Sunday, April 9, 2023

অসিত কুমার সরকার -- সিনিয়র সিটিজেনশিপের প্রেমপত্র

সিনিয়ার সিটিজেন এর প্রেম পত্র
অসিত কুমার সরকার
৮/৪/২০২৩

গিন্নি ,
          আমি ভাল আছি। সারাদিন তোমার মুখঝামটা না খেয়ে বেশ স্বাধীনভাবে দিন কাটাচ্ছি। তুমি বাবলির মেয়ে মাস-দুয়েকের হলেই ফিরে আসবে, এই কথা ছিল। আজ ঠিক চার মাস আঠারো দিন। কথার খেলাপ করা তোমার চিরকালের স্বভাব। তুমি না থাকাতে আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না। শুধু বলে রাখি দিল্লিতে কিন্তু সাংঘাতিক ঠান্ডা পড়ে। 

সেই সময় যদি কলকাতা ফিরে না এসে ওখানেই থেকে যাও এবং ঠান্ডা লাগাও পরে তার ঝক্কি এই বয়সে আমি পোহাতে পারব না। তোমার তুলসীগাছে রোজ জল দিতে আর সন্ধ্যায় তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালাতেও আমি আর পারছি না......আমার ভাল লাগছে না, এই বলে দিলাম। তাই বলে ভেবো না যে, আমি তোমার দুঃখে কাতর হয়ে পড়েছি। মোটেও তা নয়। শুধু তুলসীগাছ শুকিয়ে গেলে আমাকে যাতে দোষ দিতে না পার, তাই আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম।

আরও  জেনে রাখো যে, আমি কিন্তু মনে করে লাইট-ফ্যানের সুইচ বন্ধ করে বাইরে যাচ্ছি না......সারাদিন ওগুলো চলুক, যা ইচ্ছে হোক। তুমি না থাকাতে এসব নিয়ে কেউ আমাকে খিচ্ খিচ্ করছে না, তাই বেশ শান্তিতেই আছি। শুধু  ভোরবেলা রান্নাঘরেের পাশে যে কাকগুলোকে তুমি বিস্কুট ভেঙে ভেঙে খেতে দাও, তারা তোমাকে দেখতে না পেয়ে প্রবল ডাকাডাকি করছে,সকালবেলা ঘুমের দফারফা। অসহ্য লাগছে আমার.....তোমার অনুপস্থিতির জন্য মোটেই নয়, কাকগুলোর কর্কশ চিৎকারের জন্য। 

আমাদের নাতনিটিকে নিয়ে তুমি খুবই ব্যস্ত বুঝতে পারছি। যে মিনতির মার উপর আমার দেখ্ভালের দায়িত্ব দিয়ে গেছ, সে প্রায়শই রান্নায় নুন বেশী দিচ্ছে। কাল রাত্রে তো দুধ দিয়ে রুটি খেলাম, তরকারি মুখে তুলতে পারি নি। অবশ্য দুধ-রুটি খেতে আমার কোনো অসুবিধা নেই, তবে মিনতির মার হাতের রান্না নিয়ে তোমার  আদিখ্যেতা দেখলে আমার মাঝে মাঝে হাড় পিত্তি চটে যায়,তাই ঘটনাটা জানালাম।

শোনো গিন্নি, তোমার সঙ্গে প্রেমালাপ করার ইচ্ছে বা সময় কোনটাই আমার নেই। তবে সাবধান করে দিচ্ছি, আগামী দশ দিনের মধ্যে তোমার ফিরে আসার খবর যদি না পাই তবে আমি প্রেশারের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেব এই বলে রাখলাম।তোমাকে জব্দ করার উপায় আমার জানা আছে।
একটা কথা বড় জানতে ইচ্ছে করছে। বাবলি তো এখন চাকরি করছে না। ওদের রাতদিনের একটি কাজের মেয়ে রয়েছে.....তবুও তোমাকে এতো প্রয়োজন ? নাকি দিল্লিতে তুমি নতুন কোন প্রেমিকের সন্ধান পেয়েছ?

সন্ধ্যে হয়ে এল। তোমার জন্য দুটি পুজোসংখ্যাও কিনে রেখেছি। বাবলি, জামাই ও ছোট্ট দিদিভাইকে আমার আশীর্বাদ দিও।

ইতি___
বাবলির বাবা

No comments: