Sunday, October 21, 2018
Thursday, October 18, 2018
Wednesday, October 17, 2018
মেয়েবেলার গল্প
মেয়েবেলার গল্প
একটু যাই না মা । কি হবে গেলে । আমি কি তবে এবার ঠাকুরও দেখতে পাবনা ।
অনুসূয়ার মুখটা গম্ভীর হয়ে ওঠে । অধৈর্য হয়ে বলে , আর কতবার বলব মানু । পুজো হয়ে যাক বাইরে থেকে দেখবি । ঠাকুরের কাছে যাবি না । কাওকে ছুঁবিনা ।
মনটাকে কিছুতেই মানাতে পারেনা টিয়া । ওর বন্ধুরা বারবার ডাকতে আসছে পুজোমন্ডপে যাবার জন্য । কিন্তু মায়ের কড়া নির্দেশ এসব হলে ঠাকুর ঘরে যাওয়া বা যারা ঠাকুরের কাজ করে তাদের ছোঁয়া যাবে না ।
তের বছর বয়স টিয়ার । বড় হয়ে উঠছে সে । মহিলা হয়ে ওঠার প্রথম ধাপে পা দিয়েছে সে । আজ দ্বিতীয় দিন । একটা শারীরিক প্রক্রিয়া তার ছোটোবেলাটাকে এক নিমেষে দূরে সরিয়ে দিয়েছে । প্রতিবছর প্যান্ডেলে বাঁশ ফেলা থেকে খেলা শুরু হয় সেখানে । বাঁশ বাঁধার পর বাঁশের উপরে উঠে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার মজাই আলাদা । তারপর একটু একটু করে প্যান্ডেলে কাপড় লাগানো হয় । ঠক ঠক করে পেরেক ঠোকার শব্দ কানে গেলে আর ঘরে থাকা যায় না । স্কুল থেকে ফিরে কখন প্যান্ডেলে যাবে সব সময় সেটাই মন তোলপার করে । স্কুলে গেলেই কি পড়ায় মন থাকে । মন তো পড়ে থাকে প্যান্ডেলে । তারপর ঠাকুর আনা । কত কসরৎ করে বড়োরা সেই ঠাকুর মন্ডপে তোলে । এই ধর ধর , এদিকে একটু কাৎ করে , আরে মাথা বাঁচিয়ে , নীচু কর নীচু কর । ওঃ সে যে কি উত্তেজনা সে আর কাকে বোঝাবে টিয়া । চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে যাচ্ছে অঝোর ধারে ।
রাগ হচ্ছে খুব । কেন এসব হয় । বন্ধুরা সবাই কত মজা করছে । প্যান্ডেলে পুজোর ঢাক বাজছে । অঞ্জলিও দিতে দেবে না মা । বাবাটাও যেন কেমন হয়ে গেছে । অন্য সময় তো যত অন্যায় ই করি না কেন বাবা ঠিক মার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয় । আর আজ সেও মার সাথে এক ই কথা বলছে । দুর্গাঠাকুর তুমি কিছু করতে পার না ।
অনুসূয়ার মনটাওভালো নেই । সত্যি তো । এটা একটা শারীরিক প্রক্রিয়া । এর সাথে পুজো আচারের কি সম্পর্ক । মানুষের মল মূত্র ত্যাগের মত এটাও একটা স্বাভাবিক ঘটনা । যত বাধা শুধু মেয়েদের বেলায় । বিজ্ঞান কত উন্নত হয়েছে । মেয়েরা কি না করছে । চাঁদ সূর্য তারা কোথায় কোথায় চলে যাচ্ছে মেয়েরা । আর আমরা ছাপোষা মানুষগুলো এসব সংস্কারকে আঁকড়ে ধরে বসে আছি ।এত বছর ধরে চলে আসা সংস্কারকে ঠেলে সরাতে পারছি কই । বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে অনুসূয়ার ।
কইরে টিয়া তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে মা । প্যান্ডেলে যাবিনা । হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতর এসে ঢোকে টিয়ার বাবা । পিছন পিছন টিয়ার বন্ধুরা । অনুসূয়া টিয়া দুজনেই অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকায় ।
আরে হা করে দাঁড়িয়ে আছে দেখ । প্যান্ডেলে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে কাল থেকে । রিহার্সাল দিতে হবে না । তোর তো অনেক নাচ আর আবৃত্তি তোলা আছে । এদের নিয়ে রিহার্সাল করে নে । তিন দিনে কিভাবে কিভাবে অনুষ্ঠান নামাবি সেটা ঠিক করে নে । রবীনকাকু একটু পড়ে আসবে তোর সাথে কথা বলতে ।
অনুষ্ঠানের কথায় আর বন্ধুদের কাছে পেয়ে টিয়ার মনটা আনন্দে নেচে ওঠে । সবাইকে ডেকে নিজের ঘরে নিয়ে যায় টিয়া । একটা জম্পেষ অনুষ্ঠানের ছক কষতে হবে ।
অনুসূয়া মনে মনে ঠাকুরকে প্রণাম জানাল । মেয়েটা মন খারাপ না করে এসব নিয়ে মেতে তো থাকতে পারবে কটা দিন । তবে মনে মনে ঠিক ই বুঝল মেয়ে অন্তপ্রাণ টিয়ার বাবারই কারসাজি এসব । যাতে পুজোর দিনকটা একমাত্র মেয়েটার ম্লান মুখটা না দেখতে হয় ।
Tuesday, October 16, 2018
শরৎ - ছেলেবেলা - এখন
শরৎ - ছেলেবেল - এখন
শরৎ এসেছে -
পদ্মের বুকে জমে উঠেছে মধু
যেমন প্রথমরাতে জমে নববধূর হৃদয়ে প্রেম
লজ্জনত বদন - প্রথম প্রকাশের আকাঙষা
মধুর চঞ্চলতা দেখি শিউলির বৃন্তে
সবুজ পাতা ঢাকা অজস্র শ্বেত শুভ্র তারা
ভোরের প্রতীক্ষায়
নীল সাদার অপূর্ব সমাবেশ আকাশে
প্রকৃতির ক্যানভাসে - আর আছে কাশ
.... এদের মায়ায় ঘিরে মোহনীয় তুমি
উজার করা বাঙালী হৃদয় প্রনত হয়
তোমার মোহিমায়
দশস্ত্রশোভিত তুমি দশভুজা
কানে আসে ভদ্র মহোদয়ের জলদগম্ভীর স্বর
" যা দেবী সর্বভূতেষু ...."
ফিরে আসে শৈশবস্মৃতি , হারানো ছেলেবেলা
চোখ খোঁজে আবার আপনজন , হারানো স্বজন
সময় - চক্র পারি দেয় বহুদূরে
আবার ফিরে আসি 'মাতৃ' আহ্বানে
বাস্তবের অনবদ্য টানে স্মৃতিকে বিস্মৃত হয়ে
ছোট্ট মেয়ের হাসিমুখে এ কার হাসি ভাসে
শরৎ মেঘেও বর্ষে যেমন , হায় -
আমার ছেলেবেলা ।
Monday, October 15, 2018
পুজোর ছড়া
পুজোর ছড়া
ঢ্যাম্ কুরকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
পুজো এলো কাছে
ঢ্যাম্ কুরকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
মনটা ভালো আছে ?
ঢ্যাম্ কুরকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
শিউলি তলায় ভোর
শরৎ এলো , বর্ষা তবে
সাঙ্গ কান্না তোর !
কলার পাতায় হাসির ঝলক
চাঁদের পিঠে চাঁদ
শিশুর হাসি নতুন জামায়
সমুদ্র অগাধ ....
ঢ্যাম্ কুরাকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
হারিয়ে গেছে ঊষা
বেলা হলো তৈরী হওগো
নতুন জীবন তৃষা
নতুন করে চাওয়া পাওয়া
কেন পেছন ফেরা
ভুলে যেও , সকাল ছিল
শিউলি ফুলে ঘেরা
মধ্যাহ্নের ক্ষররৌদ্র
তপ্ত বায়ুর শ্বাস
আর পাবে না , আর পাবে না
প্রভাতকালীন সুবাস....
তবুও , আবার দুর্গাপুজো
নতুন পরিচিতি
শরৎকালীন অনুভূতি
প্রাপ্তি আর ইতি ।
Saturday, October 13, 2018
অন্তর্ভাষ
অন্তর্ভাষ
এ মন আমার হালকা এমন
যেন বাবুই পাখির বাসা
দোলে , আর শুধু দোলে
পলকা হাওয়া আলতো চুমে
ভরিয়ে দিয়েছে সকাল
সোনালী রঙের পাপড়ি খুলে
নির্নিমেষে চাঁপার কুঁড়ি হাসে
আমার আকাশভরা হাজার ঢেউয়ের মাতন
মেঘ নয় - ঠিক যেন কালিন্দী নদী
স্বর্ণচূড়া দ্বৈরথ বাস্তব আর কল্পনা
দুই যুযুধানে সমানে সমানে
চাপান উতোর চলে
তারপর বাস্তবের কঠিন মাটিতে
রক্তাক্ত কল্পনা আমার মুখ থুবড়ে পড়ে
ফিরে আসি প্রকাশ্য রাস্তায় ।
পুজো নষ্টালজিয়া
পুজো নষ্টালজিয়া
পুজো আসে পুজো যায়
সময় বদলায় , মন বদলায় না
ফিরে আসে সময় আমার নষ্টালজিক হয়ে
'আশ্বিনের শারদপ্রাতে '.....
এতো যে কাশ দেখি , শুভ্র মেঘ
তবু যেন জলছবি শব্দ জব্দ লাগে
হুতাশনে খুঁজি শুধু পুজোর প্রাণ
আমার একলার আকাশে...
এখন মাটির গন্ধে বারুদের ঘ্রাণ
দুষ্প্রাপ্য প্রেমে এখন আদিম লালসা
সময় বিকায় শুধুই শ্যেনের থাবায়
তারই রক্তাক্ত প্রতিক্রিয়ায়...
বাতাস বড্ড বেশি হিমশীতল
সম্পর্কের উষ্ণতা হার মেনে নেয়
রঙের ফোয়ারা ঘিরেও দলীয় উত্তেজনা
আমার ক্লান্ত মন নষ্টালজিক হয়...
মা আসছেন
মা আসছেন
নৌকো প্রস্তুত কর
আর তো মোটে নেই দেরি
মা আসছেন ....
মাটির গন্ধ গায়ে মেখে, প্রবল স্রোতে
পাল তোলো , বৈঠা নাও হাতে
বৈঠা তো হাতিয়ারও হয়
আদিম মানুষ যেমন
গাছের ডালকে করেছিল হাতিয়ার
আমরা তো সভ্য হইনি....
তাহলে কিভাবে -
নিষ্পাপ শিশুর গায়ে বেঁধাই তীক্ষ্ম সূচ
কিভাবে ছুঁড়ে মারি অসহায় শিশু
কিভাবে রাতের আঁধারে আস্তাকুঁড়ে
ছুঁড়ে ফেলি সদ্যজাত সন্তান
আমরা একুশ শতকের সভ্যতাদর্পী মানুষ
তাই ধরনী দ্বিধা হয়না , চোখ বন্ধ করে রাখে
Wednesday, September 26, 2018
আমি পারি
আমি পারি
তুমি যদি চাও
আকাশটাকে ছিন্নভিন্ন করে
মেঘের ভিতর থেকে
বিদ্যুৎ নিয়ে আসতে হয়ত পারব না
সমুদ্র থেকে মুক্ত তুলে আনতে হয়ত
পারব না ।
হয়ত পারব না পাহাড়ের সর্ব্বোচ্চ শিখর থেকে
ভোরের স্নিগ্ধ শিশিরের বিন্দু নিয়ে আসতে ।
কিন্তু আমার তো একটা জীবন আছে
একেবারে নিজস্ব একটা জীবন
অকপটে পারি নিঃশেষ করে দিতে
তোমার জন্য
আনন্দের সাথে ।
স্মৃতি
স্মৃতি
পুরনো পাতা ঝরে পড়ে --
সে তো পড়বেই
ঝরা পাতাই বহন করে আনে
আগামী দিনের পূর্বাভাষ
নূতনকে অভ্যর্থনা করার জন্য
পুরাতনের বিদায় তাই অপরিহার্য
আমাদের স্মৃতিগুলি
সময়ের কোপে বলি হয়ে গেলেও
মুছে যায় না
আমরা মুছে যেতে দিই না
বসন্তের বিদায় প্রত্যাশা করে থাকে
আগামী বসন্তকে
এমনি - চিরদিন - চিরকাল -
চিরকাল মানব মনে , দেহে ঘটে বিবর্তন
একটি করে বসন্ত হয় অতীত স্মৃতির প্রক্ষেপন
ইতিহাসের গর্ভে এক একটি স্মৃতি ।
Tuesday, September 25, 2018
চেয়ারটা
চেয়ারটা
অনেকবার ভেবেছি
এবারে
এই হাতলভাঙা চেয়ারটাকে
অবসর দেব
চেয়ারটার বয়সও কম হল না
আর কতদিন
নিঃশব্দে ঘাড় গুজে
এক একটি শরীরের ভার বহন করবে
পারিনি তবু
এক একটি আবেশ
পারেনি সরিয়ে দিতে চেয়ারটাকে
সারাদিন শেষে কর্মশ্রান্ত শরীরটাকে
টেনে হিচড়ে নিয়ে এসেছি চেয়ারটার কাছে
অসীম স্নেহে গ্রহন করেছে আমায় সঙ্গে সঙ্গে
নিয়ে গেছে অতীতের কোন মায়াবি রাতে
যখন
জ্যোৎস্নার সমুদ্রের মাঝে
চেয়ারটাতে বসে
রাতের তারা গুনেছি
বসন্তের দুপুরে জানালার ধারে বসে
কোকিলের বিশ্রম্ভালাপ শুনেছি
আবার
তোমার আমার প্রেমের সাক্ষিও এ
তাই
শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠেনি অবসরের
নির্দ্বিধায় বহন করেছে আমায়
আমৃত্যু ........
শুধু চাই
শুধু চাই
আঁধার রাতের ধাঁধাঁর মাঝে
হারিয়েছিলাম যবে
সোনালি এক আলোর দিশা
জাগল অনুভবে
ক্লান্ত শ্রান্ত পথের মাঝে
চিরপথিক আমি
চিনিয়েছিলে পথের দেবতা
মৃত্যু উত্তরনী
পথের ধারেই ঘর বাঁধলাম
বুকে নিয়ে আশা
চাই না যে আর কাঁচের পুতুল
চাই যে ভালোবাসা
চাই না মুক্ত , চাই না সূক্তি
চাই না আমি হেম
পরশে পরশে দিয়ে যেতে চাই
বুক ভরা এই প্রেম ।
Sunday, September 16, 2018
Thursday, September 13, 2018
তবে কি হারিয়ে গেছ
তবে কি হারিয়ে গেছ
বড় রাস্তাটা পার হতে গিয়ে
দেখেছিলাম তোমায় ,
কিন্তু -
একটা স্টেট বাস থামতেই
হারিয়ে গেলে তুমি ,
আর খুঁজে পেলাম না -
সেদিন খেলার মাঠে
একদল ছেলের মাঝে
তোমায় দেখেছিলাম ।
কিন্তু -
চোখ ফেরাতেই
'গোল' , 'গোল' চিৎকার
হারিয়ে গেলে তুমি
একবার পুজো মন্ডপে
খাঁকি রঙের শার্ট গায়ে
বসেছিলে তুমি -
কিন্তু -
মায়ের ডাকে পিছন ফিরে চাইতেই
আর দেখতে পেলাম না তোমায় ।
তবে কি হারিয়ে গেছ
বহু জনের মাঝে
অস্পষ্ট কুয়াশার আঁধারে ?
তবে কি হারিয়ে গেছ
যন্ত্র দানবের ভীড়ে
শিউলির সুগন্ধির মত ?
Friday, August 31, 2018
নির্বাসন
নির্বাসন
আমাদের শিরায় শিরায়
বইছে নিষিদ্ধ রক্ত
তাইতো নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি
আকর্ষণ এত প্রবল ।
আমরা সন্তান সেই -
আদম আর ইভের
তাই -
অজানাকে জানার ইচ্ছে প্রবল ।
কুটিলচক্রী প্রানীরাকত সহজেই
আমাদের কান ভারী করে
ভুলে যাই আমাদের মনুষ্যত্ব ,
ভুলে যাই আমাদের মনুষ্যত্ব ,
ভুলে যাই আমাদের অধিকার ।
তাই -
হাত বাড়াই নিষিদ্ধ গাছের দিকে ।
পদে পদে নির্বাসিত হই আমরা
স্রষ্টার কাছ থেকে ।
ছেলেবেলার কাটুমকুটুম
ছেলেবেলার কাটুমকুটুম
ছেলেবেলার সেদিনগুলো
ছিল কত রঙীন
রঙফানুষে ভেসে যেতাম
স্বপ্ন নিয়ে সেদিন
স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন
আপনি মাষ্টারমশাই
স্বপ্নভেলায় কাটুমকুটুম
কোথায় ভেসে যাই
হয়নি দেখা অনেক কিছুই
দেশবিদেশে গিয়ে
আপনার বলা চিত্রকথায়
সবই যেত মিলে
মনে মনে ভেবেছিলাম
যেদিন বড় হব
আপনার মত ঞ্জানসাগরে
ঠিক পারি দেব
দেশবিদেশ আর দূর রবে না
যেদিন কাছে যাব
এমনি কি আর থাকব নাকি
ঠিকই বড় হব ।
Wednesday, August 29, 2018
উড়ণ্ত চিল
উড়ণ্ত চিল
উড়ণ্ত চিল তুমি -
পাখা মেলো নীল আকাশের বুকে
কত সুখ কত দুঃখ পৃথিবীর বুকে
রাখ কী খবর কোনো ?
