চিঠি - প্রথম পর্ব
পুরনো খবরের কাগজ বিক্রি আছে ....
পুরনো বই খাতা বিক্রি ......
এই যে বই খাতা বিক্রি .... এদিকে এস ....
বই খাতা নয় । গত বছরের পুরনো খবরের কাগজগুলো জমে আছে । গতকাল ঘর পরিস্কার করতে গিয়ে সেগুলো সব বার করা হয়েছে । এখন শুধু বিক্রির অপেক্ষা ।
কাগজগুলো আনতে গিয়ে নীচের কাগজটা হাত থেকে পড়ে গেল । বাকিগুলো কাগজওয়ালার কাছে দিয়ে এলাম । পড়ে যাওয়া কাগজটা নিয়ে যাচ্ছি - মাঝখানটা মোটা মোটা লাগল । খুলে দেখি ইনভেলপ খামে লেখা একটা চিঠি । চিঠির মুখটা এখনো খোলা হয়নি । ঠিকানা শান্তিপুরের । কোন এক বিনয়কৃষ্ণ মজুমদারের শিরোনামে । প্রেরকের নাম সুহানী কর্মকার - আমার দূর সম্পর্কের এক দিদি ।
আমি তখন বেশ ছোট । একদিন সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসে মনে পড়ল সারাদিন তো বাবাকে দেখিনি । তাই তো । বাবা কোথায় গেছে । ছুটে মার কাছে গেলাম -
- মা বাবা কোথায় ?
- কলকাতা গেছে ।
- কখন ?
- সকালে ।
মনে পড়ল ঘুম থেকে উঠে বাবাকে দেখিনি । সকালে প্রতিদিনই আমাকে পড়তে যেতে হয় বাড়ির সামনের মাঠটা পেড়িয়ে কাজলদিদির কাছে । যথারীতি পড়ে এসে স্নান খাওয়া করে স্কুল । তারপর স্কুল থেকে ফিরতে না ফিরতেই গেটের সামনে অপেক্ষা করে থাকে আমার খেলার সাথিরা । আমিও কোনোরকমে একটু খেয়েই ছুটি মাঠে । মাঠ থেকে ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যা । কাজেই এর মধ্যে কে বাড়িতে আছে না আছে তার দিকে লক্ষ্য থাকে না । পড়তে বসলেই মনে পড়ে । কেননা তখন বইয়ের তুলনায় সারাদিনে ঘটে যাওয়া ছোটবড় ঘটনাগুলো মনের কোনে ভীড় করে বেশি । আর পড়তে বসে এসব কাহিনী উপকাহিনী শোনাবার প্রকৃষ্ট মানুষ হল আমার বাবা । বলাই বাহুল্য পড়ার থেকে আমাদের গল্প হত বেশি । তারপর যখন ঘুমে ঢলে পড়তাম তখন মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলত - সারাদিন এত ধকল কি শরীর নিতে পারে চল চল খেয়ে ঘুমিয়ে পড় ।