Saturday, November 17, 2018
Wednesday, November 14, 2018
সেইক্ষণে
সেইক্ষণে
আকাশটা যখন , নিশ্চিন্তে
পৃথিবীর মুখের ওপর মুখ রেখে
চুম্বনরস পান করছিল
তখন তোমায় দেখেছিলাম
তুমিও চুম্বন প্রত্যাশি ছিলে না ?
শিমূল ফুলের সমস্ত রঙ চুরি করে
গায়ে মেখেছিলে সেদিন
রক্তরাগ শরীর থেকে
ঠিকরে বেরচ্ছিল
রঙ বেরঙের প্রজাপতি
সমুদ্রের ঢেউ
তটের উপর আছরে পড়ে
সে কি আকুলি বিকুলি প্রেম !
আশ্লেষ করতে চেয়েছিলে তুমিও
মাটির সঙ্গে ঘাসের মত ।
Monday, November 5, 2018
অভিলাষ
অভিলাষ
বুড়ো সূর্যটা যখন
পুকুরপারের গাছের ছায়ায় বসে
একটু বিশ্রাম করে ,
যখন কোকিলগুলো
গানে গানে ভরিয়ে দেয় প্রাণ ,
যখন নাড়কেলের পাতাগুলো
তিরতির করে কাঁপতে থাকে , আর
গাছের হলুদ পাতাগুলো
একটি একটি করে
পুকুরের জলে পড়ে খসে
....ভাসে আর ভাসে ....
মনে হয় এমনি ভেসে ভেসে
কোথাও হারিয়ে গেলে বেশ হয়
আবার যখন পৃথিবীর কপালে
রাজটীকার মত
ভোরের সূর্য উদ্ভাসিত হয়
মনে হয় বৃহৎ সংসারের কপালে
রাজটীকা না হলেও
ছোট্ট কাজলের ফোটা হলেই বা মন্দ কি ....
ক্রন্দন
ক্রন্দন
মনের গোপনে লালিত
যে কথা বহুযুগ ধরে
হল না প্রকাশ কোনোদিন ,
অঙ্কুরেই বিনষ্ট হল একটি ভ্রুণ
পেলনা অনুকূল পরিবেশ
ছন্দে গন্ধে সৌরভে গৌরবে
হল না প্রস্ফুটিত ,
তবে কি আজ বুনো হাসের মাঝে
খুঁজে পেয়েছে তার আত্মা ?
নিরালম্ব শরীরটা
শ্মশানে হয়েছে পুরে ক্ষয়
তবুও তো -
এক অতৃপ্ত আত্মার ক্রন্দন ধ্বনি
মাঝরাতে গোঙায় শুধু
এক অব্যক্ত যন্ত্রনায় ।
Saturday, October 27, 2018
চিঠি - অন্তিম পর্ব
চিঠি - অন্তিম পর্ব
চিঠিটা একটা প্রেমপত্র । জানতে পারলাম দিদির কাকার বাড়ির পাশে এই বিনয়ের বাড়ি । কাজকর্ম ভালোই করে । আর দেখতেও মন্দ নয় । সব মিলিয়ে দিদির কাছে বেশ লাগে । বিনয় অনেকদিন ধরেই দিদিকে আভাসে ইঙ্গিতে ওর মনের কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছে । কিন্তু দিদি কখনো সাড়া দেয়নি । যদিও এখন বুঝতে পাচ্ছিলাম দিদি কেন এত ঘন ঘন কাকার বাড়ি যেতে চাইত । কিছুদিন পর দিদি আরেকটা প্রেমপত্র আর একটা ছবি দেখালো । বুঝলাম ছবিটা বিনয়বাবুর ।
এদিকে সুহানীদির মা আমার বাবাকে অনেকদিন ধরেই দিদির বিয়ের ব্যবস্থার কথা বলছিলেন । বাবাও পাত্র খুঁজতে লাগলেন । এই অবস্থায় একদিন আমি স্কুল থেকে ফিরলে দিদি ম্লান মুখে আমার ঘরে এসে দাঁড়াল । বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে ।
- কি হয়েছেরে দিদি । দিদি আমার দিকে তাকিয়েই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল । চোখদুটো বেশ ফোলা । আগেও হয়ত কেঁদেছে ।
- আমায় কাল দেখতে আসবে ।
- কে !
- চাকদা না কোথা থেকে ।
- তো ....
- আমি বিধয়কে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারব না । তুই বল না তোর বাবাকে ।
- আ - আমি !
আমি জানতাম দিদির সাথি হিসাবে আমি যতই বড় হই না কেন বাবার কাছে এধরনের কথা বলা আদৌ সম্ভব নয় ।কিন্তু দিদি এখন কি করবে ।
আমার নিরুত্তর মুখ দেখে দিদি আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে গেল । তারপর বলতে লাগল - আমার কপালটাই খারাপ । ছোটবেলায় বাবাকে হারালাম ।বাবার ভালোবাসা কি জিনিস জানিনা । বড় হয়ে যাও বা একজনকে ভালোবাসলাম তাও কপালে টিকল না । ..... যাকগে । চল খাবি চল ।
চাবি দেওয়া পুতুলের মত আমি ঘর থেকে বেড়িয়ে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসলাম । মনের ভিতর খচখচ করতে লাগল । কিন্তু কি করতে পারি আমি ।
পরদিন আমি যখন স্কুলে যাব তখন দিদি লুকিয়ে আমার হাতে একটা ইনভেলপ খাম দিল - চিঠিটা পোষ্ট করে দিস । দিদির মুখটা খুব শুকনো লাগছিল । চোখদুটো লাল । মাথার চুল উসকো-খুসকো । দিদিকে আশ্বাস দেবার মত ভাষা আমার ছিল না । নীরবে শুধু মাথা নাড়লাম ।
রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম । আর দিদির কথা ভাবছিলাম । কখন যে পোষ্ট অফিস পেড়িয়ে এসেছি খেয়ালই নেই । খেয়াল হল স্কুলের গেটের সামনে এসে । ফেরার সময় পোষ্ট করে দেব ভেবে ব্যাগে মলাট দেবার জন্য যে খবরের কাগজটা আমি বেছে রেখেছিলাম পুরোনো কাগজগুলোর মধ্যে থেকে তার ভিতরে রেখে দিলাম ।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মলাট দেবার জন্য সেই খবরের কাগজটা আর ব্যবহার করা হয়নি ।আর চিঠিটাও তার মধ্যেই থেকে গেছে । যদিও দিদিকে যখনই দেখেছি অপরাধবোধে পীড়িত হয়েছি । আর প্রতিজ্ঞা করেছি কালই স্কুলে যাবার সময় চিঠিটা পোষ্ট করে দেব । কিন্তু ঐ পর্যন্তই । চিঠিটা যে আর পোষ্ট করা হয়নি সুদীর্ঘ সাত বছর পর তার সাক্ষ্য মিলল ।
চাকদার সেই ছেলেটির সঙ্গেই সুহানীদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে আজ প্রায় সাত বছর হল । দুই মেয়ে স্বামী সংসার নিয়ে বেশ সুখেই আছে দিদি । বিনয়কৃষ্ণর কথা ওর মনে আছে কিনা জানিনা । কিন্তু ওর প্রেমের পাখির একটা পালক আমার কাছে গোপনে রয়ে গেছে - এটা সে জানতেও পারল না । জানলে হয়ত আমাকে কখনো ক্ষমা করত না কিংবা হয়ত কিছুই হত না ।
সমাপ্ত
সমাপ্ত
Thursday, October 25, 2018
চিঠি - তৃতীয় পর্ব
চিঠি - তৃতীয় পর্ব
না , বাবা সেদিন ফিরেছিলেন না । পরদিন দুপুর প্রায় দুটো নাগাদ বাবা ফিরেছিলেন । সেদিনটা কোনো একটা পর্ব উপলক্ষ্যে স্কুল ছুটি ছিল । আমি দুপুরে খেয়ে দেয়ে ঘরেই ছিলাম । বাবর ডাকে একছুটে বাইরে এসে দাঁড়ালাম । কিন্তু বাবার সাথে ঐ মেয়েটি কে ? ইতিমধ্যে বাবা আমার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েছে । আমিও আনন্দে নাচতে নাচতে ঘরে ঢুকলাম ।
পরে জেনেছিলাম ঐ মেয়েটি আমার বাবার কেমন সম্পর্কের ভাগ্নী হয় । আমার থেকে বছর পাঁচ সাতেকের বড় হবে । রঙটা ফর্সার দিকেই । দেখতে খুব সুন্দর না হলেও খারাপ নয় । কয়েকদিনের মধ্যেই ওর সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গেল ।
শান্তিপুরে সুহানীদির এক কাকা থাকতেন । দিদি এখানে আসার পর কাকা প্রায়ই এসে ওকে নিয়ে যেতেন । এভাবে বছর পাঁচ সাত কেটে গেল । এখন দিদি দেখতে আরো সুন্দরী হয়েছে । যৌবনের পরশে তার দেহ মন সতেজ সরস । আমিও তখন কিশোরী লাজুক লতা । কাজেই দিদির সাথে আমার হৃদ্যতা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ।
আগেই বলেছি শান্তিপুরে দিদির কাকার বাড়িতে দিদি মাঝে মাঝেই বেড়াতে যেত । ইদানিং দিদি দুদিন পরপরই আমাকে কাকার বাড়ির কথা বলতে লাগল ।
এরকম বেশ কিছুদিন চলার পর একদিন কাকার বাড়ি থেকে ঘুরে এসে দিদি আমার কানে কানে বলল - একটা জিনিস দেখবি ?
- কি জিনিস ?
- এদিকে আয় । আমার হাত ধরে টানতে টানতেআমার পড়ার ঘরে নিয়ে গেল । হাতে ওর পার্সটা । ঘরে ঢুকে প্রথমে দরজার পর্দাটা ভালো করে টেনে দিল । মৃদু মৃদু হাসতে হাসতে পার্সটা খুলে আমার হাতে ভাজ করা একটা কাগজ দিয়ে রহস্যজনকভাবে হাসতে লাগল ।
- কি এ ?
- খুলে দেখনা ।
আগ্রহের আতিশয্যে ভাঁজ খুলে ফেললাম । একটা চিঠি । দিদির নামে । ইতি - বিনয় ।
- বিনয় কে ?
- আঃ পড়ে দেখনা ।
আমি রূদ্ধশ্বাসে চিঠিটা পড়তে লাগলাম । দিদি তখন আমার টেবিলক্লথের কোনাটা আঙুলে জড়াচ্ছে আর খুলছে । মুখটা ভারী অদ্ভুত । দিদির এরকম মুখ আমি আগে কখনো দেখিনি ।
চিঠি - দ্বিতীয় পর্ব
চিঠি - দ্বিতীয় পর্ব
আজো সবই ঠিক ছিল ।শুধু বাবা তার জায়গাটিতে নেই দেখে বাবার কথা মনে পড়ল সারাদিন পর ।
- মা , বাবা কখন আসবে ?
- দেখ - এই ট্রেনে হয়ত আসতে পারে ।
- এই ট্রেন কটায় মা ?
- সাড়ে সাতটা মনে হয় ।
- এখন কটা বাজে মা ?
- সাতটা দশ । সারে সাতটা বাজতে আর কুড়ি মিনিট বাকি আছে ।
- ওঃ কুড়ি মিনিট কতক্ষণে হবে ।
- জানিনা - যা - শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন ।
অগত্যা মার ধমক খেয়ে আবার স্বস্থানে ফিরে এলাম । আর অপেক্ষা করতে লাগলাম সাড়ে সাতটা বাজার ।
...... কতক্ষণ হয়ে গেল । এখনো কি সাড়ে সাতটা বাজে নি । বাব্বা সাড়ে সাতটা বাজতে এতক্ষণ লাগে । আমার মনে হচ্ছিল সেদিন সাড়ে সাতটা বাজতে যে সময় লেগেছিল ততক্ষণে বোধহয় পৃথিবীটা ধীরে সুস্থে এক পাক ঘুরে আসতে পারবে ।
যাই হোক সেদিন ঘড়ির নিয়মেই সাড়ে সাতটার ঘন্টা পড়ল । মনটা ছটফটিয়ে উঠল । পড়ায় মন বসছে না । বাবা আমার জন্য কি কি আনতে পারে মনে মনে তার একটা লিষ্ট করতে লাগলাম । বারবার মনে হচ্ছে বাবা বোধহয় এক্ষুনি এসে পড়বে । কিন্তু না । অনেকক্ষণ হয়ে গেল বাবা এল না । আমি ভয়ে ভয়ে মার কাছে গেলাম ।
- কৈ সাড়ে সাতটা তো বেজে গেল ।
- কি জানি হয়ত এই ট্রেনে আসে নি ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল । বইয়ের সামনে এসে বসলাম । বইয়ের দিকে যে তাকাতে ইচ্ছে করছিল না সেটা বলাই বাহুল্য ।
কি আর করব । স্কুলের কিছু কাজ ছিল সেগুলো সেরে শুয়ে পড়লাম । মাকে বললাম বাবা এলে একসাথে খাব ।
ঘুমিয়ে পড়লে কোনোদিনই মার ডাকে জেগে উঠে আমি রাতের খাবার খাইনি ।বাবাই আদর করে তুলে খাওয়াতো ।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে পেটে বেশ ক্ষিদে অনুভব করলাম ।বুঝলাম রাতে খাওয়া হয়নি । তবে কি বাবা রাতে ফেরেনি ?
Wednesday, October 24, 2018
চিঠি - প্রথম পর্ব
চিঠি - প্রথম পর্ব
পুরনো খবরের কাগজ বিক্রি আছে ....
পুরনো বই খাতা বিক্রি ......
এই যে বই খাতা বিক্রি .... এদিকে এস ....
বই খাতা নয় । গত বছরের পুরনো খবরের কাগজগুলো জমে আছে । গতকাল ঘর পরিস্কার করতে গিয়ে সেগুলো সব বার করা হয়েছে । এখন শুধু বিক্রির অপেক্ষা ।
কাগজগুলো আনতে গিয়ে নীচের কাগজটা হাত থেকে পড়ে গেল । বাকিগুলো কাগজওয়ালার কাছে দিয়ে এলাম । পড়ে যাওয়া কাগজটা নিয়ে যাচ্ছি - মাঝখানটা মোটা মোটা লাগল । খুলে দেখি ইনভেলপ খামে লেখা একটা চিঠি । চিঠির মুখটা এখনো খোলা হয়নি । ঠিকানা শান্তিপুরের । কোন এক বিনয়কৃষ্ণ মজুমদারের শিরোনামে । প্রেরকের নাম সুহানী কর্মকার - আমার দূর সম্পর্কের এক দিদি ।
আমি তখন বেশ ছোট । একদিন সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসে মনে পড়ল সারাদিন তো বাবাকে দেখিনি । তাই তো । বাবা কোথায় গেছে । ছুটে মার কাছে গেলাম -
- মা বাবা কোথায় ?
- কলকাতা গেছে ।
- কখন ?
- সকালে ।
মনে পড়ল ঘুম থেকে উঠে বাবাকে দেখিনি । সকালে প্রতিদিনই আমাকে পড়তে যেতে হয় বাড়ির সামনের মাঠটা পেড়িয়ে কাজলদিদির কাছে । যথারীতি পড়ে এসে স্নান খাওয়া করে স্কুল । তারপর স্কুল থেকে ফিরতে না ফিরতেই গেটের সামনে অপেক্ষা করে থাকে আমার খেলার সাথিরা । আমিও কোনোরকমে একটু খেয়েই ছুটি মাঠে । মাঠ থেকে ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যা । কাজেই এর মধ্যে কে বাড়িতে আছে না আছে তার দিকে লক্ষ্য থাকে না । পড়তে বসলেই মনে পড়ে । কেননা তখন বইয়ের তুলনায় সারাদিনে ঘটে যাওয়া ছোটবড় ঘটনাগুলো মনের কোনে ভীড় করে বেশি । আর পড়তে বসে এসব কাহিনী উপকাহিনী শোনাবার প্রকৃষ্ট মানুষ হল আমার বাবা । বলাই বাহুল্য পড়ার থেকে আমাদের গল্প হত বেশি । তারপর যখন ঘুমে ঢলে পড়তাম তখন মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলত - সারাদিন এত ধকল কি শরীর নিতে পারে চল চল খেয়ে ঘুমিয়ে পড় ।
Tuesday, October 23, 2018
এসো আবার
এসো আবার
সৃষ্টির আনন্দে মেতে আছি
বহুদিন পর -
এখনো তো আছে দেখি অস্তিত্ব তোমার
আমার বিনিদ্র রাতের ঘুম খায়
ঘুনপোকা
চোরাপথে
আবার কাঁদায়
এতদিন শুনেছি যে আর্তস্বর
বহুদূরাগত -
সে কার , সে বা কার
মাতন লাগে শিরায়
চোখে লাগে হৃৎপিন্ডের জ্যোতি
নানা রঙের
সযত্নে বন্ধ রাখি মুখ
বুঝি বা
আবার হারায়
লেখনী থামে না তবু
পারিজাতের সৌন্দর্য
খাতার পাতায় ।
Monday, October 22, 2018
কেমন করে
কেমন করে
চেতনা আমার দাঁড়িয়ে আছে
কঠিন পথের রিক্ত বাঁকে
আশার হিমেল পরশ নিয়ে
বারে বারে তোমায় ডাকে
তুমি এখন কোন সুদূরে
নিঃস্ব মনের স্মরণ - সাথি
বুঝি ছিল অবুঝ খেলা
ধরা পড়েছে জালিয়াতি
রিক্ত আমি নিঃস্ব আজ
এই ছিল কি তোমার চাওয়া
বাসনা তোমার পূর্ণ হবে
মিটবে সকল চাওয়া পাওয়া
কিন্তু যদি বারেক ভুলে
দাঁড়াই গিয়ে সামনে তোমার
কেমন করে থাকবে ফিরে
দেখব শত চেষ্টা তোমার ।
আহ্বান
আহ্বান
ভেঙে ফেলো আজ সিংহ দুয়ার
মুক্তির ডাক শোনো
প্রাণ খুলে আজ প্রশ্বাস নাও
নেই যে গো ভয় কোনো
ক্ষণে ক্ষণে আজ শিরায় শিরায়
কোন সে আবেশ মাতন লাগায়
ঐ মাতন যে আর কোনোদিন
পাবি না কক্ষনো ।
আয়রে ভেসে , খেলে হেসে ,
সৃষ্টির নবধারায়
আয়রে পাগল , বন্ধ আগল
ভেঙে ফেলে ছুটে আয়
শোন শোন শোন , ফিসফিস করে
কে যেন কথা কয়
মনের কোনে সঙ্গোপনে
উতল হাওয়া বয়
হাওয়ার বেগে পাল উচিয়ে
চল চলে যাই দূরে
যেখানে উদাস পথিক গাইছে
গান উদাসী সুরে ।
আলো , আনো আলো
আলো , আনো আলো
সারারাত জেগে থাকি ভোরের প্রতীক্ষায়
স্তব্ধ চরাচর
শোনা যায় নিঃশ্বাসের ব্যর্থ আস্ফালন
কবেকার অমানিশার ঘোর
এখনো আমার চোখে মুখে
আলো খুঁজি আমি , আলো
শিরায় শিরায় বয়ে চলে ক্ষয়রোগ
কখন অজ্ঞাতে চুপিসারে হানা দেয় মনে
মাথায় তীব্র বোধ , সংকট ঘনায়
নরম পাশবালিশও কঠিন মনে হয়
তোমার হাতে যখন উষ্ণতার আবেশ
মননে আমি কোন নিবিড় শীতলতায়
চারদিকে বরফ কঠিন প্রাচীর আমার
শুনি শুধু অবরূদ্ধ আত্মার তীব্র হাহাকার
পথ খুঁজি আমি , প্রশস্ত পথ
তুমিও কি পেয়েছ পথে আলোর সন্ধান ?
বাঁচতে দাও
বাঁচতে দাও
এলোমেলো পায়ে পথ চলি
নির্জন একাকিত্বময় পথ নয়
অগনিত মানুষের কলরবে মুখর
অজস্র গাড়ির হর্ণ
ভালো লাগে -
একাকিত্বের নির্জনতা থেকে
জনসমাগমে ফিরতে
আবার নেমেছি আমি
সন্ধ্যার আলোছায়া গায়ে মেখে
বৃষ্টিধৌত কালো পিচঢালা রাস্তায়
পথচলতি ব্যস্ত মানুষের সাথে
অন্তরের আর একটু কাছে
আর একটু উষ্ণতার কাছাকাছি
কলরব উঠুক -
নয়ত -
প্রয়োজন হবে অন্য পৃথিবীর।
Sunday, October 21, 2018
Thursday, October 18, 2018
Wednesday, October 17, 2018
মেয়েবেলার গল্প
মেয়েবেলার গল্প
একটু যাই না মা । কি হবে গেলে । আমি কি তবে এবার ঠাকুরও দেখতে পাবনা ।
অনুসূয়ার মুখটা গম্ভীর হয়ে ওঠে । অধৈর্য হয়ে বলে , আর কতবার বলব মানু । পুজো হয়ে যাক বাইরে থেকে দেখবি । ঠাকুরের কাছে যাবি না । কাওকে ছুঁবিনা ।
মনটাকে কিছুতেই মানাতে পারেনা টিয়া । ওর বন্ধুরা বারবার ডাকতে আসছে পুজোমন্ডপে যাবার জন্য । কিন্তু মায়ের কড়া নির্দেশ এসব হলে ঠাকুর ঘরে যাওয়া বা যারা ঠাকুরের কাজ করে তাদের ছোঁয়া যাবে না ।
তের বছর বয়স টিয়ার । বড় হয়ে উঠছে সে । মহিলা হয়ে ওঠার প্রথম ধাপে পা দিয়েছে সে । আজ দ্বিতীয় দিন । একটা শারীরিক প্রক্রিয়া তার ছোটোবেলাটাকে এক নিমেষে দূরে সরিয়ে দিয়েছে । প্রতিবছর প্যান্ডেলে বাঁশ ফেলা থেকে খেলা শুরু হয় সেখানে । বাঁশ বাঁধার পর বাঁশের উপরে উঠে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার মজাই আলাদা । তারপর একটু একটু করে প্যান্ডেলে কাপড় লাগানো হয় । ঠক ঠক করে পেরেক ঠোকার শব্দ কানে গেলে আর ঘরে থাকা যায় না । স্কুল থেকে ফিরে কখন প্যান্ডেলে যাবে সব সময় সেটাই মন তোলপার করে । স্কুলে গেলেই কি পড়ায় মন থাকে । মন তো পড়ে থাকে প্যান্ডেলে । তারপর ঠাকুর আনা । কত কসরৎ করে বড়োরা সেই ঠাকুর মন্ডপে তোলে । এই ধর ধর , এদিকে একটু কাৎ করে , আরে মাথা বাঁচিয়ে , নীচু কর নীচু কর । ওঃ সে যে কি উত্তেজনা সে আর কাকে বোঝাবে টিয়া । চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে যাচ্ছে অঝোর ধারে ।
রাগ হচ্ছে খুব । কেন এসব হয় । বন্ধুরা সবাই কত মজা করছে । প্যান্ডেলে পুজোর ঢাক বাজছে । অঞ্জলিও দিতে দেবে না মা । বাবাটাও যেন কেমন হয়ে গেছে । অন্য সময় তো যত অন্যায় ই করি না কেন বাবা ঠিক মার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয় । আর আজ সেও মার সাথে এক ই কথা বলছে । দুর্গাঠাকুর তুমি কিছু করতে পার না ।
অনুসূয়ার মনটাওভালো নেই । সত্যি তো । এটা একটা শারীরিক প্রক্রিয়া । এর সাথে পুজো আচারের কি সম্পর্ক । মানুষের মল মূত্র ত্যাগের মত এটাও একটা স্বাভাবিক ঘটনা । যত বাধা শুধু মেয়েদের বেলায় । বিজ্ঞান কত উন্নত হয়েছে । মেয়েরা কি না করছে । চাঁদ সূর্য তারা কোথায় কোথায় চলে যাচ্ছে মেয়েরা । আর আমরা ছাপোষা মানুষগুলো এসব সংস্কারকে আঁকড়ে ধরে বসে আছি ।এত বছর ধরে চলে আসা সংস্কারকে ঠেলে সরাতে পারছি কই । বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে অনুসূয়ার ।
কইরে টিয়া তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে মা । প্যান্ডেলে যাবিনা । হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতর এসে ঢোকে টিয়ার বাবা । পিছন পিছন টিয়ার বন্ধুরা । অনুসূয়া টিয়া দুজনেই অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকায় ।
আরে হা করে দাঁড়িয়ে আছে দেখ । প্যান্ডেলে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে কাল থেকে । রিহার্সাল দিতে হবে না । তোর তো অনেক নাচ আর আবৃত্তি তোলা আছে । এদের নিয়ে রিহার্সাল করে নে । তিন দিনে কিভাবে কিভাবে অনুষ্ঠান নামাবি সেটা ঠিক করে নে । রবীনকাকু একটু পড়ে আসবে তোর সাথে কথা বলতে ।
অনুষ্ঠানের কথায় আর বন্ধুদের কাছে পেয়ে টিয়ার মনটা আনন্দে নেচে ওঠে । সবাইকে ডেকে নিজের ঘরে নিয়ে যায় টিয়া । একটা জম্পেষ অনুষ্ঠানের ছক কষতে হবে ।
অনুসূয়া মনে মনে ঠাকুরকে প্রণাম জানাল । মেয়েটা মন খারাপ না করে এসব নিয়ে মেতে তো থাকতে পারবে কটা দিন । তবে মনে মনে ঠিক ই বুঝল মেয়ে অন্তপ্রাণ টিয়ার বাবারই কারসাজি এসব । যাতে পুজোর দিনকটা একমাত্র মেয়েটার ম্লান মুখটা না দেখতে হয় ।
Tuesday, October 16, 2018
শরৎ - ছেলেবেলা - এখন
শরৎ - ছেলেবেল - এখন
শরৎ এসেছে -
পদ্মের বুকে জমে উঠেছে মধু
যেমন প্রথমরাতে জমে নববধূর হৃদয়ে প্রেম
লজ্জনত বদন - প্রথম প্রকাশের আকাঙষা
মধুর চঞ্চলতা দেখি শিউলির বৃন্তে
সবুজ পাতা ঢাকা অজস্র শ্বেত শুভ্র তারা
ভোরের প্রতীক্ষায়
নীল সাদার অপূর্ব সমাবেশ আকাশে
প্রকৃতির ক্যানভাসে - আর আছে কাশ
.... এদের মায়ায় ঘিরে মোহনীয় তুমি
উজার করা বাঙালী হৃদয় প্রনত হয়
তোমার মোহিমায়
দশস্ত্রশোভিত তুমি দশভুজা
কানে আসে ভদ্র মহোদয়ের জলদগম্ভীর স্বর
" যা দেবী সর্বভূতেষু ...."
ফিরে আসে শৈশবস্মৃতি , হারানো ছেলেবেলা
চোখ খোঁজে আবার আপনজন , হারানো স্বজন
সময় - চক্র পারি দেয় বহুদূরে
আবার ফিরে আসি 'মাতৃ' আহ্বানে
বাস্তবের অনবদ্য টানে স্মৃতিকে বিস্মৃত হয়ে
ছোট্ট মেয়ের হাসিমুখে এ কার হাসি ভাসে
শরৎ মেঘেও বর্ষে যেমন , হায় -
আমার ছেলেবেলা ।
Monday, October 15, 2018
পুজোর ছড়া
পুজোর ছড়া
ঢ্যাম্ কুরকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
পুজো এলো কাছে
ঢ্যাম্ কুরকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
মনটা ভালো আছে ?
ঢ্যাম্ কুরকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
শিউলি তলায় ভোর
শরৎ এলো , বর্ষা তবে
সাঙ্গ কান্না তোর !
কলার পাতায় হাসির ঝলক
চাঁদের পিঠে চাঁদ
শিশুর হাসি নতুন জামায়
সমুদ্র অগাধ ....
ঢ্যাম্ কুরাকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
হারিয়ে গেছে ঊষা
বেলা হলো তৈরী হওগো
নতুন জীবন তৃষা
নতুন করে চাওয়া পাওয়া
কেন পেছন ফেরা
ভুলে যেও , সকাল ছিল
শিউলি ফুলে ঘেরা
মধ্যাহ্নের ক্ষররৌদ্র
তপ্ত বায়ুর শ্বাস
আর পাবে না , আর পাবে না
প্রভাতকালীন সুবাস....
তবুও , আবার দুর্গাপুজো
নতুন পরিচিতি
শরৎকালীন অনুভূতি
প্রাপ্তি আর ইতি ।
Saturday, October 13, 2018
অন্তর্ভাষ
অন্তর্ভাষ
এ মন আমার হালকা এমন
যেন বাবুই পাখির বাসা
দোলে , আর শুধু দোলে
পলকা হাওয়া আলতো চুমে
ভরিয়ে দিয়েছে সকাল
সোনালী রঙের পাপড়ি খুলে
নির্নিমেষে চাঁপার কুঁড়ি হাসে
আমার আকাশভরা হাজার ঢেউয়ের মাতন
মেঘ নয় - ঠিক যেন কালিন্দী নদী
স্বর্ণচূড়া দ্বৈরথ বাস্তব আর কল্পনা
দুই যুযুধানে সমানে সমানে
চাপান উতোর চলে
তারপর বাস্তবের কঠিন মাটিতে
রক্তাক্ত কল্পনা আমার মুখ থুবড়ে পড়ে
ফিরে আসি প্রকাশ্য রাস্তায় ।
পুজো নষ্টালজিয়া
পুজো নষ্টালজিয়া
পুজো আসে পুজো যায়
সময় বদলায় , মন বদলায় না
ফিরে আসে সময় আমার নষ্টালজিক হয়ে
'আশ্বিনের শারদপ্রাতে '.....
এতো যে কাশ দেখি , শুভ্র মেঘ
তবু যেন জলছবি শব্দ জব্দ লাগে
হুতাশনে খুঁজি শুধু পুজোর প্রাণ
আমার একলার আকাশে...
এখন মাটির গন্ধে বারুদের ঘ্রাণ
দুষ্প্রাপ্য প্রেমে এখন আদিম লালসা
সময় বিকায় শুধুই শ্যেনের থাবায়
তারই রক্তাক্ত প্রতিক্রিয়ায়...
বাতাস বড্ড বেশি হিমশীতল
সম্পর্কের উষ্ণতা হার মেনে নেয়
রঙের ফোয়ারা ঘিরেও দলীয় উত্তেজনা
আমার ক্লান্ত মন নষ্টালজিক হয়...
মা আসছেন
মা আসছেন
নৌকো প্রস্তুত কর
আর তো মোটে নেই দেরি
মা আসছেন ....
মাটির গন্ধ গায়ে মেখে, প্রবল স্রোতে
পাল তোলো , বৈঠা নাও হাতে
বৈঠা তো হাতিয়ারও হয়
আদিম মানুষ যেমন
গাছের ডালকে করেছিল হাতিয়ার
আমরা তো সভ্য হইনি....
