Thursday, May 9, 2024

কবি প্রণামে -- মনিরা মাসিদ

কবি প্রণামে ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
মনিরা মাসিদ 
২৫.১.১৪৩১
 আমার ছোটো বেলার স্মৃতিতে জড়িয়ে থাকা এক কাহিনী যে কাহিনীতে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে এক করুন প্রেম কাহিনী ও কবির কবিতা " এক গাঁয়ে " -------
   আমার ছোট বেলায় আমাদের বাড়িতে বাংলাদেশ
থেকে মাঝেমাঝে আমার দাদুর এক বন্ধু আসত
ওনার নাম ছিল সুকুমার ঘোষাল। ছোট বড় সবাই
ওনাকে ভবঘুরে দাদু বলে ডাকত  কারণ উঁনি যখন 
আসতেন তখনই উঁনি দূরে দূরে গ্রাম _শহর _ মেলা
ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন তারপর আবার নিজের দেশে চলে যেতেন। বছরে দুই তিনবার আসত আমাদের বাড়িতে থাকত। একবার আমারা ভাই বোনেরা
পড়ছি আর ভবঘুরে দাদু বসে আছে, আমি একটা কবিতা শুর করে করে পড়ছি, কবিতাটা পড়া শেষ হলে
দাদু বলে আর একবার পড়, বারবার পড় তারপর
দেখি আমি পড়েই যাচ্ছি আর দাদু কেঁদেই যাচ্ছে।
তারপর থেকে দাদু যখনি আসত তার ব্যাগ থেকে একটা বই বার করে সেই কবিতাটি দেখিয়ে বলত  পড় আমি পড়ি আর দাদু কাঁদে ।  ।আমি যতবার দাদু কে জিজ্ঞেস করি এই কবিতা পড়লে তুমি কাঁদো কেন ?
 দাদু বলে দিদিভাই তুমি এখন বুঝবে না। যখন 
তুমি বড় হবে তখন তুমি ঠিক বুঝতে পারবে, 
শুধু হয়তো সেদিন আর আমি এই পৃথিবীতে থাকবো না।আর সত্যিই যখন বুঝতে পারলাম দাদু কেন কাঁদত, কেন দাদু সারাজীবন বিয়ে করেননি তখন সত্যিই পৃথিবীতে দাদু আর নেই।
দাদু কাঁদত তার ছোট্ট বেলার প্রেম রঞ্জনার জন্য,
যে রঞ্জনা দেশভাগের সময় তার বাবার সঙ্গে এই দেশে
চলে এসেছিল।  সেই রঞ্জনাকে খুঁজতেই দাদু বারবার এই দেশে ছুটে ছুটে আসত আর গ্রামে, শহরে , মেলায়  দাদু তার রঞ্জনা কে খুজে বেড়াতো ।বারো - তের বছর বয়সে মনের মধ্যে এক অদ্ভুত কষ্ট হত আর সেই কষ্টটা
বেশ অনেক দিন ছিল আমার মনের মধ্যে। তারপর
আস্তে আস্তে কবে যেন ভুলেই গিয়েছিলাম।
আর এখন এই বয়সে এসে যখন স্মার্টফোন হাতে
পেলাম তখন দেখলাম, পৃথিবীটা আজ বড়ই ছোটো, এখন আর কেউ হারায় না। কোনো না কোনো ভাবে তার বর্তমান অবস্থান ঠিকই জানা যায় ।আজ খুবই আফসোস হয় দাদু যদি সেই যুগে না জন্মে এই যুগে জন্মাত তবে দাদু কে আর এত কষ্ট পেতে হতো না। আরকিছু না হোক জানতে তো পারত তার রঞ্জনা কেমন আছে।_____
    আজ সেই কবিতাটা সব্বাই কে পড়াতে ইচ্ছে
করছে, আমার দাদুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ।
_________________________________________
                  এক  গাঁয়ে
               রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুর
                     ________
   আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি ,
                সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ।
      তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখি
               তাহার গানে আমার নাচে বুক।
তাহার দুটি পালন - করা ভেড়া
               চড়ে বেড়ায় মোদের বটমূলে,
   যদি ভাঙে আমার ক্ষেতের বেড়া
                কোলের ' পরে নিই তাহারে তুলে।

    আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা
আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,
আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,
আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।।

দুইটি পাড়ায় বড়োই কাছাকাছি,
            মাঝে শুধু একটি মাঠের ফাঁক।
তাদের বনের অনেক মধুমাছি
           মোদের বনে বাঁধে মধুর চাক।
তাদের ঘাটে পূজার জবামালা
           ভেসে আসে মোদের বাঁধা ঘাটে,
তাদের পাড়ার কুসুম - ফুলের ডালা
           বেচতে আসে মোদের পাড়ার হাটে।
         
         আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,
         আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,
          আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,
          আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।।

  আমাদের এই গ্রামের গলির '- পরে
                আমের বোলে ভরে আমের বন।
  তাদের ক্ষেতে যখন তিসি ধরে
             মোদের ক্ষেতে তখন ফোটে শণ।
 তাদের ছাদে যখন ওঠে তারা
               আমার ছাদে দখিন হাওয়া ছোটে।
  তাদের বনে ঝরে শ্রাবণ - ধারা,
                       আমার বনে কদম ফুটে ওঠে।

      আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,
     আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,
       আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,
         আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।।

No comments: