শেষ দেখা --- অন্তিম পর্ব
স্টেশনচত্বর একদম খাঁ খাঁ করছে । টোটোর কোনো চিহ্ণ নেই । মনে পড়ল গতকালের একটা ভাসা ভাসা কথা --- বিকেলের দিকে টোটো উইনিয়নে মিটিং আছে বোধহয় । উঃ এবার কি করবে । চোখ ফেটে জল আসছে । কি আর করা যাবে । আসার সময় তাড়াহুড়োয় মোবাইলটা টেবিলেই ফেলে এসেছে বোধহয় ।
হাটাপথ ধরল ঐশী । মাঠের মধ্যে দিয়ে গেলে একটু সর্টকাট হয় । জমির ফসল উঠে গেছে । মাঠও এখন ফাঁকা । অন্তত দশ মিনিট সময় কমবে ।
মনের মধ্যেটায় কু ডাকছে বারবার । হে ঈশ্বর ভালো করে দিও । বাড়ি ফিরে মানুষটাকে যেন ভালো দেখতে পারি ।
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে পালদের পুকুরের কাছে চলে এসেছে ঐশী । আর বেশিদূর নয় তাদের বাড়ি । পুকুরটা বায়ে রেখে একটু এগোলেই বড়ো রাস্তা । তারপর পাঁচ মিনিট হাটলেই ওদের সাবেকি বাড়ি । যদিও এত বড় বাড়িতে এখন বাসিন্দা বলতে ওরা চার শরিকের চার ছেলের পরিবার । আর তাদের চার ঘর ভাড়াটে ।
হঠাৎ পুকুরপাড়ের দিকে তাকিয়ে বুকটা ধরাস করে উঠল ঐশীর । একটা আবছায়া দেখা যাচ্ছে । এইসময় এখানে কে দাঁড়িয়ে আছে । পা যেন ভারী হয়ে আসছে ঐশীর । পালদের পুকুর সম্পর্কে বদনাম আছে অনেক । প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ বছরের পুরানো পুকুর । দেবাংশুর চিন্তায় আগে পুকুরের কথা মনে পড়েনি । পুকুরপাড়ের কলাবাগানের মধ্যে কি যেন একটা ছুটে পালালো । ঐশীর গা শিরশির করে উঠল । একপা একপা করে এগোতে লাগল ঐশী । আর কিছু মাথায় আসছে না । আবছায়াটা এবার উঠে দাঁড়ালো । ঐশী আর এগোতে পারল না । মুহূর্তে চোখের সামনেটা অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে শুনতে পেল কেউ যেন তার নাম ধরে ডাকছে ।
এ কি দেবাংশু তুমি এখানে ।
আজ তো টোটো ইউনিয়নের মিটিং আছে । টোটো পাবে না । ফোনেও তোমাকে পাচ্ছি না । তাই এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি ।
ওঃ কি ভয় পেয়েছিলাম । তোমার কথা ভাবতে ভাবতে আর এই পুকুরের কথা মনেই ছিল না । কিন্তু তুমি যে বললে তোমার শরীর খুব খারাপ । তাহলে এতটা পথ এলে কি করে ।
অন্ধকারে দেবাংশুর মুখটা দেখা গেল না । এইরকম পরিবেশে সুস্থ দেবাংশুকে পেয়ে আজ যেন কথায় পেয়েছে ঐশীকে ।
হঠাৎ মনে হল পাড়াটা যেন আজ একটু বেশিই নিস্তব্ধ । কুকুরগুলো চুপচাপ । মনে একটা খটকা লাগলেও দেবাংশুর সুস্থ হয়ে ওঠার আনন্দে এসব আর আমল পেল না ঐশীর কাছে ।
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই বাড়ির সামনে বহু মানুষের জটলা চোখে পড়ল ঐশীর । কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই 'তুমি এগোও , আমি একটু আসছি ' বলে যেন অন্ধকারে মিশে গেল দেবাংশু ।
ঐশী পায়ে পায়ে বাড়ির গেটের কাছে উপস্থিত হয় । তাকে দেখতে পেয়ে সবাই তার পথ ছেড়ে দাঁড়ায় । সবার চোখে মুখে কেমন একটা সন্ত্রস্তভাব । কিছু বুঝতে না পেরে ঐশী ছুটে যায় ভেতরদিকে । উঠোনের মাঝখানে শোয়ানো রয়েছে দেবাংশুর নিষ্প্রাণ নিথর দেহ । এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না ঐশী । তার অচৈতন্য শরীরটা লুটিয়ে পড়ল মৃত দেবাংশুর পায়ের কাছে ।
No comments:
Post a Comment