Saturday, April 27, 2024

অসহিষ্ণু রাজা , রানী -- দিলীপ ঘোষ

অসহিষ্ণু রাজা, রাণি
দিলীপ ঘোষ
২৫/০৪/২৪
হল্লা রাজা
না সইতে পারে, না বইতে পারে
না খেতে পারে
বিরুদ্ধ মতের খাজা,
বিরুদ্ধ মতকে
সাবস্থ করে দেশবিরোধী অপরাধে
অন্যায়ভাবে দেয় সাজা।
ডানা ছাঁটে ভিন্ন মতের অধিকারে
নানান নামের আইন দিয়ে
অভিযোগ ছাড়াই আটক করে
জেলে পাঠায় নির্বিচারে।

হল্লা রাজা
খেতে ভালোবাসে তোষামোদের তেলে ভাজা
না সইতে পারে, না বইতে পারে
সত্য কথন, নিরপেক্ষ প্রতিবেদন।
আকাটের শরীর আনন্দে ফোলে
করলে তোষন, পেলে তৈলমর্দন
চাটুকারিতা আর আত্মসমর্পন
না পেলে, করে শত্রুর মত আচরণ।

নানান মতে নানান পথে চলা
সইতে পারে না হল্লা রাজা
স্বাধীনভাবে সম্মান নিয়ে চলে যারা
অভিযোগ তৈরি করে তাদের দেওয়া হয় সাজা।

হল্লা রাজার দেশে, রাজা রাণি দুই-ই আছে
নীতিহীনভাবে মাথা গরম করে দুজনে
সাধারণের সম্পদকে ভাবে ব্যক্তিগত সম্পত্তি
আমি দিচ্ছি, আমি করছি,- সদাই আওড়ায় ভাষনে
মেকি উন্নয়নের দাবি তোলে
                    প্রচার সুতোয় ঘুড়ি ওড়ায় গগনে।

Friday, April 26, 2024

তপ্ত কটাহ -- নিবারণ চন্দ্র দাস

তপ্ত কটাহ  
নিবারণ চন্দ্র দাস
২৬/০৪/২০২৪
তপ্ত দুপুর নাই কলরব
   নাই কোলাহল কেন,
টগবগিয়ে ফুটছে ঘিলু
   চায়ের কেটলি যেন।

যাচ্ছে যেন গুলিয়ে সকল
   ভাবনা চিন্তাগুলো,
যেদিক পানে তাকাই দেখি
    উড়ছে শুধুই ধুলো।

লেখাপড়া উঠলো লাটে
    বন্ধ হ'ল স্কুল,
হয়তো সঠিক,এ নিয়ে আর
     করব না হুলস্থুল।

ব্যক্তিগত স্কুলগুলো যে
     চলছে রমরমিয়ে,
ওদের বেলায় আলাদা নিয়ম
     প্রশ্ন তো তাই নিয়ে।

চাকরি বাকরি কিনব কিনা
     ভাবছি অনেক করে,
ওই ওরা ওঁত পেতে আছে
     ফ্যালে যদি ধরে?

দাবদাহ চলছে বিষম
    তপ্ত তপন জ্বলে,
আমরা বুঝি করিনি শেষ
    উন্নয়নের ছলে?
           :::-:::

আমার একলা চাওয়া -- মনিরা মাসিদ

আমার একলা চাওয়া
মনিরা মাসিদ 
26.4.2024
আমার একলা একটা আকাশ চাই। 
এককক...আকাশ একাকিত্ব চাই। 

আমার আস্ত একটা সমুদ্র চাই 
এক সমুদ্র বাতাস চাই 
বাতাসে ফিসফিস আমারই জন্য কথা চাই।। 

জঙ্গলের নির্জেস্ব ঝিঁ -ঝিঁ আওয়াজ ওঠা
আমার পুরো একটা জঙ্গল চাই।
চাঁদনি রাতে জঙ্গলের নির্জেস্ব 
সুরের মাঝে হারিয়ে যেতে চাই।।

চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া
আমার নির্জন পুরো আস্ত একটা নদী চাই
বড়ো গাছ ওয়ালা সুন্দর খেয়া বাঁধা
নদীর একটা ঘাট চাই। 

খেয়া নৌকায় বসে থাকবো, সারারাত 
ধরে টুপটাপ শিশিরে ভিজবো ।আর কখন যেন 
নদীর ওপারে ভোরের সূর্য কুয়াশা সরিয়ে 
ঝলমলে সকাল নিয়ে আসবে, আমার ঐ রকম 
একটা সুন্দর সকাল চচাই.. চাইইই..

Thursday, April 25, 2024

শেষের সে দিন -- মলয় সরকার

 শেষের সে দিন 
  মলয় সরকার
   ২৪/০৪/২৪
 বজ্র বিদ্যুৎ ঝড়-বৃষ্টি আসুক ধেয়ে 
 আসুক তুমুল মাতাল দামাল হয়ে 
 ধর্ষিতা হওয়ার জ্বালা কে বুঝবে 
 উঠবেই তো জ্বলে প্রতিশোধের আগুন,
 করাতের আঘাতে রক্তাক্ত অসহ্য ব্যথা 
 বলতে পারেনি বোবা বলে 
 অনুভব করতে চাইনি কোনদিন,
 গরু ছাগলের মত কসাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছি,
 কি দরকার ঠান্ডা মেশিন আছে তো,
 সির সির ঠান্ডার মৌতাতে।
 ঝলসে যাওয়া মাটি 
 জলস্তরের কৃপণতা মানবে কি করে,
 সভ্যতা বিকাশের উত্থানে 
 নিজেদের পায়ে মেরেছি কুড়ল।
 কোটি টাকার আলপনায় বিশ্ব রেকর্ড 
 ধুধু কালো পিচের প্রান্তরে,
 কোটি টাকায় কত গাছ প্রাণ পেতো 
 অবলীলায় সবুজ হতো চারিদিক।
 আফসোসকে বন্দী করে অপেক্ষা 
 শেষের সে দিনের অসহ্য যন্ত্রণায় 
 কাঁদার মত থাকবে না পাশে কেউ।
©মস

আমি ধর্মের নয় কর্মের -- স্বাধীন কুমার আচার্য্য

আমি ধর্মের নয় কর্মের 
 স্বাধীন কুমার আচার্য্য 
 ২৫/০৪/২০২৪ 
আমি কর্মের কবি ধর্মের নয় 
         কৃষকের আশ্বাস 
আমি হিন্দু নয় মুসলিমও নয় 
          শুধু শ্রমিকের বিশ্বাস ।।

আমি দেবদূত নয় নবী ও নয় 
        অনাথের ত্রাণকারি
আমি গীতাও নয় বাইবেল ও নয় 
           সত্য আখরে ভরি ।।

আমি  টিকিও রাখিনা টুপিও পরিনা
           মালা ঝুলি নেই কাঁধে 
আমি  নাঙল চালাই হাল ধরি ভাই 
            লোহাকে পেটাই সাধে ।।

আমি  রাজ্য চাই না চাইনা অর্থ 
          শুধুই মানুষ চাই 
আমি  বুভুক্ষু আর নীড় হারা দের
          বুকে দিতে চাই ঠাঁই ।।

আমি  হাপরের বুকে ঢেলে দিই শ্বাস
          মুটেদের বোঝা তুলি 
আমি   চর্মকারের মাথার উপর 
           ছায়ার ছত্র মেলি ।।

আমি  ভিখিরীর ফুটো থালায় জমানো 
           শুধুই একটি টাকা 
আমি   লজ্জা বস্ত্র ঢেকে দিতে চাই 
            শরীরটা যার ফাঁকা ।।

আমি  কর্মের দাস ধর্মের রিপু 
            সত্যের পথচারী 
আমি   মিথ্যার যবনিকা টেনে দিতে 
           হয়েছি কলমধারী ।।

এক মানুষের -- আমান

এক মানুষের
   আমান 
২৪-০৪-২০২৪
এক মানুষের সৎ সাহসেই
বদলে যেতে পারে জাতি, 
সমাজ থেকে মুছতে পারে 
অশনি সব অসংগতি। 
রুখতে পারে দূর্নীতিবাজ
দুশ্চরিত্রের রাঘব বোয়াল, 
গুড়িয়ে দিতে পারে সকল
মুখোশ ধারী'র মেকি চোয়াল। 
মূল উৎপাদন  করতে পারে
অনিয়ম আর অপরাধের,
দেশ সমাজকে গড়তে পারে 
শান্তি সুখের আবাস সাধের। 
এমন মানুষ চাইলে আমরা
নিজেই কিন্তু হইতে পারি,
কারো কাছে না করে তাই
নিজের কাছেই শপথ করি।
শপথ,
অসৎ পথে চলবো না,
কেউ চললে তা মানবো না
সৎ-সাহসে চলবো,
অকল্যাণকর দেখলে কিছু 
নিজের চেষ্টায় দলবো।

Wednesday, April 24, 2024

অপেক্ষার প্রহর -- প্রতাপ রাকসাম

অপেক্ষার প্রহর
প্রতাপ রাকসাম 
২৪/০৪/২০২৪ ইং
তোমার বিরহে আর কতকাল কাঁদলে আমার চোখের জল ফুরোবে আমার ঠিক জানা নেই..! শুধু-
এতটুকু জানি যখনি তোমার কথা মনে পড়ে তখনি ঐ নীল পাহাড়ি ঝর্ণার মতো দুচোখে অবিরত জল ঝরে।
তোমার-আমার অতীত বারবার আমাকে রোমন্থন করে।
সারাক্ষণ তাড়া করে গন্তব্যের নিশানা দিক্-বিদিক হারায়।
মুহূর্তগুলো বড্ড ফ্যাকাসে মন হারিয়ে যায় স্মৃতির পাতায়।
সেই কবে ফাগুনের স্নিগ্ধ ভোরে কোকিল জেগে উঠার আগে তুমি চলে গেছো আর ফিরে এলেনা..!
যাবার বেলায় বলেছিলে তোমার যোগ্য হয়ে আমি আবার ফিরে আসবো। 
সকলের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলবো আমি তোমাকে ভালোবাসি.....ভালোবাসি।
কতদিন কতকাল কেটে গেলো কত বসন্ত এলো গেলো তবু তুমি ফিরে এলেনা। 
ভুলেও তুমি একটি চিঠি দিলেনা।
চৌরাস্তার মোরে রোজ ডাক পিয়নের সাথে আমার দেখা হয় পিয়ন কাকা মন খারাপ করে বলে তোমার কোনো চিঠি নেই।
অপেক্ষার যন্ত্রণায় কষ্টগুলো শিশির কণার মতো জমে আজ বিষাদসিন্ধু হয়ে গেছে!
হয়তো তুমি ভালোবাসার প্রতিশ্রুতির কথা ভুলেই গেছো কে জানে!
কিন্তু, আমি ভুলিনি..
তোমাকে আপন করে পাওয়ার প্রয়াসে সকাল-সন্ধা চোখে জল নিয়ে এখনো আরাধনা করি।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুমি আমার কাছে ফিরে আসবেই আসবে।
কখনো আধো রাতে ঘুম ভেঙে তোমার শুন্যতায় ছটফট করি তোমার ছবি বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ি।
এখন আমার দিন কাটে তো রাত কাটেনা ধূসর জীবন ভরসাহীন, সান্ত্বনাহীন, নিঃষ্প্রভ প্রহর গুলো কেটে যায় গভীর দীর্ঘশ্বাসে!
জানিনা আর কত শ্রাবণ ধারার মতো চোখের জলে বন্যা হলে
তুমি সাঁতার কেটে আমার কাছে ফিরে আসবে....!!

বই দিবসে -- তরুণ কুমার ভট্টাচার্য

বই দিবসে
তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য 
বই কই     বই কই 
প'ড়ে  যায়  হৈ  চৈ 
হ'য়ে গেল বইমেলা দেশে
বই চিনে   বই কিনে
সাগ্রহে  বাড়ি   এনে
থরে থরে তুলে রাখে শেষে  ।

বই মেলা     বই মেলা
বই জোগাড়ের ভেলা
যে যা পারে বই কিনে রাখে
নানা কাজে   তার মাঝে
কাক ভোর   কিবা সাঁঝে
পালা ক'রে বই প'ড়ে দেখে  ।

বই ঘ্যাঁষা      পড়া নেশা
বই   পড়া     ভালোবাসা
এরাই তো বইয়ের পূজারী
পড়ে যত          চায় তত
জ্ঞানে    হয়  অবনত
বলা যায় জ্ঞান কান্ডারী  ।

জ্ঞানী জন      গুণী হন
বুঝে   শেষে   কথা  কন
এইটাই বই দেয় শিক্ষা
ভাবি তাই       1““““সুধী চাই 
বই ছাড়া কথা নাই
সে মানুষ লাগি এ প্রপ্রতীক্ষা  ।

বাংলা আমার প্রাণ -- দেব মন্ডল

কবিতা - বাংলা আমার প্রান 
কলমে - দেব মন্ডল 
তারিখ - ২৪/০৪/২০২৪
যেদিন রাজ হাঁসের ডাক থেমে যাবে, বন্ধ হবে চলাচল। 
ভোরের সুরে কোকিল গাইবে না আর গান। 
পুৃঁই শাকটি শুকিয়ে যাবে, গাছে ধরবে না আর  ফল।
এই দিন দেখার আগে আমার যেনো মৃত্যু হয় এই প্রিয়  সোনার বাংলায়। 
পাটনাই ধানের গন্ধ যদি নিঃশেষ হয়ে যায়। 
তার আগে যেনো আমার দেহ থেকে প্রান চলে যায়। 
লুঙ্গী, গামছা, ধুতি পাঞ্জাবী এসব পোশাক ভীষণ দামী। 
তোমাদের এই রং বাহারি, এসব আমি তুচ্ছ দেখি। 
কারণ আমি খাঁটি বাঙালী ঘরের সন্তান। 
চাতক যেদিন জল বিনে রইবে অপেক্ষাতে। 
প্রভু এক টুকরো জল দিয়ো এই বাংলার প্রান্তরে। 
কুমড়া শাকটা কতো শুকিয়ে গেছে জল বিনে।
কতো চাষীর জীবন চলে এই সবজি চাষ করে।
চাষীর চাকা চলছে শহরে, হচ্ছে বড় লোক। 
তাহলে বাংলার চাষী অনাহারী, এ কেমন বিচার বলো তো।
যদি পদ্ম আর না ফোটে জলে,
আমি  বাঁচবো না আর এই বাংলার মাঠে। 
চির অমর অক্ষয় থাক আমার সোনার বাংলা। 
আমি দেখবো দুচোখ ভরে।

Tuesday, April 23, 2024

ফেরার বেলায় -- মনোজ দত্ত

 ফেরার বেলায়
 মনোজ দত্ত
 ২৩/০৪/২৪
 ফেরার ঘরে ডাকছে আমায়
 আয় আয় রে আয়,
 ধান রোপণ হয় নি সারা
 এখন কি যাওয়া যায়?

 মাটি গুলি শুকনো ভারি
 করছি যত তাড়াতাড়ি,
 শঙ্খ দূরে বাজায় ভেরি
 বলছে এসো কর্ম সারি।

 বলাকা পাখায় লাল আভা টি
 উঁকি দিয়ে যায়,
 কাজলা তরু বপু মেলে
 আঁধার কায়ে ছায় ।

 বক্ষ বাজে দুরুদুরু
 নীহার পড়া হলো সুরু,
 ঘরে ফিরতে হবে এবার
 এখন কি উপায়?
 মাঠের মায়া ছাড়াই আমার
 হলো ই ভীষণ দায় ।

 রোদে পোড়া আবাদ খানি
 ঘর্ম ঝরা আদরিনী,
 ভালবাসার সে যে আমার
 প্রাণের প্রেমের রাণী।

 মায়ার আধার সহজে কি
  তারে ছাড়া যায়?
 ঘরে যাবো একটু সবুর
 চক্ষে আঁধার ছায় ।

 পথের দিশার শৃগাল টি
 ঐ দিচ্ছে উঁকি,
 গুছিয়ে নিয়ে যাবো আমি
 তারে সমুখে রাখি।

 জীর্ণ বসন উড়ছে কেমন
 মৃদু দখিনা হাওয়ায়,
 সবাই ব্যাকুল আমায় নিয়ে
 দাও গো এবার বিদায়।

Monday, April 22, 2024

নীড় ভাঙ্গা পাখি -- কল্যাণী ব্যানার্জ্জী

নীড় ভাঙ্গা পাখি ।
কলমে - কল্যানী ব্যানার্জ্জী ।
১৯.৩.২৪.
ডাকবনা আর তোমায় আমি
আমার জীবনে জীবন মিলাতে
ডাকবনা আর তোমায় আমি ;দখিনা হাওয়ায়
কৃষ্ণচূড়ার এই খেলাতে।
তোমায় আমি ডাকবনা আর ;নদীর কিনারে বসে পাশাপাশি গোধূলি রংএ তে রাঙ্গাতে।
ডাকবো গো আর শ্রাবণ ধারায়
একসাথে মিলে ভিজতে।
নিশীথ রাতেতে ডাকবনা আর রাত জেগে তারা গুনতে।
আমার আঁধার ঘরেতে আর ডাকবনা তোমার প্রেমের প্রদীপ জ্বালতে।
তুমি যেগো আজ দুরের অথিতি ;
হারিয়ে গেছো যে পাল ছেঁড়া কোনো নৌকায়।
কোন ঘাটে গিয়ে ভিড়েছে যে নাও ;জানিনা তো তার ঠিকানা।
আমি পড়ে আছি নীড় ভাঙ্গা পাখি ;একা একা আর
স্বপ্নের জাল বুনিনা।
যে প্রেমের ছোঁয়া দিয়েছিলে মনে
জানিনা গো তা ভুলবো কেমনে
জানি গো তুমি আর আসবেনা ফিরে
বেলা শেষের এই ঠিকানায়।
যেথা আছো সেথা ভালো থেকো তুমি
এইটুকু মোর কামনা।
আমার স্মৃতিতে অমলিন তুমি ;তাই নিয়ে ঠিক থেকে যাব আমি।
স্মৃতি তো আমায় যাবেনাকো ফেলে
আমার জীবন সন্ধ্যায়।

এক পাত্র জল রেখো -- সুমন

এক পাত্র জল রেখো
                       ---সুমন।
২১.০৪.২০২৪
০৮.০১.১৪৩১
বড্ড অসহায় আজকাল ওরা
তীব্র দাবদাহে,
বাড়িতে প্রবেশ নিষিদ্ধ এমনি
সীমান্ত আবহে।
আহার দুবেলা অমিল তাদের
উচ্ছিষ্ট ডাস্টবিনে,
উঁচু দেওয়ালে ঘরবাড়ি ঘেরা
কষ্টকর জীবনে।
সারাদিন পথে ঘুরেফিরে শুধু
খাওয়ার খোঁজে,
হোটেলে, বাজারে গন্ধ শোঁকে
আশাতীত লাজে।
ছ্যা-ছ্যা, ছিঃ-ছিঃ, দেখে ওদের
মানুষেরা তাড়ায়,
কখনও সখনও লেদনা, লাঠি
যন্ত্রণাই বাড়ায়।
রাজপথে বাচ্চা পড়ছে চাপা
চার-চাকার তলে,  
ছেঁচড়ে বেঁধে তুলে পুর-কর্মী 
ভাগাড়ে ফেলে।
সারমেয় তবু বিশ্বস্ত উপকারী
ইতিহাস দেখো,
ওদের জন্যও এক-পাত্র জল
সংরক্ষিত রেখো।

Sunday, April 21, 2024

নবীন স্বপন -- সূর্য্যোদয় রায়

 নবীন স্বপন
 সূর্য্যোদয় রায়
 ১৫/০৪/২০২৪
ওই দ্যাখো আজ জ্যোর্তিশিখায় তাহার অমল রূপ,
সমুজ্জ্বল ওই আলোক হাসিল বোধহয় অনুপ;
শুভ্রাঙ্গন নতুন আলোক বরনডালায়,
বিষাদ গীতের স্বর্ণমালায়;
সব নব নিন্দিত আলোক সিঞ্চণ ভুলে গিয়ে আমরাও হয়তো চুপ।

আবার নূতন আলোকশিখা জাগিল পরান মাঝে,
স্তূপ পদমূলে ওই কনক আভায় ঋদ্ধ নবিন সাঝে;
চির নূতনের এই সৃজন বানী,
মোর মননে দিব্য মানি;
বিধির বিধান নিত্য জীবনে কেমনে আজকে রাজে।

আসন্ন ওই সন্ধ্যা গীতের প্রত্যাশাতে আঁধার জীবন রাগ,
রেখে যাও সব ধরনীর তলে নব স্বপ্নরেখায় নূতন আলোক দাগ;
পাখির কূজন গীতের কুহুশিসে,
রিক্ত জীবন রঙিন হাসে;
কূজন ধ্বনির সৃজন মননে লাগুক না হয় ফাগ।

খানিক ভুল বুঝি আজ আমার হল ভুল বোঝে তাই সময়,
যে পাপের ভাগি আমি নই গো কখনও কেন লব তার দায়;
অধিক স্বপন রঙিন জীবনে,
কত যুগ আমি ক্ষয়েছি মণণে;
আর বরই বোধহয় ক্ষনিক আলোকে মৃত মানবের প্রায়।

আজকে আবার রাঙিছে পরান দিব্য স্বপন সুখে,
তাই বুঝি আজ নম্র আশায় পোড়ায় এ জীবন দুঃখ;
মহা প্রাণ আজ এই তো জীবন,
তোমার অমল হাওয়ায় দুঃখ গীতের লয়েছি স্মরণ;
আমার এই লাশ খানি আজ শুইয়ে দিও কবরের অধঃমুখে।

দায়িত্বটা কার -- তরুণ ভট্টাচার্য

দায়িত্বটা কার
তরুণ ভট্টাচার্য
১৭/০৪/২০২৪
কি হয়েছে ?   লোক জমেছে ?
বলছে   " রান ওভার "
জানালা থেকে    চালক দেখে
সিধে পগার পার
রয়েছে প'ড়ে     হাত পা নাড়ে
ক'রে চলে চিৎকার
ফটো খ্যাঁচে       যায় না কাছে
দায়িত্বটা কার  ?

মৈত্রী ভুলে              বৈরি তুলে
বিবাদ বাধে চরমে
বিবেক গুণে           কারো মনে
হয় নাতো  'যাই থেমে'
দূরেতে খালি         বাজায় তালি
উস্কানি শতবার
শিশু ও দুটি           বাগিয়ে ঝুঁটি,
দায়িত্বটা কার  ?

মাস পয়লা             যায় একেলা
রকের ছেলেরা জানে
পেনশন পায়      আরো বেশি ব্যয়
ঐটুকু তুলে আনে
মিটিয়ে দেনা               ওষুধ কেনা
হাতে কি থাকবে আর !
রক বাসি ছেলে     সব কেড়ে নিলে !
দায়িত্বটা কার  ?

দিনের শেষে             বাড়িতে আসে
মুখগুলি ঘন কালো
এত দৌড়ঝাঁপ     করেছে মেকআপ
স্বপ্ন কোথায় গেল  ?
আজ বাদে কাল            সংসার হাল
কিভাবে ফেরাবে আর !
বিবেক হানছে            নীতিরা টানছে ,
দায়িত্বটা কার  ?

প্রশ্ন কঠিন উত্তর সহজ -- দিলীপ ঘোষ

প্রশ্ন কঠিন উত্তর সহজ
দিলীপ ঘোষ
২০/০৪/২৪
পাশের বাড়ির ছেলেটা
হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে এলো, বললো --
কাকু, বাবা বড় অসুস্থ, মৃত্যুর সাথে লড়ছে
খুঁজছে আপনাকে
হারুবাবু বললেন, বাথরুম যাব, স্নান করব,
অফিস যাব, অফিস থেকে ফিরে
দেখা করব সন্ধ্যায়
লোকটা মারা গেলো সেদিন দুপুরে

একদিন সন্ধ্যায়, অফিস থেকে ফিরেছেন হারুবাবু
এক ভদ্রমহিলা বাড়ীতে এলো, জিজ্ঞাসা করলো,-
ছেলেটাকে কোন বিষয়ে পড়াই বলুন তো
হারুবাবু  বললেন, এইমাত্র ফিরেছি
এখন হাত পা ধোব, একটু বিশ্রাম নেব, পরে বলবো

পাশের বাড়ির অল্প বয়সী ছেলেটা মারা গেলো
কান্নার রোল, যে শুনছে সেই যাচ্ছে দেখতে
বাড়ি থেকে বের হতে যাচ্ছে হারুবাবু, গিন্নি বললো, 
দূরারোগ্য রোগে মরেছে, যেও না, 
                                  এনো না অসুখ ডেকে
দুঃখের সময় পাশে থাকা লাটে উঠলো
সুবোধ বালকের মত থেকে গেলো ঘরে

পাড়া প্রতিবেশীদের দায় বিপদে
পাশে থাকেন না হারু
লোকের জন্য সময় ব্যয় করতে
হারুবাবু বড় হিসেবি
বউ, ছেলে, মেয়ে নিয়ে তার পৃথিবী
তিনি নাকি ভদ্রলোক, বনেদী
হারুবাবু কি মানুষ, তিনি কি সামাজিক?

চল না হারিয়ে যাই -- প্রতাপ রাকসাম

চলনা হারিয়ে যাই
প্রতাপ রাকসাম
২১/০৪/২০২৪ ইং
ফাগুনের স্নিগ্ধ ভোরে তুমি হঠাৎ 
নীল শাড়ি পড়ে এসে আমায় মুগ্ধ করলে
চঞ্চলা উদাসী হাওয়ায় ভেসে এসে বললেঃ
এই... চলনা আনমনে কোথাও 
হারিয়ে যাই! 
পাখীর কলতানে জনমানবহীন 
সবুজে ঘেরা গভীর অরণ্যে অচেনা 
কোনো মধুুবনে!
আবীর রাঙা নীলাকাশে
সাদা কালো মেঘের ঘনঘটায় আমরাও
রংধুর মতো ভেসে উঠবো!
আমি এক পশলা বৃষ্টি হয়ে তোমার
উতপ্ত হৃদয় ভিজিয়ে দেবো।
আমার আলতো ছোঁয়ায় তুমি স্বস্তির 
নিঃশ্বাস ফেলবে।
ঐ নীল পাহাড়ের ঝর্ণার কলধ্বনি শুনে
মন যদি মাতোয়ারা হয় তখন আমিও তোমায় জড়িয়ে ধরবো।
চলনা প্রিয় আজ হারিয়ে যাই।
আমি সাঁঝবাতি হয়ে তোমার আধাঁর ভূবনে
অনন্তকাল জ্বলবো।
স্রোতস্বিনীর মতো মিশে যাবো 
তোমার হৃদয়ের অথৈ সমুদ্রে।
তুমি ঢেউ হয়ে আমায় ভাসিয়ে নিয়ে 
যাবে স্বপ্নমুখর দেশে।
তুমি আমার জীবনে এসে শিখালে প্রেম ভালোবাসা তুমিই আমার স্বপ্নিল আশা।
হৃদয়ে এঁকেছো নব জীবনের আল্পনা
তুমিই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রেরণা।
আমার নীলাকাশে মুক্ত বিহঙ্গ; চলনা 
প্রিয়তম আজ হারিয়ে যাই অজানায়...।

সারে চমৎকার -- মীরঃ নাজমুল

সারে চমৎকার
মীর নাজমুল
১৮।০৪।২০২৪ ইং
লোকে বলে.... 
যার কিছুই নেই, 
তার আবার হারাবার ভয় কিসের। 
অশান্তির চেয়ে তো...
একলা থাকাই ভালো, 
তবে আবার জ্বালা কিসের।  

প্রতিক্ষার প্রহর,হয় যদি কষ্টের.. 
তবে আর প্রত্যাশা করে লাভ কি। 
আশার প্রদীপ যদি....
নিরাশার অন্ধকারেই রয়ে যায়, 
তবে আর অপেক্ষা কিসের। 

কবির বর্ননায়
ঘর পোড়া গরু,লাল মেঘে ভয় পায়। 
তবু কাটেনা তার মনের অনুভুতি 
থামেনা আবেগ। 

আমি বলি.... 
কিসের এতো ভালোবাসা.. 
কিসের ই বা এতো আবেগ। 
লাল মেঘ,সাদা মেঘ যাই বলি 
ও গরু নেই আর রাখালের। 

ওরে নির্লজ্জ বেহায়া মন 
আজ সে অন্য কারো......
একথা আবার বুঝবি কবে 
........কোন জনমে,কখন। 

তার চেয়ে সেই ভালো, 
ভুলে যাও তারে। 
নইলে পিরিতের অনল 
অভাগা জাতের......... 
পোরাবে অবিরত,জনম,জনমে। 

             ................ মীরঃ নাজমুল।

বসন্ত কাল -- বনানী সাহা

 বসন্ত কাল 
 বনানী সাহা 
১৯/০৪/২০২৪
ভ্রমরের গুনগুন --
নূপুরের রুনঝুন --
শুনে শুনে, দিন কাটে --
বসন্ত কাল টা তে ।

ফুলে ফুলে প্রজাপতি --
পাখা রঙ বাহারি --
রূপে রঙে ভরে দেয় ,
ফাগুনের বেলা টায়।

লাল শিমূল ,কৃষ্ণ চূড়ায় --
লালে লাল রঙ মাখায়।
যেন শুরু ফাগের খেলা ।
মনে করে দেয় এই বেলা ।

কোকিলের কলতান--
ভরে দেয় মন প্রাণ ।
দক্ষিণা বাতাস আর সুনীল আকাশ --
দেখে মনে আসে, কল্পনা একরাশ !

হৃদয়ে লাগে রঙের পরশ !
মনময়ূরী পাখনা মেলে হরষ --
হৃদয়ের বিচরণ কল্পনায় ---
বাস্তবের সাথে যেন ,এক রেখায় মিলায় !

হায়রে ভকতি -- খসরু ভাস্কর

হায়রে ভকতি!
খসরু  ভাস্কর 
১৬/০৪/ ২০২৪ খৃঃ 
ইট পাথর ও খড়কুটোর মাঝে বেঁধেছো ঈশ্বর 
লতাপাতায় গড়ে তোলো বিশ্বাস-স্বপ্নের-ঘর ! 

দামী খাবার ভালো আসন রেখে দাও কার তরে, 
সর্বশক্তিমান শ্মশান-গোরস্থানে রয় কেমন করে ? 

ঘোড়া হাতিতে রথে দেবতা! পুজারী চড়েন গাড়ি, 
কলার ভেলায় চড়েন দেবী যান নাকি শশুর বাড়ি! 

চৌদ্দ তলার প্রাসাদে থেকে মাথা নত করো নীচে
রাজাধিরাজ ত্রিজগৎ পতি, জীবন করলে মিছে।

রাস্তায় ঘুমায় বিশ্ববিধাতা ভাবলোকে রয় প্রাসাদে, 
পানশালায় ওড়ে অর্থ, কেউ ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদে! 

এই যদি হয় সভ্যতার সমাজ--- ঝেঁটিয়ে দূর করো
ধর্ম শিক্ষা বিস্তার করেও আজিকে যুদ্ধ করে মরো।

Sunday, April 14, 2024

আচ্ছা ভাবুন তো -- প্রণব চৌধুরী

আচ্ছা ভাবুন তো ?
প্রণব চৌধুরী
০৬, ০৪, ২০২৪,
আচ্ছা ভাবুন তো ?
মিথ্যাবাদী মিথ্যুক রা যদি,
মিছে, মিছে দেয় মিশিয়ে মিশ্রির মিশ্রনে বালি,
তবু মানুষ, ফিরে না হুঁস,
মানের মর্যাদা তে লাগিয়ে মলম,
মনের মরমের মন মন্দিরের মসনদে,
মলিন মশারি বিছিয়ে,
তারা সকলেই নতজানুতে মানসিংহ,
মনে করে মলয়ে তাদের মন্ত্র আজও মহীয়ান !

ভেবো না,
ইতিহাস কিন্তু প্রতাপাদিত্য কেই পরম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে পারদের উচ্চতায় ৷
পরশুরাম মাতৃহন্তা হয়েও
এই পৃথিবীকে পনেরো বার পরাস্ত করেছিল,
পুরাণের পুঁথি তাই বলে প্রতিবার,
প্রতিজ্ঞা ও প্রতিভাকে যতই পৃথক করে রাখুক না কেনো,
প্রতিবাদী দের প্রতিশ্রুতির প্রখরতার প্রতিবিম্ব,
প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছে যে প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে,
ওহে প্রতিকুর,
আনতে পারবে না প্রলয় এই মিথ্যার প্রাচীর কে ভেঙ্গে দিয়ে ?
পরিজনরা যে আজ পর্যুদস্ত,
প্রতীক্ষায় পলে পলে ৷

আগুনের অগ্নিত্ব যদি হয় অচ্ছুত,
আশমানে অবলোকনে অশণী তবে,
আগামীতে আগাম বার্তার আগমনের আগমনি গানে আনবে না অসীমের আহ্বান ?
অপমানের অন্ন তো আসন্ন তে হবে কি অবগাহন ?
কি বলো অনির্বাণ ?
আসলে,
আশার অসিতে আলস্যের অবশতা নয় তো অমলিন আজ ?
আকাশকুসুমের ধরেছে আজ অনিদ্রা,
তাই আজ কে তার অতীত মনে হয় ৷
অবণী তো রীতিমত অবাক,
বলে কোনটা অভিনয়,
কোনটা আসল,
অভিনেতা রা যখন নেতার আসনের অভিপ্রায়ে আসীন |

সত্যি সেলুকাস !
সবে তো সকাল,
শত সহশ্র অর্কবিন্দু যখন হবে সপ্রতিভ,
তখন সর্যের ফুলে সখা ও সখীদ্বয় ঝুলন যাত্রায় ঝুলবে না তো  ?
সবিশেষে সর্বনাশ তার সলতে গুটিয়ে নিয়ে,
সবকিছু শুকিয়ে,
সেলুট মেরে বলবে না তো,
সবিণয়ে নিবেদন,
সত্যি সত্যি সেলুকাস,
এইটাই তো স্বাধীন ভারত ৷

ক্ষুদ্র বিন্দু -- চন্দনা কুন্ডু

 ক্ষুদ্র বিন্দু
চন্দনা কুন্ডু 
১০/০৪/২০২৪
কী আছে,  ঠাকুর ‌ তোমার হাতের মুঠোয় !
হৃদয়ে আমার ডানা ভাঙার ছটফটানি ।
এত‌ সুখ আছে, এত আনন্দ ‌আছে 
সে আনন্দ চিরস্থায়ী নয়, সব অস্থায়ী সঞ্চয় ।
তবু যে সুখের পনে মন যেতে চায় !
হাজার প্রশ্নের ভিড়ে লেখা দয়াল তোমার সুমুখে ।
কি, আছে তোমার মুঠো করা‌ হাতে ?
ঠিক যেন তীর ছুঁড়ে পথের গভীরে যাওয়া আসা ।
একের পর এক অসংখ্যবার, এরই উত্তর হাতড়াই ।
সকাল সন্ধ্যা পথের পথিক হব ক্লান্তিহীন পায়ে,
আবার তোমার সঙ্গী হব সূর্য অস্ত গেলে 
আত্মদীপ আলোকিত করো, অন্ধকার দূরে রেখে ।
কী আছে তোমার মুঠোয় ! সযতনে রাখো ধরে বুকে
মন করে তোলপাড়,হাজার বছরের অপেক্ষা ।
বিমূর্ত উজ্জ্বলজ্যোতি, এ তোমারই আভা 
ধীরে ধীরে সেই অনির্বাণ দ্যুতির প্রকাশ ।
কোথা থেকে এত আলোয় উদয় হয়
কান্নাভেজা কন্ঠে অস্ফুট উচ্চারণে আমার  প্রার্থনা 
ওই হাতের মুঠো থেকে এক মুঠো আশীর্বাদ দিও প্রভু ।

ভিন্ন তাল -- কথাবিচিত্রিক অসীম

ভিন্ন তাল! 
কথাবিচিত্রক অসীম
১১/৪/২০২৪
নিপু মালাকার! 
মনে প্রাণে ভালবেসে, 
রোমাঞ্চিত হয়ে শেষে!
তপস্যার গিরি খাঁদে,
নিজেকে বন্দী করে নিয়েছে,
নিয়তির সংশোধনে। 
দাড়ি চুলে খুর না তুলে,
ধুতি পড়ে, সাদা কাপড়, 
জরায় সারা গায়ে! 
ভালোবাসার পূজা, 
করে গেছে আজীবন মন মন্দিরে। 
ধূপের মতন জ্বলে পুড়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে,
একলা একাকী! 
নিঃশেষ হয়ে গেছে, 
নিশ্চিহ্নের চির বিদায়ে।
মলিনা থেকে গেছে আজো।।
মালবিকা,- হলো বিধবা! 
শুভ পরিণয় ঘটেছিল, 
ভালোবাসার প্রেমিকের সাথে।
খ্রিস্টের ব্রত কথা টেনে নেয়, 
জীবন যুদ্ধের পরিনামে।
"ঈশ্বর যা যোগ করে, 
মনুষ্য তা বিয়োগ না করুক "
নিয়তির কথা সুরে, 
চিরদিন চিরদূরে! 
বিয়োগের বসবাসের থেকে গেছে, 
বাকি জীবন একলা,- মালবিকা।।
এখন প্রেম আর জীবন সঙ্গী, 
মডেল অনুপাতে আপডেট হয়ে চলে,
খেয়াল খুশিতে হয় পরিবর্তন! 
আর যদি নিয়তির বিষাদ প্রবণতা, 
কখনো কাউকে তুলে নেই চিরতরে! 
বাকিজন একদন্ড অপেক্ষা করে না,
স্মৃতিগুলো মুছে ফেলে, 
আগুনেতে জ্বালায়ে ছাইয়ে।
নতুন বন্ধনের আবদ্ধ হতে,
কৃপণতা করে না সময় বিনষ্টতায়। 
এখন প্রেম বুঝি জোয়ার ভাটার,
অনুকূলে হয়েছে বিলীন।
শোক তাপ বলে কিছু নেই,
এখন শুধু আবেগের দৈন্যতায়, 
আয়োজনে পালনের খেলা।।
স্মৃতি হ্রাস।

একটুখানি ছায়া -- কল্যাণী ব্যানার্জি

একটু খানি ছায়া
কল্যানী ব্যানার্জ্জী 
১০.৪.২৪.
একটু ছায়া দেবে আমায়
ভীষণ ক্লান্ত আমি।
ক্লান্ত স্থলিত চরণ আর চলতে চায়না
একটু ছায়া চাই ;শান্তির ছায়া।
জীবনের সারাটা পথ ;তপ্ত রোদ্দুরে শুধু ছুটে গেছি
এমন একটু ছায়া পাইনি ;যার নিচে দাঁড়িয়ে একটু
বিশ্রাম নেব।
কোথায় গেল সেই পাতা ভরা গাছগুলো
যাদের ছায়ায় দাঁড়িয়ে একটু শান্তি পেতাম।
নেই ;নেই জীবনেও নেই সেই মহীরুহ গুলি
ছায়ার আশ্রয় নিয়ে দাঁড়িয়ে
পথের দু পাশেও নেই একটু বিশ্রাম নেবার মতো ছায়া।
পুরো রাস্তাটা অজগরের পিঠের মতো
রোদ্দুরে চক চক করছে।
পুড়িয়ে দিচ্ছে পথচারীদের
নেই একটু ছায়া ঘেরা বিশ্রামের জায়গা।
তাইতো মানুষ এখন এই তপ্ত জীবনে বা তপ্ত পথে
চলতে চলতে একটু ছায়া না পেয়ে ;
মুখ থুবড়ে পড়ছে আর উঠতে পারছেনা
হসপিটালে তাদের মৃত বলে ঘোষণা করছে।
দেবে একটু ছায়া? বড় প্রয়োজন চলতে চলতে
একটু ছায়ার নিচে বিশ্রামের।
জীবনের পথেই হোক বা চলার পথে
বড় প্রয়োজন একটু শান্তির ছায়া।

Sunday, March 31, 2024

প্রতিবাদী শব্দেরা তালাবন্ধ -- পরেশ চন্দ্র সরকার।

প্রতিবাদী শব্দেরা তালাবন্ধ
পরেশ চন্দ্র সরকার
২২_০৩_২০২৪_ইং

গতানুগতিক সৃজনীশক্তিরা মেরুদণ্ডে অন্ধ
প্রতিবাদী শব্দেরা 'বধির' জেলে তালাবন্ধ।

এক অর্থে বাহাদুরি
চলছে তাই সবসময়ই জ্ঞানদার জ্ঞান বাণী।
তুমি অচ্ছুৎ, ভীতু, কমজুরি,
কিছু ব'লেছো তো ঠুকে দেবো মানহানি।

ঝুঁকে যাওয়া বর্তমান
বিনষ্টের শেষ সোপানে দাঁড়িয়ে ঠায়,
এদের মধ্যে প্রচুর আছে শক্তিমান
অথচ একদা দাপুটে সর্বশক্তি গেছে কোমায়।

কে আর জড়াতে চায়
মৃত্যু থেকে উটকো যাবতীয় ঝামেলায়,
বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার দায়
আমার নয় অন্যের, কেনো শুধু জড়ানো মামলায়?

এসময় আয়েসি, আয়েস ক'রার
ঘুরে বেড়াচ্ছি, জ্ঞান দিচ্ছি, খাচ্ছি ঘুমোচ্ছি দিব্যি!
মূষিক উপাধি খারাপ কিছু কি জীবনধারার?
মার্জার থাকুক স্বভাবসিদ্ধ, আমি তো আছি হেব্বি!

জীবনতরীর মাঝি -- দেব মন্ডল

  জীবনতরীর মাঝি
  দেব মন্ডল 
  ২২/০৩/২০২৪
কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে, জীবন তরী দিক হারিয়ে লাগছে  কোন কিনারায়। 
এখন আকাশে মেঘ আছে, কবে আবার সূর্য উঠবে আমি কিন্তু জানি না। 
মাঝির হাতে বৈঠা দড়ি, যেমন চালায় তেমন চলি। 
কালো মেয়ে নৃত্য করে তাহার তালে জগত মাতে। 
সে যেমন চালায় তেমনি চলি, মা যে আমার রক্ষা কালি। 
সবাই বলে মাটির কালি আমি দেখি সে জীবন তরীর বড় মাঝি। 
চালাচ্ছে নৌকা দিবারাত্রি ভীষণ ভালো কলাকৌশালি। 
কারও ডুবিয়ে বাঁচায়, ডুবিয়ে মারে, পাপের ক্ষমা নাই করে। 
সন্তানের মতো রাখেন আগলে, খ্যাত তিনি জগত মাতা নামে। 
কালো দিয়ে হয় না বিচার, মায়ের কাছে রূপের  আছে কি  দাম। 
বিশ্বাস হারিয়ে ভুল নদীতে তুলেছিলাম  পাল। 
মাঝ নদাীতে ডুবে গেলো আমার সোনার নাও।
সে যেমনে নাচায় তেমনি নাচি অসৎতের সব সঙ্গ ছাড়ি, হিংসাবৃত্তি দূরে ফেলে, সকল ধর্ম সমান দেখে সামনে আগাই পা।  
ভাবি এখন, মানুষ আমি, মানুষের মাঝে বাঁচতে হবে, প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। 
ফিরতে হবে  বাংলার বুকে, রাখতে হবে শ্যামনগর, সাতক্ষীরার মান। 
তবেই জন্ম সার্থক হবে আমার।

খেলাঘর -- তপন চট্টোপাধ্যায়

খেলাঘর 
তপন চট্টোপাধ্যায় 
28.03.24   
    
 কতো কাল পর দেখলাম তোমার মুখ ,       
মেঘে ঢাকা শীর্ণ চাঁদের মতো নিস্প্রভ,
অঘ্রাণের ফসল কাটা মাঠের মতো রিক্ত,..                      অশ্বত্থের ডালে বসা রাতের আঁধার মাখা 
সাথীহারা পাখিটির বিহ্বল চোখের মতো ছিল 
তোমার চোখ ,মৃত নক্ষত্রের মতো আলোহীন শীতল,নিস্তেজ...,    
দেখলাম ব্যস্ততম শহরের চলমান জনতার স্রোতের মাঝে তুমি একাকিনী নিঃসঙ্গ বসে আছ যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে,                                        
তোমার বিষণ্ণ মুখে দেখি  দীর্ঘ ক্লান্তির ছায়া--  
আষাঢ়ের শেষ বিকেলের কাজল কালো মেঘের মতো... মুখ মন্ডলে  এখনো লেগে আছে উৎকণ্ঠার  প্রলেপ , উপেক্ষা নয় আজ আর, হা-হুতোশ করারও কিছু নেই তবুও এক পরম অনুকম্পায় চোখের কোণ ভিজে উঠেছে  নিজের অজান্তেই ...                                        এরকমই হয়তো হবার ছিল , 
অদৃষ্টের কী নির্মম  পরিহাস!   
এই ব্যস্ততার জন অরণ্যে, দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দু'জন  মানুষ অথচ যেন  কতো আলোকবর্ষ দূরে আছি , আজ আর কেউ কারোর খোঁজ রাখে না ,
অথচ একদিন  ...,  থাক সে কথা,
নিষ্ঠুর সময়ের সংঘাতে পৃথিবীর ভাঙাগড়ার খেলায় এমনিভাবেই হয়তো ভেঙে যায় কারো কারোর জীবনের খেলাঘর!!

Sunday, March 17, 2024

তোমার নামে বসন্ত -- জয়া গোস্বামী


তোমার নামে বসন্ত
জয়া গোস্বামী
০৭-০৩-২০২৪
তোমার নামেই প্রতি বার যেন এ ঊষর মনে ,
বাসন্তিকা আসে বারেবারে কৃষ্ণচূড়া বনে।
তোমার জন্য চুপকথারা আবার কথা কয়,
কৃষ্ণচূড়া ফুলের রেণু ওদের অঙ্গে লেগে রয়। 

যৌবনের উদ্দামতায় বয়ে এসেছে  বসন্ত,
তোমাকে দেখে হারিয়ে ফেলি আমি আদি অন্ত।
মন-প্রাণ কেড়ে নেওয়া এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত, 
কৃষ্ণচূড়া ফুলে কেশ সজ্জিত  মন কেন তবে অশান্ত?

তোমার জন্য সেজেছি আমি অপরূপার বেশে,
জোছনার ঝরনা ধারায় চন্দ্রিমা  দেখে আজ হাসে।
কবির গানে বসন্ত ধারায় ফিরে নিজেই আসে,
ধ্বনি ওঠে"এসো হে এসো হে" বসন্ত দখিনা বাতাসে।

এই আনমনা মন, মনের ভেতর  উঠেছে তরঙ্গ,
বাসন্তিকার প্রেমে গোধূলির রঙে দেখি কতোই রঙ্গ। 
তোমার জন্য  এনেছি আবির বাসন্তিকার থেকে,
যদি তোমার জন্য বসন্ত আসে কোকিলের ডাকে।

তোমার জন্য পুষ্পকাননে ভ্রমরের  সকালে গুঞ্জন,
প্রিয়তম বসন্তে করবো কেন বলো মানভঞ্জন ?
নব পল্লবে বৃক্ষরাজি আবার হয়েছে  আচ্ছাদিত, 
ঝরা পাতারা ঝরে আজ দেখো ভূমিতে শায়িত। 

তোমার জন্য তন্দ্রার ঘোর কেটেছে নিশীথ রাতে,
বাসন্তিকার  উষ্ণতা ছোঁয়া তোমার থেকে পেতে।
আমি তো দুরন্ত ফাল্গুন গোটা গায়ে তোমার পরশ মাখি,
কৃষ্ণচূড়া বনে কাঁদে কোকিল তাকে কোথায় রাখি।

Saturday, March 16, 2024

বসন্ত যাপন -- উজ্জ্বল বিশ্বাস

বসন্ত যাপন
উজ্জ্বল বিশ্বাস
 ১৬  / ০৩ / ২০২৪
বসন্ত কে ঘিরে ভাষার শরীরে
কবিরা মাখায় রঙ,
আঙিনার মাঝে নব প্রেম রাজে
শালিকের সমাগম ।

মধুর বাঁশরী কানাইয়া বাজায়
আজও রাধিকার তরে,
রঙের মাধুরী হৃদয়ে চাতুরী
সখারা ঘিরে ধরে ।

প্রেম আলাপন চকিত নয়ন
হৃদয় ফুটন্ত জুঁই,
ভালোবাসি তারে প্রেম বাহুডোরে
প্রেমের পরশে ছুঁই ।

বসন্তের ক্ষণে প্রেমিকের মনে
প্রেমের দোলা লাগে,
আম্র মুকুলের মাতালি ঘ্রাণে
হৃদয়ে বাসনা জাগে ।

রঙের ফাগুনে প্রেমিক যতনে
রাঙায় হৃদয় মন,
ভালোবাসা যার হৃদয় জুড়ে
সে বোঝে এ যতন  ।

নবপত্রাঞ্জলি প্রেমিকের বুলি
সবুজে প্রাণবন্ত,
হৃদয় কানন ফুল সমাগম
প্রেমিক সেজেছে সন্ত  ।

যা কিছু তার আছে আপনার
উজাড় করে দিতে চায়,
দেওয়ার মাঝে সব সুখ তার
হৃদয় খুঁজে পায়  ।

আমিও যতনে প্রেমিকের মনের
মাধুরী কুড়ায়ে আজি,
বসন্ত যাপনে ফাগুনের ক্ষণে
ভরিলাম কবিতার সাজি ।

Wednesday, March 6, 2024

অমর আমার একুশ -- সুখের ঘোড়ই

অমর  আমার একুশ 
সুখেন্দু  ঘোড়ই 
২১/২/২০২৪ 
মিষ্টি ছন্দ বৃষ্টি গন্ধ শুদ্ধ মুগ্ধ ভরসা 
মুক্তি শক্তি কৃষ্টি সৃষ্টি বাংলা মোদের মাতৃভাষা । 
বাংলা আমার বুকের ভাষা আমার মায়ের স্নেহ 
মরণ বাঁচন জীবন যাপন ভুলিতে পারিনা কেহ । 
এপারে গঙ্গা ওপারে পদ্মা দুই বাংলার টান 
নজরুল সুরে মোরা ভাই ভাই হিন্দু- মুসলমান । 
রিক্ত হস্ত সিক্ত করে ভাষার সুধা ধারায় 
তীব্র প্রতিবাদের কথায় শত্রু তাহার শক্তি হারায় । 
গভীর দুখে সুখের বাণী শুনি হৃদে কানাকানি 
বাংলা আমার মায়ের ছোঁয়া যতই করো হানাহানি । 
সেই ভাষাকে রক্ষার তরে দামাল ছেলেরা বিদ্রোহ করে 
শতবাধা উপেক্ষা করে মনে অদম্য সাহস ভরে । 
বাংলা মোদের মাতৃভাষা তাই হবে সে "রাষ্ট্রভাষা"
ফাগুন রাতে দামাল মাতে যতই হোক সর্বনাশা । 
একুশে ফেব্রুয়ারী হয় জোরদারী বাংলা স্বীকৃতি আন্দোলন 
অন্ধ বিচারে নির্বিচারে সিপাহী করিল গুলি বর্ষণ । 
কৃষ্ণচূড়া রঙে রাঙিল ভাসিয়া রাস্তা তাজা খুন 
করুণ কান্নায় ভোলা নাহি যায় সেই আটই ফাগুন । 
রক্ত বৃষ্টি ঝরিল ধরায় সালাম বরকত নিধনে 
রসিক জব্বার সফিক সাথে যায়না দেখা নয়নে । 
জ্বলিল আগুন চোখে মুখে সজন হারা ক্রন্দনে 
শহর নগর গ্রাম প্রান্তর ন্যায় অধিকার আন্দোলনে । 
শহীদ তোমায় শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা কলকাতা পাশাপাশি 
গাহে"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি" ।।

Thursday, February 1, 2024

বিকেলের কান্না -- প্রদীপ কুমার বর

 বিকেলের কান্না
 প্রদীপ কুমার বর
 ০৬/০১/২০২৪


বিষণ্ণ বিকেল চেষ্টা করে খুঁজে পেতে
সকালের এক গুচ্ছ গোলাপের রং!
ইচ্ছে ছিল দিগন্তের নীল ক্যানভাসে,
ছোট্ট মৌটুসীর পাখনায় আঁকি
শান্তির এক পৃথিবী! প্রস্ফুটিত কুসুমের
মিষ্টি ইশারায় মধু-মক্ষিকার অবাধ বিচরণ;
দোয়েল,শ্যামা, কোকিলের মুক্তির মন্ত্র,
যন্ত্র সভ্যতার হাল হকিকত ছেড়ে
শ্যামলিমা প্রকৃতি-মায়ের সকালের ছবি!
সময় শোনে না বারণ,মারণ ব্যাধির 
কঠিন কলম বাধ্য করে আঁকতে হবে
 অন্য কোনো ছবি!

আঁকি, দেবদারু'র 
ডানা কাটার নির্বাক যন্ত্রণা, গন্ধহীন পলাশের অস্ফুট বেদনা,
সাগর কূলে আছড়ে পড়া তরঙ্গের
সকরুণ কান্না!
প্রাচীন জনজাতির অবলুপ্তির কাহিনী,
লুপ্তপ্রায় বন্য পাখপাখালির মৃত্যুরহস্য!

নিম্নচাপ,পার্শ্ব চাপ ক্রমশ মারে টান --
সন্ধ্যার শীতল দেশে! ফেঁসে যাওয়া
টায়ার পারেনা তার উর্দ্ধাংশের  
ভার‌ সহ্য করতে। সকালের সজীবতা 
দিয়েছে হারিয়ে হেলায়। সে যেন
এক বয়স! মানে না বাঁধন,
দূরন্ত ঘূর্ণিঝড়ের দাপুটে চেহারা
হুড়মুড় করে দেয় গুঁড়িয়ে গোপনীয়তার
সমস্ত গ্যালারি।খরচের বহর শহর থেকে দূরে
সরিয়ে দেয় শনিবারের বারবেলায়!
হায়! শিল্পী, তোমার সৃষ্টি আজ
 সুখের উল্লাস হারিয়ে গোধূলির
রক্ত মিশ্রিত অশ্রুজলে আঁকে
   নিরুত্তাপের নষ্টালজিক 
ধূসর পাণ্ডুলিপি।

অন্ধকারের আত্মাহুতি -- প্রদীপ কুমার বর

 অন্ধকারের  আত্মাহুতি
 প্রদীপ কুমার বর
 ২১/০১/২০২৪


বন্ধ্যা রাত্রির আবর্জনা ঠেলে জ্যোতির উদয়,
ইঙ্গিত দেয় অনন্ত প্রসারিত স্নিগ্ধ সামিয়ানায়
প্রতিভাত হবে উষ্ণতার জীবন্ত কিংবদন্তি।
ইতিউতি অন্ধত্বের প্রগাঢ় চুম্বন..
মিথ্যে আস্ফালনের ভোঁতা অস্ত্র মুখ লুকায়
চরম শীতলতার গহন অন্ধকারে!
অঙ্গ প্রত্যঙ্গে বিষাক্ত কীট গোপনে দংশায়,
নেশায় পেশায় বীরত্বের দাবিদার
অহংবোধের সমাধিস্থলে ঢাকা পড়ে।

রাকার নিন্দায় রক্তবীজের বংশ,
ধ্বংসের প্রকট চক্রান্ত করেও‌ ব্যর্থ।
অনর্থক ব্যস্ততা ত্রস্ত হরিণীর পিছনে ধাবমান,
কুস্তির প্যাঁচে ধাঁধা লাগে রশির  বাইরে থাকা
উৎসুক জনতার, বহুল চর্বিত চতুরতা
চঞ্চলের অঞ্চল ছেড়ে বঞ্চনার বেসাতি লয়ে
ধুঁকে মরে শুকতারার বিপরীতে!
আজানুলম্বিত হস্ত যুগল উচ্ছৃঙ্খলতার 
ডিগ্রি অর্জনে সক্ষম, কিন্তু শৃঙ্খলার শিকলে 
বন্দী হতে বুদ্ধির পাঠশালায় প্রয়োজন 
বোধোদয়ের শিক্ষা।

দীক্ষা গ্রহণকারীর হম্বিতম্বি রূপ --
হাসির উদ্রেক ঘটায় অন্ত্যোদয় শ্রেণীর! 
অন্ত্যে উদয় কি আদি সে বিচারের ভার
আগত দিনমণির,যার এক হস্তে কমণ্ডলু ,
অপরাপর হস্তে চক্র,মুদগর, অশান্ত অশনি
ও বরাভয় ! বিষয়ের বিভীষিকা 
যার কলমের কালি --সে মহাজন 
নিন্দুকের গালি, তালি দিয়ে উড়িয়ে দেয়
দিনের বিচ্ছিন্নতাবাদী লোভাতুর রাত্রির 
পরাকাষ্ঠা থেকে। 

শূন্য আরণ্যক জীবন 
পূর্ণতার কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে
লাল, নীল , সবুজের মুক্ত আবাসনে।
পিছুটান ক্ষণিকের অতিথি হিসেবে
হৃদয় তরঙ্গে ছোট্ট একটি ঢিল ছুঁড়ে মারে।
সমুদ্র তট-সদৃশ্য দৃশ্যমান মরণ আর্তনাদ
চির প্রস্থানের বেদি মূলে আছড়ে পড়ে।
ভবিতব্য হয়তো তাই, রাত্রির অনন্ত সলিলে
শোক মালার বিদায় লগ্নে নব রূপে 
আবির্ভূত নিত্য নতুন বেশে নবীন সূর্য।

বধ্যভূমির ত্রাতা হয়ে -- বিজয়া মিশ্র

 বধ্যভূমির ত্রাতা হয়ে
 বিজয়া মিশ্র
 ২৩.০১.২০২৪


জলন্ত আগ্নেয়গিরির মতোই 
একদা আছড়ে পড়েছিলে তুমি নেতাজী সুভাষ
ঘুমন্ত পরপদানত জাতির শিয়রে,
অচিরেই শব্দে বাক্যে উচ্চারণে 
আর সাংগঠনিক দক্ষতায়
তোমায় ঘিরে নির্মিত হয়েছিল
আকাশচুম্বী প্রত্যাশা।
দুর্বলতার ক্ষয়রোগ নিমেষে বিলীন হয়ে
দুর্ভেদী মানববন্ধন গড়ে উঠেছিল প্রত্যয়ে প্রতিজ্ঞায়
পরপদলেহনের অসুখ ভুলে।
তুমি প্রমাণ করেছিলে ন্যায়ের শক্তি কী দুর্ণিবার...
তাইতো আসমুদ্র হিমাচল নয় শুধু
বিদেশের মাটিতেও সাগ্ৰহে অভিনন্দিত হলে অচিরেই।
তাইতো তোমার সাম্যের ইঙ্গিতেই সংগ্ৰামী ঐক্য
কী নিপুণ শৃঙ্খলায় সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে উন্মুখ হয়েছিল! 
সে প্রত্যয়ের কেবল জন্মদিন থাকে
কেবল অপেক্ষা থাকে শতবার পুনর্বার প্রতিপলে...
একটি সে নাম অনিবার্য হয়ে ওঠে
দুর্বহ সমাজ নামক জগদ্দলটা
আবার নবসজ্জার গড়ার প্রয়োজনে।
আশাহীন আলোকস্পর্শহীন আদিমতার দুচোখে
প্রজ্ঞাগ্নি প্রজ্জলনের প্রয়োজনে
নামের মন্ত্রোচ্চারণে শুদ্ধ হোক নিস্পন্দ এ বধ্যভূমি

স্মরণে ফেব্রুয়ারি -- শান্তি পদ মাহান্তি

  স্মরণে ফেব্রুয়ারি
  শান্তি পদ মাহান্তী
   ০১/০২/২০২৪


ভুলতে নারি ফেব্রুয়ারি
ভোলা ভারি শক্ত,
কষ্ট ভারি ফেব্রুয়ারি
ভোলা ভায়ের রক্ত।

তোমার টানে অশ্রু আনে
জাগে ব‍্যথার স্মৃতি,
অনুরাগে সাহস জাগে
ভয়ে পালায় ভীতি।

হৃদয় ভাঙা রক্ত রাঙা
ফেব্রুয়ারি তুমি,
তোমার কথা অমর গাথা
রইবে আবেগ চুমি।

আজ স্মরণে বীর বরণে
আবেগ তুমি ঢালো,
একুশ ভোরে মনের দ্বোরে
চেতন শিখা জ্বালো।

তুমি এলে পাঁপড়ি মেলে
মনের কুসুম কলি,
বুকের তলে জোনাক জ্বলে
আলোর দীপাবলি।

আমরা পারি ফেব্রুয়ারি
বুলেট নিতে বুকে,
আঘাত এলে রক্ত ঢেলে
শত্রুকে দি রুখে।

অশ্রু মায়ের রক্ত ভায়ের
শ‍্যামল মাটি সিক্ত,
বাংলা জাগে সগৌরবে
স্বমহিমায় দীপ্ত।

Wednesday, January 24, 2024

ফিরে এসো নেতাজি -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 ফিরে এসো নেতাজি
 শ্যামল কুমার মিশ্র 
 ২৪.১.২০২৪ 
আজো চোখ বন্ধ করলে দেখতে পায় খোকন 
আলের পাশ দিয়ে দৌড়ে চলেছে এক বালক 
দূরে মিছিল বেরিয়েছে 
নেতাজির জন্মদিনের মিছিল
ওর বয়েসী কত ছেলে মেয়ে 
মুখেমুখে ফিরছে সেই গান---
" কদম কদম বঢ়ায়ে জা 
খুশিকে গীত গায়ে জা..."
ভেতর থেকে কে যেন বলে ওঠে-- 
আরও জোরে পা চালাও খোকা... 

ছেলেটির গতি আরো বেড়ে যায়
আর মাত্র কয়েক গজ 
হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় ছেলেটি
হাতে উঁচু করে ধরা সুভাষের ছবি 
মিছিল থেকে দৌড়ে আসে ছেলেমেয়েরা 
ধুলো মাখা ছেলেটিকে তুলে ধরে রশিদ ভাই
নির্মল হাসি ঝরে পড়ছে তখনও ওর মুখে 
অপলকে তাকিয়ে রয়েছে সুভাষের দিকে 
ধীরে ধীরে মিছিলে সবার মাঝে মিশে যায় ছেলেটি... 

জীবনের অপরাহ্ণে নানা ছবি ফিরে ফিরে আসে 
আজ তোমার জন্মদিনে সব কিছু বড় ম্লান মনে হয় 
তোমার স্বপ্নের ভারতবর্ষ আজ বেনিয়াদের হাতে 
ধর্মের বেনিয়া, ভোটের বেনিয়া, ক্ষমতার বেনিয়া 
২২-শের ভোরে তোমার ভারতবর্ষে হারিয়ে গেছে ধর্মের ঘূর্ণাবর্তে
সহস্র দিয়া আজ সরযূর প্রান্ত জুড়ে...

খোকনের মনে পড়ে এমনি এক ২২-শের কথা 
২২-শের শীতার্ত রাত 
গ্রাহাম স্টেনসকে পুড়িয়ে মেরেছিল একদল মানুষ 
মুখে ছিল এক বিশেষ ঈশ্বর-ধ্বনি
তারও ২৫ টা বছর পেরিয়ে গেছে...

২২-আসে, ২২-যায় 
গ্রাহাম স্টেনস হারিয়ে যায় স্মৃতির পাতায় 
সরযূর দিয়ার আলোক সব শুষে নেয় 
স্টেনসকেও নেয়,অভয়াকেও নেয়...

রাত্রি শেষে  ভোর হয়                
প্রতিবারের মতো তুমি আসো নীরবে নিভৃতে 
গানে, কথায়, অনৃত ভাষণে 
আর সরযূতে ফেলে দেওয়া ফুলের মালায় হয়তো বা তুমি চর্চিত হও 
তুমি নীরব অভিমানে হেঁটে যাও 
একেবারে নিঃশব্দে ধীর পায়ে 
খোকন চিৎকার করে ওঠে---
তুমি যেও না, যেও না নেতাজি 
এখনো কিছু মানুষ তোমারেই চায় 
তুমি তাকিয়ে দেখো নেতাজি 
ওই ছেলেটি এখনো দৌড়চ্ছে 
ওর হাঁটু থেকে রক্ত ঝরছে 
ও দৌড়চ্ছে..দৌড়চ্ছে 
সবার সাথে গলা মিলিয়ে ও গাইছে--
"তোমার আসন শূন্য আজি, হে বীর পূর্ণ কর..."

Tuesday, January 9, 2024

ডাকার মত ডাক পেলে -- দিলীপ ঘোষ


ডাকার মত ডাক পেলে
দিলীপ ঘোষ
০৮/০১/২৪
ডাকার মত ডাক পেলে
সাড়া না-দিয়ে কি থাকা যায়
মনের ঘরে কড়া নাড়লে
দরজা না-খুলে কি থাকা যায়

যে ডাক, হৃদয়েতে আগুন জ্বালায়
যে ডাক, মিলনমেলার বার্তা জানায়
যে ডাকতে, ফুল ভ্রমরের স্পর্শ থাকে
যে ডাকে, আগামীদিনের দিশা থাকে
সে ডাকেতে, সাড়া না-দিয়ে, থাকা যায়

যে ডাকের আওয়াজ ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়
যে ডাক, দেহ মনের জড়তা কাটায়
যে ডাক শুনে, অলস পা-ও হাঁটতে চায়
সে ডাক শুনে, সবার সাথে না-হেঁটে কি থাকা যায়

যে ডাক, আগামীদিনের আশা জাগায়
যে ডাক, সূর্যদয়ের পতাকা ওড়ায়
সে ডাক শুনে, ঘরে কি আর থাকা যায়?

Saturday, January 6, 2024

গুপী রামের চাকরি -- তুষার মন্ডল

গুপী রামের চাকরি 
তুষার মণ্ডল
০৪//০১/২০২৪
আরে আরে চুপি চুপি কর কি হে গুপীরাম গুপ্ত,
এ কি শুনি তুমি নাকি পেয়ে গেছ মাছি মারা স্বত্ব?
সরকারি রীতি নীতি জেনেছ কি লেখা আছে বইটায়?
সাবধানে থেকো ভায়া মশা মাছি মারা ঘোরতর অন্যায়।
এইতো কদিন আগে ও পাড়ার ছোঁড়া প্যালারাম বিটকেল,
থাপ্পড়ে মশা মেরে বাঁধালো সে আহা কি দারুন খিটকেল।
তার দাদা ভূতনাথ দিগগজ পণ্ডিত আইনের বড় আমলা,
হায়!পাইনি রেহাই তবু, বেঁধে যায় সে কি বিদঘুটে ঝামলা।

বাপরে কি কটমটে ভয়ানক বিদঘুটে ঘটনাটা ঘটলো,
গুনধর ছাইপাকা পুলিশের ঠ্যাঙানিটা কপালেতে জুটলো।
মিটে তবু যায়নিকো দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল এজলাস
বেচারা আইনের প্যাঁচে পড়ে, করাবাস করে এলো দু-বছর দশমাস।
দুঃতেরি কি যে বলো?মাছিগুলো ভন ভন বসে কেন বাবুদের খাবারে,
চাকরিটা পেয়ে তাই বসে বসে সারাদিন মাছি মারি ভাঁড়ারে।
শুনেছ কি এই যেন সেইদিন, বাঁকুদের ছোট ছেলে ছকু্রায়
নোংরা খাবার খেয়ে বেচারি যে মারা ওই গেল কলেরায়।।

ছেলে মেয়ে হলো ভায়া মেরে কেটে হাতে গোনা আটটি
চাকরিটা পেয়ে তাই খেয়ে পড়ে বাঁচছি, হাতে কিছু পাচ্ছি।।
দুঃতেরি তার চেয়ে পারো যদি মারো তবে বড়োসড়ো গণ্ডার,
নিশ্চিন্তে জীবনটা কেটে যাবে হাতে পাবে বড়সড়ো ভাণ্ডার।
গুঁজে দিও সেপাইয়ের হাতে কিছু আইনের মুখ হবে বন্ধ,
তাই বলি শোনো ভায়া গণ্ডার মারা নয় একেবারেই মন্দ।
আইনেতে আছে নীতি আর আছে ভীমরতি জানো নিশ্চয়
তাই বলি মশা মাছি মেরোনাকো,এতে ঘটেবেই বিপর্যয়।

Friday, January 5, 2024

শেষবেলার শাহজাহান -- গৌতম তরফদার

 শেষবেলার শাহজাহান
 গৌতম তরফদার
 ০৫.০১.২০২৪
" পাঠশালার খোলামাঠে হেসেখেলে শৈশবসঙ্গী সেখ শাহজাহানের সাথে দিন কাটানো সমর্পণ বসুর ছোটোবেলা - বড়োবেলা একসূত্রে গাঁথা। দু'জনের আজীবন বন্ধুত্বের বন্ধন। পড়াশুনার কারণে একসময় দু'জনের শারীরিক ছাড়াছাড়ি হলেও দু'জন দু'জনের খোঁজখবর রাখে, খুঁটিনাটি জানে-বোঝে। 

            শাহজাহান জমিদারবাড়ির একমাত্র সন্তান। জমিদারতন্ত্র কবেই বিদায় নিয়েছে কিন্তু সেখ পরিবারের ঠাটবাট এখনও কিছুটা হলেও চলমান। শহর থেকে স্নাতক পাঠক্রম শেষ করেই গ্রামে ফিরে গেছে জমিজমা - চাষাবাদের বিপুল কর্মযজ্ঞে। শাহজাহানের অন্তর জুড়ে গ্রামেরই অতি সুন্দরী নিয়ালি খাতুনের বসবাস। তাদের দু'জনের মধ্যে পরিচয় - যোগাযোগ - ভালোবাসারর সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রধান কারিগর বন্ধু সমর্পণই। সম্পর্কের শুরুতেই ভালোবেসে শাহজাহান নিয়ালির নাম রেখেছে বনান্তিকা।

            প্রথমার্ধে শাহজাহানের পরিবারের আপত্তি থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ধুমধাম করে প্রায় জমিদারি মেজাজেই সাদি হয়ে যায় দু'জনের। সংসারজীবন শুরু.....গভীর মনোযোগে সংসারধর্ম পালন....পরপর তিন পুত্র সন্তানের জন্ম....তাদের বড়ো হয়ে ওঠা..... নিয়ালির ইচ্ছে ও অনুরোধে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নিয়ালি ও শাহজাহানের নামে কেনা জায়গায় বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলা.... শাহজাহানের ইচ্ছেতে বৃদ্ধাশ্রমের নাম রাখা 'বনান্তিকা' ..... প্রথম আবাসিকা নিয়ালির আম্মা নুরজাহান বেওয়া..... এগিয়ে যেতে থাকল  শাহজাহান আর সমর্পণের বন্ধুত্বের বয়স। দুজনের চোখেই এখন বয়সী চশমা।

          দুর্ভাগ্যক্রমে অল্পদিন আগে শাহজাহান তার প্রাণপ্রিয়া বনান্তিকাকে হারিয়েছে এক ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায়। সেই থেকেই শাহজাহানের মধ্যে মানসিক ভারসাম্য হারানোর প্রবনতা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ কাঁদে...হঠাৎ হাসে।

        শাহজাহানের তিন ছেলে বড়ো তো হলো কিন্তু মানুষ হলো না। বাড়ি - জমি - জায়গা নিয়ে তিন ভাইয়ের চরম বিবাদ.... ছেলেদের অন্যায় দাবি, জোরজুলুম, অত্যাচার... মারধোর....  কিছুই বাদ গেল না শাহজাহানের উপর দিয়ে । বন্ধু সমর্পণের চেষ্টায় ছেলেদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ওরই নিজহাতে গড়া বৃদ্ধাশ্রম, ' বনান্তিকা'য় শাহজাহানের ঠাঁই হলো........।"

         আজ রবীন্দ্র ভবনের স্টেজে শ্রোতা-দর্শকে ঠাসা হলে নিজের সদ্য লেখা গল্প, "শেষবেলার শাহজাহান" বিখ্যাত কথাশিল্পী মহারণ্য বসু যার ছদ্মনাম সমর্পণ 
স্ব-কন্ঠে গল্প পাঠ শেষ করতেই তুমুল করতালিমুখর হয়ে উঠল। 

          মহারণ্য বসু দৃপ্তকন্ঠে  শেষে বলল," যার জীবনের গল্প আপনাদের পড়ে শোনালাম সে আর কেউ নয়, আমারই বাল্যবন্ধু শাহজাহান। ওই যে হুইল চেয়ারে বসে আছে। " বলেই স্টেজের পুর্ব কোণ দেখিয়ে দিল।

          ভাগ্যক্রমে আজ রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী তার অফিসারদের নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে হাজির ছিলেন। তিনি সটান স্টেজে উঠে এলেন। শাহজাহানের হাত ধরে সহমর্মিতা প্রকাশ করে হঠাৎ এক প্রস্তাব দিলেন," আপনি অনুমতি দিলে ও রাজি থাকলে " বনান্তিকা "কে রাজ্যসরকার অধিগ্রহণ করবে। বৃদ্ধাশ্রমের নাম অবশ্যই অপরিবর্তিত থাকবে আর আপনি আমরণ সম্মানীয় আবাসিক হয়েই থাকবেন। "

            আনন্দের অশ্রুজল শাহজাহানের দু'চোখ গড়িয়ে পড়ল। আশ্চর্যজনকভাবে ঠিক সেই মুহুর্তে শাহজাহানের তিন ছেলে যারা লুকিয়ে আব্বার নামের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিল গুটিগুটি পায়ে স্টেজে উঠে এসে আব্বার পা জড়িয়ে ক্ষমা চাইল।


Thursday, January 4, 2024

কালের নিয়ম -- স্বপন কুমার দাস

  কালের নিয়ম 
  স্বপন কুমার দাস 
  ০২/০১/২০২৪
কালের নিয়মে আসবে যাবে 
এই কথা তো নতুন নয়,
কালদন্ড কোপে দাঁড়িয়ে সবে 
এতে তো নেই নতুন ভয়।

নিয়তির বিধান মানতেই হবে 
ললাট লেখা বিধাতা হাতে,
ক্ষণিকের আসা যাওয়া ভবে 
ভরা প্রেম মায়া মমতাতে।

তবুও আমাদের মায়ার টানে 
প্রবীণ বিসর্জন রোদনে,
উৎসবে মাতি উল্লসিত মনে 
বরণের আহ্বান নবীনে।

প্রবীণের স্থলে নবীন আহ্বান 
নতুন কিছু পাওয়ার আশা,
বরাতে যদি আঁধার অবস্থান 
নবীন ঢেউ শুধুই নিরাশা।

নবীন যদি হয় গো সুমতির 
ধরণী জনের উর্ধগতি,
নবীন যদি হয় গো কুমতির 
ধরণী জনের নিম্নগতি।

সবুজ শীতল স্নেহ ভরা কোলে 
নবীন প্রবীণ মিলন মেলা,
কালের নিয়মে যুগে যুগে চলে 
পৃথিবীর এই লীলাখেলা।
=======================

নতুন রঙের সূর্য -- বলরাম সরকার

 নতুন রঙের সূর্য
 বলরাম সরকার
 ০২/০১/২০২৪
এসো নতুন সকাল আনি
দিই ছড়িয়ে সূর্যের আলো,
আবর্জনায় গেছে ভরে সমাজ
সবাই মিলে করি কাজ ভালো।

দিগন্তে দিই ছড়িয়ে নতুন বার্তা
করি কাজ হাতে হাত লাগায়,
ধুয়ে দিয়ে পাপ সড়িয়ে দুষ্টুকে
 সৎ উদ্দেশে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগায়।

ঘুচিয়ে দিয়ে নোংরা সমাজকে
নিয়ে হাতে নতুন ফুলের ডালা,
এসো দূর করে দিই ঘৃণা দ্বেষ
হাতে হাত রেখে শুরু করি পথ চলা।

হোক বন্ধ দেশে দেশে অবিরাম যুদ্ধ 
বন্ধ হোক খুন ধর্ষণ লুট রাহাজানি ,
পুরাতন ক্ষত আবর্জনা সরিয়ে জঞ্জাল কে
একে অপরের সহযোগিতায়  হোক দূর গ্লানি।

আরন্যক জীবন -- উৎপল অধিকারী

  আরণ্যক জীবন  
  উৎপল অধিকারী 
 ০৩. ০১. ২০২৪  
ক্ষুধা তৃষ্ণা ঘুম অবসাদ বিশ্রাম 
আরণ্যক জীবনে এসবও ছুঁয়ে যায়, 
স্নেহ মমতা ভালবাসার আদিম ছন্দ  
বয়ে চলে ওদের শিরা উপশিরায়।   

ঝড় ঝঞ্ঝা যখন নির্মম উন্মত্ততায়  
কুটির ভাঙে অতি নিষ্ঠুরতায়,  
দুঃসহ ব্যথা সামলে নিতে অরণ্যবাসী 
অবিচল থাকে তবু দৃঢ় ভঙ্গীমায়।   

জীবন বাঁচাতে অরণ্যে অবাধ বিচরণ 
বহু প্রতিকূলতার সাথে তুমুল লড়াই ,  
বিপদের মাঝে গহীন অরণ্য পেরিয়ে  
খাদ্য সংগ্রহে মত্ত ওরা সবাই।     

নতুন সভ্যতার দিনেও শত জনজাতি 
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে থাকে ব্যস্ত,  
সবুজ অরণ্য ওদের স্বর্গসম বাসভূমি  
সভ্যতার অশুভ ইশারায় ওরা সন্ত্রস্ত।    

