Tuesday, February 12, 2019

মিথ্যে ভূতের কারসাজি

মিথ্যে ভূতের কারসাজি

সেদিন ছিল আমার ঠাকুরমার আদ্যশ্রাদ্ধ । দু'দিন ধরেই অনবরত বৃষ্টি হয়ে চলেছে ।

সেদিনটা রোদ না উঠলেও আকাশ মেঘলা করে ছিল ।আদ্যশ্রাদ্ধ সমাপন শেষে বাবা পুকুরপারের নিয়মকানুন শেষ করে স্নান সেরে যেইমাত্র ঘরে ঢুকেছেন , অমনি শুরু হল আকাশ ভেঙে বৃষ্টি । তার সাথে ঝোড়ো হাওয়া । একে এই প্রাকৃতিক পরিবেশ , তার ওপর বাড়িতে সদ্য একটা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে । স্বভাবতই পরিবেশটা একটু ছমছমে হয়ে আছে । আত্মীয়-স্বজন যারা এসেছিল , তাদের মধ্যে দু'চারজন থেকে বাকি সকলেই বাড়ি ফিরে গেছেন । তাই বাড়িটাও মোটামুটি ফাঁকা । কয়েকদিনের ধকলে বাবা-মায়ের শরীরটা এমনিতেই অবসন্ন । আর আজ আমরাও ক্লান্ত । @ তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে সবাই শুয়ে পড়তে চাইল । আমার এক পিসি ছিল অন্তঃসত্বা । তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ কাছকাছি হওয়ায় সবাই একটু চিন্তিতও ছিল । সেরাতে পিসিকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে আমরা মামাতো-পিসতুতো ভাইবোনেরা শুয়েছিলাম একটাই ঘরে । সত্যি কথা বলতে কি এই পরিবেশে একা ঘরে থাকার সাহস কারো ছিল না ।


আলো নিভানের পর কিছুক্ষণ আমরা টুকটাক গল্পগাছা করে যে যার মত শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম । ঘুম ভাঙল আমার হাতের কব্জিতে প্রচন্ড চাপ অনুভব করে । আমার পিসতুতো দিদি খুব জোরে আমার হাতটা চেপে ধরে আছে । আমি ওর দিকে তাকালাম । দেখি ও চোখগুলোও চেপে বন্ধ করে আছে । দিদিকে ঠেলা দিতেই সে সভয়ে ' রাম রাম ' জপতে শুরু করেছে । @ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।উঠে লাইট জ্বালালাম । দিদি তাকিয়ে একবার চারদিক দেখল । বিশেষ করে জানালার দিকটা । দেখলাম জানালা বন্ধ আছে । ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল , ' কিসের যেন শব্দ হচ্ছিল । ' ' কই আমি তো কিছু শুনিনি । তুই ভুল শুনেছিস । ' বলে ওকে সান্ত্বনা দিয়ে লাইট অফ করে আমি শুয়ে পড়লাম ।

ঘন্টাখানেক বোধহয় হয়নি আবার ঘুমটা ভেঙে গেল । বাবার গলার স্বর শুনতে পেলাম । সঙ্গে মায়েরও । তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলাম । পিসির প্রসববেদনা উঠেছে । @ এত রাতে । ভাগ্যিস হাসপাতালটা কাছেই আছে । বাবা আমাদের বাড়িতে থাকা দু'জন কর্মচারিকে ডেকে পিসি আর মাকে নিয়ে গেল হাসপাতালে । কখন ফিরবে ঠিক নেই । তাই আমি দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম । ঘড়িতে তখন 2-30 ।

বিছানায় শুয়ে ঘুম আর আসেনা । একে পিসির জন্য চিন্তা হচ্ছে , তার ওপর বাড়িতে বড়ো মানুষ বলতে আমার পিসতুতো দিদি , যে কিনা কিছুক্ষণ আগে রামনাম জপতে শুরু করেছিল । এপাশ - ওপাশ করছি । ঘুম আসছে না । দিদিরও দেখি একই অবস্থা । হঠাৎ জানালার দিক থেকে খুট করে একটা শব্দ হল । কিছু বুঝতে পারলাম না । দিদির দিকে তাকালাম । দিদিও দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । কিছু বোঝার আগেই শব্দটা বাড়তে লাগল । মনে হল কেউ জানালার ওপাশ থেকে কিছু দিয়ে জানালাটা খোলার চেষ্টা করছে । শব্দটা ক্রমে বেড়ে চলেছে । @ উঠে যে লাইটটা জ্বালাব সে সাহস হচ্ছে না । দুই বোনে দুজন দুজনকে জাপটে ধরে যেন সাহস সঞ্চয় করছি । বারবার মনে হচ্ছে মৃত ঠাকুমার কথা । দিদির মত আমিও ' রাম রাম ' করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি ।

ঘুম ভাঙল প্রবল ধাক্কায় । তাকিয়ে দেখি দিদি হাসি হাসি মুখ করে হাতদুটো পিছনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । জিজ্ঞাসা করলাম , ' কি হয়েছে ' । হাসতে হাসতে বলল , ' পিসির ছেলে হয়েছে । ' তারপর মিটিমিটি হেসে বলল , ' আরো একটা খবর আছে । ' আমি জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই পিছনের হাতদুটো সামনে এনে বলল , ' এই যে নারকেল । ' অবাক হয়ে দেখলাম নাড়কেলের মালাগুলো । কেউ এমনভাবে এগুলো খেয়েছে যে সেগুলো আর আমাদের খাবার পরিস্থিতি নেই । মনে পড়ল গতকাল রাতের কথা । দিদি বলল , ' মামী কাল রাতে জানালার কাছে আধঢাকা করে এগুলো রেখেছিল । আর রাতভোর ইঁদুরবাবাজি দলবেঁধে মোচ্ছব করেছে । আর আমরা সারারাত রামনাম জপ করেছি । ' @  

কিছুটা ওর বলার ধরনে আর কিছুটা আমাদের নির্বুদ্ধিতায় দুজনেই হেসে ফেললাম ।

No comments: