Friday, April 26, 2019

শঙ্খের জন্য

শঙ্খের জন্য

বিহ্বলময় শান্ত অতীত , পর্ণমোচী বৃক্ষ
স্মৃতির প্রকোষ্ঠে আমার ন্যাড়া ছাদ
উদ্দাম ছাদে সূর্য অস্ত গেছে
অন্ধকারে রাত জাগে দুর্বিনীত বাসনা

বাসনা ---- তবু সোনা সে যে
অলঙ্কার পড়েছ গলায়
ঝিনুক নিয়েছ হাতে
মুক্ত হাড়িয়ে গেছে

হারাক ---- হারাক যত গ্লানি শতাব্দীর
হারাক কালের সীমা , আসুক ফিরে
আবার অতীত

এবারে ঝিনুক নয় ---- শঙ্খ খুঁজে নিও
শাশ্বত জীবনের অগাধ বিশ্বাস

Wednesday, April 24, 2019

চিত্রার্পিতা

চিত্রার্পিতা

রাস্তায়
পথ চলতি মানুষের ঢল থেকে
নিয়ন আলোয়
স্পষ্ঠ দেখি তোমার মুখ
বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপিত
মোনালিসার ছায়া
তর্কের ঝড় ওঠে হৃদয়ে

লিও-নার্দো-দা ভিঞ্চি নই
তাই অজ্ঞাত অনেক
জ্ঞাতও কম নয়
এমনকি 
অন্ধগলির গোপনীয়তাটুকু

Tuesday, April 9, 2019

পঁচিশে বৈশাখ

পঁচিশে বৈশাখ

দিন আসে দিন যায়
সময় বদলায় , মন বদলায় না
কিংবা বদল ঘটে মননে
স্মৃতি থাকে বেদনায় বেদনায়

চৈত্রের ঝরাপাতা উড়ে গিয়ে
নেমে আসে প্রখর তাপ
কৃষ্ণচূড়ার আগুনে রাঙা হয়
কবির জন্মমাস

হোক উদাস বাউল কিংবা রাখাল বালক
অথবা ছুটির খুশি গায়ে মাখা পড়ুয়ার দল
দলে দলে মিলন ঘটে কৃষ্ণচূড়াতলে
মহামিলনের সংগীত বাজে --- কৃষ্টি অন্তরে
আজ না থাক মেহের আলি
নাইবা বলুক কেউ --- ' সব ঝুট হ্যায় '
তবু আশার আশা তারাপদর পায়ে
মনে মনে বোষ্টমী খঞ্জনা বাজায়

তবু আমি রণে ক্লান্ত কালের যাত্রায়
সভ্যতার সংকট আরো ঘণীভূত হয়
আছড়ে মরে ক্লিষ্ট মন না পাবার বেদনায়
আবার এসো কবি , হৃদয়-বাগে
নব ফুল ফোটাই ।

পথহারা

পথহারা

পথ খুঁজে ফিরি আমি

ক্ষ্যাপার পরশপাথর খোঁজার মত

চকচকে তো অনেক কিছুই হয়
হিরে ফেলে কাঁচ তুলি যেমন
ভুল , কত ভুল দিয়ে সাজানো জীবন
শুধু কি নিকোটিনই পোড়ে
পুড়ে যায় , হারিয়ে যায় কঠিন শপথ


পথ খুঁজি আমি

আবার হারাই

দূষিত মানবতার ভিড়ে
পায়ে বাধা লোহার শিকল
আরো আঁকড়ে ধরে
পথ খুঁজি মোহাবেশে বাঁচার তাগিদে
রঙীন চশমা আছে দুচোখ জুড়ে

ভুল বুঝি , ধরব এবার নতুন পথ

সব পথ মিশে যায় শিশুর সারল্যে ।

Saturday, April 6, 2019

অনুগল্প --- মা

                             অনুগল্প --- মা  
                                       


  শর্মী আজ সাত বছরের হল । অন্যান্য বাচ্চাদের মত জন্মদিনে মায়ের হাতের পায়েস খাওয়ার সৌভাগ্য তার নেই । তার মায়ের মুখটা ছবি দেখা ছাড়া স্মৃতিতেও আসে না । কেননা জন্মের পর মাত্র কয়েকটা দিন সে তার মায়ের সান্নিধ্য পেয়েছে ।স্কুলের বন্ধুরা যখন তাদের মায়েদের কথা গল্প করে তার খুব মন খারাপ করে । তারও ইচ্ছে করে স্কুলে আসার সময় তার মা ব্যাগ গুছিয়ে , জামা পরিয়ে , চুল আঁচড়ে , চুমু খেয়ে , আদর করে দিক অন্যান্য বন্ধুদের মত । এই সময় তার খুব রাগ হয় ভগবানের ওপর । ভগবান তাকেই কেন এরকম একা করে মাকে তার কাছে ডেকে নিয়েছেন ।
            ******************************
     সকাল থেকেই খুব মন খারাপ শর্মীর । দিদা আজ কত আদর করে তাকে ঘুম থেকে তুলেছে । তার জন্য পায়েসও বানাবে বলেছে । কিন্তু মা যে মা-ই হয় । কতদিন হল বাবাও সেই যে গেছে আর আসেনি ।
     ব্রাশ হাতে নিয়েই বাগানে এসে দাঁড়ায় শর্মী । এখানে দোলনচাঁপা গাছটাতে সেবারে একটা দোলনা বেঁধে দিয়েছিল বাবা । এই জায়গাটা শর্মীর খুব প্রিয় । দিদা বলে এই দোলনচাঁপা গাছটা খুব পুরনো । তার মাও ছোটোবেলায় এই গাছটাতে দোল খেত । মায়ের খুব প্রিয় জায়গা ছিল এই গাছতলাটা । শর্মীর দুচোখ জলে ভরে এল । কেন , মা , আমি কি দুষ্টুমি করেছিলাম যে আমাকে ছেড়ে তুমি চলে গেলে ।
         হঠাৎ এক ঠান্ডা হাওয়ায় শর্মীর মনের ভেতরটা কেমন করে উঠল । খুব আপন একটা গন্ধ , যেন অনেক কালের চেনা , মাতৃগর্ভের মত একটা অনুভূতিতে ভরে গেল তার মনটা । যেন কেউ পরম মমতায় তার গায়ে মাথায় হাত বুলোচ্ছে , তাকে আদর করছে । তার মুখ দিয়ে অজান্তেই বেড়িয়ে এল --- মা !

Wednesday, April 3, 2019

অনুগল্প --- আগাছা

                         অনুগল্প --- আগাছা 
                                        

    সকাল সকাল কাজটা সারতে পেরে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে প্রতাপের । নিত্যদিনের এই অশান্তি আর ভালো লাগে না । তাই স্ত্রী রীনার জন্য এটুকু করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে । এবার আর বাড়িতে কোনো অশান্তি নেই । শুধু সে আর রীনা আর অখন্ড শান্তি । 
        বৃদ্ধাশ্রমে মাকে রেখে নির্দিষ্ট ফর্মালিটিগুলো পূরণ করতে যতটুকু সময় লাগে তাড়াতাড়ি সেরে আর মায়ের দিকে ফিরে তাকালো না প্রতাপ , পাছে মায়ের চোখের জল তাকে দুর্বল করে দেয় । তার ভবিষ্যৎ সুখ কল্পনাতেই সে সুখি ।
          
              **************************


         ওদিকে প্রতাপের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই অসীমার একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে । আজ থেকে ছাব্বিশ বছর আগে মিউনিসিপ্যালিটির ডাষ্টবিনের পাশে কতগুলি কুকুরকে একটা পুটুলি ঘিরে চীৎকার করতে দেখেছিল সে । খুব ভোরে উঠে ঠাকুরের জন্য ফুল তোলা নিত্যদিনের অভ্যাস অসীমার । সেদিন ফুল খুঁজতে এপথেই যাচ্ছিল সে । রাস্তা নির্জণ । কুকুরগুলোর আচরনে এমনকিছু ছিল যে অসীমা এড়িয়ে যেতে পারল না । কাছে যেতেই দিখতে পেল ছোট্ট একটা মুখ দুটো কচি কচি হাত । বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল তার । রাস্তায় যে এখন কেউ নেই । তিন তিনবার অন্তঃসত্বা হয়েও সন্তান কোলে নিতে পারেনি অসীমা । ডাক্তার বলেছিল কি এক কঠিন সমস্যা আছে তার । অনেকদিন ওষুধ খেতে হবে । খেয়েওছিল । কিন্তু ঈশ্বর বিরূপ । সন্তানের মা হওয়া তার আর হয়ে ওঠেনি । 
        তবে আজ ঈশ্বরের কি অভিপ্রায় । তিনি কি চান এভাবে অসীমাকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে । মনে মনে এ স্বাদের লোভ সামলাতে পারল না অসীমা । ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে কারো অনুপস্থিতিতে  ময়লা কাপড় ছাড়িয়ে তার আঁচল দিয়ে জড়িয়ে নেয় বাচ্চাটিকে । একছুটে বাড়ি এসে শিবুকে ঠেলে তুলে সমস্ত ঘটনা জানায় । তারপর সাত সকালে সেখানকার পাঠ চুকিয়ে নতুন ঠিকানায় । 
      তারপর কত উত্থানপতন শেষে নিজেরা আধপেটা খেয়েও প্রতাপকে নাড়ি ছেড়া ধনের মতই আগলে আগলে বড়ো করা । 
     আজ প্রতাপ বড়ো চাকরি করে । শিবু গত হয়েছে চার বছর হল । বিয়ে করতে না করতেই মা তার সংসারে আগাছা হয়ে উঠল । চোখের কোনটা ভিজে উঠল অসীমার । দুই হাত জোড় করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রর্থনা জানালো , ওদের ভালো রেখো ঠাকুর । মঙ্গল কোরো ।

Saturday, March 30, 2019

রঙের ভোরে

রঙের ভোরে

তোমার জন্য একমুঠো রঙ করব চুরি
পলাশ অশোক শিমূল থেকে
তোমার জন্য নীল আকাশে হাত বাড়াব
রামধনু রঙ আনব ডেকে
যেখানে যত রঙের বাহার খুঁজতে যাব
প্রজাপতির পিঠে চেপে
কৃষ্ণচূড়া খবর পাঠায় আমন্ত্রনের
চিড়ল পাতা উঠছে কেঁপে
তোমার জন্য ডাক পাঠালো
অমলতাস আর হাসনুহানা
তোমার জন্য লক্ষ ফুলের সমারোহ
নাম না জানা
তোমার জন্য বুক ভরা ঢেউ
উথাল পাথাল
তোমার জন্য গোষ্ঠে চলে
ব্রজের রাখাল
তোমার জন্য রঙ আবিরে
হোলি খেলা
তোমার জন্য সুজন কুজন
বহুজনের প্রাণের মেলা
তুমি আসো বছর পরে
একটি বারে
তোমার জন্য নতুন করে
আবার বাঁচতে ইচ্ছে করে
তোমার জন্য হাড় কাঁপানো
শীতের রাতে
অপেক্ষা করি , আসবে জানি
নব প্রভাতে
তোমার জন্য প্রকৃতিতে আজ
কত আয়োজন
বসন্ত তুমি হৃদয় জুড়ে 
তুমিই আমার হৃদয়-হরণ ।

Friday, March 29, 2019

মোবাইল প্রেম

মোবাইল প্রেম

ছেলেরা এখন খেলছে না আর
মোবাইল ফোন ধরেছে
সারাটা দিন খুটুর খুটুর
মাঠে খেলা ভুলেছে
মাঠগুলো সব ফাঁকা ফাঁকা
ঘাস গজিয়েছে ঝোপ ঝোপ
মোরের মাথায় , রকে , মাঠে
নেট ওয়ার্কে ফেলছে টোপ
কোন গেমটা কোথায় আছে
প্লে-স্টোরেতে খুঁজছে
সারাটা দিন টুং টাং বিপ
এস এম এস টোন বাজছে
পাশের বাড়ির ননীদাদা
কেমন আছো তুমি
দেখা-সাক্ষাৎ হয়না মোটেই
চলছে ফোনাফুনি
ফোনেই চলছে বিশ্বখোঁজা
গুগুল সব দিয়েছে
বইগুলো তাই অবহেলায়
টেবিলে পড়ে রয়েছে
সরস্বতীর পায়ে এখন
থাকছে না আর বই
মোবাইলগুলো এনে দেরে
ল্যাপটপটা কই
খেলা বলতে আঙুলের কাজ
স্মার্টফোনেতে টাচ
হিরে ফেলে তুলছে ভরে
পকেট ভর্তি কাঁচ
মানিকদাদার ঘরে আছে
তিন বছরের ছেলে
খাওয়া-শোয়া সব বন্ধ
ফোন হাতে না পেলে
দিদির ছেলে অভিরাজ
বয়স মোটে সাত
মোবাইলে গেম খেলাতে
পাকিয়েছে হাত
চোখের সামনে রঙীন জগৎ
বয়স তের জেনো
কথায় কথায় স্ল্যাং ঝরে তার
গুরু লঘু নেই কোনো
এই যদি হয় যুগের হাওয়া
ছেলেবুড়ো সব ---
অল্প দিনেই নুইয়ে যাবে
হারাবে শৈশব ।

Tuesday, March 26, 2019

চিতা বহ্ণিমান

চিতা বহ্ণিমান
                   নির্মাল্য দাশগুপ্ত


এই ফাগুনের পরের ফাগুনে
তোকে নিয়ে
গান গাইব উৎসবের
কথা ছিল
পরবর্তী সমস্ত ফাগুনের
দীপ্যমান শিখ
প্রজ্জ্বলিত করে দেব
আমাদের জীবন সাগরে

তাই তো স্বপ্ন নিয়ে
বসেছিলাম,
ঝরে গেলি তুই

পিশাচরা হেসে হেসে 
কান্না ছড়ায়

জেনো
মানুষের মনে আজ
চিতার আগুন

Wednesday, March 20, 2019

মুক্তির আস্বাদ

মুক্তির আস্বাদ

মনে হয় সন্ধ্যার আরক্তরাগে
সুদীর্ঘক্ষণ ধরে বয়ে চলা সময়ের পাড়ে
মহামুক্তির দেশে আজ আমার উপস্থিতি
শুভ্র বলাকার দেশ সে এক
তার মসৃণ শ্বেতপৃষ্ঠে পিছলে পড়ে
দুপুরের রোদ
সব গ্লানি ঝরে যায় --- সব গ্লানি আজ
বলাকার শুভ্র পালক
প্রাণপনে হাতে নিয়ে
ঘ্রাণ নিই আকাশে মুক্তির ।

Tuesday, March 19, 2019

দিকভ্রান্ত

দিকভ্রান্ত

কাজের ফাঁকে ফাঁকে
ব্যস্ত ঘড়ি চেতনা দিয়ে যায়
অসম্বিত আমি
হারিয়ে ফেলি সময়ের হিসাব
বেনিয়মে ভরিয়ে তুলি
গোটা প্রহর
দিনের উদ্ধত রোদে
ঘুরে বেড়াই মনের কাছে কাছে
রাতের অন্ধকার এসে
ডেকে তোলে জীর্ণ আত্মাকে
জানালা বন্ধ সব
রূদ্ধ দ্বারের কপাট
থেমে যায় এখানে বাতাসের আনাগোনা
পথ হারায় উদ্ভ্রান্ত আলোক ।

Saturday, March 16, 2019

আহা বসন্ত

আহা ! বসন্ত !

বসন্ত , আমার জয়ের মালা 
গাঁথব কি ফুলে আজ
বসন্ত , আমার হৃদয় জুড়ে
দেখি শ্মশানের সাজ
হুহু করে বেলা ধুধু মরুভূমি
শনশন বয় হাওয়া
শূণ্য এ মনে শান্তি বিরাজে
সাঙ্গ চাওয়া পাওয়া


বসন্ত , তোমার রঙের খেলা
আমার চিতার ছাই
শেষ চুম্বন এঁকে দাও শুধু
আর কোনো খেদ নাই ।

Wednesday, March 13, 2019

সংবর্ত

সংবর্ত

তুমি আমায় বলতে পারো অসামাজিক মেয়ে
বলো না হয় আচম্বিতে সৃষ্টিপথ বেয়ে
ছিটকে আসা অবাঞ্ছিত গ্রহ ।


আমি শুধু তোমার মুখে চেয়ে
জীবনপথে পুরনো সে গান গেয়ে
জীবনবিমুখ রইব দুর্বিষহ ।


তোমার চোখে দেখেছিলাম হাজার ধ্রুবতারা
সৃষ্টিপথে লক্ষ্য ছিল , অসীম বাঁধনহারা
আবেগ যেন মহাসাগরের ঢেউ ।


আজকে কেন প্রাসাদ শিখর মনে হচ্ছে কারা
এতোদিনের সু-অভ্যাসে সামিল ছিলো যারা
ফিরবে না আর হাজার ডাকলেও ।

Wednesday, February 27, 2019

প্রতিশোধ

প্রতিশোধ

শেষরাতে হানা দেয় বোমারু বিমান
প্রতিশোধস্পৃহা আছে মনে
ভাইয়ের রক্ত সফল করতেই হবে
প্রতিশোধের আগুনে


মায়ের কান্না বা প্রিয়ার যন্ত্রনা
অবুঝ শিশুকেও বোঝানো যায়না
কেন তার আপনার জন
আর কখনোই ফিরে আসবেনা


ক্রোধের আগুন শুধু ধিকধিক জ্বলে
একসাথে চৌদ্দটি সাঁঝবাতির আগুন
নিমেষে ধ্বংস করে গুপ্ত ঘাটি
চূড়ান্ত সফল হয় গুপ্ত অভিযান


দেশ হাসে দশ হাসে উপযুক্ত জবাব
বীর সেনাদের নির্ভীক দক্ষতা
দেশজুড়ে চলেছিল দিওয়ালি উৎসব
পেয়েছে অবশেষে প্রতিশোধের বার্তা ।

Monday, February 25, 2019

শুধু তুমি

শুধু তুমি

নিষ্পাপ শিশুর মুখে
যখন চেয়ে দেখি ,
কোন এক পবিত্রতা
আমায় আকুল করে ।

তোমার মুখের দিকে 
যখন চেয়ে দেখি ,
শরতের আকাশের কথা 
মনে পড়ে ।

শরতের শিশিরভেজা ঘাসে
পা ডুবিয়ে যখন
দূরের ঐ নদীটার দিকে তাকাই ,
কোন এক দূরদেশের স্মৃতি
মনে ব্যথা জাগায় ।

কলকল ছলছল টলমল জল
আকাশের রঙ চুরি করে
হাসছে খলখল ,
খুব ইচ্ছে করে ---

একবার স্পর্শ করি তোমায় ।
সদ্য ফোটা গোলাপ কুঁড়ির
মিষ্টি আঘ্রাণে
তোমার গায়ের গন্ধ
বয়ে আনে শান্তির নিঃস্তব্ধতা ।

Sunday, February 24, 2019

সংশয়

সংশয়

ছুটে বেড়াচ্ছি নাতো
কোনো মরীচিকার পিছনে
আকন্ঠ মরুতৃষ্ণা বুকে নিয়ে
তৃষ্ণার্ত প্রাণ আমার---
ভালবাসার বৃষ্টি চাই
একটুকু ছায়া
একটু সস্নেহ স্পর্শ
মরুদ্যান হবে কি আমার জীবনে
না কি -----
মরীচিকার পিছনে ছুটে বেড়াব
আজন্মকাল ধরে
তৃষ্ণার্ত পথিক আমি ...

Friday, February 22, 2019

এ কেমন বসন্ত

বসন্ত নাকি এসে গেছে কচি পাতায় ফুলে !
চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে রূপসাগরের কূলে !
মউল ফুলের নেশায় মেতেছে ভ্রমর-ভ্রমরী !
বাতাসে নাকি বইছে প্রেম মানবরূপ ধরে !

আমার বসন্তে আসে না এসব কুঞ্জফুলের শোভা
আমার বসন্তে অরূপরতন পায়না মনোলোভা
আমার বসন্ত গুমরে কাঁদে বরফ- কঠিন রাত
আমার বসন্ত পায়না কোথাও প্রেম জাগানিয়া রাত
আমার বসন্তে পলাশ ফোটেনা , ফোটেনা অশোক-শিমূল
আমার বসন্তে শুধুই বসন্ত গুটি বাঁধে শতমূল
আমার বসন্তে বাতাস রুক্ষ , আকাশে দাবদাহ
আমার বসন্তে সংসার নয় শান্তিসুখের গৃহ
আমার বসন্তে কোকিল ডাকেনা , কোথায় পালিয়ে যায়
আমার বসন্ত পথশিশুদের ক্ষুধার্ত কান্নায়
আমার বসন্ত অনাহারে আর নীরব অসহায়তায়
আমার বসন্ত ক্যাম্পে ক্যাম্পে গোলাগুলিতে কেটে যায়
আমার বসন্ত একমুঠো চালে , একটা পোড়া রুটি
পেটের আগুন লাফিয়ে চলে , বর্ষা গুটি গুটি
আমার বসন্তে রাত পেড়োলেই একরাশ চিন্তা
আমার বসন্তে নুন আনতে ফুরোয় যে পান্তা

আমার বসন্ত টাট্টু হোকনা , হোক দুর্বার গতি
আমিও হব বড়ো বাড়িটার রঙীন প্রজাপতি ।

Monday, February 18, 2019

বসন্তে তাজমহল

জানালায় হেলানো মাথা
শুনছি কোকিলের ব্যাকুল স্বর
রসের উৎস্রোতে আকাঙ্ক্ষার তীব্র ফোটাটি
কখন গড়িয়ে পড়ে , কাঁদে মন
শুষ্কতার উচাটনে রুক্ষতর হৃদয়
নবপল্লব উন্মুখ , দৃঢ় প্রত্যয়
কূজনে শুনছি বসে কবেকার ডাক
বেদনার ইতিবৃত্তে তাজ চিরন্তন

Thursday, February 14, 2019

এখানে এখন

এখানে বৃষ্টি পড়ে সকাল থেকে ভোর
এখানে চোখের কোনেও জল চিকচিক করে
এখানে বাতাস তবু স্তব্ধ হয়ে রয়
অজানা সেই শ্রাবণ গগন ঘিরে ।

এখানে শূণ্য হাতে পড়ে থাকে বেলা
সবুজ ঘাস মুহূর্তে বিবর্ণ হয়
এখানে বৃষ্টি পড়ে তবু শ্রাবণ মাস
জলের ধারায় অ্যাসিড ছড়িয়ে যায় ।

এখানে শরীরগুলি শুধুই ছোপময়
সরু সরু লিকলিকে হাত পা
এখানে ক্লান্ত পায়ে সূর্য নামে পাটে
শুষ্ক কঠিন জীর্ণ আদুল গা ।

এখানে একমুঠো ভাত একটু রুটি
স্বপ্ন অনেক টাকা
এখানে কাপড় কোথায় পাবে
লজ্জাটুকু কোনোরকমে ঢাকা ।

Tuesday, February 12, 2019

মিথ্যে ভূতের কারসাজি

মিথ্যে ভূতের কারসাজি

সেদিন ছিল আমার ঠাকুরমার আদ্যশ্রাদ্ধ । দু'দিন ধরেই অনবরত বৃষ্টি হয়ে চলেছে ।

সেদিনটা রোদ না উঠলেও আকাশ মেঘলা করে ছিল ।আদ্যশ্রাদ্ধ সমাপন শেষে বাবা পুকুরপারের নিয়মকানুন শেষ করে স্নান সেরে যেইমাত্র ঘরে ঢুকেছেন , অমনি শুরু হল আকাশ ভেঙে বৃষ্টি । তার সাথে ঝোড়ো হাওয়া । একে এই প্রাকৃতিক পরিবেশ , তার ওপর বাড়িতে সদ্য একটা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে । স্বভাবতই পরিবেশটা একটু ছমছমে হয়ে আছে । আত্মীয়-স্বজন যারা এসেছিল , তাদের মধ্যে দু'চারজন থেকে বাকি সকলেই বাড়ি ফিরে গেছেন । তাই বাড়িটাও মোটামুটি ফাঁকা । কয়েকদিনের ধকলে বাবা-মায়ের শরীরটা এমনিতেই অবসন্ন । আর আজ আমরাও ক্লান্ত । @ তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে সবাই শুয়ে পড়তে চাইল । আমার এক পিসি ছিল অন্তঃসত্বা । তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ কাছকাছি হওয়ায় সবাই একটু চিন্তিতও ছিল । সেরাতে পিসিকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে আমরা মামাতো-পিসতুতো ভাইবোনেরা শুয়েছিলাম একটাই ঘরে । সত্যি কথা বলতে কি এই পরিবেশে একা ঘরে থাকার সাহস কারো ছিল না ।


আলো নিভানের পর কিছুক্ষণ আমরা টুকটাক গল্পগাছা করে যে যার মত শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম । ঘুম ভাঙল আমার হাতের কব্জিতে প্রচন্ড চাপ অনুভব করে । আমার পিসতুতো দিদি খুব জোরে আমার হাতটা চেপে ধরে আছে । আমি ওর দিকে তাকালাম । দেখি ও চোখগুলোও চেপে বন্ধ করে আছে । দিদিকে ঠেলা দিতেই সে সভয়ে ' রাম রাম ' জপতে শুরু করেছে । @ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।উঠে লাইট জ্বালালাম । দিদি তাকিয়ে একবার চারদিক দেখল । বিশেষ করে জানালার দিকটা । দেখলাম জানালা বন্ধ আছে । ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল , ' কিসের যেন শব্দ হচ্ছিল । ' ' কই আমি তো কিছু শুনিনি । তুই ভুল শুনেছিস । ' বলে ওকে সান্ত্বনা দিয়ে লাইট অফ করে আমি শুয়ে পড়লাম ।

ঘন্টাখানেক বোধহয় হয়নি আবার ঘুমটা ভেঙে গেল । বাবার গলার স্বর শুনতে পেলাম । সঙ্গে মায়েরও । তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলাম । পিসির প্রসববেদনা উঠেছে । @ এত রাতে । ভাগ্যিস হাসপাতালটা কাছেই আছে । বাবা আমাদের বাড়িতে থাকা দু'জন কর্মচারিকে ডেকে পিসি আর মাকে নিয়ে গেল হাসপাতালে । কখন ফিরবে ঠিক নেই । তাই আমি দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম । ঘড়িতে তখন 2-30 ।

বিছানায় শুয়ে ঘুম আর আসেনা । একে পিসির জন্য চিন্তা হচ্ছে , তার ওপর বাড়িতে বড়ো মানুষ বলতে আমার পিসতুতো দিদি , যে কিনা কিছুক্ষণ আগে রামনাম জপতে শুরু করেছিল । এপাশ - ওপাশ করছি । ঘুম আসছে না । দিদিরও দেখি একই অবস্থা । হঠাৎ জানালার দিক থেকে খুট করে একটা শব্দ হল । কিছু বুঝতে পারলাম না । দিদির দিকে তাকালাম । দিদিও দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । কিছু বোঝার আগেই শব্দটা বাড়তে লাগল । মনে হল কেউ জানালার ওপাশ থেকে কিছু দিয়ে জানালাটা খোলার চেষ্টা করছে । শব্দটা ক্রমে বেড়ে চলেছে । @ উঠে যে লাইটটা জ্বালাব সে সাহস হচ্ছে না । দুই বোনে দুজন দুজনকে জাপটে ধরে যেন সাহস সঞ্চয় করছি । বারবার মনে হচ্ছে মৃত ঠাকুমার কথা । দিদির মত আমিও ' রাম রাম ' করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি ।

ঘুম ভাঙল প্রবল ধাক্কায় । তাকিয়ে দেখি দিদি হাসি হাসি মুখ করে হাতদুটো পিছনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । জিজ্ঞাসা করলাম , ' কি হয়েছে ' । হাসতে হাসতে বলল , ' পিসির ছেলে হয়েছে । ' তারপর মিটিমিটি হেসে বলল , ' আরো একটা খবর আছে । ' আমি জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই পিছনের হাতদুটো সামনে এনে বলল , ' এই যে নারকেল । ' অবাক হয়ে দেখলাম নাড়কেলের মালাগুলো । কেউ এমনভাবে এগুলো খেয়েছে যে সেগুলো আর আমাদের খাবার পরিস্থিতি নেই । মনে পড়ল গতকাল রাতের কথা । দিদি বলল , ' মামী কাল রাতে জানালার কাছে আধঢাকা করে এগুলো রেখেছিল । আর রাতভোর ইঁদুরবাবাজি দলবেঁধে মোচ্ছব করেছে । আর আমরা সারারাত রামনাম জপ করেছি । ' @  

কিছুটা ওর বলার ধরনে আর কিছুটা আমাদের নির্বুদ্ধিতায় দুজনেই হেসে ফেললাম ।

Friday, February 8, 2019

সায়াহ্নে

সায়াহ্নে

মুঠো মুঠো ধান ছড়িয়ে দু'হাতে
এখন , সন্ধ্যাকালে
বসে ভাবি ----
জীবনের শেষ সম্বল
দিয়েছি বিলিয়ে , এখন
আমি কি নিয়ে থাকি ।

যা দিয়েছি তা
ফেরৎ না পাই
এখন , অকাল বসন্ত সময়
প্রতিদান কিছু চাইনি যে তাই
কাটে না অবসর ।

শুধু যা দিয়েছি
আছে জানি জমে
কোথাও , কোনো রত্নভান্ডারে ---
সুদাসলে একদিন
পাবই ফেরৎ
এই আশা থাক মনে ।

Wednesday, February 6, 2019

উদ্বোধন

উদ্বোধন

বৃষ্টির প্রথম ফোটা

যেদিন প্রথম পড়েছিল কপালে আমার
ভেবেছিলাম জন্মান্তর হল ---


নবজন্ম লাভ !

এ কেমন জন্ম যদি মরণই প্রিয়

গোলাপের কাঁটায় বেঁধা শালিকের প্রাণ
নেই চেঁচামেচি হাকডাক , শান্ত নির্জন



অখন্ড শান্তি আমার হৃদয় খুঁড়ে খায়


এ বেদনা তারাখসার ম্লান আলোয়
সেই বোঝে , যাকে মূল ছিঁড়তে হয়


চশমার নীচে দুটো বাষ্পময় চোখ

শ্বাসরূদ্ধ হয়ে আসে নিকোটিনের ধোয়ায়
আরো পোড়ে ক্ষয় হয় খাঁচার ফুসফুস
তবু সচল অনর্গল সংবহন হয় ।

Sunday, February 3, 2019

নীলিমা

নীলিমা

মনে পড়ে ম্লান মুখ তার
দু'চোখে বৃষ্টি অঝোর ধারায়
কান পেতে শুনি তার ভাষা
বুক নিঙারিয়া সুর

অজানা ভয়ে গুমরে ওঠে মন
কোন দেশে আছে প্রিয়জন
মনচোরা সেই অপার রহস্য ঘিরে

আবার জেগে উঠি সৃষ্টির কিনারায়
সুর হাসে , সুর ভাসে , সুর কেঁদে যায়

আকাশের নীল এসে কখন
মিশে যায় আমার কবিতায় ।

Saturday, February 2, 2019

দিশাহারা

দিশাহারা

দূরে বহুদূরে ---
ধোঁয়াশায় মিশে আছে
একফালি আকাশ
আমার মনের মতো


সৃষ্টির প্রয়াস
ঝাপসা আজ


টুকরো টুকরো মেঘ
উড়ে চলে নিরুদ্দেশে

অজানা পথ

খরনদী ভেসে যায়
সময় অকুলান


আমার আকাশজুড়ে
সৃষ্টির হাহাকার শোনা যায় ।

Sunday, January 27, 2019

মুখোশ মানুষ

মুখোশ মানুষ

তোমাকে চিনেছি , বন্ধু ---
মুখোশে মুখোশ - মানুষ
হাড়-মজ্জায় রয়েছ যদিও
রক্তে কনিকা-বিষ
চোরাস্রোত বয়ে যায়
কানায় কানায়
কুশাগ্র শরীরে বিঁধে
যেন তোমার তীক্ষ্ম দংশণ
অথচ কতনা স্থবির
পরিপার্শ্ব ---
অহেতুক আশা---
কুয়াশায় মোড়া
জীর্ণ চারধার


আমারও তো বয়স হল
আর কেন ভড়ংতোমার ?

Wednesday, January 23, 2019

মোহ

মোহ

কালের পথে যতবার
ধরতে চাই খড়কুটো
ভেসে যায় , শুধু ভেসে যায়
পলকা সব ---
অর্জুনের লক্ষ্যভেদ আমার হৃদয়
শুধু খেলা , শুধু ছলনা
বসে আছি সানুদেশে , বিশাল পর্বত
আরোহন অসম্ভব , কুয়াশা মোহময়
ব্যস্ততার রুক্ষতাপ অন্তর জুড়ে
তবু আশা , ভালোবাসা
কাছে যেতে হয়

Saturday, January 19, 2019

বিষ্ফোরণের বারুদ জাগে

বিষ্ফোরণের বারুদ জাগে

এক বুক বারুদ এনেছি আমি
একটু একটু করে সাইত্রিশ বছর ধরে

জমে থাকা যত জিঘাংসা এবং প্রতিহিংসার
পাহার জমেছে আজ
তাই ---
সময় এসেছে বিষ্ফোরণের

জ্বালিয়ে দিতে চাই সেইসব

ধর্ষকাম মানুষের বিকৃত কাম
সেইসব অমানুষদের বিকৃত লালসা
বারুদ বিষ্ফোরণে

আমার অধরে বারুদ , অপাঙ্গে বারুদ

বারুদ শিরায় শিরায়
একরাশ ঘৃণায় পুঞ্জিভূত এ বারুদ
ছড়িয়ে দিতে চাই
হাজার সত্বায়
নারী থেকে নারীতে ---
মাতৃগর্ভে থাকা কন্যাভ্রূণে
তোমাদের মোহোময়ী নারী বিলাসিতায় ।

Sunday, January 13, 2019

Jiboner hisab

জীবনের হিসাব

শূন্য থেকে শুরু করে
শূন্যে মিলায় সব
মাঝখানের এই সংখ্যাগুলো
বিচিত্র অনুভব
সংখ্যার পিঠে সংখ্যা বসে
অভিজ্ঞতা বাড়ে
এর মাঝে জীবন-মরণ
সুতোয় বাঁধা পড়ে
সরু সুতো মোটা সুতো
শক্ত এবং নরম
জীবন কিন্তু বয়ে চলে
ঠান্ডা হোক বা গরম
জীবন ভাঙ্গে জীবন গড়ে
ভানুমতীর খেলা
সইতে সইতে পেড়িয়ে যাবে
নিরানব্বই বেলা ।

Wednesday, January 9, 2019

ঘরে ফেরার গান

ঘরে ফেরার গান

এবার ঘরে ফেরার পালা
সমতলে ---
অনেক হল পাহাড় পাহাড় খেলা
ম্লান রোদ , হিমেল হিওয়া , আঁকাবাঁকা রেশমি পথ
পাহাড়ের বুকচেরা নদী 
পাইন গাছের বন পিছনে ফেলে
চলো ঘরে ফেরা যাক
আরেক স্নহের নদী 
অপেক্ষমান

কতবার মনে হয়
এর চেয়ে বেশি সুখ
আর কিছু নয়
এই বেশ উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে চলা
বরফের রাজ্য হোক তুষার শীতল
ম্লান রোদ ছায়া ছায়া কুয়াশা কেবল

তবুও মন প্রজাপতি হয় ।

Tuesday, January 8, 2019

অন্বেষণ

অন্বেষণ

রাত্রির ঘন অন্ধকার
একফালি চাঁদ আকাশে
করুণ এক ছবি
কি যেন বলতে চায়
নীরবে তবু
গোঙায় শুধু ...
দূরের ঐ ঝরনার
করুণ মিনতী---
'ওগো , চাঁদ---
তুমি একটিবার হাসো ---'
ম্লান মুখে তার
জাগেনা হাসির কল্লোল
মনে জাগে
সুদূরের বিষাদ স্মৃতি
প্রকৃতির বিষ্মিত খেয়াল
মানব মনের অনুভূতি
চলে শুকতারার অন্বেষণ ।

Monday, January 7, 2019

Jagoron

জাগরণ

যুগ যুগান্তর ধরে রয়েছ দাঁড়িয়ে
মূর্তিমান তুমি
নির্বাক , নিঃষ্কম্প
জন্মভূমি থেকে বিচ্যূত , তবু
করনি প্রতিবাদ কোনো
কুঠারের আঘাতে হয়েছ ক্ষতবিক্ষত
তবু বিদ্রোহের আগুন
জ্বলতে দাওনি কখনো
বৈশাখের তীব্র দহনে
ক্লান্ত শ্রান্ত পথিককে
দিয়েছ শান্তির আয়েশ ,
ফুলের সৌরভ , পাখির কূজন
বসন্তের কোকিলের কনসার্ট শুনেছ কত
তবু মৌণ ঋষি , নির্বিকারে
কেমনে দিলে কাটিয়ে এত যুগ !
ভরা ভাদরে , নুপূর পরা পায়ে
বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ
পারেনি এতটুকু আকুল করতে
রাতের নক্ষত্রপুঞ্জ , বর্ষভোগ্য যাকিছু আছে
সকলের সাথে হেসেছ , গেয়েছ ,
দুলিয়েছ মাথা
গোপনে রেখেছ তবু নিজের গোপন ব্যথা
বিদ্যুতের মত তুমিও তো পার
একবার তোমার বুকের বিষ
উদ্গিরন করতে
দাবানলে দহন করতে বিশ্ব
একবার মাথা তুলে 
দেখাও তোমার রূপ
ঐসব অহঙ্কারি মানুষগুলোর গুমর
ভেঙ্গে গুড়িয়ে দাও
তোমার শক্তি দিয়ে
বুঝিয়ে দাও
কালে কালে যুগে যুগে
তোমরা কখনো হেয় নও
তোমাদের অসীম ধ্যৈর্য
শিক্ষনীয় সবার ।

Saturday, January 5, 2019

Bortoman

বর্তমান

সূর্য অনেকক্ষণ অস্ত গেছে

দ্বিতীয়ার চাঁদ তখনো অদৃশ্য
মাঠের ঐ বুড়ো নাড়কেলগাছটা
এই ঘনায়মান অন্ধকারে
কী কথা বলছিল ফিসফিসিয়ে ---
এক গভীর ষড়যন্ত্র
আকাশের সাথে তার ।
মাঝে মাঝে 
মাথা দুলিয়ে 
ও কিসের সম্মতি ?
সে এক অদ্ভুদ উপস্থিতি ।
আকাশের গাম্ভীর্যে
উথাল-পাথাল হৃদয়
ওদের ক্রুদ্ধ নিঃশ্বাস
হাড়ের ভেতর পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয় ।

চারিদিকে শবভুক নরপিশাচের

উল্লসিত চিৎকার
ফুলের সৌরভ নয়
মানুষের তাজা রক্তের
আঁশটে গন্ধ
বাতাসের ডানায় ভর করে
বিষিয়ে তুলেছে পরিবেশ

মনে হয় ---

এই চন্দ্রসূর্যের গ্রহণ
কাটবে না কোনোদিন
রাহুর দল লালায়িত
আজন্মকালের ক্ষিদে তাদের উদরে ।

Friday, January 4, 2019

ঘরটা

ঘরটা

ঘরটায় ঢুকলে মনে হয়
একঝাঁক বনটিয়া কলরব করে ওঠে
আকাশের ভিতর থেকে
উন্মুখর প্রেম
আহ্বান করে --- আয় --- আয়
তোষকের নরম স্পর্শ
উত্তপ্ত দেহে প্রতপ্ত প্রেমের পরশমনি ছোঁয়ায়
বালিশটা সজোরে আঁকড়ে ধরি
বুকের মাঝখানটায়
শরীরের হাহাকার
ঘনীভূত হয়
ভোররাতে ধোঁয়াশার মত ।

Thursday, January 3, 2019

Kheyal

খেয়াল

মন চায় একজোড়া সোনালী ডানা
খোলা মাঠ নীল আকাশ আর ঘাসফুল
পাহাড়ের বুকচেড়া শীতল নদী
অবিরাম বয়ে চলা কুল কুল কুল ।


হলুদ পাখির দেশ জানিনা কোথায়
নীল তিমি সমুদ্রের কতটা গভীরে
উটের গ্রীবার মত আঁকাবাঁকা মন
মরুর আকাশ রাঙে সোনালী আবিরে ।


ক্যাকটাসে ফোটে ফুল আঙিনার কোন
ঝিরিঝিরি ধারাজল মোহোময় আলো
তাই নিয়ে খুশি আমার অপার অসীম
বয়ে চলে এ জীবন বড় জমকালো !

Wednesday, January 2, 2019

Prithibi

পৃথিবী

পৃথিবী তুমি শুধু
সুকান্তের পৃথিবী নও
তবু সুকান্তের অবাক পৃথিবী
আজো হতবাক করে
তোমার কুশাগ্র এত সূক্ষ্ম
ভূ-পৃষ্ঠে নিয়ত আহত পদচিহ্ন
ফুলের দলে দলে কীটের দংশণ
অহরহ জ্বলছে চিতা এখানে ওখানে

আর কতদিন
অশুদ্ধ গ্যাসচেম্বারে আটকে থাকতে হবে
কোষে কোষে অসহ্য যন্ত্রনা

প্রশান্তি আসুক ফিরে ।

Monday, December 31, 2018

রাত তখন সারে ন'টা

রাত তখন সারে ন'টা

একি অপ্রত্যাশিত আগমন !
মন আমার নিবিষ্ট যখন কবিতাপাঠে 
কেন এলে বিদায় চাইতে 
অকস্মাৎ ---
হৃদয় উঠল কেঁপে
তোমার কন্ঠস্বরে
ধুক --- ধুক --- ধুক ----
বিদায় ---
বোলো না
আমার হৃদয়মাঝে
আছো জানি ---
চিরকাল --- চিরদিন ---
কোথায় যাবে বিদায় নিয়ে
তবু ----
পারিনি কিছু বলতে
অবাক বিষ্ময়ে
চেয়েছিলাম শুধু
আশা তো করিনি কখনো
তবু এসেছিলে ---
ক্ষনিক স্মৃতির আবেশের মতো ।

Sunday, December 30, 2018

গৌরচন্দ্রিকা - অন্তিম পর্ব

গৌরচন্দ্রিকা - অন্তিম পর্ব

অনিমেষ কোনো জবাব দিল না । মুখ নীচু করে একটা আমপাতা নখ দিয়ে চিরতে লাগল । 
          - এভাবে যদি বিচার কর তবে বলত অনিমেষদা আমাদের কার চরিত্র ভালো ?
     অনিমেষ জিজ্ঞাসু চোখে শাশ্বতীর দিকে তাকিয়ে আছে । কি বলতে চায় মেয়েটা । শাশ্বতী বলে চলেছে ।
          - এই যে আমি এই দুপুর বেলা তোমার সাথে এই বাগানে বসে নির্জনে কথা বলছি । এখন তোমার মত কেউ যদি দেখে তবে তো আমার চরিত্র নিয়েও টানাটানি পড়ে যাবে । 
          - আহা তা কেন ।
অনিমেষের কথা হয়ত শাশ্বতীর কানেই পৌছয়নি ।
          - আমিও তো আমাদের অর্গানাইজেশনের কাজে কত ছেলেদের সাথে রাত নেই , দিন নেই ঘুরে বেড়াই । নানা কথা নিয়ে ওদের সাথে হাসি - তামাসা করি । আমার ব্যপারেও তোমরা এমনি ভাবো নিশ্চয় ।

শাশ্বতীর মনে পড়ে তার পিসতুতো দাদার কথা । গতকাল রাতে সিনেমাটা শেষ হলে সিনেমার বিষয়বস্তু নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছিল তখন এরকম একটা কথা উঠেছিল নায়িকার চরিত্র নিয়ে । দাদা বলেছিল , দেখ সতী , আমাদের চরিত্রটা আসলে আপেক্ষিক । একপেষে দৃষ্টি নিয়ে আমরা চরিত্রের বিচার করি । একটা মানুষের সবটুকু আমরা দেখতে পাই না বা দেখি না । বলতে গেলে দেখার চেষ্টাও করি না । আর এজন্যই যত রাজ্যের কুৎসা , বদনামের সৃষ্টি করি । তুই নিজেকে দিয়ে বিচার কর দেখবি সেটা পরিস্কার হয়ে গেছে । সবকিছুর পিছনেই কারণ থাকে । মনে কর তোকে আদালতের সামনে দাঁড় করানো হয়েছে । তোর চরিত্রের বিচার হচ্ছে । তুই তোর সপক্ষে  নিশ্চয় কারণ দেখাবি । এবং এটাই স্বাভাবিক । আর কার্য-কারন সম্পর্কের ভিত্তিতে তর্ক শেষপর্যন্ত যুক্তিতে উত্তীর্ণ হয় । আসলে আমাদের মধ্যে কিছু লোক আছে অন্যের খুঁত বের করাই এদের কাজ । নিজেদের খুঁত ধরে দাও , দেখবে নিজেকে নির্দোষ প্রতিপন্ন করার কত কারণ দেখাবে । অথচ অন্যের ব্যপার ' বুঝব না ' বলে চুপ করে থাকে ।
শাশ্বতীর ধ্যানভঙ্গ হল অনিমেষের কথার আওয়াজে --- আসলে শুধু তাই নয় । আশেপাশের বাড়ির লোকেরাও তাই বলল ।
        - পাশের বাড়ি ! অনিমেষদা , তুমি এতদিন ধরে যাকে দেখছ , ভালোবেসেছ তার সম্পর্কে শেষপর্যন্ত তোমার এই ধারনা । এত ঠুনকো তোমার প্রেম । আচ্ছা , কেউ যদি এসে বলে ভাই চিল তোমার কানটা নিয়ে গেল । তুমি কি চিলের পেছনে ছুটবে নাকি নিজের কানে হাত দিয়ে দেখবে কানটা স্বস্থানে আছে কিনা ।
            - কিন্তু সতী , অনেকের কথা যেখানে আছে , মানে অনেকে যেখানে বলছে ---
           - দেখ দাদা , সবার কথা আমি জানি না । সবাই তার কোন আচরণ দেখে তাকে চরিত্রহীনা বলছে আমি জানি না । তাদের কথা বাদ দাও । আমি তোমায় জিজ্ঞাসা করছি তুমি নিজে কতখানি সৎ বুকে হাত দিয়ে বলত । যদি একটি ছেলের সাথে কথা বললেই একটা মেয়ে খারাপ হয়ে যায় তবে তুমি বলতো তুমি কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে কথা বলনি ? রাস্তাঘাটে কোনো মেয়েকে টোয়েন্টিং করনি ?

অনিমেষ কখন উঠে বসেছে । অনিমেষ অনিমেষ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শাশ্বতীর দিকে । শাশ্বতী আজ ক্ষেপে উঠেছে । প্রতিবাদের প্রখর ঝড় তার চোখেমুখে। একোন শাশ্বতীকে দেখছে অনিমেষ । ছোট্ট মিষ্টি শান্ত যে মেয়েটির হাতে সে ছ-মাস আগে ভাইফোঁটা পড়ে গেছে  এ কি সে ! শাশ্বতীর মুখের সেই লাজুক ভাব যা সবসময় অনিমেষকে ছোট্ট বোন বলে মনে করিয়ে দিত এতো তা নয় ।
শাশ্বতীর কথা শুনে আজ অনিমেষের ক্লাশ সেভেনের ইতিহাসের দিদিমনির কথা মনে হচ্ছিল । তনিমা মিত্র ক্লাশে ভারতীয় সমাজের বৈশিষ্ট্য বোঝাতে গিয়ে এরকমভাবেই কথা বলতেন । এরকমভাবেই তিনি ভাবে তন্ময় হয়ে যেতেন । মুখে ফুটে উঠত করুণ বেদনা ।
শাশ্বতী কিন্তু নিজের কথাতেই মগ্ন - দেখ অনিমেষদা , তুমি যদি সত্যি ওকে ভালোবাস তবে ওর সাথে কথা বলো । ওকে বোঝার চেষ্টা করো । আশা করি তাহলে ওকে বুঝতে পারবে । তারপর যদি ওকে তেমন মনে হয় তুমি ব্যবস্থা নাও ।
আজ অনিমেষের আবার নতুন করে ভাবতে ইচ্ছে করছে । সত্যি , মেয়েটা আজ অনিমেষকে নতুন করে চিনতে সাহায্য করছে । 
          - কিরে দুজনে চুপচাপ করে বসে আছিস কেন । সরি , আমার একটু দেরি হয়ে গেল । 

প্রিয়তোষের কথায় প্রকৃতিস্থ হল দু'জনে । প্রিয়তোষ পকেট থেকে দুটো চকলেট বের করে ছুড়ে দিল মাদুরের ওপর  --- নে খা ।

কোকিলটা এখন আর ডাকছে না । হয়ত ওর সঙ্গীকে খুঁজে পেয়েছে । কিংবা এখানে ওর সঙ্গী নেই বিবেচনা করে অন্য কোথাও চলে গেছে । বাগানের সামনের পুকুরটার দিকে চোখ গেল অনিমেষের । সূর্যাস্তের লাল আভা ছড়িয়ে আছে জলে । একটু পড়েই সূর্য ডুবে যাবে । অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে । তারপর আগামীকালের প্রতীক্ষা । তারপর আবার চারদিক আলো করে সূর্য উঠবে । শুরু হবে একটি নতুন দিনের ।

Friday, December 28, 2018

গৌরচন্দ্রিকা -- দ্বিতীয় পর্ব

গৌরচন্দ্রিকা -- দ্বিতীয় পর্ব

গতকাল দাদা এসেছিল । সারাদিন বেশ মজায় কেটেছে শাশ্বতীর । একটুকুও পড়া করা হয়নি । কিন্তু আজ যে অনিমেষদা আসছে । আর অনিমেষদা মানেই উৎসব । সকাল সকাল বাবা আজ বাজারে গেছেন । ভালো দেখে বড় দেখে মাছের মাথা আনতে হবে । পাগলটা এতদিন পর আসছে সবাই যেন বেশ খুশি । আজ যেন কারো কথা বলারও সময় নেই । নিঃশ্বাশ বন্ধ করে সব কাজ করে চলেছে । কানগুলো শুধু গেটের দিকে । গেটে শব্দ হলেই সব উৎকর্ণ হয়ে ওঠে ।
অনিমেষ যখন এল তখন শাশ্বতী বাথরুমে । চিৎকার হৈচৈ শুনে শাশ্বতীর বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল । সাওয়ারটা বন্ধ করে ভালো করে কান পেতে রইল । সকলের সমবেত চিৎকারে সবার কথাই হারিয়ে যাচ্ছে । কারো কথাই পরিস্কার বুঝতে পারা যাচ্ছে না । এই জনসমুদ্রের কূল ছাপিয়ে হঠাৎ শাশ্বতীর বাবার কথা স্পষ্ট হয়ে উঠল । 
            - দাঁড়াও , দাঁড়াও । ছেলেটা মাত্র এল । ওকে একটু বসতে দাও আগে । শাশ্বতীর বুঝতে আর বাকি নেই ।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর অনিমেষ আর প্রিয়তোষ শাশ্বতীর ঘরে গেল । 
               - চল সতী ঘুরে আসি ।
               - এখন ।
               - চল না বাগানে গিয়ে বসব ।
               - বেশ চলো । দাঁড়াও মাদুরটা নিয়ে আসি ।

শাশ্বতী একছুটে সিড়ির কোন থেকে মাদুরটা টেনে নিয়ে এল ।
একটা বড় আম গাছের নিচে মাদুরের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছিল ওরা তিনজন । প্রিয়তোষ আর অনিমেষ নিজেদের ব্যবসার কথা আলোচনা করছিল । হঠাৎ কি একটা কথা মনে পড়ায় ' ওহো আসছি দাঁড়া ' বলে বাড়ির ভেতর ছুটে গেল অনিমেষ ।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ থাকার পর অনিমেষ প্রথম কথা বলল 
             - কিরে তোর এবার কোন ইয়ার হল যেন ?
             - থার্ড ইয়ার ।
             - চাকদা কলেজ না ?
শাশ্বতী ছোট্ট করে একটু ঘাড় ঝাকালো ।
             - তা শুধু পড়াশোনাই করছিস নাকি প্রেমটেমও করছিস ?
শাশ্বতী যে এর কি জবাব দেবে ! 
অনিমেষদাটা যেন কি । একটা ঠান্ডা স্রোত হাওয়ার ঝলক এসে লাগল শাশ্বতীর চোখে মুখে ।একটু চুপ করে থেকে শাশ্বতী বলতে শুরু করল 
                -অনিমেষদা তুমি এবার একটা বিয়ে কর । ঘরে বউ এলে তোমার এই বাউন্ডুলে স্বভাব ঘুচে যাবে।  মাঝে মাঝে আর উধাও হয়ে যেতে পারবে না । 
               - বিয়ে করব , বেশ মেয়ে দেখ । 
               - মেয়ে দেখব কিগো । রমাই তো আছে । ওকে তো আমার বেশ লাগে । 
               - নারে , তা হবার নয় ।
               - হবার নয় , কেন ? ওর বাড়ি থেকে রাজি নয় ?
               - না , তা নয় ।
              - তবে ?
বাগানের কোথায় যেন একটা উদাসী কোকিল অনেকক্ষণ থেকে ডেকে যাচ্ছে । হয়ত ওর সঙ্গীকে খুঁজে পাচ্ছে না । থেকে থেকে হাওয়ায় ভর করে কোকিলের ডাক ওদেরও উদাস করে তুলছিল ।

অনিমেষদার চোখে মুখে একটা ব্যথার ছবি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল শাশ্বতী । মুখ নীচু করে অনিমেষ বলল - ওর চরিত্র ভালো না ।
             - চরিত্র ভালো না !
        
কথাটা গমগম করে শাশ্বতীর কানের মধ্যে বেজে উঠল । যেন সেতারের সাতটা তার একসাথে ছিঁড়ে গেল । শাশ্বতী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অনিমেষের মুখের দিকে ।
               - মানে ?
               - সেদিন রাত প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ আমি যখন ফিরছি তখন দেখি ওদের বাড়ির সামনের স্কুলের কোনাটায় দাঁড়িয়ে ও একটা ছেলের সাথে গল্প করছে । 
              

Thursday, December 27, 2018

গৌরচন্দ্রিকা -- প্রথম পর্ব

গৌরচন্দ্রিকা -- প্রথম পর্ব

ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি । ভোরের দিকে বেশ ঠান্ডা লাগে । আর ঘুমটাও এই সময়ই একটু জাঁকিয়ে আসে । কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও ঘুমোতে পারেনা শাশ্বতী । আজ তার পিসতুতো দাদা আসবে । এই দাদা শাশ্বতীর খুব প্রিয় । এই দাদা মানেই মজার মজার কথা , অনেক অনেক জায়গায় ঘোরা আর দারুন দারুন খাওয়া । তাই দাদার কথা শুনেই তার চোখ জ্বালা কমে যায় । ঘুম পালিয়ে যায় নির্ঘুম দেশে ।
আর কয়েকদিন পরেই দোল । পৃথিবীর বুকে ইতিমধ্যেই কিন্তু রঙের খেলা শুরু হয়ে গেছে । পলাশ শিমূলের বুকে যৌবনের আগুন জ্বলে উঠেছে । আম গাছের ডালে ডালে ফুটেছে মঞ্জরী ।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল - ক্রিং ক্রিং ক্রিং ....। ফোনের আওয়াজে শাশ্বতী আজ বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠল । কেন ? রোজ তো কত ফোন আসে । কেউ তার বাবাকে চায় । কেউ পাশের বাড়ির সন্টুদা , রাজুকাকা বা তিতলিকে ডেকে দিতে অনুরোধ করে । আবার কখনো শাশ্বতীর বন্ধুরাও দরকারে ফোন করে । কিন্তু কখনো তো এমন হয়না । তবে কী শাশ্বতী আজ মনে মনে কারো প্রতীক্ষা করছে ?
বেশ কয়েকবার বাজার পর ফোনটা কেটে গেল । শাশ্বতী অপেক্ষা করে থাকে । নিশ্চয় আবায় বাজবে এখনি । ঠিক তাই । শাশ্বতী রিসিভার তুলে নিল - হ্যালো 
        - হ্যালো । আমি অনিমেষ বলছি । 
        - অনিমেষদা !

অনিমেষ শাশ্বতীর কাকাতো দাদা প্রিয়তোষের বন্ধু ।
এক জগদ্ধাত্রী পুজোয় প্রিয়দা ওকে নিয়ে এসেছিল । তখন ওরা বীরনগর না কোথায় থাকত । প্রথম আলাপেই অনিমেষের সাথে শাশ্বতীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল । অনিমেষের কোনো বোন নেই । একবার ভাইফোটার দিন হঠাৎ এসে হাজির । শাশ্বতী তখন তার ভায়েদের ফোটা দেবার ব্যবস্থা করছে । অনিমেষ এসে বসে পড়ল ভাইদের সাথে ।
          - জানি তো আমার জন্য কোনো ব্যবস্থা করিসনি । তাই আমি নিজেই নিয়ে এলাম । এই নে পান মিষ্টি । মা সব দিয়ে দিয়েছে ।
সেদিন সকলে এই সৃষ্টিছাড়া ছেলেটার কান্ড দেখে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল । আনন্দের দৌরাত্মে প্রিয়তোষ মানিব্যাগে যত টাকা ছিল সবটাই তুলে দিয়েছিল শাশ্বতীর ডালায় ।
তারপর সেই যে অনিমেষদা গেল প্রায় ছ-মাস পর আবার এই যোগোযোগ ।
      - কিরে কেমন আছিস ? কথা বলছিস না যে । খুব রাগ করেছিস বল । আচ্ছা আচ্ছা আর রাগ করতে হবে না । আমি কালই যাব বুঝলি ।  কাল সব কথা হবে । মাসীমাকে বলিস মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট রাঁধতে । মুড়িঘন্ট না পেলে কিন্তু তোকে পিটাবো । আচ্ছা রাখছি রে । ভালো থাকিস ।
শাশ্বতী কোনো কথা বলার আগেই ফোনটা খটাস করে রেখে দিল অনিমেষ । খুব রাগ হল শাশ্বতীর ।
অনেকদিন পর যদি ফোন করলে তো আমাকে কোনো কথা বলতে না দিয়েই নিজের কথাটুকু  বলেই রেখে দিলে । অনিমেষদাটা এইরকমই ।
অভিমানের মধ্যেও শাশ্বতীর আনন্দ হচ্ছিল । কাল অনিমেষদা আসবে । ভারী মজা হবে ।