Wednesday, December 26, 2018
Tuesday, December 25, 2018
Akal boishakhi
অকাল বৈশাখী
তোমার বিশীর্ণ চোখদুটোতে
দেখেছিলাম
কি অপরিমেয় ক্ষুধা
চোয়ালের কাঠিন্য ভেঙে
উঠে আসছিল কী একটা কথা
ঠিক তখনি ----
একঝাঁক সাদা বক
কালোমেঘের বুক চিরে
ঠিক মাথার ওপর দিয়ে
কি কথা বলতে বলতে
উড়ে চলে গেল
মুহূর্তে ----
চকচকে হয়ে উঠল তোমার চোখ
রূদ্ধ আবেগে গলা ফাটিয়ে
চিৎকার করে উঠলে তুমি
তোমাকে বেষ্টন করে আছে
এক দল মানুষ
নিমেষে ----
হারিয়ে গেল তোমার আশা
ছিন্ন হল মুকুল
হল অকাল বৈশাখীর অবসান
Monday, December 24, 2018
Avipsa
অভীপ্সা
ভেবেছিলাম ----
উত্তরণ খুব একটা কঠিন হবেনা ।
রোগের কারন জেনে গেলে
আর তো রোগমুক্তির ভয় থাকেনা
চিকিৎসা শুরু করেছিলাম
যথানিয়মেই
তবু ----
কোনো কোনো রোগ তো থাকেই
যার চিকিৎসা নেই । ধীরে ধীরে
ক্ষয় হয় জীবন -- মন -- এই রোগে
হাহাকার করে ওঠে মন
ফিরে পেতে চায় একবার সে জীবন
যে জীবন শুধু ফরিঙের , প্রজাপতির
পাতলা ডানায় ভর করে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো --- ঊষা আর গোধুলীর
রক্তিম আবেশ মাখানো গায়ে ।
কৃষ্ণচূড়ার ফুলে ভরা সর্ব্বোচ্চ ডালটাতে বসে
হাওয়ার তালে তালে নেচে নেচে বেড়ানো
কি উন্মাদ সে জীবন --- চোখে
কত স্বপ্ন ।
Sunday, December 23, 2018
Saturday, December 22, 2018
প্রকৃতির পরিহাস
প্রকৃতির পরিহাস
বেআব্রু রাত্রির নগ্নতা
একি সৌন্দর্য না বিভীষিকা
তবে --
নগ্ন আকাশে দীপ্যমান নক্ষত্রপুঞ্জকে
শ্মশানের জ্বলন্ত চিতা বলে মনে হয় কেন ?
এও কি প্রকৃতির পরিহাস !
পৃথিবীর প্রান্ত থেকে
কোনো এক বুড়ো প্যাঁচার উল্লসিত চীৎকারে
তারই কি প্রতিধ্বনি শোনা যায় ?
নদীর ঐ খিলখিল হাসি
এও কি --
শিশুকন্ঠের কাকলি , নাকি
বৃদ্ধা ধরনীর প্রতি নির্মম উপহাস ?
স্তম্ভিত পৃথিবী !
Friday, December 21, 2018
নির্বাক
নির্বাক
কুয়াশার চাদর গায়ে
ঐ যে আকাশ
একদিন
জুজু হয়ে বসে থাকা
বোবা কালা মানুষটাকে
কি কথা শুনিয়েছিল
নির্বাক নিঃস্পন্দ চিত্তে
বুড়ো চাঁদটার দিকে তাকিয়ে
আর এক বুড়ো মানুষ
মনে মনে চলেছিল
সংযোগ বোধহয়
তাই
হীমশীতল রাতে
নিবিড় কুয়াশায়
চাঁদের মত
নির্বাক হয়ে
কেটে গেল রাতের পর রাত
প্রহরের পর প্রহর ....
তবু
বোবা মুখে
ফোটেনা ভাষা
মেরুদন্ডে
জাগেনা বিদ্রোহের জোয়ার
ভাটার বালিতে শুয়ে শুয়ে
রাতের তারা গোনা
আর
কালকের প্রতীক্ষা
এক তপ্ত , উজ্জ্বল দিনের প্রতীক্ষা ।
Thursday, December 20, 2018
Wednesday, December 19, 2018
Tuesday, December 18, 2018
গোপন ব্যর্থতা
গোপন ব্যর্থতা
মেঘের আঁধার কেটে
বেড়িয়ে আসা একটুকরো চাঁদ
নক্ষত্রের নিবিড় সান্নিধ্যে থাকা সত্বেও
যেন ক্রোশ খানেক দূরত্ব
সবুজ নরম ঘাসে
প্রথম শিশির বিন্দুর
ব্যর্থ প্রনয়
রাতের তারার নিঃসঙ্গ অবকাশ যাপন
অভিমানে আহত
ভোরের শিউলির অবাধ পতন
পূর্বদিকে উদিত সূর্যের
ওকি লজ্জারাঙা মুখ ?
তেজ-বীর্য আহত কি ব্যর্থ দর্শনে ?
Monday, December 17, 2018
Sunday, December 16, 2018
মৃত্যু
মৃত্যু
নিষ্ঠুর মৃত্যুর নির্মমতায়
কেঁপে কেঁপে ওঠে অঘ্রাণের রাত
রাতচরা পাখিগুলি সভয়ে
গাছের কোটরে আশ্রয় নেয়
জ্যোৎস্নামাখা দিঘীর জল
অস্বাভাবিকভাবে স্থির
কোন সুদূর থেকে
কুকুরের একটানা কান্না ভেসে আসে
বুকের ভেতরে একমণ ওজনের পাথরটা
আরো চেপে বসে
শিরায় শিরায় প্রবাহ স্তব্ধ হয়ে যায়
দোহাই তোমার , একফোটা অশ্রু দাও
পাথরটা একটু ক্ষয় হোক ।
Wednesday, December 12, 2018
বৈপরীত্য
বৈপরীত্য
তোমার বাড়ির সানাইয়ের সুর
আনন্দে নেচে নেচে ওঠে বেহাগে
সুখের সন্ধ্যাতারা উজ্জ্বল হয় ক্রমে
আকাশে গোল থালার মত চাঁদটা বুঝি
চাঁদ নয় --- সৌভাগ্য সূর্য
ফাগুনবেলার ফিসফিস শব্দে
সৃষ্টির সুর শোনা যায় ।
আমাকে ঘিরে আছে নিশ্ছিদ্র অমাবস্যা
এর নিপুন স্তর ভেদ করে প্রবেশের
ছাড়পত্র পায়না সানাইয়ের সুর
চাঁদটাও ফ্যাকাশে মনে হয়
উদিত সূর্যও আতঙ্কিত করে হৃদয়
তুষার-ঝড় বইতে থাকে মনে
চারিদিকে শুধু একটানা ক্রন্দন শোনা যায় ।
একাকীত্ব ভুলতে গিয়ে
একাকীত্ব ভুলতে গিয়ে
কখনো কি পার অস্বীকার করতে
ঠোঁটের কোনে ঐ যে আবেশটুকু
তা আমার দেওয়া নয়.......
সঙ্গী খুঁজেছিলাম আমি
একটা সঙ্গীর জন্য
বুকের মধ্যে সমস্ত রক্ত জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল
উষ্ণতা চেয়েছিলাম তার কাছে
তার বুকের ওমে তপ্ত হয়েছিল পৃথিবী
তাই বুঝি
নিঃশেষে পুড়ে গেল সে
আজ বুঝি আবার বলব --
' সঙ্গী চাই , একটা সঙ্গী চাই '
হয়ত রাস্তায় রাস্তায় চীৎকার করে বলব --
' একজন কেউ এসো আমার সঙ্গী হতে ,
এই নিঃসঙ্গ জীবন আর বইতে পারি না .....'
প্রতিধ্বনি ফিরে আসে কানে --
' সঙ্গী চাই , সঙ্গী চাই '
ঐ আকাশটাও বুঝি তবে একলা
ঐ যে নদী --
যার কালো জলে
দিনের ছায়া নিয়ে আসে রাত্রীর অন্ধকার
তার গভীরেও কত নিঃসঙ্গতা
আকাশের ঐ চিলটা বুঝি
নিঃসঙ্গতা ভোলার জন্যই উড়ে বেড়াচ্ছে
পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে
তবে এত বড় পৃথিবীটাতে কি
সবাই নিজের মত একা ?
পরিত্যক্ত প্রতিশ্রুতি
পরিত্যক্ত প্রতিশ্রুতি
হেমন্তের ঝরা পাতার মত
প্রতিশ্রুতিও একদিন হয়ত
উড়ে যাবে কোনো দেশে
সেখানে --
ভালোবাসার শিথিল বন্ধন
আর আপন করে কাছে টানবে না কাউকে
অশ্রুসিন্ধুও শুকিয়ে গিয়ে
খাঁখাঁ করবে চারিদিক
শুকনো মরুবালি
দু-একটা কাঁটার খোঁচায়
একটু-আধটু রক্তের ফোঁটা
তপ্ত বালির বুকে
নিজের নাম লিখে রেখে
ভালোবাসার শহীদ মিনার
ঘোষনা করবে হয়ত
সেদিন --
দু-একটা গোলাপের কুঁড়ি অন্তত
ছ
ড়িয়ে রেখো
বুকের ওপর
হোক না শুকনো , গন্ধহীন
তবুও তো
একদিন ওতে প্রাণ ছিল
ভালোবাসা ছিল
আজ শুধু পরিত্যক্ত
পরিত্যক্ত প্রতিশ্রুতির মত ।
Monday, December 10, 2018
প্রত্যয়
প্রত্যয়
রাত্রি গভীর যখন
এক করুন ক্রন্দন
সহসা জাগিয়ে দিল এক ঝটকায় ,
মনের গোপন তলে
নিয়ত যে দীপ জ্বলে
হঠাৎ বাতাসে তার প্রাণ কেঁপে যায় ।
কোথায় কতদূরে
কোন সে অচীনপুরে
জীবনের প্রথম প্রভাত ডাকে ইশারায়
নীরব অভিমান
ব্যথার ঐকতান
নিথর রাত্রির বুকে দাগ কেটে যায় ।
অস্ফুট অনুরাগ
হয়েছে হতবাক
প্রকাশ হল না আজো , হায় !
প্রেমের অভিসার
বৃথাই জন্ম তার
দুটি প্রাণের মিলন স্তব্ধ হয়ে রয় ।
Wednesday, December 5, 2018
ভুলে যাবে নাতো
ভুলে যাবে নাতো
পড়ন্ত বিকেলে একদিন
গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে
শুনতে পেলাম অনুরনন --
"আমায় ভুলে যাবে নাতো "...
আকাশের দিকে তাকালাম
পান্ডুর চোখদুটো পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে
গঙ্গার প্রসস্ত বুকে
একখানি শুশুক
একবার করে মাথা তুলে বলছে --
" কথা দাও , ভুলবে না "
ঘাটের পাথরগুলিতে ধাক্কা খেয়ে
ফিরে যাচ্ছে কথা
" ভুলবে না -- ভুলবে না -- "
দূরে পশ্চিমে
রক্তলাল জলের মাঝখান থেকে
বুক চিরে উঠে আসছে
একটি মুখ
দু-চোখে উদ্বেগ
" আমায় ভুলে যাবে না তো -- " ।
Tuesday, December 4, 2018
সাধ
সাধ
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে
শিউলির সুগন্ধী হয়ে
ছড়িয়ে যাই ভুবনে
প্রশান্ত স্নিগ্ধতাটুকু
দিয়ে যাই
সবার মনে মনে
পরক্ষণে --
ভাবি মনে
শিউলির গন্ধ
সে যে সাময়িক
সূর্যোদয়ের তেজোপ্রভায়
মুছে যায় তার আবেশ
আবার সন্ধিক্ষণে
ঝরে যায় মাটিতে
ঘটে জীবনাবসান ।
কখনো আবার ইচ্ছে হয় মনে
চাঁদ - সূর্যের মিলিত আকর্ষণে
জোয়ারের মত
ফুলে ফেঁপে উঠে
প্লাবিত করে যাই বিশ্ব
ম্লান করে দিই
পৃথিবীর ঘরে ঘরে
শোক তাপ যন্ত্রনার বেদনা
উপহাস করে ঐ বুড়ো সূর্যটা ।
Sunday, December 2, 2018
কল্প
কল্প
বনের ঐ গাছের মাথায়
কত যে রঙের খেলা
কখনো লাল বজরার
দিগন্ত জুড়ে চলা
কখনো সাদা পানসি
কেটে চলে মেঘের স্রোত
কখনো আকাশ জুড়ে
গড়িয়ে চলে স্বর্গরথ
বনের ঐ গাছের পাতায়
কত যে সুরের দোল
কখনো বাজায় বাঁশি
কখনো বাজে মাদল
কখনো সেতার বাজে
বনের ঐ প্রান্তরে
কত না সুরের খেলা
পাতার ঐ মর্মরে ।
Thursday, November 29, 2018
গল্প - অপরাধ
অপরাধ
খবরটা ছড়িয়ে যেতে বেশি সময় লাগেনি যতটা সময় লেগেছিল ঘটনাটা ঘটতে ।
বোনের ডাকে ধরফর করে উঠে বসে স্বপন । দুপুরের ভাতঘুমে স্বপ্নের আলপনাটুকু তখনও রঙ ছড়িয়ে যাচ্ছে । প্রথমটা বুঝে উঠতে না পারলেও দুর্ঘটনার বিদ্যুৎপ্রবাহ মুহুর্তে তাকে সচকিত করে তোলে । ঘুমভাঙা চোখ রগরাতে রগরাতে সে বাইরে এসে দাঁড়ায় । ইতিমধ্যেই বিশাল জনতার ছোট্ট ছোট্ট জটলা এখানে - সেখানে ।
- বয়সমাত্র চৈদ্দ - পনের । ক্লাশ নাইন । এখনি কি এমন ঘটল যে এমন কাজ করল ।
- বেশ শান্ত শিষ্টই তো । কখনো আজেবাজে ছেলেদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতেও দেখিনি ।
- পড়া পারেনি স্যারের কাছে । বাবার ভয়ে এমন কাজ করেছে ।
- আরে রাখো । ওপরে ওপরে ভদ্র । ভেতরে ভেতরে কি ছিল তা কে জানে ।
স্বপন কিছুই জানে না । শুধু জানে মানুষের মন বোঝা বড় দায় । কে যে কখন কোন কথায় আঘাত পেয়ে যায় বলা মুস্কিল । পাকা বয়সের দুর্দান্ত ছেলে হলে তবু কথা ছিল । কিন্তু এমন ভদ্র ছেলেটি ! কৌশিকের মায়ের কথা ভেবে স্বপনের বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে । দীর্ঘদিনের পরিচিত সে ওদের বাড়ির সঙ্গে । ওদের দুটি ভাইকেই ও খুব ভালোবাসে । এখনও যেন ঘটনাটা বিশ্বাস করতে পারছেনা স্বপন ।
# # #
সকাল থেকেই মনের মধ্যে একটা চাপ অনুভব করছে কৌশিক । আর বেশিদিন মনের মধ্যে চেপে রাখতে পারছেনা ও । আলেয়ার গানের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করতে গিয়ে বুকের মধ্যে যে ধুকপুকুনি শুরু হয় .....। আলেয়াকে বলা প্রয়োজন । কিন্তু কিভাবে বলবে সে । আলেয়া ক্লাশ ইলেভেন । সে ক্লাশ নাইন । জীবনের প্রথম প্রেম যে এমন অদ্ভুতভাবে আসবে তা কি সে জানত । কৌশিক জানে বাবা কিছুতেই এই সম্পর্ক মেনে নেবেনা । হয়ত আলেয়াও ' পাগল ' বলে হেসে উড়িয়ে দেবে । নিজেকে কিছুতেই দমন করতে পারছে না কৌশিক । গতকাল রাহার্সালের পর আলেয়া যখন ওর কাছে এসে দাঁড়াল ' সাবাস ' বলে পিঠ চাপড়ে দিল কৌশিকের মনে হল কে যেন এক বালতি বরফ-জল তার গায়ে ঢেলে দিল ।
সন্ধ্যেবেলা পড়তে গিয়েও মনের মধ্যে এই হীমশীতল স্পর্শটুকু অনুভব করছিল কৌশিক । স্যার যখন ' নিউরণ ' বোঝাচ্ছেন তখন সে একমনে আলেয়ার খুশি - উজ্জ্বল মুখটা ভেবে যাচ্ছে । ভাবতেও কত সুখ । হঠাৎ গোকুলের ধাক্কায় তার চৈতন্য ফিরে আসে । স্যারের শ্যেণদৃষ্টির সামনে মুহুর্তে আলেয়ার মুখটা বিলীন হয়ে যায় । অবশ্য স্যার তেমন কিছু বলেননি ।তাঁর না বলা চোখে অনেক কিছু পড়ে ফেলেছে কৌশিক । মুহুর্তে সচেতন হয়েছে সে ।
তবু দ্বিতীয় ও মারাত্মক ভুলটা এর পড়েই করে বসেছিল কৌশিক । কাজ করতে দিয়ে স্যার বাইরে গেছেন । সবই জানা প্রশ্ন । অসুবিধা নেই । আনন্দে আবার আলেয়ার মুখটা মনে পড়ল কৌশিকের । হাতের কলমটা খাতা ছেড়ে বেঞ্চের ওপর দাগ কাটছে তখন । স্যার ফিরে এসেছেন । সবার খাতা একে একে জমা নিয়ে কৌশিকের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন । কৌশিকের কোনো খেয়াল নেই । বেঞ্চের ওপর তখন লাল কালিতে একটা নাম স্পষ্ট ফুটে উঠেছে -- আলেয়া ।
একটা সজোর চপেটাঘাতে সম্বিত ফেরে কৌশিকের । এতক্ষণে ঘটনার গুরুত্ব সে উপলব্ধি করতে পেরেছে । ততক্ষণে কৌশিকের বই খাতা হাতে তুলে নিয়েছেন স্যার । এখন শুধু আঙুল তুলে দরজাটা দেখিয়ে বললেন -- বেরিয়ে যাও ।
কৌশিক জানে স্যারের কাছে আজকের ভুলের কোনো ক্ষমা নেই । কয়েকদিন ধরেই ওর অন্যমনষ্কভাব স্যার ঠিক লক্ষ্য করেছেন ।
মনের মধ্যে তুমুল ঝড় নিয়ে আবার স্যারের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায় কৌশিক - আর কখনো হবে না স্যার ।
- তোমার সঙ্গে আমি কোনো কথা বলতে চাই না । তোমার বাবাকে আমার সাথে কথা বলতে বলবে ।
সারারাতের অনিদ্রায় কালিপড়া বসে যাওয়া চোখ নিয়ে ছাদের কার্নিশ ঘেষে দাঁড়িয়েছিল কৌশিক ।আজ কোনো এক রাজনৈতিক দলের আহ্বানে চব্বিশ ঘন্টার বাংলা বন্ধ । বাবা বাড়িতে থাকবে । বাজারে যাবে । কৌশিকের পড়াশুনার খবর জানতে যদি স্যারের বাড়িও যায় । কোথায় পালাবে কৌশিক । পৃথিবীটা বড্ড ছোট বলে মনে হয় তার ।
সামনের মাঠে কয়েকজন নাড়ীপুরুষ মর্ণিংওয়াক করছে । অবশিষ্ট পৃথিবী এখনো শেষরাতের নিদ্রাসুখটুকু উপভোগ করছে । কৌশিকের জগৎ শুধু একঘরে । এখানে ক্ষমা নেই । ভালোবাসা নেই । আর ভাবতে পারছে না কৌশিক । এই চৌদ্দ - পনের বয়সেই সে যেন পৃথিবীর প্রাচীনতম সদস্য হয়ে উঠেছে । চোখের উপর দিকটা অসম্ভব যন্ত্রনা হচ্ছে । মাথার মধ্যে শিরা উপশিরার তান্ডব চলছে যেন । এক্ষুনি হয়ত একটা পটাশ করে ছিড়ে যাবে হয়ত । এক্ষুনি যদি একটা ভয়ানক বাজ পড়ে কিংবা প্রবল ভূমিকম্পে ওদের বাড়িটা মিলিয়ে যায় মাটির নীচে -- কৌশিক যেন বেঁচে যায় ।
দুঘন্টা কেটে গেল । তেমন কোনো অঘটন ঘটল না । বাবা সকালের কাজ সেরে চায়ের কাপ হাতে টিভিতে খবর শুনছে । মা গৃহস্থালীর কাজে ব্যস্ত । দাদু-ঠাকুমা , কাকা-কাকীমা কারো কোনোদিকে নজর নেই । সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত । আজ আর ভায়ের কাছে গিয়ে খুনশুটি করল না কৌশিক । গামছা নিয়ে নিজের শীর্ণ মুখটা লুকোতেই হয়ত এগিয়ে গেল বাথরুমের দিকে । মা ভাবছে ছেলে আজ কত ভোরে উঠে পড়া করে নিয়েছে । সত্যি ! সন্তান ভাগ্য তার ।
নিজের ঘরে টেবিলে বই নিয়ে বসেছে কৌশিক । বাবা বাজারের ব্যাগটা খুঁজছে । ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে টেনে এনে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে ।মুখটাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল কৌশিক -- আজ তো বাজারও বন্ধ্ বাবা ।
--যাই । টুকটাক কি আর খোলা থাকবে না । তাছাড়া বাজারের একটু হালহাকিকৎও জানা যাবে ।
যদি স্যারও এইমুহুর্তে বাজারের হালহাকিকৎ জানতে আসেন ! মুহুর্তে ছুটে যায় মার কাছে । মার এখন যে মরারও সময় নেই । ছেলের মুখের দিকে একবার তাকিয়েও দেখল না মা । কি করবে এখন কৌশিক । একবার দাদুর ঘরে গেল । দাদু এখনো বিছানায় । দাদুর কাছে গিয়ে একটু দাঁড়াল কৌশিক । ওষুধের অ্যাকশন শেষ হতে এখনো আধ ঘন্টা বাকি । এখন দাদুর ঘুম ভাঙ্গানো বারণ । গেটের সামনে এসে দাঁড়ায় কৌশিক । বাবা এখনো তো আসছে না । তবে কি ....
একটা গোটা মুরগি নিয়ে ফিরে এসেছে বাবা । নাহ্ । মুখটা দেখে বেশ ভালোই মনে হচ্ছে কৌশিকের । কিছুক্ষণ পর বাবার ডাকে উৎকর্ণ হয়ে ওঠে কৌশিক । না ! এ স্বরে কোনো ভয় নেই । স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল কৌশিক ।
দুপুরে মুরগির ঝোলটা খুব ভালো রান্না করেছিল মা । তবু বাবার পাশে বসে গলা দিয়ে ভাত নামতে চাইছিল না কৌশিকের ।
মুরগির গলাটা নিয়ে ভাই বলছিল , দেখ দাদা , আমাদের গলাটাও এমনি , না ? গলায় হাত বোলায় কৌশিক । মুখ দিয়ে স্বর বের হয় না । ছোট্ট করে মাথাটা ঝাঁকায় শুধু ।
খাওয়া দাওয়ার পর একবার বের হয় কৌশিক । বন্ধুদের সাথে একটু কথা বললে যদি ভালো লাগে । রমেশ , সমর , সৌগত ,সমরেশ একে একে সবার সাথে দেখা হয় । না । ওরা বোধহয় এ ব্যাপারে কিছু জানে না । একটু হাল্কা লাগে মনটা । কৌশিক বাড়ি ফেরে ।
বাড়িতে ঢোকার মুহুর্তে গোকুলের সাথে দেখা । --
একটু এদিকে আয় কৌশিক ।
-- কি হয়েছে ? বুকের মধ্যে দুমদুম দামামাটা আবার বেজে ওঠে ।
-- স্যার বিকেলে হয়ত তোদের বাড়ি আসবেন ।
কৌশিকের ফর্সামুখটা মুহুর্তে ছাইবর্ণ হয়ে যায় । বাবার মুখটা একবার মনে পড়ে । আর উপায় নেই । গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যায় কৌশিক ।
মন্থর পায়ে ঘরে ঢোকে কৌশিক । ভালো করে খেয়াল করলে ওর মনের মধ্যে যে ঝড় বইছে তার আঁচটা হয়ত বোঝা যেত । কিন্তু কে বুঝবে । মা ভাইকে নিয়ে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে । বাবা কোথায় কে জানে । প্রাণপনে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে কৌশিক । মার পাশটাতে গিয়ে শোয় -- মা ... ।গলায় জোর পায়না কৌশিক । বাইরের জানালা দিয়ে বাবা টিভি দেখছে ।
মুহুর্তে ডিসিশন নেওয়া হয়ে যায় কৌশিকের । ধীর পায়ে বাইরে আসে ।
-- ভালো সিনেমা হচ্ছে বাবা । যাও না ভেতরে গিয়ে বসে দেখ ।
-- তুইকোথায় যাচ্ছিস ।
-- বাথরুমে ।
একবার পেছন ফিরে দেখে নেয় কৌশিক । না । বাবা নেই । গুটি গুটি পায়ে ছাদে উঠতে থাকে । ছাদে উঠতে যে এতগুলো সিড়ি টপকাতে হয় আজই যেন প্রথম খেয়াল করল কৌশিক ।
ঐতো মায়ের একটা শাড়ি মেলা রয়েছে । কোনার দিকে মইটাও আছে । চিলেকোঠার চালটা সেদিন লাগানো হয়েছে । যথেষ্ট মজবুত । টিনের ফাঁকে একটা মোটা দড়ি অনায়াসে গলে যেতে পারে । দড়ির বাঁধনটাও সে জানে ।
মা যখন ভাইকে নিয়ে ঘুমে কাঁদা , বাবা যখন সিনেমা দেখায় মগ্ন , যখন চারিদিকে দুপুরের নৈঃশব্দ -- কৌশিক তখন সকলের মায়া কাটিয়ে পরপারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে । মুহুর্তে ফুরিয়ে যায় চৌদ্দ - পনের বছর বয়সের তরতাজা জীবনটা ।
চূড়ান্ত অপরাধের সামান্য প্রায়শ্চিত্ত করে যায় কৌশিক ।
Saturday, November 17, 2018
Wednesday, November 14, 2018
সেইক্ষণে
সেইক্ষণে
আকাশটা যখন , নিশ্চিন্তে
পৃথিবীর মুখের ওপর মুখ রেখে
চুম্বনরস পান করছিল
তখন তোমায় দেখেছিলাম
তুমিও চুম্বন প্রত্যাশি ছিলে না ?
শিমূল ফুলের সমস্ত রঙ চুরি করে
গায়ে মেখেছিলে সেদিন
রক্তরাগ শরীর থেকে
ঠিকরে বেরচ্ছিল
রঙ বেরঙের প্রজাপতি
সমুদ্রের ঢেউ
তটের উপর আছরে পড়ে
সে কি আকুলি বিকুলি প্রেম !
আশ্লেষ করতে চেয়েছিলে তুমিও
মাটির সঙ্গে ঘাসের মত ।
Monday, November 5, 2018
অভিলাষ
অভিলাষ
বুড়ো সূর্যটা যখন
পুকুরপারের গাছের ছায়ায় বসে
একটু বিশ্রাম করে ,
যখন কোকিলগুলো
গানে গানে ভরিয়ে দেয় প্রাণ ,
যখন নাড়কেলের পাতাগুলো
তিরতির করে কাঁপতে থাকে , আর
গাছের হলুদ পাতাগুলো
একটি একটি করে
পুকুরের জলে পড়ে খসে
....ভাসে আর ভাসে ....
মনে হয় এমনি ভেসে ভেসে
কোথাও হারিয়ে গেলে বেশ হয়
আবার যখন পৃথিবীর কপালে
রাজটীকার মত
ভোরের সূর্য উদ্ভাসিত হয়
মনে হয় বৃহৎ সংসারের কপালে
রাজটীকা না হলেও
ছোট্ট কাজলের ফোটা হলেই বা মন্দ কি ....
ক্রন্দন
ক্রন্দন
মনের গোপনে লালিত
যে কথা বহুযুগ ধরে
হল না প্রকাশ কোনোদিন ,
অঙ্কুরেই বিনষ্ট হল একটি ভ্রুণ
পেলনা অনুকূল পরিবেশ
ছন্দে গন্ধে সৌরভে গৌরবে
হল না প্রস্ফুটিত ,
তবে কি আজ বুনো হাসের মাঝে
খুঁজে পেয়েছে তার আত্মা ?
নিরালম্ব শরীরটা
শ্মশানে হয়েছে পুরে ক্ষয়
তবুও তো -
এক অতৃপ্ত আত্মার ক্রন্দন ধ্বনি
মাঝরাতে গোঙায় শুধু
এক অব্যক্ত যন্ত্রনায় ।
Saturday, October 27, 2018
চিঠি - অন্তিম পর্ব
চিঠি - অন্তিম পর্ব
চিঠিটা একটা প্রেমপত্র । জানতে পারলাম দিদির কাকার বাড়ির পাশে এই বিনয়ের বাড়ি । কাজকর্ম ভালোই করে । আর দেখতেও মন্দ নয় । সব মিলিয়ে দিদির কাছে বেশ লাগে । বিনয় অনেকদিন ধরেই দিদিকে আভাসে ইঙ্গিতে ওর মনের কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছে । কিন্তু দিদি কখনো সাড়া দেয়নি । যদিও এখন বুঝতে পাচ্ছিলাম দিদি কেন এত ঘন ঘন কাকার বাড়ি যেতে চাইত । কিছুদিন পর দিদি আরেকটা প্রেমপত্র আর একটা ছবি দেখালো । বুঝলাম ছবিটা বিনয়বাবুর ।
এদিকে সুহানীদির মা আমার বাবাকে অনেকদিন ধরেই দিদির বিয়ের ব্যবস্থার কথা বলছিলেন । বাবাও পাত্র খুঁজতে লাগলেন । এই অবস্থায় একদিন আমি স্কুল থেকে ফিরলে দিদি ম্লান মুখে আমার ঘরে এসে দাঁড়াল । বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে ।
- কি হয়েছেরে দিদি । দিদি আমার দিকে তাকিয়েই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল । চোখদুটো বেশ ফোলা । আগেও হয়ত কেঁদেছে ।
- আমায় কাল দেখতে আসবে ।
- কে !
- চাকদা না কোথা থেকে ।
- তো ....
- আমি বিধয়কে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারব না । তুই বল না তোর বাবাকে ।
- আ - আমি !
আমি জানতাম দিদির সাথি হিসাবে আমি যতই বড় হই না কেন বাবার কাছে এধরনের কথা বলা আদৌ সম্ভব নয় ।কিন্তু দিদি এখন কি করবে ।
আমার নিরুত্তর মুখ দেখে দিদি আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে গেল । তারপর বলতে লাগল - আমার কপালটাই খারাপ । ছোটবেলায় বাবাকে হারালাম ।বাবার ভালোবাসা কি জিনিস জানিনা । বড় হয়ে যাও বা একজনকে ভালোবাসলাম তাও কপালে টিকল না । ..... যাকগে । চল খাবি চল ।
চাবি দেওয়া পুতুলের মত আমি ঘর থেকে বেড়িয়ে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসলাম । মনের ভিতর খচখচ করতে লাগল । কিন্তু কি করতে পারি আমি ।
পরদিন আমি যখন স্কুলে যাব তখন দিদি লুকিয়ে আমার হাতে একটা ইনভেলপ খাম দিল - চিঠিটা পোষ্ট করে দিস । দিদির মুখটা খুব শুকনো লাগছিল । চোখদুটো লাল । মাথার চুল উসকো-খুসকো । দিদিকে আশ্বাস দেবার মত ভাষা আমার ছিল না । নীরবে শুধু মাথা নাড়লাম ।
রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম । আর দিদির কথা ভাবছিলাম । কখন যে পোষ্ট অফিস পেড়িয়ে এসেছি খেয়ালই নেই । খেয়াল হল স্কুলের গেটের সামনে এসে । ফেরার সময় পোষ্ট করে দেব ভেবে ব্যাগে মলাট দেবার জন্য যে খবরের কাগজটা আমি বেছে রেখেছিলাম পুরোনো কাগজগুলোর মধ্যে থেকে তার ভিতরে রেখে দিলাম ।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মলাট দেবার জন্য সেই খবরের কাগজটা আর ব্যবহার করা হয়নি ।আর চিঠিটাও তার মধ্যেই থেকে গেছে । যদিও দিদিকে যখনই দেখেছি অপরাধবোধে পীড়িত হয়েছি । আর প্রতিজ্ঞা করেছি কালই স্কুলে যাবার সময় চিঠিটা পোষ্ট করে দেব । কিন্তু ঐ পর্যন্তই । চিঠিটা যে আর পোষ্ট করা হয়নি সুদীর্ঘ সাত বছর পর তার সাক্ষ্য মিলল ।
চাকদার সেই ছেলেটির সঙ্গেই সুহানীদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে আজ প্রায় সাত বছর হল । দুই মেয়ে স্বামী সংসার নিয়ে বেশ সুখেই আছে দিদি । বিনয়কৃষ্ণর কথা ওর মনে আছে কিনা জানিনা । কিন্তু ওর প্রেমের পাখির একটা পালক আমার কাছে গোপনে রয়ে গেছে - এটা সে জানতেও পারল না । জানলে হয়ত আমাকে কখনো ক্ষমা করত না কিংবা হয়ত কিছুই হত না ।
সমাপ্ত
সমাপ্ত
Thursday, October 25, 2018
চিঠি - তৃতীয় পর্ব
চিঠি - তৃতীয় পর্ব
না , বাবা সেদিন ফিরেছিলেন না । পরদিন দুপুর প্রায় দুটো নাগাদ বাবা ফিরেছিলেন । সেদিনটা কোনো একটা পর্ব উপলক্ষ্যে স্কুল ছুটি ছিল । আমি দুপুরে খেয়ে দেয়ে ঘরেই ছিলাম । বাবর ডাকে একছুটে বাইরে এসে দাঁড়ালাম । কিন্তু বাবার সাথে ঐ মেয়েটি কে ? ইতিমধ্যে বাবা আমার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েছে । আমিও আনন্দে নাচতে নাচতে ঘরে ঢুকলাম ।
পরে জেনেছিলাম ঐ মেয়েটি আমার বাবার কেমন সম্পর্কের ভাগ্নী হয় । আমার থেকে বছর পাঁচ সাতেকের বড় হবে । রঙটা ফর্সার দিকেই । দেখতে খুব সুন্দর না হলেও খারাপ নয় । কয়েকদিনের মধ্যেই ওর সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গেল ।
শান্তিপুরে সুহানীদির এক কাকা থাকতেন । দিদি এখানে আসার পর কাকা প্রায়ই এসে ওকে নিয়ে যেতেন । এভাবে বছর পাঁচ সাত কেটে গেল । এখন দিদি দেখতে আরো সুন্দরী হয়েছে । যৌবনের পরশে তার দেহ মন সতেজ সরস । আমিও তখন কিশোরী লাজুক লতা । কাজেই দিদির সাথে আমার হৃদ্যতা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ।
আগেই বলেছি শান্তিপুরে দিদির কাকার বাড়িতে দিদি মাঝে মাঝেই বেড়াতে যেত । ইদানিং দিদি দুদিন পরপরই আমাকে কাকার বাড়ির কথা বলতে লাগল ।
এরকম বেশ কিছুদিন চলার পর একদিন কাকার বাড়ি থেকে ঘুরে এসে দিদি আমার কানে কানে বলল - একটা জিনিস দেখবি ?
- কি জিনিস ?
- এদিকে আয় । আমার হাত ধরে টানতে টানতেআমার পড়ার ঘরে নিয়ে গেল । হাতে ওর পার্সটা । ঘরে ঢুকে প্রথমে দরজার পর্দাটা ভালো করে টেনে দিল । মৃদু মৃদু হাসতে হাসতে পার্সটা খুলে আমার হাতে ভাজ করা একটা কাগজ দিয়ে রহস্যজনকভাবে হাসতে লাগল ।
- কি এ ?
- খুলে দেখনা ।
আগ্রহের আতিশয্যে ভাঁজ খুলে ফেললাম । একটা চিঠি । দিদির নামে । ইতি - বিনয় ।
- বিনয় কে ?
- আঃ পড়ে দেখনা ।
আমি রূদ্ধশ্বাসে চিঠিটা পড়তে লাগলাম । দিদি তখন আমার টেবিলক্লথের কোনাটা আঙুলে জড়াচ্ছে আর খুলছে । মুখটা ভারী অদ্ভুত । দিদির এরকম মুখ আমি আগে কখনো দেখিনি ।
চিঠি - দ্বিতীয় পর্ব
চিঠি - দ্বিতীয় পর্ব
আজো সবই ঠিক ছিল ।শুধু বাবা তার জায়গাটিতে নেই দেখে বাবার কথা মনে পড়ল সারাদিন পর ।
- মা , বাবা কখন আসবে ?
- দেখ - এই ট্রেনে হয়ত আসতে পারে ।
- এই ট্রেন কটায় মা ?
- সাড়ে সাতটা মনে হয় ।
- এখন কটা বাজে মা ?
- সাতটা দশ । সারে সাতটা বাজতে আর কুড়ি মিনিট বাকি আছে ।
- ওঃ কুড়ি মিনিট কতক্ষণে হবে ।
- জানিনা - যা - শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন ।
অগত্যা মার ধমক খেয়ে আবার স্বস্থানে ফিরে এলাম । আর অপেক্ষা করতে লাগলাম সাড়ে সাতটা বাজার ।
...... কতক্ষণ হয়ে গেল । এখনো কি সাড়ে সাতটা বাজে নি । বাব্বা সাড়ে সাতটা বাজতে এতক্ষণ লাগে । আমার মনে হচ্ছিল সেদিন সাড়ে সাতটা বাজতে যে সময় লেগেছিল ততক্ষণে বোধহয় পৃথিবীটা ধীরে সুস্থে এক পাক ঘুরে আসতে পারবে ।
যাই হোক সেদিন ঘড়ির নিয়মেই সাড়ে সাতটার ঘন্টা পড়ল । মনটা ছটফটিয়ে উঠল । পড়ায় মন বসছে না । বাবা আমার জন্য কি কি আনতে পারে মনে মনে তার একটা লিষ্ট করতে লাগলাম । বারবার মনে হচ্ছে বাবা বোধহয় এক্ষুনি এসে পড়বে । কিন্তু না । অনেকক্ষণ হয়ে গেল বাবা এল না । আমি ভয়ে ভয়ে মার কাছে গেলাম ।
- কৈ সাড়ে সাতটা তো বেজে গেল ।
- কি জানি হয়ত এই ট্রেনে আসে নি ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল । বইয়ের সামনে এসে বসলাম । বইয়ের দিকে যে তাকাতে ইচ্ছে করছিল না সেটা বলাই বাহুল্য ।
কি আর করব । স্কুলের কিছু কাজ ছিল সেগুলো সেরে শুয়ে পড়লাম । মাকে বললাম বাবা এলে একসাথে খাব ।
ঘুমিয়ে পড়লে কোনোদিনই মার ডাকে জেগে উঠে আমি রাতের খাবার খাইনি ।বাবাই আদর করে তুলে খাওয়াতো ।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে পেটে বেশ ক্ষিদে অনুভব করলাম ।বুঝলাম রাতে খাওয়া হয়নি । তবে কি বাবা রাতে ফেরেনি ?
Wednesday, October 24, 2018
চিঠি - প্রথম পর্ব
চিঠি - প্রথম পর্ব
পুরনো খবরের কাগজ বিক্রি আছে ....
পুরনো বই খাতা বিক্রি ......
এই যে বই খাতা বিক্রি .... এদিকে এস ....
বই খাতা নয় । গত বছরের পুরনো খবরের কাগজগুলো জমে আছে । গতকাল ঘর পরিস্কার করতে গিয়ে সেগুলো সব বার করা হয়েছে । এখন শুধু বিক্রির অপেক্ষা ।
কাগজগুলো আনতে গিয়ে নীচের কাগজটা হাত থেকে পড়ে গেল । বাকিগুলো কাগজওয়ালার কাছে দিয়ে এলাম । পড়ে যাওয়া কাগজটা নিয়ে যাচ্ছি - মাঝখানটা মোটা মোটা লাগল । খুলে দেখি ইনভেলপ খামে লেখা একটা চিঠি । চিঠির মুখটা এখনো খোলা হয়নি । ঠিকানা শান্তিপুরের । কোন এক বিনয়কৃষ্ণ মজুমদারের শিরোনামে । প্রেরকের নাম সুহানী কর্মকার - আমার দূর সম্পর্কের এক দিদি ।
আমি তখন বেশ ছোট । একদিন সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসে মনে পড়ল সারাদিন তো বাবাকে দেখিনি । তাই তো । বাবা কোথায় গেছে । ছুটে মার কাছে গেলাম -
- মা বাবা কোথায় ?
- কলকাতা গেছে ।
- কখন ?
- সকালে ।
মনে পড়ল ঘুম থেকে উঠে বাবাকে দেখিনি । সকালে প্রতিদিনই আমাকে পড়তে যেতে হয় বাড়ির সামনের মাঠটা পেড়িয়ে কাজলদিদির কাছে । যথারীতি পড়ে এসে স্নান খাওয়া করে স্কুল । তারপর স্কুল থেকে ফিরতে না ফিরতেই গেটের সামনে অপেক্ষা করে থাকে আমার খেলার সাথিরা । আমিও কোনোরকমে একটু খেয়েই ছুটি মাঠে । মাঠ থেকে ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যা । কাজেই এর মধ্যে কে বাড়িতে আছে না আছে তার দিকে লক্ষ্য থাকে না । পড়তে বসলেই মনে পড়ে । কেননা তখন বইয়ের তুলনায় সারাদিনে ঘটে যাওয়া ছোটবড় ঘটনাগুলো মনের কোনে ভীড় করে বেশি । আর পড়তে বসে এসব কাহিনী উপকাহিনী শোনাবার প্রকৃষ্ট মানুষ হল আমার বাবা । বলাই বাহুল্য পড়ার থেকে আমাদের গল্প হত বেশি । তারপর যখন ঘুমে ঢলে পড়তাম তখন মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলত - সারাদিন এত ধকল কি শরীর নিতে পারে চল চল খেয়ে ঘুমিয়ে পড় ।
Tuesday, October 23, 2018
এসো আবার
এসো আবার
সৃষ্টির আনন্দে মেতে আছি
বহুদিন পর -
এখনো তো আছে দেখি অস্তিত্ব তোমার
আমার বিনিদ্র রাতের ঘুম খায়
ঘুনপোকা
চোরাপথে
আবার কাঁদায়
এতদিন শুনেছি যে আর্তস্বর
বহুদূরাগত -
সে কার , সে বা কার
মাতন লাগে শিরায়
চোখে লাগে হৃৎপিন্ডের জ্যোতি
নানা রঙের
সযত্নে বন্ধ রাখি মুখ
বুঝি বা
আবার হারায়
লেখনী থামে না তবু
পারিজাতের সৌন্দর্য
খাতার পাতায় ।
Monday, October 22, 2018
কেমন করে
কেমন করে
চেতনা আমার দাঁড়িয়ে আছে
কঠিন পথের রিক্ত বাঁকে
আশার হিমেল পরশ নিয়ে
বারে বারে তোমায় ডাকে
তুমি এখন কোন সুদূরে
নিঃস্ব মনের স্মরণ - সাথি
বুঝি ছিল অবুঝ খেলা
ধরা পড়েছে জালিয়াতি
রিক্ত আমি নিঃস্ব আজ
এই ছিল কি তোমার চাওয়া
বাসনা তোমার পূর্ণ হবে
মিটবে সকল চাওয়া পাওয়া
কিন্তু যদি বারেক ভুলে
দাঁড়াই গিয়ে সামনে তোমার
কেমন করে থাকবে ফিরে
দেখব শত চেষ্টা তোমার ।
আহ্বান
আহ্বান
ভেঙে ফেলো আজ সিংহ দুয়ার
মুক্তির ডাক শোনো
প্রাণ খুলে আজ প্রশ্বাস নাও
নেই যে গো ভয় কোনো
ক্ষণে ক্ষণে আজ শিরায় শিরায়
কোন সে আবেশ মাতন লাগায়
ঐ মাতন যে আর কোনোদিন
পাবি না কক্ষনো ।
আয়রে ভেসে , খেলে হেসে ,
সৃষ্টির নবধারায়
আয়রে পাগল , বন্ধ আগল
ভেঙে ফেলে ছুটে আয়
শোন শোন শোন , ফিসফিস করে
কে যেন কথা কয়
মনের কোনে সঙ্গোপনে
উতল হাওয়া বয়
হাওয়ার বেগে পাল উচিয়ে
চল চলে যাই দূরে
যেখানে উদাস পথিক গাইছে
গান উদাসী সুরে ।
আলো , আনো আলো
আলো , আনো আলো
সারারাত জেগে থাকি ভোরের প্রতীক্ষায়
স্তব্ধ চরাচর
শোনা যায় নিঃশ্বাসের ব্যর্থ আস্ফালন
কবেকার অমানিশার ঘোর
এখনো আমার চোখে মুখে
আলো খুঁজি আমি , আলো
শিরায় শিরায় বয়ে চলে ক্ষয়রোগ
কখন অজ্ঞাতে চুপিসারে হানা দেয় মনে
মাথায় তীব্র বোধ , সংকট ঘনায়
নরম পাশবালিশও কঠিন মনে হয়
তোমার হাতে যখন উষ্ণতার আবেশ
মননে আমি কোন নিবিড় শীতলতায়
চারদিকে বরফ কঠিন প্রাচীর আমার
শুনি শুধু অবরূদ্ধ আত্মার তীব্র হাহাকার
পথ খুঁজি আমি , প্রশস্ত পথ
তুমিও কি পেয়েছ পথে আলোর সন্ধান ?
বাঁচতে দাও
বাঁচতে দাও
এলোমেলো পায়ে পথ চলি
নির্জন একাকিত্বময় পথ নয়
অগনিত মানুষের কলরবে মুখর
অজস্র গাড়ির হর্ণ
ভালো লাগে -
একাকিত্বের নির্জনতা থেকে
জনসমাগমে ফিরতে
আবার নেমেছি আমি
সন্ধ্যার আলোছায়া গায়ে মেখে
বৃষ্টিধৌত কালো পিচঢালা রাস্তায়
পথচলতি ব্যস্ত মানুষের সাথে
অন্তরের আর একটু কাছে
আর একটু উষ্ণতার কাছাকাছি
কলরব উঠুক -
নয়ত -
প্রয়োজন হবে অন্য পৃথিবীর।
Sunday, October 21, 2018
Thursday, October 18, 2018
Subscribe to:
Posts (Atom)