Monday, July 31, 2023

সাধ জাগে জলছবি আঁকি -- শুভঙ্কর ত্রিপাঠী

 সাধ জাগে জলছবি আঁকি
 শুভঙ্কর ত্রিপাঠী 
 ২৩-০৭ -২০২৩
সাধ জাগে জলছবি আঁকি
সাদা সাদা কাগজে , কালো কালো আখরে
শব্দের আঁচড় টানি , হালকা কিংবা ঘন 
তুলির টানের মত, 
মনের বিমূর্ত সব, অনুভুতি যত
এঁকে যাই 
জল ছবি কথায় কথায়।

কথায় কথায় , 
মনের ক্যানভাসে রাখা
ভাসবে কি সেই ছবি,প্রথম দেখার?
সেই শব্দ ,ঢিপ ঢিপ, 
পাছে শুনে ফেলে সবাই, 
মদের নেশার মত 
গ্রস্ত , ত্রস্ত বিহ্বলতা,যেন ;
কানে কানে হবে বদনাম ।

অন্য কোথাও , অন্য কোনো দিনে 
তোমার সলজ্জ হাসি 
অন্য তরুণ ছেলে আনন্দে উচ্ছ্বল।
এক লহমায় 
জীবন টা অভিমানে গলার কাছেই
দলা মেরে পাক দেয়, চোখ জ্বালা জ্বালা।
পাগুলো টলমল, যেদিক সেদিক ।
বুকের মাঝেতে তোলপাড়
কান্নাটা জমাট যেন,বিবশ বিষন্ন।
তোমারও কি কোনোদিনও? 
একই রঙের ছবি? একই রকম? 
কিভাবে মেলানো যায় 
না আঁকলে 
তোমার , আমার?
জানা নেই সেই চিত্রকলা ।
তবু সাধ,  জলছবি আঁকি ।
শব্দ চিত্র অধরা ধরার।

তালাশ করে দেখো -- মোঃ নুরুল ইসলাম রাকিব

 
 তালাশ করে দেখো
 মোঃ নূরুল ইসলাম রাকিব
২৬/০৭/২০২৩
কিসের ভয়ে সময় ক্ষয়ে
থাকবে পড়ে হতাশ হয়ে
ন্যায়ের পথে লড়ে,
জীবন জয়ে প্রভুর ভয়ে
অটুট থেকো কষ্ট সয়ে
হৃদয় খানি গড়ে!

দেখবে তবে মানব ভবে
মিথ্যাবাদী পতন হবে
দেখো হঠাৎ করে,
অত্যাচারী মুখোশধারী
হোক না তারা পুরুষ নারী
টানো মুখোশ ধরে!

শান্তি পাবে হোঁচট খাবে
পর জগতে নরক যাবে
পাপে জড়ায় যারা,
তওবা করে মনের ঘরে
জ্বালবে আলো মশাল ধরে
বজায় রেখো ধারা!

নয়তো মিছে বাণীর পিছে
সত্যি আছে আলোই বিছে
তালাশ করে দেখো,
যাও এগিয়ে কলম নিয়ে
প্রভুর খেলা দু'চোখ দিয়ে
সত্যি করে লেখো?

Saturday, July 29, 2023

জ্বালাও আগুন -- গৌতম পাল

 জ্বালাও আগুন
 গৌতম পাল
 ২৪/০৭/২০২৩
আজও দ্রৌপদীরা হন ধর্ষিতা মোদের পোড়া দেশে,
দুর্বৃত্ত দুর্যোধন আর দুঃশাসন ওঠে অট্টহাসি হেসে।
আজও অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র পুত্র মোহে থাকেন সদাই চুপ,
দেখেছে ভারতবর্ষ মহারাজা ধৃতরাষ্ট্রের কদর্য রূপ!

নারীর ভূষণ আর সম্মান রাজপথে খায় গড়াগড়ি,
চুপ করে থাকি আমরা সব ভেবে না পাই কী করি!
ভোটার জনতা নেই কোনো ক্ষমতা, কেঁদে আকুল,
ইভিএমে বন্ধী জনাদেশ, গুনে যাই ভুলের মাশুল!

আজও বাংলা থেকে মনিপুর, দ্রৌপদীর হয় ধর্ষণ,
দুর্বৃত্ত দুঃশাসনেরা উল্লাসে করে গৃহবধূর বস্ত্রহরণ!
ক্ষোভের আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যাক নগ্ন সভ্যতা,
চিরতরে বন্ধ হয়ে যাক এই আদিম নিষ্ঠুর বর্বরতা!

চোখের তারা থেকে হচ্ছে ক্ষোভের লাভা নিঃসরণ,
নরাধম দুর্যোধন ও দুঃশাসনের হবে নিশ্চিত মরণ!
ধূলায় লুটায় নারীর লজ্জাবস্ত্র নগ্ন হয়ে পথে হাঁটে,
নিদারুণ যন্ত্রণা বুকে বয়ে তারা দিবস রাত্রি কাটে!

পিতামহ ভীষ্ম গুরু দ্রোণ কৃপাচার্য দেখি সবাই চুপ,
রাজার কাছে দায়বদ্ধ সবাই মুখে এঁটেছেন কুলুপ।
আজও দেখি সুশীল সমাজ আগের মত চুপ কথা,
রাজসুখ ভারি মধুর তাই বুঝি গভীর এই নিরবতা!

কবি বন্ধুরা যে যেখানেই আছি হতে চাই যে বিকর্ণ,
হতে চাই না মোরা কেউ রাজ্য লোভী মহাবীর কর্ণ!
নারী মাংস বড়োই সুস্বাদু,হোক ঊনিশ কিংবা বুড়ি,
হোক সে বাংলার গৃহবধূ কিংবা হোক সে মনিপুরী!

কবি বন্ধুরা কলমগুলি হয়ে উঠুক শাণিত তরবারি,
শব্দ বাণে নির্মূল হোক দেশের যত সব অত্যাচারী!
নির্ভীক আমাদের কলম গুলি হোক ধর্ষকদের যম,
নির্যাতিতা মা বোনেদের হয়ে মেরে যাব শব্দ বোম। 

জ্বালাও আগুন, পুড়ে ছাই হোক নির্লজ্জ সভ্যতা,
আজ ভূলুণ্ঠিত ভারতের নাম, বিবস্ত্র ভারত মাতা!
এসেছে ঘোর কলিকাল, মানুষ খুঁজে পায় না সুখ,
অসুস্থ এই গোটা সমাজ, রন্ধে রন্ধে কর্কট অসুখ!

ঘরের মা বোনেরা লজ্জা ঘৃণায় ঢাকে মুখ কাপড়ে,
ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ মাধব রক্ষা করেছেন তিনি দ্বাপরে।
এসো প্রভু শ্রীকৃষ্ণ মাধব, যুগ যুগ পেরিয়ে পিছনে,
আজও দ্রৌপদীরা বিবস্ত্র চেয়ে রয় তোমার পানে!

আজও লাজলজ্জাহীন বন্যতা দেখছি ভারত ভূমে,
বিবেক মনুষ্যত্ব সবকিছুই দেখি আছে নিমগ্ন ঘুমে!
একাই রুখে দাড়াও দ্রৌপদী,ভয় পাবে নাকো আর,
দুচোখে জ্বালাও আগুন কেড়ে নাও সব অধিকার!

Tuesday, July 25, 2023

মর্যাদা -- প্রণব মাহাত

মর্যাদা 
প্রণব মাহাত
 ২৫/০৭/২০২৩
ভোরের স্বপ্নে আধভেজা মাথা, নতজানু হয়ে বসে আছি,
শিশিরের ঘাম রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিটি লোমকূপ ভেজা,
অনেক বজ্রনাদ কানে শুনেছি, অনেক মেঘের ঝলকানি!
স্নায়ুর একটা অংশ বড়ই শিথিল, একগুঁয়ে চিন্তাভাবনা...
নাসিকার অগ্রভাগে প্রচন্ড উত্তাপের সমারোহ, তারপরও জমকালো প্রেম!
নর নারীর বিহ্বল শরীর,মাংস পেশীতে উৎকন্ঠার উন্মাদনা...
বৃষ্টি থামলো...তারপর হাওয়া... ক্লান্ত আমার হৃদয়...
বুভুক্ষু পেটের আর্তনাদ বাঁধভাঙা জলের মতো!
নিশাচর পেঁচার চক্ষু হতে নির্গত বহ্নিশিখার ঝলকানি
সাপের শরীরের আঁকাবাঁকা পথ... একটা গন্তব্য...
নীলিমার পদচিহ্ন হতে নক্ষত্রের উদ্ভাসিত রেখা... 
আমি ও পৃথিবীর ভাবাবেগ একই সরলরেখা বরাবর।
সাদামাটা জীবনের আর্তনাদ বৈশাখের রংচটা বাতাস...
বহু জাগতিক প্রেমের ছবি পাঁজরের মজ্জার অন্দরে,
শুকনো পলাশের মর্যাদা বোঝে কেবল লালমাটির ধুলো
              ---------------------------------
   ( স্বত্ব সংরক্ষিত )

ভাবনার ভরাডুবি -- গৌতম তরফদার

 ভাবনার ভরাডুবি 
গৌতম তরফদার
 ২২.০৭.২০২৩
          চড়া রোদ্দুর উপেক্ষা করে হন্ হন্ করে হেঁটে চলেছে ঝল্লিকা দত্ত ঘর্মাক্ত শরীরে। মাথায় আগুন জ্বলছে। তিয়াস বিশ্বাসের সাথে তার বছর দুয়েকের সম্পর্ক। নিজের পরিবার, সমাজ...  সবকিছুকে একইরকম অপেক্ষা করেই দক্ষিণ কোলকাতায় একটা ফ্লাট ভাড়া করে 'লিভ টুগেদার' এর তকমা নিয়ে একত্রে আছে। যদিও দু'জনে আলাদা-আলাদা ঘরেই থাকে। দু'জনেই দুই বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে। বিয়ে-থা করার কথা তিয়াস বললেও ঝল্লিকা ঝামেলা ভেবেই বারবার এড়িয়ে গেছে।
গত কয়েকদিন ধরেই দু'জনের মধ্যে মন-কষাকষি, ঝগড়াঝাঁটি অব্যাহত। কোরেলি কর্মকার নামে এক নতুন কর্মচারী তিয়াসের অফিসে জয়েন করেছে। অশান্তি তাকে ঘিরেই।
[  ] ঝল্লিকার কানেকানে কেউ বলেছে যে তিয়াস আর কোরেলিকে মাঝেই মাঝেই অফিস ক্যান্টিনে একসাথে দেখা যাচ্ছে। ব্যস্, ওতেই জ্বলেছে ঝল্লিকা। আগুপিছু খোঁজ নেবার প্রয়োজন মনে করেনি ঝল্লিকা। ঝাঁপিয়ে পড়েছে তিয়াসের উপর। 

            গত যৌথ আক্রমণে কেঁদে ফেলল ঝল্লিকা।  ঘরে ফেরেনি তিয়াস। ফোন বন্ধ। সারারাত ছটফট করেছে ঝল্লিকা। ওর অফিস খুলতেই ছুটে গেছে। তিয়াস অফিসে নেই। ১০ দিনের ছুটি নিয়েছে। কোথায় গেছে কেউ জানে না। খোঁজ নিয়ে জানল গত দু'দিন ধরে কোরেলিও অফিস আসছে না।

            এবার সত্যই ভয় পেল ঝল্লিকা।  তাহলে কী তিয়াস কোরেলির সাথেই.....। আপন অনুভূতি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিল তিয়াসকে সে কতটা ভালোবাসে!

            তিনদিনের মাথায়, বলা নেই - কওয়া নেই, তিয়াসের আর ঝল্লিকার মা-বাবা একযোগে ওদের ফ্লাটে এসে হাজির। ঝিল্লিকা অবাক! তিয়াসের উদ্যোগে আজ ওদের রেজিস্ট্রি বিয়ে। সকাল এগারোটায় ম্যারেজ রেজিস্টার ফ্লাটেই আসবেন। তিয়াস চটজলদি আয়োজনে ব্যস্ত। আর অন্যদিকে দু'জনের অফিসের কয়েকজন কাছের সহকর্মীগণকে
পূর্ব নির্ধারিত হোটেলে হাজির করানোর দায়িত্ব 
তিয়াসের সেই দূর সম্পর্কের বোন কোরেলির উপরই। তিয়াসের চেষ্টাচরিত্রেই ওখানে ওর চাকরি।

           ঝল্লিকা থ। একদিকে তিয়াসের ভালোবাসা, অন্যদিকে সন্দেহের বোকামি.....  এই যৌথ আক্রমণে কেঁদে ফেলল ঝল্লিকা।
 

Monday, July 24, 2023

লিপস্টিকের মাতাল গন্ধ -- পবিত্র প্রসাদ গুহ

 লিপস্টিকের মাতাল গন্ধ
পবিত্র প্রসাদ গুহ
 ২১/০৭/২০২৩
স্মৃতির পাতা গুলো পুড়িয়ে ফেললেও
বেখেয়ালী ছাই গুলো কথা বলে এসে পুরনো দিনগুলোর
ফ্যাকাশে বিবর্ণ আকাশ আজ
আসো নি ফিরে কাছে আর ...........
চাইনা স্মৃতির রোমন্থন
যাক জ্বলে পুড়ে যাক।

ঠোঁটে লেগে থাকা লিপস্টিকের আঠালো গন্ধটা তাড়িয়ে বেড়ায় আজও নিঝুম পুকুর পাড়ের একাকী সময়টার সাথে,
এলোমেলো শব্দে আর আসে না ছন্দ
কবিতারাও আজ অশিক্ষিত তোমার অভাবে
দিনের আলোয় রাত আসে নেমে তারাদের চোখে
সূর্যের আকাশে জ্বলে ওঠে তরলিত জোছনা
লিপস্টিকের মাতাল গন্ধে গাঢ় স্বপ্ন জেঁকে বসে।

হঠাৎ,
স্মৃতি পোড়া গন্ধে ঘুম যায় ভেঙে .....
নেই পাশে তুমি
স্বপ্নেরা খাবি খায় পোড়া ছাইয়ের গাদায়।
তুমি নেই তাই ........ ।

Friday, July 21, 2023

পাহাড়ি সৌন্দর্যের টানে -- বিজয়া মিশ্র

 পাহাড়ি সৌন্দর্যের টানে
 বিজয়া মিশ্র
১৫.০৭.২০২৩
হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপতে কাঁপতে কম্বলের তলা থেকে বেরিয়ে ভোর চারটের আগেই ভাড়া গাড়িতে উঠে বসলাম সপরিবারে।গন্তব্য টাইগার হিল।গত দুদিন অনেক চেষ্টা করেও কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলেনি। রিসর্ট থেকে বেরোনোর আগেই গরম চা সার্ভ করেছে হোটেল।তাতে কী, মনে হচ্ছে সবসময় এক কাপ হলে ভালো হয়। গাড়ি সামান্য এগিয়েই দাঁড়াচ্ছে কেন জানতে চাইলে ড্রাইভার জানালো রাস্তা জ্যাম। আধঘন্টার রাস্তা প্রায় দেড়ঘন্টা লাগলো। অবশেষে গন্তব্যস্থলের কিছুটা আগেই নেমে হেঁটে যেতে বললেন ড্রাইভার।অগত্যা চড়াই পথে এগোতেই হল। গতরাতে একই হোটেলে কলকাতার অন্য একটি পরিবারের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল।ওনারাও আজ একই পথের যাত্রী।বহুকষ্টে স্পটে পৌঁছে দেখি লোকে লোকারণ্য।সূর্যোদয় কোথায়! দিগন্তরেখা মেঘে ঢাকা। দু একবার লালচে আভা দেখে সবাই উল্লসিত কেউ কেউ বলল "ওই তো কাঞ্চনজঙ্ঘা।"ঘন মেঘের মধ্যে আড়মোড়া ভেঙে একচিলতে কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি দিচ্ছে সত্যিই।ক্রমশ বেলা বাড়তেই হতাশ দর্শকেরা পিছু হটলো।সূর্য চকচকে চোখে হাসছে,কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা লুকোচুরি খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়ল একসময়।আমরা ফেরার পথ ধরলাম পাহাড়ের আঁকা বাঁকা ঘিঞ্জি পথে।ফেরার পথে বিভিন্ন মনেষ্ট্রিতে কাটালাম কিছুটা সময়।অবশেষে বাতাসিয়া লুপ। এখান থেকে সুদূরের দৃশ্য দেখার জন্য দূরবীক্ষণের ব্যবস্থা প্রচুর। বাচ্চারা বেশ আনন্দ পেল।সেইসঙ্গে টয় ট্রেনের ধীরলয়ে চলা ভারি সুন্দর।
সারা সকাল খুব আনন্দে কাটিয়ে আমরা ছুটলাম ম্যালে।সহসা বৃষ্টি এলো। অনেক দূরের পাহাড়গুলোও লুকিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে। একটু মেঘ সরলেই পাহাড়ের সারিবদ্ধ আহ্বান ভারি মনোরম।পরেরদিনই ফেরার গাড়ী।রাতেই খবর পেলাম বৃষ্টিতে ধস নেমেছে পাহাড়ে। সকাল সাড়ে পাঁচটায় আমাদের গাড়ি আসবে রিসর্টের গেটে। সেইমতো প্রস্তুতি নিয়ে সাতপাঁচ না ভেবেই বেরোতে হল।যদি যাওয়া না যায় হোটেলেই ফিরবো আবার সেইমতো কথা হল। ঘুম স্টেশন পৌঁছেই চায়ের জন্য দাঁড়ালাম।আজ ঝকঝকে আকাশ । চায়ের অর্ডার দিয়েই আমরা হতবাক।এ কী দেখছি! কাঞ্চনজঙ্ঘা! অপরূপা সুন্দরী রূপোলী মুকুটে সুশোভিতা,হাসিতে মুক্তো ঝরিয়ে হাতছানি দিয়ে এভাবেই বুঝি পাগল করে অনাদি অনন্তকাল ধ'রে মুগ্ধ ,সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষকে। অনেক ভালোলাগা,অনেকটা তৃপ্তি সঙ্গে নিয়ে ফিরেছি আমরা। আনন্দের আবহে ভুলেই গিয়েছিলাম পাহাড়ের ধসের খবরটা। ফেরার পথের দুদিকে তখন সোনালী রোদে ঝিকমিক করা পাড়াড়ের সারি, পাহাড়ি ঝর্ণার নেমে আসার মধুর ধ্বণিতে আপ্লুত হয়ে দেখছিলাম সকলে। আমাদের ড্রাইভার কত নামও বলছিল । পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে ঘন বনের ছায়ায় নাম না জানা পাখিরা তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল।ওই সময়ের মধ্যেই সুরক্ষাবাহিনী অবশ্য গাড়ি যাতায়াতের রাস্তা কিছুটা পরিস্কার করে দুশ্চিন্তা দূর ক'রে দিয়েছিল। নিরাপদে পৌঁছে আমাদের স্মৃতিরোমন্থনে আচমকা ধাক্কা। মিডিয়ার দৌলতে  সমস্ত ভালোলাগার আবেশে নিমেষে হোঁচট খেল। আমাদের সঙ্গে যে পরিবারটির রিসর্টে আলাপ হয়েছিল ,যাঁরা টাইগার হিলে ওঠার দুরূহ কষ্টে  বেশ কিছুক্ষণ আমাদের সঙ্গী ছিলেন তাঁরা আজ টয় ট্রেনে ভ্রমনকালে পরিবারের কর্তা শোভনবাবু টয়ট্রেনের গেটে হাত ছেড়ে দাঁড়িয়েছিলেন ।  বাতাসিয়া লুপে বাঁক নিচ্ছিল টয়ট্রেন।তখনই আচমকা পড়ে গিয়েছেন তিনি।মাথায় মারাত্মক চোট পেয়ে কোমায় চলে গেছেন। ওখানেই আপাতত চিকিৎসা চলছে প্লেনে কলকাতায় আনার চেষ্টা চলছে।অত্যাধিক রক্তক্ষরণের জন্য চিকিৎসকেরা কোন আশা দিতে পারছেন না। এমন অভাবনীয় একটা খবরে আমরা সকলেই অপ্রস্তুত, কিংকর্তব্যবিমূঢ়।চোখের সামনে আনন্দে ঝলমল করা বাতাসিয়া লুপের ছবি ভেসে উঠছে সঙ্গে বুকের ভিতর দলা পাকানো একটা যন্ত্রনা...।

শিক্ষাগুরু -- অভিজিৎ দত্ত

শিক্ষাগুরু 
অভিজিৎ দত্ত 
16/07/23
শিক্ষাগুরু,তুমিই আমার ভিত
তুমিই আমার জীবনের প্রেরণা
তোমার আর্শীবাদ ছাড়া কিছুতেই
প্রকৃত মানুষ হতে পারতাম না।

শিক্ষাগুরু,তোমার কাছেই পেয়েছিলাম 
দেশপ্রেম ও মূল্যবোধের শিক্ষা
যেগুলি ছাড়া কখনোই প্রকৃত
মানুষ হওয়া যায় না।

শিক্ষাগুরু,তুমিই প্রথম বুঝিয়েছো
এই পৃথিবীতে মানুষ সবাই সমান
কৃত্রিম ভেদাভেদ, ধর্মান্ধতা
লোভ, হিংসা ও স্বার্থপরতা
মানুষকে করেছে পশুর সমান।

শিক্ষাগুরু,তোমার কাছে শিক্ষা
মানবতার পাঠ
যেটা ছাড়া দুনিয়াই 
বেঁচে থেকে কী লাভ?

সবশেষে শিক্ষাগুরু শিখিয়েছিলে
জীবনে ভালো মানুষ হতে
যেটা ছাড়া জীবনের কী মূল্য আছে?

আর্তনাদ -- অনিল চন্দ্র সিকদার

আর্তনাদ
অনিল চন্দ্র সিকদার
১৭-৭-২৩.
নিষ্পলক দৃষ্টিতে দেখেছি সেদিন,শুনেছি কত আর্তনাদ
বুকের ভেতরটা যেন আগুনের মতো জ্বলছিলো, 
তপ্তদাহ আগুনের মতো মনটা পুড়ে যাচ্ছিলো
পারিনি কিছুই করতে ওদের, ঐ অস্ত্রের সামনে। 

দেখলাম শুধু, ছল- ছল অশ্রু ভরা চোখে-
যম-দূতের মতো খুবলে খাচ্ছিলো, 
অসহায় আমার দুটি হাত- পা বাঁধা,যীশুর মতো
বুকের ভেতরটা আগুনের মত দাউ দাউ করে জ্বলছিলো

অনুশোচনায় আর্তনাদ করেছি ,কেঁদেছি কত-
ছেড়ে দাও ওদের,ওরা নিষ্পাপ ,নারী-শিশু, 
শোনেনি ওরা, আমার কথা,আমার যে হাত-পা বাঁধা
নিষ্পলক দেখেছি , করেছি আর্তনাদ,যেন আমি  সেই, যীশু। 

হৃদয়টা কেঁপে উঠেছিল, ওরা ছিল  সবাই নির্দয়
বলতে পারিনি কিছুই, ট্রিগার দাবালেই শেষ, 
কি অকর্ণ এই পৃথিবী, মেরুদণ্ডহীন বিচার
দেখিয়েছে ওরা আপোষহীন ক্ষমতা, এইটাই  বেশ।

হায়রে -বিধাতা-সইবে কি  তুমি?এই অত্যাচার
করে যাচ্ছে নির্বিচারে এই নিষ্ঠুরতা, 
পাষণ্ড মনের হিংস্র মানবদের মতো নির্দয় আচরণ
কবে হবে মানবদের হৃদয়ে, মানবতার জাগরণ।

বর্ষা এলো ওই -- শহীদুল ইসলাম আখন

 বর্ষা এলো ওই
 শহিদুল ইসলাম আখন
 ১৮/০৭/২৩
শ্রাবণ মাসে ঢল নেমেছে,মাঠ জলে থই থই।
বর্ষা এলো ওই, বর্ষা এলো ওই।।

কলের লাঙল ভটর ভটর হচ্ছে জমিন চাষ,
চাষীর মনে খুশির জোয়ার প্রাণের উচ্ছ্বাস;
আলের পথে চাষার মেয়ে আনছে টেনে মই।
মাঠ জলে থই থই, বর্ষা এলো ওই।।

মাঠের পরে বীজতলা সব জলে ডুবুডুবু,
ঝম-ঝমা-ঝম ঝরছে বাদল থামছেনা যে তবু;
রুই কাতলা লাফায় ঝিলে,ডাঙায় চলে কই।
চারদিকে থই থই, বর্ষা এলো ওই।।

ভরা নদী কুলু কুলু উঠছে ফুলে ফেঁপে,
কড় কড় কড় মেঘের ডাকে হৃদয় ওঠে কেঁপে;
মাঝ নদীতে ঝাপসা দেখায় জেলের ডিঙির ছই।
নদী,জলেতে থই থই। বর্ষা এলো ওই।।

বাউরি পাড়ার "ময়না বুড়ির" ফুটো ঘরের চাল,
ঘরের মেঝে ভিজে কাদা, পড়ছে টপে জল;
পঞ্চায়েতে দেয়নি ত্রিপল,নেপোয় মারে দই।
দুখের কথা কারে কই, বর্ষা এলো ওই।।

দেখেছো কি? -- সুমনা মন্ডল

 দেখেছ কি?
 সুমনা মণ্ডল 
 20.07.23
দেখেছ কি এই আঁখিতে
          কৃষ্ণ চূড়ার যৌবন ?
কিংবা উষ্ণ স্পর্শ মাখা
          গোলাপের শিহরণ!
দেখেছ কি এই আঁখিতে 
           মরসুমী ওই ভিড়?
তোমার প্রহর স্তব্ধ হেতু 
            এ হৃদয় অস্থির..।
দেখেছ কি এই আঁখিতে
           মেঘের মুষলধারা ?
বৃষ্টিফোঁটার বাড়াবাড়ি,
            ভ্রষ্ট-ছন্নছাড়া। 
দেখেছ কি এই আঁখিতে 
             কথার লুকোচুরি?
বেহিসাবী অভিমানের 
           অহেতুক ভাব-আড়ি!
দেখেছ কি এই আঁখিকে
            না দেখার অছিলায়?
মন আঁখি স্রেফ তোমায় দেখার
             বাহানা খুঁজে যায়..।

Thursday, July 20, 2023

আজও তুমি বেঁচে আছো ! -- মাজহারুল ইসলাম

আজও তুমি বেঁচে আছো ! 
মাজহারুল ইসলাম 
১৪/০৭/২০২৩
কখনও কখনও ভোরের আলোয়
তোমার মুখাবয়ব দেখলে মনে হয়
অপ্রত্যাশিত সকাল তোমার চোখে জ্বালা ধরিয়েছে । 
বেঁচে  থাকতে থাকতে বড্ড পেরেশান তুমি ! 

নিজের অজান্তে রাতে কখন 
নিজেকে সঁপেছ নিদ্রাদেবীর হাতে , 
সকাল -দুপুর- রাত এ কেমন 
একঘেয়েমী যন্ত্রণা তাড়া করে ফেরে সারাক্ষণ । 

অঘুমের রাতে শব্দেরা আর
হয়তো খেলাই করে না তোমার সিথানে, 
প্রশস্থ বিছানায় হাত বাড়ালে নতুন কোনো শিহরণ আচমকা ছুঁয়ে যায় না আগের মতো । 

তুমি হয়তো বেঁচেই  আছো শুধু ! 
না শুনতে পাও নদীর কূল কূল ধ্বনি 
না তোমাকে গান শোনায় বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টি । 
শীতের পাতা ঝরা সকাল
শুধুই কানে বাজে তোমার কারণে অকারণে । 

রহস্য উপন্যাসের পাতায় পাতায় 
উড়ে বেড়ায় অসংখ্য অসমাপ্ত গল্প, 
বাস্তবতার স্তম্ভে বাঁধা শক্ত দড়ি বড্ড নড়বড়ে   ;
সময়ে সমীকরণে কালক্ষেপণ হয়েছে অনেকটা 
আজও তুমি বেঁচে আছো  ! 

বৃষ্টি ঝরে -- সুভাষচন্দ্র ঘোষ

            বৃষ্টি ঝরে
            সুভাষচন্দ্র ঘোষ
            তাং - 13/07/2023
            
          বৃষ্টি  ঝরে  ঝির্  ঝির্  ঝির্
          ঘোলাটে মেঘ আকাশে স্থির
                    ঝিলিক হানে
                    গগন  পানে
           আকাশ জুড়ে মেঘের ভিড়।

          মাঝে  মাঝেই  দম্ কা হাওয়া
          ছাতা  মাথায়  বাইরে  যাওয়া
                      তীরের মত
                      বিঁধছে যত
          বৃষ্টির ছাঁটে  ভিজে  নাওয়া ।

          চাষীর ঘরে  লেগেছে  ধুম
          তাদের চোখে নাইকো ঘুম
                     করবে চাষ
                     কি উচ্ছ্বাস!
           বাজ পড়ছে গুরুম্ গুম্।

          কচু  পাতায়  টাপুর্  টুপুর
          ঝম্ ঝমা ঝম্ বাজে নূপুর 
                    টিনের চালে
                   গাছের ডালে
           বৃষ্টি  ঝরে  সকাল- দুপুর।

           সাঁঝের  বেলায়  অন্ধকারে 
           ডাকছে ব্যাঙ জলার ধারে
                    ঝিঁঝিঁ পোকা
                     যায়না দেখা
            শোল- মাগুর লাফায় পাড়ে। 
           
           বৃষ্টি  পড়ে  দীঘির  জলে
           গাছ ভরেছে কদম ফুলে
                       থরে থরে
                       গন্ধ ভরে
          আঁধার ঘনায় ফলসা তলে।

             ছোটরা সব  ঘুমে     কাদা
             ভিজে গেছে খড়ের গাদা
                       মহিষ গরু
                      জাবর শুরু
              গল্প শোনায় বুড়ো দাদা ।

বর্ষা অমঙ্গল -- মধুসূদন লাটু

 বর্ষা অমঙ্গল
 মধুসূদন লাটু
 ১০/০৭/২০২৩
আষাঢ়ের হাত ধরে নিয়মেই নামে বৃষ্টি
আকাশ জুড়ে মেঘেরও আনাগোনা ক্রূরদৃষ্টি
বজ্রের তাণ্ডব দশ বিশটা তরতাজা প্রাণ দেয় ঝলসে
ভাগ্যের দোষ কর্মের ফল বিধাতার রোষে
ঝড়ের ভ্রকুটি, চালাঘর লুটোপুটি, 
কবরীতে কদম যুথিকা গুঁজে মহারানীর কলকলানি।
রুগ্ন কলেবরে চাষী তবুও ধান বোনে 
অন্যের অন্ন জোগাতে নিজেই অভুক্ত থেকে।

জল থই থই খাল বিল নদী নালা, ব্যাঙের মকমক, সাপের কামড়, ঝিঁঝিঁর ডাক, নিশুতি রাত, 
ক্ষুধার্ত শিয়ালের হাঁক, রাত জাগা চোখ,
 বাংলা মায়াময় মোহময় ।

অট্টালিকায় রোদ উঁকি মারে জানালায়
কুঁড়ে ঘরে  জলবন্দি আঙিনায়।

গফুরের ফুটো চাল বেয়ে জল ঝরে বিছানায়
আমিনার আমানি বাড়ে উৎকণ্ঠায়।
অবোধ বালকের কাগজের নৌকা চলে নালায়।
ভুখা মানুষের মিছিল জগন্নাথের রথের রশিতে  মারে টান রসদের আশায়।

তবুও শ্রাবনী পূর্ণিমায় ঝুলনে মাতে বাঙালি।
 ইলিশের টানে পাথারে পাড়ি দেয় মাঝি 
 জীবন মুঠোয় ধরি। 
 

 রাখীর সম্প্রীতি স্বাধীনতা দিবস ভাদু মনসার গান
 বাদ যায় না উৎসব মেলা খেলা কিছু।
 তালের বড়া নন্দের নাচন বাজন গাজন ও চলে পিছু পিছু।
 
অজয় রূপনারায়ণ দামোদর অপরূপ ভয়ংকর
আঁকে চিত্রকর, কবিতা লেখে কবি।
গঙ্গা পদ্মা তিস্তা তোর্সা কংসাবতী ভয়ঙ্করী
মুছে নিয়ে যায় খেলা ছলে ফকিরের ঘরবাড়ি।
কারও পোষমাস, কারও পোয়াবারো পকেট ভারী।

নবীনের ইনফ্লুয়েঞ্জা কাজ সারা সাতদিন
চাল নেই জ্বলে না চুলা গালে হাত রাতদিন।

তবু ও রানী ঝতুরানী মহারানী
এত ভীষণা ভয়ঙ্করী
জানি 
তবুও জীবনদায়িনী
জয় জয় বরষা দিগম্বরী
গাই গান গাই গান
বর্ষামঙ্গল, বর্ষামঙ্গল বর্ষামঙ্গল।

বৃষ্টির দিনের কাব্য -- হাসান ফরিদ

বৃষ্টির দিনের কাব্য
হাসান ফরিদ
০৯/০৭/২৩
শ্রাবণ সেতার। রিমিকিঝিমিকি বাজে। মন বসে না বসে না কোনো কাজে।
জানালার ধারে। কার এলোচুল ওরে। বিরহী বাতাস উদাসী করে তারে!

বনময়ূরী নেচে যায়। পাহাড়ি ছড়া ঝিরি ঝিরি ঝিরিক গায়।
ধূপছায়া আকাশ--ভেঙে ভেঙে আসে। 
বৃষ্টির নূপুর একটানা কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ে সবুজ ঘাসে।

নদীরা ভেজা শরীরে--ফিনফিনে জলের শাড়ি খুলে;  উপত্যকা বুক উঁচিয়ে--সমুদ্রে ছুটে যায়।
ভেজানো কপাট। মেলে হঠাৎ--স্বপ্নমৎস্যরা উথলে উথলে তড়পায়!

আয় না ফিরে -- মৃত্যুঞ্জয় সরকার

আয় না ফিরে
মৃত্যুঞ্জয় সরকার
১১/০৭/২০২৩
তুই আসবি বলেও আসলিনাতো
আমার সজল ঘন ছায়া বনে,
আমার হৃদয় জোড়া উপল রেণুর
দরাজ আলিঙ্গনে।

তবু তুই কী আমার কষ্ট হবি
শিউরে উঠে আসবি পাশে
হারিয়ে যাবার মুহূর্ততে?

