Thursday, December 26, 2019

কঙ্কাল

কঙ্কাল




         আমার কথায় রামশরণ যেন বাস্তবে ফিরে আসে আবার । 

        --- তারপর আর কি মাষ্টারমশাই । বড়বাবুর চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমার নিশ্চিন্ত জীবনেরও ইতি ঘটে গেল । আবার বেড়িয়ে পড়লাম নিরুদ্দেশের পথে । কিন্তু যে পাক থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম বড়বাবুর স্নেহের শাসনে সে পথে আর পা বাড়াইনি । কতদিন কত দোকানে কাজ করলাম --- চায়ের দোকানে , মুদির দোকানে , হোটেলে । কিন্তু এই কয় বছরে বড়বাবুর কাছে থেকে আমার রুচিরও পরিবর্তন ঘটে গেছে । ওদের গালাগালি , খিস্তি - খেউরগুলো আর ভালো লাগত না । বই পড়তে খুব ভালোবাসতাম । একদিন এক বইয়ের দোকানে কাজ পেলাম । বেশ বড় দোকান । কত বই । সারাদিন বই পড়ার এমন সুযোগ পড়ার নেশাটাকে আরো বাড়িয়ে দিল । দোকানে বিক্রিও হত মন্দ না । মালিককাকার একটামাত্র মেয়ে ছিল । একদিন কাকা এসে বলল , ক'দিন দোকান বন্ধ থাকবে । তার মেয়ের বিয়ে । দোকানের বদলে এই কয়দিন তার বাড়িতে কাজ করতে হবে । গেলাম তার বাড়ি । লোকজন বলতে তেমন কেউ নেই । কাকা কাকীমা আর দিদি । ফলে দোকানবাজারের অনেক কাজই আমি পেলাম । করলাম আনন্দের সাথে ।কি বলব মাষ্টারমশাই এই প্রথম যেন কোনো পরিবারের অংশ বলে মনে হল নিজেকে । দিদি বিয়ে হয়ে চলে গেল ব্যাঙ্গালোর । আমি দোকান বাড়ি দুটোই সামলাতে থাকলাম । কাকীমাও আমাকে নিজের ছেলের মত ই ভালোবাসতেন । 

       কিন্তু এ সুখও সইল না । কাকীমার হঠাৎ খুব কঠিন রোগ ধরা পড়ল । এখানে চিকিৎসা হবে না । দিদি কাকা-কাকীমাকে নিয়ে চলে গেল ব্যাঙ্গালোর । দোকানটা হয়ে গেল বন্ধ । আমি আবার বেকার ।

       পুরানো কথায় ডুবে গেছে রামশরণ । একইসাথে সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যকে দেখা , অনুভব করা ঘটেছে তার জীবনে বারবার । জীবনের কত উত্থান-পতন যে মানুষকে কোথায় কোথায় নিয়ে যায় ।

        ---- তা তুমি এখানে এলে কি করে ? 

           ----- সে তো আরো বড় ইতিহাস মাষ্টারমশাই । কিছুদিন একাজ- ওকাজ কত কাজই না করলাম । কিন্তু কিছুতেই মন বসে না । একদিন ট্রেনে চেপে বসে রইলাম । হাতে টাকাপয়সা প্রায় নেই । জামাকাপড় অত্যন্ত মলিন । স্নান হয়নি কয়দিন । অবসন্ন শরীরে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম । ঘুম ভাঙল ধাক্কায় । ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি সামনে বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে । আর কালো কোট পড়া একজন লোক সবার টিকিট চেক করছে । পেটে খাবার নেই তো টিকিট কাটব কি করে । আমার কাছে টিকিট চাইলে আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম । টিকিট না পেয়ে আমাকে পাগল ভেবে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে নামিয়ে দিল । শিয়ালদা থেকে কত দূরে আছি , কোথায় যাব কিছুই জানি না । প্ল্যাটফর্মে বসে রইলাম সারাদিন । খিদে তেষ্টার অনুভূতিও আর নেই । বিকেল হয় হয় । একটা চায়ের দোকানে গিয়ে দাঁড়ালাম । দুটো বিস্কুট আর চা খেলাম । তারপর ওয়েটিং রুমে গয়ে বসলাম । সারারাত সেখানেই পড়ে রইলাম । বড়বাবু আর কাকা-কাকীমার কথা খুব মনে পড়ছিল । দিদির ফোন নম্বর দিয়েছিল আমাকে । খুব ইচ্ছে করছিল ফোন করে ওদের খবর নিতে । কিন্তু পয়সা কোথায় ফোন করার । 

          ---- তারপর ? যতই শুনছি কঙ্কালের কথা শোনার আগ্রহ আরো বেড়ে যাচ্ছে ।

          ----- তারপর সকাল হল । একের পর এক ট্রেন যাচ্ছে আসছে । একসময় দেখলাম একদল স্কুলের ছেলে দলবেধে কলরব করতে করতে যাচ্ছে । কি ভেবে ওদের পিছু নিলাম । হাটতে হাটতে এই স্কুলটার সামনে এলাম । ওরা ভেতরে ঢুকে গেল । আমি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম । আর ওদের দেখতে লাগলাম ।

        জানেন মাষ্টারমশাই , আমি আগের জন্মে অনেক পাপ করলেও কিছু কিছু পুণ্য কাজও করেছিলাম । তাই একসময় নজরে পড়লাম ঐ দ্বিজেনমাষ্টারের । তিনি অনেকক্ষণ ধরে আমাকে লক্ষ্য করে একসময় কাছে এগিয়ে এলেন । আমার নাম-ধাম-ঠিকানা সব জিজ্ঞাসা করলেন । এমন ভালো মনের মানুষদের কাছে মন আপনাআপনি আত্মসমর্পণ করে জানেন তো মাষ্টারমশাই । আমিও আমার জীবনের পিছনে ফেলে আসা  সব ঘটনা মাষ্টারমশাইকে বলে চললাম । মাষ্টারমশাই আমাকে সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে গেল । ঐ যে আমগাছের বেদিটা দেখছেন সেখানে আমাকে বসতে বলে ভেতরে গেল । তারপর কিছুক্ষণ পর হাসিমুখে এসে বলল যে আমার চাকরি হয়ে গেছে । আমি মাষ্টারমশাইয়ের পা ধরে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম মাষ্টারমশাই । তিনি আমাকে তুলে নিয়ে ঐ ঘরটাতে থাকা খাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিলেন । তার উপর দিলেন মাইনে । আমিও প্রাণ দিয়ে স্কুলটাকে ভালোবেসে ফেললাম । সারাদিন ছোটোবড় কত ছেলেদের আনাগোনা  । ছোটাছুটি , চীৎকার , চেঁচামিচি । একসময় ওদের সাথে ভাব হয়ে গেল । ওরা কতরকম দুষ্টুমি করত । আমার হয়ত একটু ঘুমের ঢুল এসেছে । ওমনি পেছন দিয়ে এসে আমার টিকির সাথে দড়ি বেঁধে দিত । কখনো প্লাষ্টিকের সাপ সামনে ফেলে দিয়ে ' সাপ ' ' সাপ ' বলে ভয় দেখাতো । আমিও ওদের মজা দেবার জন্য ভয় পেয়ে লাফাতাম । কখনো আমার জুতো লুকিয়ে রাখত । তবে ওরা শুধু দুষ্টুমিই করত না ওদের জন্মদিনের কেক লজেন্সটাও আমার জন্য নিয়ে আসত । ওদের ভালোবাসায় আবার আমার জীবনটা ভরে উঠল । আস্তে আস্তে বয়স বাড়তে লাগল ।ষাট পেরিয়ে পয়ষট্টি - সত্তর । আমি যেন এই স্কুলেই একটা অঙ্গ হয়ে উঠলাম । তারপর একদিন ওপরয়ালার ডাক এল । এই ঘরেই আমার জীবনের শেষ হল । আমার তো কেউ ছিল না । মাষ্টারমশাইরা আমাকে গোর দিল । 

          ---- আচ্ছা , তাহলে তুমি এখানে এলে কি করে । ---- শেষ কৌতুহলটা আর চাপতে পারলাম না ।

           ----- ওদের ভালোবাসা আমাকে ওখানে শান্তি দিল না মাষ্টারমশাই । আমি ইস্কুল আসার জন্য অস্থির হতে লাগলাম । একদিন সুযোগ এল ।

             ----- ইস্কুলের কয়েকজন মাষ্টারমশাই আমার গোরের পাশ দিয়ে কোনো অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে সেদিন রাতে বাড়ি ফিরছিল । অনেক রাত । গোরে শুয়েও আমার তো সবসময় এই স্কুলের দিকেই মনটা পড়ে থাকত । তাই স্কুলের কোনো মাষ্টারমশাই বা ছাত্রদের কথা শুনলেই উৎগ্রীব হয়ে উঠতাম । সেদিনও মাষ্টারমশাইদের কথা শুনছিলাম । বিজ্ঞানের মাষ্টার অভীকবাবু হেডমাষ্টারমশাইকে বলছিল যদি স্কুলের জন্য একটা আসল কঙ্কাল পাওয়া যায় তবে খুব ভালো হয় । এমনি তাদের কথাবার্তা চলছিল । হঠাৎ মুখঢাকা দুজন অস্ত্রধারি লোক মাষ্টারমশাইদের সামনে এসে দাঁড়াল । যা আছে দিয়ে দিতে বলল । নয়ত প্রাণে মারবে বলে হুমকি দিতে লাগল । আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না । ছোকরাদুটোর কাছে গিয়ে নানারকম কায়দা করতে লাগলাম । ভয়ে সেদুজনের সেকি পড়িমড়ি দৌড় । হাসব না কাঁদব ভেবে পাইনা । মাষ্টারমশাইদের দিকে তাকিয়ে দেখি তাদেরও একি অবস্থা । শুধু অভীকবাবু আর হেডমাষ্টারমশাই দাঁড়িয়ে আছে । আমি আস্তে আস্তে তাদের বললাম --- ভয় পাবেন না মাষ্টারমশাই । আমি রামশরণ । অভীকবাবু আমাকে অনেকদিন ধরে দেখেছে এই স্কুলে । তাই নির্ভয়ে হেসে বলল --- এখনো কিসের টানে রামশরণ । আমি বললাম ---- আজ্ঞে মাষ্টারমশাই । আমাকে স্কুলেই একটু জায়গা দিন । ছেলেদের কলকল না শুনে আমি থাকতে পারিনা । অভীকবাবু বলল ---- ঠিক আছে দেখছি তোমার জন্য কি করতে পারি । তার কিছুদিন পর মাষ্টারমশাইরা আমাকে ওখান থেকে তুলে পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন করে স্নান- টান করিয়ে এখানে রেখেছে । আমিও খুব খুশিতে আছি এখন ।

          নিজের অজান্তে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল আমার বুক চিরে । আমিও হারিয়ে যেতে থাকলাম অনেক অনেক দূরে যেখানে স্পষ্ট দেখতে পেলাম ছেলেরা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে রামশরণকে । আর রামশরণ হাত - পা নেড়ে নানারকম অঙ্গভঙ্গি করছে ।

####সমাপ্ত ####

Wednesday, December 25, 2019

কঙ্কাল

কঙ্কাল


--- তুমি কে ? -- আমি অষ্ফুটে জানতে চাইলাম ।

----  আপনি তো এই স্কুলে নতুন এসেছেন তাই আপনি আমাকে চেনেন না । আমার নাম রামশরণ । ছেলেরা ঐ নামেই আমাকে ডাকত । গেটে চৌকিদারির কাজ করতাম । ঐ যে এখন যেখানে মিড ডে মিলের ঘর হয়েছে সেখানে আগে ছিল আমার বাস । চব্বিশ বছর বয়সে একদিন ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়েছিলাম ইস্কুলের সামনে । কোনো কাজ-কামের আশায় । তখনকার দ্বিজেনমাষ্টার দেবতা ছিলেন । গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমাকে সব জিজ্ঞাসা করলেন । তারপর আমাকে একটা চাকরি দিলেন । থাকার জায়গাও দিলেন ইস্কুলের ভিতর । কাজের মধ্যে রাতদিন ইস্কুল পাহাড়া দেওয়া । সকালে ইস্কুল শুরু হওয়ার আগে দুটো ভাতে ভাত ফুটিয়ে খেয়ে নিতাম । আর সেই রাতে একবার ।

----- তোমার বাড়ি কোথায় ছিল রামশরণ । --- কৌতুহলে জানতে চাইলাম ।

-----  সে তো ছিল বিহারে । কত ছোটোবেলায় মা মারা যাবার পর বাপটা আমাকে নিয়ে গা-ঘর সব ছেড়ে চলে এল কলকাতায় । বাপ শিয়ালদায় কুলিগিরি করত । আমি প্ল্যাটফর্মের একটা কোনে বসে থাকতাম । ট্রেন আসা-যাওয়ার ফাঁকে বাপ আমার কাছে আসত আর দু-পাঁচটাকা করে দিয়ে যেত । আমি খাবার কিনে খেতাম । তারপর বাপটাও একদিন মরে গেল । না-খাওয়া পেটে অত ভারি ভারি মালপত্র টানতে পারছিল না আর । একদিন এক বাবুর মাল মাথায় নিয়ে যেতে গিয়ে প্ল্যাটফর্মেই পড়ে গেল । আর উঠল না । আমি এবার কি করব । অন্যান্যো কুলিকাকারা প্রথম প্রথম দু-তিনটাকা করে দিত । কিন্তু তাতে আমার পেট ভরত না । খিদের জ্বালায় চুরি করতে শুরু করলাম । এভাবে বেশ হাত পাকিয়েও ফেললাম । তখন একটু বড়ো হয়েছি । একদিন এক মহিলার সোনার চেন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লাম । পুলিশ ধরে নিয়ে গেল ।খোঁজ করার মত আমার তো কেউ ছিলনা । তাই পনেরো দিন জেলেই রইলাম । নাবালক বলে তেমন কোনো সাজা হল না । কিন্তু জেলের যে বড়বাবু ছিল সে একদিন আমায় ডেকে আমার সব কথা শুনল । কি জানি হয়ত আমার ওপর তার মায়া হয়েছিল । একদিন আমায় ডেকে জিজ্ঞাসা করল -- তুই জেল থেকে বেড়িয়ে কোথায় যাবি । 

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম । কি বলব । আমার তো কোনো ঘরবাড়ি বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন কোথাও কেউ নেই । আবার অনির্দেশের পথে আমাকে কামড়াকামড়ি করে বাঁচতে হবে । বুক ফেটে কান্না আসছিল তখন । কেবল বাপের কথা মনে হচ্ছিল । বড়বাবু আমার মাথায় হাত রেখে বলল --- আমার সাথে যাবি ? আমার ঘরবাড়ি দেখাশুনা করবি , বাগান দেখবি আর আমার ঘরে থাকবি । কি বলব সেদিন যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । একমুঠো নিশ্চিন্তের ভাতের আশায় চোখদুটো চকচক করে উঠেছিল । 

রামশরণ তার পুরনো স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়ে একটু থামল । আমি আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলাম --- বড়বাবুর বাড়িতে তুমি গেলে ?

--- হ্যাঁ , আবার বলতে শুরু করল রামশরণ । ছাড়া পেয়ে সেইদিন আমি জেলের বাইরে বসেছিলাম । তারপর বড়বাবুর ডিউটি শেষ হলে আমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন । কি বলব মাষ্টারমশাই এমন ভালো মানুষ যে পৃথিবীতে আছে তা তার সঙ্গে না গেলে বুঝতেই পারতাম না । উনি আমার জন্য যা করেছেন তা অনেক বাবা তার ছেলের জন্যও করে না । নামেই তার বাড়ির কাজের লোক ছিলাম । সে আমাকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিল , থাকার জায়গা দিল , দিনকয়েক পড়ে আমাকে ইস্কুলেও ভর্তি করে দিল । আমি খাইদাই পড়াশুনা করি আর বড়বাবুর বাগানে বাড়িতে যতটা সম্ভব কাজ করি । এভাবে মাধ্যমিকটা পাশ করেছিলাম । একদিন হল কি দিব্বি ভালো মানুষ খেয়েদেয়ে জেলে গেলেন । সন্ধ্যার সময় প্রচুর গাড়ির ভীড় সামনে । কি ব্যাপার বাবু তো জেলে গেছে । অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি গেটের দিকে । একটা মড়াবাহী গাড়ি ঢুকল গেট দিয়ে । ছুটে গেলাম । আমার বড়বাবু শুয়ে আছে নিশ্চিন্তে । একবারো তাকিয়ে দেখল না ।

কঙ্কাল বোধহয় নিজের কষ্টকে দমন করতে কিছুক্ষণ থামল । আমার একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল । ভালো মানুষরা বোধহয় বেশিদিন আয়ুকাল নিয়ে পৃথিবীতে আসে না ।

---- তারপর কি হল রামশরণ ? --- রামশরণের জীবনকাহিনী আমাকে চুম্বকের মত টানতে লাগল আরো জানার জন্য ।


পরের পর্ব আগামীকাল ........... 

Tuesday, December 24, 2019

কঙ্কাল

কঙ্কাল


         ক্লাশ টুয়েলভের টেষ্ট পরীক্ষা শেষ । ফাইনালের জন্য ল্যাবটা পরিষ্কার করাচ্ছিলাম কয়েকটি ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে । এক্সটারনাল এগজামিনার আসবেন । একটু গোছগাছ না করলে কেমন দেখায় । 

               গোছানো শেষে একটু আগে ছেলেরা চলে গেছে । আমি তখনো চেয়ারে বসে ওদের প্রজেক্টের খাতাপত্রগুলো ঘাটাঘাটি করছিলাম । সাড়ে তিনটে বাজে । চারটে নাগাদ বেরোবার ইচ্ছে । একটি ছেলের খাতায় চোখটা আটকে গেছে । কভারটা তো সুন্দরই । খাতার ভিতরটাও এত সুন্দর পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন যে চোখ আপনা-আপনি পরপর পৃষ্ঠাগুলো পড়তে বাধ্য করছিল । এমন সময় কে যেন ডাকল ---- ' শুনছেন ' । আমি দরজার দিকে তাকালাম । কেউ নেই । হয়ত আমার মনের ভুল অথবা নীচে থেকে আওয়াজ আসছে ভেবে আবার খাতায় মনোনিবেশ করলাম ।

     দ্বিতীয় ডাকটা একটু পরে আরো স্পষ্ট করে উচ্চারিত হল ---- ' মাটারমশাই , শুনছেন । '

       এবারও আমি দরজা-জানালাসহ সমস্ত ঘরটাতে একবার চোখ ঘুড়িয়ে নিলাম । এই স্কুলে আমি জয়েন করেছি আট মাস হল । এর মধ্যে শুধু ক্লাশটুকু করা ছাড়া ল্যাবে খুব বেশি সময় কাটেনি আমার । উপরন্তু ল্যাবরেটরিটা তিনতলায় সারি সারি চারটে ঘরের একদম শেষ ঘরটায় । বাকি ঘরগুলোও বন্ধ । তাই এমন নির্জন পরিবেশে গাটা ছমছম করে উঠল । হঠাৎ চোখ পড়ল আলমারির ভেতরে রাখা কঙ্কালটার দিকে । 

   --- হ্যাঁ , হ্যাঁ , আমি বলছি । আলমারির পাল্লাটা একটু খুলুন না । '

          আলমারের পাল্লা খুলব কি মুহূর্তে আমার সারা শরীর কেমন অবশ মনে হল । হাত-পাগুলো এত ভারি যে আমার নড়বার ক্ষমতা নেই । মাথার মধ্যে কোনো বোধও কাজ করছে না । 

      --- ' আলমারির পাল্লাটা একটু খুলুন না । আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে । খুব কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করুন । '

         এই করুণ আর্তিতে আস্তে আস্তে সম্বিত ফেরে আমার । একুশ শতকে ভুত ! তাও আবার আমার ল্যাবে ! আমার বিজ্ঞানমনষ্ক মন জেগে উঠতে থাকে । কৌতুহল হয় । যা শুনছি সেটা কি ঠিক । চেয়ার ছেড়ে উঠে আলমারির চারপাশটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম । আজকাল স্যার - ম্যাডামদের বিপাকে ফেলার জন্য ছেলেরা অনেক রকম দুষ্টুমি করে । আমাকে ভয় দেখাবার জন্য সেরকম কিছু করে রাখেনি তো । এখন তো সবার হাতেই এন্ড্রয়েড ফোন । ভালো করে ল্যাবের সর্বত্র খুঁজে দেখতে লাগলাম । না । সন্দেহ করার মতো কোনো বাক্স বা স্পীকার কোথাও নেই । বাইরে বেড়িয়ে কড়িডোরটা একবার দেখলাম । নীচের দিকে ঝুঁকে দেখলাম । সব ফাঁকা । এবার আস্তে আস্তে আলমারিটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । কঙ্কালটাকে ভালো করে লক্ষ্য করছি । খুব বেশি পুরনো তো নয়ই , জিনিষটাও আসল বলেই মনে হচ্ছে । পর্যবেক্ষণ করছি , এমন সময় কঙ্কালের মুখটা যেন সত্যিই নড়ে উঠল । 

       --- মাষ্টারমশাই , পাল্লাটা একটু খুলবেন । 

      আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে সে আবার একই কথা বলল । আমি এবার আস্তে করে পাল্লার একটুখানি খুললাম ।

     --- ব্যাস , ব্যাস , ওতেই হবে মাষ্টারমশাই । অনেক ধন্যবাদ । ছেলেগুলো একেবারে আটকে দিয়ে গেছে ।

       আমার নির্বাক মুখের দিকে তাকিয়ে সে বলতে থাকে --- প্রায় ন'মাস ধরে আমি এখানে আছি । কি করব বলুন সারা জীবন যাদের মাঝে কাটিয়ে দিলাম মড়েও যে তাদের ছেড়ে থাকতে পারিনা । বাচ্চাদের কলরব না শুনতে পারলে আমার ভালো লাগে না মাষ্টারমশাই ।

       ---- তুমি কে ? --- আমি অষ্ফুটে জানতে চাইলাম । 


ক্রমশ : ......

Monday, December 16, 2019

এখনো হাসে

এখনো হাসে

আমি তখন বছর তেরো
সলাজনত একলা ঘরে
হঠাৎ চমকে ফিরে তাকাই
অজানা এক কন্ঠস্বরে
এমন কেন ধ্যান-গম্ভীর
স্তব্ধ চারপাশ
আমি তখন ভীত হরিণী
জীবন - উদাস

হয়ত তখন একটি-দুটি
পাপড়ি মেলার সময় হল
কিন্তু আমি স্বভাব-ভীতু
একলা মনে এগিয়ে চল

এই নিয়মে এই রীতিতে
চলেই গেলাম একা একা
হঠাৎ পথে চড়াই হল
ধানের ক্ষেতে প্রথম দেখা

ধানেও একদিন সূর্য নামে
সোনা রোদের আগুন ছড়ায়
দেখতে দেখতে জীবনজুড়ে
হেমন্ত তার মেদূর ছড়ায়

আমি আবার একলা পথে
একলা জীবন একলা মতে
চমকে দেখি শীত গিয়েছে
বসন্ত দ্বারে কড়া নাড়ায়
খুলব কিনা ভাবতে ভাবতে
কেটে গেল একলা দুপুর
বুঝিনি তাই কোন রীতিতে
সন্ধ্যা ঘনায় কাঁদায় সুদূর

এখন যখন ব্যস্ত ঘড়ি
জীবন আমার চলনসই
হাতের কাছে সঞ্চয়িতা
এখনো তবু অবাক হই
শেষের কবিতা শেষ হয়নি
এখনো অনেক আছে জমা
বাড়ির ভিতর সেই বাড়িটা
এখনো হাসে ঝর্ণাসমা ।


Monday, December 9, 2019

শেষ দেখা --- অন্তিম পর্ব

                 শেষ দেখা --- অন্তিম পর্ব

    স্টেশনচত্বর একদম খাঁ খাঁ করছে । টোটোর কোনো চিহ্ণ নেই । মনে পড়ল গতকালের একটা ভাসা ভাসা কথা --- বিকেলের দিকে টোটো উইনিয়নে মিটিং আছে বোধহয় । উঃ এবার কি করবে । চোখ ফেটে জল আসছে । কি আর করা যাবে । আসার সময় তাড়াহুড়োয় মোবাইলটা টেবিলেই ফেলে এসেছে বোধহয় ।
হাটাপথ ধরল ঐশী । মাঠের মধ্যে দিয়ে গেলে একটু সর্টকাট হয় । জমির ফসল উঠে গেছে । মাঠও এখন ফাঁকা । অন্তত দশ মিনিট সময় কমবে ।
মনের মধ্যেটায় কু ডাকছে বারবার । হে ঈশ্বর ভালো করে দিও । বাড়ি ফিরে মানুষটাকে যেন ভালো দেখতে পারি ।
    সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে পালদের  পুকুরের কাছে চলে এসেছে ঐশী । আর বেশিদূর নয় তাদের বাড়ি । পুকুরটা বায়ে রেখে একটু এগোলেই বড়ো রাস্তা । তারপর পাঁচ মিনিট হাটলেই ওদের সাবেকি বাড়ি । যদিও এত বড় বাড়িতে এখন বাসিন্দা বলতে ওরা চার শরিকের চার ছেলের পরিবার । আর তাদের চার ঘর ভাড়াটে ।

    হঠাৎ পুকুরপাড়ের দিকে তাকিয়ে বুকটা ধরাস করে উঠল ঐশীর । একটা আবছায়া দেখা যাচ্ছে । এইসময় এখানে কে দাঁড়িয়ে আছে । পা যেন ভারী হয়ে আসছে ঐশীর । পালদের পুকুর সম্পর্কে বদনাম আছে অনেক । প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ বছরের পুরানো পুকুর । দেবাংশুর চিন্তায় আগে পুকুরের কথা মনে পড়েনি । পুকুরপাড়ের কলাবাগানের মধ্যে কি যেন একটা ছুটে পালালো । ঐশীর গা শিরশির করে উঠল । একপা একপা করে এগোতে লাগল ঐশী । আর কিছু মাথায় আসছে না । আবছায়াটা এবার উঠে দাঁড়ালো । ঐশী আর এগোতে পারল না । মুহূর্তে চোখের সামনেটা অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে শুনতে পেল কেউ যেন তার নাম ধরে ডাকছে ।

     এ কি দেবাংশু তুমি এখানে ।
আজ তো টোটো ইউনিয়নের মিটিং আছে । টোটো পাবে না । ফোনেও তোমাকে পাচ্ছি না । তাই এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি ।
ওঃ কি ভয় পেয়েছিলাম । তোমার কথা ভাবতে ভাবতে  আর এই পুকুরের কথা মনেই ছিল না । কিন্তু তুমি যে বললে তোমার শরীর খুব খারাপ । তাহলে এতটা পথ এলে কি করে ।
অন্ধকারে দেবাংশুর মুখটা দেখা গেল না । এইরকম পরিবেশে সুস্থ দেবাংশুকে পেয়ে আজ যেন কথায় পেয়েছে ঐশীকে ।

     হঠাৎ মনে হল পাড়াটা যেন আজ একটু বেশিই নিস্তব্ধ । কুকুরগুলো চুপচাপ । মনে একটা খটকা লাগলেও দেবাংশুর সুস্থ হয়ে ওঠার আনন্দে এসব আর আমল পেল না ঐশীর কাছে ।
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই বাড়ির সামনে বহু মানুষের জটলা চোখে পড়ল ঐশীর । কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই 'তুমি এগোও , আমি একটু আসছি ' বলে যেন অন্ধকারে মিশে গেল দেবাংশু ।
ঐশী পায়ে পায়ে বাড়ির গেটের কাছে উপস্থিত হয় । তাকে দেখতে পেয়ে সবাই তার পথ ছেড়ে দাঁড়ায় । সবার চোখে মুখে কেমন একটা সন্ত্রস্তভাব । কিছু বুঝতে না পেরে ঐশী ছুটে যায় ভেতরদিকে । উঠোনের মাঝখানে শোয়ানো রয়েছে দেবাংশুর নিষ্প্রাণ নিথর দেহ । এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না ঐশী । তার অচৈতন্য শরীরটা লুটিয়ে পড়ল মৃত দেবাংশুর পায়ের কাছে ।

