Wednesday, January 20, 2021

সময়

সময়



সময় যদি ফিরে যেত
বারো বছর আগে ----
অনেক নোনাজলের হিসেব যেত মুছে ,
অনেক লেখনী হারাতো ঘুমহীন রাত ,
নিঃসারে মাথা রেখে ডাইনিংয়ে
বো-বো করে ঘুড়তে থাকা ফ্যানটাও
স্বস্তি পেত ।
কলম ছবি আঁকতো ফুল - নদী - পাখির ,
সময়ের দীর্ঘশ্বাস সুখশ্বাস হয়ে 
ছড়াতো অক্সিজেন ।
আর সোডার বোতলের মত
জীবন উথলে উঠতো আনন্দে .....

সময় যদি ফিরে যেত
কুড়ি বছর আগে ----
প্রাণোচ্ছ্বল জীবন তবে ঝড়না হতো ,
চারপাশে থাকত বাহারী ফুলের সমারোহ ,
উচ্ছ্বাসে গেয়ে উঠত পাখি ,
পাহারের মাথায় দেখা যেত সোনার মুকুট .....

সময়টা এগিয়ে এল বারো বছর পর ---
শ্যাওলায় নোংরা দূষিত জীবন ,
বিন্দু বিন্দু জমে বিষের বাষ্প ,
ঠোঁটের নীচের তিলটা থাকে অপেক্ষায়
শেষরাতে ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষায় ,
বোধে আসে না আর শিউলির সুবাস ,
নিকোটিনের গন্ধে ভরে অবুঝ হৃদয়
সচল মস্তিষ্ক বেছে নেয় আত্মহনন ।

Friday, January 8, 2021

কথারা

কথারা



কথারাও পথ হারায় ---

যে কথা একদিন
কলকল্লোলে ফল্গুধারায় বইত ,
আজ তা নিষ্প্রাণ পাথর ।
ফুলে ফুলে দুলে দুলে বেড়ানো কথাদের
ছন্দ গিয়েছে হারিয়ে ।
রামধনু রঙের পাখনা মেলে যে কথারা
বিচ্ছুরিত হত আকাশে
আজ তারা শুধুই ধূসর
পাখিদের মত ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো কথাদের
ডানা গিয়েছে কাটা ......

কথারাও বিপথগামী হয় -----

আকস্মিক বেপথু জীবনে
অকস্মাৎ খেই হারায়
লাটাইয়ের সুতো ছিঁড়ে উড়ে যাওয়া ঘুড়ির মত
আর ফেরেনা নিজস্ব ঠিকানায়

কথাদেরও অভিমান হয় ------

একরাশ যন্ত্রণা বুকে কথারাও
ফুঁফিয়ে কাঁদে , বালিশ ভেজায়
স্নানঘরে কান্নাভেজা কথারাও
উষ্ণতা চায় একবুক মরুতৃষ্ণা নিয়ে

কথারাও ভালোবাসে -----

স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে দেয় হৃদয় ,
হৃদয়ের শুষ্ক গহ্বরে তোলে জলতরঙ্গের অনুরণন
প্রাণে আনে অক্সিজেনের জোয়ার
কোষে কোষে ভালোবাসার উন্মাদনা
কথার পুষ্পবৃষ্টিতেই উর্বর হয় সৃষ্টি
ফুল হাসে শুভেচ্ছায় ।

Tuesday, January 5, 2021

আমি যে পথশিশু

আমি যে পথশিশু



ক্ষুধার তাড়নায় পেট জ্বলে যায়
খাইনি সারাদিন কিছু ,
 দে না দিদি দুটো পয়সা --
আমি যে পথশিশু ।

গায়ে আমার নোংরা জামা ,
মাথার চুলে জটা ,
তাই বুঝি তোর ঘেন্না লাগে,
ছুড়িস পয়সা কটা ?

তোদের কাছে সামান্য যা ,
আমার পেট ভরায় তা --
তবু তোরা মেরে তাড়াস
যেন ঝামেলাটা !

বাবার স্নেহ , মায়ের আদর 
তোদের জন্য সব ----
আমার আছে শূণ্য জীবন
ক্ষিদের কলরব ।

তোদের ছেলে ইস্কুলে যায় --
পরে নতুন পোষাক
আমার পোষাক ছিন্ন শত ,
পোষাকময় দাগ ।

চুলের চরুনি চোখে দেখিনি ,
পাইনি পায়ে জুতো ,
দুটো পয়সা পেলে পেটটা 
ভরবে দিনের মতো ।

তোদের ছেলে থাক না সুখে ,
খাক না দুধে ভাত ,
আমার শুধু একটি বায়না ---
কাটুক আঁধার রাত ।

আমিও পাবো জামা , জুতো ,
ব্যাগভর্তি বই ---
হইনা আমি অনাথ শিশু ,
পথশিশুই সই ।

Thursday, December 24, 2020

ওরা খালপাড়ে থাকে

ওরা খালপাড়ে থাকে


কৃষ্ণা দ্বাদশীর চাঁদ তখন মধ্যগগনে --
কুয়াশামাখা রাতের আদুল গায়ে হিমেল পরশ ,
বহুদিনের দাবদাহের জ্বালার অবসান ,
দু'হাত ছড়িয়ে উপভোগ করছে সময় ......

খালপাড়ের বস্তিতে একটুকরো বিছানায় 
জ্বরে পুড়ছে সাত বছরের শিশুপুত্র ,
শিয়রে বড় বোন -- বছর আটের ।
সন্ধ্যার অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে
মা গিয়েছে কাজে --- অন্ধকার গলিপথে ,
যে পথে শহরের বিত্তবান বাবুরা
দু'চোখে কামনার আগুন ছড়িয়ে দাঁড়ায় ,
তাদের ঠোঁটের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কষাটে লালসা ,
শরীর পেতে শুষে নিতে হয় তাদের ধর্ষকাম পৌরুষ
তারপর সন্তানধারণের যন্ত্রনায় ছুটে যেতে হয় বস্তিতে --

একফালি চাঁদের আলো তাদের জীবনে
পূর্ণিমা হয়ে আসেনা কখনো ,
পিতৃহীন অনাথ তর্পণে তাদের আহুতি হয় ,
রাতের অন্ধকারেই মিলিয়ে যায় তাদের পরিচয় ,
সভ্যতার আগুনের স্পর্শ 
উষ্ণতার আবেশ বয়ে আনে না তাদের জন্য

ভাঙা চালের ফাঁক দিয়ে পিছলে আসে
একফালি আকাঙ্ক্ষার রোদ্দুর ।
তাকেই আঁকড়ে ধরে শিশুমন ,
ভবিষ্যতের কল্পনায় বাড়ে ।

মায়ের মমতা আসে দিনান্তে ভাতের সুঘ্রাণে ।
একমুঠো ভাত , একটু রোদ্দুর তাদের প্রত্যাশার দর্পণ ।

ওরা যে খালপাড়ে থাকে ।

Wednesday, December 16, 2020

ভালোবাসার চাদর


ভালোবাসার চাদর

ভালোবাসায় মোড়া চাদর পেয়েছি এক
আরোহণ করেছি তাতে --
নীল আকাশে সাদা মেঘের মত
চাদর চলেছে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে ---
কত মাঠ-ঘাট , নদী-সাগর , পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে
চাদর পৌছেছে এক মায়াবি জগতে
স্বর্ণালী আভায় পূর্ণ সে জগৎ ।

বর্তমানের কোলাহল-ক্রন্দন-বঞ্চনা-জিঘাংসা
স্তিমিত হচ্ছে ক্রমে ---
না-পাওয়ারা পূর্ণ হচ্ছে সব পেয়েছির দেশে ,
নিরাশার অন্ধকার ডুবে যাচ্ছে আশার আলোকে ,
মাঠ উপছে পড়ছে গর্ভবতী সোনালী ধানে ,
দু'হাতে গ্রহণ করছি অমৃত-প্রদায়ী কল্লোলিনীর অঞ্জলি ,
পাখির কুজনে কলরিত আত্মার সুজন ,
নিষ্পাপ ফুলের হাসিতে ঝরছে শিশুর সারল্য ,

ভাষাহীন ভাসমান ভেলা ভাসিয়ে চলেছে দূরে ---
অন্তহীন আশার খেয়াল-খুশির খুনশুঁটি গায়ে মেখে

সে যে আশার জগৎ , ভালোবাসার জগৎ
সীমাহীন ভালো লাগা হৃদয় জুড়ে ।


Thursday, November 26, 2020

শঙ্খ মামার বেড়াল

শঙ্খ মামার বেড়াল



শঙ্খমামার আদুরে বেড়াল ,
নামখানি তার ভজন ,
গোঁফজোড়া তার ইয়া বড়ো ,
সাত কিলো তার ওজন ।

রোজ সকালে মামার সাথে
ঘুম থেকে তার ওঠা ,
ব্রেকফার্ষ্টে খাবে দুধে
পাউরুটি এক গোটা ।

দুপুরবেলা ভাতের সাথে
কাটা পোনা চাই ,
শরীরটা তো রাখতে হবে
খেতেই হবে ভাই ।

সন্ধ্যেবেলায় একবাটি দুধ
সঙ্গে চারটে মেরি ,
মামা বলেন , ইহজগতে
ভজনই তার বেড়ি ।

ভজনই তার বন্ধু বান্ধব ,
ভাই বোনও ভজন ,
ভজনই তার দেবতাস্বরূপ
ভজন আত্মার স্বজন ।

ভজন যদি বাইরে বেড়োয় 
আঁধার দেখে মামা ,
ঠোঁট ফুলিয়ে হাত পা ছুঁড়ে
কেঁদে ওঠেন - রামা -- ।

রামাচাকর পড়ি-মড়ি
উর্দ্ধশ্বাসে ছোটে ,
ভজনকে না পেলে ফিরে
ভাগ্যে কি যে জোটে ।

এদিক- ওদিক ঘুড়ে ফিরে
হণ্যে যখন রামা ,
ঘরে তখন গভীর ঘুমে
ভজন এবং মামা ।

Friday, November 20, 2020

ছুঁয়ে যায় প্রাণ

ছুঁয়ে যায় প্রাণ



নীল আকাশে ঠোঁট ডোবালাম আজ ,
হিমেল হাওয়া শরীর ছুঁয়ে যায় ,
এমন করে ভালোবাসার বাতাস
বলছে ডেকে আয়রে কাছে আয় ।

এতদিনের খরায় ফাটা জমি
হঠাৎ করে পেল নতুন প্রাণ ,
আকাশ-জমিন মিলিয়ে দিল আজ
জনমকালের সজীবতার গান ।

এবার বোধহয় নতুন সৃষ্টি হবে
দশদিকেতে তারই আভাস পাই ,
গাল ফুলানো নতুন কুঁড়িগুলির
মনের মাঝে খুশির সীমা নাই ।

শিউলি-বোঁটার গন্ধ ছুঁয়ে গেছে
বৃন্তে এখন নতুন প্রাণের ছায়া ,
কচি কচি সবুজ পাতার ফাঁকে
জড়িয়ে আছে অলৌকিক মায়া ।

পাতার মাঝে চোখ মেলেছে কারা ?
ভেঙেছে বোধহয় পদ্মকলির ঘুম ,
স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায়
নবীন সূর্যের আলতো হাসির চুম ।

প্রভাত মেঘে সোনার আলো হাসে
সেজেছে কেমন পানায় ভরা পুকুর ,
শারদ-মেঘে জলছবির মতন
শিশির ঝরে পড়ছে টাপুর টুপুর ।

এমন করে সারা শরীর জুড়ে
ছড়িয়ে পড়ে অতল প্রেমের আবেশ ,
সৃষ্টিসুখে আবেগঘন মন
রাখবে বুকে ভালোবাসার রেশ ।

Tuesday, November 17, 2020

দিনের শেষে

দিনের শেষে


দিনের শেষে সন্ধ্যা নামে
ঘরে ফেরার টান ,
অন্ধ বাউলের একতারাতে
দিন শেষেরই গান ।

সকাল হলে যে ছেলেটার
পেটে ক্ষুধার ধার ,
সন্ধ্যা হলে গুটিশুঁটি
ক্লান্ত শরীর তার ।

ফুটপাতের ঐ জায়গাটুকু
মৃত্যুঘুঘুর ফাঁদ ।
দিনের শেষে সেইখানেতেই
হাসে সোনার চাঁদ ।

চাঁদ যেন তার খেলার সাথি
অনেক কালের সই ,
জনমকালের পরমাত্মীয়
তবু , সঙ্গে থাকে কই ।

যে মেয়েটা দিনের আলোয়
সাত চড়েতেও চুপ ,
দিনের শেষে আঁধার রাতে
তারই অন্য রূপ ।

ঘরে যে তার অভাব শত
ছোট্ট ভাই আর বোন ,
দিনের শেষে খুঁজে ফেরে
অন্ধগলির কোন ।

Wednesday, November 11, 2020

আমি ঈশান

আমি ঈশান





আমি ঈশান ---
ছাতিমতলা প্রাইমারি স্কুলের জুনিয়র টিচার ।
বাবা-মার একমাত্র সন্তান ।
বাবার বড় ইচ্ছা ছিল ---
তার ছেলে মস্ত বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে ---
সুযোগও পেয়েছিলাম ,
হায়ারসেকেন্ডারি পরীক্ষায়
আহামরি রেজাল্ট না করলেও
জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভালো ফল নিয়েই
ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হয়েছিলাম ।

আমার বাবা একজন গেজেটেড অফিসার
চাকরীজীবনের প্রায় শেষ দিক

কলেজে আমার তখন থার্ড ইয়ার চলছে
পড়াশুনার ভীষণ চাপ
বাড়ির সাথে যোগাযোগ করারও সময় নেই
তখন মোবাইল ছিল না 
একদিন এমার্জন্সি কল এল কলেজ হোষ্টেলে
অসময়ে --- হৃৎপিন্ড উঠল লাফিয়ে ---
শিরায় তো একই রক্ত ---- তাই
খবর ছড়ায় রক্তে ---
রূদ্ধশ্বাস নেমে আসি ---

---- হ্যালো ----
---- বাবা , তুই বাড়ি আয়
মায়ের আহত গলা কাঁপিয়ে দেয়
---- কেন মা -----
---- তোর বাবা আর নেই ---
মুহূর্তে দুলে ওঠে আমার পৃথিবী
আকাশ ভেঙে কোথায় বাজ পড়ে কড়্ কড়্ কড়্

শান্ত নীরিহ সদাহাস্যমুখ আমার বাবার মৃত্যু
সহজ পথে আসেনি ---
ভালোমানুষ বাবার কোমল হৃদয়ে
পেয়েছিলাম নখের আঁচড় ,
কতগুলি নরপিশাচের উন্মত্ত লালসা
ক্রমে কলঙ্কিত করছিল 
শরতের আকাশের মতো বাবার মনটাকে
কখনো কখনো জলে ভার হত সে আকাশ
কিন্তু বৃষ্টি ঝরতো না 
অমারবিকতার সাথে যুঝতে যুঝতে
ব্লকেজ বাড়তে থাকে হৃৎপিন্ডের

তারপর সেই দিন ---
মিথ্যার হাতে সত্যের ঘটে চরম লাঞ্ছনা
অপমানে অপমানে ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ
মুখ থুবরে পরে মাটিতে
চারপাশে নরপিশাচের নগ্ন উল্লাস

আমার অসহায় বাবা আর কথা বলেনি

কি দোষ ছিল আমার বাবার বলতে পারেন
সমাজের নগ্নরূপটা চিনতে পেরেছিল, তাই---
ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিল মিথ্যার ফানুস
চিহ্নিত করতে চেয়েছিল নরখাদকদের
ব্যাগভর্তি টাকার মূল্যকে মূল্যহীন করে
ছুঁড়ে ফেলতে চেয়েছিল সমাজের কতগুলি --
ভন্ড কালো হাত ,
তাই , আমার সহজ সরল বোকা বাবার
কালো বিষাক্ত এই পৃথিবিতে
বেঁচে থাকার ছারপত্রটুকু কেড়ে নেওয়া হল,
ভেঙে দেওয়া হল এক সত্যের মেরুদন্ড।

রাতে এখনো আমি স্বপ্নে দেখি
আমার সদাহাস্যমুখ বাবার-
বলেন -খোকা-
সমাজে মানুষের বড় অভাব
মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায় 
আসলে একদল পিশাচ
তারা ক্ষুধার্ত শিশুর মুখ থেকে
দুধ কেড়ে খূতে পারে ,
শকুনের মতো দৃষ্টি নিয়ে ঘোরে সমাজের আনাচে কানাচে
এরা মানুষের মূল্য বোঝে টাকার অঙ্কে
তুই ভিড়িস না যেন এদের সাথে
ওরা ভয়ানক ,

পারলে মানুষ কর ---
কচি কচি বুকে ভরে দে সততার বাতাস ,
বিশুদ্ধতার আলো খেলুক চোখে ,
মানুষের মূল্য বুঝুক মানবিকতায় ,
মুছে ফেলুক কালো পৃথিবীর ছায়া ---

তাই --- আমি আজ ছাতিমতলা প্রাইমারি স্কুলের
জুনিয়র টিচার
বিটেক , ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রিটা
আমার আর পাওয়া হল না ।
 

Monday, November 2, 2020

মেঘের পাড়ে

মেঘের পাড়ে


আয় কাছে আয় দেখবি যদি --
নীল আকাশ আর ইচ্ছে নদী
একসাথে আজ মিশে ---
কোন পথে যে চলবে ধেয়ে
সাদা মেঘের পানসি বেয়ে,
পায় না কোনো দিশে ।

চারিদিকে অপরূপ সাজ ,
হারানো সেই মনটাকে আজ
চল না এবার খুঁজি ---
আকাশ পাড়ে নদীর ধারে ,
খুঁজে ফিরি বারে বারে
কত গলি - ঘুঁজি ।

আকাশ পথে চলি উড়ে ,
বাঁধি আমার ছোট্ট কুঁড়ে
মাতি আপন খেলায় ---
লুকোচুরির সঙ্গী যে হই ,
দলছুটদেরও সঙ্গেতে রই
রঙীন মেঘের ভেলায় ।

দিন শেষে যেই সন্ধ্যা নামে ,
আকাশজুড়ে বিরাট খামে
হাজার তারার আলো ,
দুঃখটাকে আড়াল করে ,
রাতের রঙীন তারা ধরে
মুছব সকল কালো ।

Thursday, October 8, 2020

স্বপ্নসুখের বাসা

স্বপ্নসুখের বাসা

ভালোবাসার চিরাগখানি
নিজো হাতে জ্বেলে ,
নতুনভাবে নতুনসাজে
যেদিন নিয়ে এলে ---

লক্ষ্য আশা ভালোবাসার
স্বপ্নসুখের ঘরে ,
ঝলমলিয়ে উঠল হাসি
আনন্দ না ধরে ।

জীবনপথে চলতে গিয়ে
কত কান্না হাসি
হার মেনেছে , জয় হয়েছে
স্বপ্ন রাশি রাশি ।

যতই আসুক বাধার পাহাড়
ভয় জানি নেই কোনো
সারাজীবন থাকব পাশে
পণ করেছি , শোনো ।

বুকের মাঝে আগলে রেখো
ভরসা রেখো প্রাণে ,
বাকী জীবন কাটবে সুখে
ভরবে গানে গানে ।

Thursday, September 24, 2020

বাজবে তোমার আলোর বেনু


বাজবে তোমার আলোর বেনু


শ্রাবণের সিঁদকাঠি নিয়ে গেছে ভাদ্রের আকাশ
চলে গোপনে অভিসার
এক আকাশ ভাদ্র সাথে ভিজব বলে নামি
হাতছানি শরতের আলোর
আলোর ফুলকি ছোটে কোনায় কোনায়
কাশেরা মেলেছে ডানা উদ্ধত কিশোর
পদ্মের মধু জমে নিষ্কলুশ বিলে
চকোর-চকোরী-মন হাওয়াতে লুটায়
অবাক চেয়ে থাকি ক্রোসান্ডার গুচ্ছে
চোখের মলিনতা চকিতে পালায়

তবু তো আশঙ্কা করে বেড়াল-মন
গুঁটিশুটি ঘরের কোনে অতিমারির কোপ
আশঙ্কায় মলিন নয় শারদীয়ার চাঁদ
আসবে , আসবে শুভক্ষণ ------

আলোর বেনু আবার পরিপূর্ণ হব ।

Tuesday, September 22, 2020

এক পৃথিবী আলো

এক পৃথিবী আলো


তুই যে আমার আঁধার রাতের 
আকাশ তারায় ভরা ,
বুকের মাঝে উতল হাওয়া
স্নেহমাখা ধরা ।

তোর ঐ স্নিগ্ধ মুখের 'পরে
শরৎশশীর ছায়া ,
কোন যাদুতে আলো ছড়ায়
কি তার মোহ মায়া ।

সোনারোদের সোহাগঝরা
তুই আদরের ধন ,
তোরই জন্য আছে আমার 
সারাটি জীবন ।

ছোট্ট ছোট্ট চোখে যে তোর
এক পৃথিবী আশা ,
তোরই জন্য ছন্দ আমার
আমার প্রাণের ভাষা ।

তুই যে আমার নয়নভোলা
এক পৃথিবী আলো ,
তোকে ছাড়া বিশ্ব ভুবন
অমাবস্যার কালো ।

Thursday, September 17, 2020

রসিক দাদু

রসিক দাদু


দাদু আমার রসিক বড়ো
আস্ত রসের হাঁড়ি ,
এই বয়সে কোঁচা মেরে
গেল শ্বশুর বাড়ি ।

শালী বলে খোঁজ নাও না যে ,
তোমার সাথে আড়ি ---
দিদি এলো তাই বুঝি বা
এলে শ্বশুর বাড়ি ?

মিটিমিটি হাসে দাদু
শালীর পাশে বসে ,
গাল গড়িয়ে ভেজে জামা
মিষ্টি পানের রসে ।

দুদিন হলো দিদি তোমার
দিয়েছে গা ঢাকা ,
তাকে ছাড়া জীবন আমার 
এক্কেবারে ফাঁকা ।

দাদুর কথা শুনে দিদা
মিটিমিটি হাসে ,
সবাই তাকে বসিয়ে দেয়
রসিক দাদুর পাশে ।

Saturday, September 12, 2020

মৃত্যু

মৃত্যু

Death Wallpapers - Top Free Death Backgrounds - WallpaperAccess

মৃত্যু আমার অতন্দ্র প্রহরী
শিয়রে রয়েছে জেগে
দিনমান , যত , কাটে তার সাথে
কত রাগে - অনুরাগে ।
কভু আঁখি ছল , ব্যথিত সজল
অশ্রু ম্রিয়মান
কখনো তীব্র তীক্ষ্ণ দৃপ্ত
উদ্ধত বলীয়ান ।

মৃত্যু আমার প্রেমিক পুরুষ
সোহাগে মাতায় মন
মৃত্যু আমার কত আদরের
স্নেহের পরম ধন 
আমি মৃত্যুকে দেখেছি কত
চিরন্তনের মাঝে
মৃত্যু এসেছে বারে বারে দ্বারে
নিত্য নতুন সাজে ।

তবুও মৃত্যু অসীম অনন্তে
রয়েছে লুকিয়ে আজো
দিন হলো শেষ , রাত্রি অশেষ
শেষ হয়নি যে কাজও ।


Saturday, September 5, 2020

বারমাস্যা

বারমাস্যা








পুড়ছে দেখো 
পথের ধুলো
পুড়ছে কত খড়কুটো
তার সঙ্গে মন যে পোড়ে
সুতোয় বাঁধা তারদুটো
একটা তারে সুর ওঠে কি
অন্য তারটাও জুড়তে হয়
চন্দ্র সূর্য দুয়ের খেলায়
জগৎ সদা আলোকময় ।
যদিও আসে অমাবস্যা
ক্ষণিক অভিমানের পালা
পূর্ণিমা চাঁদ হাসে যখন 
জুড়ায় না কি সকল জ্বালা ?
যদিও চাঁদে কলঙ্ক আছে
সূর্যের তেজে বিশ্ব জ্বলে
তার মায়াতেই ভুবন হাসে
বিশ্ব ভরে ফুলে ও ফলে ।
যতই জ্বলুক , যতই পুরুক
যতই ঘনাক অমাবস্যা
এসব নিয়েই পূর্ণ হবে
জীবনের এই বারমাস্যা ।


Tuesday, September 1, 2020

আমি হবো রাজার রাজা

আমি হবো রাজার রাজা




মেঘের পানসি বেয়ে একদিন
মেঘের বাড়ি যাব
মেঘের
 মাঝে লুকিয়ে থাকা 
মেঘপরিদের পাবো ।
পানসিখানি বেঁধে রেখে
নামব মেঘের ঘাটে
মেঘপরিদের সাথে সাথে
ছুটব মেঘের মাঠে
ছুটব ওদের ডানায় ডানায় ,
সোনার ঘুড়ি চড়ে
পেরিয়ে যাবো সাত সমুদ্র
ছু-মন্তর করে ।
পরির যাদুকাঠি আমায় 
ভুলিয়ে দেবে সব 
ভুলবো যত হট্টমেলা ,
ভুলবো কলরব
ভুলবো আমি শাসন-ত্রাসন
ভুলব অনাহার
ভুলব যত নোংরামি আর
ভুলব অবিচার ।
ভাবব না আর অনাহারী
পথশিশুদের দুঃখ
কান্নাভেজা ক্ষুধার্তদের
শুষ্ক পাংশু মুখও ।
তখন আমি রাজার রাজা
যাদুময় হাত
এক যাদুতেই সবাই পাবে
থালা ভর্তি ভাত ।
যে মেয়েটা হারিয়ে গেছে
জংলা বনের ধারে
মায়ের বুকে , বাবার প্রাণে
খুশি কি আর ঝরে ?
বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো
প্রাণকাড়াদের সাজা
দেবই  দেব , তিন সত্য ---
নইলে কিসের রাজা?

Thursday, August 27, 2020

ক্ষমা করো

ক্ষমা করো



পথচলতি মানুষের ঢল থেকে
নিজেকে সামলে নিয়ে
গোপনে বাড়ি ফিরি , সন্তর্পনে
এই বুঝি ভেঙে চুরমার করে দেয় ----
সযত্নে রক্ষিত , পিতৃদত্ত মাথাটা

সামনে বিরাট লড়াই ,
কাঁদানে গ্যাস আর নির্দয় লাঠি
হামলে পড়ে সজীব প্রাণের উপর
মুহূর্তেই অপরিচিত আমার চেনা বন্ধুজন

আমি যে পিতা এক
বাড়িতে বেঘোরে জ্বরে শিশুসন্তান আর ভয়ার্ত প্রেয়সী
তাই , পারিনি বন্ধু তোমাদের হাত শক্ত করে ধরতে
পারিনি তোমাদের মত লাঠির আঘাত সইতে
জানি , তোমাদেরও বৃদ্ধ মায়ের সকরুণ মুখ
প্রিয়ার দুশ্চিন্তা আর শিশুসন্তানের বাহুডোর
সযত্নে রক্ষিত পাশে

সামনে দাঁড়ায় এসে মস্ত ভবিষ্যৎ
পথ নেই , তাই ---
অনশন , আবেদন - নিবেদন , লাঠির আঘাত

আমি যে ভীতু , স্বার্থপর এক পিতা
ক্ষমা করো আমায় , ক্ষমা করো ,
পারলে ক্ষমা করে দিও ।

Wednesday, July 22, 2020

ফিরে চাও

ফিরে চাও
Ranga Mati Pather Dhare @Indranil sen - YouTube
কুয়াশাভরা দু'চোখ আমার ।

স্মৃতিপথে আন্দোলিত পৃথিবীর ধূ্লারাশি
তোমার পথের ধারে পড়ে আছে অবহেলায়
জানি তার প্রয়োজন নিঃশেষিত আজ ,
অথচ বলেছিলে , যখন সেগুনের ছায়ায়
বসে দুজনে , ছেঁড়া ছেঁড়া সোনাঝুড়ি বট
দূরে কোন গ্রামখানি হাতছানি দেয়


সেই মরুবালি বুঝি চোখের তারায়
করেছে অসীম ক্ষত , মরুপথে সাগর হারায়


আজো তবু বৃষ্টি ঝরে আমার অঙ্গনে
মরুত্তাপ শুষে নেবার আপ্রাণ চেষ্টা
প্রলয়ের মরুঝড় তোমার আকাশে
আবার ' সুজলাং সুফলাং ' হবে তো দেশটা ?

Tuesday, July 14, 2020

প্রত্যুত্তর

প্রত্যুত্তর

55+ Forest Fire Wallpapers on WallpaperPlay

হঠাৎ করে বুকের পাথরে আগুন জ্বলে ওঠে
দাবানল যাকে বলে --- বনের গাছপালার
ডালে ডালে মাতামাতি লাগে , আগুনের
লকলকে শিখা দগদগে ঘা করে করে
পোড়াতে পোড়াতে অগ্রসর হয় , অপেক্ষা করে
নিশ্চিহ্ন অবসানের ।
                          
                          তোমার উর্বর জমিতে এবার
কতটা ফসল ফলিয়েছ বলনি তো । আশা করি
লাভের অঙ্কটা অন্যবারের চেয়ে বেশিই হবে , 
বিগত বছরের ছাইচাপা আগুন আমাকে পোড়ালেও
তুমি নির্মল , একেবারে অগ্নিবিমুখ ।

Tuesday, June 23, 2020

বেসাতি


বেসাতি

চারিদিকে রঙের বেসাতি

এক আজলা নীল তুলে নিই আকাশ থেকে
পরবো কাজল ,
খুঁটে তুলি একটু লাল কৃষ্ণচূড়া থেকে
রাঙাবো ঠোঁট ,
অলক্তরাগে বাজবে নূপুর পায়ে
মৃদুমন্দ হাওয়ার স্পর্শে চিকনকালো মৌটুসীর মতো
কিংবা দোয়েলের শিষে উঠবে সুর প্রভাতের
কচি ঘাসের সবুজে ছাপাবো শাড়ি
দেবো কলকের হলুদ
রঙ্গনের রঙ্গ লাগবে চোখে
শরীরজুড়ে উঠবে জুঁইয়ের সুবাস
তুমি পরিয়ে দিয়ো প্রেমের কুমকুম , রাঙা সূর্য
আর ওপারে আকাশজুড়ে উঠবে ঢেউ ছলাৎছল

ভাসবো , ডুববো , করবো অবগাহন তোমার বুকে
কখনো বা প্রজাপতি  হবো
শরীরজুড়ে রঙের আলাপন
সারাজীবনের মরুতৃষ্ণা আমার
‌শুষে নেবো আকন্ঠভরে , পাবো অমৃতের স্বাদ

আবার হারাবো আমি বেসাতিনগরে.....
 

Friday, May 1, 2020

বন্ধ চিঠি

 বন্ধ চিঠি


মেঘলা শুধু আকাশ নাকি মনের কোনেও মেঘ নামে
অনেক কথাই থাকে জমা মনের কোনে বন্ধ খামে
পোষ্ট হয়না কোনোদিনই মেঘ শুধু জমতে থাকে
আকাশজুড়ে রঙের খেলায় বোঝেনা সে খুঁজবে কাকে
রাতের পড়ে রাত কেটে যায় চোখের জলে বালিশ ভেজে
বিরাট বড় মঞ্চটাতে অভিনয় কত নায়ক সেজে

ঝড় ওঠে যেই ধুলো ওড়ে পাতাও ওড়ে খুলে মুঠি
সেই বাড়িটা খুঁজে পায়না হেলায় ফেরে বন্ধ চিঠি

চিঠি বাঁধি সাদা পায়রার নরম নরম পায়ের খুটে
আদর করে সোহাগ দিয়ে দানা জোটাই শক্ত ঠোঁটে
হতভাগার আকাশ তবু ঘরের কোনে শিলিং ফ্যানে
কত কথাই বকমবকম জানিয়ে দিল আপন মনে
আমি আবার হন্যে হয়ে ডাকপিয়নের আশায় ফিরি
বুঝিনি সেও ফিরে গেছে সঙ্গে নিয়ে ডাকের ঝুড়ি
আকাশে আবার রঙ জমেছে মেঘের দেখা কেউ পায়না
কিন্তু আমার বন্ধ চিঠি , বন্ধ থাকে কেউ ছোয়না ...

Wednesday, April 22, 2020

মহামারী

মহামারী

আমার জন্য কী রেখেছিস ?

শুধুই চোখের জল 
দুই চোখ উপছে পড়া
শুধুই নোনা জল
বুকের মধ্যে এক সমুদ্র
গর্জে ওঠে যেই
পাহাড়প্রমাণ ঢেউগুলো তার
হারিয়ে ফেলে খেই
দু'চোখজুড়ে শ্রাবণ ঘনায়
বুকে মেঘের ডাক
প্রাণখানি তার দুমড়ে ওঠে
মৃত্যুর হাঁকপাঁক ।

আমার জন্য কী এনেছিস ?

বরফশীতল রাত
ঘরছাড়া কত অনাত্মীয়ের
বাড়িয়ে দেওয়া হাত
হাত ধুয়েছি , হাত ধোয়ালাম
হাত ধোয়াবো কত
বিশ্বজুড়ে রব উঠেছে
হাত উঠেছে শত
সে হাত এখন গ্লাভসে মোড়া
অচেনা জীবানুর ভয়
মাস্কে ঢেকেছে নাকমুখ , তবু
এখনো হিংসা হয়
এখনো ক্রদ্ধ প্রতিশোধের
আগুন জ্বলে ঘরে
কে যে তোকে এনেছিল
আর কে যে কেঁদে মরে

আমার জন্য কী রাখবে !

উদোম খোলা মাঠ
পা ডোবানো জল টলটল
আ-বাধা নদীর ঘাট
তুমি যখন জন্মেছিলে
আকাশ ছিল কালো
এতদিনের সচেতনতায়
আবার আকাশ আলো
আকাশজুড়ে ঝিকিরমিকির
তারাচাঁদের হাসি
নাম-না-জানা পাখির কুজন
বলছে , ' ভালোবাসি '
আরেকটু শুধু , আরেকটুকাল
ধৈর্য্য ধরে থাকো
কঠিন সময় পার হবো ঠিক
এ বিশ্বাস রাখো
প্রকৃতি হাসবে উদার হাসি
আশির্বাদের ঢেউ
ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বজুড়ে
কাঁদবে না আরর কেউ ।

Saturday, March 7, 2020

বল না , মনে পড়ে ?

বল না , মনে পড়ে ?





তোকে তেমন করে বাঁধতে পারিনি হয়ত
তাই পুরনো জামাকাপড়ের মত 
ছেড়ে গেলি সহজেই
তোর দৌরাত্মগুলো তো 
মেনে নিয়েছিলাম প্রাণভরে
হিংসুটীদের চোখেও
নেমেছিল ফাগুন
খাঁখাঁ মাঠে একপশলা বৃষ্টি

সেই যেদিন একহাটু জলে দাঁড়িয়ে
হাত বাড়িয়েছিলি আমার দিকে
আমি ভয়ে না বলতেই
তাকিয়েছিলি গভীর আর্তিতে
পারিনি , বিশ্বাস কর 
ছুটে গিয়েছিলাম তোর বুকে
অথচ , জলে আমার কত না ভয়

তারপর সেদিন
ট্রেন আসছে দেখেও
বললি , দেখবি একছুটে 
কেমন পার হবো লাইন 
ধরে রাখা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে 
ছুটে গেলি , মুহূর্তে চোখের সামনে 
দুলে উঠল পৃথিবী
ফিরে এলি হাসতে হাসতে
আমার বিস্মিত চোখের সামনে
ভয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম সেদিন
দুহাতে মুখটা তুলে
শুষে  নিলি চোখের জল পরম আশ্লেষে

তারপর আরো কত ---- আরো কত যে এমন
মনে পড়ে ?

আজ তোর নতুন জীবন
গোছানো ফ্ল্যাটে সুন্দরী বৌ
সেদিন অনিমেষের সাথে দেখা হয়েছিল জানিস
বলল তোর সুখী সংসারের কথা
মরিশাসে তোদের হানিমুন
তোর হাসিখুশি মুখটা
ভেসে উঠল চোখে
কষ্ট হয়নি একটুও , বিশ্বাস কর
শুধু জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল ---
এখনো কি তেমনই দামাল হয়ে আছিস?
যখন যা ইচ্ছে করে করিস তাই ?
সামলাতে পারে তোর সুন্দরী বৌ ঠিকঠাক ?
এখনো কি তোর শার্টের বোতামে
ডিওডোরান্টের গন্ধ খোঁজে তোর বৌ ?
বুকের মধ্যে তেমনি করে 
আছড়ে পড়ে এক সমুদ্র ?
এখনো কি মন খারাপ হয় তোর ?
তখন কি চুপ করে বসে থাকিস ধ্যানমগ্ন ঋষি ?
আর তখন কে ভাঙায় তোর ধ্যান ?

এসব প্রশ্নের উত্তর কোনোদিন
পাবো না , জানি ,
তাই লিখে দিলাম খোলা চিঠি
তোর দ্বিতীয় মনটাকে 
যতই বাঁধিস রঙীন ফ্রেমে
ছেঁড়াখোড়া পাতাগুলো কি
একটুও উড়ে যায় না হঠাৎ ঝড়ে ?

বল না ! !



Thursday, December 26, 2019

কঙ্কাল

কঙ্কাল




         আমার কথায় রামশরণ যেন বাস্তবে ফিরে আসে আবার । 

        --- তারপর আর কি মাষ্টারমশাই । বড়বাবুর চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমার নিশ্চিন্ত জীবনেরও ইতি ঘটে গেল । আবার বেড়িয়ে পড়লাম নিরুদ্দেশের পথে । কিন্তু যে পাক থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম বড়বাবুর স্নেহের শাসনে সে পথে আর পা বাড়াইনি । কতদিন কত দোকানে কাজ করলাম --- চায়ের দোকানে , মুদির দোকানে , হোটেলে । কিন্তু এই কয় বছরে বড়বাবুর কাছে থেকে আমার রুচিরও পরিবর্তন ঘটে গেছে । ওদের গালাগালি , খিস্তি - খেউরগুলো আর ভালো লাগত না । বই পড়তে খুব ভালোবাসতাম । একদিন এক বইয়ের দোকানে কাজ পেলাম । বেশ বড় দোকান । কত বই । সারাদিন বই পড়ার এমন সুযোগ পড়ার নেশাটাকে আরো বাড়িয়ে দিল । দোকানে বিক্রিও হত মন্দ না । মালিককাকার একটামাত্র মেয়ে ছিল । একদিন কাকা এসে বলল , ক'দিন দোকান বন্ধ থাকবে । তার মেয়ের বিয়ে । দোকানের বদলে এই কয়দিন তার বাড়িতে কাজ করতে হবে । গেলাম তার বাড়ি । লোকজন বলতে তেমন কেউ নেই । কাকা কাকীমা আর দিদি । ফলে দোকানবাজারের অনেক কাজই আমি পেলাম । করলাম আনন্দের সাথে ।কি বলব মাষ্টারমশাই এই প্রথম যেন কোনো পরিবারের অংশ বলে মনে হল নিজেকে । দিদি বিয়ে হয়ে চলে গেল ব্যাঙ্গালোর । আমি দোকান বাড়ি দুটোই সামলাতে থাকলাম । কাকীমাও আমাকে নিজের ছেলের মত ই ভালোবাসতেন । 

       কিন্তু এ সুখও সইল না । কাকীমার হঠাৎ খুব কঠিন রোগ ধরা পড়ল । এখানে চিকিৎসা হবে না । দিদি কাকা-কাকীমাকে নিয়ে চলে গেল ব্যাঙ্গালোর । দোকানটা হয়ে গেল বন্ধ । আমি আবার বেকার ।

       পুরানো কথায় ডুবে গেছে রামশরণ । একইসাথে সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যকে দেখা , অনুভব করা ঘটেছে তার জীবনে বারবার । জীবনের কত উত্থান-পতন যে মানুষকে কোথায় কোথায় নিয়ে যায় ।

        ---- তা তুমি এখানে এলে কি করে ? 

           ----- সে তো আরো বড় ইতিহাস মাষ্টারমশাই । কিছুদিন একাজ- ওকাজ কত কাজই না করলাম । কিন্তু কিছুতেই মন বসে না । একদিন ট্রেনে চেপে বসে রইলাম । হাতে টাকাপয়সা প্রায় নেই । জামাকাপড় অত্যন্ত মলিন । স্নান হয়নি কয়দিন । অবসন্ন শরীরে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম । ঘুম ভাঙল ধাক্কায় । ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি সামনে বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে । আর কালো কোট পড়া একজন লোক সবার টিকিট চেক করছে । পেটে খাবার নেই তো টিকিট কাটব কি করে । আমার কাছে টিকিট চাইলে আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম । টিকিট না পেয়ে আমাকে পাগল ভেবে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে নামিয়ে দিল । শিয়ালদা থেকে কত দূরে আছি , কোথায় যাব কিছুই জানি না । প্ল্যাটফর্মে বসে রইলাম সারাদিন । খিদে তেষ্টার অনুভূতিও আর নেই । বিকেল হয় হয় । একটা চায়ের দোকানে গিয়ে দাঁড়ালাম । দুটো বিস্কুট আর চা খেলাম । তারপর ওয়েটিং রুমে গয়ে বসলাম । সারারাত সেখানেই পড়ে রইলাম । বড়বাবু আর কাকা-কাকীমার কথা খুব মনে পড়ছিল । দিদির ফোন নম্বর দিয়েছিল আমাকে । খুব ইচ্ছে করছিল ফোন করে ওদের খবর নিতে । কিন্তু পয়সা কোথায় ফোন করার । 

          ---- তারপর ? যতই শুনছি কঙ্কালের কথা শোনার আগ্রহ আরো বেড়ে যাচ্ছে ।

          ----- তারপর সকাল হল । একের পর এক ট্রেন যাচ্ছে আসছে । একসময় দেখলাম একদল স্কুলের ছেলে দলবেধে কলরব করতে করতে যাচ্ছে । কি ভেবে ওদের পিছু নিলাম । হাটতে হাটতে এই স্কুলটার সামনে এলাম । ওরা ভেতরে ঢুকে গেল । আমি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম । আর ওদের দেখতে লাগলাম ।

        জানেন মাষ্টারমশাই , আমি আগের জন্মে অনেক পাপ করলেও কিছু কিছু পুণ্য কাজও করেছিলাম । তাই একসময় নজরে পড়লাম ঐ দ্বিজেনমাষ্টারের । তিনি অনেকক্ষণ ধরে আমাকে লক্ষ্য করে একসময় কাছে এগিয়ে এলেন । আমার নাম-ধাম-ঠিকানা সব জিজ্ঞাসা করলেন । এমন ভালো মনের মানুষদের কাছে মন আপনাআপনি আত্মসমর্পণ করে জানেন তো মাষ্টারমশাই । আমিও আমার জীবনের পিছনে ফেলে আসা  সব ঘটনা মাষ্টারমশাইকে বলে চললাম । মাষ্টারমশাই আমাকে সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে গেল । ঐ যে আমগাছের বেদিটা দেখছেন সেখানে আমাকে বসতে বলে ভেতরে গেল । তারপর কিছুক্ষণ পর হাসিমুখে এসে বলল যে আমার চাকরি হয়ে গেছে । আমি মাষ্টারমশাইয়ের পা ধরে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম মাষ্টারমশাই । তিনি আমাকে তুলে নিয়ে ঐ ঘরটাতে থাকা খাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিলেন । তার উপর দিলেন মাইনে । আমিও প্রাণ দিয়ে স্কুলটাকে ভালোবেসে ফেললাম । সারাদিন ছোটোবড় কত ছেলেদের আনাগোনা  । ছোটাছুটি , চীৎকার , চেঁচামিচি । একসময় ওদের সাথে ভাব হয়ে গেল । ওরা কতরকম দুষ্টুমি করত । আমার হয়ত একটু ঘুমের ঢুল এসেছে । ওমনি পেছন দিয়ে এসে আমার টিকির সাথে দড়ি বেঁধে দিত । কখনো প্লাষ্টিকের সাপ সামনে ফেলে দিয়ে ' সাপ ' ' সাপ ' বলে ভয় দেখাতো । আমিও ওদের মজা দেবার জন্য ভয় পেয়ে লাফাতাম । কখনো আমার জুতো লুকিয়ে রাখত । তবে ওরা শুধু দুষ্টুমিই করত না ওদের জন্মদিনের কেক লজেন্সটাও আমার জন্য নিয়ে আসত । ওদের ভালোবাসায় আবার আমার জীবনটা ভরে উঠল । আস্তে আস্তে বয়স বাড়তে লাগল ।ষাট পেরিয়ে পয়ষট্টি - সত্তর । আমি যেন এই স্কুলেই একটা অঙ্গ হয়ে উঠলাম । তারপর একদিন ওপরয়ালার ডাক এল । এই ঘরেই আমার জীবনের শেষ হল । আমার তো কেউ ছিল না । মাষ্টারমশাইরা আমাকে গোর দিল । 

          ---- আচ্ছা , তাহলে তুমি এখানে এলে কি করে । ---- শেষ কৌতুহলটা আর চাপতে পারলাম না ।

           ----- ওদের ভালোবাসা আমাকে ওখানে শান্তি দিল না মাষ্টারমশাই । আমি ইস্কুল আসার জন্য অস্থির হতে লাগলাম । একদিন সুযোগ এল ।

             ----- ইস্কুলের কয়েকজন মাষ্টারমশাই আমার গোরের পাশ দিয়ে কোনো অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে সেদিন রাতে বাড়ি ফিরছিল । অনেক রাত । গোরে শুয়েও আমার তো সবসময় এই স্কুলের দিকেই মনটা পড়ে থাকত । তাই স্কুলের কোনো মাষ্টারমশাই বা ছাত্রদের কথা শুনলেই উৎগ্রীব হয়ে উঠতাম । সেদিনও মাষ্টারমশাইদের কথা শুনছিলাম । বিজ্ঞানের মাষ্টার অভীকবাবু হেডমাষ্টারমশাইকে বলছিল যদি স্কুলের জন্য একটা আসল কঙ্কাল পাওয়া যায় তবে খুব ভালো হয় । এমনি তাদের কথাবার্তা চলছিল । হঠাৎ মুখঢাকা দুজন অস্ত্রধারি লোক মাষ্টারমশাইদের সামনে এসে দাঁড়াল । যা আছে দিয়ে দিতে বলল । নয়ত প্রাণে মারবে বলে হুমকি দিতে লাগল । আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না । ছোকরাদুটোর কাছে গিয়ে নানারকম কায়দা করতে লাগলাম । ভয়ে সেদুজনের সেকি পড়িমড়ি দৌড় । হাসব না কাঁদব ভেবে পাইনা । মাষ্টারমশাইদের দিকে তাকিয়ে দেখি তাদেরও একি অবস্থা । শুধু অভীকবাবু আর হেডমাষ্টারমশাই দাঁড়িয়ে আছে । আমি আস্তে আস্তে তাদের বললাম --- ভয় পাবেন না মাষ্টারমশাই । আমি রামশরণ । অভীকবাবু আমাকে অনেকদিন ধরে দেখেছে এই স্কুলে । তাই নির্ভয়ে হেসে বলল --- এখনো কিসের টানে রামশরণ । আমি বললাম ---- আজ্ঞে মাষ্টারমশাই । আমাকে স্কুলেই একটু জায়গা দিন । ছেলেদের কলকল না শুনে আমি থাকতে পারিনা । অভীকবাবু বলল ---- ঠিক আছে দেখছি তোমার জন্য কি করতে পারি । তার কিছুদিন পর মাষ্টারমশাইরা আমাকে ওখান থেকে তুলে পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন করে স্নান- টান করিয়ে এখানে রেখেছে । আমিও খুব খুশিতে আছি এখন ।

          নিজের অজান্তে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল আমার বুক চিরে । আমিও হারিয়ে যেতে থাকলাম অনেক অনেক দূরে যেখানে স্পষ্ট দেখতে পেলাম ছেলেরা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে রামশরণকে । আর রামশরণ হাত - পা নেড়ে নানারকম অঙ্গভঙ্গি করছে ।

####সমাপ্ত ####

Wednesday, December 25, 2019

কঙ্কাল

কঙ্কাল


--- তুমি কে ? -- আমি অষ্ফুটে জানতে চাইলাম ।

----  আপনি তো এই স্কুলে নতুন এসেছেন তাই আপনি আমাকে চেনেন না । আমার নাম রামশরণ । ছেলেরা ঐ নামেই আমাকে ডাকত । গেটে চৌকিদারির কাজ করতাম । ঐ যে এখন যেখানে মিড ডে মিলের ঘর হয়েছে সেখানে আগে ছিল আমার বাস । চব্বিশ বছর বয়সে একদিন ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়েছিলাম ইস্কুলের সামনে । কোনো কাজ-কামের আশায় । তখনকার দ্বিজেনমাষ্টার দেবতা ছিলেন । গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমাকে সব জিজ্ঞাসা করলেন । তারপর আমাকে একটা চাকরি দিলেন । থাকার জায়গাও দিলেন ইস্কুলের ভিতর । কাজের মধ্যে রাতদিন ইস্কুল পাহাড়া দেওয়া । সকালে ইস্কুল শুরু হওয়ার আগে দুটো ভাতে ভাত ফুটিয়ে খেয়ে নিতাম । আর সেই রাতে একবার ।

----- তোমার বাড়ি কোথায় ছিল রামশরণ । --- কৌতুহলে জানতে চাইলাম ।

-----  সে তো ছিল বিহারে । কত ছোটোবেলায় মা মারা যাবার পর বাপটা আমাকে নিয়ে গা-ঘর সব ছেড়ে চলে এল কলকাতায় । বাপ শিয়ালদায় কুলিগিরি করত । আমি প্ল্যাটফর্মের একটা কোনে বসে থাকতাম । ট্রেন আসা-যাওয়ার ফাঁকে বাপ আমার কাছে আসত আর দু-পাঁচটাকা করে দিয়ে যেত । আমি খাবার কিনে খেতাম । তারপর বাপটাও একদিন মরে গেল । না-খাওয়া পেটে অত ভারি ভারি মালপত্র টানতে পারছিল না আর । একদিন এক বাবুর মাল মাথায় নিয়ে যেতে গিয়ে প্ল্যাটফর্মেই পড়ে গেল । আর উঠল না । আমি এবার কি করব । অন্যান্যো কুলিকাকারা প্রথম প্রথম দু-তিনটাকা করে দিত । কিন্তু তাতে আমার পেট ভরত না । খিদের জ্বালায় চুরি করতে শুরু করলাম । এভাবে বেশ হাত পাকিয়েও ফেললাম । তখন একটু বড়ো হয়েছি । একদিন এক মহিলার সোনার চেন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লাম । পুলিশ ধরে নিয়ে গেল ।খোঁজ করার মত আমার তো কেউ ছিলনা । তাই পনেরো দিন জেলেই রইলাম । নাবালক বলে তেমন কোনো সাজা হল না । কিন্তু জেলের যে বড়বাবু ছিল সে একদিন আমায় ডেকে আমার সব কথা শুনল । কি জানি হয়ত আমার ওপর তার মায়া হয়েছিল । একদিন আমায় ডেকে জিজ্ঞাসা করল -- তুই জেল থেকে বেড়িয়ে কোথায় যাবি । 

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম । কি বলব । আমার তো কোনো ঘরবাড়ি বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন কোথাও কেউ নেই । আবার অনির্দেশের পথে আমাকে কামড়াকামড়ি করে বাঁচতে হবে । বুক ফেটে কান্না আসছিল তখন । কেবল বাপের কথা মনে হচ্ছিল । বড়বাবু আমার মাথায় হাত রেখে বলল --- আমার সাথে যাবি ? আমার ঘরবাড়ি দেখাশুনা করবি , বাগান দেখবি আর আমার ঘরে থাকবি । কি বলব সেদিন যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । একমুঠো নিশ্চিন্তের ভাতের আশায় চোখদুটো চকচক করে উঠেছিল । 

রামশরণ তার পুরনো স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়ে একটু থামল । আমি আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলাম --- বড়বাবুর বাড়িতে তুমি গেলে ?

--- হ্যাঁ , আবার বলতে শুরু করল রামশরণ । ছাড়া পেয়ে সেইদিন আমি জেলের বাইরে বসেছিলাম । তারপর বড়বাবুর ডিউটি শেষ হলে আমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন । কি বলব মাষ্টারমশাই এমন ভালো মানুষ যে পৃথিবীতে আছে তা তার সঙ্গে না গেলে বুঝতেই পারতাম না । উনি আমার জন্য যা করেছেন তা অনেক বাবা তার ছেলের জন্যও করে না । নামেই তার বাড়ির কাজের লোক ছিলাম । সে আমাকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিল , থাকার জায়গা দিল , দিনকয়েক পড়ে আমাকে ইস্কুলেও ভর্তি করে দিল । আমি খাইদাই পড়াশুনা করি আর বড়বাবুর বাগানে বাড়িতে যতটা সম্ভব কাজ করি । এভাবে মাধ্যমিকটা পাশ করেছিলাম । একদিন হল কি দিব্বি ভালো মানুষ খেয়েদেয়ে জেলে গেলেন । সন্ধ্যার সময় প্রচুর গাড়ির ভীড় সামনে । কি ব্যাপার বাবু তো জেলে গেছে । অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি গেটের দিকে । একটা মড়াবাহী গাড়ি ঢুকল গেট দিয়ে । ছুটে গেলাম । আমার বড়বাবু শুয়ে আছে নিশ্চিন্তে । একবারো তাকিয়ে দেখল না ।

কঙ্কাল বোধহয় নিজের কষ্টকে দমন করতে কিছুক্ষণ থামল । আমার একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল । ভালো মানুষরা বোধহয় বেশিদিন আয়ুকাল নিয়ে পৃথিবীতে আসে না ।

---- তারপর কি হল রামশরণ ? --- রামশরণের জীবনকাহিনী আমাকে চুম্বকের মত টানতে লাগল আরো জানার জন্য ।


পরের পর্ব আগামীকাল ........... 

Tuesday, December 24, 2019

কঙ্কাল

কঙ্কাল


         ক্লাশ টুয়েলভের টেষ্ট পরীক্ষা শেষ । ফাইনালের জন্য ল্যাবটা পরিষ্কার করাচ্ছিলাম কয়েকটি ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে । এক্সটারনাল এগজামিনার আসবেন । একটু গোছগাছ না করলে কেমন দেখায় । 

               গোছানো শেষে একটু আগে ছেলেরা চলে গেছে । আমি তখনো চেয়ারে বসে ওদের প্রজেক্টের খাতাপত্রগুলো ঘাটাঘাটি করছিলাম । সাড়ে তিনটে বাজে । চারটে নাগাদ বেরোবার ইচ্ছে । একটি ছেলের খাতায় চোখটা আটকে গেছে । কভারটা তো সুন্দরই । খাতার ভিতরটাও এত সুন্দর পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন যে চোখ আপনা-আপনি পরপর পৃষ্ঠাগুলো পড়তে বাধ্য করছিল । এমন সময় কে যেন ডাকল ---- ' শুনছেন ' । আমি দরজার দিকে তাকালাম । কেউ নেই । হয়ত আমার মনের ভুল অথবা নীচে থেকে আওয়াজ আসছে ভেবে আবার খাতায় মনোনিবেশ করলাম ।

     দ্বিতীয় ডাকটা একটু পরে আরো স্পষ্ট করে উচ্চারিত হল ---- ' মাটারমশাই , শুনছেন । '

       এবারও আমি দরজা-জানালাসহ সমস্ত ঘরটাতে একবার চোখ ঘুড়িয়ে নিলাম । এই স্কুলে আমি জয়েন করেছি আট মাস হল । এর মধ্যে শুধু ক্লাশটুকু করা ছাড়া ল্যাবে খুব বেশি সময় কাটেনি আমার । উপরন্তু ল্যাবরেটরিটা তিনতলায় সারি সারি চারটে ঘরের একদম শেষ ঘরটায় । বাকি ঘরগুলোও বন্ধ । তাই এমন নির্জন পরিবেশে গাটা ছমছম করে উঠল । হঠাৎ চোখ পড়ল আলমারির ভেতরে রাখা কঙ্কালটার দিকে । 

   --- হ্যাঁ , হ্যাঁ , আমি বলছি । আলমারির পাল্লাটা একটু খুলুন না । '

          আলমারের পাল্লা খুলব কি মুহূর্তে আমার সারা শরীর কেমন অবশ মনে হল । হাত-পাগুলো এত ভারি যে আমার নড়বার ক্ষমতা নেই । মাথার মধ্যে কোনো বোধও কাজ করছে না । 

      --- ' আলমারির পাল্লাটা একটু খুলুন না । আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে । খুব কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করুন । '

         এই করুণ আর্তিতে আস্তে আস্তে সম্বিত ফেরে আমার । একুশ শতকে ভুত ! তাও আবার আমার ল্যাবে ! আমার বিজ্ঞানমনষ্ক মন জেগে উঠতে থাকে । কৌতুহল হয় । যা শুনছি সেটা কি ঠিক । চেয়ার ছেড়ে উঠে আলমারির চারপাশটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম । আজকাল স্যার - ম্যাডামদের বিপাকে ফেলার জন্য ছেলেরা অনেক রকম দুষ্টুমি করে । আমাকে ভয় দেখাবার জন্য সেরকম কিছু করে রাখেনি তো । এখন তো সবার হাতেই এন্ড্রয়েড ফোন । ভালো করে ল্যাবের সর্বত্র খুঁজে দেখতে লাগলাম । না । সন্দেহ করার মতো কোনো বাক্স বা স্পীকার কোথাও নেই । বাইরে বেড়িয়ে কড়িডোরটা একবার দেখলাম । নীচের দিকে ঝুঁকে দেখলাম । সব ফাঁকা । এবার আস্তে আস্তে আলমারিটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । কঙ্কালটাকে ভালো করে লক্ষ্য করছি । খুব বেশি পুরনো তো নয়ই , জিনিষটাও আসল বলেই মনে হচ্ছে । পর্যবেক্ষণ করছি , এমন সময় কঙ্কালের মুখটা যেন সত্যিই নড়ে উঠল । 

       --- মাষ্টারমশাই , পাল্লাটা একটু খুলবেন । 

      আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে সে আবার একই কথা বলল । আমি এবার আস্তে করে পাল্লার একটুখানি খুললাম ।

     --- ব্যাস , ব্যাস , ওতেই হবে মাষ্টারমশাই । অনেক ধন্যবাদ । ছেলেগুলো একেবারে আটকে দিয়ে গেছে ।

       আমার নির্বাক মুখের দিকে তাকিয়ে সে বলতে থাকে --- প্রায় ন'মাস ধরে আমি এখানে আছি । কি করব বলুন সারা জীবন যাদের মাঝে কাটিয়ে দিলাম মড়েও যে তাদের ছেড়ে থাকতে পারিনা । বাচ্চাদের কলরব না শুনতে পারলে আমার ভালো লাগে না মাষ্টারমশাই ।

       ---- তুমি কে ? --- আমি অষ্ফুটে জানতে চাইলাম । 


ক্রমশ : ......

Monday, December 16, 2019

এখনো হাসে

এখনো হাসে

আমি তখন বছর তেরো
সলাজনত একলা ঘরে
হঠাৎ চমকে ফিরে তাকাই
অজানা এক কন্ঠস্বরে
এমন কেন ধ্যান-গম্ভীর
স্তব্ধ চারপাশ
আমি তখন ভীত হরিণী
জীবন - উদাস

হয়ত তখন একটি-দুটি
পাপড়ি মেলার সময় হল
কিন্তু আমি স্বভাব-ভীতু
একলা মনে এগিয়ে চল

এই নিয়মে এই রীতিতে
চলেই গেলাম একা একা
হঠাৎ পথে চড়াই হল
ধানের ক্ষেতে প্রথম দেখা

ধানেও একদিন সূর্য নামে
সোনা রোদের আগুন ছড়ায়
দেখতে দেখতে জীবনজুড়ে
হেমন্ত তার মেদূর ছড়ায়

আমি আবার একলা পথে
একলা জীবন একলা মতে
চমকে দেখি শীত গিয়েছে
বসন্ত দ্বারে কড়া নাড়ায়
খুলব কিনা ভাবতে ভাবতে
কেটে গেল একলা দুপুর
বুঝিনি তাই কোন রীতিতে
সন্ধ্যা ঘনায় কাঁদায় সুদূর

এখন যখন ব্যস্ত ঘড়ি
জীবন আমার চলনসই
হাতের কাছে সঞ্চয়িতা
এখনো তবু অবাক হই
শেষের কবিতা শেষ হয়নি
এখনো অনেক আছে জমা
বাড়ির ভিতর সেই বাড়িটা
এখনো হাসে ঝর্ণাসমা ।


Monday, December 9, 2019

শেষ দেখা --- অন্তিম পর্ব

                 শেষ দেখা --- অন্তিম পর্ব

    স্টেশনচত্বর একদম খাঁ খাঁ করছে । টোটোর কোনো চিহ্ণ নেই । মনে পড়ল গতকালের একটা ভাসা ভাসা কথা --- বিকেলের দিকে টোটো উইনিয়নে মিটিং আছে বোধহয় । উঃ এবার কি করবে । চোখ ফেটে জল আসছে । কি আর করা যাবে । আসার সময় তাড়াহুড়োয় মোবাইলটা টেবিলেই ফেলে এসেছে বোধহয় ।
হাটাপথ ধরল ঐশী । মাঠের মধ্যে দিয়ে গেলে একটু সর্টকাট হয় । জমির ফসল উঠে গেছে । মাঠও এখন ফাঁকা । অন্তত দশ মিনিট সময় কমবে ।
মনের মধ্যেটায় কু ডাকছে বারবার । হে ঈশ্বর ভালো করে দিও । বাড়ি ফিরে মানুষটাকে যেন ভালো দেখতে পারি ।
    সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে পালদের  পুকুরের কাছে চলে এসেছে ঐশী । আর বেশিদূর নয় তাদের বাড়ি । পুকুরটা বায়ে রেখে একটু এগোলেই বড়ো রাস্তা । তারপর পাঁচ মিনিট হাটলেই ওদের সাবেকি বাড়ি । যদিও এত বড় বাড়িতে এখন বাসিন্দা বলতে ওরা চার শরিকের চার ছেলের পরিবার । আর তাদের চার ঘর ভাড়াটে ।

    হঠাৎ পুকুরপাড়ের দিকে তাকিয়ে বুকটা ধরাস করে উঠল ঐশীর । একটা আবছায়া দেখা যাচ্ছে । এইসময় এখানে কে দাঁড়িয়ে আছে । পা যেন ভারী হয়ে আসছে ঐশীর । পালদের পুকুর সম্পর্কে বদনাম আছে অনেক । প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ বছরের পুরানো পুকুর । দেবাংশুর চিন্তায় আগে পুকুরের কথা মনে পড়েনি । পুকুরপাড়ের কলাবাগানের মধ্যে কি যেন একটা ছুটে পালালো । ঐশীর গা শিরশির করে উঠল । একপা একপা করে এগোতে লাগল ঐশী । আর কিছু মাথায় আসছে না । আবছায়াটা এবার উঠে দাঁড়ালো । ঐশী আর এগোতে পারল না । মুহূর্তে চোখের সামনেটা অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে শুনতে পেল কেউ যেন তার নাম ধরে ডাকছে ।

     এ কি দেবাংশু তুমি এখানে ।
আজ তো টোটো ইউনিয়নের মিটিং আছে । টোটো পাবে না । ফোনেও তোমাকে পাচ্ছি না । তাই এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি ।
ওঃ কি ভয় পেয়েছিলাম । তোমার কথা ভাবতে ভাবতে  আর এই পুকুরের কথা মনেই ছিল না । কিন্তু তুমি যে বললে তোমার শরীর খুব খারাপ । তাহলে এতটা পথ এলে কি করে ।
অন্ধকারে দেবাংশুর মুখটা দেখা গেল না । এইরকম পরিবেশে সুস্থ দেবাংশুকে পেয়ে আজ যেন কথায় পেয়েছে ঐশীকে ।

     হঠাৎ মনে হল পাড়াটা যেন আজ একটু বেশিই নিস্তব্ধ । কুকুরগুলো চুপচাপ । মনে একটা খটকা লাগলেও দেবাংশুর সুস্থ হয়ে ওঠার আনন্দে এসব আর আমল পেল না ঐশীর কাছে ।
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই বাড়ির সামনে বহু মানুষের জটলা চোখে পড়ল ঐশীর । কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই 'তুমি এগোও , আমি একটু আসছি ' বলে যেন অন্ধকারে মিশে গেল দেবাংশু ।
ঐশী পায়ে পায়ে বাড়ির গেটের কাছে উপস্থিত হয় । তাকে দেখতে পেয়ে সবাই তার পথ ছেড়ে দাঁড়ায় । সবার চোখে মুখে কেমন একটা সন্ত্রস্তভাব । কিছু বুঝতে না পেরে ঐশী ছুটে যায় ভেতরদিকে । উঠোনের মাঝখানে শোয়ানো রয়েছে দেবাংশুর নিষ্প্রাণ নিথর দেহ । এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না ঐশী । তার অচৈতন্য শরীরটা লুটিয়ে পড়ল মৃত দেবাংশুর পায়ের কাছে ।

Thursday, December 5, 2019

শেষদেখা --- প্রথম পর্ব

                  শেষদেখা --- প্রথম পর্ব

ট্রেন থেকে নামতেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল ।প্রায় দু'কিমি পথ এখনও যেতে হবে । টোটো করে যেতে হবে । মনের মধ্যে নানান চিন্তা ভিড় করে আসছে । একটা সরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর একটা । মনটাকে কিছুতেই সংযত করতে পারছে না ঐশী ।
অফিসে তখন লাঞ্চব্রেক চলছিল । খাবারের ট্রেটা হাতে নিয়ে মাত্র মাত্র টেবিলে বসেছে , ওমনি দেবাংশুর ফোন ।
তুমি একটু তাড়াতাড়ি এসো , আমার শরীরটা ভালো লাগছে না ।
তখন থেকেই মনটা খচখচ করছে । ক'দিন ধরেই শরীরটা খারাপ যাচ্ছে । গত বুধবার অফিস থেকে ফিরল জ্বর নিয়ে । রাতে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল ঐশী । সামান্য জ্বর । রাতটা গেলেই ভালো হয়ে যাবে । কিন্তু রাতটা যেন আর কাটতেই চাইছে না । জ্বর কিছুতেই একশো চারের নীচে নামছে না । গত দু'দিন এভাবে কেটেছে । দুদিন পর আজ অফিসে এসেছে ঐশী । ভেবেছিল একটু তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে । কিন্তু দেবাংশুর ফোনটা পেয়ে আর স্থির থাকতে পারল না ঐশী । কোনো রকমে একটু খেয়ে রাইকে ফাইলগুলো বুঝিয়ে দিয়েই বেড়িয়ে এল । তবু প্ল্যাটফর্মে পৌঁছবার আগেই তিনটে চল্লিশের ট্রেনটা বাই বাই করে বেরিয়ে গেল । যেদিন তাড়া থাকে সেদিন সবেতেই এরকম হয় । এরপর ট্রেন সেই চারটে পঁচিশে ।
ট্রেন থেকে নেমে দ্রুত পা চালাল ঐশী।আগে নাগেলে টোটোতে জায়গা পাওয়ামুশকিল হবে।একার জন্য কোনো টোটো যাবে না।আর গেলেও বেশি ভাড়া চাইবে।কিন্তু একি!

