মে দিবস
-----------------------
সুভাষচন্দ্র ঘোষ
------------------------------------------------
ফুটপাতের পলিথিন ছাউনি ঢাকা হোটেলে বিনা বেতনে চাকরি,
শুধু দুমুঠো পেট ভরে দুবেলা ডাল- ভাত খেতে পাওয়া জরুরি ।
দশ বছরের ছেঁড়া হাফপ্যান্ট, বেঢপ গেঞ্জি পরা ছেলে ফেলনা,
সেই ভোর চারটা থেকে দিন শুরু ,বাসনপত্র থালায় তার খেলনা।
গত রাতের যত এঁটো কালি লাগা হাঁড়ি কড়াই রাশি রাশি মাজা,
মালিক আসার আগেই করতে হবে পরিষ্কার ঝকঝকে তাজা।
ধুতে হবে শুভ লাভ গনেশের পাট,ফেলতে হবে বাসি ফুল শুকনা,
পরিচ্ছন্ন দেবতার পায়ে মালিক এসে দেবে তাজা ফুল ধূপধূনা ।
মালিকের পরে আসবে নোংরা মোটা পৈতে পরা ঠাকুর রান্নার,
রাশি রাশি সব্জী কাটা ধোয়ার পরে তার সময় থাকে না কান্নার।
আজ আর মনে পড়েনা কীভাবে এসেছিল ইঁটের জঙ্গল শহরে,
খিদের জ্বালায় মা-বাপ মরা নিঃসহায় ছেলে রাস্তায় মরে ঘুরে।
হোটেলের সামনে ফ্যালফ্যাল করে দেখছিল ঝুড়িভর্তি খাবার,
মালিক ডেকে বলেছিল--থাকবি এখানে ,নাম করবি না যাবার।
সেই থেকেই এই ছোট্ট হোটেলই বাড়ি, এখানেই দিন গুজরান,
"মে দিবস"আজো তাকে দেয়নি গরীবের হাড়ভাঙা শ্রম-সম্মান।
ইঁটভাটা চায়ের দোকানে তার মতো আছে কত হাজার ফেলনা,
ফুটপাতে বাজার ভরা পোড়া দেশে তাদের হিসাব কেউ রাখেনা।
"মে দিবস" --গোটা দুনিয়ার খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের দিন,
শহীদ বেদীর মালা,লাল পতাকা কবে আনবে ফেলনাদের সুদিন?
********************
মে দিবসের শ্রদ্ধার্ঘ্য
-------------------------
নির্মলেন্দু মাইতি
-------------------------------------
ভোগ সর্বস্ব পুঁজিবাদ পৃথিবী হতে হোক নিপাত
শ্রমিকের মর্যাদা দানে
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে
শ্রমিক কর্মচারী মাতেন শহীদ স্মরণে।
কাঠ ফাটা রোদ্দুরে কৃষকেরা কাজ করে
করে পৃথিবীর অন্নের সংস্থান
ঘর্ঘর ঘোরে চাকা লাভের যতেক টাকা
মালিকেরা লুটে গরীবের ধন।
হাতুড়ি কাস্তের গান শ্রমিকের সম্মান
শ্রমিকেরা নয়কো কেনা গোলাম
শহীদদের জীবন দান পৃথিবীতে চির অম্লান
মে দিবসের জানাই তাঁদের সেলাম।
আট ঘন্টা কাজের দাবীতে মে দিবস পালিত হয় পৃথিবীতে
শ্রমিকের স্বীকৃত কাজের খতিয়ান
ক'জনইবা রাখে খোঁজ কত শ্রমিকের প্রাণ যায় রোজ
ক'জন করি ওদের সম্মান।
মেহনতী মানুষের স্বার্থে সমাজের হিতার্থে
সংস্থান হোক কর্মের
কাজ চাই মানুষের উন্নয়ন হোক দেশের
বন্ধহোক শ্রেণী স্বার্থের ।
নারী পুরুষের সমান মজুরী বৈষম্য দূর হওয়া জরুরি
জাগো আধুনিক সভ্য সমাজ
সকলের কাজ হোক বেকারত্ব দূর হোক
শপথে অঙ্গীকার করি আজ।
***************************
পয়লা মে
--------------
কৃত্তিবাস ওঝা
-------------------------------
মাথা আর গতর খাটানো মানুষগুলো
পায়নি কিছু, বিনা সংগ্রামে ।
মে দিবস , করোর দয়ার দান নয়
শ্রমজীবী মানুষের নায্য অধিকার
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
যা লেখা আছে রক্ত আর মৃত্যুর বিনিময়ে ।
অষ্টাদশ শতক থেকে শ্রমিকদের খাটতে হতো
ষোল আঠারো ঘন্টা
কথা বলার সময় মিলত না পরিবারের সঙ্গে
সন্তান চিনত না বাবাকে, --
এমন একটা সময়ে, উনিশ শতকের প্রথমে
আট ঘন্টা কাজের দাবীতে
আমেরিকার শ্রমিকরা নেমে ছিল আন্দোলনে,
ছড়িয়ে পড়েছিল ধীরে ধীরে তা ' সারা বিশ্বে
আঠারো শ' ছিয়াশি সালের পয়লা মে
আমেরিকার শিকাগোতে
শ্রমিকরা নেমেছিল লাগাতার ধর্মঘটে - -
সরকারের পুলিশ, মালিকের গুণ্ডাবাহিনী
চালিয়েছিল বেপরোয়া লাঠি, গুলি
সাজানো মামলায় করেছে গ্রেফতার
দিয়েছে ফাঁসি, কেড়ে নিয়েছে প্রাণ
রক্তে ভেসেছে হে মার্কেট স্কোয়ার।
দেশে দেশে ছড়িয়েছে
আট ঘন্টা কাজের দাবী
সংগ্রাম হয়েছে দুর্বার ।
আঠারো বাষট্টি সালের এপ্রিল- মেতে
আট ঘন্টা কাজের দাবীতে
হাওড়া স্টেশনে
রেল শ্রমিকরা নেমেছিল ধর্মঘটে
এও ইতিহাস ।
আঠার শ' নব্বুই থেকে
পয়লা মে
শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামের প্রতি
সমর্থন আর শপথের অভিমুখে
পালিত হয় মে দিবস, বিশ্বের দেশে দেশে ।
আট ঘন্টা কাজ, আট ঘন্টা বিশ্রাম
আট ঘন্টা বিনোদন, --
সংগ্রাম আর শহীদের রক্তের বিনিময়ে
পাওয়া এ অধিকার
আক্রান্ত এখন আবার,
তাই সময়ের আহ্বান, - অধিকার রক্ষার
সংগ্রামের শপথ নেবার ।
***********************
মে দিবস
----------------
শ্যামল খাঁ
~~~~~~~~~~~~~~~~~
পয়লা মে র প্রখর রোদে
ষাট বছরের বৃদ্ধ আজও টোটোর চাকায়
তার জীবনের গতি বেঁধে রাখে |
সিমেন্ট আর বালি মাখানো মশলার কড়াই
মাথায় নিয়ে আমিনা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে
বার বার মনে করে,
ঘরে বসে থাকা পাঁচ বছরের ছেলের ক্ষুধাতুর মুখ |
লাল লোহাকে পিটিয়ে নির্দিষ্ট আকার দিতে দিতে
কামারের শক্ত পেশী চায় শোষণের পালাবদল |
ইচ্ছে করে লোহা থেকে গরম লাল তুলে
শোষকের গালে আবির মাখিয়ে দিতে |
" দুনিয়ার মজদুর এক হও " ডাক দিয়ে
মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে পাটকলের শ্রমিকেরা
নিংড়ে নেওয়া শ্রমের ন্যায্য বিনিময় দাবী করে |
পুঁজিবাদের কাছে ন্যায্য দাবী করা অন্যায় |
নতশিরে গোলামীর স্লোগান ভালোবাসে তারা,
ক্ষুধার রাজ্য বিস্তৃত হলে
পোড়া রুটির মূল্য জোর করে কেড়ে নেয় অফুরন্ত শ্রম |
"হে মার্কেট" করেছিল এর প্রতিবাদ,
কারখানায় ছুটির সাইরেন নির্দিষ্ট ব্যবধানে
শুনতে চেয়েছিল সেদিন,
চেয়েছিল দিনের মাঝে আট ঘন্টার শ্রম |
পুঁজিবাদ মানেনি সে কথা,
পুরো পেট ভর্তি থাকলে শ্রমিকের উত্তরাধিকারী
বশংবদ শ্রমিক হওয়ার ইচ্ছে হারাবে যে!
তবু অনাহারী শ্রমিক ভুখা পেট নিয়েও
চেয়েছিল একটা স্বাস্থ্যকর বাসস্থান
আত্মসম্মান আর ন্যূনতম চিকিৎসার আয়োজন |
বিনিময়ে মিলেছিল চাবুক আর বুলেট |
বুলেটের মুখে বুক পেতে
শ্রমিকের দাবী আদায়ের অনড় দৃঢ়তায়
কেঁপে উঠেছিল পুঁজিবাদের শক্ত ভীত |
রক্তে লাল হয়ে যাওয়া শ্রমিকের বস্ত্র
চিৎকার করে বলেছিলো "ন্যায্য মূল্য, ন্যায্য শ্রম "
দিনে আট ঘন্টার বেশী কাজ নয় ",
সাম্রাজ্য বাদের অবসান চাই " |
গুলি বিদ্ধ শ্রমিকের বস্তির ঘরে
অভুক্ত কিশোরী কন্যা পিতার বুকের রক্তে
শাড়ির আঁচল খানি রাঙিয়ে গর্জে উঠেছিল |
মর্যাদা, সম্মান আর প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে
প্রতিটি শ্রমজীবির অন্তরাকাশে
পত পত করে আজও উড়ে চলেছে অবিরাম
সেই রক্তিম পতাকা |
**********************
মে দিবস
-----------------------
অরবিন্দ সরকার
--------------------------------
দিনে আট ঘণ্টা কাজ এই ছিল দাবী,
মার্কিন দেশে শিকাগো শহরে লড়াই,
পয়লা মে'র মিছিল কর্মের বড়াই,
মালিক প্রমাদ গোনে কর্মে তালা চাবি।
শ্রমিক অধিকারের সভা মুলতবি,
মালিক শোনেনা ধ্বনি পথ হাতড়াই,
নিরস্ত্র শ্রমিকদের দিয়ে মুখে ছাই
মিছিলে চলল গুলি রাস্তা নাহি ভাবি।
রক্ত ভেজা রাজপথে শুধু হায় হায়,
রক্তরাঙা পরিধান লালের পতাকা,
পৃথিবীর বুকে ভাসে রক্ত জয়গান
শত শত শহীদের বিনিময়ে গায়,
গনসঙ্গীতে স্বাগত বুলি নয় ফাঁকা,
মালিকের মসনদ শ্রমিকের দান।
***************************
No comments:
Post a Comment