Monday, July 30, 2018

আচমন ২

আচমন 

ফুল দাওনি কোনোদিনও
পাপড়ি দিলে ছুড়ে
মেঁহেদি কাঁটায় রক্ত দিলাম
মজ্জা মাংস খুঁড়ে
কাঁটা ধুয়েছ , হাত ধুয়েছ
ফনীমনসার ঝোঁপে
আমার হাতে শঙ্খ-বিকেল
থরথরিয়ে কাঁপে
রাত্রি নামে , রাত্রি আসে
নিঝুম পদক্ষেপ
সাদা পায়রার ঝরা পালক
সমুদ্র আক্ষেপ
বালির কনা ঝিরিঝিরি
লবন লবন স্বাদ
আকন্ঠ পিপাসিত
সমুদ্র নিখাঁদ ।

Friday, July 27, 2018

মরণ - ঘুম



মরণ - ঘুম




আজন্মের ঘুম নামুক দুচোখে আমার
ঘুম - ঘুম - 
আমার ক্লান্তি দূর করো
দীর্ঘদিনের অবসাদ শিরায় শিরায়
মন - 
আমার বিষন্নতা হরো
জ্বলে যাওয়া , ছিন্নভিন্ন এ হৃদয়
জীবন পিপাসায় কত না তৃষিত
মননে মননে আমার এ কেমন হাহাকার 
নিরাশার অন্ধকারে জীবন শোষিত
কমে যাক আয়ু  - প্রেমহীন আয়ু
মরনের কামড় পড়ুক এবার 
এসো নেমে ঘুম - মানসী ঘুম
মরনের ঘুম ঘুমাই এবার ।

Wednesday, July 25, 2018

গল্প - উপান্ত

                       
                                                                           উপান্ত





                 পায়ে পায়ে ওরা শ্মশানের বেশ ভেতরে চলে এসেছে । অবশ্য বিক্ষিপ্ত কিছু চাপা দেওয়া মাটি আর পোড়া কাঠের টুকরো ছাড়া এমুহূর্তে মনে হবার উপায় নেই যে এটা শ্মশান । এখানে ওখানে গেরুয়া কাপড় পরা রক্তচক্ষু সাধুসন্ন্যাসীদের ঘিরে ছেলের দল গঞ্জিকা সেবনের সাথে সাথে সাধন বিষয়ক আলোচনায় ব্যস্ত । কোথাও আবার গৃহকর্তীদের হাতের সিঁদূর আলতায় সন্ন্যাসীদের পা আর ত্রিশূল ধুয়ে যাচ্ছে । এই শ্মশানে নাকি কোনোদিন চিতার আগুন নেভে না ।
                                      পূণ্যার্থীদের পাশ কাটিয়ে নদীর বেশ কাছাকাছি চলে এলো ওরা ।নদীতে এখন উপছে পড়া জল । রঙ্গময়ী আনন্দে নাচতে নাচতে বয়ে চলেছে । আর পথের পাশে যা কিছু নজরে আসছে তাকে একবার করে স্পর্শ না করলে যেন তার হচ্ছে না । আ-বাঁধানো নদী । জল যখন কম থাকে তখন স্নানের সুবিধার জন্য পাড় কেটে নেয় লোকেরা । আবার গ্রীষ্মকালে নদীতে প্রায় জলই থাকেনা । এর ওপর দিয়ে তখন হেটেই পার হওয়া যায় ।
                                          জনকোলাহল এখানে বেশ স্তিমিত । পায়ের নীচে নদীর কলকল শব্দ । একটা নুয়ে পড়া গাছের গুড়ির ওপরে গিয়ে বসল আশিষ । সূর্যের তেজ একটু একটু করে বাড়ছে । কম্পিত জলের ওপর সূর্যের আলো পড়েছে ।আর ঠিক জলের ওপরে থাকার কারনেই আলো ছায়ার এই খেলা প্রতিফলিত হচ্ছে আশিষের মুখে । অন্য মানুষ বলে মনে হচ্ছে তাকে ।
                                            অনেকক্ষণ পর প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণ করে আশিষ প্রথম কথা বলল , ' বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে ঘটনাটা ঘটাইনি । ' স্বগতোক্তির মত কথাগুলি বলে গেল আশিষ । শেষের দিকটায় যেন গলাটা একটু কেঁপে উঠল ।
                                           দেবু হাস্যরসিক মানুষ । অনেকক্ষণ ধরে এই থমথমে ভাব ভালো লাগছিল না তার । ঝাঁঝিয়ে উঠল দেবু , ' তোর সবটাতেই বাড়াবাড়ি । অ্যাক্সিডেন্ট ঘটতেই পারে । এতে অত চিন্তার কি আছে । আমাদের তো আর কেউ দেখেনি । '
                                             কথাগুলি আশিষের কানে গেল কিনা বোঝা গেল না । কেননা তার মুখ আরো বেশি করুণ বলে মনে হল চয়নের ।
                                               চয়নের চোখের সামনে ভেসে উঠল বীভত্স সেই ছবিটা ।গাড়ী যে খুব বেশি জোড়ে চলছিল তা নয় ।কিন্তু কিভাবে বা কোথা থেকে যে মহিলাটি গাড়ীর সামনে চলে এল আর ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গিয়ে পড়ল রাস্তার পাশের জঙ্গলে ! আর তার কোল থেকে একটা পোটলা ছিটকে এসে পড়ল তাদের গাড়ীর চাকার একদম সামনে ।মুহূর্তে গাড়ীর চাকা একেবারে থেতলে পিষে ফেলল সেটাকে মাটির সাথে ।
                                             গাড়ী থামিয়ে ছুটে গিয়েই আশিষ চীত্কার করে উঠল । ওরা তিনজন ততক্ষনে চল এসেছে । গাড়ীর ডান চাকার নীচে একটা কাপড়ের পুটলির মধ্যে মাস কয়েকের একটা শিশু । মুখটুকু দিব্যি অবিকৃত । চাকা রয়েছে বুকের ওপর ।
                                                চয়ন তাকিয়ে আছে জলের দিকে । পারের কাছাকাছি এক - একটা ঘূর্ণি দেখা যাচ্ছে ।বেশিক্ষণ থাকছেনা ঘূর্ণিটা । একসময় তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে জলের মধ্যেই মিশে যাচ্ছে । নদীর গতি তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হচ্ছেনা ।

Tuesday, July 24, 2018

যাত্রা

যাত্রা


ভাসিয়ে তরী অকুল সাগরে 
বসেছিলে চুপটি করে
জানোনা কখন কেটে গেল কুড়িটি বছর


বকুল ফুলের মালা গেঁথে
জড়িয়ে ছিলে দুটি হাতে
কারো গলায় পড়িয়ে দেওয়ার অপেক্ষা নিরন্তর

প্রভাত হল , সন্ধ্যা হল
কুড়িটি বছর ফুড়িয়ে গেল
অপেক্ষা তবু প্রতীক্ষা হয়ে রইল জাগরুক


হাতের মালা শুকিয়ে গেছে
সাধের নৌকো ডুবে গেছে
খেয়াবিহীন অসীম সাগর প্রশান্ত উন্মুখ ।

ত্রয়ী

ত্রয়ী



ক্লান্ত নগ্ন হাত
রক্তাক্ত শরীরে সামনে দাঁড়ায় বর্তমান
ধোঁয়াশায় পূর্ণ পাঁজরের হাড়
নাড়া দিতেই ঝন ঝন শব্দ
মস্তিষ্কের কোটর ভর্তি পিত্ত ধোয়া জল

বুকসেল্ফের পাতা থেকে খসে পড়ে
ত্রস্ত বিচলিত রূদ্ধশ্বাস অতীত
বর্তমানের পাঁজরে উঠে আসে অতীতের দীর্ঘশ্বাস
সামনে অশরীরী ভবিষ্যতের ক্লান্ত পদচিহ্ন
অভিষেকের অভিষারপদ মন্থর
বাতাসের সুরে সুরে বর্তমানের হাহাকার
উদ্বেল অনিশ্চিত ভবিষ্যত্ ।

মূঢ় হৃদয়

মূঢ় হৃদয়



ওরে আবেগ , ওরে প্রেম ,
ওরে মূঢ় চাওয়া , এতদিনেও 
হল না শেষ পাওয়া , ক্লাশ ঘরের
ফাঁকে ফাঁকে , ব্যাথার করুণ 
বালুকাতে , দেখি হঠাত্ বিষ্ময়েতে
তোমার তরী বাওয়া ।


এতদিনেও হলো না শেষ পাওয়া ।

সূর্য তখন অস্তাচলে , সোনার 
থালা গলে গলে পড়ছে ভূঁয়ের 
পড়ে , কেমন করে ব্যাথার সুরে ,
বাঁধলে সেতার তারে তারে , গানখানি 
তার ছড়িয়ে দিলে বিশ্বভূবন
ভালে ।


তখন সূর্য অস্তাচলে ।

রাত্রি তখন দ্বিপ্রহরে , জেগে
দেখি নয়ন ভরে , অশ্রুবিন্দু
আছে জমে চোখের কোনটি
ঘেষে , বুঝিনা হায় এ কোন 
ব্যাথায় আমার যায় গো ভূবন 
ভেসে , আমি ভাবি ঘুমের ঘোরে ।


আজ রাত্রি দ্বিপ্রহরে ।

কেমন করে

কেমন করে


কেমন করে মনের আকাশ জুড়ে
ছড়িয়ে দিলে ঘন সবুজ রঙ
কেমন করে সাঁঝের বটের তলে
আলো -ছায়ার ঘটেছে সঙ্গম
কেমন করে বাতাসে ঢেউ তুলে
বান ডেকেছে আমার মনের ঘরে
কেমন করে বাধার পাহাড় মেনে
শিকল তুলে দিলে আমার দ্বোরে

আরো আমার প্রশ্ন আছে
এই জেনো শেষ নয়
আর কতদিন নীরব মুখে চেয়ে 
খুঁজব আমি তোমার পরিচয়
আমার কথার জবাব দিতে 
ভয় কেন আজ এত
ওগো আমার চৈতী হাওয়া
বসন্ত হলো পরাভূত ।

আবেদন

আবেদন

টর্চের জোড়ালো আলো নয়
টিমটিম করে জ্বলছিল
আশার প্রদীপ
অস্পষ্ট অক্ষরে লেখা একটি শব্দ
প্রাণবায়ুও স্বল্প হচ্ছিল ক্রমে


তবু প্রবল হৃদয়াশক্তি উদ্ভাষিত
কোষে কোষে জ্বলে উঠেছিল
চোরা লোভের দাবানল
'প্রাণ চাই ,আলো চাই' 
বাঁচার ইচ্ছা প্রবল
হোক শিমূল গন্ধহীন
তবু -
রাঙ্গা অঙ্গার দাও
আর দাও
সাদা পায়রার ডানা থেকে
একটিমাত্র সাদা পালক


উল্কার মত শূণ্যে পুড়ে গিয়ে
ছাই হয়ে নেমে আসা

কত বছর আগে ঘটেছে লয়
কিংবা -
বোঁ বোঁ শব্দে উড়তে থাকা রংফানুষটার
সজোড়ে মাটিতে চিত্পাত্
সবই মেনে নেওয়া যায়
প্রয়োজন শুধু -
একটা লাল শিমূল আর সাদা পালক

গল্প - উপান্ত

                                                                                 উপান্ত
                                                     
                                                                                       
ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি। বন্ধুদের চাপে পড়ে তারাপীঠে বেড়াতে এসেছে চয়ন । প্রত্যুষে নদীতে স্নান করতে একটু শীত শীত করছিল । পরে একটা অপূর্ব প্রশান্তিতে বেশ ঝরঝরে বোধ হতে লাগল তার । গত রাত্রের সমস্ত ক্লান্তি যেন পবিত্র গঙ্গার স্পর্শে একমুহূর্তই ধুয়ে গেল । স্নান সেরে উপকরণ নিয়ে মন্দিরে পৌছে চয়ন হতবাক । এখনো সমস্ত আকাশ জুড়ে ম্রিয়মান তারাদের দেখা যাচ্ছে , এখনো ভোরের পাখিরা শুরু করেনি তাদের উদ্বোধন সংগীত । কিন্তু এরই মধ্যে মন্দির প্রাঙ্গনে ভক্ত মানুষের সেকি মস্ত লাইন । আশিষের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল চয়ন । কিছুটা ক্লান্ত , কিছুটা বিরক্ত , কিছুটা চিন্তান্বিত মনে হলো আশিষকে । দেবু , নীলের মুখও ভোরের তারাদের মত ম্রিয়মান । প্রত্যেকের মনের কোনে যে এখনও গত রাত্রির অন্ধকার লেগে আছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে ।
                              নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে চয়ন প্রথম কথা বলল , ' মনে হয় পুজো দিতে সাতটা বেজে যাবে ।' দেবু আর নীল ঝুকে লাইনটাকে একবার দেখার চেষ্টা করল । আর আশিষের জবাব এল ঠোটের সামান্য বিভঙ্গে ।
                                 দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তবে পুজো দেবার সুযোগ এলো ওদের । 'এও কিন্তু একপ্রকার সাধনা , কি বলিস ' দেবুর এই হাল্কা রসিরতায় চয়নের মনেও একটু হাল্কা ভাব এল ।
                                   ' এবার কোথায় যাবি ' আশিষের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল নীল । আশিষের চোখ সামনের দিকে নিবদ্ধ ।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরে জনসমাগমও বেড়ে চলেছে । মানুষের ঢল নেমেছে রাস্তায় ।ভক্তজনেরা তাদের মনোষ্কামনা পূরণ করতে কত দূর দূর থেকে এসেছে মায়ের প্রসাদি ফুল পাবার আশায় । একদল অল্প বয়সি ছেলে , কপালে সিঁদূরের তিলক , ' জয় মা তারা ' ধ্বনিতে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের পাশ দিয়ে চলে গেল ।চা - মিষ্টির দোকানগুলিতে বেশ ভীড় । বাতাসে গরম জিলিপি ভাজার গন্ধ ।
                                      দেবুর একটু চা তেষ্টা পাচ্ছিল । কিন্তু আশিষের মুখের দিকে তাকিয়ে সে চুপ করে গেল । গত রাত্রির ঘটনাটা সে  ভুলতে পারছে না । দেবু নিজেও কি সেই বীভত্সতা ভুলতে পারছে ।কিন্তু সে ভুলে যেতে চাইছে ।কত মানুষের জীবনেই তো এমন কত ঘটনা ঘটে যা তার সমস্ত সত্বাকে বিপর্যস্ত করে তোলে   আর এটা তো সামান্য একটা ঘটনা । প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে এ ঘটনা ঘটেই চলেছে । তাদের  ভাগ্য ভালো যে এ ঘটনার কোনো সাক্ষ্যী নেই । নয়ত এতক্ষণে গনধোলাই এর সাথে সাথে জেল জরিমানা এসব উপরি পাওনাও জুটত । ............ক্রমশ

Friday, July 20, 2018

অসময়

অসময় 


রোজ রোজ এই যে আসা যাওয়া 
সত্যি বলছি ভালো লাগে না আর 
কবে আমি তোমার কাছে যাবো 
কবে হবো বৈতরণী পার 


সূর্য ওঠে দেখি সকাল হলে 
পাখিরা কেমন সুরে গায়  গান 
শুনতে যে পাই পাখির গানের সুরে 
তোমার আমার মিলিত ঐকতান 


আকাশ জুড়ে কেমন বাদল মেঘ 
ডুবিয়ে দিলো ভোরের শুকতারা 
এখন আমি তোমার কাছে যাবো
 এখনো কি হয় নি গো দিন সারা  ?

পরামর্শ

পরামর্শ

একবার
ভালোবাসতে চেষ্টা করো
দেখবে
সূর্যের সব রঙ তোমার চোখে এসে
রামধনু হয়ে গেছে
ইষ্পাতের বুকেও তো চির ধরাতে পারে
একটা ছোট্ট প্রাণের বীজ ।



একবার
প্রাণ খুলে ডাকতে চেষ্টা করো
দেখবে
সমুদ্রের তলা থেকে উঠে আসছে
হাজার হাজার পাঞ্চজন্য
মঙ্গলঘট স্থাপনেও তো লাগে
অমঙ্গলবিনাশী শঙ্খ ।



একবার
সাহস করে হাতটা ধরতে চেষ্টা করো
দেখবে
আকাশ পৃথিবী কখন এক হয়ে গেছে
পৃথিবীর নরম বুক চিরেই তো
জেগে ওঠে প্রাণের স্পন্দন ।

Wednesday, July 18, 2018

অন্যায়

অন্যায়

সন্ধ্যার অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে
চুপি চুপি বাসায় ফেরে ক্লান্ত পাখি
বিশীর্ণ চোখের কোন থেকে
ঠিকরে পড়ে আতঙ্ক
ঠোটের কোন ঘেষে 
গড়িয়ে পড়ে কষাটে যন্ত্রনা


সমাজ , তোমায় ধিক্কার দেয় আজ
আকাশের যত নবীন তারার দল
বৃদ্ধ নক্ষত্রগুলি বহুদর্শী 
তাই -
অবকাশের মুহূর্ত কাটে নির্ভূমিকায়


ওদিকে বাসার কোনে
চাঁদের আলো খেলা
সংসারে হাসে মিলিত চোখের ভাষা
পাখির বাসায় নূতন চাঁদের আলো
কুয়াশায় ঢাকা তবু অনিশ্চিত ভবিষ্যত্

Monday, July 16, 2018

জননী

জননী


প্রতিদিন তাকে দেখি
ষ্টেশনে উঠতেই
প্রথম যে থামটা পড়ে
তার পাশে বসে -
' ও মা , ও বাবারা , একটা পয়সা দাও না '
- মুখে তার হাজার বলিরেখার আঁকিবুকি
যেন ইতিহাসের পাতা থেকে
উঠে আসা প্রত্ন এক
অথবা তারই মুখে মানচিত্র যা
সে তো আমারই ভারতবর্ষ
শতচ্ছিন্ন শাড়িটায় গেঁড়ো বাঁধা
যেন মানব বন্ধনের ব্যঙ্গচিত্র
- ' বুড়িমা , তোমার বুঝি কেউ নেই '
- 'আছে মা , সে যে মস্ত বড়লোক , '
- ' কত বড় গাড়ি '
- ' কি সুন্দর ঘর '
- ' আর - '
চোখ মোছে বুড়ি
- ' দাদু আমার বাল গোপাল '
- ' সোনা আমার ভালো আছে
মা - বাবার কোলে '
- ' আমি তো মুখ্যু মানুষ '
- ' বৌমা আমার ফটাফট ইনজিরি বলে '
ফোকলা মুখে তার অপরাধের চিহ্ন
কে জানত বিদেশী ভাষার দাম
মাতৃস্তন্যের চেয়েও বেশি !

তাই এক সন্তানের বিনিময়ে
পৃথিবী জোড়া সন্তানদের
আঁকড়ে ধরেছে বুড়ি

অবহেলিত অসহায় মা এক ।

Sunday, July 15, 2018

আবর্তন

আবর্তন


সমস্ত আকাশ জুড়ে নক্ষত্রের মৃদু গুঞ্জন
ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে আসে পৃথিবী
মাত্র বারো ঘন্টার রাতের আঁধার ছেড়ে
সমুদ্রের বুক চিরে উঠে আসে জ্যোতি
কাঁচা ঘুমে হাই তুলে তুলে
ঘুমের রেশটাকে আরো একটু বাড়িয়ে তোলা
তারপর ফোলা চোখে লোনা জলের ঝাপ্টায়
ঝেড়ে ফেলা অহেতুক ঘুমের ক্লান্তি
পৃথিবীর পাঁজরে ব্যস্ত বাতাস খেলে
লোনা জল আরো লোনা হয়
মাছের পেটের ভিতর ঝিনুকের শক্ত খোলস
সমুদ্রের অন্ধকারে মুখ লুকায় মুক্তোর দল

আবার সাগরের বুক চিরে লোনা জলের ঢেউ
আবার আকাশ জুড়ে নক্ষত্রের মৃদু গুঞ্জন

Saturday, July 14, 2018

আচমন -১

আচমন -১


কচু পাতায় জল ঢেলেছি 
ভেবেছি মুক্ত পেলাম
সোনার রশ্মি পাতায় পাতায়
বিন্দু বিন্দু ঘাম
পায়ের তলায় হাজার শিরা
রক্তে কাটাকুটি
তিল আচিঁলে মানিয়েছে বেশ
রাজযোটকের জুটি 
মাথায় যদি মুকুট নিতে
অহঙ্কারি রাজা
যাত্রা তোমার জমত না , ঠিক
বর্ষাকালের সাজা
ঝিনুক ভাঙা আঘাত আমার
সূক্তি তোমার থাক
তোমার ঘরে ঝাউয়ের ছন্দ 
আমার মেহগনির ফাঁক

কচু পাতায় জল ঢেল না
পদ্ম তুলে নিও
কমপক্ষে , সমুদ্রঢেউ
কান্না হয়ে যেও ।

Friday, July 13, 2018

বিষাক্ত প্রেম



বিষ-ছায়া 



মাটিতে বিষাক্ত দূষণ
ডানা মেলে উড়ে চলে জলীয় বাষ্প ভরা আকাশ
তার ছায়া ঘনায় দুচোঁখ জুড়ে
কবেকার কাঙ্খিত প্রেম
নিমতেতো হয়

