অনুগল্প --- খবর
ওমা বৌদি জানো না কাল রাতেই শেষ গো ।
আমাদের কাজের মেয়ে চুমকির বলার ধরনে শুয়ে থেকেও কানটা সজাগ হয়ে উঠল । সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়ার আগে স্থানীয় যা কিছু সংবাদ চুমকির দৌলতে তার প্রায় সবই আমার কানে এসে পৌঁছোয় । এমনকি পাশাপাশি বাড়িগুলির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তথ্য , যেগুলি কোনোভাবেই আমাদের জানবার কথা নয় সেগুলিও অনায়াসেই আমরা জানতে পারি চুমকির খবর শোনাবার আতিশয্যে । মাঝে মাঝে ভাবি আমার আর আমার স্ত্রীর নির্ভেজাল সংসারে এমন কোনো ঘটনা ভাগ্যিস ঘটে না যেটা এভাবে অন্য কোনো বাড়িতে মুখরোচক হয়ে পরিবেশিত হয় । যাই হোক চুমকির আজকের খবরটা শোনার জন্য উৎকর্ণ হয়ে রইলাম ।
কি আবার হোলো রে । কি শুনব । আমার স্ত্রীর নিরুত্তাপ অভিব্যক্তি । এমন শান্ত শিষ্ট নিরুত্তাপ স্রোতা পেলে আদৌ কারো এমন টাটকা সংবাদ শোনাতে ইচ্ছে হয় কিনা মাঝে মাঝে আমার তাতে সন্দেহ জাগে । অবশ্য এক দিক থেকে আমার স্ত্রী যে এক নম্বর সে কথা মানতেই হবে । কারো কোনো কথায় কখনো বিরক্ত হতে তাকে আমি আজ পর্যন্ত কখনো দেখিনি । সে সবার সব কথাই খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে । আজো তাই ।
ওমা , বিলে গো , বিলে গুন্ডা .... । কাল রাতে ছ'টা গুলি করেছে গো । কি আওয়াজ সাঁই সাঁই করে .... । আমাদের ঘরের কাছাকাছি কিনা .... । ভয়ে আমার সেকি অবস্থা .....। তারপর আমাদের ঘরের পেছন দিয়েই তো সব ছুটে গেল গো । আমার তখন কি কাঁপুনি .... । ভয়ে কাউকে ডাকতেও পারছিনা ..... ।সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারিনি গো ।
প্রত্যেকটা পাড়ায় যেমন একটি করে উঠতি দাদা থাকে বিলেও তাই । ভালো নাম প্রবাল শিকদার । ক্লাশ নাইট - টেনে আমার কাছে পড়ত । বাবা কাঁকিনাড়ার ঔদিকে কিসের একটা কারখানায় কাজ করে । বাড়িতে অনেকগুলো ভাইবোন । ও পরিবারের বড় ছেলে । হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দেওয়ার পরপর ওর বাবা মারা যায় । তারপর এঘাট ওঘাট করে অবশেষে এই পথে স্থিতু হয়েছিল । কিছুদিন ধরেই ওর জুলুমবাজির নানা কান্ডকারখানা কানে আসছিল । তারই কোনোটার প্রতিফলন নাকি আজকের ঘটনা ।
আরে ঐ যে খালপাড়ে দশ বিঘা জমিটা নিয়ে যে বুড়িটা একা একা থাকে না .... । ঔ বাড়িটার ওপর ওর অনেকদিন ধরে লোভ রয়েছে গো ....। গতকাল বুড়ি ওর বাগানের দুটো মোটা মোটা গাছ কুড়ি হাজার টাকায় বিক্রি করেছে গো । বুড়ির তো কেউ নেই । খাবে কি । তাই গাছ দুটো বেচেছে । তা আর খাওয়া ...... । গাছ কেটে নিয়ে যাওয়াও সারা আর বিলের ওখানে পৌছনোও সারা । ব্যাস গাছ বেচা টাকা থেকে দশ হাজার দাও । বুড়ি বলে , ও বাবা আমি একা মানুষ । কেউ দেখারও নেই খাওয়ানোরও নেই । এই বয়সে কি কাজ করতে পারি । এই টাকা দিয়ে আমি শেষ দিন কটা খেয়ে পরে চলব বলে গাছদুটো বিক্রি করলাম । আর তুই সে টাকাও আমায় দিবিনা । তোর এত লোভ । ভগবান তোর বিচার করবে । ভগবানই তো আমাকে পাঠিয়েছে বলে সে টাকা নিয়ে নিল গো । এতটুকু মায়া দয়া নেই । কিন্তু কি হল । পারলি না তো একটা রাতও কাটাতে । ভগবান দূত পাঠিয়ে ঠিক শাস্তি দিল তো । এজ্যেই বলে লোভে পাপ , পাপে মৃত্যু ।
কি একটা কাজে কদিন আগে ঐ পথ দিয়ে একবার যাবার দরকার হয়েছিল । তখন খালপাড়ের ঐ বাড়িট চোখে পড়িছিল । কেউ যে ওই বাড়িতে থাকে তা অবশ্য মনে হয়নি । নানা রকম দুষ্কর্ম করার উপযুক্ত জায়গা বটে । কিন্তু অসহায় মানুষের পাশে না থেকে তাদের শেষ সহায়টুকু আত্মসাৎ করার এ কি খেলায় মেতে উঠেছে যুব সমাজ ! যাদের হাত ধরে সমাজ আরো উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা তারা কোন পাঁকে ডুবে যাচ্ছে ! এই দুঃসময়ে এইরকম দিশাহীন ছেলেগুলোকে সঠিক দিশা কে দেখাবে । অন্ধকারের উৎস হতে আলোর দিকে হাত ধরে নিয়ে যাবে কে । নাকি সত্যিই ভগবানের দূত এসে এভাবে শাস্তি দেবে তাদের !
No comments:
Post a Comment