শব্দব্রহ্ম
নীলাভ
০৫/১১/২০২৪
প্রিয় শব্দ,
তুমিই নাকি ব্রহ্ম!
তুমিই পূজা, তুমিই প্রার্থনার মন্ত্র
তুমি প্রেয়ার, তুমি যে সমর্পন!
এই যে পুষ্পাঞ্জলি দেবীর চরণে প্রার্থনার সাথে
মুখে বা মনে মনে,
এ তোমাকে ছাড়া , সম্ভব কি?
তুমি এক মানসিক তরঙ্গও
তুমিই তো মাধ্যম, নিরাকারের সাথে সংযোগ গড়ে তুলতে মহামন্ত্রজপ করছেন যিনি
তাঁরও সাধনপথ তো তুমিই,
রোদে -জলে ভিজে বা গুহায় -গিরি কন্দরে
হাজার তপস্যা শেষে সাধক পান তোমার বাণী,
তখন উনি ব্রহ্মজ্ঞানপ্রাপ্ত ব্রহ্মর্ষি
প্রিয় শব্দ,
তুমি ইষ্ট!
জপমন্ত্র বীজমন্ত্র ছাড়া হয় না যে সাধনা!
মৌন চোখবন্ধ তাপসও, মনে মনে জপছেন
তোমাকে
মহামন্ত্র দিয়েই,
আর নাহলে! ভাবনা আর চেতনাতেই
শব্দ, তোমার শরীর আছে কি?
ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সির ছবিকে শরীর বলা যায় কি?
শব্দ! তুমি তো তরঙ্গ,
তুমি বাতাস বয়ে, মেঘ ছুঁয়ে,মনের গতি নিয়ে
পৃথিবীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে এসে
কথা হয়ে বেরিয়ে আসো মোবাইলের স্পিকার থেকে, সেকেন্ডর একটা মাত্র অঙ্কেই!
মহাবিস্ফোরণে সেদিন শোনা গিয়েছিলো কি, কোনো শব্দ?
কে শুনেছিলো সেই "বিগ ব্যাঙ "?
স্পন্দন থেকেই তোমার উৎপত্তি,
কম্পন থেকেই তো বেরিয়ে আসো তুমি?
কারুর কাছে সেটা 'ওম' ধ্বনি, আর কারুর কাছে
প্রথম জ্যোতি, বাইবেলবর্ণিত -"লেট্ দেয়ার বি লাইট,এন্ড দেয়ার ওয়াস লাইট "
শব্দ! তোমার শরীর আছে জানি,
এই তো তোমার শরীর দিয়েই তো লিখছি যে এখন
আমার চিন্তা - চৈতন্য, ব্যক্তিগত অথবা নিরপেক্ষ
তোমার শক্তিতেই তো
জন্ম নিলো 'মানুষ এবং ভাষা', গোষ্ঠী,পরিবার,
এলাকা, গ্রাম, নগর, জাত,ধর্ম, রাষ্ট্র, এবং
সবশেষে "ঈশ্বর"
প্রকাশ পেল অনুভব - শব্দনগর,
জন্ম নিলো
মানবধর্ম, মনুষত্ব - সবার উপরে মানুষের সত্য
প্রিয় শব্দ !
আমার আঙুল হয়ে
তুমি নেমে আসছো কোথা থেকে যে!
কোথায় যে তোমার আবাস?
কে যে পাঠায় বাণী!
একদিন মুখ দিয়ে জন্তুর মত আওয়াজ বের করতে করতে করতে সেই শব্দই নিঃশব্দে আজ
আঙ্গুল দিয়ে বেরিয়ে আসে চেতনাচৈতন্য থেকে
বিচিত্র এই সৃষ্টিকে তোমাকে দিয়েই করি
বর্ণনা আর বন্দনাও,
তোমাকে দিয়েই তাঁর কাছে করি প্রার্থনা -
আমার মধ্যেই আছেন যিনি, প্রতিটি বিন্দু আর
সৃষ্টিকনায় আছেন যিনি,
আমারও কোনোদিন জন্ম অথবা মৃত্যু হয়েছিলও কি?
সৃষ্টির শুরু থেকেই তো প্রতিটি কনায় আর শিখায়
আছি তো আমি
এই আমির কোনো আকার হয় না
কোনো রূপ হয় না, এই আমি অণু,এই আমি পরমাণু,
এই আমি সম্পূর্ণ নিরাকার
কারণ এই আমি আছি সর্বভূতে,
যদি সৃষ্টি হয় কোনো একটা বিন্দু থেকেই?
তাহলে! সেখানেই তো লুকিয়ে সম্পূর্ণ আগামীও!
বিন্দুটাই যে ব্রহ্মান্ড!
আমার কি জন্মমৃত্যু নেই তাহলে কোনো?
নেই কি মোক্ষ?
শুধুই কি পরিবর্তন?
শুধুই পদার্থ?লয় নেই, বিনাশ নেই, আছে যার শুধু বারেবারে রূপ বদলানো?
কিছুদিন যদি আমি মানবদেহে, তারপর কি কিছুদিন বায়ুদেহে? পঞ্চভূতে?
তারপর প্রাণ আসে ফিরে আবার কোনো এক গর্ভে!
কে যে করে চালনা? কি সেই উদ্দেশ্য?
এটাই কি পুরোনো বাস আর বাসা পরিবর্তন করে নতুন জামাকাপড়, নতুন শরীর ধারণ,
এটাই কি তবে - জাতিস্মর?
প্রিয় শব্দ! চোখ বন্ধ করে কত কথাই তো ভাবছি,
কত ছবিই দেখছি এখন,
তুমিই তো আসছো সেই ভাবনা গড়তে,সেই ছবি আঁকতে
ওই যে কোল্ডরিজ এখন কুবলা খানের
প্রাসাদ তৈরী করতে শুরু করলেন,আকাশে
দেখাও যাচ্ছে শব্দের তৈরী ওই অনুপম নগরী
এ একটা মিরাকেল, এ এক আশ্চর্য!
একমাত্র শব্দের শক্তিই পারে করতে এই সৃষ্টি,
জানাডুর সেই জাদুনগরী!
চোখ দিয়ে নয়, অন্তরের দৃষ্টিপ্রদীপে দেখতে হয় যাকে
"অ মিরাকেল অফ রেয়ার ডিভাইস
অ সানি প্লেসার ডোম উইথ কেভস অফ আইস"
ওই যে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন অপমানহত কালিদাস,
প্রজ্ঞাপারমিতার কাছে চাইছেন আকুল হয়ে -
" বাণী দাও! বাণী দাও, হে দেবী, হে দেবী!"
ঐযে! বিড়বিড় করছেন ডেনমার্কের রাজপুত্র
শব্দ-রাজপুত্র,
"ওয়ার্ডস, ওয়ার্ডস, ওয়ার্ডস "
কাঠের টেবিলে ঝুঁকে, রাতের মোমবাতিতে
হাতে পাখির পালকের কলমটা নিয়ে
দোয়াতে ডুবিয়ে স্বর্ণ অক্ষরে
শেক্সপীয়ার,রচনা করছেন এক মহাকাব্য -
মহাসৃষ্টি হচ্ছে, এক অমরকথার,এক মহাকবিতার,
"মোনালিসা অফ লিটারেচার "
নাম -
"হ্যামলেট্ "