এখানে মানুষ জন্মে মানুষ মরে
ভাগারের কোনে পড়ে থাকে মরা প্রাণী
স্নেহ ভালবাসায় জড়িয়ে থাকে গাছপালা
আবার সামান্য একটু ভুল বোঝাবুঝি
ভেঙে দেয় মানুষের মন ।
এখানে ফুল ফোটে নানা রঙের
এখানে পাকা ফল টুপ করে পড়ে মাটিতে
এখানে মানুষ মানুষকে খুন করে
এখানে ব্যাঙ খায় সাপে ।
প্রতীক্ষা
প্রতীক্ষা
শরতের শুভ্র আকাশ -
দ্বিতীয়ার চাঁদ তখন মধ্য গগনে ,
ঝিরিঝিরি বাতাস তখন কুয়াশার
হালকা পরশে মৃদুমন্দ বইছে ।
রজনীগন্ধার ক্ষেতের ধারে
বসে থাকা দুটি প্রাণী ।
রজনীগন্ধার গন্ধে মোদিত বাতাস
সুরসুরি দিচ্ছিল নাকে ।
পাশাপাশি দুটি প্রাণী ,
হাতের পরে হাত ।
মন দেওয়া নেওয়ার পালা সাঙ্গ করে
অসীম মিলনের প্রতীক্ষা শুধু ।
এমনিভাবে - শুধু এমনিভাবে
আজন্ম রয়েছে বসে তারা
যুগ যুগান্তর ধরে -
বয়ে চলে সময় , কেটে যায় প্রহর ,
তবু হাতের পরে হাত ,
প্রতীক্ষা শুধু মিলনের ।
হতাশা
হতাশা
মনের ছবি যায় না যে দেখা
না জানি আরো কত আছে লেখা
এভালে ।
স্মৃতির পরশ ছুঁয়ে চলে যায়
বেদনায় সব ফিকে হয়ে যায়
একালে ।
দিনের পরে দিন চলে যায়
প্রিয়জন শুধু দূরে চলে যায়
হালকা হাওয়ায় বেদনা জাগায়
পাপরিগুলি ঝরে পড়ে যায়
সাতসকালে ।
যৌবন আজ কুন্ঠিত , ধুলায় শুধুই লুন্ঠিত
বৌ কথা কও শঙ্কিত , শুধু
এদিক ওদিক চায়
Wednesday, August 15, 2018
দরিদ্র মাতা
দরিদ্র মাতা
মাগো , তোমার দারিদ্র-ক্লিষ্ট
অমন পাংশু মুখ
যতবার দেখি ব্যাথা লাগে মনে
ভেঙে যায় এই বুক
কাঁদে তোমার সন্তানেরা
একমুঠো ভাতের তরে
অক্ষম তুমি , দরিদ্র মাগো
চোখে আসে জল ভরে
তবুও প্রশান্তি তোমার সৌন্দর্য
সুধারস পানে
তবুও কোকিল মুখরিত হয়
নব অরন্যের গানে
তবুও এখানে অঞ্চল ভরে
ফোটে কত ফুল ও ফল
হোক না পৃথিবীর একভাগ স্থল
তিনভাগ লোনা জল ।
Sunday, August 5, 2018
মিলন মেলা
মিলন মেলা
নববর্ষার প্রথম ফোটাটি
সহসা আকাশ থেকে
কচিপাতার নিবিড় ডাকে
পড়ল ভূমির পরে
উচ্ছ্বসিত কচিপাতার নরম হৃদয়
পুলকে উঠল নেচে
যেন বহুদিন যেচে
প্রেম সে পেয়েছে
মিলন ডোরে উচ্ছ্বসিত
শরীরখানি তার
কাঁপছে বারে বার
আনন্দ অপার
পাতায় পাতায় প্রেমের সুধা
শিকরে মাতাল হাসি
বলছে ভালোবাসি
আকাশ পথে বাদল বেলায়
কচি পাতার মিলন মেলায়
বেজেছে আজ বাঁশি
ওগো , বেজেছে আজ বাঁশি ।
Thursday, August 2, 2018
সুনামি
সুনামি
প্রবল জলোচ্ছ্বাস
ঝিনুক ভাঙা সুপ্ত মধ্যরাত
চোখের কোনে বিপন্ন বিস্ময়
যোজন যোজন দূরে তোমার শুভ্রপক্ষ শপথ
শতাব্দীর বক্ষভেদী লক্ষহীন গতি
আবার জমেছে ধুলো , আবিল অশ্মক্ষুর
ক্যাকটাসে ফুটেছে ফুল , বিলম্বিত লয়
রক্ত ঝরে , ব্যাথাতুর শ্রাবন দুপুর ।
মহাকাব্য
মহাকাব্য
পর্বত শিখরে পূর্ণিমার চাঁদ
পিচ্ছিল পাথরের পাহাড়
উত্তরন অসম্ভবপ্রায়
রাজপথে জমেছে ফাঙ্গাস
কষ্টসাধ্য এ বেড়াল পার
আরো দূরে –
বহুদূরে মাইল ফলক
তখন মধ্যরাত
দরজায় করাঘাত
অকস্মাত্ -
জোত্স্নার বন্যা ঢেউ তোলে প্রাঙ্গনে
অঙ্গন শূন্যময়
ঝাউবনে বাতাসের ঢেউ
বাতাসে লবনের স্বাদ
লবন রক্তলাল
ফুসফুসে বিষাদ
ক্লেদাক্ত শ্বাস
জীবন তবু ইউলিসিসের আশা
Monday, July 30, 2018
আচমন ২
আচমন ২
ফুল দাওনি কোনোদিনও
পাপড়ি দিলে ছুড়ে
মেঁহেদি কাঁটায় রক্ত দিলাম
মজ্জা মাংস খুঁড়ে
কাঁটা ধুয়েছ , হাত ধুয়েছ
ফনীমনসার ঝোঁপে
আমার হাতে শঙ্খ-বিকেল
থরথরিয়ে কাঁপে
রাত্রি নামে , রাত্রি আসে
নিঝুম পদক্ষেপ
সাদা পায়রার ঝরা পালক
সমুদ্র আক্ষেপ
বালির কনা ঝিরিঝিরি
লবন লবন স্বাদ
আকন্ঠ পিপাসিত
সমুদ্র নিখাঁদ ।
Friday, July 27, 2018
মরণ - ঘুম
মরণ - ঘুম
আজন্মের ঘুম নামুক দুচোখে আমার
ঘুম - ঘুম -
আমার ক্লান্তি দূর করো
দীর্ঘদিনের অবসাদ শিরায় শিরায়
মন -
আমার বিষন্নতা হরো
জ্বলে যাওয়া , ছিন্নভিন্ন এ হৃদয়
জীবন পিপাসায় কত না তৃষিত
মননে মননে আমার এ কেমন হাহাকার
নিরাশার অন্ধকারে জীবন শোষিত
কমে যাক আয়ু - প্রেমহীন আয়ু
মরনের কামড় পড়ুক এবার
এসো নেমে ঘুম - মানসী ঘুম
মরনের ঘুম ঘুমাই এবার ।
Wednesday, July 25, 2018
গল্প - উপান্ত
উপান্ত
পায়ে পায়ে ওরা শ্মশানের বেশ ভেতরে চলে এসেছে । অবশ্য বিক্ষিপ্ত কিছু চাপা দেওয়া মাটি আর পোড়া কাঠের টুকরো ছাড়া এমুহূর্তে মনে হবার উপায় নেই যে এটা শ্মশান । এখানে ওখানে গেরুয়া কাপড় পরা রক্তচক্ষু সাধুসন্ন্যাসীদের ঘিরে ছেলের দল গঞ্জিকা সেবনের সাথে সাথে সাধন বিষয়ক আলোচনায় ব্যস্ত । কোথাও আবার গৃহকর্তীদের হাতের সিঁদূর আলতায় সন্ন্যাসীদের পা আর ত্রিশূল ধুয়ে যাচ্ছে । এই শ্মশানে নাকি কোনোদিন চিতার আগুন নেভে না ।
পূণ্যার্থীদের পাশ কাটিয়ে নদীর বেশ কাছাকাছি চলে এলো ওরা ।নদীতে এখন উপছে পড়া জল । রঙ্গময়ী আনন্দে নাচতে নাচতে বয়ে চলেছে । আর পথের পাশে যা কিছু নজরে আসছে তাকে একবার করে স্পর্শ না করলে যেন তার হচ্ছে না । আ-বাঁধানো নদী । জল যখন কম থাকে তখন স্নানের সুবিধার জন্য পাড় কেটে নেয় লোকেরা । আবার গ্রীষ্মকালে নদীতে প্রায় জলই থাকেনা । এর ওপর দিয়ে তখন হেটেই পার হওয়া যায় ।
জনকোলাহল এখানে বেশ স্তিমিত । পায়ের নীচে নদীর কলকল শব্দ । একটা নুয়ে পড়া গাছের গুড়ির ওপরে গিয়ে বসল আশিষ । সূর্যের তেজ একটু একটু করে বাড়ছে । কম্পিত জলের ওপর সূর্যের আলো পড়েছে ।আর ঠিক জলের ওপরে থাকার কারনেই আলো ছায়ার এই খেলা প্রতিফলিত হচ্ছে আশিষের মুখে । অন্য মানুষ বলে মনে হচ্ছে তাকে ।
অনেকক্ষণ পর প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণ করে আশিষ প্রথম কথা বলল , ' বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে ঘটনাটা ঘটাইনি । ' স্বগতোক্তির মত কথাগুলি বলে গেল আশিষ । শেষের দিকটায় যেন গলাটা একটু কেঁপে উঠল ।
দেবু হাস্যরসিক মানুষ । অনেকক্ষণ ধরে এই থমথমে ভাব ভালো লাগছিল না তার । ঝাঁঝিয়ে উঠল দেবু , ' তোর সবটাতেই বাড়াবাড়ি । অ্যাক্সিডেন্ট ঘটতেই পারে । এতে অত চিন্তার কি আছে । আমাদের তো আর কেউ দেখেনি । '
কথাগুলি আশিষের কানে গেল কিনা বোঝা গেল না । কেননা তার মুখ আরো বেশি করুণ বলে মনে হল চয়নের ।
চয়নের চোখের সামনে ভেসে উঠল বীভত্স সেই ছবিটা ।গাড়ী যে খুব বেশি জোড়ে চলছিল তা নয় ।কিন্তু কিভাবে বা কোথা থেকে যে মহিলাটি গাড়ীর সামনে চলে এল আর ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গিয়ে পড়ল রাস্তার পাশের জঙ্গলে ! আর তার কোল থেকে একটা পোটলা ছিটকে এসে পড়ল তাদের গাড়ীর চাকার একদম সামনে ।মুহূর্তে গাড়ীর চাকা একেবারে থেতলে পিষে ফেলল সেটাকে মাটির সাথে ।
গাড়ী থামিয়ে ছুটে গিয়েই আশিষ চীত্কার করে উঠল । ওরা তিনজন ততক্ষনে চল এসেছে । গাড়ীর ডান চাকার নীচে একটা কাপড়ের পুটলির মধ্যে মাস কয়েকের একটা শিশু । মুখটুকু দিব্যি অবিকৃত । চাকা রয়েছে বুকের ওপর ।
চয়ন তাকিয়ে আছে জলের দিকে । পারের কাছাকাছি এক - একটা ঘূর্ণি দেখা যাচ্ছে ।বেশিক্ষণ থাকছেনা ঘূর্ণিটা । একসময় তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে জলের মধ্যেই মিশে যাচ্ছে । নদীর গতি তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হচ্ছেনা ।
Tuesday, July 24, 2018
যাত্রা
যাত্রা
ভাসিয়ে তরী অকুল সাগরে
বসেছিলে চুপটি করে
জানোনা কখন কেটে গেল কুড়িটি বছর
বকুল ফুলের মালা গেঁথে
জড়িয়ে ছিলে দুটি হাতে
কারো গলায় পড়িয়ে দেওয়ার অপেক্ষা নিরন্তর
প্রভাত হল , সন্ধ্যা হল
কুড়িটি বছর ফুড়িয়ে গেল
অপেক্ষা তবু প্রতীক্ষা হয়ে রইল জাগরুক
হাতের মালা শুকিয়ে গেছে
সাধের নৌকো ডুবে গেছে
খেয়াবিহীন অসীম সাগর প্রশান্ত উন্মুখ ।
ত্রয়ী
ত্রয়ী
ক্লান্ত নগ্ন হাত
রক্তাক্ত শরীরে সামনে দাঁড়ায় বর্তমান
ধোঁয়াশায় পূর্ণ পাঁজরের হাড়
নাড়া দিতেই ঝন ঝন শব্দ
মস্তিষ্কের কোটর ভর্তি পিত্ত ধোয়া জল
বুকসেল্ফের পাতা থেকে খসে পড়ে
ত্রস্ত বিচলিত রূদ্ধশ্বাস অতীত
বর্তমানের পাঁজরে উঠে আসে অতীতের দীর্ঘশ্বাস
সামনে অশরীরী ভবিষ্যতের ক্লান্ত পদচিহ্ন
অভিষেকের অভিষারপদ মন্থর
বাতাসের সুরে সুরে বর্তমানের হাহাকার
উদ্বেল অনিশ্চিত ভবিষ্যত্ ।
মূঢ় হৃদয়
মূঢ় হৃদয়
ওরে আবেগ , ওরে প্রেম ,
ওরে মূঢ় চাওয়া , এতদিনেও
হল না শেষ পাওয়া , ক্লাশ ঘরের
ফাঁকে ফাঁকে , ব্যাথার করুণ
বালুকাতে , দেখি হঠাত্ বিষ্ময়েতে
তোমার তরী বাওয়া ।
এতদিনেও হলো না শেষ পাওয়া ।
সূর্য তখন অস্তাচলে , সোনার
থালা গলে গলে পড়ছে ভূঁয়ের
পড়ে , কেমন করে ব্যাথার সুরে ,
বাঁধলে সেতার তারে তারে , গানখানি
তার ছড়িয়ে দিলে বিশ্বভূবন
ভালে ।
তখন সূর্য অস্তাচলে ।
রাত্রি তখন দ্বিপ্রহরে , জেগে
দেখি নয়ন ভরে , অশ্রুবিন্দু
আছে জমে চোখের কোনটি
ঘেষে , বুঝিনা হায় এ কোন
ব্যাথায় আমার যায় গো ভূবন
ভেসে , আমি ভাবি ঘুমের ঘোরে ।
আজ রাত্রি দ্বিপ্রহরে ।
কেমন করে
কেমন করে
কেমন করে মনের আকাশ জুড়ে
ছড়িয়ে দিলে ঘন সবুজ রঙ
কেমন করে সাঁঝের বটের তলে
আলো -ছায়ার ঘটেছে সঙ্গম
কেমন করে বাতাসে ঢেউ তুলে
বান ডেকেছে আমার মনের ঘরে
কেমন করে বাধার পাহাড় মেনে
শিকল তুলে দিলে আমার দ্বোরে
আরো আমার প্রশ্ন আছে
এই জেনো শেষ নয়
আর কতদিন নীরব মুখে চেয়ে
খুঁজব আমি তোমার পরিচয়
আমার কথার জবাব দিতে
ভয় কেন আজ এত
ওগো আমার চৈতী হাওয়া
বসন্ত হলো পরাভূত ।
আবেদন
আবেদন
টর্চের জোড়ালো আলো নয়
টিমটিম করে জ্বলছিল
আশার প্রদীপ
অস্পষ্ট অক্ষরে লেখা একটি শব্দ
প্রাণবায়ুও স্বল্প হচ্ছিল ক্রমে
তবু প্রবল হৃদয়াশক্তি উদ্ভাষিত
কোষে কোষে জ্বলে উঠেছিল
চোরা লোভের দাবানল
'প্রাণ চাই ,আলো চাই'
বাঁচার ইচ্ছা প্রবল
হোক শিমূল গন্ধহীন
তবু -
রাঙ্গা অঙ্গার দাও
আর দাও
সাদা পায়রার ডানা থেকে
একটিমাত্র সাদা পালক
উল্কার মত শূণ্যে পুড়ে গিয়ে
ছাই হয়ে নেমে আসা
কত বছর আগে ঘটেছে লয়
কিংবা -
বোঁ বোঁ শব্দে উড়তে থাকা রংফানুষটার
সজোড়ে মাটিতে চিত্পাত্
সবই মেনে নেওয়া যায়
প্রয়োজন শুধু -
একটা লাল শিমূল আর সাদা পালক ।
গল্প - উপান্ত
উপান্ত
ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি। বন্ধুদের চাপে পড়ে তারাপীঠে বেড়াতে এসেছে চয়ন । প্রত্যুষে নদীতে স্নান করতে একটু শীত শীত করছিল । পরে একটা অপূর্ব প্রশান্তিতে বেশ ঝরঝরে বোধ হতে লাগল তার । গত রাত্রের সমস্ত ক্লান্তি যেন পবিত্র গঙ্গার স্পর্শে একমুহূর্তই ধুয়ে গেল । স্নান সেরে উপকরণ নিয়ে মন্দিরে পৌছে চয়ন হতবাক । এখনো সমস্ত আকাশ জুড়ে ম্রিয়মান তারাদের দেখা যাচ্ছে , এখনো ভোরের পাখিরা শুরু করেনি তাদের উদ্বোধন সংগীত । কিন্তু এরই মধ্যে মন্দির প্রাঙ্গনে ভক্ত মানুষের সেকি মস্ত লাইন । আশিষের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল চয়ন । কিছুটা ক্লান্ত , কিছুটা বিরক্ত , কিছুটা চিন্তান্বিত মনে হলো আশিষকে । দেবু , নীলের মুখও ভোরের তারাদের মত ম্রিয়মান । প্রত্যেকের মনের কোনে যে এখনও গত রাত্রির অন্ধকার লেগে আছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে ।
নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে চয়ন প্রথম কথা বলল , ' মনে হয় পুজো দিতে সাতটা বেজে যাবে ।' দেবু আর নীল ঝুকে লাইনটাকে একবার দেখার চেষ্টা করল । আর আশিষের জবাব এল ঠোটের সামান্য বিভঙ্গে ।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তবে পুজো দেবার সুযোগ এলো ওদের । 'এও কিন্তু একপ্রকার সাধনা , কি বলিস ' দেবুর এই হাল্কা রসিরতায় চয়নের মনেও একটু হাল্কা ভাব এল ।