Thursday, December 5, 2019

শেষদেখা --- প্রথম পর্ব

                  শেষদেখা --- প্রথম পর্ব

ট্রেন থেকে নামতেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল ।প্রায় দু'কিমি পথ এখনও যেতে হবে । টোটো করে যেতে হবে । মনের মধ্যে নানান চিন্তা ভিড় করে আসছে । একটা সরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর একটা । মনটাকে কিছুতেই সংযত করতে পারছে না ঐশী ।
অফিসে তখন লাঞ্চব্রেক চলছিল । খাবারের ট্রেটা হাতে নিয়ে মাত্র মাত্র টেবিলে বসেছে , ওমনি দেবাংশুর ফোন ।
তুমি একটু তাড়াতাড়ি এসো , আমার শরীরটা ভালো লাগছে না ।
তখন থেকেই মনটা খচখচ করছে । ক'দিন ধরেই শরীরটা খারাপ যাচ্ছে । গত বুধবার অফিস থেকে ফিরল জ্বর নিয়ে । রাতে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল ঐশী । সামান্য জ্বর । রাতটা গেলেই ভালো হয়ে যাবে । কিন্তু রাতটা যেন আর কাটতেই চাইছে না । জ্বর কিছুতেই একশো চারের নীচে নামছে না । গত দু'দিন এভাবে কেটেছে । দুদিন পর আজ অফিসে এসেছে ঐশী । ভেবেছিল একটু তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে । কিন্তু দেবাংশুর ফোনটা পেয়ে আর স্থির থাকতে পারল না ঐশী । কোনো রকমে একটু খেয়ে রাইকে ফাইলগুলো বুঝিয়ে দিয়েই বেড়িয়ে এল । তবু প্ল্যাটফর্মে পৌঁছবার আগেই তিনটে চল্লিশের ট্রেনটা বাই বাই করে বেরিয়ে গেল । যেদিন তাড়া থাকে সেদিন সবেতেই এরকম হয় । এরপর ট্রেন সেই চারটে পঁচিশে ।
ট্রেন থেকে নেমে দ্রুত পা চালাল ঐশী।আগে নাগেলে টোটোতে জায়গা পাওয়ামুশকিল হবে।একার জন্য কোনো টোটো যাবে না।আর গেলেও বেশি ভাড়া চাইবে।কিন্তু একি!

Monday, December 2, 2019

অনুগল্প --- খবর

                       অনুগল্প --- খবর

ওমা বৌদি জানো না কাল রাতেই শেষ গো ।
আমাদের কাজের মেয়ে চুমকির বলার ধরনে শুয়ে থেকেও কানটা সজাগ হয়ে উঠল । সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়ার আগে স্থানীয় যা কিছু সংবাদ চুমকির দৌলতে তার প্রায় সবই আমার কানে এসে পৌঁছোয় । এমনকি পাশাপাশি বাড়িগুলির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তথ্য , যেগুলি কোনোভাবেই আমাদের জানবার কথা নয় সেগুলিও অনায়াসেই আমরা জানতে পারি চুমকির খবর শোনাবার আতিশয্যে । মাঝে মাঝে ভাবি আমার আর আমার স্ত্রীর নির্ভেজাল সংসারে এমন কোনো ঘটনা ভাগ্যিস ঘটে না যেটা এভাবে অন্য কোনো বাড়িতে মুখরোচক হয়ে পরিবেশিত হয় । যাই হোক চুমকির আজকের খবরটা শোনার জন্য উৎকর্ণ হয়ে রইলাম ।
কি আবার হোলো রে । কি শুনব । আমার স্ত্রীর নিরুত্তাপ অভিব্যক্তি । এমন শান্ত শিষ্ট নিরুত্তাপ স্রোতা পেলে আদৌ কারো এমন টাটকা সংবাদ শোনাতে ইচ্ছে হয় কিনা মাঝে মাঝে আমার তাতে সন্দেহ জাগে । অবশ্য এক দিক থেকে আমার স্ত্রী যে এক নম্বর সে কথা মানতেই হবে । কারো কোনো কথায় কখনো বিরক্ত হতে তাকে আমি আজ পর্যন্ত কখনো দেখিনি । সে সবার সব কথাই খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে । আজো তাই ।
ওমা , বিলে গো , বিলে গুন্ডা .... । কাল রাতে ছ'টা গুলি করেছে গো । কি আওয়াজ সাঁই সাঁই করে .... । আমাদের ঘরের কাছাকাছি কিনা .... । ভয়ে আমার সেকি অবস্থা .....। তারপর আমাদের ঘরের পেছন দিয়েই তো সব ছুটে গেল গো । আমার তখন কি কাঁপুনি .... । ভয়ে কাউকে ডাকতেও পারছিনা ..... ।সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারিনি গো ।
প্রত্যেকটা পাড়ায় যেমন একটি করে উঠতি দাদা থাকে বিলেও তাই । ভালো নাম প্রবাল শিকদার । ক্লাশ নাইট - টেনে আমার কাছে পড়ত । বাবা কাঁকিনাড়ার ঔদিকে কিসের একটা কারখানায় কাজ করে । বাড়িতে অনেকগুলো ভাইবোন । ও পরিবারের বড় ছেলে । হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দেওয়ার পরপর ওর বাবা মারা যায় । তারপর  এঘাট ওঘাট করে অবশেষে এই পথে স্থিতু হয়েছিল । কিছুদিন ধরেই ওর জুলুমবাজির নানা কান্ডকারখানা কানে আসছিল । তারই কোনোটার প্রতিফলন নাকি আজকের ঘটনা ।
আরে ঐ যে খালপাড়ে দশ বিঘা জমিটা নিয়ে যে বুড়িটা একা একা থাকে না .... । ঔ বাড়িটার ওপর ওর অনেকদিন ধরে লোভ রয়েছে  গো ....। গতকাল বুড়ি ওর বাগানের দুটো মোটা মোটা গাছ কুড়ি হাজার টাকায় বিক্রি করেছে গো । বুড়ির তো কেউ নেই । খাবে কি । তাই গাছ দুটো বেচেছে । তা আর খাওয়া ...... । গাছ কেটে নিয়ে যাওয়াও সারা  আর বিলের ওখানে পৌছনোও সারা । ব্যাস গাছ বেচা টাকা থেকে দশ হাজার দাও । বুড়ি বলে  , ও বাবা  আমি একা মানুষ । কেউ দেখারও নেই খাওয়ানোরও নেই । এই বয়সে কি কাজ করতে পারি । এই টাকা দিয়ে আমি শেষ দিন কটা খেয়ে পরে চলব বলে গাছদুটো বিক্রি করলাম । আর তুই সে টাকাও আমায় দিবিনা । তোর এত লোভ । ভগবান তোর বিচার করবে । ভগবানই তো আমাকে পাঠিয়েছে বলে সে টাকা নিয়ে নিল গো । এতটুকু মায়া দয়া নেই । কিন্তু কি হল । পারলি না তো একটা রাতও কাটাতে । ভগবান দূত পাঠিয়ে ঠিক শাস্তি দিল তো । এজ্যেই বলে লোভে পাপ , পাপে মৃত্যু ।
কি একটা কাজে কদিন আগে ঐ পথ দিয়ে একবার যাবার দরকার হয়েছিল । তখন খালপাড়ের ঐ বাড়িট চোখে পড়িছিল । কেউ যে ওই বাড়িতে থাকে তা অবশ্য মনে হয়নি । নানা রকম দুষ্কর্ম করার উপযুক্ত জায়গা বটে । কিন্তু অসহায় মানুষের পাশে না থেকে তাদের শেষ সহায়টুকু আত্মসাৎ করার এ কি খেলায় মেতে উঠেছে যুব সমাজ ! যাদের হাত ধরে সমাজ  আরো উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা তারা কোন পাঁকে ডুবে যাচ্ছে ! এই দুঃসময়ে এইরকম দিশাহীন ছেলেগুলোকে সঠিক দিশা কে দেখাবে । অন্ধকারের উৎস হতে আলোর দিকে হাত ধরে নিয়ে যাবে কে । নাকি সত্যিই ভগবানের দূত এসে  এভাবে শাস্তি দেবে তাদের !

Monday, November 25, 2019

অনুগল্প --- ভাত

                        অনুগল্প --- ভাত
                                  
মেয়েটি হাপাতে হাপাতে এসে দাঁড়ালো দরজায় ।
ম্যাম , আসবো ?
     আড়িপুর গ্রামের কাননদেবী উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে । পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে পনেরো মিনিট হল । পাঁচটি গ্রামের মধ্যে এই একটিই হাই স্কুল ।বর্তমান ডিজিটাল যুগেও যে এমন কোনো জায়গা থাকতে পারে সোহিনীর তেমন ধারণা ছিল না । এখানে চাকরি নিয়ে এসে মাত্র ছয় - সাত মাসে কত অভিজ্ঞতা যে হচ্ছে ! বাইরের আলো হাওয়াও যেন এই গ্রামের মানুষগুলোর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । গরীবস্য গরীব এখানকার মানুষ । বিদ্যুৎ তো দূরের কথা পানীয় জলটুকু পাওয়া যে কি কঠিন এদের কাছে । পঞ্চায়েতের তরফ থেকে গ্রাম পিছু একটি করে টিউবয়েল বসিয়ে দিয়েছে । তার মধ্যে দুটো ইতিমধ্যেই খারাপ হয়ে পড়ে আছে । বাকিগুলোতেও পর্যাপ্ত জল পাওয়া যায় না এখানকার ভৌগোলিক  কারনে । বর্ষা ঠিকঠাক হলে জলাশয়গুলিতে যাওবা একটু জল থাকে বাকি গরমকালটা খুব কষ্টে কাটাতে হয় ।সরকারী প্রকল্পগুলো সবে মাত্র পেতে শুরু করেছে  এরা। রুক্ষ মাটির বুক চিরে ফসল ফলানোর কঠোর পরিশ্রমে তারা দিনরাত ব্যায় করে । বিনিময়ে যে সামান্য ফসল পায় তাতে কোনোভাবে খাওয়াটুকু জোটে । বিদ্যালয়গুলি তাই ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েগুলোর কাছে যতটা লেখাপড়ার জন্য আকর্ষনীয় তার চাইতে অনেক বেশী আকর্ষনীয় ভরপেট ভাতের জন্য এটুকু বুঝেছে সোহিনী । তাই  শুকনো মুখ আর রোগা রোগা হাত-পায়ের ছেলেমেয়েগুলোকে দেখলে বড় কষ্ট হয় তার । এক অব্যক্ত বেদনায় ছটফট করে সে । এত কষ্ট করেও মানুষগুলোর মধ্যে কোনো অভিযোগ নেই । যেন আজন্ম এইভাবে বেঁচে থাকার অঙ্গীকারে আবদ্ধ এরা ।কোনো কিছু চাওয়ার নেই , কোনো কিছু পাওয়ারও নেই ।
পরীক্ষার খাতায় সই করা থেকে পলক চোখ তুলে   ছোট্টো মেয়েটাকে দরজায় দেখে সোহিনী বলল , কি রে এত দেরি কেন ? পরীক্ষা তো কখন শুরু হয়ে গেছে । আয় আয় । কোন ক্লাস ? যা ওখানে বসে পড় ।
 
