Thursday, December 27, 2018

গৌরচন্দ্রিকা -- প্রথম পর্ব

গৌরচন্দ্রিকা -- প্রথম পর্ব

ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি । ভোরের দিকে বেশ ঠান্ডা লাগে । আর ঘুমটাও এই সময়ই একটু জাঁকিয়ে আসে । কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও ঘুমোতে পারেনা শাশ্বতী । আজ তার পিসতুতো দাদা আসবে । এই দাদা শাশ্বতীর খুব প্রিয় । এই দাদা মানেই মজার মজার কথা , অনেক অনেক জায়গায় ঘোরা আর দারুন দারুন খাওয়া । তাই দাদার কথা শুনেই তার চোখ জ্বালা কমে যায় । ঘুম পালিয়ে যায় নির্ঘুম দেশে ।
আর কয়েকদিন পরেই দোল । পৃথিবীর বুকে ইতিমধ্যেই কিন্তু রঙের খেলা শুরু হয়ে গেছে । পলাশ শিমূলের বুকে যৌবনের আগুন জ্বলে উঠেছে । আম গাছের ডালে ডালে ফুটেছে মঞ্জরী ।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল - ক্রিং ক্রিং ক্রিং ....। ফোনের আওয়াজে শাশ্বতী আজ বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠল । কেন ? রোজ তো কত ফোন আসে । কেউ তার বাবাকে চায় । কেউ পাশের বাড়ির সন্টুদা , রাজুকাকা বা তিতলিকে ডেকে দিতে অনুরোধ করে । আবার কখনো শাশ্বতীর বন্ধুরাও দরকারে ফোন করে । কিন্তু কখনো তো এমন হয়না । তবে কী শাশ্বতী আজ মনে মনে কারো প্রতীক্ষা করছে ?
বেশ কয়েকবার বাজার পর ফোনটা কেটে গেল । শাশ্বতী অপেক্ষা করে থাকে । নিশ্চয় আবায় বাজবে এখনি । ঠিক তাই । শাশ্বতী রিসিভার তুলে নিল - হ্যালো 
        - হ্যালো । আমি অনিমেষ বলছি । 
        - অনিমেষদা !

অনিমেষ শাশ্বতীর কাকাতো দাদা প্রিয়তোষের বন্ধু ।
এক জগদ্ধাত্রী পুজোয় প্রিয়দা ওকে নিয়ে এসেছিল । তখন ওরা বীরনগর না কোথায় থাকত । প্রথম আলাপেই অনিমেষের সাথে শাশ্বতীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল । অনিমেষের কোনো বোন নেই । একবার ভাইফোটার দিন হঠাৎ এসে হাজির । শাশ্বতী তখন তার ভায়েদের ফোটা দেবার ব্যবস্থা করছে । অনিমেষ এসে বসে পড়ল ভাইদের সাথে ।
          - জানি তো আমার জন্য কোনো ব্যবস্থা করিসনি । তাই আমি নিজেই নিয়ে এলাম । এই নে পান মিষ্টি । মা সব দিয়ে দিয়েছে ।
সেদিন সকলে এই সৃষ্টিছাড়া ছেলেটার কান্ড দেখে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল । আনন্দের দৌরাত্মে প্রিয়তোষ মানিব্যাগে যত টাকা ছিল সবটাই তুলে দিয়েছিল শাশ্বতীর ডালায় ।
তারপর সেই যে অনিমেষদা গেল প্রায় ছ-মাস পর আবার এই যোগোযোগ ।
      - কিরে কেমন আছিস ? কথা বলছিস না যে । খুব রাগ করেছিস বল । আচ্ছা আচ্ছা আর রাগ করতে হবে না । আমি কালই যাব বুঝলি ।  কাল সব কথা হবে । মাসীমাকে বলিস মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট রাঁধতে । মুড়িঘন্ট না পেলে কিন্তু তোকে পিটাবো । আচ্ছা রাখছি রে । ভালো থাকিস ।
শাশ্বতী কোনো কথা বলার আগেই ফোনটা খটাস করে রেখে দিল অনিমেষ । খুব রাগ হল শাশ্বতীর ।
অনেকদিন পর যদি ফোন করলে তো আমাকে কোনো কথা বলতে না দিয়েই নিজের কথাটুকু  বলেই রেখে দিলে । অনিমেষদাটা এইরকমই ।
অভিমানের মধ্যেও শাশ্বতীর আনন্দ হচ্ছিল । কাল অনিমেষদা আসবে । ভারী মজা হবে ।

2 comments:

charoibeti said...

কাল কি হবে?

Sipra Basak said...

কাল দেখতে পাবেন 😊😊