Monday, December 2, 2019

অনুগল্প --- খবর

                       অনুগল্প --- খবর

ওমা বৌদি জানো না কাল রাতেই শেষ গো ।
আমাদের কাজের মেয়ে চুমকির বলার ধরনে শুয়ে থেকেও কানটা সজাগ হয়ে উঠল । সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়ার আগে স্থানীয় যা কিছু সংবাদ চুমকির দৌলতে তার প্রায় সবই আমার কানে এসে পৌঁছোয় । এমনকি পাশাপাশি বাড়িগুলির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তথ্য , যেগুলি কোনোভাবেই আমাদের জানবার কথা নয় সেগুলিও অনায়াসেই আমরা জানতে পারি চুমকির খবর শোনাবার আতিশয্যে । মাঝে মাঝে ভাবি আমার আর আমার স্ত্রীর নির্ভেজাল সংসারে এমন কোনো ঘটনা ভাগ্যিস ঘটে না যেটা এভাবে অন্য কোনো বাড়িতে মুখরোচক হয়ে পরিবেশিত হয় । যাই হোক চুমকির আজকের খবরটা শোনার জন্য উৎকর্ণ হয়ে রইলাম ।
কি আবার হোলো রে । কি শুনব । আমার স্ত্রীর নিরুত্তাপ অভিব্যক্তি । এমন শান্ত শিষ্ট নিরুত্তাপ স্রোতা পেলে আদৌ কারো এমন টাটকা সংবাদ শোনাতে ইচ্ছে হয় কিনা মাঝে মাঝে আমার তাতে সন্দেহ জাগে । অবশ্য এক দিক থেকে আমার স্ত্রী যে এক নম্বর সে কথা মানতেই হবে । কারো কোনো কথায় কখনো বিরক্ত হতে তাকে আমি আজ পর্যন্ত কখনো দেখিনি । সে সবার সব কথাই খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে । আজো তাই ।
ওমা , বিলে গো , বিলে গুন্ডা .... । কাল রাতে ছ'টা গুলি করেছে গো । কি আওয়াজ সাঁই সাঁই করে .... । আমাদের ঘরের কাছাকাছি কিনা .... । ভয়ে আমার সেকি অবস্থা .....। তারপর আমাদের ঘরের পেছন দিয়েই তো সব ছুটে গেল গো । আমার তখন কি কাঁপুনি .... । ভয়ে কাউকে ডাকতেও পারছিনা ..... ।সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারিনি গো ।
প্রত্যেকটা পাড়ায় যেমন একটি করে উঠতি দাদা থাকে বিলেও তাই । ভালো নাম প্রবাল শিকদার । ক্লাশ নাইট - টেনে আমার কাছে পড়ত । বাবা কাঁকিনাড়ার ঔদিকে কিসের একটা কারখানায় কাজ করে । বাড়িতে অনেকগুলো ভাইবোন । ও পরিবারের বড় ছেলে । হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দেওয়ার পরপর ওর বাবা মারা যায় । তারপর  এঘাট ওঘাট করে অবশেষে এই পথে স্থিতু হয়েছিল । কিছুদিন ধরেই ওর জুলুমবাজির নানা কান্ডকারখানা কানে আসছিল । তারই কোনোটার প্রতিফলন নাকি আজকের ঘটনা ।
আরে ঐ যে খালপাড়ে দশ বিঘা জমিটা নিয়ে যে বুড়িটা একা একা থাকে না .... । ঔ বাড়িটার ওপর ওর অনেকদিন ধরে লোভ রয়েছে  গো ....। গতকাল বুড়ি ওর বাগানের দুটো মোটা মোটা গাছ কুড়ি হাজার টাকায় বিক্রি করেছে গো । বুড়ির তো কেউ নেই । খাবে কি । তাই গাছ দুটো বেচেছে । তা আর খাওয়া ...... । গাছ কেটে নিয়ে যাওয়াও সারা  আর বিলের ওখানে পৌছনোও সারা । ব্যাস গাছ বেচা টাকা থেকে দশ হাজার দাও । বুড়ি বলে  , ও বাবা  আমি একা মানুষ । কেউ দেখারও নেই খাওয়ানোরও নেই । এই বয়সে কি কাজ করতে পারি । এই টাকা দিয়ে আমি শেষ দিন কটা খেয়ে পরে চলব বলে গাছদুটো বিক্রি করলাম । আর তুই সে টাকাও আমায় দিবিনা । তোর এত লোভ । ভগবান তোর বিচার করবে । ভগবানই তো আমাকে পাঠিয়েছে বলে সে টাকা নিয়ে নিল গো । এতটুকু মায়া দয়া নেই । কিন্তু কি হল । পারলি না তো একটা রাতও কাটাতে । ভগবান দূত পাঠিয়ে ঠিক শাস্তি দিল তো । এজ্যেই বলে লোভে পাপ , পাপে মৃত্যু ।
কি একটা কাজে কদিন আগে ঐ পথ দিয়ে একবার যাবার দরকার হয়েছিল । তখন খালপাড়ের ঐ বাড়িট চোখে পড়িছিল । কেউ যে ওই বাড়িতে থাকে তা অবশ্য মনে হয়নি । নানা রকম দুষ্কর্ম করার উপযুক্ত জায়গা বটে । কিন্তু অসহায় মানুষের পাশে না থেকে তাদের শেষ সহায়টুকু আত্মসাৎ করার এ কি খেলায় মেতে উঠেছে যুব সমাজ ! যাদের হাত ধরে সমাজ  আরো উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা তারা কোন পাঁকে ডুবে যাচ্ছে ! এই দুঃসময়ে এইরকম দিশাহীন ছেলেগুলোকে সঠিক দিশা কে দেখাবে । অন্ধকারের উৎস হতে আলোর দিকে হাত ধরে নিয়ে যাবে কে । নাকি সত্যিই ভগবানের দূত এসে  এভাবে শাস্তি দেবে তাদের !

Monday, November 25, 2019

অনুগল্প --- ভাত

                        অনুগল্প --- ভাত
                                  
মেয়েটি হাপাতে হাপাতে এসে দাঁড়ালো দরজায় ।
ম্যাম , আসবো ?
     আড়িপুর গ্রামের কাননদেবী উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে । পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে পনেরো মিনিট হল । পাঁচটি গ্রামের মধ্যে এই একটিই হাই স্কুল ।বর্তমান ডিজিটাল যুগেও যে এমন কোনো জায়গা থাকতে পারে সোহিনীর তেমন ধারণা ছিল না । এখানে চাকরি নিয়ে এসে মাত্র ছয় - সাত মাসে কত অভিজ্ঞতা যে হচ্ছে ! বাইরের আলো হাওয়াও যেন এই গ্রামের মানুষগুলোর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । গরীবস্য গরীব এখানকার মানুষ । বিদ্যুৎ তো দূরের কথা পানীয় জলটুকু পাওয়া যে কি কঠিন এদের কাছে । পঞ্চায়েতের তরফ থেকে গ্রাম পিছু একটি করে টিউবয়েল বসিয়ে দিয়েছে । তার মধ্যে দুটো ইতিমধ্যেই খারাপ হয়ে পড়ে আছে । বাকিগুলোতেও পর্যাপ্ত জল পাওয়া যায় না এখানকার ভৌগোলিক  কারনে । বর্ষা ঠিকঠাক হলে জলাশয়গুলিতে যাওবা একটু জল থাকে বাকি গরমকালটা খুব কষ্টে কাটাতে হয় ।সরকারী প্রকল্পগুলো সবে মাত্র পেতে শুরু করেছে  এরা। রুক্ষ মাটির বুক চিরে ফসল ফলানোর কঠোর পরিশ্রমে তারা দিনরাত ব্যায় করে । বিনিময়ে যে সামান্য ফসল পায় তাতে কোনোভাবে খাওয়াটুকু জোটে । বিদ্যালয়গুলি তাই ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েগুলোর কাছে যতটা লেখাপড়ার জন্য আকর্ষনীয় তার চাইতে অনেক বেশী আকর্ষনীয় ভরপেট ভাতের জন্য এটুকু বুঝেছে সোহিনী । তাই  শুকনো মুখ আর রোগা রোগা হাত-পায়ের ছেলেমেয়েগুলোকে দেখলে বড় কষ্ট হয় তার । এক অব্যক্ত বেদনায় ছটফট করে সে । এত কষ্ট করেও মানুষগুলোর মধ্যে কোনো অভিযোগ নেই । যেন আজন্ম এইভাবে বেঁচে থাকার অঙ্গীকারে আবদ্ধ এরা ।কোনো কিছু চাওয়ার নেই , কোনো কিছু পাওয়ারও নেই ।
পরীক্ষার খাতায় সই করা থেকে পলক চোখ তুলে   ছোট্টো মেয়েটাকে দরজায় দেখে সোহিনী বলল , কি রে এত দেরি কেন ? পরীক্ষা তো কখন শুরু হয়ে গেছে । আয় আয় । কোন ক্লাস ? যা ওখানে বসে পড় ।
 
  পরীক্ষার খাতা আর প্রশ্নপত্র  এগিয়ে দিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করল সোহিনী , কোথায় বাড়ি তোর । এত দেরি করলি কেন । পরীক্ষার সময় টাইম মত স্কুলে আসতে হয় বুঝলি ।
শুকনো মুখে ছলছলে চোখদুটো তুলে কি যেন বলতে গেল মেয়েটি । ঠোঁটটা একটু কাঁপল শুধু , শব্দ বেরোলো না । সোহিনী মাথায় হাত দিতেই ফুঁফিয়ে উঠল মেয়েটি , তিন রাত আগে আমার বাবা মরে গেছে ।
তাও তুই পরীক্ষা দিতে এলি ? পিতৃহারা ছোটো মেয়েটির প্রতি সমানুভুতিতে তারও চোখে জল চলে এল ।
তিন দিন মা - দাদার সাথে আমিও কিছু খাই নি । তাই আজ ইস্কুলে এলাম । মেয়েটির চোখদুটো চকচক করে উঠল । আজ আমি পেট ভরে ভাত খাব ।