' এবার কোথায় যাবি ' আশিষের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল নীল । আশিষের চোখ সামনের দিকে নিবদ্ধ ।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরে জনসমাগমও বেড়ে চলেছে । মানুষের ঢল নেমেছে রাস্তায় ।ভক্তজনেরা তাদের মনোষ্কামনা পূরণ করতে কত দূর দূর থেকে এসেছে মায়ের প্রসাদি ফুল পাবার আশায় । একদল অল্প বয়সি ছেলে , কপালে সিঁদূরের তিলক , ' জয় মা তারা ' ধ্বনিতে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের পাশ দিয়ে চলে গেল ।চা - মিষ্টির দোকানগুলিতে বেশ ভীড় । বাতাসে গরম জিলিপি ভাজার গন্ধ ।
দেবুর একটু চা তেষ্টা পাচ্ছিল । কিন্তু আশিষের মুখের দিকে তাকিয়ে সে চুপ করে গেল । গত রাত্রির ঘটনাটা সে ভুলতে পারছে না । দেবু নিজেও কি সেই বীভত্সতা ভুলতে পারছে ।কিন্তু সে ভুলে যেতে চাইছে ।কত মানুষের জীবনেই তো এমন কত ঘটনা ঘটে যা তার সমস্ত সত্বাকে বিপর্যস্ত করে তোলে আর এটা তো সামান্য একটা ঘটনা । প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে এ ঘটনা ঘটেই চলেছে । তাদের ভাগ্য ভালো যে এ ঘটনার কোনো সাক্ষ্যী নেই । নয়ত এতক্ষণে গনধোলাই এর সাথে সাথে জেল জরিমানা এসব উপরি পাওনাও জুটত । ............ক্রমশ
Friday, July 20, 2018
অসময়
অসময়
রোজ রোজ এই যে আসা যাওয়া
সত্যি বলছি ভালো লাগে না আর
কবে আমি তোমার কাছে যাবো
কবে হবো বৈতরণী পার
সূর্য ওঠে দেখি সকাল হলে
পাখিরা কেমন সুরে গায় গান
শুনতে যে পাই পাখির গানের সুরে
তোমার আমার মিলিত ঐকতান
আকাশ জুড়ে কেমন বাদল মেঘ
ডুবিয়ে দিলো ভোরের শুকতারা
এখন আমি তোমার কাছে যাবো
এখনো কি হয় নি গো দিন সারা ?
পরামর্শ
পরামর্শ
একবার
ভালোবাসতে চেষ্টা করো
দেখবে
সূর্যের সব রঙ তোমার চোখে এসে
রামধনু হয়ে গেছে
ইষ্পাতের বুকেও তো চির ধরাতে পারে
একটা ছোট্ট প্রাণের বীজ ।
একবার
প্রাণ খুলে ডাকতে চেষ্টা করো
দেখবে
সমুদ্রের তলা থেকে উঠে আসছে
হাজার হাজার পাঞ্চজন্য
মঙ্গলঘট স্থাপনেও তো লাগে
অমঙ্গলবিনাশী শঙ্খ ।
একবার
সাহস করে হাতটা ধরতে চেষ্টা করো
দেখবে
আকাশ পৃথিবী কখন এক হয়ে গেছে
পৃথিবীর নরম বুক চিরেই তো
জেগে ওঠে প্রাণের স্পন্দন ।
Wednesday, July 18, 2018
অন্যায়
অন্যায়
সন্ধ্যার অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে
চুপি চুপি বাসায় ফেরে ক্লান্ত পাখি
বিশীর্ণ চোখের কোন থেকে
ঠিকরে পড়ে আতঙ্ক
ঠোটের কোন ঘেষে
গড়িয়ে পড়ে কষাটে যন্ত্রনা
সমাজ , তোমায় ধিক্কার দেয় আজ
আকাশের যত নবীন তারার দল
বৃদ্ধ নক্ষত্রগুলি বহুদর্শী
তাই -
অবকাশের মুহূর্ত কাটে নির্ভূমিকায়
ওদিকে বাসার কোনে
চাঁদের আলো খেলা
সংসারে হাসে মিলিত চোখের ভাষা
পাখির বাসায় নূতন চাঁদের আলো
কুয়াশায় ঢাকা তবু অনিশ্চিত ভবিষ্যত্
Monday, July 16, 2018
জননী
জননী
প্রতিদিন তাকে দেখি
ষ্টেশনে উঠতেই
প্রথম যে থামটা পড়ে
তার পাশে বসে -
' ও মা , ও বাবারা , একটা পয়সা দাও না '
- মুখে তার হাজার বলিরেখার আঁকিবুকি
যেন ইতিহাসের পাতা থেকে
উঠে আসা প্রত্ন এক
অথবা তারই মুখে মানচিত্র যা
সে তো আমারই ভারতবর্ষ
শতচ্ছিন্ন শাড়িটায় গেঁড়ো বাঁধা
যেন মানব বন্ধনের ব্যঙ্গচিত্র
- ' বুড়িমা , তোমার বুঝি কেউ নেই '
- 'আছে মা , সে যে মস্ত বড়লোক , '
- ' কত বড় গাড়ি '
- ' কি সুন্দর ঘর '
- ' আর - '
চোখ মোছে বুড়ি
- ' দাদু আমার বাল গোপাল '
- ' সোনা আমার ভালো আছে
মা - বাবার কোলে '
- ' আমি তো মুখ্যু মানুষ '
- ' বৌমা আমার ফটাফট ইনজিরি বলে '
ফোকলা মুখে তার অপরাধের চিহ্ন
কে জানত বিদেশী ভাষার দাম
মাতৃস্তন্যের চেয়েও বেশি !
তাই এক সন্তানের বিনিময়ে
পৃথিবী জোড়া সন্তানদের
আঁকড়ে ধরেছে বুড়ি
অবহেলিত অসহায় মা এক ।
Sunday, July 15, 2018
আবর্তন
আবর্তন
সমস্ত আকাশ জুড়ে নক্ষত্রের মৃদু গুঞ্জন
ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে আসে পৃথিবী
মাত্র বারো ঘন্টার রাতের আঁধার ছেড়ে
সমুদ্রের বুক চিরে উঠে আসে জ্যোতি
কাঁচা ঘুমে হাই তুলে তুলে
ঘুমের রেশটাকে আরো একটু বাড়িয়ে তোলা
তারপর ফোলা চোখে লোনা জলের ঝাপ্টায়
ঝেড়ে ফেলা অহেতুক ঘুমের ক্লান্তি
পৃথিবীর পাঁজরে ব্যস্ত বাতাস খেলে
লোনা জল আরো লোনা হয়
মাছের পেটের ভিতর ঝিনুকের শক্ত খোলস
সমুদ্রের অন্ধকারে মুখ লুকায় মুক্তোর দল
আবার সাগরের বুক চিরে লোনা জলের ঢেউ
আবার আকাশ জুড়ে নক্ষত্রের মৃদু গুঞ্জন
Saturday, July 14, 2018
আচমন -১
আচমন -১
কচু পাতায় জল ঢেলেছি
ভেবেছি মুক্ত পেলাম
সোনার রশ্মি পাতায় পাতায়
বিন্দু বিন্দু ঘাম
পায়ের তলায় হাজার শিরা
রক্তে কাটাকুটি
তিল আচিঁলে মানিয়েছে বেশ
রাজযোটকের জুটি
মাথায় যদি মুকুট নিতে
অহঙ্কারি রাজা
যাত্রা তোমার জমত না , ঠিক
বর্ষাকালের সাজা
ঝিনুক ভাঙা আঘাত আমার
সূক্তি তোমার থাক
তোমার ঘরে ঝাউয়ের ছন্দ
আমার মেহগনির ফাঁক
কচু পাতায় জল ঢেল না
পদ্ম তুলে নিও
কমপক্ষে , সমুদ্রঢেউ
কান্না হয়ে যেও ।
Friday, July 13, 2018
বিষাক্ত প্রেম
বিষ-ছায়া
মাটিতে বিষাক্ত দূষণ
ডানা মেলে উড়ে চলে জলীয় বাষ্প ভরা আকাশ
তার ছায়া ঘনায় দুচোঁখ জুড়ে
কবেকার কাঙ্খিত প্রেম
নিমতেতো হয়
মাটিই তো চেয়েছিল সে
ইচ্ছে ছিল ভালোবাসার কুঁড়ি ফুটিয়ে করবে বাগান
অসংখ্য ইচ্ছাকীট গুটিপোকা থেকে
দেখেছিল কিভাবে শুঁয়োপোকা হয়
আশা ছিল - এইবার - প্রজাপতি হবে
মাটিতে বিষ - তাই
হারালো সবুজ - অবুঝ
কী দোষ যে ছিল তার
Tuesday, July 10, 2018
অস্তিত্ব
অস্তিত্ব
বাঁধ বাঁধে , বাঁধ ভাঙে বেপথু জীবন
আকাশে টাটটু ছোটে জলন্ধর মেঘ
আরো জোড়ে ছুটে চলা - পিচ্ছিল পথ
বীজের ভেতর অসীম শৈত্যের শপথ
বীজ ভাঙে বেড়ে ওঠে অঙকুর সজীব
আবার সমান্তরালে জড় আর জীব
আবার বাঁধ ভাঙে , বয়ে চলে জীবন নিঃসীম
বীজের ভেতরে জাগে হাজার শপথ
Sunday, July 8, 2018
তোমার প্রতীক্ষায় নির্বাসন
তোমার প্রতীক্ষায় নির্বাসন
স্বেচ্ছায় করে নেব আলিঙ্গন তোমায়
তবু যদি
মনে হয়
জীবন আশ্লেষে
বড় মধুর এ জীবন
একেঁ দিও অধরে একটি শুধু আশিষচুম্বন
তারপর
হেমন্তের ঝরা পাতা হিমেল বাতাসে উড়ে
যাবে জানি নিরুদ্দেশের পথে
নব প্রেম সন্ধানে
ধানের গুচ্ছ যেমন একটু করে সোনালি হয়
সোনা রঙে রাঙাবে তেমন তোমার সম্মোহন
কাঁচা রোদ ছড়িয়ে দেওয়া সোনালী ঊষা
আবার অনাবিল হবে
আমি নতুন পাতাঝরার দেশে
আবার মাতব খেলায় কুহেলিকা সাথে
তোমার প্রতীক্ষায় ।
Subscribe to:
Posts (Atom)