  পরীক্ষার খাতা আর প্রশ্নপত্র  এগিয়ে দিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করল সোহিনী , কোথায় বাড়ি তোর । এত দেরি করলি কেন । পরীক্ষার সময় টাইম মত স্কুলে আসতে হয় বুঝলি ।
শুকনো মুখে ছলছলে চোখদুটো তুলে কি যেন বলতে গেল মেয়েটি । ঠোঁটটা একটু কাঁপল শুধু , শব্দ বেরোলো না । সোহিনী মাথায় হাত দিতেই ফুঁফিয়ে উঠল মেয়েটি , তিন রাত আগে আমার বাবা মরে গেছে ।
তাও তুই পরীক্ষা দিতে এলি ? পিতৃহারা ছোটো মেয়েটির প্রতি সমানুভুতিতে তারও চোখে জল চলে এল ।
তিন দিন মা - দাদার সাথে আমিও কিছু খাই নি । তাই আজ ইস্কুলে এলাম । মেয়েটির চোখদুটো চকচক করে উঠল । আজ আমি পেট ভরে ভাত খাব ।

Saturday, November 23, 2019

কাঞ্চনজঙ্ঘা

কাঞ্চনজঙ্ঘা

আকাঙ্খায় মিশেছে চেতনা
কালের নিয়মে
শিশুচাঁদের বেড়ে ওঠা জীবন
এক- এক কলায় আসে পূর্ণতা
কখনো সমুদ্রগহ্বর ,
কখনো কাঞ্চনজঙ্ঘা ,
পূর্ণিমা হাসে অনাবিল
সন্ধ্যা হোক গোলাপি চেরির ,
অথবা রক্তলাল রডোডেনড্রনের
ভালোবাসা তো স্রোত হয়ে বয়

এক শ্বাসে উড়তে চাওয়া অবুঝ হৃদয়
পাহাড়ের চোরাস্রোতে স্রোতোস্বতী হয়
তোমার দেখানো মুখ এ পাহাড়ে হাসে
আমার পাহাড়ে তা নিমেষে মিলায়

তবুও আসি ফিরে , আবার আসব
কখনো দুধ - সাদা , কখনো হলুদ আলো
কখনো রক্তিম হয়ে চোখে ভাসব
আবার আসব .........

Wednesday, November 20, 2019

নীরব প্রতিশ্রুতি

নীরব প্রতিশ্রুতি 

প্রকৃতির নির্দিষ্ট নিয়মে
শরতের পর আসে হেমন্ত
তোমার তো কোনো নিয়ম নেই
তাই 
প্রতিশ্রুতি মুছে ফেলতে
নিয়ম মানো অল্পই
দিনের অবসানে
দিগন্তের ওপারে সমস্ত আকাশ জুড়ে যখন
একটি একটি করে তারা ফুটেছিল
বড় স্নিগ্ধ , বড় করুণ সেই কথার সুর
শুনেছিলাম তোমার মুখে
কোলের কাছটি ঘেসে
অদ্ভুত কাষ্ঠ হেসে
শুনিয়েছিলে তোমার অতীত
তখনি
অনবদ্য কল্পনায় এক নীরব প্রতিশ্রুতি
বেজে উঠেছিল বাতাসে


আজো সন্ধ্যার অন্তরালে
প্রতিশ্রুতির শব্দগুলি
একটি একটি করে ফোটে সন্ধ্যার আকাশে
নীরব এ প্রতিশ্রুতি
তাই বুঝি
আলোর নিশানা খুঁজে পায় না ।

Friday, October 11, 2019

আলো

আলো

আমার চেতনায় জ্বলে রংমশাল , হলুদ পাতারা যায় উড়ে 
নীল , গাঢ় নীল আকাশ আমার চেতনা জুড়ে
এখানে শহর পোড়ে  , পোড়ে নিকোটিন
এক আকাশ শরৎ তবু আমার অধীন

শহরে ছড়িয়েছে রোগ , উদ্বাস্তু হৃদয়
উদ্ধত যৌবন আজ লাঠির আঘাত সয়
সম্ভাবনা যা বিকিয়ে গেছে মৃত প্রাণের হাটে
তরুন হৃদয় নেশাতুর হয়ে আলস্যে দিন কাটে

তবুও আগুন আকাশ জুড়ে , নতুন ভোরের আশা
নতুন প্রাণ সাজবে আবার , নিয়ে প্রাণের ভাষা
এসো আলো , আরো আলো , প্রাণের আলো কই
হেমন্তের সোনারোদে আবার সোনা হই ।

Tuesday, October 1, 2019

মেয়েবেলার কথা

মেয়েবেলার কথা

আমারও একটা মেয়েবেলা ছিল-----

তোমাদের মত মাঠ দাপিয়ে খেলে বেড়াবার
আমারও একটা মেয়েবেলা ছিল
প্যান্ডেল গুছিয়ে সরস্বতী পুজো করবার
তোমাদের মতই ----
কাঁধে করে টব বয়ে আনবার

আমারও একটা মেয়েবেলা ছিল ------

আমারও মহালয়ার রাত ছিল ,
পিকনিক ছিল , বন্ধুদের সাথে হুল্লোড় ছিল ,
দলবেঁধে বাজার করা ছিল

আমারও একটা মেয়েবেলা ছিল ------

পুজোয় ঘুরতে যাওয়া ছিল 
নাগোরদোলায় চড়া ছিল
দলবেঁধে রাত জাগা ছিল

আজকে সেসব কোথায় গেল

বন্ধুরা সব হারিয়ে গেল
লুকোচুরি খেলায় কাউকে
খুঁজে পাইনা আর
এত বড় বন পাহাড় নদী
বিশাল আকাশ সমুদ্র
কোথায় যে সব হারিয়ে গেল 
পাইনা খুঁজে আর

আজকের যত ক্লেদ গ্লানি

কাল সবই মুছে ফেলবে জানি
তবু শুধু একটুখানি
ফিরে পেতে চাই
আমার সেই মেয়েবেলা
নিষ্কলুস ছেলেখেলা
আবার মনের খুশির ভেলা
উচ্ছ্বাসে ভাসাই

মেয়েবেলা তো সার্বজনীন , মেয়েবেলা খেলাঘর

নতুন নতুন পুতুল নিয়ে গড়তে পিটতে হয় ।

Monday, September 23, 2019

মনের গল্প

মনের গল্প

সুযোগ তো মেলেনা , সুযোগ বড় অল্প

তবুও এমন বৃষ্টির দিনে , মন খারাপের গল্প
আকাশ যখন মেঘলা হয় , মনেও মেঘের সাজ
অন্ধকারে হাতরে ফেরাই মন খারাপের কাজ


মন তো নয় , সাদা খাতায় কেবল আঁকিবুকি

নাম না জানা হাজার রকম রোগের আছে ঝুঁকি 
মন কেমন মন খারাপ মন মানে না আর
মনটা যদি হারিয়ে ফেলো তবেই পগার পার


মন চাইলেই বাদল নামে সৃষ্টি হেসে ওঠে

মন চাইলেই আকাশ জুড়ে রামধনু রঙ ফোটে
মন চাইলেই ঘুমের দেশে আকাশ ভরা রাত
মন কেমনের গল্পগুলি কখোন কুপোকাত ।

Friday, September 20, 2019

বালুকার'পরে কালের বেলায়

 বালুকার'পরে কালের বেলায়

    জানালার গ্রীলটা ধরে দাঁড়িয়ে বাইরে রোদ আর বৃষ্টির খেলা দেখছিলাম । রোদ আর বৃষ্টির মধ্যে যেন শক্তিপরীক্ষা চলছে । রোদের প্রচন্ড তেজ , অথচ মুষলধারে বৃষ্টি । পাশের বাড়ির কাকীমা জামাকাপড় নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন । একবার রোদে দেন আর একবার তোলেন । সেইসঙ্গে চলছিল বৃষ্টির প্রতি অবিরাম গালি বর্ষণ । আমার কিন্তু বেশ মজা লাগছিল । রোদের মনেও বোধহয় কিছুটা কৌতুকের ছাপ ছিল । তাই বৃষ্টিকে পরাজিত করার আনন্দে তার তেজ আরো বেড়ে যাচ্ছিল । আর অসহায় বৃষ্টি করুন শুষ্ক মুখে আবার নতুন করে বর্ষণ শুরু করলেও পৃথিবীর বুকের ওপর রোদের মত তার অধিকার যেন আর নেই । অনেক প্রত্যাশা নিয়েও বৃষ্টি কিছুতেই পৃথিবীর বুকে মুখ লুকিয়ে প্রাণভরে হাসতে পারছে না । প্রত্যেকবারই দুষ্টু রোদ পৃথিবীর কোল দখল করে নিচ্ছে ।
                আমাদের এক আত্মীয়ের কথা মনে পড়ল । আমার দূর সম্পর্কের কাকা হন । পাশাপাশি বাস করার ফলে সম্পর্কটা পুরানো হলেও হৃদ্যতার ঘাটতি ছিল না । কাকার বড় মেয়ে আমার চাইতে বছর কয়েকের ছোটো । তার যখন নয় বছর বয়স তখন তার একটি ফুটফুটে ভাইয়ের আবির্ভাব ঘটে । মায়ের মুখে শুনেছি দেবতার কাছে অনেক মানত , পুজো আর্চনা করে নাকি তারা এই বংশধরকে পেয়েছেন ।
              আমার ঐ কাকাতো বোনটি বেশ মেধাবী । স্কুলে সে বরাবর প্রথম হত । সকলেই তাকে ভালোবাসত । সারাদিন সে নিজের মনেই মগ্ন । নিজের বইখাতা , পুতুলের বাক্স নিয়েই তার দিন কাটে । তবে ভাইকে সে ভালোবাসত না তা নয় । খেলাঘরের একটি জ্যান্ত পুতুল মনে হত তার এই একরতি ভাইটিকে । যেন একটা কথা-বলা , হাত-পা নাড়া পুতুল । অনেকদিন ধরে বায়না করেও যা সে পায় নি ।
                 তবে সাধের এই ভাইকে সে কাছে পেত খুবই কম । কেননা তার মায়ের মনে হত ভাইকে দেখাশোনা করার মত বয়স তার হয়নি । মা কেমন করে জানবেন খেলাঘরের প্রতিটি পুতুলের সে বড়দিদি । তাদের নিয়ে আদরে বকুনিতে তার কত সময় কেটে যায় ।
                কথা-বলা , হাত -পা নাড়া পুতুলের অভাব পূর্ণ হত তার ভাই ঘুমোবার পর । তখন সে আপন ইচ্ছানুসারে কখনো ভাইকে পাউডার মাখিয়ে সাহেব বানাবার চেষ্টা করত , কখনো কপালে চন্দনের ফোটা দিয়ে বর সাজাতো । আবার কখনো নিজের হাতের চুরিগুলি ভায়ের হাতে পরিয়ে , চুপি চুপি পুতুলের বাক্স থেকে একটা টিপ নিয়ে পরিয়ে দিয়ে ভাবত --- আহা , ভাইকে যদি বৌ সাজানো যায় তো বেশ হয় ।কোনোদিন নিজের এই ভাবনার মাঝে শিশুর অচেতন মুখের হাসির রেখা ফুটে উঠত । আর ভাইয়ের সাথে নিজেকে মিলিয়ে সেও হাসতে থাকত । তার হাসির শব্দে এইসময় হয়ত ঘরে ঢুকতেন তার মা । আর ছেলের কাঁচা ঘুম ভাঙ্গাবার প্রয়াসে মেয়েকে বকাঝকা করে সারা হতেন । মেয়ের কল্পরাজ্যের ঘরকন্নায় এটুকু পুঁচকে ছেলেটার অবদান কতখানি তা তো তাঁর জানবার কথা নয় ।
                 গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে মাঠের ঐপাড়ে ছোটো ছোটো কয়েকটা ছেলের ক্রিকেট খেলা দেখে আমার ছোটোবেলার একটা দিনের কথা মনে পড়ল । অনেক বছর আগে , আমি তখন বেশ ছোটো । এমনি এক বর্ষার দিনেই বাবার সাথে বেড়াতে গিয়েছিলাম তাঁর কাকার বাড়ি । আমার বাবার কাকা অর্থাৎ আমার দাদুর বাড়িটা তাঁতিপাড়া আর চাষিপাড়ার সন্ধিস্থলে । এখানে তাঁতিবাড়ির ছেলেমেয়েরা যেমন চাষীবাড়ির তকতকে ঝকঝকে করে লেপা শক্ত বুক টান করা উঠোনে খেলা করে , তেমনি চাষিবাড়ির ছেলেমেয়েরাও তাঁতিবাড়ির তখনকার মত বাহুল্য হিসেবে পড়ে থাকা চরকা , টেকো , সুতো সহযোগে খেলা করে ।
     সেদিন আমি এদের সঙ্গে খেলা করতে গিয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে এদের মধ্যে যেন দুটো আলাদা দল দেখতে পাচ্ছিলাম । একপাড়ার ছেলেমেয়েরা আর এক পাড়ায় এলে আগন্তুক ছেলেমেয়েদের অধিকার কিছুটা খর্ব হয় দেখেছিলাম । এর কারণ পাড়াগত ব্যবধান না জীবিকাগত  ব্যবধান তা বোঝার সাধ্য তখন আমার ছিল না ।
                

         এমনি একদিন খেলতে খেলতে প্রচন্ড রোদের পাশাপাশি ঝমঝম বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে আমি দৌড়ে উঠে গিয়েছিলাম বারান্দায় । সেখান থেকে দেখছিলাম ছেলেমেয়েগুলো আনন্দে হাততালি দিয়ে নাচছে আর ছড়া কাটছে ---- রোদ উঠেছে বৃষ্টি পড়ে / শেয়াল পন্ডিত বিয়ে করে ।

            সত্যিই এমন দিনে শেয়াল পন্ডিত বিয়ে করে কিনা তা আমার দেখা হয়নি কখনো । শুধু এই রোদভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা ছবি আমার চোখে ভেসে উঠেছিল । মাথায় টোপর পড়া শেয়াল পন্ডিত হাতে ধুতির কোঁচা ধরে লেজ দুলিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছে । কিন্তু কার সঙ্গে যে বিয়ে হচ্ছে সেটা জিজ্ঞাসা করার আগেই সরমা নামে একটি মেয়ে আমার হাত ধরে টেনে ওদের মাঝখানে নিয়ে গেল ----- ' এমা তুমি ওখানে কেন । এ বৃষ্টি বুঝি গায়ে লাগে ? '
           আমি কোনো উত্তর দেবার আগেই পাশের একটি ছেলে বলে উঠল ---- ' তুমি বুঝি বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসো না ? '

     

            আমি কিছু একটা বলতে যাব তখনি শুনতে পেলাম ধেনোর বাবা আর চরকির বাবার আলাপ । ধেনোর বাবা আনন্দে গদগদ কন্ঠে চরকির বাবাকে বলছে , ---- ' এবারে ধান ভালো হবে দাদা । বৃষ্টিটা ঠিক সময়েই হচ্ছে । ' আর চরকির বাবার নিষ্প্রদীপ জবাব ---- ' তা ভাই তোমাদের তো এই বৃষ্টিটা ভালো । কিন্তু আমাদের সুতো কাপড় কিছুই যে শুকোয় না । হ্যারিকেনের তাপে , উনুনের আঁচে সেঁকে কি আর রোদে শুকোনোর মত শক্ত কাপড় পাওয়া যায় । '
             রোদ আর বৃষ্টির প্রেক্ষাপটে পর পর তিনটি দৃশ্য আমার চোখে ভেসে উঠল । একদিকে ধেনোর বাবার আনন্দে আপ্লুত মুখ , তার বিপরীতে চরকির বাবার উদাস বিরক্ত মুখ । আর খেলুড়ে ছেলেমেয়ের দল ।
             রোদের তেজ এখন কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে । ওর শক্তি যেন ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে । নাকি মায়ের স্নেহ কচি বুকটাকে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিয়েছে এরই মধ্যে । তাই পরিপূর্ণ হৃদয়ে এখন সে অন্য কোনো খেলার স্বাদ নিতে চাইছে ।
            দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো । বৃষ্টিটাও বেশ জাকিয়ে উঠেছে । এতক্ষণে খেয়াল হলো জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট এসে আমার টেবিলের ওপর সযত্নে ভাঁজ করে রাখা শাড়িটাকে ভিজিয়ে দিয়েছে । আমি তাড়াতাড়ি জানালাটা বন্ধ করে শাড়িটা খাটের ওপর ছড়িয়ে দিলাম ।
           নীচে বাবার গলার স্বর শুনতে পেলাম ----- ' এমন বর্ষার দিনে আর বাইরে বেরোব না , বেশ করে পেঁয়াজের ফুলুরি করো দেখি । গরম গরম । মুড়ি দিয়ে খাই । '

           ------ ' ওমা , মুড়ির কথা তো তোমাকে সকালেই বললাম । সকালে বাজার করে আনলে   মুড়ি এনেছো কি ?
            উত্তরে বাবা কি বললেন তা আর কানে এলো না ।

      আমার ঘরের দেওয়ালের ছবিটার দিকে চোখ গেলো । গত বছর রথের মেলা থেকে কিনেছিলাম । ছবিটাতে শিল্পীর নিপুন হাতে আঁকা কোনো এক অদৃশ্য শক্তির হাতে ঝুলন্ত একটা দাঁড়িপাল্লার একদিকে রয়েছে একজন নারী আর অপর দিকে রয়েছে একজন পুরুষ । হয়ত শিল্পীর মনে কখনো প্রশ্ন জেগেছিলো এই সংসারে নারী বড় না পুরুষ বড় ।
         আজ এই বর্ষার দিনে নির্জন ঘরে বসে আমার মনে হচ্ছে সংসারে নারী-পুরুষের স্থান অনেকটা চাঁদ-সূর্যের মত । রাতের নিবিড় অন্ধকার ছাড়া যেমন চাঁদের গুরুত্ব বোঝা যায় না ,তেমনি কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে ক্লান্ত শ্রান্ত টলটলে জলেভরা পৃথিবীর গাম্ভীর্য যখন অসহ্য মনে হয় তখনি সূর্যোদয়ের প্রত্যাশা সমস্ত প্রাণীকুলকে ব্যাকুল করে তোলে ।তবে মাঝে মাঝে এদের লুকোচুরি নতুন স্বাদের জন্ম দেয় ----- এটাই সত্য ।
             

Tuesday, September 17, 2019

একবার পাশে এসে দাঁড়াও

একবার পাশে এসে দাঁড়াও

পা গুনে পাশে এসে দাঁড়াও
আবার তোমায় দেখি
ডোবা জলে ভাসে কচুরিপানা
আ-বাঁধা পুকুরপাড়ে মাখন-কাদা
ছিপ হাতে নতুন প্রতীক্ষা তোমার

মনে আছে , ছিপে গেঁথে খুশী ছিলে কত
ভড়ং তোমার , চেয়েছিলে একেশ্বর হতে
জানতে না ---- একে একে মিলে গেলে শূন্য হয়

তোমার কাজ বুঝি 'এক' থেকে
অসীম শূন্যের অধিকারী আমি
মহাশূন্যের খাতায় 'এক'  আঁচড় শুধু
লিখে দিলাম তোমার জন্য ----
              ' শূন্য'  কবিতাময়

একবার পাশে এসে দাঁড়াও

Saturday, September 7, 2019

তৃষ্ণা

তৃষ্ণা

অবিশ্বাসী অবুঝ হৃদয়
গুমরে মরে অন্ধকার গৃহকোনে
হারিয়ে গেছে আলোর নিশানা ।

পথভোলা এক পথিক তুমি
শরৎ মেঘের নরম ছুঁয়ে
এসেছিলে এক মুহূর্তের জন্য
আমার আকাশে তখন
শ্রাবণের জলভরা মেঘ
বৃষ্টি নামালে তুমি ।
সজীবতায় পূর্ণ চারধার
নরম কৃষিক্ষেত্র উন্মুখ পিপাসাভারে ।

ফিরিয়ে দিলে তুমি
গোপনে গোপনে , সে কথা 
বাতাস শোনায় কানে কানে
আজ তার বইছে দীর্ঘশ্বাস
বিষাক্ত বাতাস ,
আকুল হয়ে ফেরে অনন্তের পথে ।

Wednesday, September 4, 2019

মাষ্টারমশাই

মাষ্টারমশাই


অন্তেবাসী নই আমি

পিতৃগৃহে সাদরে লালিত
কিছুর অভাবও নেই কোনো
না চাইতে হাতের মুঠোয়
পৃথিবী এসে হাজির
শিখেছি পাওয়ার অদ্ভুত ছলাকলা

তবু সেদিন মাত্র তিন বছর বয়স

সবেমাত্র মুখের বুলি পরিস্কার হচ্ছে
বাবার হাত ধরে এলাম প্রথম
বিশাল ইমারৎ নয় ----
নিচু ঘর , শনের চাল ,
মেঝেও হয়নি পাকা
তবু কি যে আকর্ষণ !
চুম্বকটানে পৌছে যাই রোজ
অপেক্ষা করি আপনার ক্লাশের
রোজ ------ রোজ ------
আপনার প্রশান্ত সৌম্য মুখ
শান্ত করে দিত সকল দুষ্টুমি
নিয়ে যেত বিষয়ের 
গভীর থেকে গভীরতায় ----
স্বপ্ন ভাসত চোখে ----
সেই ছোট্ট মনে প্রশ্ন জাগত কত
উদার হাসিমাখা মুখে
পৌছে দিতেন ছাত্রদের শিক্ষাচূড়ায়
মাথা নত করি বাণীময় সহাস্য বচনে

আজ এত বছর পরও

সেই মুখ  ---- প্রশান্তি আনে মনে
ফ্লাসব্যাকে ছুটে চলি ছোট্টবেলায়
আবার গল্প শুনি কল্পলোকের
ভুলে যাই বাস্তবের রূক্ষ কাঠিন্য

পিতামাতার পর জানি আপনার স্থান

তাই -----
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে 
প্রণাম জানাই ----- মাষ্টারমশাই ।

Sunday, September 1, 2019

বাংলা কবিতার সম্ভার: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা - সবুজের অভিযান

বাংলা কবিতার সম্ভার: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা - সবুজের অভিযান: ওরে নবীন , ওরে আমার কাঁচা , ওরে সবুজ , ওরে অবুঝ , আধ-মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা । রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে , আজকে যে যা বলে বলুক তোরে , স...

Friday, August 30, 2019

সোহাগ

সোহাগ


আকাশ যখন ঘুমিয়ে পড়ে
শিউলি ফুলের সোহাগ ঝরে
তোমার প্রেম পিছলে পড়ে
উদাস চিলের ডানায় ।
উটপাখির ঐ গ্রীবার মত
ভাবনা আমার শত শত
রক্তে ভেজা সলাজক্ষত ,
বিদ্ধ করে আমায় ।

ছিন্ন আমার হীরের দুলে
অভিমানের চিরাগ জ্বলে
লুটিয়েছিল পদতলে ,
সেদিন শ্রাবণমাস ,
বাইরে যখন শ্রাবণধারা
উন্মত্ত বাঁধনহারা
বীজের ভিতর সুপ্তচারা
জন্মের হাসফাঁস ।

Thursday, August 29, 2019

চিরায়ত

চিরায়ত

যত্নে রয়েছো হৃদয়ে লালিত

ওগো নিদ্-হরা , ওগো চিরায়ত
যেন জমে থাকা হাজার-শত
বছরের ইতিহাস ।

দিনে দিনে কত বাড়ে অনুক্ষণ

দিন কেটে যায় ব্যথিত বিজন
আশা-নিরাশায় দোলাচল মন
সময়ের হাসফাঁস ।

তুমি আছো তাই আমার ভুবন

আনন্দে মাতে নিত্য নূতন
চোখে ঘনঘোর তোমার স্বপন
নিদারুণ প্রেম-রোগ ।

শুধু দু'জনের মিলিত বাসনা

পরশপাথরে করেছে সোনা
অযুত-নিযুত কালের কামনা
অপেক্ষা রাজ-যোগ ।

#       #        #         #      #
মনের গোপনে শায়িত আশা

একটি ছোট্ট সুখের বাসা
দু-এক পশলা বৃষ্টি ভেজা
আমার গৃহকোন ।

ছোট্ট দু'খানি হাতের'পরে

সারা পৃথিবীর সোহাগ ঝরে
ছোট্ট দু'খানি পাপড়ি মেলা
বড় আদরের ধন ।

ডালের 'পরে , পাতার 'পরে

রাতের শিশির ঘুমিয়ে পড়ে
তুমি আমার শিশির-ভেজা
মানিক জ্বলা রাত ।

তোমার চোখের কাজল কালো

দিনে - রাতে পথ ভোলালো
তোমার গোপন গানের সুরে
আমার আঁধার মাত ।

Sunday, August 11, 2019

অনুপস্থিতি

অনুপস্থিতি

এখনো বাতাসে তার উপস্থিতি টের পাই

প্রশ্বাসের সঙ্গে টেনে নিই শরীরের গন্ধ
নানাজনের কলরোলের মধ্যে পরিচিত সুর
এখনো চোখের সামনে তোমার মুখ দেখি
ঠান্ডা হাওয়ায় শিউড়ে ওঠে গা
শরীরের চামড়া ভেদ করে
রক্তের ভেতর উথাল-পাথাল অনুভূতি

হঠাৎ চোখের কোন সিক্ত হয়

কন্ঠে আটকে আসে কথা
বিশ্রাম চায় অবসন্ন পা দু'খানি
মাথার ভেতর শ্রাবণের মেঘ ঘনায় ।

Saturday, August 10, 2019

অনুভব

অনুভব

পুকুরের শান্ত জলে শ্রাবণের প্রথম ফোঁটা
আঁকাবাঁকা বৃত্তসম অনন্ত ঘটনার সমাবেশ
অস্পষ্টতার মধ্যেও স্পষ্ট একটি মুখ
জানি তা জলের আলপনা
তবুও প্রলয়-রাত্রি দাগ এঁকে চলে
আকাশের নীলাভ ম্লান হতে থাকে
অনন্ত এই জীবন-নদী বয়ে চলে সুদূরে
দু'কূল শ্যামল সবুজ --- অনন্ত সুখের রাজ্য
কখনও চড়া খাড়ি --- বিষাদ মন্থর বেলা
জানি এই নদী এক নির্লিপ্তির জীর্ণ প্রস্তর
আর অসীম আকাশ --- আমার অনন্ত ঘটনার সাক্ষ্যি ।

Saturday, July 20, 2019

একান্ত সংগোপনে

একান্ত সংগোপনে

অনুভবে , মনের কোনে
আমার একান্ত সংগোপনে
কোন অমাতে আছিস ওরে
ছোট্ট আলোর কণা ।

নিশিদিনের অনুভবে
ছোট্ট দুটি ওই মুঠিতে
এত কি তোর শক্তি ওরে
পারবি দিতে হানা ।

আমার গহন আঁধার রাতে
মিষ্টি মধুর কল্পনাতে
কত বিচিত্র অনুভবে
আছিস সাথে সাথে
কেমন করে বোঝাই সবে
লক্ষ্য মানিক কোথায় জ্বলে
দিনের অত আলোর মাঝে
তারায় ভরা রাতে ।

Wednesday, July 10, 2019

তোমায় মনে পড়ে

তোমায় মনে পড়ে

দক্ষিন আকাশ যখন

কালো , চাপ চাপ মেঘে ঢেকে যায়
তখন তোমার কথা মনে পড়ে ।

মেঘলা দিনের ঘনায়মান অন্ধকারে

পাখির দল যখন 
অসীম ব্যস্ততায় বাসায় ফেরে
তখন তোমার কথা মনে পড়ে ।

আরো অন্ধকার যখন

সমস্ত পৃথিবীটাকে ঢেকে ফেলে
যখন বড় বড় গাছগুলোকে
অশরীরীর মত মনে হয়
তখন তোমার কথা মনে পড়ে ।

একঝলক দমকা হাওয়া

যখন আসুরিক শক্তিবলে
কালো মেঘগুলিকে
টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিতে থাকে
তখন ---- 
তোমায় মনে পড়ে ।
ভীষণরকমভাবে মনে পড়ে ।

Wednesday, July 3, 2019

মনোরমা

মনোরমা

একদিন যদি 
সব কাজ ফেলে
ছুটে যাই কোনো সাগরের কূলে
এমনি বিকেল 
সূর্য অস্ত
ফেলে যাওয়া যত কর্ম ব্যস্ত
ছায়া-মেঘ হয়ে
আকাশে ভাসত 
ঢেউ-য়ের তালে তালে ।
অস্ত-রবির 
সোনার ছোয়ায়
ব্যথাগুলি সব জলে মিশে যায়
নীল আকাশে
আলাপনে
কখন যেন আপন মনে হারায় ।
সকল বাধা
বন্ধন ছাড়া
অসীম শূন্যে নিমেষহারা
কোথায় এমন
পাগল করা
সুর ওঠে নিরালায় ।
সাগর সে তো
অসীম , অবাঙ
তবু কত না আপন আমার
একসাথে কত
সুখ-হাসি শত
ঢেউয়ের তালে ওঠে যায় ।
আশাহীন যত
ভালোবাসা ছিল
মুহূর্তে সবই আকাশে মিলালো
সোনা-হাসিমাখা
সাগর জলে
নবপ্রাণ লাভ হলো তায় ।

Friday, June 28, 2019

নিরাশা

নিরাশা

চারিদিকে একি দেখি অমানিশির ঘোর

জন্মের অন্ধকারও হার মানে বুঝি
নিশ্ছিদ্র নিরাশায় ডুবে যাওয়া ভোর
মুছে গেছে সব পবিত্রতা

নিস্তব্ধ গভীর রাত ----

শুনি শুধু হৃদয়ের ব্যর্থ আস্ফালন
গুমরে মরে পৃথিবীটা ছোট্ট ঘরের কোনে
কানে আসে কোনো এক আদিম বিস্ফোরণ
এরাতে ভালোবাসা পাশ ফিরে শোয়
পড়ে থাকে আজন্মের অব্যক্ত যন্ত্রণা
মনের আগুন ক্রমে মাথায় ছড়ায়

চারিদিকে নরপিশাচেরা অট্টহাসি হাসে ।

Monday, June 24, 2019

মুক্তোর আশায়

মুক্তোর আশায়

সমুদ্রের জল কি চোখের জলের চেয়েও বেশি নোনা
অথবা
জীবনের এক- একটি ভুলে জন্ম হয় এক- একটি সমুদ্রের
নানা সুখ-দুঃখের ঢেউ আছড়ে পড়ে বারবার

এত জলের উৎস খুঁজি আমি
বিনিদ্র রজনী আমার কুয়াশামাখা

কেটে গেছে কত ঝিনুক- কুড়ানো-বেলা
পা কেটেছি পচা শামুকের খোলে
দগদগে ঘা হয়ে আছে তা স্মৃতিতে
কোথায় উপশম , নেই কোনো ওষুধের প্রলেপ

বলেছিলে মুক্ত খুঁজে দেবে
এখনো দুচোখে আশা নিয়ে
তাকিয়ে আছি সুদূর-সমুদ্রে ।

Friday, June 21, 2019

দুষ্টু মেয়েটির জন্য

দুষ্টু মেয়েটির জন্য

জল ছলছল

আকাশ কালো
শ্যামলা মেয়ের 
মনটি ভালো ,

ও মেয়ে তুই

আস্তে চল
দেখ না চেয়ে
পথ পিছল ,

সামলে যদি

না চলিস 
পিছল পথে 
পা ফেলিস ,

দেখবি তবে

ভাঙবে পা
তাই তো বলি 
আস্তে যা ,

জল থৈ থৈ

আকাশ যদি 
নাচতে ইচ্ছা 
হচ্ছে যদি ,

ইচ্ছে মত

নাচিস পড়ে
সোনা রোদের 
হাসি ঝরে  ,

এখন আমার 

কথা শোন
চুপটি করে 
আটকে মন ,

ঐ দেখ তো

আকাশ চিরে 
সাপের ছানা
খেলা করে ,

ও সাপুরে

বিন বাজাও
আরো খানিক
সাপ নাচাও ,

বিষ যখন নেই

এ সাপের
তখন আবার
ভয় কিসের ,

তবে যখন 

টুকটুকে বউ
নাইতে যাবে ,
ও নদী-ঢেউ -----

একটু তুমি

সামলে নিয়ো
বৃষ্টি তুমি
ধরা দিয়ো ।

পড়ে আবার 

অঝোর ধারে ,
খেলা কোরো
পথের প'ড়ে ,

আবার ছোট্ট 

মেয়ে এসে
খিলখিলিয়ে
উঠবে হেসে ,

আবার শ্রাবণ

আকাশ জুড়ে
সাপের নাচন
উঠবে বেড়ে ,

দুষ্টু মেয়ে

নাচিস তুই ,
যখন হবে 
নরম ভুঁই ।

Wednesday, June 19, 2019

কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি

কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি

তোমাকে চেয়েছিলাম উথালপাথাল ঝড়ে
মাঝ সমুদ্রে নৌকা যখন হারিয়েছে তার দিক

ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায়
ধরতে চেয়েছি আঁকড়ে
বাড়াওনি তো আশ্বাসের হাত
পাড়ে দাঁড়িয়ে হাত নেড়েছো শুধু

তারপর বহুবছর পড়ে
স্মৃতির কুয়াশা ক্রমে হয়েছে ফিকে
নতুন করে বাঁচার আশায়
ফুলে- ফলে- নৈবেদ্যে সাজিয়েছি ষোড়শোপচার

আবার পদার্পণ আঙিনায়
বিস্ময়-বিমুগ্ধ আমি
সেই একই হাসি
প্রায় সলিলসমাধি আমার স্বপ্ন মনে হয়

কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি
উচিৎ কি আজ --- তিতিক্ষা না তিরস্কার ?

Saturday, June 15, 2019

জিঘাংষা

জিঘাংষা

ঔ শুনি রাত্রির কান্না
কি গভীর মর্মন্তুদ ভোরের প্রত্যাশে
পথহারা নাড়ী যেন এক
স্বজন প্রত্যাশে ফোঁপায় শুধু

চারপাশে তারকার সমাবেশ
কিন্তু হায়
নিশিপদ্মের গন্ধ কোথায়
রাত্রির বাতাসে
এ যে শুধু বারুদ আর রক্তের ঘ্রাণ
পেটের ভিতর পাঁক দেয় অপাচ্য সব
বিবমিষা ছড়ায় চরাচরে
কোথায় নিশাচরের সদল পদভার
উল্লাসে জাগে আরো রাতচরা
ব্যস্ত পাখার ঝাপটায়

কার প্রাণ খুঁড়ে খায়
অজান্তে বাতাস ভয়ে স্তব্ধ হয়ে রয় ।

Wednesday, June 12, 2019

মুক্তি

মুক্তি

চাঁদবুড়ি যখন ঘুমাবে নিঝুম
চড়কা কাটবে তুমি
কথা দিয়েছিলে চাঁদের পাহাড়
হাত নিয়েছিলে চুমি
আরো কত কি নিয়ে গেছো মেঘ
চাঁদের পানা রঙ
শরৎ হেমন্ত শীত বসন্তে
কচি , আদুরে ঢং
সূক্তি যেমন মুক্ত লুকায়
আপন অন্তঃকোনে
নিয়ে গেছো তুমি মুক্তি , সসীম ,
বেঁধেছো সংগোপনে ।

Monday, June 10, 2019

অমৃত

অমৃত


বুকের ভেতর জায়গা বড়ো কম
স্বপ্ন আছে হাজার লক্ষ রকম
পারো যদি সেল্ফ করে নাও
নোয়ানো শিকে আরো ঝুলিয়ে নাও

তোমার বুকে পাথর-কাটা খাঁজ
স্নিগ্ধতা নয় , রুক্ষ মরুর ঝাঁজ
ক্যাকটাসের পাতার মত গোপন
রেখেছিলে , বুঝেছিলাম , ভোরের মত আপন
তোমার কাছে , তোমার কুঁজো পূর্ণ ছিল যুগান্তরের বিষ
আষ্টেপৃষ্ঠে রুদ্ধ করে ঢেলেছ অহর্নিশ

বিষে বিষে অমৃত হয় , অমর ভালোবাসা
মরুভূমির তৃষ্ণা বুকে , আকুল পিপাসা .......

Thursday, June 6, 2019

মানসী

মানসী

চুপিসারে পাতা ওড়ে
তোমার অন্দরমহল
শোনা যায় আর্তক্রন্দন , তুমি নিক্কন
বেনোজলে মুখ দেখে চাঁদ
চরাচরে রাত জাগে , নিথর ,
বীজের ভেতর সুপ্ত অন্ধকার ।
ঘুমচোখে কুয়াশা ঘনায় 
জানালায় উঁকি মারে ত্রস্ত বাতাস
একবার , শুধু একবার
ছুঁয়ে যেতে চায়

Sunday, June 2, 2019

প্রতীতি -2015

প্রতীতি -2015

তোমাকে দেখেছি আমি

ঘন শ্রাবনবর্ষণে ধূপ-ছায়ারূপে
স্নিগ্ধতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছো আমায়

তোমাকে দেখেছি শারদমেঘে

একরাশ শুভ্র ফেনার মাঝে
কি মায়াবি কমনীয়তায় উদাস

তোমাকে দেখেছি দারুণ পৌষে

নিবিড় শীতলতায় হীম-মায়ারূপে

অবশেষে ধরা দিয়েছো বসন্তে

কী গভীর আশ্লেষে বিদ্ধ করেছো আমায়
প্রেমের পূজারীরূপে
ফুলে-ফলে-নৈবেদ্যে তোমর ষোড়শোপচার
পূর্ণ করেছো তুমি নাড়ীর বেদনায়

অলঙ্কৃত আমি আজ পূর্ণ কলসে ।