Tuesday, July 24, 2018

গল্প - উপান্ত

                                                                                 উপান্ত
                                                     
                                                                                       
ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি। বন্ধুদের চাপে পড়ে তারাপীঠে বেড়াতে এসেছে চয়ন । প্রত্যুষে নদীতে স্নান করতে একটু শীত শীত করছিল । পরে একটা অপূর্ব প্রশান্তিতে বেশ ঝরঝরে বোধ হতে লাগল তার । গত রাত্রের সমস্ত ক্লান্তি যেন পবিত্র গঙ্গার স্পর্শে একমুহূর্তই ধুয়ে গেল । স্নান সেরে উপকরণ নিয়ে মন্দিরে পৌছে চয়ন হতবাক । এখনো সমস্ত আকাশ জুড়ে ম্রিয়মান তারাদের দেখা যাচ্ছে , এখনো ভোরের পাখিরা শুরু করেনি তাদের উদ্বোধন সংগীত । কিন্তু এরই মধ্যে মন্দির প্রাঙ্গনে ভক্ত মানুষের সেকি মস্ত লাইন । আশিষের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল চয়ন । কিছুটা ক্লান্ত , কিছুটা বিরক্ত , কিছুটা চিন্তান্বিত মনে হলো আশিষকে । দেবু , নীলের মুখও ভোরের তারাদের মত ম্রিয়মান । প্রত্যেকের মনের কোনে যে এখনও গত রাত্রির অন্ধকার লেগে আছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে ।
                              নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে চয়ন প্রথম কথা বলল , ' মনে হয় পুজো দিতে সাতটা বেজে যাবে ।' দেবু আর নীল ঝুকে লাইনটাকে একবার দেখার চেষ্টা করল । আর আশিষের জবাব এল ঠোটের সামান্য বিভঙ্গে ।
                                 দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তবে পুজো দেবার সুযোগ এলো ওদের । 'এও কিন্তু একপ্রকার সাধনা , কি বলিস ' দেবুর এই হাল্কা রসিরতায় চয়নের মনেও একটু হাল্কা ভাব এল ।
                                   ' এবার কোথায় যাবি ' আশিষের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল নীল । আশিষের চোখ সামনের দিকে নিবদ্ধ ।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরে জনসমাগমও বেড়ে চলেছে । মানুষের ঢল নেমেছে রাস্তায় ।ভক্তজনেরা তাদের মনোষ্কামনা পূরণ করতে কত দূর দূর থেকে এসেছে মায়ের প্রসাদি ফুল পাবার আশায় । একদল অল্প বয়সি ছেলে , কপালে সিঁদূরের তিলক , ' জয় মা তারা ' ধ্বনিতে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের পাশ দিয়ে চলে গেল ।চা - মিষ্টির দোকানগুলিতে বেশ ভীড় । বাতাসে গরম জিলিপি ভাজার গন্ধ ।
                                      দেবুর একটু চা তেষ্টা পাচ্ছিল । কিন্তু আশিষের মুখের দিকে তাকিয়ে সে চুপ করে গেল । গত রাত্রির ঘটনাটা সে  ভুলতে পারছে না । দেবু নিজেও কি সেই বীভত্সতা ভুলতে পারছে ।কিন্তু সে ভুলে যেতে চাইছে ।কত মানুষের জীবনেই তো এমন কত ঘটনা ঘটে যা তার সমস্ত সত্বাকে বিপর্যস্ত করে তোলে   আর এটা তো সামান্য একটা ঘটনা । প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে এ ঘটনা ঘটেই চলেছে । তাদের  ভাগ্য ভালো যে এ ঘটনার কোনো সাক্ষ্যী নেই । নয়ত এতক্ষণে গনধোলাই এর সাথে সাথে জেল জরিমানা এসব উপরি পাওনাও জুটত । ............ক্রমশ

No comments: