Saturday, July 20, 2019

একান্ত সংগোপনে

একান্ত সংগোপনে

অনুভবে , মনের কোনে
আমার একান্ত সংগোপনে
কোন অমাতে আছিস ওরে
ছোট্ট আলোর কণা ।

নিশিদিনের অনুভবে
ছোট্ট দুটি ওই মুঠিতে
এত কি তোর শক্তি ওরে
পারবি দিতে হানা ।

আমার গহন আঁধার রাতে
মিষ্টি মধুর কল্পনাতে
কত বিচিত্র অনুভবে
আছিস সাথে সাথে
কেমন করে বোঝাই সবে
লক্ষ্য মানিক কোথায় জ্বলে
দিনের অত আলোর মাঝে
তারায় ভরা রাতে ।

Wednesday, July 10, 2019

তোমায় মনে পড়ে

তোমায় মনে পড়ে

দক্ষিন আকাশ যখন

কালো , চাপ চাপ মেঘে ঢেকে যায়
তখন তোমার কথা মনে পড়ে ।

মেঘলা দিনের ঘনায়মান অন্ধকারে

পাখির দল যখন 
অসীম ব্যস্ততায় বাসায় ফেরে
তখন তোমার কথা মনে পড়ে ।

আরো অন্ধকার যখন

সমস্ত পৃথিবীটাকে ঢেকে ফেলে
যখন বড় বড় গাছগুলোকে
অশরীরীর মত মনে হয়
তখন তোমার কথা মনে পড়ে ।

একঝলক দমকা হাওয়া

যখন আসুরিক শক্তিবলে
কালো মেঘগুলিকে
টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিতে থাকে
তখন ---- 
তোমায় মনে পড়ে ।
ভীষণরকমভাবে মনে পড়ে ।

Wednesday, July 3, 2019

মনোরমা

মনোরমা

একদিন যদি 
সব কাজ ফেলে
ছুটে যাই কোনো সাগরের কূলে
এমনি বিকেল 
সূর্য অস্ত
ফেলে যাওয়া যত কর্ম ব্যস্ত
ছায়া-মেঘ হয়ে
আকাশে ভাসত 
ঢেউ-য়ের তালে তালে ।
অস্ত-রবির 
সোনার ছোয়ায়
ব্যথাগুলি সব জলে মিশে যায়
নীল আকাশে
আলাপনে
কখন যেন আপন মনে হারায় ।
সকল বাধা
বন্ধন ছাড়া
অসীম শূন্যে নিমেষহারা
কোথায় এমন
পাগল করা
সুর ওঠে নিরালায় ।
সাগর সে তো
অসীম , অবাঙ
তবু কত না আপন আমার
একসাথে কত
সুখ-হাসি শত
ঢেউয়ের তালে ওঠে যায় ।
আশাহীন যত
ভালোবাসা ছিল
মুহূর্তে সবই আকাশে মিলালো
সোনা-হাসিমাখা
সাগর জলে
নবপ্রাণ লাভ হলো তায় ।

Friday, June 28, 2019

নিরাশা

নিরাশা

চারিদিকে একি দেখি অমানিশির ঘোর

জন্মের অন্ধকারও হার মানে বুঝি
নিশ্ছিদ্র নিরাশায় ডুবে যাওয়া ভোর
মুছে গেছে সব পবিত্রতা

নিস্তব্ধ গভীর রাত ----

শুনি শুধু হৃদয়ের ব্যর্থ আস্ফালন
গুমরে মরে পৃথিবীটা ছোট্ট ঘরের কোনে
কানে আসে কোনো এক আদিম বিস্ফোরণ
এরাতে ভালোবাসা পাশ ফিরে শোয়
পড়ে থাকে আজন্মের অব্যক্ত যন্ত্রণা
মনের আগুন ক্রমে মাথায় ছড়ায়

চারিদিকে নরপিশাচেরা অট্টহাসি হাসে ।

Monday, June 24, 2019

মুক্তোর আশায়

মুক্তোর আশায়

সমুদ্রের জল কি চোখের জলের চেয়েও বেশি নোনা
অথবা
জীবনের এক- একটি ভুলে জন্ম হয় এক- একটি সমুদ্রের
নানা সুখ-দুঃখের ঢেউ আছড়ে পড়ে বারবার

এত জলের উৎস খুঁজি আমি
বিনিদ্র রজনী আমার কুয়াশামাখা

কেটে গেছে কত ঝিনুক- কুড়ানো-বেলা
পা কেটেছি পচা শামুকের খোলে
দগদগে ঘা হয়ে আছে তা স্মৃতিতে
কোথায় উপশম , নেই কোনো ওষুধের প্রলেপ

বলেছিলে মুক্ত খুঁজে দেবে
এখনো দুচোখে আশা নিয়ে
তাকিয়ে আছি সুদূর-সমুদ্রে ।

Friday, June 21, 2019

দুষ্টু মেয়েটির জন্য

দুষ্টু মেয়েটির জন্য

জল ছলছল

আকাশ কালো
শ্যামলা মেয়ের 
মনটি ভালো ,

ও মেয়ে তুই

আস্তে চল
দেখ না চেয়ে
পথ পিছল ,

সামলে যদি

না চলিস 
পিছল পথে 
পা ফেলিস ,

দেখবি তবে

ভাঙবে পা
তাই তো বলি 
আস্তে যা ,

জল থৈ থৈ

আকাশ যদি 
নাচতে ইচ্ছা 
হচ্ছে যদি ,

ইচ্ছে মত

নাচিস পড়ে
সোনা রোদের 
হাসি ঝরে  ,

এখন আমার 

কথা শোন
চুপটি করে 
আটকে মন ,

ঐ দেখ তো

আকাশ চিরে 
সাপের ছানা
খেলা করে ,

ও সাপুরে

বিন বাজাও
আরো খানিক
সাপ নাচাও ,

বিষ যখন নেই

এ সাপের
তখন আবার
ভয় কিসের ,

তবে যখন 

টুকটুকে বউ
নাইতে যাবে ,
ও নদী-ঢেউ -----

একটু তুমি

সামলে নিয়ো
বৃষ্টি তুমি
ধরা দিয়ো ।

পড়ে আবার 

অঝোর ধারে ,
খেলা কোরো
পথের প'ড়ে ,

আবার ছোট্ট 

মেয়ে এসে
খিলখিলিয়ে
উঠবে হেসে ,

আবার শ্রাবণ

আকাশ জুড়ে
সাপের নাচন
উঠবে বেড়ে ,

দুষ্টু মেয়ে

নাচিস তুই ,
যখন হবে 
নরম ভুঁই ।

Wednesday, June 19, 2019

কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি

কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি

তোমাকে চেয়েছিলাম উথালপাথাল ঝড়ে
মাঝ সমুদ্রে নৌকা যখন হারিয়েছে তার দিক

ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায়
ধরতে চেয়েছি আঁকড়ে
বাড়াওনি তো আশ্বাসের হাত
পাড়ে দাঁড়িয়ে হাত নেড়েছো শুধু

তারপর বহুবছর পড়ে
স্মৃতির কুয়াশা ক্রমে হয়েছে ফিকে
নতুন করে বাঁচার আশায়
ফুলে- ফলে- নৈবেদ্যে সাজিয়েছি ষোড়শোপচার

আবার পদার্পণ আঙিনায়
বিস্ময়-বিমুগ্ধ আমি
সেই একই হাসি
প্রায় সলিলসমাধি আমার স্বপ্ন মনে হয়

কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি
উচিৎ কি আজ --- তিতিক্ষা না তিরস্কার ?

Saturday, June 15, 2019

জিঘাংষা

জিঘাংষা

ঔ শুনি রাত্রির কান্না
কি গভীর মর্মন্তুদ ভোরের প্রত্যাশে
পথহারা নাড়ী যেন এক
স্বজন প্রত্যাশে ফোঁপায় শুধু

চারপাশে তারকার সমাবেশ
কিন্তু হায়
নিশিপদ্মের গন্ধ কোথায়
রাত্রির বাতাসে
এ যে শুধু বারুদ আর রক্তের ঘ্রাণ
পেটের ভিতর পাঁক দেয় অপাচ্য সব
বিবমিষা ছড়ায় চরাচরে
কোথায় নিশাচরের সদল পদভার
উল্লাসে জাগে আরো রাতচরা
ব্যস্ত পাখার ঝাপটায়

কার প্রাণ খুঁড়ে খায়
অজান্তে বাতাস ভয়ে স্তব্ধ হয়ে রয় ।

Wednesday, June 12, 2019

মুক্তি

মুক্তি

চাঁদবুড়ি যখন ঘুমাবে নিঝুম
চড়কা কাটবে তুমি
কথা দিয়েছিলে চাঁদের পাহাড়
হাত নিয়েছিলে চুমি
আরো কত কি নিয়ে গেছো মেঘ
চাঁদের পানা রঙ
শরৎ হেমন্ত শীত বসন্তে
কচি , আদুরে ঢং
সূক্তি যেমন মুক্ত লুকায়
আপন অন্তঃকোনে
নিয়ে গেছো তুমি মুক্তি , সসীম ,
বেঁধেছো সংগোপনে ।

Monday, June 10, 2019

অমৃত

অমৃত


বুকের ভেতর জায়গা বড়ো কম
স্বপ্ন আছে হাজার লক্ষ রকম
পারো যদি সেল্ফ করে নাও
নোয়ানো শিকে আরো ঝুলিয়ে নাও

তোমার বুকে পাথর-কাটা খাঁজ
স্নিগ্ধতা নয় , রুক্ষ মরুর ঝাঁজ
ক্যাকটাসের পাতার মত গোপন
রেখেছিলে , বুঝেছিলাম , ভোরের মত আপন
তোমার কাছে , তোমার কুঁজো পূর্ণ ছিল যুগান্তরের বিষ
আষ্টেপৃষ্ঠে রুদ্ধ করে ঢেলেছ অহর্নিশ

বিষে বিষে অমৃত হয় , অমর ভালোবাসা
মরুভূমির তৃষ্ণা বুকে , আকুল পিপাসা .......

Thursday, June 6, 2019

মানসী

মানসী

চুপিসারে পাতা ওড়ে
তোমার অন্দরমহল
শোনা যায় আর্তক্রন্দন , তুমি নিক্কন
বেনোজলে মুখ দেখে চাঁদ
চরাচরে রাত জাগে , নিথর ,
বীজের ভেতর সুপ্ত অন্ধকার ।
ঘুমচোখে কুয়াশা ঘনায় 
জানালায় উঁকি মারে ত্রস্ত বাতাস
একবার , শুধু একবার
ছুঁয়ে যেতে চায়

Sunday, June 2, 2019

প্রতীতি -2015

প্রতীতি -2015

তোমাকে দেখেছি আমি

ঘন শ্রাবনবর্ষণে ধূপ-ছায়ারূপে
স্নিগ্ধতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছো আমায়

তোমাকে দেখেছি শারদমেঘে

একরাশ শুভ্র ফেনার মাঝে
কি মায়াবি কমনীয়তায় উদাস

তোমাকে দেখেছি দারুণ পৌষে

নিবিড় শীতলতায় হীম-মায়ারূপে

অবশেষে ধরা দিয়েছো বসন্তে

কী গভীর আশ্লেষে বিদ্ধ করেছো আমায়
প্রেমের পূজারীরূপে
ফুলে-ফলে-নৈবেদ্যে তোমর ষোড়শোপচার
পূর্ণ করেছো তুমি নাড়ীর বেদনায়

অলঙ্কৃত আমি আজ পূর্ণ কলসে ।

Monday, May 20, 2019

পরিণয়

পরিণয়

হাতে ধরা চায়ের কাপটা

কেঁপে উঠল তার
এ কাকে দেখছে সে

মনে পড়ে গেল

কুড়ি বছর আগের দিনটা
সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া একজোড়া স্বপ্নিল চোখ
উপরে নিয়েছিল লোকটা
বিবাহের নামে
চলেছিল পাশবিক যান্ত্রিক অত্যাচার
একাধিক দানবের
ছিঁড়ে-খুঁড়ে খেয়েছিল অস্থি-মজ্জা-মেদ
দিন-রাত

বাবা ছিল অসহায়

মায়ের খেলাঘরে পুতুলপ্রায়
তাই মায়ের ইচ্ছায়
ঘটেছিল সব
মা----নয় ---- 
সৎমা যে তার

পারেনি সে প্রতিবাদি হতে

কারো ভরসায়

তারপর ------
কত প্রচেষ্টা , কত পরিকল্পনায়

সুযোগ এসেছিল একদিন
পালাবার ---
উদরে নিয়ে ছোট্ট প্রাণের বীজ

কেটে গেছে কুড়িটি বছর

বহু কষ্টে , বহু বেদনায়
কেটেছে যে দিন ---
তা জানে ইতিহাস
আজ সে যে এক কন্যার মা
আবার একজোড়া স্বপ্নিল চোখ

কিন্তু বিধির এ কি লিখন

আবার কি হেরে যাবে সে
মেনে নিতে হবে আবার পরাজয়

না ----

সে তো সৎমা নয় ---
সে যে মা ---
নাড়ী ছেঁড়া ধন তার
পারবে না কিছুতেই

দিতে হবে যোগ্য শাস্তি তাকে

যার দোষে স্বপ্ন তার ধুলিসাৎ আজ
তাই ----
বড়ো যত্নে চা নিয়ে যায়
মুখ ঢেকে ঘোমটায়

বোঝে না সে কোন অতীত তার

হানা দেয় চোরা পথে
পরম আবেশে --- তাই ---
চা করে পান
তারপর ---
সব ইতিহাস

ক্রমে তার শরীর নীল হয়ে যায় ।

Thursday, May 9, 2019

প্রনতি তোমায়

প্রনতি তোমায়

'সহজপাঠে'র সহজপথ অতিক্রান্ত আজ
স্বপ্নসুষমায় তুমি --- বঙ্গের রামধনু ,
শতবর্ষ পরেও , নবঘন পল্লবের স্তরে কম্পমান ।
তোমার কাব্যবলাকা উর্দ্ধনীলাকাশে
স্বপ্নের মেদুরতায় জোনাকি জ্বালায়
রক্তে রক্তে অনুভূত স্পন্দনে তুমি

তবু , খেদ নয় কম ----
হারিয়ে গেছে তোমার অমল সুধার দল
হাযিয়ে গেছে তারাপদ
হারিয়ে গেছে ঐ পদ্মাতীর , উজানে কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ
আদর্শহীন ইন্ধন এখন মৃত্যুঘুঘুর ফাঁদ
এখনো 'বাবু'র দলে 'পারিষদ' জোটে মেলা
তোমার উপেন বড়ো বেশি অসহায়
বসন্ত আসে ফিরে , প্রকৃতি শ্যামলে সাজে
মিথ্যার আশ্রয় 'পুরাতনভৃত্যে'র চোখের কোনায়
তোমার ভারততীর্থ পুণ্য মহামানবের তীর
ধর্ষকাম মানুষের নিরাপদ আশ্রয়
'গুপ্তধনে'র নেশা এখনো হল না শেষ
কত ' বোষ্টমী ' মিথ্যাচারে আবদ্ধ গুরুর কৃপায়
কত যে ' সমাপ্তি ' অসমাপ্ত , 
উপেক্ষিত ব্যথিত মৃন্ময়ীর আহ্বান
সুভার অন্তর্বেদনায় বিদ্ধ হয় না কেউ
হাজার হাজার দক্ষিনারায় বিবেকের দংশণে
নিশীথে শোনেনা আত্মসুর
কোনো মেহের আলি আর শোনায় না সত্যস্বর ,
তবু জানি মেহের আলি ' সব ঝুট হ্যায় , সব ঝুট হ্যায় '
কালের যাত্রায় বেঁধেছ যে রথের রশি
স্থবির তা , আসে কোন সত্য সুন্দর ,
কবির লেখনী বা গায়কের গীত
তোমার ' জনগন '
রয়েছে সেই প্রতীক্ষায় ।

Friday, April 26, 2019

শঙ্খের জন্য

শঙ্খের জন্য

বিহ্বলময় শান্ত অতীত , পর্ণমোচী বৃক্ষ
স্মৃতির প্রকোষ্ঠে আমার ন্যাড়া ছাদ
উদ্দাম ছাদে সূর্য অস্ত গেছে
অন্ধকারে রাত জাগে দুর্বিনীত বাসনা

বাসনা ---- তবু সোনা সে যে
অলঙ্কার পড়েছ গলায়
ঝিনুক নিয়েছ হাতে
মুক্ত হাড়িয়ে গেছে

হারাক ---- হারাক যত গ্লানি শতাব্দীর
হারাক কালের সীমা , আসুক ফিরে
আবার অতীত

এবারে ঝিনুক নয় ---- শঙ্খ খুঁজে নিও
শাশ্বত জীবনের অগাধ বিশ্বাস

Wednesday, April 24, 2019

চিত্রার্পিতা

চিত্রার্পিতা

রাস্তায়
পথ চলতি মানুষের ঢল থেকে
নিয়ন আলোয়
স্পষ্ঠ দেখি তোমার মুখ
বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপিত
মোনালিসার ছায়া
তর্কের ঝড় ওঠে হৃদয়ে

লিও-নার্দো-দা ভিঞ্চি নই
তাই অজ্ঞাত অনেক
জ্ঞাতও কম নয়
এমনকি 
অন্ধগলির গোপনীয়তাটুকু

Tuesday, April 9, 2019

পঁচিশে বৈশাখ

পঁচিশে বৈশাখ

দিন আসে দিন যায়
সময় বদলায় , মন বদলায় না
কিংবা বদল ঘটে মননে
স্মৃতি থাকে বেদনায় বেদনায়

চৈত্রের ঝরাপাতা উড়ে গিয়ে
নেমে আসে প্রখর তাপ
কৃষ্ণচূড়ার আগুনে রাঙা হয়
কবির জন্মমাস

হোক উদাস বাউল কিংবা রাখাল বালক
অথবা ছুটির খুশি গায়ে মাখা পড়ুয়ার দল
দলে দলে মিলন ঘটে কৃষ্ণচূড়াতলে
মহামিলনের সংগীত বাজে --- কৃষ্টি অন্তরে
আজ না থাক মেহের আলি
নাইবা বলুক কেউ --- ' সব ঝুট হ্যায় '
তবু আশার আশা তারাপদর পায়ে
মনে মনে বোষ্টমী খঞ্জনা বাজায়

তবু আমি রণে ক্লান্ত কালের যাত্রায়
সভ্যতার সংকট আরো ঘণীভূত হয়
আছড়ে মরে ক্লিষ্ট মন না পাবার বেদনায়
আবার এসো কবি , হৃদয়-বাগে
নব ফুল ফোটাই ।

পথহারা

পথহারা

পথ খুঁজে ফিরি আমি

ক্ষ্যাপার পরশপাথর খোঁজার মত

চকচকে তো অনেক কিছুই হয়
হিরে ফেলে কাঁচ তুলি যেমন
ভুল , কত ভুল দিয়ে সাজানো জীবন
শুধু কি নিকোটিনই পোড়ে
পুড়ে যায় , হারিয়ে যায় কঠিন শপথ


পথ খুঁজি আমি

আবার হারাই

দূষিত মানবতার ভিড়ে
পায়ে বাধা লোহার শিকল
আরো আঁকড়ে ধরে
পথ খুঁজি মোহাবেশে বাঁচার তাগিদে
রঙীন চশমা আছে দুচোখ জুড়ে

ভুল বুঝি , ধরব এবার নতুন পথ

সব পথ মিশে যায় শিশুর সারল্যে ।

Saturday, April 6, 2019

অনুগল্প --- মা

                             অনুগল্প --- মা  
                                       


  শর্মী আজ সাত বছরের হল । অন্যান্য বাচ্চাদের মত জন্মদিনে মায়ের হাতের পায়েস খাওয়ার সৌভাগ্য তার নেই । তার মায়ের মুখটা ছবি দেখা ছাড়া স্মৃতিতেও আসে না । কেননা জন্মের পর মাত্র কয়েকটা দিন সে তার মায়ের সান্নিধ্য পেয়েছে ।স্কুলের বন্ধুরা যখন তাদের মায়েদের কথা গল্প করে তার খুব মন খারাপ করে । তারও ইচ্ছে করে স্কুলে আসার সময় তার মা ব্যাগ গুছিয়ে , জামা পরিয়ে , চুল আঁচড়ে , চুমু খেয়ে , আদর করে দিক অন্যান্য বন্ধুদের মত । এই সময় তার খুব রাগ হয় ভগবানের ওপর । ভগবান তাকেই কেন এরকম একা করে মাকে তার কাছে ডেকে নিয়েছেন ।
            ******************************
     সকাল থেকেই খুব মন খারাপ শর্মীর । দিদা আজ কত আদর করে তাকে ঘুম থেকে তুলেছে । তার জন্য পায়েসও বানাবে বলেছে । কিন্তু মা যে মা-ই হয় । কতদিন হল বাবাও সেই যে গেছে আর আসেনি ।
     ব্রাশ হাতে নিয়েই বাগানে এসে দাঁড়ায় শর্মী । এখানে দোলনচাঁপা গাছটাতে সেবারে একটা দোলনা বেঁধে দিয়েছিল বাবা । এই জায়গাটা শর্মীর খুব প্রিয় । দিদা বলে এই দোলনচাঁপা গাছটা খুব পুরনো । তার মাও ছোটোবেলায় এই গাছটাতে দোল খেত । মায়ের খুব প্রিয় জায়গা ছিল এই গাছতলাটা । শর্মীর দুচোখ জলে ভরে এল । কেন , মা , আমি কি দুষ্টুমি করেছিলাম যে আমাকে ছেড়ে তুমি চলে গেলে ।
         হঠাৎ এক ঠান্ডা হাওয়ায় শর্মীর মনের ভেতরটা কেমন করে উঠল । খুব আপন একটা গন্ধ , যেন অনেক কালের চেনা , মাতৃগর্ভের মত একটা অনুভূতিতে ভরে গেল তার মনটা । যেন কেউ পরম মমতায় তার গায়ে মাথায় হাত বুলোচ্ছে , তাকে আদর করছে । তার মুখ দিয়ে অজান্তেই বেড়িয়ে এল --- মা !

Wednesday, April 3, 2019

অনুগল্প --- আগাছা

                         অনুগল্প --- আগাছা 
                                        

    সকাল সকাল কাজটা সারতে পেরে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে প্রতাপের । নিত্যদিনের এই অশান্তি আর ভালো লাগে না । তাই স্ত্রী রীনার জন্য এটুকু করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে । এবার আর বাড়িতে কোনো অশান্তি নেই । শুধু সে আর রীনা আর অখন্ড শান্তি । 
        বৃদ্ধাশ্রমে মাকে রেখে নির্দিষ্ট ফর্মালিটিগুলো পূরণ করতে যতটুকু সময় লাগে তাড়াতাড়ি সেরে আর মায়ের দিকে ফিরে তাকালো না প্রতাপ , পাছে মায়ের চোখের জল তাকে দুর্বল করে দেয় । তার ভবিষ্যৎ সুখ কল্পনাতেই সে সুখি ।
          
              **************************


         ওদিকে প্রতাপের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই অসীমার একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে । আজ থেকে ছাব্বিশ বছর আগে মিউনিসিপ্যালিটির ডাষ্টবিনের পাশে কতগুলি কুকুরকে একটা পুটুলি ঘিরে চীৎকার করতে দেখেছিল সে । খুব ভোরে উঠে ঠাকুরের জন্য ফুল তোলা নিত্যদিনের অভ্যাস অসীমার । সেদিন ফুল খুঁজতে এপথেই যাচ্ছিল সে । রাস্তা নির্জণ । কুকুরগুলোর আচরনে এমনকিছু ছিল যে অসীমা এড়িয়ে যেতে পারল না । কাছে যেতেই দিখতে পেল ছোট্ট একটা মুখ দুটো কচি কচি হাত । বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল তার । রাস্তায় যে এখন কেউ নেই । তিন তিনবার অন্তঃসত্বা হয়েও সন্তান কোলে নিতে পারেনি অসীমা । ডাক্তার বলেছিল কি এক কঠিন সমস্যা আছে তার । অনেকদিন ওষুধ খেতে হবে । খেয়েওছিল । কিন্তু ঈশ্বর বিরূপ । সন্তানের মা হওয়া তার আর হয়ে ওঠেনি । 
        তবে আজ ঈশ্বরের কি অভিপ্রায় । তিনি কি চান এভাবে অসীমাকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে । মনে মনে এ স্বাদের লোভ সামলাতে পারল না অসীমা । ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে কারো অনুপস্থিতিতে  ময়লা কাপড় ছাড়িয়ে তার আঁচল দিয়ে জড়িয়ে নেয় বাচ্চাটিকে । একছুটে বাড়ি এসে শিবুকে ঠেলে তুলে সমস্ত ঘটনা জানায় । তারপর সাত সকালে সেখানকার পাঠ চুকিয়ে নতুন ঠিকানায় । 
      তারপর কত উত্থানপতন শেষে নিজেরা আধপেটা খেয়েও প্রতাপকে নাড়ি ছেড়া ধনের মতই আগলে আগলে বড়ো করা । 
     আজ প্রতাপ বড়ো চাকরি করে । শিবু গত হয়েছে চার বছর হল । বিয়ে করতে না করতেই মা তার সংসারে আগাছা হয়ে উঠল । চোখের কোনটা ভিজে উঠল অসীমার । দুই হাত জোড় করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রর্থনা জানালো , ওদের ভালো রেখো ঠাকুর । মঙ্গল কোরো ।

Saturday, March 30, 2019

রঙের ভোরে

রঙের ভোরে

তোমার জন্য একমুঠো রঙ করব চুরি
পলাশ অশোক শিমূল থেকে
তোমার জন্য নীল আকাশে হাত বাড়াব
রামধনু রঙ আনব ডেকে
যেখানে যত রঙের বাহার খুঁজতে যাব
প্রজাপতির পিঠে চেপে
কৃষ্ণচূড়া খবর পাঠায় আমন্ত্রনের
চিড়ল পাতা উঠছে কেঁপে
তোমার জন্য ডাক পাঠালো
অমলতাস আর হাসনুহানা
তোমার জন্য লক্ষ ফুলের সমারোহ
নাম না জানা
তোমার জন্য বুক ভরা ঢেউ
উথাল পাথাল
তোমার জন্য গোষ্ঠে চলে
ব্রজের রাখাল
তোমার জন্য রঙ আবিরে
হোলি খেলা
তোমার জন্য সুজন কুজন
বহুজনের প্রাণের মেলা
তুমি আসো বছর পরে
একটি বারে
তোমার জন্য নতুন করে
আবার বাঁচতে ইচ্ছে করে
তোমার জন্য হাড় কাঁপানো
শীতের রাতে
অপেক্ষা করি , আসবে জানি
নব প্রভাতে
তোমার জন্য প্রকৃতিতে আজ
কত আয়োজন
বসন্ত তুমি হৃদয় জুড়ে 
তুমিই আমার হৃদয়-হরণ ।

Friday, March 29, 2019

মোবাইল প্রেম

মোবাইল প্রেম

ছেলেরা এখন খেলছে না আর
মোবাইল ফোন ধরেছে
সারাটা দিন খুটুর খুটুর
মাঠে খেলা ভুলেছে
মাঠগুলো সব ফাঁকা ফাঁকা
ঘাস গজিয়েছে ঝোপ ঝোপ
মোরের মাথায় , রকে , মাঠে
নেট ওয়ার্কে ফেলছে টোপ
কোন গেমটা কোথায় আছে
প্লে-স্টোরেতে খুঁজছে
সারাটা দিন টুং টাং বিপ
এস এম এস টোন বাজছে
পাশের বাড়ির ননীদাদা
কেমন আছো তুমি
দেখা-সাক্ষাৎ হয়না মোটেই
চলছে ফোনাফুনি
ফোনেই চলছে বিশ্বখোঁজা
গুগুল সব দিয়েছে
বইগুলো তাই অবহেলায়
টেবিলে পড়ে রয়েছে
সরস্বতীর পায়ে এখন
থাকছে না আর বই
মোবাইলগুলো এনে দেরে
ল্যাপটপটা কই
খেলা বলতে আঙুলের কাজ
স্মার্টফোনেতে টাচ
হিরে ফেলে তুলছে ভরে
পকেট ভর্তি কাঁচ
মানিকদাদার ঘরে আছে
তিন বছরের ছেলে
খাওয়া-শোয়া সব বন্ধ
ফোন হাতে না পেলে
দিদির ছেলে অভিরাজ
বয়স মোটে সাত
মোবাইলে গেম খেলাতে
পাকিয়েছে হাত
চোখের সামনে রঙীন জগৎ
বয়স তের জেনো
কথায় কথায় স্ল্যাং ঝরে তার
গুরু লঘু নেই কোনো
এই যদি হয় যুগের হাওয়া
ছেলেবুড়ো সব ---
অল্প দিনেই নুইয়ে যাবে
হারাবে শৈশব ।

Tuesday, March 26, 2019

চিতা বহ্ণিমান

চিতা বহ্ণিমান
                   নির্মাল্য দাশগুপ্ত


এই ফাগুনের পরের ফাগুনে
তোকে নিয়ে
গান গাইব উৎসবের
কথা ছিল
পরবর্তী সমস্ত ফাগুনের
দীপ্যমান শিখ
প্রজ্জ্বলিত করে দেব
আমাদের জীবন সাগরে

তাই তো স্বপ্ন নিয়ে
বসেছিলাম,
ঝরে গেলি তুই

পিশাচরা হেসে হেসে 
কান্না ছড়ায়

জেনো
মানুষের মনে আজ
চিতার আগুন

Wednesday, March 20, 2019

মুক্তির আস্বাদ

মুক্তির আস্বাদ

মনে হয় সন্ধ্যার আরক্তরাগে
সুদীর্ঘক্ষণ ধরে বয়ে চলা সময়ের পাড়ে
মহামুক্তির দেশে আজ আমার উপস্থিতি
শুভ্র বলাকার দেশ সে এক
তার মসৃণ শ্বেতপৃষ্ঠে পিছলে পড়ে
দুপুরের রোদ
সব গ্লানি ঝরে যায় --- সব গ্লানি আজ
বলাকার শুভ্র পালক
প্রাণপনে হাতে নিয়ে
ঘ্রাণ নিই আকাশে মুক্তির ।

Tuesday, March 19, 2019

দিকভ্রান্ত

দিকভ্রান্ত

কাজের ফাঁকে ফাঁকে
ব্যস্ত ঘড়ি চেতনা দিয়ে যায়
অসম্বিত আমি
হারিয়ে ফেলি সময়ের হিসাব
বেনিয়মে ভরিয়ে তুলি
গোটা প্রহর
দিনের উদ্ধত রোদে
ঘুরে বেড়াই মনের কাছে কাছে
রাতের অন্ধকার এসে
ডেকে তোলে জীর্ণ আত্মাকে
জানালা বন্ধ সব
রূদ্ধ দ্বারের কপাট
থেমে যায় এখানে বাতাসের আনাগোনা
পথ হারায় উদ্ভ্রান্ত আলোক ।

Saturday, March 16, 2019

আহা বসন্ত

আহা ! বসন্ত !

বসন্ত , আমার জয়ের মালা 
গাঁথব কি ফুলে আজ
বসন্ত , আমার হৃদয় জুড়ে
দেখি শ্মশানের সাজ
হুহু করে বেলা ধুধু মরুভূমি
শনশন বয় হাওয়া
শূণ্য এ মনে শান্তি বিরাজে
সাঙ্গ চাওয়া পাওয়া


বসন্ত , তোমার রঙের খেলা
আমার চিতার ছাই
শেষ চুম্বন এঁকে দাও শুধু
আর কোনো খেদ নাই ।

Wednesday, March 13, 2019

সংবর্ত

সংবর্ত

তুমি আমায় বলতে পারো অসামাজিক মেয়ে
বলো না হয় আচম্বিতে সৃষ্টিপথ বেয়ে
ছিটকে আসা অবাঞ্ছিত গ্রহ ।


আমি শুধু তোমার মুখে চেয়ে
জীবনপথে পুরনো সে গান গেয়ে
জীবনবিমুখ রইব দুর্বিষহ ।


তোমার চোখে দেখেছিলাম হাজার ধ্রুবতারা
সৃষ্টিপথে লক্ষ্য ছিল , অসীম বাঁধনহারা
আবেগ যেন মহাসাগরের ঢেউ ।


আজকে কেন প্রাসাদ শিখর মনে হচ্ছে কারা
এতোদিনের সু-অভ্যাসে সামিল ছিলো যারা
ফিরবে না আর হাজার ডাকলেও ।

Wednesday, February 27, 2019

প্রতিশোধ

প্রতিশোধ

শেষরাতে হানা দেয় বোমারু বিমান
প্রতিশোধস্পৃহা আছে মনে
ভাইয়ের রক্ত সফল করতেই হবে
প্রতিশোধের আগুনে


মায়ের কান্না বা প্রিয়ার যন্ত্রনা
অবুঝ শিশুকেও বোঝানো যায়না
কেন তার আপনার জন
আর কখনোই ফিরে আসবেনা


ক্রোধের আগুন শুধু ধিকধিক জ্বলে
একসাথে চৌদ্দটি সাঁঝবাতির আগুন
নিমেষে ধ্বংস করে গুপ্ত ঘাটি
চূড়ান্ত সফল হয় গুপ্ত অভিযান


দেশ হাসে দশ হাসে উপযুক্ত জবাব
বীর সেনাদের নির্ভীক দক্ষতা
দেশজুড়ে চলেছিল দিওয়ালি উৎসব
পেয়েছে অবশেষে প্রতিশোধের বার্তা ।

Monday, February 25, 2019

শুধু তুমি

শুধু তুমি

নিষ্পাপ শিশুর মুখে
যখন চেয়ে দেখি ,
কোন এক পবিত্রতা
আমায় আকুল করে ।

তোমার মুখের দিকে 
যখন চেয়ে দেখি ,
শরতের আকাশের কথা 
মনে পড়ে ।

শরতের শিশিরভেজা ঘাসে
পা ডুবিয়ে যখন
দূরের ঐ নদীটার দিকে তাকাই ,
কোন এক দূরদেশের স্মৃতি
মনে ব্যথা জাগায় ।

কলকল ছলছল টলমল জল
আকাশের রঙ চুরি করে
হাসছে খলখল ,
খুব ইচ্ছে করে ---

একবার স্পর্শ করি তোমায় ।
সদ্য ফোটা গোলাপ কুঁড়ির
মিষ্টি আঘ্রাণে
তোমার গায়ের গন্ধ
বয়ে আনে শান্তির নিঃস্তব্ধতা ।

Sunday, February 24, 2019

সংশয়

সংশয়

ছুটে বেড়াচ্ছি নাতো
কোনো মরীচিকার পিছনে
আকন্ঠ মরুতৃষ্ণা বুকে নিয়ে
তৃষ্ণার্ত প্রাণ আমার---
ভালবাসার বৃষ্টি চাই
একটুকু ছায়া
একটু সস্নেহ স্পর্শ
মরুদ্যান হবে কি আমার জীবনে
না কি -----
মরীচিকার পিছনে ছুটে বেড়াব
আজন্মকাল ধরে
তৃষ্ণার্ত পথিক আমি ...

Friday, February 22, 2019

এ কেমন বসন্ত

বসন্ত নাকি এসে গেছে কচি পাতায় ফুলে !
চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে রূপসাগরের কূলে !
মউল ফুলের নেশায় মেতেছে ভ্রমর-ভ্রমরী !
বাতাসে নাকি বইছে প্রেম মানবরূপ ধরে !

আমার বসন্তে আসে না এসব কুঞ্জফুলের শোভা
আমার বসন্তে অরূপরতন পায়না মনোলোভা
আমার বসন্ত গুমরে কাঁদে বরফ- কঠিন রাত
আমার বসন্ত পায়না কোথাও প্রেম জাগানিয়া রাত
আমার বসন্তে পলাশ ফোটেনা , ফোটেনা অশোক-শিমূল
আমার বসন্তে শুধুই বসন্ত গুটি বাঁধে শতমূল
আমার বসন্তে বাতাস রুক্ষ , আকাশে দাবদাহ
আমার বসন্তে সংসার নয় শান্তিসুখের গৃহ
আমার বসন্তে কোকিল ডাকেনা , কোথায় পালিয়ে যায়
আমার বসন্ত পথশিশুদের ক্ষুধার্ত কান্নায়
আমার বসন্ত অনাহারে আর নীরব অসহায়তায়
আমার বসন্ত ক্যাম্পে ক্যাম্পে গোলাগুলিতে কেটে যায়
আমার বসন্ত একমুঠো চালে , একটা পোড়া রুটি
পেটের আগুন লাফিয়ে চলে , বর্ষা গুটি গুটি
আমার বসন্তে রাত পেড়োলেই একরাশ চিন্তা
আমার বসন্তে নুন আনতে ফুরোয় যে পান্তা

আমার বসন্ত টাট্টু হোকনা , হোক দুর্বার গতি
আমিও হব বড়ো বাড়িটার রঙীন প্রজাপতি ।

Monday, February 18, 2019

বসন্তে তাজমহল

জানালায় হেলানো মাথা
শুনছি কোকিলের ব্যাকুল স্বর
রসের উৎস্রোতে আকাঙ্ক্ষার তীব্র ফোটাটি
কখন গড়িয়ে পড়ে , কাঁদে মন
শুষ্কতার উচাটনে রুক্ষতর হৃদয়
নবপল্লব উন্মুখ , দৃঢ় প্রত্যয়
কূজনে শুনছি বসে কবেকার ডাক
বেদনার ইতিবৃত্তে তাজ চিরন্তন

Thursday, February 14, 2019

এখানে এখন

এখানে বৃষ্টি পড়ে সকাল থেকে ভোর
এখানে চোখের কোনেও জল চিকচিক করে
এখানে বাতাস তবু স্তব্ধ হয়ে রয়
অজানা সেই শ্রাবণ গগন ঘিরে ।

এখানে শূণ্য হাতে পড়ে থাকে বেলা
সবুজ ঘাস মুহূর্তে বিবর্ণ হয়
এখানে বৃষ্টি পড়ে তবু শ্রাবণ মাস
জলের ধারায় অ্যাসিড ছড়িয়ে যায় ।

এখানে শরীরগুলি শুধুই ছোপময়
সরু সরু লিকলিকে হাত পা
এখানে ক্লান্ত পায়ে সূর্য নামে পাটে
শুষ্ক কঠিন জীর্ণ আদুল গা ।

এখানে একমুঠো ভাত একটু রুটি
স্বপ্ন অনেক টাকা
এখানে কাপড় কোথায় পাবে
লজ্জাটুকু কোনোরকমে ঢাকা ।

Tuesday, February 12, 2019

মিথ্যে ভূতের কারসাজি

মিথ্যে ভূতের কারসাজি

সেদিন ছিল আমার ঠাকুরমার আদ্যশ্রাদ্ধ । দু'দিন ধরেই অনবরত বৃষ্টি হয়ে চলেছে ।

সেদিনটা রোদ না উঠলেও আকাশ মেঘলা করে ছিল ।আদ্যশ্রাদ্ধ সমাপন শেষে বাবা পুকুরপারের নিয়মকানুন শেষ করে স্নান সেরে যেইমাত্র ঘরে ঢুকেছেন , অমনি শুরু হল আকাশ ভেঙে বৃষ্টি । তার সাথে ঝোড়ো হাওয়া । একে এই প্রাকৃতিক পরিবেশ , তার ওপর বাড়িতে সদ্য একটা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে । স্বভাবতই পরিবেশটা একটু ছমছমে হয়ে আছে । আত্মীয়-স্বজন যারা এসেছিল , তাদের মধ্যে দু'চারজন থেকে বাকি সকলেই বাড়ি ফিরে গেছেন । তাই বাড়িটাও মোটামুটি ফাঁকা । কয়েকদিনের ধকলে বাবা-মায়ের শরীরটা এমনিতেই অবসন্ন । আর আজ আমরাও ক্লান্ত । @ তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে সবাই শুয়ে পড়তে চাইল । আমার এক পিসি ছিল অন্তঃসত্বা । তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ কাছকাছি হওয়ায় সবাই একটু চিন্তিতও ছিল । সেরাতে পিসিকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে আমরা মামাতো-পিসতুতো ভাইবোনেরা শুয়েছিলাম একটাই ঘরে । সত্যি কথা বলতে কি এই পরিবেশে একা ঘরে থাকার সাহস কারো ছিল না ।


আলো নিভানের পর কিছুক্ষণ আমরা টুকটাক গল্পগাছা করে যে যার মত শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম । ঘুম ভাঙল আমার হাতের কব্জিতে প্রচন্ড চাপ অনুভব করে । আমার পিসতুতো দিদি খুব জোরে আমার হাতটা চেপে ধরে আছে । আমি ওর দিকে তাকালাম । দেখি ও চোখগুলোও চেপে বন্ধ করে আছে । দিদিকে ঠেলা দিতেই সে সভয়ে ' রাম রাম ' জপতে শুরু করেছে । @ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।উঠে লাইট জ্বালালাম । দিদি তাকিয়ে একবার চারদিক দেখল । বিশেষ করে জানালার দিকটা । দেখলাম জানালা বন্ধ আছে । ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল , ' কিসের যেন শব্দ হচ্ছিল । ' ' কই আমি তো কিছু শুনিনি । তুই ভুল শুনেছিস । ' বলে ওকে সান্ত্বনা দিয়ে লাইট অফ করে আমি শুয়ে পড়লাম ।

ঘন্টাখানেক বোধহয় হয়নি আবার ঘুমটা ভেঙে গেল । বাবার গলার স্বর শুনতে পেলাম । সঙ্গে মায়েরও । তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলাম । পিসির প্রসববেদনা উঠেছে । @ এত রাতে । ভাগ্যিস হাসপাতালটা কাছেই আছে । বাবা আমাদের বাড়িতে থাকা দু'জন কর্মচারিকে ডেকে পিসি আর মাকে নিয়ে গেল হাসপাতালে । কখন ফিরবে ঠিক নেই । তাই আমি দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম । ঘড়িতে তখন 2-30 ।

বিছানায় শুয়ে ঘুম আর আসেনা । একে পিসির জন্য চিন্তা হচ্ছে , তার ওপর বাড়িতে বড়ো মানুষ বলতে আমার পিসতুতো দিদি , যে কিনা কিছুক্ষণ আগে রামনাম জপতে শুরু করেছিল । এপাশ - ওপাশ করছি । ঘুম আসছে না । দিদিরও দেখি একই অবস্থা । হঠাৎ জানালার দিক থেকে খুট করে একটা শব্দ হল । কিছু বুঝতে পারলাম না । দিদির দিকে তাকালাম । দিদিও দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । কিছু বোঝার আগেই শব্দটা বাড়তে লাগল । মনে হল কেউ জানালার ওপাশ থেকে কিছু দিয়ে জানালাটা খোলার চেষ্টা করছে । শব্দটা ক্রমে বেড়ে চলেছে । @ উঠে যে লাইটটা জ্বালাব সে সাহস হচ্ছে না । দুই বোনে দুজন দুজনকে জাপটে ধরে যেন সাহস সঞ্চয় করছি । বারবার মনে হচ্ছে মৃত ঠাকুমার কথা । দিদির মত আমিও ' রাম রাম ' করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি ।

ঘুম ভাঙল প্রবল ধাক্কায় । তাকিয়ে দেখি দিদি হাসি হাসি মুখ করে হাতদুটো পিছনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । জিজ্ঞাসা করলাম , ' কি হয়েছে ' । হাসতে হাসতে বলল , ' পিসির ছেলে হয়েছে । ' তারপর মিটিমিটি হেসে বলল , ' আরো একটা খবর আছে । ' আমি জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই পিছনের হাতদুটো সামনে এনে বলল , ' এই যে নারকেল । ' অবাক হয়ে দেখলাম নাড়কেলের মালাগুলো । কেউ এমনভাবে এগুলো খেয়েছে যে সেগুলো আর আমাদের খাবার পরিস্থিতি নেই । মনে পড়ল গতকাল রাতের কথা । দিদি বলল , ' মামী কাল রাতে জানালার কাছে আধঢাকা করে এগুলো রেখেছিল । আর রাতভোর ইঁদুরবাবাজি দলবেঁধে মোচ্ছব করেছে । আর আমরা সারারাত রামনাম জপ করেছি । ' @  

কিছুটা ওর বলার ধরনে আর কিছুটা আমাদের নির্বুদ্ধিতায় দুজনেই হেসে ফেললাম ।

Friday, February 8, 2019

সায়াহ্নে

সায়াহ্নে

মুঠো মুঠো ধান ছড়িয়ে দু'হাতে
এখন , সন্ধ্যাকালে
বসে ভাবি ----
জীবনের শেষ সম্বল
দিয়েছি বিলিয়ে , এখন
আমি কি নিয়ে থাকি ।

যা দিয়েছি তা
ফেরৎ না পাই
এখন , অকাল বসন্ত সময়
প্রতিদান কিছু চাইনি যে তাই
কাটে না অবসর ।

শুধু যা দিয়েছি
আছে জানি জমে
কোথাও , কোনো রত্নভান্ডারে ---
সুদাসলে একদিন
পাবই ফেরৎ
এই আশা থাক মনে ।

Wednesday, February 6, 2019

উদ্বোধন

উদ্বোধন

বৃষ্টির প্রথম ফোটা

যেদিন প্রথম পড়েছিল কপালে আমার
ভেবেছিলাম জন্মান্তর হল ---


নবজন্ম লাভ !

এ কেমন জন্ম যদি মরণই প্রিয়

গোলাপের কাঁটায় বেঁধা শালিকের প্রাণ
নেই চেঁচামেচি হাকডাক , শান্ত নির্জন



অখন্ড শান্তি আমার হৃদয় খুঁড়ে খায়


এ বেদনা তারাখসার ম্লান আলোয়
সেই বোঝে , যাকে মূল ছিঁড়তে হয়


চশমার নীচে দুটো বাষ্পময় চোখ

শ্বাসরূদ্ধ হয়ে আসে নিকোটিনের ধোয়ায়
আরো পোড়ে ক্ষয় হয় খাঁচার ফুসফুস
তবু সচল অনর্গল সংবহন হয় ।

Sunday, February 3, 2019

নীলিমা

নীলিমা

মনে পড়ে ম্লান মুখ তার
দু'চোখে বৃষ্টি অঝোর ধারায়
কান পেতে শুনি তার ভাষা
বুক নিঙারিয়া সুর

অজানা ভয়ে গুমরে ওঠে মন
কোন দেশে আছে প্রিয়জন
মনচোরা সেই অপার রহস্য ঘিরে

আবার জেগে উঠি সৃষ্টির কিনারায়
সুর হাসে , সুর ভাসে , সুর কেঁদে যায়

আকাশের নীল এসে কখন
মিশে যায় আমার কবিতায় ।

Saturday, February 2, 2019

দিশাহারা

দিশাহারা

দূরে বহুদূরে ---
ধোঁয়াশায় মিশে আছে
একফালি আকাশ
আমার মনের মতো


সৃষ্টির প্রয়াস
ঝাপসা আজ


টুকরো টুকরো মেঘ
উড়ে চলে নিরুদ্দেশে

অজানা পথ

খরনদী ভেসে যায়
সময় অকুলান


আমার আকাশজুড়ে
সৃষ্টির হাহাকার শোনা যায় ।

Sunday, January 27, 2019

মুখোশ মানুষ

মুখোশ মানুষ

তোমাকে চিনেছি , বন্ধু ---
মুখোশে মুখোশ - মানুষ
হাড়-মজ্জায় রয়েছ যদিও
রক্তে কনিকা-বিষ
চোরাস্রোত বয়ে যায়
কানায় কানায়
কুশাগ্র শরীরে বিঁধে
যেন তোমার তীক্ষ্ম দংশণ
অথচ কতনা স্থবির
পরিপার্শ্ব ---
অহেতুক আশা---
কুয়াশায় মোড়া
জীর্ণ চারধার


আমারও তো বয়স হল
আর কেন ভড়ংতোমার ?

Wednesday, January 23, 2019

মোহ

মোহ

কালের পথে যতবার
ধরতে চাই খড়কুটো
ভেসে যায় , শুধু ভেসে যায়
পলকা সব ---
অর্জুনের লক্ষ্যভেদ আমার হৃদয়
শুধু খেলা , শুধু ছলনা
বসে আছি সানুদেশে , বিশাল পর্বত
আরোহন অসম্ভব , কুয়াশা মোহময়
ব্যস্ততার রুক্ষতাপ অন্তর জুড়ে
তবু আশা , ভালোবাসা
কাছে যেতে হয়