednesday, August 30, 2023

এক ভিখারীর কথা -- বলরাম সরকার

 এক ভিখারীর কথা
 বলরাম সরকার
 ৩০/০৮/২০২৩
দেখেছিলাম সেদিন রেল স্টেশনে
প্লাটফর্মে মেঝের এক কোণে ।
  বুভুক্ষু এক ভিখারীর আগমন,
ঘটিল জনবহুল সেই স্টেশনে।

জীর্ণ পোশাকে শীর্ণ তার চেহারা
রুক্ষ শুষ্ক চুল আঙুলে বড় বড় নখ ,
কঙ্কালসার চেহারা বসে গেছে গাল
হাড়গুলো যায় গোনা গেছে বসে চোখ।

উসকো খুসকো কোঁকড়ানো চুল 
সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে আছে ময়লা,
পরনে পরিহিত ছেঁড়া পায়জামা
 যেন মেখেছে সে গায়ে কয়লা।

শীর্ণ শরীরে ভিখারী অতি দুর্বল
ফোলা পায়ে লাঠি সম্বল করে  হাঁটে,
মায়াবী চোখ দুটি যেন কিছু চাইছে 
ঋজু শরীরে আহারের জন্য খাটে।

চোখে মুখে সর্বদা চিন্তার ছাপ
হাতে রেখেছে এক নোংরা ঝোলা,
কখনো চেয়ে থাকে আকাশ পানে
অসার শরীর তার মুখটা ফোলা।

গুটি পায়ে আমার কাছে এলো ভিখারী
জলে ভরা করুন সেই  দুটি আঁখি
বাড়িয়ে হাত চাইলো সে  দুটি টাকা,
পেলাম কষ্ট এ লজ্জা কোথায় রাখি।

কেহ কেহ পাশ কেটে যায় চলে
কেহ ঘৃণার দৃষ্টি করে নিক্ষেপ,
তাচ্ছিল্য ভঙ্গিতে নাকে দিয়ে রুমাল
যা খুশি ঘটে যাক কারো নেই ভ্রক্ষেপ।

ঝড় বাদল মাথায় নিয়ে এভাবেই চলে
অভাবে ভিখারী সেও তো একজন মানুষ,
ভাগ্য  পরিস্থিতি করেছে তাঁকে ভিখারী
অবহেলা করে যারা তাঁরা ঘৃণিত অমানুষ

Tuesday, August 29, 2023

বাংলাদেশ --কালাচাঁদ মন্ডল

 
 বাংলাদেশ
কালাচাঁদ মন্ডল
 ২৯/০৮/২০২৩
বলেছিলে কবি বিরহের সুরে সাজিয়ে আপন মতে,
হারানো প্রিয়কে ‘তুমি যে গিয়েছো বকুল বিছানো পথে’।

আগস্ট মাসে সে ঊনোত্রিশ যেদিন ধরাতে আসে,
তব বিদায়েয় করুণ রাগিনী আকাশে বাতাসে ভাসে।

গানের সুরেতে বলেছিলে তুমি রেখো মসজিদের পাশে,
ভুলেনি বাঙালি রেখেছে প্রমাণ তোমাকেই ভালোবাসে।

ঊনিশ শতক ছিয়াত্তরের সেই বিদায়ের ক্ষণ,
তব বিদায়ের বেদনার সুর কাঁদায় সবার মন। 

দুখু মিয়া বলে ডাকিত তোমায় তোমার ছোট্ট বেলা,
সারাটা জীবন দুখের সাথেই করিলে কেবল খেলা।

সাতাত্তরটি বছর ধরাতে বিরাজিত ছিলে তুমি,
চৌত্রিশ সন নীরব রহিল তোমার মানস ভূমি।

সক্রিয় ছিলে কাব্য জগতে মাত্র কয়েক সাল,
তার মধ্যেই সাহিত্যে সব শাখাকে করিলে লাল।

পরাধীন দেশের স্বাধীনতা চেয়ে গর্জে তোমার লেখা,
বিদ্রোহী কবি খেতাব আঁকিল তোমার নামেতে রেখা। 

মানবতাবাদী দৃষ্টি ভঙ্গি তোমার লেখনী বলে,
প্রেমের রাজ্যে বাজাও বাঁশরী হৃদয় নাচিয়া চলে।

সাম্য স্বাধীন মানবতা প্রেম লেখায় প্রকাশ করো,
মানুষের মন বিজয়ে হে কবি অমরত্বকে ধরো।

ধুমকেতু নামেতে পত্রিকা তুমি প্রকাশ করিয়াছিলে,
উহারই মত উজ্জ্বলতায় হৃদয় হরিয়া নিলে।

বাঙালি তোমার রাখিয়াছে মান বানিয়ে জাতীয় কবি,
প্রতি বাঙালির হৃদয়ে রয়েছে তোমার প্রেমের ছবি।

এখনো বঙ্গে বকুল বনেতে ফুটে বকুলের ফুল,
হারিয়ে যাও নি কবি হে নজরুল আছো আমাদের কূল।

অশ্রু সিক্ত নয়নে অর্পি বকুল ফুলের মালা,
তব সনে বাঁধা সেতু বন্ধনে প্রেম বারি হোক ঢালা।

Monday, August 28, 2023

সম্পর্কের পটচিত্র -- বিজয়া মিশ্র

 সম্পর্কের পটচিত্র
 বিজয়া মিশ্র
 ২৮.০৮.২০২৩
যে মাটিতে তুমি আদর করে রেখে গিয়েছিলে
লোক দেখানো সম্পর্কের বীজ
সেখানে আমি রাখলাম বর্ণমালার সজীব অঙ্গীকার।
কী আশ্চর্য 
কয়েকটা দিন বাদেই সম্পর্কের নির্জীব বীজেরা
হতোদ্যম তাকিয়ে আছে
বর্ণমালার লাবণ্যের জৌলুসে বুঁদ হয়ে।
মনে হলো নেশাতুর চোখগুলো এত প্রশান্তি পায়নি কখনো আগে
বর্ণমালায় হারিয়ে গেছে ওদের সমস্ত দিনলিপি
বর্ণমালায় ওঠা বসা ওই নিন্দুক ,নির্জীব,
একচেটিয়া তোমার একমুঠো বন্ধন
একদা দাপুটে পটচিত্র ,জাতে উঠতে চায় সবংশে
সেখানে অবলীয়ায় ফিরে আসে দোয়েলের সংসার,
বাবুই,চড়ুই,ময়না টিয়াদের খুনসুটি
সবুজের অমলিন ঘরানায়
রোজ রোদের ডাকে বর্ণবিতানে অপরূপ সাজ।
সমস্ত মাঠ জুড়ে জলচুড়ি পাড়ের মতো 
নিপুন আলেখ্য লিখে রাখে বন্ধনহীন ইচ্ছেগড়ন।
সব বর্তমান পেরিয়ে পারো যদি নিও খুঁজে
তোমার সম্পর্কের অহংকারে পুষ্ট বীজগুলোর ইতিকথা ।

ঘর পালালো চৈতী -- মঞ্জুরুল হক তারা

 
ঘর পালালো চৈতী 
মঞ্জুরুল হক তারা
২১ --৮--৭৩ 
চৈতীর বাপটা  মরে গেছে অনেক দিন আগে
উঠতি নবীণা  পথ-ঘাট  চিনে না,
বারন্ত মেয়ে  ঘর ছেড়ে কোথায় যায়  কোথায় থাকে
অসুস্থ মা টা   খবর টা রাখে না।
,
নদীর বুকে  ঢেউ জাগে  অস্থিরতায়  কুল ভাঙ্গে  ক্রুব্ধে
উত্তাল স্রোতে  গভীর রাতে  ভেসে যায়, 
পিপাসায় তাড়নায়  কুয়াশায় পথ হারায়  জীবন যুদ্ধে
ভুল করে  গভীর অন্ধকারে  ছুটে যায়।
,
পাড়ার ছেলের হাতটি ধরে  পালালো সে ঘরটি ছেড়ে
গরীব ঘরের  কালো মেয়ে   চৈতীরাণী, 
চঞ্চল রেণু  রৌদ্রের ঢলে  ফুটন্ত বুকে আগুন  জ্বলে বেড়ে
ডুব দেয় অন্ধকারে  পারি দিতে   বৈতরণী।
,
কিশোরী রং বদলায়   ঢং বদলায়  ঢেউ খেলে হাওয়ায়
দুরন্ত মন  ঘুরে বন  উড়ে বেড়ায়  দূর নীলিমায়,
স্বপ্ন দেখে নিবিড়ে  ঘর ছেড়ে দূরে  ছুটে যায় অজানায়
হয়তো কিছু সুখ পায়    নয়তো  কিছু  হারায়।
,
জামিন নেবে না সে  না করছে  আদালতের কাছে
মা কে দেখে  না করছে  চিনে না যে  তার মা কে সে
ভালোবাসার গভীর নেশায়  পথের মাঝে  পথ হারায়
প্রেমের সাথে  দিনরাতে  থাকতে চায়  জেলখানায়।
,
পথ হারালো মন্টি  বাজায়ে প্রেমের ঘন্টি  এ সময়
বদনাম তার রটে যায়  দূর অজানায়  ছুটে যায়, 
বিয়ে করার  তার বয়স নয়  পাড়াময়  কথা কয়
সকাল সন্ধ্যায়  রক্ত চোক্ষে শ্বাসায়  ঝড় উঠে নিন্দায়।
,
রক্ষিত ধন  কাঁটা বন ছেড়ে   ছুটে গেলো উড়ে
বিধবা মায়ের কান্নায়  রাতের পর  দিন যায়,
রান্না-বান্না  বন্দ করে  বসে থাকে বদ্ধ ঘরে
বাইর আর হয় না সে  বসে থাকে লজ্জায়।

এমন কেন হয় -- রেজাউল করিম বিশ্বাস

 এমন কেন হয়
 রেজাউল করিম বিশ্বাস 
  ২০ ০৮ ২০২৩
সেই কিশোরী মেয়েটি কি আজও খোঁপা বাঁধে ?
নদীর ঘাটে নাইতে যায় নাচতে নাচতে ঝুমুর পায়ে?
সন্ধ্যা বেলায় ছাদে নিজের চুলে বিনুনে দেয়  ?
কারো কথা ভেবে আকাশের  তারা গোনে ?

গভীর রাতে গবাক্ষ  খুলে বাইরে চেয়ে রয় ?
স্বপ্নে কি সে  রাজকুমারকে আজ ও খুঁজে ?
রাতের প্যাঁচার কর্কশ স্বরে তার মনোযোগ হারায় ? 
ঘুম ঘুম চোখে স্ট্রিট লাইটের হলদে আলো দেখে ?

আজও কি তার সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে ?
শিশির সিক্ত দূর্বা ঘাস মাড়িয়ে যায় কার হাত ধরে?
খেয়ালী বাতাস  চুলগুলো এলোমেলো করে দেয় ?
নিজেই বুঝি আঙুল দিয়ে সব ঠিক করে ন্যায় ?

তার পছন্দের শাড়িটা ব্যালকনিতেই ঝুলে ?
বাবুই পাখিগুলো কি তারপরেই উড়ে এসে বসে ?
বই হাতে হেঁটে হেঁটে ধুলো রাস্তায় কলেজে যাই ?
অংকন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় নাম লেখায় ?

তার শখের বাগানে ফুলের পরিচর্যা নিজেই করে ?
 বেগুন গাছের টুনটুনির বাসা আজও আছে ?
লম্বা দৌড় হাসির ফোয়ারায় সবাই মেতে ওঠে ?
হঠাৎ এমন ভাবনা হলো কেন আমার কে জানে ?

তবে কি আমি সত্যি সত্যি আজও তার কথা ভাবি ?


Sunday, August 27, 2023

হারিয়ে যাচ্ছে অঞ্জনা -- দুলাল চন্দ্র দাস

হারিয়ে যাচ্ছে অঞ্জনা
দুলাল চন্দ্র দাস
২৮/৮/২৩
অঞ্জানায় জল নেই ,নেই আর স্রোত আর,
নেই কোন জেলে মাঝি শুধুই হাহাকার।
লোকজন হেঁটে হেঁটে পার হয় নদী,
দেখিতে পারবে সবাই আসে কেহ যদি।

নদীর ভেতর ঢালেত কত বাড়ি ঘর,
জল শুকিয়ে গেছে ছোট কত চর।
দুই পাড়ে কাশবন মাঝে মাঝে আছে,
লতা পাতা জংগলে নদী ভরে গেছে।

আম বাগান বাঁশ ঝাড় পাড়েতে কত,
চেয়ে আছে নদী পানে অনাথের মত।
গাছেতে পাখি ডাকে নেই আর বিল,
ওড়ে নাতো নদীর উপর পানকৌরা চিল।

বর্ষা এলে নদীতে কিছু জল হয় ,
সারা বছর শুকনো কচুরি পানা রয়।
রবী ঠাকুর লিখে ছিলো অঞ্জনা নিয়ে,
জলংগী থেকে বেড়িয়ে পরেছে চূর্ণীতে গিয়ে।

ভাঙ্গা সেই মন্দির আর তীরে নাই,
ভক্ত এক কুকুর ছিলো নিয়েছে বিদায়।
অঞ্জনা নদীর তীরে চন্দদাহ গায়ে,
 গঞ্জটা আছে সেথা শুধু দেখিতে পাই।

স্মৃতি বুঝি গেলো মুছে অঞ্জনা নদী,
এখনো বাঁচে এগিয়ে আসে সবাই যদি।
অঞ্জনা নদীর কথা সারা ভারত জানে,
পড়াতো বইতে এখন আর নাহি মনে।

Friday, August 25, 2023

আমি পেরেছি মা -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 আমি পেরেছি মা 
শ্যামল কুমার মিশ্র
২৫-৮-২০২৩
ইটিন্ডাঘাটের পাশ দিয়ে প্রবহমান ইছামতি 
ইছামতির তীরে ঘাসের উপর বসে আকাশের দিকে নিবিষ্ট চিত্তে চেয়ে রয়েছে একটি বালক 
একটু একটু করে সূর্য ডুবে যাচ্ছে
আকাশ জুড়ে লাল রং ছড়িয়ে পড়ছে
ধীরে ধীরে রঙের গভীরে হারিয়ে যাচ্ছে ছেলেটি

নদীর বুক জুড়ে আঁধার নেমে আসছে 
দূর আকাশে তারার মেলা 
কখনও কখনও ছোট্ট ভাইটাকে ও তারা চেনাত 
বলতো--ঐ দেখ সন্ধ্যাতারা, ঐ দূরে সপ্তর্ষিমণ্ডল 
আকাশের গ্যালাক্সি চেনাতে চেনাতে হারিয়ে যেত ছেলেটি
মানসলোকে সে দেখতে পেত চাঁদ মঙ্গল আর বৃহস্পতিকে
মাকে বলতো-- সকল বাধা পেরিয়ে আমি একদিন আকাশ ছোঁব মা
মায়ের স্নেহের স্পর্শ ছুঁয়ে যেত মানসের চিবুক
চাঁদ,পৃথিবীর গল্প করতে করতে মানস যেন পৌঁছে যেত চাঁদের দেশে... 

স্বপ্ন বোধ হয় এমনি করেই সত্যি হয় 
উচ্চশিক্ষা শেষ করে ইটিন্ডাঘাটের সেই ছেলেটি একদিন চলে গেল ইসরো
ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপনের অন্যতম কারিগর 
ধীরে ধীরে চন্দ্রযান-৩ পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে যাচ্ছে... 

ইসরোর চেম্বারে বসে ছেলেটি আজও খুঁজে চলে খানিকটা আঁধার 
ছোটবেলার সেই ইচ্ছামতির বুকে নেমে আসা আঁধার 
কুল কুল স্বরে ইছামতি আজও বয়ে যায় 
রাতের আঁধারের বুকে এক টুকরো আলো হয়ে নেমে আসে  মানস
আর ফিসফিসিয়ে মাকে বলে--
আমি পেরেছি মা, সকল বাধা পেরিয়ে আমি চলেছি চাঁদের দেশে 
মানসের কথাগুলো বুকে নিয়ে ইছামতি বয়ে যায় অনন্তের পথে...
--------------------------------------------------------------------

হবে কবে স্বপ্নপূরণ ? -- বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য

 হবে কবে স্বপ্ন পূরণ ?
 বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য
 ২৫/০৮/২০২৩..
শত সহস্র বীরের রক্তস্রোতধারার মধ্য দিয়ে
লক্ষ লক্ষ ক্রন্দসী মায়ের বুক, কোল, খালি করে
অশ্রুধারার অপ্রশমন অবিশ্রান্ত প্লাবন বইয়ে
অবশেষে এসেছ তুমি কাঙ্ক্ষিত বাঞ্ছিত স্বাধীনতা !
পরাধীনতার নাগপাশের, দুঃসহ, ঘোর অমানিশার হল অবসান              
স্বাধীনতার রক্ত লাল সূর্য্য হল উদিত মহানন্দে।
ব্রিটিশের কূটচালে দেশবাসী পেলো অনাকাঙ্ক্ষিত ত্রিখণ্ডিত স্বাধীনতা 
আছড়ে পড়ল অগণন ছিন্নমূল উদ্ভাস্তু মানুষের অবিরাম ঢেউ
লাখো লাখো বীর মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে।
অজস্র শহীদের জীবন বলিদানের ফলে অর্জিত হল যে স্বাধীনতা 
তার সুফল হল করায়ত্ত উচ্চাশী, লোভী, উচ্চাভিলাষী কতিপয় রাজনীতিবিদদের 
যারা ছিল রত নিয়ত ব্রিটিশ ভজনায়,তাবেদারিতে হায়রে পরিহাস !
বিকৃত, একপেশে, ফরমায়েশী ইতিহাস লিখনে 
স্থান পেলনা প্রকৃত ত্যাগী বীর যোদ্ধা, সংগ্রামীদের কথা !
" সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ !" 
দেশপ্রেমিকেরা পচে মরে জেলে, ফাঁসিকাঠে ঝোলে
অপ্রশমন নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয় বিপ্লবীরা 
দেশদ্রোহী গদ্দার, দালাল, ফিতে কাটে উদ্বোধনের !
মাঠে ময়দানে কত জ্বালাময়ী ভাষণ দেয় ! দেয় কত বাণী!
এতে করে আজও ঘুচলো না দেশের দারিদ্রতা, অন্ধকার, বৈষম্য 
কবে হবে প্রকৃত স্বাধীনতার অনুকূল পরিবেশ তৈরী, কে জানে !
কবে পূরণ হবে প্রিয় নেতাজীর দেখা স্বপ্নের ? আজও জানিনা
কবে পাবে সবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা 
কবে করবে ভোগ, পাবে যথার্থ স্বাদ প্রকৃত গণতন্ত্রের ?
দেশের অগণিত আপামর, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, জনসাধারণ ?

Monday, August 21, 2023

বৃষ্টির ফোঁটা -- বিবেকানন্দ রায় বর্ধন

 বৃষ্টির ফোঁটা
 বিবেকানন্দ রায় বর্ধন
 ১২-০৮-২০২৩
বৃষ্টির ফোঁটা,পড়ন্ত বিকেলে
নিভৃতে নির্জনে প্রেমিক যুগলের বুকে
নেচে উঠে বন ময়ূরীর দল

বৃষ্টির ফোঁটা,ঘরের চাল ভেদ করে
যখন গায়ে এসে লাগে 
শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের মিছিল
দৃঢ় পদক্ষেপে হেঁটে যায় হৃদয়ের পাশ দিয়ে।

বৃষ্টির ফোঁটা,কালো মেঘের বুক চিরে
নেমে এসে চাষীর মনে
জাগিয়ে তুলে রাধিকার প্রেম

বৃষ্টির ফোঁটা,পাহাড়ি জনপদে
মেঘভাঙ্গা বৃষ্টিতে ফিরিয়ে দেয় হড়কা বানের স্মৃতি।

বৃষ্টির ফোঁটা,ধানের শিষে
সবুজ ঘাসে পদ্ম পাতার বুকে
রোদের কিরণে ছড়ায় হিরণ্ময় দ্যুতি 

বৃষ্টির ফোঁটা,ভাসিয়ে দিয়ে যায়
ইট ভাঙ্গা শ্রমিকের মাথার উপরের পলিথিন।

বৃষ্টির ফোঁটা, অতীত ফিরে আসে
মনের দর্পনে কতো ছবি ভাসে
উদাস চোখে বৃদ্ধা বসে খোলা জানালার পাশে।

বৃষ্টির ফোঁটা,ধূয়ে পরিস্কার করে দিয়ে যায়
মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গান্ধীজী,স্বামীজী
মাদার টেরেসার বিবর্ণ মুখ!

জাগ্রত হও বিবেক -- শিবপ্রসাদ মন্ডল

জাগ্ৰত হও বিবেক
শিবপ্রসাদ মণ্ডল 
১১/৮/২৩



জাগ্ৰত হও সবার বিবেক,ঘুমিয়ে থেকোনা আর,
জ্বলছে আগুন সমাজের বুকে,পুড়ে হবে ছারখার।

বিবেক লাগিয়ে কর সবে কাজ, তবেই মিলবে ফল,
নাহলে জয়ের স্পর্শ পাবে না, ফেলবে নয়নজল।

বিবেক জাগাতে চাই উদ্যম,প্রতিজ্ঞা থাকা চাই,
তবেই জাগবে বিবেক সবার,এতে কোনো ভুল নাই।

বিবেক যখন জাগ্ৰত হবে,দূর হবে সব ভয়,
মহান কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়লে জয় হবে নিশ্চয়।

বিবেক যে হলো সব মানুষের হৃদয়ের সেরা দিক,
বিবেকবানই এই সমাজের বড় এক সৈনিক।

বিবেক জানায় সকল কাজেই যেতে অভাগার পাশে,
বিবেক শেখায় যোগাতে অন্ন,যাতে দুঃখীজন হাসে।

ছল ও চাতুরি নানা নোংরামি,বিবেক করে যে দূর,
জাগ্ৰত  হলে  বিবেক সবার, শুনি  সুমধুর  সুর।

বিবেক যখন বাসা বাঁধে হৃদে,কেউ করেনা যে পাপ,
পাপের ফলটা লাঘব করতে ,করে সবে অনুতাপ।

বিবেক শেখায় বাঁচতে বাঁচাতে,বিবেক হিয়ার আলো,
অন্ধকারকে আলোকিত করে দূর করে দেয় কালো।

হে বিবেক তুমি জাগ্ৰত হও--সবার হৃদয়মাঝে,
সকলেই যেন একজোট হই, সমাজের ভালো কাজে।

দৃপ্ত বুকে স্যালুট ঠুকে -- শান্তি পদ মাহান্তি

দৃপ্ত বুকে স‍্যালুট ঠুকে
শান্তি পদ মাহান্তী
১৬/০৮/২০২৩
স্বাধীনতা প্রাণের কথা
গর্বে ভরে বুক,
মনের পটে ভেসে ওঠে
মাগো তোমার মুখ।

দৃপ্ত বুকে স‍্যালুট ঠুকে
বন্দি তোমায় মা,
জন্মভূমি মাগো তুমি
কভু কেঁদো না।

তোমার সুখে গর্ব বুকে
তোমার দুখে দুখ,
অপমানে বাজে প্রাণে
দেখলে মলিন মুখ।

নাই তুলনা ভারতী মা
নাই করুণার শেষ,
বক্ষে ধরে আপন করে
তুমি সবার দেশ।

ওই পতাকা বুকে আঁকা
দেড়শো কোটির মা,
শত্রু এলে চোখ দেখালে
রেহাই পাবে না।

আগলে ঘাঁটি মায়ের মাটি
কবুল করে জান,
বুক চিতিয়ে জীবন দিয়ে
রাখবে মায়ের মান।

শ্রাবণ সন্ধ্যা -- প্রভাত দাস

 শ্রাবণ সন্ধ্যা 
  প্রভাত দাস
 ১৬/০৮/২০২৩
শাঁখের বাঁশি বাজছে দুয়ারে দুয়ারে
ফুলরেনু ভাবে বসে মনের গভীরে।
আশা জাগে আশা রাখে বাসনায় হেথা
মন চলে যায় বিহঙ্গের তীরে কোথা!

স্বপ্ন জড়ানো স্বপ্ন মায়ায় স্বপ্নের কবিরাজ
হেথা হোথা স্বপ্ন ছড়ায় স্বপ্নের মহারাজ।
স্বপ্ন জাগানো ভীড়ে স্বপ্ন খোচিত কালপুরুষ
 কুঞ্জ সাজায়ে আশা জাগায় মনের সুপুরুষ।

বিরহের জ্বালা বক্ষ মাঝে স্বপ্নের মায়াজালে
একা বসে একাকিনী স্বপ্ন মনে প্রদীপ জ্বালে।
ভাবনার নেই অবসান সন্ধ্যা বহিয়া যায়
ভাবনার পাহাড় ভাঙ্গিয়া মন কাঁদিয়া যায়।

স্বপ্নের কারাগারে স্বপ্নের ইতিহাস গড়া
জীবনের পদে পদে আছে শুধু তাড়া।
ব্যস্ত মনের চৌকাঠ ডিঙিয়ে পাগলপারা
জীবনের পথে পথ খুঁজে একি দিশাহারা।

শ্রাবণের কান্নায় মনে জাগে বিরহ
পাছে রয় ভাবনা গান গাহে অহরহ।
চকিত মনে দিন যায় বাসনা তিমিরে
জীবনের কান্না বহিয়া যায় অতল সমীরে।

বারি ধারায় সন্ধ্যা ভিজিয়া যায় মন কাঁদায়
শ্রাবণ হারা সন্ধ্যা মনের গভীরে ছবি আঁকায়।
স্বপ্নের শপথে আশাহীন রোদনে মন জাগায়
স্বপ্ন নাহি ফেরে স্বপ্নের দুয়ারে শ্রাবণ সন্ধ্যায়।

ধন্যবাদ চশমা -- গৌতম পাল

 ধন্যবাদ চশমা
 গৌতম পাল
 ১৩/০৮/২০২৩
সেদিন যখন আমার আবছা দৃষ্টি
খুব কেঁদেছি মনের দুখে,
আদর করে তুলে নিয়েছি চোখে
তোমায় আমি হাসি মুখে।

আজ অলংকারে ঢাকা মুখমণ্ডল
চোখে আঁটা সোনালী ফ্রেম,
অপূর্ব লাগছে আবার এই পৃথিবী
নতুন করে জেগেছে প্রেম।

সোনালী ফ্রেমে কাঁচের দেওয়াল 
ফিরিয়ে দিলে মুখের হাসি,
আনন্দ উল্লাসে বেশ কাটে সময়
ধন্যবাদ চশমা রাশি রাশি!

স্পষ্ট চোখে এখন দেখছি আমি
জগতে রূপের বাহার,
তোমায় পেয়ে আমি ধন্য হলাম
তুমিই সেরা অলংকার!

শুধু দুঃখ মনে আজও দেখতে হয়
দেশের নির্লজ্জতার ছবি,
কলম ধরি তোমায় দিয়ে চোখে
হয়ে যাই স্বভাব কবি!

থেকো তুমি সাথে চিরদিন প্রিয়
তুমি যে আমার দৃষ্টি ,
তোমার কৃপায় দেখব এই জগত
করবো সাহিত্য সৃষ্টি ।

আজব স্টেশন -- স্বাধীন কুমার আচার্য্য

আজব  ইস্টিশান 
স্বাধীন কুমার আচার্য্য 
 ১৭/০৮/২০২৩ 
কু– ঝিকঝিক রেলগাড়ি চলছে 
খটাখট শব্দে ঝালাপালা করছে 
গুঁতোগুঁটি ঠেলাঠেলি এই বুঝি যায় প্রাণ 
ধন্যি তোদের বাপ আজব ইস্টিশান ।

এটা যায় সে আসে কেউবা দাঁড়িয়ে আছে 
বিকট আওয়াজ করে হর্ন টা বাজায় কাছে 
যেদিকে তাকাই দেখি শুধুই পঙ্গপাল 
কালো মাথা কাঁধে ব্যাগ আর কিছু জঞ্জাল ।।

চানা বোলে কলা চাই অমলেট লাগবে 
গরম কচুরি আছে জিভে জল আসবে 
পানি পানি রব ছাড়ে চিৎকার চেঁচামেচি 
মনে হয় এটা যেন পাগলা গারদ রাঁচি ।।

সাদা জামা কালো প্যান্ট হাতে নিয়ে পেনটা 
টিকিট টিকিট বলে কেড়ে নিল প্রাণটা 
মাইকের চোঙ গুলো করে শুধু জ্বালাতন 
হাজারে হাজার দেখি ঘুম ঘোরে অচেতন  ।।

আলোর রোশনাই দেখে বলি বাপরে 
যেদিকে তাকাই দেখি অজগর সাপরে 
আঁকা বাঁকা ঘুমিয়ে একটুও নড়েনা 
আজব ইস্টিশানে আর আসা যাবেনা ।।

নিশিযাপন -- নাসিরা বেগম

নিশিযাপন 
নাসিরা বেগম 
১৮-০৮-২০
সময়ে অসময়ে দিবসে জাগরণে
হৃদয়ের সবটুকু শহর জুড়ে ,
স্মৃতি নামক ঘুণ পোকারা
একজোটে খায় কুরে  কুরে। 

অক্ষরের মিছিলে হামলা চালায়
কলমেরাও শুধু  করে হরতাল,
স্মৃতিরা এসে ট্রাফিক জ্যাম করে
মন দিয়ে যায় লাল সিগনাল। 

তবু শব্দেরা ছুটে ছুটে আসে 
হৃদয়ের ক্ষতে রক্ত ক্ষরণ ,
শব্দের স্রোতে বিবাগী পাল
 যেন উড়িয়ে চলে সারাক্ষণ। 

অক্ষরেরা দলে দলে ভেসে
যায় রূপকথার পরীদের দেশে,
লহরে লহরে নদী বয়ে যায় 
মোহনার দিকে ভেসে ভেসে। 

দিনের শেষে সন্ধ্যার কোলাহলে
ক্লান্ত নদীটার অশ্রুত স্বর,
রাতের গভীরে অচেনা আওয়াজে
যন্ত্রণায় যাপন দগ্ধ নিশিভোর। 

বোবা মন কতো কথা বলে 
নীরবে নিভৃতে একান্তে গোপনে,
জাগ্রত দেবতার জন্য আসন 
পেতে রাখে হৃদয় সিংহাসনে। 

স্মৃতিরা একজোট হয়ে ধেয়ে 
আসে নীল দিগন্তের বুকে,
নির্ঘুম দুটি আঁখি জেগে রয়
শশধর দেখার সুখে অসুখে। 

খাঁ খাঁ বুকে রাতচরা ডেকে যায়
বুকে তে ধরায় অসহ কাঁপন, 
ছেঁড়া ফাটা হৃদয়ে জোড়াতালি
দিয়ে চলে নীরবে নিশিযাপন।

Wednesday, August 16, 2023

ভুল থেকে নাও শিক্ষা -- মোঃ বদরুল হুদা

ভুল থেকে নাও শিক্ষা
মোঃ বদরুল হুদা
১০-৮-২৩


ভুল থেকে নাও শিক্ষা সবে
শুদ্ধ করো জীবন মন,
ধৈর্য নিয়ে কর্ম করো
আসবে দেখো শুভক্ষণ।

ভুলের কর্মে এই জীবনে
ফুটে না তো সুখের ফুল,
ধৈর্য নিষ্ঠা একাগ্রতা
সফলতার আসল মূল।

শুদ্ধ মনে চলতে শেখো
জীবন গড়ার পাবে পথ,
কর্ম করো দৃঢ় মনে
জীবন পথে থেকো সৎ।

ভুলের পথে চললে সদা
পাবে না তো কভু সুখ,
বিফল হবে জীবন তোমার
রাখবে ঘিরে কষ্ট দুখ।

ভুলের মধ্যে ডুবে থেকে
মনে সুখের রাখলে আশ,
কষ্ট জ্বালা রাখবে ঘিরে
হবে তোমার জীবন নাশ।

দূর থেকে দূরে -- প্রিয় রহমান আতাউর

 দূর থেকে দূরে 
 প্রিয় রহমান আতাউর 
 ০৯/০৮/২০২৩


কোনো এক পাতাঝরার দিনে
আমার যাওয়া হলোনা আমখই নামের
আদিবাসী গ্রামে- বীরভূমে! 
কাঁকুড় মাটির ঘর - ছনের ছাউনির
কী লীলাময় মোহময়তা-
শাল তমাল আর আর জঙ্গলের বুনোলতা
আমাকে নিয়ে যায় দূর থেকে দূরে-
আবার কখনো সখোনো
ক্রমাগত পেছনে ফিরতে থাকি আমি
ছাত্রজীবনে -
শুধু যাওয়া আসা - আঁখিজলে ভাসা ;
আমরা যখন প্রমত্তা যমুনা পেরিয়ে গেছি রাজশাহী 
নৌযানে - এখন সেখানে প্রযুক্তির 
নির্মল হাসি - নয়নাভিরাম যমুনা সেতু!
আহা মুলাডুলি, দিলপাশার 
কী চমৎকার স্টেশনের নাম!
উত্তাল নব্বইয়ের দশকে ভার্সিটির পড়ার
সমাপ্তি ঘটে -
তারপর এক দীর্ঘ পথ পরিক্রমা - যেখানেই যাই
অন্তরে দীপ্তমান - রাবির দর্শন বিভাগ-
যেখানে এসেছিলেন রাঢ়বঙ্গের এক জ্যোতির্ময় পুরুষ
হাসান আজিজুল হক- প্রিয় শিক্ষক
তিনিও হারিয়ে গেলেন - অনন্ত নক্ষত্রবীথিতে -
কত স্মৃতি, কত মায়া! 
গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে বাবা চুপি চুপি বলে-
কবরে একা একা ভালো লাগেনা বাপ - আসিস না তো এদিকে আর! 
আমার চোখ ভিজে যায়- হাও মাও করে কাঁদতে থাকি। বলি- মা, কেমন আছে বাবা? তাকে কি দেখতে পাও? উত্তর আসে - নারে বাপ, এখানে কেউ কাউকে দেখতে পায়না। 
তাৎক্ষণিক মহাগ্রন্থ হাতে নিই- জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠে - সুরা বনি ইস্রাইলের আয়াত- রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা! 
বার বার পড়তে থাকি- ঘামতে থাকি অবিরাম :
হাস্নাহেনা আর রাতকামিনী অজস্র গন্ধ ঢেলে দেয়
সঞ্চয়নে - ঘুম আসেনা আমার! 

