Saturday, April 29, 2023

বই হোক পরম বন্ধু -- গৌতম পাল

 বই হোক পরম বন্ধু
 গৌতম পাল
 ২৮/০৪/২০২৩
*****************************************
ধুলোর প্রলেপ জমেছে লাইব্রেরীর বইগুলিতে,
ধুলোর স্তূপ জমেছে বইয়ের আলমারিতে,
বই গুলো কেঁদে কেঁদে ডাকে বারে বারে,
একটু ভালোবাসা দাও, আদরে হাতে তুলে নাও।
কর্মব্যস্ত দিন, ঘুম থেকে উঠেই ছুটি কাজে,
ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে ফিরি পড়ন্ত বিকেলে,
নেই কোনো অবসর, কখন তুলে নেব বই হাতে?
আজ বিশ্ব পুস্তক দিবসে, বসে পড়ার টেবিলে,
খুব মনে পড়ছে শৈশবের সেইসব রঙিন দিন,
বাবার হাতে পেয়েছিলাম প্রথম বই, বর্ণপরিচয়,
অনাবিল আনন্দে সেদিন হয়েছিলাম লীন!
বইকে ভালোবাসার সেই হয়েছিল শুভ সূচনা,
আজও নতুন বইয়ের গন্ধে মাতাল হয় মন,
শিহরণ জাগে মনের গভীরে অনুক্ষণ।
বইকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন বাবা,
পন্ডিত বিদ্যাসাগর মানুষ গড়ার নিয়ে শপথ,
তৈরি করে দিয়েছিলেন সাফল্যের পথ।
রবি ঠাকুর তুলে দিয়েছিলেন সাহিত্যের ডালি
আমাদের পূর্ণ হয়েছে সকল মনোরথ।
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম মন্ত্রে
আজও শিহরণ জাগে শিরা উপশিরায়, 
বন্দে মাতরম ধ্বনিতে জাগে আসমুদ্র হিমাচল,
তাঁর দীক্ষা আজও হয়নি অচল।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস গুলি
কতবার পড়েছি নেই তার কোনো হিসেব,
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পড়ে নানা উপন্যাস
অমলিন আনন্দ পেয়েছি, আজও আছে তার রেশ!
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, কবি জসীমউদ্দীন থেকে
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বাংলা ভাষার কারিগর,
তাঁদের সৌজন্যেই বাংলার বেড়েছে সৌরভ,
বাঙালি আজ তাই করতে পারে গৌরব!
পন্ডিত বিদ্যাসাগর আপামর বাঙালির শিক্ষাগুরু,
তাঁর হাতেই বাংলা ভাষার হয় হাতে খড়ি,
শৈশবের আমাদের সকলের শিক্ষার হয় শুরু।
সহজ পাঠের মাধ্যমে কবিগুরু প্রাঞ্জল ভাষায়
দিয়েছেন আমাদের জীবনের অমূল্য সকল শিক্ষা,
তাঁর হাত ধরেই পেয়েছি সাফল্য, জীবনের দীক্ষা!
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম 
আজীবন গেয়েছেন সাম্য আর মৈত্রীর গান,
বাঙালি রক্ত দিয়ে বুঝেছে বাংলা ভাষার নাড়ির টান।
সুখে দুখে বিপদে বই আমাদের বাঁচার প্রেরণা,
বই অমূল্য সম্পদ, বই জাগায় আমাদের চেতনা!
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে আমরা হয়ে গেছি দিশেহারা,
ভুলেছি বইয়ের কথা, আজ তাই হয়েছি সৃষ্টি ছাড়া!
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বইয়ের প্রতি অবহেলা
মন থেকে কিছুতেই পারি না মানতে,
বিজ্ঞানের অগ্রগতি দিয়েছে অনেক কিছুই
দিয়েছে সুযোগ আজ সবকিছুই জানতে।
আধুনিক সভ্যতায় এসে ভ্রাম্যমান দূরভাষ যন্ত্র,
রকমারি মুঠোফোন এসেছে হাতে,
বই থেকে ক্রমেই মোরা যাচ্ছি দূরে সড়ে,
মুঠো ফোনকে নিয়েছি হাতের অলংকার করে।
মুঠোফোনের দৌলতে কমেছে বই পড়ার অভ্যাস,
কমে গেছে আমাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ,
আজ বিশ্ব পুস্তক দিবেসে করি আবেদন অবিরত
বইয়ের প্রতি প্রেম যেন হয় ফের জাগ্রত!
কাজের চাপে বই পড়ার অভ্যেস কমলেও
জানি একটুও কমেনি বইয়ের প্রতি ভালোবাসা,
বই যে আমাদের চিরদিনের সাথী,
আজও তৃপ্ত করে আমাদের মনের সকল আশা।
আজও বই না পড়লে অপরিসীম দুঃখ পাই, 
ঘরে ফিরে তোমাকে না পেলে পড়ার টেবিলে
মনে হয় আজ কি যেন করা হয় নাই।
ঘটা করে বইমেলার হয় আয়োজন গ্রাম শহর নগরে,
বইয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চলেছে প্রয়াস,
তবুও বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ার নেই যে আভাস!
তোমার সাথে কাটানো পুরোনো মধুর দিনগুলি
আজও স্মৃতিতে ভেসে আসে প্রতিটি ক্ষণে,
জীবনে যতটুকু পেয়েছি সাফল্য আর সম্মান,
আজও ডুবে আছি তোমার সেই ঋণে!
বইয়ের বিকল্প নেই বিশ্ব সংসারে, বই যে অনন্য,
গুণীজন ভবে বই পড়েই করেছেন জীবন ধন্য।
আজ বিশ্ব বই দিবসে শুধু এইটুকু প্রার্থনা মনে,
বই হোক পরম বন্ধু জীবনের প্রতিটি ক্ষণে!
*********************************************

Friday, April 28, 2023

স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন -- বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য

 স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন
 বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য
 ২৭/০৪/২০২৩
নীরব রাতে অবচেতনে
নিষ্ফলা স্বপ্ন দেখেছি অনেক,
সারবত্তাহীন সেই স্বপ্নগুলো 
দেখেছি কেবলমাত্র আমি একা একা;
সবগুলো মনেও নেই, থাকার কথাও নয়,
এতদিন এই স্বপ্নগুলো ছিল--
 আমার অগ্রগতির একমাত্র বাধা।

এবার থেকে আর বেঘোরে স্বপ্ন দেখব না আমি,
মনের বাগানে নিয়ন্ত্রণ করব স্বপ্নের চাষ;
বাস্তবের চেনা গন্ডিতে-ই আঁকব স্বপ্নের নীলছবি...
দুঃস্বপ্নেও হতে চাই না কোনও নেতা, মন্ত্রী,
হতে চাই না স্বপ্নের ফেরিওয়ালা -যারা নিষ্ঠুর ভাবে
 চুরি করে শৈশব, কৈশোরের স্বপ্ন-রঙিন দিনগুলো;
লটারিতে জিতে রাতারাতি হতে চাই না কোটিপতি,
টাকা দিয়েও কিনতে চাই না জীবন জীবিকা।

শুষ্ক বিবৃতি বক্তৃতা শুনতে বইবো না দলীয় পতাকা,
জাতীয় পতাকার উপর আনুগত্য রবে অটুট,
সত্য,ন্যায়,শ্রম,কলম,ও নীরব প্রতিবাদ হবে অস্ত্র,
সততার স্বচ্ছ তুলিতে রাঙাবো ভাগ্যের ক্যানভাস;
প্রাপ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য
প্রাপ্তি কে কখনোই করব না অস্বীকার ;
অতীতের কাছে শিক্ষা নিয়ে
বর্তমানের রুক্ষ জমিতে করব ভবিষ্যৎ রচনা।

বাস্তবের আতস কাঁচে চিনতে চেষ্টা করব
অসুস্থ পৃথিবী, অশান্ত পরিবেশ, দুস্থ আপনজন,
মায়া, প্রহেলিকা জড়িত মোহিনীর মোহে
হব না বিভ্রান্ত, সমালোচনার তীর্যক বৃশ্চিক দংশন
 আসবে জেনেও পান করব না হতাশার বিষ;

ইতিবাচক বিচারবোধের অঙ্ক কষেই আবিষ্কার করব আধুনিক স্বপ্নের রোজনামচা,
স্বপ্ন দেখতে শেখাব আগামী প্রজন্মের শিশুকে,
স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করব আজকের কিশোর কে,

ডেকে ডেকে দিতে চাই নতুন মন্ত্রণা,
উত্তিষ্ঠ! জাগ্রত!
 বলতে বলতে সগর্বে করব ঘোষণা 
বোধনের মন্ত্র,
আর ডেকে ডেকে বলব সবার কানে কানে ---
নিজেরা জেগে ওঠ,
মনের মধ্যে লালিত স্বপ্ন গুলো সাজিয়ে রাখো ,
অবচেতন মনে স্বপ্ন দেখে সময় নষ্ট না করে --
স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন তৈরি কর,  
সময় থাকতে সচেতন হও-!-- সামাজিক হও!

Thursday, April 27, 2023

মৌন অভিমান -- স্বপন গায়েন

  মৌন অভিমান
  স্বপন গায়েন
  ২৬/০৪/২০২৩
*********************
মরা জ্যোৎস্নায় শুয়ে আছে অতীত
পাথরের বুক থেকে বেরিয়ে আসছে অনাগত বটের চারা
যত্নহীন শৈশবের আকুতি -
ঋতু পরিবর্তন হয়, জীবনের রঙ পাল্টায় না।

তপ্ত রোদ্দুরে পুড়ে যায় সম্পর্কের রঙ
ভালোবাসার উপকূলে নৌকা দাঁড়িয়ে -
ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ঘুম ভাঙছে ভগ্ন সমাজের।

ধনী গরীব যেন দুই পৃথিবী -
ভালোবেসেও ঘর বাঁধা হয় না
হৃদয়ের উপকূলে নৌকা ডুবি হয় বারবার
কেন সম্পর্কের মৌন অভিমানে দাঁড়িয়ে থাকে গরীব।

ধনীর মেয়েরা কেন ভালোবাসে গরীবের এক চিলতে কুঁড়ে ঘর  
আকাশের চাঁদ ধরার স্পর্ধায় জবাই হয় গরীব সন্তান
ধনীরা কখনও দেখতে পায় না তাদের নিজেদের মেয়ের দোষ।

তবুও ভালোবাসা হয় -
হৃদয়ের অন্দরে উঁকি মারে সোহাগের বর্ণমালা
তবুও ভালোবাসার দুয়ারে জ্যোৎস্নার সৌরভ সুগন্ধ ছড়ায়।

              *****

আকাশ অমন রাঙা কেন ? -- শক্তিপদ ঘোষ

    আকাশ অমন রাঙা কেন ?
   শক্তিপদ ঘোষ
   ২৫ , ০৪ , ২০২৩
কালিয়াগঞ্জের সেই স্কুল-যাওয়া মেয়েটা  
আমাদের এই মেকি নগ্ন সভ্যতার
অতিরিক্ত একটা জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকল ।
নিরুপায়ভাবে মরে গিয়ে মেরে গেল 
একটা জাতিকে  ; সে' জাতি বাঙালি জাতি , 
সে' দেশ বাংলা দেশ , রবীন্দ্র নজরুলের দেশ , কবি জীবনানন্দের বড় আবেগের , বড় সোহাগের দেশ ।

আমরা কি সেই দেশে আছি ? তবে 
সেই শিশিরভেজা ঘাস এত অশ্রুতে , এত
রক্তে ভেজে কেন  ? এত স্বপ্ন-খুনের রক্তে
আকাশ অমন রাঙা কেন ? আমরা কি মৃত ,
না জীবিত ? গায়ে চিমটি কেটে বারবার
নিঃসংশয় হয়ে বুঝেছি শেষাবধি , আমরা
মরেও নেই , বেঁচেও নেই ; মরে মরে বেঁচে আছি ।

নিহত সেই কিশোরীর মত রক্তাক্ত যারা মুকুলেই ,
আমি সেই ওদের পায়ে হেঁটে, মাঠের 
আলপথ ভেঙে , অথবা সাইকেলে চড়ে নিত্য
স্কুলে আসা-যাওয়া দেখতে অভ্যস্ত  ।
স্কুলে প্রার্ধনা-সভার লাইনে দাঁড়িয়ে
একসাথে ওদের জাতীয়সঙ্গীত গাইতে দেখেছি ,
ক্লাসরুমের ভিতরে দেখেছি ওদের উপস্থিতির
আলোকসজ্জা , গলায় গলায় ভাব ,
পদে পদে খুনসুটি , ক্লাসরুমের বাইরে 
বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস , ছুটির পর উল্লাসের হল্লা ;
আমি এমনই সেই কিশোরীদের পায়ে পায়ে 
বাবা-মায়ের গড়িয়ে দেওয়া আহ্লাদী নূপুরের
ধ্বনি শুনেছি , পাড়ার সমবয়সীদের সঙ্গে
বৈকালে একজোটে খেলতে দেখেছি এবং
সেই ওদের দুষ্টু মুখের মিষ্টি হাসিটুকু দেখতেই 
আমি অভ্যস্ত ।

সেই তেমন একটা কিশোরীর নিষ্প্রাণ দেহকে
বাংলার পুলিশ যে আসুরিক ভঙ্গিতে
পিচঢালা রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে যেভাবে
টেনে নিয়ে গেছে , দূরদর্শনের পর্দায় তার বীভৎস নারকীয় দৃশ্য দেখে লজ্জায় , ঘৃণায় এবং
আত্মধিক্কারে অনেকবার মরেছি , প্রতিক্ষণ 
এমনই মরতে মরতে বেঁচে আছি ।
দ্রৌপদীর শেষটুকু বাঁচাতে , শুনেছি
আড়ালে থেকে অনিঃশেষ বস্ত্র জুগিয়েছিলেন
স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ  ; এ ক্ষেত্রে
তেমন একটা উদ্যোগের কিচ্ছুটি দেখিনি  ,
বাস্তবে তা'দেখি না কোত্থাও কখনও ।

অগ্নিযুগের ইতিহাসে দেখেছি , সেদিন
এই আমাদের মুখে মুখে ছিল শুকনো বারুদ ,
অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ
খসখসিয়ে দপ করে জ্বলে উঠত ।
আজ স্বার্থের হীন মেঘে ভিজে সেই আমরা
ভিজে দেশলাই কাঠি ।
মেঘমন্দ্রকে তুচ্ছ করে সেই তেমন
গর্জে উঠছে না আমাদের কণ্ঠ  ;
প্রতিবাদে সঙ্ঘবদ্ধভাবে পথে নামছি না , পরিবর্তে 
দ্বিধাগ্রস্ত থেকে জলের গভীরতা মাপছি ,
আড়ালে হিসাব কষছি অনেক ।

অন্যদিকে , হাত পেতে ভিক্ষা নিয়ে আমরা 
আত্মজাদের এমন নির্মম পরিণতি নির্বাক সইছি ,
নিশ্চুপ দেখছি  আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ
ডুবে যাচ্ছে গভীর অন্ধকারে , ঘর ছেড়ে সব
আশ্রয় নিয়েছে পথে , শহরের পোড়া রাজপথে
হামাগুড়ি দিচ্ছে , অন্যের পাপের বোঝা বইছে
নিজেরা দণ্ড নিয়ে ; তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও দেখছি , এমনই সব ভিজে দেশলাই কাঠি ।
------------------------------------------------------------------

Tuesday, April 25, 2023

প্রেম  বিহনে পরম নহে
শান্তি পদ মাহান্তী
২৪/০৪/২০২৩
সৃষ্টি মাঝে স্রষ্টা আছেন
দ্রষ্টা ঠিকই বোঝে,
ভ্রষ্ট লোকে নষ্ট চোখে
কষ্ট করে খোঁজে।

ভন্ড তুমি চন্ড বড়ো
পন্ড করো পূজো,
অহংমত্ত দেখাও সত্ত্ব
সত্তারে না খুঁজো।

চিত্ত মজে বিত্ত নেশায়
নিত্য মরো লোভে,
যামিনী চায় কামিনী রে
কাম জাগে সম্ভোগে।

গুপ্ত আছে সুপ্ত চেতন
মুক্ত করো তারে,
শুদ্ধ মনে যুদ্ধ করো
রুদ্ধ চেতন দ্বারে।

প্রেম জমিলে পরম মিলে
না মজিলে শূন্য,
প্রেমে ধরম প্রেমই পরম
প্রেম ছাড়া নাই পূণ্য।

গোপীগনে যে গোপনে
শ্রী গোবিন্দ ভজে,
বিশ্ব জগত বিস্মরণে
ব‍্যাকুল হয়ে ব্রজে।

হৃদমাঝারে হৃষিকেশে
হন‍্যে হয়ে খোঁজো,
প্রেম বিহনে পরম নহে
মরমে তা বোঝো।

Monday, April 24, 2023

নষ্টালজিয়া -- প্রহ্লাদ ভৌমিক

 নষ্টালজিয়া
 প্রহ্লাদ ভৌমিক 
 ২৩-০৪-২০২৩
কি করো তুমি একা একা একলা বাড়ি
নিজেকে নিজের কাছে রেখে ?
কিছু তো করো ?
খোঁড়াখুঁড়ি তো করতে পারো পাথর
কিংবা মাটি !

নিবিড় সংযমে স্বপ্ন নিয়েও তো থাকতে পারো,
বুকের মধ্যে নিপুণ আঁকতে পারো 
কেঁপে কেঁপে ওঠা না পাওয়া স্পর্শ,
অথবা কোনও শুশ্রূষা না পাওয়ার ক্ষত!

কী আশ্চর্য ভাবো তো,
আমাদের স্বপ্নের দুই প্রান্তে দু'জনের
দু'দুটি  মুখ নিরুদ্বেগ,রুক্ষ ও বিমর্ষ ,

তবুও দু'চোখ যেন কত স্বপ্ন প্রত্যাশী,
তবুও হু হু শব্দে ভরা বুক কি ভীষণ 
ভালোবাসার আহ্বান প্রত্যাশী !

জানোই তো ভালোবাসার যে কী 
ভয়ংকর অস্থিরতা,
সারা শরীরময়  সে যে কী এক অবিশ্বাস্য শিহরন,
আর তার কী এক অদ্ভুত স্পর্শ অনুভব!

অথচ একবার অন্তত ভাবো,
জীবনের নাম যদি হয় ভালোবাসা,
ভালোবাসার নাম নিশ্চিত সে কবিতা ।
এই কথারও কী ভীষণ মুগ্ধতা দেখো,
কী ভীষণ উত্তেজনা ও আশ্চর্য শিহরন, আজও !

Sunday, April 23, 2023

ধোঁকা -- অরবিন্দ মাজী

 ধোঁকা
 অরবিন্দ মাজী
২০/০৪/২০২৩
রিয়া ও অনুপ একপাড়াতেই থাকতো, অনুপ যখন ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র, রিয়া তখন ক্লাস নাইনে পড়তো, এবং তখন থেকেই ওদের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে উঠে। 
ওদের মধ্যে প্রতিদিন একবার অন্তত দেখা হতোই, বিশেষ করে রিয়া বিকেলে অপেক্ষা করে থাকতো কখন অনুপের সাথে সাক্ষাৎ হবে, দুজনেই প্রতিদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি পুকুরের পাড়ে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বসে গল্পগুজব করতো। অনুপের সাথে রিয়ার একদিন দেখা না হলেই যেনো  রিয়ার পেটের ভাত হজম হতো না ,অনুপ ক্লাস দুয়েলভের পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ার পর শহরের একটি কলেজে বি, কম অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়, এবং তারপরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, কম পাশ করে চাকরির চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু কিছুতেই ওর চাকরি হচ্ছিলো না। এম, কম পাশ করার পর সুদীর্ঘ পাঁচ পাঁচটি বছর সে বেকার ছিলো, তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই সে টিউশনি করে হাতখরচের টাকাটা জোগাড় করতো, এদিকে রিয়া বিয়ে পাশ করার পর বাড়িতে বসেই ছিলো, সে কিন্তু চাকরির চেষ্টা চরিত্র করেনি, কেননা ওদের বাড়ির অবস্থা তুলনামূলকভাবে অনুপদের থেকে অনেক ভালো ছিলো, ইতিমধ্যে ঐ গ্ৰমেরই অনুপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অনিমেষ এম, এস, সি পাশ করে একটি ব্যাঙ্কের কেরানির চাকরি পেয়ে যায়, রিয়া ধীরে ধীরে অনিমেষের দিকে ঝুঁকতে থাকে, এবং একসময় সে অনিমেষকেই বিয়ে করে ফেলে। 
   অনুপ বেকার বলেই রিয়া ওর জন্য অপেক্ষা না করে অনিমেষকেই বিয়ে করে। 
অনুপের মধ্যে প্রচন্ড হতাশা তৈরি হয়, খানিকটা অবসাদেও গ্রাস করে ওকে, অবসাদে ভূগতে ভূগতে একসময় সে বৃন্দাবনে চলে গিয়ে একটা আশ্রমের একজন গুরুর কাছে দীক্ষা নেয় এবং বর্তমানে সে আশ্রমের বিভিন্ন কাজ করার পরও হরেকৃষ্ণ, হরেকৃষ্ণ নাম জপ করে কাল অতিবাহিত করে।

Saturday, April 22, 2023

ছেলেবেলা -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 ছেলেবেলা
 শ্যামল কুমার মিশ্র
২১-০৪-২০২৩
সকালের নরম রোদ্দুর এসে পড়েছে খোকনের পড়ার টেবিলে
খবরের কাগজে মুখ গুঁজে খোকন যেন হারিয়ে যায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা মুখ
দড়ি দেওয়া প্যান্টটা টানতে টানতে ও খোকনের মুখোমুখি হয় 
--তুমি এমন করে কী দেখছ?
--তোমায় 
--আমায় তুমি চিনতে পারলে না? 
--না 
--আমি যে তুমি, তোমার শৈশব, তোমার ছেলেবেলা 
ওই তাকিয়ে দেখো ডাইনে সামন্তদের ঠাকুরবাড়ি 
বামে পায়ে চলে রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে 
ওই পথে হেঁটে চলেছে একটা ছোট্ট ছেলে
চিনলে না ওরে? 
খোকনের দুচোখ হাসি ফুটে ওঠে 
ছেলেটি ও হাসছে 
দিনান্তে খিড়কির পুকুরের শাণ বাঁধানো ঘাটে বসে ছেলেটি
কত ছবি, কত প্রশ্ন,কত স্বপ্ন ওর চোখে 
কালো জলের গভীরে কী যক্ষ বাস করে? 
হাজারো প্রশ্ন উঁকি দেয়...

সন্ধ্যা নামে 
ছেলেটি হেঁটে চলেছে..মাঠ পেরিয়ে দূরে, বহুদূরে 
হঠাৎ যেন পথ হারিয়ে ফেলে ছেলেটি 
অভিমুন্যর চক্রব্যূহ যেন.. বেরোনোর পথ নেই
ডাইনে বাঁয়ে পাশে
চেনা জগৎ অচেনা মনে হয় 
ঘুম ভেঙ্গে যায় খোকনের  
খিড়কির পুকুর, জোনাক জ্বলা রাস্তা 
সবই যেন দেখতে পায় খোকন
কিন্তু সেই ছেলেটি? 
অনেক খুঁজেও পায় না খোকন
অন্তহীন যেন সেই খোঁজ...

Friday, April 21, 2023

দাবদাহে জ্বলছে আগুন -- প্রদীপ কুমার মাইতি

 দাবদাহে জ্বলছে আগুন
 প্রদীপ কুমার মাইতি 
 ২০/০৪/২০২৩
তাপ দহে পুড়ছে মানুষ 
পশু-পাখি যত,
মায়ের কোলে ঘামছে শিশু 
কাঁদছে অবিরত।

দাবদাহে জ্বলছে আগুন 
ঘুম আসেনা রাতে, 
সবাই থাকে শীতল ভোরের 
আলোর অপেক্ষাতে।

তীব্র গরমে সবুজ শস্য 
করছে হাহাকার, 
ঘরের মধ্যে থেকেও মানুষ 
নেই কোন নিস্তার। 

আকাশ পানে ডাকছে চাতকী 
পায়না সাড়া তার 
একফোঁটা জল ঠোঁটের মাঝে 
চাইছে বারেবার, 

মাঠঘাট সব পুড়ছে রোদে 
শুকছে পুকুর ডোবা,
পরিবেশ দূষণে প্রকৃতি তাই 
হয়েছে আজ বোবা।

আকাশ ভরা আগুনে আজ
সব যেন বেসুর, 
তীব্র গরম বলো না তুমি 
বর্ষা কতদূর।

Thursday, April 20, 2023

ব্যথার অতীত --সেখ লিয়াকত

.ব্যথার অতীত
.সেখ লিয়াকত
১৯,০৪,২৩
অতীত ব্যাথা স্মরণ হলে
অশ্রু আসে চোখে,
ঝরা পাতা ধূলায় পড়ে 
যেমন কাঁদে শোকে !

নতুন পাতা গাছের ডালে 
আনে নতুন আশা,
ভাঙা বাসা ছেড়ে পাখি
গড়ে  নতুন বাসা । 

কালের স্রোতে দিন চলে যায় 
স্মৃতিটুকু রেখে,
সামনে যেতে নতুন আশা 
নেয় যে সদা ডেকে । 

ভবের মাঠে আসা-যাওয়ার
নিত্য চলে খেলা,
কান্না-হাসি লুকোচুরির
মাঝে কাটে বেলা । 

অতীত ব্যথা পীড়া দিয়ে 
মনকে করে কালো,
সোনা রবি সেটা  মুছে 
আনে নতুন আলো ।

Wednesday, April 19, 2023

চৈতি ফাগুন বৈশাখে -- নিবারণ চন্দ্র দাস

 চৈতি ফাগুন বৈশাখে   
নিবারণ চন্দ্র দাস
 ১৮/০৪/২০২৩
আসে ওই বৈশাখ মহা উল্লাসে,
সাথে কালবৈশাখী  পল্লবে ঘাসে।
পত্র পুষ্প শাখা দোদুল দোলায়,
সকল দহন জ্বালা নিমেষে ভোলায়।

তপ্ত দাহন শেষ চৈত্র বিদায়,
পুরাতন লাগি মন করে হায় হায়।
ছেড়ে যেতে হবে জানি পুরাতন যত,
সাথে নিতে হবে তবু স্বচ্ছ সমুন্নত।

পুরাতন স্মৃতি যত পুরাতন প্রেম,
রবে অন্তরে যেন নিকষিত হেম।
পুরাতন বেদনার অশ্রু বারিধারা,
সাথে লয়ে রয়ে যাব আমি দিশেহারা।

অগ্র গমণ সাথে থাক পিছুটান,
অতীতের লাগি সদা পেতে রব কান।
অতীতের সাথে মিলে ভবিষ্যৎ ভাব,
সমৃদ্ধ এ বর্তমান অনন্য স্বভাব।

বেদনার শতদল,আনন্দধারা,
করে দিক প্রাণ মন পূর্ণ ছন্নছাড়া।
আনন্দ অবগাহন,বিষাদ তিমির,
এই নিয়ে গড়া মোর পর্ণ কুটির।

ফাগুন চৈত্র কিবা হোক বৈশাখ,
থাক মাঙ্গলিক সুর,মঙ্গল শাঁখ।
চিরন্তন প্রবাহের অশ্রুত সঙ্গীত,
কারও হাসি কারও গান,কারও হার জিত?
                       :::-:::

Tuesday, April 18, 2023

ভুলো -- প্রোজ্জল

 ভুলো
 প্রোজ্জ্বল 
১৭/০৪/২৩
 আমরা খুব ভুলো।
করে  জমকালো 
পয়লা জানুয়ারি 
নিউ ইয়ার পালন করি।
আর, নিজেদের নতুন বছর,
কবে যে হয় তার খবর
ভুলে গেছি পরিপাটি।
স্মৃতিতে মা গঙ্গার পলিমাটি
জমেছে পাহাড় সমান।
 জিজ্ঞেস করলেই -
এসো হে বৈশাখ ধরে গান।
ঠোঁটে দিয়ে টান -

 দেঁতো হাসি হেসে বলি--
ভুললে কী বিলকুলই -
বাঙালির  বঙ্গাব্দ - পয়লা বৈশাখ?
 স্মৃতির পাতা গুলো আজ পুড়ে খাক।
 পয়লা বৈশাখ বুঝি বঙ্গীয় রীতি?
না গো না ! এটি হলো বাদশাহি নীতি।

নউরোজ প্রথার ই বঙ্গীয় রূপ,
বৈশাখ পয়লায় হতো ধুম খুব,
কর নেওয়ার  ছিল 
দিন সেই যুগে।
অভাবেতে ভুগে,
এই দিনে বঙ্গীয় প্রজা দিত,
বাদশাহি কর,
গুনে গুনে কর,
বুকের পাঁজরসম,
ট্যাঁকের  কড়িটি,
 পেয়াদার হাতে দিয়ে,
বাঁচাত ভিটেটি।

করের কড়ির এই 
হিসেবেটি রাখতে 
নউরোজি রীতিতে,
পয়লা বোশেখ হল
বছর  শুরুর দিন
নউরোজি রীতি  থেকে নিয়ে ঋণ,
বাংলায় শুরু  হলো বৈশাখী রেওয়াজ,
পপুলার করলেন রবি কবি রাজ।

বাংলার নিজের বছরের শুরু,
হয় তো ছিল অঘ্রানে,
কিন্তু সে কথা ভুলে গেছি কোনখানে।
নিজেরাই না জানি।
অগ্রহায়ন মানে- বছরের শুরু,
যদি এই কথাটুকু মানি,
তাহলেই পরিষ্কার,
নয় বৈশাখ আর,
অঘ্রানই ছিল বাঙালির নিউ ইয়ার।
তখন নতুন  ধান 
উঠত ঘরে,
বাঙালির বুক যেতো আশায় ভরে।
পরিবেশও  থাকত বড়ো মনোরম
উৎসবের জন্য যেরম,
দরকার 
একেবারে তাই
তাই মনে হয় ভাই,
নয় বৈশাখের একে
কিন্তু অঘ্রান থেকে
ছিল বাঙালির বছরের  শুরু,
কিন্তু  ভুলেছি সব,
ইতিহাস যেন শব,
নিশ্চল আছে পড়ে, কুঁচকে ভুরু।

Monday, April 17, 2023

স্বপ্ন দেখি -- সত্যব্রত মন্ডল

 স্বপ্ন দেখি
 সত্যব্রত মন্ডল
 16-04-23
আমি স্বপ্ন দেখি --
 স্বপ্ন দেখি আমি ।
 দিনের আলোয় ও স্বপ্ন যে মিলিয়ে যায় 
   দেখতে দেয় না । 
দিনে যারা স্বপ্ন দেখে 
ওরা যে রাতে দেখতে পায় না । 
রাতের স্বপ্নই দিনের আলোয় ভ'রে
 কর্মে মর্মে ধর্মে প্রেমের পথে ।
  সব স্বপ্ন স্বপ্ন নয়  । যে স্বপ্ন আসে -
অগ্নিহোত্রীর জোত্যির্ময় আলো নির্মল হৃদয়ে ।

 ও স্বপ্নের দেশে নিশিরাত জেগে
  নিতে হয় চোখের জলে ।
 স্বপ্ন লোকের স্বপ্ন গুলো বাসা বাঁধতে চায়
    মর্ত জীবনের নন্দনলোকে
   মানবের  সুখ দুঃখের জীবন
পথের পার্থিব জীবন পাঁচালিতে ।

ও পাঁচালিতে আখর লিপির দিন রজনী
 লিখে গো স্বপ্নের লিপির কারিগর ।
   অলিখন লিপি মানস ব্রহ্ম চেতনার নিরাকারে
    লিপির পাঠোদ্ধার করে স্বপ্ন প্রেমিক।
  ওরাই স্বপ্ন প্রেমিক ওরাই মানব প্রেমিক
  স্বপ্ন ময় স্বর্গের  আনন্দধামের আনন্দ 
 ধরায় নিয়ে আসে ঘরে ঘরে --
    
     
   

 ,

ঘুরেফিরে সেই প্রত্যাবর্তন -- পরেশ চন্দ্র সরকার

 ঘুরেফিরে  সেই প্রত্যাবর্তন
পরেশ চন্দ্র সরকার
১৫_০৪_২০২৩
দেওয়ালেতে 'পিঠ' ঠেকে গেলে-ই
সাময়িকের স্থবিরতায় 'কিংকর্তব্যবিমূঢ়' আঁকে,
সাধারণই নির্ধারণ ক'রে সুযোগ পেলেই
আগামী পাঁচ-টি বছর 'সত্তা' যাবে 'কার' বাঁকে?

মানুষ শিখছে অনেক, পাচ্ছে না দাম
দেখেছে প্রতিশ্রুতির আড়ালেতে মুখোশের রঙ,
দেখেছে ডান দেখেছে বাম কিংবা রাম
দেখছে অতি বামেরও অনুপ্রেরণার সহস্র সঙ।

সাধারণের মনে স্পিন ধ'রেছে আজ
অফ অথবা লেগ, কিংবা গুগলি দুসরা ক্যারাম,
ঠেকে ঠেকে আঁকছে দায়ে ঠেকা সাজ
মস্তিষ্কে আবার কারোর 'নোটা' রোগের ব্যারাম।

মানুষ আর বিশ্বাস ক'রে না কাউকেই
পদ্ধতিতে এবার আনতে চায় আমূল পরিবর্তন,
কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হ'বে জানা নেই
তাই তো সাধারণের মস্তিষ্কেও হাঁটে প্রত্যাবর্তন।

******************************************

Saturday, April 15, 2023

বৈশাখ এলো -- কনক বিশ্বাস


বৈশাখ এলো
--------------     
কনক বিশ্বাস   
--------------------
 ১৪/০৪/২০২৩
      
বৈশাখ এলো বৈশাখ এলো-
পড়ল শোরগোল
ঢাক কুর কুর নাচছে ঢুলি
মুখে নানান বোল।
বটতলাতে পসরা নিয়ে
মেলা বসেছে
ছোট বড় সবাই সেথায়
জড়ো হয়েছে
মুড়ি মুড়কি খেলনা পুতুল
মিষ্টি  মোয়া খই
নাড়ু সন্দেশ   পাটালি গুড়
মাটির ভাড়ে দৈ।
চুড়ি ফিতে রকমারি
সব দোকানের ভিড়ে
ছেলে মেয়ে ছোট বড়
সবাই আছে ঘিরে।
ঘরে ঘরে পূজা পারবন
পিঠে পুলির ধুম
মেয়েরা তাই ব্যাস্ত কাজে
নাইতো চোখে ঘুম।
নতুন শাড়ী  নতুন চুড়ি
মুখে আলপনা
পায়ে আলতা খোপায় পড়া
বেলী  ফুলের মালা।
ঘুড়ি নিয়ে ছুটছে কিশোর
হাতে নাটাই ধরা
নূপুর  পায়ে কিশোরী টি
করছে তাকে তাড়া
চড়ক গাছে চড়কা ঘোরে
বন্ বন্ বন্ করে
তারি তালে সাধক বাউল
নানান গান ধরে।
শহর বনদোর গ্রামে  গনজে
প্রতি ঘরে ঘরে
নতুন বছর বরন করে
না না আরম্বরে।

Thursday, April 13, 2023

শিবপ্রসাদ মন্ডল -- পোড়া চৈত্র

পোড়া চৈত্র।
 শিবপ্রসাদ মণ্ডল।
১১/০৪/২০২৩
"পোড়া চৈত্র" বলুক সবাই, তবুও ঋতু বসন্ত,
এই চৈত্রই বড় মধুর, রূপ আছে এর অনন্ত।

হারিয়ে গেলেও রক্ত পলাশ ,ফুটছে চাঁপা গন্ধরাজ,
তাই না দেখে হাজার ভ্রমর পরছে সবে বিয়ের সাজ।

পুকুরগুলো শুকিয়ে গেলেও মাঝেমাঝেই বৃষ্টি হয়,
বৃষ্টি হলে সবাই খুশি,অশেষ শান্তি এতেই রয়।

কোকিলগুলো কুহু রবে--দিন ও রাতে গান করে,
তাইনা শুনে দোয়েল চাতক, তাদের সুরে সুর ধরে।

পাগলা হাওয়া কেমন যেন,বুকের মাঝে নাও ভাসায়
ছলাৎ ছলাৎ জলের শব্দে,শূন্য হিয়ায় প্রেম জাগায়।

শুকনো ধুলো উড়ছে দেখেও--তবুও মনে হয়না রাগ,
ঐ ধুলো সব বসলে গায়ে-- জন্ম যে নেয় অনুরাগ।

নদীবক্ষে ঢেউগুলো সব,পাড়ের দিকে আসছে ধীরে 
রাখলে দু'পা নদীর জলে--কয়েক বিন্দু পড়ে শিরে।

সব গাছেতেই ধরছে মুকুল, ফুটছে নূতন কিশলয়,
স্বেদবিন্দু জমলে গায়ে, দখিনা হাওয়া--কিসের ভয়!

সন্ধ্যাবেলায় সবাই বসে গল্প করে একমনে,
সুখদুঃখের নানান কথা--ভাগ করে নেয় সবজনে।

তাইতো বলি "পোড়া চৈত্র"--এই কথাটি বড়ই ভুল,
এস চৈত্র বুকের মাঝে, তোমার খোঁপায় দেব ফুল।

Wednesday, April 12, 2023

স্বপন কুমার গায়েন -- গোধূলির চাঁদ বাঁকা

  গোধূলির চাঁদ বাঁকা
  স্বপন গায়েন
  ১১/০৪/২০২৩
*********************
বেঁকে গেছে জীবনের পথ
হাসিটুকু শুধু থাক
উত্থান পতন থাকবে চিরকাল
পাবেও কঠিন বাঁক।

মাথা নিচু অনেক করেছি
বুকেতে বেড়েছে ব্যথা
আর নয়, উঁচু মাথায়
করবো প্রতিবাদী কথা।

ঝড় উঠেছে হৃদয় মাঝে
থাকবো না আর নীরব
গলায় পা দিলেই দেখাবে
মানুষই হবে সরব।

সভ্যতা আজও ডুকরে কাঁদে
গোধূলির চাঁদ বাঁকা
স্বপ্নগুলো রাখবো বাঁচিয়ে
ক্যানভাসের রঙ পাকা।

দখিনা হাওয়ায় আবীর গন্ধ
দিশেহারা হয় জীবন
সুখের ঠিকানা অলিখিত থাক
ঈশ্বরকে করবো স্মরণ।

         ******

Tuesday, April 11, 2023

শুভা রায় -- অভিমানী চৈতি

অভিমানী চৈতি
শুভা রায়
১০/০৪/২০২৩
বসন্তের বিদায় আর নববর্ষের অপেক্ষা....
এরই মাঝে নিশ্চুপে আসে চৈতিবেলা, ঋতুচক্রের শেষ লগনে!

এক বুক অভিমান সে 
করলো উজাড় আমার কাছে;
আমি কেন এত উপেক্ষিত
কোন গুরুত্ব কি আমার আছে ?

সকলে নতুন প্রভাতের অপেক্ষায় কালরাত্রির মত আমাকে বিদায় করতে পারলে বাঁচে!

বোঝালাম তাকে,
রেখো না মনে অভিমান..

তুমিই তো শুষ্ক শাখায় শাখায়
নব পল্লব করেছো দান!
তোমারই জন্য বাতাসে ভাসে
আম্র মুকুলের সুমিষ্ট ঘ্রাণ!
বেলি ফুলের সুবাসে মাতাল
সাঁঝবেলা রোজ দাও উপহার,
চৈতি রাতে একফালি চাঁদ
যেন আকাশের গলে চন্দ্রহার !

সবার তুমি বড্ড প্রিয়
ওগো চৈত্র মাস,
বিশ্বকবির সৃষ্টি মাঝে
তোমার স্থায়ী বাস।

"সেদিন চৈত্র মাস--
তোমার চোখে দেখেছিলেম
আমার সর্বনাশ" !!

Monday, April 10, 2023

লক্ষ্মী কান্ত দাস -- পালাতে পারবে কিনা?

 পালাতে পারবে কিনা ?
 লক্ষ্মী কান্ত দাস ।
০৯.০৪.২০২৩.
এত রূপ নিয়ে তুমি 
বারে বারে সামনে এসে 
দাঁড়ালে ,
আমি মুগ্ধতায় আত্মহারা হলে ,
নিজের কাছে বড্ড অসহায় হই ।
আড়ালে আবডালে যে অপরাধবোধ 
আমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে 
আমার নির্জনতায় নিঃসঙ্গতার অন্ধকারে ,
আমি আমার সৎসাহস হারাই ,
আমার চৈতন্যের আয়নার মুখোমুখি দাঁড়াতে ।
আমি জানি , রূপ আলোর প্রকাশে বদ্ধপরিকর ,
আমি জানি , আগামীতেও তুমি আরো আরও অনেকবার , আলোর সামনে আসবে রূপ নিয়ে ,
আমি জানি না , আলিঙ্গন পিয়াসী জীবন প্রবণতা ,
এমনই মুচকি হেসে, পারবে কি না , নিজের পাপগুলোকে পাশ কাটিয়ে ,
নিজের কাছ থেকে , পালিয়ে যেতে ??

Sunday, April 9, 2023

অসিত কুমার সরকার -- সিনিয়র সিটিজেনশিপের প্রেমপত্র

সিনিয়ার সিটিজেন এর প্রেম পত্র
অসিত কুমার সরকার
৮/৪/২০২৩

গিন্নি ,
          আমি ভাল আছি। সারাদিন তোমার মুখঝামটা না খেয়ে বেশ স্বাধীনভাবে দিন কাটাচ্ছি। তুমি বাবলির মেয়ে মাস-দুয়েকের হলেই ফিরে আসবে, এই কথা ছিল। আজ ঠিক চার মাস আঠারো দিন। কথার খেলাপ করা তোমার চিরকালের স্বভাব। তুমি না থাকাতে আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না। শুধু বলে রাখি দিল্লিতে কিন্তু সাংঘাতিক ঠান্ডা পড়ে। 

সেই সময় যদি কলকাতা ফিরে না এসে ওখানেই থেকে যাও এবং ঠান্ডা লাগাও পরে তার ঝক্কি এই বয়সে আমি পোহাতে পারব না। তোমার তুলসীগাছে রোজ জল দিতে আর সন্ধ্যায় তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালাতেও আমি আর পারছি না......আমার ভাল লাগছে না, এই বলে দিলাম। তাই বলে ভেবো না যে, আমি তোমার দুঃখে কাতর হয়ে পড়েছি। মোটেও তা নয়। শুধু তুলসীগাছ শুকিয়ে গেলে আমাকে যাতে দোষ দিতে না পার, তাই আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম।

আরও  জেনে রাখো যে, আমি কিন্তু মনে করে লাইট-ফ্যানের সুইচ বন্ধ করে বাইরে যাচ্ছি না......সারাদিন ওগুলো চলুক, যা ইচ্ছে হোক। তুমি না থাকাতে এসব নিয়ে কেউ আমাকে খিচ্ খিচ্ করছে না, তাই বেশ শান্তিতেই আছি। শুধু  ভোরবেলা রান্নাঘরেের পাশে যে কাকগুলোকে তুমি বিস্কুট ভেঙে ভেঙে খেতে দাও, তারা তোমাকে দেখতে না পেয়ে প্রবল ডাকাডাকি করছে,সকালবেলা ঘুমের দফারফা। অসহ্য লাগছে আমার.....তোমার অনুপস্থিতির জন্য মোটেই নয়, কাকগুলোর কর্কশ চিৎকারের জন্য। 

আমাদের নাতনিটিকে নিয়ে তুমি খুবই ব্যস্ত বুঝতে পারছি। যে মিনতির মার উপর আমার দেখ্ভালের দায়িত্ব দিয়ে গেছ, সে প্রায়শই রান্নায় নুন বেশী দিচ্ছে। কাল রাত্রে তো দুধ দিয়ে রুটি খেলাম, তরকারি মুখে তুলতে পারি নি। অবশ্য দুধ-রুটি খেতে আমার কোনো অসুবিধা নেই, তবে মিনতির মার হাতের রান্না নিয়ে তোমার  আদিখ্যেতা দেখলে আমার মাঝে মাঝে হাড় পিত্তি চটে যায়,তাই ঘটনাটা জানালাম।

শোনো গিন্নি, তোমার সঙ্গে প্রেমালাপ করার ইচ্ছে বা সময় কোনটাই আমার নেই। তবে সাবধান করে দিচ্ছি, আগামী দশ দিনের মধ্যে তোমার ফিরে আসার খবর যদি না পাই তবে আমি প্রেশারের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেব এই বলে রাখলাম।তোমাকে জব্দ করার উপায় আমার জানা আছে।
একটা কথা বড় জানতে ইচ্ছে করছে। বাবলি তো এখন চাকরি করছে না। ওদের রাতদিনের একটি কাজের মেয়ে রয়েছে.....তবুও তোমাকে এতো প্রয়োজন ? নাকি দিল্লিতে তুমি নতুন কোন প্রেমিকের সন্ধান পেয়েছ?

সন্ধ্যে হয়ে এল। তোমার জন্য দুটি পুজোসংখ্যাও কিনে রেখেছি। বাবলি, জামাই ও ছোট্ট দিদিভাইকে আমার আশীর্বাদ দিও।

ইতি___
বাবলির বাবা

Saturday, April 8, 2023

বিবেকানন্দ রায় বর্ধন -- সাদা কাগজ

সাদা কাগজ
বিবেকানন্দ রায় বর্ধন 
০৪-০৪-২০২৩
চৈত্রের শুরুতেই যেন বর্ষা এসে গেছে, শিউলি জানালার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছে ওর বাবার বোধহয় আজও বাজারে যাওয়া হলনা,গতকাল ও যেতে পারেনি।ভাবতে ভাবতেই বৃষ্টি থেমে গেছে, শিউলির মনে একটুখানি স্বস্তি,দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে
দেখে মা রান্না ঘরে নেই।উনুনের দিকে তাকিয়ে দেখে আগুন জ্বলছে না,তাহলে!
— মা ওমা তুমিকোথায়!
পাশের ঘর থেকে ওর মা বলছে,'কেনরে সোনা,কি হয়েছে।
— মা বৃষ্টি তো থেমেছে বাবা বাজারে যাবে না?
— না রে কিনিয়ে যাবে,দুপুর থেকেই তো বৃষ্টি হচ্ছিল, তাইতো কিছুই তৈরী করিনি।
— এখন থেমেছে,তাহলে এখন তৈরী করে দাওনা যাহয় অল্পকরে কিছু বানিয়ে দাওনা মা!
— এই অল্প সময়ের মধ্যে মটর ভিজবেনা,আমি তরকারি বানাব কিভাবে!
— মা গরম জল দিলেতো তাড়াতাড়ি হয়,দেখনা মা অল্প করে হলেও একটু করে দাওনা মা।
— আচ্ছা তোর বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর এক ঘন্টার মধ্যে তৈরী করে দিলে যাবে কিনা।
— ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি তুমি সব রেডি কর।
— বাবা ওবাবা এক ঘন্টার মধ্যে তোমাকে মা সব রেডি করে দিলে তুমি বাজারে যাবে।যাওনা বাবা আমার কাগজ লাগবে আমার খাতা শেষ হয়ে গেছে। 
— অনেক দেরি  হয়ে যাবে তো মা?
— যাওনা বাবা,শুক্রবার থেকে আমার পরীক্ষা, আমিও যাচ্ছি মাকে যাহায্য করতে।
— আচ্ছা তাহলে যা মা।
শিউলি দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে মাকে বলে,'মা বাবা যাবে বলেছে, চল তাড়াতাড়ি বানিয়ে দেই,বলেই শিউলির ময়দা নিয়ে বসে পড়ে ময়াম তৈরী করার জন্য।
দুইজনে মিলে তাড়াহুড়ো করে তৈরী করে দিলে ওর বাবা রওনা হয়ে যায় বাজারের দিকে।
কিন্ত ওর বাবা বাজারে রওনা দেবার একটু পরেই আরার বৃষ্টি নামে, কখনো ঝিরঝির কখনো আবার জোরে বৃষ্টি পড়তে থাকে।শিউলির মনে আশঙ্কা বাবা কি দোকান খুলে বসতে পেরেছে!নাহলে এতো গুলো তরকারি ময়দা মাখা সবতো নষ্ট হবে,আমার জন্য কতগুলো টাকা লোকসান হবে,ভাবতে ভাততে কখন যে ঘুমিয়ে পরে,হঠাৎ জাগন হয়ে ধড়মড় করে উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত নয়টা। 
— মা ওমা বাবা এখনো আসেনি,বাইরে তখনও ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে।
— নারে মা তোর বাবাতো এখনো আসেনি,আসবেই বা কি করে,বৃষ্টই তো থামছেনা।আজ বোধহয় কিছুই বিক্রি করতে পারেনি,সবই ফেরত আসবে!
রাত্রি তখন দশটা সাড়ে বাজে শিউলির বাবা ভিজে ভিজে বাড়ি আসে, বাবা বাড়ি ফিরলে শিউলি বাবার কাছে আসেনি ও জোর করেছিল বলেই ওর বাবা বাজারে গিয়েছিল তাই ওর মন খারাপ। 
এদিকে শিউলির বাবা বাড়িতে এসে গামছা দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে মেয়েকে ডাকে। শিউলি কাছে আসতেই জামার নিচ দিয়ে বুকের পাশ থেকে এক দিস্তা সাদা কাগজ বের করে মেয়ের হাতে দেয়!

Friday, April 7, 2023

মনোজ দত্ত -- চৈত্র বেলায়

  চৈত্র বেলায়
 মনোজ দত্ত
তারিখ  ০৬/০৪/২৩
ঘন মেঘে ফুলকি চিড়িক
চৈত্রের খর বিকাল বেলায়,
দখিনা মলয় চামর বুলায়।
অশ্বথ শুকনো পাতার হিড়িক
উড়ছে কেমন হাওয়ায় হাওয়ায়।

ধুলির ঝড়ে দিক বালিকা
ভ্রান্ত পথের পথিক হয়ে,
 দিক হারিয়ে পাখায় বয়ে
ঘুরিছে ডেকে হারিয়ে দিশা,
অসীম শুন্যে উড়ে গিয়ে।

ভেড়ির পথে গাভীর সারি
চলছে তেড়ে ডেকে হেঁকে,
রাখাল বালক আকাশ দেখি
 গাইছে বেতাল গানের সারি।

নদীর সীমা ছাড়িয়ে এলো
ঝিরিঝিরিয়ে হালকা বাদল,
তপ্ত মাঠে ভাসিয়ে দিল
শিশির নাওয়া জলের আঁচল।

সবুজ মাঠে হাত ছড়িয়ে
 বরষা গানের পাল তুলেছি,
দমকা হাওয়ায় মেঘের রাশি
এলো ছুটে দখিনা হয়ে।

Thursday, April 6, 2023

রেজাউল করিম বিশ্বাস -- যাযাবর

 যাযাবর 
 রেজাউল করিম বিশ্বাস 
০৫.০৪.২৩
শুনেছ তুমি গরিবের কান্না।দেখেছো অনাথ শিশু।
সব হারাবার ভয় নাই তার।
 তারা যে সবার পিছু।

মশা মাছি বর্ষায় কেমন চলে
যমের সাথে লড়াই  দু'বেলা
তারাও আমাদের দেশের সন্তান।

কেউ যায় আকাশ ছুঁয়ে বিদেশ বিভুঁই
বেলুন চোড়ে হাওয়ার দেশে
খোঁজ রাখেনি পদতলের দূর্বা ঘাসের।

কান পেতে শুনো আজ তোমাদের ও হবে অকালবোধন।
লাটিমের সুতোর মাথায় তোমরা 
লাটিম যে তাদেরই হাতে।

পরিচয়হীনদের পরিচয় পাবে
দেখবে তোমাদের সর্বনাশ
তাঁরা আজ যাযাবর।

চোয়া,, হরিহর পাড়া,, মুর্শিদাবাদ।

Wednesday, April 5, 2023

 নির্বাসন
সঞ্জীব চক্রবর্ত্তী
৪/৪/২০২৩
নির্বাসন দেবে আজ             দেরি করা নয়
দেহে সৈনিকের সাজ          দেখছ এখন
রণক্ষেত্রে মৃত্যু দেখা           ভাঙ্গিনি তখন
চলো রাজি আছি আমি ‌    নেই মনে ভয়।

রক্তপাত দেখা চোখে        যুদ্ধে এটা হয়
আর্তনাদ শুনি কানে         ছুটছি যখন
গোলা ছুটে আসে ঘাড়ে    ভাবিনি কখন
বীর থাকে নিজ কাজে      দেখে যত ক্ষয়।

আমার রক্তে লেখনী ‌      শক্ত হাত ধরে
রাতদিন একাকার           জন্ম নেয় ঘরে।

আবার আসব ফিরে     তোমাদের হয়ে
সময় চলছে ঠিক         চলো যেতে হবে
নদীর বাঁকে আছড়ে     জল যায় বয়ে
শপথ নিলাম আমি       কিছু চিহ্ন রবে।

Tuesday, April 4, 2023

সুজন দাস -- মুখোশের আঁড়ালে


"মুখোশের আঁড়ালে .."
 কবি শ্রী সুজন 
 ০৩/০৪/২০২৩
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রাতজাগা দুটি চোখ ,
চোখের ভাষায় মুখোশের আঁড়ালে অন্য মুখ |
এই মুখের ভাঁজে আজ বৈপরীত্যের অসুখ,
বিপথগামিতার কংকালসার অবয়ব |
হাসির মাঝে হীরক রাজার অট্টহাস্যময় কলরব,
মুখের বলিরেখায় স্পষ্ট পিশাচসম সংশ্রব |
শয়তানি মস্তিষ্কে জিঘাংসার তান্ডব,
নৈতিকতা বিসর্জনে অনৈতিকতার চোরাবালিময় পরাভব |
অপমানবিদ্ধ সাগরে আজ চোয়ালচাপা বিক্ষোভ,
ক্রোধাগ্নির দহনে ভিসুভিয়াসের অগ্নুৎপাতী দেহসৌষ্ঠব |
নিজের প্রতি নিজেই ঘৃনার জ্বালাময়ী উৎসব,
কি ভেবেছিলি আর কি হলো হায় রে বিধি কি তোর বৈভব ?
সময়ের মানদন্ডে আজ তুই মহান হতে শয়তান পদবাচ্য দানব,
'বেলাশেষে' 'শেষের কবিতা'য় 'বিষের বাঁশি'র অসহায় সুরোৎসব |
বিষেশ্বরীর মধুভান্ডে বিষরসের জ্বলনোৎসব,
তবে আর বিলম্ব কিসের ? কিসের অপেক্ষায় তুই হে অভাগা মানব ?
এগিয়ে চল সীমাহীন নীলদিগন্তপানে পিছুটানহীন মুক্তির কলরব,
সেথায় রবে না আপন-পর বা উচচ-নীচ ভেদাভেদের গরব ;
রবে শুধু "শান্তি ওম,শান্তি ওম,হরি ওম, তৎ  সৎ"চিরশান্তির মহোৎসব..|

*********************************

Monday, April 3, 2023

দীপ্তি চৌধুরী ঘোষ -- ঝড়ের তান্ডব

ঝড়ের তাণ্ডব
 কবি দীপ্তি চৌধুরী ঘোষ
০২/০৪/২৩
 নীল আকাশে মেঘের ভেলা
 দমকা হাওয়া বইছে মেলা
 আসবে বুঝি ঝড়,
 নৌকা বাঁধা নদীর ঘাটে
 সূর্যি মামা যাচ্ছে পাটে
 লাগছে ভীষণ ডর |

 ও মাঝি রে দেখ না চেয়ে
 কালবৈশাখী আসছে ধেয়ে
 বাড়ি ফিরে চল,
 সাঁঝের আঁধার ধরল ঘিরে
 কেমন করে ফিরবে নীড়ে
 বল রে মাঝির দল |

 মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে
 টাপুর টুপুর শব্দ করে
 টিনের চালের 'পর,
 গাছের পাতা পড়ছে ঝরে
 বৃষ্টির সাথে শীল যে পড়ে
 মনে লাগছে ডর |

 চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে
 যখন-তখন ঝড় যে আসে
 আকাশ ধরে সাজ,
 ঝড়ের কূপে পড়ে গেলে
 হাওয়ার গতি নেবে ঠেলে
 কখন পড়বে বাজ |

Sunday, April 2, 2023

মৃত্যুঞ্জয় সরকার -- আয় না ফিরে

 আয় না ফিরে
মৃত্যুঞ্জয় সরকার
২৮/০৩/২০২৩
তুই আসবি বলেও আসলিনাতো
আমার সজল ঘন ছায়া বনে,
আমার হৃদয় জোড়া উপল রেণুর
দরাজ আলিঙ্গনে।

তবু তুই কী আমার কষ্ট হবি
শিউরে উঠে আসবি পাশে
হারিয়ে যাবার মুহূর্ততে?

চৈত্র মেঘে তীব্র দহন
ছন্নছাড়া আমার আকাশ,
বৃষ্টি হয়ে আয়নারে তুই
চাতক মনে তপ্ত বুকে।

ওলি তো চায়,পরাগ খুশি
বন বনানী মত্ত,
হাওয়ায় দোলে উষ্ণ আবেগ
হৃদ যমুনায় ঢেউ।

আমার নয়ন তারা উদাস বাউল
বুকের ভিতর মরু ঝড়,
পারবি বৃষ্টি মেঘে স্বস্তি দিতে
হৃদ জোয়ারের অন্ধকূপে।

বসন্ত রঙ রাঙায়না মন
দেয়না মনে বাউল সুর,
হৃদয় পুড়ে,হৃদয় জ্বলে
পলাশ ফাগুন ব্যাভিচারে!

হারিয়ে যাবার মুহূর্ততে
আসবি বৃষ্টি হয়ে আমার কাছে,
কষ্ট বুকে হৃদয় দিয়ে হৃদয় পেতে.....

বিজয়া মিশ্র -- পারফিউম


পারফিউম
 বিজয়া মিশ্র
২৯.০৩.২০২৩
বৃষ্টিতে বাইরে থাকলেই তৃষার চোখে ভাসে সেদিনের কথা।  সেদিন ও ছিল সারাদিন মেঘের ঘনঘটা।বৃষ্টি হবো হবো ক'রেও হচ্ছিল না। এভাবেই চলছিল আগের দুদিন।সেদিনের সকালটা কখনো মেঘ কখনো রোদ্দুর। তৃষা সেদিন একটু সকাল সকাল অফিস থেকে বেরোবে ভেবে রেখেছিল। ঠিক চারটে নাগাদ শুরু হল বৃষ্টি। ঐতিহ্য অপেক্ষা করবে। ভেতরে ভেতরে ছটফট করছিল তৃষা। ছাতাটাও ছিলনা সঙ্গে। 
সব প্ল্যান মাটি করে একনাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছিল। ফোনে ম্যাসেজ চলছিল দুজনের মধ্যে। পরিস্থিতি খারাপ বুঝে ঐতিহ্য গাড়ি নিয়ে চলে এসেছিল অফিসের সামনে। ড্রাইভার থাকলে তৃষা ওদের গাড়ি এড়িয়ে চলে। অগত্যা ঐতিহ্য ড্রাইভার ছেড়ে দিয়ে নিজেই ড্রাইভ ক'রে এসেছিল। সেদিন তৃষা গেট পর্যন্ত আসতে আসতেই কাক ভেজা। কিছুটা দূরের মার্কেটিং কমপ্লেক্স থেকে ছাতা এবং তৃষার পছন্দমতো একসেট পোশাক কিনে চেঞ্জ ক'রে ওরা রেষ্টুরেন্টে গিয়ে টেবিলে বসলো।বৃষ্টি বাড়ছে ক্রমশঃ। খাওয়া দাওয়া সেরে বেরোতে যাবে এমন সময় শুনলো রাস্তা জলে জলময়। গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। ছাতা খুলতেই উড়ে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ বাদে ঝড়বৃষ্টির দাপট কমলেই বেরোবে ভেবে রেস্টুরেন্টেই
অপেক্ষা করছিল ওরা। অনেকদিন পর  ওদের দেখা হয়েছে।কত কী প্ল্যান করেছিল । সব মাটি। এফ এম চালিয়ে কিছু কিছু খবর শোনা যাচ্ছিল। রাত্রি ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ির লোকজন উদ্বিগ্ন।বারবার ফোন করছে। এখন বেরোনোর উপায় নেই। রেষ্টুরেন্ট থেকে একটু দূরের জমা জলে বিদ্যুতের শক লেগে একটি কম বয়সী ছেলে মারা গেছে। এলাকা বিদ্যুৎ বিহীন । 
ট্রাফিক পুলিশ রাস্তার বিবরণ এবং যানচলাচলের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে চলেছে। রেষ্টুরেন্টের মালিক
নিজে কাউকে চলে যেতে বলতে না পারলেও রেষ্টুরেন্ট বন্ধের তোড়জোড় করছিলেন। ভাগ্যিস ঐতিহ্য সঙ্গে আছে, নইলে...। তৃষা উদ্বিগ্ন। সমস্ত দিনের আবেগোচ্ছ্বল সুন্দর ভাবনাগুলো এলোমেলো লাগছে। রেষ্টুরেন্টের জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকটা দেখতে চাইছিল তৃষা। বৃষ্টির ছাট এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ঘষা কাঁচের গায়ে। নিঃশব্দে ঐতিহ্য এসে দাঁড়িয়েছে গা ঘেঁষে। তৃষা চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ। বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছিল না শুধু কিছু দূরের গাছের শাখাগুলোর প্রবল আন্দোলন আর বন্ধ জানালার কাঁচে প্রথম বৃষ্টির পরশে যেন তারই হৃদয়ের কথা ব্যক্ত ক'রে চলছিল সেই বর্ষনশিক্ত রাতে। সমস্ত নিষধাজ্ঞা উড়িয়ে দিয়ে প্রায় মধ্যরাতে বাড়ি ফেরার সময় একটি গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল গাড়ির উপর। ব্যাস। মাথায় চোট পেয়ে ঐতিহ্য চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারায়। তৃষাও গুরুতর আহত হয়েছিল কিন্তু শেষপর্যন্ত সেরে উঠেছিল। 
      সেদিনের পর ঐতিহ্যের বাড়ির লোকজন তৃষা কে পুত্রবধূ হিসেবে গ্ৰহণ করতে চায়নি। তৃষা দায় এড়ায়নি। ঐতিহ্য নিজেও  চায়নি তৃষার অনিশ্চিত,কষ্টকর জীবন। নাছোড় তৃষা দুই বাড়ির অমতেও নিজে ঐতিহ্যের দায়িত্ব নিয়ে সংসার বেঁধেছে, ভালো রাখতে অনেক শ্রম করে। শুধু প্রথম বৃষ্টি জানলার কাঁচে আছড়ে পড়ে  ধারাপাতের নিরন্তর আল্পনা আঁকা সময়ে ঐতিহ্য তার গা ঘেঁষে  দাঁড়ালে আজও তৃষা যেন সেই পারফিউমের টাটকা গন্ধে বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পায়, পূর্ণতা অনুভব করে।

Saturday, April 1, 2023

রানু বর্মন -- রুদ্ধশ্বাস স্মৃতিচারণ

রুদ্ধশ্বাস স্মৃতিচারণ 
রাণু বর্মণ
তারিখ-৩১/০৩/২৩
আর কিছুটা সময় ——
তোমার স্মৃতির আবরণে ঢাকা মুহূর্ত
 ছুঁয়ে আছে গভীর হৃদয়ের তলদেশ।
 সঞ্চিত প্রেম পুটুলি ভরে 
নৌকা পাড়ি দেবে অজানার ডাকে।
 যেতে যেতে বিক্ষিপ্ত ঢেউয়ের মাঝে 
ডুবে যাবে স্মৃতির সম্ভার ;
উদ্দেশ্যহীন যাত্রা পথে সমুদ্র গর্ভে 
অশ্রু জলে নিমগ্ন হবে দেহ ।
শ্বাস রুদ্ধ বাকরুদ্ধ জলমগ্ন হৃদয় প্রকোষ্ঠ
 কিছুক্ষণ অনুভব করবে সেই রাতের পরশ ।
একান্ত ক্ষণ শরীরের তাপে ঘর্মাক্ত দেহ 
শুষ্ক কণ্ঠে দ্রুতলয়ে হৃদস্পন্দনের 
অবর্ণনীয় অনুভূতি —
তলিয়ে যেতে যেতে আরো একবার রোমন্থন।
 কি অপূর্ব তোমার বুক্ষযুগল
 দীঘল নয়নে ওষ্ঠ চুম্বনে এক পার্থিব সুখ।
তখনও তোমরা শরীরের গন্ধ ভেসে আসছে নাকে,
  ভালোবাসার সঙ্গম তীর্থে
 তুমি দুহাত বাড়িয়ে আছো। 
কেউ তার প্রিয় মানুষকে ফেলে যেতে চায় না
 তবুও যেতে হয় ।
শরীর ক্রমশ নিথর হয়ে আসছে
 মস্তিষ্কের স্মৃতিচারণ ধোঁয়াচ্ছন্ন,
 হৃদস্পন্দনের অনুভূতির দরজা বন্ধ
 জলতলে হারিয়ে গেল সব —
সৃষ্টিতে রয়ে গেলে প্রেমের প্রতি মূর্তি তুমি।