Wednesday, October 17, 2018

মেয়েবেলার গল্প

মেয়েবেলার গল্প
একটু যাই না মা । কি হবে গেলে । আমি কি তবে এবার ঠাকুরও দেখতে পাবনা ।
অনুসূয়ার মুখটা গম্ভীর হয়ে ওঠে । অধৈর্য হয়ে বলে , আর কতবার বলব মানু । পুজো হয়ে যাক বাইরে থেকে দেখবি । ঠাকুরের কাছে যাবি না । কাওকে ছুঁবিনা ।
মনটাকে কিছুতেই মানাতে পারেনা টিয়া । ওর বন্ধুরা বারবার ডাকতে আসছে পুজোমন্ডপে যাবার জন্য । কিন্তু মায়ের কড়া নির্দেশ এসব হলে ঠাকুর ঘরে যাওয়া বা যারা ঠাকুরের কাজ করে তাদের ছোঁয়া যাবে না ।
তের বছর বয়স টিয়ার । বড় হয়ে উঠছে সে । মহিলা হয়ে ওঠার প্রথম ধাপে পা দিয়েছে সে । আজ দ্বিতীয় দিন । একটা শারীরিক প্রক্রিয়া তার ছোটোবেলাটাকে এক নিমেষে দূরে সরিয়ে দিয়েছে । প্রতিবছর প্যান্ডেলে বাঁশ ফেলা থেকে খেলা শুরু হয় সেখানে । বাঁশ বাঁধার পর বাঁশের উপরে উঠে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার মজাই আলাদা । তারপর একটু একটু করে প্যান্ডেলে কাপড় লাগানো হয় । ঠক ঠক করে পেরেক ঠোকার শব্দ কানে গেলে আর ঘরে থাকা যায় না । স্কুল থেকে ফিরে কখন প্যান্ডেলে যাবে সব সময় সেটাই মন তোলপার করে । স্কুলে গেলেই কি পড়ায় মন থাকে । মন তো পড়ে থাকে প্যান্ডেলে । তারপর ঠাকুর আনা । কত কসরৎ করে বড়োরা সেই ঠাকুর মন্ডপে তোলে । এই ধর ধর , এদিকে একটু কাৎ করে , আরে মাথা বাঁচিয়ে , নীচু কর নীচু কর । ওঃ সে যে কি উত্তেজনা সে আর কাকে বোঝাবে টিয়া । চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে যাচ্ছে অঝোর ধারে ।
রাগ হচ্ছে খুব । কেন এসব হয় । বন্ধুরা সবাই কত মজা করছে । প্যান্ডেলে পুজোর ঢাক বাজছে । অঞ্জলিও দিতে দেবে না মা । বাবাটাও যেন কেমন হয়ে গেছে । অন্য সময় তো যত অন্যায় ই করি না কেন বাবা ঠিক মার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয় । আর আজ সেও মার সাথে এক ই কথা বলছে । দুর্গাঠাকুর তুমি কিছু করতে পার না ।
অনুসূয়ার মনটাওভালো নেই । সত্যি তো । এটা একটা শারীরিক প্রক্রিয়া । এর সাথে পুজো আচারের কি সম্পর্ক । মানুষের মল মূত্র ত্যাগের মত এটাও একটা স্বাভাবিক ঘটনা । যত বাধা শুধু মেয়েদের বেলায় । বিজ্ঞান কত উন্নত হয়েছে । মেয়েরা কি না করছে । চাঁদ সূর্য তারা কোথায় কোথায় চলে যাচ্ছে মেয়েরা । আর আমরা ছাপোষা মানুষগুলো এসব সংস্কারকে আঁকড়ে ধরে বসে আছি ।এত বছর ধরে চলে আসা সংস্কারকে ঠেলে সরাতে পারছি কই । বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে অনুসূয়ার ।
কইরে টিয়া তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে মা । প্যান্ডেলে যাবিনা । হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতর এসে ঢোকে টিয়ার বাবা । পিছন পিছন টিয়ার বন্ধুরা । অনুসূয়া টিয়া দুজনেই অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকায় ।
আরে হা করে দাঁড়িয়ে আছে দেখ । প্যান্ডেলে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে কাল থেকে । রিহার্সাল দিতে হবে না । তোর তো অনেক নাচ আর আবৃত্তি তোলা আছে । এদের নিয়ে রিহার্সাল করে নে । তিন দিনে কিভাবে কিভাবে অনুষ্ঠান নামাবি সেটা ঠিক করে নে । রবীনকাকু একটু পড়ে আসবে তোর সাথে কথা বলতে ।
অনুষ্ঠানের কথায় আর বন্ধুদের কাছে পেয়ে টিয়ার মনটা আনন্দে নেচে ওঠে । সবাইকে ডেকে নিজের ঘরে নিয়ে যায় টিয়া । একটা জম্পেষ অনুষ্ঠানের ছক কষতে হবে ।
অনুসূয়া মনে মনে ঠাকুরকে প্রণাম জানাল । মেয়েটা মন খারাপ না করে এসব নিয়ে মেতে তো থাকতে পারবে কটা দিন । তবে মনে মনে ঠিক ই বুঝল মেয়ে অন্তপ্রাণ টিয়ার বাবারই কারসাজি এসব । যাতে পুজোর দিনকটা একমাত্র মেয়েটার ম্লান মুখটা না দেখতে হয় ।

2 comments:

Unknown said...

ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে

Sipra Basak said...

ধন্যবদ এমন সুনদর মন্তব্যর জন্য