Saturday, July 10, 2021

সন্ধ্যার মেঘমালা

সন্ধ্যার মেঘমালা


আমার দুঃখগুলো ঢেকে রেখো রাতের আকাশ
হাসিটাকে ছড়িয়ে দিও উদাসী বাতাস 
স্বপ্নগুলোর আঁকিবুকি  ,
হাজার তারার ঝিকিমিকি 
মনের ঘরে সিধ কেটে যাক সোনালী আভাস। 

দাঁড়িয়ে আছি আপন মনে রূদ্ধ ঘরের কোনে 
অলস সময়,  হতাশ জীবন  , উদাস , শূণ্য মনে  ।
যেদিকে তাকাই অসহায় মুখ ,
অজানা আশঙ্কায় দুরুদুরু বুক
এক আকাশ ভাবনা জাগে রাতের সঙ্গোপনে  ।

আমার গোপন কান্না যত বালিশ ভেজায় ,
নোনাজলের ঢেউ তুলে যায় শিরায় শিরায় 
হঠাৎ আসা ঘূর্ণিঝড়ে 
বুকের তটে ঝাপটা মারে 
এক পৃথিবী হাহাকারে  মনকে কাঁদায়  ।

কাঁদায়  -- শুধু কাঁদায়  , আমায় ব্যস্ত করে 
ওঠায় - নামায়,  হাসায় - কাঁদায়  , খেলা করে 
সম্মোহনী মায়ার বশে ,
জীবনজুড়ে রঙ্গে রসে
দোদুল দোলায়  , আপন ভেলায় মগ্ন করে  ।

জীবন যখন পূর্ণ আমার হতাশ্বাসে ,
কানায় কানায় পূর্ণ কলস  , নিয়তি হাসে 
এত বড় নিষ্ঠুরতা ,
শুধুই কালো  , মেদুরতা ,
দিন -রাতের বিবাদ আমার চোখে ভাসে। 

Friday, July 2, 2021

গৌতম তরফদার

নতুন অধ্যায় 
গৌতম তরফদার 

               বিভিন্ন অনলাইন সাহিত্য সংস্থায় লেখালেখির কারণে পাঠক মহলে বিপ্রতীপ তালুকদারের পরিচিতি অনেকটাই বেড়েছে। বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। বিপত্নীক।
বছর দুয়েক আগে পাহাড়ের কোলে বেড়াতে গিয়ে আকস্মিক হড়কা বানে স্ত্রী আর আট বছরের একমাত্র কন্যাকে হারিয়েছে। সেই থেকে বিপ্রতীপ পুরোপুরি একা। মা-বাবা কবেই গত হয়েছেন। দিদি তার আপন পরিবার নিয়ে আসামের গোয়ালপাড়ায় থাকে। বিপ্রতীপ অফিস আর লেখালেখির মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছে।
      
              ফেসবুকে প্রায় প্রতিদিন বেশকিছু ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। বিপ্রতীপের বন্ধু সংখ্যা বাড়ানোর তেমন আগ্রহই নেই। একদিন কেতকী মজুমদার নামের একজনের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। প্রোফাইল পিকচারে একটা ছোট্ট মেয়ের ছবি। বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। হুবহু যেন তার হারানো মেয়ের মুখ। স্মৃতির জোয়ারে ভেসে যায় বিপ্রতীপ। আর কিছু দেখতে পায় না প্রোফাইল লক থাকার কারণে। আনমনেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে নেয়। 

             বন্ধুত্ব শুরু। কেতকীর স্বামী রাজশেখর বছর কয়েক আগে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে। অভিশপ্ত জলন্ত কামরায় ওরা তিন জনই ছিল কাশ্মীর টুর থেকে ফেরার পথে। কেতকী তার মেয়ে পল্লবীকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও ভীষণ রকম জখম হয়। অবশেষে মা-বেটি সুস্থ হয় কিন্তু রাজশেখরকে বাঁচানো যায় নি। স্বামীর পেনশন আর ঘর ভাড়ায় টাকায় মা-বেটির সংসার চলে। 

              বিপ্রতীপের কবিতা আর গল্পের অসম্ভব ভক্ত। লাইন ধরে ধরে বলে দিতে পারে। নিজেও অল্পবিস্তর লেখালেখি করে। সেই সূত্রেই খোঁজ, যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব। ফেসবুক,  ম্যাসেঞ্জার আর হোয়াটস্অ্যাপে নীরব কথা আর অনুভূতির বিনিময়ে দ্রুত ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

             দু'জনেই কোলকাতার বাসিন্দা।  বিপ্রতীপ থাকে বেহালা আর কেতকী দমদমে। সম্পর্কের গভীরতা যত বাড়তে থাকে বিপ্রতীপ দেখা করার জন্য বারংবার অনুরোধ জানাতে থাকে। কিন্তু কেতকী প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। বলে," এভাবেই এগিয়ে চলুক আমাদের সম্পর্ক। দু'জনের জীবনেই চরম দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আজ আমরা পরস্পরকে মানসিক ভাবে পেয়েছি। সামনাসামনি দেখা আর আমার সান্নিধ্যের ছোঁয়া যদি তোমার অপছন্দ হয়, তখন ?  বাস্তবের জটিলতায় যদি আবার তোমাকে হারাই, সইতে পারবো না আমি।" 

           কিন্তু বিপ্রতীপ নাছোড়বান্দা। দেখা করার অভিলাষে মেয়ের দিব্বি দিয়ে বসে। দু'জনেকেই আসতে বলে। কেতকী কথা রাখে। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে মিলেনিয়াম পার্কে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বিপ্রতীপের সামনে দাঁড়ায়। চমকে ওঠে বিপ্রতীপ। কেতকীর ডান গাল জুড়ে বিচ্ছিরি পোড়া দাগ। চামড়া কুঁচকে আছে।
  
        --- "আমি তোমায় অনেকবার বলেছিলাম আমায় দেখতে চেয়ো না। অশরীরী সম্পর্ক থাক দুই হৃদয়ে।" 

        -- " দূর পাগলি! এই জন্যই তুমি এড়িয়ে যাচ্ছিলে? যে হৃদয় জয় করে, সে কি আটকে যাবে নশ্বর শরীরে! তোমাকে আর বেটিকে নিজের করে নিতে চাই।  তুমি রাজি তো ? "

অঞ্জন চক্রবর্তী

পিতৃদিবস
অঞ্জন চক্রবর্তী
============
      অতনু একটি মার্কেন্টাইল ফার্মের কর্ণধার, দম ফেলবার সময় নেই, আরও আরও ওপরে উঠতে হবে, সীমাহীন প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, নিজের কেরিয়ার ছাড়া কিছু বোঝে না l অতনুর বাবা তার সর্বস্ব নিয়োগ করে ছেলেকে মানুষ করেছেন l ছেলে আজ এক ঈর্ষণীয় জায়গায় পৌঁছেছে l নিজের সংসার করেছে, যেখানে বাবা বেমানান হওয়াতে বাবাকে অতনু রেখে এসেছে দামি বৃদ্ধাশ্রমে l বাবা আপনমনে ভাবেন ফেলে আসা দিনের কথা l পিতৃদিবসের দিন সকালবেলায় অতনু হন্তদন্ত হয়ে হাজির বৃদ্ধাশ্রমে, বাবাকে বললো শিগগিরই গেঞ্জি ছেড়ে ভাল পাঞ্জাবী পর একটা, বৃদ্ধ উদ্বেলিত, ভাবেন হয়তো ছেলের মনের হয়েছে বদল, আবার তাঁর জায়গা হবে সংসারে l বৃদ্ধ পাঞ্জাবী পরে এসে দাঁড়ালেন,  ছেলে বলল এসে আমার পাশে দাঁড়াও ঠিক এইভাবে, বৃদ্ধ দাঁড়ালেন, ছেলে নিজেকে বাবার গলা জড়িয়ে ফটো তুললো, বললো
     বাবা, আমার সময় নেই আসি, মনে মনে বললো এই ফটোটা পোস্ট করবো ফেসবুকে
    আজ পিতৃদিবসের দিনে, কমেন্টে ভেসে যাবে, কেউ জানবেও না, অতনুর বাবা পরে আছে বৃদ্ধাশ্রমে l

সঞ্জীব রায়

পুত্ৰং দেহি 
ডঃ সঞ্জীব রায় 


    তড়িঘড়ি করে মধ্যমগ্রামে চারমাথা মোড়ের দোতলা বাড়িটা জলের দরে বেচে দিলেন সঞ্জয় সেনের ছেলে অনুব্রত। হাতে সময় নেই, দশ দিনের ছুটিতে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আসা। কি দামে বিক্রি হলো সঞ্জয় বাবু সেটাও জানতে পারেননি। সঞ্জয় সেনের আপত্তি ছিল, কিন্তু গিন্নি শুনলে তো। নাতি হয়েছে, তাঁর ফুর্তি ধরে না যে। ছেলে পাসপোর্ট আগেই করে রেখেছিল। সঞ্জয়বাবু জানতেন যে আমেরিকার ভিসা করতে ন্যূনতম দুদিন সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু ছেলে বললো এখন সবই নাকি অনলাইনে হয়ে যায়। তালেবর ছেলের সঙ্গে কথা বলতে আর ইচ্ছা করেনি।

    বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে পাসপোর্ট পরীক্ষা হওয়ার সময় কেমন যেন সন্দেহ হল সঞ্জয়বাবুর। তিনি দেখলেন একপাশে গেটম্যানকে টেনে নিয়ে গিয়ে অনুব্রত তার হাতে একগাদা ৫০০ টাকার নোট গুঁজে দিল। বিমানবন্দরের ভেতরে গেলেন স্বামী-স্ত্রী। একটু উত্তেজনা হচ্ছে। দীর্ঘ বিমানযাত্রা বলে কথা। ঘন্টা কয়েক বাদে ছেলেই জানায় প্লেন লেট আছে। চিন্তার কিছু নেই। ও ভেতরে যাচ্ছে, কিছু কাগজপত্র দেখানো, সই-সাবুদ বাকি।

     মাঝরাত পার হয়ে প্রায় শেষ প্রহর। ঠান্ডা লাগছে। সোয়েটার চাদর গায়ে দিয়ে অভুক্ত রয়েছেন দুজনে। না পাচ্ছেন ছেলের দেখা, না পাচ্ছেন কোনো খবর। হাতে টাকা-পয়সা, পাসপোর্ট, টিকিট কিছুই নেই। এয়ারলাইন্সের এক ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করতে এগিয়ে এলেন। সব শুনে তিনি তো তাজ্জব। বললেন রাত ১টা ২০ মিনিটে ওয়াশিংটন যাওয়ার প্লেন উড়ে গেছে এবং ছেলে তাতে বোর্ডিং করেছে। এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল বৃদ্ধ দম্পতির পাঁজর থেকে।

    তারপরের দীর্ঘ টানাপোড়েন ইতিহাস। বর্তমানে তাঁদের ঠিকানা ঠাকুরপুকুরের এক বৃদ্ধাশ্রম 'অমলকান্তি'। সেখানে একতলার এক স্যাঁতস্যাঁতে ১০/১০ ঘরে ঠাঁই পেয়েছেন। বিনা পয়সায় আর কিই বা জুটবে? কোন অভিযোগ নেই। ঈশ্বর ধন্য, এটুকু দিয়েছেন।

   একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, সঞ্জয়বাবু পরে জানতে পেরেছিলেন বাড়িটা ৭৮ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।


শ্যামল মিশ্র

রোমন্থন
শ্যামল কুমার মিশ্র

    ঝুলবারান্দায় মুখোমুখি বসে শোভন আর রুমান্না। সকালের নরম রোদ্দুর এসে পড়েছে। বাতাসে অল্প অল্প শীতের আমেজ। সামনের বাগানে শিউলিগুলো ঝরে পড়েছে। সবুজ ডালের আড়ালে কাজল পাখি গান গেয়ে চলেছে। সকালের এই সময়টা বড় ভালো লাগে শোভনের। রুমান্না এসে আলতো করে মাফলারটা জড়িয়ে দিয়ে শুরু করে ফেলে আসা জীবনের নানা কথা। 

   দেখতে দেখতে শোভন আর রুমান্নার দাম্পত্য জীবনের সিলভার জুবলি পেরিয়ে গেছে। রুমা বলে ওঠে---''জীবনটা বড় তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেল তাই না? মনে পড়ে এই সেদিন যেন আমরা ঘর খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। মধ্যমগ্রাম বারাসাত এমনকি কলকাতাতেও অনেকে ঘর দিতে চায়নি। যখনই শুনেছে আমি 'রুমান্না খাতুন' তখনই দূরে সরে গেছে। তাদের 'গোপালে'র কথা মনে হয়েছে''। মৃদু হাসি খেলে যায় শোভনের মুখে। 'আসলে বড় অদ্ভুত এই দেশ।এদেশ বুদ্ধ, মুহাম্মদের দেশ। এদেশ শ্রীচৈতন্যের দেশ যার পরমভক্ত যবন হরিদাস। যিনি একজন মুসলমান। এঁরা তো সেই গোপালেরই ভক্ত। এটা খানিকটা সংস্কারের মতো মিশে রয়েছে। কার্যকারণ ব্যাখ্যা হয়তোএদের কাছেও নেই'।

   বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস নামে রুমার।  আপনমনে সকালের খবরের কাগজের পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা জায়গায় এসে থমকে যায় রুমা। দৃষ্টি আকর্ষণ করে শোভনের। অতিমারিতে মৃত এক হিন্দু যুবককে পোড়াতে নিয়ে চলেছে চার মুসলমান যুবক। প্রতিবেশীরা কেউই আসেনি। রুমান্নার চোখ দুটো জলে ভরে ওঠে।

    শোভন বলে চলে---'বুঝলে জীবনের  সার সত্যটা কেউই বুঝলো না।  মানুষই সত্য। ধর্ম,জাত সবই মিথ্যা। এগুলো শুধু জীবনের এক একটা আভরণ। দর্পীর অহং। আভরণ খুললেই দেখবে জীবনের শাশ্বত সত্য রূপ'।

    রুমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফেলে আসা জীবনের নানা ছবি। নতুন সংসারী দুই যুবক যুবতী ঘর খুঁজে ফেরে। জীবনতরী এগিয়ে চলে এমনি নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে। অবশেষে ঘর মেলে।সংসারেরও শুরু হয়।...

   তারপর অনেকটা সময় পেরিয়েছে। জীবনের অপরাহ্ণ বেলায় পৌঁছে মনে হয় শোভনের জীবনের সবটাই অসুন্দর নয়। গোলাপের সৌন্দর্য নিতে গেলে কাঁটার আঁচড় ও যে খেতে হয়। ততক্ষণে রুমান্না গান ধরেছে--- 'আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইল না কেহ'...। 
     গানটা কখন থেমে গেছে মুখোমুখি বসে দুই প্রৌঢ় দম্পতি। পাশে রাখা মুঠোফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে একমাত্র ছেলের নাম। ধীরে ধীরে হাতটা বাড়ায় রুমান্না... 

(শব্দ সংখ্যা:৩১২)

সুতপা ব্যানার্জি

আসমান জমিন
সুতপা ব‍্যানার্জী(রায়)
     ছটু সিং এক সওদাগরী অফিসে দ্বারোয়ানের কাজ করে। বাবা-মা আর নিজের পরিবার নিয়ে একটা খুপরি ভাড়ার বাসায় থাকে। ভাড়াটা একটু কম হবে বলে সবচেয়ে ওপরে চারতলায় ওদের বাস। সিঁড়ি ভেঙেই যাতায়াত। সেদিন অফিস থেকে ফিরে শুনল-"মায়ের শরীরটা গরমে আজ ভীষণ খারাপ হয়েছে।গরমি জ্বর এসে গেছে"-কথা কটা বলে বউ সরলা রান্না ঘরে লেবু জল আনতে গেল। ছেলে বাবুল-"বাবা দুপুরে গরমে ঘরে টেকা যাচ্ছে না, আমরা বাসা বদল করতে পারি না?" ছটু-"এত কম ভাড়ায় কোথায় ঘর পাব বেটা, গরম কমলে সব ঠিক হয়ে যাবে।" ছোট মেয়ে শামলি বাবার হাত ধরে বায়না করে-"তাহলে বাবা আনো না একটা কুলার কিনে, দাদিও আরাম পাবে আর আমরাও একটু ঠান্ডা পাব।" সরলা স্বামীকে লেবু জল দিতে এসে মেয়ের আবদার শুনে ঝাঁঝিয়ে ওঠে-" ভাত কী করে জুটবে জানা নেই আবার কুলারের হাওয়া খাচ্ছে, যা ভাগ,নিজের বই খুলে বস।" ছটু-"শামলি কথাটা খারাপ বলে নি, চার-পাঁচ হাজার টাকায় হয়েও যাবে, দেখি অফিসে সাহেবের থেকে লোন পেলে মাসে মাসে কাটিয়ে নেব।" বাবার কথায় বাবুল আর শামলি খুব খুশী হল।

    পরদিন অফিসে গিয়ে প্রথমে বড়বাবুর কাছে গেল-"রায় বাবু আমার চার-পাঁচহাজারটাকা লোন লাগবে,আপনি একটু সাহেবকে বলুন না।" বড়বাবু-"কেন? আমি বলব কেন? তুমি সাহেবকে নিজের কথা নিজে বল।" ছটু কাজটা জটিল হয়ে যাওয়ায় দোনামোনায় পড়ে গেল, তবে বাড়ির পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সাহস সঞ্চয় করে পায়ে পায়ে সাহেবের কেবিনের দরজায় দাঁড়াল। পর্দাটা কাঁপা হাতে সরিয়ে-"একবার ভেতরে আসব স‍্যার?" ফাইলের দিকে চোখ রেখেই অফিসের মালিক ঝুনঝুনওয়ালা-"কী বলবে, দের কিঁউ, জলদি বোলো।" ছটু-"আজ্ঞে স‍্যার বাড়ির প্রয়োজনে আমার পাঁচহাজার টাকা লাগবে। আপনি মাসে মাসে কেটে নেবেন।" ঝুনঝুনওয়ালা-"অফিসের এখন অবস্থা ভাল না, আভি নেহি।" ছটু কাচুমাচু হয়ে-"গরমে মায়ের শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে, একটা কুলার কিনতাম স‍্যার।" ঝুনঝুনওয়ালা হাসিতে ফেটে পড়ে
কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে-" সবলোগ শুনো.. আমাদের ছটুর কুলার কেনার জন‍্য টাকা লাগবে...হা হা হা।" আরো কয়েকজন সেই বিদ্রুপের হাসিতে যোগ দিল। ছটুর চোখ ফেটে জল আসছিল। তা সামলে নিজের কাজের জায়গায় গিয়ে বসল। চাকরি বলে কথা, অপমান গায়ে মাখলে তো হবে না। যদিও মনটা খুব খারাপ হয়ে থাকল। পরদিন অফিস ফেরত পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরছে। দেখল রাস্তার উল্টো দিকে একটা এসি মেসিন বিক্রির দোকানে অফিসের সাহেব দাঁড়িয়ে। ছোটা হাতি করে নতুন বাক্সে ওনার বাড়ির এসি চলল। সাহেব চলে যেতে ছটু দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করল-"যে এসিটা বিক্রী হল, ওটার দাম কত?" দোকানদার-"কেন আপনি কিনবেন,ষাট হাজার টাকা।" ছটুকে শুনিয়ে শুনিয়ে দোকানদার বলতে থাকে-" ওনার অনেক বড় ব‍্যবসা। ওনার সব ঘরেই এসি আছে। সবই আমাদের দোকান থেকে কেনা। শুধু পোষা কুকুরের ঘরের এসিটা খারাপ হওয়ায় নতুন একটা কিনে নিয়ে গেলেন।" ছটু দোকান থেকে বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকায় আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ডিউটির পর একটা শপিং মলে বা কোন পেট্রল পাম্পে কাজ করে হলেও নিজের পরিবারের কষ্ট দূর করবে, তার মায়ের কষ্ট দূর করবে। সাহেবের দাক্ষিণ‍্যে নয়, নিজের নগদ টাকায় এই গরমেই কুলার কিনবে।

উমা মুখার্জি


ডাক্তার বাবু
 উমা মুখার্জী

       অনেকদিন আগের ঘটনা। আমার ঠাকুরদাদা ছিলেন ডাক্তার। খুবই সৎ ও দয়ালু ছিলেন। যত দুর্যোগ আর যত রাত - ই হোক, রুগীর বাড়ি থেকে ফোন এলে তিঁনি তৎক্ষণাৎ বেড়িয়ে পড়তেন, রুগী দেখার উদ্দেশ্যে।

      সেদিন ছিলো শ্রাবন মাসের সন্ধ্যা। অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঠাকুরদাদা ভাবলেন, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বেন। শুয়েও পড়েছিলেন। হঠাৎ, দরজার কড়া নাড়ার শব্দ। রাত্রি তখন বারোটা। বৃষ্টি হয়েই চলেছে। একটি লোক সঙ্গে ছাতা, আঁধারে মুখ দেখা যাচ্ছেনা, বলে ডাক্তার বাবু আপনি আসুন, নাহলে বাবু বাঁচবেনা।

      কথায় জানতে পারলেন, শহর থেকে একটু দূরে যেতে হবে। দেরী না করে, লোকটিকে নিয়ে গাড়ি করে চললেন রুগী দেখতে। এতো জল গাড়ি অনেকটা এসে আর স্টার্ট নিচ্ছেনা। লোকটি বলে, চিন্তা করবেন না, ছাতা এনেছি, চলুন, অল্প হাঁটা পথ। অগত্যা, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, লোক টি ছাতা ধরে নিয়ে যাচ্ছে, টর্চ জ্বেলে কিছু বোঝাও যাচ্ছেনা। বিদ্যুতের আলোয় শুধু একবার লোকটির মুখ দেখা গেলো, চোখ দুটি কোটরাগত, গালে মাংস বলে কিছু নেই।

      অল্প হাঁটার পর এলো রুগীর বাড়ি, আগেকার দিনের দোতালা বাড়ি। লোকটি গেট ঠেলে বললো আপনি সোজা চলে যান, প্রদীপ জ্বলছে ঐ ঘরে রুগী, বলেই অদৃশ্য।

     ঠাকুরদাদা এগিয়ে গিয়ে দেখেন খাটে মুখ চাপা দিয়ে একজন শুয়ে, শুধু একটা কোথা থেকে চেয়ার এগিয়ে এলো। রুগীর গলা খনখনে, বলে বসুন আপনি, আগে আমার কথা সব শুনুন, তারপর আমায় দেখবেন।

     কোণের দিকে দেখুন লাল বাক্স, ওতে আমার উইল আছে। আমার আর বাঁচা হবেনা। সময় হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলের ঠিকানা ওতে আছে, ত্যাজ্য পুত্র করেছিলাম। ওটা তাকে পৌঁছে দেবেন শুধু এই অনুরোধ টুকু রাখুন।

     এর পর মুখের চাপা গেল খুলে, আর অন্ধকারে ঠাকুরদার হাত তার হাতে ধরা বরফ শীতল এক কঙ্কাল শুয়ে বিছানায়।

    এক লাফে দৌড়ে ঠাকুরদা গাড়ির কাছে আসেন যখন, গাড়ি নিজেই ঠিক হয়ে গেছে, ঝড়, জল থেমে গেছে। বাড়ি পৌঁছে ভাবছেন কি করে হয়।

     সকাল হতেই আবার যান। দেখেন লাল রঙের বাড়ি, তালা দেওয়া। স্থানীয় লোকেরা আসে ভিড় করে, জানায় ছয় মাস হলো উনি মারা গেছেন।
তালা ভেঙে দেখা গেলো খাট নেই, চেয়ার নেই, তবে ঘরে একটা লাল বাক্স আছে কোণের দিকে, আর তার ভেতরে দলিল ও ছেলের ঠিকানা আর চিঠি।

   ঠাকুরদা সেটি নেন ও লোক মারফত নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন।

   শেষ দিন অবধি এই রহস্যের কিনারা তিঁনি করে উঠতে পারেননি। ভুত কি তবে সত্যি আছে?

সমাপ্ত।।

Tuesday, June 22, 2021

জামাই ষষ্ঠী

জামাই ষষ্ঠী 
----------------
ধীরেন গোস্বামী 
--------------------
মনটা পড়ে আছে শ্বশুর ঘরে
গিন্নি গেছে বাপের বাড়ি,
শ্বশুর বাড়ি যাবে হারাধন
মিষ্টি নিয়েছে এক হাঁড়ি।

বিছানায় শুয়ে ঘুম ধরে না
রেখে ঘড়িতে দৃষ্টি,
কতক্ষণে যে সকাল হবে
কাল জামাই ষষ্ঠী।

গিন্নি বলেছে ছুটি করিয়ে
আসবে শশুর ঘরে, 
সবাই মিলে বেড়াতে যাবো
বাঁকুড়া মুকুটমণিপুরে।

সকালে কাজ গুছিয়ে জামাই
নিয়ে মিষ্টির হাঁড়ি,
স্টেশনে এসে চাপলো ট্রেনে
যাবে শ্বশুর বাড়ি।

জামাই ষষ্ঠীতে শ্বশুর বাড়ি
পৌঁছে গেলো হারাধন,
শাশুড়ি মায়ের খুব আনন্দ 
বিরাট খুশি মন।

জামাইষষ্ঠীর ধুম

জামাইষষ্ঠীর ধুম
------------------------
 তপন কুমার পাল
 -------------------------
 জামাইষষ্ঠী মধুমাসে
 আবেগ ভরা পরব,
 ইহা নিয়ে বাঙ্গালীদের
 আছে অনেক গরব।

 নতুন জামাই আসবে বলে
 খুশির জোয়ার ঘরে,
 জামাইষষ্ঠীর আজকে যেনো
 আনন্দ না ধরে।

 ছোটো বড়ো সবাই মিলে
 আনন্দে যায় ভেসে,
 অবশেষে জামাই এলো
 খানিক মিষ্টি হেসে।

 শাশুড়ির মান রাখতে জামাই
 আনলো নতুন শাড়ি,
 শাড়ি পেয়ে শাশুড়ি মা
 হলেন খুশি ভারী।

 জামাই মেয়ে সবাই মিলে
 হবে ভারী মজা,
 জামাই তরে শাশুড়ি মা 
 বানায় মিষ্টি গজা।

জামাইষষ্ঠী


জামাই ষষ্ঠী
--------------
রঞ্জন ঘোষ
------------------
বৈশাখ গেলো জ্যৈষ্ঠ এলো 
জামাইরা সব মনমরা,
তাদের মনে দুঃখ এবার
শ্বশুরবাড়ির যাবার নেই তাড়া।

খরচা অনেক বাঁচবে এবার 
সব শ্বশুর মশাই দের,
করবেনা কেউ জামাই ষষ্ঠী‌
এবার জামাই বাবাদের।

ঘরে বসে থাকবে সবাই 
বাইরে যাওয়া মানা,
চুপচাপ সব থাকবে ঘরে 
শুনবে বসে ঘরে গানা।

বছরটা কি নীরস যাবে 
ভাবছে জামাই বাবা,
ভেবে ভেবে বুদ্ধি একটা
 মাথায় দিলো থাবা।

শ্বশুর মশাই অনলাইনে 
যদি খাবার অর্ডার দেন,
ঘরে বসে জামাই বাবা 
জামাইষষ্ঠী করে পালন।

খুকির জামাই


খুকির জামাই
--------------------
দীপক কুমার সিংহ
--------------------------
খুকির বড় আদরের জামাই
ষষ্টির দিনে নেই কামায় |
সকালে যত বাজারের বালায়
মাছ-মাংস,আম-কাঁঠালে তায় ||

শালা-শালীদের খুশীর অন্ত নাই
নতুন জামা শাড়ি চাই |
জামায়ের হাতে মিষ্টির বড় হাঁড়ি
শ্বশুর ঘরে খুশীর ছড়াছড়ি ||

খুকির জামাই মন্দ নয়
দিদিমা-স্বাশুড়ি সুমতির খুশীর অন্ত নাই |
নাতনি তার যতই করে মুখ
এক ধমকে করে তাকে চুপ ||

খুকির জামাই মুখে বাক্য নায়
পছন্দের তালিকায় সেরা তায় |
দাদু-শ্বশুর রঘুনাথের প্ৰিয় ভাই
বকর-বকর দুজনে করা চাই ||

মদন-খুকির আদরের বড় জামাই
খাওয়া-পরায় কোনো বাছ-বিচার নাই |
সাধারণের অতি সাধারণ মানুষ
ওড়ে না কখনো হয়ে ফানুস ||

জামাই ষষ্ঠী


জামাই ষষ্টী
-------------------
সঞ্জিত দিন্দা
--------------------
নতুন জামাই ষষ্ঠী খেতে
যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি,
আম কাঁঠালে ভর্তি গাড়ি  
হাতে মিষ্টির হাঁড়ি।

বেনারসি---ঢাকাই শাড়ি
নিয়েছে সে সাথে,
সম্মান স্বরূপ তুলে দেবে
ছয় শাশুড়ির হাতে।

তার ওপরে শালা শালী 
আছে দশটা নাকি,
মন যোগাতে জামাইবাবু
দেয় না কারো ফাঁকি।

হিন্দি ছবি--দেখার জন‍্য
বায়না ধরলে তারা,
জামাই হবে 'বলির পাঁঠা'
করবে খরচ সারা।

বড়ো বাড়ি করলে বিয়ে
থাকে শতেক জ্বালা,
জামাই শুনে আঁতকে ওঠে
পড়লে ষষ্টীর পালা।

জামাই এলো

জামাই এলো
-----------------
স্বপন দেবনাথ 
--------------------
শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে জামাই
মিষ্টির প্যাকেট ভরে, 
বৃষ্টি ভেজা গ্রামের পথে
বউকে সঙ্গে করে। 

গাঁয়ের পথটি বিরক্তিকর
কাদা এবং জলে, 
টোটো অটো যায় না বলে
জামাই হেঁটে চলে। 

ধুতি তোলে হাঁটুর উপর
ভরল তবু কাদা, 
শ্বশুর বাড়ির কাছে যেতেই
এলো বউয়ের দাদা। 

শ্বশুর বাড়ি ঢুকেই জামাই
হাঁফছেড়ে যে বাঁচে, 
দিদিকে আজ পেয়ে বোনটি
আনন্দেতে নাচে। 

আদরের জামাই কষ্ট করে
এলো শ্বশুর বাড়ি, 
শাশুড়ি মা আদর যত্নে
খাওয়ান তাড়াতাড়ি।

জামাই আদর

জামাই আদর
--------------------
পঙ্কজ প্রামাণিক 
***************
মজা করে হচ্ছে খাওয়া   জামাই ষষ্ঠীর ভোজ
শালী শ্বাশুড়ি  আছেন বসে   নেই শেলেজের  খোঁজ।

মন্ডা  মিঠাই      দই মিষ্টি          আরো কতো কি,
গরম ভাতে  দেয় শ্বাশুড়ি  পুরোনো গাওয়া ঘি।

আম জাম আর  কলা কাঁঠাল   সাথে মিষ্টি লিচু,
মনের সুখে খাচ্ছে জামাই  চায়না ফিরে পিছু।

চিংড়ি পোনার  সাথে আছে মাংস কচি পাঁঠার,
শ্বশুর বলে ভালোই হোলো পকেট খালি আমার।

গোগ্রাসে তে   খাচ্ছে জামাই  লাগছে ভীষণ গরম,
করছে বাতাস  শ্বাশুড়ী মা নেইকো লাজ আর শরম।

মনের সুখে  খেতে খেতে  হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি,
নানারকম  পদের রান্না  যায়না ছাড়া জানি।

   খাচ্ছে জামাই  এদিক ওদিক  আড় চোখেতে চায়,
এদিক-ওদিক   শুধুই দেখে বউ তো কোথাও নাই।

লাজুক ভারী   বউটা তারি মিষ্টি হাসি মুখে,
ঘোমটা পরা  গ্রামের মেয়ে   কাজল  টানা চোখে।

খেয়ে দেয়ে জামাইবাবুর পেট ফুলে জয় ঢাঁক,
যাহোক করে মুখ হাত ধুয়ে হলো চিত পটাৎ।

পাশের ঘরে  ছিলো যে বউ শুনে ছুটে আসে,
অতি লোভে তাঁতি নষ্ট এবার বুঝেছে সে।।

                       

Sunday, June 6, 2021

চলবো প্রকৃতির পথে

চলবো প্রকৄতির পথে
সঞ্জয় বৈরাগ্য

আলো ছিল হাওয়া ছিল, ছিল অঝোর ধারায় বৄষ্টি
মাটি ছিল বীজ ছিল, হল অপত্য প্রাণ সৄষ্টি।
অরণ্যানী ও সবুজত্ব ছিল, ছিল নির্ভয়তা অতি
ছিল শান্ত নদী, নীল আকাশ আর সুন্দর এক প্রকৄতি।
এবার, অনন্য এ ধরণীতে এল মানব জাতি, এল প্রাণ শত শত
নিয়ে সাথে যত আবিলতা ও জটিলতা, পৄথ্বীকে করলো পদানত।
এলো যন্ত্র, কারখানা-কল, হল যান্ত্রিকতার জয়
নিয়ে এলো ধ্বংস, আধুনিক কংস --- শুরু হল পরিবেশের ক্ষয়।
সইল না আর পৄথিবী, এল দুঃসময়
বিবর্ণ হল আকাশ, কুঞ্চিত ফুল, হল বন্ধ পাখির কলরব
তবে এখনও আছে সময়, হবে মানবজাতির জয়।
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে নিই শপথ, 'চলবো প্রকৄতির পথে'
দূষণ-দৈত্যের কবল থেকে বাঁচিয়ে পৄথিবীকে, একদিন ওড়াবো ঠিকই বিজয় নিশান, জীবনেরই রথে।



সবুজের কথা

  সবুজের কথা....
শুভ্রাংশু কুম্ভকার

ঘন ছায়া চেয়েছি, সাথে প্রাণবায়ু
সবুজের ছোঁয়া আর চোখের আরাম,
বেহিসেবি পাওনাটা দাবি থেকে বেশি
কষে কভু দেখিইনি কতোখানি দাম।

অঙ্কুর ছিল যবে মাটিতে লুকায়ে
সোহাগের সোনা জল দিইনি তো ঢেলে,
ভেদ করে বেঁচে থাকা কি কঠিন কাজ
মেলেছি আপন চোখ সব বাধা ঠেলে।

মাটির আদর আর শিকড়ের জোরে
রস শুষে বেঁচে আছি আজও কোনোমতে,
শীর্ণ দেহের শাখা দোলায় বাতাসে,
সূর্যের তেজ ঢাকি সবুজ পাতাতে।

মনোবলে বেড়ে চলা মহীরুহ পানে
খনিজের ঘাটতিতে কঠিন সংগ্ৰাম,
জীবজাত সারে মেটে ক্ষুধার আগুন
কীটনাশকের বিষ বাড়ায় ব‍্যারাম।

কালো ধোঁয়া কংক্রিট দূষণের বিষ,
সবুজের পরিধিও ক্রমে সংকুচিত,
নিঃশ্বাসে বিশ্বাস নেই বিশুদ্ধতার
অক্সিজেন ঘনত্ব কমে ক্রমাগত।

নীলকণ্ঠ সম শুষি দূষণের বিষ
বিশুদ্ধ করেছি বায়ু আবহমানকাল,
সুখে দুঃখে সাথী,শীতল সমীরণ
দখিনা মলয় করি এ মন মাতাল।

ঘরে বাইরে ছাদে বাগানে পথের ধারে
একটু যত্নে সহজেই বেড়ে উঠি,
যেটুকু দাও তার শতগুণ ফিরিয়ে দিই
হিসাব বাকীর সাক্ষী থাকে মাটি।

বৃক্ষরোপন

বৃক্ষরোপন 
নৃসিংহ মজুমদার 

মানবতার চারা পুঁতি ভাই অমানবিকতার ভাগাড় খুঁড়ে ,
চিল শকুনরা আসবে যাবে কুকুর শেয়ালও বেড়াবে ঘুরে ।

সত্যের জল সেচ দিয়েছি ন্যায় নীতির সূর্য তারায় 
সকাল দূপুর সন্ধ্যা রাতে পাবে বলে আলোক ঝর্নায় ।

পাখির গানে জেগে ওঠে দেখবে তারে শিশির সাজায় ,
রোদ ঝড় জলে সারাদিনটা খেলবে সে তো মেঘের ছায়ায় ।

সন্ধ্যা তারে সাজিয়ে দিলে ধ্রুবতারা সুখের গল্প শোনাবে 
চাঁদ পরীরা স্বপ্ন ভেলায় তারার দেশে তারে ঘোরাবে  । 

মেলবে পাতা মেলবে শাখা ভাগাড় গন্ধে দেবে সে ঢাকা ,
চিল শকুন যত লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে দিতে চাক তারে মাটি চাপা ।

সারাদিন রাত বুকে আগলে রেখেছি তারে হয়ে পাহারাদার ,
দুচোখে স্বপ্ন ফুল ফল দিয়ে সাজিয়ে তুলবে নোংরা ভাগাড় ।

প্রাণ ভরে শ্বাস নেবে সবাই পেট ভরে খাবে ফুল ফল পাতা ,
ঝড় বাদলে সুখের ঘরে নিশ্চিন্তে পাতবে স্বপ্নের কাঁথা ।

নিজেকে উজাড় করে

নিজেকে উজাড় করে 
কৃত্তিবাস ওঝা 

বেহিসাবী নাগরিক সভ্যতার আগুনে 
প্রকৃতি পরিবেশ নিদ্রাহীন দাবানলে 
টিকটিক করে নিয়মিত জ্বলে 
অরণ্য জীবনের সবুজ 
অনুচ্চারিত শব্দের নীরব কান্না
স্পর্শ করে না কারোর চোখে কানে ।

পর্যটক-মন কখনও হিসাব করে না 
সবুজের আঁচল চাপা অক্সিজেনের মূল্যমান 
লাল চোখের পাতা ছেঁড়া ভালোবাসা
বিনোদন, আর আরও মুনাফার নেশায় 
ভালোবাসার করে অপমান ।

প্রতিটি ঝড়ঝঞ্জায় বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় 
মন ভাঙ্গা দিনেরাতে নিজেকে উজাড় করে 
রক্ত ঝরা আঘাত সহ্য করে 
সাজিয়ে গুছিয়ে দেয় সমাজ সংসার,
তারই উপর আমরা চালাই নক্কাজনক বলৎকার ।

আমরা আমাদের কৃতকর্মের ফলভোগ 
করি আজ, -- হচ্ছি অতিমারীর শিকার 
উঠছে আত্মহত্যার হাহাকার ।

পরিবেশ আজ সংকটে


পরিবেশ আজ সংকটে
পবিত্র প্রসাদ গুহ


পরিবেশের কলিজায় আজ ঘুন ধরেছে,
চিত্তে অশান্তির ঝড়
থমথমে মনে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় বিতৃষ্ণার হাতছানি।

অপ্রস্ফুটিত ফুলের প্রাণ ধূকছে -
অকালেই ঝরে পড়ে তারা,
সৌরভহীন দেহে মিশে যায় মাটিতে!
কেই রাখে না মনে ওদের।

চারিদিকে বিষক্রিয়া আর কালো কালো ধোঁয়া -
কল কারখানার উঁচু পাইপটা দিয়ে,
গনগনে আচের দৈত্যাকার কোঁকড়ানো ধোঁয়া,
চুম্বন খায় নীল নীলিমা লেপা আকাশটাকে,
মুহূর্তেই তাকে করে দেয় কালিমালিপ্ত।
পাখিগুলি দম বন্ধ হয়ে অচেতন,
গাছেদের কিশলয়ের শ্বাসরোধ হয়ে আসে।

অট্টালিকার কামড়ে কচি দুর্বাঘাসের জীবাশ্ম দশা!
ইঁট, বালি, পাথর গ্রাস করে জংলী লতাপাতাকে,
গলার টুটি চেপে ধরে কলমীলতার।

জলে খাবি খায় চঞ্চল মীন রাশি -
আতঙ্কে থাকে সর্বদা 
এই বুঝি জলে মিশবে কারখানার বর্জ্য,
প্রাণঘাতী আবর্জনা কেড়ে নেয় নিরীহ অবলা প্রাণীর জীবন।

চাই না আর প্রাণঘাতী নগরোন্নয়ন,
চাই না বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ,
চাই না বাঁচতে এই অট্টালিকার আতিশয্যে।
দাও ফিরিয়ে সবুজের সমারোহ,
দাও ফিরিয়ে কুসুমের সৌরভ।

পাখির কলতানে মুখরিত হোক ধরণী,
একবুক শ্বাস নিতে দাও হে আবার-
দাও ফিরায়ে বন বনানী, লহ এ নগর জীবন।

Tuesday, May 18, 2021



মে দিবস 
----------------------- 
   সুভাষচন্দ্র ঘোষ
      ------------------------------------------------


     ফুটপাতের পলিথিন ছাউনি ঢাকা হোটেলে বিনা বেতনে চাকরি,
     শুধু দুমুঠো পেট ভরে  দুবেলা ডাল- ভাত খেতে পাওয়া জরুরি ।     
     দশ বছরের ছেঁড়া হাফপ্যান্ট, বেঢপ গেঞ্জি পরা ছেলে ফেলনা,
     সেই ভোর চারটা থেকে দিন শুরু ,বাসনপত্র থালায় তার খেলনা।
     গত রাতের যত এঁটো কালি লাগা হাঁড়ি কড়াই রাশি রাশি মাজা,
     মালিক আসার আগেই করতে হবে পরিষ্কার ঝকঝকে তাজা।
     ধুতে হবে শুভ লাভ গনেশের পাট,ফেলতে হবে বাসি ফুল শুকনা,
     পরিচ্ছন্ন দেবতার পায়ে মালিক এসে দেবে তাজা ফুল ধূপধূনা ।
     মালিকের পরে আসবে  নোংরা মোটা পৈতে পরা ঠাকুর রান্নার,
     রাশি রাশি সব্জী কাটা ধোয়ার পরে তার সময় থাকে না কান্নার।
     আজ আর মনে পড়েনা কীভাবে এসেছিল ইঁটের জঙ্গল শহরে,
     খিদের জ্বালায় মা-বাপ মরা নিঃসহায় ছেলে রাস্তায় মরে ঘুরে।
     হোটেলের সামনে ফ্যালফ্যাল করে দেখছিল ঝুড়িভর্তি খাবার,
     মালিক ডেকে বলেছিল--থাকবি এখানে ,নাম করবি না যাবার।
     সেই থেকেই এই ছোট্ট হোটেলই বাড়ি, এখানেই দিন গুজরান,
     "মে দিবস"আজো তাকে দেয়নি গরীবের হাড়ভাঙা শ্রম-সম্মান।
     ইঁটভাটা চায়ের দোকানে তার মতো আছে কত হাজার ফেলনা,
     ফুটপাতে বাজার ভরা পোড়া দেশে তাদের হিসাব কেউ রাখেনা।
     "মে দিবস" --গোটা দুনিয়ার খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের দিন,
     শহীদ বেদীর মালা,লাল পতাকা কবে আনবে ফেলনাদের সুদিন?

                       ********************
    
মে দিবসের শ্রদ্ধার্ঘ্য
------------------------- 
নির্মলেন্দু মাইতি
-------------------------------------


ভোগ সর্বস্ব পুঁজিবাদ  পৃথিবী হতে হোক নিপাত
             শ্রমিকের মর্যাদা দানে
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে
শ্রমিক কর্মচারী মাতেন শহীদ স্মরণে।

কাঠ ফাটা রোদ্দুরে  কৃষকেরা কাজ করে
         করে পৃথিবীর অন্নের সংস্থান
ঘর্ঘর ঘোরে চাকা     লাভের যতেক টাকা
        মালিকেরা লুটে গরীবের ধন।

হাতুড়ি কাস্তের গান      শ্রমিকের সম্মান
    শ্রমিকেরা নয়কো কেনা গোলাম
 শহীদদের জীবন দান   পৃথিবীতে চির অম্লান
   মে দিবসের জানাই তাঁদের সেলাম।

আট ঘন্টা কাজের দাবীতে   মে দিবস পালিত হয় পৃথিবীতে
 শ্রমিকের স্বীকৃত কাজের খতিয়ান
ক'জনইবা রাখে খোঁজ   কত শ্রমিকের প্রাণ যায় রোজ
           ক'জন করি ওদের সম্মান।

মেহনতী মানুষের স্বার্থে   সমাজের হিতার্থে
           সংস্থান হোক কর্মের
কাজ চাই মানুষের    উন্নয়ন হোক দেশের
          বন্ধহোক শ্রেণী স্বার্থের ।

নারী পুরুষের সমান মজুরী   বৈষম্য দূর হওয়া জরুরি
    জাগো আধুনিক সভ্য সমাজ
সকলের কাজ হোক  বেকারত্ব দূর হোক
   শপথে অঙ্গীকার করি আজ।

***************************

পয়লা মে
--------------
কৃত্তিবাস ওঝা 
-------------------------------


মাথা আর গতর খাটানো মানুষগুলো 
পায়নি কিছু,  বিনা সংগ্রামে ।
মে দিবস , করোর দয়ার দান নয় 
শ্রমজীবী মানুষের নায্য অধিকার
                               প্রতিষ্ঠার ইতিহাস 
যা লেখা আছে রক্ত আর মৃত্যুর বিনিময়ে ।

অষ্টাদশ শতক থেকে শ্রমিকদের খাটতে হতো 
ষোল আঠারো ঘন্টা 
কথা বলার সময় মিলত না পরিবারের সঙ্গে 
সন্তান চিনত না বাবাকে, --
এমন একটা সময়ে,  উনিশ শতকের প্রথমে 
আট ঘন্টা কাজের দাবীতে 
আমেরিকার শ্রমিকরা নেমে ছিল আন্দোলনে, 
ছড়িয়ে পড়েছিল ধীরে ধীরে তা ' সারা বিশ্বে
আঠারো শ' ছিয়াশি সালের পয়লা মে 
আমেরিকার শিকাগোতে 
শ্রমিকরা নেমেছিল লাগাতার ধর্মঘটে - -
সরকারের পুলিশ,  মালিকের গুণ্ডাবাহিনী 
চালিয়েছিল বেপরোয়া লাঠি,  গুলি 
সাজানো মামলায় করেছে গ্রেফতার 
দিয়েছে ফাঁসি,  কেড়ে নিয়েছে প্রাণ 
রক্তে ভেসেছে হে মার্কেট স্কোয়ার।

দেশে দেশে ছড়িয়েছে 
আট ঘন্টা কাজের দাবী 
সংগ্রাম হয়েছে দুর্বার ।

আঠারো বাষট্টি সালের এপ্রিল- মেতে 
আট ঘন্টা কাজের দাবীতে 
হাওড়া স্টেশনে 
রেল শ্রমিকরা নেমেছিল ধর্মঘটে 
এও ইতিহাস ।

আঠার শ' নব্বুই থেকে 
পয়লা মে 
শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামের প্রতি 
সমর্থন আর শপথের অভিমুখে 
পালিত হয় মে দিবস,  বিশ্বের দেশে দেশে ।

আট ঘন্টা কাজ,  আট ঘন্টা বিশ্রাম 
আট ঘন্টা বিনোদন, --
সংগ্রাম আর শহীদের রক্তের বিনিময়ে 
পাওয়া এ অধিকার 
আক্রান্ত এখন আবার, 
তাই সময়ের আহ্বান, - অধিকার রক্ষার 
সংগ্রামের শপথ নেবার ।

***********************

 মে দিবস
----------------
 শ্যামল খাঁ
~~~~~~~~~~~~~~~~~


পয়লা মে র প্রখর রোদে
ষাট বছরের বৃদ্ধ আজও টোটোর চাকায়
তার জীবনের গতি বেঁধে রাখে  |

সিমেন্ট আর বালি মাখানো মশলার কড়াই
মাথায় নিয়ে আমিনা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে
বার বার মনে করে,
ঘরে বসে থাকা পাঁচ বছরের ছেলের ক্ষুধাতুর মুখ  |

লাল লোহাকে পিটিয়ে নির্দিষ্ট আকার দিতে দিতে
কামারের শক্ত পেশী চায় শোষণের পালাবদল  |
ইচ্ছে করে লোহা থেকে গরম লাল তুলে
শোষকের গালে আবির মাখিয়ে দিতে  |

" দুনিয়ার মজদুর এক হও " ডাক দিয়ে
মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে পাটকলের শ্রমিকেরা
নিংড়ে নেওয়া শ্রমের ন্যায্য বিনিময় দাবী করে |

পুঁজিবাদের কাছে ন্যায্য দাবী করা অন্যায় |
নতশিরে গোলামীর স্লোগান ভালোবাসে তারা,
ক্ষুধার রাজ্য বিস্তৃত হলে
পোড়া রুটির মূল্য জোর করে কেড়ে নেয় অফুরন্ত শ্রম   |

"হে মার্কেট" করেছিল এর প্রতিবাদ,
কারখানায় ছুটির সাইরেন নির্দিষ্ট ব্যবধানে
শুনতে চেয়েছিল সেদিন,
চেয়েছিল দিনের মাঝে আট ঘন্টার শ্রম  |

পুঁজিবাদ মানেনি সে কথা,
পুরো পেট ভর্তি থাকলে শ্রমিকের উত্তরাধিকারী
বশংবদ শ্রমিক হওয়ার ইচ্ছে হারাবে যে!

তবু অনাহারী শ্রমিক ভুখা পেট নিয়েও
চেয়েছিল একটা স্বাস্থ্যকর বাসস্থান
আত্মসম্মান আর ন্যূনতম চিকিৎসার আয়োজন |

বিনিময়ে মিলেছিল চাবুক আর বুলেট  |
বুলেটের মুখে বুক পেতে
শ্রমিকের দাবী আদায়ের অনড় দৃঢ়তায়
কেঁপে উঠেছিল পুঁজিবাদের শক্ত ভীত |

রক্তে লাল হয়ে যাওয়া শ্রমিকের বস্ত্র
চিৎকার করে বলেছিলো "ন্যায্য মূল্য, ন্যায্য শ্রম "
দিনে আট ঘন্টার বেশী কাজ নয় ",
সাম্রাজ্য বাদের অবসান চাই "  |

গুলি বিদ্ধ শ্রমিকের বস্তির ঘরে
অভুক্ত কিশোরী কন্যা পিতার বুকের রক্তে
শাড়ির আঁচল খানি রাঙিয়ে গর্জে উঠেছিল |

মর্যাদা, সম্মান আর প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে
প্রতিটি শ্রমজীবির অন্তরাকাশে
পত পত করে আজও উড়ে চলেছে অবিরাম
সেই রক্তিম পতাকা |

   **********************



            মে দিবস
-----------------------
        অরবিন্দ সরকার
   --------------------------------


দিনে আট ঘণ্টা কাজ  এই ছিল দাবী,
মার্কিন দেশে শিকাগো   শহরে লড়াই,
পয়লা মে'র মিছিল    কর্মের বড়াই,
মালিক প্রমাদ গোনে   কর্মে তালা চাবি।

শ্রমিক অধিকারের   সভা মুলতবি,
মালিক শোনেনা ধ্বনি   পথ হাতড়াই,
নিরস্ত্র শ্রমিকদের     দিয়ে মুখে ছাই
মিছিলে চলল গুলি  রাস্তা নাহি ভাবি।

রক্ত ভেজা রাজপথে   শুধু হায় হায়,
রক্তরাঙা পরিধান    লালের পতাকা,
পৃথিবীর বুকে ভাসে    রক্ত জয়গান
শত শত শহীদের     বিনিময়ে গায়,
গনসঙ্গীতে স্বাগত    বুলি নয় ফাঁকা,
মালিকের মসনদ    শ্রমিকের দান।

***************************

Thursday, April 29, 2021

আমার রবীন্দ্রনাথ

ঠাকুর রবি 
তন্ময় আঢ্য 
----------------

তুমি বিরাজমান মনের অন্তরে কবিগুরু স্মরণে,
হৃদয়ের গভীরে তোমাকে রেখেছি আমরা যতনে।

মন খারাপে তোমার গানে মুগ্ধ করো হে প্রাণে, 
তোমার কথায় তোমার সুরের জাদুতে মুগ্ধতা আনে।

তোমাকে নিয়ে গর্বিত মোরা নেই কোনো বিদ্বেষ,
তুমি ছিলে বলেই কথা-সুরে এগিয়ে রয়েছে দেশ।

তুমি শিশুদের গুরুদেব- বড়দের তুমি বিশ্বকবি,
তোমার ছড়া পাঠ করে শিশুরা বলে ঠাকুর রবি।

গানে-ছড়ায় এভাবেই মাতি- নিয়ে তোমাকে কবি,
তুমি আমাদের হৃদয়ের কবি প্রিয় ঠাকুর রবি।

তুমি ছিলে বলে এই দুঃসময় আনন্দে করেছি পার,
গানে-কবিতায় মগ্ন থেকেছি ভুলিনি একটিবার।

তুমি আমার প্রিয় কবি তুমি আমার রবীন্দ্রনাথ, 
প্রেরণা তুমি জোগাও- প্রনাম তোমায় প্রাণনাথ।

*****************************************

আজ আমায় রবীন্দ্রনাথে পেয়েছে
----------------------------------------------
শ্যামল মিশ্র
-----------------

সকাল থেকেই আজ আমায়
রবীন্দ্রনাথে পেয়ে বসেছে
সঞ্চয়িতার পাতা থেকে কখন যেন 
আমার কলমে, আমার অস্তিত্বে মিশে
তুমি আমায় নিয়ে চলেছ 
এ কোন জগতে?
হঠাৎ আবিষ্কার করলুম,
পৌঁছে গেছি এক ইস্টিশনে
ধরা যাক, নাম তার শ্রয়ণ
কত পথহারাদের আশ্রয় সে,
কিন্তু কী ভীষণ স্তব্ধ আজ!!
নামহীন লেফাফার মতো গন্তব্যে হারিয়ে গেছে।
তোমার কথায় মনে হল
"চিত্রকরের বিশ্বভুবন খানি
এই কথাটাই নিলেম মনে মানি।"
আসলে কবীন্দ্র,
তোমায় আমি কি করে ভুলি বলতো!
তোমার এই ইস্টিশনে  একদিন রেলগাড়ির কামরায় তো দেখেছিলেম 
সেই মেয়েকে
"চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে",
যৌবনের প্রথম প্রভাতে।

চোখ বুজলেই
হে কবীন্দ্র!
তোমার পরশ খুঁজে মরি
আঁধারে যে তোমায় পেল
আলোতে যেন তা হারিয়ে যায়।
তুমি আমার সমস্ত সত্তার মধ্যে
আমার প্রেম,ভালোবাসা যন্ত্রণার মধ্যে----
তুমি কী ভীষণ সত্য
হে কবি।
সময়ের সাথে সাথে তুমি যেন
ভিন্ন রূপে, ভিন্ন স্বাদে দেখা দাও,
চিনতে শেখাও সত্যের রূপ
রূপাতীত সুন্দরকে
"সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম---
সে কখনো করে না বঞ্চনা"।

***************************


 অন্তরে গুরুদেব 
------------------------
 ব্যোমকেশ গঙ্গোপাধ্যায় 
 ---------------------------------------

আছো অন্তর , বিশ্ববহ্মান্ডে, চিরস্মরণে,
বারিধারা মাঝে,মৃত্তিকায় ও মননে, 
আছো তুমি গুরুদেব প্রতিটি কোণে ও ক্ষণে, 
নিবাস তব, মম হৃদাসনে, মনে ও প্রাণে, 

জলস্থলে অন্তরীক্ষে বৃষ্টির দৃষ্টি বদনে, 
পাই মোহ-মায়ার চির প্রেমবাঁধনে ,
পরশ পাই প্রতিক্ষণে, নবসৃষ্টি ও প্রজন্মে,
দক্ষিণা বায়ে তব মুরতি,বিকাশিত নয়নে।

দর্শনে পূর্ণ মন,আজি পূণ্য উচ্ছ্বাস প্রাণে,
স্পর্শ প্রতিটি কণায় পাই প্রতিটি লেখনে,
রবি,শশী,তারকারাজি আছে তব মননে,
তব লেখনী মাঝে আছো বেঁচে,মরণি মরণে।

বৃক্ষ শাখা ফুল-ফল ভরা প্রকৃতির প্রাণে,
চারুলতায় বায়ুর নাচন নবাত্মার স্পন্দনে,
তব লেখনী চির অক্ষয় মম বিশ্বহৃদাসনে,
হারাতে চাই না, রাখি তোমায় সদা স্মরণে। 

আশার প্রদীপ জ্বালি চেয়ে তব পানে, 
জীবন নদে আদি অন্ত কিছুই যে জানিনে,
তোমার কবিতা,গানে বাঁচি মননে, জীবনে,
 সদা স্মরি, প্রণাম সর্বান্তকরণে তব চরণে।

**************************************

আমার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ
----------------------------------  
 সুকুমার ঘোষ 
---------------------

আমার হয়ে সবার হলে তাই তো তুমি রবি । তোমার আলো দশ দিকেতে তুমি বিশ্বকবি ।।
গানে ভুবন ভরিয়ে দিলে , নৃত্যে বরণডালা । কবিতা আর ছোট গল্পে আনলে জয়ের মালা ।।
উপন্যাস আর নাটকেতে নতুন পথের বাঁক । নোবেল জয়ে পড়ে গেল চারদিকে হাঁকডাক ।।
আধুনিক আর প্রাচীন সাহিত্য দুইয়েতেই সেরা । প্রবন্ধেতে সবাই মাতে যেন উত্সবে দশেরা ।।
কাটাকাটি করতে গিয়ে আঁকলে হিজিবিজি । তা থেকেই হয়ে গেল অবাক করা ছবি ।।
শিশুর কথা ভেবে তুমি লিখলে ' সহজ পাঠ '। বিশ্বভারতী গড়লে যেথায় ভুবনডাঙার মাঠ ।।
বৈশাখ এলে তোমার জন্ম- জয়ন্তী উত্সব । শ্রাবণ এলে বিয়োগ ব্যথা  হয় গো অনুভব ।।
উপনিষদ- চেতনা জাগিয়ে দিলে প্রাণে ।               সীমা- অসীম দ্বন্দ্ব নিয়ে কেবল দড়ি টানে ।।
বাংলা ভাষায়  মধু পেয়ে  বিশ্ববাসী মাতে ।
তুমি  আছো দুই বাংলার জাতীয়  সংগীতে ।।

****************************************



কবিগুরু 
-------------- 
সমীর দাস 
---------------------------
 
রবি গুরু কবি গুরু কবীন্দ্র ঠাকুর 
তব করে ওঠে ভরে ভাষা সংস্কৃতি 
লেখা কত শত শত রচনা মধুর 
নমি তবে শ্রদ্ধা ভরে বাংলার কৃতি

অনুভবে কত ভাবে কবিতা লিখেছ 
রচনায় ভরা তায় সহস্র ভাবনা
কত সুরে কত তালে গান গেয়ে গেছ
শিল্প সাহিত্য কলায় নতুন চেতনা

শিক্ষা ধর্ম সামাজিক কত চিন্তাধারা  
দেশপ্রেমে এনে ছিলে নব জাগরণ 
নিরন্তর এ অন্তরে বহে তব ধারা 
তব ধ্যান অবদান রবে আমরণ 

প্রণমি রবীন্দ্রনাথ সচেষ্ট সাধনে 
গুরুদেব তুমি আছ সর্বক্ষণ মনে 
-------------------------------------

সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র
----------------------------------
উমা মুখার্জী
----------------------------

তোমার লেখা আছে ছুঁয়ে বিশ্ব ভুবন মাঝে,
তোমার গানে প্রাণে লাগে দোলা সকাল সাঁঝে।
আলোকের ঝর্ণা ধারায় তুমি ভাসাও প্রাণ,
তোমার লেখনীর মাঝে পাই নবীনের জয়গান।
হাসি, আনন্দ, বিরহ, প্রেম, সূক্ষ্ম অনুভূতিতে মিশে,
প্রকাশ করেছো মনের ভাষা যাতে প্রাণ পাই শেষে।
সাথী হারা একলা পথের দিশার সন্ধানী তুমি,
তোমার সৃষ্টির মহত্বে তোমারেই শুধু নমি।
সহজপাঠ, গীতাঞ্জলি, গীতবিতানের অবদানে,
বিশ্ব মাঝে পেয়েছো স্থান নোবেল সম্মানে।
সাহিত্যের চিদাকাশে তুমি রবির কিরণ,
তোমার লেখনীর ছোঁয়ায় হয়েছে দ্যুতি বিচ্ছরণ।
বছরে প্রথম পঁচিশে  বৈশাখ হয়েছিলে অবতীর্ণ,
ঐশ্বরিক ক্ষমতায় আসীন হয়ে হলে যুগাতীর্ণ।।

*****************************************
 
 গুরু প্রণাম
-----------------
ধীরেন গোস্বামী।
--------------------------

মানব জীবনের চলার পথে
মাথায় সবার মস্ত বোঝা,
তারই মাঝে কবিগুরুর গানে
গুরুর চরণ করছি পূজা।

সেই আলোকে আলোকিত হয়ে
লিখছে সকল লেখক-কবি,
সমুখে সাজিয়ে রেখে কবি গুরুর
ফ্রেমে বাঁধানো মস্ত ছবি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ভারত সূর্য 
বিশ্বকবি বিশ্বশ্রেষ্ঠ কবিগুরু,
সেই চরণে জানিয়ে ভক্তি প্রণাম 
আমরা করি প্রভাত শুরু।

অসম্ভব কে সম্ভব করেছেন বলে
আজও সারা বিশ্বের প্রিয়,
সকল হৃদয়ে চির অমর বিশ্বকবি 
কবিগুরু এক ও অদ্বিতীয়।



রবি
----------
অরিজিৎ ঘোষ 
-----------------------------

অবর্ণনীয়,অতুলনীয়,অপার্থিব সে,
তাই বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মেটাবার,
তৃষ্ণাটা থাক চিরকাল,
অমরত্বের মহাকাল।
প্রতিদ্বন্দ্বীর অন্বেষণে বৃথাই কালক্ষেপ,
সে কবিতা লেখেই না কোনোদিন,
তার কথিত কথাই কবিতা,
সবই কবিতার আস্বাদ।
সে একাই,তাকে ঘিরেই সবের আবর্তন,
তারই প্রহরায় অনেক গ্রহ,উপগ্রহ,
তারই আশ্রিত জনেরা কবি,
সে তাই মহৎ মহাকবি।
তার তুলনা সে নিজেই,নিজেরই বিরোধিতা,
তাকে উপমায় টানা আমাদের দুর্মতি,
তুলনা বা উপমা সবই নিষ্ফলা,
সেই আকাশের ধ্রুবতারা।
সে কবিতায়,গানে,রসালাপে,সতত মহিমাময়,
সে তোমারি দুঃখে,যন্ত্রণায় বিরাজিত,
সে তোমারই আনন্দে,হর্ষে স্থিত,
তুমিও তাতেই নিমজ্জিত।
সে মৃত কারণ দেহত্যাগ এক মহাজাগতিক সত্য,
তার দেওয়া শেষ তাই ফেরা হবে না আর,
সে জড় ও জীবে সতত পরিব্যাপ্ত,
সে সত্যিই তাই অবিনশ্বর।

***************************
                                 

পলে জাগে কবি
-----------------------
দীপক কুমার সিংহ
----------------------------

একটা দিনের প্রতি পল
বিশ্লেষণে করি অবিকল |
বিশ্ব কবির লেখা প্রতিক্ষণে
কবিতায় জীবন বর্ণনে ||
পারো যদি করো আহরণ
সুখে শোকে হাসি ক্রন্দন |
প্রকৃতির কত সুন্দর মুহুর্ত
জীবন্ত হয় কলমে অনন্ত ||
কত গানে জাগে প্রাণ
কত মনে আসে উচাটন |
হৃদয়ের মাঝে উঠে স্পন্দন
মেঘে ভাসে প্রিয়ার বার্তামন ||
পাহাড়, নদী, সাগরের জলে
বর্ণনায় রবির কলম চলে |
আকাশ, বাতাস, ভূমি পরে
কলমে কত স্বপ্নকথা উড়ে ||
কত বিরহের কত যাতনা
জাগে কবি কলমে বন্দনা |
সে যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ
প্রেরণা জোগায় আমার জাত ||

****************************

 প্রণাম তোমায়
----------------------
 তপন কুমার পাল
 ----------------------------

 রবি ঠাকুর আমার কাছে প্রাণের কবি ভাই,
 ইহার চেয়ে ভালো কিছু আমার জানা নাই।
 জোড়াসাঁকো জন্ম যে তার বাংলা মায়ের ধন,
 তার'ই লেখা গীতি গল্পে ভরে যায় যে মন।

 বিশ্বের গর্ব এমন কবি কোথায় গেলে পাই,
 বিশ্বকবি রবি ঠাকুর তুলনাহীন তাই।
 গদ্য-পদ্য গল্প গানে সাহিত্যে রাজ,
কবির মধ্যে সেরা তিনি পাখির মধ্যে বাজ।

 গীতাঞ্জলি লিখে তিনি বিশ্ব সেরা হয়,
 বিশ্বকবি উপাধিতে বাঙালির হয় জয়।
 বাঙ্গালীদের প্রাণের কবি আবেগ ভরা প্রাণ,
 সারা জীবন এমন ভাবে রেখো মোদের মান।

 প্রতিবছর পালন করি তোমার জন্মদিন,
 শত চেষ্টা করে তোমার শোধ হবে না ঋণ।
 অমর হয়ে থাকবে তুমি সারা জীবন ভর,
 সবার মনে থাকো তুমি বেঁধে সুখের ঘর।
*************************************

 
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ 
----------------------------
সুজন রাজবংশী
----------------------------------

হে কবি সম্রাট, তব চেতনায়  মম হৃদয় উদ্ভাসিত  পলে পলে।
বিমুগ্ধতা লয়ে পড়ি তব রচনাশৈলী, নিত্য আঁখি কমলে।

আয়ত নয়নে ভাসে গো তোমার প্রেম কাব্য-কলা।
শূন্য পরান খুলে দিয়ে, প্রকৃতি হতে লুটিয়ে নিয়েছ, অব্যক্ত বর্ণমালা।

বর্ষাময় গগনে শ্রাবণের ডাকে, তব কবিত্বের প্রথম প্রকাশ।
সেই থেকে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যমান আলোকদ্যুতির মতো,পঙক্তিময় হৃদয়ের আকাশ।

নির্জন  নিবৃত্তে একলা কখনো, হয়তো কোন ভ্রমন বিলাসে ?
নিরীক্ষণ করেছো প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, বিকশিত মনে, হর্ষময় অভিলাষে।

তব ভাবনার আকাশে প্রেমময় ছন্দ দোলে দোলে ভিড়ে!
পঙক্তিমালায় সাজিয়ে লও তব কাব্য মাধুর্যকে ঘিরে।

কাব্য রচনার শিখরে তব নিত্য বিচরণ।
উন্মুক্ত হৃদয়ে গহীন আবেশে, কলমের সিক্ত আলিঙ্গন।

সর্বস্তরে তব স্পর্শে, উন্নত আজ বঙ্গ সাহিত্য।
সমুন্নত চিত্তে, নিজ বৃত্তে, অম্লান হউক তব কবিত্ব।

হে কবিগুরু, তব চরণে বিনম্র চিত্তে জানাই প্রণতি।
কাব্য সিদ্ধতায়, বিশ্বসভা তোমায় দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি।

******************************************
                      
   কবিগুরু
----------------------
 নীরদ দত্ত 
---------------------------

কবিগুরু রবিঠাকুর বিশ্বে তুমি বন্দিত
রত্নগর্ভা জননী ভারত তোমায় পেয়ে গর্বিত।
স্বাধীনতার কুরুক্ষেত্রে তুমি সৈনিক অবিচল
পরাধীন জাতির দুঃখবেদনায় ঝরেছে চোখের জল ৷
বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাঁধ ভাঙা সুনামির জলোচ্ছ্বাস
ঘরে ঘরে অরন্ধন , রাখীবন্ধনের উচ্ছ্বাস।
জালালাবাদের নির্মম গণহত্যায় মানবতার হাহাকার!
বর্বরতার প্রতিবাদে 'নাইট' উপাধি করেছো পরিহার।
মানবতার প্রদীপ্ত দীপশলাকা ওগো বিশ্বকবি
বিশ্বমানবতার মুক্তি সংগ্রামে মধ্যগগনের রবি ৷
আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ নিগ্রোদের প্রতি নির্মম অবিচার
প্রতিবাদে তুমি জানিয়েছিলে শাসকে ধিক্কার।
'রাশিয়ার চিঠি'তে নিরন্ন মানুষের অর্জিত অধিকার
লিখেছিলে 'তীর্থদর্শন',সাম্যবাদে করেছিলে নমস্কার।
বিশ্বভারতী মিলনমঞ্চ উদ্ভাসিত বিশ্বভাবধারায়
বিশ্বভুবন ফুলের মালঞ্চ শিক্ষায় সুরভি ছড়ায়।
তোমার কবিতা, নাটক, উপন্যাস, সুরের মধুরিমা
সাতসমুদ্র পেরিয়ে জ্ঞানের আলোয় শোভিত চন্দ্রিমা।
পরাধীন দেশে এনেছ নোবেল হিমালয় সম সম্মান
জগৎ সভায় দিয়েছ ফিরায়ে মানহারা জননীর মান।
ভারত-বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের তুমি রূপকার
লহ প্রণাম ওগো কবিগুরু - ভারতবাসীর কন্ঠহার।

********************************************



আমার রবীন্দ্রনাথ
-------------------------
স্বপন গায়েন
-----------------------------

রবি মানে রবীন্দ্রনাথ রবি জোড়াসাঁকো
রবি মানে ঠাকুরবাড়ি রবির ছবি আঁকো।


রবি মানে সূর্যকিরণ রবিই আকাশ গ্রহ তারা
রবি মানে নোবেল জয় রবিই সেরার সেরা।


রবি মানে গল্প নাটক রবির উপন্যাস
রবি মানে গানের ডালি রবিই বারমাস।


রবি মানে সাহিত্য সৃষ্টি রবি মানে আলো
রবি মানে বাঁচার আশা রবির সৃষ্টি ভালো।


রবি মানে বাংলা সাহিত্য রবি বিশ্ব কবি
রবি মানে অমর কবি রবিই বিশ্ব ছবি।


রবি মানে জাতীয় সংগীত রবিই বাংলা ভাষা
রবি মানে হৃদয় জুড়ে রবির গর্বে ভাসা।


রবি মানে পঁচিশে বৈশাখ রবিই বাইশে শ্রাবণ
রবি মানে তারিখ নয় রবিকে করবো স্মরণ।
  
  *************************************



প্রাণের কবি রবীন্দ্রনাথ 
--------------------------------
নিরঞ্জন কুমার রায় 
----------------------------------------
হে রবি তুমি জ্ঞানের দীপ্ত ছবি,
তুমি প্রাণের কবি তুমি বিশ্ব কবি।
তুমি মানুষের কবি তুমি প্রকৃতির কবি,
তুমি সুরের কবি তুমি গানের কবি।
তুমি বিশ্বমানবতার কবি,ঈশ্বর প্রেমের কবি।
তুমি সুন্দরের কবি মানুষের হৃদয়ের  কবি।

তোমারই জন্যে বাংলা ভাষা পেয়েছে মান,
পেয়েছে গৌরব পেয়েছে বিশ্বে রাজার সম্মান।
সাহিত্যে সকল শাখায় তোমার দীপ্ত পদচারণা, 
তোমার সংগীত ছড়িয়ে দেয় সুধারস মূর্ছনা। 
তোমার গল্প,উপন্যাস,নাটক,কাব্যগ্রন্থ, 
বলে মানুষের প্রাণের কথা সুন্দর সুবিন্যস্ত। 

তোমার জ্ঞানের খনি গীতাঞ্জলি কাব্য খানি,
বাংলা সাহিত্যে প্রথম নোবেল দিয়েছে আনি।
বাংলা ভাষা পায় পরিচিতি বিশ্বের দরবারে,
তোমারি লেখনী মাহাত্ম্যের ক্ষুরধারে।
দুই বাংলার জাতীয় সংগীত তোমারই রচনা,
বাংলা মায়ের রূপমাধুর্য করেছো বর্ণনা।

নববর্ষ বরণে আজও তোমারি গান গাই,
তোমারি কবিতায় বাংলার ষড়ঋতুকে খুঁজে পাই।
বাংলা বাংলার মানুষের কথা বলেছো চিরকাল,
তোমার সে অবদান চিরদিন রবে অম্লান।
তোমার জ্ঞানের রাজ্য বড়ই সুবিশাল,
আছে বিস্তৃত আসমুদ্র হিমাচল।
তোমার সেই জ্ঞানের রাজ্যে সূর্য হয়না অস্তমিত,
দীপ্ত রবির কিরণ সম সেথা সদা উদ্ভাসিত। 

তোমার চিন্তা চেতনা মননশীলতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে,
সারা বিশ্বের সাহিত্য ভুবনে পড়েছে ছড়িয়ে।
তোমার সাহিত্যকর্ম বিশ্বের এক অমূল্য ধন,
তাইতো তুমি বিশ্বকবি মানব জাতির প্রাণ।
তব দর্শন জীবনবোধ মানুষকে সদা টানে,
তাইতো তোমার স্হান মানুষেরই হৃদয় কোণে।

 তুমি শুধু নহ কবি মহা মানব আলোর দিশারী, 
তাই তো শয়নে স্বপনে শুধু তোমারেই স্মরণ করি।
পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ পূণ্যদিনে,
তোমাকে করি স্মরণ গভীর ভক্তিশ্রদ্ধা মনে।
এই বিশ্ব আর মানব জাতি রবে যতদিন,
তোমার সাহিত্যকীর্তি বেঁচে রবে ততদিন।

************************************



বিশ্বকবি  আমার রবি 
-----------------------------
সুব্রত কুণ্ডু
--------------------
স্মরণ-মননে 
ক্ষণ-অনুক্ষণে 
হৃদয়ে রয়েছ তুমি, 
তোমার কিরণ 
সদা বিকিরণ 
ধন্য ভারত-ভূমি। 

গান-কবিতায় 
গল্প-গাথায় 
নাটক-নভেল সার, 
তুমি মহাজন 
করি প্রণয়ন 
দিলে কত উপহার। 

কচি-কাঁচাদের 
সহজপাঠের 
রঙ ও তুলির খেলা, 
দেখে শিশুগণ 
পাঠে দেয় মন 
কত না খুশির মেলা। 

গাঁথিলে হে বীর 
গীতাঞ্জলির 
কাব্যে মুকুতা-হার, 
বিশ্ব জিনিয়া 
আনিলে ছিনিয়া 
নোবেল- পুরস্কার।

এল বৈশাখ 
ওঠে বেজে শাঁখ 
পঁচিশ আগত দ্বারে, 
আমি অভাজন 
পূজিনু চরণ 
মল্লিকা ফুল-হারে। 
*****************

আছো সৃষ্টিতে
--------------------
সুবর্ণা চক্রবর্তী
------------------------
কবিগুরু রবি ঠাকুর আছে আমার মননে,
কাব্যসুধা পান করি যে সৃষ্টিকর্ম খননে।
কবে জন্ম নেবে আবার এমন মহা মানব?
যাঁর লেখাতে পালায় যেত হিংসা নামের দানব।

তোমার আলোয় আলোকিত করলে সারা ভুবন,
কাব্য,গল্পে বেঁচে আছো হলোই যদি মরণ।
নোবেল পেলে সাহিত্যতে গীতাঞ্জলি লিখে, 
তোমায় পড়ে আজো লোকে কত কিছু শেখে।

তোমার গানে মুগ্ধ হয়ে মুদে আসে নয়ন,
ভেবে তোমার অসীমতা করি আমি শয়ন।
তোমার সৃষ্টি হবে নাতো কোনোকালেই খর্ব,
যুগে যুগে মহান হয়ে থাকবে কালের গর্ব।

জগৎ মাঝে দেখি না আর তোমার সম তুল্য,
সকলে কি বোঝে বলো নক্ষত্রেরই মূল্য?
বারেবারে নমি গুরু তোমার চরণ তলে,
তোমার নিন্দা যারা করে মরুক সদল বলে।

বিশ্বকবি উপাধিটা পেলে সৃষ্টি কর্মে,
বিশ্বাস তোমার অটুট ছিল মানবতার ধর্মে।
গীতিনাট্য, উপন্যাসে গভীরতা খুঁজি,
কালের শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ তোমার কর্মে বুঝি।

**************************************