মাটিই তো চেয়েছিল সে
ইচ্ছে ছিল ভালোবাসার কুঁড়ি ফুটিয়ে করবে বাগান
অসংখ্য ইচ্ছাকীট গুটিপোকা থেকে
দেখেছিল কিভাবে শুঁয়োপোকা হয়
আশা ছিল - এইবার - প্রজাপতি হবে

মাটিতে বিষ - তাই
হারালো সবুজ - অবুঝ
কী দোষ যে ছিল তার

Tuesday, July 10, 2018

অস্তিত্ব


অস্তিত্ব




বাঁধ বাঁধে , বাঁধ ভাঙে বেপথু জীবন
আকাশে টাটটু ছোটে জলন্ধর মেঘ
আরো জোড়ে ছুটে চলা - পিচ্ছিল পথ
বীজের ভেতর অসীম শৈত্যের শপথ
বীজ ভাঙে বেড়ে ওঠে অঙকুর সজীব
আবার সমান্তরালে জড় আর জীব
আবার বাঁধ ভাঙে , বয়ে চলে জীবন নিঃসীম
বীজের ভেতরে জাগে হাজার শপথ

Sunday, July 8, 2018

তোমার প্রতীক্ষায় নির্বাসন


তোমার প্রতীক্ষায় নির্বাসন



স্বেচ্ছায় করে নেব আলিঙ্গন তোমায়
তবু যদি
মনে হয়
জীবন আশ্লেষে

বড় মধুর এ জীবন
একেঁ দিও অধরে একটি শুধু আশিষচুম্বন
তারপর
হেমন্তের ঝরা পাতা হিমেল বাতাসে উড়ে
যাবে জানি নিরুদ্দেশের পথে
নব প্রেম সন্ধানে
ধানের গুচ্ছ যেমন একটু করে সোনালি হয়
সোনা রঙে রাঙাবে তেমন তোমার সম্মোহন
কাঁচা রোদ ছড়িয়ে দেওয়া সোনালী ঊষা
আবার অনাবিল হবে
আমি নতুন পাতাঝরার দেশে
আবার মাতব খেলায় কুহেলিকা সাথে
তোমার প্রতীক্ষায় ।

দ্বন্দ্ব

দ্বন্দ্ব


ইচ্ছেটাতো আকাশ ছোয়া
                    আকাশ আবার অন্তহীন
ইচ্ছেরা তাই টুকরো হয়ে
                   মেঘে মেঘে হয় বিলীন ।

কখনো কাজল কালো মেঘ
                        বল্গাহারা অশ্ব এক
আকাশটাকে দুভাগ করে
                  ছড়িয়ে পরে দিগ্বিদিক ।

পেঁজাতুলোর স্নিগ্ধ ছটাও
               ছড়িয়ে থাকে আকাশ জুড়ে
হালকা নরম স্পর্শ দিয়ে
                দিব্যি কেমন আপন করে ।

আপন করে আপন করে
                        ইচ্ছে শুধু আপন হতে
আকাশটাকে নামিয়ে এনে
                   জমির সাথে মিলিয়ে দিতে ।

ইচ্ছে এমন নদীর বেগে
                          এগিয়ে চলে যেথায় সাগর
ছন্দবিহীন লুপ্তপ্রায়
                                বা দূরন্ত , নীল উজাগর ।

সাধ্য তবু সঙ্গীহারা 
                                       সাধ হৃদয়ে চির অমল 
মিলবে না হায় , কোনদিনও
                                         কারন তারা সমান্তরাল ।

Saturday, July 7, 2018

তোমার জন্য ছন্দ

তোমার জন্য ছন্দ


ছন্দ , তোমার পায়ের নুপূর
রূদ্ধ কেন আজ
ছন্দ আমার রাজেশ্বরী
কোথায় মাথার তাজ
কোথায় তোমার খিলখিলানো
খরস্রোতা হাসি
উদাস পথিক স্তব্ধ যে আজ
হাসে না তার বাঁশি
ছন্দ তোমার দুচোখ বেয়ে
ঝরছে অশ্রুধারা
আঃ ! কি বেদনায় আকুল , হৃদয় 
হল প্রাণহারা
ছন্দ , তোমার পাতায় পাতায়
বেওয়ারিশ লাশ
ফুলের শিশু ঘুমিয়ে আছে
স্বজনহারা পাশ
ঘুম ভাঙে না , ঘুম ভাঙে না
হায় , নব ঈশ্বর
সোহাগ আমার ডুকরে কাঁদে
ঝরবে কার ওপর
ছন্দরে তোর রুক্ষ কেশে
জটাজালের ঘোর
অমাবস্যার আঁধার ঘনায়
স্নিগ্ধ মুখে তোর
প্রাণের মাঝে ছন্দ আমার 
মনের মাঝেও তুই
তোর ডাকেতেই ঘুম ভাঙতো
তোর বিহনে শুই
ঘুম আসেনা বিরহে তোর
মাথায় কঠোর আগ
বর্ষা ঘনায় বর্ষা বিদায়
বিদায় নিয়েছে ফাগ
গ্রীষ্ম প্রখর সারা দুপুর
কি অসহ্য তাত
এসো হে ছন্দ , চিরানন্দ
হাতে রাখ তোর হাত
আবার আমায় মানুষ করো
ভাঙো কঠিন দ্বার
প্রাণের বন্যায় ভাসিয়ে চলো
স্রোত দু্র্নিবার ।

Friday, July 6, 2018

গল্প - ভূত না ভৌতিক

  
গল্প - ভূত না ভৌতিক


     


কদিন ধরেই ভাবছি একটা গল্প লিখব । বেশ কতগুলি প্লট মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করছে । সেদিন আষাঢ়ের বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় সহধর্মিনীর হাতের সুস্বাদু তেলেভাজার সঙ্গে সুপেয় চা পান করে যেইমাত্র খাতাকলম গুছিয়ে বসেছি অমনি আমার সাত বছরের কন্যারত্নটি কোথা থেকে ছুটে এসে বলল , ' কি করবে , বাপি , খাতাকলম দিয়ে ? ' আমি ওর গালটা আস্তে করে টিপে দিয়ে বললাম , ' গল্প লিখব মাগো । ' 'কিসের গল্প বাপি ? ভূতের ? ' এইটুকু মেয়ের মাথায় ভূতের প্রসঙ্গ কিকরে এল জানি না । তবে আমি মনে মনে ভাবলাম আজকের এই আবহাওয়া ভূতের গল্প লেখা ও শোনার  জন্য  সত্যিই খুব উপযোগী বটে । 

             কিন্তু দুপাতা ইংরেজি পড়া এবং একটি নামজাদা প্রাইভেট কোম্পানীর উচ্চপদে কর্মরত অফিসার হয়ে এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে কিকরে আমি ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি । তাই হেসে বললাম , ' না মা , ভূতের গল্প নয় , আর ভূত বলে কিছু আছে নাকি ? ' যেই না বলা আর অমনি কোথা থেকে খুক খুকে কাসির আওয়াজ হল আর সঙ্গে সঙ্গে পাওয়ার অফ হয়ে গেল । সেই নিকষ কালো অন্ধকারে মনে হল কেউ যেন আমার গালটা আলতো করে ছুয়ে গেল । মাত্র একটা মুহূর্ত । এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়ায় আমাকে যেন কাঁপিয়ে গিয়ে গেল । ভাবলাম হয়ত মেয়ের মা অন্ধকারে হাতরে হাতরে এদিকে আসতে  গিয়ে আমার গালে ছোয়া লেগে গেছে। মোবাইলটাও খুঁজে পাচ্ছিনা যে জ্বেলে কিছুটা অন্ধকার তাড়াবো । কিন্তু গিন্নীর কোনো সাড়া না পেয়ে উচ্চস্বরে ডেকেই ফেললাম । আর তক্ষুনি পাওয়ার চলে এল । দেখি গিন্নীও রান্নাঘর থেকে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বের হয়ে আসছে ।  কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বললাম , ' এইতো এদিকে এলে আবার কখন রান্নাঘরে গেলে । 'সে অবাক হয়ে বলল , ' আমি আবার কখন এদিকে এলাম ? সেই  থেকে তো রান্না ঘরেই ছিলাম । ভর সন্ধ্যেবেলা ভূত দেখেছ বোধহয় ।' ' অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকালাম । সেও দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । কিছু একটা হয়েছে ভেবে জানতে চাইল , ' কি হয়েছে বাপি ? ' আমি এ কথার কোনো জবাব দিতে পারলাম না । কেননা অনুভূতিটা তখন আমার মেরুদন্ড বেয়ে নামতে শুরু করেছে ।

Wednesday, July 4, 2018

কান্না ভেজা বিকেল



কান্না ভেজা বিকেল 


কান্না ছাড়া আর কি আছে দেবার
কান্না আম়ার উজান টানে বয়
কান্না ভেজা ধূসর পৃথিবী আমার
অবহেলায় আরো ধূসর হয়

সোনাঝরা সেই শান্ত বিকেলবেলা
হঠাত্ করে কালো মেঘের মোড়ক
দমকা হাওয়ায় ওলট পালট সব
তোমার চোঁখে বিদ্যুতের ঝলক

প্রশ্ন যখন অধিকারের হয়
সব ঠিকানা নিমেষে মিলায়
অবাক চোখে দেখি বিশ্বখানা
প্রেম আমার মরিচীকা হয় ।

Tuesday, July 3, 2018

আলো-আঁধারি


আলো-আঁধারি



আমার আকাশে আজ ঘন কালো মেঘ
একলাই বয়ে চলি নিঃশব্দ ভার
গোধুলি আলোর বিকেল তোমাকে দিলাম
নিলাম জলছবি , আবছায়া আর ঘষাকাঁচ

রামধনু রঙে আঁকি অপার সুখ
মোহময় প্যাষ্টেলও হার মানে তাতে
জানালায় ঝুলে থাকা একখন্ড বিকেল
মনের চোরাপথে উঁকি দিয়ে যায়

মেঘ ভাসে , রোদ হাসে আলো - ছায়ার খেলায় ।

Monday, July 2, 2018

হাতছানি

হাতছানি





মাঝরাতে ঘুম ভাঙে , গোঙানিয়া সুর
দূরে দূরে কালপেঁচার তীক্ষ্ণ বিলাপ
রাত্রির নিস্তব্ধতা ছিন্নভিন্ন হয়
চারিদিকে সুসজ্জিত স্বপ্নবাসর
ভীমরুলের তীক্ষ্ণ দংশন হৃদয়কোনে
পথহারা সঙ্গীহারা অবলা পাখি
আতঙ্কে আতঙ্কে ফেরে বনে বনে 
ঘুমহীন ক্লান্তি নামে শরীর জুড়ে
ডানায় তার হাজার যুগের ভার
চোখে আসে অন্ধকার কুয়াশা শুধু
কোন পথে এসেছিল , যাবে কোথায় আর
অনেকদিন পায়নি সে মাটির ঘ্রাণ
কত দূর , আর কত দূর -
সুমিষ্ট আহারও যেন নিমতেতো
ময়ূরকন্ঠী আশা হাতছানি দেয় ।

Sunday, July 1, 2018

আত্মজ



আত্মজ


অন্ধকারে গুটিসুটি মেরে
কোন গহ্বরে রয়েছ আবিষ্ট , সাধনা আমার , 
তখনও বুঝিনি প্রেম , 'ভালোবাসা কারে কয়'
দিন়ভোর খড়কুটো কুড়ানোর খেলা
জমে যায় খড়কুটো , ধুলো জমে ওঠে
তখনও অপেক্ষা তোমার - প্রেম !

তারপর আসে একদিন , নক্ষত্রের দীপ্তিসম - 
নায়ক তরুন , রক্তিম রাত্রিও বিষাক্ত নীল
তবু আহ্বান , নবাগত , পূর্ণ কর
এসো সঙ্গোপনে , নিভৃতে , একান্ত আপনার ঘরে
অনুভব করি তোমায়
দিনে দিনে বেড়ে ওঠো , সাধনা আমার
তারপর - সাড়ম্বরে ঘোষনা তোমার - 
দৃপ্ত চক্ষু মেলে -
তুমি শাশ্বত সাধনার ধন
আবাল্য পরিচিত শরীরের
শুধু একটি কণা
আমার সন্তান ।।

পথহারা


পথহারা 




অনেকটা পথ পেরিয়ে এলাম
ছোট-বড় শিরা-উপশিরায় চিত্রলেখ সব
আড়ি দিয়ে গেছে আমায় এক টুকরো রোদ
অলস মধ্যাহ্ন পরে আছে নিঝুম নিরালায়
জানালায় ঝুলে আছে আস্ত বিকেল


হাতছানি দিয়ে যায় প্রজাপতির পাখা
শীত আসে শীত যায় , খড়ি ওঠা হাত
মসৃন হয়ে আসে সময়ের সাথে


নিক্তিতে ওজন করি চাওয়া-পাওয়ার
চুলচেরা বিশ্লেষণে মনের পতন
হারিয়ে গেছে কবে জলছবি দিন
দুচোঁখে বাষ্প ঘনায় , অদূর সাগর ।