Sunday, March 31, 2024

প্রতিবাদী শব্দেরা তালাবন্ধ -- পরেশ চন্দ্র সরকার।

প্রতিবাদী শব্দেরা তালাবন্ধ
পরেশ চন্দ্র সরকার
২২_০৩_২০২৪_ইং

গতানুগতিক সৃজনীশক্তিরা মেরুদণ্ডে অন্ধ
প্রতিবাদী শব্দেরা 'বধির' জেলে তালাবন্ধ।

এক অর্থে বাহাদুরি
চলছে তাই সবসময়ই জ্ঞানদার জ্ঞান বাণী।
তুমি অচ্ছুৎ, ভীতু, কমজুরি,
কিছু ব'লেছো তো ঠুকে দেবো মানহানি।

ঝুঁকে যাওয়া বর্তমান
বিনষ্টের শেষ সোপানে দাঁড়িয়ে ঠায়,
এদের মধ্যে প্রচুর আছে শক্তিমান
অথচ একদা দাপুটে সর্বশক্তি গেছে কোমায়।

কে আর জড়াতে চায়
মৃত্যু থেকে উটকো যাবতীয় ঝামেলায়,
বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার দায়
আমার নয় অন্যের, কেনো শুধু জড়ানো মামলায়?

এসময় আয়েসি, আয়েস ক'রার
ঘুরে বেড়াচ্ছি, জ্ঞান দিচ্ছি, খাচ্ছি ঘুমোচ্ছি দিব্যি!
মূষিক উপাধি খারাপ কিছু কি জীবনধারার?
মার্জার থাকুক স্বভাবসিদ্ধ, আমি তো আছি হেব্বি!

জীবনতরীর মাঝি -- দেব মন্ডল

  জীবনতরীর মাঝি
  দেব মন্ডল 
  ২২/০৩/২০২৪
কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে, জীবন তরী দিক হারিয়ে লাগছে  কোন কিনারায়। 
এখন আকাশে মেঘ আছে, কবে আবার সূর্য উঠবে আমি কিন্তু জানি না। 
মাঝির হাতে বৈঠা দড়ি, যেমন চালায় তেমন চলি। 
কালো মেয়ে নৃত্য করে তাহার তালে জগত মাতে। 
সে যেমন চালায় তেমনি চলি, মা যে আমার রক্ষা কালি। 
সবাই বলে মাটির কালি আমি দেখি সে জীবন তরীর বড় মাঝি। 
চালাচ্ছে নৌকা দিবারাত্রি ভীষণ ভালো কলাকৌশালি। 
কারও ডুবিয়ে বাঁচায়, ডুবিয়ে মারে, পাপের ক্ষমা নাই করে। 
সন্তানের মতো রাখেন আগলে, খ্যাত তিনি জগত মাতা নামে। 
কালো দিয়ে হয় না বিচার, মায়ের কাছে রূপের  আছে কি  দাম। 
বিশ্বাস হারিয়ে ভুল নদীতে তুলেছিলাম  পাল। 
মাঝ নদাীতে ডুবে গেলো আমার সোনার নাও।
সে যেমনে নাচায় তেমনি নাচি অসৎতের সব সঙ্গ ছাড়ি, হিংসাবৃত্তি দূরে ফেলে, সকল ধর্ম সমান দেখে সামনে আগাই পা।  
ভাবি এখন, মানুষ আমি, মানুষের মাঝে বাঁচতে হবে, প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। 
ফিরতে হবে  বাংলার বুকে, রাখতে হবে শ্যামনগর, সাতক্ষীরার মান। 
তবেই জন্ম সার্থক হবে আমার।

খেলাঘর -- তপন চট্টোপাধ্যায়

খেলাঘর 
তপন চট্টোপাধ্যায় 
28.03.24   
    
 কতো কাল পর দেখলাম তোমার মুখ ,       
মেঘে ঢাকা শীর্ণ চাঁদের মতো নিস্প্রভ,
অঘ্রাণের ফসল কাটা মাঠের মতো রিক্ত,..                      অশ্বত্থের ডালে বসা রাতের আঁধার মাখা 
সাথীহারা পাখিটির বিহ্বল চোখের মতো ছিল 
তোমার চোখ ,মৃত নক্ষত্রের মতো আলোহীন শীতল,নিস্তেজ...,    
দেখলাম ব্যস্ততম শহরের চলমান জনতার স্রোতের মাঝে তুমি একাকিনী নিঃসঙ্গ বসে আছ যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে,                                        
তোমার বিষণ্ণ মুখে দেখি  দীর্ঘ ক্লান্তির ছায়া--  
আষাঢ়ের শেষ বিকেলের কাজল কালো মেঘের মতো... মুখ মন্ডলে  এখনো লেগে আছে উৎকণ্ঠার  প্রলেপ , উপেক্ষা নয় আজ আর, হা-হুতোশ করারও কিছু নেই তবুও এক পরম অনুকম্পায় চোখের কোণ ভিজে উঠেছে  নিজের অজান্তেই ...                                        এরকমই হয়তো হবার ছিল , 
অদৃষ্টের কী নির্মম  পরিহাস!   
এই ব্যস্ততার জন অরণ্যে, দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দু'জন  মানুষ অথচ যেন  কতো আলোকবর্ষ দূরে আছি , আজ আর কেউ কারোর খোঁজ রাখে না ,
অথচ একদিন  ...,  থাক সে কথা,
নিষ্ঠুর সময়ের সংঘাতে পৃথিবীর ভাঙাগড়ার খেলায় এমনিভাবেই হয়তো ভেঙে যায় কারো কারোর জীবনের খেলাঘর!!

Sunday, March 17, 2024

তোমার নামে বসন্ত -- জয়া গোস্বামী


তোমার নামে বসন্ত
জয়া গোস্বামী
০৭-০৩-২০২৪
তোমার নামেই প্রতি বার যেন এ ঊষর মনে ,
বাসন্তিকা আসে বারেবারে কৃষ্ণচূড়া বনে।
তোমার জন্য চুপকথারা আবার কথা কয়,
কৃষ্ণচূড়া ফুলের রেণু ওদের অঙ্গে লেগে রয়। 

যৌবনের উদ্দামতায় বয়ে এসেছে  বসন্ত,
তোমাকে দেখে হারিয়ে ফেলি আমি আদি অন্ত।
মন-প্রাণ কেড়ে নেওয়া এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত, 
কৃষ্ণচূড়া ফুলে কেশ সজ্জিত  মন কেন তবে অশান্ত?

তোমার জন্য সেজেছি আমি অপরূপার বেশে,
জোছনার ঝরনা ধারায় চন্দ্রিমা  দেখে আজ হাসে।
কবির গানে বসন্ত ধারায় ফিরে নিজেই আসে,
ধ্বনি ওঠে"এসো হে এসো হে" বসন্ত দখিনা বাতাসে।

এই আনমনা মন, মনের ভেতর  উঠেছে তরঙ্গ,
বাসন্তিকার প্রেমে গোধূলির রঙে দেখি কতোই রঙ্গ। 
তোমার জন্য  এনেছি আবির বাসন্তিকার থেকে,
যদি তোমার জন্য বসন্ত আসে কোকিলের ডাকে।

তোমার জন্য পুষ্পকাননে ভ্রমরের  সকালে গুঞ্জন,
প্রিয়তম বসন্তে করবো কেন বলো মানভঞ্জন ?
নব পল্লবে বৃক্ষরাজি আবার হয়েছে  আচ্ছাদিত, 
ঝরা পাতারা ঝরে আজ দেখো ভূমিতে শায়িত। 

তোমার জন্য তন্দ্রার ঘোর কেটেছে নিশীথ রাতে,
বাসন্তিকার  উষ্ণতা ছোঁয়া তোমার থেকে পেতে।
আমি তো দুরন্ত ফাল্গুন গোটা গায়ে তোমার পরশ মাখি,
কৃষ্ণচূড়া বনে কাঁদে কোকিল তাকে কোথায় রাখি।

Saturday, March 16, 2024

বসন্ত যাপন -- উজ্জ্বল বিশ্বাস

বসন্ত যাপন
উজ্জ্বল বিশ্বাস
 ১৬  / ০৩ / ২০২৪
বসন্ত কে ঘিরে ভাষার শরীরে
কবিরা মাখায় রঙ,
আঙিনার মাঝে নব প্রেম রাজে
শালিকের সমাগম ।

মধুর বাঁশরী কানাইয়া বাজায়
আজও রাধিকার তরে,
রঙের মাধুরী হৃদয়ে চাতুরী
সখারা ঘিরে ধরে ।

প্রেম আলাপন চকিত নয়ন
হৃদয় ফুটন্ত জুঁই,
ভালোবাসি তারে প্রেম বাহুডোরে
প্রেমের পরশে ছুঁই ।

বসন্তের ক্ষণে প্রেমিকের মনে
প্রেমের দোলা লাগে,
আম্র মুকুলের মাতালি ঘ্রাণে
হৃদয়ে বাসনা জাগে ।

রঙের ফাগুনে প্রেমিক যতনে
রাঙায় হৃদয় মন,
ভালোবাসা যার হৃদয় জুড়ে
সে বোঝে এ যতন  ।

নবপত্রাঞ্জলি প্রেমিকের বুলি
সবুজে প্রাণবন্ত,
হৃদয় কানন ফুল সমাগম
প্রেমিক সেজেছে সন্ত  ।

যা কিছু তার আছে আপনার
উজাড় করে দিতে চায়,
দেওয়ার মাঝে সব সুখ তার
হৃদয় খুঁজে পায়  ।

আমিও যতনে প্রেমিকের মনের
মাধুরী কুড়ায়ে আজি,
বসন্ত যাপনে ফাগুনের ক্ষণে
ভরিলাম কবিতার সাজি ।

Wednesday, March 6, 2024

অমর আমার একুশ -- সুখের ঘোড়ই

অমর  আমার একুশ 
সুখেন্দু  ঘোড়ই 
২১/২/২০২৪ 
মিষ্টি ছন্দ বৃষ্টি গন্ধ শুদ্ধ মুগ্ধ ভরসা 
মুক্তি শক্তি কৃষ্টি সৃষ্টি বাংলা মোদের মাতৃভাষা । 
বাংলা আমার বুকের ভাষা আমার মায়ের স্নেহ 
মরণ বাঁচন জীবন যাপন ভুলিতে পারিনা কেহ । 
এপারে গঙ্গা ওপারে পদ্মা দুই বাংলার টান 
নজরুল সুরে মোরা ভাই ভাই হিন্দু- মুসলমান । 
রিক্ত হস্ত সিক্ত করে ভাষার সুধা ধারায় 
তীব্র প্রতিবাদের কথায় শত্রু তাহার শক্তি হারায় । 
গভীর দুখে সুখের বাণী শুনি হৃদে কানাকানি 
বাংলা আমার মায়ের ছোঁয়া যতই করো হানাহানি । 
সেই ভাষাকে রক্ষার তরে দামাল ছেলেরা বিদ্রোহ করে 
শতবাধা উপেক্ষা করে মনে অদম্য সাহস ভরে । 
বাংলা মোদের মাতৃভাষা তাই হবে সে "রাষ্ট্রভাষা"
ফাগুন রাতে দামাল মাতে যতই হোক সর্বনাশা । 
একুশে ফেব্রুয়ারী হয় জোরদারী বাংলা স্বীকৃতি আন্দোলন 
অন্ধ বিচারে নির্বিচারে সিপাহী করিল গুলি বর্ষণ । 
কৃষ্ণচূড়া রঙে রাঙিল ভাসিয়া রাস্তা তাজা খুন 
করুণ কান্নায় ভোলা নাহি যায় সেই আটই ফাগুন । 
রক্ত বৃষ্টি ঝরিল ধরায় সালাম বরকত নিধনে 
রসিক জব্বার সফিক সাথে যায়না দেখা নয়নে । 
জ্বলিল আগুন চোখে মুখে সজন হারা ক্রন্দনে 
শহর নগর গ্রাম প্রান্তর ন্যায় অধিকার আন্দোলনে । 
শহীদ তোমায় শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা কলকাতা পাশাপাশি 
গাহে"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি" ।।

Thursday, February 1, 2024

বিকেলের কান্না -- প্রদীপ কুমার বর

 বিকেলের কান্না
 প্রদীপ কুমার বর
 ০৬/০১/২০২৪


বিষণ্ণ বিকেল চেষ্টা করে খুঁজে পেতে
সকালের এক গুচ্ছ গোলাপের রং!
ইচ্ছে ছিল দিগন্তের নীল ক্যানভাসে,
ছোট্ট মৌটুসীর পাখনায় আঁকি
শান্তির এক পৃথিবী! প্রস্ফুটিত কুসুমের
মিষ্টি ইশারায় মধু-মক্ষিকার অবাধ বিচরণ;
দোয়েল,শ্যামা, কোকিলের মুক্তির মন্ত্র,
যন্ত্র সভ্যতার হাল হকিকত ছেড়ে
শ্যামলিমা প্রকৃতি-মায়ের সকালের ছবি!
সময় শোনে না বারণ,মারণ ব্যাধির 
কঠিন কলম বাধ্য করে আঁকতে হবে
 অন্য কোনো ছবি!

আঁকি, দেবদারু'র 
ডানা কাটার নির্বাক যন্ত্রণা, গন্ধহীন পলাশের অস্ফুট বেদনা,
সাগর কূলে আছড়ে পড়া তরঙ্গের
সকরুণ কান্না!
প্রাচীন জনজাতির অবলুপ্তির কাহিনী,
লুপ্তপ্রায় বন্য পাখপাখালির মৃত্যুরহস্য!

নিম্নচাপ,পার্শ্ব চাপ ক্রমশ মারে টান --
সন্ধ্যার শীতল দেশে! ফেঁসে যাওয়া
টায়ার পারেনা তার উর্দ্ধাংশের  
ভার‌ সহ্য করতে। সকালের সজীবতা 
দিয়েছে হারিয়ে হেলায়। সে যেন
এক বয়স! মানে না বাঁধন,
দূরন্ত ঘূর্ণিঝড়ের দাপুটে চেহারা
হুড়মুড় করে দেয় গুঁড়িয়ে গোপনীয়তার
সমস্ত গ্যালারি।খরচের বহর শহর থেকে দূরে
সরিয়ে দেয় শনিবারের বারবেলায়!
হায়! শিল্পী, তোমার সৃষ্টি আজ
 সুখের উল্লাস হারিয়ে গোধূলির
রক্ত মিশ্রিত অশ্রুজলে আঁকে
   নিরুত্তাপের নষ্টালজিক 
ধূসর পাণ্ডুলিপি।

অন্ধকারের আত্মাহুতি -- প্রদীপ কুমার বর

 অন্ধকারের  আত্মাহুতি
 প্রদীপ কুমার বর
 ২১/০১/২০২৪


বন্ধ্যা রাত্রির আবর্জনা ঠেলে জ্যোতির উদয়,
ইঙ্গিত দেয় অনন্ত প্রসারিত স্নিগ্ধ সামিয়ানায়
প্রতিভাত হবে উষ্ণতার জীবন্ত কিংবদন্তি।
ইতিউতি অন্ধত্বের প্রগাঢ় চুম্বন..
মিথ্যে আস্ফালনের ভোঁতা অস্ত্র মুখ লুকায়
চরম শীতলতার গহন অন্ধকারে!
অঙ্গ প্রত্যঙ্গে বিষাক্ত কীট গোপনে দংশায়,
নেশায় পেশায় বীরত্বের দাবিদার
অহংবোধের সমাধিস্থলে ঢাকা পড়ে।

রাকার নিন্দায় রক্তবীজের বংশ,
ধ্বংসের প্রকট চক্রান্ত করেও‌ ব্যর্থ।
অনর্থক ব্যস্ততা ত্রস্ত হরিণীর পিছনে ধাবমান,
কুস্তির প্যাঁচে ধাঁধা লাগে রশির  বাইরে থাকা
উৎসুক জনতার, বহুল চর্বিত চতুরতা
চঞ্চলের অঞ্চল ছেড়ে বঞ্চনার বেসাতি লয়ে
ধুঁকে মরে শুকতারার বিপরীতে!
আজানুলম্বিত হস্ত যুগল উচ্ছৃঙ্খলতার 
ডিগ্রি অর্জনে সক্ষম, কিন্তু শৃঙ্খলার শিকলে 
বন্দী হতে বুদ্ধির পাঠশালায় প্রয়োজন 
বোধোদয়ের শিক্ষা।

দীক্ষা গ্রহণকারীর হম্বিতম্বি রূপ --
হাসির উদ্রেক ঘটায় অন্ত্যোদয় শ্রেণীর! 
অন্ত্যে উদয় কি আদি সে বিচারের ভার
আগত দিনমণির,যার এক হস্তে কমণ্ডলু ,
অপরাপর হস্তে চক্র,মুদগর, অশান্ত অশনি
ও বরাভয় ! বিষয়ের বিভীষিকা 
যার কলমের কালি --সে মহাজন 
নিন্দুকের গালি, তালি দিয়ে উড়িয়ে দেয়
দিনের বিচ্ছিন্নতাবাদী লোভাতুর রাত্রির 
পরাকাষ্ঠা থেকে। 

শূন্য আরণ্যক জীবন 
পূর্ণতার কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে
লাল, নীল , সবুজের মুক্ত আবাসনে।
পিছুটান ক্ষণিকের অতিথি হিসেবে
হৃদয় তরঙ্গে ছোট্ট একটি ঢিল ছুঁড়ে মারে।
সমুদ্র তট-সদৃশ্য দৃশ্যমান মরণ আর্তনাদ
চির প্রস্থানের বেদি মূলে আছড়ে পড়ে।
ভবিতব্য হয়তো তাই, রাত্রির অনন্ত সলিলে
শোক মালার বিদায় লগ্নে নব রূপে 
আবির্ভূত নিত্য নতুন বেশে নবীন সূর্য।

বধ্যভূমির ত্রাতা হয়ে -- বিজয়া মিশ্র

 বধ্যভূমির ত্রাতা হয়ে
 বিজয়া মিশ্র
 ২৩.০১.২০২৪


জলন্ত আগ্নেয়গিরির মতোই 
একদা আছড়ে পড়েছিলে তুমি নেতাজী সুভাষ
ঘুমন্ত পরপদানত জাতির শিয়রে,
অচিরেই শব্দে বাক্যে উচ্চারণে 
আর সাংগঠনিক দক্ষতায়
তোমায় ঘিরে নির্মিত হয়েছিল
আকাশচুম্বী প্রত্যাশা।
দুর্বলতার ক্ষয়রোগ নিমেষে বিলীন হয়ে
দুর্ভেদী মানববন্ধন গড়ে উঠেছিল প্রত্যয়ে প্রতিজ্ঞায়
পরপদলেহনের অসুখ ভুলে।
তুমি প্রমাণ করেছিলে ন্যায়ের শক্তি কী দুর্ণিবার...
তাইতো আসমুদ্র হিমাচল নয় শুধু
বিদেশের মাটিতেও সাগ্ৰহে অভিনন্দিত হলে অচিরেই।
তাইতো তোমার সাম্যের ইঙ্গিতেই সংগ্ৰামী ঐক্য
কী নিপুণ শৃঙ্খলায় সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে উন্মুখ হয়েছিল! 
সে প্রত্যয়ের কেবল জন্মদিন থাকে
কেবল অপেক্ষা থাকে শতবার পুনর্বার প্রতিপলে...
একটি সে নাম অনিবার্য হয়ে ওঠে
দুর্বহ সমাজ নামক জগদ্দলটা
আবার নবসজ্জার গড়ার প্রয়োজনে।
আশাহীন আলোকস্পর্শহীন আদিমতার দুচোখে
প্রজ্ঞাগ্নি প্রজ্জলনের প্রয়োজনে
নামের মন্ত্রোচ্চারণে শুদ্ধ হোক নিস্পন্দ এ বধ্যভূমি

স্মরণে ফেব্রুয়ারি -- শান্তি পদ মাহান্তি

  স্মরণে ফেব্রুয়ারি
  শান্তি পদ মাহান্তী
   ০১/০২/২০২৪


ভুলতে নারি ফেব্রুয়ারি
ভোলা ভারি শক্ত,
কষ্ট ভারি ফেব্রুয়ারি
ভোলা ভায়ের রক্ত।

তোমার টানে অশ্রু আনে
জাগে ব‍্যথার স্মৃতি,
অনুরাগে সাহস জাগে
ভয়ে পালায় ভীতি।

হৃদয় ভাঙা রক্ত রাঙা
ফেব্রুয়ারি তুমি,
তোমার কথা অমর গাথা
রইবে আবেগ চুমি।

আজ স্মরণে বীর বরণে
আবেগ তুমি ঢালো,
একুশ ভোরে মনের দ্বোরে
চেতন শিখা জ্বালো।

তুমি এলে পাঁপড়ি মেলে
মনের কুসুম কলি,
বুকের তলে জোনাক জ্বলে
আলোর দীপাবলি।

আমরা পারি ফেব্রুয়ারি
বুলেট নিতে বুকে,
আঘাত এলে রক্ত ঢেলে
শত্রুকে দি রুখে।

অশ্রু মায়ের রক্ত ভায়ের
শ‍্যামল মাটি সিক্ত,
বাংলা জাগে সগৌরবে
স্বমহিমায় দীপ্ত।

Wednesday, January 24, 2024

ফিরে এসো নেতাজি -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 ফিরে এসো নেতাজি
 শ্যামল কুমার মিশ্র 
 ২৪.১.২০২৪ 
আজো চোখ বন্ধ করলে দেখতে পায় খোকন 
আলের পাশ দিয়ে দৌড়ে চলেছে এক বালক 
দূরে মিছিল বেরিয়েছে 
নেতাজির জন্মদিনের মিছিল
ওর বয়েসী কত ছেলে মেয়ে 
মুখেমুখে ফিরছে সেই গান---
" কদম কদম বঢ়ায়ে জা 
খুশিকে গীত গায়ে জা..."
ভেতর থেকে কে যেন বলে ওঠে-- 
আরও জোরে পা চালাও খোকা... 

ছেলেটির গতি আরো বেড়ে যায়
আর মাত্র কয়েক গজ 
হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় ছেলেটি
হাতে উঁচু করে ধরা সুভাষের ছবি 
মিছিল থেকে দৌড়ে আসে ছেলেমেয়েরা 
ধুলো মাখা ছেলেটিকে তুলে ধরে রশিদ ভাই
নির্মল হাসি ঝরে পড়ছে তখনও ওর মুখে 
অপলকে তাকিয়ে রয়েছে সুভাষের দিকে 
ধীরে ধীরে মিছিলে সবার মাঝে মিশে যায় ছেলেটি... 

জীবনের অপরাহ্ণে নানা ছবি ফিরে ফিরে আসে 
আজ তোমার জন্মদিনে সব কিছু বড় ম্লান মনে হয় 
তোমার স্বপ্নের ভারতবর্ষ আজ বেনিয়াদের হাতে 
ধর্মের বেনিয়া, ভোটের বেনিয়া, ক্ষমতার বেনিয়া 
২২-শের ভোরে তোমার ভারতবর্ষে হারিয়ে গেছে ধর্মের ঘূর্ণাবর্তে
সহস্র দিয়া আজ সরযূর প্রান্ত জুড়ে...

খোকনের মনে পড়ে এমনি এক ২২-শের কথা 
২২-শের শীতার্ত রাত 
গ্রাহাম স্টেনসকে পুড়িয়ে মেরেছিল একদল মানুষ 
মুখে ছিল এক বিশেষ ঈশ্বর-ধ্বনি
তারও ২৫ টা বছর পেরিয়ে গেছে...

২২-আসে, ২২-যায় 
গ্রাহাম স্টেনস হারিয়ে যায় স্মৃতির পাতায় 
সরযূর দিয়ার আলোক সব শুষে নেয় 
স্টেনসকেও নেয়,অভয়াকেও নেয়...

রাত্রি শেষে  ভোর হয়                
প্রতিবারের মতো তুমি আসো নীরবে নিভৃতে 
গানে, কথায়, অনৃত ভাষণে 
আর সরযূতে ফেলে দেওয়া ফুলের মালায় হয়তো বা তুমি চর্চিত হও 
তুমি নীরব অভিমানে হেঁটে যাও 
একেবারে নিঃশব্দে ধীর পায়ে 
খোকন চিৎকার করে ওঠে---
তুমি যেও না, যেও না নেতাজি 
এখনো কিছু মানুষ তোমারেই চায় 
তুমি তাকিয়ে দেখো নেতাজি 
ওই ছেলেটি এখনো দৌড়চ্ছে 
ওর হাঁটু থেকে রক্ত ঝরছে 
ও দৌড়চ্ছে..দৌড়চ্ছে 
সবার সাথে গলা মিলিয়ে ও গাইছে--
"তোমার আসন শূন্য আজি, হে বীর পূর্ণ কর..."

Tuesday, January 9, 2024

ডাকার মত ডাক পেলে -- দিলীপ ঘোষ


ডাকার মত ডাক পেলে
দিলীপ ঘোষ
০৮/০১/২৪
ডাকার মত ডাক পেলে
সাড়া না-দিয়ে কি থাকা যায়
মনের ঘরে কড়া নাড়লে
দরজা না-খুলে কি থাকা যায়

যে ডাক, হৃদয়েতে আগুন জ্বালায়
যে ডাক, মিলনমেলার বার্তা জানায়
যে ডাকতে, ফুল ভ্রমরের স্পর্শ থাকে
যে ডাকে, আগামীদিনের দিশা থাকে
সে ডাকেতে, সাড়া না-দিয়ে, থাকা যায়

যে ডাকের আওয়াজ ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়
যে ডাক, দেহ মনের জড়তা কাটায়
যে ডাক শুনে, অলস পা-ও হাঁটতে চায়
সে ডাক শুনে, সবার সাথে না-হেঁটে কি থাকা যায়

যে ডাক, আগামীদিনের আশা জাগায়
যে ডাক, সূর্যদয়ের পতাকা ওড়ায়
সে ডাক শুনে, ঘরে কি আর থাকা যায়?

Saturday, January 6, 2024

গুপী রামের চাকরি -- তুষার মন্ডল

গুপী রামের চাকরি 
তুষার মণ্ডল
০৪//০১/২০২৪
আরে আরে চুপি চুপি কর কি হে গুপীরাম গুপ্ত,
এ কি শুনি তুমি নাকি পেয়ে গেছ মাছি মারা স্বত্ব?
সরকারি রীতি নীতি জেনেছ কি লেখা আছে বইটায়?
সাবধানে থেকো ভায়া মশা মাছি মারা ঘোরতর অন্যায়।
এইতো কদিন আগে ও পাড়ার ছোঁড়া প্যালারাম বিটকেল,
থাপ্পড়ে মশা মেরে বাঁধালো সে আহা কি দারুন খিটকেল।
তার দাদা ভূতনাথ দিগগজ পণ্ডিত আইনের বড় আমলা,
হায়!পাইনি রেহাই তবু, বেঁধে যায় সে কি বিদঘুটে ঝামলা।

বাপরে কি কটমটে ভয়ানক বিদঘুটে ঘটনাটা ঘটলো,
গুনধর ছাইপাকা পুলিশের ঠ্যাঙানিটা কপালেতে জুটলো।
মিটে তবু যায়নিকো দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল এজলাস
বেচারা আইনের প্যাঁচে পড়ে, করাবাস করে এলো দু-বছর দশমাস।
দুঃতেরি কি যে বলো?মাছিগুলো ভন ভন বসে কেন বাবুদের খাবারে,
চাকরিটা পেয়ে তাই বসে বসে সারাদিন মাছি মারি ভাঁড়ারে।
শুনেছ কি এই যেন সেইদিন, বাঁকুদের ছোট ছেলে ছকু্রায়
নোংরা খাবার খেয়ে বেচারি যে মারা ওই গেল কলেরায়।।

ছেলে মেয়ে হলো ভায়া মেরে কেটে হাতে গোনা আটটি
চাকরিটা পেয়ে তাই খেয়ে পড়ে বাঁচছি, হাতে কিছু পাচ্ছি।।
দুঃতেরি তার চেয়ে পারো যদি মারো তবে বড়োসড়ো গণ্ডার,
নিশ্চিন্তে জীবনটা কেটে যাবে হাতে পাবে বড়সড়ো ভাণ্ডার।
গুঁজে দিও সেপাইয়ের হাতে কিছু আইনের মুখ হবে বন্ধ,
তাই বলি শোনো ভায়া গণ্ডার মারা নয় একেবারেই মন্দ।
আইনেতে আছে নীতি আর আছে ভীমরতি জানো নিশ্চয়
তাই বলি মশা মাছি মেরোনাকো,এতে ঘটেবেই বিপর্যয়।

Friday, January 5, 2024

শেষবেলার শাহজাহান -- গৌতম তরফদার

 শেষবেলার শাহজাহান
 গৌতম তরফদার
 ০৫.০১.২০২৪
" পাঠশালার খোলামাঠে হেসেখেলে শৈশবসঙ্গী সেখ শাহজাহানের সাথে দিন কাটানো সমর্পণ বসুর ছোটোবেলা - বড়োবেলা একসূত্রে গাঁথা। দু'জনের আজীবন বন্ধুত্বের বন্ধন। পড়াশুনার কারণে একসময় দু'জনের শারীরিক ছাড়াছাড়ি হলেও দু'জন দু'জনের খোঁজখবর রাখে, খুঁটিনাটি জানে-বোঝে। 

            শাহজাহান জমিদারবাড়ির একমাত্র সন্তান। জমিদারতন্ত্র কবেই বিদায় নিয়েছে কিন্তু সেখ পরিবারের ঠাটবাট এখনও কিছুটা হলেও চলমান। শহর থেকে স্নাতক পাঠক্রম শেষ করেই গ্রামে ফিরে গেছে জমিজমা - চাষাবাদের বিপুল কর্মযজ্ঞে। শাহজাহানের অন্তর জুড়ে গ্রামেরই অতি সুন্দরী নিয়ালি খাতুনের বসবাস। তাদের দু'জনের মধ্যে পরিচয় - যোগাযোগ - ভালোবাসারর সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রধান কারিগর বন্ধু সমর্পণই। সম্পর্কের শুরুতেই ভালোবেসে শাহজাহান নিয়ালির নাম রেখেছে বনান্তিকা।

            প্রথমার্ধে শাহজাহানের পরিবারের আপত্তি থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ধুমধাম করে প্রায় জমিদারি মেজাজেই সাদি হয়ে যায় দু'জনের। সংসারজীবন শুরু.....গভীর মনোযোগে সংসারধর্ম পালন....পরপর তিন পুত্র সন্তানের জন্ম....তাদের বড়ো হয়ে ওঠা..... নিয়ালির ইচ্ছে ও অনুরোধে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নিয়ালি ও শাহজাহানের নামে কেনা জায়গায় বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলা.... শাহজাহানের ইচ্ছেতে বৃদ্ধাশ্রমের নাম রাখা 'বনান্তিকা' ..... প্রথম আবাসিকা নিয়ালির আম্মা নুরজাহান বেওয়া..... এগিয়ে যেতে থাকল  শাহজাহান আর সমর্পণের বন্ধুত্বের বয়স। দুজনের চোখেই এখন বয়সী চশমা।

          দুর্ভাগ্যক্রমে অল্পদিন আগে শাহজাহান তার প্রাণপ্রিয়া বনান্তিকাকে হারিয়েছে এক ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায়। সেই থেকেই শাহজাহানের মধ্যে মানসিক ভারসাম্য হারানোর প্রবনতা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ কাঁদে...হঠাৎ হাসে।

        শাহজাহানের তিন ছেলে বড়ো তো হলো কিন্তু মানুষ হলো না। বাড়ি - জমি - জায়গা নিয়ে তিন ভাইয়ের চরম বিবাদ.... ছেলেদের অন্যায় দাবি, জোরজুলুম, অত্যাচার... মারধোর....  কিছুই বাদ গেল না শাহজাহানের উপর দিয়ে । বন্ধু সমর্পণের চেষ্টায় ছেলেদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ওরই নিজহাতে গড়া বৃদ্ধাশ্রম, ' বনান্তিকা'য় শাহজাহানের ঠাঁই হলো........।"

         আজ রবীন্দ্র ভবনের স্টেজে শ্রোতা-দর্শকে ঠাসা হলে নিজের সদ্য লেখা গল্প, "শেষবেলার শাহজাহান" বিখ্যাত কথাশিল্পী মহারণ্য বসু যার ছদ্মনাম সমর্পণ 
স্ব-কন্ঠে গল্প পাঠ শেষ করতেই তুমুল করতালিমুখর হয়ে উঠল। 

          মহারণ্য বসু দৃপ্তকন্ঠে  শেষে বলল," যার জীবনের গল্প আপনাদের পড়ে শোনালাম সে আর কেউ নয়, আমারই বাল্যবন্ধু শাহজাহান। ওই যে হুইল চেয়ারে বসে আছে। " বলেই স্টেজের পুর্ব কোণ দেখিয়ে দিল।

          ভাগ্যক্রমে আজ রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী তার অফিসারদের নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে হাজির ছিলেন। তিনি সটান স্টেজে উঠে এলেন। শাহজাহানের হাত ধরে সহমর্মিতা প্রকাশ করে হঠাৎ এক প্রস্তাব দিলেন," আপনি অনুমতি দিলে ও রাজি থাকলে " বনান্তিকা "কে রাজ্যসরকার অধিগ্রহণ করবে। বৃদ্ধাশ্রমের নাম অবশ্যই অপরিবর্তিত থাকবে আর আপনি আমরণ সম্মানীয় আবাসিক হয়েই থাকবেন। "

            আনন্দের অশ্রুজল শাহজাহানের দু'চোখ গড়িয়ে পড়ল। আশ্চর্যজনকভাবে ঠিক সেই মুহুর্তে শাহজাহানের তিন ছেলে যারা লুকিয়ে আব্বার নামের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিল গুটিগুটি পায়ে স্টেজে উঠে এসে আব্বার পা জড়িয়ে ক্ষমা চাইল।


Thursday, January 4, 2024

কালের নিয়ম -- স্বপন কুমার দাস

  কালের নিয়ম 
  স্বপন কুমার দাস 
  ০২/০১/২০২৪
কালের নিয়মে আসবে যাবে 
এই কথা তো নতুন নয়,
কালদন্ড কোপে দাঁড়িয়ে সবে 
এতে তো নেই নতুন ভয়।

নিয়তির বিধান মানতেই হবে 
ললাট লেখা বিধাতা হাতে,
ক্ষণিকের আসা যাওয়া ভবে 
ভরা প্রেম মায়া মমতাতে।

তবুও আমাদের মায়ার টানে 
প্রবীণ বিসর্জন রোদনে,
উৎসবে মাতি উল্লসিত মনে 
বরণের আহ্বান নবীনে।

প্রবীণের স্থলে নবীন আহ্বান 
নতুন কিছু পাওয়ার আশা,
বরাতে যদি আঁধার অবস্থান 
নবীন ঢেউ শুধুই নিরাশা।

নবীন যদি হয় গো সুমতির 
ধরণী জনের উর্ধগতি,
নবীন যদি হয় গো কুমতির 
ধরণী জনের নিম্নগতি।

সবুজ শীতল স্নেহ ভরা কোলে 
নবীন প্রবীণ মিলন মেলা,
কালের নিয়মে যুগে যুগে চলে 
পৃথিবীর এই লীলাখেলা।
=======================

নতুন রঙের সূর্য -- বলরাম সরকার

 নতুন রঙের সূর্য
 বলরাম সরকার
 ০২/০১/২০২৪
এসো নতুন সকাল আনি
দিই ছড়িয়ে সূর্যের আলো,
আবর্জনায় গেছে ভরে সমাজ
সবাই মিলে করি কাজ ভালো।

দিগন্তে দিই ছড়িয়ে নতুন বার্তা
করি কাজ হাতে হাত লাগায়,
ধুয়ে দিয়ে পাপ সড়িয়ে দুষ্টুকে
 সৎ উদ্দেশে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগায়।

ঘুচিয়ে দিয়ে নোংরা সমাজকে
নিয়ে হাতে নতুন ফুলের ডালা,
এসো দূর করে দিই ঘৃণা দ্বেষ
হাতে হাত রেখে শুরু করি পথ চলা।

হোক বন্ধ দেশে দেশে অবিরাম যুদ্ধ 
বন্ধ হোক খুন ধর্ষণ লুট রাহাজানি ,
পুরাতন ক্ষত আবর্জনা সরিয়ে জঞ্জাল কে
একে অপরের সহযোগিতায়  হোক দূর গ্লানি।

আরন্যক জীবন -- উৎপল অধিকারী

  আরণ্যক জীবন  
  উৎপল অধিকারী 
 ০৩. ০১. ২০২৪  
ক্ষুধা তৃষ্ণা ঘুম অবসাদ বিশ্রাম 
আরণ্যক জীবনে এসবও ছুঁয়ে যায়, 
স্নেহ মমতা ভালবাসার আদিম ছন্দ  
বয়ে চলে ওদের শিরা উপশিরায়।   

ঝড় ঝঞ্ঝা যখন নির্মম উন্মত্ততায়  
কুটির ভাঙে অতি নিষ্ঠুরতায়,  
দুঃসহ ব্যথা সামলে নিতে অরণ্যবাসী 
অবিচল থাকে তবু দৃঢ় ভঙ্গীমায়।   

জীবন বাঁচাতে অরণ্যে অবাধ বিচরণ 
বহু প্রতিকূলতার সাথে তুমুল লড়াই ,  
বিপদের মাঝে গহীন অরণ্য পেরিয়ে  
খাদ্য সংগ্রহে মত্ত ওরা সবাই।     

নতুন সভ্যতার দিনেও শত জনজাতি 
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে থাকে ব্যস্ত,  
সবুজ অরণ্য ওদের স্বর্গসম বাসভূমি  
সভ্যতার অশুভ ইশারায় ওরা সন্ত্রস্ত।    

জনজাতির বাস ডুয়ার্সের বন ছায়ায়  
তবুও শুদ্ধ বাতাস পাওয়া মুশকিল, 
অরণ্য ধ্বংসকারী মানুষের হিংস্র থাবা  
বৃক্ষ নিধনে জীবনের হিসেব গড়মিল।   

==========================

একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট -- সঞ্জিত কুমার মন্ডল

 একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট
    সঞ্জিত কুমার মন্ডল
         ০৩/০১/২৪
         
        বহু বছর পরে আমাদের গ্রামে কালীপদ যুব সংঘ একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে শীতকালেই। ১৫ দিন আগে থেকেই মাঠ পরিষ্কার,রোলার মেশিন দিয়ে সমান করার কাজ চলছে। গ্রামের লোক তাই দেখতে ভিড় করছে। গুঞ্জন উঠছে কালিপদ যুব সংঘ এত টাকা কোথা থেকে পাচ্ছে! অর্থের উৎস সবার জানা হয়ে গেল। বাঁশ দিয়ে তৈরি মাঠের চারিদিকে আটটি বিশাল বাতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। মাঠের চারিদিকে বিশাল বিশাল হোডিং পোস্টার তাতে লেখা আছে "ফুটবল কাপ-২০২৪, নববর্ষে নব আনন্দে জাগো"। খেলা ৩১শে ডিসেম্বর বিকাল থেকে । ডে নাইট খেলা। ৮ দলের টুর্নামেন্ট। প্রায় ছ'টা জেলা থেকে টিম আসছে। প্রত্যেক টিমে বিদেশি প্লেয়াররা আছে যেমন নাইজেরিয়ানরা আছে। পুরস্কার হিসেবে ফাইনালের বিজয়ী দল দেড় লাখ টাকা পুরস্কার পাবে। রানার্স টিম পাবে এক লাখ টাকা। কোয়ার্টার লেভেলে,সেমিফাইনালে এবং ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার আছে। বিশাল বড় স্টেজ। আধুনিক লাইটের ব্যবস্থা। জমজমাটি খেলা। প্রথমে ভেবেছিলাম টিকিট কেটে খেলা দেখতে হবে। তারপর শুনলাম বিনা পয়সায়। বিনা পয়সায় এত বড় খেলা দেখা সুবর্ণ সুযোগ। 
         ৩০ শে ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়ে গেল বক্স বাজানো। সন্ধ্যা থেকেই লাইট পরীক্ষা করা। চারিদিকে আলোয় আলো ঝলমল করে উঠলো আমাদের গ্রাম। খেলার লাইভ ভিডিও দেখানো চলবে,বেশ কিছু পর্দা মাঠ থেকেও অনেক দূরে টানানো আছে। পরদিন গ্রামের লোকেরা দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরেই মাঠের কাছাকাছি জায়গায় যে যার আসন নিয়ে বসে পড়েছে। এখনো দু-তিন ঘন্টা বাকি খেলা শুরু হতে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। মাইকে শুভ নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে। প্রতিটা কথা প্রসঙ্গে ভেসে আসছে "নব আনন্দে জাগো।"বাইরে থেকে ঘোষক,ঘোষিকাদের আনা হয়েছে। তারা তাদের কাজ করে চলেছে। মানুষ উদ্দীপ্ত হয়ে পড়ছে। ছাপানো খেলার চার্ট মাঠের চারিদিকে জনগণকে বিতরণ করা হচ্ছে। সূর্যের আরামদায়ক তাপ গায়ে মেখে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনায় মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। জমজমাটী উদ্বোধনী নাচ গান শুরু হলো। গ্রামের মানুষ অবাক হয়ে দেখল।আনন্দ করতে লাগলো। স্টেজে টেবিলের উপর বিশাল বিশাল ট্রফি, মেডেল সাজানো আছে। বিশিষ্ট ব্যক্তি অতিথিদের স্মারক ও পুষ্প দিয়ে বরণ করা হচ্ছে। হালকা বক্তৃতার পরেই মাঠে নেমে গেল ঝকঝকে জার্সি পরা দুটি টিম। বাঁকুড়া জেলা ও নদীয়া জেলার দুটি টিম। খেলার একটু বাদেই বাঁকুড়া জেলা নদীয়া জেলাকে একটা গোল দিয়ে দিল। দুটো টিমই সুন্দর ছকে খেলছে। দ্বিতীয় অর্ধে নদীয়া গোল শোধ করলো। খেলা উত্তেজনাকর হয়ে উঠলো। অবশেষে গোল শূন্য ট্রাইবেকার। তারপর টসে হেরে গিয়ে বাঁকুড়া পুরস্কার নিয়ে বিদায় নিল।

          দ্বিতীয় খেলা শুরু হতে দেরি হচ্ছিল ঘোষক ঘোষিকাদের বলার ভাষা শেষ হয়ে যাচ্ছিল। জনগণ "নব আনন্দ জাগো" এই কথা শুনে শুনে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল। এক্ষুনি শুরু হবে দ্বিতীয় খেলা সঙ্গে সঙ্গে জনগণের কলরব শোনা গেল। কারণ জনগণ ইতিমধ্যে জেনে গেছে দ্বিতীয় খেলার একটি টিম এখনও এসে পৌঁছায়নি। প্রত্যেক টিমকে টাইম দেওয়া আছে। সেই টাইমেই তাদের খেলতে হবে। এখানে ওয়াকওভার দেওয়ার নিয়ম নেই। এক ঘন্টা থেকে দু ঘন্টা দেরি দেখে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল। "নব আনন্দে জাগো" এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জনগণ ভেংচি কেটে জোর চিৎকার করে উঠছে। ঘোষক ঘোষিকারা আর পেরে উঠছে না। ক্লাবের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া সত্বেও বাঁধভাঙা জলের মতো জনগণ মাঠে নেমে পড়লো। চারিদিকে ভাঙচুর শুরু করে দিল। রাতের ঝলমলে আলোয় সারা মাঠে জনগণ হইহুল্লোড় করতে লাগলো। স্টেজকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়াছুড়ি শুরু হল। সিভিক পুলিশ অল্প কিছু ছিল কিন্তু তারা মার খেয়ে গা ঢাকা দিল। তারপর পুলিশের গাড়ি। আচমকা পুলিশের লাঠিচার্জ। মাঠ ফাঁকা হল। দর্শকও  শূন্য হলো। তারপর কয়েকটা গাড়ি ঢোকার শব্দ। 

                                 (সমাপ্ত)                        

Monday, January 1, 2024

তেইশের জলছবি --- শ্যামল কুমার মিশ্র


 তেইশের জলছবি 
 শ্যামল কুমার মিশ্র 
 ১-১-২০২৪
দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারটার দিকে তাকিয়ে থাকে খোকন
সকালের নরম রোদ্দুর এসে পড়েছে ওর গায়ে 
নানা রঙের আঁকিবুকি খেলা 
সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হারিয়ে যায় খোকন 
চোখের সামনে ভেসে ওঠে নানা ছবি 
কোনটাতে মিছিল নগরী কলকাতা 
কোনটাতে ক্ষমতা দখলের লড়াই 
গান্ধীবুড়ির পাদদেশে এক হাজার দিন বসে 
শত শত যুবক যুবতী
কেউ কথা রাখেনি, ফিরে দেখার সময় কোথায়
একটা গোটা ক্যালেন্ডার হারিয়ে গেল...

ক্যালেন্ডারের শেষ পাতায় এসে আটকে যায় খোকন 
ব্রিগেড জুড়ে হাজারো কন্ঠের গীতা পাঠ 
খোকন যেন শুনতে পাচ্ছে---
"যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতী ভারত
অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাস্যহম
পরিত্রানায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম
ধর্ম সংস্থাপনায় সম্ভবামি যুগে যুগে"...
ক্যালেন্ডারের পাতা জুড়ে হরেক ছবি 
ফুটবল হাতে চলেছে আরো একদল 
হাতে আবার স্বামীজীর ছবি 
'ফুটবল','গীতা পাঠ' সব যেন কেমন গুলিয়ে যায় খোকনের... 

দিনাবসানে ছায়া দীর্ঘায়িত হয় 
জীবনের অপরাহ্ণ বেলায়
দীর্ঘায়িত সেই ছায়া এসে পড়ে
ভেসে ওঠে একটি মুখ
নামহীন, কুলহীন, গোত্রহীন এক বৃদ্ধা ভিক্ষা চায়
কী তার ধর্ম, কী তার পরিচয় 
ক্ষুধার অন্ন খুঁজে মরে ভগবান...

ক্লান্ত অবসন্ন খোকনের দুচোখ জলে ভরে 
তেইশ আর কয়েক দিন বাদে ফিরে যাবে 
বর্ষশেষের দিনগুলো যেন বড় ভারী হয়ে আসে
গাজার হাসপাতালে হাজারো শিশুর মৃত্যু 
ভেসে আসে মায়ের বুকফাটা কান্না 
মারণাস্ত্র কেড়ে নিয়েছে ওদের আদরের ধন 
হিংসা,যুদ্ধ, ক্ষমতার সীমাহীন আস্ফালন... 
ক্রুশবিদ্ধ ঈশ্বরপুত্রের দুচোখেও কি জল? 

রোদ্দুরটা অনেকটা সরে গেছে 
পৌষের শৈত্য মেখে ফিরে যাচ্ছে তেইশ 
খোকন আপন মনে বলে ওঠে-- ধর্ম থাক না অন্তরমহলে 
হৃদয় বিকশিত হোক প্রেম ভালবাসার বন্ধনে
২৪ শে ঘটুক তার নব অভ্যুদয়...

নব অঙ্গীকার --- দুর্গা শংকর দাশ

নব অঙ্গীকার
দুর্গা শংকর দাশ
01,01,2024
নতুন বছর আনে নবীন চেতনা,
   নব উন্মাদনা আর নবীন প্রেরণা।

নব বরষের প্রাতে  নব উপহার,
   নবারুণ রশ্মি স্নাত নব পারাপার।

নব নব চিন্তা যত মানবের মনে,
   নবীন প্রানের দোলা জাগে প্রতিক্ষণে।

মুছে যাক সুপ্রাচীন জ্বরা ক্লেদ গ্লানি,
     লুপ্ত হোক পুরাতন সে অসার বাণী।

নব নব কর্মধারা নব সঞ্জীবনে,
    নিয়োজিত হোক সদা মানব কল্যানে।

নববর্ষ উদযাপন হোক বিধিমত,
     অঙ্গীকার করি সবে একত্রে সতত।

ধরা হোক মধুময় মধুর মলয়,
     শুষ্ক শীর্ন জড়তার ঘটুক প্রলয়।

লুপ্ত হোক ভ্ৰষ্টাচার পাপাচার যত,
     নির্মল সমাজ হোক আজ কুসুমিত।

কাননে প্রান্তরে আর ধরণীর মাঝে,
        পবিত্র চেতন চিন্তা  উঠুক গরজে।

হে মানব! আজি প্রাতে কর অঙ্গীকার,
         মুছে দেবে অতীতের কলঙ্কের ধার।

নববর্ষে করি সবে মনন চিন্তন।
      রাখিবো সবার মান সদা চিরন্তন।

Tuesday, December 12, 2023

কবিতার অভিমান -- জয়া গোস্বামী

কবিতার অভিমান
জয়া গোস্বামী
১২-১২-২০২৩


কবিতার অভিমান কবি একাই কি বুঝতে পারে,
যে লেখা নিত্য আসে  কবিতার মাঝে হৃদয় নিঙড়ে।
কবিতা বুঝতেই চায়নি কবির হৃদয়ের হাহাকার ,
 খানাখন্দ ভেঙে তবেই তো হয় কবিতার সাথে কবির সাক্ষাৎকার।

মন খারাপের ক্ষণে কবিতার সাথে চলে কবির কত বচসা, 
স্মৃতির আলেখ্য ফুটিয়ে তোলে কবি তার  ভালোবাসা।
কবি রোজ কবিতার মাঝেই তো লেখনীতে ডুবে মরতে চায়,
কবিতা কেন বোঝে না কবি কিছুই তো না পায়।

পাতায় চলে পাঠকের মনোরঞ্জন করার অঙ্গীকার,
শব্দের গায়ে সেই একাকিত্বের ঘ্রাণ নেই'তো কবির অহংকার। 
কবি তোমাকে জয় করতে চেয়েছিলো শুধুই কবিতা,
আজ কেন কবি খাতার মাঝে দেখছে নিজের ব্যর্থতা।

অবহেলার ধুলো গায়ে মাখতে মাখতে বাড়ে দূরত্ব,
 শুধায় কবি কেন দাও না কবিতা কবিকে গুরুত্ব। 
কখনও ছন্দ ,কখনও গদ্য , বোঝে না ;কবি যে হয় বিরক্ত,
বুঝবে না কবিতা কবি যে লিখতে বসে হৃদয় করে রক্তাক্ত। 

যদি-ও বা জানতে,তাহলে প্রেম বিনিময় একবার করতে,
কবি দু’চোখ জুড়ে গোধূলির সমাপ্তি এঁকে দিতো খাতাতে। 
তোমাকে সাজাতে গিয়ে বেমালুম ভুলে যায় কবি নিজেকে,
মৃতপ্রায় অনুভূতির জীর্ণ দেহে খুঁজে বেড়ায় কবির নিজস্বতাকে৷

সে শুধু আমার -- বিজন রায়

 সে শুধু  আমার। 
 বিজন রায়।
১১/১২/২০২৩


 বর্ণমালায় সেজে ছিলে তুমি
 তাই এত সুন্দরী-
 কবির কণ্ঠে কথা কলি তুমি
 কানন কুসুম মঞ্জুরী। 

 তুমি বুকে আছো মোর কণ্ঠে আমার
 ধ্যানে আছো মোর জ্ঞানে-
 তুমি প্রেমে আছ বিচ্ছেদে
 কুমারী বক্ষে গোপনে। 

 তুমি আছো বসন্তে বর্ষায়
 শরতে কাশ বনে-
 আছো,কোকিলের ডাকে ষড়শি রূপবতী
 কবির কবিতা গানে। 

 আছো মিলনের সুখে,অসুখী
 বিরহ জ্বালায়-
 হুতাসি দুঃখীর হাহুতাসে আছো
 ফুল হয়ে দেবতার পায়। 

 আছো নবীনে প্রবিনে বিপ্লবে
বাগ্মীর মুখে ইতিহাসে-
 হাসি কান্নায় মিশে আছো তুমি
 শান্তিতে সন্ত্রাসে। 

 সৃষ্টিতে আছো স্থিতিতে প্রলয়ে
 নিঃশ্বাসে মৃত্যুতে-
 প্রেম হয়ে থাকো অন্তরে মোর
 কথামালা হয়ে ঝরিতে।

Wednesday, October 11, 2023

জীবনানুভূতি -- এম এ হালিম শিশির


জীবনানুভূতি
এম এ হালিম শিশির 
তারিখ : ১১/১০/২০২৩ ইং
খুব বেশী লোভ নেই আমার,
টিনের ছালের সাথে বৃষ্টির শব্দ,  রাতের নির্জনতার সাথে একাকী ভাবনা, এতটুকুই যে আমার পছন্দের তালিকা। 
খুব উচ্চবিলাসী জীবনের স্বপ্ন নেই আমার, 
কুঁড়িঘর বাসস্থান, সামাজিক যোগাযোগ 
আর আপনত্বের সম্পর্কের সিকিউরিটি, 
এতটুকুই আশ্বাসের ইচ্ছানুভূতি আচ্ছন্ন মনাকাশ,
খুব চাওয়া-পাওয়ার বিষণ্নতা নেই আমার,
দিনের পরিশ্রম শেষে তার উপযুক্ত পাওনার হিসাব,
তাতে অন্নের উপার্জনের পেটের কান্না নিঃশেষ, 
অতিরিক্ত লোভের ঘৃণা, আর হিসাবকষে সংসারের হালচাল, 
এতটুকুই জীবনের চাওয়া নিয়ে অসীমতা ছোঁয়া। 
অফুরন্ত কোনো অহংকার নেই আমার, 
হাসিখুশি নিয়ে রোদ-বৃষ্টির সাথে প্রেম, আর দিনের শেষে জীবনসঙ্গী কে আগলে ধরে প্রশান্তির এক ঘুম, এতটুকুই আমার পার্থিব ভাবনার সমষ্টিকরণ একান্ত নিজস্ব চেতনা।
দীর্ঘকাল বাঁচার স্বপ্ন নেই আমার,  
যদি পাপ পুঞ্জিভূত জীবন হয় আমার!
পরকালের আসামী,
বাঁচতে চাই শতাব্দীর পর শতাব্দী, 
যদি দেখি আমার দ্বারা মানবের মুখেমুখে রক্তিম হাসি,
আর পরকালের  শান্তির ফয়সালা স্বরূপ পূণ্যের মজুদদারী।


Tuesday, October 10, 2023

আগ্রাসন -- বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য

 আগ্রাসন
 বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য
  ১০/১০/২০২৩
জগৎ জুড়ে চলছে দখলদারির লড়াই,
বুদ্ধি আর বাহুবলের অদম্য প্রতিযোগিতা;
কখনও একটুকরো জমি, 
কখনও বা আস্ত নারী শরীর, 
কখনও ক্ষমতা ও আসন টিকিয়ে রাখার !

বাস্তুতন্ত্রে খাদ্য-খাদক সম্পর্কে অদ্ভুত মাৎস্যন্যায়!
ব্যক্তিগত লাভের অঙ্কে যথেচ্ছ গোঁজামিল,
সামগ্রিকতার ধার ধারার দায় ঠেকে না কারও।
গরীবের রক্ত চুষে পরিপূর্ণ কুবেরের ভাণ্ডার,
গরীবের অশ্রু নদীতে নিত্য অবগাহন,
দুদিনের জীবনে লুটেপুটে খাওয়ার জরুরি তাগিদ;
সামরিক বরাদ্দ শিক্ষা-স্বাস্থ্য-উন্নয়নে
মিলিত বরাদ্দের  চেয়ে দশ গুণেরও বেশি।

প্রকৃতিকে ভোগ উপভোগ.... সব শেষ করে--
নিঃশেষ করার তাগিদে নেমেছে যুযুধান ,
এবার এক মহাসঙ্কট সৃষ্টি না করলেই নয়;
কত প্রাণ, কত সৃষ্টি, স্থাপত্য, ইতিহাস --
ভেসে যায় স্মৃতির অতল গহ্বরে , 
যান্ত্রিক জীবনের ঘেরাটোপে আটকে আছে
অস্ফুট শৈশব, প্রতিভাময় যৌবন -- স্রষ্টা বার্ধক্য!

ছাড়পত্র পেয়েছে আগ্রাসনের একচেটিয়া বাজার,
অজস্র নিরীহ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সভ্যতা!
কী জানি, এবার হয়তো দেখতে হবে ----
লাঠির মাথায় স্থাপিত টুপিকে স্যালুট না করার অপরাধে প্রাণদণ্ড হবে অসহায় জনতার !
যারা ক্ষুধায় দিতে পারে না একগ্রাস খাদ্য, 
পিপাসায় দিতেই পারে না বিশুদ্ধ জল, 
বিশ্বাসের বিনিময়ে প্রতিদান দেয় বিশ্বাসঘাতকতা,
মেকি সভ্য পোশাকের আড়ালে বর্বর লোলুপতা;

আর একটা মন্বন্তর চাই , চাই নবযুগের সূচনা,
আবার নতুন করে পাঠ শেখোনো হোক ---
অপরের প্রাণ কেড়ে নেওয়াতে বাহাদুরি নেই,
বাহাদুরি আছে - 
নিজেকে বিপন্ন করেও অপরের প্রাণ বাঁচানোতে ,
শারীরিক নিগ্রহে নয়, প্রেম বিনিময়ে,
ধ্বংসের বিভীষিকায় নয়, সৃষ্টির মহোৎসবে।

Monday, October 9, 2023

নৈবেদ্য -- ডঃ অশোক খাড়া

 নৈবেদ্য 
 ডাঃ অশোক খাঁড়া 
 9.10.2023 
বস্তির দেবশিশু ছুটে এসে থামালো আমার কলমের দৌড়। 
কবিতার শব্দগুলো যেন শূন্যে ঝুলে পড়ল ।
আগমনীর সুরে যেন ভেসে এল বিষাদের ঝড় ।
ক্ষুধার পাত্রটা হাতে নিয়ে 
সে বলে, " আমি পেট ভরে শুধু খেতে চাই। আমায় খেতে দে।"
বোবা কলমটা এখন নিশ্চল প্রস্তর  মূর্তি। 
শিশুটা আবার বলে, " আমি চাই না পুজোর পোশাক , আমায় দুমুঠো খেতে দে।"
আমার অবচেতন হৃদয়ে জেগে ওঠে আমার শৈশব। 
ছিন্নবস্ত্রে , অভুক্ত দেহ নিয়ে 
আমি দেখেছি, পণ্যের দোকানে 
সারি সারি পুজোর পোশাক। 
আমি দেখেছি ক্ষুধার রাজ্যে
দেবশিশুর দীর্ঘ সারি। 
যেন এক অসাম্যের সমান্তরাল রেখা, দেবী দর্শনার্থীর পাশে ।
চেতনার সাম্রাজ্যে ফিরে আসি আমি। 
আমি অর্ঘ্য করি নৈবেদ্য দেবশিশুর চরণে,
ঈশ্বর যেখানে বিরাজমান হৃষ্ট মনে।

জীবনের ধারাপাত -- মালিয়া দে

 জীবনের ধারাপাত
 মালিয়া দে
 ৯/১০/২৩
জীবন এক রঙ্গমঞ্চ,
এখানে তোমায় রাজা - ফকির, সাধু - ভন্ড
শিশু - বৃদ্ধ কত চরিত্রেই অভিনয় করতে হয়।

জীবন হলো রেসের মাঠ,
শুধু দৌড়,দৌড় আর দৌড়েই যাওয়া,
থামা মানেই পিছিয়ে পড়া, হেরে যাওয়া।

জীবন মানে হাজার স্বপ্ন,
স্বপ্ন গুলোই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়,
সব স্বপ্ন পূরণ হয়না, তবু স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন।

জীবন এক গোলকধাঁধা,
বয়স যত বাড়বে, ততই দায়িত্ব কর্তব্য ,সমস্যা
চক্রের মত ঘিরে ধরবে, বেরোনো বড়ো কঠিন।

জীবন যেন যুদ্ধক্ষেত্র,
সমাজ - সংসার, পরিবার - পরিজন, রোগ - ব্যাধি,
এমনকি মনের সাথেও প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলতে হয়।

জীবন পাটিগণিতের সরলঅংক,
যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, বন্ধনী সবকিছুই থাকে,
যত দিন যাবে, ততই তার সমাধানের দিকে এগোনো।

জীবন হলো ক্ষণিকের পান্থশালা,
জন্ম থেকে মৃত্যু, এই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর মাঝে
কত সম্পর্কের জাল বোনা, কত বিচ্ছেদ ,আসলে একা ।

তবুও জীবন বড়ো সুন্দর ,
স্নেহ - ভালোবাসা , প্রেম - প্রীতি, দয়া - মায়া, 
আবেগের বন্ধনে জড়ানো এক অনুভূতির আকর।

Saturday, October 7, 2023

প্রকৃতির প্রতিশোধ -- বিক্রমজিৎ মান্না


প্রকৃতির পরিশোধ 
বিক্রমজিৎ মান্না 
০৬/১০/২০২৩
ঝাঁঝাঁ রৌদ্রের চাতক ডাকা নয় এ গ্রীষ্ম ক্ষণ ।
আকাশ জুড়ে মেঘের পর মেঘের আস্তরন 
নিয়ে এলো সজল বেলা  বঙ্গলোকের পরে
রিমঝিম যতো বৃষ্টির গান তড়িৎ শিখায় ভরে  
ঋতুরানী বর্ষা । তবুও কেন খামখেয়ালি খাসা
সারা দিনমান রক্ত চক্ষু     লয়ে ও অগ্নি শিখা 
ঐ আকাশে মাখা ! ?

ঘোর কলিতে ধ্বংসের ডাক দিচ্ছে ধরণী
সবুজায়ন এর সমাধান বলছে বিজ্ঞানী ।

দেশ নেতার সময় নেই  বিজ্ঞানীর  ব্যথা 
ধৈর্য্য ধরে শোনার মতো ছেঁদো বাক্‌ অযথা ।
ঢালতে ব্যস্ত টাকার বস্তা ভোটের মুখ চেয়ে
দিন রাত্তির প্রতিশ্রুতির যাচ্ছে মিথ্যে গেয়ে ।
তাই ---
গাছ রোপণে অর্থ বাজেট বিমুখ যতনে
এই বর্ষার ক্ষণে ।

বায়ুমণ্ডলে ওজন স্তর দূষণে হয়েছে ফুটো ।
বানের জলে যেমনি ভাষে অবাধ খড়কুটো
তেমনি ভাষবে দেশ,দুনিয়া প্রকৃতির রোষানলে 
ঘোর বর্ষায়  তাই এ আকাশ রৌদ্রের কবলে ।

অজ্ঞ রাজা, রাণীর তরে দূষণে প্রকৃতি ভরে
উঠবে যত দেখবে প্রজা আপন বিনাশেরে  ।

তাই ----
ঘোর বর্ষায় কাঠ ফাটা রোদ আনবে ডেকে খরা
সুনামির মতো জলোচ্ছ্বাসে পৃথিবী আর্তস্বরা
হয়ে ভাষাবে সকল জীবন এমনি অকালে 
ধ্বংস  নিদান উঠবে কল্লোলে ।

এসে আয়লা,আমফান আর টর্নেডো, টাইফুন
রক্ত চোখে করবে মানুষ খুন  ।
ফিরবেনা হায় সম্বিত তবু ধিক্ ও দুর্মতির 
যতই দেখুক  চন্দ্রদেশে সায়েন্স অগ্রগতির  ।

ভাবছে দেশের পিতা কেবল সামরিক শক্তি
কোটি টাকা ব্যয়ে মারণাস্ত্রে বাড়ালেই মুক্তি ।

মারণাস্ত্রে শত্রু রুধিবে প্রকৃতি যে রুষিবে ,
তারে ----
না দিয়ে যতন  করলে লালন প্রতিশোধ হায় নেবে
আজ বা কাল দুদিন পরে কে এ কথা বোঝাবে
কুলাঙ্গার , নরশ্বাপদ রাজনীতি বাদশায় ?

ছায়া সুনিবিড় বনবিথী নীড়  প্রকৃতির হৃৎ ম্পন্দন,
সে হৃদয় ফেলি খুঁজছে মানুষ অমৃতময় জীবন
দেদার অর্থ ঢেলে শত্রু নাশের ছলে 
সামরিক সজ্জায় নবীন ভরসায় 
রচিছে আপন দিবা, রাত্তির শ্মশান শয্যায়  ;
স্নিগ্ধ , শ্যামল, শোভন প্রকৃতি ধ্বংস যজ্ঞ নেশায়‌ ।

ঘোর বর্ষায় তাই যে আকাশ গ্রীষ্ম অট্ট হাঁসি
হাঁসিয়া চলিছে সারা দিনমান  রোষ খানা প্রকাশি ।

পাতাল সিক্ত , সজল ধারায় তুলে এনে অপচয়
করায় আপন আঁকিছে ললাটে ভূমিকম্পের ভয় ।

কালোধোঁয়ায় আকাশ ভরে আনছে ঝড়ের মাতন
কুঞ্জ ছায়ে ধুলার গায়ে কভু না সাজায়ে ভুবন
আনছে অজ্ঞ রাজা, প্রজা সুধুই আপন মরন ;
বর্ষার দিনে রিমঝিম গানে নেই তাই বরিষণ ।

Thursday, October 5, 2023

ঘাসের সুঘ্রান -- পবিত্র প্রসাদ গুহ

 পবিত্র প্রসাদ গুহ
 ঘাসের সুঘ্রাণ
 ০৫/১০/২০২৩
হলদে সবুজ মেশানো কচি বাসন্তী রঙের প্রভাতী সূর্য ঘষাঘষি করে লেমন ঘাসের পাতা ভেজা ফড়িঙের পাখায়,
আমি সে রঙে নিজেকে আরো একবার নিতে চাই স্নান করিয়ে ।

দূর্বা ঘাসের নরম পালকের গা বেয়ে চুঁইয়ে পরছে রসালো সবুজের সুঘ্রাণ,
সেই ঘ্রাণে বুঁদ হয়ে মাতাল হয়ে চাই থাকতে সারা জীবন।

ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ উড়ন্ত চড়ুইয়ের ঠোঁটে আধা শুকনো বাদামী ছন ঘাসের খড়কুটো,
পরিবারের জন্য কত ভাবনা, আরো সুরক্ষিত করতে শাবকের আস্তানা।

আমড়ার কচি হরিৎ পাতার মত সুঘ্রাণ তখনো মেখে আছে দীঘির পাড়ের নরম দুবলা ঘাসে,
কুচ কুচ করে ধারালো সাদা দাঁতের আগা দিয়ে পিষে পিষে খেতে থাকে লাল গোল গোল চোখের তুলোট সাদা রেশমি পশমের খরগোশ গুলো।

আমার মনের শরীরে মেখে থাক পল্লী পথের দুধারের জংলী ঘাসের জংলী সুঘ্রাণ,
যেন কত একাত্ম, পবিবারের সদস্যের ন্যায় বছরের পর বছর বসবাস করছে একসাথে ।

Wednesday, October 4, 2023

কুমারী জননী -- মঞ্জুরুল হক তারা

 
কুমারী জননী
মঞ্জুরুল হক তারা 
খোলা দরজার পর্দা ঠেলে
      ঘরে ঢুকেই চমকে গেলাম 
                      তুন্নির চোখে জল, 
     ঘরময় তপ্ত কোলাহল
              গুপ্ত চোখে দেখলাম
                  হারিয়েছে ঠোঁট থেকে
                               বুকের সাহস বল।
        ঘরের যত সব আসবাবপত্র যত্রতত্র এলোমেলো
           কাপড়-চোপড়  বিছানা চাদর  সব অগোছালো।
  তন্বীর  লাল গাল  আরো লাল
       হাসি খুশী   মুখের আড়াল
     বুকের ব্যথা    নরম আঙ্গুলে ছড়ায়, 
       তন্বী আমার দিকে চায়
     কী বলতে গিয়ে থেমে যায়
           লাল গালে উষ্ণ হাওয়ায়
       বুকের ব্যথায় চোখের জল গড়ায়। 
-
  আমি তাকে প্রচ্ছন্ন আদর করে
                           বুকের কাছে নেই টেনে
সে তার আঙ্গুল ওষ্ঠাধরে চেপে ধরে
     " চুপ -কোন কথা নাই
       পুরুষের কোন গ্লানি নাই  ভ্রূণের রক্ত পানে। "
অতপর সে -
যন্ত্রণার আঁধারে হেলান দিয়ে দেয়ালে
  তার গুপ্ত বুকের সব কথা  বলে  খুলে।
ব্রহ্মপুত্রের পারে তোলপাড় করা
                        আগুন প্লাবনের ছন্দ, 
স্বপ্ন গুলি তার ইচ্ছাহীন ঝরে পড়া
          বিভ্রম করা দূরন্ত সাগরের গন্ধ।
সে দিন সন্ধ্যায় কাশবনের আড়ালে
             নির্জন বালু চরে কেমন করে
বুকের আঁচল থেকে সহসা ঝরে পড়ে
                  স্বপ্ন, সাধ, সব গিয়েছে উড়ে।
   
-অস্পষ্ট স্বরে ব্যথা কাতরে বললে -
"পশুটা এসেছিল শিশুটির দায়িত্ব নেয়নি
      স্পষ্ট বলে দিয়েছি -সম্পর্কের ইতি টানি,
আমার খোকা মায়ের পরিচয়েই বাঁচবে
পৃথিবীর আলো দেখবে হাসবে খেলবে
           কবি,   ওকে আমি নষ্ট করতে দেইনি।"
আমি তাকায়ে দেখি অদ্ভুত অপরূপ
    শাড়ির আঁচলে হাসি খুশী
     খেলা করে নিষ্পাপ শিশুর মুখ, 
জল ভরা চোখ   আশা ভরা বুক
        দাঁড়ায়ে রয়েছে কুমারী মা জননী, 
            অমন মোহিনী হাস্য মুখ
         স্নেহময় নারীর মাতৃত্ব রূপ
                আকাশময় সুগন্ধ ছড়ায়
                      প্রেমময় স্নিগ্ধ ছায়ায়
               সমাজ নিন্দার ভয় সে করেনি।
   সাহসি মেয়ে  প্রেম দিয়ে  নতুন সমাজ গড়ে
   স্বর্গের আলো নিয়ে গায়ে,
   আমার গোপন অন্তর শ্রদ্ধা ভরে  নূয়ে পড়ে
   প্রেম প্রতারিত কুমারী মায়ের পায়ে।
               

Tuesday, October 3, 2023

অবিনাশ -- উমা মুখার্জী

  অবিনাশ
  উমা মুখার্জী
  ০৩/১০/২০২৩
অবিনাশ তোমায় বড়ো দেখতে ইচ্ছা করে
সেই ভুবন ডাঙ্গার মাঠের শেষে ভঙ্গ মন্দিরের গায়
বৃক্ষ জড়িয়ে লতাগুলো একই ভাবে দাঁড়িয়ে
কতবার করি সেই পথে আসা, যাওয়া তুমি ছাড়া।

দখিনা বাতাস এসে চুপিচুপি ওড়ায় আঁচল
ঝিনুকের মতো নয়ন জলে ভেসে জমাই স্মৃতির মুক্তো
আসবে বলে অঙ্গুরীয় দিয়ে সেই গেলে চলে
অবিনাশ তুমি কি পেয়েছো নতুন সাথী আমায় ভুলে।

বেলাশেষে ম্লান সূর্যের আলো ছুঁয়ে যায় বারান্দা
চায়ের কাপে তুলে ঝড় আসতো সুন্দর সন্ধ্যা
সন্ধ্যাতারা আজও চেয়ে হাসে মিটিমিটি
এক গোছা রজনীগন্ধা টেবিলে আজ সাজেনা।

পূর্ণিমা জোছনা আজও আমায় একই ভাবে মাতায়
কত কথা কত গল্প সেই মধুরাত মনে দোলা দেয়
এতো সহজে তুমি সব ভুললে কি করে তাই ভাবি
অবিনাশ দেবে সেই রাবার আমি যদি মুছতে পারি।

অবিনাশ তোমার কথা ছিলাম, আছি, থাকবো
নিশুতি রাতে আসেনা ঘুম জোনাক দেয় আলো
যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে তুমি ভুলে গেলে কেন?
তুমি কি তবে বিস্মৃতির নদী সামনে এগিয়ে চলো।

নতুন যুগের উত্থান -- মৃণাল কান্তি রায়


নতুন যুগের উত্থান
মৃণাল কান্তি রায় 
০২/১০/২০২৩
যুগ যেন বদলে গেছে   নতুনভাবে প্রাণ পেয়েছে
              হরদম চলছে রদ-বদল,
নতুন শিক্ষা নতুনভাবে  কার গিন্নি কে পাবে
            যেন অভিসারে এমন সকল।

কত্ত প্রক্সি কত্তভাবে কে জিতবে কে হারবে
               এই নিয়ে যত্ত কেচাল,
যেন এ নব অভিসার    সর্বত্র যেন লোকাচার
             পরিবেশ বড় বেসামাল। 

অভিসারের যেন সিনেমা  কত্ত কি দেখ উপমা
               রূপক যুগের কবিতা,
ডানে যেমন বেতাল   বামেতে তেমন কেচাল
              যেন আধুনিক ছবিতা। 

ছবি যেথায় মুখ্য    যোগ-বিয়োগে দক্ষ 
             সামন পেছনে  হাতছানি,
কোথাও নাই স্বস্তি  রাত-দিন কেবল কুস্তি
             শশব্যস্ত যেন ভাব খানি। 

সম-অসমের বুদ্ধিমাত্রা  অভিসারে যেন যাত্রা
               কারোর লক্ষ্য না সুস্থির,
যুগের দাওয়াই তেমন  ব্লাকমেলের রূপ যেমন
               পল্টিতে পল্টিতে অস্থির! 

মানের দিয়ে দোহাই  সম-অসমের লড়াই
               অভিসারে ব্যস্ততায় সবাই,
জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিজীবি  ভেবে-চিন্তে পরজীবি 
               এ যে কুল রক্ষার লড়াই! 

নর-নারীর বসুমতী     শিশু-যুবার কত্ত মতি
               লুকোচুরির ভাগ বাটোয়ারা,
কেউবা শূন্যে গড়ায়   কেউবা ভুঁড়ি বাড়ায়
              কেউবা সুযোগে মাতোয়ারা। 

অভিসারের কাজ-কৌশল  নকল আর আসল
               মিশ্রণে পুরো একাকার,
নিং বং আর টিপ ছাপ  কত্ত কি বাপরে বাপ
               বুদ্ধিতে চলছে লোকাচার। 

কেউবা নগন্য কেউবা ধন্য অভিসার সৃষ্টির জন্য
               সেয়ানারা বুদ্ধিতে অগ্রগণ্য,
অপরকে বানায় দোষী পল্টিতে পল্টিতে মহাখুশি
               দেশময় তাবেদারী সৌজন্য!

কেউ বঞ্চিত কেউ অবাঞ্ছিত  কেউবা অতিরঞ্জিত 
                   বলছে কালের ঘড়ি,
সময় চলছে বয়ে  হিংসা কুৎসার পথ ছুঁয়ে
                 কেউবা মারছে তুড়ি! 

ইন্ধন-ঈশারায় ছাওয়া  নতুন যুগে যাওয়া
              নারীকুলে ইশারায় অবয়ব,
কারবা কে আছে     কোথায় কে গেছে
              আকারে-ঈঙ্গিতে জনরব।

ছিল না আগে এমন  নতুন যুগের ভাবন
         আঁখিতে-আঁখিতে সংলাপ,
এক আঁখি কি দু আঁখি  ধোকাতে ধোকাতে ফাঁকি
         নতুন যুগের এ আলাপ। 

সবাই নাকি মঙ্গল চায়  বোঝাটা বড্ড দায়
            তেলেজমাতি ধর্মীয় লোকাচার,
কত্ত যে বুদ্ধির ঘট      দেখ যত আছে পট
           ইন্টারনেটে ব্লাকমেল আবার! 

সুযোগ সন্ধানী দল  ফায়দাতে রদ-বদল
             শেষমেষে ওরা ওরা তারা,
এহেন দুর্গতির কাল  পরিবেশ টালমাটাল 
             জনবিচ্ছিন্ন করাবে যারা। 

নতুন যুগের উত্থান  গাও সবে জয়গান
           যারা থাকি যারা চলে যাই,
কিছুই করার নাই  নতুন যুগের ধারাই
           নতুনত্বের ভাবমূর্তি তাই। 

বুঝেই আসলো এবার  নতুন যুগ সবার
             অভ্যস্ততা অতীব জরুরী,
যুগেই চলতে হবে    নয়তো পিছু থাকবে
            বোঝ যত সুন্দর-সুন্দরী!

মনকে করবে সুন্দর  বৃহৎ রাখবে অন্তর
               নতুন যুগের লাচারি,
সুখের আশা নাই  কষ্টগুলো ঘোচাও তাই
             নতুন যুগ বড় বাহারি! 
         

Sunday, September 17, 2023

মেঘ বালিকা -- নাসিরা বেগম

মেঘ বালিকা
নাসিরা বেগম
১০-০৯-২৩
আকাশ জুড়ে কালো মেয়ে মেঘ বালিকা সেজেছে সঙ,
মেঘলা-চোখো অচিন মেয়ে বৃষ্টিলেখার দারুন ঢঙ্।
নীল নিলীমা তুই কি মোদের দূর আকাশের নীলপরি,
পেঁজা তুলোর মাঝখানেতে পরে থাকিস্ নীলাম্বরী। 
তুইই  কি সেই রুখুশুখু যক্ষপ্রিয়া হালফ্যাসানি
একটা নয়ন অগ্নিবলয় অন্য চোখে বেত্রবতী,
মেঘপিয়নের কাঁধে ঝোলা মায়াহলুদ পত্রখানি
বাতায়নে অপেক্ষা চোখ মেয়ের বুকে তৃষ্ণারতি। 
ঈশানি মেঘ ভাসিয়ে দিলো বিরহপোড়া ওই দুপুর,
মহাকালের ঘন্টা দোলায় ত্রিকালজ্ঞ খেয়ামাঝি
ভিজবে মেয়ে আগুনরূপা ছিঁড়ে যাবে শিঞ্জিনূপুর।
রংধনুতে গা এলিয়ে ছাই রঙা ওই মেঘ বাবাজি 
শরত সাদা মেঘের গাঁজায় দিন ঘুমটা বেজায় রাজি। 
পত্র পাঠে বুকে শিহর ঝিমিয়ে থাকা উর্জা মেয়ে
ভুর্জপত্রে দু-একখানা বিষম-খাওয়া বৃষ্টিফোঁটা,
দলাপাকানো লজ্জাবস্ত্র ছুঁড়ল মেঘে ঘেমেনেয়ে
তারাখসা গন্ধ রাতে অভিসারিকার পথে কাঁটা। 
ভাসলো মেয়ের হলুদ খামের গোপন চিঠি নক্ষত্রজলে,
প্রেমধোঁয়াশা আপত্তিকাল হা-ক্লান্ত জিরিয়ে নেওয়া ছায়াসজল হিজলতলে।

Thursday, September 14, 2023

প্রেম -- কাকলী


প্রেম
কাকলী
১৪/০৯/২৩
একটুকরো প্রেমকে খোঁজা, আর মেঘলা আকাশে রোদ্দুর খোঁজা,
হয়তো আছে, হয়তো নেই, অনুভবে শুধুই,
প্রেম মানে কি শুধু চোখের দেখায়, হাতের ছোঁয়ায়,
নাকি শারীরিক অবয়ব ছাড়িয়ে শুধু অন্তরে অনুভব,
প্রেম মানে কি শুধুই পাওয়া, নিজের জোরে চাপিয়ে দেওয়া অধিকারে,
নাকি অলীক কল্পনায় না পাওয়াতেও প্রাপ্তি,
সারাজীবন ধরে পাশাপাশি থেকে যাওয়া দুটি মন,
সত্যিই নিজেদের চেনে কতক্ষন, নাকি সবটাই অভ্যেস,
ভালো থাকায় চেষ্টা, নিজেদের অনুভূতি গুলো অগ্রাহ্য করে,
প্রেম মানে তাহলে ভালো থাকায় ছলে মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার খেলা,
নাকি এক অপার্থিব সুখের মধ্যে ডুবে গিয়ে অস্তিত্বের অন্বেষণ করা,
গভীর ভাবে ভালোবাসার মানে কি শুধু শরীর ছুঁয়ে থাকা,
নাকি বহুদূরে থেকেও অন্তরে তার উপস্থিতি অনুভব করা,
সবকিছুই ভীষন আপেক্ষিক, কি ভাবে ভাববে, কি ভাবে দেখবে,
সেই মতো ছবি আঁকা হবে,
আকাশে গোধূলি আলোর বুকে নাম লেখা হবে,
ভীষন আবেগ জড়ানো কিছু মুহূর্ত থেকে যাবে জীবনের সঞ্চয়,
অথবা কোথাও কিছুই নেই, তবু মনে করতে তো বাঁধা নেই,
অনেক স্বপ্ন আঁকা রঙিন দিন, সময়ের সাথে তারাও বার্ধক্যে পৌঁছায়,
কিন্তু সেই অনুভূতি গুলো চিরদিন চিররঙিন,
পূর্ণিমার চাঁদ যেমন প্রতি পূর্ণিমাতেই একরকম,
তবুও রকমফের হয় তার ভিন্ন চোখে ভিন্ন রকম,
প্রেমেরও তেমনি হাজার রূপ, হাজার অনুভূতি,
কেউ পেয়েও বুঝতে পারে না, কেউ না পেয়েও স্বপ্ন বুনে যায়,
প্রেম বুঝি অধরাই হয়, নাগালের বাইরে, স্বপ্নের ভিতরে,
এই মনে হয় পেয়েছি, এই মনে হয় হারিয়ে ফেলেছি,
সমস্ত উষ্ণতা মেখে শুধু অন্তরে অনুভব তাকে, এ এক প্রাপ্তির সাধনা।

Wednesday, September 13, 2023

ভুল সংকেত -- সেলিম আলতাফ

  ভুল সংকেত 
 সেলিম আলতাফ 
 ১৩-০৯-২০২৩
সেদিন হঠাৎ চমকে উঠি ভীষণ! 
জোড়াগেটের মোড়ে চলন্ত রিকশায়
মেয়েটি - ঠিক তোমার মতই।

মুহূর্তে কেঁপে ওঠে শরীর - 
সাথে ঝাকুনিতে মোটরবাইক থামে।

একরাশ অবাক বিস্ময় এসে হাজির-
মন আর চোখের বিস্ফোরিত বিচ্ছুরণ।

দুটো প্রশ্ন ঘোরপাক খায় লাটিম ঘোরায়- 
কবে এলে তুমি আমার শহরে? 
তুমি এলে আর আমি একটুও জানলাম না? 

কেটে যায় কিছু উষ্ণ সময় বোঝার নিমিত্তে-
তারপর--
পর্দা সরে ধীরে ধীরে দৃষ্টি মঞ্চের অবমুক্ততায়,
বিভাবরী আলোয় ধরা পড়ে ভুল সংকেত বিন্দু। 

আরে এ তো তুমি নও! 
সে অনেকটা তোমার মত!

হাঁফ ছেড়ে বাঁচি আমি রক্তচাপ নামতে থাকায় 
হেসে উঠি মন সরোবরে অনাবিল আনন্দ স্নানে,
সে তুমি নও- এটা ভেবেই আমার এত তৃপ্তিময়তা।

আবার তারপর--
একটা নিদারুণ কষ্ট আবেগ এসে জায়গা করে,
দীর্ঘশ্বাসে ভীড় জমায় হতাশা অনুভব সমাবেশ।

ফের প্রশ্ন উঁকি দেয় খোলা জানালার কার্ণিশে-
আচ্ছা সত্যি সত্যিই এখন রিকশায় তুমি হতে?
কি করতাম আমি তখন ভাবনার কাটাকুটিতে?
কি করে সামলাতাম নিজের অস্থির তোলপাড়?  

আরও কত কিছু ভাবি আমি-
কারুকাজ রেখাপথে সুঁই সুতোর বুনন চলে,
স্বপ্ন ডানায় ঝাপটাতে থাকে হাপিত্যেশ ছবি। 

ততক্ষণে মেয়েটিকে নিয়ে রিকশা এগোয়-
চলে যায় অজান্তে অনেকটা দূরত্ব বাড়িয়ে, 
ঝাপসা দৃষ্টি সীমানার চৌকাঠ পিছনে ফেলে।

Sunday, September 10, 2023

বুনে গেল আগামীর স্বপ্নীল বীজ -- বিক্রমজিৎ মান্না


বুনে গেলো আগামীর স্বপ্নীল বীজ 
বিক্রমজিৎ মান্না 
৬/৯/২৩
হোস্টেলের ঘরে ছেলেটা পড়ছিল চেয়ারে বসে
তখন গভীর রাত ।
দরজায় টোকার শব্দে খিল খুলেই স্তম্ভিত ।
মদের ঘ্রানেতে ভরা  , রক্ত জবার চোখ
টলমল পায়ে ,জড়ানো কন্ঠ স্বরে 
সম্মুখে দাঁড়িয়ে সিনিয়ার দাদা । 

সপাটে থাপ্পড় , 
এত রাতে আলো জ্বলছে কেন ?
ছেলেটা হতচকিয়ে যায় অসঙ্গত প্রশ্ণে ,
আর কষানো থাপ্পড়ে ।

কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে 
সিগারেট ধোঁয়া ভরা মাদক কক্ষে ।
প্রশ্ণোত্তর পর্বে ফেলড হলে
চড়,ঘুষি,লাথি,সিগারেট ছ্যাঁকা 
কিছুই থাকেনা বাকি।

কে বা বাঁচাবে তারে এ নরক থেকে !
যন্ত্রণায়  ভেষে ওঠে মার মুখ খানা 
যে মা তাঁর মুছায়েছে হাজারো কান্না।

উন্মত্ত শ্বাপদের নির্মম বাহু
ছাদ হতে ছুঁড়ে দেয় তাঁরে 
কঠিন প্রস্তরে নির্বিকারে
খল - খল হাস্যের লহরীতে ভরে ।

কাকভোরে পুলিশ আসে ।
দখিনা হাওয়ায় খোলা বইয়ের পাতা গুলো
তখনও যে  পত- পত উড়ে‌ই চলে ।
টেবিলের প্লেটের জলে 
ভাষা যত বেলি আর গোলাপের পাপড়ি সুবাস 
ঘরে ঢালে আমোদিত প্রাণ ।

বইয়ের পাশেই রয়ে যত্নে সাজানো
কোন ছেলেবেলায় তোলা
মায়ের হাতটি ধরে  ছবিটার ল্যামিনেট কপি ।
এবং ---
বিবেকানন্দ - নিবেদিতার হিমালয় পথে
সে চিরায়ত স্মিত হাস্যের 
বাঁধানো ছোট্ট ফ্রেম দেখে 
পুলিশ ইন্সপেক্টরও ক্ষনিক থমকে দাঁড়ায় ।

ক্ষণিক থমকে দাঁড়ায় আসমুদ্র হিমাচল বিষ্ময় ভরে 
চকিতে সংবাদ শিরোনাম শুনি ।

রাজনীতি বাদশারা লুফে নেয় নতুন ইস্যু ।
যদিওবা রানী আর সুশীল সমাজ 
বেদনার সুরে ভাষি যায়না ছুটি 
স্বপ্নদিপের মার বেদনার প্রলেপ হয়ে
ওদের গাঁয়ের পর ।

যে মায়ের চিরদিন অশ্রু ঝরাবে
হয়তোবা 
স্কুল টুর্নাম্যান্টে
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের ট্রফি খানা ;
যা সোকেশে এখনো জ্বলজ্বল  ।

হয়তো সিঁড়ির তলে আজও আছে পড়ে
ছেলেটার ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট, লাটাই
আর মাছ ধরার বড়শিটাও ।
যেখানে ছড়ানো তাঁর নির্মল,উচ্ছ্বল হাঁসি ।

যে টিফিন বক্সটা নিয়ে 
বোনের সাথে নিত্য কলহ
তাও বোনের বুকে বেঁধা হুল হবে ।

আর , বাবার যে হাত ঘড়িটা
ছেলেবেলায় মেঝেতে ফেলে ভেঙেছিল 
সে স্মৃতিও হয়তোবা
জ্বলিবে পিতার বুকে
রাবনের চিতা হয়ে এ জীবনভোর ।

তবুও যে আপনার জীবন দানে
প্রগতির পৃথিবীর চোক্ষু খুলি
হয়তোবা মুছে গেলো আগামীর শত মার
বুক চাপা জমাট পাষাণ ;
শিক্ষার মন্দিরে  নগ্ন পশুত্বের তান্ডবে স্তব্ধ করি ।

বুনে গেল আগামীর স্বপ্নীল বীজ
শাণিত চেতনার শিক্ষাঙ্গনে
আসমুদ্র হিমাচল মনে
করুন নয়নে ।

Friday, September 8, 2023

অভিমানী সময় -- চন্দনা কুন্ডু

অভিমানী সময়
চন্দনা কুন্ডু
8.9.23
মুঠো খুলে পড়ে যায় সময়, অভিমানে টুপ করে 
এই আছো তুমি, এই নেই মন ভুলানো ইশারায় ।
আমি কোথাও প্রবল, কোথাও শীর্ণ নদীর মতো
আবার কখন শূন্যতায় রিক্ত আবেগ ভরা মনে তোমাকে খুঁজি ।

দরিয়ার মতো বয়ে চলছি ওই সময়ের ইশারায়,
এই আছি আমি বর্তমানে, এই অতীতে ঘুরে মরি ।
শুধুমাত্র ভবিষ্যতের দিকে অন্ধ দৃষ্টিতে
তাকিয়ে থাকে আমার মন।

কবে, কখন, কোন সময় এইসব প্রশ্ন !
আমার চার পাশে আমাকে ঘিরে থাকে ।
ঈশ্বর সত্যি বোবা, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে, 
উওর দেয় না কখনও  ।

চোখের জল যায় শুকিয়ে, মন বলে, জীবনে কি তার দাম !
তাই  মনের ভিতরে আমি ডুব দিয়ে,  ভালবাসার মুহূর্তগুলি মুঠো ভর্তি করে , ক্ষনিকের সুখগুলোর সাথে তুলে আনি ।

এই খেলায় কিছুক্ষণ ভুলে থাকি, আবার
ওই সময়, আবার আমার হাত থেকে পালিয়ে যায় ।
আমার মুঠোর ফাঁক দিয়ে চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে,শূন্য করে তোলে 
তাইতো এত অভিমানী সময় যায় চলে,
মহাকালের কোলে ।

Wednesday, September 6, 2023

মহান শিক্ষক -- শুভঙ্কর ত্রিপাঠি

 মহান শিক্ষক
 শুভঙ্কর ত্রিপাঠী
 ০৬ _ ০৯_২০২৩
তুমি জ্ঞানী;
অনন্ত অপার রহস্যের  --
সত্য সন্ধানী  ।
জ্ঞানের অমৃত সুধা 
যুগে যুগে কর সঞ্চয় , 
সেই সুধা দান করে
তুমি মহা দানী
কালোত্তীর্ণ অমর অক্ষয়।

তুমিই  দধীচি ;
হও জ্ঞান তপস্যায়।
তোমার প্রদত্ত অস্থি ;
অসুর নিধনে , দেবরাজ বাসবের
কঠোর বজ্র গড়ে,
দেবতার অস্তিত্ব রক্ষায় ।
সৃষ্টির সংকটে আনে স্বস্তি।

তুমি স্বাভিমানী 
চানক্য ,দরিদ্র জ্ঞান যোগী।
তোমার  শিখার অপমানে 
অহংকারী ধননন্দ হয় ভুক্তভোগী।
নতুন যুগের
পুরোহিত তুমি,
কুটিল কৌটিল্য  হও যুগ প্রয়োজনে।

তুমিই ঈশ্বর
বিদ্যার সাগর তুমি, সাগর দয়ার
মাতৃ জাতি ,শিক্ষা পায় , খুলে যায় দ্বার
মধ্যযুগ পিছে পড়ে থাকে
নতুন যুগেতে পথ চলা,
তোমারি শিক্ষার আলোকে। 

তুমিই বিবেকানন্দ
তুমিই বিবেক , ভারত আত্মার।
মহান কর্মযোগ , বেদান্ত দর্শনে
মুখরিত বিশ্ববাসী, তোমার বন্দনে
শিকাগোর ধর্মসভা , জয় জয়কার।
সকলে গর্বিত মুগ্ধ
ছাত্র যত প্রকৃত শিক্ষার।

গুরু রবি, কবি শ্রেষ্ঠ
শিক্ষা গুরু তুমিই মহান।
বাঙালির সত্তা তুমি, বাংলার মান ।
শিক্ষা আনন্দময় প্রকৃতির মাঝে
মুক্ত  চিন্তা , উচ্চ শির সকাল কি সাঁঝে
তোমার শিক্ষার আলো শান্তিনিকেতনে
তোমার শিক্ষার আলো, আমাদের প্রাণে।

শিক্ষকতা পেশা নয়, 
আলোক দিশারী জয়গান।
কঠিন মহান ব্রত,
পবিত্র মঙ্গল যত,
মানবতা, মনুষ্যত্ব-
আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখান।
মহান শিক্ষক শুধু তাঁরা ,
যাঁরা নিজগুণে ভাস্কর সমান।