Monday, August 14, 2023

বিপন্ন স্বাধীনতা -- শিবপ্রসাদ মন্ডল


 বিপন্ন স্বাধীনতা 
শিবপ্রসাদ মণ্ডল
১৪/৮/২৩


ক্ষুদিরাম তুমি করে গেছ ভুল,কেন দিলে তব প্রাণ !
তোমার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার, আমরা রাখিনি মান।

প্রফুল্ল-ভগৎ তোমরাও বোকা,করেছিলে মহাভুল!
তোমাদের আশা ব্যর্থ করেছি,ফোটাতে পারিনি ফুল।

বিনয়-বাদল-দীনেশ তোমরা, ভুল করে গেছ বীর !
নিজেদের হাতে নিচে নামিয়েছি,তোমাদের উঁচু শির।

কানাই,সূর্য,চারু,বীরেন্দ্র--তোমাদের ত্যাগ যত,
ত্যাগের ভিতেই স্বার্থ গড়েছি,আমরা নিজের মতো।

মাতঙ্গিনী মাতা,করেছ যে ভুল,কার জন্য খেলে গুলি
তোমার ইচ্ছা পূর্ণ করিনি, তোমাকেই গেছি ভুলি।

নেতাজি সুভাষ,তোমার স্বপ্ন,ধ্বংস করেছি মোরা,
তব সব আশা--হত্যা করেই হয়েছি আত্মহারা।

তোমরা দিয়েছ স্বাধীনতারূপী,মহানন্দের দান,
মোরা যে পিশাচ নরপশুসম--রাখিনি যে কারো মান।

স্বাধীন ভারতে মোরা প্রায় সব, ডাকাত-লুটেরা-চোর,
ঠগবাজ আর চরিত্রহীন, আনতে পারিনি ভোর।

হিংসা,ঘৃণা ও অসৎ কর্মে--মোদের তুলনা নাই,
সম্পর্কটাই ভুলে গেছি মোরা,যত হই ভাই-ভাই।

বারেবারে তাই শুধু মনে হয়, ভুল করে গেছ সবে!
তবু আশা জাগে--এত বলিদান--সকলি ব্যর্থ হবে!!

একটাই পথ আছে শুধু খোলা, আবার জন্ম নাও,
সত্যিকারের স্বাধীনতা যেটি, সেটাই তোমরা দাও।

স্বদেশী পশুর রক্তে রাঙাও,মোদের ভারতভূমি,
এই আশা রেখে শতকোটি বার তোমাদের পদে নমি।

হে তেরঙ্গা মোর -- শান্তি পদ মাহান্তি


হে তেরঙ্গা মোর
শান্তি পদ মাহান্তী
০৬/০৮/২০২৩


লাখো শহীদ রক্তে রাঙা
হে তেরঙ্গা মোর,
উড়ছো দেখে উচ্ছ্বসিত
বক্ষে আবেশ ঘোর।

গর্ব জাতির সব অহংকার
এই ভারতের বল,
বীর সেনানীর শোনিত তুমি
মায়ের চোখের জল।

তোমার রঙে রাঙে ভারত
জেগে ওঠে দেশ,
ধর্ম জাতির ভেদ ছাড়িয়ে
ছড়িয়ে যায় রেশ।

ভারত মায়ের বার্তা বহো
শান্তি প্রেমের সুর,
মা যে আমার মিলন তীর্থ
কেউ থেকোনা দূর।

এসো হিন্দু শিখ মুসলিম
নাই বিভেদের লেশ,
ওই তেরঙ্গা ডাক দিয়েছে
ডাকছে তোমার দেশ।

ওই নিশানে ছিটায় কালি
কোন নরাধম আজ,
ভেদ অনলে ভারত জ্বেলে
কাড়ে মায়ের লাজ।

গর্জে ওঠো ভারত সন্তান
কন্ঠে পাড়ো হাঁক,
ভারত ভূমে ভেদ আনে যে
শত্রু নিপাত যাক

Saturday, August 12, 2023

ফিরে এসো কবি -- সাধনা ঘোষ

ফিরে এসো কবি
সাধনা ঘোষ
০৮—০৮—২৩


বাইশে শ্রাবণ
আকাশের মুখ ভার
তবু বৃষ্টি হয় নি সেদিন।
অসংখ্য কবি প্রেমীর অশ্রুধারায়
ভরদুপুরে ভিজেছিল শ্রাবণ।
বর্ষা ছিল কবির বড় প্রিয়।
কবির কবিতারা বাউল মনের ওড়না উড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতো।
আহ্লাদে আটখানা হয়ে কবিকে
জড়িয়ে থাকতো সারাদিন সারারাত।
২২ শ্রাবণ একেবারে অন্যরকম 
চির শান্তির ঘুমে ধ্যানমগ্ন কবি
স্তব্ধ কবির কলম
আর একটাও শব্দ কোনদিন উপহার পাবে না শ্রাবণ।
সেই অভিমানে মনের দুঃখ বুকে চেপে থমকে গিয়েছে মেঘ।
বৃষ্টি হয়েছিল সেদিন
অনেক ঘরের কোণে
অনেক বালিশ ভিজেছিল অশ্রুধারায়।
যে মেয়েটা ব্যর্থ প্রেমের ব্যথা ভুলতো বুকে চেপে কবির লেখা কবিতা-
তার দুচোখে নেমেছিল শ্রাবণ ধারা।
আবেগের বৃষ্টিতে ভিজে লিখেছিল একটার পর একটা চিঠি,
সেই চিঠিতে আঁকা ছিল ফিরে পাওয়ার আকুলতা,
ফিরে এসো কবি
ফিরে এসো 
ভুলিয়ে দাও সব ব্যথা।

Friday, August 11, 2023

শহীদ ক্ষুদিরাম -- বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য

 শহীদ ক্ষুদিরাম
 বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য
 ১১/০৮/২০২৩


বাংলা মায়ের অগ্নি শিশু 
শহীদ ক্ষুদিরাম ,
মোদের হৃদয়ে চির অক্ষয়
তোমার অমর নাম ;
দেশের জন্য করে গেলে তুমি
জীবন বলিদান ,
কৈশোরে হলে শহীদ, রাখতে
দেশ মাতার মান।

ধন্য মাতা বীর প্রসবিনী
লক্ষ্মীপ্রিয়া নাম ,
ত্রৈলোক্যনাথ পিতা তব
তাঁরেও প্রণাম ;
অপরূপা অগ্রজা তোমার
করেছে লালন,
ভালোবাসতেন আপন কোলের
অমৃত ' মতন ' ।

গুরুর আদেশ মাথায় নিয়ে -
 নম্র নত শিরে,
এক বাক্যে ঝাঁপিয়ে পড়লে 
দেশের মুক্তি তরে ;
প্রফুল্ল চাকী কে সঙ্গে নিয়ে 
 মুজঃফরপুর গেলে,
কিংস্ফোর্ডকে মারতে গিয়ে
লক্ষ্য ভ্রষ্ট হলে ।

পড়লে ধরা বিচার হলো ----
বৃটিশ দিলো ফাঁসি,
হাসতে হাসতে করলে বরণ
দেখলো জগৎ বাসী ;
বৃথাই তোমার অকাল মৃত্যু,
বৃথাই জীবন দান,
আজও স্বাধীন হয়নি মানুষ
হতেছে হয়রান।

Thursday, August 10, 2023

প্রাণের ঠাকুর -- গৌতম পাল

 প্রাণের ঠাকুর 
 গৌতম পাল
 ০৮/০৮/২০২২
প্রাণের ঠাকুর তোমার স্মরণে
শ্রাবণ মেঘে নামে বৃষ্টি,
বাংলা সাহিত্যে ছড়িয়ে আছে 
তোমার অপরূপ সৃষ্টি!

বাইশে শ্রাবণে তোমারই গানে
লহ হৃদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি,
জলে থই থই দুই আঁখির নদী
হৃদয় জুড়ে গীতাঞ্জলি!

সেই সহজ পাঠে তোমার সাথে
হয়েছে প্রথম পরিচয়,
সেদিন থেকেই আছ সুখে দুখে
তুমি যে চির অক্ষয়!

সোনার তরী বেয়ে চলি মোরা
সুর তোলে গানের কলি,
ক্ষুধিত পাষাণ ফিরে পায় প্রাণ
কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে অলি!

বইয়ের পাতার কবিতারা সব
হাত বাড়িয়ে শুধু ডাকে,
হৃদয় মাঝে শুধু তোমার ছবি
এঁকে যাই ফাঁকে ফাঁকে!

তোমার হাত ধরে বাংলা ভাষা
পেরিয়েছে যুগ যুগান্তর,
তোমার অপরূপ কিরণ ছটায়
প্রেমে পাগল হয় অন্তর!

যেদিকে তাকাই তোমারে পাই
হৃদয় ভরা তোমার ছবি,
বাইশে শ্রাবণে ভারাক্রান্ত মনে
লহ শ্রদ্ধার্য্য হে বিশ্বকবি।

Wednesday, August 9, 2023

২২ আসে ২২ যায় -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 ২২ আসে ২২ যায়
 শ্যামল কুমার মিশ্র
 ৯-৮-২০২৩


২২ আসে ২২ যায়
সুবেশা তরুণ তরুণী গানে কবিতায় ভরিয়ে তোলে 
রাশিরাশি ফুলে ঢাকা পড়ে যাও তুমি 
না-ভোলার ব্যথায় চোখ ছলছল 
নেতা-মন্ত্রী সান্ত্রি তোমার জন্য কত কথা খরচ করে 
শব্দের জাগলারি,ভাষার মারপ্যাঁচ 
অপরাহ্ণে তোমার ফুলভার সরে যায় 
তুমি আবার ছবি হয়ে দেয়ালে 
আবার একটা বছরের প্রতীক্ষা...

জানো কবীন্দ্র!
তোমার কৃষ্ণকলি আজও তোমায় খোঁজে 
ভুবনডাঙ্গার মাঝে কিংবা আঁধারিয়ার মাঠে ঘাটে 
জানো কবি, তোমার মালতি কৃষ্ণকলিরা আজ সবাই রূপশ্রী 
কিন্তু রূপ যেখানে হারিয়ে যায় অরূপের আড়ালে সেখানে কৃষ্ণকলিরা বড়ই ব্রাত্য 
শিক্ষা আজও ওরা 'বহন করিয়া চলিয়াছে, 
বাহন করিতে পারে নাই'...

২২ এলে আমার মন খারাপ করে 
তোমায় নিয়ে যুযুধান লাল-হলুদ সবাই 
সবাই দেখাতে চায় তোমায় কত ভালোবাসে 
মৃত্যুর দিনেও ভালোবাসা খুবলে নিয়েছিল 
তোমার চুল দাড়ি 
আজও সেই ভালোবাসা অব্যাহত...

আজ তুমি ভোট কেচার
তোমার গানে শুরু হয় প্রচার 
হয়তো সেখানেও তুমি খন্ডিত বহুধা বিভক্ত। 

ক্ষমা করো কবি! 
তোমার সজল চোখের করুণ চাহনি আমায় ক্লান্ত করে 
তোমার কৃষ্ণকলি আজও লম্বা লাইনের শেষ প্রতিনিধি
হাতে ধরা কিছু সাদা ফুল 
গ্রহণ কর হে কবি! 
ঋণ মুক্ত করো সন্তানেরে...

Tuesday, August 8, 2023

দেহ - মনের ঝগড়া -- বেবি মন্ডল

দেহ - মনের ঝগড়া 
 মহারানী ( বেবী মন্ডল ) 
 ০২ / ৮ / ২০২৩.
 একদিন দেহ-মনের ঝগড়া বাঁধলো জোর , 
 বললো দেহ, " আমি ছাড়া কি দাম আছে তোর "?
আমার বুকেই থাকিস রাত হোক বা দিন, 
  না থাকলে আমি তুই তো বাসা হীন। 

 দুটি বেলা আমার খাস, আমার পরিস, 
তবু সুযোগ পেলেই অন্যের কথা ভেবে মরিস
আমি ছাড়া কোথায় পেতি এমন সাধের ঘর!? 
তবু আমার উপর চোখ রাঙাস, তুই এমন স্বার্থপর!
পুলকিত হোস তুই  আমার জন্য রোজ,  
 না থাকলে আমি, কে রাখত তোর খোঁজ!? 
   তুই মূল্যহীন, জগৎ এ আমারই যত নাম, 
  মনে রাখিস, দেহ ছাড়া মনের নেই কোন দাম,  

  কাঁপা গলায় বল "মন " একটু ভয়ে ভয়ে ......
    জানি তুমি দামি তাই বিক্রি হও অর্থের বিনিময়ে। হয়তো আমি মূল্যহীন, আমার পরিচিতি নেই নামে, 
 তবুও যায়না আমায় কেনা, কোটি টাকা দামে। 

 সত্য বটে, তোমার জন্য আমি হই পুলকিত , 
 এটাও সত্যি, আমি ছাড়া তুমি মৃত। 
 যা কিছু করে তুমি আজ হয়েছে ধন্য , 
মনে রেখো, তার সব কিছু শুধু আমারই  জন্য।। 

    শুনে রাখো .....

 সুন্দর দেহ শেষ হবে একদিন,
   মাটি হবে সাধের কলেবর,
 সুন্দর মন রয়ে যাবে চিরকাল, 
     সে যে অবিনশ্বর - অমর।।

Sunday, August 6, 2023

জীবনের রীতি -- নিরঞ্জন কুমার রায়

জীবনের  রীতি
নিরঞ্জন কুমার রায়
২৭/০৭/২০২৩
জীবনটা জানি  কাব্য যে মানি
           ছন্দের তালে চলে,
বুক ভরা আশা  কবিতার ভাষা 
          জাগে অন্তর তলে।

চলমান নদী      বহে নিরবধি
       আঁকাবাঁকা পথ ধরে,
সুখ দুখ যত   আছে পথে শত
       আসে তারা ভিড় করে।

সুখে সদা হাসে খুশিতে সে ভাসে
       দুঃখে সে কেঁদে ওঠে,
হসি কান্নায়       হীরা পান্নায়
      জীবনের রং ফোটে।

গতি হারা হলে  জীবন কি চলে?
      শেওলায় ফেলে ঘিরে,
স্রোত হারা হয়ে  জীবনটা ক্ষয়ে
         মৃত্যু যে আসে ধীরে।

সুখ দুখ হাসি  ভরা রাশি রাশি
        সকলি থামিয়া যায়,
জীবনের রীতি  ফেলে রেখে স্মৃতি 
         অজানার পথে ধায়।

খড়কুটো -- বিজয়া মিশ্র

 খড়কুটো
বিজয়া মিশ্র
২৮.০৭.২০২৩
এবার সত্যিই ছেড়ে চলে যেতে হবে চিরদিনের জন্য,এই নিজের হাতে একটু একটু করে গড়া সংসার। অসহায় না হলেও অধিকার তো আছেই।চঞ্চলকে অকালে হারিয়ে নিঃসন্তান মনিদীপা অকূলপাথারে। চঞ্চলের মৃত্যুর পর পরিবারের কারো সাপোর্ট পায়নি সে। না চাইতেই অবাঞ্ছিত আইনি লড়াইয়ে নেমেছিল সে।কিছু কাগজপত্র খুঁজে না পাওয়ায় জমা দিতে  পারেনি সময়মতো।অথচ সে মোটেই অগোছালো নয়।ভুল করে হয়তো কোথাও...। হাল ছেড়ে দিয়েছে।ওরা তার কথা না ভাবলেও মনিদীপা কতভাবে পাশে থেকেছে চিরকাল।অথচ চঞ্চলের অকালে চলে যাওয়ার দায় তার ঘাড়েই...।এখন এই ঘরগুলো খালি ক'রে অতি প্রয়োজনীয় বইপত্র রেখে বাকিগুলো কাগজ ওয়ালার হাতে তুলে দেবে সে।পুরোনো কাগজপাতি,বইপত্রে ঠাসা চিলেকোঠার ঘরে প্রতি রবিবার মণিদীপার অনেকটা সময় কাটে।অফিস ছুটি ,এই দিন সকাল সকাল রান্নার পাঠ চুকিয়ে তিনি চলে যান তেতালার অতিপ্রিয় 
চিলেকোঠায়।চাল ,গম ,জল খেতে পেয়ে একঝাঁক বিভিন্ন  রঙের পায়রা চিলেকোঠা সংলগ্ন ছাদটাকে মুখরিত করে সকাল সন্ধ্যে। অনেকেই মণিদীপার সাড়া পেলে আহ্লাদিত হয়।ধারে কাছে এমনকী হাতের উপর বসে কত কথা বলে।সেইমতো আজ পুরানো কাগজ ,বইপত্র কাগজওয়ালাকে কেজি দরে বিক্রি করে দিচ্ছিল। দাঁড়িপাল্লা থেকে বইগুলো বস্তায় ঢোকানোর সময় কিছু একটা মাটিতে পড়ে যেতেই মনিদিপা চমকে উঠলো।সেই হলুদ খামটা!তন্ন তন্ন ক'রে কতবার যে...। ওই খামেই তো দরকারি কাগজপত্র সঙ্গে লেখা শেষ চিঠিটাও আছে।মামলা মোকদ্দমা , সম্পত্তির ভাগাভাগি হওয়ার সময় খুব দরকারে কিছুতেই পাওয়া যায়নি। এখনও রায় বেরোনো বাকি। কখন যে বইয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছিল পরে কিছুতেই মনে পড়ে নি। সবকিছু এলোমেলো লাগছে তার।মাঝপথে কাগজ ওয়ালাকে বিদায় দিয়ে মণিদীপা দাঁড়লো চঞ্চলের সদাহাস্য ছবির সামনে।অস্ফুটে বলল "হয়তো তুমি চাওনি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।তোমার চিহ্নগুলো হারিয়ে চিরততে বঞ্চিত হোক তোমার অধিকার ।" সব হারানোর দিনে সহসা ফিরে পাওয়া এই সম্পদ তাকে শক্তি দিচ্ছে অনেকটা।একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে উকিলবাবুর নম্বর ডায়াল করতেই ওপাশ থেকে উত্তর এলো "হ্যালো...।"

প্রস্তরীভূত ধ্বংসাবশেষ -- লক্ষীকান্ত দাস

 প্রস্তরীভূত ধ্বংসাবশেষ 
 লক্ষ্মী কান্ত দাস 
২৯.০৭.২০২৩.
একটা অভিমানী মন ,
একটা রংচটা ফিকে জীবনের সাথে 
বড্ড বেমানান ,
একটা হারানো সময়ের 
নিশ্চুপ বিদ্রুপ ,
একটা মুচকি হাসির নির্মম দ্বিচারিতা ,
বিচারের আদালত পর্যন্ত পৌঁছবে না 
নিশ্চিত বলা যায় , 
কিন্তু বলা যায় না --
হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কোনোদিন থামবে কিনা ,
শেষতম নিঃশ্বাসটুকু পৃথিবীর বাতাসকে ছোঁয়ার আগে পর্যন্ত ।
একটা পরাজয় ,অজস্র হয়রানির অন্দরে ,
ধ্বস্ত পদাতিকের চোখেমুখে জড়িয়ে থাকে ,
যখন নিজের কান্নাগুলোকেও বিশ্বাস করতে মন চায় না ,,
তবুও হতশ্রী জীবনের বিচরণক্ষেত্রে উঠে দাঁড়াতে হয় , নিজের পা দুটোকে শক্ত করে ,
মুঠো মুঠো অবিশ্বাসকে চোয়াল শক্ত করে ,
নিজের চারপাশ বলে ,
জর্জরিত নাগপাশে এই যে মুক্তিহীনতা ,
এর সমর্থনে অকাট্য যুক্তিদের জড়ো করে ,
অবশেষের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যেতে হয়,
নিজের চোখদুটো বেঁধে ।
তারপর ছদ্মবেশী কান্নারা , দিগন্তের দিকে
উড়ে যায় , চোখের তারা ছেড়ে , আকাশের তারা হতে ,
নিজের অবিমৃষ্যকারিতার প্রত্যুত্তরে ।
তারপর একটা প্রস্তরখন্ড অনেক আগাছা ও শ্যাওলাদের বুকে জড়িয়ে ধরে 
কড়ায়গন্ডায় আদায় করে নেবে স্পন্দন ।

স্বপনে শৈশব -- মৃগাঙ্ক মোহন জানা

স্বপনে শৈশব 
মৃগাঙ্ক মোহন জানা
০১/০৮/২০২৩
বুকে তার একরাশ গন্ধ!
এক পৃথিবী স্বপ্ন চোখে! 
বৃতির নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে মুক্তির স্বপ্ন দেখা!
বুকের সুবাস ঢেলে, 
পৃথিবীর সব দুর্গন্ধ ঢেকে,
একটা নূতন পৃথিবী গড়ার স্বপ্নে
সে ছটফট করে।
বিবর্ণ পৃথিবীর উন্মুক্ত দিগন্তকে
কোন এক সকালে
বর্ণে গন্ধে মাতিয়ে নূতন করে
সাজিয়ে দেবে সে, একাই! 

সকালের সোনার থালা টা 
ধীরে  হয়ে উঠলো আগুনের গোলা!
পাতাগুলো শুকিয়ে গেলো।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঝরে গেলো
খস্ খস্ শব্দে!
সবুজ কিশলয় পাণ্ডুর বর্ণে
পর্ণে পরিণত হলো!

আকাঙ্খিত স্বপ্নের সকাল হাজির হলো
দুঃস্বপ্নের কঠিন বাস্তবে!
সময় হলে ফুল ফুটবেই।
ফুটলো ও!
পাতার আদরে নয়,
বৃতির কোলের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে নয়,
তাকে ফুটতে হলো
গ্রীষ্মের রাঙা চোখের ঈশরায়,
এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে!

যে বিবর্ণ পৃথিবীর  উন্মুক্ত আকাশে
নূতন রামধনু আঁকতে চেয়েছিলো,
বাতাসে ভাসাতে চেয়েছিল
আতরের ভেলা,
সে নিজেই বিবর্ণ হয়ে গেলো।
গন্ধহীন পোকায় কাটা শৈশব!
উন্মুক্ত আকাশের নীচে 
ডানা ভাঙা চাতক যেন!
বুকে মরুভূমির তৃষ্ণা! 
আকাশে গ্রীষ্মের ভীষ্ম লোচন।

যার বুকে মধু নেই, 
পাপড়িতে নেই রং এর বাহার! 
নেই কোন সুবাস, রেণু, জৌলুস;
মৌমাছি, প্রজাতি কেউ আসে না!
এলো ও না!
এলো পোকামাকড় এর দল!
শৈশব চুরি হয়ে গেলো!

স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ
বাস্তবের কঠিন আঘাতে ভেঙে চুরমার!
রূপকথার পক্ষীরাজটা উন্মুক্ত আকাশের বুকে
ডানা ভেঙে আছাড় খেলো কঠিন পাহাড়ে! 

শৈশব যেখানে চুরি হয়ে যায় অহরহ,
সেই সভ্য পৃথিবীতে আমরা নিজেকে 
মানুষ বলে গর্ব করি!
শিশু অপরাধী দের দিকে আঙুল তুলি!
শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সভাকরি!
স্বপ্নগুলো তখন মিলিয়ে যায় উন্মুক্ত আকাশে!

তবু স্বপ্ন দেখা চোখে 
নূতন স্বপ্নেরা ভীড় করে ক্লান্ত দেহের ঘুমে!
আকাশে মিলিয়ে যাওয়া স্বপ্নকে
তাড়া করে তার রঙীন ঘুড়ি! 
"ভো কাট্টা!ভো কাট্টা!"
চেঁচিয়ে ওঠে, মুষ্টি বদ্ধ রোগা হাতটা ছুঁড়ে দিয়ে 
সে আজ আকাশের চেয়েও উন্মুক্ত!

সন্ধ্যা নামে জীবনে -- পবিত্র প্রসাদ গুহ


 
 সন্ধ্যা নামে জীবনে
পবিত্র প্রসাদ গুহ
তারিখ -৩১ /০৭/২০২৩
সন্ধ্যে নামে অস্তাচলে সূর্য্যের দেশে -
কেউ হাতে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ে চুমুক দিয়ে,
কেউবা শুকনো টিফিন
একটু স্নাক্স, 
একবাটি মুড়ি সরষের তেলে মাখা চানাচুর দিয়ে লঙ্কা কামড়ে,
হাতে রিমোট, 'ঘন্টা খানেক সঙ্গে সুমন' চলছে টিভি,
অথবা ব্যাঙ্গালোর মুম্বাইয়ের আই. পি.এল ক্রিকেট 
অবসরের সুখী সন্ধ্যা উপভোগ করেন ওরা।

রাখালেরা তখনও ঢোকেনি ঘরে,
সোঁদা মাটি গায়ে মেখে একমাথা কচি সবুজ ঘাসের বোঝা নিয়ে ওদেরও কাজে নেমে আসে সন্ধ্যা,
গরু গুলো হাম্বা হাম্বা স্বরে ডেকে সারিবদ্ধ ভাবে এগিয়ে চলে গোয়ালের দিকে,
রাখাল বালক গোবর নিকানো উঠোনে মায়ের পাশে বসে খড়ির উনুনে দু চারটে শুকনো পাটকাঠি বা,সেগুন পাতা গুঁজে দেয়,
দাউ দাউ করে জ্বলে উনুন,
এক হাঁড়ি ভাত ফুটতে থাকে -
বাতাসে মেশে কষ্টের ফলানো অন্নের সুগন্ধ।
দূরে ঘরের মাটির দাওয়ায় টিমটিম করে জ্বলে তেলের কুপি,
পল্লী বধূরা শঙ্খধ্বনি বাজিয়ে বরণ করে সন্ধ্যের চাঁদের আলো,
ওদের তখন সন্ধ্যে ঘনায় এভাবে ।

ওদিকে ব্যস্ত বিদ্ধস্ত শহর ভিড়ে ঠাসা ঘামে ভেজা লোকগুলো নিয়ে এগিয়ে চলে শিয়ালদার দিকে,বাস 30/B বা অন্য কোনো যানে,
5:40 এর শান্তিপুর  আসে লবনাক্ত ঘাম,
কেউ ট্রেনটা পায় দৌড়ে,
না পাওয়া ওরা সন্ধ্যে কাটায় স্টেশনে পরের ট্রেনের অপেক্ষায় ।

সামান্য ঠান্ডা ভাত -- মানস দেব

 সামান্য ঠান্ডা ভাত
 মানস  দেব
৩০/০৭/২৩
 আজ আমাদের দেশে একটা বিপ্লব ভীষণ প্রয়োজন  ।
 সামান্য তেল - নুন জোগাড় করতে 
 ঝরছে মানুষের কালঘাম  ।
 রবি শস্য  -  খারিফ শস্য উৎপাদিত হলেও
 চাষী জানতে পারেনা শ্রমের মূল্য  !
 নারীর গৃহশ্রম তো মূল্যহীন  !

 দিনবদলের পালায়
 দিবা - রাত্র উপস্থিত হলেও
 বদলায় না মানুষের নৈতিক চরিত্র ।
 কারখানার হাড়ভাঙা পরিশ্রমে
 শ্রমিকের হাড়-মাংস চিমনির ধোঁয়া হয়ে বেরিয়ে যায়   ;
 ছাঁটাই নামক যন্ত্র চালিয়ে
 সমস্ত পরিবারকে সাজিয়ে রাখা হয় মমি করে ।

"  মেরা ভারত মহান " -  কথাটি
 ইতিহাসের পাতায় ঘুমিয়ে বিভোর ।
 বেকারত্বের লাইনে ঢোকে না একটি  সূচও  !
 ফুটপাতে অগণিত হাত উঁচিয়ে থাকে
 কঙ্কালসার মানুষগুলো  ।
 সামান্য ঠান্ডা ভাত এদের কাছে অমৃত ।

Friday, August 4, 2023

শ্রাবণী বৃষ্টির দিনরাত -- মৌসুমী মুখার্জী


শ্রাবণী বৃষ্টির দিনরাত
মৌসুমী মুখার্জী
০৪/০৮/২০২৩


বৃষ্টি এসে ছুঁয়ে দিয়ে যায় মন শ্রাবণ ধারায়, শরীর বেয়ে অঝোর ধারা দিনের ক্লান্ত দেহে আবিলতা,
নামুক শীতল জলধারা, শরীরের স্বেদ বেয়ে
নিদারুন যন্ত্রনা ধুয়ে মুছে দিয়ে যাক মনের মলিনতা।

ফুটিফাটা মাঠ ঘাট জলে পরিপূর্ন শ্রাবণে,
জলই জীবন তাপিত বসুধায় খুশির আমেজ অঙ্গনে। 
কবি শুধু লেখে কাব্যকথা, অতি বৃষ্টি আনে প্লাবন,
তবুও চাষীর মন খুশ, ধান রুইতে চাই যে শ্রাবণ।

শ্রাবণ ধারা খুশির  বার্তা নিয়ে এলো,
 গগনতল সঘন ঘনঘটার ডাক পেলো।
 হঠাৎ জোরে নামলো বারিধারা,
সারাক্ষণ  বৃষ্টি ভেজা আকুল দিশাহারা।

 পথ চলতি  মানুষ কাকভেজা ফিরতি পথে, 
গুমোট কাটুক, ফুরফুরে মন তরতাজা সন্ধ্যা রাতে।
হাস্নুহানায়  দোল দিয়ে যায় বৃষ্টিফোঁটা,, আঁধার নামে,..জলনূপুরের নিক্কন, ব্যক্তিগত বাকিটা।

Thursday, August 3, 2023

কার মিলন চাহ বিরহী -- মৌসুমী মুখার্জী

কার মিলন চাহ বিরহী
মৌসুমী মুখার্জী 
০৩/০৮/২০২৩
তুমি বললে আগুন রঙে সাজো, কমলিকা,
আমি সাজতে চেয়েছিলাম, কৃষ্ণচূড়ার রঙে,
সাজের অনুষঙ্গ চাইতে চাইতে, 
তুমি চলে গেলে অজানায়, 
 ধুলায় লুটালো সাজ।
আগুন রাঙা সাজ... এখন আগুন পাখি,
ঝলসে গেলো, ডানায় সন্ধ্যার পাখসাট।

তুমি বললে,  এসো সমুদ্রে বুকে নামি,
পারাবার প্রিয় আমার,তুমি তো জানতে,
হাত ধরতে গিয়ে পিছলে গেল হাত
আমি সমুদ্রের পুনিতে কবর খুঁড়ে চলি...
অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে  প্রিয় সম্পদ,,
মুখ ফেরালাম,  অর্ণবে মন জলাঞ্জলি।

বসন্ত এসেছিল সময়ে, তবু দিলো না সাথ,
বিসমিল্লা সানাই বিষাক্ত করুণ...অবসাদ,
প্রজাপতি সুখ  ক্ষণস্থায়ী, যবনিকা পতন,
পলাশ শিমুল রাঙ্গে কী আর আগের মতন !!!
বিষাক্ত দূষণে ওরাও কী পেলো অভিসম্পাত?
কিংশুক সুখে ক্ষণিকের পরবাসে পরভৃত,
ভালোবাসা খোঁজে মন, ফিনিক্স অজুহাত।

নতুন করে পথ চলা,   অবসন্ন সায়াহ্নে,
জোৎস্না মাখা নেই ছাদ, নজরে পড়ে না,
চাঁদের আড়ালে একাকী নিঃস্ব ওই তারা,
পথহারা রাহীর বোঝে সে কেয়ামতের মানে।
বসন্ত বাতাসে ভেসে আসে রবীন্দ্রগান.... ক্রমশঃ সমীপে, "এমন দিনে তারে বলা যায়",
নব বসন্তে অদূরে কোকিল ডাকে, 
সুর খেলে যায় মনে,
অথচ   বালিশ ভেজে শ্রাবণী কান্নায়।

বিহ্বল দৃষ্টিতে  চেয়ে দেখি....
আনমনা পথিক ক্লান্ত, 
আজ দুদণ্ড জিরোতে  অঙ্গনে,  
তোমার কাছে কী আছে গো?
----ভালোবাসা....., মূল্য লাগে না।

শ্রাবণের উষ্ণতা মাখা -- জয়া গোস্বামী

শ্রাবণের উষ্ণতা মাখা
জয়া গোস্বামী
০৩-০৮-২০২৩
শ্রাবণ তুমি এলে মনের গভীরে জন্মায় শত কবিতা,
ভাবনার ক্যানভাস জুড়ে থাকে কাব্যের পাতা।
মনের রাগ  অনুরাগে শ্রাবণের শীতল উষ্ণতা মাখা,
জানলার শার্সিতে, দেখি তোমার আলপনার রেখা।

তোমার জন্য কদম কেতকীর নতুন করে আসা,
নীল আকাশে ধূসর মেঘের সকাল থেকেই ভাসা।
শ্রাবণের রিমঝিম শব্দে কবির প্রেম সাগরে বিচরণ,
কবির কবিতার পাতায় পাতায় তোমার আবাহন।

রিমঝিম বৃষ্টির গানে ভাবনা আসছে মনের ঘরে,
দেখো চোখ মেলে প্রকৃতি সেজেছে শ্রাবণের বরে।
 তরুরাজ ফিরে পেয়েছে  শ্রাবণের দানে প্রাণ,
শ্রাবণ ফিরে ফিরে আসে বলে কবিরা পায় মান।

ঝরা শ্রাবণের দিনে ছন্দের নিপুণতা খুঁজে পাই,
নীপবনে আজ অজানা শব্দের স্বপ্ন সাজাই।
বৃষ্টির ধারায় শ্রাবণের আলিঙ্গনের গান গাই,
সন্ধ্যার অন্ধকারে ইচ্ছের স্বপ্নগুলো হাতড়াই।

মাধবীলতা অভিমান ভুলে না হয় একটু তাকাও ,
শ্রাবণের প্রথম বৃষ্টিতে আজ আমার মন ভেজাও।
অসহায় চাতকের ফটিক জল আকাশ হতে চাওয়া ,
শ্রাবণের কাব্য লিখে কবির মনে সুখ খুঁজে পাওয়া।