তাহলে কিভাবে -
নিষ্পাপ শিশুর গায়ে বেঁধাই তীক্ষ্ম সূচ
কিভাবে ছুঁড়ে মারি অসহায় শিশু
কিভাবে রাতের আঁধারে আস্তাকুঁড়ে
ছুঁড়ে ফেলি সদ্যজাত সন্তান
আমরা একুশ শতকের সভ্যতাদর্পী মানুষ
তাই ধরনী দ্বিধা হয়না , চোখ বন্ধ করে রাখে
Wednesday, September 26, 2018
আমি পারি
আমি পারি
তুমি যদি চাও
আকাশটাকে ছিন্নভিন্ন করে
মেঘের ভিতর থেকে
বিদ্যুৎ নিয়ে আসতে হয়ত পারব না
সমুদ্র থেকে মুক্ত তুলে আনতে হয়ত
পারব না ।
হয়ত পারব না পাহাড়ের সর্ব্বোচ্চ শিখর থেকে
ভোরের স্নিগ্ধ শিশিরের বিন্দু নিয়ে আসতে ।
কিন্তু আমার তো একটা জীবন আছে
একেবারে নিজস্ব একটা জীবন
অকপটে পারি নিঃশেষ করে দিতে
তোমার জন্য
আনন্দের সাথে ।
স্মৃতি
স্মৃতি
পুরনো পাতা ঝরে পড়ে --
সে তো পড়বেই
ঝরা পাতাই বহন করে আনে
আগামী দিনের পূর্বাভাষ
নূতনকে অভ্যর্থনা করার জন্য
পুরাতনের বিদায় তাই অপরিহার্য
আমাদের স্মৃতিগুলি
সময়ের কোপে বলি হয়ে গেলেও
মুছে যায় না
আমরা মুছে যেতে দিই না
বসন্তের বিদায় প্রত্যাশা করে থাকে
আগামী বসন্তকে
এমনি - চিরদিন - চিরকাল -
চিরকাল মানব মনে , দেহে ঘটে বিবর্তন
একটি করে বসন্ত হয় অতীত স্মৃতির প্রক্ষেপন
ইতিহাসের গর্ভে এক একটি স্মৃতি ।
Tuesday, September 25, 2018
চেয়ারটা
চেয়ারটা
অনেকবার ভেবেছি
এবারে
এই হাতলভাঙা চেয়ারটাকে
অবসর দেব
চেয়ারটার বয়সও কম হল না
আর কতদিন
নিঃশব্দে ঘাড় গুজে
এক একটি শরীরের ভার বহন করবে
পারিনি তবু
এক একটি আবেশ
পারেনি সরিয়ে দিতে চেয়ারটাকে
সারাদিন শেষে কর্মশ্রান্ত শরীরটাকে
টেনে হিচড়ে নিয়ে এসেছি চেয়ারটার কাছে
অসীম স্নেহে গ্রহন করেছে আমায় সঙ্গে সঙ্গে
নিয়ে গেছে অতীতের কোন মায়াবি রাতে
যখন
জ্যোৎস্নার সমুদ্রের মাঝে
চেয়ারটাতে বসে
রাতের তারা গুনেছি
বসন্তের দুপুরে জানালার ধারে বসে
কোকিলের বিশ্রম্ভালাপ শুনেছি
আবার
তোমার আমার প্রেমের সাক্ষিও এ
তাই
শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠেনি অবসরের
নির্দ্বিধায় বহন করেছে আমায়
আমৃত্যু ........
শুধু চাই
শুধু চাই
আঁধার রাতের ধাঁধাঁর মাঝে
হারিয়েছিলাম যবে
সোনালি এক আলোর দিশা
জাগল অনুভবে
ক্লান্ত শ্রান্ত পথের মাঝে
চিরপথিক আমি
চিনিয়েছিলে পথের দেবতা
মৃত্যু উত্তরনী
পথের ধারেই ঘর বাঁধলাম
বুকে নিয়ে আশা
চাই না যে আর কাঁচের পুতুল
চাই যে ভালোবাসা
চাই না মুক্ত , চাই না সূক্তি
চাই না আমি হেম
পরশে পরশে দিয়ে যেতে চাই
বুক ভরা এই প্রেম ।
Sunday, September 16, 2018
Thursday, September 13, 2018
তবে কি হারিয়ে গেছ
তবে কি হারিয়ে গেছ
বড় রাস্তাটা পার হতে গিয়ে
দেখেছিলাম তোমায় ,
কিন্তু -
একটা স্টেট বাস থামতেই
হারিয়ে গেলে তুমি ,
আর খুঁজে পেলাম না -
সেদিন খেলার মাঠে
একদল ছেলের মাঝে
তোমায় দেখেছিলাম ।
কিন্তু -
চোখ ফেরাতেই
'গোল' , 'গোল' চিৎকার
হারিয়ে গেলে তুমি
একবার পুজো মন্ডপে
খাঁকি রঙের শার্ট গায়ে
বসেছিলে তুমি -
কিন্তু -
মায়ের ডাকে পিছন ফিরে চাইতেই
আর দেখতে পেলাম না তোমায় ।
তবে কি হারিয়ে গেছ
বহু জনের মাঝে
অস্পষ্ট কুয়াশার আঁধারে ?
তবে কি হারিয়ে গেছ
যন্ত্র দানবের ভীড়ে
শিউলির সুগন্ধির মত ?
Friday, August 31, 2018
নির্বাসন
নির্বাসন
আমাদের শিরায় শিরায়
বইছে নিষিদ্ধ রক্ত
তাইতো নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি
আকর্ষণ এত প্রবল ।
আমরা সন্তান সেই -
আদম আর ইভের
তাই -
অজানাকে জানার ইচ্ছে প্রবল ।
কুটিলচক্রী প্রানীরাকত সহজেই
আমাদের কান ভারী করে
ভুলে যাই আমাদের মনুষ্যত্ব ,
ভুলে যাই আমাদের মনুষ্যত্ব ,
ভুলে যাই আমাদের অধিকার ।
তাই -
হাত বাড়াই নিষিদ্ধ গাছের দিকে ।
পদে পদে নির্বাসিত হই আমরা
স্রষ্টার কাছ থেকে ।
ছেলেবেলার কাটুমকুটুম
ছেলেবেলার কাটুমকুটুম
ছেলেবেলার সেদিনগুলো
ছিল কত রঙীন
রঙফানুষে ভেসে যেতাম
স্বপ্ন নিয়ে সেদিন
স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন
আপনি মাষ্টারমশাই
স্বপ্নভেলায় কাটুমকুটুম
কোথায় ভেসে যাই
হয়নি দেখা অনেক কিছুই
দেশবিদেশে গিয়ে
আপনার বলা চিত্রকথায়
সবই যেত মিলে
মনে মনে ভেবেছিলাম
যেদিন বড় হব
আপনার মত ঞ্জানসাগরে
ঠিক পারি দেব
দেশবিদেশ আর দূর রবে না
যেদিন কাছে যাব
এমনি কি আর থাকব নাকি
ঠিকই বড় হব ।
Wednesday, August 29, 2018
উড়ণ্ত চিল
উড়ণ্ত চিল
উড়ণ্ত চিল তুমি -
পাখা মেলো নীল আকাশের বুকে
কত সুখ কত দুঃখ পৃথিবীর বুকে
রাখ কী খবর কোনো ?
এখানে মানুষ জন্মে মানুষ মরে
ভাগারের কোনে পড়ে থাকে মরা প্রাণী
স্নেহ ভালবাসায় জড়িয়ে থাকে গাছপালা
আবার সামান্য একটু ভুল বোঝাবুঝি
ভেঙে দেয় মানুষের মন ।
এখানে ফুল ফোটে নানা রঙের
এখানে পাকা ফল টুপ করে পড়ে মাটিতে
এখানে মানুষ মানুষকে খুন করে
এখানে ব্যাঙ খায় সাপে ।
প্রতীক্ষা
প্রতীক্ষা
শরতের শুভ্র আকাশ -
দ্বিতীয়ার চাঁদ তখন মধ্য গগনে ,
ঝিরিঝিরি বাতাস তখন কুয়াশার
হালকা পরশে মৃদুমন্দ বইছে ।
রজনীগন্ধার ক্ষেতের ধারে
বসে থাকা দুটি প্রাণী ।
রজনীগন্ধার গন্ধে মোদিত বাতাস
সুরসুরি দিচ্ছিল নাকে ।
পাশাপাশি দুটি প্রাণী ,
হাতের পরে হাত ।
মন দেওয়া নেওয়ার পালা সাঙ্গ করে
অসীম মিলনের প্রতীক্ষা শুধু ।
এমনিভাবে - শুধু এমনিভাবে
আজন্ম রয়েছে বসে তারা
যুগ যুগান্তর ধরে -
বয়ে চলে সময় , কেটে যায় প্রহর ,
তবু হাতের পরে হাত ,
প্রতীক্ষা শুধু মিলনের ।
হতাশা
হতাশা
মনের ছবি যায় না যে দেখা
না জানি আরো কত আছে লেখা
এভালে ।
স্মৃতির পরশ ছুঁয়ে চলে যায়
বেদনায় সব ফিকে হয়ে যায়
একালে ।
দিনের পরে দিন চলে যায়
প্রিয়জন শুধু দূরে চলে যায়
হালকা হাওয়ায় বেদনা জাগায়
পাপরিগুলি ঝরে পড়ে যায়
সাতসকালে ।
যৌবন আজ কুন্ঠিত , ধুলায় শুধুই লুন্ঠিত
বৌ কথা কও শঙ্কিত , শুধু
এদিক ওদিক চায়
Wednesday, August 15, 2018
দরিদ্র মাতা
দরিদ্র মাতা
মাগো , তোমার দারিদ্র-ক্লিষ্ট
অমন পাংশু মুখ
যতবার দেখি ব্যাথা লাগে মনে
ভেঙে যায় এই বুক
কাঁদে তোমার সন্তানেরা
একমুঠো ভাতের তরে
অক্ষম তুমি , দরিদ্র মাগো
চোখে আসে জল ভরে
তবুও প্রশান্তি তোমার সৌন্দর্য
সুধারস পানে
তবুও কোকিল মুখরিত হয়
নব অরন্যের গানে
তবুও এখানে অঞ্চল ভরে
ফোটে কত ফুল ও ফল
হোক না পৃথিবীর একভাগ স্থল
তিনভাগ লোনা জল ।
Sunday, August 5, 2018
মিলন মেলা
মিলন মেলা
নববর্ষার প্রথম ফোটাটি
সহসা আকাশ থেকে
কচিপাতার নিবিড় ডাকে
পড়ল ভূমির পরে
উচ্ছ্বসিত কচিপাতার নরম হৃদয়
পুলকে উঠল নেচে
যেন বহুদিন যেচে
প্রেম সে পেয়েছে
মিলন ডোরে উচ্ছ্বসিত
শরীরখানি তার
কাঁপছে বারে বার
আনন্দ অপার
পাতায় পাতায় প্রেমের সুধা
শিকরে মাতাল হাসি
বলছে ভালোবাসি
আকাশ পথে বাদল বেলায়
কচি পাতার মিলন মেলায়
বেজেছে আজ বাঁশি
ওগো , বেজেছে আজ বাঁশি ।
Thursday, August 2, 2018
সুনামি
সুনামি
প্রবল জলোচ্ছ্বাস
ঝিনুক ভাঙা সুপ্ত মধ্যরাত
চোখের কোনে বিপন্ন বিস্ময়
যোজন যোজন দূরে তোমার শুভ্রপক্ষ শপথ
শতাব্দীর বক্ষভেদী লক্ষহীন গতি
আবার জমেছে ধুলো , আবিল অশ্মক্ষুর
ক্যাকটাসে ফুটেছে ফুল , বিলম্বিত লয়
রক্ত ঝরে , ব্যাথাতুর শ্রাবন দুপুর ।
মহাকাব্য
মহাকাব্য
পর্বত শিখরে পূর্ণিমার চাঁদ
পিচ্ছিল পাথরের পাহাড়
উত্তরন অসম্ভবপ্রায়
রাজপথে জমেছে ফাঙ্গাস
কষ্টসাধ্য এ বেড়াল পার
আরো দূরে –
বহুদূরে মাইল ফলক
তখন মধ্যরাত
দরজায় করাঘাত
অকস্মাত্ -
জোত্স্নার বন্যা ঢেউ তোলে প্রাঙ্গনে
অঙ্গন শূন্যময়
ঝাউবনে বাতাসের ঢেউ
বাতাসে লবনের স্বাদ
লবন রক্তলাল
ফুসফুসে বিষাদ
ক্লেদাক্ত শ্বাস
জীবন তবু ইউলিসিসের আশা
Monday, July 30, 2018
আচমন ২
আচমন ২
ফুল দাওনি কোনোদিনও
পাপড়ি দিলে ছুড়ে
মেঁহেদি কাঁটায় রক্ত দিলাম
মজ্জা মাংস খুঁড়ে
কাঁটা ধুয়েছ , হাত ধুয়েছ
ফনীমনসার ঝোঁপে
আমার হাতে শঙ্খ-বিকেল
থরথরিয়ে কাঁপে
রাত্রি নামে , রাত্রি আসে
নিঝুম পদক্ষেপ
সাদা পায়রার ঝরা পালক
সমুদ্র আক্ষেপ
বালির কনা ঝিরিঝিরি
লবন লবন স্বাদ
আকন্ঠ পিপাসিত
সমুদ্র নিখাঁদ ।
Friday, July 27, 2018
মরণ - ঘুম
মরণ - ঘুম
আজন্মের ঘুম নামুক দুচোখে আমার
ঘুম - ঘুম -
আমার ক্লান্তি দূর করো
দীর্ঘদিনের অবসাদ শিরায় শিরায়
মন -
আমার বিষন্নতা হরো
জ্বলে যাওয়া , ছিন্নভিন্ন এ হৃদয়
জীবন পিপাসায় কত না তৃষিত
মননে মননে আমার এ কেমন হাহাকার
নিরাশার অন্ধকারে জীবন শোষিত
কমে যাক আয়ু - প্রেমহীন আয়ু
মরনের কামড় পড়ুক এবার
এসো নেমে ঘুম - মানসী ঘুম
মরনের ঘুম ঘুমাই এবার ।
Wednesday, July 25, 2018
গল্প - উপান্ত
উপান্ত
পায়ে পায়ে ওরা শ্মশানের বেশ ভেতরে চলে এসেছে । অবশ্য বিক্ষিপ্ত কিছু চাপা দেওয়া মাটি আর পোড়া কাঠের টুকরো ছাড়া এমুহূর্তে মনে হবার উপায় নেই যে এটা শ্মশান । এখানে ওখানে গেরুয়া কাপড় পরা রক্তচক্ষু সাধুসন্ন্যাসীদের ঘিরে ছেলের দল গঞ্জিকা সেবনের সাথে সাথে সাধন বিষয়ক আলোচনায় ব্যস্ত । কোথাও আবার গৃহকর্তীদের হাতের সিঁদূর আলতায় সন্ন্যাসীদের পা আর ত্রিশূল ধুয়ে যাচ্ছে । এই শ্মশানে নাকি কোনোদিন চিতার আগুন নেভে না ।
পূণ্যার্থীদের পাশ কাটিয়ে নদীর বেশ কাছাকাছি চলে এলো ওরা ।নদীতে এখন উপছে পড়া জল । রঙ্গময়ী আনন্দে নাচতে নাচতে বয়ে চলেছে । আর পথের পাশে যা কিছু নজরে আসছে তাকে একবার করে স্পর্শ না করলে যেন তার হচ্ছে না । আ-বাঁধানো নদী । জল যখন কম থাকে তখন স্নানের সুবিধার জন্য পাড় কেটে নেয় লোকেরা । আবার গ্রীষ্মকালে নদীতে প্রায় জলই থাকেনা । এর ওপর দিয়ে তখন হেটেই পার হওয়া যায় ।
জনকোলাহল এখানে বেশ স্তিমিত । পায়ের নীচে নদীর কলকল শব্দ । একটা নুয়ে পড়া গাছের গুড়ির ওপরে গিয়ে বসল আশিষ । সূর্যের তেজ একটু একটু করে বাড়ছে । কম্পিত জলের ওপর সূর্যের আলো পড়েছে ।আর ঠিক জলের ওপরে থাকার কারনেই আলো ছায়ার এই খেলা প্রতিফলিত হচ্ছে আশিষের মুখে । অন্য মানুষ বলে মনে হচ্ছে তাকে ।
অনেকক্ষণ পর প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণ করে আশিষ প্রথম কথা বলল , ' বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে ঘটনাটা ঘটাইনি । ' স্বগতোক্তির মত কথাগুলি বলে গেল আশিষ । শেষের দিকটায় যেন গলাটা একটু কেঁপে উঠল ।
দেবু হাস্যরসিক মানুষ । অনেকক্ষণ ধরে এই থমথমে ভাব ভালো লাগছিল না তার । ঝাঁঝিয়ে উঠল দেবু , ' তোর সবটাতেই বাড়াবাড়ি । অ্যাক্সিডেন্ট ঘটতেই পারে । এতে অত চিন্তার কি আছে । আমাদের তো আর কেউ দেখেনি । '
কথাগুলি আশিষের কানে গেল কিনা বোঝা গেল না । কেননা তার মুখ আরো বেশি করুণ বলে মনে হল চয়নের ।
চয়নের চোখের সামনে ভেসে উঠল বীভত্স সেই ছবিটা ।গাড়ী যে খুব বেশি জোড়ে চলছিল তা নয় ।কিন্তু কিভাবে বা কোথা থেকে যে মহিলাটি গাড়ীর সামনে চলে এল আর ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গিয়ে পড়ল রাস্তার পাশের জঙ্গলে ! আর তার কোল থেকে একটা পোটলা ছিটকে এসে পড়ল তাদের গাড়ীর চাকার একদম সামনে ।মুহূর্তে গাড়ীর চাকা একেবারে থেতলে পিষে ফেলল সেটাকে মাটির সাথে ।
গাড়ী থামিয়ে ছুটে গিয়েই আশিষ চীত্কার করে উঠল । ওরা তিনজন ততক্ষনে চল এসেছে । গাড়ীর ডান চাকার নীচে একটা কাপড়ের পুটলির মধ্যে মাস কয়েকের একটা শিশু । মুখটুকু দিব্যি অবিকৃত । চাকা রয়েছে বুকের ওপর ।
চয়ন তাকিয়ে আছে জলের দিকে । পারের কাছাকাছি এক - একটা ঘূর্ণি দেখা যাচ্ছে ।বেশিক্ষণ থাকছেনা ঘূর্ণিটা । একসময় তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে জলের মধ্যেই মিশে যাচ্ছে । নদীর গতি তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হচ্ছেনা ।
Subscribe to:
Posts (Atom)