Friday, July 2, 2021

গৌতম তরফদার

নতুন অধ্যায় 
গৌতম তরফদার 

               বিভিন্ন অনলাইন সাহিত্য সংস্থায় লেখালেখির কারণে পাঠক মহলে বিপ্রতীপ তালুকদারের পরিচিতি অনেকটাই বেড়েছে। বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। বিপত্নীক।
বছর দুয়েক আগে পাহাড়ের কোলে বেড়াতে গিয়ে আকস্মিক হড়কা বানে স্ত্রী আর আট বছরের একমাত্র কন্যাকে হারিয়েছে। সেই থেকে বিপ্রতীপ পুরোপুরি একা। মা-বাবা কবেই গত হয়েছেন। দিদি তার আপন পরিবার নিয়ে আসামের গোয়ালপাড়ায় থাকে। বিপ্রতীপ অফিস আর লেখালেখির মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছে।
      
              ফেসবুকে প্রায় প্রতিদিন বেশকিছু ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। বিপ্রতীপের বন্ধু সংখ্যা বাড়ানোর তেমন আগ্রহই নেই। একদিন কেতকী মজুমদার নামের একজনের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। প্রোফাইল পিকচারে একটা ছোট্ট মেয়ের ছবি। বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। হুবহু যেন তার হারানো মেয়ের মুখ। স্মৃতির জোয়ারে ভেসে যায় বিপ্রতীপ। আর কিছু দেখতে পায় না প্রোফাইল লক থাকার কারণে। আনমনেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে নেয়। 

             বন্ধুত্ব শুরু। কেতকীর স্বামী রাজশেখর বছর কয়েক আগে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে। অভিশপ্ত জলন্ত কামরায় ওরা তিন জনই ছিল কাশ্মীর টুর থেকে ফেরার পথে। কেতকী তার মেয়ে পল্লবীকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও ভীষণ রকম জখম হয়। অবশেষে মা-বেটি সুস্থ হয় কিন্তু রাজশেখরকে বাঁচানো যায় নি। স্বামীর পেনশন আর ঘর ভাড়ায় টাকায় মা-বেটির সংসার চলে। 

              বিপ্রতীপের কবিতা আর গল্পের অসম্ভব ভক্ত। লাইন ধরে ধরে বলে দিতে পারে। নিজেও অল্পবিস্তর লেখালেখি করে। সেই সূত্রেই খোঁজ, যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব। ফেসবুক,  ম্যাসেঞ্জার আর হোয়াটস্অ্যাপে নীরব কথা আর অনুভূতির বিনিময়ে দ্রুত ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

             দু'জনেই কোলকাতার বাসিন্দা।  বিপ্রতীপ থাকে বেহালা আর কেতকী দমদমে। সম্পর্কের গভীরতা যত বাড়তে থাকে বিপ্রতীপ দেখা করার জন্য বারংবার অনুরোধ জানাতে থাকে। কিন্তু কেতকী প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। বলে," এভাবেই এগিয়ে চলুক আমাদের সম্পর্ক। দু'জনের জীবনেই চরম দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আজ আমরা পরস্পরকে মানসিক ভাবে পেয়েছি। সামনাসামনি দেখা আর আমার সান্নিধ্যের ছোঁয়া যদি তোমার অপছন্দ হয়, তখন ?  বাস্তবের জটিলতায় যদি আবার তোমাকে হারাই, সইতে পারবো না আমি।" 

           কিন্তু বিপ্রতীপ নাছোড়বান্দা। দেখা করার অভিলাষে মেয়ের দিব্বি দিয়ে বসে। দু'জনেকেই আসতে বলে। কেতকী কথা রাখে। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে মিলেনিয়াম পার্কে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বিপ্রতীপের সামনে দাঁড়ায়। চমকে ওঠে বিপ্রতীপ। কেতকীর ডান গাল জুড়ে বিচ্ছিরি পোড়া দাগ। চামড়া কুঁচকে আছে।
  
        --- "আমি তোমায় অনেকবার বলেছিলাম আমায় দেখতে চেয়ো না। অশরীরী সম্পর্ক থাক দুই হৃদয়ে।" 

        -- " দূর পাগলি! এই জন্যই তুমি এড়িয়ে যাচ্ছিলে? যে হৃদয় জয় করে, সে কি আটকে যাবে নশ্বর শরীরে! তোমাকে আর বেটিকে নিজের করে নিতে চাই।  তুমি রাজি তো ? "

No comments: