খড়কুটো
বিজয়া মিশ্র
২৮.০৭.২০২৩
এবার সত্যিই ছেড়ে চলে যেতে হবে চিরদিনের জন্য,এই নিজের হাতে একটু একটু করে গড়া সংসার। অসহায় না হলেও অধিকার তো আছেই।চঞ্চলকে অকালে হারিয়ে নিঃসন্তান মনিদীপা অকূলপাথারে। চঞ্চলের মৃত্যুর পর পরিবারের কারো সাপোর্ট পায়নি সে। না চাইতেই অবাঞ্ছিত আইনি লড়াইয়ে নেমেছিল সে।কিছু কাগজপত্র খুঁজে না পাওয়ায় জমা দিতে পারেনি সময়মতো।অথচ সে মোটেই অগোছালো নয়।ভুল করে হয়তো কোথাও...। হাল ছেড়ে দিয়েছে।ওরা তার কথা না ভাবলেও মনিদীপা কতভাবে পাশে থেকেছে চিরকাল।অথচ চঞ্চলের অকালে চলে যাওয়ার দায় তার ঘাড়েই...।এখন এই ঘরগুলো খালি ক'রে অতি প্রয়োজনীয় বইপত্র রেখে বাকিগুলো কাগজ ওয়ালার হাতে তুলে দেবে সে।পুরোনো কাগজপাতি,বইপত্রে ঠাসা চিলেকোঠার ঘরে প্রতি রবিবার মণিদীপার অনেকটা সময় কাটে।অফিস ছুটি ,এই দিন সকাল সকাল রান্নার পাঠ চুকিয়ে তিনি চলে যান তেতালার অতিপ্রিয়
চিলেকোঠায়।চাল ,গম ,জল খেতে পেয়ে একঝাঁক বিভিন্ন রঙের পায়রা চিলেকোঠা সংলগ্ন ছাদটাকে মুখরিত করে সকাল সন্ধ্যে। অনেকেই মণিদীপার সাড়া পেলে আহ্লাদিত হয়।ধারে কাছে এমনকী হাতের উপর বসে কত কথা বলে।সেইমতো আজ পুরানো কাগজ ,বইপত্র কাগজওয়ালাকে কেজি দরে বিক্রি করে দিচ্ছিল। দাঁড়িপাল্লা থেকে বইগুলো বস্তায় ঢোকানোর সময় কিছু একটা মাটিতে পড়ে যেতেই মনিদিপা চমকে উঠলো।সেই হলুদ খামটা!তন্ন তন্ন ক'রে কতবার যে...। ওই খামেই তো দরকারি কাগজপত্র সঙ্গে লেখা শেষ চিঠিটাও আছে।মামলা মোকদ্দমা , সম্পত্তির ভাগাভাগি হওয়ার সময় খুব দরকারে কিছুতেই পাওয়া যায়নি। এখনও রায় বেরোনো বাকি। কখন যে বইয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছিল পরে কিছুতেই মনে পড়ে নি। সবকিছু এলোমেলো লাগছে তার।মাঝপথে কাগজ ওয়ালাকে বিদায় দিয়ে মণিদীপা দাঁড়লো চঞ্চলের সদাহাস্য ছবির সামনে।অস্ফুটে বলল "হয়তো তুমি চাওনি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।তোমার চিহ্নগুলো হারিয়ে চিরততে বঞ্চিত হোক তোমার অধিকার ।" সব হারানোর দিনে সহসা ফিরে পাওয়া এই সম্পদ তাকে শক্তি দিচ্ছে অনেকটা।একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে উকিলবাবুর নম্বর ডায়াল করতেই ওপাশ থেকে উত্তর এলো "হ্যালো...।"
No comments:
Post a Comment