Wednesday, July 25, 2018

গল্প - উপান্ত

                       
                                                                           উপান্ত





                 পায়ে পায়ে ওরা শ্মশানের বেশ ভেতরে চলে এসেছে । অবশ্য বিক্ষিপ্ত কিছু চাপা দেওয়া মাটি আর পোড়া কাঠের টুকরো ছাড়া এমুহূর্তে মনে হবার উপায় নেই যে এটা শ্মশান । এখানে ওখানে গেরুয়া কাপড় পরা রক্তচক্ষু সাধুসন্ন্যাসীদের ঘিরে ছেলের দল গঞ্জিকা সেবনের সাথে সাথে সাধন বিষয়ক আলোচনায় ব্যস্ত । কোথাও আবার গৃহকর্তীদের হাতের সিঁদূর আলতায় সন্ন্যাসীদের পা আর ত্রিশূল ধুয়ে যাচ্ছে । এই শ্মশানে নাকি কোনোদিন চিতার আগুন নেভে না ।
                                      পূণ্যার্থীদের পাশ কাটিয়ে নদীর বেশ কাছাকাছি চলে এলো ওরা ।নদীতে এখন উপছে পড়া জল । রঙ্গময়ী আনন্দে নাচতে নাচতে বয়ে চলেছে । আর পথের পাশে যা কিছু নজরে আসছে তাকে একবার করে স্পর্শ না করলে যেন তার হচ্ছে না । আ-বাঁধানো নদী । জল যখন কম থাকে তখন স্নানের সুবিধার জন্য পাড় কেটে নেয় লোকেরা । আবার গ্রীষ্মকালে নদীতে প্রায় জলই থাকেনা । এর ওপর দিয়ে তখন হেটেই পার হওয়া যায় ।
                                          জনকোলাহল এখানে বেশ স্তিমিত । পায়ের নীচে নদীর কলকল শব্দ । একটা নুয়ে পড়া গাছের গুড়ির ওপরে গিয়ে বসল আশিষ । সূর্যের তেজ একটু একটু করে বাড়ছে । কম্পিত জলের ওপর সূর্যের আলো পড়েছে ।আর ঠিক জলের ওপরে থাকার কারনেই আলো ছায়ার এই খেলা প্রতিফলিত হচ্ছে আশিষের মুখে । অন্য মানুষ বলে মনে হচ্ছে তাকে ।
                                            অনেকক্ষণ পর প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণ করে আশিষ প্রথম কথা বলল , ' বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে ঘটনাটা ঘটাইনি । ' স্বগতোক্তির মত কথাগুলি বলে গেল আশিষ । শেষের দিকটায় যেন গলাটা একটু কেঁপে উঠল ।
                                           দেবু হাস্যরসিক মানুষ । অনেকক্ষণ ধরে এই থমথমে ভাব ভালো লাগছিল না তার । ঝাঁঝিয়ে উঠল দেবু , ' তোর সবটাতেই বাড়াবাড়ি । অ্যাক্সিডেন্ট ঘটতেই পারে । এতে অত চিন্তার কি আছে । আমাদের তো আর কেউ দেখেনি । '
                                             কথাগুলি আশিষের কানে গেল কিনা বোঝা গেল না । কেননা তার মুখ আরো বেশি করুণ বলে মনে হল চয়নের ।
                                               চয়নের চোখের সামনে ভেসে উঠল বীভত্স সেই ছবিটা ।গাড়ী যে খুব বেশি জোড়ে চলছিল তা নয় ।কিন্তু কিভাবে বা কোথা থেকে যে মহিলাটি গাড়ীর সামনে চলে এল আর ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গিয়ে পড়ল রাস্তার পাশের জঙ্গলে ! আর তার কোল থেকে একটা পোটলা ছিটকে এসে পড়ল তাদের গাড়ীর চাকার একদম সামনে ।মুহূর্তে গাড়ীর চাকা একেবারে থেতলে পিষে ফেলল সেটাকে মাটির সাথে ।
                                             গাড়ী থামিয়ে ছুটে গিয়েই আশিষ চীত্কার করে উঠল । ওরা তিনজন ততক্ষনে চল এসেছে । গাড়ীর ডান চাকার নীচে একটা কাপড়ের পুটলির মধ্যে মাস কয়েকের একটা শিশু । মুখটুকু দিব্যি অবিকৃত । চাকা রয়েছে বুকের ওপর ।
                                                চয়ন তাকিয়ে আছে জলের দিকে । পারের কাছাকাছি এক - একটা ঘূর্ণি দেখা যাচ্ছে ।বেশিক্ষণ থাকছেনা ঘূর্ণিটা । একসময় তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে জলের মধ্যেই মিশে যাচ্ছে । নদীর গতি তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হচ্ছেনা ।

No comments: