Showing posts with label কবিতা. Show all posts
Showing posts with label কবিতা. Show all posts

Thursday, May 9, 2024

কবি প্রণামে -- মনিরা মাসিদ

কবি প্রণামে ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
মনিরা মাসিদ 
২৫.১.১৪৩১
 আমার ছোটো বেলার স্মৃতিতে জড়িয়ে থাকা এক কাহিনী যে কাহিনীতে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে এক করুন প্রেম কাহিনী ও কবির কবিতা " এক গাঁয়ে " -------
   আমার ছোট বেলায় আমাদের বাড়িতে বাংলাদেশ
থেকে মাঝেমাঝে আমার দাদুর এক বন্ধু আসত
ওনার নাম ছিল সুকুমার ঘোষাল। ছোট বড় সবাই
ওনাকে ভবঘুরে দাদু বলে ডাকত  কারণ উঁনি যখন 
আসতেন তখনই উঁনি দূরে দূরে গ্রাম _শহর _ মেলা
ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন তারপর আবার নিজের দেশে চলে যেতেন। বছরে দুই তিনবার আসত আমাদের বাড়িতে থাকত। একবার আমারা ভাই বোনেরা
পড়ছি আর ভবঘুরে দাদু বসে আছে, আমি একটা কবিতা শুর করে করে পড়ছি, কবিতাটা পড়া শেষ হলে
দাদু বলে আর একবার পড়, বারবার পড় তারপর
দেখি আমি পড়েই যাচ্ছি আর দাদু কেঁদেই যাচ্ছে।
তারপর থেকে দাদু যখনি আসত তার ব্যাগ থেকে একটা বই বার করে সেই কবিতাটি দেখিয়ে বলত  পড় আমি পড়ি আর দাদু কাঁদে ।  ।আমি যতবার দাদু কে জিজ্ঞেস করি এই কবিতা পড়লে তুমি কাঁদো কেন ?
 দাদু বলে দিদিভাই তুমি এখন বুঝবে না। যখন 
তুমি বড় হবে তখন তুমি ঠিক বুঝতে পারবে, 
শুধু হয়তো সেদিন আর আমি এই পৃথিবীতে থাকবো না।আর সত্যিই যখন বুঝতে পারলাম দাদু কেন কাঁদত, কেন দাদু সারাজীবন বিয়ে করেননি তখন সত্যিই পৃথিবীতে দাদু আর নেই।
দাদু কাঁদত তার ছোট্ট বেলার প্রেম রঞ্জনার জন্য,
যে রঞ্জনা দেশভাগের সময় তার বাবার সঙ্গে এই দেশে
চলে এসেছিল।  সেই রঞ্জনাকে খুঁজতেই দাদু বারবার এই দেশে ছুটে ছুটে আসত আর গ্রামে, শহরে , মেলায়  দাদু তার রঞ্জনা কে খুজে বেড়াতো ।বারো - তের বছর বয়সে মনের মধ্যে এক অদ্ভুত কষ্ট হত আর সেই কষ্টটা
বেশ অনেক দিন ছিল আমার মনের মধ্যে। তারপর
আস্তে আস্তে কবে যেন ভুলেই গিয়েছিলাম।
আর এখন এই বয়সে এসে যখন স্মার্টফোন হাতে
পেলাম তখন দেখলাম, পৃথিবীটা আজ বড়ই ছোটো, এখন আর কেউ হারায় না। কোনো না কোনো ভাবে তার বর্তমান অবস্থান ঠিকই জানা যায় ।আজ খুবই আফসোস হয় দাদু যদি সেই যুগে না জন্মে এই যুগে জন্মাত তবে দাদু কে আর এত কষ্ট পেতে হতো না। আরকিছু না হোক জানতে তো পারত তার রঞ্জনা কেমন আছে।_____
    আজ সেই কবিতাটা সব্বাই কে পড়াতে ইচ্ছে
করছে, আমার দাদুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ।
_________________________________________
                  এক  গাঁয়ে
               রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুর
                     ________
   আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি ,
                সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ।
      তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখি
               তাহার গানে আমার নাচে বুক।
তাহার দুটি পালন - করা ভেড়া
               চড়ে বেড়ায় মোদের বটমূলে,
   যদি ভাঙে আমার ক্ষেতের বেড়া
                কোলের ' পরে নিই তাহারে তুলে।

    আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা
আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,
আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,
আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।।

দুইটি পাড়ায় বড়োই কাছাকাছি,
            মাঝে শুধু একটি মাঠের ফাঁক।
তাদের বনের অনেক মধুমাছি
           মোদের বনে বাঁধে মধুর চাক।
তাদের ঘাটে পূজার জবামালা
           ভেসে আসে মোদের বাঁধা ঘাটে,
তাদের পাড়ার কুসুম - ফুলের ডালা
           বেচতে আসে মোদের পাড়ার হাটে।
         
         আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,
         আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,
          আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,
          আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।।

  আমাদের এই গ্রামের গলির '- পরে
                আমের বোলে ভরে আমের বন।
  তাদের ক্ষেতে যখন তিসি ধরে
             মোদের ক্ষেতে তখন ফোটে শণ।
 তাদের ছাদে যখন ওঠে তারা
               আমার ছাদে দখিন হাওয়া ছোটে।
  তাদের বনে ঝরে শ্রাবণ - ধারা,
                       আমার বনে কদম ফুটে ওঠে।

      আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,
     আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,
       আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,
         আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।।

Tuesday, May 7, 2024

রহস্যময় সাঁঝবাতি -- সারস

 রহস‍্যময় সাঁঝবাতি
  সারস
  4th May 2024
সাঁঝবাতিটা জ্বালিয়ে দাও
গোধূলির ধূলা চোখের আড়ে,
সময় হয়েছে নীড়ে ফেরার।
টুনটুনি মালতীলতায় গীত ধরেছে
আজি প্রখর তপ্ত দিনের শেষে,
বিশ্বাস লয়ে মালতীলতা বেশে
আশ্রয় লবো রাতের বিশ্রামে।
কাঁঠালীচাঁপা সুবাস ছড়ায় মনের সুখে,
বকুল আমায় সাথ দেবে মালা গেঁথে;
টুনটুনি বলে এরাত বয়ে যাবে বাসর জেগে
জোনাকি সাথে রোষনায় আলো ভরে দেবে।
ঝিঝিপোকা সানায়ে পো-ধরবে জেনে
মজবুত মহল্লায় প্রবেশ অবাধ সাড়ম্বরে,
পেঁচা কুবো নিশাচর আমন্ত্রিত অতিথি।
আহারে পঞ্চব‍্যঞ্জন যোগে পিঁপীলীকা লার্ভা
অর্ধজাগ্রত পিঁপড়ে জানেনা কে করবে সাবাড়,
পেঁচা কুবোও জানে না মৃত‍্যুর পর
এ পিঁপড়ে ছানা কুঁড়েকুঁড়ে খাবে
কি অদ্ভুত জীবন চক্র তাই না !
সাঁঝবাতিটা জ্বলিয়ে দাও,
আঁধার ঘনায় দিনের শেষে
মহল্লা আলোকিত করো জোনাকির জোরে,
নহবতি ধুমমাচাও বাসর জাগাতে।
বাবুই শিল্পের ছোঁয়ায় বাসর সাজে
এরাত দিনের চেয়েও ভয়ঙ্কর।
এখানে ধর্মের কোন স্থান নেই
আছে জীবন চক্রের শুভ শৈলী,
বাঁচার তাগিদে হাঁকুপাঁকুর হাতছানি
ধর্ম বলতে আহার আশ্রয়ের বিলাপ,
সঞ্চয় নেই চিন্তা ও রোগমুক্ত সমাজ
সাবলম্বনে আছে মায়ামমতা ক্ষণিকের।
তপ্ত দুপুর পুড়ে খাগ হচ্ছে ধরা
মেঘেরা ভুলে গেছে পথের দিশা,
লু-বয়ছে ক্ষিপ্ত বায়ু প্রবাহ শিখা
আঁয়ঢায় করছে দিনের আলো
খাঁপি খাওয়া জীবকুল অসহায়।
সাঁঝবাতিটা জ্বালিয়ে দাও,
তিমিরাচ্ছন্ন নব ভুবন
আলোর বড় অভাব সমাজে;
দিনে শরীর মন পোড়ে রাতের
অন্ধকার ফ‍্যাকাশে ম্লান সব মানে
শীতল হাওয়া বয়লেও দুর্বোধ‍্য এরাত
তাই সাঁঝবাতিটা জ্বালিয়ে দাও।

হে কাব্যজগতের রবি -- শেখ সাখাওয়াত আলী

হে  কাব্য জগতের রবি
শেখ শাখাওয়াত আলী
 05/05/2024.
হে বিশ্ব কবি ,কাব্য জগতের রবি,বাংলা সাহিত্য গগনে
তোমার কবিতা,গল্প,গানের সুর,আছে বাঙালীর মননে।

"জন গন মন",তোমার লেখা ভারতের জাতীয় সংঁগীত,
একই গানে ভারতকে বেঁধেছ, দৃঢ় করেছ জাতীয় ভিত।

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায়  ভালোবাসি,গান
বাংলা দেশের জাতীয় সংগীত সেতো তোমারই অবদান,

অজস্র গান কবিতা গল্পে মোহিত করেছ বাঙালীর মন,
সুরের দোলায় হৃদয় দোলে, দৃঢ় করেছ প্রেমের বাঁধন।

তোমার কবিতা,তোমার গান,দুঃখ সুখে দোলায় প্রাণ।
যুগে যুগে তুমি বিরাজ করবে, তোমার কর্ম হবেনা ম্লান।

তুমিতো চির স্মরণীয় হয়েছ গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ লিখে
তুমি নোবেল পুরস্কার এনেছ বিশ্ব সাহিত্য সভা থেকে।

তুমি ছিলে স্বদেশ প্রেমী,দেশের প্রতি ছিল হৃদয় ভরা অনুরাগ,
জালিওয়ালানবাগ কান্ডের প্রতিবাদে করছিলে নাইট উপাধি ত্যাগ।
শান্তি নিকেতনের  বিশ্ব ভারতী তোমার পবিত্র কর্ম ক্ষেত্র,
জোড়ার সাঁকোর ঠাকুর বাড়ী বাঙালী জাতীর তীর্থ ক্ষেত্র।.

স্বাভাবিকতা হারিয়ে নিখিলেশ -- দিলীপ ঘোষ

স্বাভাবিকতা হারিয়ে নিখিলেশ
দিলীপ ঘোষ
০৬/০৫/২৪
নিখিলেশ আগে ছিলো বেহিসেবী
নদীর মত ছিলো তার স্রোত
বাধা পেলে বাঁধ ভেঙে খুঁজে নিতো পথ
এখন সে সূর্যের মত
সকালে উদয় হয়, হারিয়ে যায় সন্ধ্যায়
নিয়ম মেনে চলা এখন তার অভিমত।

বাতাসের মত আর নেই নিখিলেশ
চলে না এখন মনের টানে
থমকে দাঁড়ায়, ভাবে প্রয়োজন অপ্রয়োজনে।
চলার  আগে অঙ্ক কষে নেয় এখন
পা ফেলে হিসাব করে
কথা বলে অভিধান মেনে।

নিখিলেশ পূর্বের মত স্বাভাবিক নেই
এখন যান্ত্রিক, যেন কলের পুতুল
পীরের ধার শোধার মত যোগাযোগ করে
খুলে গেছে সম্পর্কের মজবুত হাফসুল।

Sunday, May 5, 2024

প্রেম যমুনা -- সুমন কান্তি বড়ুয়া

প্রেম যমুনা
সুমন কান্তি বড়ুয়া
১৫/০৯/২০২৩
প্রেম যমুনা এখন মৃত প্রায়______
অপরূপ শরৎ যেন হারিয়েছে মহিমা,
আপন মনে দিচ্ছি পাড়ি বিষাদ মহাসিন্ধু
আমি তোমাকে ভুল করে ভেবেছি,প্রেম প্রতিমা। 
কুড়ি বসন্ত পেরিয়ে এসেছি_____
নীল বিস্মৃতি আঁকড়ে ধরেছি বুকে,
আজও ডুকরে উঠি মাঝরাতে আনমনে
তোমার নতুন ঠিকানায় বসতি দারুণ মহাসুখে।
সুখের ও নাকি অসুখ আসে_____
হঠাৎ ঋতু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে,
আমার চির অসুখী প্রেম আহ্লাদী মনটা
পাওয়ার তীব্র বাসনায় প্রতিনিয়ত ডানা মেলে।
হ্যালো তোমাকেই বলছি_____
আমাদের প্রেমের ইতিকথা থাকুক,
বাতিল হওয়া ডাইরির ধূসর বিষন্ন পাতায়
মন থেকে চাই তোমার আকাশ মেঘে না-ঢাকুক।
জোছনার ফুল ফুটুক তোমার আঙিনায়,
আমার অপেক্ষা থাকুক চির অবিনাশী।
মৃত যমুনাকে কে আর বলবে?
প্রিয় তোমায় ভালোবাসি!

আয় বৃষ্টি স্বস্তি নিয়ে -- আমান

আয় বৃষ্টি স্বস্তি নিয়ে
আমান 
০৪-০৫-২০২৪
আর করবো না বৃক্ষ শূন্য 
বসুন্ধরার বনভূমি, 
কথা দিলম বৃষ্টি তোমায়
রাগ করোনা আর তুমি।

খরতাপে পুড়ছে মাটি
ঝড়ছে বৃক্ষের ফল কলি,
আয় বৃষ্টি স্বস্তি নিয়ে
আয়রে চলে মান ভুলি।

বৃষ্টি তুমি এসেই দেখ
আমরা সারা দেশ জুড়ে, 
কোটি কোটি বৃক্ষ রোপণ
করছি সবাই দেশ ঘুরে।

রোপণ করেই সাঙ্গ দেবে
এই প্রজন্ম তেমন নয়,
বৃক্ষ রোপণ অভিযানকে
পরিচর্যায় করবো জয়।

আর অভিযোগ নেই -- বন্দনা বড়ুয়া

আর অভিযোগ নেই 
বন্দনা বড়ুয়া 
04/05/2024
সুদীর্ঘ প্রতিক্ষার পর 
অবশেষে এলে
মেঘ রঙা বসন পরিধান করে 
মহা সমারোহে... বিরাট পরিসরে 
মাদলের পিঠে তাল বাজিয়ে 
নিসর্গের অসহনীয় নিরবতা ভেঙ্গে,
তীব্র প্রদাহের ব্যাথা সরিয়ে,
প্রশস্ত এক শান্ত সকালে শান্তির পরশ বুলিয়ে 
ভরিয়ে দিলে আমার তৃষিত বুক 
ভরিয়ে দিলে প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ সবুজাভ প্রান্তর।

কত দরদে ভরা খামে শব্দের ডালি সাজিয়ে,
আবেগঘন অজস্র শব্দের মিশ্রণে,
 কাব্যিক নিমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছি বসন্তের শেষে,
বিরহী এক তপ্ত বৈশাখের তপ্ত দুপুরে।

অবশেষে এলে 
আম্রকাননে রাশি রাশি আনন্দ হয়ে, 
অপেক্ষমান সবুজ ফসলে মৌসুমী হিল্লোল হয়ে, 
ধুয়ে দিলে পথিকের ঘর্মাক্ত কলেবর, 
আকণ্ঠ ভরে পান করে নিল তৃষ্ণার্ত চাতক ।

আর অভিযোগ নেই 
ওই জ্বলন্ত নির্দয় সূর্যের বিরুদ্ধে 
আজ পরতে পরতে কবিতারা ফুটে উঠেছে 
চাঁপা ও গন্ধরাজের ডালে ডালে আশ্চর্যরকম ভাবে।

আজ নির্ভয়ে পুঁতে দিলাম 
নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত বন্ধু তরু বীজ 
শীতল হোক মরুর দহন 
লাবণ্যে আর সুগভীর প্রেমে ভরে উঠুক ধরণীর বুক
তারপর প্রাণ ভরে নেব নির্মল শ্বাস। 

জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি -- এস আকরাম হোসেন

জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি 
এস আকরাম হোসেন 
০৫/০৫/২৪
তপ্ত লু হাওয়ায় অবিরাম দগ্ধ দেশ
জনমনে আজ চাতক পাখির বেশ
মমতায় মোড়ানো মাটি দগ্ধ আজ
মাথায় পড়েছে যেন আগুনের তাজ।

দিবানিশি আগ্নেয়গিরিতে বসবাস,
বাতাসে শুনি নাগিনীর ফোসফাস
রুদ্ররোষে গর্জনে বিধাতা বিমুখ;
অনলপ্রবাহে তাই শুন্য মনের সুখ।

ছায়াহীন মাঠঘাট পানিবিহীন নদী, 
ভালোবাসা হারামন খা খা নিষুন্দী।
এরই মাঝে বেঁচে আছি যাই যাই প্রাণ
দয়াময় দেয় যেন রহমতের ত্রাণ।

সারাদেশ মরুভূমি জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি 
জনজীবন খুঁজে ফিরে শান্তির সিঁড়ি, 
পাপের পাহাড় নিয়ে করি ফরিয়াদ 
এক পশলা বৃষ্টির লাগি এত আর্তনাদ।

Saturday, May 4, 2024

নির্বিকার কবিরা -- চিত্তরঞ্জন সাঁতরা


নির্বিকার কবিরা
চিত্তরঞ্জন সাঁতরা 
০১/০৫/২০২৪
বৈশাখী তাপদাহে কবিদের গরম 
লাগে না।
ভাবনার গরমে ফুটতে থাকে মন।
নোনা জলে ভিজে যায় শব্দকোষ
উত্তপ্ত হয় ভাবনা।
কবিরা গরমে হাহুতাশ করে না।
কল্পনার গরমে হাহুতাশ করে সৃষ্টিতে।
হারিয়ে যায় অতলে কোন্ ঠান্ডার
জগতে।
কবিরা বোঝে না ঘাম ঝরা সকাল।
বোঝে না সারাদিনের পোড়া রোদের 
 বারুদের গন্ধ।
কবিদের গরমের জ্বালা নেই অসহ্য নেই।
স্পর্শের অনুভূতিতে গরমের গুমট বোঝে
না।
কল্পনার গুমটে ভেসে চলে সৃষ্টির আনন্দে।
কবিদের গরমের মাথা ব্যাথা নেই।
মাথা ব্যাথা ভাবনায় তালে ছন্দে উপকরণে।
তাই কবিরা নির্বিকার ও অসাড় মানুষ।

হাসরের ময়দান -- মোঃ নুরুল ইসলাম

      হাসরের ময়দান"
     মো: নূরুল ইসলাম
      ২৯/০৪/২০২৪
    আসিবে ধরায় লয়ে অভিশাপ,
            ধ্বংসের যজ্ঞ রোজ কিয়ামত।
    দোযখের আগুনে পুড়ে হবে ছাই,
            মনুষ্য জনম ইতি নিশ্চিত মত।

    দলে দলে পৃথিবীর লোকজন,
            জড়ো হবে হাসরের ময়দান।
    পৃথিবীর আদি আর অন্ত মিলে,
            নারী পুরুষ সকলে হও সাবধান।

    পৃথিবীতে এসেছে কত মহাজন,
            জ্ঞানী গুণী নবী পীর পয়গম্বর।
    জ্ঞান নির্দেশ করেছেন বিতরণ,
            কর্ণপাত করেনি যারা নাই নম্বর।

    পরীক্ষার পৃথিবীতে কতো লোক,
            খায় দায় স্ফূর্তি করে বড় হয়।
    পাপ পূণ্য বাছ বিচার নাই তার,
            জীবন কাটিয়ে দেয় ভোগ লালসায়।

    হতে হবে দেহ মন সব পরিষ্কার,
            নবীজীর উম্মত ভালো সব যার।
    পরীক্ষায় নিয়ে যায় ভালো নম্বর,
            বেহেস্তি ফিরদৌস তার হয় গুলজার।

                বহরমপুর মুর্শিদাবাদ

মননে স্মরণে বিভূতিভূষণ -- তপন চট্টোপাধ্যায়

মননে  স্মরণে বিভূতিভূষণ
তপন চট্টোপাধ্যায়
24-09-23                           
  আজ কতোদিন হোল তুমি নেই, অথচ মনশ্চক্ষে তোমাকে এখনো যেন দেখতে পাই-- এই তো তুমি, সেই নীলকলার ফাটা হাফশার্ট,তালিমারা ক্যাম্বিসের জুতো,,একটা আড়ময়লা মিলের ধুতি পরে তুমি ইছামতীর পাড়ে বসে রয়েছো।                                     শেযদিনের আলোটুকু  বাবলা বনের মাথার উপর যখন  নামে, বনকলমীর ফুলের উপর যখন ধীরে ধীরে সন্ধ্যা আদর ছড়ায়, তখন দেখতে পাই গোধূলির লাল আলো মেখে তুমি একমনে, একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছো বন অপরাজিতার নীল ফুলে ছাওয়া নদীর বুকে!                       সেই সোনাড়াঙার মাঠ,পদ্মফুলময় মধুখালির বিল,নীলকুঠির সেই তুঁতেগাছের বন,কিংবা নীল নির্জনে গাঙচিলের ডাক তুমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছো,শুনেই চলেছো...                                     মাস,বছর,মন্বন্তর,মহাযুগ পার হয়ে তুমি বসে রয়েছো যেন নিঃসঙ্গ, নির্লিপ্ত বিভূতিভূষণ আর তোমার চারিপাশে গজিয়ে উঠেছে মহাযুগের নাটা-কাঁটার ঝোপ, বনকলমীর গুচ্ছ গুচ্ছ ফিকে গোলাপী ফুল!                               তোমার জন্ম হয়েছিলো বোধ হয়' 'আরণ্যকের ''জন্যই !জানো,এখনো তোমার সেই ভাগলপুরের পূর্ণিয়ার জঙ্গল তোমাকে খুঁজে বেড়ায়,এখনো গভীর রাত্রে ফুলকিয়ার জঙ্গলে তোমার সেই প্রিয় ঘোড়া দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে  সেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় চিঁহি চিঁহি রবে তোমাকে খুঁজে বেড়ায় !অথচ তুমি কেন আজ এতো নির্লিপ্ত, উদাসীন? ওই দ্যাখ দূরে ঐ কাশবন, শরতের নীলাকাশে সাদা মেঘেদের আনাগোনা,কাশবনের ঠিক ওপারে রেললাইন.. ,অপু,দুর্গা হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে রেলগাড়ি দেখবে বলে... ওই দূরে দেখা যাচ্ছে ঘন ঝোপে, গাছ-গাছালিতে ডুবে থাকা নিশ্চিন্দিপুর--অপু, দুর্গাদের গ্রাম--,আজও যেন সর্বজয়া বসে আছেন তেমনিভাবেই ভাঙা ঘরের দাওয়ায়, তোমার মুখে 'পথের পাঁচালির' আখ্যান শোনার অপেক্ষায়...,  শুধু তাই নয় --,ওই দ্যাখো 'বিপিনের সংসার ' ছায়া ছায়া হয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে তোমার দিকে, তোমাকে খুঁজছে অপু,কাজল,বিপিন ,মতি,পাটোয়ারি লাল,জওহারি লাল,শঙ্কর .... তুমি কি এদের একেবারেই ভুলে গেলে? একবারও এদের কথা ভাবলে না???  আমরা সবাই খুঁজছি তোমাকে  । আর একটিবার বিভূতিভূষণ হয়ে ফিরে এসো আমাদের মাঝে !

জীবনের আকাঙ্ক্ষিত স্বাদ -- শরীফ নবাব হোসেন

 

জীবনের    আকাঙ্ক্ষিত    স্বাদ 
শরীফ    নবাব    হোসেন 
০১/০৫/২০২৪ 
জীবনটা হবে কাব্যিক ছন্দময় 
মনোরম গতিময়
অশেষ স্বপ্নময়
নিরবচ্ছিন্ন মায়া-মমতাময়
ইতিবাচক কর্মময় 
মিলেমিশে একাকারে প্রশান্তিময়  ! 

জীবনটা হবে প্রাণের উচ্ছ্বাসে  প্রাণবন্ত 
চলাফেরায় সবুজে দুর্দান্ত 
কাজকর্মে সৃষ্টিতে সুকান্ত 
দিয়ে যাবে অবিশ্রান্ত 
মহৎ অবদানে অনন্ত
হেসে খেলে উদ্দীপনায় অনন্য  । । 

জীবন নৌকা সবার জন্য 
ত্যাগে তিতিক্ষায় হবে ধন্য
পরস্পর বন্ধনে বন্ধুত্ব
বিলীন হবে কষ্ট 
আশার ময়ূখ জ্বলবে 
মনের আবেগের কথা বলবে  ! ! 

জীবনটা  - সামনের পানে এগোবে 
শুভ  প্রকৃষ্ট আকাঙ্ক্ষা জাগাবে 
সুচারু উত্তম কাজে ব্যস্ততা
চালিয়ে যাবে লক্ষ চেষ্টা 
মেটাবে হৃদয় বাসনার তেষ্টা 
বসন্তের নবীন  রঙে রাঙাবে জীবনটা  । 

জীবনটা হয় যাতে মধুময়
জীয়নকাঠির সুললিত যাদুময় 
সুধাকরের রমণীয়তায় স্নিগ্ধময়
ভোরের রাঙা রবির সৌরভময় 
পাখপাখালির কলতানে মুখরিত সুধাময়
পরতে পরতে জীবনটা ভরে উঠবে  -
                                                 নিবিড়  সুকর্মময়   ! !  

শরীফ   নবাব   হোসেন  ।

Thursday, May 2, 2024

মে দিবসের ইতিকথা -- শেখ শাখাওয়াত আলী

মে দিবসের ইতিকথা
শেখ শাখাওয়াত আলী
01/05/2024
এলো আবার সেই রক্তে রাঙা মে দিবস,
শ্রমজীবি মানুষের অধিকার রক্ষার দিন।
দীর্ঘদিনের কঠোর আন্দোলন সফল হল,
শ্রমিক আট ঘন্টা কাজ করবে প্রতিদিন।

1886 সালের পয়লা মে  আমেরিকার শিকাগো শহরে,
ধর্মঘট শুরু হল দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবি নিয়ে।
 পয়লা মে ছিল শনিবার,নীরব ছিল আমেরিকা সরকার,
তৃতীয় দিনে সরকার ধর্মঘট ভাঙতে চাইল পুলিশ দিয়ে।

শ্রমিক শ্রেণী ভাঙল না ধর্মঘট,তীব্র হল আন্দোলন,
মালিক পক্ষের সমর্থনে পুলিশ শুরু করল নির্যাতন।
পুলিশের গুলিতে  নিহত হল চার জন  নিরীহ শ্রমিক,
ধৈয্য হারালো শ্রমিকের দল,শুরু করল পাথর বর্ষণ।

শ্রমিকের পাথরের আঘাতে অনেক পুলিশ আহত  হল,
অতিরিক্ত পুলিশ এসে শ্রমিক ধরপাকড় শুর করে দিল।
চতুর্থ দিন শ্রমিক আন্দোলন তীব্র আকার ধারন করল,
ভিড়ের মধ্যে মালিকের পোষা গুন্ডা বোমা বর্ষণ করল।
 
বোমার আঘাতে পুলিশ সহ অনেক মানুষ নিহত হল,
পুলিশ এসে শ্রমিক নেতাদের জেলে বন্দী করে দিল।
বন্দী শ্রমিক নেতাদের বিচারের নামে প্রহসন শুরু হল,
অবশেষে চার শ্রমিক নেতাকে ফাঁসিতে ঝালানো হল।

অন্যান্য নেতারা জোট বদ্ধ ভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেল,
আমেরিকা সরকার বাধ্য হয়ে শ্রমিকের দাবি মেনে নিল ।
1887 সালের পয়লা মে প্রথম শ্রমিক দিবস পালিত হল।
1890 থেকে পয়লা মে  আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হল।

আজকে আবার ফিরে এসেছে সেই শ্রমিক শোষণের দিন,
মালিক পক্ষ এখন 10- 12 ঘন্টা কাজ করাচ্ছে প্রতিদিন।
বর্তমান সরকার মালিকের দোসর শ্রমিকের দোসর নয়,
আবার জোট বদ্ধ আন্দোলন ছাড়া শ্রমিক বাঁচানো দায়

আমরা সামাজিক জীব -- পরেশ চন্দ্র সরকার


আমরা সামাজিক জীব 
পরেশ চন্দ্র সরকার
০১_০৫_২০২৪_ইং

আমরা দেখেও কিছু দেখবো না দু'নয়নে, শুধু পাশ কাটিয়ে যাবো,
পুুকুর ভরাট হ'য়ে যাচ্ছে চোখের সামনে আমার আপনার ধরাছোঁয়ায়...
শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে থাকা সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত বিশাল বড়ো গাছ, মেসিনে একলহমায় কেটে সাফ ক'রে দিচ্ছে...
কংক্রিটের রাজত্ব গড়ে উঠেছে আবারও গড়ে উঠবে ব'লে...
আমরা দেখেও কিছু দেখবো না দু'নয়নে, শুধু পাশ কাটিয়ে যাবো,
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগাম ছাড়া, সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকাগুলো জলের মতো ব'য়ে চলেছে, জিনিস কিনতে পাচ্ছে না মুষ্টিরও সমতুল্য...
আমরা দেখেও কিছু দেখবো না দু'নয়নে, শুধু পাশ কাটিয়ে যাবো,
ছোটোয়, বড়োয় সম্মান খুইয়েছে সেতো আনেকটা কাল আগেই...
পরিধানের পোশাক-আশাকও আছে কি আর আগের মতোই...
বেহিসেবি কথাবার্তার ছিরি প্রবাহিত আঁকে নিত্যনতুনে অহরহ...
আমরা শুনে কিংবা দেখেও কিছু দেখবো না দু'নয়নে আর কানে, শুধু পাশ কাটিয়ে যাবো,
অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে চলতি পথের ফুটপাতে নির্জীব হ'য়ে পড়ে র'য়েছে...
আমরা দেখেও কিছু দেখবো না দু'নয়নে, শুধু পাশ কাটিয়ে যাবো,
'যার কাল ছিল ডাল খালি আজ ফুলে যায় ভ'রে'... অথবা
চোখের সামনে দেখতে দেখতেই 'আঙুল ফুলে কলাগাছ'...
আমরা দেখেও কিছু দেখবো না দু'নয়নে, শুধু পাশ কাটিয়ে যাবো,
চোখের সামনে পথ-দুর্ঘটনায় দেখছি চেয়ে রক্তাক্ত তখনও প্রাণে বেঁচে, ছটফট ক'রছে...
অথবা
ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত হেনে একজন, আরেকজন নিরস্ত্রকে খুন ক'রছে...
আমরা দেখেও কিছু দেখবো না দু'নয়নে, শুধু পাশ কাটিয়ে যাবো,
আমরা দেখেও কিছু দেখবো না দু'নয়নে, শুধু পাশ কাটিয়ে যাবো,
অথবা
মোবাইল ফোনে ভিডিও ক'রে ফেসবুকে পোস্ট ক'রে দেবো...
ব্যাস্ হ'য়ে গেলো! আমরা সামাজিক জীব, আমাদের দায়িত্ব আর কর্তব্য মাত্র এতটুকুই...

আপন- আপন কাজে -- মৃণাল কান্তি রায়

আপন-আপন কাজে
মৃণাল কান্তি রায় 
০১/০৫/২০২৪
ভিখ মাঙেন যিনি যখন
                       তিনি হলেন ভিক্ষুক, 
দীক্ষা দেন যিনি যখন
                      তিনি হলেন দীক্ষুক। 
দীক্ষার ধরণ বিভিন্ন হয়
                     কাজ মানেই বিচার,
দীক্ষিত জন যা কিছু করেন
                    তখন তা-ই  আচার। 
ভালো কাজে প্রলুব্ধ হলে
                   ফলটি থাকে ভালো,
খারাপ কাজে প্রলুব্ধ হলে
                  কাজটির ফল কালো। 
কেবল শুধু ধর্মই নয়
                 সব কাজেতেই দীক্ষা,
গুরু-গুর্বি তাইতো থাকেন
                   নিতে হয়তো শিক্ষা। 
সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধনে 
                     সকল শ্রেণীর পেশা,
যারা দেখান পথের স্বরূপ
                    তারাই দেখান দিশা। 
অকাজকে কাজ না বলে
                  অকাজ শেখান যারা,
তারাই হলেন ভবের ঘুঘু
                 খারাপ বানান তারা। 
পীর আউলিয়া দরবেশ ফকির
                    গোড়ায় ছিলেন যাঁরা,
তাঁদের নামে সিরণি চলে
                    পথের দিশায় তাঁরা। 
গুরু নামের যত অবদূত
                   এসেছিলেন এ ধরায়,
বর্ষপঞ্জি খুললে পরে
                    নাম ছবিগুলো দেখায়।
হালের চিত্র বদলে গেছে
                   কুজরামি যার প্রধান,
ডুব ঘাউ আর বোটকা নীতির
                       যত আদান-প্রদান। 
আগেকার দীক্ষায় পড়েছে ভাটা 
                    নগদের দীক্ষায় চতুরতা,
পীর-গুরুদের শিষ্য-মুরিদরা
                    স্বার্থের লেজগির প্রবণতা।
উদার  মন উদার চিন্তন
                    পুরোটাই উবে গিয়েছে,
মনের মাঝে সবার যেন
                    মরিচা ঠিক ধরেছে।
যে আছে যেমনি স্বভাবের
                  পরকেও ভাবে সাঁই,
দেশজুড়ে যেন স্বত্ব নীতির
                 প্রতাপ চলছে তা-ই! 
স্বত্ব বিলোপ স্বত্ব আরোপ
                যা-ই নিয়ে কাড়াকাড়ি,
সে-ই সুযোগে সুফির পালে
                মুক্তি পেল তাড়াতাড়ি। 
লেজগি পেজগি দিয়েই যারা
              মেতেছে যেন বন্দনায়,
চালাক-চতুর বুদ্ধিমত্তা 
              দেখ হালের জামানায়! 
কেউ কাউরে মানতে চায় না
                   নিজকে ভাবে সেরা,
বলতে গেলেই পল্টি মারায়
                বানিয়ে ফেলায় ভেরা। 
গাধার পিঠে বোচকা রেখে
                  সব সেয়ানারা মুক্ত,
দীক্ষা শিক্ষার ভিক্ষা নীতি
                  সব কাজেতেই উক্ত। 
ডুব ঘাউ আর বোটকা নীতির
                ফোল পোটকারা ফোল,
যত পারিস কুৎসা গীবত
                বাঁধাস যারাই গোল। 
যেদিন পড়বি যেটায় ফাঁদে
                     চরকা থেমে যাবে,
কাফন কাপড় ছাড়া কিছু
                    সাথে না কিছু পাবে! 
যারা দেখবি চলে গিয়েছে
                  কে কি নিয়ে গেলো,
ভালো-মন্দের মেশাল বুনে
                 যারা স্বার্থ তুলে নিল। 
এমন শিক্ষা এমন দীক্ষা 
                মুরিদ-শিষ্যদের মাঝে,
আপন প্রাণ বাঁচারে সবাই
                  আপন আপন কাজে। 

কথার দাম -- উত্তম গোস্বামী

 কথার দাম 
উত্তম গোস্বামী 
৩০/০৪/২০২৪
ভোট প্রচারের ময়দানেতে 
লড়িয়ে নেতা জান 
কেউ বা লুটেন টাকা পয়সা 
কেউ বা লুটেন মান। 

কেউবা বলেন ভোট টা দিলে 
গড়বো পাকা বাড়ি 
কেউ বা বলেন মা বোনেদের 
দেবো নতুন শাড়ি।

কেউবা বলেন চাকরি দেবো 
রাস্তা দেব গড়ে 
পানীয় জলের সমস্যা সব 
দেবো তো দূর করে। 

সব নেতারাই মুখে বাচাল
দেয়না জীবন মান
জনগণকে দেওয়া কথার
 রাখে না কোনো দাম।

মানুষ জীবন বড় জীবন 
কথার দামই বড়
কথা দিলে কথা রেখে 
 ভোটের জন্য লড়।

আসুন সবাই শপথ করি 
গাইবো প্রানের গান
কথা দিলে সবাই মোরা, 
 রাখবো কথার দাম ।

Tuesday, April 30, 2024

রূপকন্যা -- বাঃ অশোক খাঁড়া

রূপকন্যা
ডাঃ অশোক খাঁড়া 
24.9.2023
রূপকন্যা, আমি অপেক্ষায় তোমার জন্য 
রাতের শেষ ট্রেনটার মতো। 
রূপকন্যা, আমার হাতে আজ বন্দুক নেই ।
আমি বিশ্বাস করি না,
বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস ।
আমার হাতে তোমার বড্ড প্রিয় রজনীগন্ধা। 
সেই কাকভোরে তুমি জাগতে সূর্যের হাত ধরে,
তুমি হতে অন্নপূর্ণা , ভাতের থালা হাতে বস্তির ঘরে ঘরে, ফুটপাতে- যেখানে আড্ডা জমতো পাখিদের সঙ্গে কুকুরের। 

সূর্য ডুবলে তুমি যে তখন সরস্বতী 
প্রদীপের আলোয়, বস্তির পাঠশালায়। 
রূপকন্যা, তুমি ছিলে বিপ্লবীদের অগ্নিকন্যা 
কৃষকের সাথি, শ্রমিকের দূত , মানুষের ঈশ্বর। 

আজ তুমি ফিরলে জীবনের শেষ ট্রেনে 
কফিনে ঢাকা নশ্বর দেহে , শহীদের পোষাকে ,
খসে পড়া নক্ষত্রের মতো। 
আমার আকাশের ক্যানভাসটা শুধুই সাদা ,
রামধনু নেই, রূপকন্যা নেই ।
আমি কন্যা বিহীন 
মানুষ মাতৃহারা।

তুষার বিদায় -- দেবাশীষ চ্যাটার্জি

ঊষার বিদায়  
দেবাশিষ  চ্যাটার্জী    
29/04/2024 
কাক ভোরেতে এক টি মেয়ে 
ঘুম ভাঙাতো রোজ 
সারা রাত্রি কেমন ছিলাম 
ফোনেই নিতে খোঁজ  |

ঠিক ঘড়িতে সময় যখন 
পাঁচ টা হয়ে এলো 
মুঠো ফোনের অস্থিরতা  
লাগতো কানে ভালো |

কোকিল কন্ঠী বলতো হ্যালো
প্রেম জড়ানো শুরে 
খুঁজে দেখো কাছেই আছি 
পথ টা হোক না দূরে |

পথিক পথে পাথর খোঁজেনা
খোঁজে চলার পথ 
জীবন যুদ্ধে লড়তেই হবে 
এই করেছে শপথ  |

একাই আসা একাই যাওয়া 
এই পৃথিবীর পাঠশালায়  
কারো প্রাপ্তি অনেক বেশি  
শূন্য হাতে কেউ ফিরে যায়  |

আপন স্বজন সবাই আছে 
তবু ও মনে ভয় 
জীবন যুদ্ধে লড়ার সময় 
একাই  লড়তে  হয় | 

ভালোবেসে সব ছেড়েছি 
পর করেছি আপন
আয়না মোরা প্রেম যমুনায়
গড়ি সুখের বৃন্দাবন |

সে সব কথা নেই মনে তার  
ফোন করতো রোজ  
আমি বেকার অর্থের অভাব 
তাই রাখেনা খোঁজ |  

শপথ কোথায় হারিয়ে গেছে 
লোভ লালসার ভিড়ে 
আর কোনোদিন চাইনা পেতে 
মিস কল  টা ভোরে  |

তুমি আমার কবিতা হবে -- কল্যাণী ব্যানার্জ্জী

তুমি আমার কবিতা হবে?
কল্যানী ব্যানার্জ্জী ।
২৯.৪.২৪.
তুমি আমার কবিতা হবে
কথা গুলো সব ভাবনা গুলো ;অগোছালো বার্তা গুলো
ছন্দ মিলিয়ে খাতার পাতায় সুন্দর করে সাজিয়ে দেবে।
মনে আছে তোমার? ভরা বৈশাখে দুপুর বেলা
পুকুর ঘাটে শান বাঁধানো ঘাটের উপর বটগাছটার ছায়ায় বসে গল্প করা।
পুরানো বাড়ির চিলেকোঠা ঘরের কথা
কত গল্প মনের কথা ;হয়তো অনেক আবোল তাবল।
সন্ধ্যা বেলায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে
ফুল বিছানো লাল গালিচায় শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা।
ভোরের বেলা ফুল তোলার বাহানা করে
একগুচ্ছ কামীনি ফুল তোমায় দেওয়া।
গালটা টিপে দিতে তুমি দুহাত দিয়ে
লজ্জা পেয়ে যেতাম আমি ছুটে পালিয়ে।
বর্ষা তে তো ভীষণ খুশি আমরা দুজন
স্কুল ছুটির পরে বৃষ্টিতে ভিজব কতক্ষণ।
আরও অনেক অনেক কথা স্মৃতি হয়ে পোড়ায় মোরে।
সে সব কথা তুমি আমার কবিতা হয়ে দাওনা লিখে
পড়ব আমি বারে বারে।
হারিয়ে যাওয়া তোমার কথা আমার কাছে আসবে
আবার ফিরে ফিরে।
এসো আবার তুমি আমার কবিতা হয়ে।

Monday, April 29, 2024

ছেড়ে যেতে হবে -- কাকলি

ছেড়ে যেতে হবে
কাকলী
০৮/১১/২৩
ছেড়ে আসতে হয়, যখন পরিস্থিতি অচেনা হয়ে যায়,
ছেড়ে আসতে হয় যখন সময় বলে দেয়,
ছেড়ে আসতে হয়, তবু কিছু পিছুটান থেকে যায়,
ঝরে যাওয়া গাছের পাতায় স্মৃতির ছবি,
রঙওঠা দেওয়ালে ভাবনার আঁকিবুঁকি,
ছিঁড়ে যাওয়া ক্যালেন্ডারের পাতা,
পুরানো ভালোবাসা, তবুও ছেড়ে দিতে হয় তাকে,
ধূলোমাখা স্মৃতির পাহাড় থেকে যদি কোনো অনুভূতি জেগে ওঠে,
ছেড়ে দিতে হয় তখন সময়কে সময়ের হাতে,
যত বেশি আগলে রাখবো ভাববে ততবেশি দূরে চলে যাবে,
একটা সময়ের পর আলো নিভিয়ে আঁধারের অপেক্ষাতে,
ছেড়ে এলেও কিছু মুহূর্ত পিছন ছাড়েনা কিছুতেই,
ছাড়ে না তো অনেক কিছুই, বুকের ভিতর জমানো ক্ষত,
গভীর রাতের নীরব গল্প যত,
বলা নাবলা কথার পাহাড়, নিঃশব্দে ঝরে যায় বার বার,
বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় চোখের কাজল অপেক্ষায় ঘেঁটে যায়,
তারপরেও ঘুমন্ত রাতে যদি চাঁদ আসে বিছানাতে, চুমা এঁকে যায় কপালেতে,
বাকি কথা লেখা আছে চাঁদের আঁচলেতে,
নির্জন বনের আঁধারেতে যদি চাঁদ এসে বসে পাশে,
যদি নদী কথা বলে ঢেউয়ের সাথে,
যদি আকাশের তারারা আলো জ্বালে,
যদি ছাতিম ফুলের গন্ধ মাখা স্বপ্ন রাত হয়,
তবুও ছেড়ে আসতে হবে তাকে, মুছে ফেলতে হবে জীবন থেকে,
সময়ের সাথে সময়ের কাটা ছেঁড়া, সময় নিজেই যে বড়ো একলা,
তোমার আঁচলে ধুপছায়া রোদ খোঁজে কমলা বিকেল,
বুকের ভেতর যতই উঠুক ঢেউ, তবু তাকে ছেড়ে যেতে হবেই।