হিমু
শিবপ্রসাদ মণ্ডল
৭/১১/২৪
মলয়, মহুয়া ও মমতাজ প্রথম শ্রেণী থেকেই একসাথে পড়াশুনা করতো ওদের গ্ৰামের বিদ্যালয়ে।উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর--মহুয়া ও মলয় কোলকাতায় ডাক্তারি পাশ করে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার হয়েছে।
মমতাজ ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ. ; পি.এইচ.ডি, করে এক মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেছে।
মলয়কে নিয়ে মহুয়া ও মমতাজ দুজনেরই মনের গভীরে দুটি প্রেমের চারাগাছ জন্ম নিয়েছে,তা' কেউ কাউকে জানতে দেয়নি।মলয়-মহুয়া হিন্দু বাড়ির ছেলেমেয়ে কিন্তু মমতাজ মুসলিম বাড়ির মেয়ে, তাই তার প্রেম নীরবে নিভৃতে কাঁদে।মলয়কে কোনোদিন কোনোকিছুই বলে উঠতে পারেনি।
গত ফাল্গুনে মলয়ের সাথে মহুয়ার বিয়ে হয়ে যায়। মমতাজ বৌভাতের দিন এসে দুটি ফুলের তোড়া , দুটি আংটি ও একটি পুতুল উপহার দিয়ে চলে যায়।
এ বছর মলয় ও মহুয়া গ্ৰামের বাড়িতে পুজোর ছুটি কাটাবে বলে একটি গাড়ি ভাড়া করে গ্ৰামে ফিরছে, ঐ সময় মহুয়া ছয় মাসের গর্ভবতী।
হঠাৎ ওদের গাড়ির সাথে এক বড় ট্রাকের ধাক্কা লাগলো। ওদের গাড়ি দু'বার পাক খেয়ে পাশের খালে পড়ে গেলো।প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে মহুয়ার অসহ্য পেটের যন্ত্রনা শুরু হলো।
অন্য একটি গাড়ি ভাড়া করে মলয় দ্রুত ওকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলো। ডাক্তার অপারেশন করে জানান যে মহুয়া এ জীবনে আর মা হতে পারবে না !!
হাসপাতাল থেকে মহুয়া ফিরে আসতেই মমতাজ ওদের বাড়িতে দেখা করতে গিয়ে দেখে-- মলয় চোখের জল ফেলতে ফেলতে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর মহুয়ার চোখ দিয়ে জল ঝরতে ঝরতে বালিশ ভিজে গেছে।
বারবার প্রশ্ন করে মমতাজ সবশেষে জানতে পারে যে মহুয়া এ জীবনের মতো গর্ভধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
হঠাৎ মহুয়া--মমতাজের দেওয়া বৌভাতের দিন সেই পুতুলটা তারই কোলে রেখে বলে," তুই এতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা কর।তুই ছাড়া এই কাজ আর কারো দ্বারা সম্ভব হবে না।"
মমতাজ অতি বুদ্ধিমতী, তার উপর ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপিকা। মহুয়ার অন্তরের কথা তার আর বুঝতে বাকি রইলো না।
মহুয়া আইনের সাহায্য নিয়ে মলয়ের সাথে মমতাজের বিয়ে দিয়ে একসাথে তিনজন থাকতে শুরু করলো এবং এক বছর বাদে মমতাজের কোল আলো করে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হলো।
মহুয়া নিজেই সন্তানের নাম রাখলো-- হিন্দু ও মুসলমান এই দুটি শব্দের প্রথম অক্ষর নিয়ে "হিমু"।
এমনটা তো হতে পারতো -- মলয় মহুয়াকে ছেড়ে আবার বিয়ে করেছে, মহুয়া মলয়কে ছেড়ে আত্মহত্যা করেছে, মহুয়া-মলয় দুজনেই সবকিছু ছেড়ে কাশীবাসী হয়ে গিয়েছে, মহুয়া মলয় দুজনেই আত্মহত্যা করেছে, মমতাজ মহুয়ার কথা না বুঝার ভান করে নিজের মতো পাত্র দেখে বিয়ে করেছে। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি বরং একটি comi-tragedy -- সুন্দর একটি পরিণতি নিয়ে tragi-comedy তে পরিণত হয়েছে।
ওরা সকলেই উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিতা। সর্বোপরি ওরা জাতি ,ধর্ম ও বর্ণের গন্ধ লাগা কলুষিত পোশাক খুলে ফেলে এবং ঘুণধরা সমাজের নানান বিভেদ প্রাচীরগুলোকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে এক নতুন আলোর পথের সন্ধান পেয়ে সুন্দরতম জীবনের ঠিকানা নিজেরাই খুঁজে নিয়েছে।
আসুন না, আমরাও সবাই মিলে চেষ্টা করে দেখি-- সমাজের পচা,গলা, দূষিত এবং বিষাক্ত ঘা-গুলোকে প্রীতির ঔষধ প্রয়োগ করে সারিয়ে তুলতে পারি কিনা!!!
ওরা যখন পেরেছে আমরাও নিশ্চয়ই পারবো।
তবে নেশার কাজল চোখে লাগাতেই হবে!!
যাঃ-- অনেকক্ষণ বকতে বকতে হিমু ও তার পরিবারের কথা ভুলেই যাচ্ছিলাম।
মলয়, মহুয়া ও মমতাজের অভিনব সিদ্ধান্তের জন্য-- ওদের জানাই উষ্ণ অভিনন্দন।আর ছোট্ট সোনা 'হিমু'র জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা।
No comments:
Post a Comment