Sunday, August 8, 2021

সুমনা মন্ডল

প্রকৃত অন্ত্যমিল
সুমনা মণ্ডল
-----------------------------


বাস্তব থাক রাজপ্রাসাদে
        স্বপ্ন কুঁড়ে ঘরে, 
মুহূর্তেরা থমকে থাকুক
          নষ্ট অবসরে ।
ঘুমের দেশে স্বপ্ন ছুঁয়ে
        তন্দ্রা ফিরুক ঘরে, 
বাদল চিরে বর্ষা নামুক
         ক্লান্ত শহর জুড়ে ।
অলস কলম ভেঙ্গে আড়মোড়া
          করুক চিৎকার, 
স্তব্ধতাকে হনন করুক
           নীরব অন্ধকার ।
ছন্দ ভাঙ্গুক গণ্ডী তার ই
            কাব্য অনাবিল, 
শিহরণ জাগা শব্দ গড়ুক
             প্রকৃত অন্ত্যমিল ।

পবিত্র প্রসাদ গুহ

 প্রসাদ গুহ
পাট ভিজেছে জলে
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
    পাট ভিজেছে জলে
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●


বৃষ্টি ঝরে                    আষাঢ় মাসে
            পাটের ক্ষেতে জল
জল নেচেছে              ফেনিল সাদা
              কী মজা তুই বল!
আলের গালে              জলের চুম্বন
            মুখ তুলে আল চায়
গলা জলে                       স্নাত হয়ে
               মেঠো জল খায়।
পাট ভিজেছে                সিক্ত গায়ে
              তৃষ্ণা মেটায় ধড়ে
লম্বা সরু                    এক পায়েতে
            দাঁড়িয়ে শোভা ভরে।
স্নিগ্ধ সবুজ               পাটের ক্ষেতে
              জল টলমল করে
ভেকের ডাকে            ছন্দে বিভোর
            উদাসী আষাঢ় ঝরে।
পাতার গায়ে             জলের লেপন
           রূপোলি ফোঁটায় পড়ে
টপটপিয়ে জল         পড়ছে ক্ষেতে
                মেঠো জল নড়ে।

●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●

পাদক

গলুর পরীক্ষা
পাদক

মাষ্টারমশাই সন্ধ্যে বেলায় পড়াতে এসে দেখেন গলু ঘরের দরজা জানালা  বন্ধ করে চিৎকার করে বই পড়ছে।বছর ষাটের বিমল মাষ্টারমশাই  গলুর পড়ার ঘরে ঢুকে চেয়ারে বসতেই.... গলু বিনয়ী হয়ে বলে..মাষ্টারমশাই.. মাষ্টারমশাই..,আজ আমার পড়া একদম রেডি।আপনি ধরুন,সব প্রশ্নের উত্তর জলের মতো দিয়ে দেব। একথা কানে যেতেই গলুর মা অতসী দেবী তড়িঘড়ি  পড়ার ঘরে ডুকে বলেন...

না না মাষ্টারমশাই,ওর কথা শুনবেন না, ওকে লিখতে দিন...আজ পড়া না পারলে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেবেন।সারা দিনটাই দুষ্টুমি আর দুষ্টুমি... বই নিয়ে বসাতেই পারিনি।বলে বলে আপনি আসার আগে এই বই নিয়ে বসেছে।এমন করে পড়লে কি ক্লাস এইটের পড়া তৈরি হয় মাষ্টারমশাই?আর পড়া না হলে যে করে হোক পড়া করিয়ে ছাড়বেন...এই বলে অতসী দেবী ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই গলু মাষ্টারমশাই এর দিকে মুখটা ঝুঁকে বলে...জানেন মাষ্টারমশাই?দিদিমা সেদিন বলছিলেন,আমার ক্লাসে যখন মা পড়তো তখন দিদিমা মাকে খুব বকাবকি করতো।মা একটুও বই পড়তো না।তাই মা পড়া না পারলে মায়ের মাষ্টারমশাইও মাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দিতেন..তাই মা আমার উপর হিংসে করে এ সব বলে‌ গেল.. 

মাষ্টারমশাই একটু রেগে চেঁচিয়ে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে। খাতা পেন বার কর।গলু ভয়ে ভয়ে ব্যাগ থেকে খাতা পেন বার করতে করতে বলে.. মাষ্টারমশাই পড়া ধরুন না...সব পড়া জলের মতো বলে দেব...গলুর কথা শেষ হতে না হতেই মাষ্টারমশাই ধমক দিয়ে বলেন,যা বলছি তাই শোন,তোমার ভূগোল পড়া কি তৈরি হয়েছে?লিখতে দিলে পারবে তো?গলু মাথা নাড়িয়ে বলে হ্যাঁ হয়েছে,লিখতে দিলে পারবো।ঠিক আছে তাহলে ভূগোল পরীক্ষা দাও তো দেখি কেমন তৈরি? পরীক্ষার কথায় গলু চমকে ওঠে।কারণ বিগত দিনে মাষ্টারমশাই যে পরীক্ষা গুলো নিয়েছিলেন তাতে গলুর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়ে মাষ্টারমশাইয়ের কাছে অনেক কঠিন কঠিন শাস্তি তাকে পেতে হয়েছে।তার উপর মায়ের হাতের চড়।তাই গলু প্রথম থেকে চেষ্টা করছিল মাষ্টারমশাই যাতে পরীক্ষা না নেন।সব চেষ্টা ব্যার্থ হলে গলু মাথাটা নীচু করে বলে, মাষ্টারমশাই, হাতের আঙ্গুলটা খুব ব্যথা,লিখতে পারছিনা,পড়াটা একটু ধরুন না?গলুর মতলব বুঝতে পেরে মাষ্টারমশাই জোরে ধমক দিয়ে বলেন... পুরুষ মানুষ হয়ে এতো ভয় কিসের?রাবণ সীতাকে হরণ করলে সীতাকে তাঁর সতীত্ব প্রমান করতে অগ্নি পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।আর তুমি? পুরুষ হয়েও পারবে না কেমন পড়া করেছ তার প্রমান করতে পরীক্ষা দিতে?নাও  কথা না বাড়িয়ে প্রশ্ন লেখ..

অগত্যা গলুকে পরীক্ষা দিতে হল। পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লিখতে লিখতে গলু ভাবছে সীতার অগ্নি পরীক্ষা আর আমার ভূগোল পরীক্ষার মধ্যে মিল কোথায়? মাষ্টারমশাই এমন বললেন কেন? এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতে পরীক্ষা শেষ করে মাষ্টারমশাইয়ের কাছে গলু খাতা জমা দেওয়ার সময় বলে..আচ্ছা মাষ্টারমশাই সেই পরীক্ষায় সীতা কতো নম্বর পেয়ে পাশ করেছিলেন? মাষ্টারমশাই একথার উত্তর না দিয়ে খাতা দেখতে শুরু করেন...

মাষ্টারমশাই খাতা দেখতে গিয়ে দেখেন..ভারতে বৃহত্তম রাজ্য চীন,ভারতের বৃহত্তম প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাজস্থান এমন সব প্রশ্নের উত্তর গলু  উল্টোপাল্টা লিখেছে।গলু অতি কষ্টে কুড়ির মধ্যে সাত পেয়েছে। সেই পুরানো শাস্তি, কান ধরে হাফ চেয়ার। কিছু বকাঝকা করে মাষ্টারমশাই অন্যত্র পড়াতে চলে গেলেন। মাষ্টারমশাই চলে যেতেই  পিঠে মায়ের হাতের প্রকান্ড চড়।মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। সেদিন রাতে গলু শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে সীতার অগ্নি পরীক্ষা আর ভূগোল পরীক্ষার মধ্যে মিল কোথায়...?

পরের দিন বিকাল থেকে আকাশে মেঘ। সন্ধ্যে বেলায় ঝড় বৃষ্টি আসলে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে ভেবে অতসী দেবী পড়ার ঘরে হ্যারিকেনটা ধরিয়ে জোর কম করে পড়ার টেবিলের পাশে রেখে দিয়েছে...

শীতের রাত বাইরে খুব ঠান্ডা।গলু খাটে বসে গায়ে চাদর জড়িয়ে শব্দ করে পড়ছে।এমন সময় মাষ্টারমশাই ঘরের  চেয়ারে বসে বললেন..কি গলু পড়ায় যে আজ খুব মন দিয়েছ?মা কি কাল একটু পিটিয়েছেন?গলু একটু মুচকি হেসে বললো..হ্যাঁ মাষ্টারমশাই, পরীক্ষা ভালো হয়নি বলে মেরেছে।এবার ভাবছি আর দুষ্টুমি না করে পড়ায় মন দেব...।তা বেশ বেশ, মন দিয়ে পড়..এই বলে মাষ্টারমশাই গলুকে পড়াগুলোয় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে বললেন।গুলো পড়ছে কিন্তু কোথায় যেন একটু অস্থির হচ্ছে।এমন সময় বিদ্যুত চলে যেতেই... ওরে বাবারে..আমাকে বাঁচাও.. বাঁচাও,বলে চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে মাষ্টারমশাই মেঝোতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলেন।চিৎকার শুনে  পাশের ঘরের সব ছুটে এসে দেখলেন মাষ্টারমশাই গলা চেপে ধরে গোঙাছেন,গলু খাটে বসে সেই দিকে তাকিয়ে বসে।বাড়ির সবাই এক স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে মাষ্টারমশাই?কি হয়েছে? উত্তর না পেয়ে গলুর বাবা নিমাই বাবু মাষ্টারমশাইকে তুলে ধরে বসিয়ে দেন।  ঘাড়ে মাথায় চোখে মুখে একটু জল দেন। হ্যারিকেনের আবছা আলোয় দেখলেন মাষ্টারমশাইয়ের গলায় একটা কালো মতো কি যেন পেঁচিয়ে!।অতসী দেবী হ্যারিকেনের আলোটা কাছে এনে দেখেন মাষ্টারমশাইয়ের গলায় পাকানো কালো দড়ি ঝুলছে,যেটা নিয়ে গলু সকালের‌ দিকে একবার ঘুরছিল।ছেলের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নীচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। এদিকে চোখে মুখের জল গায়ে পড়ে জামা কাপড় ভিজে যাওয়ায় ঠান্ডায় মাষ্টারমশাইকে কাঁপতে দেখে নিমাই বাবু একটা চাদর দিয়ে মাষ্টারমশাইকে গায়ে দিতে বলে ঘরের বাইরে চলে গেলেন...

গলু বিলক্ষণ জানে মাষ্টারমশাই বাড়ি থেকে যাওয়ার পর কপালে কি আছে। তবু সাহস মাষ্টারমশাইয়ের কানের কাছে মুখ রেখে গলু বলে,আপনার এতো ভয় কেন?দেখেন না, মা মনসার মাথায় কতো সাপ?তার তো কোন ভয় নেই।আর আপনি পুরুষ মানুষ হয়েও একটা দড়ির এতো ভয় পান?ভয়কে জয় করতে হবে মাষ্টারমশাই তাই আমি আজ পড়ায় মন দিয়েছি...

গলু সত্যি পড়াশুনায় মন দিয়েছিল কিনা সেটা গলুই জানে। কিন্তু এটা জানা গিয়েছিল যে,সে দিনের পর থেকে মাষ্টারমশাই আর গলুর বাড়ির ত্রিসীমানায় আসেননি।

অমিতাভ চক্রবর্তী

বৃষ্টি মুখর রাত
--------------------
অমিতাভ চক্রবর্তী
***************************


ক্রমশ রাত গভীর হচ্ছে আকাশ স্বচ্ছ না হলেও
মুষল ধারাপাত নেই - টিপ টিপ মাঝে মাঝে আবার  স্মিত এক চিলতে হাসির মত পরিবেশের ইষৎ উষ্ণতা আছে!
বিকেলের এক পশলা বৃষ্টির জল জমে
থৈ থৈ করে রেখেছে গাছের টব গুলো!
নিবিড় এই বৃষ্টির শব্দ বুকে অজানা
এক দুঃখ বীজ বপন করছে !
নিয়তির মতোই তুমিও বুকের তলায়
আসন পেতে বসে আছো!
আমার দিন রাত কেড়ে নিয়ে প্রায়
নিঃস্ব করে দিয়েছো!
এ শূন্য ঝুলি থেকে কি দিতে পারি আমি! কি দিতে পারি!
হাসির কানায় কানায় ভরা নয়নের জল?
কবিদের কি বয়স বাড়ে? না ফুরিয়ে যায়! 
এই বদলা রাতে সমস্ত ভালোলাগা আর
ভালোবাসার স্মৃতি এসে জড়ো হয়!
তোমায় খুব মনে পড়ছে!
জানি না কি চাই?
বহুদিন থেকে গভীর শিকড় গেড়ে একটা অলৌকিক সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে!
শারীরিক সান্নিধ্য ? জানি না!
তবে সান্নিধ্য চাই..
স্পর্শ -এসে ধরছে কেন হাত?
বিকেলে আজ বৃষ্টিতে ভিজলাম
প্রথম বর্ষণের আনন্দে !
পার্কে ছোকরাদের দল ও গড়াগড়ি
খাচ্ছিল ভেজা ঘাসে শুয়ে
একদম অন্য অনুভব!
একাই ভিজছিলাম ! কিন্ত সত্যি কি
একা ছিলাম?
তুমি ছিলে তো পাশে, তোমার হাত
ছুঁয়েছে আমার কণ্ঠ!
"সায়ন্তনের ক্লান্ত ফুলের গন্ধ হওয়ার পরে
অঙ্গ বিহীন আলিঙ্গনে সকল অঙ্গে ভরে "
আমার সমস্ত কিছুর মাঝে তুমি ফুলের
রেণুর মত মিশে থেকো কি করে!
তোমায় তেমন করে পেতে কি পারি না আমি?
সত্যি বলতে কি হয়তো তেমন করে
পেতে চাইও না তোমাকে!
কি জানি সশরীরে যদি তুমি কোনদিন আমার সামনে এসে দাঁড়াও কি করবো জানি না!
অমোঘ টানে বার বার ঘুরে ফিরে
তোমার কাছেই আসি!
তোমার ওই ছোট ছোট উৎকণ্ঠা,
দুশ্চিন্তা গুলো আমার পিঠে কেমন যেন
সোহাগী আদরের মত হাত বুলিয়ে যায়!
আমিও বাউলের একতারার তারে হাত বুলিয়ে বলি -
বাতাস সুগন্ধী হও, উষ্ণতা নিরাময় কর
সর্বোব্যাপী ভালোবাসার কার্পেটে ঢাকুক মেঝে!
তোমাকে আমি ফেরাতে পারি না কোন ভাবেই,
অমোঘ নিয়তির মত সুক্ষ বৈদ্যুতিক তারে
যেন জড়িয়ে আছো,
আর আমি বিনীত হয়ে আছি চন্দন বাতাসে,
অলৌকিক আলোর ফুলকি আর বুকে ছেঁকার দাগ নিয়ে  সব অনুভব অস্তিত্ব
কেড়ে নেয় মায়াবতী জাহাজ!
ছিন্ন পাতায় সাজাই তরণী তোমার
অনুভূতি নিয়ে একা একাই করি
খেলা সারাদিন রাত ...

স্বপন গায়েন

পিছু টান
---------------
স্বপন গায়েন
**********************


পিছুটান আছে বলেই মানুষ আজও বেঁচে আছে
কঠিন সময়কে বুকে জড়িয়ে আছে চিরকালের জন্যে
রোদ মাখা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘরে ফেরে সব্বাই।

পিছুটান আছে বলেই মানুষ মরতে গিয়েও মরতে পারে না
জীবনের লড়াইটা সঙ্গী করে বার বার ঘরে ফিরে আসে
জলপ্রপাতের শব্দে হৃদয় দুয়ার খুলে যায় পিছুটানের তাগিদে।

পরিবার বড়ই মায়াময় ভালোবাসার সংসার -
স্ত্রী সন্তান কিংবা আত্মীয়দের অমর বন্ধনেই বেঁচে থাকে মানুষ
ভালোবাসার মোহরকুঞ্জে আজও জীবনটা তাই অনেক রঙিন।

আষাঢ়ের মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে অবিরাম ধারায় ...
পিছুটানহীন মানুষ আজও খুঁজে বেড়ায় স্মৃতির পাতার কোলাজ
শৈশবের বারান্দায় উঁকি দেয় ফেলা আসা ধূসর রোদ্দুর।

পাখিদের কলতান শুনে ফিরে তাকায় তার মাটির বাড়ির দিকে
আজও ঝরে যাওয়া বকুলের গন্ধে ভরে ওঠে হৃদয়ের উদ্যান
পিছুটান আছে বলেই মাটির পৃথিবী এতো অপরূপ মায়াময়।

      *******

তুষার কান্তি হীরা

প্রতিবেশী
---------------
তুষার কান্তি হীরা
---------------------------


প্রতিবেশী বড়ো আপন
যদিও হয় পর,
বসত করি মিলে মিশে
পাশাপাশি ঘর।

অন্যের বিপদ নিজের বিপদ
মনে করি তাই,
উদ্ধার করতে মিলে সাথে
সবাই ছুটে যাই।

ঝগড়া-বিবাদ করি আবার
ভুলি সকল রাগ,
দুঃখ-খুশি সবটা করি
সমান সমান ভাগ।

পরামর্শ করে চলি
যেন আপন ভাই,
দুঃখসুখের মাঝে মোরা
খুশি আছি তাই।

জগৎ মাঝে হবো বড়ো
এটা সবার আশ,
সারা জীবন মিলে মিশে
করবো মোরা বাস।

সজল মন্ডল

বিকেল থেকে রাত্রি
—————————
সজল মন্ডল
——————

থমকে থমকে দাঁড়ায়
এক আলগোছা বাতাস
অনুভবে আনে গাছের পাতা
তার এলোচুলে দিয়ে গেলো দোলা
পেলাম আমি সামান্য আভাস৷

সে সব বিকেল বেলার কথা
নদীর ধারে হিজল গাছের ছায়ায়
কাঠঠোকরা ঠুক ঠুক কাঠ কাটে
শব্দ ছুঁয়ে বিকেল বেলার রোদ
কৃপণ নদী বালিতে জল মাখায়৷

তখন সূর্য ডুবু ডুবু ভাব
নিচের আকাশ রং মেখেছে লাল
পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া
শাঁখের শব্দে পাড়া মাতোয়ারা
কি কারনে তার লাল দুটি গাল!

থমকে গেছে হেঁটে যাওয়ার পথ
সন্ধ্যে নামলো ,পাড়া শুনশান
শব্দ ভাসায়  নদীর কলতান
জোনাকিরা আলো বিছায় পাতার ফাঁকে ফাঁকে
তাদের দেখে ঝিঁ ঝিঁরা  গায় গান৷

যত তারা হেমন্তের মাঠে
রাত্রি হলেই নিশি যাপনে আসে
ধানফুলেরা আমোদে ডগমগ
আমি দেখি তাদের দুচোখ ভরে
 তাদের নিঃশ্বাস জমে রাত্রির বাতাসে৷
———————————*——————

গৌতম তরফদার


ডুবসাঁতারে আমি
------------------------
গৌতম তরফদার
------------------------------



অন্তহীন ব্যস্ততার শেষে অল্পস্বল্প বিরতি 
দিনের গুজরান যেন কোনোমতে।
আধঘুমন্ত অনুভূতির খিড়কি খুলে দেখি
রয়েছি আমি ব্যস্ত মনের শূন্য পথে। 

নিজেকে ব্যতিব্যস্ত রাখি অর্থহীন কাজে
আপন শখ-আহ্লাদ সব নিখোঁজ।
তুমি-হীন পথের আনাচেকানাচে শূন্যতা 
মনের ব্যস্ত চলাচল রোজ রোজ। 

বর্ষণমুখর আষাঢ়ের ব্যস্ততা বুঝি আমি
ধরণীর অন্তরে শান্তির জল-সিঞ্চন।
ব্যথাতুর মনে কর্মব্যস্ততার অবুঝ প্রলেপ 
এড়াতে চেয়েছি দুর্ভাগ্যের ভ্রুকুঞ্চন। 

বিরহের ক্লান্তি আর মনোমালিন্যের ভ্রান্তি
আমাদের সম্পর্কের নেই মান্যতা। 
রাগ-অভিমানের কাটাছেঁড়ায় অশান্ত মন
তোমায়-আমায় ঘিরেছে শূন্যতা। 

মনের ব্যস্ততা শুধু তোমারই স্মৃতিচারণে
যন্ত্রণার ঝাপটায় ওঠে ঘেমে-নেয়ে।
উল্টো রথ সময়ে ফিরলেও আমি আছি
তোমারই প্রত্যাবর্তনের পথ চেয়ে। 

শূন্যতার মাঝে আমি ব্যর্থ প্রেমিকের সাজে
বুদ্ধুরামের ভাগ্য জানেন অন্তর্যামী। 
অপেক্ষার অনন্ত যাত্রায় উপেক্ষার আঁচড় 
হতাশার সাগরে ডুবসাঁতারে আমি।

কৃত্তিবাস

কল্পনায় চেনা
--------------------
কৃত্তিবাস ওঝা
-----------------------


নদীর বুকটা অন্ধকার
চোখের উঠানে অসংখ্য তারার মাঝে 
একটা শুকতারার ধ্রুপদী অবস্থান
অসীম আকাশের নিস্তব্ধতার কোলাহলে
সব অচেনার মাঝে একটাই চেনা,
পাথরের শুষ্কতা ভাঙে
জলের মৃদু শব্দ,-- ছলাৎ ছলাৎ।

ভাঙা কপালে কে যেন হাত বুলিয়ে দেয়
বিলি কাটে চুলে
নদীর ওপার থেকো 
জোনাকির টিপ টিপ আলো
কথা বলে ইশারায়,
কল্পনার মোনালিসা স্পর্শ চিৎকার
মাঝ দরিয়ায় নৌকা চালায়।

বন্ধ ঘরের ঝুল বারান্দায়
রঙিন পোষাক শুকায়
খালি পেটে বড় বড় হাই তোলে
রাত ঘুমের দিনেরবেলায়।
ঘ্রাণ বাঁশিতে প্রাণের খাতায়
হৃদ-হারমোনিয়ামে গান শোনায়।

মৃত্যুঞ্জয় সরকার

ইচ্ছে তো হয় 
-------------------
মৃত্যুঞ্জয় সরকার 
--------------------------


এ ভাবেই একদিন 
আমিও শেষ হয়ে যাবো 
পরে থাকবে আমার না বলা কিছু কথা 
তুচ্ছ স্মৃতি, যন্ত্রণা,ক্ষুব্ধ মনের প্রতিবাদী আগুন হল্কা। 

আমি ব্যর্থ হয়েছি বারবার 
তুমিও সহ্য করেছো তীব্র দহন 
ইস্তেহারে জং ধরে গেছে,তবু ক্যানভাস কথা বলে 
পুড়ে পুড়ে হয়ে গেছি ক্রান্তিবীর,কঠিন উপন্যাস। 

ঝর্ণা হতে চেয়ে হয়েছি খরস্রোতা নদী 
সুবিচার চেয়ে কলঙ্ক মেখেছি গায়ে, 
তবু হাল ছাড়িনি বুনে গেছি জীবনের বীজ 
ব্যথিত জীবনের ধূসর পাণ্ডুলিপি,দীপ্ত কলরব। 

আত্ম সুখে উপেক্ষিতা তুমি যুগিয়েছো প্রেরণা 
বিরহ  সয়েছো দিয়েছো তেজোদীপ্ত জীবন আমার,  
প্রিয়তমা, এ আমার অঙ্গীকার 
যেতে যেতে রেখে যাবো যুদ্ধ বিজয়ী প্রাণ। 

নতুন সূর্যকণা গড়ে দিবে মন 
দিবে নতুন সাম্যনীতি বিশুদ্ধ জীবন দর্শন, 
তুমি ও নবপত্র এঁকে জগৎ জননী হবে 
দিয়ে যাবে স্নেহ প্রেম প্রীতি নির্ভরতা অঙ্কুরিত প্রাণ।

শ্যামল মিশ্র

গ্রামছবি
--------------
শ্যামল কুমার মিশ্র
------------------------------


বাতায়ন পাশে বসে থাকে খোকন
সকালের নরম রোদ্দুর এসে কত ছবি আঁকে
দূরে শিমূলের পাতার ফাঁকে বসে থাকে ভোরের দোয়েল
শিস্ দিয়ে উড়ে যায় দূরে বহুদূরে...

খোকনের মনে পড়ে ছায়া ঘেরা সেই গ্রাম
ছাইয়ের গাদার পাশ দিয়ে এঁকে এঁকে চলে গেছে পথ
যে পথে গ্রামের মেয়েরা বিকেলে চাপাকলে জল আনতে যায়
রহিম চাচা লাঙ্গল কাঁধে চাষ দিয়ে ফেরে
আদুল গায়ের ছেলের দল মার্বেল পকেটে নিয়ে চলে খোলা মাঠে
কখনো ব্যাটে বলে জোর লড়াই পূব পাড়া পশ্চিম পাড়ার সাথে

সাঁঝবেলা হ্যারিকেন নিয়ে পড়তে চলে কোন এক বালক
দুরু দুরু বুক তার ভয়ে কেঁপে মরে 
অভয় বাণীর মতো ঝরে পড়ে রাণু পিসির কণ্ঠস্বর---'কে যায়? অংশুর পোলা? ভয় নাই খোকা। আমিতো আছি'?

খোকনের ভয় কাটে, ভেবে নেয় 
ঐ দূরে জেগে রয় দুটো চোখ... 
এগিয়ে চলে ঝিঁঝিঁ ডাকা পথে 
ঐ পথে জীবনের প্রথম প্রভাতে দেখা হয় তোমা সনে 
তারপর অনেকটা সময় কেটে গেছে 
পথটা সরে গেছে দূরে অনেক দূরে 
পথের কোন এক বাঁকে তুমি যেন কবে হারিয়ে গেলে...

অপরাহ্ণের শেষবেলায় আজ সব স্বপ্ন মনে হয় 
জলছবি গ্রামগুলো আজ হারিয়ে গেছে 
হারিয়ে গেছে রহিম চাচা রাণু পিসিরা 
বোষ্টমী পিসি আজ আর 'রাই জাগো বলে' সুর তোলে না 
তমিস্রার এক আঁধার আজ গ্রামের কোল জুড়ে  
প্রযুক্তির আলোয় হারিয়ে গেছে সেইসব গ্রামছবি ভালোবাসার অন্তহীন প্রবাহ...

বাতায়ন পাশে বসে ভেবে চলে খোকন 
ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ তোলা কলসি ভরা গরুর গাড়ি চলেছে ধীরে ধীরে 
খোকন দৌড়চ্ছে..অন্তহীন সে দৌড় 
ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে সব মুখ, সব ছবি 
ক্লান্ত অবসন্ন খোকন আজও খুঁজে ফেরে 
ছায়া ছায়া সেই গ্রাম, ফেলে আসা মায়ের কোল 
শৈশব কৈশোরের হারানো দিনগুলি... 
হারিয়ে যায় সময়ের অতলান্ত গভীরে...

Saturday, July 10, 2021

সন্ধ্যার মেঘমালা

সন্ধ্যার মেঘমালা


আমার দুঃখগুলো ঢেকে রেখো রাতের আকাশ
হাসিটাকে ছড়িয়ে দিও উদাসী বাতাস 
স্বপ্নগুলোর আঁকিবুকি  ,
হাজার তারার ঝিকিমিকি 
মনের ঘরে সিধ কেটে যাক সোনালী আভাস। 

দাঁড়িয়ে আছি আপন মনে রূদ্ধ ঘরের কোনে 
অলস সময়,  হতাশ জীবন  , উদাস , শূণ্য মনে  ।
যেদিকে তাকাই অসহায় মুখ ,
অজানা আশঙ্কায় দুরুদুরু বুক
এক আকাশ ভাবনা জাগে রাতের সঙ্গোপনে  ।

আমার গোপন কান্না যত বালিশ ভেজায় ,
নোনাজলের ঢেউ তুলে যায় শিরায় শিরায় 
হঠাৎ আসা ঘূর্ণিঝড়ে 
বুকের তটে ঝাপটা মারে 
এক পৃথিবী হাহাকারে  মনকে কাঁদায়  ।

কাঁদায়  -- শুধু কাঁদায়  , আমায় ব্যস্ত করে 
ওঠায় - নামায়,  হাসায় - কাঁদায়  , খেলা করে 
সম্মোহনী মায়ার বশে ,
জীবনজুড়ে রঙ্গে রসে
দোদুল দোলায়  , আপন ভেলায় মগ্ন করে  ।

জীবন যখন পূর্ণ আমার হতাশ্বাসে ,
কানায় কানায় পূর্ণ কলস  , নিয়তি হাসে 
এত বড় নিষ্ঠুরতা ,
শুধুই কালো  , মেদুরতা ,
দিন -রাতের বিবাদ আমার চোখে ভাসে। 

Friday, July 2, 2021

গৌতম তরফদার

নতুন অধ্যায় 
গৌতম তরফদার 

               বিভিন্ন অনলাইন সাহিত্য সংস্থায় লেখালেখির কারণে পাঠক মহলে বিপ্রতীপ তালুকদারের পরিচিতি অনেকটাই বেড়েছে। বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। বিপত্নীক।
বছর দুয়েক আগে পাহাড়ের কোলে বেড়াতে গিয়ে আকস্মিক হড়কা বানে স্ত্রী আর আট বছরের একমাত্র কন্যাকে হারিয়েছে। সেই থেকে বিপ্রতীপ পুরোপুরি একা। মা-বাবা কবেই গত হয়েছেন। দিদি তার আপন পরিবার নিয়ে আসামের গোয়ালপাড়ায় থাকে। বিপ্রতীপ অফিস আর লেখালেখির মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছে।
      
              ফেসবুকে প্রায় প্রতিদিন বেশকিছু ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। বিপ্রতীপের বন্ধু সংখ্যা বাড়ানোর তেমন আগ্রহই নেই। একদিন কেতকী মজুমদার নামের একজনের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। প্রোফাইল পিকচারে একটা ছোট্ট মেয়ের ছবি। বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। হুবহু যেন তার হারানো মেয়ের মুখ। স্মৃতির জোয়ারে ভেসে যায় বিপ্রতীপ। আর কিছু দেখতে পায় না প্রোফাইল লক থাকার কারণে। আনমনেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে নেয়। 

             বন্ধুত্ব শুরু। কেতকীর স্বামী রাজশেখর বছর কয়েক আগে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে। অভিশপ্ত জলন্ত কামরায় ওরা তিন জনই ছিল কাশ্মীর টুর থেকে ফেরার পথে। কেতকী তার মেয়ে পল্লবীকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও ভীষণ রকম জখম হয়। অবশেষে মা-বেটি সুস্থ হয় কিন্তু রাজশেখরকে বাঁচানো যায় নি। স্বামীর পেনশন আর ঘর ভাড়ায় টাকায় মা-বেটির সংসার চলে। 

              বিপ্রতীপের কবিতা আর গল্পের অসম্ভব ভক্ত। লাইন ধরে ধরে বলে দিতে পারে। নিজেও অল্পবিস্তর লেখালেখি করে। সেই সূত্রেই খোঁজ, যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব। ফেসবুক,  ম্যাসেঞ্জার আর হোয়াটস্অ্যাপে নীরব কথা আর অনুভূতির বিনিময়ে দ্রুত ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

             দু'জনেই কোলকাতার বাসিন্দা।  বিপ্রতীপ থাকে বেহালা আর কেতকী দমদমে। সম্পর্কের গভীরতা যত বাড়তে থাকে বিপ্রতীপ দেখা করার জন্য বারংবার অনুরোধ জানাতে থাকে। কিন্তু কেতকী প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। বলে," এভাবেই এগিয়ে চলুক আমাদের সম্পর্ক। দু'জনের জীবনেই চরম দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আজ আমরা পরস্পরকে মানসিক ভাবে পেয়েছি। সামনাসামনি দেখা আর আমার সান্নিধ্যের ছোঁয়া যদি তোমার অপছন্দ হয়, তখন ?  বাস্তবের জটিলতায় যদি আবার তোমাকে হারাই, সইতে পারবো না আমি।" 

           কিন্তু বিপ্রতীপ নাছোড়বান্দা। দেখা করার অভিলাষে মেয়ের দিব্বি দিয়ে বসে। দু'জনেকেই আসতে বলে। কেতকী কথা রাখে। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে মিলেনিয়াম পার্কে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বিপ্রতীপের সামনে দাঁড়ায়। চমকে ওঠে বিপ্রতীপ। কেতকীর ডান গাল জুড়ে বিচ্ছিরি পোড়া দাগ। চামড়া কুঁচকে আছে।
  
        --- "আমি তোমায় অনেকবার বলেছিলাম আমায় দেখতে চেয়ো না। অশরীরী সম্পর্ক থাক দুই হৃদয়ে।" 

        -- " দূর পাগলি! এই জন্যই তুমি এড়িয়ে যাচ্ছিলে? যে হৃদয় জয় করে, সে কি আটকে যাবে নশ্বর শরীরে! তোমাকে আর বেটিকে নিজের করে নিতে চাই।  তুমি রাজি তো ? "

অঞ্জন চক্রবর্তী

পিতৃদিবস
অঞ্জন চক্রবর্তী
============
      অতনু একটি মার্কেন্টাইল ফার্মের কর্ণধার, দম ফেলবার সময় নেই, আরও আরও ওপরে উঠতে হবে, সীমাহীন প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, নিজের কেরিয়ার ছাড়া কিছু বোঝে না l অতনুর বাবা তার সর্বস্ব নিয়োগ করে ছেলেকে মানুষ করেছেন l ছেলে আজ এক ঈর্ষণীয় জায়গায় পৌঁছেছে l নিজের সংসার করেছে, যেখানে বাবা বেমানান হওয়াতে বাবাকে অতনু রেখে এসেছে দামি বৃদ্ধাশ্রমে l বাবা আপনমনে ভাবেন ফেলে আসা দিনের কথা l পিতৃদিবসের দিন সকালবেলায় অতনু হন্তদন্ত হয়ে হাজির বৃদ্ধাশ্রমে, বাবাকে বললো শিগগিরই গেঞ্জি ছেড়ে ভাল পাঞ্জাবী পর একটা, বৃদ্ধ উদ্বেলিত, ভাবেন হয়তো ছেলের মনের হয়েছে বদল, আবার তাঁর জায়গা হবে সংসারে l বৃদ্ধ পাঞ্জাবী পরে এসে দাঁড়ালেন,  ছেলে বলল এসে আমার পাশে দাঁড়াও ঠিক এইভাবে, বৃদ্ধ দাঁড়ালেন, ছেলে নিজেকে বাবার গলা জড়িয়ে ফটো তুললো, বললো
     বাবা, আমার সময় নেই আসি, মনে মনে বললো এই ফটোটা পোস্ট করবো ফেসবুকে
    আজ পিতৃদিবসের দিনে, কমেন্টে ভেসে যাবে, কেউ জানবেও না, অতনুর বাবা পরে আছে বৃদ্ধাশ্রমে l

সঞ্জীব রায়

পুত্ৰং দেহি 
ডঃ সঞ্জীব রায় 


    তড়িঘড়ি করে মধ্যমগ্রামে চারমাথা মোড়ের দোতলা বাড়িটা জলের দরে বেচে দিলেন সঞ্জয় সেনের ছেলে অনুব্রত। হাতে সময় নেই, দশ দিনের ছুটিতে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আসা। কি দামে বিক্রি হলো সঞ্জয় বাবু সেটাও জানতে পারেননি। সঞ্জয় সেনের আপত্তি ছিল, কিন্তু গিন্নি শুনলে তো। নাতি হয়েছে, তাঁর ফুর্তি ধরে না যে। ছেলে পাসপোর্ট আগেই করে রেখেছিল। সঞ্জয়বাবু জানতেন যে আমেরিকার ভিসা করতে ন্যূনতম দুদিন সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু ছেলে বললো এখন সবই নাকি অনলাইনে হয়ে যায়। তালেবর ছেলের সঙ্গে কথা বলতে আর ইচ্ছা করেনি।

    বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে পাসপোর্ট পরীক্ষা হওয়ার সময় কেমন যেন সন্দেহ হল সঞ্জয়বাবুর। তিনি দেখলেন একপাশে গেটম্যানকে টেনে নিয়ে গিয়ে অনুব্রত তার হাতে একগাদা ৫০০ টাকার নোট গুঁজে দিল। বিমানবন্দরের ভেতরে গেলেন স্বামী-স্ত্রী। একটু উত্তেজনা হচ্ছে। দীর্ঘ বিমানযাত্রা বলে কথা। ঘন্টা কয়েক বাদে ছেলেই জানায় প্লেন লেট আছে। চিন্তার কিছু নেই। ও ভেতরে যাচ্ছে, কিছু কাগজপত্র দেখানো, সই-সাবুদ বাকি।

     মাঝরাত পার হয়ে প্রায় শেষ প্রহর। ঠান্ডা লাগছে। সোয়েটার চাদর গায়ে দিয়ে অভুক্ত রয়েছেন দুজনে। না পাচ্ছেন ছেলের দেখা, না পাচ্ছেন কোনো খবর। হাতে টাকা-পয়সা, পাসপোর্ট, টিকিট কিছুই নেই। এয়ারলাইন্সের এক ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করতে এগিয়ে এলেন। সব শুনে তিনি তো তাজ্জব। বললেন রাত ১টা ২০ মিনিটে ওয়াশিংটন যাওয়ার প্লেন উড়ে গেছে এবং ছেলে তাতে বোর্ডিং করেছে। এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল বৃদ্ধ দম্পতির পাঁজর থেকে।

    তারপরের দীর্ঘ টানাপোড়েন ইতিহাস। বর্তমানে তাঁদের ঠিকানা ঠাকুরপুকুরের এক বৃদ্ধাশ্রম 'অমলকান্তি'। সেখানে একতলার এক স্যাঁতস্যাঁতে ১০/১০ ঘরে ঠাঁই পেয়েছেন। বিনা পয়সায় আর কিই বা জুটবে? কোন অভিযোগ নেই। ঈশ্বর ধন্য, এটুকু দিয়েছেন।

   একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, সঞ্জয়বাবু পরে জানতে পেরেছিলেন বাড়িটা ৭৮ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।


শ্যামল মিশ্র

রোমন্থন
শ্যামল কুমার মিশ্র

    ঝুলবারান্দায় মুখোমুখি বসে শোভন আর রুমান্না। সকালের নরম রোদ্দুর এসে পড়েছে। বাতাসে অল্প অল্প শীতের আমেজ। সামনের বাগানে শিউলিগুলো ঝরে পড়েছে। সবুজ ডালের আড়ালে কাজল পাখি গান গেয়ে চলেছে। সকালের এই সময়টা বড় ভালো লাগে শোভনের। রুমান্না এসে আলতো করে মাফলারটা জড়িয়ে দিয়ে শুরু করে ফেলে আসা জীবনের নানা কথা। 

   দেখতে দেখতে শোভন আর রুমান্নার দাম্পত্য জীবনের সিলভার জুবলি পেরিয়ে গেছে। রুমা বলে ওঠে---''জীবনটা বড় তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেল তাই না? মনে পড়ে এই সেদিন যেন আমরা ঘর খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। মধ্যমগ্রাম বারাসাত এমনকি কলকাতাতেও অনেকে ঘর দিতে চায়নি। যখনই শুনেছে আমি 'রুমান্না খাতুন' তখনই দূরে সরে গেছে। তাদের 'গোপালে'র কথা মনে হয়েছে''। মৃদু হাসি খেলে যায় শোভনের মুখে। 'আসলে বড় অদ্ভুত এই দেশ।এদেশ বুদ্ধ, মুহাম্মদের দেশ। এদেশ শ্রীচৈতন্যের দেশ যার পরমভক্ত যবন হরিদাস। যিনি একজন মুসলমান। এঁরা তো সেই গোপালেরই ভক্ত। এটা খানিকটা সংস্কারের মতো মিশে রয়েছে। কার্যকারণ ব্যাখ্যা হয়তোএদের কাছেও নেই'।

   বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস নামে রুমার।  আপনমনে সকালের খবরের কাগজের পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা জায়গায় এসে থমকে যায় রুমা। দৃষ্টি আকর্ষণ করে শোভনের। অতিমারিতে মৃত এক হিন্দু যুবককে পোড়াতে নিয়ে চলেছে চার মুসলমান যুবক। প্রতিবেশীরা কেউই আসেনি। রুমান্নার চোখ দুটো জলে ভরে ওঠে।

    শোভন বলে চলে---'বুঝলে জীবনের  সার সত্যটা কেউই বুঝলো না।  মানুষই সত্য। ধর্ম,জাত সবই মিথ্যা। এগুলো শুধু জীবনের এক একটা আভরণ। দর্পীর অহং। আভরণ খুললেই দেখবে জীবনের শাশ্বত সত্য রূপ'।

    রুমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফেলে আসা জীবনের নানা ছবি। নতুন সংসারী দুই যুবক যুবতী ঘর খুঁজে ফেরে। জীবনতরী এগিয়ে চলে এমনি নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে। অবশেষে ঘর মেলে।সংসারেরও শুরু হয়।...

   তারপর অনেকটা সময় পেরিয়েছে। জীবনের অপরাহ্ণ বেলায় পৌঁছে মনে হয় শোভনের জীবনের সবটাই অসুন্দর নয়। গোলাপের সৌন্দর্য নিতে গেলে কাঁটার আঁচড় ও যে খেতে হয়। ততক্ষণে রুমান্না গান ধরেছে--- 'আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইল না কেহ'...। 
     গানটা কখন থেমে গেছে মুখোমুখি বসে দুই প্রৌঢ় দম্পতি। পাশে রাখা মুঠোফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে একমাত্র ছেলের নাম। ধীরে ধীরে হাতটা বাড়ায় রুমান্না... 

(শব্দ সংখ্যা:৩১২)

সুতপা ব্যানার্জি

আসমান জমিন
সুতপা ব‍্যানার্জী(রায়)
     ছটু সিং এক সওদাগরী অফিসে দ্বারোয়ানের কাজ করে। বাবা-মা আর নিজের পরিবার নিয়ে একটা খুপরি ভাড়ার বাসায় থাকে। ভাড়াটা একটু কম হবে বলে সবচেয়ে ওপরে চারতলায় ওদের বাস। সিঁড়ি ভেঙেই যাতায়াত। সেদিন অফিস থেকে ফিরে শুনল-"মায়ের শরীরটা গরমে আজ ভীষণ খারাপ হয়েছে।গরমি জ্বর এসে গেছে"-কথা কটা বলে বউ সরলা রান্না ঘরে লেবু জল আনতে গেল। ছেলে বাবুল-"বাবা দুপুরে গরমে ঘরে টেকা যাচ্ছে না, আমরা বাসা বদল করতে পারি না?" ছটু-"এত কম ভাড়ায় কোথায় ঘর পাব বেটা, গরম কমলে সব ঠিক হয়ে যাবে।" ছোট মেয়ে শামলি বাবার হাত ধরে বায়না করে-"তাহলে বাবা আনো না একটা কুলার কিনে, দাদিও আরাম পাবে আর আমরাও একটু ঠান্ডা পাব।" সরলা স্বামীকে লেবু জল দিতে এসে মেয়ের আবদার শুনে ঝাঁঝিয়ে ওঠে-" ভাত কী করে জুটবে জানা নেই আবার কুলারের হাওয়া খাচ্ছে, যা ভাগ,নিজের বই খুলে বস।" ছটু-"শামলি কথাটা খারাপ বলে নি, চার-পাঁচ হাজার টাকায় হয়েও যাবে, দেখি অফিসে সাহেবের থেকে লোন পেলে মাসে মাসে কাটিয়ে নেব।" বাবার কথায় বাবুল আর শামলি খুব খুশী হল।

    পরদিন অফিসে গিয়ে প্রথমে বড়বাবুর কাছে গেল-"রায় বাবু আমার চার-পাঁচহাজারটাকা লোন লাগবে,আপনি একটু সাহেবকে বলুন না।" বড়বাবু-"কেন? আমি বলব কেন? তুমি সাহেবকে নিজের কথা নিজে বল।" ছটু কাজটা জটিল হয়ে যাওয়ায় দোনামোনায় পড়ে গেল, তবে বাড়ির পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সাহস সঞ্চয় করে পায়ে পায়ে সাহেবের কেবিনের দরজায় দাঁড়াল। পর্দাটা কাঁপা হাতে সরিয়ে-"একবার ভেতরে আসব স‍্যার?" ফাইলের দিকে চোখ রেখেই অফিসের মালিক ঝুনঝুনওয়ালা-"কী বলবে, দের কিঁউ, জলদি বোলো।" ছটু-"আজ্ঞে স‍্যার বাড়ির প্রয়োজনে আমার পাঁচহাজার টাকা লাগবে। আপনি মাসে মাসে কেটে নেবেন।" ঝুনঝুনওয়ালা-"অফিসের এখন অবস্থা ভাল না, আভি নেহি।" ছটু কাচুমাচু হয়ে-"গরমে মায়ের শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে, একটা কুলার কিনতাম স‍্যার।" ঝুনঝুনওয়ালা হাসিতে ফেটে পড়ে
কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে-" সবলোগ শুনো.. আমাদের ছটুর কুলার কেনার জন‍্য টাকা লাগবে...হা হা হা।" আরো কয়েকজন সেই বিদ্রুপের হাসিতে যোগ দিল। ছটুর চোখ ফেটে জল আসছিল। তা সামলে নিজের কাজের জায়গায় গিয়ে বসল। চাকরি বলে কথা, অপমান গায়ে মাখলে তো হবে না। যদিও মনটা খুব খারাপ হয়ে থাকল। পরদিন অফিস ফেরত পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরছে। দেখল রাস্তার উল্টো দিকে একটা এসি মেসিন বিক্রির দোকানে অফিসের সাহেব দাঁড়িয়ে। ছোটা হাতি করে নতুন বাক্সে ওনার বাড়ির এসি চলল। সাহেব চলে যেতে ছটু দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করল-"যে এসিটা বিক্রী হল, ওটার দাম কত?" দোকানদার-"কেন আপনি কিনবেন,ষাট হাজার টাকা।" ছটুকে শুনিয়ে শুনিয়ে দোকানদার বলতে থাকে-" ওনার অনেক বড় ব‍্যবসা। ওনার সব ঘরেই এসি আছে। সবই আমাদের দোকান থেকে কেনা। শুধু পোষা কুকুরের ঘরের এসিটা খারাপ হওয়ায় নতুন একটা কিনে নিয়ে গেলেন।" ছটু দোকান থেকে বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকায় আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ডিউটির পর একটা শপিং মলে বা কোন পেট্রল পাম্পে কাজ করে হলেও নিজের পরিবারের কষ্ট দূর করবে, তার মায়ের কষ্ট দূর করবে। সাহেবের দাক্ষিণ‍্যে নয়, নিজের নগদ টাকায় এই গরমেই কুলার কিনবে।

উমা মুখার্জি


ডাক্তার বাবু
 উমা মুখার্জী

       অনেকদিন আগের ঘটনা। আমার ঠাকুরদাদা ছিলেন ডাক্তার। খুবই সৎ ও দয়ালু ছিলেন। যত দুর্যোগ আর যত রাত - ই হোক, রুগীর বাড়ি থেকে ফোন এলে তিঁনি তৎক্ষণাৎ বেড়িয়ে পড়তেন, রুগী দেখার উদ্দেশ্যে।

      সেদিন ছিলো শ্রাবন মাসের সন্ধ্যা। অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঠাকুরদাদা ভাবলেন, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বেন। শুয়েও পড়েছিলেন। হঠাৎ, দরজার কড়া নাড়ার শব্দ। রাত্রি তখন বারোটা। বৃষ্টি হয়েই চলেছে। একটি লোক সঙ্গে ছাতা, আঁধারে মুখ দেখা যাচ্ছেনা, বলে ডাক্তার বাবু আপনি আসুন, নাহলে বাবু বাঁচবেনা।

      কথায় জানতে পারলেন, শহর থেকে একটু দূরে যেতে হবে। দেরী না করে, লোকটিকে নিয়ে গাড়ি করে চললেন রুগী দেখতে। এতো জল গাড়ি অনেকটা এসে আর স্টার্ট নিচ্ছেনা। লোকটি বলে, চিন্তা করবেন না, ছাতা এনেছি, চলুন, অল্প হাঁটা পথ। অগত্যা, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, লোক টি ছাতা ধরে নিয়ে যাচ্ছে, টর্চ জ্বেলে কিছু বোঝাও যাচ্ছেনা। বিদ্যুতের আলোয় শুধু একবার লোকটির মুখ দেখা গেলো, চোখ দুটি কোটরাগত, গালে মাংস বলে কিছু নেই।

      অল্প হাঁটার পর এলো রুগীর বাড়ি, আগেকার দিনের দোতালা বাড়ি। লোকটি গেট ঠেলে বললো আপনি সোজা চলে যান, প্রদীপ জ্বলছে ঐ ঘরে রুগী, বলেই অদৃশ্য।

     ঠাকুরদাদা এগিয়ে গিয়ে দেখেন খাটে মুখ চাপা দিয়ে একজন শুয়ে, শুধু একটা কোথা থেকে চেয়ার এগিয়ে এলো। রুগীর গলা খনখনে, বলে বসুন আপনি, আগে আমার কথা সব শুনুন, তারপর আমায় দেখবেন।

     কোণের দিকে দেখুন লাল বাক্স, ওতে আমার উইল আছে। আমার আর বাঁচা হবেনা। সময় হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলের ঠিকানা ওতে আছে, ত্যাজ্য পুত্র করেছিলাম। ওটা তাকে পৌঁছে দেবেন শুধু এই অনুরোধ টুকু রাখুন।

     এর পর মুখের চাপা গেল খুলে, আর অন্ধকারে ঠাকুরদার হাত তার হাতে ধরা বরফ শীতল এক কঙ্কাল শুয়ে বিছানায়।

    এক লাফে দৌড়ে ঠাকুরদা গাড়ির কাছে আসেন যখন, গাড়ি নিজেই ঠিক হয়ে গেছে, ঝড়, জল থেমে গেছে। বাড়ি পৌঁছে ভাবছেন কি করে হয়।

     সকাল হতেই আবার যান। দেখেন লাল রঙের বাড়ি, তালা দেওয়া। স্থানীয় লোকেরা আসে ভিড় করে, জানায় ছয় মাস হলো উনি মারা গেছেন।
তালা ভেঙে দেখা গেলো খাট নেই, চেয়ার নেই, তবে ঘরে একটা লাল বাক্স আছে কোণের দিকে, আর তার ভেতরে দলিল ও ছেলের ঠিকানা আর চিঠি।

   ঠাকুরদা সেটি নেন ও লোক মারফত নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন।

   শেষ দিন অবধি এই রহস্যের কিনারা তিঁনি করে উঠতে পারেননি। ভুত কি তবে সত্যি আছে?

সমাপ্ত।।

Tuesday, June 22, 2021

জামাই ষষ্ঠী

জামাই ষষ্ঠী 
----------------
ধীরেন গোস্বামী 
--------------------
মনটা পড়ে আছে শ্বশুর ঘরে
গিন্নি গেছে বাপের বাড়ি,
শ্বশুর বাড়ি যাবে হারাধন
মিষ্টি নিয়েছে এক হাঁড়ি।

বিছানায় শুয়ে ঘুম ধরে না
রেখে ঘড়িতে দৃষ্টি,
কতক্ষণে যে সকাল হবে
কাল জামাই ষষ্ঠী।

গিন্নি বলেছে ছুটি করিয়ে
আসবে শশুর ঘরে, 
সবাই মিলে বেড়াতে যাবো
বাঁকুড়া মুকুটমণিপুরে।

সকালে কাজ গুছিয়ে জামাই
নিয়ে মিষ্টির হাঁড়ি,
স্টেশনে এসে চাপলো ট্রেনে
যাবে শ্বশুর বাড়ি।

জামাই ষষ্ঠীতে শ্বশুর বাড়ি
পৌঁছে গেলো হারাধন,
শাশুড়ি মায়ের খুব আনন্দ 
বিরাট খুশি মন।

জামাইষষ্ঠীর ধুম

জামাইষষ্ঠীর ধুম
------------------------
 তপন কুমার পাল
 -------------------------
 জামাইষষ্ঠী মধুমাসে
 আবেগ ভরা পরব,
 ইহা নিয়ে বাঙ্গালীদের
 আছে অনেক গরব।

 নতুন জামাই আসবে বলে
 খুশির জোয়ার ঘরে,
 জামাইষষ্ঠীর আজকে যেনো
 আনন্দ না ধরে।

 ছোটো বড়ো সবাই মিলে
 আনন্দে যায় ভেসে,
 অবশেষে জামাই এলো
 খানিক মিষ্টি হেসে।

 শাশুড়ির মান রাখতে জামাই
 আনলো নতুন শাড়ি,
 শাড়ি পেয়ে শাশুড়ি মা
 হলেন খুশি ভারী।

 জামাই মেয়ে সবাই মিলে
 হবে ভারী মজা,
 জামাই তরে শাশুড়ি মা 
 বানায় মিষ্টি গজা।

জামাইষষ্ঠী


জামাই ষষ্ঠী
--------------
রঞ্জন ঘোষ
------------------
বৈশাখ গেলো জ্যৈষ্ঠ এলো 
জামাইরা সব মনমরা,
তাদের মনে দুঃখ এবার
শ্বশুরবাড়ির যাবার নেই তাড়া।

খরচা অনেক বাঁচবে এবার 
সব শ্বশুর মশাই দের,
করবেনা কেউ জামাই ষষ্ঠী‌
এবার জামাই বাবাদের।

ঘরে বসে থাকবে সবাই 
বাইরে যাওয়া মানা,
চুপচাপ সব থাকবে ঘরে 
শুনবে বসে ঘরে গানা।

বছরটা কি নীরস যাবে 
ভাবছে জামাই বাবা,
ভেবে ভেবে বুদ্ধি একটা
 মাথায় দিলো থাবা।

শ্বশুর মশাই অনলাইনে 
যদি খাবার অর্ডার দেন,
ঘরে বসে জামাই বাবা 
জামাইষষ্ঠী করে পালন।

খুকির জামাই


খুকির জামাই
--------------------
দীপক কুমার সিংহ
--------------------------
খুকির বড় আদরের জামাই
ষষ্টির দিনে নেই কামায় |
সকালে যত বাজারের বালায়
মাছ-মাংস,আম-কাঁঠালে তায় ||

শালা-শালীদের খুশীর অন্ত নাই
নতুন জামা শাড়ি চাই |
জামায়ের হাতে মিষ্টির বড় হাঁড়ি
শ্বশুর ঘরে খুশীর ছড়াছড়ি ||

খুকির জামাই মন্দ নয়
দিদিমা-স্বাশুড়ি সুমতির খুশীর অন্ত নাই |
নাতনি তার যতই করে মুখ
এক ধমকে করে তাকে চুপ ||

খুকির জামাই মুখে বাক্য নায়
পছন্দের তালিকায় সেরা তায় |
দাদু-শ্বশুর রঘুনাথের প্ৰিয় ভাই
বকর-বকর দুজনে করা চাই ||

মদন-খুকির আদরের বড় জামাই
খাওয়া-পরায় কোনো বাছ-বিচার নাই |
সাধারণের অতি সাধারণ মানুষ
ওড়ে না কখনো হয়ে ফানুস ||

জামাই ষষ্ঠী


জামাই ষষ্টী
-------------------
সঞ্জিত দিন্দা
--------------------
নতুন জামাই ষষ্ঠী খেতে
যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি,
আম কাঁঠালে ভর্তি গাড়ি  
হাতে মিষ্টির হাঁড়ি।

বেনারসি---ঢাকাই শাড়ি
নিয়েছে সে সাথে,
সম্মান স্বরূপ তুলে দেবে
ছয় শাশুড়ির হাতে।

তার ওপরে শালা শালী 
আছে দশটা নাকি,
মন যোগাতে জামাইবাবু
দেয় না কারো ফাঁকি।

হিন্দি ছবি--দেখার জন‍্য
বায়না ধরলে তারা,
জামাই হবে 'বলির পাঁঠা'
করবে খরচ সারা।

বড়ো বাড়ি করলে বিয়ে
থাকে শতেক জ্বালা,
জামাই শুনে আঁতকে ওঠে
পড়লে ষষ্টীর পালা।

জামাই এলো

জামাই এলো
-----------------
স্বপন দেবনাথ 
--------------------
শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে জামাই
মিষ্টির প্যাকেট ভরে, 
বৃষ্টি ভেজা গ্রামের পথে
বউকে সঙ্গে করে। 

গাঁয়ের পথটি বিরক্তিকর
কাদা এবং জলে, 
টোটো অটো যায় না বলে
জামাই হেঁটে চলে। 

ধুতি তোলে হাঁটুর উপর
ভরল তবু কাদা, 
শ্বশুর বাড়ির কাছে যেতেই
এলো বউয়ের দাদা। 

শ্বশুর বাড়ি ঢুকেই জামাই
হাঁফছেড়ে যে বাঁচে, 
দিদিকে আজ পেয়ে বোনটি
আনন্দেতে নাচে। 

আদরের জামাই কষ্ট করে
এলো শ্বশুর বাড়ি, 
শাশুড়ি মা আদর যত্নে
খাওয়ান তাড়াতাড়ি।

জামাই আদর

জামাই আদর
--------------------
পঙ্কজ প্রামাণিক 
***************
মজা করে হচ্ছে খাওয়া   জামাই ষষ্ঠীর ভোজ
শালী শ্বাশুড়ি  আছেন বসে   নেই শেলেজের  খোঁজ।

মন্ডা  মিঠাই      দই মিষ্টি          আরো কতো কি,
গরম ভাতে  দেয় শ্বাশুড়ি  পুরোনো গাওয়া ঘি।

আম জাম আর  কলা কাঁঠাল   সাথে মিষ্টি লিচু,
মনের সুখে খাচ্ছে জামাই  চায়না ফিরে পিছু।

চিংড়ি পোনার  সাথে আছে মাংস কচি পাঁঠার,
শ্বশুর বলে ভালোই হোলো পকেট খালি আমার।

গোগ্রাসে তে   খাচ্ছে জামাই  লাগছে ভীষণ গরম,
করছে বাতাস  শ্বাশুড়ী মা নেইকো লাজ আর শরম।

মনের সুখে  খেতে খেতে  হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি,
নানারকম  পদের রান্না  যায়না ছাড়া জানি।

   খাচ্ছে জামাই  এদিক ওদিক  আড় চোখেতে চায়,
এদিক-ওদিক   শুধুই দেখে বউ তো কোথাও নাই।

লাজুক ভারী   বউটা তারি মিষ্টি হাসি মুখে,
ঘোমটা পরা  গ্রামের মেয়ে   কাজল  টানা চোখে।

খেয়ে দেয়ে জামাইবাবুর পেট ফুলে জয় ঢাঁক,
যাহোক করে মুখ হাত ধুয়ে হলো চিত পটাৎ।

পাশের ঘরে  ছিলো যে বউ শুনে ছুটে আসে,
অতি লোভে তাঁতি নষ্ট এবার বুঝেছে সে।।

                       

Sunday, June 6, 2021

চলবো প্রকৃতির পথে

চলবো প্রকৄতির পথে
সঞ্জয় বৈরাগ্য

আলো ছিল হাওয়া ছিল, ছিল অঝোর ধারায় বৄষ্টি
মাটি ছিল বীজ ছিল, হল অপত্য প্রাণ সৄষ্টি।
অরণ্যানী ও সবুজত্ব ছিল, ছিল নির্ভয়তা অতি
ছিল শান্ত নদী, নীল আকাশ আর সুন্দর এক প্রকৄতি।
এবার, অনন্য এ ধরণীতে এল মানব জাতি, এল প্রাণ শত শত
নিয়ে সাথে যত আবিলতা ও জটিলতা, পৄথ্বীকে করলো পদানত।
এলো যন্ত্র, কারখানা-কল, হল যান্ত্রিকতার জয়
নিয়ে এলো ধ্বংস, আধুনিক কংস --- শুরু হল পরিবেশের ক্ষয়।
সইল না আর পৄথিবী, এল দুঃসময়
বিবর্ণ হল আকাশ, কুঞ্চিত ফুল, হল বন্ধ পাখির কলরব
তবে এখনও আছে সময়, হবে মানবজাতির জয়।
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে নিই শপথ, 'চলবো প্রকৄতির পথে'
দূষণ-দৈত্যের কবল থেকে বাঁচিয়ে পৄথিবীকে, একদিন ওড়াবো ঠিকই বিজয় নিশান, জীবনেরই রথে।



সবুজের কথা

  সবুজের কথা....
শুভ্রাংশু কুম্ভকার

ঘন ছায়া চেয়েছি, সাথে প্রাণবায়ু
সবুজের ছোঁয়া আর চোখের আরাম,
বেহিসেবি পাওনাটা দাবি থেকে বেশি
কষে কভু দেখিইনি কতোখানি দাম।

অঙ্কুর ছিল যবে মাটিতে লুকায়ে
সোহাগের সোনা জল দিইনি তো ঢেলে,
ভেদ করে বেঁচে থাকা কি কঠিন কাজ
মেলেছি আপন চোখ সব বাধা ঠেলে।

মাটির আদর আর শিকড়ের জোরে
রস শুষে বেঁচে আছি আজও কোনোমতে,
শীর্ণ দেহের শাখা দোলায় বাতাসে,
সূর্যের তেজ ঢাকি সবুজ পাতাতে।

মনোবলে বেড়ে চলা মহীরুহ পানে
খনিজের ঘাটতিতে কঠিন সংগ্ৰাম,
জীবজাত সারে মেটে ক্ষুধার আগুন
কীটনাশকের বিষ বাড়ায় ব‍্যারাম।

কালো ধোঁয়া কংক্রিট দূষণের বিষ,
সবুজের পরিধিও ক্রমে সংকুচিত,
নিঃশ্বাসে বিশ্বাস নেই বিশুদ্ধতার
অক্সিজেন ঘনত্ব কমে ক্রমাগত।

নীলকণ্ঠ সম শুষি দূষণের বিষ
বিশুদ্ধ করেছি বায়ু আবহমানকাল,
সুখে দুঃখে সাথী,শীতল সমীরণ
দখিনা মলয় করি এ মন মাতাল।

ঘরে বাইরে ছাদে বাগানে পথের ধারে
একটু যত্নে সহজেই বেড়ে উঠি,
যেটুকু দাও তার শতগুণ ফিরিয়ে দিই
হিসাব বাকীর সাক্ষী থাকে মাটি।

বৃক্ষরোপন

বৃক্ষরোপন 
নৃসিংহ মজুমদার 

মানবতার চারা পুঁতি ভাই অমানবিকতার ভাগাড় খুঁড়ে ,
চিল শকুনরা আসবে যাবে কুকুর শেয়ালও বেড়াবে ঘুরে ।

সত্যের জল সেচ দিয়েছি ন্যায় নীতির সূর্য তারায় 
সকাল দূপুর সন্ধ্যা রাতে পাবে বলে আলোক ঝর্নায় ।

পাখির গানে জেগে ওঠে দেখবে তারে শিশির সাজায় ,
রোদ ঝড় জলে সারাদিনটা খেলবে সে তো মেঘের ছায়ায় ।

সন্ধ্যা তারে সাজিয়ে দিলে ধ্রুবতারা সুখের গল্প শোনাবে 
চাঁদ পরীরা স্বপ্ন ভেলায় তারার দেশে তারে ঘোরাবে  । 

মেলবে পাতা মেলবে শাখা ভাগাড় গন্ধে দেবে সে ঢাকা ,
চিল শকুন যত লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে দিতে চাক তারে মাটি চাপা ।

সারাদিন রাত বুকে আগলে রেখেছি তারে হয়ে পাহারাদার ,
দুচোখে স্বপ্ন ফুল ফল দিয়ে সাজিয়ে তুলবে নোংরা ভাগাড় ।

প্রাণ ভরে শ্বাস নেবে সবাই পেট ভরে খাবে ফুল ফল পাতা ,
ঝড় বাদলে সুখের ঘরে নিশ্চিন্তে পাতবে স্বপ্নের কাঁথা ।

নিজেকে উজাড় করে

নিজেকে উজাড় করে 
কৃত্তিবাস ওঝা 

বেহিসাবী নাগরিক সভ্যতার আগুনে 
প্রকৃতি পরিবেশ নিদ্রাহীন দাবানলে 
টিকটিক করে নিয়মিত জ্বলে 
অরণ্য জীবনের সবুজ 
অনুচ্চারিত শব্দের নীরব কান্না
স্পর্শ করে না কারোর চোখে কানে ।

পর্যটক-মন কখনও হিসাব করে না 
সবুজের আঁচল চাপা অক্সিজেনের মূল্যমান 
লাল চোখের পাতা ছেঁড়া ভালোবাসা
বিনোদন, আর আরও মুনাফার নেশায় 
ভালোবাসার করে অপমান ।

প্রতিটি ঝড়ঝঞ্জায় বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় 
মন ভাঙ্গা দিনেরাতে নিজেকে উজাড় করে 
রক্ত ঝরা আঘাত সহ্য করে 
সাজিয়ে গুছিয়ে দেয় সমাজ সংসার,
তারই উপর আমরা চালাই নক্কাজনক বলৎকার ।

আমরা আমাদের কৃতকর্মের ফলভোগ 
করি আজ, -- হচ্ছি অতিমারীর শিকার 
উঠছে আত্মহত্যার হাহাকার ।

পরিবেশ আজ সংকটে


পরিবেশ আজ সংকটে
পবিত্র প্রসাদ গুহ


পরিবেশের কলিজায় আজ ঘুন ধরেছে,
চিত্তে অশান্তির ঝড়
থমথমে মনে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় বিতৃষ্ণার হাতছানি।

অপ্রস্ফুটিত ফুলের প্রাণ ধূকছে -
অকালেই ঝরে পড়ে তারা,
সৌরভহীন দেহে মিশে যায় মাটিতে!
কেই রাখে না মনে ওদের।

চারিদিকে বিষক্রিয়া আর কালো কালো ধোঁয়া -
কল কারখানার উঁচু পাইপটা দিয়ে,
গনগনে আচের দৈত্যাকার কোঁকড়ানো ধোঁয়া,
চুম্বন খায় নীল নীলিমা লেপা আকাশটাকে,
মুহূর্তেই তাকে করে দেয় কালিমালিপ্ত।
পাখিগুলি দম বন্ধ হয়ে অচেতন,
গাছেদের কিশলয়ের শ্বাসরোধ হয়ে আসে।

অট্টালিকার কামড়ে কচি দুর্বাঘাসের জীবাশ্ম দশা!
ইঁট, বালি, পাথর গ্রাস করে জংলী লতাপাতাকে,
গলার টুটি চেপে ধরে কলমীলতার।

জলে খাবি খায় চঞ্চল মীন রাশি -
আতঙ্কে থাকে সর্বদা 
এই বুঝি জলে মিশবে কারখানার বর্জ্য,
প্রাণঘাতী আবর্জনা কেড়ে নেয় নিরীহ অবলা প্রাণীর জীবন।

চাই না আর প্রাণঘাতী নগরোন্নয়ন,
চাই না বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ,
চাই না বাঁচতে এই অট্টালিকার আতিশয্যে।
দাও ফিরিয়ে সবুজের সমারোহ,
দাও ফিরিয়ে কুসুমের সৌরভ।

পাখির কলতানে মুখরিত হোক ধরণী,
একবুক শ্বাস নিতে দাও হে আবার-
দাও ফিরায়ে বন বনানী, লহ এ নগর জীবন।

Tuesday, May 18, 2021



মে দিবস 
----------------------- 
   সুভাষচন্দ্র ঘোষ
      ------------------------------------------------


     ফুটপাতের পলিথিন ছাউনি ঢাকা হোটেলে বিনা বেতনে চাকরি,
     শুধু দুমুঠো পেট ভরে  দুবেলা ডাল- ভাত খেতে পাওয়া জরুরি ।     
     দশ বছরের ছেঁড়া হাফপ্যান্ট, বেঢপ গেঞ্জি পরা ছেলে ফেলনা,
     সেই ভোর চারটা থেকে দিন শুরু ,বাসনপত্র থালায় তার খেলনা।
     গত রাতের যত এঁটো কালি লাগা হাঁড়ি কড়াই রাশি রাশি মাজা,
     মালিক আসার আগেই করতে হবে পরিষ্কার ঝকঝকে তাজা।
     ধুতে হবে শুভ লাভ গনেশের পাট,ফেলতে হবে বাসি ফুল শুকনা,
     পরিচ্ছন্ন দেবতার পায়ে মালিক এসে দেবে তাজা ফুল ধূপধূনা ।
     মালিকের পরে আসবে  নোংরা মোটা পৈতে পরা ঠাকুর রান্নার,
     রাশি রাশি সব্জী কাটা ধোয়ার পরে তার সময় থাকে না কান্নার।
     আজ আর মনে পড়েনা কীভাবে এসেছিল ইঁটের জঙ্গল শহরে,
     খিদের জ্বালায় মা-বাপ মরা নিঃসহায় ছেলে রাস্তায় মরে ঘুরে।
     হোটেলের সামনে ফ্যালফ্যাল করে দেখছিল ঝুড়িভর্তি খাবার,
     মালিক ডেকে বলেছিল--থাকবি এখানে ,নাম করবি না যাবার।
     সেই থেকেই এই ছোট্ট হোটেলই বাড়ি, এখানেই দিন গুজরান,
     "মে দিবস"আজো তাকে দেয়নি গরীবের হাড়ভাঙা শ্রম-সম্মান।
     ইঁটভাটা চায়ের দোকানে তার মতো আছে কত হাজার ফেলনা,
     ফুটপাতে বাজার ভরা পোড়া দেশে তাদের হিসাব কেউ রাখেনা।
     "মে দিবস" --গোটা দুনিয়ার খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের দিন,
     শহীদ বেদীর মালা,লাল পতাকা কবে আনবে ফেলনাদের সুদিন?

                       ********************
    
মে দিবসের শ্রদ্ধার্ঘ্য
------------------------- 
নির্মলেন্দু মাইতি
-------------------------------------


ভোগ সর্বস্ব পুঁজিবাদ  পৃথিবী হতে হোক নিপাত
             শ্রমিকের মর্যাদা দানে
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে
শ্রমিক কর্মচারী মাতেন শহীদ স্মরণে।

কাঠ ফাটা রোদ্দুরে  কৃষকেরা কাজ করে
         করে পৃথিবীর অন্নের সংস্থান
ঘর্ঘর ঘোরে চাকা     লাভের যতেক টাকা
        মালিকেরা লুটে গরীবের ধন।

হাতুড়ি কাস্তের গান      শ্রমিকের সম্মান
    শ্রমিকেরা নয়কো কেনা গোলাম
 শহীদদের জীবন দান   পৃথিবীতে চির অম্লান
   মে দিবসের জানাই তাঁদের সেলাম।

আট ঘন্টা কাজের দাবীতে   মে দিবস পালিত হয় পৃথিবীতে
 শ্রমিকের স্বীকৃত কাজের খতিয়ান
ক'জনইবা রাখে খোঁজ   কত শ্রমিকের প্রাণ যায় রোজ
           ক'জন করি ওদের সম্মান।

মেহনতী মানুষের স্বার্থে   সমাজের হিতার্থে
           সংস্থান হোক কর্মের
কাজ চাই মানুষের    উন্নয়ন হোক দেশের
          বন্ধহোক শ্রেণী স্বার্থের ।

নারী পুরুষের সমান মজুরী   বৈষম্য দূর হওয়া জরুরি
    জাগো আধুনিক সভ্য সমাজ
সকলের কাজ হোক  বেকারত্ব দূর হোক
   শপথে অঙ্গীকার করি আজ।

***************************

পয়লা মে
--------------
কৃত্তিবাস ওঝা 
-------------------------------


মাথা আর গতর খাটানো মানুষগুলো 
পায়নি কিছু,  বিনা সংগ্রামে ।
মে দিবস , করোর দয়ার দান নয় 
শ্রমজীবী মানুষের নায্য অধিকার
                               প্রতিষ্ঠার ইতিহাস 
যা লেখা আছে রক্ত আর মৃত্যুর বিনিময়ে ।

অষ্টাদশ শতক থেকে শ্রমিকদের খাটতে হতো 
ষোল আঠারো ঘন্টা 
কথা বলার সময় মিলত না পরিবারের সঙ্গে 
সন্তান চিনত না বাবাকে, --
এমন একটা সময়ে,  উনিশ শতকের প্রথমে 
আট ঘন্টা কাজের দাবীতে 
আমেরিকার শ্রমিকরা নেমে ছিল আন্দোলনে, 
ছড়িয়ে পড়েছিল ধীরে ধীরে তা ' সারা বিশ্বে
আঠারো শ' ছিয়াশি সালের পয়লা মে 
আমেরিকার শিকাগোতে 
শ্রমিকরা নেমেছিল লাগাতার ধর্মঘটে - -
সরকারের পুলিশ,  মালিকের গুণ্ডাবাহিনী 
চালিয়েছিল বেপরোয়া লাঠি,  গুলি 
সাজানো মামলায় করেছে গ্রেফতার 
দিয়েছে ফাঁসি,  কেড়ে নিয়েছে প্রাণ 
রক্তে ভেসেছে হে মার্কেট স্কোয়ার।

দেশে দেশে ছড়িয়েছে 
আট ঘন্টা কাজের দাবী 
সংগ্রাম হয়েছে দুর্বার ।

আঠারো বাষট্টি সালের এপ্রিল- মেতে 
আট ঘন্টা কাজের দাবীতে 
হাওড়া স্টেশনে 
রেল শ্রমিকরা নেমেছিল ধর্মঘটে 
এও ইতিহাস ।

আঠার শ' নব্বুই থেকে 
পয়লা মে 
শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামের প্রতি 
সমর্থন আর শপথের অভিমুখে 
পালিত হয় মে দিবস,  বিশ্বের দেশে দেশে ।

আট ঘন্টা কাজ,  আট ঘন্টা বিশ্রাম 
আট ঘন্টা বিনোদন, --
সংগ্রাম আর শহীদের রক্তের বিনিময়ে 
পাওয়া এ অধিকার 
আক্রান্ত এখন আবার, 
তাই সময়ের আহ্বান, - অধিকার রক্ষার 
সংগ্রামের শপথ নেবার ।

***********************

 মে দিবস
----------------
 শ্যামল খাঁ
~~~~~~~~~~~~~~~~~


পয়লা মে র প্রখর রোদে
ষাট বছরের বৃদ্ধ আজও টোটোর চাকায়
তার জীবনের গতি বেঁধে রাখে  |

সিমেন্ট আর বালি মাখানো মশলার কড়াই
মাথায় নিয়ে আমিনা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে
বার বার মনে করে,
ঘরে বসে থাকা পাঁচ বছরের ছেলের ক্ষুধাতুর মুখ  |

লাল লোহাকে পিটিয়ে নির্দিষ্ট আকার দিতে দিতে
কামারের শক্ত পেশী চায় শোষণের পালাবদল  |
ইচ্ছে করে লোহা থেকে গরম লাল তুলে
শোষকের গালে আবির মাখিয়ে দিতে  |

" দুনিয়ার মজদুর এক হও " ডাক দিয়ে
মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে পাটকলের শ্রমিকেরা
নিংড়ে নেওয়া শ্রমের ন্যায্য বিনিময় দাবী করে |

পুঁজিবাদের কাছে ন্যায্য দাবী করা অন্যায় |
নতশিরে গোলামীর স্লোগান ভালোবাসে তারা,
ক্ষুধার রাজ্য বিস্তৃত হলে
পোড়া রুটির মূল্য জোর করে কেড়ে নেয় অফুরন্ত শ্রম   |

"হে মার্কেট" করেছিল এর প্রতিবাদ,
কারখানায় ছুটির সাইরেন নির্দিষ্ট ব্যবধানে
শুনতে চেয়েছিল সেদিন,
চেয়েছিল দিনের মাঝে আট ঘন্টার শ্রম  |

পুঁজিবাদ মানেনি সে কথা,
পুরো পেট ভর্তি থাকলে শ্রমিকের উত্তরাধিকারী
বশংবদ শ্রমিক হওয়ার ইচ্ছে হারাবে যে!

তবু অনাহারী শ্রমিক ভুখা পেট নিয়েও
চেয়েছিল একটা স্বাস্থ্যকর বাসস্থান
আত্মসম্মান আর ন্যূনতম চিকিৎসার আয়োজন |

বিনিময়ে মিলেছিল চাবুক আর বুলেট  |
বুলেটের মুখে বুক পেতে
শ্রমিকের দাবী আদায়ের অনড় দৃঢ়তায়
কেঁপে উঠেছিল পুঁজিবাদের শক্ত ভীত |

রক্তে লাল হয়ে যাওয়া শ্রমিকের বস্ত্র
চিৎকার করে বলেছিলো "ন্যায্য মূল্য, ন্যায্য শ্রম "
দিনে আট ঘন্টার বেশী কাজ নয় ",
সাম্রাজ্য বাদের অবসান চাই "  |

গুলি বিদ্ধ শ্রমিকের বস্তির ঘরে
অভুক্ত কিশোরী কন্যা পিতার বুকের রক্তে
শাড়ির আঁচল খানি রাঙিয়ে গর্জে উঠেছিল |

মর্যাদা, সম্মান আর প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে
প্রতিটি শ্রমজীবির অন্তরাকাশে
পত পত করে আজও উড়ে চলেছে অবিরাম
সেই রক্তিম পতাকা |

   **********************



            মে দিবস
-----------------------
        অরবিন্দ সরকার
   --------------------------------


দিনে আট ঘণ্টা কাজ  এই ছিল দাবী,
মার্কিন দেশে শিকাগো   শহরে লড়াই,
পয়লা মে'র মিছিল    কর্মের বড়াই,
মালিক প্রমাদ গোনে   কর্মে তালা চাবি।

শ্রমিক অধিকারের   সভা মুলতবি,
মালিক শোনেনা ধ্বনি   পথ হাতড়াই,
নিরস্ত্র শ্রমিকদের     দিয়ে মুখে ছাই
মিছিলে চলল গুলি  রাস্তা নাহি ভাবি।

রক্ত ভেজা রাজপথে   শুধু হায় হায়,
রক্তরাঙা পরিধান    লালের পতাকা,
পৃথিবীর বুকে ভাসে    রক্ত জয়গান
শত শত শহীদের     বিনিময়ে গায়,
গনসঙ্গীতে স্বাগত    বুলি নয় ফাঁকা,
মালিকের মসনদ    শ্রমিকের দান।

***************************