চৈত্র মেঘে তীব্র দহন
ছন্নছাড়া আমার আকাশ,
বৃষ্টি হয়ে আয়নারে তুই
চাতক মনে তপ্ত বুকে।

ওলি তো চায়,পরাগ খুশি
বন বনানী মত্ত,
হাওয়ায় দোলে উষ্ণ আবেগ
হৃদ যমুনায় ঢেউ।

আমার নয়ন তারা উদাস বাউল
বুকের ভিতর মরু ঝড়,
পারবি বৃষ্টি মেঘে স্বস্তি দিতে
হৃদ জোয়ারের অন্ধকূপে।

বসন্ত রঙ রাঙায়না মন
দেয়না মনে বাউল সুর,
হৃদয় পুড়ে,হৃদয় জ্বলে
পলাশ ফাগুন ব্যাভিচারে!

হারিয়ে যাবার মুহূর্ততে
আসবি বৃষ্টি হয়ে আমার কাছে,
কষ্ট বুকে হৃদয় দিয়ে হৃদয় পেতে.....

শুধুই টাকাকে ধর -- দুর্গা শংকর দাশ

 শুধুই টাকাকে ধর।
দুর্গা শংকর দাশ।
12,07,2023
টাকার মোড়কে মোড়া আছে দেখি,
     আজকের ভালোবাসা।
ভালোবাসা আজ অন্তরে নেই,
     পকেটে নিয়েছে বাসা।।

ভালোবাসা আজ কেনাবেচা চলে,
     এই সমাজের হাটে।
প্রাচুর্য আর প্রাসাদ থাকলে,
     তবে ভালোবাসা জোটে।।

টাকা দিয়ে হয় মানুষ যাচাই,
    টাকায় বাড়ে তো মান।
জ্ঞানীর কদর এ সমাজে নেই,
        তাদের বুদ্ধি ম্লান।।

টাকা যদি আছে তুমিই অতিথি,
      খাতির অনেক পাবে।
খালি পকেটে তুমিও অতিথি,
    খাতির তো কমেই যাবে।।

দুনিয়াটা মোড়া টাকার মোড়কে,
       মুঠো ভরে নাও টাকা।
নইলে দেখবে,একা পড়ে আছো,
      চারপাশে শুধু ফাঁকা।।

এখন দেখছি টাকাই আপন,
       মানুষ হয়েছে পর।
মানুষ কে ফেলে,মানুষকে মেরে,
      শুধুই টাকাকে ধর।।

Wednesday, July 19, 2023

অপেক্ষা -- প্রোজ্জ্বল রায় চৌধুরী

অপেক্ষা
 প্রোজ্জ্বল রায় চৌধুরী
১৯/০৭/২৩
রাতেই আসো তুমি, 
তাই দরজা খুলে রেখেছিলাম রাতে।
ঘরের ভাঙা জানলা দিয়ে,
এক গোছা তাজা রজনীগন্ধার মতো,
স্বপ্রাণ জ্যোৎস্না,
এসে পড়ল আমার ঘরে।।
ঘর আমার ভরে গেল, 
মায়াবী আলোয়।
সেই আলোতেই দেখেছিলাম তোমায় - 
আমার ঘরে, বুকের খুব কাছে।।

সেই আবছায়া 
মৃদু আলোর কণার বুকে, 
যখন তুমি দাঁড়ালে এসে,
সেই মৃদু আলোতেও স্পষ্ট  দেখেছিলাম -
তুমি পরেছিলে  ঝকঝকে লাল শাড়ি, গরবিনীর আভরণ,
কপালে ছিল - কুমকুম।
আমার  খিড়কি থেকে সিংহ দ্বার পর্যন্ত,
আনমনা পায়ে ছুটে চলে ছিলে তুমি, নূপুরে সুর তুলে,
হাত দিয়ে ছুঁয়ে খুলে দিচ্ছিলে,
আমার যা কিছু  ধুলো মাখা-
বন্ধ কপাট,
আপন খেয়ালে ।।
আমার গাছের ঝরা পাতা নিয়েই
এঁকেছিলে কোজাগরী আলপনা।
আমার না বলা কথা, না শোনা বাণী ,
আপন ঠোঁটে তুলে নিয়ে
সুরে প্রাণ দিয়ে বাঁধছিলে -
আবাহনী পদাবলী।।
সে সুরে ঢেউ উঠেছিল -আমার দিগন্তে ।

তোমায় ডাকিনি আমি,
শুধু  দু চোখ ভরে  দেখেছিলাম তোমায়,
পাছে হারিয়ে যাও,
তাই তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাইনি আমি।

কিন্তু ক্ষণস্থায়ী তুমি,
তোমাকে ধরে রাখব,
এমন সাধ্য কোথায় আমার ?

হারিয়ে গেলে তুমি,
হারিয়ে গেল আমার
সেই জ্যোৎস্না ভেজা রাত।
পরে,
প্রখর  রোদে, নিঝুম রাতে,
বকুল ঝরা সাঁঝে - একলা অবকাশে।
খুঁজেছি তোমায় আপ্রাণ, 
জীবনের সব প্রান্তে।
চোখ  ধাঁধিয়ে গেছে,
তবু, তোমার দেখা পাইনি।।
তাই আজ,
সব আগল খুলে বসে আছি,
সেই মায়াবী আলোর জন্য।।
বসে আছি -- তোমার জন্য।

Monday, July 10, 2023

আষাঢ় - কাজী সেলিনা মমতাজ শেলী

  আষাঢ়
  কাজী সেলিনা মমতাজ শেলী
 ০৬/০৭/২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
আষাঢ় লিখেছে শ্রাবণের শিয়রে দীপ ছিল না সেদিন,
যদিও প্রভাত এলো, তবু প্রকৃতি হয়নি তখনো রঙিন।

নির্ঝর নীর থাকে নিজের মতো,শোনে না আষাঢ়ের গল্প,
ওই নীলিমার নীল অনুপম আকাশ যেন শুধু মহাশিল্প।

কুসুম কামিনী যেন ভালোবাসে, ওই মিষ্টি ভোরের ঊষা ,
ওই মানব সুন্দর যার আচরণ সুন্দর,সুন্দর মুখের ভাষা।

আঁধার বুঝিয়ে দেয়, আলোর প্রয়োজন কত পৃথিবীতে,
মৃত্তিকার রসে অরণ্য হাসে চাঁদ হাসে সেই গভীর রাতে।

বাতাসের শব্দ ধ্বনি চঞ্চল মন, স্নিগ্ধ আকাশ সুগম্ভীর,
দিবসের সূর্য বিদায় নিলো, আসলো আকাশে আবির।

নামলো রাতে আঁধারের পর আঁধার যেন আঁধার পাথার,
চাঁদ যদি না আসে, ধরণী হতে পারে আঁধার কারাগার।

তৃপ্তির বাসনায় সন্ধ্যা তারা ওই আকাশে খেলায় মাতে,
স্বর্গের দিবস পার করে ধরণী স্বর্গ আসে আঁধার রাতে।

দেশ মাতা যে মাটি - মোঃ নূরুল ইসলাম রাকিব

দেশ মাতা যে মাটি 
মোঃ নূরুল ইসলাম রাকিব 
০৫/০৭/২০২৩
স্বাধীন দেশে বীরের বেশে
চলতে গিয়ে হেলায় মেশে
করছে কারা ক্ষতি?
শত্রু মুখে দেও গো রুখে
কেউ রবে না করুণ দুখে
বিবেক পাবে গতি!

করবে যে বা দেশের সেবা
ভালোর কাজে শত্রু কে বা
তাকেই চিনে নেবে?
ধীরস্থিরে সোনার বীরে
আনবে টেনে মানব তীরে
খাস বুঝিয়ে দেবে!

বুঝবে তবে শত্রু যবে
বন্ধু হয়ে আপন রবে 
সত্যিকারের প্রেমে,
মানবতায় স্বাধীনতায়
শত্রু রবে নীরবতায়
দেখবে ছবি ফ্রেমে!

সোনার ছেলে সুযোগ পেলে
দেয় বুঝিয়ে পাখনা মেলে
বিজয় আনে খাঁটি,
আপন করে রাখবে ধরে
ফসল সোনা তুলবে ঘরে 
দেশ মাতা যে মাটি ।

জোছনায় মগ্নস্নান - মোঃ হুমায়ুন কবির


জোছনায় মগ্নস্নান 
মো: হুমায়ুন কবির 
০৪.০৭.২০২৩
সেই রাতেও আকাশে চাঁদ ছিলো
পূর্ণিমার গোল চাঁদ,
আকাশ থেকে ঝরে পড়ছিলো তরল জোছনা।
আমরা দু'জন পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটলাম দীর্ঘ সময়  যেন কতো জনমের চেনা কপোত-কপোতী 
মায়াবি জোছনার জলকেলিতে মগ্ন।
তোমার কোমল আঙুলের ছোঁয়ায়
আমার দেহ-মনে আকণ্ঠ শিহরণ।
পায়চারি করতে করতে কখন যে আমরা 
একে অপরের হয়ে গেলাম পারিনি বুঝতে।
জোছনার রূপালি জলে ডুব দিয়ে 
সেই রাতে তোমার ওষ্ঠাধরে এঁকে দিলাম 
মোলায়েম প্রথম চুম্বন।
কী ভীষণ আপ্লুত হলে তুমি
নীমিলিত দু'চোখের পাতায় তোমার 
ভালবাসার প্রথম আচ্ছাদন।
নরোম জোছনার চাদরে ঢেকে ঢেকে 
তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিলাম।
পরের ডেটিং এ বলেছিলে
সেই রাতে তুমি আর ঘুমোতে পারোনি,
আমিও পারিনি ঘুমাতে। 
ঝুলে থাকা নিরীহ চাঁদ সাক্ষী হয়ে 
আজও জোছনা ঝরায়
পৃথিবীর নিথর কোমল মৃত্তিকায়।

একসাথে থাকবো - জয়সেন চাকমা

একসাথে থাকবো
জয়সেন চাকমা 
০৮/০৭/২০২৩
কদমের ফুল হয়ে বষর্ণে নিরব চোখ জোড়ায় ধরা দিব,
বৃষ্টিতে ভিজব, তবে ভিজে যাক, রোদ আসলে আবার শুকিয়ে যাব।
কবিদের কবিতা হয়ে বাঁচব সাহিত্যর কাননে,
নতুবা গল্প, কবিতা  কিংবা উপন্যাসের মনে।
নাহয় প্রিয় পাঠকের বইয়ে প্রিয় লাইনে থাকব,
দুজনে মিলে একটি রঙিন ছবি আঁকব।
আপনি আর আমি হব বসন্তের হলুদের চিঠি,
নতুবা বাউলার গাওয়া সোনার নবান্নের গীতি।
থাকবো শীতে শিশির হয়ে ছোটো ঘাস ফুলে,
আমি হব আপনার বেলি ফুলের মালা, থাকব আপনার চুলে।
আমি সবসময় চাই আপনি থাকেন আমার হয়ে,
একান্তই আমার ভালোবাসার বলয়ে।
আমি পত্র হলে  আপনি  ফুল, আপনি পত্র হলে আমি বৃক্ষ,
কাছাকাছি থাকব, ভালোবাসায় আমাদের অক্ষ।
আপনি চাঁদ হলে আমি হব জোছনার আলো,
আপনি আমার নেত্রে বন্দি আপনাতেই আমার ভালো।
দুজনে একসাথে ভালোবেসে জীবন গুছিয়ে নিব,
এভাবেই সারাজীবন একসাথে পাশে থাকব।

স্বপ্ন ভাঙার গল্প - শান্তি দাস

স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্প
শান্তি দাস
০৭_০৭_২০২৩
ওদের স্বপ্ন নিয়ে গড়া জীবন স্বপ্ন নিয়েই বাঁচার আশায়,
স্বপ্নময় জীবন যখন স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনা ওরা পায়।
বারবার আহত হয় বিধ্বস্ত হয় তখন জীবনকে আকড়ে ধরায়, 
সেই তো কোন উপায় খুঁজে মন অজান্তেই জীবন গড়ায়। 

কত স্বপ্ন ঘুরে বেড়ায় জীবন তৈরির দীণ দরিদ্রের তরে, 
অধরা স্বপ্ন ভেসে বেড়ায় ক্লান্ত বিষন্ন মনের চারধারে ।
মনে জাগে ব্যথা স্বপ্ন শুধু দেখার মাঝেই স্বপ্ন রয়ে যায়, 
স্বপ্ন দেখে ওরা বারবার মৃত্যু নদীর পাড়ের ঠিকানায়। 

অবুজ মন অকারণ ছুটে চলে আরাধ্য সুখের পিছে তাড়া করে, 
জীবনের অমূল্য সময় রাস্তার স্বপ্ন একটু করে ক্ষয়ে 
আকঁড়ে ধরে।
জীবনের স্বপ্নগুলো হয় না পূরণ দেখে ওরা বারবার, 
অধরা স্বপ্নের মোহমায়া অসীম শূন্যতায় করে দেয় জীবন ছাড়খার। 

তাইতো জীবনের দৌড়ে বুঝে যায় স্বপ্ন গুলো অধরায়,
ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন অন্তরে বাহিরে জড়িয়ে থাকা কঠিন বাস্তবতায়। 
কত স্বপ্ন দেখে জীবন তৈরির কাজে খুঁজে পথের ঠিকানা, 
স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে শুধু ভাবনা হয়না সফল এক জীবনের নেই  সীমানা ।

সীমার বহুদূরে ওদের অধরা স্বপ্নেরা ঘুরে ঘুরে ফিরে, 
শূন্য পৃথিবী হৃদয়ের গহনে রাস্তায় শুয়ে স্বপ্নহীণ নীড়ে।
স্বপ্ন দেখে মনের তাগিদে ক্ষুধা তৃষ্ণায় এগিয়ে চলার পথে,
স্বপ্ন বিলাসী রাস্তার স্বপ্ন অতৃপ্ত চেতনা গুলো চলে কল্পনার রথে।

Wednesday, July 5, 2023

ভালোবাসার স্মৃতি--হোস্নেয়ারা বকুল

ভালোবাসার স্মৃতি 
হোস্নেয়ারা বকুল 
(০৪/০৭/২৩)
তোমার দেওয়া ভালোবাসার  স্মৃতি নিয়ে বেঁচে  আছি 
যতটা ভেবেছিলাম তোমাকে  ভুলতে পারবো, পারিনি । 
আমার রাএি, সকাল, বিকেল দুপুর সব তুমি কেড়ে  নিয়েছো। 

আমার আনন্দের মাঝে  তুমি মিশে  আছো,
বিষাদের মাঝেও তুমি  মিশে  আছো 
তুমি, তুমি শুধু  তুমিই  আছো। 

সেদিন  যখন  টানাপোড়েন শুরু হল আমার জীবনে, 
তোমার আর বাবার ভালোবাসা
তুমি শুধু  প্রেমিকই থেকে  গেলে। 

জীবনে  খুব বেশি চাওয়া ছিলনা,
কিন্তু ভাগ্য তোমাকে দুরে ঠেলে  দিল। 

তবে কি আমাকে অভিশাপ  দিলে?  

তাই  আমার আর মুক্তি  হলোনা। 
আমি তোমার থেকে  দুরে গেলাম ঠিকই
কিন্তু 
তোমার দেওয়া স্মৃতি  ? 

ভালো থাকার অর্থ,প্রার্চয্য,নতুন ভাবে থাকা, নতুন  ভালোবাসা হল ঠিকই। 
শুধু থাকলোনা তোমাকে  ভুলে  থাকার ক্ষমতা। 
তোমার দেওয়া স্মৃতি কিছুতেই  তোমাকে  ভুলতে  দিলনা। 
কিছুতেই না।

Monday, July 3, 2023

টাইটান নাবিক -- মোস্তাক আহম্মেদ

 টাইটান নাবিক
মোস্তাক আহম্মেদ
তারিখ-২৮/০৬/২০২৩ ইং ।
আমি সিংহল দ্বীপ হতে বঙ্গোপসাগরকে দেখেছি
দেখেছি, নিকোবর আন্দামান ও আরবসাগর ।
যার জলরাশিসুধা তারই বুকচিরে যায় চলে—
যায় তারা,তার অবারিত ধারার অগণনে;
জীবন যেন বহমান সেথা নানারূপ সংগ্রামে
ও জলসীমায় থাকা ডলফিনসহ নানা শ্বাপদে ।।

স্রষ্টার রূপতার ভাঁজে আছে কোথাও জলপ্রাচীর
সে জলরাশি মিশে না—কার প্রাচীরে
সবার আঁখিকে করে দেয় সে অপলক !
সৃষ্টি যেন দোর্দন্ড প্রতাপে সেথা বড় প্রতাপশাহী
কৃঞ্চসাগর,মৃতসাগর তারা বিভাজনে প্রতাপী
বড় শিক্ষা বড় তার দর্শন তাকি আমরা জানি ? ।।

যার বুকে বিশাল অট্টালিকাসম তরঙ্গ পড়ে আঁছড়ে
জীবনতরী ও তার সাজানো বাহন চলে দুর্দান্তে
তার বুকে আরো কত কী চলে ?
দক্ষ নাবিকই তার যেন ভরসা যে সৃষ্টির সেরা ?
যার সৃষ্টিশীল ভাবনাতে রয় তাঁর ইঙ্গিত ইশারা
নাবিক যেন তাঁরই হয়ে মম প্রেরিত এক বন্ধুপ্রতীম ।।

দ্যাখ তার বিশাল গর্ভ মাঝে থরেথরে সাজানো
শোভিতয় কত না বাহারী রঙের কারুকাজ
জলডুবুরী যায় তুলতে তার সে অমূল্য রত্নরাজী ।
জেলে যায় উদরকে ভরাতে দুটো কড়ির জন্যে
যায় কেহ ডুবোযান নিয়ে আপনা শখ মেটাতে,
টাইটান নাম দিয়ে যায় চলে সে স্বপ্নবিলাসে ।।

সবকিছু স্বপ্নসাধ,স্বপ্নসম্ভার স্বপ্নবিলাস রয় মনে
চড়তে হবে সেই হিমালয়ের শীর্ষ শিখরে
উড়াতে হবে জযঝান্ডা কপালে পড়তে জয়টিকা
অভিলাষী মন দুর্জয় দুর্দমনীয় সবকিছুর ভারে !
তবুও মন অবিচল রয় সে উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে
জীবন সাগরের মতো হলেও,
সেও একদা থেমে যায়----
ঠিক যেন মরণের প্রতিরূপ ছবির নির্মম চিত্রে ।।

নয়া সুতার টানে -- সুনীল বিশ্বাস

মায়া সুতার টানে
সুনীল বিশ্বাস
২৯/০৬/২০২৩
আমার ছুঁতে ইচ্ছে করে
আমার গ্ৰামের মাটি,
সেই যে সোনার বাটি;
যেথায় আমি ঘুমের ঘোরে
আলতোপায়ে হাঁটি।

মায়াসুতার শক্ত বাঁধন
প্রান্ত ধরে টানে,
ডাক শুনে তার কানে;
স্মৃতির পাতা উল্টে উল্টে
তাকাই পিছন পানে।

ময়না আমার ডানা ঝাপটায়
খাঁচাবন্দি ঘরে,
দেশের মাটির তরে;
মায়াবী টান উথলে উঠে
চোখেতে জল ঝরে।

মরণ বরণ করবে সে যে
বদ্ধ খাঁচার মাঝে,
জীবনবেলার সাঁঝে;
দগ্ধ ক্ষতে বিয়োগ ব্যথা
চিনচিনিয়ে বাজে।

তুমি কি জিতেছ -- দিলীপ ঘোষ

তুমি কি জিতেছ
দিলীপ ঘোষ
৩০/০৬/২৩
আজ গুঁড়ো সন্ধ্যাবেলায় কথা দেওয়া কথাগুলো শেষ আলিস্যি ভেঙেছিল
তখন বিশ্বাস করতে পারিনি আজ রাতটা অমাবস্যা হবে
মহুয়ার নেশায় মাতাল স্বাস্থ্যবান স্বপ্নের অভ্যাসগুলো
ভাবেনি, অনাদরের শ্মাশানে অচিরেই পুড়ে মরবে।

হাত পা শিরদাঁড়াহীন কিংবদন্তি ভাবনাগুলো এখন
মুখের উপর মুখ রেখে ভেংচি কাটে
রাতের শেয়ালগুলো হুঁকাহুয়া ডাকে দিনদুপুরে
এটা কি কালের নিয়মে না জটিলতা, কে জানে।

মেহগনি খাট, শিমুল তুলোর পাশবালিশ আজ শুধুই স্মৃতি
তারহীন টেলিফোনে বুঝতেই পারি না কথার মতিগতি,
হরপ্পা সভ্যতার লিপি উদ্ধারে নেমেছিলাম আমি
পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে বেঁচে আছি, জিতেছ কি তুমি?

বৃষ্টিস্নাত রাত -- মৃণাল কান্তি রায়


বৃষ্টিস্নাত রাত
মৃণাল কান্তি রায় 
৩রা জুলাই,২০২৩ ইং
সে অনেকদিন আগেকার কথা 
পুরোটা এখন আর ঠিক মনে করতে পারছিনা। 
সারাদিন টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল
পাখিরা সব ভেজা চোখে যার যার আখড়ায়
চলে যাচ্ছিল তাদের প্রিয়জন নিয়ে
একত্রে হয়ত থাকবে বলে। 
চেয়ে চেয়ে দেখছিলুম দূর ওই আকাশে
কালো মেঘের আনাগোনা আর বিজলির ঝিলিক।
বিকেল গড়িয়ে আসতেই প্রবল থেকে মাঝারি 
ধরণের বৃষ্টি পড়ছিল।
প্রকৃতিকে যেন সুশীতল করে দিচ্ছে
তার স্বভাবসুলভ তীর্যক নাচের মধ্য দিয়ে। 
চোখ পাকিয়ে পাকিয়ে কিছু কিছু কাজ
দেখতে পাচ্ছিলাম নিজের ভগ্নপ্রায় আচ্ছাদনের
নিচে উন্মুখ হয়ে নিজকে সংযত রেখে। 
না না এ কোন কাহিনী কাব্য নয় 
চোখে ভাসা এ এক বৈচিত্র্যময় রূপ
অন্যভাবে অন্যকোন স্থানে অন্য কোনখানে
হয়তবা কোন প্রয়োজন আয়োজনের 
এক বিরল চোখে দেখা ইতিহাস। 
কিছু লোকের গম্লনাগমন বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে
বুঝিনি কিছুই বুঝে আসেনি আজও যা। 
শীতকালীন শীতের তীব্রতা বার বার অনুভব
করেছি নিজ ভগ্নপ্রায় আচ্ছাদনের ভেতরে-বাইরে থেকে।
বুঝে উঠতে কিংবা ঠাহর করতে পারিনি
সবকিছু অবোধ অসার ধীশক্তির কারণে। 
যাহোক যেমনটা ভাবছিলাম বৃষ্টিস্নাত পড়ন্ত বিকেলে
সন্ধিগ্ধ ও অনুসন্ধিৎসু হয়ে নানা দিকে দৃষ্টিপাত
করেও কোন কূল-কিনারা বুঝে উঠতে পারিনি। 
আর পারিনি বলেই নিজকে অশিক্ষিত জনদের
কাতারে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিলনা! 
একসময়ে এসে প্রভাকর পাটে বসতে যাবে
রংধনুর রঙের আভায় যেন সপ্তবর্ণা 
হয়ে উঠেছে বেশ লাগছিল দেখছিল দেখতে।
আগন্তুকরা ক্রমশ চোখের আড়াল হয়ে গেল
যার যার তাগিদে নিজস্ব প্রয়োজনে। 
ভগ্নপ্রায় ঘরের কাছাকাছি আছে আবাসন
যার যার সংসার আগলে। 
এলো গোধূলির তীর্যক বর্ষণ প্রবল বেগে। 
বাইরে নাক গলানো আর সম্ভব হয়ে উঠলোনা। 
চোখে দেখা স্মৃতিগুলো হাতরিয়ে ফেরা 
আর আকাশের তর্জন গর্জন দুকানেই
যেন শুধিয়ে যাচ্ছিলো বৃষ্টি স্নাত রাতের
এক নিদারুণ দৃশ্যপট। 
খানিক পরে মালুম করলাম পুড়ো
বাড়িটা যেন ভুতুরে বাড়ি লাগছে
কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা!
কানে শুনতে পেলুম দূরে কোথাও
বাদক দলের ব্যাণ্ড বাজছে। 
একটু খেয়াল করে বুঝলাম৷ এবং কিছু লোকের
শোরগোল শুনতে পেলাম। 
এতে করে যা বুঝলাম কোথাও কোন 
অনুষ্ঠান চলছে। 
লক্ষ্য করলাম আশ-পাশে যারা তখন ছিল
তাদের আবাসনগুলোও যেন 
ফাঁকা ফাঁকা বলে মনে হতে লাগল। 
ভাবলুম হয়ত এসব যা ভাবছি তার কিছুই না! 
আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। 
অন্য বিছানায় শুয়ে থাকা অপলকে চেয়ে থাকা
এক কল্পিত মহিলার স্মৃতি আজ অনেক
বছর পরে হৃদয় মাঝে খানিকটা নাড়া দিল।
নাড়া দেয়ার সংগত কারণও ছিল
সময়ের ব্যবধানে এসে আজ যে শুধুই স্মৃতি!
সারারাত ধরে বৃষ্টির নৃত্য। বেশ লাগছিলো। 
এবার ভগ্ন আচ্ছাদনে যা কিছু জুটেছিল
তা খেয়ে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে
কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম 
নিজে কিছুই আর বুঝে উঠতে পারলুম না। 
এক স্মরণীয় বৃষ্টি স্নাত রাত এভাবেই কেটে গেল!
বছর তের পেরিয়ে হয়ত পেরিয়ে গেছে
আর কিছুই ভেবে উঠতে পারছিনা! 

নীল চুড়ি কিনে দেবো তোমায় -- জয়সেন চাকমা

নীল চুড়ি কিনে দেবো তোমায়
জয়সেন চাকমা
০১/০৭/২০২৩
প্রিয়,
তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাই, বসন্তের মেলাই 
তোমাকে কিনে দেবো নীল চুড়ি 
নীল চুড়িতে ভীষণ মানাবে তোমায়,
জানি, নীল রঙের চুড়ি তোমার বেশ পছন্দের।
চুড়ি গুলো পেয়ে একটু লজ্জায় হাসবে তুমি 
যে হাসির মাঝে থাকবে ভালোবাসার ছন্দ,
তোমার হাসিতে লুকিয়ে যাবো গভীর প্রণয়ে।
তোমার সুমিষ্ট হাসি পেয়ে আমার হৃদয় আকাশে সূর্য কিরণ দেবে,
হাজার হাজার পুষ্প সেজে উঠবে 
রাত্রিতে পাবো আলোক ঝকঝকের চন্দ্রা
আর অক্সিজেন দেবে আমার ভালোবাসার বৃক্ষটি।
তোমার হাসিতে মুগ্ধতা ছড়াবে পাহাড়ের জুমের ধানও
প্রকৃতিরা সেজে উঠবে।
আর আমি  খুঁজে পাবো হাজার কবিতার ছন্দ 
রোমান্টিক প্রেমের পত্র লেখার বাক্য
আর টিউলিপ ফুলের মুগ্ধময়ের শোভা।
তোমার নীল চুড়ি পড়া হাত ধরে হাটবো দুজন একসাথে 
গোধূলি এক বিকেল বেলায়।

হয়তো কিংবা হয়তো বা -- পরেশ চন্দ্র সরকার

হয়তো কিংবা হয়তোবা 
পরেশ চন্দ্র সরকার
০২/০৬/২০২৩
রাত দশটা দশ,
এম জি রোডের গিরিরাজ হোটেল থেকে
রাতের নিরামিষ খাবার শেষ ক'রে
একটু পায়চারি ক'রতে, প্লাস এককাপ চা
পান ক'রবো ব'লেই
শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশনের
ভেতরের স্টল থেকে এক কাপ গরম চা নিয়ে
সবেমাত্র চুমুক দিয়েছি, ওমনি পাশে
এলোমেলো পরিধানে এক মহিলা এসে
হাত পেতে পয়সা চাইছে, না, খাবার চাইছে
বুঝতে পাচ্ছি না, মুখটি করুণ তার, পড়নে
একমাত্র মলিন শাড়ি, গায়ের রঙ ফর্সা,
উন্নত সুডোল ভরাট বুক, মহিলার শাড়ির
অবস্থান উন্নত খোলা বুকের যথাস্থানে নেই,
মুখোশের আড়ালে এ মুখ ব'লে মনে হ'লো না,
আমার এক চাহনিতেও।
ওদিকে প্লাটফর্মের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে,
আবার অন্যপ্রান্ত থেকে এইপ্রান্তের দিকে
মানুষের ঢল ছুটে চলেছে হড়পা বানের মতো
খরস্রোতে, কিন্তু সেই ঢেউয়ের মধ্যে থেকেও
শত সহস্র যুগল ক্ষুধার্ত চোখ যেন সংগোপনে
অথচ
প্রকাশ্যে গিলে খেয়ে যাচ্ছে
এককালীন মনের বাসনা পুষে
পুরোপুরি যেন এলোকেশীর অর্ধ-নগ্ন বুক
কামনা মেটাচ্ছে দেখে
উন্নত সুডোল ভরাট যুগলে প্রাণবন্ত সুখ।

চা চুমুক দিতে দিতেই পকেটে হাতটি দিয়ে
তুলে নিলাম দশ টাকার একটি কয়েন,
সেটাই তুলে দিচ্ছিলাম মহিলার হাতে,
মাথা নেড়ে অস্বীকার ক'রে সেটি নিতে,
ইশারায় আরও একটি চায়,
পকেট থেকে পুনরায় আরও একটি দশ টাকার
কয়েন বের ক'রে দিতেই মহিলা যেন বিগলিত
করজোড়ে আশীর্বাদস্বরূপ একটি নমস্কার দিয়ে
চলে যায়। আমার মনে পড়ে গেল, আজই
শনিবার সন্ধ্যায়
এম জি রোডের ফুটপাত দিয়ে যখন
বাইরের কাজ শেষ ক'রে শান্তিনিকেতন
হোটেলে ফিরছিলাম, ফুটপাতের ধারেই
দেখেছিলাম শ্রীশ্রীশনি ঠাকুরের পুজো ক'রছেন
একজন পুরোহিত, থমকে দাঁড়ালাম,
পকেট থেকে দশ টাকার নোট বের ক'রে
রেকাবে রেখে পায়ের জুতো খুলে
দু'হাত জোড়ে মুখে বিড়বিড় ক'রতে ক'রতে
দীর্ঘ নমস্কার ক'রেছিলাম। এইবার
আমার প্রশ্ন আমারই কাছে, আমি যে প্রণাম
ক'রছিলাম সেটা ছিল মাটির মূর্তি শ্রীশ্রীশনি
ঠাকুরের কাছে আর এখন যে আমাকে
কুড়িটি টাকার বিনিময়ে দীর্ঘ প্রণাম ঠুকে
আশীর্বাদ ক'রে গেল...
এটা কি ব্যাখ্যায় আঁকি আমি?
কি ভাবছেন পাঠক প্রিয় কবি?
তাহ'লে এই কি জীবন্ত দেবী! যে হয়তোবা
নিজের, প্লাস তার বাচ্চাদের খাবার জোগাড়
হেতু হাত পেতেই চেয়ে নিচ্ছে কিছু, আর
মাটির মূর্তি না চাইতেই
দিব্যি পেয়ে যাচ্ছে বারবার,
সত্যিকার
অবাক আঁকছে
আমারও মনে, এ কোন্ ক্ষণে
বাস ক'রছি অন্ধ মানুষ আমরা?
কি ব'লবে তোমরা? 
অথচ কত জীবন্ত দেবদেবী ঘুরে বেড়াচ্ছে
রাতবিরাতে রাস্তা দিয়ে
তাদের পেটে দু'তিন দিনের খিদে নিয়ে!
ওদের হাতে হয়তো
কোনো কাজ নেই কিংবা এটাই কাজ হয়তোবা!

অভিমানী -- কাকলী


অভিমানী
কাকলী
০৩/০৭/২৩
কিছু গল্প লেখা থাকে চোখের পাতায়,
ঝাপসা বড়োই, কষ্ট করে পড়ে নিতে হয়,
আদুরে মনটার নরম অভিমান,
এক আকাশ বৃষ্টি সমান,
ভিজে যায় রোজ নিজে, চোখের কাজল ঘেঁটে,
কেন সে বলবে মনের কথা তোমাকে,
কথাগুলো যে বড্ডো ভারী, পারবেনা তা সহ্য করতে,
অনেক দিনের অনেক সময় ধরে জমানো কথা, পাহাড় সমান,
নেই কোনো উত্তর তোমার কাছে, পারবে না রাখতে তার মান,
দিনের আলোয় রাতের তারা খোঁজা যে,
চোখের সামনে থেকেও জানতে পারলে না যাকে,
তাকে কি করে বোঝানো যাবে এতো সহজে,
এই অভিমানের পাহাড়, আমার অহংকার, থাকনা এ শুধুই আমার,
কাউকে এর ভাগ দিতে চাই না, ভার সহ্য করতে পারবে না তার,
তুমি চলে যাও তোমার পথে, পথ তো সোজা খোলা আছে,
আমার জন্য রইলো নাহয় একটা খোলা আকাশ,
আর পৃথিবী জোড়া স্বপ্ন, আর সেই শিশির ভেজা ঘাসফুল,
আমি নাহয় এদের নিয়েই গল্প লিখবো,
একটা ভিজে যাওয়া সন্ধ্যার গল্প, একটা অপেক্ষার গল্প,
ঠান্ডা হয়ে জুড়িয়ে যাওয়া কিছু অনুভবের গল্প,
লিখে যাবো জীবনভোর আমার আমিকে নিয়ে,
না, তোমার কোনো জায়গা নেই আমার স্বপ্নে,
থাকবে এই লেখাগুলো হাওয়ায় ভেসে ভেসে,
ধুপ পুড়ে যাওয়ার পরেও যেমন গন্ধ হাওয়ায় ভাসে,
সেইভাবেই একদিন বাতাসে ভেসে ভেসে হারিয়ে যাবো,
আর এক আকাশ প্রেম রেখে যাবো।