জনজাতির বাস ডুয়ার্সের বন ছায়ায়  
তবুও শুদ্ধ বাতাস পাওয়া মুশকিল, 
অরণ্য ধ্বংসকারী মানুষের হিংস্র থাবা  
বৃক্ষ নিধনে জীবনের হিসেব গড়মিল।   

==========================

একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট -- সঞ্জিত কুমার মন্ডল

 একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট
    সঞ্জিত কুমার মন্ডল
         ০৩/০১/২৪
         
        বহু বছর পরে আমাদের গ্রামে কালীপদ যুব সংঘ একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে শীতকালেই। ১৫ দিন আগে থেকেই মাঠ পরিষ্কার,রোলার মেশিন দিয়ে সমান করার কাজ চলছে। গ্রামের লোক তাই দেখতে ভিড় করছে। গুঞ্জন উঠছে কালিপদ যুব সংঘ এত টাকা কোথা থেকে পাচ্ছে! অর্থের উৎস সবার জানা হয়ে গেল। বাঁশ দিয়ে তৈরি মাঠের চারিদিকে আটটি বিশাল বাতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। মাঠের চারিদিকে বিশাল বিশাল হোডিং পোস্টার তাতে লেখা আছে "ফুটবল কাপ-২০২৪, নববর্ষে নব আনন্দে জাগো"। খেলা ৩১শে ডিসেম্বর বিকাল থেকে । ডে নাইট খেলা। ৮ দলের টুর্নামেন্ট। প্রায় ছ'টা জেলা থেকে টিম আসছে। প্রত্যেক টিমে বিদেশি প্লেয়াররা আছে যেমন নাইজেরিয়ানরা আছে। পুরস্কার হিসেবে ফাইনালের বিজয়ী দল দেড় লাখ টাকা পুরস্কার পাবে। রানার্স টিম পাবে এক লাখ টাকা। কোয়ার্টার লেভেলে,সেমিফাইনালে এবং ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার আছে। বিশাল বড় স্টেজ। আধুনিক লাইটের ব্যবস্থা। জমজমাটি খেলা। প্রথমে ভেবেছিলাম টিকিট কেটে খেলা দেখতে হবে। তারপর শুনলাম বিনা পয়সায়। বিনা পয়সায় এত বড় খেলা দেখা সুবর্ণ সুযোগ। 
         ৩০ শে ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়ে গেল বক্স বাজানো। সন্ধ্যা থেকেই লাইট পরীক্ষা করা। চারিদিকে আলোয় আলো ঝলমল করে উঠলো আমাদের গ্রাম। খেলার লাইভ ভিডিও দেখানো চলবে,বেশ কিছু পর্দা মাঠ থেকেও অনেক দূরে টানানো আছে। পরদিন গ্রামের লোকেরা দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরেই মাঠের কাছাকাছি জায়গায় যে যার আসন নিয়ে বসে পড়েছে। এখনো দু-তিন ঘন্টা বাকি খেলা শুরু হতে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। মাইকে শুভ নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে। প্রতিটা কথা প্রসঙ্গে ভেসে আসছে "নব আনন্দে জাগো।"বাইরে থেকে ঘোষক,ঘোষিকাদের আনা হয়েছে। তারা তাদের কাজ করে চলেছে। মানুষ উদ্দীপ্ত হয়ে পড়ছে। ছাপানো খেলার চার্ট মাঠের চারিদিকে জনগণকে বিতরণ করা হচ্ছে। সূর্যের আরামদায়ক তাপ গায়ে মেখে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনায় মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। জমজমাটী উদ্বোধনী নাচ গান শুরু হলো। গ্রামের মানুষ অবাক হয়ে দেখল।আনন্দ করতে লাগলো। স্টেজে টেবিলের উপর বিশাল বিশাল ট্রফি, মেডেল সাজানো আছে। বিশিষ্ট ব্যক্তি অতিথিদের স্মারক ও পুষ্প দিয়ে বরণ করা হচ্ছে। হালকা বক্তৃতার পরেই মাঠে নেমে গেল ঝকঝকে জার্সি পরা দুটি টিম। বাঁকুড়া জেলা ও নদীয়া জেলার দুটি টিম। খেলার একটু বাদেই বাঁকুড়া জেলা নদীয়া জেলাকে একটা গোল দিয়ে দিল। দুটো টিমই সুন্দর ছকে খেলছে। দ্বিতীয় অর্ধে নদীয়া গোল শোধ করলো। খেলা উত্তেজনাকর হয়ে উঠলো। অবশেষে গোল শূন্য ট্রাইবেকার। তারপর টসে হেরে গিয়ে বাঁকুড়া পুরস্কার নিয়ে বিদায় নিল।

          দ্বিতীয় খেলা শুরু হতে দেরি হচ্ছিল ঘোষক ঘোষিকাদের বলার ভাষা শেষ হয়ে যাচ্ছিল। জনগণ "নব আনন্দ জাগো" এই কথা শুনে শুনে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল। এক্ষুনি শুরু হবে দ্বিতীয় খেলা সঙ্গে সঙ্গে জনগণের কলরব শোনা গেল। কারণ জনগণ ইতিমধ্যে জেনে গেছে দ্বিতীয় খেলার একটি টিম এখনও এসে পৌঁছায়নি। প্রত্যেক টিমকে টাইম দেওয়া আছে। সেই টাইমেই তাদের খেলতে হবে। এখানে ওয়াকওভার দেওয়ার নিয়ম নেই। এক ঘন্টা থেকে দু ঘন্টা দেরি দেখে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল। "নব আনন্দে জাগো" এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জনগণ ভেংচি কেটে জোর চিৎকার করে উঠছে। ঘোষক ঘোষিকারা আর পেরে উঠছে না। ক্লাবের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া সত্বেও বাঁধভাঙা জলের মতো জনগণ মাঠে নেমে পড়লো। চারিদিকে ভাঙচুর শুরু করে দিল। রাতের ঝলমলে আলোয় সারা মাঠে জনগণ হইহুল্লোড় করতে লাগলো। স্টেজকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়াছুড়ি শুরু হল। সিভিক পুলিশ অল্প কিছু ছিল কিন্তু তারা মার খেয়ে গা ঢাকা দিল। তারপর পুলিশের গাড়ি। আচমকা পুলিশের লাঠিচার্জ। মাঠ ফাঁকা হল। দর্শকও  শূন্য হলো। তারপর কয়েকটা গাড়ি ঢোকার শব্দ। 

                                 (সমাপ্ত)                        

Monday, January 1, 2024

তেইশের জলছবি --- শ্যামল কুমার মিশ্র


 তেইশের জলছবি 
 শ্যামল কুমার মিশ্র 
 ১-১-২০২৪
দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারটার দিকে তাকিয়ে থাকে খোকন
সকালের নরম রোদ্দুর এসে পড়েছে ওর গায়ে 
নানা রঙের আঁকিবুকি খেলা 
সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হারিয়ে যায় খোকন 
চোখের সামনে ভেসে ওঠে নানা ছবি 
কোনটাতে মিছিল নগরী কলকাতা 
কোনটাতে ক্ষমতা দখলের লড়াই 
গান্ধীবুড়ির পাদদেশে এক হাজার দিন বসে 
শত শত যুবক যুবতী
কেউ কথা রাখেনি, ফিরে দেখার সময় কোথায়
একটা গোটা ক্যালেন্ডার হারিয়ে গেল...

ক্যালেন্ডারের শেষ পাতায় এসে আটকে যায় খোকন 
ব্রিগেড জুড়ে হাজারো কন্ঠের গীতা পাঠ 
খোকন যেন শুনতে পাচ্ছে---
"যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতী ভারত
অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাস্যহম
পরিত্রানায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম
ধর্ম সংস্থাপনায় সম্ভবামি যুগে যুগে"...
ক্যালেন্ডারের পাতা জুড়ে হরেক ছবি 
ফুটবল হাতে চলেছে আরো একদল 
হাতে আবার স্বামীজীর ছবি 
'ফুটবল','গীতা পাঠ' সব যেন কেমন গুলিয়ে যায় খোকনের... 

দিনাবসানে ছায়া দীর্ঘায়িত হয় 
জীবনের অপরাহ্ণ বেলায়
দীর্ঘায়িত সেই ছায়া এসে পড়ে
ভেসে ওঠে একটি মুখ
নামহীন, কুলহীন, গোত্রহীন এক বৃদ্ধা ভিক্ষা চায়
কী তার ধর্ম, কী তার পরিচয় 
ক্ষুধার অন্ন খুঁজে মরে ভগবান...

ক্লান্ত অবসন্ন খোকনের দুচোখ জলে ভরে 
তেইশ আর কয়েক দিন বাদে ফিরে যাবে 
বর্ষশেষের দিনগুলো যেন বড় ভারী হয়ে আসে
গাজার হাসপাতালে হাজারো শিশুর মৃত্যু 
ভেসে আসে মায়ের বুকফাটা কান্না 
মারণাস্ত্র কেড়ে নিয়েছে ওদের আদরের ধন 
হিংসা,যুদ্ধ, ক্ষমতার সীমাহীন আস্ফালন... 
ক্রুশবিদ্ধ ঈশ্বরপুত্রের দুচোখেও কি জল? 

রোদ্দুরটা অনেকটা সরে গেছে 
পৌষের শৈত্য মেখে ফিরে যাচ্ছে তেইশ 
খোকন আপন মনে বলে ওঠে-- ধর্ম থাক না অন্তরমহলে 
হৃদয় বিকশিত হোক প্রেম ভালবাসার বন্ধনে
২৪ শে ঘটুক তার নব অভ্যুদয়...

নব অঙ্গীকার --- দুর্গা শংকর দাশ

নব অঙ্গীকার
দুর্গা শংকর দাশ
01,01,2024
নতুন বছর আনে নবীন চেতনা,
   নব উন্মাদনা আর নবীন প্রেরণা।

নব বরষের প্রাতে  নব উপহার,
   নবারুণ রশ্মি স্নাত নব পারাপার।

নব নব চিন্তা যত মানবের মনে,
   নবীন প্রানের দোলা জাগে প্রতিক্ষণে।

মুছে যাক সুপ্রাচীন জ্বরা ক্লেদ গ্লানি,
     লুপ্ত হোক পুরাতন সে অসার বাণী।

নব নব কর্মধারা নব সঞ্জীবনে,
    নিয়োজিত হোক সদা মানব কল্যানে।

নববর্ষ উদযাপন হোক বিধিমত,
     অঙ্গীকার করি সবে একত্রে সতত।

ধরা হোক মধুময় মধুর মলয়,
     শুষ্ক শীর্ন জড়তার ঘটুক প্রলয়।

লুপ্ত হোক ভ্ৰষ্টাচার পাপাচার যত,
     নির্মল সমাজ হোক আজ কুসুমিত।

কাননে প্রান্তরে আর ধরণীর মাঝে,
        পবিত্র চেতন চিন্তা  উঠুক গরজে।

হে মানব! আজি প্রাতে কর অঙ্গীকার,
         মুছে দেবে অতীতের কলঙ্কের ধার।

নববর্ষে করি সবে মনন চিন্তন।
      রাখিবো সবার মান সদা চিরন্তন।