Friday, November 8, 2024

মানুষের গুণ -- তরুণ চ্যাটার্জ্জী

 মানুষের গুণ
 তরুণ চ্যাটার্জ্জী 
 07/11/24
কাউকে কিছুই দেবো না দোষ ,
নিজেই ভুলের করি আফশোষ।
দিনগুলি যে গেছে বয়ে,
বেঁচে আছে তারা স্মৃতি হয়ে।

মিষ্টি সে সব দিনের কথা,
দাগ কেটে মনে বাড়ায় ব্যথা।
দুঃখ ভোগ করছি একাই,
সুখের ভাগ নিয়েছে সবাই।

হারিয়ে যাওয়ার হাওয়ায় ভেসে,
নেভায় আলো আঁধার এসে।
প্রতিশ্রুতি সব অকালে মরে,
পরিহাস যেন থাকছে ঘিরে।

কথার মূল্য ক'জন রাখে,
অদিনে ক'জন পাশে থাকে!
মুখ বুজে সব নিয়েছি মেনে,
বাস্তবটা খুব গিয়েছি জেনে।

অনেক হল মানুষ চেনা,
মন দিয়ে মন যায়না কেনা।
সুযোগ চেনা মানুষের গুণ,
প্রতিদানে জ্বালে বিবাদী আগুন।

হিমু - শিবপ্রসাদ মন্ডল

  হিমু
   শিবপ্রসাদ মণ্ডল
    ৭/১১/২৪
মলয়, মহুয়া ও মমতাজ প্রথম শ্রেণী থেকেই একসাথে পড়াশুনা করতো ওদের গ্ৰামের বিদ্যালয়ে।উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর--মহুয়া ও মলয় কোলকাতায় ডাক্তারি পাশ করে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার হয়েছে। 
মমতাজ ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ. ; পি.এইচ.ডি, করে এক মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেছে।
মলয়কে নিয়ে মহুয়া ও মমতাজ দুজনেরই মনের গভীরে দুটি প্রেমের চারাগাছ জন্ম নিয়েছে,তা' কেউ কাউকে জানতে দেয়নি।মলয়-মহুয়া হিন্দু বাড়ির ছেলেমেয়ে কিন্তু মমতাজ মুসলিম বাড়ির মেয়ে, তাই তার প্রেম নীরবে নিভৃতে কাঁদে।মলয়কে কোনোদিন কোনোকিছুই বলে উঠতে পারেনি।
গত ফাল্গুনে মলয়ের সাথে মহুয়ার বিয়ে হয়ে যায়। মমতাজ বৌভাতের দিন এসে দুটি ফুলের তোড়া , দুটি আংটি ও একটি পুতুল উপহার দিয়ে চলে যায়।
এ বছর মলয় ও মহুয়া গ্ৰামের বাড়িতে পুজোর ছুটি কাটাবে বলে একটি গাড়ি ভাড়া করে গ্ৰামে ফিরছে, ঐ সময় মহুয়া ছয় মাসের গর্ভবতী।
হঠাৎ ওদের গাড়ির সাথে এক বড় ট্রাকের ধাক্কা লাগলো। ওদের গাড়ি দু'বার পাক খেয়ে পাশের খালে পড়ে গেলো।প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে মহুয়ার অসহ্য পেটের যন্ত্রনা শুরু হলো। 
অন্য একটি গাড়ি ভাড়া করে মলয় দ্রুত ওকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলো। ডাক্তার অপারেশন করে জানান যে মহুয়া এ জীবনে আর মা হতে পারবে না !!
হাসপাতাল থেকে মহুয়া ফিরে আসতেই মমতাজ ওদের বাড়িতে দেখা করতে গিয়ে দেখে-- মলয় চোখের জল ফেলতে ফেলতে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর মহুয়ার চোখ দিয়ে জল ঝরতে ঝরতে বালিশ ভিজে গেছে। 
বারবার প্রশ্ন করে মমতাজ সবশেষে জানতে পারে যে মহুয়া এ জীবনের মতো গর্ভধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
হঠাৎ মহুয়া--মমতাজের দেওয়া বৌভাতের দিন সেই পুতুলটা তারই কোলে রেখে বলে," তুই এতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা কর।তুই ছাড়া এই কাজ আর কারো দ্বারা সম্ভব হবে না।"
মমতাজ অতি বুদ্ধিমতী, তার উপর ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপিকা। মহুয়ার অন্তরের কথা তার আর বুঝতে বাকি রইলো না।
মহুয়া আইনের সাহায্য নিয়ে মলয়ের সাথে মমতাজের বিয়ে দিয়ে একসাথে তিনজন থাকতে শুরু করলো এবং এক বছর বাদে মমতাজের কোল আলো করে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হলো।
মহুয়া নিজেই সন্তানের নাম রাখলো-- হিন্দু ও মুসলমান এই দুটি শব্দের প্রথম অক্ষর নিয়ে "হিমু"।
        এমনটা তো হতে পারতো -- মলয় মহুয়াকে ছেড়ে আবার বিয়ে করেছে, মহুয়া মলয়কে ছেড়ে আত্মহত্যা করেছে, মহুয়া-মলয় দুজনেই সবকিছু ছেড়ে কাশীবাসী হয়ে গিয়েছে, মহুয়া মলয় দুজনেই আত্মহত্যা করেছে, মমতাজ  মহুয়ার কথা না বুঝার ভান করে নিজের মতো পাত্র দেখে  বিয়ে করেছে। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি বরং একটি comi-tragedy -- সুন্দর একটি পরিণতি নিয়ে tragi-comedy তে পরিণত হয়েছে।
ওরা সকলেই উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিতা। সর্বোপরি ওরা জাতি ,ধর্ম ও বর্ণের গন্ধ লাগা কলুষিত পোশাক খুলে ফেলে এবং ঘুণধরা সমাজের নানান বিভেদ প্রাচীরগুলোকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে এক নতুন আলোর পথের সন্ধান পেয়ে সুন্দরতম জীবনের ঠিকানা নিজেরাই খুঁজে নিয়েছে।
আসুন না, আমরাও সবাই মিলে চেষ্টা করে দেখি-- সমাজের পচা,গলা, দূষিত এবং বিষাক্ত ঘা-গুলোকে প্রীতির ঔষধ প্রয়োগ করে সারিয়ে তুলতে পারি কিনা!!!
ওরা যখন পেরেছে আমরাও নিশ্চয়ই পারবো।
তবে নেশার কাজল চোখে লাগাতেই হবে!!
যাঃ-- অনেকক্ষণ বকতে বকতে হিমু ও তার পরিবারের কথা ভুলেই যাচ্ছিলাম। 
মলয়, মহুয়া ও মমতাজের অভিনব সিদ্ধান্তের জন্য-- ওদের জানাই উষ্ণ অভিনন্দন।আর ছোট্ট সোনা 'হিমু'র জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা।

কথোপকথনে কবিতা -- বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য

 কথোপকথনে কবিতা
 বিনয়ব্রত ভট্টাচার্য্য
 ০৬/১১/২০২৪..
কি হেতু তব মলিন মুখ, বিষণ্ণ বদন!
অপ্রসন্ন তোমার মনেতে দেখি একরাশ চিন্তার ছাপ 
চেহারায়, চলনে, বলনে, নেই তেমন পারিপাট্য, চাকচিক্য
প্রিয় হে বন্ধুবর ! বলনা মোরে তোমার কিসের অভাব?
বন্ধু বিনুরে শুধায় মৃদু হেসে, তার অকৃত্রিম সুহৃদ বিলু 
আপাতভাবে তার বন্ধু বিনু তো ভালোই আছে বলে তার বোধ
তবে কেন মুখে হাসি নেই! চিন্তাক্লিষ্ট  অতি সিরিয়াস!যেন ক্যাসিয়াস!
জিজ্ঞাসু হয়ে দিতে চায় উপযাচক হয়ে সমস্যা নিরসনের প্রবোধ!
হেসে কয় বিনু তার প্রিয় বন্ধু বিলুরে কেমনে বুঝবে তুমি আমার ব্যথা?
তোমরা তো জন্মেছ সোনা রূপার চামচ নিয়ে মুখে
আমি গরীবের সন্তান, জোটেনি যার বেবি ফুড, দুধ, কিংবা দুমুঠো অন্ন!
উৎসব আনন্দ ছিল মরীচিকা, অধরা মাধুরী, কেটেছে শৈশব মম অসহন দুখে।
হকের বস্তু পাইনি সহজে, সংগ্রাম করে, লড়াই করে হয়েছে পেতে
যা কিছু চেয়েছি জীবনে, অনেকটাই তার যে পাইনি আমি 
অথচ দেখি, অন্য অনেকে চাওয়ার থেকেও বেশি পায় দেখি সচরাচর
এ কেমনধারা বৈষম্যমূলক এক পেশে বিচার করেন অন্তর্যামী!
বন্ধু বিনুরে বলে বিলু দুঃখ ক'রনা ভাই আমার 
এতো জন্ম জন্মান্তরের কর্ম ফল, বিধাতার বিধান
মেনে নিতে হবে ভাগ্যের লিখন অন্য যে উপায় নাই
তুমি আমি ভেবে পারবোনা করতে এর কোন সমাধান।
স্বয়ং বিধাতা যেমনি ভাবেন তেমনি আমাদের চালাবেন তাঁর মর্জি মত
তাঁর হাতের ক্রীড়নক সবাই আমরা
হাতের পুতুল মাত্র!
দক্ষ বাজিগরের হাতের পুতুলের মতই নাচান, চালান আমাদের 
তাই কোনই লাভ নেই বিলাপ করে,  অসন্তোষে জ্বলে পুড়ে দিবা রাত্র!

" As flies to wanton boys so are we to God's "
We are always at His beck and call with life long nods..

অস্পন্দিত -- সুব্রত সেন

অস্পন্দিত
 সুব্রত  সেন
০৬\১১\২০২৪
পশ্চিমের জানালা খুলতেই ভেসে ওঠে
সামনের উঠোনে  মেহগনি কাঠের জরাজীর্ণ ইজিচেয়ারটায়
ঝিমোছে আশি বছরের শ্যামলকান্তি দাস
দূর থেকে ভেসে আসছে  সোনালি ধানের শরীর জুড়ে
পণ্ডিত ভিমসেন যোসির লোলিত রাগ...৷

কংসাবতির ঘাট ধরে হাটতে হাটতে
তাঁর ফিরে আসার কথা ভাবছিলাম
শেষ কথা হয়েছিল রাত্রির দ্বিপ্রহরে ৷
ঝলমলে জ্যোৎস্না ছড়িয়ে হাসনুহানার সুগন্ধ..৷

মেঠো আলপথ ধরে হেটে চলেছি অনেকটা দূরের পথ
সঙ্গে ছিল তম্বী এক নদী
 বসন্তের বাতাস বার বার স্পর্শ করতে চেয়েছে তার বুকের আঁচল৷

বৃষ্টি ভেজা শ্রাবনের পর চাঁদ উঠেছিল
ফুটেছিল রজনীগন্ধা বেল জুঁই আরো কত ফুল..৷
থমকে দাঁড়িয়েছিলাম,
 বেহালার ধুন শুনতে শুনতে ঘরের চৌকাটে যখন এসে দাঁড়ালাম

নদীতটের নির্জন রাতের বালুর মতো একা নই আর এখন
 কল্লোলিত মহানগরে জনতার কোলাহলে উষ্ণতার স্পর্শ ছুয়ে গেছে
অরণ্যের আকাশ জুড়ে রাশি রাশি ধর্ষিতার চিতার আগুন..
সেই নদী ক্রমশ স্মৃতির শিতল ছায়ার তরঙ্গিনী হয়ে
বেহালার ধ্বনিতে আজও অস্পন্দিত ..


মধ্যরাতে সুচরিতার সাথে -- নীলাভ

মধ্যরাতে সুচরিতার সাথে
নীলাভ 
০৭/১১/২০২৪
"যা  যারে    আপনে  মন্দিরাভা 
সুনা পাবে গি     সাস - নানাদিয়া "

আচ্ছন্ন হয়ে আছি আমি, তোমার সুরে 
সুচরিতা!
আমি রাগ-রাগিনী জানি না  যদিও

ঊষা আর মধ্যরাত - কোন  রাগে   জেগে ওঠে?         আমি জানি না

আমি জানি না 
 কিভাবে  বাতাসের সুর শুনে
 অন্তরাত্মায়  রাগের  জন্ম
  আমি জানি না -
 প্রকৃতির সুর কি ভাবে এলো  সাধিকার কন্ঠে?

  মেঘধ্বনির  মাঝে বৃষ্টির সরগম
  ঝড়ের রাতে বাতাসের যে গান
 নিদ্রিত সাগরে কালব্যাপী আছে যে সুর- 
  প্রথম যেদিন এলো  মানুষের আত্মার কাছে 
  সেইদিনও  আমি ছিলাম না
   যেদিন মোহনের বাঁশিতে  রাগিনীরই জন্ম
      
 আমি এলাম অনেক পরেই 
বহু বহু যুগ পরে 
 সুচরিতা !
  ধরো,থেমে গেছে আজ  পৃথিবীতে  সকল শব্দ
আমি চেয়ে আছি তোমার ওই মুখখানিরই দিকে 

তুমি সুখ-সুরাচ্ছন্ন  কণ্ঠবিভোর -
চুল এসে শুয়ে পড়ে তোমার চোখের পাশের গালে
তোমার পাঁচ আঙুলের  নৃত্যমুদ্রা -
সৌন্দর্যে -গান্ধর্বী-
তোমার ওষ্ঠ,কণ্ঠ-আত্মায়-মুদিত দু-নয়ন

তোমার  নিষাদে, ঋষভে, পঞ্চমে ঘূর্ণিময় বন্দিশে 
আমার প্রাণে প্রবেশ করছে, আরহে অবরোহে 
তোমারই যে রাগিনী - ভীমপলাশী!

আমি রাগ-রাগিনী  বুঝিনা, সুচরিতা!

 তবু এই মধ্যরাতে
আমার কাছে থেমে আছে পৃথিবীর  সকল শব্দ
আমি আচ্ছন্ন হয়ে আছি তোমাতেই
আমি তুমিতেই সমাহিত

বাকি সবই    নিথর নিস্পন্দ

লিখবো আমি কবিতা -- নূপুর আঢ্য

 লিখবো আমি কবিতা
  নূপুর আঢ্য
  ০৭/১১/২০২৪
জীবনমুখী কবিতা লিখবো আমি
মনের মাধুরী মিশিয়ে,
থাকবে সুর ছন্দ তাল মাত্রা
কবিতার প্রতিটি লাইনের ভেতর।
তুলে ধরবো মানুষের কথা,
সুখ দুঃখ আনন্দ ভালোবাসা।
যেকথা তোমরা বলতে পারো না 
সেকথা বলবো আমি তোমাদের হয়ে।

লিখবো আমি ছোটদের কথা
থাকবো আমি ওদের সাথে,
ফুটাবো মুখে সুমধুর হাসি 
সেই হাসি দেখবো অপলক নয়নে।

করবো প্রতিবাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে
গাইবো জীবনের জয়গান,
রক্তচক্ষুর কাছে করবো না মাথা নত
যতদিন আছে দেহে প্রাণ।

কবি নয় আমি,কবিতাকে ভালোবাসি,
কলমকে হাতিয়ার করে জীবনের কথা লিখি।
সেই কবিতা মানুষের যদি উপকারে আসে
স্বার্থক হবে অধমের জীবন।

Wednesday, November 6, 2024

শব্দব্রহ্ম -- নীলাভ

শব্দব্রহ্ম
নীলাভ 
০৫/১১/২০২৪
 প্রিয় শব্দ,

তুমিই নাকি ব্রহ্ম!
তুমিই পূজা,  তুমিই  প্রার্থনার  মন্ত্র
তুমি প্রেয়ার,  তুমি যে সমর্পন!
এই যে পুষ্পাঞ্জলি দেবীর চরণে প্রার্থনার সাথে 
মুখে বা মনে মনে,
এ তোমাকে ছাড়া , সম্ভব  কি?

 তুমি এক মানসিক তরঙ্গও 

তুমিই তো মাধ্যম, নিরাকারের সাথে সংযোগ গড়ে তুলতে মহামন্ত্রজপ করছেন যিনি
তাঁরও সাধনপথ তো তুমিই,
রোদে -জলে ভিজে বা গুহায় -গিরি কন্দরে
হাজার তপস্যা শেষে সাধক পান তোমার বাণী,
তখন উনি  ব্রহ্মজ্ঞানপ্রাপ্ত ব্রহ্মর্ষি 

প্রিয় শব্দ,
তুমি ইষ্ট!
জপমন্ত্র বীজমন্ত্র ছাড়া হয় না  যে সাধনা!
মৌন চোখবন্ধ তাপসও, মনে মনে জপছেন
তোমাকে
মহামন্ত্র দিয়েই, 
আর নাহলে!  ভাবনা  আর  চেতনাতেই 

শব্দ, তোমার শরীর আছে কি?
ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সির ছবিকে শরীর বলা যায় কি?
 
 শব্দ! তুমি তো তরঙ্গ,
 তুমি বাতাস বয়ে, মেঘ ছুঁয়ে,মনের গতি নিয়ে 
পৃথিবীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে এসে
কথা হয়ে বেরিয়ে আসো মোবাইলের স্পিকার থেকে,   সেকেন্ডর একটা মাত্র অঙ্কেই!

মহাবিস্ফোরণে সেদিন শোনা গিয়েছিলো কি, কোনো শব্দ?
কে শুনেছিলো সেই "বিগ ব্যাঙ "?
স্পন্দন থেকেই তোমার উৎপত্তি,
কম্পন থেকেই তো বেরিয়ে আসো তুমি?
কারুর কাছে সেটা 'ওম' ধ্বনি, আর কারুর কাছে 
প্রথম জ্যোতি, বাইবেলবর্ণিত -"লেট্ দেয়ার বি লাইট,এন্ড দেয়ার ওয়াস লাইট " 

শব্দ!  তোমার শরীর আছে জানি, 
এই তো তোমার শরীর দিয়েই তো লিখছি যে এখন 
আমার চিন্তা - চৈতন্য, ব্যক্তিগত অথবা নিরপেক্ষ

তোমার শক্তিতেই তো 
জন্ম নিলো 'মানুষ এবং ভাষা', গোষ্ঠী,পরিবার,
এলাকা, গ্রাম, নগর, জাত,ধর্ম, রাষ্ট্র, এবং
সবশেষে "ঈশ্বর"
প্রকাশ পেল অনুভব - শব্দনগর,
জন্ম নিলো 
মানবধর্ম, মনুষত্ব - সবার উপরে মানুষের সত্য

প্রিয় শব্দ !
আমার আঙুল হয়ে 
তুমি নেমে আসছো কোথা থেকে যে!
কোথায় যে তোমার আবাস?
কে যে পাঠায় বাণী!
একদিন মুখ দিয়ে জন্তুর মত আওয়াজ বের করতে করতে করতে সেই শব্দই নিঃশব্দে আজ
আঙ্গুল দিয়ে বেরিয়ে আসে চেতনাচৈতন্য থেকে

 বিচিত্র এই সৃষ্টিকে তোমাকে দিয়েই করি 
বর্ণনা আর বন্দনাও,
তোমাকে দিয়েই তাঁর কাছে করি প্রার্থনা -
আমার মধ্যেই আছেন যিনি, প্রতিটি বিন্দু আর
সৃষ্টিকনায় আছেন যিনি,

আমারও কোনোদিন জন্ম অথবা মৃত্যু হয়েছিলও কি?
সৃষ্টির শুরু থেকেই তো প্রতিটি কনায় আর শিখায়
 আছি তো আমি
এই আমির কোনো আকার হয় না
কোনো রূপ হয় না, এই আমি অণু,এই আমি পরমাণু,
এই আমি সম্পূর্ণ নিরাকার
কারণ এই আমি  আছি সর্বভূতে,
 যদি সৃষ্টি হয় কোনো একটা বিন্দু থেকেই?
তাহলে! সেখানেই তো লুকিয়ে সম্পূর্ণ আগামীও!
বিন্দুটাই যে ব্রহ্মান্ড!
আমার কি  জন্মমৃত্যু নেই তাহলে কোনো?
নেই কি মোক্ষ? 
শুধুই কি পরিবর্তন?
শুধুই পদার্থ?লয় নেই, বিনাশ নেই, আছে যার শুধু  বারেবারে রূপ বদলানো?
কিছুদিন যদি আমি মানবদেহে, তারপর কি কিছুদিন বায়ুদেহে? পঞ্চভূতে?
তারপর প্রাণ আসে ফিরে আবার  কোনো এক গর্ভে!
কে যে করে চালনা? কি সেই উদ্দেশ্য?
এটাই কি পুরোনো বাস আর বাসা পরিবর্তন করে নতুন জামাকাপড়, নতুন শরীর ধারণ, 
এটাই কি তবে - জাতিস্মর?

প্রিয় শব্দ! চোখ বন্ধ করে কত কথাই তো ভাবছি,
কত ছবিই  দেখছি এখন,
তুমিই তো আসছো সেই ভাবনা গড়তে,সেই ছবি আঁকতে

ওই যে কোল্ডরিজ এখন কুবলা খানের
প্রাসাদ তৈরী করতে শুরু করলেন,আকাশে
দেখাও যাচ্ছে শব্দের তৈরী ওই অনুপম নগরী 

 এ একটা মিরাকেল, এ এক আশ্চর্য!
একমাত্র শব্দের শক্তিই পারে করতে এই সৃষ্টি,
জানাডুর সেই জাদুনগরী!
চোখ দিয়ে নয়, অন্তরের দৃষ্টিপ্রদীপে দেখতে হয় যাকে

"অ মিরাকেল অফ রেয়ার ডিভাইস
অ সানি প্লেসার ডোম  উইথ কেভস অফ আইস"

ওই যে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন অপমানহত কালিদাস,
প্রজ্ঞাপারমিতার কাছে চাইছেন আকুল হয়ে -
" বাণী দাও! বাণী দাও,  হে দেবী, হে দেবী!"

ঐযে! বিড়বিড় করছেন ডেনমার্কের রাজপুত্র
 শব্দ-রাজপুত্র,
"ওয়ার্ডস, ওয়ার্ডস, ওয়ার্ডস "

  কাঠের টেবিলে ঝুঁকে, রাতের মোমবাতিতে
 হাতে পাখির পালকের কলমটা নিয়ে 
দোয়াতে ডুবিয়ে স্বর্ণ অক্ষরে 
 শেক্সপীয়ার,রচনা করছেন এক মহাকাব্য -
  মহাসৃষ্টি হচ্ছে, এক অমরকথার,এক মহাকবিতার,
 "মোনালিসা অফ লিটারেচার " 
 নাম -
   "হ্যামলেট্ "

ভাবনা -- ড: দেবাশীষ চ্যাটার্জি

 ভাবনা  
 ড: দেবাশীষ চ্যাটার্জি    
 05 /11 /2024
শিকড় শক্ত পুষ্ট বৃক্ষের
ফলের মান বাড়ে
গুন বিচারের দাঁড়ি পাল্লায়
সবার নজর কাড়ে |

শিখতে শিখতে বড় হয়ে
মানুষ হতে হয়ে  
বড় হয়ে সব শিখলে
কিছু বাকি রয়  |

সব যুদ্ধে যায় না যেতা
যতই থাকুক বাহুবল
বুদ্ধি আর রননীতির
অবাভ হলেই রসাতল  |

বড় মানুষ হতে হলে  
ছোট হওয়া চাই আগে
প্রথম তলে চাপলে সিঁড়ি
দো তলায় পৌঁছাবে  |

এমন ভাবনার ব্যতিক্রম
মানতে পারেনা  সমাজ
অহংকার ই পতনের মূল
কাল নয় তো  আজ |

সব জায়গায় জিততে নেই  
সুখ আছে তাই হারে
পিতার আনন্দ পুত্র
শিক্ষায় তার  উপরে  |

সব কথার উত্তর হয় না  
নীরবতাও এক জবাব  
সময় হলেই উত্তর পায়  
অপেক্ষা যার  স্বভাব |

সব কিছুর তো  হয় না প্রমান  
দরকার ও নেই দেবার  
স্বর্ণকার সোনা চেনে  
লোহা চেনে কামার ||

একদিন আসিবে রজনী -- মধুসূদন সূত্রধর

একদিন আসিবে রজনী,
মধুসূদন সূত্রধর
০৫/১১/২০২৪
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি
প্রিয়া
নয় গো এ মোর কোন অপরাধ
মন আকাশে শরৎ রাতের
তুমি, যে কোজাগরী চাঁদ।

রূপের, রজনী তুমি মোর প্রিয়া
মুখেতে শুধু মুক্তোর হাসি
ময়না পাখির ঠোঁটের মতো 
কাজল কালো চোখের হরিণী
চাউনিই,
তোমায় বড় ভালোবাসি।

শিউলির ডালে, ফোট ফুল হয়ে
দাও ছড়িয়ে সুবাসিত ঘ্রাণ
মনের বাগিচায়, দেখি তুমি গোলাপ
প্রেয়সী হয়ে নীল যমুনায়
কদমের তলে শোনাও তুমি গান।

পুজোর গন্ধে তুমি নবমীর রাত
হোলির ফাগুনে রাঙা পলাশের বন
বৈশাখীর গোধুলিই তুমি কৃষ্ণচূড়া
প্রেমের ভূমিতে তুমি, রাসের নিধু বন।

হেমন্তের ভোরে তুমি গো শিশির
আঁধার রাতের তুমি বাতি
হোলির দোলের তুমি মোর আবীর
মনের স্বর্গে তুমি জ্যোৎস্না রাতি
বৈশাখী ভোরের প্রভাতী রবি
হৃদয় বীণার রাগিণীর সুর
মন ক্যানভাসে তুমি পটে আঁকা ছবি।

দোহাই তোমার ফিরাও না, মুখ
তুমি যে আমার জীবন মরন
ইহকাল পরকাল হৃদয় মনের সুখ,
দিয়েছি গো তাই হৃদয় মনে ঠাঁই
শুধু মোর একটু অপেক্ষা
আসিবে রজনী একদিন মোর হায় ।

আমার প্রিয়া তেমনি আছে -- মনোজ ভট্টাচার্য্য

আমার প্রিয়া তেমনি আছে
 মনোজ ভট্টাচার্য্য
০৫/১১/২৪
আমার প্রিয়ার হৃদয়াকাশে,
প্রচন্ড গ্রীষ্মের দাবদাহ ভাসে, 
কখনো তাহার হৃদয় জুড়ে, 
জলভরা মেঘে বৃষ্টি নামে ধীরে, 

কখনো আবার বসন্তের ফোটা ফুলের সুবাসে,
মন ভ্রমরা গুনগুন গান গেয়ে ওঠে 
মনো মাঝে,
কখনো আবার ফুর ফুরে হওয়া, দোলা দিয়ে যায় হৃদয় জুড়ে!!

চঞ্চলা চপলা হরিণীর ন্যায়,      
ছুটে চলে আনমনে,
এক প্রান্ত হতে আর এক প্রান্তে আপন আবেগে যায় চলে।

যারে ভালোবাসে সে, 
এক বুক ভরা ভালবাসা দেয় সেই তারে, 
যারে দেখতে নারে দুই চোখে,
ফিরেও চায় না তার পানে।।

নতুনত্বের আস্বাদনে ভাব বিহ্বল মনে,
কল্লোলিনী, স্বপ্নচারিনী আপন ছন্দে চলে, 
কখনো দেখি সে একাকিত্বের বাসর ঘরে, 
 অজান্তেই,নিজেরে হারিয়ে ফেলে।।

কেউ কি বুঝবে সে তার মনের গোপন ফ্রেমে,
কার প্রতিকৃতি রেখেছে ধরে,     অতি যতনে। 
অথবা কোন গোপন কথা,
রয়েছে গোপনে গোপনে, 
মন মাঝে!!

গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস -- জহরুল আমিন মোল্লা

 গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস
  জহরুল আমিন মোল্লা 
   ০৫-১১-২০২৪
গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস ছুটছে 
তীর বেগে ছুটছে 
পাহাড় পর্বত নদী নালা টপকে ছুটছে, 
ধু ধু ধূসর লাল মাটি, ছোট ছোট গাছ 
কোথাও ঘন বন,, দু’ একটা কুঁড়েঘর
গরু ,ছাগল, ভেড়া 
মাথায় গামছা বাঁধা ঠাই রোদে দাঁড়িয়ে 
যষ্টি হাতে রাখাল, 
ওরা ঘরে ফিরবে সূর্য ডোবার আগে। 

গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস ছুটছে, 
তীর বেগে ছুটছে 
হাজার হাজার বিঘে জোতজমি
গম, ভুট্টা, সরষে, আখ,জনার খেত 
পান্তার হাঁড়ি মাথায়, দুপুরের আহার 
বাচ্চা পিঠে বাঁধা, উসখো খুসকো জট পাকানো চুল, কৃষিকাজ দিনভর 
জমিদারের বরাদ্দকৃত কুঁড়েঘরে ফিরবে পড়ন্ত বেলায়। 
লাল টকটকে সূর্য ডুবছে ,উঠছে 
গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস ছুটছে 
আমরা ছুটছি ,সবাই ছুটছি 
শিল্পনগরী মুম্বাই অভিমুখে ছুটছি। 
শিল্পনগরী পৌঁছে জুড়িয়ে গেল চোখ 
অসংখ্য চব্বিশ পঁচিশ তলা বিল্ডিং 
আশেপাশে হাজার হাজার ঝুপড়ি 
ঝুপড়ির বৈধ মালিকানা নেই, 
বিল্ডিং মাফিয়াদের রমরমা ব্যবসা, 
ছোট বড় অসংখ্য কারখানা 
ভিন রাজ্যের পরিযায়ী অস্থায়ী শ্রমিক 
আলোর নিচে অন্ধকার, হাহাকার অতৃপ্তি কান্না।
আরব সাগরের তীরবর্তী স্থান 
সেলিব্রেটি কিং খাঁনের সুদৃশ্য প্রাসাদ 
নিত্যদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী, 
নিকটেই অসংখ্য ছুপড়ি, পড়ন্ত বিকেল 
অদৃশ্য -পূর্ব স্বর্ণ উজ্জ্বল লাল টকটকে সূর্য 
লাল আবিরে মুহূর্তে আলিঙ্গন করে 
ডুবে গেল সীমাহীন অশান্ত জলে; 
আমি বসে আছি, অবাক চোখে তাকিয়ে আছি 
হট প্যান্ট পরা লাস্যময়ী সুন্দরীর দিকে।
আলো ঝলমল, সুদৃশ্য তাজ হোটেল 
সমুদ্রের ওপারে তেল সাম্রাজ্য 
হোটেল নাচ গান মদ মেয়ে ফুর্তি 
আরবের সেখেরা, এদেশের বিত্তশালীরা 
এখানে আসে হাওয়া বদলাতে,
সমুদ্রের জলে অসংখ্য ছোট বড় সুদৃশ্য জাহাজ 
দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী, শীতল বাতাস 
প্রাণ জুড়িয়ে যায় 
মনে হয় কল্পিত স্বর্গটা নেমেছে এখানে ।

Tuesday, November 5, 2024

সভা চলছে -- জাহাঙ্গীর আলম কাজল

সভা চলছে 
জাহাঙ্গীর আলম কাজল
৪/১১/২৪
ওপাশে যেও না কেউ, সভা চলছে 
হ্যাঁ, দারিদ্র হননের সভা, বক্তৃতার বুক ফাটা কান্নার আওয়াজে স্তব্ধ কোলাহল।
বেদনার অনলে দগ্ধ নিষ্পেষিত জনতার কথা চলছে ,
শ্রমিকের কথা চলছে ,
মজুরের কথা চলছে ।
রুখতে হবে বৈষম্য , ভাঙতে হবে ব্যবধানের অবরুদ্ধ দুয়ার
দুর্বার আন্দোলনে গড়তে হবে সুরের ঐক্যতানে 
ভাইয়েরা আমার! সব মজদুর এক হও
আর একবার হাততালি হবে ,
এবারের আন্দোলন ,দারিদ্র্য হননের আন্দোলন 
উঁচু করো শির, থাকবে মুষ্টিবদ্ধ হাতের অঙ্গীকার।
বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব ,শত্রুর সাথে শত্রুতা 
বজায় রেখেই এগোতে হবে, ভয় নেই বন্ধু গণ !
ধনী গরিবের ব্যবধান শূন্যের কোঠায় আনতে আমরা বদ্ধ পরিকর, এ যুদ্ধে জিততে হবেই ।
আর একবার হাততালি হবে, স্লোগান তোলো
জয় নিশ্চিত, সুনিশ্চিত জয়
আরেকবার গর্জে ওঠে নিশ্চিত কর অধিকার।

ভাইফোঁটা - শ্রীমন্ত‌‌‌ দাস

ভাইফোঁটা
শ্রীমন্ত‌‌‌ দাস
০৪/১১/২০২৪
কতদিন দেখিনি তোকে
আয় না একটি বার ,
বললি তুই আসবি ফিরে
ফোঁটা নিবি আমার।

বড় কাজের দায়িত্বে ছিলি
 তুই দাদা আমার ,
তোর কথায় সেনা জোয়ান
লড়তো দুর্ণিবার।

সীমান্তে যুদ্ধে গেলি
ফিরলি না তো আর,
রাখলি না তুই বোনের কথা
ভাবলি না একবার।

মারবি না তুই খাবার সময় ?
মাছের মাথা নিতে ?
খেলার সময় হুড়িয়ে দিয়ে
ভুল করে দান নিতে ?

ও দাদা তুই আয় না ফিরে!
আদর করবি না ?
আগের মতো কাঁদলে আমায়
লজেন্স দিবি না?

বুক ফেটে যায় আজকে আমার,
যখন  দিনটা আসে,
যখন সবাই ফোঁটা দেয়
ভাইকে পেয়ে পাশে ।

আজ মনে হয়, যাওয়ার আগে
যদি দিতেম ফোঁটা,
পারতিস না যেতে ছেড়ে
পেরিয়ে যমের কাঁটা।

তোর ছবিটা আমার ঘরে
 তাকিয়ে কি সব বলে ,
বলছে বোন ফোঁটা দিবি না?
সব কি গেছিস ভুলে ?

অশ্রু সিক্ত রিক্ত বুকে  
দিলাম ফটোয় ফোঁটা ,
যাস না দাদা আমায় ছেড়ে
পেরিয়ে যমের কাঁটা।

বুকের পাঁজরে দাবানল -- ফিরোজ শাহীন আলাল

বুকের পাঁজরে দাবানল 
ফিরোজ শাহীন আলাল 
০৪/১১/২৪
মানচিত্রে থাবার অপেক্ষায় বয়স্ক শকুন 
ধারালো নখর ঠোঁট বুভুক্ষু লালসায় ছোবল 
উৎকণ্ঠা উদ্বেগ উদ্বেলিত মাতৃভূমি আমার 
দূরবীন চোখে জ্বলজ্বল নিশানা আকাশ নীলে চিল
অভেদ্য নিশানায় অপেক্ষার প্রহর!

বুকে চেপে বসেছে জগদ্দল জঙ্গি পাথর 
ভেঙ্গে চুরমার অসহিষ্ণু বুকের পাঁজর 
তনু মনে সংশয় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত মুখোশধারী দুর্বৃত্ত 
 সন্তর্পণে লোকালয়ে গিরগিটি রঙ পাল্টায় ক্ষণে ক্ষণে 
জঙ্গি সন্ত্রাসী তপবনে হায়েনার রেডিয়াম জ্বলজ্বলে চোখ 
থাবা বসানোর পাঁয়তারায় লিপ্ত!

মানবতার লেবাসধারী প্রতারক ভন্ড সুশীল 
উচ্ছন্নে উদ্ভাসিত অন্ঙ্কুরিত সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন
দেশপ্রেমী জনতার সোচ্চার হওয়া অত্যাবশ্যক 
ষড়যন্ত্রের বিষ বাষ্প ধেয়ে আসছে জনতা সোচ্চার 
ভিনদেশী কৈতর ফসলী জমি করছে উজাড় 
সাবধান সাধু ঝিনুকের আবরনে মুক্তা সদৃশ্য বিষানল 
বুকের পাঁজরে দাউদাউ দাবানল!

Sunday, November 3, 2024

ভাইফোঁটার আয়োজন -- অরূপ দাস

     ভাইফোঁটার আয়োজন 
     অরূপ দাস 
     ০৩/১১/২৪
আকাশ খুশি,  বাতাস খুশি,  খুশি ভাইবোন,
চারিধারে খুশির গান,কান পেতে সব শোন।
মিলেছে আজ ভাই বোনেরা  একসাথে ভাই ফোঁটাতে, 
কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া,উৎসবে তে সবাই মাতে।

 চলছে  কত  খানা  পিনা!     নূতন  নূতন  উপহার, 
ভায়ের কপাল ফোঁটায় ভরা,কাঁটায় ভরা জম দুয়ার।
কি হবেরে  তাদের ফোঁটা!-   যারা  রয়েছে  ফুটপাতে তে, 
সকাল সন্ধ্যে   ভিক্ষে করে,   পায়  না  খাবার  জোটাতে।

চন্দ্র বলে, ‘ফুটপাতে তে  প্রদীপ হতে চাই,’
সূর্য বলে , ‘আলো দেবো, চিন্তা কিছু নাই।’ 
বাগান বলে,‘গাঁথবো মালা,চাই যে কুসুম ফোঁটাতে’, 
লতা বলে, ’দুলিয়ে দেবো, আমার সুখের দোলাতে’। 

মাটি বলে,‘ ’ললাট খানি সাজিয়ে দেবো চন্দনে’,
আকাশ বলে,‘ বাঁধবো আমি তারার রাখি বন্ধনে।’
পাতারা সব এক সাথে তে   চায় যে  বাতাস ছোটাতে,’ 
পাখীরা  কয়, ‘আমরা আছি,   মিলন গীতি  শোনাতে।’

 দুর্বা বলে,‘আমি আছি, হোকনা আশীর্বাদ’, 
 ধান্য বলে,‘শুভ কাজে আমিও নাই বাদ।’ 
 ভাই বোনেরা এক হলে সব,-পারবে দুঃখ গোছাতে, 
 মায়ের মুখে ফুঁটিয়ে হাসি, পারবে রে জল মোছাতে।

 রামধনু কয়,‘সাত রঙে তে স্বপ্ন জাল বুনি,’
 শঙ্খ বলে, ‘আমি আছি   দেবো জয়ধ্বনি’। 
 রাজপ্রাসাদে,   ফুটপাতে তে,   সকল  গরীব  বাসা তে, 
 এক সাথে সব  ভাইফোঁটা হোক  মধুর মিলন মেলা তে।

পল্লী গাঁয়ের মানুষ -- আশীষ খীসা

পল্লী গাঁয়ের মানুষ
আশীষ খীসা
০৩।১১।২০২৪ ইং
দুরন্ত মন ছুটছে চলে
পাগলা ঘোড়ার মত,
চষে বেড়াই পাহাড়,ঝিরি
ইচ্ছে জাগে যত।

পল্লী গাঁয়ের মানুষ আমি
প্রিয় যে আমার গাঁ,
এদিক-ওদিক না ঘুরলে যে
জীবন লাগে খাঁ খাঁ।

রোদ লাগেনা ঝড় লাগেনা
ঘুরে বেড়াই পাহাড়,
যেথায় ভালো লাগে আমার
সেথায় করি আহার।

খাল-বিল,নদী-নালা,ঝিরি
ছুটে যে চলি প্রায়,
মনের ইচ্ছে পূরণ করি
নেই এত অভিপ্রায়।

ভ্রমণ পিপাসূ ব্যক্তি আমি
ভ্রমণ করি সদা,
যেথায় ভালো লাগে আমার
যাই যে বারবার তথা।

পল্লী গাঁয়ে করি বিচরণ
পল্লী গাঁয়েতে বাস,
মাটির গন্ধ লেগে থাকে
প্রায় সারা বারো মাস।

ভাইফোঁটা -- ডাঃ বিভাস চন্দ্র বিশ্বাস



               ভাইফোঁটা
     ডাঃ বিভাস চন্দ্র বিশ্বাস
             ০৩/১১/২০২৪
চর্চিত চন্দনে          মধুর বন্ধনে
            নন্দিত ভাইফোঁটা ,
হৃদয় স্পন্দনে    দ্বিতীয়া লগনে 
            প্রোথিত দিব্যঘটা ! 

পুষ্পিত নন্দনে   প্রিয় ভাইবোনে
             নব উদ্যমে হাঁটা ,
আপ্লুত মননে      শুভাশীষ সনে
            যম মৃত্যুতে কাঁটা  !

বাংলার রীতি     মানব সম্প্রীতি
          তাই হিল্লোলে ছোটা ,
পার্বণ সুকৃতি       বিশ্বপরিচিতি
        প্রেম কল্লোলে ফোটা !

ভগ্নির'ই রীতি        দুশমন ভীতি
           মেলবন্ধনেই সাঁটা ,
অগণিত স্মৃতি     হিন্দোল গীতি
        তাই শুভ ভাইফোঁটা !!


কৃষকরানী -- দুলাল চন্দ্র দাস

কৃষকরানী 
দুলাল চন্দ্র দাস
৩/১১/২৪
তখন গ্রীষ্মের গোধুলি বেলা
সূর্য মাঠের শেষে,
কাস্তে হাতে পথের মাঝে
কৃষক রাণীর বেশে।

আঁধারে করবে গ্ৰাস পৃথিবীর
তখনও রাণী  হাঁটে,
কলির অসুর ঝোপের আড়ে
দেখেই রাণী চটে।

ত্রিশুল ছেড়ে কাস্তে ধরে
কৈলাশের দুর্গার রূপ,
বিকট মুর্তি কলির দুর্গার
অসুর হয়না চুপ।

ফুলের মধু করবে পান
অলির বড়  আশা।
জানেনা অসুর কলির দুর্গার
মহাদেব হলো চাষা।

অগ্নি মুর্তি করবে ধারোন
নিশি কালির বেশে,
মারবে অসুর কাস্তে হাতে
অরাজকতার এই দেশে।

Friday, November 1, 2024

নিরাসক্ত এক কবি -- অরুণ কুমার মহাপাত্র

নিরাসক্ত_এক_কবি
অরুণ কুমার মহাপাত্র 
০১/১১/২০২৪
কবি ,তোমাকে দেখতে ফিরে 
এসেছি গাঁয়ে...
তোমার কাছে এলে মনে হয়
ডালাপালা মেলে পাথরের বুকে 
জেগে ওঠে জীবন...
কাঠের স্তব্ধ ঘর , বারান্দা , রেলিং -এ
বন্দী তুমি...
সমস্ত গ্রাম জুড়ে তোমাকে নিয়ে 
হাজার কথা...
যেন গ্রামময় বেজে চলে অন্য 
এক সুর....
তবুও তুমি নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে বেঁচে আছো 
তোমারই রঙ মেখে...
তুমি তোমারই মতো তোমারই আকাশে 
উড়ছো অনন্ত পাখির মতো...
দেখে মনে হয় পৃথিবীর এক
বিধ্বস্ত কবি তুমি....  ।
জনান্তিকে ডেকে বললে তুমি একদিন‌
আমায়---
বিধ্বস্ত নই...
ধরণীর নিরাসক্ত এক কবি আমি... ।

নতুন ভোরের খোঁজে -- সুজিত শর্মা বিশ্বাস

নতুন ভোরের খোঁজে
সুজিত শর্মা বিশ্বাস 
০৭/১০/২০২৪

মন্দিরে সব মুর্তি ভেঙে কি পেয়েছিস ফল ?
কেউ কি তোদের ভাঙতে বলে সত্যি করে বল
কোন হাদিসে লেখা আছে 
দেখা সকল লোকের মাঝে 
নয়তো সবাই বুঝবে দেশে তোরাই আসল খল।

সবাই জানে নাই কোনো প্রাণ শুধুই দেবীর রূপ
মৃন্ময়ী রূপ চিন্ময়ী হয় জ্বাললে প্রদীপ ধূপ
ধূপ প্রদীপে সুগন্ধ ময়
তখন দেবী জাগ্রত হয়
জানিস কিছু ? নাই কোনো জ্ঞান বাঁচিস অন্ধ কূপ।

বুদ্ধ  খ্রিষ্ট  কৃষ্ণ  নবী  হয়তো  ভিন্ন  মত 
ধর্মে বর্ণে থাকনা প্রভেদ মিলবে একই পথ
কেউ বা ঘরে মুর্তি পুজে
মুর্তি বিনা কেউ বা খুঁজে
বুকের  মাঝে  রক্ত  ঝরে, রয়না  মানুষ  সৎ !

সময় হলো জাগরে সবাই আয় না ঘরের বার
মনের  দুয়ার  দে  খুলে  দে  বন্ধ  আছে  যার 
হাত মিলিয়ে চলরে তোরা
আসবে আবার নতুন ভোরা
চলবি  সবাই  পাশাপাশি  রুখবে  সাধ্য  কার ?