Friday, October 11, 2019

আলো

আলো

আমার চেতনায় জ্বলে রংমশাল , হলুদ পাতারা যায় উড়ে 
নীল , গাঢ় নীল আকাশ আমার চেতনা জুড়ে
এখানে শহর পোড়ে  , পোড়ে নিকোটিন
এক আকাশ শরৎ তবু আমার অধীন

শহরে ছড়িয়েছে রোগ , উদ্বাস্তু হৃদয়
উদ্ধত যৌবন আজ লাঠির আঘাত সয়
সম্ভাবনা যা বিকিয়ে গেছে মৃত প্রাণের হাটে
তরুন হৃদয় নেশাতুর হয়ে আলস্যে দিন কাটে

তবুও আগুন আকাশ জুড়ে , নতুন ভোরের আশা
নতুন প্রাণ সাজবে আবার , নিয়ে প্রাণের ভাষা
এসো আলো , আরো আলো , প্রাণের আলো কই
হেমন্তের সোনারোদে আবার সোনা হই ।

Tuesday, October 1, 2019

মেয়েবেলার কথা

মেয়েবেলার কথা

আমারও একটা মেয়েবেলা ছিল-----

তোমাদের মত মাঠ দাপিয়ে খেলে বেড়াবার
আমারও একটা মেয়েবেলা ছিল
প্যান্ডেল গুছিয়ে সরস্বতী পুজো করবার
তোমাদের মতই ----
কাঁধে করে টব বয়ে আনবার

আমারও একটা মেয়েবেলা ছিল ------

আমারও মহালয়ার রাত ছিল ,
পিকনিক ছিল , বন্ধুদের সাথে হুল্লোড় ছিল ,
দলবেঁধে বাজার করা ছিল

আমারও একটা মেয়েবেলা ছিল ------

পুজোয় ঘুরতে যাওয়া ছিল 
নাগোরদোলায় চড়া ছিল
দলবেঁধে রাত জাগা ছিল

আজকে সেসব কোথায় গেল

বন্ধুরা সব হারিয়ে গেল
লুকোচুরি খেলায় কাউকে
খুঁজে পাইনা আর
এত বড় বন পাহাড় নদী
বিশাল আকাশ সমুদ্র
কোথায় যে সব হারিয়ে গেল 
পাইনা খুঁজে আর

আজকের যত ক্লেদ গ্লানি

কাল সবই মুছে ফেলবে জানি
তবু শুধু একটুখানি
ফিরে পেতে চাই
আমার সেই মেয়েবেলা
নিষ্কলুস ছেলেখেলা
আবার মনের খুশির ভেলা
উচ্ছ্বাসে ভাসাই

মেয়েবেলা তো সার্বজনীন , মেয়েবেলা খেলাঘর

নতুন নতুন পুতুল নিয়ে গড়তে পিটতে হয় ।

Monday, September 23, 2019

মনের গল্প

মনের গল্প

সুযোগ তো মেলেনা , সুযোগ বড় অল্প

তবুও এমন বৃষ্টির দিনে , মন খারাপের গল্প
আকাশ যখন মেঘলা হয় , মনেও মেঘের সাজ
অন্ধকারে হাতরে ফেরাই মন খারাপের কাজ


মন তো নয় , সাদা খাতায় কেবল আঁকিবুকি

নাম না জানা হাজার রকম রোগের আছে ঝুঁকি 
মন কেমন মন খারাপ মন মানে না আর
মনটা যদি হারিয়ে ফেলো তবেই পগার পার


মন চাইলেই বাদল নামে সৃষ্টি হেসে ওঠে

মন চাইলেই আকাশ জুড়ে রামধনু রঙ ফোটে
মন চাইলেই ঘুমের দেশে আকাশ ভরা রাত
মন কেমনের গল্পগুলি কখোন কুপোকাত ।

Friday, September 20, 2019

বালুকার'পরে কালের বেলায়

 বালুকার'পরে কালের বেলায়

    জানালার গ্রীলটা ধরে দাঁড়িয়ে বাইরে রোদ আর বৃষ্টির খেলা দেখছিলাম । রোদ আর বৃষ্টির মধ্যে যেন শক্তিপরীক্ষা চলছে । রোদের প্রচন্ড তেজ , অথচ মুষলধারে বৃষ্টি । পাশের বাড়ির কাকীমা জামাকাপড় নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন । একবার রোদে দেন আর একবার তোলেন । সেইসঙ্গে চলছিল বৃষ্টির প্রতি অবিরাম গালি বর্ষণ । আমার কিন্তু বেশ মজা লাগছিল । রোদের মনেও বোধহয় কিছুটা কৌতুকের ছাপ ছিল । তাই বৃষ্টিকে পরাজিত করার আনন্দে তার তেজ আরো বেড়ে যাচ্ছিল । আর অসহায় বৃষ্টি করুন শুষ্ক মুখে আবার নতুন করে বর্ষণ শুরু করলেও পৃথিবীর বুকের ওপর রোদের মত তার অধিকার যেন আর নেই । অনেক প্রত্যাশা নিয়েও বৃষ্টি কিছুতেই পৃথিবীর বুকে মুখ লুকিয়ে প্রাণভরে হাসতে পারছে না । প্রত্যেকবারই দুষ্টু রোদ পৃথিবীর কোল দখল করে নিচ্ছে ।
                আমাদের এক আত্মীয়ের কথা মনে পড়ল । আমার দূর সম্পর্কের কাকা হন । পাশাপাশি বাস করার ফলে সম্পর্কটা পুরানো হলেও হৃদ্যতার ঘাটতি ছিল না । কাকার বড় মেয়ে আমার চাইতে বছর কয়েকের ছোটো । তার যখন নয় বছর বয়স তখন তার একটি ফুটফুটে ভাইয়ের আবির্ভাব ঘটে । মায়ের মুখে শুনেছি দেবতার কাছে অনেক মানত , পুজো আর্চনা করে নাকি তারা এই বংশধরকে পেয়েছেন ।
              আমার ঐ কাকাতো বোনটি বেশ মেধাবী । স্কুলে সে বরাবর প্রথম হত । সকলেই তাকে ভালোবাসত । সারাদিন সে নিজের মনেই মগ্ন । নিজের বইখাতা , পুতুলের বাক্স নিয়েই তার দিন কাটে । তবে ভাইকে সে ভালোবাসত না তা নয় । খেলাঘরের একটি জ্যান্ত পুতুল মনে হত তার এই একরতি ভাইটিকে । যেন একটা কথা-বলা , হাত-পা নাড়া পুতুল । অনেকদিন ধরে বায়না করেও যা সে পায় নি ।
                 তবে সাধের এই ভাইকে সে কাছে পেত খুবই কম । কেননা তার মায়ের মনে হত ভাইকে দেখাশোনা করার মত বয়স তার হয়নি । মা কেমন করে জানবেন খেলাঘরের প্রতিটি পুতুলের সে বড়দিদি । তাদের নিয়ে আদরে বকুনিতে তার কত সময় কেটে যায় ।
                কথা-বলা , হাত -পা নাড়া পুতুলের অভাব পূর্ণ হত তার ভাই ঘুমোবার পর । তখন সে আপন ইচ্ছানুসারে কখনো ভাইকে পাউডার মাখিয়ে সাহেব বানাবার চেষ্টা করত , কখনো কপালে চন্দনের ফোটা দিয়ে বর সাজাতো । আবার কখনো নিজের হাতের চুরিগুলি ভায়ের হাতে পরিয়ে , চুপি চুপি পুতুলের বাক্স থেকে একটা টিপ নিয়ে পরিয়ে দিয়ে ভাবত --- আহা , ভাইকে যদি বৌ সাজানো যায় তো বেশ হয় ।কোনোদিন নিজের এই ভাবনার মাঝে শিশুর অচেতন মুখের হাসির রেখা ফুটে উঠত । আর ভাইয়ের সাথে নিজেকে মিলিয়ে সেও হাসতে থাকত । তার হাসির শব্দে এইসময় হয়ত ঘরে ঢুকতেন তার মা । আর ছেলের কাঁচা ঘুম ভাঙ্গাবার প্রয়াসে মেয়েকে বকাঝকা করে সারা হতেন । মেয়ের কল্পরাজ্যের ঘরকন্নায় এটুকু পুঁচকে ছেলেটার অবদান কতখানি তা তো তাঁর জানবার কথা নয় ।
                 গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে মাঠের ঐপাড়ে ছোটো ছোটো কয়েকটা ছেলের ক্রিকেট খেলা দেখে আমার ছোটোবেলার একটা দিনের কথা মনে পড়ল । অনেক বছর আগে , আমি তখন বেশ ছোটো । এমনি এক বর্ষার দিনেই বাবার সাথে বেড়াতে গিয়েছিলাম তাঁর কাকার বাড়ি । আমার বাবার কাকা অর্থাৎ আমার দাদুর বাড়িটা তাঁতিপাড়া আর চাষিপাড়ার সন্ধিস্থলে । এখানে তাঁতিবাড়ির ছেলেমেয়েরা যেমন চাষীবাড়ির তকতকে ঝকঝকে করে লেপা শক্ত বুক টান করা উঠোনে খেলা করে , তেমনি চাষিবাড়ির ছেলেমেয়েরাও তাঁতিবাড়ির তখনকার মত বাহুল্য হিসেবে পড়ে থাকা চরকা , টেকো , সুতো সহযোগে খেলা করে ।
     সেদিন আমি এদের সঙ্গে খেলা করতে গিয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে এদের মধ্যে যেন দুটো আলাদা দল দেখতে পাচ্ছিলাম । একপাড়ার ছেলেমেয়েরা আর এক পাড়ায় এলে আগন্তুক ছেলেমেয়েদের অধিকার কিছুটা খর্ব হয় দেখেছিলাম । এর কারণ পাড়াগত ব্যবধান না জীবিকাগত  ব্যবধান তা বোঝার সাধ্য তখন আমার ছিল না ।
                

         এমনি একদিন খেলতে খেলতে প্রচন্ড রোদের পাশাপাশি ঝমঝম বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে আমি দৌড়ে উঠে গিয়েছিলাম বারান্দায় । সেখান থেকে দেখছিলাম ছেলেমেয়েগুলো আনন্দে হাততালি দিয়ে নাচছে আর ছড়া কাটছে ---- রোদ উঠেছে বৃষ্টি পড়ে / শেয়াল পন্ডিত বিয়ে করে ।

            সত্যিই এমন দিনে শেয়াল পন্ডিত বিয়ে করে কিনা তা আমার দেখা হয়নি কখনো । শুধু এই রোদভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা ছবি আমার চোখে ভেসে উঠেছিল । মাথায় টোপর পড়া শেয়াল পন্ডিত হাতে ধুতির কোঁচা ধরে লেজ দুলিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছে । কিন্তু কার সঙ্গে যে বিয়ে হচ্ছে সেটা জিজ্ঞাসা করার আগেই সরমা নামে একটি মেয়ে আমার হাত ধরে টেনে ওদের মাঝখানে নিয়ে গেল ----- ' এমা তুমি ওখানে কেন । এ বৃষ্টি বুঝি গায়ে লাগে ? '
           আমি কোনো উত্তর দেবার আগেই পাশের একটি ছেলে বলে উঠল ---- ' তুমি বুঝি বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসো না ? '

     

            আমি কিছু একটা বলতে যাব তখনি শুনতে পেলাম ধেনোর বাবা আর চরকির বাবার আলাপ । ধেনোর বাবা আনন্দে গদগদ কন্ঠে চরকির বাবাকে বলছে , ---- ' এবারে ধান ভালো হবে দাদা । বৃষ্টিটা ঠিক সময়েই হচ্ছে । ' আর চরকির বাবার নিষ্প্রদীপ জবাব ---- ' তা ভাই তোমাদের তো এই বৃষ্টিটা ভালো । কিন্তু আমাদের সুতো কাপড় কিছুই যে শুকোয় না । হ্যারিকেনের তাপে , উনুনের আঁচে সেঁকে কি আর রোদে শুকোনোর মত শক্ত কাপড় পাওয়া যায় । '
             রোদ আর বৃষ্টির প্রেক্ষাপটে পর পর তিনটি দৃশ্য আমার চোখে ভেসে উঠল । একদিকে ধেনোর বাবার আনন্দে আপ্লুত মুখ , তার বিপরীতে চরকির বাবার উদাস বিরক্ত মুখ । আর খেলুড়ে ছেলেমেয়ের দল ।
             রোদের তেজ এখন কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে । ওর শক্তি যেন ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে । নাকি মায়ের স্নেহ কচি বুকটাকে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিয়েছে এরই মধ্যে । তাই পরিপূর্ণ হৃদয়ে এখন সে অন্য কোনো খেলার স্বাদ নিতে চাইছে ।
            দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো । বৃষ্টিটাও বেশ জাকিয়ে উঠেছে । এতক্ষণে খেয়াল হলো জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট এসে আমার টেবিলের ওপর সযত্নে ভাঁজ করে রাখা শাড়িটাকে ভিজিয়ে দিয়েছে । আমি তাড়াতাড়ি জানালাটা বন্ধ করে শাড়িটা খাটের ওপর ছড়িয়ে দিলাম ।
           নীচে বাবার গলার স্বর শুনতে পেলাম ----- ' এমন বর্ষার দিনে আর বাইরে বেরোব না , বেশ করে পেঁয়াজের ফুলুরি করো দেখি । গরম গরম । মুড়ি দিয়ে খাই । '

           ------ ' ওমা , মুড়ির কথা তো তোমাকে সকালেই বললাম । সকালে বাজার করে আনলে   মুড়ি এনেছো কি ?
            উত্তরে বাবা কি বললেন তা আর কানে এলো না ।

      আমার ঘরের দেওয়ালের ছবিটার দিকে চোখ গেলো । গত বছর রথের মেলা থেকে কিনেছিলাম । ছবিটাতে শিল্পীর নিপুন হাতে আঁকা কোনো এক অদৃশ্য শক্তির হাতে ঝুলন্ত একটা দাঁড়িপাল্লার একদিকে রয়েছে একজন নারী আর অপর দিকে রয়েছে একজন পুরুষ । হয়ত শিল্পীর মনে কখনো প্রশ্ন জেগেছিলো এই সংসারে নারী বড় না পুরুষ বড় ।
         আজ এই বর্ষার দিনে নির্জন ঘরে বসে আমার মনে হচ্ছে সংসারে নারী-পুরুষের স্থান অনেকটা চাঁদ-সূর্যের মত । রাতের নিবিড় অন্ধকার ছাড়া যেমন চাঁদের গুরুত্ব বোঝা যায় না ,তেমনি কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে ক্লান্ত শ্রান্ত টলটলে জলেভরা পৃথিবীর গাম্ভীর্য যখন অসহ্য মনে হয় তখনি সূর্যোদয়ের প্রত্যাশা সমস্ত প্রাণীকুলকে ব্যাকুল করে তোলে ।তবে মাঝে মাঝে এদের লুকোচুরি নতুন স্বাদের জন্ম দেয় ----- এটাই সত্য ।
             

Tuesday, September 17, 2019

একবার পাশে এসে দাঁড়াও

একবার পাশে এসে দাঁড়াও

পা গুনে পাশে এসে দাঁড়াও
আবার তোমায় দেখি
ডোবা জলে ভাসে কচুরিপানা
আ-বাঁধা পুকুরপাড়ে মাখন-কাদা
ছিপ হাতে নতুন প্রতীক্ষা তোমার

মনে আছে , ছিপে গেঁথে খুশী ছিলে কত
ভড়ং তোমার , চেয়েছিলে একেশ্বর হতে
জানতে না ---- একে একে মিলে গেলে শূন্য হয়

তোমার কাজ বুঝি 'এক' থেকে
অসীম শূন্যের অধিকারী আমি
মহাশূন্যের খাতায় 'এক'  আঁচড় শুধু
লিখে দিলাম তোমার জন্য ----
              ' শূন্য'  কবিতাময়

একবার পাশে এসে দাঁড়াও

Saturday, September 7, 2019

তৃষ্ণা

তৃষ্ণা

অবিশ্বাসী অবুঝ হৃদয়
গুমরে মরে অন্ধকার গৃহকোনে
হারিয়ে গেছে আলোর নিশানা ।

পথভোলা এক পথিক তুমি
শরৎ মেঘের নরম ছুঁয়ে
এসেছিলে এক মুহূর্তের জন্য
আমার আকাশে তখন
শ্রাবণের জলভরা মেঘ
বৃষ্টি নামালে তুমি ।
সজীবতায় পূর্ণ চারধার
নরম কৃষিক্ষেত্র উন্মুখ পিপাসাভারে ।

ফিরিয়ে দিলে তুমি
গোপনে গোপনে , সে কথা 
বাতাস শোনায় কানে কানে
আজ তার বইছে দীর্ঘশ্বাস
বিষাক্ত বাতাস ,
আকুল হয়ে ফেরে অনন্তের পথে ।

Wednesday, September 4, 2019

মাষ্টারমশাই

মাষ্টারমশাই


অন্তেবাসী নই আমি

পিতৃগৃহে সাদরে লালিত
কিছুর অভাবও নেই কোনো
না চাইতে হাতের মুঠোয়
পৃথিবী এসে হাজির
শিখেছি পাওয়ার অদ্ভুত ছলাকলা

তবু সেদিন মাত্র তিন বছর বয়স

সবেমাত্র মুখের বুলি পরিস্কার হচ্ছে
বাবার হাত ধরে এলাম প্রথম
বিশাল ইমারৎ নয় ----
নিচু ঘর , শনের চাল ,
মেঝেও হয়নি পাকা
তবু কি যে আকর্ষণ !
চুম্বকটানে পৌছে যাই রোজ
অপেক্ষা করি আপনার ক্লাশের
রোজ ------ রোজ ------
আপনার প্রশান্ত সৌম্য মুখ
শান্ত করে দিত সকল দুষ্টুমি
নিয়ে যেত বিষয়ের 
গভীর থেকে গভীরতায় ----
স্বপ্ন ভাসত চোখে ----
সেই ছোট্ট মনে প্রশ্ন জাগত কত
উদার হাসিমাখা মুখে
পৌছে দিতেন ছাত্রদের শিক্ষাচূড়ায়
মাথা নত করি বাণীময় সহাস্য বচনে

আজ এত বছর পরও

সেই মুখ  ---- প্রশান্তি আনে মনে
ফ্লাসব্যাকে ছুটে চলি ছোট্টবেলায়
আবার গল্প শুনি কল্পলোকের
ভুলে যাই বাস্তবের রূক্ষ কাঠিন্য

পিতামাতার পর জানি আপনার স্থান

তাই -----
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে 
প্রণাম জানাই ----- মাষ্টারমশাই ।

Sunday, September 1, 2019

বাংলা কবিতার সম্ভার: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা - সবুজের অভিযান

বাংলা কবিতার সম্ভার: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা - সবুজের অভিযান: ওরে নবীন , ওরে আমার কাঁচা , ওরে সবুজ , ওরে অবুঝ , আধ-মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা । রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে , আজকে যে যা বলে বলুক তোরে , স...

Friday, August 30, 2019

সোহাগ

সোহাগ


আকাশ যখন ঘুমিয়ে পড়ে
শিউলি ফুলের সোহাগ ঝরে
তোমার প্রেম পিছলে পড়ে
উদাস চিলের ডানায় ।
উটপাখির ঐ গ্রীবার মত
ভাবনা আমার শত শত
রক্তে ভেজা সলাজক্ষত ,
বিদ্ধ করে আমায় ।

ছিন্ন আমার হীরের দুলে
অভিমানের চিরাগ জ্বলে
লুটিয়েছিল পদতলে ,
সেদিন শ্রাবণমাস ,
বাইরে যখন শ্রাবণধারা
উন্মত্ত বাঁধনহারা
বীজের ভিতর সুপ্তচারা
জন্মের হাসফাঁস ।

Thursday, August 29, 2019

চিরায়ত

চিরায়ত

যত্নে রয়েছো হৃদয়ে লালিত

ওগো নিদ্-হরা , ওগো চিরায়ত
যেন জমে থাকা হাজার-শত
বছরের ইতিহাস ।

দিনে দিনে কত বাড়ে অনুক্ষণ

দিন কেটে যায় ব্যথিত বিজন
আশা-নিরাশায় দোলাচল মন
সময়ের হাসফাঁস ।

তুমি আছো তাই আমার ভুবন

আনন্দে মাতে নিত্য নূতন
চোখে ঘনঘোর তোমার স্বপন
নিদারুণ প্রেম-রোগ ।

শুধু দু'জনের মিলিত বাসনা

পরশপাথরে করেছে সোনা
অযুত-নিযুত কালের কামনা
অপেক্ষা রাজ-যোগ ।

#       #        #         #      #
মনের গোপনে শায়িত আশা

একটি ছোট্ট সুখের বাসা
দু-এক পশলা বৃষ্টি ভেজা
আমার গৃহকোন ।

ছোট্ট দু'খানি হাতের'পরে

সারা পৃথিবীর সোহাগ ঝরে
ছোট্ট দু'খানি পাপড়ি মেলা
বড় আদরের ধন ।

ডালের 'পরে , পাতার 'পরে

রাতের শিশির ঘুমিয়ে পড়ে
তুমি আমার শিশির-ভেজা
মানিক জ্বলা রাত ।

তোমার চোখের কাজল কালো

দিনে - রাতে পথ ভোলালো
তোমার গোপন গানের সুরে
আমার আঁধার মাত ।

Sunday, August 11, 2019

অনুপস্থিতি

অনুপস্থিতি

এখনো বাতাসে তার উপস্থিতি টের পাই

প্রশ্বাসের সঙ্গে টেনে নিই শরীরের গন্ধ
নানাজনের কলরোলের মধ্যে পরিচিত সুর
এখনো চোখের সামনে তোমার মুখ দেখি
ঠান্ডা হাওয়ায় শিউড়ে ওঠে গা
শরীরের চামড়া ভেদ করে
রক্তের ভেতর উথাল-পাথাল অনুভূতি

হঠাৎ চোখের কোন সিক্ত হয়

কন্ঠে আটকে আসে কথা
বিশ্রাম চায় অবসন্ন পা দু'খানি
মাথার ভেতর শ্রাবণের মেঘ ঘনায় ।

Saturday, August 10, 2019

অনুভব

অনুভব

পুকুরের শান্ত জলে শ্রাবণের প্রথম ফোঁটা
আঁকাবাঁকা বৃত্তসম অনন্ত ঘটনার সমাবেশ
অস্পষ্টতার মধ্যেও স্পষ্ট একটি মুখ
জানি তা জলের আলপনা
তবুও প্রলয়-রাত্রি দাগ এঁকে চলে
আকাশের নীলাভ ম্লান হতে থাকে
অনন্ত এই জীবন-নদী বয়ে চলে সুদূরে
দু'কূল শ্যামল সবুজ --- অনন্ত সুখের রাজ্য
কখনও চড়া খাড়ি --- বিষাদ মন্থর বেলা
জানি এই নদী এক নির্লিপ্তির জীর্ণ প্রস্তর
আর অসীম আকাশ --- আমার অনন্ত ঘটনার সাক্ষ্যি ।

Saturday, July 20, 2019

একান্ত সংগোপনে

একান্ত সংগোপনে

অনুভবে , মনের কোনে
আমার একান্ত সংগোপনে
কোন অমাতে আছিস ওরে
ছোট্ট আলোর কণা ।

নিশিদিনের অনুভবে
ছোট্ট দুটি ওই মুঠিতে
এত কি তোর শক্তি ওরে
পারবি দিতে হানা ।

আমার গহন আঁধার রাতে
মিষ্টি মধুর কল্পনাতে
কত বিচিত্র অনুভবে
আছিস সাথে সাথে
কেমন করে বোঝাই সবে
লক্ষ্য মানিক কোথায় জ্বলে
দিনের অত আলোর মাঝে
তারায় ভরা রাতে ।

Wednesday, July 10, 2019

তোমায় মনে পড়ে

তোমায় মনে পড়ে

দক্ষিন আকাশ যখন

কালো , চাপ চাপ মেঘে ঢেকে যায়
তখন তোমার কথা মনে পড়ে ।

মেঘলা দিনের ঘনায়মান অন্ধকারে

পাখির দল যখন 
অসীম ব্যস্ততায় বাসায় ফেরে
তখন তোমার কথা মনে পড়ে ।

আরো অন্ধকার যখন

সমস্ত পৃথিবীটাকে ঢেকে ফেলে
যখন বড় বড় গাছগুলোকে
অশরীরীর মত মনে হয়
তখন তোমার কথা মনে পড়ে ।

একঝলক দমকা হাওয়া

যখন আসুরিক শক্তিবলে
কালো মেঘগুলিকে
টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিতে থাকে
তখন ---- 
তোমায় মনে পড়ে ।
ভীষণরকমভাবে মনে পড়ে ।

Wednesday, July 3, 2019

মনোরমা

মনোরমা

একদিন যদি 
সব কাজ ফেলে
ছুটে যাই কোনো সাগরের কূলে
এমনি বিকেল 
সূর্য অস্ত
ফেলে যাওয়া যত কর্ম ব্যস্ত
ছায়া-মেঘ হয়ে
আকাশে ভাসত 
ঢেউ-য়ের তালে তালে ।
অস্ত-রবির 
সোনার ছোয়ায়
ব্যথাগুলি সব জলে মিশে যায়
নীল আকাশে
আলাপনে
কখন যেন আপন মনে হারায় ।
সকল বাধা
বন্ধন ছাড়া
অসীম শূন্যে নিমেষহারা
কোথায় এমন
পাগল করা
সুর ওঠে নিরালায় ।
সাগর সে তো
অসীম , অবাঙ
তবু কত না আপন আমার
একসাথে কত
সুখ-হাসি শত
ঢেউয়ের তালে ওঠে যায় ।
আশাহীন যত
ভালোবাসা ছিল
মুহূর্তে সবই আকাশে মিলালো
সোনা-হাসিমাখা
সাগর জলে
নবপ্রাণ লাভ হলো তায় ।

Friday, June 28, 2019

নিরাশা

নিরাশা

চারিদিকে একি দেখি অমানিশির ঘোর

জন্মের অন্ধকারও হার মানে বুঝি
নিশ্ছিদ্র নিরাশায় ডুবে যাওয়া ভোর
মুছে গেছে সব পবিত্রতা

নিস্তব্ধ গভীর রাত ----

শুনি শুধু হৃদয়ের ব্যর্থ আস্ফালন
গুমরে মরে পৃথিবীটা ছোট্ট ঘরের কোনে
কানে আসে কোনো এক আদিম বিস্ফোরণ
এরাতে ভালোবাসা পাশ ফিরে শোয়
পড়ে থাকে আজন্মের অব্যক্ত যন্ত্রণা
মনের আগুন ক্রমে মাথায় ছড়ায়

চারিদিকে নরপিশাচেরা অট্টহাসি হাসে ।

Monday, June 24, 2019

মুক্তোর আশায়

মুক্তোর আশায়

সমুদ্রের জল কি চোখের জলের চেয়েও বেশি নোনা
অথবা
জীবনের এক- একটি ভুলে জন্ম হয় এক- একটি সমুদ্রের
নানা সুখ-দুঃখের ঢেউ আছড়ে পড়ে বারবার

এত জলের উৎস খুঁজি আমি
বিনিদ্র রজনী আমার কুয়াশামাখা

কেটে গেছে কত ঝিনুক- কুড়ানো-বেলা
পা কেটেছি পচা শামুকের খোলে
দগদগে ঘা হয়ে আছে তা স্মৃতিতে
কোথায় উপশম , নেই কোনো ওষুধের প্রলেপ

বলেছিলে মুক্ত খুঁজে দেবে
এখনো দুচোখে আশা নিয়ে
তাকিয়ে আছি সুদূর-সমুদ্রে ।

Friday, June 21, 2019

দুষ্টু মেয়েটির জন্য

দুষ্টু মেয়েটির জন্য

জল ছলছল

আকাশ কালো
শ্যামলা মেয়ের 
মনটি ভালো ,

ও মেয়ে তুই

আস্তে চল
দেখ না চেয়ে
পথ পিছল ,

সামলে যদি

না চলিস 
পিছল পথে 
পা ফেলিস ,

দেখবি তবে

ভাঙবে পা
তাই তো বলি 
আস্তে যা ,

জল থৈ থৈ

আকাশ যদি 
নাচতে ইচ্ছা 
হচ্ছে যদি ,

ইচ্ছে মত

নাচিস পড়ে
সোনা রোদের 
হাসি ঝরে  ,

এখন আমার 

কথা শোন
চুপটি করে 
আটকে মন ,

ঐ দেখ তো

আকাশ চিরে 
সাপের ছানা
খেলা করে ,

ও সাপুরে

বিন বাজাও
আরো খানিক
সাপ নাচাও ,

বিষ যখন নেই

এ সাপের
তখন আবার
ভয় কিসের ,

তবে যখন 

টুকটুকে বউ
নাইতে যাবে ,
ও নদী-ঢেউ -----

একটু তুমি

সামলে নিয়ো
বৃষ্টি তুমি
ধরা দিয়ো ।

পড়ে আবার 

অঝোর ধারে ,
খেলা কোরো
পথের প'ড়ে ,

আবার ছোট্ট 

মেয়ে এসে
খিলখিলিয়ে
উঠবে হেসে ,

আবার শ্রাবণ

আকাশ জুড়ে
সাপের নাচন
উঠবে বেড়ে ,

দুষ্টু মেয়ে

নাচিস তুই ,
যখন হবে 
নরম ভুঁই ।

Wednesday, June 19, 2019

কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি

কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি

তোমাকে চেয়েছিলাম উথালপাথাল ঝড়ে
মাঝ সমুদ্রে নৌকা যখন হারিয়েছে তার দিক

ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায়
ধরতে চেয়েছি আঁকড়ে
বাড়াওনি তো আশ্বাসের হাত
পাড়ে দাঁড়িয়ে হাত নেড়েছো শুধু

তারপর বহুবছর পড়ে
স্মৃতির কুয়াশা ক্রমে হয়েছে ফিকে
নতুন করে বাঁচার আশায়
ফুলে- ফলে- নৈবেদ্যে সাজিয়েছি ষোড়শোপচার

আবার পদার্পণ আঙিনায়
বিস্ময়-বিমুগ্ধ আমি
সেই একই হাসি
প্রায় সলিলসমাধি আমার স্বপ্ন মনে হয়

কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি
উচিৎ কি আজ --- তিতিক্ষা না তিরস্কার ?

Saturday, June 15, 2019

জিঘাংষা

জিঘাংষা

ঔ শুনি রাত্রির কান্না
কি গভীর মর্মন্তুদ ভোরের প্রত্যাশে
পথহারা নাড়ী যেন এক
স্বজন প্রত্যাশে ফোঁপায় শুধু

চারপাশে তারকার সমাবেশ
কিন্তু হায়
নিশিপদ্মের গন্ধ কোথায়
রাত্রির বাতাসে
এ যে শুধু বারুদ আর রক্তের ঘ্রাণ
পেটের ভিতর পাঁক দেয় অপাচ্য সব
বিবমিষা ছড়ায় চরাচরে
কোথায় নিশাচরের সদল পদভার
উল্লাসে জাগে আরো রাতচরা
ব্যস্ত পাখার ঝাপটায়

কার প্রাণ খুঁড়ে খায়
অজান্তে বাতাস ভয়ে স্তব্ধ হয়ে রয় ।

Wednesday, June 12, 2019

মুক্তি

মুক্তি

চাঁদবুড়ি যখন ঘুমাবে নিঝুম
চড়কা কাটবে তুমি
কথা দিয়েছিলে চাঁদের পাহাড়
হাত নিয়েছিলে চুমি
আরো কত কি নিয়ে গেছো মেঘ
চাঁদের পানা রঙ
শরৎ হেমন্ত শীত বসন্তে
কচি , আদুরে ঢং
সূক্তি যেমন মুক্ত লুকায়
আপন অন্তঃকোনে
নিয়ে গেছো তুমি মুক্তি , সসীম ,
বেঁধেছো সংগোপনে ।

Monday, June 10, 2019

অমৃত

অমৃত


বুকের ভেতর জায়গা বড়ো কম
স্বপ্ন আছে হাজার লক্ষ রকম
পারো যদি সেল্ফ করে নাও
নোয়ানো শিকে আরো ঝুলিয়ে নাও

তোমার বুকে পাথর-কাটা খাঁজ
স্নিগ্ধতা নয় , রুক্ষ মরুর ঝাঁজ
ক্যাকটাসের পাতার মত গোপন
রেখেছিলে , বুঝেছিলাম , ভোরের মত আপন
তোমার কাছে , তোমার কুঁজো পূর্ণ ছিল যুগান্তরের বিষ
আষ্টেপৃষ্ঠে রুদ্ধ করে ঢেলেছ অহর্নিশ

বিষে বিষে অমৃত হয় , অমর ভালোবাসা
মরুভূমির তৃষ্ণা বুকে , আকুল পিপাসা .......

Thursday, June 6, 2019

মানসী

মানসী

চুপিসারে পাতা ওড়ে
তোমার অন্দরমহল
শোনা যায় আর্তক্রন্দন , তুমি নিক্কন
বেনোজলে মুখ দেখে চাঁদ
চরাচরে রাত জাগে , নিথর ,
বীজের ভেতর সুপ্ত অন্ধকার ।
ঘুমচোখে কুয়াশা ঘনায় 
জানালায় উঁকি মারে ত্রস্ত বাতাস
একবার , শুধু একবার
ছুঁয়ে যেতে চায়

Sunday, June 2, 2019

প্রতীতি -2015

প্রতীতি -2015

তোমাকে দেখেছি আমি

ঘন শ্রাবনবর্ষণে ধূপ-ছায়ারূপে
স্নিগ্ধতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছো আমায়

তোমাকে দেখেছি শারদমেঘে

একরাশ শুভ্র ফেনার মাঝে
কি মায়াবি কমনীয়তায় উদাস

তোমাকে দেখেছি দারুণ পৌষে

নিবিড় শীতলতায় হীম-মায়ারূপে

অবশেষে ধরা দিয়েছো বসন্তে

কী গভীর আশ্লেষে বিদ্ধ করেছো আমায়
প্রেমের পূজারীরূপে
ফুলে-ফলে-নৈবেদ্যে তোমর ষোড়শোপচার
পূর্ণ করেছো তুমি নাড়ীর বেদনায়

অলঙ্কৃত আমি আজ পূর্ণ কলসে ।

Monday, May 20, 2019

পরিণয়

পরিণয়

হাতে ধরা চায়ের কাপটা

কেঁপে উঠল তার
এ কাকে দেখছে সে

মনে পড়ে গেল

কুড়ি বছর আগের দিনটা
সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া একজোড়া স্বপ্নিল চোখ
উপরে নিয়েছিল লোকটা
বিবাহের নামে
চলেছিল পাশবিক যান্ত্রিক অত্যাচার
একাধিক দানবের
ছিঁড়ে-খুঁড়ে খেয়েছিল অস্থি-মজ্জা-মেদ
দিন-রাত

বাবা ছিল অসহায়

মায়ের খেলাঘরে পুতুলপ্রায়
তাই মায়ের ইচ্ছায়
ঘটেছিল সব
মা----নয় ---- 
সৎমা যে তার

পারেনি সে প্রতিবাদি হতে

কারো ভরসায়

তারপর ------
কত প্রচেষ্টা , কত পরিকল্পনায়

সুযোগ এসেছিল একদিন
পালাবার ---
উদরে নিয়ে ছোট্ট প্রাণের বীজ

কেটে গেছে কুড়িটি বছর

বহু কষ্টে , বহু বেদনায়
কেটেছে যে দিন ---
তা জানে ইতিহাস
আজ সে যে এক কন্যার মা
আবার একজোড়া স্বপ্নিল চোখ

কিন্তু বিধির এ কি লিখন

আবার কি হেরে যাবে সে
মেনে নিতে হবে আবার পরাজয়

না ----

সে তো সৎমা নয় ---
সে যে মা ---
নাড়ী ছেঁড়া ধন তার
পারবে না কিছুতেই

দিতে হবে যোগ্য শাস্তি তাকে

যার দোষে স্বপ্ন তার ধুলিসাৎ আজ
তাই ----
বড়ো যত্নে চা নিয়ে যায়
মুখ ঢেকে ঘোমটায়

বোঝে না সে কোন অতীত তার

হানা দেয় চোরা পথে
পরম আবেশে --- তাই ---
চা করে পান
তারপর ---
সব ইতিহাস

ক্রমে তার শরীর নীল হয়ে যায় ।

Thursday, May 9, 2019

প্রনতি তোমায়

প্রনতি তোমায়

'সহজপাঠে'র সহজপথ অতিক্রান্ত আজ
স্বপ্নসুষমায় তুমি --- বঙ্গের রামধনু ,
শতবর্ষ পরেও , নবঘন পল্লবের স্তরে কম্পমান ।
তোমার কাব্যবলাকা উর্দ্ধনীলাকাশে
স্বপ্নের মেদুরতায় জোনাকি জ্বালায়
রক্তে রক্তে অনুভূত স্পন্দনে তুমি

তবু , খেদ নয় কম ----
হারিয়ে গেছে তোমার অমল সুধার দল
হাযিয়ে গেছে তারাপদ
হারিয়ে গেছে ঐ পদ্মাতীর , উজানে কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ
আদর্শহীন ইন্ধন এখন মৃত্যুঘুঘুর ফাঁদ
এখনো 'বাবু'র দলে 'পারিষদ' জোটে মেলা
তোমার উপেন বড়ো বেশি অসহায়
বসন্ত আসে ফিরে , প্রকৃতি শ্যামলে সাজে
মিথ্যার আশ্রয় 'পুরাতনভৃত্যে'র চোখের কোনায়
তোমার ভারততীর্থ পুণ্য মহামানবের তীর
ধর্ষকাম মানুষের নিরাপদ আশ্রয়
'গুপ্তধনে'র নেশা এখনো হল না শেষ
কত ' বোষ্টমী ' মিথ্যাচারে আবদ্ধ গুরুর কৃপায়
কত যে ' সমাপ্তি ' অসমাপ্ত , 
উপেক্ষিত ব্যথিত মৃন্ময়ীর আহ্বান
সুভার অন্তর্বেদনায় বিদ্ধ হয় না কেউ
হাজার হাজার দক্ষিনারায় বিবেকের দংশণে
নিশীথে শোনেনা আত্মসুর
কোনো মেহের আলি আর শোনায় না সত্যস্বর ,
তবু জানি মেহের আলি ' সব ঝুট হ্যায় , সব ঝুট হ্যায় '
কালের যাত্রায় বেঁধেছ যে রথের রশি
স্থবির তা , আসে কোন সত্য সুন্দর ,
কবির লেখনী বা গায়কের গীত
তোমার ' জনগন '
রয়েছে সেই প্রতীক্ষায় ।

Friday, April 26, 2019

শঙ্খের জন্য

শঙ্খের জন্য

বিহ্বলময় শান্ত অতীত , পর্ণমোচী বৃক্ষ
স্মৃতির প্রকোষ্ঠে আমার ন্যাড়া ছাদ
উদ্দাম ছাদে সূর্য অস্ত গেছে
অন্ধকারে রাত জাগে দুর্বিনীত বাসনা

বাসনা ---- তবু সোনা সে যে
অলঙ্কার পড়েছ গলায়
ঝিনুক নিয়েছ হাতে
মুক্ত হাড়িয়ে গেছে

হারাক ---- হারাক যত গ্লানি শতাব্দীর
হারাক কালের সীমা , আসুক ফিরে
আবার অতীত

এবারে ঝিনুক নয় ---- শঙ্খ খুঁজে নিও
শাশ্বত জীবনের অগাধ বিশ্বাস

Wednesday, April 24, 2019

চিত্রার্পিতা

চিত্রার্পিতা

রাস্তায়
পথ চলতি মানুষের ঢল থেকে
নিয়ন আলোয়
স্পষ্ঠ দেখি তোমার মুখ
বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপিত
মোনালিসার ছায়া
তর্কের ঝড় ওঠে হৃদয়ে

লিও-নার্দো-দা ভিঞ্চি নই
তাই অজ্ঞাত অনেক
জ্ঞাতও কম নয়
এমনকি 
অন্ধগলির গোপনীয়তাটুকু

Tuesday, April 9, 2019

পঁচিশে বৈশাখ

পঁচিশে বৈশাখ

দিন আসে দিন যায়
সময় বদলায় , মন বদলায় না
কিংবা বদল ঘটে মননে
স্মৃতি থাকে বেদনায় বেদনায়

চৈত্রের ঝরাপাতা উড়ে গিয়ে
নেমে আসে প্রখর তাপ
কৃষ্ণচূড়ার আগুনে রাঙা হয়
কবির জন্মমাস

হোক উদাস বাউল কিংবা রাখাল বালক
অথবা ছুটির খুশি গায়ে মাখা পড়ুয়ার দল
দলে দলে মিলন ঘটে কৃষ্ণচূড়াতলে
মহামিলনের সংগীত বাজে --- কৃষ্টি অন্তরে
আজ না থাক মেহের আলি
নাইবা বলুক কেউ --- ' সব ঝুট হ্যায় '
তবু আশার আশা তারাপদর পায়ে
মনে মনে বোষ্টমী খঞ্জনা বাজায়

তবু আমি রণে ক্লান্ত কালের যাত্রায়
সভ্যতার সংকট আরো ঘণীভূত হয়
আছড়ে মরে ক্লিষ্ট মন না পাবার বেদনায়
আবার এসো কবি , হৃদয়-বাগে
নব ফুল ফোটাই ।

পথহারা

পথহারা

পথ খুঁজে ফিরি আমি

ক্ষ্যাপার পরশপাথর খোঁজার মত

চকচকে তো অনেক কিছুই হয়
হিরে ফেলে কাঁচ তুলি যেমন
ভুল , কত ভুল দিয়ে সাজানো জীবন
শুধু কি নিকোটিনই পোড়ে
পুড়ে যায় , হারিয়ে যায় কঠিন শপথ


পথ খুঁজি আমি

আবার হারাই

দূষিত মানবতার ভিড়ে
পায়ে বাধা লোহার শিকল
আরো আঁকড়ে ধরে
পথ খুঁজি মোহাবেশে বাঁচার তাগিদে
রঙীন চশমা আছে দুচোখ জুড়ে

ভুল বুঝি , ধরব এবার নতুন পথ

সব পথ মিশে যায় শিশুর সারল্যে ।

Saturday, April 6, 2019

অনুগল্প --- মা

                             অনুগল্প --- মা  
                                       


  শর্মী আজ সাত বছরের হল । অন্যান্য বাচ্চাদের মত জন্মদিনে মায়ের হাতের পায়েস খাওয়ার সৌভাগ্য তার নেই । তার মায়ের মুখটা ছবি দেখা ছাড়া স্মৃতিতেও আসে না । কেননা জন্মের পর মাত্র কয়েকটা দিন সে তার মায়ের সান্নিধ্য পেয়েছে ।স্কুলের বন্ধুরা যখন তাদের মায়েদের কথা গল্প করে তার খুব মন খারাপ করে । তারও ইচ্ছে করে স্কুলে আসার সময় তার মা ব্যাগ গুছিয়ে , জামা পরিয়ে , চুল আঁচড়ে , চুমু খেয়ে , আদর করে দিক অন্যান্য বন্ধুদের মত । এই সময় তার খুব রাগ হয় ভগবানের ওপর । ভগবান তাকেই কেন এরকম একা করে মাকে তার কাছে ডেকে নিয়েছেন ।
            ******************************
     সকাল থেকেই খুব মন খারাপ শর্মীর । দিদা আজ কত আদর করে তাকে ঘুম থেকে তুলেছে । তার জন্য পায়েসও বানাবে বলেছে । কিন্তু মা যে মা-ই হয় । কতদিন হল বাবাও সেই যে গেছে আর আসেনি ।
     ব্রাশ হাতে নিয়েই বাগানে এসে দাঁড়ায় শর্মী । এখানে দোলনচাঁপা গাছটাতে সেবারে একটা দোলনা বেঁধে দিয়েছিল বাবা । এই জায়গাটা শর্মীর খুব প্রিয় । দিদা বলে এই দোলনচাঁপা গাছটা খুব পুরনো । তার মাও ছোটোবেলায় এই গাছটাতে দোল খেত । মায়ের খুব প্রিয় জায়গা ছিল এই গাছতলাটা । শর্মীর দুচোখ জলে ভরে এল । কেন , মা , আমি কি দুষ্টুমি করেছিলাম যে আমাকে ছেড়ে তুমি চলে গেলে ।
         হঠাৎ এক ঠান্ডা হাওয়ায় শর্মীর মনের ভেতরটা কেমন করে উঠল । খুব আপন একটা গন্ধ , যেন অনেক কালের চেনা , মাতৃগর্ভের মত একটা অনুভূতিতে ভরে গেল তার মনটা । যেন কেউ পরম মমতায় তার গায়ে মাথায় হাত বুলোচ্ছে , তাকে আদর করছে । তার মুখ দিয়ে অজান্তেই বেড়িয়ে এল --- মা !

Wednesday, April 3, 2019

অনুগল্প --- আগাছা

                         অনুগল্প --- আগাছা 
                                        

    সকাল সকাল কাজটা সারতে পেরে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে প্রতাপের । নিত্যদিনের এই অশান্তি আর ভালো লাগে না । তাই স্ত্রী রীনার জন্য এটুকু করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে । এবার আর বাড়িতে কোনো অশান্তি নেই । শুধু সে আর রীনা আর অখন্ড শান্তি । 
        বৃদ্ধাশ্রমে মাকে রেখে নির্দিষ্ট ফর্মালিটিগুলো পূরণ করতে যতটুকু সময় লাগে তাড়াতাড়ি সেরে আর মায়ের দিকে ফিরে তাকালো না প্রতাপ , পাছে মায়ের চোখের জল তাকে দুর্বল করে দেয় । তার ভবিষ্যৎ সুখ কল্পনাতেই সে সুখি ।
          
              **************************


         ওদিকে প্রতাপের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই অসীমার একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে । আজ থেকে ছাব্বিশ বছর আগে মিউনিসিপ্যালিটির ডাষ্টবিনের পাশে কতগুলি কুকুরকে একটা পুটুলি ঘিরে চীৎকার করতে দেখেছিল সে । খুব ভোরে উঠে ঠাকুরের জন্য ফুল তোলা নিত্যদিনের অভ্যাস অসীমার । সেদিন ফুল খুঁজতে এপথেই যাচ্ছিল সে । রাস্তা নির্জণ । কুকুরগুলোর আচরনে এমনকিছু ছিল যে অসীমা এড়িয়ে যেতে পারল না । কাছে যেতেই দিখতে পেল ছোট্ট একটা মুখ দুটো কচি কচি হাত । বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল তার । রাস্তায় যে এখন কেউ নেই । তিন তিনবার অন্তঃসত্বা হয়েও সন্তান কোলে নিতে পারেনি অসীমা । ডাক্তার বলেছিল কি এক কঠিন সমস্যা আছে তার । অনেকদিন ওষুধ খেতে হবে । খেয়েওছিল । কিন্তু ঈশ্বর বিরূপ । সন্তানের মা হওয়া তার আর হয়ে ওঠেনি । 
        তবে আজ ঈশ্বরের কি অভিপ্রায় । তিনি কি চান এভাবে অসীমাকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে । মনে মনে এ স্বাদের লোভ সামলাতে পারল না অসীমা । ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে কারো অনুপস্থিতিতে  ময়লা কাপড় ছাড়িয়ে তার আঁচল দিয়ে জড়িয়ে নেয় বাচ্চাটিকে । একছুটে বাড়ি এসে শিবুকে ঠেলে তুলে সমস্ত ঘটনা জানায় । তারপর সাত সকালে সেখানকার পাঠ চুকিয়ে নতুন ঠিকানায় । 
      তারপর কত উত্থানপতন শেষে নিজেরা আধপেটা খেয়েও প্রতাপকে নাড়ি ছেড়া ধনের মতই আগলে আগলে বড়ো করা । 
     আজ প্রতাপ বড়ো চাকরি করে । শিবু গত হয়েছে চার বছর হল । বিয়ে করতে না করতেই মা তার সংসারে আগাছা হয়ে উঠল । চোখের কোনটা ভিজে উঠল অসীমার । দুই হাত জোড় করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রর্থনা জানালো , ওদের ভালো রেখো ঠাকুর । মঙ্গল কোরো ।

Saturday, March 30, 2019

রঙের ভোরে

রঙের ভোরে

তোমার জন্য একমুঠো রঙ করব চুরি
পলাশ অশোক শিমূল থেকে
তোমার জন্য নীল আকাশে হাত বাড়াব
রামধনু রঙ আনব ডেকে
যেখানে যত রঙের বাহার খুঁজতে যাব
প্রজাপতির পিঠে চেপে
কৃষ্ণচূড়া খবর পাঠায় আমন্ত্রনের
চিড়ল পাতা উঠছে কেঁপে
তোমার জন্য ডাক পাঠালো
অমলতাস আর হাসনুহানা
তোমার জন্য লক্ষ ফুলের সমারোহ
নাম না জানা
তোমার জন্য বুক ভরা ঢেউ
উথাল পাথাল
তোমার জন্য গোষ্ঠে চলে
ব্রজের রাখাল
তোমার জন্য রঙ আবিরে
হোলি খেলা
তোমার জন্য সুজন কুজন
বহুজনের প্রাণের মেলা
তুমি আসো বছর পরে
একটি বারে
তোমার জন্য নতুন করে
আবার বাঁচতে ইচ্ছে করে
তোমার জন্য হাড় কাঁপানো
শীতের রাতে
অপেক্ষা করি , আসবে জানি
নব প্রভাতে
তোমার জন্য প্রকৃতিতে আজ
কত আয়োজন
বসন্ত তুমি হৃদয় জুড়ে 
তুমিই আমার হৃদয়-হরণ ।

Friday, March 29, 2019

মোবাইল প্রেম

মোবাইল প্রেম

ছেলেরা এখন খেলছে না আর
মোবাইল ফোন ধরেছে
সারাটা দিন খুটুর খুটুর
মাঠে খেলা ভুলেছে
মাঠগুলো সব ফাঁকা ফাঁকা
ঘাস গজিয়েছে ঝোপ ঝোপ
মোরের মাথায় , রকে , মাঠে
নেট ওয়ার্কে ফেলছে টোপ
কোন গেমটা কোথায় আছে
প্লে-স্টোরেতে খুঁজছে
সারাটা দিন টুং টাং বিপ
এস এম এস টোন বাজছে
পাশের বাড়ির ননীদাদা
কেমন আছো তুমি
দেখা-সাক্ষাৎ হয়না মোটেই
চলছে ফোনাফুনি
ফোনেই চলছে বিশ্বখোঁজা
গুগুল সব দিয়েছে
বইগুলো তাই অবহেলায়
টেবিলে পড়ে রয়েছে
সরস্বতীর পায়ে এখন
থাকছে না আর বই
মোবাইলগুলো এনে দেরে
ল্যাপটপটা কই
খেলা বলতে আঙুলের কাজ
স্মার্টফোনেতে টাচ
হিরে ফেলে তুলছে ভরে
পকেট ভর্তি কাঁচ
মানিকদাদার ঘরে আছে
তিন বছরের ছেলে
খাওয়া-শোয়া সব বন্ধ
ফোন হাতে না পেলে
দিদির ছেলে অভিরাজ
বয়স মোটে সাত
মোবাইলে গেম খেলাতে
পাকিয়েছে হাত
চোখের সামনে রঙীন জগৎ
বয়স তের জেনো
কথায় কথায় স্ল্যাং ঝরে তার
গুরু লঘু নেই কোনো
এই যদি হয় যুগের হাওয়া
ছেলেবুড়ো সব ---
অল্প দিনেই নুইয়ে যাবে
হারাবে শৈশব ।

Tuesday, March 26, 2019

চিতা বহ্ণিমান

চিতা বহ্ণিমান
                   নির্মাল্য দাশগুপ্ত


এই ফাগুনের পরের ফাগুনে
তোকে নিয়ে
গান গাইব উৎসবের
কথা ছিল
পরবর্তী সমস্ত ফাগুনের
দীপ্যমান শিখ
প্রজ্জ্বলিত করে দেব
আমাদের জীবন সাগরে

তাই তো স্বপ্ন নিয়ে
বসেছিলাম,
ঝরে গেলি তুই

পিশাচরা হেসে হেসে 
কান্না ছড়ায়

জেনো
মানুষের মনে আজ
চিতার আগুন

Wednesday, March 20, 2019

মুক্তির আস্বাদ

মুক্তির আস্বাদ

মনে হয় সন্ধ্যার আরক্তরাগে
সুদীর্ঘক্ষণ ধরে বয়ে চলা সময়ের পাড়ে
মহামুক্তির দেশে আজ আমার উপস্থিতি
শুভ্র বলাকার দেশ সে এক
তার মসৃণ শ্বেতপৃষ্ঠে পিছলে পড়ে
দুপুরের রোদ
সব গ্লানি ঝরে যায় --- সব গ্লানি আজ
বলাকার শুভ্র পালক
প্রাণপনে হাতে নিয়ে
ঘ্রাণ নিই আকাশে মুক্তির ।

Tuesday, March 19, 2019

দিকভ্রান্ত

দিকভ্রান্ত

কাজের ফাঁকে ফাঁকে
ব্যস্ত ঘড়ি চেতনা দিয়ে যায়
অসম্বিত আমি
হারিয়ে ফেলি সময়ের হিসাব
বেনিয়মে ভরিয়ে তুলি
গোটা প্রহর
দিনের উদ্ধত রোদে
ঘুরে বেড়াই মনের কাছে কাছে
রাতের অন্ধকার এসে
ডেকে তোলে জীর্ণ আত্মাকে
জানালা বন্ধ সব
রূদ্ধ দ্বারের কপাট
থেমে যায় এখানে বাতাসের আনাগোনা
পথ হারায় উদ্ভ্রান্ত আলোক ।